হজ্জের ভুলভ্রান্তি ও বিদআত পঞ্চম কিস্তি : মদীনা ও কবর জিয়ারত

হজ্জের ভুলভ্রান্তি ও বিদআত পঞ্চম কিস্তি : মদীনা ও কবর জিয়ারত

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। মাদীনা যিয়ারত কালে ভুল-ত্রুটি

কবর যিয়ারতে বিধান কি?

কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মতি প্রদান করেছেন।

বুরায়দা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কবর যিয়ারত করা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করতাম এখন তোমরা যিয়ারত কর। তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করতাম, এখন যত দিন সম্ভব সংরক্ষণ করে খেতে থাক এবং নাবীয (খেজুর ভিজানো পানি) পান করা হতে নিষেধ করতাম। (মশক ব্যতীত অন্যান্য পাত্রে) এখন সকল পাত্রে পান কর। কিন্তু নেশা হয় এমন অবস্হায় নয়। ইবনু নুমায়র তার বর্ণনায়عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ বলেছেন। (সহিহ মুসলিম ২১৩২ ইফাঃ)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আম্মার কবর যিয়ারত করলেন এবং কাঁদলেন, উপস্থিত সবাইও কাঁদলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি আল্লাহর নিকট তাঁর জন্য ইস্তিগফার করার অনুমতি চেয়েছিলাম, আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি, অতঃপর তাঁর কবর যিয়ারত করার অনুমতি চেয়েছিলাম, তখন অনুমতি দেয়া হল। তোমরা কবর যিয়ারত করতে থাক, কবর মৃত্যুর কথা (পরকাল) স্মরণ করিয়ে দেয়। (সহিহ মুসলিম ২১৩১ ইফাঃ)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৫৬৯, নাসায়ী ২০৩৪, আবূ দাউদ ৩২৩৪)

কবর যিয়ারতে অনুমতি প্রদানের পাশাপাশি যিয়ারতের জন্য দোয়া ও শিক্ষা প্রদান করেছেন। নিম্ম এমন তিনটি হাদিস উল্লেখ করছি।

বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিক্ষা দিতেন যখন তারা কবরস্থানে গমন করতেন, তিনি তখন তাদের লক্ষ্য করে বলতেন, (আবূ বকর  রাঃ এর বর্ণনা অনুযায়ী) “আলসালামু আলা আহলিদ দিয়ার” এবং যুহায়র এর বর্ণনা “আসসালামু আলাইকুম কবরবাসী মুমিন ও মুলমানদের উপর সালাম বর্ষিত হউক ইনশাআল্লাহ আমরাও অবশ্য তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমাদের এবং তোমাদের সবার জন্য আল্লাহর নিকট শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।”(সহিহ মুসলিম ২১২৯ ইফাঃ)

কবর যিয়ারতের সময় সুন্নাত হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পঠিত দু‘আ পাঠ করা। ইসলামি ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত সহিহ মুসলিমের একটি দীর্ঘ হাদিসের শেষের দিকে কবরবাসীদের সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের (কবরবাসীদের) জন্য আমরা কী বলব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে বল,

**لْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاَحِقُونَ ‏– السَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ**

(কবরবাসী মুমিন মুসলমানদের প্রতি সালাম, আল্লাহ অগ্রগামী পশ্চাৎগামী সবার প্রতি দয়া করুন আমরাও

ইনশাআল্লাহ অবশ্য তোমাদের সাথে মিলিত হব)। সহিহ মুসলিম ২১২৮)

মন্তব্যঃ উপরের হাদিসগুলোর সাহায্য জানা যায় যে, কবর যিয়ারত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ। এটি একটি মুস্তাহাব আমল।

 

২। খুবই সংক্ষেপে কবর যিয়ারতের নিয়মঃ

১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারত হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে না বিস্তারিত বর্ণনা পরে আসছে

২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারত নিয়তে সফর শুরু না করে, পবিত্র মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়ত করে মদীয়া আসতে হবে। বিষয়টি পরে আলোচিত হবে।

৩। মসজিদে নববীতে প্রবেশ করার জন্য আলাদ কোন আদাব, কায়দা বা দোয়া হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয়।  যা কিছু বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে শুধুই মানুষের আবেগ আর ভালোবাসা। পৃথিবীর অন্যান্য মসজিদে যে ভাবে সম্মান ও মর্জাদে দিয়ে দুয়া পড়ে প্রবেশ করি ঠিক তেমনিভাবে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করেতে হবে। তাই প্রবেশ করার সময় মুস্তাহাব হল প্রথমে ডান পা আগে দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবেন এবং পড়বেনঃ

أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ – بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ – اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ –

এটি পৃথিবীর যে কোন মসজিদে প্রবেশের দোয়া। শুধু মসজিদে নববী জন্য দোয়াটি খাস করা ঠিক হবে না।

৪। মসজিদে প্রবেশের পর দুই রাকআত দুখুলুল মসজিদ অথবা অন্য যে কোন সালাত আপনি আদায় করতে পারেন। কারন যে কোন সমজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত সালাত আদায় করার কথা হাদিসে খুবই গুরুত্ব দিয়ে আলোচিত হয়েছে।

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সূলায়ক গাতফানী (রাঃ) জুমআর দিনে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। সুলায়ক (রাঃ) বসে পড়লেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সূলায়ক! তুমি দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ জুমু’আর দিন মসজিদে এলে, ইমাম তখন খুৎবারত থাকলে সংক্ষিপ্ত আকারে দু’ রাকআত সালাত আদায় করে নেবে। (সহিহ মুসলিম ১৮৯৭ ইফাঃ)

অতঃপর আপনার ইচ্ছা মোতাবেক দোয়া মুনাজাত করতে থাকবেন। উত্তম হলো এগুলো রিয়াদুল জান্নাতে বসে করা। আর এ স্থানটি হলো মসজিদটির মিম্বর থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরের মধ্যবর্তী অংশের জায়গাটুকু। এ স্থানটি সাদা কার্পেট বিছিয়ে নির্দিষ্ট করা আছে। ভীড়ের কারণে সেখানে জায়গা না পেলে মসজিদের যে কোন স্থানে বসে সালাত আদায় ও দোয়া-দরূদ পড়তে পারেন।

৫। সালাত আদায়ের পর কবর যিয়ারত করতে চাইলে আদব ও বিনয়ের সাথে কোন প্রকার শোরগোল না করে ধীরে ধীরে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিম্মের বাক্যে সালাম দিন। 

السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ – اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ – اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

