তাওয়াফের ০৯ টি ওয়াজিব আমল

তাওয়াফের ০৯ টি ওয়াজিব আমল

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

আমারা আগেই জেনেছি হজ্জের তিনটি ফরজ আছে তার মধ্যে তাওয়াফ অন্যতম। তাওয়াফকে সহিহ শুদ্ধভাবে আদায় করতে হলে এই বিষয়টি সম্পর্কে ভাল করে জ্ঞান অর্জণ করতে হবে। তাওয়াফে এমন কাজ আছে যা আদায় না করলে তাওয়াফ শুদ্ধ হবে না। যার ফলে হজ্জের ক্ষতি হয়ে যাবে। এই কাজগুলোই তাওয়াফের জন্য ওয়াজিব। আবার এমন অনেক কাজ আছে যা আদায় না করলেও তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে কিন্তু সহিহ সুন্নাহ তোমাবেক আদায় হবে না। এমন কাজগুলো হলো, তাওয়াফের সুন্নত বা মুস্তাহাব। আবার অনেকে তাওয়াফ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকের কারনে অনেক ভুল করে থাকেন। যার ফলে কখনো ওয়াজিব ভঙ্গ হয় আবার কখনও সুন্নাহ ভঙ্গ হয়, এই কার্যাবলীতে তাওয়কফের ভুলত্রুটি বলে উল্লেখ করে আলোচনা করা হলো। এ পর্যায়ে তাওয়াফের ওয়াজিব সমূহ আলোচনা করা হলোঃ তাওয়াফের ওয়াজিব আমল হলোঃ

১। তাওয়াফের নিয়ত করা

২। বড় নাপাকি থেকে শরীর পবিত্র হওয়া

৩। ছতর ঢাকা রাখা

৪। হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু ও শেষ করা

৫। কাবাঘরকে হাতের বামপাশে রেখে তাওয়াফ করা

৬। হাতিম বা হিজরের ভিতরে তাওয়াফ না করা

৭। মসজিদে হারামের ভেতর দিয়ে তাওয়াফ করা

৮। বিরতিহীন ভাবে ‘সাতবার চক্কর’ দিয়ে তাওয়াফ পূর্ণ করা

৯। সাত চক্করে শেষ করে দুই রাকাত সালাত আদায় করা

তাওয়াফের ওয়াজিব সমূহ বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হলোঃ

১। তাওয়াফের নিয়ত করাঃ

যে কোন আসলের জন্য নিয়ত করা ফরজ। বিষয় সম্পর্কে বহু বার আলোচনা করা হয়েছে। এই জন্য এই ব্যপারে শুধু এতটুকু বলব যে তাওয়াফের জন্য গদবাধা কোন নিয়ত নেই। শুধু মনে মনে সংকল্পকরে মহান আল্লাহর হুকুম আদায়ের জন্য তাওয়াফ করা। যতি কেউ উমরার তাওয়াফ করে তা মনে মনে সংকল্পর করবে আমি উমরার তাওয়াফ করছি। কেউ হজ্জের তাওয়াফ করলে মনে মনে সংকল্পর করবে আমি হজ্জের তাওয়াফ করছি। হজ্জ ও উমরা ব্যতিত কোন নফল তাওয়াফ করলে সেই সংকল্প করেই তাওয়াফ কবরে। তাওয়াফের নিয়ত না করে সারাদিন হাজার হাজার বার বাইতুল্লাহর চার পাশে চক্কর দিলেই তাওয়াফ হবে না। কাজেই নিয়ত হলো তাওয়াফের প্রথম ফরজ কাজ। এটি বাদ পড়লে তাওয়াব হবে না, তবে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়। 

২। বড় নাপাকি থেকে শরীর পবিত্র হওয়াঃ

তাওয়াফ করা অন্যতাম ওয়াজিব হলো, বড় নাপাকি থেকে শরীর পবিত্র হওয়া। যদি কারো বড় নাপাকি যেমন- হায়েজ, নিফাজ, গোসল ফরজ ইত্যাদি থাকে তবে তার জন্য বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা জায়েয নয়। এই বড় নাপাকি থেকে শরীর পবিত্র হওয়া পরই কেমন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা যাবে।

দলিল সহিহ বুখারির হাদিসঃ

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে প্রবেশ করলেন। অথচ মক্কা প্রবেশের পূর্বেই ‘সারিফ’ নামক জায়গায় তার মাসিক শুরু হয়। তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কী হয়েছে? মাসিক শুরু হয়েছে না কি? তিনি বললেনঃ হাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা তো এমন এক ব্যাপার যা আল্লাহ আদাম আঃ)-এর কন্যাদের উপর নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। কাজেই হাজীগণ যা করে থাকে, তুমিও তেমনি করে যাও, তবে তুমি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করবে না। এরপর আমরা যখন মিনায় ছিলাম, তখন আমার কাছে গরুর গোশ্ত নিয়ে আসা হল। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এটা কী? লোকজন উত্তর করলঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছেন। (সহিহ বুখারি ৫৫৪৮)

৩। ছতর ঢাকা রাখাঃ

উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করা যাবে না। কেউ উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করে তাহলে তার তাওয়াফ শুদ্ধ হবে না। জাহেলী যুগে লোকেরা উলঙ্গ অবস্থায় বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করত। উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করার প্রমানঃ  

১৬৬৫. ‘উরওয়াহ (রহ.) হতে বর্ণিত যে, জাহিলী যুগে হুমস ব্যতীত অন্য লোকেরা উলঙ্গ অবস্থায় (বাইতুল্লাহর) তাওয়াফ করত। আর হুমস্ হলো কুরায়শ এবং তাদের ঔরসজাত সন্তান-সন্ততি। হুমসরা লোকেদের সেবা করে সওয়াবের আশায় পুরুষ পুরুষকে কাপড় দিত এবং সে তা পরে তাওয়াফ করত। আর স্ত্রীলোক স্ত্রীলোককে কাপড় দিত এবং এ কাপড়ে সে তাওয়াফ করত। হুমসরা যাকে কাপড় না দিত সে উলঙ্গ অবস্থায় বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করত। সব লোক ‘আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন করত আর হুমসরা প্রত্যাবর্তন করত মুযদালিফা হতে। রাবী হিশাম (রহ.) বলেন, আমার পিতা আমার নিকট ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, এই আয়াতটি হুমস সম্পর্কে নাযিল হয়েছেঃ

 (ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ) (এরপর যেখান হতে অন্য লোকেরা প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান হতে প্রত্যাবর্তন করবে) রাবী বলেন, তারা মুযদালিফা হতে প্রত্যাবর্তন করত, এতে তাদের ‘আরাফাহ পর্যন্ত যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হল। (সহিহ বুখারি ১৬৬৫)

নবম হিজরীর হজ্জের মৌসুমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে আজ থেকে কোন মুশরিক হজ্জে আসবে না এবং কেউ উলঙ্গ হয়ে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ কবরে না।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের পূর্বে যে হাজ্জে (হজ্জ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) কে আমীর নিযুক্ত করেন, সে হাজ্জে (হজ্জ) কুরবানীর দিন [আবূ বকর (রাঃ)] আমাকে একদল লোকের সঙ্গে পাঠালেন, যারা লোকদের কাছে ঘোষণা করবে যে, এ বছরের পর থেকে কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করবে না এবং বিবস্ত্র হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না। (সহিহ বুখারি ১৫২৪ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ সৌদি আরবের বিশিষ্ট মুজতাহীদ আলেম শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন, যদি কোন উলঙ্গ ব্যক্তি তাওয়াফ করে তাহলে তাওয়াফ শুদ্ধ হবে না। কেননা তা করা নিষিদ্ধ। এ ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী হচ্ছে, “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যাতে আমাদের অনুমোদন নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত। (আল-শারহুল মুমতি’ ৭/২৫৭)

৪। হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু ও শেষ করাঃ

হাজারে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু ও শেষ করতে হবে। হাজরে আসওয়াদের সামনে থেকে শুরু করলে তার সাতটি চক্কর পূর্ণ হবে না। ঠিক তেমনিভাবে হাজরে আসওয়াদে পৌছার আগে শেষ করলে তার সম্পম চক্কর পূর্ণ হবে না। তাই  হাজরে আসওয়াদ থেকেই তাওয়াফ শুরু ও শেষ করতে হবে।

দলিলঃ

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ শুরু করতেন তখন প্রথম তিন চক্করে (তাওয়াফে) রামল করতেন (বাহু দুলিয়ে বীরদর্পে প্রদক্ষিণ করতেন) এবং চার চক্করে সাধারণ হেঁটে তাওয়াফ করতেন, হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) শুরু করে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত। ইবনে উমার (রাঃ)-ও তাই করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ ২৯৫০)

মন্তব্যঃ কেউ যদি কাবার ফটক থেকে তাওয়াফ শুরু করে তাহলে তার তাওয়াফ অপূর্ণ ও অশুদ্ধ হবে। যদি কোন ব্যক্তি কাবার ফটক থেকে তাওয়াফ শুরু করবে এবং এর উপর ভিত্তি করে তাওয়াফ শেষ করবে তার তাওয়াফ পরিপূর্ণ হবে না। এমনকি যদি কেউ হাজারে আসওয়াদের সমান্তরালের সামান্য কিছু পর থেকে তাওয়াফ শুরু করে সেক্ষেত্রে তার এ চক্করটি বাতিল। আর যদি যে জানতে পারে যে সে হাজরে আসওয়াদের কিছু পর থেকে তাওয়াফ শুরু করে ছিল, তবে জানার সাথে সাথে তার তাওয়াফটি বাতিল হয়ে যাবে। তাকে আবার নতুন করে সম্পূর্ণ তাওয়াফ আদায় করতে হবে। কেননা তার সাতটি চক্কর পূর্ণ হয় নাই। ঠিক তেমনিভাবে যদি কেউ সপ্তম চক্করে হাজর আসওয়াদে পৌছার আগেই চক্কর বাদ দিয়ে চলে যায় তারও তাওয়াফটি বাতিল হবে। কেননা, সে  সাতটি চক্কর সমাপ্ত করে নাই। তাই ফরজ বা ওয়াজিব তাওয়াফ হলে তাকে অবশ্যই আবার তাওয়াফটি নতুন করে আদায় করতে হবে।

৫। কাবাঘরকে হাতের বামপাশে রেখে তাওয়াফ করাঃ

বায়তুল্লাহ্‌কে বাম দিকে রেখে তাওয়াফ করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়তুল্লাহ্‌কে বামে রেখে তাওয়াফ করেছেন। শত শত বছর থেকে বায়তুল্লাহ্‌কে বাম দিকে রেখে লক্ষ লক্ষ মুসলিম সর্বক্ষন চারপাশে তাওয়াফ করে আসছে এর কোন ব্যাতিক্রম পাওয়া যায় না।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে তাঁর বাহনে সওয়ার অবস্থায় কংকর মারতে দেখেছি। এ সময় তিনি বলছিলেন, তোমরা হাজ্জের নিয়ম-পদ্ধতি শিখে নাও। তিনি আরো বলেনঃ আমি অবহিত নই আমার এই হাজ্জের পর আবার হাজ্জ করার সুযোগ পাবো কি না। (সুনানে আবু দাউদ ১৯৭০)

৬। হাতিম বা হিজরের ভিতরে তাওয়াফ করাঃ

১। আবদুল হামিদ ইবন জুবায়র (রহঃ) তার ফুফু সফিয়া বিনত শায়বা সূত্রে বলেছেন, আমাদের কাছ আয়েশা (রাঃ) বলেছেন যে, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি কি কা’বায় প্রবেশ করবো না? তিনি ইরশাদ করলেন, তুমি হিজারে প্রবেশ কর। কেননা, তা কাবারই অংশ। (সুনানে নাসঈ ২৯১৪)

২। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার ইচ্ছা হতো কাবায় প্রবেশ করে তাতে সালাত আদায় করতে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে আমাকে হিজরে প্রবেশ করিয়ে বললেনঃ যখন তুমি কাবায় প্রবেশ করতে ইচ্ছা করেছ, তখন এখানে সালাত আদায় কর, কেননা এটি কাবারই এক অংশ। কিন্তু তোমার গোত্র যখন একে নির্মাণ করে, তখন তাকে সংক্ষিপ্ত করেন।(সুনানে (সুনানে নাসঈ ২৯১৪৫, সুনানে তিরমিজি ৮৭৬)

৩। অন্য এক বর্ণনায় আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! কাবা ঘরে প্রবেশ করব না কি?’ তিনি বললেন, “তুমি হিজরে প্রবেশ কর। তা কাবা ঘরেরই অংশ।” (নাসাঈ ২৯১৪)

মন্তব্যঃ সহিহ হাদিসের আলোকে জানতে পারছি যে, হাতিম বা হিজর কাবারই অংশ। আমাদের জানা আছে, তাওয়াফ করতে হয় কাবার চার পাশে। কাবার ভিতর দিয়ে তাওয়াফ হবে না। কাজেই কাবা ঘরের তাওয়াফকারী অবশ্যই হিজরের বাইরে দিয়ে তওয়াফ করবে।

৭। মসজিদে হারামের ভেতর দিয়ে তাওয়াফ করাঃ

তাওয়াফের ক্ষেত্রে ফরয হচ্ছে বায়তুল্লাহ্‌কে তাওয়াফ করা। যদি কেউ মসজিদে হারামের বাহিরে দিয়ে তাওয়াফ করে তাহলে সে মসজিদকে তাওয়াফ করল, বায়তুল্লাহ্‌কে নয়।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন, আলেমগণ বলেন: তাওয়াফ সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে মসজিদে হারামের ভেতরে হওয়া। মসজিদের বাহিরে দিয়ে তাওয়াফ করে তাহলে আদায় হবে না। এজন্য কেউ যদি মসজিদে হারামের বাহিরে দিয়ে তাওয়াফ করতে চায় তাহলে সেটা জায়েয হবে না। কেননা সেক্ষেত্রে সে মসজিদকে তাওয়াফকারী হবে, কাবাকে নয়। আর যারা মসজিদের ভেতরে উপরে কিংবা নীচে দিয়ে তাওয়াফ করেন তাদের তাওয়াফ জায়েয হবে। তবে, সাফা-মারওয়া দিয়ে কিংবা সাফা-মারওয়ার উপর দিয়ে তাওয়াফ করা থেকে সাবধান। কেননা সাফা-মারওয়া মসজিদের অংশ নয়। (তাফসিরু সুরাতিল বাক্বারা ২/৪৯)

৮। বিরতিহীন ভাবে সাতবার চক্কর দিয়ে তাওয়াফ পূর্ণ করাঃ

১. ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে মক্কায় পৌছে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার জন্য বায়তুল্লাহর যে তাওয়াফ করতেন, তাতে তিন চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে এবং চার চক্কর স্বাভাবিক পদক্ষেপে সম্পন্ন করতেন। তাপর দু’রাকাআত সালাত আদায় করতেন। অতঃপর সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করতেন। (সহিহ মুসলিম ২৯১৯)

২. আম্‌র (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্জেস করলাম, ‘উমরাহকারীর জন্য সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করার পূর্বে স্ত্রী সহবাস বৈধ হবে কি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সাত চক্করে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ সমাপ্ত করে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করেন, অতঃপর সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করেন। এরপর ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিলাওয়াত করেন, “তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে”। (আল-আহযাবঃ ২৩)। (সহহি বুখরি ১৬২৩)

মন্তব্যঃ পরিপূর্ণ সাত চক্কর তাওয়াফ করা। সাত চক্করের চেয়ে এক কদমও কম হলে তাওয়াফ পরিপূর্ণ হবে না। ইমাম নববী বলেন: তাওয়াফের শর্ত হচ্ছে, সাত চক্কর হওয়া। প্রত্যেকবার হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে হাজারে আসওয়াদ শেষ করবে। যদি সাত চক্করের চেয়ে এক কদমও কম হয় তাহলে তার তাওয়াফ ধর্তব্য হবে না। চাই সে ব্যক্তি মক্কাতে অবস্থান করুক কিংবা মক্কা থেকে বের হয়ে তার নিজ দেশে ফিরে আসুক। দম বা পশু জবাই করে কিংবা অন্য কোন আমলের মাধ্যমে তাওয়াফের ঘাটতিকে পূরণ করা সম্ভবপর নয়। (আল-মাজউ (৮/২১)

তাওয়াফ করার সময় যদি জামা‘আতের ইকামত দিয়ে দেয় তখন সঙ্গে সঙ্গে তাওয়াফ বন্ধ করে দিয়ে নামাযের জামা‘আতে শরীক হবেন এবং ডান কাঁধ ও বাহু চাদর দিয়ে ঢেকে ফেলবেন। নামায রত অবস্থায় কাঁধ ও বাহু খোলা রাখা জায়েয না। সালাত শেষে তাওয়াফের বাকী অংশ পূর্ণ করবেন।

৯। সাত চক্করে শেষ করে দুই রাকাত সালাত আদায় করাঃ

তাওয়াফের সাত চক্কর শেষ হলে দু’কাঁধ এবং বাহু ইহরামের কাপড় দিয়ে আবার ঢেকে ফেলবেন এবং ‘‘মাকামে ইব্রাহীমের’’ কাছে গিয়ে পড়বেনঃ

* وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلّىً*

অর্থঃ ইব্রাহীম (পয়গাম্বর)-এর দন্ডায়মানস্থলকে সালাত আদায়ের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো।

অতঃপর তাওয়াফ শেষে এ মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে এসে দু’রাকআত সালাত আদায় করবেন। ভীড়ের কারণে এখানে জায়গা না পেলে মসজিদে হারামের যে কোন অংশে এ সালাত আদায় করা জায়েয আছে। মানুষকে কষ্ট দেবেন না, যে পথে মুসল্লীরা চলাফেরা করে সেখানে সালাতে দাঁড়াবেন না। সুন্নত হলো এ সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর প্রথম রাকআতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস পড়া।

এই কথার দলিলঃ

১. আবদুল্লাহ ইব্‌নু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘উমরাহ করতে গিয়ে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করলেন ও মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন এবং তাঁর সাথে এ সকল সাহাবী ছিলেন যারা তাঁকে লোকদের হতে আড়াল করে ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবার ভিতরে প্রবেশ করেছিলেন কিনা? এক ব্যক্তি আবূ আওফা (রাঃ)-এর নিকট তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, না। (সহিহ বুখারি ১৬০০ তাওহীদ)

২. ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সাত চক্করে (বাইতুল্লাহর) তাওয়াফ সম্পন্ন করে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর সাফার দিকে বেরিয়ে গেলেন। [ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন] মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”। (আল-আহযাবঃ ২৩)। (সহিহ বুখারি ১৬২৭)

৩. আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ লোকেদের করলো এবং দু’ রাক‘আত নামায পড়লো, তা একটি ক্রীতদাসকে দাসত্বমুক্ত করার সমতুল্য। (সুনানে ইবনে মাজাহ ২৯৫৬)

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “তাওয়াফের ০৯ টি ওয়াজিব আমল

Leave a comment