সূফীদের কয়েকটি তরিকার জিকির ও অযীফা

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।

পূর্বের পোষ্টে সুফিদের লতিফার জিকির সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই লতিফার জিকির ছাড়াও সুফিরা বিভিন্ন বিদআতী জিকির ও অজীফা আদায় করে থাকে। সমস্ত সুফী তরীকার লোকেরা সহিহ হাদিসে বর্ণিত মাসনুন দোয় ও জিকির বাদ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের বানোয়াট যিকির তৈরী করে নিয়েছে। নকশবন্দী তরীকার লোকেরা যিকরে মুফরাদ তথা শুধু الله (আল্লাহ) الله (আল্লাহ)  বলে যিকির করে। শাযেলী তরীকার لا إله إلا الله এবং অন্যান্য তরীকার লোকে শুধু هوهو হু হু বলে যিকির করে থাকে। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ এভাবে আওয়াজ করে বা আওয়াজবিহীন একক শব্দ দ্বারা যিকির করার কোন দলীল নেই; বরং এগুলো মানুষকে বিদআত ও গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায়। (মাজমুআয়ে ফতোয়াঃ পৃষ্ঠা নং- ২২৯)

আমাদের দেশের বিভিন্ন পীরদের মুরীদদেরকে যিকরে জলী ও যিকিরী খফী নামে বিভিন্ন ধরণের বিদআতী যিকির করতে দেখা যায়, যেগুলোর কোন শরঈ ভিত্তি নেই।  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আল্লাহর স্মরনের মাধ্যমে জীবর অতিবাহিত করছেন। এই জন্য প্রতিটি মুসলিমের উচিৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বারা আদায়কৃত মাসনুন দোয় মুখস্ত করে আদায় করা। একজন মুসলিম ঘুম থেকে উঠে, ঘুমানোর সময়, ঘরে প্রবেশ কিংবা ঘর হতে বের হওয়ার সময়, অজু করার শুরুতে কিংবা অজু শেষে, মসজিতে প্রবেশ করা কিংরা বাহির হওয়া থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পঠিতব্য অসংখ্য মাসনুন দোয়া আদায় করতে পারে যা হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ। কিন্তু সুফি তরিকাগুলি এ সবের তোয়াক্কা না হবে। বিভিন্ন সবকের নামে আলাদা আলাদা অজিফা তৈরি করেছে।আগেই উল্লখ করেছি, ভারত বর্ষে শত শত তরিকা আছে। তাদের তরিকামত জিকিরের আমলেও শত শত প্রকরণ আছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি বহুল পরিচিত তরিকার জিকির বা অজিফার আমল সম্পর্কে কিছু ধারনা দিচ্ছি।

 তরিকা ভিত্তিক কিছু আজিফা ও তাদের সাধনার পদ্দতিঃ

*** কাদেরিয়া তরিকার অজিফা ও সাধনার পদ্দতিঃ

কাদেরিয়া তরিকার অনুসারি সুফিদের মতে, কালেমা তাইয়্যেবা বর্ণিত নোক্তা বিহীন বারটি বর্ণের তালিমই হল কাদেরিয়া তরিকার খাস তালিম। এবং দুনিয়ার সকল রহস্য এই বারেটি হবফে লুকায়িত রহিয়াছে। বিশ্ব জগতের মূল কারণ ও উৎস হল এই বারোটি হরফ। তৌহিদের প্রকৃত রূপও এই কালেমা। নোক্তা শূন্য বর্ণ দিয়ে কেন কালেমার সৃষ্টি, তাহা গভীর রহস্যে নিমজ্জিত। এই কালেমাকে জানিলে, চিনিলে ও সঠিক ভাবে গবেষণা করিয়া পড়িলে তাহার নিকট সকল রহস্যের দ্বার উন্মোচিত হইয়া যায়। এই তালিম না পাওয়া পর্য্যন্ত কেহ কাদেরিয়া তরিকার সূফী-সাধক ও পীর হওয়ার যোগ্য হন না। যিনি এই কালেমার রহস্য জানেন তাকে তারা “আরেফ বিল্লাহ ও অলিয়ে কামেল এর মর্যাদায় ভুসিত করে।  

কাদেরিয় তরিকার অনুসারীদের ভাষ্য মতেঃ যদি কেউ এই কালেমার শিক্ষা গ্রহণ করিতে চায়, তবে তাকে একজন সূফী-সাধক ও পীর-মোর্শেদগণ নিকট থেকে অর্জন করতে হবে। সাধক ব্যতীত কোন সাধারণ শুষ্ক আলেম হইলে চলিবেনা।

