আরাফা থেকে মুজদালিফার আসা ও মুজদালিফার আমলসমূহ

আরাফা থেকে মুজদালিফার আসা ও মুজদালিফার আমলসমূহ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। আরাফা থেকে মুজদালিফার প্রত্যাবর্তনেঃ

যখন সূর্য ডুবে যাবে এবং সূর্য অস্ত গিয়েছে এরূপ নিশ্চিত হবেন তখন প্রশান্ত মনে ধীরে সুস্থে মুযদালিফায় রওয়ানা দেবেন। এ সময় বেশী বেশী তালবিয়াহ পড়তে থাকবেন। সাবধান, কোন অবস্থাতেই সূর্যাস্তের আগে আরাফার ময়দান ত্যাগ করা যাবে না। তবে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আরাফাতে মাগরিবের নামায না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা দেবেন। পৌঁছতে দেরী হলেও মাগরিব-এশা মুযদালিফায়ই পড়তে হবে। এ দেরীকে কাযা মনে করবেন না। সেদিনের জন্য এটাই নিয়ম। তবে যদি ঈশার সালাত কাজা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে পথিমধ্যেই মাগরিক ও ঈশার সালাত আদায় করা।

সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আরাফাত থেকে যখন মুযদালিফায় রওয়ানা সময়টি খুবই কঠিন। আরাফাতের ময়দানে সারাদিন অবস্থানের পর সবাই মুজদালিফায় যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয় থাকে। অনেক আসরের সালাতের পরই গাড়িতে বসে অপেক্ষা করে থাকে। কারন হাজিদের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। কাজেই মহিলা ও মাজুল ছাড়া সকলের উচিত হেটে আরাফাত থেকে মুযদালিফায় যাওয়া। সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রায় ত্রিশ/চল্লিশ লক্ষ লোক এক সময়ে একযোগে আরাফা থেকে মুযদালিফায় রওয়ানা দেয়। অভিজ্ঞতা বলে গাড়ি থেকে আরাফাত থেকে মুযদালিফায় হেটে যাওয়া অনেক সহজ্জ। কারন গাড়ির তুলনায় হাজিদের সংখ্যা বিশ ত্রিশ গুন বেশী। যেখান ভিড়ের কারনে হেটে যাওয়াই কষ্টকর সেখান গাড়িতো চলারই কথা নয়। বিষয়টি বাস্থবেও তাই ট্রাফিকজ্যাম কতটা কঠিন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। মাঝে মধ্যে গাড়ীগুলো এমনভাবে থেমে থাকে মনে হয় যেন আর চলবে না। যদি সকল গাড়ি ড্রাইভার মক্কা বা সৌদিবাসি হত তবে যাতায়তে একটু সুবিধা হত। কিন্তু বেশির ভাগ ড্রাইভার বিদেশী ও নতুন তারা ঠিক মত মক্কার রাস্তাঘাট চিনে না। তাই তারা অনেক সময় ভুল রাস্তা অনুসরণ করে। অনেক সময় হাজিদের পথি মধ্যে নামিয়ে দিয়ে বলে, ‘‘সব রাস্তা বন্ধ, গাড়ী আর চলবে না। অনেক গাড়িতে বসে থাকে কেউ রাত দুইটায়, কেউ রাত ৩টায় কেউ আবার রাত চারটায় মুজদালিফায় পৌছায়।  এমন কি যারা গাড়িতে আসেন তাদের কোন কোন গাড়ি ফজরের আগে মুযদালিফায় পৌঁছতেই পারে না। অথচ আরাফা থেকে মুযদালিফার দূরত্ব মাত্র ৬ থেকে৭ কিলোমিটার।

হাজি ও গাড়ির ড্রাইভার দুই জনই নতুন থাকায় অনেকে মুজদালিফার সীমান চিনতে পারেনা। ট্রাফিকজামে বসে থাকতে থাকতে মনে হয়, মুজদালিফায় পৌছে গেছি। তাই তারা ভুলে মুজদালিফায় পৌছার পূর্বেই মুজদালিফা এসে গেছে ধারণা করে মাঝপথে মাগরিব এশা পড়ে ও রাত্রি যাপন করে। তাদের দেখাদেখি অনেক বিদশী হাজিও এই একই ভুল করে। অবশেষে ফজর বাদ মুযদালিফার সীমানায় এসে সাইনবোর্ড দেখে তাদের ভুল বুঝতে পেরে আক্ষেপ করেঅ। এভাবে হজ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় অনেক হাজীর। কিন্তু  যারা হেটে আরাফাত থেকে মুযদালিফায় যাবে তাদের এই ভুল হওয়া সম্ভাবনা নাই। কেননা, শুধু হাঁটার জন্য আলাদা পথ রয়েছে, যা সমতল ও পীচ ঢালা। এ পথে কোন যানবাহন ঢুকেনা। তাই হাঁটতে বেশ আরাম। রাস্তায় পর্যাপ্ত বাতি থাকে। মেঘবৃষ্টি সাধারণতঃ হয় না। আবহাওয়া থাকে ভাল। সকলেই একযোগে একমুখী চলা। সবার মুখে একই তালবিয়া ‘‘লাববাইক আল্লাহুম্মা লাববাইক…’’ প্রয়োজনে রাস্তার পাশে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটতে পারেন। দলবদ্ধ হয়ে পথ চললে ভাল হয়। যাদের সাথে নারী ও শিশু থাকবে তারা হেটে আসার সময় একটু সতর্ক থাকবেন। কেননা, অনেক সময় ভিড়ের কারণে হারিয়েও যায়। হারিয়ে গেলে চিন্তায় খুবই কষ্ট পাবেন। এই জন্যই সাথে শিশু ও নারী থাকলে বিশেষ সাবধান অবলম্ভন করতে হবে। নতুবা নারী-শিশুদেরকে বাসেই আনবেন। এই হিসাবে একান্ত মাজুর, অতি বৃদ্ধ, মহিলা, শিশু, দুর্বল ও রোগী হলে গাড়িতে যাওয়া ভাল। তা না হলে সবার জন্যই আরাফাত থেকে মুযদালিফায় হেটে যাওয়া খুবই উত্তম হবে। সে জন্য আগে থেকেই নিয়তের পাশাপাশি প্রস্ততি সরূপ আরাফাতের ময়দানে হালকা বিছানা পত্র ছাড়া ভারী কোন লাগেজ না নেয়াই ভাল।

২। আরাফা হতে প্রত্যাবর্তনে চলার গতিঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে তার ভাই ফায্‌ল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাহনে তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফাতে সন্ধ্যাবেলা এবং মুযদালিফায় ভোরবেলা লোকদের উদ্দেশে বললেন, যখন তারা অগ্রসর হচ্ছিল- “তোমরা ধীরে-সুস্থে অগ্রসর হও।” তিনিও নিজে উষ্ট্রীর গতি ধীর করে অগ্রসর হচ্ছিলেন এবং এভাবে মুহাস্‌সির পৌঁছলেন- যা মিনার অন্তর্গত। তিনি (এখানে) বললেন, তোমরা নুড়ি পাথর তুলে নাও যা জামরায় নিক্ষেপ করা হয়।

রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরায় পাথর নিক্ষেপ পর্যন্ত অনবরত তালবিয়াহ্‌ পাঠ করতে থাকলেন। (সহিহ মুসলিম ২৯৮০)

 ‘উরওয়াহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, উসামাহ (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন আমি সেখানে উপবিষ্ট ছিলাম, বিদায় হজ্জের সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ‘আরাফা হতে ফিরতেন তখন তাঁর চলার গতি কেমন ছিল? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্রুতগতিতে চলতেন এবং যখন পথ মুক্ত পেতেন তখন তার চাইতেও দ্রুতগতিতে চলতেন। (সহিহ বুখরি ১৬৬৬)

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি ‘আরাফার দিনে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে ফিরে আসছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পিছনের দিকে খুব হ্যাঁকডাক ও উট পিটানোর শব্দ শুনতে পেয়ে তাদের চাবুক দিয়ে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা ধীরস্থিরতা অবলম্বন কর। কেননা, উট দ্রুত হাকানোর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। (সহিহ বুখরি ১৬৭১)

৩।  পথী মধ্যে অজু করছেন কিন্তু সালাত আদায় করেন নাইঃ

১. উসামাহ ইব্‌নু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার ময়দান হতে রওনা হলেন এবং উপত্যকায় পৌঁছে নেমে তিনি পেশাব করলেন। অতঃপর উযূ করলেন কিন্তু উত্তমরূপে উযূ করলেন না। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল! সালাত আদায় করবেন কি?’ তিনি বললেনঃ ‘সালাতের স্থান তোমার সামনে’। অতঃপর তিনি আবার সওয়ার হলেন। অতঃপর মুযদালিফায় এসে সাওয়ারী থেকে নেমে উযূ করলেন। এবার পূর্ণরূপে উযূ করলেন। তখন সালাতের জন্য ইক্বামাত দেওয়া হলো। তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর সকলে তাদের অবতরণস্থলে নিজ নিজ উট বসিয়ে দিলো। পুনরায় ‘ইশার ইক্বামাত দেয়া হলো। অতঃপর তিনি ‘ইশার সালাত আদায় করলেন এবং উভয় সালাতের মধ্যে অন্য কোন সালাত আদায় করলেন না। (সহিহ বুখারি ১৩৯)

২. উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি একটি গিরিপথের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটিয়ে উযূ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি সালাত আদায় করবেন? তিনি বললেনঃ সালাত তোমার আরো সামনে।(সহিহ বুখারি ১৬৬৭)

৩. উসামাহ ইব্‌নু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফা হতে ফেরার সময় গিরিপথে অবতরণ করে পেশাব করলেন এবং অযূ করলেন। তবে পূর্ণাঙ্গ অযূ করলেন না। আমি তাঁকে বললাম, সালাত? তিনি বললেন, সালাত তো তোমার সামনে। অত:পর তিনি মুযদালিফায় এসে অযূ করলেন এবং পূর্ণাঙ্গ অযূ করলেন। অত:পর সালাতের ইক্বামাত হলে তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। এরপর প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে উট দাঁড় করিয়ে রাখার পর সালাতের ইক্বামাত দেয়া হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সালাত আদায় করলেন। ‘ইশা ও মাগরিবের মধ্যে তিনি আর কোন সালাত আদায় করেননি। (সহহি বুখারি ১৬৭২)

৪. নাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ  তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশার সালাত এক সাথে আদায় করতেন। এছাড়া তিনি সেই গিরিপথ দিয়ে অতিক্রম করতেন যে দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গিয়েছিলেন। আর সেখানে প্রবেশ করে তিনি ইসতিনজা করতেন এবং অযূ করতেন কিন্তু সালাত আদায় করতেন না। অবশেষে তিনি মুযদালিফায় পৌঁছে সালাত আদায় করতেন। (সহহি বুখারি ১৬৬৮)

৫. নাফি‘ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশার সালাত এক সাথে আদায় করতেন। এছাড়া তিনি সেই গিরিপথ দিয়ে অতিক্রম করতেন যে দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিয়েছিলেন। আর সেখানে প্রবেশ করে তিনি ইসতিনজা করতেন এবং উযূ করতেন কিন্তু সালাত আদায় করতেন না। অবশেষে তিনি মুযদালিফায় পৌঁছে সালাত আদায় করতেন।(সহিহ বুখারি ১৬৬৮)

৪। সালাত জমা করে আদায় করাঃ

মুযদালিফায় রাত্রিযাপন হজ্জের একটি ওয়াজিব আমল। এই আমল কোনভাবেই ত্যাগ করা যাবে না। আরাফা থেকে মুজদালিফায় এসে প্রথম কাজ মাগরিব ও এশা জমা করে কসর আদায় করা। বিলম্ব হলেও মুযদালিফায় পৌঁছে মাগরিব-এশা পড়তে হবে, এর আগে নয়। এই দুই সালাতকে বিলম্ব করতে করতে অর্ধ রাত্রির পরে নিয়ে যাওয়া জায়েয হবে না। তবে উজর থাকলে জায়েয।

দলিলঃ

১. আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জের সময় মুযদালিফায় মাগরিব এবং ‘ইশা একত্রে আদায় করেছেন। (সহহি বুখারি ১৬৭৪)

২. সালামা ইব্‌ন কুহায়ল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র (রাঃ) -কে দেখেছি যে, তিনি (মুযদালিফায়) মাগরিবের তিন রাক‘আত এবং ইশার দুই রাক‘আত সালাত আদায় করেন এবং বলেন, আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তাঁদেরসহ এই স্থানে এরূপ করেছেন এবং বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামও এই স্থানে এরূপই করেছিলেন। (সুনানে নাসাঈ ৪৮১)

৩. উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আরাফাহ্ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সওয়ারীতে পিছনে উপবিষ্ট ছিলেন। উপত্যকায় পৌঁছে তিনি তাঁর উটনী বসালেন, এরপর প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য গেলেন। তিনি ফিরে এলেন। আমি পাত্র থেকে পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি ওযূ করলেন, এরপর সওয়ার হলেন এবং মুযদালিফায় পৌঁছে তিনি মাগরিব ও ‘ইশার সালাত একত্রে আদায় করলেন।  (সহিহ মুসলিম ২৯৯৫)

৪. সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ইব্‌ন উমর (রাঃ) যখন আরাফাত হতে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা করেন, তখন আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। মুযদালিফায় এসে তিনি মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন। সালাত সমাপ্ত করে বললেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই স্থানে এইরূপ করেছেন। (সুনানে নাসাঈ ৬০৬)

৫. জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলতে চলতে মুযদালিফায় পৌঁছলেন। সেখানে এক আযান ও দুই একামতের সাথে মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করলেন। এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সময় কোন সালাত আদায় করেন নি। (সুনানে নাসাঈ ৬৫৬)

৬. জা‘ফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাহর ময়দানে এক আযান ও দুই ইক্বামাতে যুহর ও ‘আসরের সলাত আদায় করেছেন। কিন্তু এ দুই সলাতের মধ্যখানে কোনো তাসবীহ পড়েননি। অনুরূপভাবে তিনি মুযদালিফায় এক আযান ও দুই ইক্বামাতে মাগরিব ও ‘ইশার সলাত আদায় করেছেন এবং দুই সলাতের মাঝখানে কোন তাসবীহ পড়েননি। (আবু দাউদ ১৯০৬)

৭. হাকাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র (রাঃ) আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে মুযদালিফায় মাগরিবের তিন রাক‘আত এবং ইশার দুই রাক‘আত সালাত আদায় করেন। এরপর বলেন, আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) এরূপ করেছেন এবং তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –ও এরূপ করেছেন। (সুনানে নাসাঈ ৪৮৩)

৮. আশ্‘আস ইবনু সুলাইম (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাযি.)-এর সাথে আরাফা থেকে মুযদালিফা পর্যন্ত আসি। মুযদালিফায় আসা পর্যন্ত তিনি তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করেছেন। এরপর তিনি আযান ও ইকামাত দেন অথবা এক ব্যক্তিকে নির্দেশ করলে সে আযান ও ইকামাত দিলে তিনি আমাদেরকে নিয়ে মাগরিবের তিন রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন, সালাত। অতঃপর নিয়ে তিনি দুই রাক‘আত ‘ইশার সালাত আদায় করলেন। এরপর রাতের খাবার আনতে বললেন। বর্ণনাকারী আশ‘আস বলেন, ‘ইলাজ ইবনু ‘আমর, ইবনু ‘উমার (রাযি.) সূত্রে আমার পিতা বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। পরবর্তীতে ইবনু ‘উমার (রাযি.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এভাবেই সালাত আদায় করেছি। (আবু দাউদ ১৯৩৩)

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মুযদালিফায়) মাগরিব ও ‘ইশার সলাত একত্রে (একই সময়ে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন নিয়্যাতে) আদায় করেছেন। তিনি এক ইক্বামাতেই মাগরিবের সলাত তিন রাক‘আত এবং ‘ইশার সলাত দু’রাক‘আত আদায় করেছেন। (সহিহ মুসলিম ৩০০৫)

৫। মুযদালিফায় রাত্রিযাপনঃ

সালাত আদায় শেষ হওয়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়বেন যাতে পরবর্তী দিনের কার্যাবলী সক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করা যায়। ঘুমানো জন্য স্থান পাওয়া খুবই কষ্ট কর তারপর ক্লান্ত শরীরে ঘুম এসে যাবে। ধনী-গরিব আজ এক কাতারে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়ার সময়। ইসলামের সৌন্দর্য এখানেই।

দলিলঃ

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কুরায়শগণ এবং তাদের ধর্মের অনুসারীরা (জাহিলী যুগে) মুযদালিফায় অবস্থান করত। তারা নিজেদের নামকরণ করেছিল ‘আল-হুম্‌স’। আর সমস্ত আরববাসীরা ‘আরাফাতে অবস্থান করত। যখন ইসলামের আবির্ভাব হ’ল, আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘আরাফায় অবস্থান করার ও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেন। আল্লাহর বাণীর তাৎপর্যও তাই :‘‘অতঃপর অন্যান্য লোক যেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করবে”- (সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ ২ : ১৯৯)। (সহিহ মুসলিম ২৮৪৪)

১. জাফর ইবন মুহাম্মদ (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা বর্ণনা করেছেন যে, আমরা জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছে আগমন করলাম, তিনি আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুযদালিফার সমস্ত স্থানই মওকিফ বা অবস্থানের জায়গা।(সুনানে নাসাঈ ৩০৪৮)

২. জাবির (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আরাফার এ স্থানে অবস্থান করেছি। কিন্তু পুরো আরাফাই অবস্থানের স্থান। আর আমি মুযদালিফার এ স্থানে অবস্থান করেছি। তবে মুযদালিফার পুরো এলাকাটিই অবস্থান স্থল। আমি মিনার এ স্থানে কুরবানী করেছি। মিনার পুরো এলাকাই কুরবানীর স্থান। কাজেই তোমরা তোমাদের নিজ নিজ অবস্থানে কুরবানী করো।(আবু দাউদ ১৯৩৬)

৩. জুবাইর ইবনু মুত‘য়িম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার একটি উট হারিয়ে ‘আরাফার দিনে তা তালাশ করতে লাগলাম। তখন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ‘আরাফায় উকূফ করতে দেখলাম এবং বললাম, আল্লাহর কসম! তিনি তো কুরায়শ বংশীয়। (সহিহ বুখারি ১৬৬৪)

৪. জা‘ফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাহর ময়দানে এক আযান ও দুই ইক্বামাতে যুহর ও ‘আসরের সলাত আদায় করেছেন। কিন্তু এ দুই সলাতের মধ্যখানে কোনো তাসবীহ পড়েননি। অনুরূপভাবে তিনি মুযদালিফায় এক আযান ও দুই ইক্বামাতে মাগরিব ও ‘ইশার সলাত আদায় করেছেন এবং দুই সলাতের মাঝখানে কোন তাসবীহ পড়েননি। আবু দাউদ ১৯০৬)]

৬। দুই সালাতের মাঝে কোন নফল সালাত নাইঃ

মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ, এশার দুই রাকাত ফরজ এবং বিতর পড়তে হবে। এই দুই ওয়াক্ত সালাতের জন্য মাত্র একবার আযান এবং দুই বার ইকামাত দিতে হবে। কোন নফল সুন্নাত নামায নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় পড়েননি। কাজেই ঘুম বাদ দিয়ে নফল-সুন্নাত  সালাত আদায় করা সুন্নাহ সম্মত নয়।

দলিলঃ

১. ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশা এক সাথে আদায় করেন। প্রত্যেকটির জন্য আলাদা ইকামত দেয়া  হয়। তবে  উভয়ের  মধ্যে বা পরে তিনি কোন নফল সালাত আদায় করেননি। (সহিহ বুখারি ১৬৭৩)

২. আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালিফায় দু’ সালাত একত্রে আদায় করেছেন এবং দু’ সালাতই তিনি এক ইকামতসহ আদায় করেন এবং দু’ সালাতের কোন সালাতেরই পূর্বে বা পরে কোন নফল সালাত আদায় করেন নি। (সুনানে নাসাঈ ৬৬০)

৩. ইবন শিহাব (রহঃ) বলেনঃ উবায়দুল্লাহ্ ইবন আবদুল্লাহ তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তার পিতা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন, এবং উভয় সালাতের মধ্যে কোন নফল আদায় করেন নি। মাগরিব আদায় করেন তিন রাকআত, ইশার সালাত আদায় করেন দুই রাকআত। আবদুল্লাহ্ ইবল উমর (রাঃ)-ও এরূপ একত্রে আদায় করতেন, মহান আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত। (সুনানে নাসাঈ ৩০৩২)

৪. ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশা একসাথে আদায় করেন। প্রত্যেকটির জন্য আলাদা ইকামত দেওয়া হয়। তবে উভয়ের মধ্যে বা পরে তিনি কোন নফল সালাত আদায় করেননি। (সহিহ বুখারী ১৫৬৮ ইফাঃ)

৭। আউয়াল ওয়াক্তে ফজরের সালাত আদায় করাঃ

১. ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ইশা ও মাগরিবের সলাতকে মুযদালিফায় একত্রে আদায় করা এবং পরের দিন ফাজ্‌রের সলাত ওয়াক্তের পূর্বে (আউয়াল ওয়াক্তে) আদায় করে নেয়া, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এই দুই সলাত ছাড়া কোন সলাত ওয়াক্তের পূর্বে আদায় করতে দেখিনি। (আবু দাউদ ১৯৩৪)

২. আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কোন সালাত তার নির্ধারিত ওয়াক্ত ছাড়া আদায় করতে দেখেনি। তবে মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার সালাত ব্যতিক্রম এবং পরবর্তী ভোরে ফজরের সালাত নির্ধারিত সময়ের পূর্বে অর্থাৎ ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদায় করেছেন। (সহিহ মুসলিম ২৯৮৬ ইফাঃ)

৩. আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দু’টি সালাত ব্যতীত আর কোন সালাত তার নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত আদায় করতে দেখিনি। তিনি মাগরিব ও ‘ইশা একত্রে আদায় করেছেন এবং ফজরের সালাত তার ওয়াক্তের আগে (আউয়াল ওয়াক্তে) আদায় করেছেন। (সহিহ বুখারি ১৬৮২)

৪. আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্ধারিত ওয়াক্তেই সলাত আদায় করতে দেখেছি। তবে মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশার সলাত আদায় করেছেন এবং রাতের ভোরে ফজরের সলাত নির্ধারিত সময়ের পূর্বে অর্থাৎ ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদায় করেছে। (সহিহ মুসলিম ৩০০৭)

৫. আসমা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ, তিনি বলেন, আমাকে আসমা (রাঃ) মুযদালিফাহ্ অবস্থানকালে জিজ্ঞেস করলেন, চাঁদ ডুবেছে কি? আমি বললাম, না। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ সলাত আদায় করলেন। পরে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, হে বৎস! চাঁদ ডুবেছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমার সাথে রওনা হও। আমরা রওনা হলাম এবং জামরাহ্ (পৌঁছে) তিনি কাঁকর নিক্ষেপ করলেন, এরপর নিজের তাঁবুতে সলাত আদায় করলেন। আমি তাকে বললাম, হে সম্মানিত মহিলা! আমরা খুব ভোরে রওনা হয়েছিলাম। তিনি বললেন, কোন অসুবিধা নেই হে বৎস! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের খুব ভোরে রওনা হবার অনুমতি দিয়েছিলেন। (সহিহ মুসলিম ৩০১৩)

৮। ফরজের সালাত আদায় করে কিছু সময় দোয়াকরাঃ

মুজদালিফায় ফজরের সালাত অন্ধকার থাকতেই আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করতে হবে। দুই রাকাত ফরজের সাথে দুই রাকাত সুন্নতও পড়বেন। এরপর ‘‘মাশআরুল হারাম’’-এর নিকটবর্তী কিবলামুখী দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে দোয়া-মুনাজাত করা। কাজেই মুজদালিফায় অবস্থান কালে ‘মাশআরুল হারাম’’ নিকটে থাকা উত্তম, তবে দুরে মুজদালিফার যে কোন স্থানে থাকাই সুন্নাহ। ‘মাশআরুল হারাম’’ একটি পাহাড়ের নাম। এটি মুযদালিফায় অবস্থিত। এখানে একটি মসজিদও আছে। এখানে হাজীদের জন্য বিশেষ কিছু আমল আছে তবে আমলগুল জরুরী নয়। আমলগুলো হলঃ

ক। মাশআরুল হারামের নিকট কিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে তাকবীর বলা

খ। ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহাম্দু লিল্লাহ’ এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইত্যাদি জিকির করা

গ। খুশু-খুযু ও বিনম্র হয়ে আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করা

ঘ। দোয়ার সময় এখানে হাত তুলে মুনাজাত করা মুস্তাহাব

ঙ। এভাবে ফজরের নামাযের পর থেকে মিনায় রওয়ানা হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত দোয়া করা মুস্তাহাব।

দলিলঃ

১. সালিম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ, তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তাঁর পরিবারের দুর্বল লোকদের আগেই পাঠিয়ে দিয়ে রাতে মুযদালিফাতে মাশ‘আরে হারামের নিকট উকূফ করতেন এবং সাধ্যমত আল্লাহর যিকর করতেন। অতঃপর ইমাম (মুযদালিফায়) উকূফ করার ও রওয়ানা হওয়ার আগেই তাঁরা (মিনায়) ফিরে যেতেন। তাঁদের মধ্যে কেউ মিনাতে আগমন করতেন ফজরের সালাতের সময় আর কেউ এরপরে আসতেন, মিনাতে এসে তাঁরা কঙ্কর মারতেন। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলতেন, তাদের জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কড়াকড়ি শিথিল করে সহজ্জ করে দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি ১৬৭৬)

২. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তামাত্তু আদায়কারী ‘উমরাহ আদায়ের পর যদ্দিন হালাল অবস্থায় থাকবে তদ্দিন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করবে। তারপর হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধবে। এরপর যখন ‘আরাফাতে যাবে তখন উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি যা মুহরিমের জন্য সহজ্জলভ্য হয় তা মীনাতে কুরবানী করবে। আর যে কুরবানীর সঙ্গতি রাখে না সে হাজ্জের দিনসমূহের মধ্যে তিনদিন সওম পালন করবে। আর তা ‘আরাফার দিনের আগে হতে হবে। আর তিনদিনের শেষ দিন যদি ‘আরাফার দিন হয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই। তারপর ‘আরাফাত ময়দানে যাবে এবং সেখানে ‘আসরের সালাত হতে সূর্যাস্তের অন্ধকার পর্যন্ত ‘ওকুফ (অবস্থান) করবে। এরপর ‘আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন করে মুযদালাফায় পৌঁছে সেখানে পুণ্য অর্জনের কাজ করতে থাকবে আর সেখানে আল্লাহ্কে অধিক অথবা (রাবীর সন্দেহ) সবচেয়ে অধিক স্মরণ করবে। সেখানে ফাজর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করবে। এরপর (মীনার দিকে) প্রত্যাবর্তন করবে যেভাবে অন্যান্য লোক প্রত্যাবর্তন করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘এরপর প্রত্যাবর্তন কর সেখান হতে, যেখান হতে লোকজন প্রত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল, দয়াময়।’’ তারপর জামরায় প্রস্তর নিক্ষেপ করবে। সহিহ বুখারি ৪৫২১)

৩. বিলাল ইবনে রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মুযদালিফার দিন ভোরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনঃ হে বিলাল! লোকেদের চুপ করতে বলো। অতঃপর তিনি বলেনঃ এই মুযদালিফায় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি যথেষ্ট অনুগ্রহ করেছেন, তোমাদের উত্তম লোকেদের উসীলায় তোমাদের গুনাহগারদের ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের মধ্যে সৎকর্মশীল ব্যক্তি যা প্রার্থনা করেছে তিনি তাকে তা দিয়েছেন। অতএব তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে প্রত্যাবর্তন করো। (ইবনে মাজাহ ৩০২৪)

৪. সালিম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাঁর পরিবারের দুর্বল লোকদের আগেই পাঠিয়ে দিয়ে রাতে মুযদালিফাতে মাশ‘আরে হারামের নিকট উকূফ করতেন এবং সাধ্যমত আল্লাহর যিকর করতেন। অতঃপর ইমাম (মুযদালিফায়) উকূফ করার ও রওয়ানা হওয়ার আগেই তাঁরা (মিনায়) ফিরে যেতেন। তাঁদের মধ্যে কেউ মিনাতে আগমন করতেন ফজরের সালাতের সময় আর কেউ এরপরে আসতেন, মিনাতে এসে তাঁরা কঙ্কর মারতেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কড়াকড়ি শিথিল করে সহজ্জ করে দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি ১৬৭৬)

মন্তব্যঃ হাজ্জিদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারনে এখান ‘‘মাশআরুল হারাম’’ এর কাছে প্রচন্ড ভীল থাকে। কাজেই ভীড়ের কারণে ‘‘মাশআরুল হারাম’’এর কাছে যেতে না পারলে মুযদালিফার যে কোন স্থানে দাঁড়িয়ে এভাবে দোয়া করা উত্তম। তবে মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিক ও ইশার সালাত আদায়ের পর ঘুমাতে হবে। অতপর, আউয়াল ওয়াক্তে ফজরের সুন্নাহসহ ফরজ আদায় করেত হবে। ফজরের ফরজ সালাত আদায়ের পরই কেমল এই জিকির ও দোয়া করতে হবে। যখন আকাশ ফর্সা হবে কিন্তু সূর্য উঠে নাই, এমন সময় মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হবে।

৯। মিনায় আসার পথে পাথড় কুড়ানঃ

সুন্নাত হলো প্রথম দিনের সাতটি কংকর মাশআরুল হারাম থেকে রওয়ানা দেয়ার পর মুযদালিফা থেকেই কুড়াবেন। এখান থেকে এর বেশী নয়। আর বাকী ৩ দিনের প্রত্যেক দিনের ২১টি করে কংকর মিনা থেকেই কুড়ানো যায়। এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি। তবে হারামের মধ্যবর্তী যে কোন স্থান থেকেই কংকর কুড়ানো জায়েয আছে।

দলিলঃ

১. ফযল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটের পেছনে বসাছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আরাফার সন্ধ্যায় ও মুযদালিফায় ভোরে লোকেদের উদ্দেশে বলেছেন, তোমরা (অবশ্যই) প্রশান্তির সাথে ধীরে সুস্থে চলবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও নিজের উষ্ট্রীকে মিনার অন্তর্গত মুহাস্‌সির নামক স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত সংযত রেখেছিলেন। এখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা আঙ্গুল দিয়ে ধরা যায় এমন ছোট পাথর জামারাতে মারার জন্য লও’। ফযল বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামারায় পাথর মারা পর্যন্ত সব সময় তালবিয়াহ্ পড়ছিলেন। (মিসকাতুল মাসাবিহ ২৬১০ ও সহিহ মুসলিম)

২. ইবন আব্বাস (রাঃ) সূত্রে ফযল ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি (হজ্জের সময়) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পেছনে একই বাহনে সওয়ার ছিলেন, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফায় সন্ধ্যায় এবং মুযদালিফায় সকালে লোকদেরকে বললেনঃ যখন তারা (আরাফা ও মুযদালিফা হতে) প্রস্থান করে শান্তভাবে চলো। তিনি তাঁর উটনীর লাগাম টেনে রাখছিলেন। যখন তিনি মুহাস্সিরে -যা মিনার একটি অংশ প্রবেশ করলেন, তখন বললেনঃ তোমরা আংগুলে ছুঁড়ে মারার মত কংকর (পাথরের ছোট ছোট টুকরা) সংগ্রহ কর। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তালবিয়া পড়তে থাকলেন, জামরাতুল আকাবায় কংকর মারা করা পর্যন্ত। (সুনানে নাসাঈ ৩০২০)

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “আরাফা থেকে মুজদালিফার আসা ও মুজদালিফার আমলসমূহ

Leave a comment