অথবা এতদসঙ্গে আপনি এভাবেও বলতে পারেনঃ

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ

৬। এরপর একটু ডানে অগ্রসর হলেই আবূ বকর রাদিআল্লাহু আনহু এর কবর। তাকে সালাম দিবেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করবেন। আর একটু ডানদিকে এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন উমর রাদিআল্লাহু আনহু-এর কবর। তাকেও সালাম দেবেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ উক্ত তিনজনকে আপনি এভাবেও সালাম দিতে পারেনঃ

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَارَسُوْلَ اللهِ – اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا أَبَا بَكْرٍ – اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا عُُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশী না বলাই উত্তম। এরপর এ স্থান ত্যাগ করবেন।

৮। হজ্জগমনকারী নারীদের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারত জায়েয নয়। কোন নারীকেই (যে কোন) কবর যিয়ারত করার অনুমোধণ ইসলামি শরীয়তে দেয় নাই।  হাদিসে এসেছেঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘন ঘন কবর যিয়ারত কারিণীদের অভিসম্পাত করেছেন। (ইবনে মাজাহ ১৫৭৫)

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারী মহিলাদের লা’নত করেছেন। (সুনানে তিরমিজি ১০৫৬ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ নারীদের কবর যিয়ারত করা হারাম। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর যিয়ারত কারীনীদেরকে লা‘নত করেছেন। অতএব কোন অবস্থায়ই নারীদের জন্য কবর যিয়ারত হালাল নয়। নারীগণ মসজিদে নববীতে নামায পড়তে যাবে এবং নিজ জায়গায় বসেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দিবে। যে কোন জায়গা থেকে সালাম পাঠালেও তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজায় পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। এই কথার দলীল হলোঃ

আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখনই যে কেউ আমাকে সালাম করে তখনই আল্লাহ আমার রূহকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, যেন আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি। (মিসকাতুল মাসাবিহ ৯২৫ ও আবূ দাউদ, আস-সুনান ২/২১৮)।

৩।  কবর যিয়ারতের নিয়তে ত্রুটিঃ

দুটি কারনে মদীনা গমন করা হয়। প্রথমটি হল ফজিলত পূর্ণ মসজীদে নবী দর্শণ ও সেখানে ইবাদাত করা। দ্বিতীয় হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর জিয়ারত করা। কিন্তু এই দুটি কোনটি নিয়ত করে সফর শুরু করতে হবে? এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে মতভেদ লক্ষ করা যায়। উপমহাদেশের দেওবন্দ অনুসারী অধিকাংশ আলেমদের মতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর বা রওজার নিয়তে সফর করতে হবে। এর বিরোধীতা করে সালাফী আলেমদের ঐক্যমত হল, না বরকত ও সোয়াবের আশা করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের উদ্দেশ্য করে সফর করা যাবে না। 

এ সম্পর্কে শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারতের নিয়তে সফর করার হুকুম কী?

উত্তরে তিনি বলেনঃ যে কোনো কবর যিয়ারতের নিয়তে সফর করা জায়েয নয়। কারন হাদিসে এসেছে, আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুর রাসূল এবং মাসজিদুল আকসা (বায়তুল মাক্দিস) তিনটি মাসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে (সালাতের) উদ্দেশে হাওদা বাঁধা যাবে না (অর্থাৎ সফর করা যাবে না)। (সহিহ বুখারী ১১৮৯ তাওহীদ প্রকাশনী)

এই হাদিসের উদ্দেশ্য হলো ইবাদাতের নিয়তে পৃথিবীর কোনো স্থানের দিকে সফর করা যাবে না। কারণ, এ তিনটি মসজিদের দিকেই ইবাদাতের নিয়তে সফর করা জায়েয। অন্য কোনো মসজিদের দিকে ভ্রমণ করা জায়েয নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের উদ্দেশ্যে নয়, বরং তাঁর মসজিদে ইবাদাতের নিয়তে সফর করতে হবে। মসজিদে পৌঁছে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। তা শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য। মহিলাদের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করা জায়েয নেই।

মন্তব্যঃ সহিহ বুখারির হাদিসে জানা যায় কবর যিয়ারতের মাধ্যমে বরকত লাভ ও নেকী লাভের আশায় সফর করতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। অপর পক্ষে আমরা জানি কবর যিয়ারত এইটি মুস্তাহাব আমল। এই হাদিস দুটির সমন্নয় কর আলেমগন মতামত প্রদান করছেন যে, কবর যিয়ারত সুন্নাহ সম্মত মুস্তাহাব আমল হলেও, এর জন্য সফর করা জায়েয নয়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর যিয়ারত করার জন্য সফর করা যাবে না। কিন্তু যদি মসজিদে নবীকে উদ্দেশ্য করে সফল করি, তা হলে আমারা আর উক্ত হাদিসের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ব না। যেহেতু যদি মসজিদে নবীতে সালাতে অধিক ফজিলত বর্ণীত হয়েছে। যেমনঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মাসজিদুল হারাম ব্যতীত, অন্যান্য মসজিদে পড়া সালাতের তুলনায় আমার এ মসজিদে পড়া সালাত হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ। (ইবনে মাজাহ ১৪০৪)

তাই অধিক নেকীর আশায় আমরা মসজিদে নবীতে নিয়তে সফর কবর। যেহেতু আমাদের প্রান প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই মসজিদের পাশেই আছেন। তাই এই একই সফলে তার কবর যিয়ারত করব। এই সময় করর যিয়ারত করা সুন্নাহ সম্মত আলম। 

 

৪। কবর যিয়ারত হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত না করাঃ

আমাদের দেশ থেকে যারাই হজ্জ করতে যায়। তাদের জন্য মদীনা সফরের একটি ব্যবস্থা থাকে। সাধারণ হজ্জের কার্যাবলী শেষ করতে আট থেকে দশ দিন সময় লাগে। কিন্তু যাতায়াতগত বিভিন্ন সমস্যার কারনে হাজ্জিদের প্রায় ৪০-৪৫ দিন সৌদি আরবে অবস্থান করতে হয়। এই কারনে হাজ্জিদের মক্কা ও মদীনার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখান হয়। যা নিন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ। এই ধারা বাহিকতায় প্রায় দশ দিন সকল হাজিদের মদীনা থাকার একটি ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে অনেক অজ্ঞ হাজীসাহেব বিশ্বাস করেন যে, মসজিদে নববী যিয়ারত করা হজ্জের একটি অংশ। তারা ভাবেন, মসজিদে নববী যিয়ারত না করলে হজ্জ আদায় হবে না। বরং কোন কোন জাহেল মানুষ যিয়ারতকে হজ্জের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন।