কলেমার তালিমের গোপন উত্সঃ তারা সনদবিহীনভাবে প্রচার করে যে, হযরত নবী করিম সা. এই কালেমার বিশেষ তালিম হযরত আলী রা. কে প্রদান করিয়াছিলেন। তিনি এই তালিম তাঁহার খলিফা হযরত হাসান বসরী রহ. কে দান করেন। তাঁহার নিকট হইতে গাউসুল আজম হযরত আবদুল কাদির জিলানী রহ.-এর নিকট আসে। এই কালেমার রহস্য তাঁহার নিকট আসিবার পূর্ব্ব পর্য্যন্ত ইহার তালিম সিনা-ব-সিনা আসিত। কিন্তু তিনি এই তালিমকে সু-বিন্যস্ত করিয়া লিখিত আকারে গুপ্ত ভাবে বিশেষ মুরিদানকে দান করেন।

“কাদেরিয়া তরিকার সাধনা কোন লতিফার সহিত সম্পৃক্ত নহে। বরং খোদা প্রেমিকের যেই স্থানে আল্লাহ শব্দের প্রভাব পড়িবে, সেখানেই জিকির জারী হয়। সেইখান হইতে তাহা সমস্ত শরীরে শিহরিত হয়। অতঃপর সেখানে বিশেষ অবস্থা ও নূর সমূহ বিচ্ছুরিত হইবার পর তাজাল্লী বা আলোক প্রভার বিকিরণ এবং ঊর্ধ্ব জগতের ভ্রমণ সংঘটিত হয়। ফলে এমন আবেগের উত্থান এবং অবস্থার পর্য্যায়ক্রমিক উন্নতি সাধিত হয়, যাহা বলা বা লেখা যায় না।

তাদের দাবিঃ মোর্শেদের তাওয়াজ্জুহ্ ব্যতীত সালেকের এই পথে সফল হওয়া খুবই কঠিন। যখনই এই সকল বিশেষ অবস্থার উন্নতি সাধিত হয়, তখনই মোর্শেদ তাহাকে নিজের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বলে উন্নততর মনজিলে পৌছার পথ নির্দেশ করেন। প্রকৃত মকসুদে পৌঁছাইবার পথ বাতলাইয়া দেন। সালেক চলার পথে যখনই ধীরে ধীরে নূরানী জগতে অগ্রসর হয় এবং বিশাল বিশাল ভয়ানক সমুদ্র অতিক্রম করিবার পর জাতী তথা মূল নূরের প্রভাবে ফানার মাকামের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তখনই মূল সত্তার দরিয়ায় ডুবিয়া যায়। সমুদ্রের মতো যাহার কিনারায় মূলের মূল, শাখার শাখা বিভিন্ন পর্য্যায়ে ওয়াহ্দাতুল ওজুদ বা অস্তিত্বের একত্বের অলি-গলিতে ঘুরিতে থাকে। ইহারই মধ্যে শাহে লা-তায়াইউন বা অসীম অমূর্ত বা নির্বস্তুক জগতের আবির্ভাব ঘটে, যাহার কূল-কিনারা নাই।”

 মন্তব্যঃ আপনি যদি হিন্দু অথরা বৌদ্ধ ধর্মের নীতি কথা পড়ে। তা হলে দেখবের তারা ধাননা জন্য বিভিন্ন পন্থা আবিস্কার করছে। যার মাধ্যমে তারা তাদের নফস বা আত্মার পরিশুদ্ধি করার চেষ্টা চালায়। তাদের এই কাজের না আছে কোন ঐশি নির্দেশ না আছে কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। শুধুই আন্দাস আর অনুমানের উপর ভিত্ত করে নিয়ম নীতি তৈরি করা হয়েছে। অনেক সময় বলে এটা পরিক্ষিত। যেমনঃ তাবিজ ব্যরাহার কারিগন দাবি করে থাকে। কাদেরিয়া তরিকার অনুসারি সুফিদের আমল তার থেকে ব্যতিক্রম কিছু আছে কি?

 

*** চিশতিয়া তরিকার অজিফা ও সাধনার পদ্দতিঃ

হযরত খাজা মঈন উদ্দীন চিশতী এর খাস খলিফা চিশতিয়া তরিকার একান্ত অনুসারী খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী -এর স্ব-রচিত ‘দলিলুল আরেফীন’ গ্রন্থের অষ্টম অধ্যায়ে তাদের তরিকার আমলের বর্ণনা দিয়েছেন। এই তরিকা মতে আব, আতশ, খাক, বাদ ও নূর যথাক্রমে পানি, আগুন, মাটি, বায়ু এবং নূরকে আনাসির-এ-খামসা বা পঞ্চ উপাদান নামে অভিহিত করা হয়। সমুদয় সৃষ্টি জগতের মূল উৎস এই পঞ্চ উপাদান। সমুদয় জড় বস্তু ও প্রাণী দেহে ‘আনাসিরে আরবায়া’ বা চার উপাদান যেমন পানি, আগুন, মাটি ও বায়ুর সংমিশ্রণ ঘটিয়াছে। আর চার উপাদানের মূলে রহিয়াছে নূর বা এক জ্যোতির্ম্ময় সত্তা। প্রত্যেক উপাদানে রহিয়াছে পাঁচটি গুণ বা সিফাত।

উহা আবার তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা:

. আহাদিয়াতঃ এই স্তরে মহিমান্বিত আল্লাহ আপনাতেই বিদ্যমান এবং অতি সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম দরিয়া রূপে রহিয়াছেন। এই পর্য্যায়ে তিনি একক ও অদ্বৈত।

. ওয়াহিদাতঃ এই স্তরে তিনি তাঁহার ইরাদা বা আকাঙ্খা বা এশক (প্রেম) হইতে নূরে মুহাম্মদী সা. সৃষ্টি করেন।
৩. ওয়াহেদিয়াতঃ এই স্তরে নূরে মুহাম্মদী সা. হইতে তিনি নিজেকে বিশ্ব চরাচর সৃষ্টির সঙ্গে ‘আহমদ’ রূপে প্রকাশ করেন। সুরেশ্বরী পীর তার রচিত আধ্যাত্মিক ঊর্দু গ্রন্থ “সিররেহক্ক জামেনূর” বই-এর ভূমিকায় লিখেছেন “আহাদ” এবং “আহমাদ” এর মধ্যে “মীম” এর পার্থক্য কেবল হামদ্ ও নাতের জন্য।

 (নাউজুবিল্লাহ)

এই তালিমকে ‘মান আরাফা নাফসাহু’ এর তালিমও বলা হয়। এই তালিম রপ্ত না করা পর্য্যন্ত কেহই প্রকৃত সূফী বা চিশতিয়া তরিকার পীর হইবার যোগ্য নহেন। চিশতিয়া তরিকায় সামা বা গান প্রচলিত রহিয়াছে। মাঝে মাঝে এই তরিকা পন্থীগণ সামার অনুষ্ঠান করেন। ইহাতে তাহারা জজবার হালতে পৌঁছেন। তাদের মতে, সামার দ্বারা আল্লাহর প্রেম বর্ধিত হয়। তাই চিশতিয়া তরিকার মাশায়েখগণ সামাকে ‘রুহানী গেজা বা আত্মার খোরাক’ বলেন। একই ভাবে চিশতিয়া তরিকায়ও কালেমা তাইয়্যেবা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (বারে হরফ) নোক্তা বিহীন এই বারোটি বর্ণের খাস তালিমের বিধান রহিয়াছে।

 মন্তব্যঃ এই শয়তানি তরিকায় আহাদিয়াত এর নামে ওহেদাতুল অজুদে বিশ্বাসি। আল্লাহ আর রসূর সাঃ নাকি একজন পার্থক্য শুধু মীমের।  (নাউজুবিল্লাহ)। এই তরিকায় গান গাইলে ইবাদাত হয় বলে প্রচার করে। গান হল ‘রুহানী গেজা বা আত্মার খোরাক। এই সকল কথা থেকে মহান আল্লাহ, তার রসুল ও ইসলাম অনেক পবিত্র। যদি গবেষনা করেন তবে হিন্দুদের সাথে বা শিয়াদের সাথে মিল খুজে পেতে পারেন।

*** মাইজ ভান্ডারী তরিকার অজিফা ও সাধনার পদ্দতিঃ

এই তরিকার ভক্তদের ধারনা মতে, বিশ্ব মানবতায় বেলায়তের স্বরূপ সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজ ভান্ডারী এর বেলায়তের পরশ পেয়ে ধন্য হয়েছেন মাটিস্ত বুজুর্গানে দ্বীন এবং তারা জামালী হতে জালালীর মধ্যে রূপ ধারণ করেছেন। কামালিয়তের বা বুজুর্গীর কোন প্রশংসা তাঁর বুজুর্গীতে বাদ পড়েনা। তিনি এমন এক খোদা প্রদত্ত শ্রেষ্ঠত্ব সম্পন্ন অলি, যিনি খোদার ইচ্ছা শক্তিতে তাঁর গাউছে আজমিয়তের প্রভাবে জনগণের না হওয়ার মত কাম্য বস্তুকে হওয়ার রূপ দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। তাদর দাবি, তাঁর সাথে হযরত খাজা খিজির (আঃ) এঁর খুবই ঘনিষ্ট আধ্যাত্মিক সম্পর্ক ছিল।

সমসাময়িক ওলামায়ে কেরাম ও বুজুর্গগণ তাঁর প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাপূর্ণ উচ্চ ধারণা পোষন করতেন যা তাদের লিখিত কসিদা, শের, কবিতা, মন্তব্য ইত্যাদি থেকে উপলদ্ধি করা যায়। তাঁর আধ্যাত্মিক পরশ প্রাপ্ত অসংখ্যা অলী-দরবেশ বিভিন্ন স্থানে আধ্যাত্মিকতার দাওয়াত পৌঁছে দিয়ে বিশ্ব মানবতার কল্যাণের অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

তাদের ইবাদতের প্রধান মাধ্যম হল গান। গান গেয়ে তারা আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জণ করে থাকে। তারা শুধু মুসলিমদের আত্মার পরিশুদ্ধি করে তা নয়। এখান হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান যে কোন ধর্মের লোক এসে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জণ করতে পারে। তাদের মনের আশা পূরন করতে পাবে। এই কথা তারা শুধু বলে না প্রচারএ করে।

মাইজভান্ডারী তরিকার উসুলে সাবআ বা সপ্ত পদ্ধতিঃ

নফ্‌ছে ইনসানীর কুপ্রবৃত্তি বন্ধ করে রূহে ইনসানীর সুপ্রবৃত্তি জাগ্রত করার জন্য হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) নির্বিঘ্ন ও সহজসাধ্য মাধ্যম হিসেবে সপ্ত-পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। সপ্ত -পদ্ধতি দুই স্তরে অনুশীলিত হয়।

ফানায়ে ছালাছা বা রিপুর ত্রিবিধ বিনাশ স্তরঃ 

১। ফানা আনিল খাল্কঃ পরমুখাপেক্ষী না হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করা। 

২। ফানা আনিল হাওয়াঃ অনর্থক কাজকর্ম ও কথাবার্তা হতে বিরত থাকা। 

৩। ফানা আনিল এরাদাঃ নিজ ইচ্ছা বাসনাকে খোদার ইচ্ছায় বিলীন করে তাছলিম ও রজা অর্জন করা।

মাউতে আরবা বা প্রবৃত্তির চতুর্বিধ মৃত্যুঃ 

১। মউতে আবয়্যাজ বা সাদা মৃত্যুঃ উপবাস ও সংযমের মাধ্যমে অর্জিত এই মৃত্যুতে মানব মনে উজ্জ্বলতা ও আলো দেখা দেয়। 

২। মউতে আছওয়াদ বা কালো মৃত্যুঃ সমালোচনায় বিরক্ত বা রাগান্বিত না হয়ে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজকে সংশোধনের মনমানসিকতা অর্জনই কালো মৃত্যু।

৩। মউতে আহমর বা লাল মৃত্যুঃ কামস্পৃহা ও লোভ-লালসা হতে মুক্তিতে হাসিল হয়।

৪। মউতে আখজার বা সবুজ মৃত্যুঃ নির্বিলাস জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়ার মাধ্যমে সবুজ মৃত্যু লাভ হয়।

এই কোরআনী হেদায়তের সপ্তপদ্ধতি ,মানবজীবনের এক নিখুত সহজ, সরল ও স্বাভাবিক পন্থা; যা মানব জীবন পদ্ধতিতে স্বাচ্ছন্দ্য আনয়ন করে। (সূত্রঃ বাংলা উইকিপিডিয়া)

মন্তব্যঃ কুপ্রবৃত্তি বন্ধ করে রূহে মানবীয় প্রবৃত্তি জাগ্রত করার জন্য এই মাইজভান্ডারী তরিকার বিকৃত পথ ও পদ্দতি যে বিদআতে তাতে সন্দেহ করলে ইমান থাকবে কি? অপর পক্ষে সাধারণ মানুষ মাইজভান্ডারী বলেত বুঝে বাদ্যযন্ত্রসহ (ঢাক ঢোল, বাশিঁ, কাশি) গান। তাদের ইবাদতের অনুষ্টানে গেলে বুঝতেই পারবের না যে, আপনি কি হিন্দু না শিয়াদের অনুষ্ঠানে এসেছেন।

*** নকশবন্দিয়া তরিকার অজিফা ও সাধনার পদ্দতিঃ

নকশবন্দিয়া তরিকার গুরুত্বপূর্ণ তালিম হইল ছয় লতিফা এবং চার উপাদান তথা আব, আতশ, খাক, বাদ অর্থাৎ পানি, আগুন, মাটি ও বাতাস প্রভৃতির উপর মোরাকাবা করা। ছয় লতিফা: ক্বাল্ব, রূহ, ছের, খফী, আখফা, নফস প্রভৃতির উপর সাধনার প্রতিক্রিয়া পরিচালিত হয়। ইহা ব্যতীত পঞ্চ হাযরা তথা সায়ের ইলাল্লাহ, সায়ের ফিল্লাহ, সায়ের আনিল্লাহ, আলম-এ-মিসাল, আলম-এ-শাহাদাত প্রভৃতির উপর মোরাকাবা করিবার নিয়ম-পদ্ধতি এই তরিকায় বিদ্যমান রহিয়াছে।

নক্শবন্দিয়া সাধকগণ আহাদিয়াত, ওয়াহিদাত ও ওয়াহেদিয়াতের স্তরে পরিভ্রমণ করেন। ওয়াহিদাত ও ওয়াহেদিয়াত স্তর দুইটি উপনীত হইতেছে সায়ের ইলাল্লাহ’তে। আলমে আমর ও আলমে খালক একই স্তরে অবস্থিত। আহাদিয়াতের স্তর কেবলই সায়ের ফিল্লায় অবস্থিত।

নকশবন্দিয়া তরিকা মতে ৮টি বিষয়ের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা হয় যথা:

.    হুঁশদমঃ  শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি খেয়াল রাখা।

২.    নেগাহ্ বর কদমঃ  পীরের পদাঙ্কানুসরণ করা।

.    সফর দার ওয়াতনঃ  দেহ রাজ্যে পরিভ্রমণ করা।

৪.    খিলওয়াত দার আঞ্জুমানঃ  চুপি চুপি বাক্যালাপ।

৫.    ইয়াদ কার্দানঃ  সার্ব্বক্ষণিক জিকিরে মশগুল থাকা।

.    বাজগশতঃ আল্লাহর প্রতি ধাবিত হওয়া।

৭.    নেগাহ দাশ্তঃ  আল্লাহতে অন্তর্দৃষ্টি নিবন্ধ রাখা।

৮.    ইয়াদ দাশ্ত বা খোদগোজাশ্তঃ  নিজকে নিঃশেষ করিয়া আল্লাহতে চির জাগ্রত রাখা। এই তরিকা মতে নিচু স্বরে জিকির স্বীকৃত। এই তরিকার কোন কোন উপ-তরিকায় সামা জাতীয় গজলের প্রচলনও রহিয়াছে।

 

*** মোজাদ্দেদিয়া তরিকার আজিফা ও সাধনার পদ্দতিঃ

মোজাদ্দেদিয়া তরিকা মতে ছয় লতিফা, চতুর্ভুজ এবং পাঁচ হাজার মোরাকাবা বা অনুশীলন অত্যাবশ্যক। হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী রহ. পঞ্চ হাযরাকে নূতন নিয়মে সাজান। নক্শবন্দিয়া তরিকা মতে সায়ের ইলাল্লাহ, সায়ের ফিল্লাহ এবং আনিল্লাহর স্থলে হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী রহ. কিছুটা পরিবর্ত্তন ও পরিবর্ধন করেন। তিনি সায়ের ইলাল্লাহকে বেলায়েতে সোগরা বা ক্ষুদ্রতম বেলায়েত এবং সায়ের ফিল্লাহকে বেলায়েতে কুবরা বা বৃহত্তম বেলায়েত নামকরণ করিয়াছেন। আহাদিয়াতের স্তরকে তিনি পূর্ব্বেকার স্তর হইতে ২০/২২টি ঊর্ধ্বস্থিত স্তর বলিয়া অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। বেলায়েতে উলিয়া বা ঊর্ধ্বাস্থিত বেলায়েতকে তিনি নবুয়তের পর্য্যায় ভুক্ত বলিয়া অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। সালেক এই ২০/২২টি মাকামের মধ্য দিয়া আহাদিয়াতের স্তর অতিক্রম করিয়া বাকাবিল্লাহ বা কাইয়ুমিয়াত লাভ করেন।

*** সোহরাওয়ার্দিয়া তরিকার আজিফা ও সাধনার পদ্দতিঃ

তাঁহার জগৎ বিখ্যাত মুরিদ-খলিফা হযরত শিহাব উদ্দীন আবু আমর উমর বিন আবদুল্লাহ আল-সোহরাওয়ার্দী । তিনি ওয়াহদাতুল অজুদ বা সর্ব্বেশ্বরবাদ তত্ত্বজ্ঞানীদের সামনে উপস্থাপন করে। তার মতে ঐশী সত্তার বিকাশ হয় আদমিয়াত বা মানবত্বে। তিনি ইত্তেহাদের ভিত্তি মূলে হযরত আদম আ. কে সর্ব্ব প্রথম আল্লাহর শারীরিক বিকাশ বলিয়া মনে করেন। (নাউজুবিল্লাহ)। তাদের মতে, এই তরিকায় আল্লাহর অলিগণ কখনও জাহির, কখনও বাতেনে থাকেন। হযরত শাহজালাল ইয়ামেনী এই তরিকার জাহেরী ও বাতেনী উভয় অবস্থার ইমাম ও কুতুব ছিলেন।

হযরত শিহাব উদ্দীন সোহরাওয়ার্দী -এর মতে এই তরিকার ভিত্তিই হইলঃ

১. জওক (আধ্যাত্মিক স্বাদ গ্রহণ)

২. ওয়াজদ (উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনা)

এই তরিকায় আল্লাহর অলিগণ কখনও জাহির, কখনও বাতেনে থাকেন। হযরত শাহজালাল ইয়ামেনী রহ. এই তরিকার জাহেরী ও বাতেনী উভয় অবস্থার ইমাম ও কুতুব ছিলেন।

এই বিদআতি মতে তাদের ভাবধারার তরিকার জ্ঞান সম্পন্ন অলি-আউলিয়ার কিছু কিছু রীতিনীতি, কাজ-কর্ম্ম শরিয়তের বা সাধারণ মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির গণ্ডিভুক্ত না-ও হইতে পারে। ইহা বেলায়েতের প্রভাব মুক্ত এবং শরিয়তের আদেশ-নিষেধ সাময়িক ভাবে রহিত হওয়ার অবস্থা। ইহাকে খিজিরী বেলায়েত বলে। (নাউজুবিল্লাহ)। তার প্রতিষ্ঠিত এই সকল দর্শন ও তরিকা প্রচারের সময়ে ইমাম হযরত শিহাব উদ্দীন সোহরাওয়ার্দী বিভিন্ন উলামা ও মাশায়েখের বিরোধিতা শিকার হইয়াছিলেন। ইরান, ইরাক সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই তরিকার অনুসারী রহিয়াছেন।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

3 thoughts on “সূফীদের কয়েকটি তরিকার জিকির ও অযীফা

  1. তোমার মতে সবাই বুৰ্বক। তুমি একাই সব জানো। তুমি ভ্ৰান্তি তে আছো।

    Like

  2. থাপ্পর মেরে মানুষ বানাই দিবো ইনশা আল্লাহ। আগে আদব শিখ আমানু।

    Like

  3. লেখক একজন খুব উচ্চ শ্রেনীর বেদাতি আলেম
    বলেই প্রমানিত হয়।লেখক যে সমস্ত ওলীদের যেকের-অজিফার কথা বেদাতি বলে প্রকাশ করেছেন তা উনার মত জারকের পক্ষেই সম্ভব।
    কারন যাদের দ্বারা এদেশে অন্য ধর্মের হাজার হাজার লোকেরা মুসলমান হয়েছে, বর্তমান জামানার জারকেরা তাদেরকে বেদাত বলা স্বাভাবিক।
    যারা জারক তারাই শুধু

    Like

Leave a comment