প্রথম পর্বঃ বিদআত প্রতিরোধে আমাদের করণীয়

প্রথম পর্বঃ বিদআত প্রতিরোধে আমাদের করণীয়

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

পূর্বের আলোচনায় বিদআত সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার একটা ধারনা হয়েছে। বিদআতের শ্রেনী বিভাগ করে আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু বিদআতের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কিভাবে বিদআত উৎপত্তির হয় এবং বিদআত চিনার উপায় সম্পর্কে আমরা জানি। এমনি বিদআতে ভয়াবহ পরিনতি সম্পর্কেও আমরা অপগত। এই ভয়াবহ কাজ যা একজন মুমিনকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয় অথচ সে ভাল আমল মনে করে করে থাকে। পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তি জানে তার কাজটি খারাপ, কাজেই সে পাপ থেকে তওয়া করে যে কোন সময় ফিরে আসতে পাবে। কিন্তু একজন বিদআতী তার বিদআত থেকে তওবার সুযোগ পায় না, কারন সে মনে করে সে ভাল কাজ করছে, কাজেই ভালো কাজ থেকে সে কখনও তওবা করবে না। এই জন্য অনেক আলেম বলে থাকেন, বিদআত পাপাচার থেকেও মারাত্বক অন্যায়। এই মারাত্বক পাপাচার থেকে বাচার জন্য একে প্রতিরোধ করতে হবে। তাই এই অধ্যায় বিদআত প্রতিরোধে আমাদের করণীয় আলোচনা করব।

১। অর্থ বুঝে বুঝে কুরআন পড়া, সম্ভব হলে বিশুদ্ধ তাফসিরের আলোকে পড়াঃ

পৃথিবীর সকল মুসলিম এ কথা স্বীকার করে যে, আল কুরআন হল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশিগ্রন্থ। বর্তমান বিশ্বে বিদ্যসান একমাত্র মানবতার মুক্তির সনদ। এই ঐশিগ্রন্থে রয়েছে মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট হিদায়াত ও দিক নির্দেশনা। এই গ্রন্থেই আছে কি ভাবে আল্লাহ আইন কানুন মান্য করে আখেরাতে মুক্তি পাওয়া যাবে, তারই বিশদ বিবরণ। কুরআন থেকেই আমরা আল্লাহ প্রদত্ত আদেশ নিষেধ সরাসরি জানতে পাই। এখানেই আছে পরকাল, জান্নাত, জাহান্নাম সম্পর্কে শত শত সুস্পষ্ট বর্ণনার সমাহার। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, পূর্ববর্তী জাতীর সাফল্য ও ব্যর্থতার খতিয়ান। ইসলাম সার্বজনিন, ইহার সকল আমলগুলি সকল মুসলিমের নিকট সমান ভাবে পালনীয়। আমলের জন্য করার জন্য আমলকে বুঝা ও উপলব্ধির করা প্রয়োজন। আমল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা না থাকলে, সঠিক আমলের পরিবর্তে বিদআতী আমল করা শুরু করে। কুরআনও তার ব্যাখ্যা হাদিসের জ্ঞানই বলে দিবে, আমাদের আমলের ধরন কেমন? কখন করতে হবে? কি ভাবে করতে হবে? আমাদের সকল কাজের বিধি বিধান দেওয়ার একমাত্র কর্তৃত্ব হল আল্লাহ। আর কুরআন হল বিদিবিধান প্রদান কারি আল্লাহ সরাসরি নির্দেশ নামা। আর নির্দেশনামা না বুঝে, নির্দেশ পালন করা কতটুকু সম্ভব? যে যত বেশী কুরআন বুঝে বড়বে তার মানার যোগ্যতা তত বেশী হবে। এবং ফলে সে বিদআত থেকে বেশী বেচে চলতে পাবরে।

 আর এত সব জানার জন্য বিদআত থেকে দুরে থাকার জন্য অবশ্যই কুরআন বুঝে বুঝে পড়তে হবে। কুরআন মজীদ বুঝে পড়ার পাশাপাশি এ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করতে হবে। চিন্তা-ভাবনা করে কুরআন শিখলে এর শিক্ষা, অর্থ ও তাৎপর্য মনের গভীরে প্রবেশ করবে। তখন সহজ সরল পথ পাওয়া সহজ হবে এবং বিদআতে মত বাকা পথ থেকে বাচা যাবে। মহান আল্লাহও আমাদের কুরআন থেকে জ্ঞান আহরণ করতে বলেছেন। আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেন,

 إِنَّآ أَنزَلۡنَـٰهُ قُرۡءَٲنًا عَرَبِيًّ۬ا لَّعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ (٢) 

অর্থঃ আমি ইহা আরবী ভাষায় কুর-আন অবতীর্ণ করেছি, যেনো তোমরা জ্ঞান আহরণ করতে পার। (সুরা ইউসুফ ২:২)।

মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশও হলো, একনিষ্ঠভাবে তার ইবাদাত করে যাওয়া। তার ইবাদাতে কোন প্রকার বিদআত শির্কের মত অচল পদ্ধতি অনুপ্রবেশ করান যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّآ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡڪِتَـٰبَ بِٱلۡحَقِّ فَٱعۡبُدِ ٱللَّهَ مُخۡلِصً۬ا لَّهُ ٱلدِّينَ (٢)

অর্থঃ আমি তোমার কাছে হকসহ এ কিতাব নাযিল করেছি৷  তাই তুমি একনিষ্ঠভাবে কেবল আল্লাহর ইবাদাত করো৷ (সুরা যুমার ৪৩:২)

যদি শুধুই কুরআনর তিলাওয়াত করি আর খতমের পর খতম দেই। অর্থ না বুঝলে কি জ্ঞান আহরন করতে পারব? আদেশ পালন (আল্লাহর ইবাদাত) করতে পারব? এমন কি কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর সুসংবাদ ও সতর্ক বাণী থেকেও বঞ্চিত থাকব। কুরআনের দাবি বুঝে পড়া, ধোকা খাবেন না। বুঝে পড়লে সঠিক জ্ঞানের কারনে বিদআত কাছেও আসতে পারবে না। কুরআনে আল্লহ বারবার উল্লেখ করেছেন, এই কিতাব তিনি নাযিল করেছেন যাতে লোকদেরকে অন্ধকার (জুলমাত) থেকে বের করে আলোর মধ্যে নিয়ে আসা যায়। অন্ধকার অর্থ হল অজ্ঞতা বা গোমরাহি বিদআতে ভরা আমল আর আলো (নূর) অর্থ হল হিদায়েত। যদি এক কথায় মহা গ্রন্থ আল কুরআনের নাজিলের উদ্দেশ্য জানতে চাই। সকল নবী রাসূর আলাই-হিস সালামদের আগমনের হেতু জানতে চাই, তবে তার উত্তর একটাই আদম সন্তানদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোর মধ্যে নিয়ে আসে। কুরআনে এমন কি আছে যা আপনাকে অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে দিকে নিয়ে আসবে। নিশ্চই মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন। তাই আসুন আজই বুঝে বুঝে কুরআন পড়ি আর অনুসন্ধান করি। এবং দেখি কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ কি বলেন? মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

الٓر‌ۚ ڪِتَـٰبٌ أَنزَلۡنَـٰهُ إِلَيۡكَ لِتُخۡرِجَ ٱلنَّاسَ مِنَ ٱلظُّلُمَـٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ بِإِذۡنِ رَبِّهِمۡ إِلَىٰ صِرَٲطِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَمِيدِ (١)

অর্থঃ আলিফ লাম-র। হে মুহাম্মদ৷ এটি একটি কিতাব, তোমার প্রতি এটি নাযিল করেছি, যাতে তুমি লোকদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর মধ্যে নিয়ে আসো তাদের রবের প্রদত্ত সুযোগ ও সামর্থের ভিত্তিতে, এমন এক আল্লাহর পথে যিনি প্রবল প্রতাপান্বিত ও আপন সত্তায় আপনি প্রশংসিত। (ইবরাহীম ১৪:১)।

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

ٱللَّهُ وَلِىُّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ يُخۡرِجُهُم مِّنَ ٱلظُّلُمَـٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ‌ۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَوۡلِيَآؤُهُمُ ٱلطَّـٰغُوتُ يُخۡرِجُونَهُم مِّنَ ٱلنُّورِ إِلَى ٱلظُّلُمَـٰتِ‌ۗ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ أَصۡحَـٰبُ ٱلنَّارِ‌ۖ هُمۡ فِيہَا خَـٰلِدُونَ (٢٥٧)

অর্থঃ যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের সাহায্যকার ও সহায়৷ তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে নিয়ে আসেন ৷ আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে তাগুত৷ সে তাদের আলোক থেকে অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যায় ৷ এরা আগুনের অধিবাসী ৷ সেখানে থাকবে এরা চিরকালের জন্য ৷ (সুরা বাকারা ২:২৫৭)।

মহান আল্লাহ কুরআনে সকল জিনিস পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে এবং যা সঠিক পথ নির্দেশনা করেছেন তারই অনুসরণ করতে বলেছেন। সঠিক পথ পেলে বিদআত ঢোকার স্থান পাবেনা। মহান আল্লাহ বলেন,

وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَـٰبَ تِبۡيَـٰنً۬ا لِّكُلِّ شَىۡءٍ۬ وَهُدً۬ى وَرَحۡمَةً۬ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ (٨٩) 

 অর্থঃ আমি এ কিতাব তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যা সব জিনিস পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে এবং যা সঠিক পথ নির্দেশনা, রহমত ও সুসংবাদ বহন করে তাদের জন্য যারা আনুগত্যের শীর নত করে দিয়েছে৷ (সুরা নাহল ১৬:৮৯)। 

উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহর ঘোষনা করেন, কুরআনে প্রতিটি জিনিস সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন যাতে তার বান্দা সহজে বুঝতে পারে, কোন পথে হিদায়েত, কোন পথে গোমরাহী, কোন কাজে লাভ, কোন কাজে ক্ষতি, কোন পথে বিদআত। আর বান্দা এসব জানার পর আল্লাহ অনুগত হয়ে সঠিক পথে চলতে থাকে। অর্খ না বুঝে পড়লে আল্লাহ দেখান পথ পাওয়া দুস্কর। কোন বিদেশির ভাষা না বুঝে তার আদেশ, নিষেধ, অনুরোধ মান্য করা যেমন কঠিন কাজ, ঠিক তেমনি ভাবে আল্লাহ আদেশ, নিষেধ না জেনে মান্য করা খুবই কঠিন। আর যখনই অর্থ বুঝে বুঝে পড়বে তখনই বান্দা তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবন কীভাবে পরিচালিত করতে পারবে। যার ফলে কুরআন হাদিস বিরোধি বিদআত সমূলে বন্দার আমল থেকে দুরে চলে যাবে। কাজেই বান্দা যখন কুরআনের মাধ্যমেই হেদায়াতের সন্ধান করবে, আল্লাহ তখন বিদআত মুক্ত সরল ও সঠিক পথে দেখাবেন। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,

 إِنَّ هَـٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَہۡدِى لِلَّتِى هِىَ أَقۡوَمُ

অর্থঃ নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল ও সঠিক। (সূরা বনি-ইসরাঈল ১৭:৯)।

২। সহিহ সু্ন্নাহর জ্ঞান অর্জণঃ

বিদআতের বিপরীত হল সুন্নাহ। প্রতিটি আমলেরই সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি আছে। যে আমলে সুন্নাহ সম্মত দলিল নেই তাই বিদআত। সুতারং প্রতিটি আমল করার পূর্বে সুন্নাহ সম্মত দলিল দেখে নিতে হবে। আর এ জনই দরকার সহিহ সুন্নাহর জ্ঞান অর্জণ।

সমাজে যত বিদআত চালু আছে তার অধিকাংশই মিথ্যা, জাল, যঈফ হাদিস ও কিচ্ছা কাহিনীর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। সহিহ সুন্নাহর আমলের বিপরীতে মনগড়া মিথ্যা, জাল, যঈফ হাদিস ও কিচ্ছা কাহিনী আমাদের সমাজের হাড়ে হাড়ে প্রবেশ করে আছে। যার ফলে কোনটা সঠিক আর কোনটি বেঠিক বুঝো উঠা সত্যিই কঠিন। উপরের আলোচনায় দেখেছি, লাইলাতুল বরাত, লাইলাতুল মিজা, আশুরাসহ বহু আমল জাল, যঈফ হাদিসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। মাউযূ বা জাল হাদীস হাদিস গ্রহনের ফলে যুগে যুগে মুসলীমদের আকিদা ও আমলের ক্ষেত্রে বহু বিদআতী আমলের সৃষ্টি হয়েছে। একটি উদাহরন দিলে ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমাদের সমাজে আমরা প্রতি বছর সাবান মাসের পনের তারিখ সবে-বরাত বা লাইরাতুল বরাত নামে পালন করি। অনেকগুলী জাল ও জঈফ হাদিস দ্বারা এই রাতের আকিদা ও আমল সাজান হয়েছে। এমনই কয়েকট জাল বা জঈফ হাদিস বুঝার জন্য আবারও উপাস্থাপন করছি।

১। যখন শাবান মাসের পনের তারিখ আসে তোমরা দিনে রোযা রাখ আর রাতে নফল নামায আদায় কর। কারণ, কারণ এ রাতে আল্লাহ তায়ালা নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন: এমন কেউ আছো যে আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি তাকে ক্ষমা করে দিব, এমন কেউ আছো যে আমার নিকট রিযিক চাও আমি তাকে রিযিক দিব। এমন কেউ আছো যে আমার কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাও আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দিব…এভাবে আল্লাহ তায়ালা ফজর উদীত হওয়া পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।

মন্তব্য কোন মুহাদ্দিসের মতে এটি দূর্বল আর কারও মতে এটি একটি জাল হাদীস। দেখুন ইবন মাজাহ, নামায অধ্যায়: নামায প্রতিষ্ঠা করা। বুসিরী যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাতে বলেন: আবু মূসার সনদে বর্ণিত হাদীসটি দূর্বল। কারণ, এর সনদে রয়েছে আব্দুল্লাহ বিন লাহিয়া এবং ওলীদ বিন মুসলিমের তাদলীস। যদিও সহীহে ইবনে এ হাদীসটি উল্লেখিত হয়েছে কিন্তু উপরোক্ত সমস্যাগুলো থাকার কারণে হাদীসটি সহীহ নয় বরং আল্লামা আলাবানী (রাহ:) জাল হিসেবে চিহিৃত করেছেন।

হাদিস জাল রচনাকারী একজন রাবী থেকে এরূপ আরেকটি হাদিস ইবনে মাজাহ উল্লেখ করেছেন। হাদিসটি হলঃ শাবান মাসের মধ্যরাত এলে তোমরা রাতে কিয়াম কর এবং দিনে ছিয়াম পালন কর।এই হাদীছের সনদে ইবনে আবু সাবরাহ নামক একজন জাল হাদীছ রচনাকারী রাবী থাকার কারণে হাদীছটি গ্রহণযোগ্য নয়। (দেখুনঃ সিলসিলায়ে যাঈফা, হাদীছ নং- ২১৩২)

২।   “হে আলী, যে ব্যক্তি অর্ধ শাবানের রাত্রিতে এমনভাবে একশত রাকাত নামায আদায় করবে যে, প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহার পরে দবার কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’সূরা পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার সে রাত্রির যাবতীয় প্রার্থনা পূরণ করবেন।

মন্তব্যঃ ইব্‌নুল জাওযী উক্ত হাদীসটি মাওয়ুআত কিতাবে তিনটি সনদে উল্লেখ করে বলেছেন, এটি যে বানোয়াট তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনটি সনদেই এমন সব বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের অধিাকংশরই পরিচয় অজ্ঞাত। আরও কতিপয় বর্ণনাকারী খুব দূর্বল। সুতরাং হাদীসটি নিশ্চিতভাবে জাল। ইব্‌নুল কায়্যেম জাওযিয়াহ আল মানারুল মুনীফ কিতাবে উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন: জাল হাদীস সমূহের মধ্যে অর্ধ শাবানের রাত্রের নামায পড়া সম্পর্কীত উক্ত হাদীসটি অন্যতম। এর পর তিনি বলেন: আজব ব্যাপার হল, কিছু মানুষ যারা হাদীসের কিছু ঘ্রাণ পেয়েছে তারাও এ সকল উদ্ভট হাদীস দেখে প্রতারিত হয়ে শবে বরাতের নামায পড়া শুরু করে দেয়। অনুরূপভাবে ইমাম সুয়ূতী রা. উপরোক্ত হাদীসটি আল লাআলী আল মাসনূআ ’ কিতাবে উল্লেখ করে সেটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তদ্রুপ ইমাম শাওকানী রা. এটিকে আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূআহ কিতাবে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

৩। রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রামাযান আমার উম্মতের মাস।

মন্তব্যঃ ইমাম সুয়ূতী (রাহ:) কর্তৃক লিখিত আল জামিউল কাবীর বা জামউল জাওয়ামি’গ্রন্থে‘র ১২৮৩০ নং হাদীস। তিনি নিজেই বলেছেন, হাদীসটি মুরসাল। আরও হাদীসটি দায়লামী (আনাস রা:) থেকে বর্ণনা করেন। আল্লামা আলবানী (রাহ:) বলেন: হাদীসটি যঈফ বা দূর্বল। দেখুন: সিলসিলা যঈফা মুখতাসারাহ হাদীস নং ৪৪০০ মাকতাবা শামেলা)।

৪। আয়েশা (রা:) হতে বণির্ত। এক রাতে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (আমার ঘরে) পেলাম না। তাই তাকে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে তাকে বাকী গোরাস্থানে পেলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন: “তুমি কি এ আশংকা কর যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন?”  আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি ধারণা করে ছিলাম যে, আপনি হয়ত আপনার অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন। একথা শুনে তিনি বললেন: “আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং কালব গোত্রের ছাগল সমূহের লোম সমপরিমান মানুষকে ক্ষমা করে দেন।”

মন্তব্য তিরমিযী। অনুচ্ছেদ, অর্ধ শাবানের ব্যাপারে যা এসেছে। তবে তিনি নিজেই এর পরে উল্লেখ করেছেন, মুহাম্মাদ অর্থাৎ ইমাম বুখারী (রাহ:) কে বলতে শুনেছি তিনি এ হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। ইমাম দারাকুতনী (রাহ:) বলেন: এ হাদীটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তবে সনদগুলো মুযতারাব এবং সুপ্রমাণিত নয়। বর্তমান শতকের শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ আল্লামা আলবানী (রাহ:)ও এ হাদীসটিকে যঈফ বলে সাব্যস্থা করেছেন। দেখুন: সহীহ ওয়া যঈফ তিরমিযী, হাদীস নং ৭৩৯, মাকতাবা শামেলা)

৫। যে ব্যক্তি অর্ধ শাবানের রাতে বার রাকাত নামায পড়বে-প্রতি রাকাতে কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’সূরাটি পড়বে ত্রিশ বার-তাহলে সে জান্নাতে তার আসন না দেখে বের হবে না।

মন্তব্যঃ এ হাদীসটিও ইব্‌নুল জাওযী রা. তার আল মাওযূআত কিতাবে উল্লেখ করেছেন। এ হাদীসটিও জাল। এ হাদীসটির সনদে এমন একদল বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের সকলের পরিচয় অজ্ঞাত। অনুরূপভাবে ইমাম সূয়ূতী রাহ. আল লাআলী কিতাবে এবং ইমাম ইব্‌নুল কয়্যেম (রাহ:) আল মানারুল মুনীফ কিতাবে উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করে এটিকে জাল হাদীস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

৬। শবে বরাতের ইবাদতের পক্ষের আলেমগণ বলে থাকে, এরাতের শেষের দিকে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং ক্বলব গোত্রের বকরীগুলোর লোম সংখ্যার চেয়ে অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ ক্ষমা করে থাকেন।

মন্তব্যঃ শায়খ বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, উপরোক্ত অর্থ বহনকারী হাদীছটি কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সকল বর্ণনাই যঈফ বা দূর্বল। দেখুনঃ ইমাম আলবানীর তাহ্কীকসহ মিশকাত (১/২৮৯) হাদীছ নং- ১২৯৯। ইমাম তিরিমিযী বলেনঃ আমি আমার উস্তাদ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারীকে বলতে শুনেছি যে, এই হাদীছটি যঈফ। দেখুন তিরমিযী (২/২৫৯) হাদীছ নং- ৭৪৪।

নির্দিষ্টভাবে এরাতে আল্লাহর দুনিয়ার আকাশে নেমে আসার এবং সকল বান্দাকে ক্ষমা চাওয়ার প্রতি আহবান জানানোর হাদীছটি সুনানের কিতাবে যঈফ ও জাল সনদে বর্ণিত হয়েছে।

তাছাড়া হাদীছটি বুখারীসহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত সহিহ হাদীছের বিরোধী। সহিহ হাদিছের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেনঃ কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি ক্ষমা করে দিব। অমুক আছে কি? অমুক আছে কি? এভাবে প্রতি রাতেই ঘোষণা করতে থাকেন। (দেখুন বুখারী, হাদীছ নং- ১০৯৪, মুসলিম, হাদীছ নং- ১৬৮)।

জাল ও যঈফ হাদিসের আলোকে জানতে পারলামঃ

১। শবে-বরাতের রাতে আল্লাহ্ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসের বলে আকিদা পোষণ করে

২। শবে-বরাতের রাতে আল্লাহ্ মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন।

৩। এই রাতে বিশেষ নিয়মে বিশেষ সংখ্যক সালাত আদায়।

৪। এই দিনে সিয়াম পালন করা

অথচ এই সকল আকিদা ও আমল সরাসরি সহিহ সুন্নাহ বিপরীত। সহিহ সুন্নাহ বিপরীত আমল হলো বিদআত। একটু চিন্তা করুন, সুরা দুখানে তিন ও চার নম্বর আয়াতে এসেছে, আমি একে নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ক কারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। বুঝা গেল কুরআন নাজিলের সাথে আল্লাহ্ মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন। আর এ কথা শতভাগ সঠিক যে কুরআন নাজিল হয়েছে, লাইলাতুল কদরে। কাজেই আল্লাহ্ মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন লাইলাতুল কদরে। কিন্তু জাল হাদিস প্রমান করে, শবে-বরাতের রাতে আল্লাহ্ মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন। এমনি ভাবে জাল হাদীছের উপর ভিত্তি করে সহিহ হাদিছের মর্ম প্রত্যাখ্যান করে শবে বরাতের রাতে আল্লাহ্ সম্পর্কে ভ্রান্ত আকিদা প্রষন করে এবং সুন্নাহ বর্জিত বিদআতী সালাত ও সিয়াম পালন করা কতটুকু যৌক্তিক। যারা এই রাতকে ফজিলত মনে করে পালন করে আসছে তাদের এই সকল জাল যঈফ হাদিস সম্পর্কে বললে সহজে মেনে নেবে না। ঠিক এমনি ভাবেই, জাল ও যঈফ হাদিস দ্বারা আমাদের সমাজে ভ্রান্ত আকিদা এবং বিদআতি  আমল প্রচলিত হয়ে আসছে। আমরা যদি সহিহ সুন্নাহ জ্ঞান অর্জন করতে পারি তা হলেই কেমন। এই বিদআত থেকে মুক্ত থাকতে পারব। এইতো কিছু কাল আগেও সমাজে বিদআত কিয়ামের মত বিদআতী আমল বেশ প্রচলিত ছিল। আমাদের সমাজের সহিহ সুন্নাহ জ্ঞান লাভের পর আস্তে আস্তে এই বিদআতী আমলটে সমাজ থেকে চলে যাচ্ছে। কিছু সুন্নী নাম ধারী এখনও  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহব্বত এর মিথ্যা দাবি করে এখনো বিদআতটি টিকিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টা করেছে। আশা করি সহিহ সুন্নাহ জ্ঞান পেলে তারও এমন বিদআতে থেকে বেরিয়ে আসবে। আমাদের  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বার বার কুরআন সুন্নাহ কে আকড়ে ধরতে বলেছেন। যেনমঃ প্রায় সকলেরই জানা হাদিস দুটির প্রতি লক্ষ করি।

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ”আমি তোমাদের মাঝে দুটি বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি, যতক্ষণ তোমরা এ দুটি আকড়ে থাকবে ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না । বস্তু দুটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাত। (মুয়াত্তা মালেক হাদিস ৩৩৩৮ আল-জামে অধ্যায়; হাকেম হাদিস ৩১৯ ইলম অধ্যায়; মিশকাত ১৮৬ ইলাম অধ্যায়; সনদ হাসান।)

আবূ হুরাইরা থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ। ‘হওয’(কাওসারে) আমার নিকট অবতরণ না করা পর্যন্ত তা বিচ্ছিন্ন হবে না।” (হাকেম ৩১৯)।

সুতারং বলা যায় বিদআতী আমলের মুল কারন সহিহ সুন্নাহ থেকে দুরে থাকা। যদি কেউ কুরআন ও সহিহ সুন্নাহ জ্ঞান অর্জন করে তবে সে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। বিদআতে মত গুমরা রাস্তা তাকে গ্রাস করেত পারবে

৩। বিদআত সম্পর্কে জ্ঞান রাখাঃ

বিদআত প্রতিরোধে করতে  হলে আমাদের এ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জণ করতে হবে। বিদআত সম্পর্কে অর্জন বলেত বুজায়, কোন আমলটি বিদআত, কিভাবে বুঝব আমটি বিদআত, বিদআত চিনার উপায়, সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন বিদআত ইত্যাদি। কোন শত্রুকে চিনতে পারলে যেমন তার থেকে বেচে থাকা সহজ হয়, ঠিক তেমনি বিদআত চিনতে পারলে তা থেকে বাচাও সম্ভব। বিদআত না চিনলে উহা থেকে বেচে থাকা দুরহ কাজ হবে। তাই বিদআত সম্পর্কে জ্ঞান করে তা চিনে পরিহার করতে হবে। যদি কেউ বিদআত চিনতে পারে, এর ভয়াবহ পরিনাম জানতে পারে, তবে আশা করা যায় সে আর বিদআতে ধারে কাছেও যাবে না।

আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণেই মূলত ইবাদাতের পরিবর্তে বিদআদ করে থাকি। আমাদের আমল সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই বলেই বিদিআত করে থাকি। আমরা অনেকটা আন্দাজ ও অনুমাননির্ভর অথবা শোনা কথার ওপর ইবাদত করি, ফলে সঠিক আমলের পরিবর্তে বিদআত হয়ে যাই। মুসলমান হওয়ার জন্য কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। ঠিক তেমনি কুরআন সুন্নাহ আলোকে আমল ও এর বিপরীত বিদআত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ। অথচ বিদআত সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন থেকে উদাসীন। আমাদের সমাজের অধিকাংশ মুসলিমের অবস্থাও ঠিক তেমন। তারা বিদআত ও বিদআত সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন থেকে সম্পূর্ণভাবে উদাসীন। আমাদের সমাজে বহু শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আছেন, যারা পৃথিবীর সকল খবর নখদর্পনে রাখেন কিন্তু ইসলামি জ্ঞান তথা বিদআত সম্পর্কে নুন্যতম ধারনা নাই। এই ঘুনে ধরা মুসলিমদের বিদআত থেকে বাচালে হলে এক মাত্র হাতিয়ার হল, বিদআত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জণ করা। আমরা পার্থিব জ্ঞান অর্জনের জন্য যে পরিমান শ্রম দিচ্ছি, তার সিকি ভাগও কি দ্বীনী ইলম তথা বিদআত সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের জন্য দিচ্ছি। অথচ আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান অর্জনের জন্য নির্দেশ করছেন। তিন এরশাদ করেনঃ

*هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ*

যারা জানে আর যারা জানে না তারা উভয় কি সমান হতে পারে? (সূরা জুমার ৩৯:৯।

বিদাআত সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে বিদআত প্রতিরোধের কোন প্রশ্নই আসে না। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে যাবে। বিদআত পন্থী এক বক্তাকে ওয়াজ মাহফিলে বলেতে শুনেছি। যদি মাদ্রাসা নির্মান, কুরআন সংকলণ, কুরআনে জের, জবব, পেশ সংযোজন, আরবী ব্যাকারন শিক্ষা ইত্যাদি ভাজ কাজ হিসাবে বিদআতে না হয়, তাহলে নতুন বিদআতি আমল “মিলাদ, কিয়াম, বিভিন্ন খতম, উরশ, মৃত্য বার্ষিকী, জম্ম বার্ষিকী, কবরে কাপড় জড়ান, মুমবাতি জ্বালান, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন, লাফালাফীর জিকির এবং পীরভক্ত গান সবই শরীয়ত সম্মত ভাল কাজ। এগুলো নমুনা শরীয়তে আছে আবার শরীয়ত বিরোধীও নয়, তাই এগুলো বিদআত হবে না।

অতপর, বিদআতীগন আরও কঠোর ভাষায় প্রশ্ন করে, প্রত্যেক নতুন আবিস্কৃত জিনিসই যদি পরিত্যাজ্য হয়, তাহলে আমরা অধুনিক কালের অনেক আবিস্কারই ব্যবহার করতে পারব না। বর্তমানে মানুষ অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি মানুষ ব্যবহার করছে। যেমনঃ মোবাইল, কম্পিউটার, মডেম, পেন ড্রাইভ, ফ্যান, ঘড়ি, চশমা, মাইক ইত্যাদি। এর কোনটিই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবহার করেন নাই। কারন তার সময় এগুলো ছিল না। বর্তমানে মানুষ যে সকল খাট পালঙ্ক, সোকেস, আলমালী, চেয়ার, টেবিল, সোফা, প্লেট, গ্লাস, জগ, ফুলদানী ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবহার করেন নাই। বর্তমানে আমরা যে পোলাও, বিরিয়ানী কোর্মা, বুট, মূড়ী, পিয়াঁজো খেয়ে থাকি যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খান নাই। বর্তমানে আমরা যে সকল যান-বাহনে চড়ে থাকি। যেমনঃ গাড়ী, ট্রেন, প্লেন, রকেট, রিক্সা, জাহাজ ইত্যাদি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই গুলিতে চড়েন নাই। বর্তমানে বিয়ে-শাদীতে যে কাবিননামা করা হয়, তা কি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় ছিল না। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসার জন্য চাঁদা আদায় করি, যেমনঃ সদকা, ফিতরা, যাকাত, কোরবানীর চামড়া, মান্নতের টাকা ইত্যাদি, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময় ছিল না। এমনিভাবে আরো অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা তা কি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা “খায়রুল কুরুনে” ছিল না কিন্তু আমরা করছি। তাদের প্রশ্ন তাহলে এগুল কেন বিদআত হবে না?

এই জন্য বলছি বিদআত প্রতিরোধে জন্য বিদআত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। বিদআত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে বিজ্ঞানের নতুন আবিস্কার যার সাথে দ্বীনের নুন্যতম সম্পর্ক নাই তাই বিদআতে সাথে তুলনা করে আসল বিদআতকে জায়েয করার ফতওয়া আবিস্কার করছে। উপরের কাজগুলি সম্পুর্ণ নতুন আবিস্কার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা “খায়রুল কুরুনে” এর অস্তিত্ব ছিল না কিন্তু আমার এগুলি ব্যবহার করছি, নেকি মনে করে আমল করছি না। এতটুকু জ্ঞান যদি একজন মুসলিমের না থাকে তবে কি করে সে বিদআত থেকে মুক্তি পাবে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

Leave a comment