হজ্জ ও যিয়ারত দুটি পৃথক আমল। হজ্জ ইসলামের অন্যতম একটি রুকন। ইসলামি শরীয়তের ভিত্তিগুলোর অন্যতম একটি ভিত্তি হল হজ্জ। যার উপর হজ্জ করার ফরজ হয়েছে তিনি তা আদায় না করলে কবিরা গুনাহ হবে। মহান আল্লাহ নিকট এই জন্য তাকে জবাবদীহি করতে হবে। কিন্তু যিয়ারত করা একটি সুন্নাহ সম্মত মু্স্তাহাব আমল যার জন্য নিয়ত করে সফর করাও সঠিক কাজ নয়। যে আমলটি না করলে তাকে মহান আল্লাহ নিকট এই কোন জবাবদীহি করতে হবে না। ইচ্ছা করে পরিত্যাগ করলেও গুনাহ হবে না। কাজেই বলা যায়, হজ্জ ও মসজিদে নববী যিয়ারতের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই। যিয়ারত ছাড়াই হজ্জ পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং হজ্জ ছাড়াও যিয়ারত পূর্ণ হয়ে যায়। আমাদের দেশের অনেকেরই সৌদি আবর গিয়ে যিয়ারতের সমর্থ নাই এবং বারবার সফর করা তাদের জন্য কষ্টকর। তাই আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সময় ও সুযোগ থাকার কারনে হজ্জের সফরে যিয়ারত করে থাকে। এই কাজটি ভাল কিন্তু যিয়ারত কে হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত করা ইসলামী শরীয়ত বিরোধী কাজ। ভেবে দেখেছেন কি! ফরজ নয় এমন একটি আমল কে ফরজের সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে করা কতটা গুরুতর অন্যায়।

৫। কিন্তু কেন আমরা হজ্জের সাথে যিয়ারত সম্পুক্ত করি?

উপমহাদেশের দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারি অধিকাংশ আলেম মনে করে থাকেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবর যিয়ারত করা ওয়াজিব না হলেও ওয়াজিব কাছাকাছি একটি বিষয়। “আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ” নামক কিতাবে দেওবন্দ ঘরানার প্রখ্যাত আলেম মাওলান খলিল আহম্মদ সাহারানপুরী এক প্রশ্নের জবাবে লিখেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা শরীফ যিয়ারত আমরা ও আমাদের পূর্বসূরীগনের মতে আল্লাহ অধিক নৈকট্য লাভ, অতিশয় পূণ্য লাভ ও উন্নত স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মাধ্যম। বরং উম্মতের জন্য তা ওয়াজিব না হলেও তার কাছাকাছি একটি বিষয়। রওযা পাক যিয়ারতের উদেশ্যে যাত্রা ও এই উদ্যশ্যে ব্যয় করা সৌভাগ্যের বিষয়। কেউ কেউ রওজা পাক যিয়ারতের নিয়তের সাথে মসজিদে নবী ও তত্সংশ্লিষ্ট মুবারক জায়গা সমূহের নিয়ত করে তাতেও কোন আপত্তি নেই। (দেওবন্দী আহলে সুন্নাতের আকিদা,খলীল আহমদ সাহারনাপুরী, প্রকাশক আল হাবীব ফাউন্ডেশন)

ফাজায়েলে হজ্জ নামক গ্রন্থে শাইখুল হাদিস মোহাম্মাদ জাকারিয়া ছাহারানপুরী লিখেছেন, যেই ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হুজুর (ছঃ) এর মাজার মোবারক আসিল না, সে নিজের নফসের উপর বড় জুলুম করিল যার মাযহাবের ওলামায়ে কেরাম এই বিষয় এক মত যে, হুজুর (ছঃ) এর কবর যিয়ারতের এরাদা করা মুস্তহাব কেহ কেহ ওয়াজিব লিখিয়াছেন

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর যিয়ারত মু্স্তাহাব হওয়া সত্ত্বেও এত বাড়াবাড়ির কারন হল কিছু মিথ্যা, জাল ও যঈফ হাদিস। যারা করব যিয়ারতকে ওয়াজিবের কাছাকাছি উল্লেখ করেছেন তারা ঐ সকল মিথ্যা, জাল ও যঈফ হাদিসের আলোকেই বলেছন। হয়ত তাদের যুগে হাদিস সহিহ যঈফ নিয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। যার ফলে তারা হাদিসের মান উল্লেখ না করেই ফতোয়া দিয়েছে। (আল্লাহু আলাম)

আমার কথার প্রমান হিসাবে ফাজায়েলে হজ্জ যে সকল জাল হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে তার কয়েকটি তুলে ধরলাম।

১। হুজুর (ছঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার যিয়ারত করিল তাহার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হইয়া গেল[(দারে কুতনী), ফাজায়েলে হজ্জ, প্রকাশনায় তাবলীগী কুতুর খানাপৃষ্ঠা নম্বর ১০৩]

মন্তব্যঃ জাল হাদিস।

২। হুজুর (ছঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আমার যিয়ারত জন্য আসিল, ইহাতে তাহার অন্য কোন নিয়ত ছিলনা তাহার জন্য সুপারিশ করা আমার উপর জরুরী হইয়া গেল (ফাজায়েলে হজ্জ, প্রকাশনায় তাবলীগী কুতুর খানাপৃষ্ঠা নম্বর ১০৩)

মন্তব্যঃ জাল হাদিস।

হজরত উমর (রাঃ) হইতে বর্নিত আছে, হুজুর আকরাম (ছঃ) এরশাদ করেন, আমার মৃত্যুর পর যে আমার যিয়ারত করিল, সে যেন জীবদ্দশায় আমার সহিত যিয়ারত করিল। (ফাজায়েলে হজ্জ পৃষ্ঠা নম্বর ১০৪)

মন্তব্যঃ এই হাদিসটির মান জাল। হাদিসটি শাইখ নাসির উদ্দিন আলবাণী তারার লিখিত, “যঈফ ও জাল হাদিস গ্রন্থের ৪৭ নম্বরে উল্লেখ করছেন।

হুজুর (ছঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ্জ করিল আর আমার জেয়ারত করিল না, সে আমার উপর জুলুম করিল (ফাজায়েলে হজ্জ, (ফাজায়েলে হজ্জ পৃষ্ঠা নম্বর ১০৫)

মন্তব্যঃ যদি এই হাদিসটি সাব্যস্ত হত তাহলে তাঁর কবর যিয়ারত করা সব ওয়াজিবগুলোর মধ্যে সর্বাধিক তাগিদপূর্ণ ওয়াজিব হত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে মিথ্যা হাদিস এবং দ্বীনের স্বতঃসিদ্ধ বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক।

 

হুজুর (ছঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মদীনা মোনাওয়ারায় আসিয়া ছওয়াবের নিয়তে আমরা যিয়ারত করিল, সে আমার প্রতিবেশী হইবে এবং কিয়ামতে দিন আমি তাহার জন্য সুপারিশ করিব (ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নম্বর ১০৬)

মন্তব্যঃ এমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর যিয়ারত সম্পর্কিত বহু জাল, মিথ্যা যঈফ হাদিস জালিয়াতগন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামে বানিয়ে বানিয়ে প্রচার করছেন আল্লাহ এমন মিথ্যাবাদীদের লাঞ্চিত করুক এই সকল ভিত্তিহীন বানোয়াট হাদিসের উপর ভিত্তি করে বা বিশ্বাস করে অজ্ঞ মুসলিম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর যিয়ারত করে থাকেন যা মুলত একটি মিথ্যা বিশ্বাস আমাদের এমন মিথ্যা বিশ্বাস বা ভুল আকিদা থেকে দুরে থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর যিয়ারত করতে হবে।

৬। কবরে তাওয়াফ করা এবং এর বিভিন্ন অংশ ষ্পর্শ করা চুমো খাওয়াঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি ভালবাসা আমাদের ইমানের অংশ। তার ভালবাসার জন্য বাড়াবাড়ি করে আমরা অনেক সময় বিদআত ও শির্ক কাজ করে থাকি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর যিয়ারত করার সময় কোন কোন কবরের চারদিকে তাওয়াফ করেন। কাবা ঘর ছাড়া অন্য কিছুর চারদিকে তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ বিদাত। অথচ অজ্ঞতার কারনে অনেক হাজি সাথের এই বিদআত লিপ্ত।

অনেক সময় দেখা যায় কেউ কেউ হুজরার গ্রিল ও দেয়ালগুলো স্পর্শ করেন। এমনকি কেউ কেউ তাদের ঠোঁট দিয়ে চুমো খান, দেয়ালের উপর নিজেদের গাল রাখেন। এমনকি কবরের গ্রিন ধরে কান্নাকাটি করে থাকেন। এই কাজগুলো শরীয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত বিদাত। এই ধরনের বিদআতী কর্মকান্ডের কারনে মুমিন বান্দা আল্লাহর নিকটে আশার পরিবর্তে আল্লাহ্‌র থেকে আরও দূরে সরে যায়। কিছু কিছু যিয়ারতকারী মসজিদে নববীর মেহরাব, মিম্বর ও মসজিদের দেয়ালকে স্পর্শ করে। এগুলোও বিদআত।

৭। কবরের সামনে নামাযের সুরতে দাঁড়ানোঃ

যেভাবে মহান আল্লাহ ইবাদাত বন্দেগী করা হয়, সেভাবে সৃষ্টির জন্য কোন আমল করা জায়েয নয়। এই ধরুন যে ভাবে ডানহাত বামহাতের উপর রেখে বুকের উপরে কিংবা নীচে রেখে আমরা সালাততে দাড়াই ঠিক সেইভাবে কবরের সামনে দাঁড়ানো একটি হারাম কাজ। যেহেতু সালাতে দাঁড়ানোর এ পদ্ধতিটি ইবাদত যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন। তাই এই পদ্ধতি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা নাজায়েয।

সালাত আমরা যেখাবে মহান আল্লাহ সামনে মাথা নত করে তার খাটি বান্দা হিসাবে নিজে প্রমান করা চেষ্টা করি, ঠিক সেভাবে সৃষ্টির সামনে মাথা নত করা একটি শির্ক কাজ। তাই কবরের কাছে ঝুঁকে পড়া, সিজদা করা কিংবা এমন কিছু করা যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা জায়েয নয়। 

 আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কোন মানুষের জন্য মানুষকে সিজদা করা সঙ্গত নয়। (মুসনাদে আহমাদ (৩/১৫৮), আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

কায়স ইবন সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হিরা শহরে আগমন করে সেখানকার লোকদেরকে মারযুবানকে সিজদা করতে দেখি। আমি (মনে মনে) বলি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই তো সিজদার অধিকতর হকদার। তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলি, আমি হিরাতে গমন করে সেখানকার লোকদেরকে মারযুবানকে সিজদা করতে দেখেছি। আর হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আপনিতো এর অধিক হকদার যে, আমরা আপনাকে সিজদা করি? তিনি বলেন, তুমি বল, যদি (আমার ইন্তেকালের পর) তুমি আমার কবরের পাশ দিয়ে গমন কর, তবে কি তুমি সেখানে সিজদা করবে? তিনি বলেন, আমি বললাম, না। তিনি বলেন, তোমরা সেরূপ করবে না। আর যদি আমি কাউকে সিজদা করতে বলতাম, তবে আমি স্ত্রীলোকদেরকে তাদের স্বামীদেরকে সিজদা করতে বলতাম। আর তা এইজন্য যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে (স্বামীকে) তাদের (স্ত্রীদের) উপর হক প্রদান করেছেন। (সহিহ, তবে কবর সম্পর্কিত ব্যাকটি বাদে। সুনানে আবু দাউদ ২১৩৭ ইফাঃ)

 

৮। কবরের নিকট এসে দোয়া করাঃ

আমাদের একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার নিকটই দোয়া করতে হবে। তার কাছে চাইতে হবে। তিনিই সবাইকে সব ধরনের দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিমুক্ত করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। (সুরা মুমিন-৬০)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।  (তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৭২ ইফাঃ) 

দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দোয়া আমাদের জন্য সবসময় উপকারী। দোয়া কোথায় কখন দোয়া করলে সহজে মহান আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন তার কিছু উদাহরণ হাদিসে পাওয়া যায়। ইহা ছাড়া যে কোন সময় যে কোন স্থানে দোয়া করা যাবে।

কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় হল, কেউ কেউ এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, কবরের নিকটে দোয়া করলে কবুল হয়। এটি বিদআতীদের ধারনা মাত্র কারন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন হাদিসে এর প্রমান পাওয়া যায় না। আমাদের অনুসরণীয় সলফে সালেহীন সাহাবা (বাঃ), তাবেয়ী বা তাবে-তাবেয়ী কারো আমল দ্বারা প্রমানিত নয় যে তারা কবরের কাছে গিয়ে মহান আল্লাহ নিকট ফরিয়াদ করেছেন। তাই এই কাজ যদি কেউ ইসলামী শরীয়ত মনে করে করে থাকে তবে তা হারাম হবে। এই আমলটি করতে থাকলে এক সময় শির্কে পতিত হওয়ার আশংকা থাকে। তাই আমলটিকে শির্কে পতিত হওয়ার বাহন বলা যেতে পারে। যদি কবরের কাছে দোয়া করা কিংবা নবীজির কবরের কাছে দোয়া করা উত্তম হত, সঠিক হত কিংবা আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হত তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সেটা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে যেতেন। কেননা যা কিছু উম্মতকে জান্নাতের নৈকট্য হাছিল করিয়ে দিবে এমন কোন কিছু বর্ণনা করা থেকে তিনি বাদ দেননি। যখন তিনি এক্ষেত্রে উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করেননি এর থেকে জানা গেল যে, এটি শরিয়তসিদ্ধ নয়। হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ।

মন্তব্যঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের নিকটি দোয়া করার কোন দলীল নাই। যদি কেউ মনে করে তার দোয়া রসূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুনছেন আর আল্লাহ নিকট সুপারিশ করছেন। তবে তিনি শির্কে পতিত হবেন, কারন বারযাকী হায়াতে জীবত, আমাদের মত দুনিয়ার হায়াতে জীবত নয়। তাকে আল্লাহ যা শুনার তৌফিক দেন, তিনি শুধু তাই শুনে থাকেন। অপর পক্ষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর জন্য দোয়া করতে হলে, তার কবরের নিকট থাকতে তাড়াতাড়ি কবুল হবে, এমনটি ভাবাও সঠিক নয়। আর তার নিকট দুরুদ ও সালাম পৌছানোর জন্যতো মহান আল্লাহ ফিরিস্থা নিযুক্ত করে রেখেছেন।  যেমন হাদিসে এসেছেঃ

আব্দুল্লাহ রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে, আল্লাহ রাব্বুলআলামীনের পক্ষ হতে পৃথিবীতে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা নিয়োগ করা হয়েছে, যারা (পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত হতে) আমার উম্মতের প্রেরিত সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেয় (সুনানে নাসায়ী ১২৮২)

আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখনই যে কেউ আমাকে সালাম করে তখনই আল্লাহ আমার রূহকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, যেন আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি। (মিসকাতুল মাসাবিহ ৯২৫ ও আবূ দাউদ, আস-সুনান ২/২১৮)।

কাজেই উপরে বর্ণিত সুন্নাহ সম্মতভাবে এর কবর যিয়ারত করি। 

 

৯। কবরে সালাম পৌছাতে বলাঃ

যারা মদিনা যিয়ারতে আসতে পারেনি তারা কোন কোন যিয়ারতকারীর মাধ্যমে রাসূলের কাছে সালাম প্রেরণ করে থাকেন এবং যিয়ারতকারীগণ এ সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরে পৌছে দেন। এটি বিদাতী কর্ম ও নব উদ্ভাবিত কর্ম। যে সকল বিদআতী মনে করে থাকেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরে আমাদের মত দুনায়াবী জীবনের মত জীবন যাপন করছেন। তার কবরের নিকট গিয়ে সালাম দিলে তিনি নিজ কানে শুনেন ও উত্তর দেন। তারা এই বিদআতী কাজটি করে থাকেন। বিশেষ করে আমাদের উপমহাদেশের পীর দাবিদার যারা তারাই এই ভুল বিশ্বাসের স্বীকার। অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা গিয়েছেন, তিনি তার কবরে বারযাকী হায়াতে জীবিত আছেন। কাজেই তার কবরে কোন মানুষের মাধ্যমে সালাম পাঠাতে হবে না, সালাম ও দুরুদ পাঠোন জন্য মহান আল্লাহ তার ফিরিস্তা নিযুক্ত করে রেখেছেন। যেমনঃ

আব্দুল্লাহ রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে, আল্লাহ রাব্বুলআলামীনের পক্ষ হতে পৃথিবীতে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা নিয়োগ করা হয়েছে, যারা (পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত হতে) আমার উম্মতের প্রেরিত সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেয় (সুনানে নাসায়ী ১২৮২)

আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখনই যে কেউ আমাকে সালাম করে তখনই আল্লাহ আমার রূহকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, যেন আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি। (মিসকাতুল মাসাবিহ ৯২৫ ও আবূ দাউদ, আস-সুনান ২/২১৮)।

মন্তব্যঃ মহান আল্লাহ ও তার রাসূলু সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা মত সালাম না পৌছে বিদআতী পন্থায় সালাম পৌছানোর চেষ্টা কত টুকু ফলদায়ক। তাই এই সালাম পাঠানোর মত বিদআতি কর্ম ত্যাগ করতে হবে।  

 ১০। প্রত্যেক ফরয নামাযের পর যিয়ারত করাঃ

অনেক মুসলিম আছে যারা হয়ত তার জীবনে একবারই মদীনা যাওয়ার সুযোগ পাবে। তাও আবার দশ বার দিনের মত। আর যারা হজ্জের সুবাদে মদীনা যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে তারাও প্রায় দশ বার দিনের মত সময় পায়। এই অল্প সময় অনেক বেশী আমল করার চেষ্টা করে থাকে। তাই তারা বারবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর  কবর যিয়ারত করা। যেমনঃ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর যিয়ারত করা কিংবা প্রতিদিন নির্দিষ্ট নামাযের শেষে যিয়ারত করা। এই কাজটি বিদআত। তাই প্রতিদিন প্রতি ফরজ সালাতের পর বারবার যিয়ারত না করে।  এই অল্প সময়ে হাতেগুনে কয়েক বার জিয়ারত করা যেতে পারে। 

 

১১। কবরের দিকে মুখ করে কাবার দিকে পিছন রেখে দোয়া করাঃ

আমাদের দেশের অনেক মাজার পন্থী আছে যারা তাদের পীরের কবর যিয়ারতের পর কবরকে সামনে রাখার জন্য উল্টা পায়ে হেটে মাজার থেকে বাহির হয়। অর্থৎ কবরকে সামনে রেখে পিছনে ছলে আসে। কবরের দিকে পিছন দেয়াকে তারা কবরবাসীল সাথে বেয়াবদী হবে মনে করে থাকেন। ঠিক তেমনী ভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের কাছে গিয়ে তারা এই কাজটিই করে থাকে। যা একটি বিদআতী কাজ।

সাধারন জনগন নয় কিছু হক্কানী আলেম দবিবাদ তারা একটি বিদআতি কাজ করে। দোয়া করা সময় তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর সামনে রাখে আর মহার আল্লাহ ঘর কাবা কে পিছনে রাখে। আগেই জানতে পেরেছি, কবরকে সামনে রেখে দোয়া করা সঠিক আমল নয়। তাই যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর সামনে রেখে দোয়া করার চেষ্টা করে সৌদি পুলিস তাকে কবরের সামনে থেকে তাড়িয়ে দেন। তাড়া খেয়ে কবরের সামনে থেকে চলে এসে তারা একটু দুরে দাড়িয়ে ঠিক কবরের দিকে মুখ করে কাবাকে পিছনে ফেলে দোয়া করা। এই কাজটি করা ঠিক নয়। দোয়া যদি করতে হয় তবে প্রথমত কবর থেকে একটু দুরে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা উচিত।

এমনিভাবে মসজিদের যে কোন স্থান থেকে দোয়া করার সময় কবরের অভিমুখি হওয়া কিংবা যখনি মসজিদে প্রবেশ করবে তখনি কবরের দিকে মুখ করা কিংবা যখনি নামায শেষ করবে তখনি কবরের দিকে মুখ করা। এই সকল কাজ বিদআতের পর্যায় ভুক্ত। কারন এ্রর কোন দলীল ইসলামি শরীয়তে নাই। অনেকে আছেন যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর সামনে সালাম দেয়ার সময় দুইহাত দুইপাশে রেখে মাথা ও থুতনি নোয়ানো। তাও ইসলামি শরীয়তে বিদাত বা ভুল আমল। আল্লাহর বান্দারা, আল্লাহকে ভয় করুন। সকল বিদাত থেকে সাবধান হোন। কুপ্রবৃত্তি ও অন্ধ অনুকরণ পরিহার করুন। দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে আমল করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “যে ব্যক্তি তার রব প্রেরিত সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত, সে কি তার ন্যায় যার কাছে নিজের মন্দ কাজগুলো শোভন করে দেয়া হয়েছে এবং যারা নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেছে? (সূরা মুহাম্মদ  আয়াত: ১৪]

আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী অন্যদেরকে পথ দেখাবার তাওফিক দেন।

১২। নিজের মনে আশা পূরনের জন্য কবর যিয়ারত করাঃ

আমাদের উপমহাদেশ থেকে অনেক হাজিগণ শুধু অজ্ঞতার কারনে নিজের মনে আশা পূরনের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর যিয়ারত করতে যান তাদের ধারন রাসূল তাদের ফরিয়াদ শুনে তাদের মনের আশা পূরণ করে থাকেন তাই তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটি বিপদমুক্তির জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেন। কেউ কেউ বলে থাকেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের অসুস্থ লোককে সুস্থ করে দিন। হে আল্লাহর রাসূল, আমার ঋণ পরিশোধ করে দিন। হে আল্লাহর রাসূল, আমি আজ আপনার মেহমান আমরা প্রয়োজন পূরন করে দিন, আমার পাথেয় নাই আমরা পাথেয়র ব্যবস্থা করে দিন ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সকল ফরিয়াদগুলো মহান আল্লাহ ব্যতিত কারো নিকট করা শির্কি কাজ কারন, তিনি ব্যতিত কেউ প্রয়োজন পূরন করার ক্ষমতা রাখে না। এই সকল বাক্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট ফরিয়াদ করা বা প্রার্থনা করা একটি শির্কি কাজ। যা একজন মুসলিমকে ইসলাম থেকে বাহির করে দেয়। মহান আল্লাহ তায়ালান বলেন:

﴿ وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦ ﴾ [يونس: ١٠٦] 

অর্থঃ আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কোন সত্তাকে ডেকো না, যে তোমার না কোন উপকার করতে না ক্ষতি করতে পারে৷ যদি তুমি এমনিটি করো তাহলে জালেমদের দলভুক্ত হবে৷ (সুরা ইউনুস ১০৬)

অন্যত্র আয়াতে বলা হয়েছে:

﴿وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣ ﴾ [فاطر: ١٣] 

অর্থঃ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যারা অন্যের কাছে চায়, তারা তো খেজুরের বিচির উপরের পাতলা আবরণেরও মালিক নয়। (ফাতির ১৩-১৪)

অন্যত্র আয়াতে বলা হয়েছে:

 وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّن يَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَن لَّا يَسۡتَجِيبُ لَهُ ۥۤ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَـٰمَةِ وَهُمۡ عَن دُعَآٮِٕهِمۡ غَـٰفِلُونَ (٥) وَإِذَا حُشِرَ ٱلنَّاسُ كَانُواْ لَهُمۡ أَعۡدَآءً۬ وَكَانُواْ بِعِبَادَتِہِمۡ كَـٰفِرِينَ (٦)

অর্থ: সেই ব্যক্তির চেয়ে বেশী পথভ্রষ্ট কে যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন সব সত্তাকে ডাকে যারা কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিতে সক্ষম নয়৷ এমনকি আহবানকারী যে তাকে আহবান করছে সে বিষয়েও সে অজ্ঞ৷ যখন সমস্ত মানুষকে সমবেত করা হবে তখন তারা নিজেদের আহবানকারীর দুশমন হয়ে যাবে এবং ইবাদতকারীদের অস্বীকার করবে৷ (সুরা আহকাফ ৪৭: ৫-৬)

সুতরাং সবকিছু দেওয়ার একচ্ছত্র মালিকই হচ্ছেন মহান আল্লাহ। তাকে বাদ দিয়ে অন্যের কাছে চাওয়া মূলত অহেতুক তার নির্ধারিত অধিকারে অন্যকে অংশীদার বানান। এমনকি কোনো নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ও চাওয়া শির্ক। বর্ণিত হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে একজন মুনাফিক মুমিনদেরকে কষ্ট দিত। কেউ কেউ বললেন, চলুন আমরা রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে এই মুনাফিক হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই ধরণের  মুক্তি আমার থেকে চাওয়া উচিত নয়, বরং তা আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে। (সহিহ বুখারি)

ঠিক তেমনিভাবে, দোয়ার জন্য কোন সৃষ্টিজীবকে মাধ্যম করার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِى عَنِّى فَإِنِّى قَرِيبٌ‌ۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِ‌ۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِى وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِى لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ (١٨٦)

অর্থঃ আর হে নবী! আমার বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাহলে তাদেরকে বলে দাও, আমি তাদের কাছেই আছি ৷ যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা উচিত একথা তুমি তাদের শুনিয়ে দাও, হয়তো সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে ৷ (বাকারা ২:১৮৬)

আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের এতো কাছে অবস্থান করর যে, কোন প্রকার মাধ্যমে ও সুপারিশ ছাড়াই  নিজেই সরাসরি সবসময় আমাদের আবেদন নিবেদন শুনেন। কাজেই আমাদের উচিৎ মুর্খতার বেড়াজাল ছিঁড়ে ফেলা। আল্লাহ্‌ তাআলার আহবানে সাড়া দিয়ে তার দিকে ফিরে যেতে হবে এবং তারই বন্দেগী ও আনুগত্য করতে হবে। সরাসরি সবসময় তারই নিকট চাইব কেননা কোনো কিছু চাওয়ার নিয়ম তো আল্লাহ্‌ তাআলাই ভাল জানেন। যেমনটি কুরআনে বলা হয়েছে:

﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ  ٦٠ ﴾ [غافر: ٦٠] 

অর্থঃ এবং তোমাদের রব বলেছেন আমার কাছে চাও, আমিই দিব। (সুরা মুমিন আয়াত ৬০)

সুতরাং বান্দা তার রবের কাছেই চাইবে। অন্য কারো অছিলায় চাওয়া মুলত আল্লাহর একচ্ছত্র অধিকার কে খর্ব করে। তেমনি অন্যকেও এ কাজে জড়িয়ে ফেলা হয়, সে জন্য এটি শির্কেই নামান্তর।

মন্বব্যঃ আমাদের উচিত আমাদের আশা, আকাঙ্ক্ষা, চাহিদা, ফরিয়াদ, প্রার্থনা, ফরিদায়সহ সকল বিষয় মহান স্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত করা। কারন এক মাত্র মহান আল্লাহই পারেন আমাদের ঐ সকল প্রয়োজন পুরনের নিশ্চয়াতা দিতে। তাই আমাদের কর্তব্য হলোঃ আমাদের রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেখে যাওয়া দ্বীনের একান্ত অনুসরণ করে মহান আল্লাহ সন্ত্বষ্টি অর্জন করা।

০৭।    টঙ্গীর বিশ্ব ইস্তেমাকে দ্বিতীয় হজ্ব বিশ্বাস করা এবং ইহ্রামের কাপড় পরে ইস্তেমায় হাজির হওয়া।

০৮।    টঙ্গীর ইস্তেমাকে গরীবের হজ্জ মনে করা। ইহা বিদআত ও র্শিক।

১৩। বদলি হজ্জ করার ক্ষেত্র একটি ভুলঃ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফযল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একই বাহনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে আরোহণ করেছিলেন। এরপর খাশ‘আম গোত্রের জনৈক মহিলা উপস্থিত হল। তখন ফযল (রাঃ) সেই মহিলার দিকে তাকাতে থাকে এবং মহিলাটিও তার দিকে তাকাতে থাকে। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযলের চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে থাকে। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর বান্দার উপর ধার্যকৃত (ফরয) হাজ্জ আমার বয়োঃবৃদ্ধ পিতার উপর ফরজ হয়েছে। কিন্তু তিনি বাহনের উপর স্থির থাকতে পারেন না, আমি কি তাঁর পক্ষ হতে হাজ্জ আদায় করবো? তিনি বললেনঃ হ্যা, (আদায় কর)। ঘটনাটি বিদায় হাজ্জের সময়ের। ( সহিহ বুখরি হাদিস নম্বর ১৫১৩)

মন্তব্যঃ যাদের উপর হজ্ব ফরয হয়েছে এবং হজ্ব আদায়ের সক্ষমতাও ছিল, কিন্তু শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্ব করেনি। অতপর হজ্ব আদায়ের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, এমন ব্যক্তি পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করানো যায়। কোন ব্যক্তির হজ্জ ফরজ কিন্তু তিনি হজ্জ আদায়ের পূর্বেই মৃত্যু বরণ করেছেন বা কোন ব্যক্তি মৃত্যুর সময় তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করানোর অসিয়ত করে গিয়েছেন তার পক্ষ থেকেও বদলী হজ্জ করার যাবে।

 

 ১৪। নিজের হজ্জ করার আগেই অন্যের পক্ষ থেকে বদলি হজ্জঃ

যারা নিজের ফরজ হজ্জ করেন নাই, তাদের জন্য অন্যের পক্ষ থেকে বদলি হজ্জ করা যাবে না। কোন মুসলিম যদি অন্যের পক্ষ থেকে বদলি হজ্জ করতে চায় তাহলে আগে তাকে নিজের হজ্জ করতে হবে। এই কথার দলীল হলোঃ

দলিল হচ্ছে

ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনেন, ‘‘লাব্বায়েক আন্ শুবরুমা’’ (আমি শুবরুমার পক্ষে হাযির)। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ শুবরুমা কে? সে ব্যক্তি বলে, আমার ভাই অথবা আমার বন্ধু। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ আচ্ছা তুমি কি হজ্জ করেছ? সে বলে, না। তিনি বলেনঃ প্রথমে তুমি নিজের হজ্জ আদায় কর, পরে শুবরুমার হজ্জ সম্পন্ন কর। (সুনানে আবু দাউদ ১৮১১ ইফাঃ)

১৫। এই সফরে বার বার উমরা করাঃ

এক সফরে একাধিক বার উমরা করা ইসলামি শরীয়ত সম্মত কোন ইবাদাত নয়। কারন এই উমরা আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবী (রাঃ) থেকে প্রমানিত নয়। সময় সুযোগ থাকার সত্বেও আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবী (রাঃ) এমন আমল করেন নাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে মোট চারবার উমরা পালন করেছেন। তারার উমরাগুলো হলোঃ হুদাইবিয়ার উমরা, উমরাতুল কাযা, হুনাইনের যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় এবং শেষ উমরাটি করের বিদায় হজের সাথে। সাহাবীদের (রাঃ) কেউ বিদায় হজ্জের সফরে এক বারের বেশি উমরা করেছেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি ‘উমরাহ পালন করেছেন। তিনি হাজ্জের সঙ্গে যে ‘উমরাটি পালন করেন সেটি ব্যতীত সবকটিই যুলকাদাহ্ মাসে। হুদাইবিয়াহর ‘উমরাটি ছিল যুলকাদাহ্ মাসে। হুদাইবিয়াহর পরের বছরের ‘উমরাটি ছিল যুলকাদাহ্ মাসে এবং হুনাইনের প্রাপ্ত গানীমাত যে জিঈরানা নামক স্থানে বণ্টন করেছিলেন, সেখানের ‘উমরাটিও ছিল যুলকাদাহ্ মাসে, আর তিনি হাজ্জের সঙ্গে একটি ‘উমরাহ্ পালন করেন। (সহিহ বুখারি ৪১৪৮ তাওহীদ প্রকাশনি)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যত বার উমরা করেছেন, তিনি মক্কার বাহির থেকে মক্কায় প্রবেশের পূর্বে মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে উমরা করেছেন। কিন্তু মক্কায় প্রবেশের পর মক্কা থেকে বের হয়ে হারাম এলাকার বাইরে গিয়ে ইহরাম বেঁধে এসে, তিনি কখনো উমরা করেন নি। এমনকি হিজরতের পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেরো বছর মক্কায় অবস্থান করেন। এ সময় তিনি কখনো মক্বার বাইরে গিয়ে ইহরাম বেঁধে এসে উমরা করেন নি।

হজ্জের সময় দেখা যায় অনেক হাজিগন মক্কার বাইরে তান‘ঈম গিয়ে মসজিদে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে ইহরাম বেঁধে বার বার উমরা করে থাকে। যারা মসজিদে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে ইহরাম বেঁধে বার বার উমরা করে তাদের যুক্তি বিদায় হজ্জের সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তান‘ঈম থেকে ইহরাম বেঁধে উমরা পালন করেছেন। তাই তারা এই স্থান থেকে ইহবাম বেধে বার বার উমরা করে থাকে।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তালহা (রাঃ) ব্যতীত কারো সাথে কুরবানীর পশু ছিল না। আর ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান হতে এলেন এবং তাঁর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ে ইহরাম বেঁধেছেন, আমিও তার ইহরাম বাঁধলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ইহরামকে ‘উমরায় পরিণত করতে এবং তাওয়াফ করে এরপরে মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। তবে যাদের সঙ্গে কুরবানীর জানোয়ার রয়েছে (তারা হালাল হবে না)। তাঁরা বললেন, আমরা মিনার দিকে রওয়ানা হবো এমতাবস্থায় আমাদের কেউ স্ত্রীর সাথে সহবাস করে এসেছে। এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেনঃ যদি আমি এ ব্যাপার পূর্বে জানতাম, যা পরে জানতে পারলাম, তাহলে কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে আনতাম না। আর যদি কুরবানীর পশু আমার সাথে না থাকত অবশ্যই আমি হালাল হয়ে যেতাম। আর ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-এর ঋতু দেখা দিল। তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত হাজ্জের সব কাজই সম্পন্ন করে নিলেন। রাবী বলেন, এরপর যখন তিনি পাক হলেন এবং তাওয়াফ করলেন, তখন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনারা তো হাজ্জ এবং ‘উমরাহ উভয়টি পালন করে ফিরছেন, আমি কি শুধু হাজ্জ করেই ফিরব? তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন তাকে সঙ্গে নিয়ে তান‘ঈমে যেতে। অতঃপর যুলহাজ্জ মাসেই হাজ্জ আদায়ের পর ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) ‘উমরাহ আদায় করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জামরাতুল ‘আকাবায় কঙ্কর মারছিলেন তখন সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জু‘শুম (রাঃ)-এর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ হাজ্জের মাসে ‘উমরাহ আদায় করা কি আপনাদের জন্য খাস? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, এতো চিরদিনের (সকলের) জন্য। (সহিহ বুখারি ১৭৮৫ তাওহীদ প্রকাশনি)

মন্তব্যঃ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর উপরা পালনের সাহ্যয্য করেত তার সাথে ছিল তার ভাই আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু। সময় সুযোগ সব কিছু থাকা সত্বেও তিনি তার বোন আয়েশার সাথ উমরা করেন নাই। বরং আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যদি তার বোন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর সাথে উমরা করতে তবে তার আরও বেশী সাহায্য হত। এই থেকে বুঝ যায়, তান‘ঈম থেকে উমরা করার প্রচলনটি ছিল বিশেষ একটি প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে। অন্যথায় হজের সফরে বা একই সফরে বার বার উমরা করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদের থেকে প্রমাণিত নয়।

সাহাবীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা একবার উমরা আদায় করার পর তাদের মাথার চুল কালো না হওয়া পর্যন্ত পূণরায় উমরা পালন করতেন না। চুল কালো হওয়ার পর উমরা করতেন।

সুন্নাত হচ্ছে হাজীগণ হজের সময় উমরা শেষ করে, হালাল অবস্থায় মক্কা অবস্থান করবেন। আর যারা হাদি সংঙ্গে নিয়েছেন তারা হালাল হবেন না। তাই হজ্জের সফরে একাধিক বার উমরা না করে, বার বার কারা ঘর তাওয়াফ করাই হল অধিক উত্তম। তবে যখন উমরাকারীদের খুব ভীড় থাকবে তখন বেশি বেশি তাওয়াফ না করে বেশি বেশি সালাত, কুরআন তেলাওয়াত ও যিকিরে ব্যস্ত থাকা। তাওয়াফ শেষে মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, মুরব্বীদের জন্য দো‘আ করুন। কারো নামে উমরা করা বা কারো জন্য উমরা করা ইত্যাদি পরিহার করুন। আপনি কত বেশি আমল করলেন, এটি আল্লাহর নিকট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়; গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আপনি কতটুক আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করলেন।

১৬।  ইহাছাড়াও কিছু বিদআতী কাজ হজ্জের সময় করা হয়ঃ

১। মক্কা-মদীনা, আরাফাহ্, মুযদালিফা, ওহুদের ময়দান, বদরের ময়দান বা আশেপাশের মাটি, গাছ, পাথর ইত্যাদি সংগ্রহ করে বাড়ীতে নিয়ে আসা এবং ইহাকে বরকতময় মনে করা।

২।    হজ্ব করে এসে নিজেই নিজের নামের সাথে আলহাজ্ব বা হাজী উপাধি সংযোগ করে প্রচার  করা।

৩।    ওহোদ পাহাড়ের মাটি এনে তা শিফা হিসেবে ব্যবহার করা বিদআত ও র্শিক।

৪।    যমযমের পানি এনে তা পীর সাহেবের দ্বারা ফুঁ দেয়াইয়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে বিতরণ করা।

৫।    পীর সাহেবের অনুমতি না হলে ফরয হজ্ব পালনে যাওয়া যাবে না এরূপ বিশ্বাস করা র্শিক। মহান আল্লাহ্র কোন ফরয হুকুম পালনের জন্য পীর আওলিয়ার কোন অনুমতির প্রশ্নই উঠে না।

৫।    মদীনার সাত মসজিদে যিয়ারত করা বিদআত। মসজিদে কুবা, মসজিদে কেবলাতাঈন এসব মসজিদে নামাজ পড়া বিদআত নয়।

৬।    মক্কার বিশেষ এলাকা সমূহ যিয়ারত করা সওয়াবের কাজ মনে করা বিদআত। ছুর পাহাড়, কবরস্থান সমূহ, মসজিদে জিন, আব্দুল মুত্তালিবের বাড়ী দেখতে যাওয়া কোন সওয়াবের কাজ নয়।

৭।    জাবালে রহমতের উপর অবস্থিত পিলারকে পুণ্যকেন্দ্র মনে করা, উহাতে চুমু দেয়া, ওখানে নামায পড়া, মুনাজাত করা, কান্নাকাটি করা, পিলারের গায়ে মাথা ঠুকা, ইত্যাদি সবই র্শিক ও বিদআত।

৮।    মসজিদে নববীর সবুজ গম্বুজ দেখে মাত্র দরুদ ও সালাম পাঠানো।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment