বিদআতের ভয়াবহ পরিনতি

বিদআতের ভয়াবহ পরিনতি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

সুন্নাহ সম্মত আমল না করে মনগড়া বিদআতি আমল আবিস্কার করার প্রতি কুরআন কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। বিদআত না করে এর অনুসরনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং বিদআতের ভয়বহ পরিনতি সম্পর্কে কুনআন হাদিসে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

*وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ*

অর্থঃ রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। (সুরা হাশর ৫৯:৭)।

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

لَا تَجْعَلُوا دُعَاء الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاء بَعْضِكُم بَعْضًا قَدْ يَعْلَمُ اللَّهُ الَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمْ لِوَاذًا فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

অর্থঃ রসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরকে আহ্বানের মত গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে। (সুরা নুর ২৪:৬৩)।

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

وَمَن يَقْنُتْ مِنكُنَّ لِلَّهِ وَرَسُولِهِ وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُّؤْتِهَا أَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ وَأَعْتَدْنَا لَهَا رِزْقًا كَرِيمًا

অর্থঃ তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত হবে এবং সৎকর্ম করবে, আমি তাকে দুবার পুরস্কার দেব এবং তার জন্য আমি সম্মান জনক রিযিক প্রস্তুত রেখেছি। (সুরা আহযাব ৩৩:৩১)।

১। বিদ’আত ইসলামীদ্বীনে বিভক্তি সৃষ্টি করেঃ

বিদআত মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করে। যারা সঠিক পদ্ধতিতে ইসলাম মানার চেষ্টা করে তারা বিদআতকে ঘৃনা করে। ফলে ইসলামের মাঝে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক যুগ থেকেই বিদআতকে গ্রহণ ও বর্জনের প্রশ্নে মুসলিম উম্মাহ শিয়া ও সুন্নী এবং পরবর্তী কালে আরো শত দলে বিভক্ত হয়ে গেল। কত প্রাণহানির ঘটনা ঘটল, রক্তপাত হল। যদি সকলে কুরআন সুন্নাহর অনুসরণ করত এবং বিদআত পরিহার করত তবে বিশ্বের সকল মুসলিম এক হতে পারত। এমন কি প্রায়ই বিদআতি বিদআতি নিজেদের আমল নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়। কাজেই এক কথায় বলা যায় বিদআত মুসলমানদের বিভক্তির দিকে আহবান করে। যেমনটি ইহুদিগণ করে ছিল। কুরআনের স্পষ্ট বর্ণনা বুঝার পরও তারা বিভীন্ন মতভেদে লিপ্ত ছিল। মহান আল্লাহ বলেনঃ

وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

অর্থঃ তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পরে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং মতভেদ করেছে, এদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” (সূরা আল-ইমরান ৩:১০৫)।

২। বিদআত মানুষকে পথভ্রষ্ট করে

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা উম্মতের জন্য নিয়ে এসেছেন তা হল হক। এ ছাড়া যা কিছু ধর্মীয় আচার হিসাবে পালিত হবে তা পথভ্রষ্টতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

* فَمَاذَا بَعۡدَ ٱلۡحَقِّ إِلَّا ٱلضَّلَٰلُۖ * 

অর্থাৎ “সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কী আছে?” (সূরা ইউনুস ৩২ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

* مَّا فَرَّطۡنَا فِي ٱلۡكِتَٰبِ مِن شَيۡءٖۚ * 

অর্থঃ “আমি কিতাবে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ত্রুটি করিনি।” (সূরা আনআম ৩৮ আয়াত)

আবু নাজীহ ইরবাজ ইবনে সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে এমন এক বাগ্মীতাপূর্ণ ভাষায় ওয়াজ করলেন, তাতে আমাদের হৃদয় সন্ত্রস্ত হয়ে গেল আর চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা যেন আপনার বিদায়ী উপদেশ। আপনি আমাদের আরো উপদেশ দিন। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বনের জন্য তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি। আরো উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা তোমাদের নেতার অনুসরণ ও আনুগত্য করবে। যদি হাবশী গোলাম তোমাদের আমীর নির্বাচিত হয়, তবুও। আর তোমাদের মধ্যে যে জীবিত থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে, আমার সুন্নাত আঁকড়ে ধরা ও সৎপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ অনুসরণ করা। এ সুন্নাত ও আদর্শকে খুব মজবুতভাবে ধারণ করবে। আর (ধর্মের মধ্যে) সকল প্রকার নবসৃষ্ট বিষয় থেকে দূরে থাকবে। জেনে রাখো, প্রত্যেকটি বিদআতই পথভ্রষ্টতা (আবু দাউদ, তিরমিজি)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেন, তোমরা (দ্বীন) নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।” (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)

 

বিদ’আত সহীহ সুন্নাহকে বিতাড়িত করে তার স্থলাভিষিক্ত হয়ঃ

ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইশলামি শরীয়তও পরিপূর্ন। কাজেই আমল আকিদার ক্ষেত্রে আর সংযোজন করার কোন কার নেই। একটি একটা ভরা কলসিতে যদি পানি ঢালা হয় তবে যতটুকু পানি কলসি থেকে পড়ে যাবে ঠিক ততটুকু পানিই কলসিতে ঢুকবে। অনুরুপভাবে ইসলামি শরীয়তের যেখানেই বিদআত ঢুকবে সেখান থেকেই সুন্নত বিদায় নিবে। কেননা বিদআত অনুযায়ী কেউ আমল করলে অবশ্যই সে এক বা একাধিক সুন্নাত পরিত্যাগ করে। উলামায়ে কিরাম বলেছেন, যখন কোন দল সমাজে একটা বিদআতের প্রচলন করে, তখন সমাজ থেকে কম করে হলেও একটি সুন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়।

যেনমঃ কুরআন সুন্নাহ আলোকে জানতে পারি, সালাতের পরে সহিহ হাদিসে অনেকগুল দুয়া পড়ার কথা আছে। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে এই দুয়া ও জিকিরের পরিবর্তে সম্মিলিত মুনাজাত করা হয়। এখানে সম্মিলিত মুনাজেরত বিদআত ঢুকার ফলে সহিহ সুন্নাহর দুয়া ও জিকিরের বিদায় নিল। এমনি ভাবে অনেক আমল আছে যা সুন্নতকে বিদায় দিয়ে নিজে স্থান করে নিয়েছে। 

হাসান ইবনু আতিয়া বলেন, যে ব্যক্তি দ্বীনে কোন বিদআত গ্রহণ করবে আল্লাহ তাআলা তার থেকে ততটুকু সুন্নাহ ঊঠিয়ে নিবেন। তার পর কিয়ামত পর্যন্ত তাদের মধ্যে সে সুন্নত ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (দরেমী সনদ সহিহ)

৪। বিদআত সবচেয়ে নিকৃষ্ট আমলঃ

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভাষণ দিতেন তখন তাঁর চোখ দুটি লাল হয়ে যেতো, কন্ঠস্বর জোরালো হতো, তাঁর ক্রোধ বৃদ্ধি পেতো, যেন তিনি কোন সেনাবাহিনীকে সতর্ক করছেন। তিনি বলতেনঃ তোমরা সকাল ও সন্ধ্যায় আক্রান্ত হতে পারো (অথবা তোমাদের সকাল-সন্ধ্যা কল্যাণময় হোক)। তিনি আরো বলতেনঃ আমার প্রেরণ ও ক্বিয়ামাত এ দুটি আঙ্গুলের অবস্থানের মত পরস্পর নিকটবর্তী। তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল মিলিয়ে দেখান। অতঃপর তিনি বলেনঃ সবচেয়ে উত্তম নির্দেশ হল আল্লাহ্‌র কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পথ। দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভাবন সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট কাজ প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা তিনি আরো বলেনঃ কোন ব্যাক্তি ধন-সম্পদ রেখে (মারা) গেলে তা তার পরিবারবর্গের এবং কোন ব্যাক্তি দেনা অথবা অসহায় সন্তান রেখে (মারা) গেলে তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমার এবং তার সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্বভারও আমার যিম্মায়। (ইবনে মাজাহ ১/৪৫, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ, মুসলিম ৮৬৭, নাসায়ী ১৫৭৮, ১৯৬২; আবূ দাঊদ ২৯৫৪, আহমাদ ১৩৭৪৪, ১৩৯২৪, ১৪০২২, ১৪২১৯, ১৪৫৬৬; দারিমী ২০৬। তাহক্বীক্ব আলবানী হাদিসের মান সহিহ)।

 ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সর্বোত্তম কালাম হল আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুনভাবে উদ্ভাবিত পন্থাসমূহ। ‘তোমাদের কাছে যার ও‘য়াদা দেয়া হচ্ছে তা ঘটবেই, তোমরা ব্যর্থ করতে পারবে না। (সহিহ মুসলীম ৭২৭৭,আধুনি প্রকাশনী- ৬৭৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮১)

৫। বিদআতির আমর কবুল হয়নাঃ

মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) … ইবরাহীম ইবনু তাইমী (রহঃ) এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, আমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব ও এই সাহীফায় যা আছে, তা ছাড়া অন্য কোন কিতাব নেই, যা আমরা পাঠ করে থাকি। তিনি বলেন, এ সাহীফায় রয়েছে, যখমসমূহের দন্ড বিধান, উটের বয়সের বিবরণ, এবং আইর পর্বত থেকে সত্তার পর্যন্ত মদিনা হারাম হওয়ার বিধান। যে ব্যাক্তি এর মধ্যে (সুন্নাত বিরোধী) বিদআত উদ্ভাবন করে কিংবা বিদআতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতা ও সকল মানুষের লানত। আল্লাহ তাঁর কোন নফল ও ফরয ইবাদত কবূল করেন না। আর যে নিজ মাওলা (প্রভু) ব্যতীত অন্যকে (প্রভু) মাওলা রূপে গ্রহণ করে, তার উপর অনুরূপ লানত। আর নিরাপত্তা দানে সর্বস্তরের মুসলিমগণ একই স্তরের এবং যে ব্যাক্তি কোন মুসলিমের চুক্তি ভঙ্গ করে তার উপরও অনুরূপ লা’নত। (সহিহ বুখারি ২৯৪৮ ইফাঃ)

মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কুরআন এবং এ কাগজে যা লিখা আছে তা ছাড়া কোন কিছু লিপিবদ্ধ করিনি। (উক্ত লিপিতে রয়েছে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আয়ির পর্বত থেকে এ পর্যন্ত মদিনার হরম এলাকা। যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদআত উদ্ভাবন করে কিংবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ তা‘‘আলা ফিরিশতা ও সকল মানুষের লা‘নত। তা কোন ফরয কিংবা নফল ইবাদত কবূল হবে না। আর সকল মুসলমানের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা একই পর্যায়ের। সাধারণ মুসলিম নিরাপত্তা দিলে সকলকে তা রক্ষা করতে হবে। যে ব্যাক্তি কোন মুসলমানের দেওয়া নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে তার উপর আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত এবং ফিরিশতাগণ ও সকল মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরয ইবাদত কবূল হবে না। আর যে স্বীয় মনীবের অনুমতি ব্যতীত অন্যদের সাথে বন্ধুত্বের চুক্তি করে, তার উপর আল্লাহ তা‘‘আলার লা‘নত এবং ফিরিশ্তাগণ ও সকল মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরয ইবাদত কবূল হবে না।

আবূ মূসা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অমুসলিমদের কাছে থেকে (জিযিয়া স্বরূপ) একটি দ্বীনার বা দিরহামও তোমরা পাবে না, তখন তোমাদের কি অবস্থা হবে? তাকে বলা হল, হে আবূ হুরায়রা (রাঃ) আপনি কিভাবে মনে করেন যে, এমন অবস্থা দেখা দিবে, তিনি বললেন, হ্যাঁ, কসম সে মহান সত্তার যাঁর হাতে আবূ হুরায়রার প্রাণ, যিনি সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে স্বীকৃত (অর্থাৎ মুহাম্মদ) এর উক্তি থেকে আমি বলছি। লোকেরা বলল, কি করণে এমন হবে? তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রদত্ত নিরাপত্তা ক্ষুন্ন করা হবে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা যিম্মিদের অন্তরকে কঠোর করে দিবেন; তারা তাদের হাতে সম্পদ দিবে না।  (সহিহ বুখারি ২৯৫৫ ইফাঃ)

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ তাআলা বিদআতীর তোওবা গ্রহণ করেন না যতক্ষণ না সে বিদআত থেকে সম্পূর্ণরূপে তওবা করে।” (তবরানী, সনদ হাসান)

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল যা দ্বীনে নেই সে কাজটি আল্লাহ কাছে পরিত্যজ্য।” (বুখারী ও মুসলিম)

৬। বিদআত সৃষ্টিকারীর প্রতি আল্লাহর ফেরেশ্তা সমূহ এবং সব লোকের অভিশাপ হয়ে থাকেঃ

আসেম (রাহঃ) বলেন, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কে জিজ্ঞাসা করা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি মদীনাকে হারাম আখ্যা দিয়েছেন? তিনি বললেন হাঁ। উমুক স্থান থেকে উমুক স্থান পর্যন্ত। এ স্থানের কোন গাছ কাটা যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এখানে কোন বিদআত সৃষ্টি করবে তার উপর আল্লাহ ফেরেশ্তা এবং লোক সকলের অভিশাপ হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

৭।  কিয়ামতের দিন হাউজে কাওসার পানি থেকে বঞ্চিত হবেঃ

আলী ইবনু হূজর আাস সা’দী ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর কিছুটা তন্দ্রার ভাব হল, এরপর তিনি মুচকি হেসে মাথা উঠালেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিসে আপনার হাসি এল? তিনি বললেন , এই মাত্র আমার উপর একটি সূরা নাযিল হয়েছে। এই বলে তিনি পড়লেন, 

إِنَّآ أَعۡطَيۡنَـٰكَ ٱلۡكَوۡثَرَ (١) فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ (٢) إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلۡأَبۡتَرُ (٣)

এরপর বললেন, তোমরা কি জানো (কাওসার) কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, সেটা হল একটি নহর। আল্লাহ তাআলা আমাকে যার ওয়াদা করেছেন। সেখানে বহু কল্যাণ রয়েছে। সেটি একটি জলাশয়। কিয়ামাতের দিন আমার উম্মাত (পানি পানের জন্য) সেখানে আসবে। তার গ্লাসের সংখ্যা হবে আকাশের তারকার সমান। অতঃপর তাদের মধ্যে থেকে একজন বান্দাকে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, পরোয়ারদেগার! সে তো আমার উম্মত। বলা হবে, আপনার জানা নেই যে, আপনার পরে এরা কি নতুন রীতি (বিদাআত) উদ্ভাবন করেছিল। ইবনু হুজর আরো একটু যোগ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে মসজিদে বসা ছিলেন। শেষে আছে আল্লাহ বলবেন, এ ব্যাক্তি যে আপনার পর কি কি বিদআত সৃষ্টি করেছিল (তা আপনি জানেন না)। (সহিহ মুসলিম ৭৭৯ ইফাঃ)

ইউনূস ইবনু আবদুর আ’লা সাদাফী (রহঃ) … রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মু সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, আমি হাওয (কাওসার) সম্পর্কে লোকদের আলোচনা করতে শুনতাম। কিন্তু আমি (নিজে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ সম্বন্ধে কিছু শুনিনি। পরে যখন একদিন ঐ বিষয়ের আলোচনা এল, এ সময় একটি মেয়ে আমার চুল আচড়িয়ে দিচ্ছিল, তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বোধন করতে শুনলামঃ হে লোক সকল! তখন মেয়েটিকে আমি বললাম, তুমি আমার থেকে দুরে সরে যাও। সে বলল, তিনি তো পুরুষদের ডাক দিয়েছেন এবং স্ত্রীলোকদের ডাকেননি। আমি বললাম, আমিও তো লোকদের একজন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের জন্য ‘হাওয’ এর কাছে অগ্রগামী হবো। তাই সাবধান! আমার কাছে তোমাদের এমন কেউ যেন না আসে, যাকে আমার কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দেওয়া হবে, যেমন হারানো উটকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর আমি বলতে থাকব, কেন তাদের তাড়ানো হচ্ছে? তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না, তারা আপনার পরে কী নতুন বিষয়ের (বিদ’আত) উদ্ভাবন করেছে? তখন আমিও বলব, দুর হও! (সহিহ মুসলিম ৫৭৭২ ইফাঃ)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই হাউযের পাড়ে এমন কিছু লোক আসবে যারা দুনিয়াতে আমার সাহচর্য লাভ করেছিল। এমন কি যখন আমি তাদের দেখতে পাব এবং তাদেরকে আমার সম্মুখে নিয়ে আনা হবে, তখন আমার নিকট আসতে তাদের বাধা দেওয়া হবে। তারপর আমি বলব, আয় রব্ব! এরা আমার সাথী, এরা আমার সাথী। তখন আমাকে বলা হবে, অবশ্য আপনি জানেন না, আপনার পর এরা কি উদ্ভাবন (কিরূপ বিদ’আত) করেছে। (সহিহ মুসলিম ৫৭৯২ ইফাঃ)

৮।  বিদআতের ফলে আল্লাহর দ্বীন বিকৃত হয়ঃ

বিদআতের সংজ্ঞায় দেখেছি দ্বীনের নামে নতুন কিছু চালু করাই বিদআত। দ্বীনের পরিবর্তি নতুন দ্বীনই হল বিদআতের প্রধান কাজ। কাজেই এ সম্পর্ক কোনা দ্বিমত নেই যে, বিদআত আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করে। বিদআত যে দ্বীর বিকৃত করে এর জ্বলন্ত উদাহরণ আজকের খৃষ্টান ধর্ম। তারা ধর্মে বিদআতের প্রচলন করতে করতে তার মূল কাঠামো পরিবর্তন করে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পথভ্রষ্ট হিসাবে অভিহিত হয়েছে। তাদের বিদআত প্রচলনের কথা আল-কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ

وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاء رِضْوَانِ اللَّهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا فَآتَيْنَا الَّذِينَ آمَنُوا مِنْهُمْ أَجْرَهُمْ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ

অর্থঃ আর বৈরাগ্য, সে তো তারা (ঈসা আঃ এর অনুসারীগণ) নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে; আমি এটা তাদের উপর ফরজ করিনি। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারা নিজেরাই এ বিদআত বানিয়ে নিয়েছে। তারপর সেটি যেভাবে মেনে চলা দরকার, সেভাবে মেনেও চলেনি।  তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল, তাদের প্রতিদান আমি দিয়েছি৷ তবে তাদের অধিকাংশই পাপী৷  

সুফিবাদের বিদআত প্রথম খৃষ্টানেরাই আবিস্কার করে। মহান আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন তারা এই ভাল উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেছিল।  কিন্তু ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত যে কোন কাজ করলেই তা গ্রহণযোগ্য হয় না। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুমোদন প্রয়োজন। এভাবে যারা ধর্মে বিদআতের প্রচলন করে তাদের অনেকেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভাল থাকে। কিন্তু তাতে নাজাত পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ইয়াহুদী ও খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মে অন্য জাতির রসম-রেওয়াজ ও বিদআত প্রচলন করে ধর্মকে এমন বিকৃত করেছে যে, তাদের নবীগণ যদি আবার পৃথিবীতে ফিরে আসেন তাহলে তাদের রেখে যাওয়া ধর্ম তাঁরা নিজেরাই চিনতে পারবেন না। এমনিভাবে আমাদের মুসলিম সমাজে শিয়া রাফেজী, খারেজী, উপমহাদেশের মাজার পুজারী ব্রেলভীগনও বিদআতের প্রচলন করে দ্বীন ইসলামকে কিভাবে বিকৃত করেছে তার বর্ণনা জন্য এই কিতাব খানা লেখা।

৯। ভাল কাজ প্রচলন করলে যেমন নেক পাবে, বিদআত প্রচলনে গুনাহ পেতে থাকবেঃ

কাসীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমর সুন্নাত থেকে কোন একটি সুন্নাহ কে জীবিত করেছে আর অন্য লোকেরা সে মতে আমল করেছে তাকে সব আমলকারীর সমান সাওয়াব দেয়া হবে। আবার তাদেরকেও কম দেয়া হবে না। আর যে ব্যক্তি কোন বিদআত চালু করেছে এবং লোকেরা সে মতে আমল করেছে তাকে সব আমলকারীর সমান পাপ দেয়া হবে। আবার তাদের পাপে কম করা হবে না। (ইবনে মাজাহ, সনদ সহীহ)

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি লোক জনকে হেদায়েতের দিকে আহবান করবে তাকে সে হেদায়াত মতে আমলকারী সব লোকের সোওয়াব দেয়া হবে। আর লোকজনের সোওয়াবেও কোন কম করা হবে না। এমনি ভাবে যে ব্যক্তি লোকজনকে গোমরাহীর দিকে আহবান করবে তাকে সে গোমরাহী মতে আমল কারীর সব লোকের সমান পাপ দেয়া হবে । আবার লোক জনের পাপেও কোন কম করা হবে না। (মুসলিম)

আবূ জুহাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি কোন ভালো প্রথার প্রচলন করলে এবং তার পরে তদনুসারে কাজ করলে তার জন্য এ কাজের পুরস্কার রয়েছে, অধিকন্তু তার অনুসরণকারীদের সমপরিমাণ পুরস্কারও রয়েছে। অবশ্য তাতে তাদের পুরস্কারে কোন ঘাটতি হবে না। পক্ষান্তরে কোন ব্যাক্তি কোন মন্দ প্রথার প্রচলন করলে এবং তার পরে তদনুযায়ী কাজ করা হলে তার জন্য এ কাজের গুনাহ রয়েছে এবং যারা তদনুসারে কাজ করবে তাদের গুনাহের সমপরিমাণ তার উপর বর্তাবে, এতে তাদের গুনাহের পরিমাণ কিছুই কমবে না। (ইবনে মাজাহ ৫/২০৭)

মুনযির ইবনু জারীর থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমরা ভোরের দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় তার কাছে পাদুকাবিহীন, বস্ত্রহীন, গলায় চামড়ার আবা পরিহিত এবং নিজেদের তরবারি ঝুলন্ত অবস্থায় একদল লোক আসল। এদের অধিকাংশ কিংবা সকলেই মুযার গোত্রের লোক ছিল। অভাব অনটনে তাদের এ করুণ অবস্থা দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখমণ্ডল পরিবর্তিত ও বিষন্ন হয়ে গেল। তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন, অতঃপর বেরিয়ে আসলেন। তিনি বিলাল (রাযিঃ) কে আযান দিতে নির্দেশ দিলেন। বিলাল (রাযিঃ) আযান ও ইকামাত দিলেন। সালাত শেষ করে তিনি উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “হে মানব জাতি! তোমরা নিজেদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র ব্যক্তি থেকে আদাম (আঃ) থেকে সৃষ্টি করেছেন। ….. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী”- (সূরা আন নিসা ৪:১)। অতঃপর তিনি সূরা হাশরের শেষের দিকের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তি যেন ভবিষ্যতের জন্য কী সঞ্চয় করেছে সেদিকে লক্ষ্য করে”- (সুরাহ আল হাশর ৫৯:১৮)।

অতঃপর উপস্থিত লোকদের কেউ তার দীনার, কেউ দিরহাম, কেউ কাপড়, কেউ এক সা’ আটা ও কেউ এক সা খেজুর দান করল। অবশেষে তিনি বললেন, অন্ততঃ এক টুকরা খেজুর হলেও নিয়ে আসো। বর্ণনাকারী বলেন, আনসার সম্পপ্রদায়ের এক ব্যক্তি একটি বিরাট থলি নিয়ে আসলেন। এর ভারে তার হাত অবসাদগ্ৰস্ত হয়ে যাচ্ছিল কিংবা অবশ হয়ে গেল। রাবী আরো বলেন, অতঃপর লোকেরা সারিবদ্ধভাবে একের পর এক দান করতে থাকল। ফলে খাদ্য ও কাপড়ের দু’টি স্তুপ হয়ে গেল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মুবারক খাটি সোনার ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে হাসতে লাগল।

অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন উত্তম প্রথা বা কাজের প্রচলন করে সে তার এক কাজের সাওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা তার এ কাজ দেখে তা করবে সে এর বিনিময়েও সাওয়াব পাবে। তবে এতে তাদের সাওয়াব কোন অংশে কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে (ইসলামের পরিপন্থী) কোন খারাপ প্রথা বা কাজের প্রচলন করবে, তাকে তার এ কাজের বোঝা (গুনাহ এবং শাস্তি) বহন করতে হবে। তারপর যারা তাকে অনুসরণ করে এ কাজ করবে তাদের সমপরিমাণ বোঝাও তাকে বইতে হবে। তবে এতে তাদের অপরাধ ও শাস্তি কোন অংশেই কমবে না। (সহিহ মুসলিম হাদিস একাডেমি ২৪৪১ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২২০, ইসলামীক সেন্টার ২২২১)

মন্তব্যঃ এই হাদিস দ্বারা অনেকে বিদআতে হাসনার দলীল দেন। (তাদের জন্য বলছি) দান করা একটি ভাল রীতি। কিন্তু অনেকের মধ্যে যে প্রথম শুরু করবে, তাঁর হবে উক্ত সওয়াব। কোন নতুন রীতি আবিষ্কার করা উদ্দেশ্য নয় চলতে থাকা কোন রীতির। হাদীসের শব্দে ঐ রীতিকে ‘সুন্নাহ’ বলা হয়েছে, যা বিদআতের বিপরীত। সুতরাং ‘বিদআতে হাসনার’ দলীল তাতে নেই। বলা বাহুল্য, উক্ত হাদীসে নতুন রীতি চালু করার পর্যায়ভুক্ত তিন প্রকার কাজঃ

(ক) শরিয়তসম্মত ভাল কাজ। কিন্তু অনেকের মধ্যে সর্বপ্রথম করা।

(খ) কোন সুন্নত কাজ, যা উঠে গিয়েছিল বা লোকমাঝে প্রচলিত করা অথবা জানিয়ে তাঁর প্রচলন করা।

(গ) কোন এমন কাজ করা, যা কোন শরীয়তসম্মত ভাল কাজের মাধ্যম। যেমন দ্বীনী মাদ্রাসা নির্মাণ করা, দ্বীনী বই-পত্র ছাপা ইত্যাদি। (ব্যাখ্যা অংশটুকু, ইবনে উষাইমীন)

১০। বিদআতীকে সহযোগিতাকারীর উপর আল্লাহর অভিশাপঃ

আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ অভিশাপ করেছেন সেই ব্যক্তিকে যে আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো নামে জন্তু জবেহ করে। আর যে জমির সীমা চুরি করে। আর যে মাতা পিতাকে অভিশাপ দেয়। আর যে বেদআতীকে আশ্রয় দেয়। (সহিহ মুসলিম)

১১। বিদআতপন্থী লোকের কোন নেক আমল গ্রহণযোগ্য হবে নাঃ

ফুযাইল ইবনু আয়ায (রহ.) বলেন, যখন তোমরা বিদআতপন্থী কোন লোক আসতে দেখবে সে রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তা গ্রহণ করবে। বিদআতীর কোন আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যে ব্যক্তি বিদআতপন্থীকে সহযোগিতা করল সে যেন দ্বীন ধ্বংস করতে সহযোগিতা করল। (খাছায়িছূ আহলিস সুন্নাহ)

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment