সিয়াম এর প্রকারভেদ (তৃতীয় পর্ব)

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

ইসলামি শরিয়তে প্রতিটি আমলের মাঝে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ ও নফলের হুকুম থাকে। যদিও ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ ও নফলের হুকুম মহান আল্লহ ও তার রসুল (সঃ) ভাগ করে দেননি, তাই সাহাবি (রাঃ) সব আমল দুভাগে ভাগ করেছেন। আর তা হল ফরজ ও সুন্নাহ বা নফল। কিন্তু ইসলামের অতন্ত্র প্রহরী মুহাদ্দিসগন আল্লাহর বিধান উম্মতকে সহজে বুঝার জন্য সকল আমলকে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ ও নফলের হুকুম দান করেছেন। যাতে উম্মত আল্লাহ হুকুমের গুরুত্ব বুঝে আমল করতে পারে। সিয়ামের ব্যাপারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মুহাদ্দিসগন সিয়াম পাঁচভাগে ভাগ করেছেন। যথাঃ

১। ফরজ সিয়াম

২। ওয়াজির সিয়াম

৩। সুন্নাত বা নফল সিয়াম

৪। মাকরূহ সিয়াম  এবং

৫। হারাম সিয়াম

এই পর্বে শুধু মাকরূহ সিয়াম  এবং  হারাম সিয়াম সম্পর্কে আলোচনা করা হবেঃ

মাকরূহ সিয়ামঃ যে সকল সিয়াম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করতে নিরুত্সাহিত করতেন সে সকল সিয়াম পালন করা মাকরুহ।

মাকরূহ সিয়াম পাঁচ প্রকার। যথাঃ

১। হাজ্জ পালনরত অবস্থায় আরাফাতের দিনের সিয়াম

২। বিরতীহীনভাবে বা প্রতিদিন সিয়াম পালন

৩। একাধানে বা পানাহার বিহীন সিয়াম

৪। কেবলমাত্র জুমুআর দিনের সিয়াম

৫।  শুধুমাত্র শনিবারে সিয়াম

৬। কোন দিন নির্দিষ্ট করে সিয়াম পালন

১। হাজ্জ পালনরত অবস্থায় আরাফাতের দিনের সিয়ামঃ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম উমায়র বর্ণনা করেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী মায়মুনা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবা আরাফার দিন তাঁর সিয়াম পালনের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করলেন। [উম্মুল ফাযল (রাঃ) বলেন] আমরাও সেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এ সময় আমি তাঁর নিকট এক পেয়ালা দুধ পাঠিয়ে দিলাম। তখন তিনি আরাফার ময়দানে ছিলেন। তিনি তা পান করে নিলেন। (সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বর ২৫০৬, ২৫০৭ পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

উম্মুল ফাযল বিনতু হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ‘আরাফার দিন আমার সামনে কিছু লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সওম সম্পর্কে তর্কবিতর্ক করছিল। কেউ বলছিল, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আজ সিয়াম আছেন। আর কেউ বলছিল, না, আজ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সায়িম নন। তাদের এ তর্কবিতর্ক দেখে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এক কাপ দুধ পাঠালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন ‘আরাফাতের ময়দানে নিজের উটের উপর বসা ছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (পেয়ালা হাতে নিয়ে) দুধ পান করলেন। [হাদিসের মান সহিহঃ মিশকাত-২০৪২, সহিহ বুখারী ১৮৬৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মুসলিম ১১২৩, আবূ দাঊদ ২৪৪১)।

ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি একই সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা পালনের সুযোগ লাভ করল সে ‘আরাফাতের দিবস পর্যন্ত সিয়াম পালন করবে। সে যদি কুরবানী না করতে পারে এবং   সিয়ামও পালন না করে থাকে তবে মিনার  সিয়াম পালন করবে। (সহিহ বুখারী ১৮৭৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কিছু সংখ্যক লোক ‘আরাফাতের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিয়াম পালন সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করলে তিনি স্বল্প পরিমান দুধ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠিয়ে দিলে তিনি তা পান করলেন ও লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করছিল। তখন তিনি (‘আরাফাতে) আবস্থান স্থলে ওকূফ করছিলেন।(সহিহ বুখারী ১৮৬৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

২। বিরতীহীনভাবে বা প্রতিদিন সিয়াম পালনঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে ‘আবদুল্লাহ! আমি জানতে পেরেছি, তুমি দিনে সওম রাখো ও রাত জেগে সলাত আদায় করো। আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না, (এরূপ) করো না। সওম রাখবে, আবার ছেড়ে দেবে। সলাত আদায় করবে, আবার ঘুমাবে। অবশ্য অবশ্যই তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার চোখের ওপর হক আছে, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর হক আছে। তোমার মেহমানদেরও তোমার ওপর হক আছে। যে সবসময় সওম রাখে সে (যেন) সওমই রাখল না। অবশ্য প্রতি মাসে তিনটি সওম সবসময়ে সওম রাখার সমান। অতএব প্রতি মাসে (আইয়্যামে বীযে অথবা যে কোন দিনে তিনদিন) সওম রাখো। এভাবে প্রতি মাসে কুরআন পড়বে। আমি নিবেদন করলাম, আমি তো এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে উত্তম দাঊদ (আঃ)-এর সওম রাখো। একদিন রাখবে, আর একদিন ছেড়ে দেবে। আর সাত রাতে একবার কুরআন খতম করবে। এতে আর মাত্রা বাড়াবে না। (হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-২০৫৪, বুখারী ১৯৭৫, ১৯৭৬, ৫০৫৪, মুসলিম ১১৫৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৭৩২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩২০, ইরওয়া ২০১৫, আহমাদ ৬৮৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৮৭, সহীহ আল জামি‘ ৭৯৪২, ইবনু খুযায়মাহ্ ২১১০।

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘ আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে আবদুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সিয়াম পালন কর এবং সারারাত সালাত আদায় করে থাক। আমি বললাম, (ঠিক (শুনেছেন) ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে)  সিয়াম পালন কর আবার  সিয়াম ছেড়েও দাও। (রাতে) সালাত আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার চোখের হক রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে, তোমার মেহমানের হক আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন  সিয়াম পালন করবে। কেননা নেক আমলের পরিবর্তে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের  সিয়াম হয়ে যায়। আমি বললাম আমি এর চেয়েও কঠোর আমল করতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন আমলের অনুমতি দেয়া হল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আরো বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃ তবে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর  সিয়াম পালন কর, এর থেকে বেশী করতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নাবী দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর  সিয়াম কেমন? তিনি বললেনঃ অর্ধেক বছর। রাবী বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বৃদ্ধ বয়সে বলতেন, আহা! আমি যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত রুখসত (সহজতর বিধান) কবূল করে নিতাম! (সহিহ বুখারী ইসলামি ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হাদিস নম্বর ১৮৫১)।

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমার সম্পর্কে এ কথা পৌছে যায় যে, আমি বলেছি, আল্লাহর কসম, আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন  সিয়াম পালন করব এবং রাতভর সালাত আদায় করব। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করায় আমি বললাম, আপনার উপর আমার পিতামাতা কুরবান হোক! আমি একথা বলেছি। তিনি বললেনঃ তুমি তো এরূপ করতে সক্ষম হবে না। বরং তুমি  সিয়াম পালন কর ও ছেড়েও দাও, (রাতে) সালাত আদায় কর ও নিদ্রা যাও। তুমি মাসে তিন দিন করে  সিয়াম পালন কর। কারণ নেক কাজের ফল তার দশ গুন; এভাবেই সারা বছরের  সিয়াম পালন হয়ে যাবে।

আমি বললাম আমি এর থেকে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে একদিন  সিয়াম পালন কর এবং দুদিন ছেড়ে দাও। আমি বললাম আমি এর থেকে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে একদিন  সিয়াম পালন কর এবং একদিন ছেড়ে দাও। এই হল দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর  সিয়াম এবং এই হল সর্বোত্তম  সিয়াম। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর চেয়ে উত্তম  সিয়াম (রাখার পদ্ধতি) আর নেই। (সহিহ বুখারী ইসলামি ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হাদিস নম্বর ১৮৫২)।

৩। একাধানে বা পানাহার বিহীন সিয়ামঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। লোকেরা বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই। আমাকে পানাহার করানো হয় (অথবা বললেন) আমি পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি। (সহীহ বুখারী ১৮৩৭ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সাওমে বেসাল হতে নিষেধ করলেন। লোকেরা বললো, আপনি যে সাওমে বেসাল পালন করেন! তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই, আমাকে পানাহার করানো হয়। (সহীহ বুখারী ১৮৩৮ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। তোমাদের কউ সাওমে বেসাল পালন করতে চাইলে সে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যে সাওমে বেসাল পালন করেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই, আমি রাত্রি যাপন করি এরূপ অবস্থায় যে, আমার জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন যিনি আমাকে আহার করান এবং একজন পানীয় পরিবেশনকারী আমাকে পান করান। (সহীহ বুখারী ১৮৩৯ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরতিহীন সিয়াম পালন করতে নিষেধ করলে মুসলিমদের এক ব্যাক্তি তাঁকে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যে বিরতীহীন সাওম পালন করেন? তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। এরপর যখন লোকেরা সাওমে বেসাল করা হতে বিরত থাকল না তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন সাওমে বেসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখতে পেল তখন তিনি বললেনঃ যদি চাঁদ উঠতে আরও দেরী হত তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরও বেশী দিন সাওমে বেসাল করতাম। এ কথা তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান স্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। (সহিহ বুখারী ১৮৪১ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সাওমে বেসাল পালন করা থেকে বিরত থাক (বাক্যটি তিনি) দু’বার বললেন। তাঁকে বলা হল, আপনি তো সাওমে বেসাল করেন। তিনি বললেনঃ আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমল করার দায়িত্ব গ্রহণ করো। (সহিহ বুখারী ১৮৪২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা সাওমে বেসাল করবে না। তোমাদের কউ যদি সাওমে বেসাল করতে চায় , তবে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। সাহাবাগণ বললেন , ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো সাওমে বেসাল পালন করেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই। আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার জন্য একজন আহারদাতা রয়েছেন যিনি আমাকে আহার করান, একজন পানীয় দানকারী আছেন যিনি আমাকে পান করান। (সহিহ বুখারী ১৮৪৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। লোকেরা বলল, আপনি যে সাওমে বেসাল করেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই। আমাকে পানাহার করানো হয় (অথবা বললেন) আমি পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি। (সহিহ বুখারী ১৮৩৭ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সাওমে বেসাল হতে নিষেধ করলেন। লোকেরা বললো, আপনি যে সাওমে বেসাল পালন করেন! তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই, আমাকে পানাহার করানো হয়। (সহিহ বুখারী ১৮৩৮ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। তোমাদের কউ সাওমে বেসাল পালন করতে চাইলে সে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যে সাওমে বেসাল পালন করেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই, আমি রাত্রি যাপন করি এরূপ অবস্থায় যে, আমার জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন যিনি আমাকে আহার করান এবং একজন পানীয় পরিবেশনকারী আমাকে পান করান। (সহিহ বুখারী ১৮৩৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

ঘ। কেবলমাত্র জুমুআর দিনের সিয়ামঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন জুমার দিন সওম না রাখে। হ্যাঁ, জুমার আগের অথবা পরের দিনসহ সওম রাখতে পারে। [হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-২০৫১, বুখারী ১৯৮৫, মুসলিম ১১৪৪, তিরমিযী ৭৪৩, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৯২৪০, সহীহ আত্ তারগীব ১০৪৬, আবূ দাঊদ ২০৯১, ইরওয়া ৯৫৯, সহীহ ইবনু হিববান ৩৬১৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৪৮৮।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অন্যান্য রাতগুলোর মধ্যে লায়লাতুল জুমাকে ‘ইবাদাত বন্দেগীর জন্য খাস করো না। আর ইয়াওমুল জুমাকেও (জুমার দিন) অন্যান্য দিনের মধ্যে সওমের জন্য নির্দিষ্ট করে নিও না। তবে তোমাদের কেউ যদি আগে থেকেই অভ্যস্ত থাকে, জুমাহ্ ওর মধ্যে পড়ে যায়, তাহলে জুমার দিন সওমে অসুবিধা নেই। [হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-২০৫২, মুসলিম ১১৪৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৪৯০, সহীহাহ্ ৯৮০, সহীহ আল জামি‘ ৭২৫৪।

মুহাম্মদ ইবনু ‘আব্বাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জুমু‘আর দিনে (নফল) সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ব্যতীত অন্যেরা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, পৃথকভাবে জুমু‘আর দিনের সিয়াম পালন (কে নিষেধ করেছেন )। (সহিহ বুখারী ১৮৬১ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কউ যেন শুধু জুমু‘আর দিনে সিয়াম পালন না করে কিন্তু তার আগে একদিন বা পরের দিন, (যদি পালন করে তবে জুমু‘আর দিনে পালন করা যায়)। (সহিহ বুখারী ১৮৬২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

জুয়াইরিয়া বিনতে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিনে তাঁর নিকট প্রবেশ করেন তখন তিনি (জুযাইরিয়া) সিয়াম পালনরত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি গতকাল সিয়াম পালন করেছিলে? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি আগামীকাল সিয়াম পালনের ইচ্ছা রাখ? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে সিয়াম ভেঙ্গে ফেল। হাম্মাদ ইবনুল জা‘দ (রহঃ) স্বীয় সূত্রে জুয়াইরিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আদেশ দেন এবং তিনি সিয়াম ভঙ্গ করেন। (সহিহ বুখারী ১৮৬৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

ঙ। শুধুমাত্র শনিবারে সিয়ামঃ

 ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর তার বোন সাম্মা হতে বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শনিবার দিন একান্ত প্রয়োজন না হলে সওম রেখ না। যদি কিছু না পাও তাহলে অন্ততঃ গাছের ছাল অথবা ডালপালা চিবিয়ে হলেও ইফতার করবে। [হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-২০৬৩, আবূ দাঊদ ২৪২১, তিরমিযী ৭৪৪, ইবনু মাজাহ ১৭২৬, আহমাদ ১৭৬৮৬, দারিমী ১৭৯০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২১৬৩, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮১৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬১৫, ইরওয়া ৯৬০, সহীহ আত্ তারগীব ১০৪৯।]।

৬। কোন দিন নির্দিষ্ট করে সিয়াম পালনঃ

আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোন দিন কোন কাজের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতেন? উত্তরে তিনি বলেলেন, না, বরং তাঁর আমল স্থায়ী হতো এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব আমল করার শক্তি সামর্থ্য রাখতেন তোমাদের মধ্যে কে আছে যে সে সবের সামর্থ্য রাখে? (সহিহ বুখারী ১৮৬৪ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

হারাম সিয়াম

যে সকল সিয়াম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখন আদায় করেনি এবং সাহাবিদের (রাঃ) ও আদায় করতে নিষেধ করেছেন এই সকল সিয়াম আদায় করা হারাম। যদি কেউ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উল্লেখিত দিন সিয়াম পালন করে তবে তা তার জন্য হারাম হবে।

হারাম সিয়াম পাঁচ প্রকার। যথাঃ

(ক) দু’ ঈদের দিন এবং কুরবানীর ঈদের পরবর্তী তিন দিন

(খ) সন্দেহ পূর্ণ দিনের (৩০শে শাবান) সিয়াম

(গ) স্বামীর বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর নফল সিয়াম

(ঘ) মহিলাদের হায়েয নিফাসকালীন সময়ের সিয়াম

(ঙ) গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সিয়াম।

(ক) দু’ ঈদের দিন এবং কুরবানীর ঈদের পরবর্তী তিন দিনঃ

আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন সওম পালন করতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। [হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-২০৪৮,  বুখারী ১৯৯১, মুসলিম ৮২৭, সহীহ আল জামি‘ ৬৯৬২, আহমাদ ১১৪১৭, ইরওয়া ৯৬২।

আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’ দিন কোন সওম নেই। ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আযহা। [হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-২০৪৯,[ বুখারী ১১৯৭, মুসলিম ৮২৭, ইবনু মাজাহ ১৭২১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৯৭৬৯, আহমাদ ১১৮০৪, সহীহ আল জামি‘ ৭৩০৪।

‘আয়িশা (রাঃ) ও ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন, যাঁর নিকট কুরবানীর পশু নেই তিনি ছাড়া অন্য কারও জন্য আইয়্যামে তাশরীকে সিয়াম পালন করার অনুমতি দেওয়া হয় নাই। (সহিহ বুখারী ১৮৭২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দু’ (দিনের) সিয়াম ও দু’ (প্রকারের) ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে, ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর সিয়াম এবং মুলামাসা ও মুনাবাযা (পদ্ধতিতে ক্রয়- বিক্রয়) হতে। (সহিহ বুখারী ১৮৬৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চারটি কথা শুনেছি, যা আমার খুব ভাল লেগেছে। তিনি বলেছেন, স্বামী অথবা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) পুরুষ ছাড়া কোন নারী যেন দুই দিনের দূরত্বের সফর না করে। ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিনে সিয়াম নেই। ফজরের সারতের পরে সূর্যোদয় এবং ‘আসরের সালাত এর পরে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন সালাত নেই। মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসা ও আমার এই মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে কেউ যেন সফর না করে। (সহিহ বুখারী ১৮৭১ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

(খ) সন্দেহ পূর্ণ দিনের (৩০শে শাবান) সিয়ামঃ

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন রমযান মাসের এক বা দু’দিন আগে (শা’বানের শেষে) রোযা পালন শুরু না করে। অবশ্য সেই ব্যক্তি রোযা রাখতে পারে, যে ঐ দিনে রোযা রাখতে অভ্যস্ত। (হাদিসটি নেয়া হয়েছে রিয়াযুস স্বা-লিহীন, তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে হাদিস নম্বর ১২৩২। হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-১৯৭৩, এই হাদিসটি আরও আছেঃ সহীহ বুখারী ১৯১৪, সহীহ মুসলিম ১০৮২, তিরমিযী ৬৮৪, ৬৮৫, নাসায়ী ২১৭২, ২১৭৩, আবূ দাউদ ২৩৩৫, ইবনু মাজাহ ১৬৫০, আহমাদ ৭১৫৯, ৭৭২২, ৮৩৭০, ৯০৩৪, ৯৮২৮, ১০২৮৪, ১০৩৭৬, ২৭২১১, ২৭৩১৭, দারেমী ১৬৮৯। মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৭৩১৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৯৬৩)।

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন শা’বান মাসের অর্ধেক বাকী থাকবে, তখন তোমরা রোযা রাখবে না। (হাদিসটি নেয়া হয়েছে রিয়াযুস স্বা-লিহীন, তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে হাদিস নম্বর ১২৩৪, হাদিসের মান হাসান সহিহ, এই হাদিসটি আরও আছেঃ তিরমিযী ৭৩৮, ৬৮৪, ৬৮৫, সহীহুল বুখারী ১৯১৪, মুসলিম ১০৮২, নাসায়ী ২১৭২, ২১৭৩, আবূ দাউদ ২৩৩৫, ২৩৩৭, সহিহ: মিশকাত-১৯৭৪, ইবনু মাজাহ ১৬৫০, ১৬৫১, ১৬৫৫, আহমাদ ৯৪১৪, ২৭২১১, ২৭৩১৭, দারেমী ১৬৮৯, ১৭৪০)।

আবূ ইয়াক্বাযান আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্দেহের দিনে রোযা রাখল, সে অবশ্যই আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাফরমানী করল।’ (হাদিসটি নেয়া হয়েছে রিয়াযুস স্বা-লিহীন, তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে হাদিস নম্বর ১২৩৫, হাদিসের মান হাসান সহিহ, এই হাদিসটি আরও আছেঃ তিরমিযী ৬৮৬, নাসায়ী ২১৮৮, আবূ দাউদ ২৩৩৪, ইবনু মাজাহ ১৬৪৫, দারেমী ১৬৮২)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কেউ রমজানের একদিন কিংবা দুই দিন আগে থেকে সাওম  শুরু করবে না। তবে কেউ যদি এ সময় সিয়াম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন সাওম করতে পারবে। (সহিহ বুখারী হাদিস ১৮৯৩ ইঃফাঃ)।

(গ) স্বামীর বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর নফল সিয়ামঃ

ফরজ কোন হুকুম কারো আদেশ বা নিষেধ করার ক্ষমাতা কাউকে দেয়া হয়নি। তাই ফরজ সিয়ামের স্বামী হোক আর দেশের বাদশাহ হোক, কারো হুকুমে ত্যাক করা যাবেনা। কিন্ত  স্বামীর বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর নফল সিয়াম রাখা যাবে না।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বামীর উপস্থিতিতে তার সম্মতি ছাড়া স্ত্রী রমাযান মাসের সওম ব্যতীত নফল সওম রাখবে না এবং তার উপস্থিতিতে তার সম্মতি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে তার ঘরে আসার অনুমতি দিবে না। (আবু দাউদ ২৪৫১ ইসলামি ফউন্ডেশন হাদিসের মান সহিহ)

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তার কাছে এক মহিলা এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার স্বামী সাফওয়ান ইবনু মু‘আত্তাল যখন আমি সলাত আদায় করি তখন আমাকে প্রহার করে। আমি সওম রাখলে সে আমাকে সওম ভঙ্গ করায় এবং সূর্য উঠার পূর্বে সে ফাজরের সলাত আদায় করে না। বর্ণনাকারী বলেন, সেখানে সাফওয়ানও উপস্থিত ছিলেন। তার স্ত্রী তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে সে সম্পর্কে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তার অভিযোগ হলো, ‘আমি যখন সলাত আদায় করি সে আমাকে প্রহার করে’, কারণ হচ্ছে, সে এমন দু’টি দীর্ঘ সূরাহ দিয়ে সলাত আদায় করে যা পাঠ করতে আমি তাকে নিষেধ করি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেনঃ (ফাতিহার পর) সংক্ষিপ্ত একটি সূরাহই লোকদের জন্য যথেষ্ঠ। তার অভিযোগ, ‘আমাকে সওম ভাঙ্গতে বাধ্য করে’, ব্যাপার এই যে, সে প্রায়ই সওম রাখে। আমি একজন যুবক, ধৈর্যধারণ করতে পারিনা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দিনই বললেনঃ কোন নারী তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া (নাফল) সওম রাখবে না। এবং তার অভিযোগ, ‘সূর্য উঠার পূর্বে আমি (ফাজরের) সলাত আদায় করি না’, কারণ হলো, আমার পরিবারের লোকেরা সর্বদা কাজে (পানি সরবরাহে) ব্যস্ত থাকে। ফলে সূর্য উঠার আগে আমরা ঘুম থেকে জাগতে পারি না। তার কথা শুনে তিনি বললেনঃ যখনই তুমি জাগ্রত হবে তখনই সলাত আদায় করে নিবে। (আবু দাউদ ২৪৫২ ইসলামি ফউন্ডেশন হাদিসের মান সহিহ)।

(ঘ) মহিলাদের হায়েয নিফাসকালীন সময়ের সিয়ামঃ

 সা’ঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) … আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে মহিলা সমাজ! তোমরা সা’দকা করতে থাক। কারন আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা আরয করলেনঃ কী কারনে, ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বললেনঃ তোমরা অধিক পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর না-শোকরী করে থাক। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যাক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চাইতে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। তাঁরা বললেনঃ আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষের অর্ধেক নয়? তাঁরা উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’। তখন তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর হায়য অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম থেকে বিরত থাকে না? তাঁরা বললেন, ‘হাঁ’। তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের দ্বীনের ত্রুটি। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ২৯৮ এবং ১৮২৭ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

মন্তব্যঃ মাসিক বা হায়েজ, নেফাস অবস্থায় মহিলাদের সালাত সম্পূর্ণ মাপ কিন্ত সিয়ামের বিধান হল পরবর্তীতে বাদ পড়া সিয়াম গনণা করে পালন করতে হবে। কিন্তু হায়েজ, নেফাস অবস্থায় ধর্মীয় কিতাব পড়া এবং সেগুলো স্পর্শ করা জায়েজ আছে। তবে যে সব স্থানে কোরআনের আয়াত লেখা আছে তা পাঠ করা যাবে না। এ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত ছাড়া যাবতীয় জিকির-আজকার, দোয়া-দুরুদ ও তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা জায়েজ আছে। এমনকি দোয়ার নিয়তে কোরআনের আয়াতও পাঠ করা জায়েজ আছে। অসুস্থতাজনিত কারণে যদি নিয়মিত পিরিয়ডকালীন সময়ের বেশি সময়ে স্রাব দেখা যায় তবে তাকে মাসিক বা হায়েজ বলা যাবে না। ইহাকে ইস্তিহাযা বলে। এই অবস্থায় মহিলারা সিয়াম পালন করবে।  যেমনঃ

 আহমদ ইবনু আবূ রাজা’ (রহঃ) …. আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিনত আবূ হুবায়শ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার ইস্তিহাযা হয়েছে এবং পবিত্র হচ্ছি না। আমি কি সালাত (নামায/নামাজ) ছেড়ে দেব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, এ হল রগ-নির্গত রক্ত। তবে এরূপ হওয়ার আগে যতদিন হায়য হতো সে কয়দিন সালাত অবশ্যই ছেড়ে দাও। তারপর গোসল করে নিবে ও সালাত আদায় করবে। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৩১৯ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

মন্তব্যঃ শুধু সিয়াম নয়, ইস্তিহাযা অবস্থায় মহিলারা কোরআন শরিফ তেলাওয়াত ও স্পর্শ করতে পারবে এবং  এমনকি নিজ ঘরে ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল ইতিকাফ করতে পারবে।

 তাতে কোনো অসুবিধা নেই

 (ঙ) গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সিয়ামঃ

পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলামে কোথাও কোন কঠোরতা আপন করেনে। মানুষের সাধ্যের বাহিরে ও কোন কান ইনসাফকারী মহান আল্লাহ চাপিয়ে দেননি। তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সিয়াম পালন নিষেধ করে পবিত্র কুরআনে আয়াত নাজিল করেছেন। এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষ জাতীর প্রতি তার ইহসান। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,

*شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ

অর্থঃ রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। (সুরা বাকারা ২:১৮৫)।

আবু দাউদের এক বর্ণনায় পাওয়া যায়। এরপর থেকে যে রমযান পায়, তার ওপর সওম ওয়াজিব হয়, মুসাফির সফর শেষে কাযা করবে, যারা বৃদ্ধ সিয়াম পালনে অক্ষম বা অসুস্থ তাদের ব্যাপারে ফিদিয়া তথা খাদ্য দান বহাল থাকে। (আবু দাউদ: ৫০৭, আহমদ: ৫/২৪৬, তাবরানি ফিল কাবির: ২০/১৩২, হাদিস নং: (২৭০), হাকেম: ২/৩০১)। 

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

Leave a comment