সহীহ সুন্নাহকে অজ্ঞতা করে মনগড়া বিদআতি আমল করা

সহীহ সুন্নাহকে অজ্ঞতা করে মনগড়া বিদআতি আমল করা

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিধানাবলী মেনে চলা যেহেতু সকল মুসলমানের উপর ফরয তাই অধিকাংশ লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামে বর্ণিত প্রত্যেক কথাকে সুন্নত মনে করে আমল শুরু করে দেন। আপন জন বিশেষ করে পিতা মাতার প্রতি সবার ভালবাসা থাকে অসীম। তাদের জন্য ভাল কিছু একটা করা সকলের কাম্য বিশেষ করে তাদের মৃত্যুর পর, সংসারে ভাল কোন কাজ হলে বা সংসারে উন্নতী হলে তাদের কথা আরও বেশী মনে পরে। তখন তাদের জন্য কিছু একটা করার অপরিসীম ইচ্ছা জাগে কিন্তু তারা যে আর পৃথিবীতে নেই। তাই তাদের জান্য কিছু একটা করার ইচ্ছা থেকেই তাদের নিকট সওয়ার পৌছানোর বিভিন্ন প্রথা সৃষ্টি হয়েছে। এ মাঝে কোনটি ইসলামী শরীয়ত সম্মাত আবার কোনটি শরীয়ত বহির্ভূত বিদআত।

আপন জন বিশেষ করে পিতা মাতার প্রতি সবার ভালবাসা থাকে অসীম। তাদের জন্য ভাল কিছু একটা করা সকলের কাম্য বিশেষ করে তাদের মৃত্যুর পর, সংসারে ভাল কোন কাজ হলে বা সংসারে উন্নতী হলে তাদের কথা আরও বেশী মনে পরে। তখন তাদের জন্য কিছু একটা করার অপরিসীম ইচ্ছা জাগে কিন্তু তারা যে আর পৃথিবীতে নেই। তাই তাদের জান্য কিছু একটা করার ইচ্ছা থেকেই তাদের নিকট সওয়ার পৌছানোর কথা মনে আসে। তাহলে তাদের নিকট সওয়ার পৌছানোর শরীয়ত সম্মাত সুন্নাহ কি? আর অজ্ঞতার জন্য আমরা করছে কি? এখানে দুটি কাজ তুলনা করে দেখান, মাইয়াতের জন্য আমাদের কি করণীয় ছিল, আর আমরা তার জন্য কি করছি। এমনিভাবে মানুষ সুন্নাহ কে ছেড়ে বিদআতে দিকে ধারিত হচ্ছে। প্রথমে দেখুন মাতা পিতার মৃত্যুর পর সুন্নাহ সম্মত সওয়াব পৌছারন আমলগুল কি। তার পর দেখুন আমরা তাদের নিকট সওয়ার পৌছানর জনই কি পরিমান বিদআতি কাজ করছি।  

মাইয়াতের জন্য সওয়াব পৌছারন সুন্নাহ সম্মত আমলগুলো হলোঃ

১। বেশী বেশী দু‘আ করা

 ২। দান-ছাদকাহ করা, বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করা

 ৩। মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম  পালন

 ৪। হজ্জ বা উমরাহ করা

 ৫. মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করা

 ৬। মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করা

 ৭। মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা

৮। মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা

৯। ঋণ পরিশোধ করা

১০। ক্ষমা প্রার্থনা করা

১১। মান্নত পূরণ করা

১২। মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা

১৩। কবর যিয়ারত করা

১৪। ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা

১৫। কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা

১৬। মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া

উপরে বর্ণিত সুন্নাহ সম্মত আমলগুলি না করে, ইছালে সাওয়াব এর নামে নিম্মের বিদআত কাজগুলো করছি তা হলোঃ

১। মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে কুরআন পাঠ করছি

২। লাশের পাশে অথবা কবরের কাছে কুরআন তিলাওয়াত করছি

৩। জানাযা সালাত শেষে সম্মিলিতভাবে দুআ-মুনাজাত করছি

৪। মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করছি

৫। কুলখানি করছি

৬। চেহলাম করছি

৭। সাধারণভোজ বা কাঙ্গালীভোজের আয়োজন করছি

৮। ফাতেহা পাঠ করছি

৯। কুরআন খতম করে বখশে দিচ্ছি

১০। মৃত্যুর জন্য দৈহিক ইবাদত সমূহের হাদিয়া দিচ্ছি

১১। একধিকবার জানাযা ‌আদায় করছি

১২। একাধিকবার জানাযা সালাত করছি

১৩।  সূরা ইয়াসীন পড়ছি

১৪। বিভিন্ন প্রকারের খতম আদায় করছি

সুন্নাহ সম্মত আলম সম্পর্ক এখানে সমান্য আলোকপাত করব। বিদআতি আমলগুলো সম্পর্কে পরের তৃতীয় অধ্যায় আলোচনা করা হবে বলে এখান আর আলোচনা করা হল না। মাতা পিতার মৃত্যুর পর সুন্নাহ সম্মত সওয়াব পৌছারন নিম্মে আলোচনা করা হলঃ

১। বেশী বেশী দুয়া করাঃ

মৃত্যুর পর মাইয়াতের নিকট কোন কল্যান পৌছানোর প্রধান মাধ্যম হল দুয়া। কুরআনের আয়াত ও অসংখ্যা সহহি হাদিস প্রমান করে যে মাইয়াতে জন্য কিছু করতে হলে দুয়ার মাধ্যমে করতে হবে। মৃতু পিতা মাতার জন্য দুয়া করার বিষয়টি মহান আল্লাহ কুরআন উল্লেক করছেন। কাজেই আমরা মৃত মা বাবা জন্য বেশী থেকে বেশী দুয়া করি। মহনা আল্লাহ বলেন,

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

অর্থঃ তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৪)

মহনা আল্লাহ আরও বলেন,

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارًا

অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে , যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে-তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন। ( সুরা নূহ ৭১:২৮)]

মহনা আল্লাহ আরও বলেন,

رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ

অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে। (সুরা ইবরাহীম ১৪:৪১)]

২। দান-ছাদকাহ করা, বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করাঃ

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমার মা হঠাৎ মৃতু বরণ করেছেন। তাই কোন অছিয়ত করতে পারেন নি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-ছাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে ছাদকা করলে তিনি কি এর ছাওয়াব পাবেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।’’ (সহীহ মুসলিম:২৩৭৩)

৩। মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম  পালনঃ

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিসগণ রোজা রাখবে। (সহীহ বুখারী:১৯৫২)।

৪। হজ্জ বা উমরাহ করাঃ

জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্জ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ কর। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মার উপর ঋণ থাকতো তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না ? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা আল্লাহর দাবী পরিশোধ করার অধিক উপযোগী। (সহীহ বুখারী: ১৮৫২)।

৫। মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করাঃ

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কুরবানীর জন্য আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আস, তারপর বললেন, তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দ্বারা এটাকে ধারালো কর। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি যবেহ্ করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীর পক্ষ থেকে কবুল কর”। এভাবে তিনি তা দ্বারা কুরবানী করলেন। [ সহীহ মুসলিম:৫২০৩]

৬।  মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করাঃ

রাশীদ ইবন সুয়াইদ আসসাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা একজন দাসমুক্ত করার জন্য ওসিয়ত করে গেছেন। আর আমার নিকট কালো একজন দাসী আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ডাকো, সে আসল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার রব কে? উত্তরে সে বলল, আমার রব আল্লাহ। আবার প্রশ্ন করলেন আমি কে? উত্তরে সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও; কেন না সে মু’মিনা । (সহীহ ইবন হিববান :১৮৯)

৭। মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করাঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক বেদুঈন এর সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পরা ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবান দীনার রাহেমাহুল্লাহ বললেন, তখন আমরা আব্দুল্লাহকে বললাম: আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক! এরা গ্রাম্য মানুষ, সামান্য কিছু পেলেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যায় (এতসব করার কি প্রয়োজন ছিলো?) উত্তরে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভাল ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় সওয়াবের কাজ। (সহীহ মুসলিম:৬৬৭৭)।

৮। মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখাঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে। (সহীহ ইবন হিববান:৪৩২)।

৯। ঋণ পরিশোধ করাঃ

আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়”। [সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩]

মন্তব্যঃ ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে  আরো এসেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯)।

১০। ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ

আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো (আল-আদাবুল মুফরাদ:৩৬)।

উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়ালেন এবং বললেন ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে। (মুসনাদুল বাজ্জার :৪৪৫)।

১১। মান্নত পূরণ করাঃ

কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। (সহীহ ইবন হিববান:২৮০)।

১২। মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখাঃ

হাদীসে এসেছে, ‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’। [সুনান আত তিরমীযি:২৬৭০)।

যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না। (সহীহ মুসলিম:২৩৯৮)।

 

১৩। কবর যিয়ারত করাঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনান তিরমীযি :১০৫৪)।

অপর হাদিসে এসেছে, জিয়ারাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনান তিরমীযি :১০৫৪)।

১৪। ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করাঃ

মা-বাবা কারো সাথে কোন ভাল কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

 وَأَوْفُواْ بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْؤُولاً

অর্থঃ এবং অঙ্গীকার পূর্ন কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩৪ ]

১৫। কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করাঃ

মা-বাবা বেচে থাকতে কোন গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে। কেননা আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:৬৯৮০]।

১৬। মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়াঃ

মা-বাবা বেচে থাকতে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো উপর যুলুম করে থাকলে বা কাওকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মা-বাবার পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে মাফ মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিবে। কেননা হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সুনান আততিরমিযি :২৪২৮)।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment