তৃতীয় কিস্তি : অতিরিক্ত ঊনিশটি বিদআতি আকিদা

তৃতীয় কিস্তি : অতিরিক্ত ঊনিশটি বিদআতি আকিদা

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১৩। বিদআত বিশ্বাস হলোঃ মুরিদগন তাদের শায়েখ বা পীরদের নিকট গুনাহ মাপের জন্য অন্যের দরবারে ধরনা দেয়।

সঠিক আকিদা হলোঃ গুনাহ মাপ করার একমত্র কর্তৃত্য মহান আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। 

সঠিক আকিদার দলীলঃ

পৃথিবীতে মানুষের আশা কখনো পূর্ণ হওয়ার কথা নয়। আশা পূর্ণ হওয়ার এক মাত্র স্থান হল জান্নাত। আর পূর্ণ করার এক মাত্র মালিক আল্লাহ তাআলা। আর যারা হত্যা, ব্যভিচার, চুরি, ডাকাতি, সুদ, ঘুস এমনকি কুফিরির মত বড় বড় গোনাহর কাছে লিপ্ত আছে। আর মনে মনে ধানরা করে এসব অপরাধ আল্লাহ কখনও মাফ করবে না। আল্লাহ প্রতি এরূপ নিরাশর ধারনা কাখা শির্ক বিশ্বাস। তাদের বলা হয়েছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তোমরা যা কিছুই করেছো এখনো যদি তোমাদের রবের আনুগত্যের দিকে ফিরে আস তাহলে সবকিছু মাফ হয়ে যাবে। গোনাহ মাপের উপায় হচ্ছে আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যের দিকে ফিরে আসা এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বাণীর অনুসরণ করা। এর জন্য কোন পীর বা অলীর মাযারে বা দরবারে ধরনা দেওয়া শির্কি কাজ। এ আয়াতটি প্রকৃতপক্ষে সে সব লোকের জন্য আশার বাণী বয়ে এনেছে।

قُلۡ يَـٰعِبَادِىَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِ‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا‌ۚ إِنَّهُ ۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ (٥٣) وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُ ۥ مِن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَكُمُ ٱلۡعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ (٥٤)           

অর্থঃ  (হে নবী,) বলে দাও, হে আমার বান্দারা যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না৷ নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন৷ তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷ ফিরে এসো তোমারে রবের দিকে এবং তাঁর অনুগত হয়ে যাও তোমাদের ওপর আযাব আসার পূর্বেই৷ তখন কোন দিক থেকেই আর সাহায্য পাওয়া যাবে না৷ (সুরা জুমার ৩৯:৫৩-৫৪)।

আল্লাহ তাআলা ক্ষমা পাওয়ার জন্য ইমানের সাথে নেক কাজও করতে হবে সাথে সাথে তার রহমতের আশা করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

 إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱلَّذِينَ هَاجَرُواْ وَجَـٰهَدُواْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ يَرۡجُونَ رَحۡمَتَ ٱللَّهِ‌ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌ۬ رَّحِيمٌ۬ (٢١٨)

অর্থঃ বিপরীত পক্ষে যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর পথে বাড়ি-ঘর ত্যাগ করেছে ও জিহাদ করেছে তারা সংগতভাবেই আল্লাহর রহমতের আশা করে৷ আর আল্লাহ তাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেবেন এবং তাদের প্রতি নিজের করুণাধারা বর্ষণ করবেন। (সুরা আল বাকারা ২:২১৮)।

মন্তব্যঃ কাজেই গুনাহ মাপের জন্য পীর, অলী, আওলীয়া বা আলেন নিকট না গেলে বা তাদের সুপারিশ না পেলে, আল্লাহ তওবা কবুল করবে না বলে বিশ্বাস করা এবং তাদের নিকট ধরনা দেয়া শির্কি কাজ।

 

  

১৪ বিদআত বিশ্বাস হলোঃ বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ করা যায়।

সঠিক আকিদা হলোঃ কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে, অন্য স্থান ও বস্তু দ্বারা নয়।  

সঠিক আকিদার দলীলঃ

বিদআত পন্থীদের বিশ্বাস হল,বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ করা যায়। এটা শুধু ভ্রান্ত সুফিদের আকিদা নয় হক্কানী পীরের দাবি কারি দেওবন্দী পীরদেরও আকিদা। এ প্রসঙ্গে দেওবন্দী আকিদায় বিস্তারিত অলোচনা করা হয়েছে। সেখান “ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” কিতাবের রেফারেন্সসহ উল্লেখ করেছি যে, তাদের দাবি, “স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ এ বিষয়টি জায়েয হওয়ার ব্যপারে আমদের জমহুরের মতের পক্ষে কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসেন সকল দলিল বিদ্যমান। এসব দলিল থাকার পরও যারা এটাকে অস্বীকার করেন এবং নিজের মতে গো ধনের, তাদের শরিয়ত প্রিয় বলা যেতে পারে না”। উক্ত কিতাবে বলা হয়ঃ বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের থেকে বরকত লাভ দুই ভাবে হয়ে থাকে।

(১) স্মৃতি বিজরিত বস্তু দ্বারা বরকত লাভঃ যেমনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল মুবারক, জুব্বা মুবারক ইত্যাদি। অনুরুপভাবে অলী আউলিয়াদের  জাতীয় কোন বস্তু।

(২) স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভঃ যেমনঃ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জম্ম স্থান, প্রথম ওহী আগমনেন স্থান হেরা গুহা, হাজার বার ওহী আগমনের স্থান খাদিজা (রাঃ) এর ঘর, হিজরতের আত্মগোপনের স্থার গারে সাওর, আবু বক্কর, ওমর প্রমুখ সাহাবিদের (রা) গৃহ ইত্যাদি।আর ভ্রান্ত সুফিদের থেকে বিশ্বাসের প্রমান দেওয়া অমুলক মনে করি। তারা পারলে মদীনার কুকুরের পায়ে চুমু খায়।

অপর পক্ষে সালাফিদের বিশ্বাস হল, কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে। কিন্তু কুরআন সুন্নাহর বাহিরে স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। অর্থাৎ ইসলামি শরিয়তে যে সকল কোন ব্যক্তি বা বস্তুর মাধ্যমে বরকত হাসিল করার কথা বলা হয়েছে শুধু সে গুল থেকেই বরকত হাসিল করা যাবে। ইসলামি শরিয়তে নেই এমন ব্যক্তি বা বস্তুর মাধ্যমে বরকত  হাসিল করা অনেক সময় হারাম আবার অনেক সময় শির্ক।

যেমনঃ  আল্লাহর জিকির কারি বা নেককারদের সাথে বসলে বরকত হাসিল হয়। (বুখারি:৬৪০৮, মুসলীম:২৬৮৯)। সহিহ হাদিস প্রমান করে, মসজিদে হারাম, মসজিদে নবী, মসজিদে আকসা, এই তিনটি মসজিদের বরকতময়। ইহা ছাড়া পৃথিবীর সকল মসজিদসমুহ, অন্য সকল স্থান থেকে উত্তম। খাদ্য হিসাবে যাইতুনের তৈল, (সুরা নুর-৩৫. তিরমিজি-১৮৫১২) দুধ, (ইবনে মাজাহ-৩৩৮৫) মধু (সুরা নাহল৬৯, বুখারি-৫৬৮৪ মুসলিম-২২১৭) ও যমযমের পানি, (মুসলিম-২৪৭৩) বরকতময়।

তাই খাদ্য হিসাবে যাইতুনের তৈল, দুধ, মধু ও যমযমের পানি, আজও বরকতময়। মসজিদে হারাম, মসজিদে নবী, মসজিদে আকসা, এমনকি পৃথিবীর সকল মসজিদসমুহ আজও বরকত হাসিলের কেন্দ্রবিন্দু। আল্লাহর জিকির কারি বা নেককারদের সোহবত বরকতময় তা আর বরার অপেক্ষা রাখে না।

অপর পক্ষে লক্ষ করুন, হাদিসসমুহ দ্বারা প্রমানিত যে, সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল করতেন। (সহিহ বোখারী, সহিহ মুসলীম)। এটা শুধু আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য খাস ছিল। আমরা যদি কিয়াস করে বলি আলেমরা হল নবীদের ওয়ারিস যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক ইত্যাদি দ্বারা সাহাবিগন বরকত হাসিল করতেন। তাই আমরাও এখন ভাবে আমাদের পীর, বুজুর্গ, আকাবিরদের থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল করব। তা হলে মহা ভুল করবেন কারন এটা শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য খাস ছিল।

তা না হলে আমাদের পীরের পীর, বুজুর্গদের বুজুর্গ, অলীদির অলী, হযরত আবু বক্কর (রা:) ,হযরত ওমর (রা:), হযরত আলী (রা:), হযরত ওসমানসহ (রা:) কোন সাহাবির থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক থেকে কেউ বরকত লাভ করছেন বলে জানা যায় না। তাছাড়া আমরা যাকে তার বাহিজ্জিক আমল আখলাক দেখে আল্লাহর অলী মনে করছি। মহান আল্লাহর কাছে সে অলী না ও হতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন দসায় সাহারাগন (রা:) সময় এবং দুযোগ থাকা স্বত্বেও যে সকল স্থান, সময় এবং ব্যক্তি থেকে বরকত নেন নাই সে সকল স্থান, সময় এবং ব্যক্তি থেকে বরকত নেয়া যাবে না। যেমনঃ

স্থান হিসাবেঃ হেরাগুহা, জাবারে শুর, জাবালে রহমত, মোহদায়ো ওহুদের কবর জিয়ারত করে বরকত হাসিল করা যা কোন সাহাবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন দসায় বা ওফাতের পর করেনি। ক্বাবা ঘরের গিলাফ, যে কোন মসজিদ বা মাজারের দেয়াল, মাটি, জানালা, দরজা ইত্যাদি চুমু খাওয়া।

কাজেই সালাফিদের বক্তব্য হলঃ যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে কোন সাহাবি বরকত লাভ করেনি, সেখানে আমরা কি ভাবে বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ করব? তাদের মুল বক্তব্য “কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে, অন্য স্থান ও বস্তু দ্বারা নয়। তাইতো আমরা দেখি সুফিরা তদের বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের সৃস্মি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ করার ফলে, কবরকে মাজারে (দর্শনীয় স্থান) পরিনত করছে। কবর কেন্দ্রিক মসজিদ তৈরি করছে। কবরকে সিজদার স্থাসে পরিনত করছে। 

১৫। বিদআত বিশ্বাস হলোঃ মুরিদগনণ নিঃশর্ত ভাবে তাদের পীরের আনুগত্যা করবে।

সঠিক আকিদা হলোঃ নিঃশর্ত ভাবে শুধু আল্লাহর ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা যায়।

সঠিক আকিদার দলীলঃ

সুফিবাদের অনুসারী মুরিদগনণ নিঃশর্ত ভাবে তাদের পীরের আনুগত্যা করে থাকে। নিঃশর্ত ভাবে শুধু আল্লাহর ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা যায়। আল্লাহর ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করাও ফরজ। এ ছাড়া গাইরুল্লাহ বা উলামা, শাসনকর্তা, ওলী, আউলিয়া, দরবেশ, পীরদের আনুগত্যে করা যাবে কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে। এ শর্ত না জেনে/মেনে তাদের আনুগত্য করতে গিয়ে অনেকে বাড়াবাড়ি করে থাকে এবং এ থেকেই মূলতঃ আনুগত্যের শির্কের উৎপত্তি। আমাদের সমাজের অনেক পীর মাসায়েক এই শির্কে জড়িত।

যেমনঃ মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ এছহাক সাহেব পীর সাহেব চরমোনাই এর লেখা বই “ভেদে মারেফাত বা ইয়াদে খোদা’  এ আছে ’কামেল পীরের আদেশ পাইলে, নাপাক শারাব (মদ) দ্বারাও জায়নামাজ রঙ্গিন করিয়া তাহাতে নামাজ পড়’’।

মানিক গঞ্জের মো: আজহারু ইসলাম সিদ্দিকির লেখাবই “মারেফতের ভেদতত্ত্ব” এর ৩৭ পৃষ্ঠায় বলেনঃ

“যুক্তি ছাড়া মোর্শেদের বাক্য বিনা দ্বিধায় মানতে হবে। নিজের বিবেক বূদ্ধি, বিদ্যা-যুক্তি, কিতাবি এলম সবই বিসর্জন দিতে হবে। মোর্শেদের কথায় অন্ধভাবে কাজ করে জেতে হবে। তা সামনে একটা মরা মানুষ সাজতে হবে”।

আল্লাহর কিতাবের সনদ ছাড়াই যারা মানব জীবনের জন্য জায়েয ও নাজায়েযের সীমানা নির্ধারণ করে তারা আসলে নিজেদের ধারণা মতে নিজেরাই আল্লাহর বিধান দানের মর্যাদায় সমাসীন হয়। আর যারা শরীয়াতের বিধি রচনার এ অধিকার তাদের জন্য স্বীকার করে নেয়া পরিস্কার শির্ক। “তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের উলামা ও দরবেশদেরকে নিজেদের খোদায় পরিণত করেছে” মনে হচ্ছে এ আয়াতের ই প্রতিধ্বনি।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦۤ أَوۡلِيَآءَ‌ۗ قَلِيلاً۬ مَّا تَذَكَّرُونَ (٣) 

 অর্থঃ হে মানব সমাজ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করো এবং নিজেদের রবকে বাদ দিয়ে আওলিয়াদের অনুসরণ করো না৷  কিন্তু তোমরা খুব কমই উপদেশ মেনে থাকো৷ (সুরা আরাফ-৭:৩)।                                                                               
আল্লাহ তাআলা বলেন:

 وَلَا تَأۡڪُلُواْ مِمَّا لَمۡ يُذۡكَرِ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ وَإِنَّهُ ۥ لَفِسۡقٌ۬‌ۗ وَإِنَّ ٱلشَّيَـٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰٓ أَوۡلِيَآٮِٕهِمۡ لِيُجَـٰدِلُوكُمۡ‌ۖ وَإِنۡ أَطَعۡتُمُوهُمۡ إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ (١٢١

অর্থঃ আর যে পশুকে আল্লাহর নামে যবেই করা হয়নি তার গোশ্‌ত খেয়ো না৷ এটা অবশ্যি মহাপাপ৷ শয়তানরা তাদের ঝগড়া করতে পারে৷ কিন্তু যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো তাহলে অবশ্যি তোমরা মুশরিক হবে৷ (সুরা আনআম-৬:১২১)।

সুফিরা তাদের পীরদে অনুগত্যের জন্য সুরা নিসার ৫৯ আয়াত উল্লখ করে বলে পীরের অনুগত্য করা ফরজ। আয়াতট হলঃ মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা আমির (নির্দেশ দাতা/বিচারক/আলেম) তাদের। যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। ( সুরা নিসা ৪:৫৯ )।

এই আয়াতের উলুল আমর দ্বারা সুফিরা তাদের পীরদের বুঝিয়ে থাকেন। সে যা হোক উলুল আমর এর ব্যাখ্যায় যাব না। যদি ধরে নেই উলুল আমর দ্বরা পীরদের বুঝিয়েছেন। তা হলেও লক্ষ করবেন, আয়াতে বলা হয়েছেঃ তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর। ষ্পষ্ট করে বলা হয়েছে পীরদের মাঝে বিরোধ হলে কুরআন সুন্নাহে দ্বারা ফয়সালা দিকে ফিরে আসতে হবে।

তাই উক্ত আয়াত পীর ধরান দলীল নয়। বরং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলতে পারি আল্লাহর ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা ফরজ। এ ছাড়া গাইরুল্লাহ বা উলামা, শাসনকর্তা, ওলী, আউলিয়া, দরবেশ, পীরদের আনুগত্যে করা যাবে কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে।

শর্ত সাপেক্ষে আনুগত্য করা ফরজ। অন্ধ আনুগত্য হারাম

যেমনঃ আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক হারামকৃত বিষয়কে হালাল বা হালালকৃত বস্তুকে হারাম করার ক্ষেত্রে ঐ সকলদের আনুগত্য করা। সুতরাং যেসব লোক এসব ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করল তারা মুলত আল্লাহ তা’আলার সমকক্ষ শির্কে ডুবে গেল।

 আল্লাহ তাআলা বলেন,

اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ

অর্থঃ তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের উলামা ও দরবেশদেরকে নিজেদের খোদায় পরিণত করেছে৷ এবং এভাবে মারয়াম পুত্র মসীহকেও৷ অথচ তাদের মা’বুদ ছাড়া আর কারোর বন্দেগী কারার হুকুম দেয়া হয়নি, এমন এক মাবুদ যিনি ছাড়া ইবাদত লাভের যোগ্যতা সম্পন্ন আর কেউ নেই৷ তারা যেসব মুশরিকী কথা বলে তা থেকে তিনি পাক পবিত্র৷ (সুরা তওবা- ৯:৩১)।

আনুগত্যের শির্ক হল, বিনা ভাবনায় শরিয়তের গ্রহণযোগ্য কোন প্রমান ছাড়াই হালাল হারাম জায়েজ নাজায়েজের ব্যপারে আলেম বুজুর্গ বা উপরস্থ কারো সিদ্ধান্ত অন্ধভাবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া।

হাদীসে বলা হয়েছে হযরত আদী ইবনে হাতেম নবী (সা) এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন খৃস্টান। ইসলাম গ্রহণ করার সময় তিনি নবী (সা) কে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন হচ্ছে, কুরআনের এ আয়াতটিতে (সুরা তওবা- ৯:৩১) আমাদের বিরুদ্ধে উলামা ও দরবেশদেরকে খোদা বানিয়ে নেবার যে দোষারূপ করা হয়েছে তার প্রকৃত তাৎপর্য কি৷ জবাবে তিনি বলেন, তারা যেগুলোকে হারাম বলতো তোমরা সেগুলোকে হারাম বলে মেনে নিতে এবং তারা যেগুলোকে হালাল বলতো তোমরা সেগুলোকে হালাল বলে মেনে নিতে, একথা কি সত্য নয়৷ জবাবে হযরত আদী বলেন , হাঁ, একথা তো ঠিক, আমরা অবশ্যি এমনটি করতাম। রসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ব্যাস, এটিই তো হচ্ছে তোমাদে প্রভু বানিয়ে নেয়া। (আহম্মদ, তিরমিজ, তাফসিরে ইবনে কাসির)। 

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, “পাপ কাজের আদেশ না আশা পর্যান্ত ইমামের কথা শুনা ও তার আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। তবে পাপ কাজের আদেশ করা হলে তা শুনা ও আনুগত্য করা যাবে না”। (বুখারী হাদিস নং ২৭৫০)। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনঃ স্রষ্টার বিরুদ্ধাচারন করে সৃষ্টুর অনুগত্য করা চলবেনা। (আহম্মদ, মুসলিম)

বক্তব্য “কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে, অন্য স্থান ও বস্তু দ্বারা নয়।বক্তব্য “কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে, অন্য স্থান ও বস্তু দ্বারা নয়।

১৬। বিদআতী আকিদা হলোঃ অধিকাংশ বিদআতিগন তাবিজ কবজে বিশ্বাসী

সঠিক আকিদা হলোঃ তাবিজের উপর ভরসা করে তা লটকালেই শির্কি কাজ হয় যাবে

সহিহ আকিদার দলীলঃ

তাবীজ লটকানো, রিং, তাগা পরিধান করা, হাতে লোহা বা রাবারের আংটা লাগানো, সুতা, পুঁতির মালা বা অনুরূপ বস্তু ব্যবহার করা ছোট শির্ক।

 নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন জিনিষ লটকাবে, তাকে ঐ জিনিষের দিকেই সোপর্দ করে দেয়া হবে।  (তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তিব্ব হাদিস নং ২০৭২। শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী (রঃ) হাসান বলেছেন।

কোন এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন লোক পাঠিয়ে বলে দিলেন যেঃ কোন উটের গলায় ধনুকের রশি বা গাছের ছাল দিয়ে তৈরী হার ঝুলানো থাকলে অথবা যে কোন মালা থাকলে সেটি যেন অবশ্যই কেটে ফেলা হয়।  (বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্‌ তিব্ব)।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ঝাড়-ফুঁক করা, তাবীজ লটকানো এবং স্বামী বা স্ত্রীর মাঝে ভালবাসা সৃষ্টির জন্যে যাদুমন্ত্রের আশ্রয় নেয়া শির্ক।” ( আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্‌ তিব্ব। শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী হাদীছ সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে সহীহা হাদীছ নং- ৬/১১৬১)।

মন্তব্যঃ এখানে যে ঝাড়ফুঁক করাকে শির্ক বলা হয়েছে, তা দ্বারা শির্কী কালামের মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক উদ্দেশ্য। তবে ঝাড়ফুঁক যদি আল্লাহর কালাম, আল্লাহর সিফাত বা সহীহ হাদীছে বর্ণিত কোন বাক্যের মাধ্যমে হয়, তাতে কোন অসুবিধা নেই। কারন সহিহ হাদিস দ্বারা ঝাড়ফুঁক করাকে শরিয়ত সম্মত বলা হয়েছে

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য এক হাদীছে বলেনঃ “যে ব্যক্তি তাবীজ লটকালো, আল্লাহ্‌ যেন তার উদ্দেশ্য পূর্ণ না করেন। আর যে ব্যক্তি রুগমক্তির জন্যে শামুক বা ঝিনুকের মালা লটকালো, আল্লাহ্‌ যেন তাকে শিফা না দেন”। (হাকেম, (৪/২১৯। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা, (৩/৪২৭)।

তিনি অন্য এক হাদীছে বলেনঃ “যে ব্যক্তি তাবীজ লটকালো সে শির্ক করল” (মুসনাদে আহমাদ, (৪/১৫৬) ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা হাদীছ নং- (১/৮০৯)।

নবী (সাঃ) এক ব্যক্তির হাতে পিতলের একটি আংটা দেখে বললেনঃ এটি কী? সে বললঃ এটি দুর্বলতা দূর করার জন্যে পরিধান করেছি। তিনি বললেনঃ  “তুমি এটি খুলে ফেল। কারণ এটি তোমার দুর্বলতা আরো বাড়িয়ে দিবে। আর তুমি যদি এটি পরিহিত অবস্থায় মৃত্যু বরণ কর, তাহলে তুমি কখনই সফলতা অর্জন করতে পারবে না”।(মুসনাদে আহমাদ, দেখুনঃ আহমাদ শাকেরের তাহকীক, (১৭/৪৩৫) তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)।

হুজায়ফা (রাঃ) দেখলেন এক ব্যক্তির হাতে একটি সুতা বাঁধা আছে। তিনি তা কেটে ফেললেন এবং কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ অর্থ: “তাদের অধিকাংশই আল্লাহকে বিশ্বাস করে; কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে”। (সূরা ইউসুফঃ ১০৬)

সাঈদ বিন জুবায়ের (রাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন মানুষের শরীর থেকে একটি তাবীজ কেটে ফেলল, সে একটি গোলাম আযাদ করার ছাওয়াব পেল। সাঈদ বিন জুবায়েরের এই কথাটি নবী (সাঃ) হতে বর্ণিত মারফু হাদীছের পর্যায়র্ভূক্ত।

১৭। বিদআতী আকিদা হলোঃ ইলমে লাদুন্নী নামে এক কল্পিত ইলমে বিশ্বাস করেঃ

সঠিক আকিদা হলোঃ ইসলামি শরীয়তে ইলমে লাদুন্নী নামে আলাদা কোন ইলম নাই।

সহিহ আকিদার দলীলঃ

বিদআতীগণ তাদের কল্পিত একটি ইলমের নাম দিয়েছে, “ইলমে লাদুন্নী”’। এটি তাদের বানোয়াট একটি ইলমের নাম, এই নামে কুরআন সহিহ হাদিসে কোন ইলম নেই। এই কল্পিত ইলমের কথা আল্লাহ হাবিব সাঃ জানতেন না। এটি আল্লাহ ও তার রাসুল সাঃ এর নামে চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। এই উম্মতের প্রথম কাতারের সৎ লোক সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীদের মুখে এ ধরণের কথা শুনা যায় নি। যদি সত্যিই এধরনের কোন ইলম থাকত তবে তারাই ছিলেন এর বেশী হক দার কারন তারা ঈমান, আমল ও তাকওয়ায় আমাদের চেয়ে অনেক বেশী অগ্রগামী ছিলেন। সাহাবিদের অনেকের প্রশংসায় আল্লাহ তায়ালা কুরআনে একাধিক আয়াত নাযিল করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের অনেককেই জান্নাতী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের অনুসরনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন, তাদের এই “ইলমে লাদুন্নী”  সম্পর্কে কোন খবরই ছিল। তাদের পরে যাদের আমলের শত শত বিদআতের  ছড়াছড়ি  যাদের কথায় ও কাজে শির্কের আলামত, তারাই দাবি করে তারা“ইলমে লাদুন্নী” অধিকারী।

সুফিদের মতে তাদের অলী আাউলীয়া মাত্রই ইলমে লাদুন্নীর অধিকারী। তাদের মতে অলী আউলীয়াদের মহান আল্লাহ পাক ইলমে লাদুন্নী দান করে থাকেন। তার প্রমাণ হিসাবে তার পবিত্র কুরআনের কাহাফের ৬৫ আয়াত তুলে ধরেন। মহান আল্লাহ বলেন,

فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِندِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا

অর্থঃ অতঃপর তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম ও আমার পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। ( সুরা কা’হফ ১৮:৬৫ )

এই আয়াত উল্লখে করে তারা দাবি করে এই বিশেষ জ্ঞান যা আল্লাহুতা’লা হযরত খিজির আলাইহিস সালাম কে দান করেছেন তাহাই “ইলমে লাদুন্নী”। আল্লাহুতা’লা যাকে বিশেষ জ্ঞান বলেছেন, সুফিরা এই বিশেষ জ্ঞান কে “ইলমে লাদুন্নী” বলে চালিয়ে দেন। ইলমে লাদুন্নী বলতে তারা বুঝাতে চায় যে, এটি এমন একটি ইলম যা, আল্লাহর পক্ষ হতে খিজির আলাইহিস সালাম মত সুফীরা পেয়ে থাকে। তাদের মতে এই জ্ঞান অর্জনের জন্য তাদের বাতলার বিশেষ পদ্দতিতে সাধনা ও চেষ্টা দরকার। এজন্য তাকে আল্লাহর অলি বা প্রকৃত পীর মোর্শেদের সান্নিধ্যে থাকিয়া পরম জ্ঞানময় আল্লাহ তায়ালার গায়েবী ইলম লাভ করিয়া ইনসানে কামিলে পরিণত হইতে হবে।  তাদের ধারনা হল, এটি কেবল মাত্র অলী আওলীয়াগন আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্জন করে থাকে। সাধারন কুরআন হাদিসের কোন আলেমে এ জ্ঞান দেয়া হয় না।

মন্তব্যঃ সুফিদের এ ধারনা সম্পুর্ণ কল্পিত কারন ইসলামে থাকবে অথচ কুরআন হাদিসে থাকবেনা এটা কেমন করে হয়। যদি “ইলমে লাদুন্নী” কোন অলী আওলীয়াগন হাছিল করতে পাবে তবে এই উম্মতের সবচেয়ে বড় অলী আওলীয়া যাদের কুরবাণীতে দ্বীন পেয়েছি সেই সাহাবিদের হাছিল হত। তাদের যেহেতু হাছিল হয়নি তাহলে কার হাছিল হতে পারে। আল কোন কথা আল্লাহর হাবিব রাসুল (সাঃ) গোপনও রেখে যানই। যেমনঃ আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ

অর্থঃ হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। (সুরা মায়েদা ৫:৬৭)।

এ আয়াতে পরিস্কার বলা হয়েছে রাসূল তার নিকট অবতীর্ণ সকল বিষয় পৌছিয়েছেন। যদি তিনি ইলমে লাদুন্নী না পৌছে গোপন করে তবে আল্লাহ কথা মত তিনি রিসালাতের দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। (নাউজুবুল্লাহ)। তিনি রিসালাতের দায়িত্বে কোন প্রকার সামান্যতম অবহেলা করেননি, তার প্রমান বিদায় হজ্জে লক্ষাধীক সাহাবি সাক্ষ্য প্রদান। এই মর্মে একটি বানোয়াট একটি মিথ্যা কথা প্রচলিত আছে যে, জানা ইলমে আমল করলে, আল্লাহ অজানা ইলম দান করেন। আর এই অজানা ইলম হল “ইলমে লাদুন্নী”।

 

১৮। বিদআতী আকিদা হলোঃ  খিজির আলাইহিস সালাম এখনও জীবিত এবং তিনি এখনও মানুষদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগীতা করে থাকেন।

সঠিক আকিদা হলোঃ খিজির আলাইহিস সালাম মারা গিয়েছেন, তিনি কোন অস্থায়ই আর কাউকে সাহায্য করতে পারে না।

সহিহ আকিদার দলীলঃ

মহান আল্লাহ খিজির আলাইহিস সালাম সম্পর্কে  কি বলেছেন। কুরআনের ভাষায় সে সম্পর্কে একটু জেনে নেই। সুরা কাহাফে মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ

 وَإِذۡ قَالَ مُوسَىٰ لِفَتَٮٰهُ لَآ أَبۡرَحُ حَتَّىٰٓ أَبۡلُغَ مَجۡمَعَ ٱلۡبَحۡرَيۡنِ أَوۡ أَمۡضِىَ حُقُبً۬ا (٦٠) فَلَمَّا بَلَغَا مَجۡمَعَ بَيۡنِهِمَا نَسِيَا حُوتَهُمَا فَٱتَّخَذَ سَبِيلَهُ ۥ فِى ٱلۡبَحۡرِ سَرَبً۬ا (٦١) فَلَمَّا جَاوَزَا قَالَ لِفَتَٮٰهُ ءَاتِنَا غَدَآءَنَا لَقَدۡ لَقِينَا مِن سَفَرِنَا هَـٰذَا نَصَبً۬ا (٦٢) قَالَ أَرَءَيۡتَ إِذۡ أَوَيۡنَآ إِلَى ٱلصَّخۡرَةِ فَإِنِّى نَسِيتُ ٱلۡحُوتَ وَمَآ أَنسَٮٰنِيهُ إِلَّا ٱلشَّيۡطَـٰنُ أَنۡ أَذۡكُرَهُ ۥ‌ۚ وَٱتَّخَذَ سَبِيلَهُ ۥ فِى ٱلۡبَحۡرِ عَجَبً۬ا (٦٣) قَالَ ذَٲلِكَ مَا كُنَّا نَبۡغِ‌ۚ فَٱرۡتَدَّا عَلَىٰٓ ءَاثَارِهِمَا قَصَصً۬ا (٦٤) فَوَجَدَا عَبۡدً۬ا مِّنۡ عِبَادِنَآ ءَاتَيۡنَـٰهُ رَحۡمَةً۬ مِّنۡ عِندِنَا وَعَلَّمۡنَـٰهُ مِن لَّدُنَّا عِلۡمً۬ا (٦٥) قَالَ لَهُ ۥ مُوسَىٰ هَلۡ أَتَّبِعُكَ عَلَىٰٓ أَن تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمۡتَ رُشۡدً۬ا (٦٦) قَالَ إِنَّكَ لَن تَسۡتَطِيعَ مَعِىَ صَبۡرً۬ا (٦٧) وَكَيۡفَ تَصۡبِرُ عَلَىٰ مَا لَمۡ تُحِطۡ بِهِۦ خُبۡرً۬ا (٦٨) قَالَ سَتَجِدُنِىٓ إِن شَآءَ ٱللَّهُ صَابِرً۬ا وَلَآ أَعۡصِى لَكَ أَمۡرً۬ا (٦٩) قَالَ فَإِنِ ٱتَّبَعۡتَنِى فَلَا تَسۡـَٔلۡنِى عَن شَىۡءٍ حَتَّىٰٓ أُحۡدِثَ لَكَ مِنۡهُ ذِكۡرً۬ا (٧٠) فَٱنطَلَقَا حَتَّىٰٓ إِذَا رَكِبَا فِى ٱلسَّفِينَةِ خَرَقَهَا‌ۖ قَالَ أَخَرَقۡتَہَا لِتُغۡرِقَ أَهۡلَهَا لَقَدۡ جِئۡتَ شَيۡـًٔا إِمۡرً۬ا (٧١) قَالَ أَلَمۡ أَقُلۡ إِنَّكَ لَن تَسۡتَطِيعَ مَعِىَ صَبۡرً۬ا (٧٢) قَالَ لَا تُؤَاخِذۡنِى بِمَا نَسِيتُ وَلَا تُرۡهِقۡنِى مِنۡ أَمۡرِى عُسۡرً۬ا (٧٣) فَٱنطَلَقَا حَتَّىٰٓ إِذَا لَقِيَا غُلَـٰمً۬ا فَقَتَلَهُ ۥ قَالَ أَقَتَلۡتَ نَفۡسً۬ا زَكِيَّةَۢ بِغَيۡرِ نَفۡسٍ۬ لَّقَدۡ جِئۡتَ شَيۡـًٔ۬ا نُّكۡرً۬ا (٧٤) ۞ قَالَ أَلَمۡ أَقُل لَّكَ إِنَّكَ لَن تَسۡتَطِيعَ مَعِىَ صَبۡرً۬ا (٧٥) قَالَ إِن سَأَلۡتُكَ عَن شَىۡءِۭ بَعۡدَهَا فَلَا تُصَـٰحِبۡنِى‌ۖ قَدۡ بَلَغۡتَ مِن لَّدُنِّى عُذۡرً۬ا (٧٦) فَٱنطَلَقَا حَتَّىٰٓ إِذَآ أَتَيَآ أَهۡلَ قَرۡيَةٍ ٱسۡتَطۡعَمَآ أَهۡلَهَا فَأَبَوۡاْ أَن يُضَيِّفُوهُمَا فَوَجَدَا فِيہَا جِدَارً۬ا يُرِيدُ أَن يَنقَضَّ فَأَقَامَهُ ۥ‌ۖ قَالَ لَوۡ شِئۡتَ لَتَّخَذۡتَ عَلَيۡهِ أَجۡرً۬ا (٧٧) قَالَ هَـٰذَا فِرَاقُ بَيۡنِى وَبَيۡنِكَ‌ۚ سَأُنَبِّئُكَ بِتَأۡوِيلِ مَا لَمۡ تَسۡتَطِع عَّلَيۡهِ صَبۡرًا (٧٨) أَمَّا ٱلسَّفِينَةُ فَكَانَتۡ لِمَسَـٰكِينَ يَعۡمَلُونَ فِى ٱلۡبَحۡرِ فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَہَا وَكَانَ وَرَآءَهُم مَّلِكٌ۬ يَأۡخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ غَصۡبً۬ا (٧٩) وَأَمَّا ٱلۡغُلَـٰمُ فَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤۡمِنَيۡنِ فَخَشِينَآ أَن يُرۡهِقَهُمَا طُغۡيَـٰنً۬ا وَڪُفۡرً۬ا (٨٠) فَأَرَدۡنَآ أَن يُبۡدِلَهُمَا رَبُّہُمَا خَيۡرً۬ا مِّنۡهُ زَكَوٰةً۬ وَأَقۡرَبَ رُحۡمً۬ا (٨١) وَأَمَّا ٱلۡجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَـٰمَيۡنِ يَتِيمَيۡنِ فِى ٱلۡمَدِينَةِ وَكَانَ تَحۡتَهُ ۥ كَنزٌ۬ لَّهُمَا وَكَانَ أَبُوهُمَا صَـٰلِحً۬ا فَأَرَادَ رَبُّكَ أَن يَبۡلُغَآ أَشُدَّهُمَا وَيَسۡتَخۡرِجَا كَنزَهُمَا رَحۡمَةً۬ مِّن رَّبِّكَ‌ۚ وَمَا فَعَلۡتُهُ ۥ عَنۡ أَمۡرِى‌ۚ ذَٲلِكَ تَأۡوِيلُ مَا لَمۡ تَسۡطِع عَّلَيۡهِ صَبۡرً۬ا (٨٢) 

অর্থঃ যখন মূসা তার খাদেমকে বলেছিল, দুই দরিয়ার সংগমস্থলে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি সফর শেষ করবো না, অন্যথায় আমি দীর্ঘকাল ধরে চলতেই থাকবো৷ সে অনুসারে যখন তারা তাদের সংগমস্থলে পৌঁছে গেলো তখন নিজেদের মাছের ব্যাপারে গাফেল হয়ে গেলো এবং সেটি বের হয়ে সুড়ংগের মতো পথ তৈরি করে দরিয়ার মধ্যে চলে গেলো৷ সামনে এগিয়ে যাওয়ার পর মূসা তার খাদেমকে বললো, “আমাদের নাশতা আনো, আজকের সফরে তো আমরা ভীষণভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি৷  খাদেম বললো, “আপনি কি দেখেছেন, কি ঘটে গেছে ? যখন আমরা সেই পাথরটার পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমার মাছের কথা মনে ছিল না এবং শয়তান আমাকে এমন গাফেল করে দিয়েছিল যে, আমি (আপনাকে) তার কথা বলতে ভুলে গেছি৷ মাছ তো অদ্ভূতভাবে বের হয়ে দরিয়ার মধ্যে চলে গেছে৷ 

 মূসা বললো, “আমরা তো এরই খোঁজে ছিলাম৷ কাজেই তারা দুজন নিজেদের পদরেখা ধরে পেছনে ফিরে এলো  এবং সেখানে তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দাকে পেলো, যাকে আমি নিজের অনুগ্রহ দান করেছিলাম এবং নিজের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ জ্ঞান দান করেছিলাম৷  মূসা তাকে বললো, আমি কি আপনার সাথে থাকতে পারি, যাতে আপনাকে যে জ্ঞান শেখানো হয়েছে তা থেকে আমাকেও কিছু শেখাবেন ?  সে বললো, আপনি আমার সাথে সবর করতে পারবেন না৷  আর তাছাড়া যে ব্যাপারের আপনি কিছুই জানেন না সে ব্যাপারে আপনি সবর করবেনই বা কেমন করে৷  মূসা বললো, “ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে সবরকারী হিসেবেই পাবেন এবং কোনো ব্যাপারেই আমি আপনার হুকুম অমান্য করবো না৷  সে বললো, আচ্ছা, যদি আপনি আমার সাথে চলেন তাহলে আমাকে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না আমি নিজে সে সম্পর্কে আপনাকে বলি৷  অতপর তারা দুজন রওয়ানা হলো৷ শেষ পর্যন্ত যখন তারা একটি নৌকায় আরোহণ করলো তখন ঐ ব্যক্তি নৌকা ছিদ্র করে দিল৷ মূসা বললো, “আপনি কি নৌকার সকল আরোহীকে ডুবিয়ে দেবার জন্য তাতে ছিদ্র করলেন ? এতো আপনি বড়ই মারাত্মক কাজ করলেন৷”  সে বললো, “আমি না তোমাকে বলেছিলাম, তুমি আমার সাথে সবর করতে পারবে না ?”  মূসা বললো, “ভুল চুকের জন্য আমাকে পাকড়াও করবেন না, আমার ব্যাপারে আপনি কঠোর নীতি অবলম্বন করবেন না৷” এরপর তারা দুজন চললো৷ চলতে চলতে তারা একটি বালকের দেখা পেলো এবং ঐ ব্যক্তি তাকে হত্যা করলো৷ মূসা বললো, “আপনি এক নিরপরাধকে হত্যা করলেন অথচ সে কাউকে হত্যা করেনি ? এটা তো বড়ই খারাপ কাজ করলেন৷”  সে বললো, “আমি না তোমাকে বলেছিলাম, তুমি আমার সাথে সবর করতে পারবে না ?”  মূসা বললো, “এরপর যদি আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করি তাহলে আপনি আমাকে আপনার সাথে রাখবেন না৷ এখন তো আমার পক্ষ থেকে আপনি ওজর পেয়ে গেছেন৷”  তারপর তারা সামনের দিকে চললো৷ চলতে চলতে একটি জনবসতিতে প্রবেশ করলো এবং সেখানে লোকদের কাছে খাবার চাইলো৷

কিন্তু তারা তাদের দুজনের মেহমানদারী করতে অস্বীকৃতি জানালো৷ সেখানে তারা একটি দেয়াল দেখলো, সেটি পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল৷ সে দেয়ালটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে দিল৷ মূসা বললো, “আপনি চাইলেএ কাজের পারিশ্রমিক নিতে পারতেন৷”  সে বললো, “ব্যাস, তোমার ও আমার সংগ শেষ হয়ে গেলো৷ এখন আমি যে কথাগুলোর ওপর তুমি সবর করতে পারোনি সেগুলোর তাৎপর্য তোমাকে বলবো৷  সেই নৌকাটির ব্যাপার ছিল এই যে, সেটি ছিল কয়েকজন গরীব লোকের, তারা সাগরে মেহনত মজদুরী করতো৷ আমি সেটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম৷ কারণ সামনের দিকে ছিল এমন বাদশাহর এলাকা যে প্রত্যেকটি নৌকা জবরদস্তি ছিনিয়ে নিতো৷ আর ঐ বালকটির ব্যাপার হচ্ছে এই যে, তার বাপ-মা ছিল মুমিন৷ আমাদের আশংকা হলো, এ বালক তার বিদ্রোহাত্মক আচরণ ও কুফরীর মাধ্যমে তাদেরকে বিব্রত করবে৷ তাই আমরা চাইলাম তাদের রব তার বদলে তাদেরকে যেন এমন একটি সন্তান দেন যে চরিত্রের দিক দিয়েও তার চেয়ে ভালো হবে এবং যার কাছ তেকে সদয় আচরণও বেশী আশা করা যাবে৷ এবার থাকে সেই দেয়ালের ব্যাপারটি৷ সেটি হচ্ছে এ শহরে অবস্থানকারী দুটি এতীম বালকের৷ এ দেয়ালের নীচে তাদের জন্য সম্পদ লুকানো আছে এবং তাদের পিতা ছিলেন একজন সৎলোক৷ তাই তোমার রব চাইলেন এ কিশোর দুটি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যাক এবং তারা নিজেদের গুপ্তধন বের করে নিক৷ তোমার রবের দয়ার কারণে এটা করা হয়েছে৷ নিজ ক্ষমতা ও ইখতিয়ারে আমি এটা করিনি৷ তুমি যেসব ব্যাপারে সবর করতে পারোনি এ হচ্ছে তার ব্যাখ্যা৷ (সুরা কাহাফ আয়াত ১৮:৬০-৮২)।

এভাবে সহিহ বুখারিতেও খিজির আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। তাই খিজির আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা রাখার কোন যুক্তি নেই। মহান আল্লাহ যতটুকু বলেছেন আর রাসুল (সাঃ) যতটুকু আমাদের অবগত করছেন সে আলোকেই আমাদের বিশ্বাস স্থাপণ করতে হবে। খিজির আলাইহিস সালাম সম্পর্কে প্রথম প্রশ্ন হল তিনি নবী ছিলেন কিনা? তিনি নবী ছিলেন কিনা এ সম্পর্কে কুনআন হাদিসে ষ্পষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায়না। তাই কোন কোন আলেম তাকে নবী বলেছেন আবার কোন কোন আলেম তাকে আল্লাহ ওলী বলেছেন। এর সাথে আমাদের কোন বিশ্বাসগত অথবা কর্মগত বিষয় জড়িত নেই বিধায় কুরআন সুন্নায় রাসূল (সাঃ) কিছু বলে যাননি তাই এ ব্যাপারে অতিরিক্ত আলোচনা নিস্প্রয়োজন। খিজির আলাইহিস সালাম সম্পর্কে দ্বিতীয় যে বিষয়টি তা আমাদের সুফিদের ভ্রান্ত আকিদার সাথে সম্পর্কিত। সকল সুফিগনের এ সম্পর্ক দুটি ভ্রান্ত বিশ্বাস আছে।

১।  খিজির আলাইহিস সালাম এখনও জীবিত।

২। তিনি এমন একজন অলী যিনি এখনও মানুষদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগীতা করে থাকেন।

খিজির আলাইহিস সালাম কি এখনও জীবিতঃ

সুফিদের এ দাবি মিথ্যা কারন প্রতিটি জীবন মানেই মৃত্যু। নবী রসুলেরাও এর ব্যতিক্রম নয়। এর উর্দ্ধে নয় কোন অলী আওলিয়া বা কোন পূণ্যাত্মা মানুষ। পাপী ও পূণ্যাত্মা সকলেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবে। পুর্বের কোন নবী বা রাসুল ও এর উর্দ্ধে ছিলন না। কাফেররা মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিদ্রূপ করতো যে তিনি যদি সত্য নবী হন তবে মৃত্যু তাঁকে স্পর্শ করবে না।

  এরই প্রেক্ষিতে উক্ত আয়াত নাজেল হয়।আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা এরশাদ করেনঃ

وَمَا جَعَلۡنَا لِبَشَرٍ۬ مِّن قَبۡلِكَ ٱلۡخُلۡدَ‌ۖ أَفَإِيْن مِّتَّ فَهُمُ ٱلۡخَـٰلِدُونَ (٣٤) كُلُّ نَفۡسٍ۬ ذَآٮِٕقَةُ ٱلۡمَوۡتِ‌ۗ وَنَبۡلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلۡخَيۡرِ فِتۡنَةً۬‌ۖ وَإِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ (٣٥) 

অর্থ: (পৃথিবীতে) তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করা হয় নাই। সুতারাং তোমার মৃত্যু হলে ওরা কি চিরদিন বেঁচে থাকবে ? প্রতিটি আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি। আমারই নিকট তোমরা ফিরে আসবে, (আম্বিয়া ২১:৩৪-৩৫)।

মন্তব্যঃ আল্লাহর ষ্পষ্ট ঘোষনার পর বিতর্ক করার প্রশ্ন মানে আপনি মুসলিমের মিল্লাতে নেই।

খিজির আলাইহিস সালাম এখনও মানুষদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগীতা করে

সুফিদের বিশ্বাস খিজির আলাইহিস সালাম এমন একজন অলী যিনি এখনও মানুষদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগীতা করে থাকেন। এই কথা কতটা জঘন্য শির্ক কথা একটু চিন্তা করুন। আল্লাহ তাআলা স্পষ্ঠ ভাষায় বলছেন মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন অবস্থায়ই নিজের জন্য লাভ ক্ষতির ইখতিয়ার রাখেনা তো খিজিন আলাইহিস সালামতো অনেক দুরের কথা। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

 قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِى نَفۡعً۬ا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ‌ۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَڪۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِىَ ٱلسُّوٓءُ‌ۚ إِنۡ أَنَا۟ إِلَّا نَذِيرٌ۬ وَبَشِيرٌ۬ لِّقَوۡمٍ۬ يُؤۡمِنُونَ (١٨٨) 

অর্থঃ হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো, নিজের জন্য লাভ -ক্ষতির কোন ইখতিয়ার আমার নেই৷ একমাত্র আল্লাহই যা কিছু চান তাই হয়৷ আর যদি আমি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে নিজের জন্যে অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না৷   আমিতো নিছক একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা আমি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে নিজের জন্যে অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না৷ এমন জাতীর জন্য, যারা বিশ্বাস করে।৷  (সুরা আরাফ ৭: ১৮৮)

মন্তব্যঃ এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরিস্কার ভাবে ঘোষনা দিতে বললেন যে, মুহাম্মদ (স:) নিজের কোন লাভ -ক্ষতির করতে পারে না। সেখানে আন্য নবী, রাসুল, অলী, আওলীয়া, পীর, বুজুর্গ আল্লাহতায়ালার মত মানুষের ভাল মন্দ করার ক্ষমতা রাখে এমন আকিদা হল কুরআন বিরোধী।

 

১৯। বিদআতী আকিদা হলোঃ কিছু ভন্ড বিদআতী সুফি মনে করে ফেরাউন ও ইবলিশ শয়তার ইমানদার।

সঠিক আকিদা হলোঃ ফেরাউন ও ইবলিশ শয়তার পাক্ক কাফির। ফেরাউন কুফরিতেই মৃত্যু বরণ করছেন। ইবলিশও কুফরিতে মৃত্যু বরন করবে।

সহিহ আকিদার দলীলঃ

সুফিদের মাঝে হাজার হাজার তরীকা কথা আগেই বলেছি। কিছু ভ্রান্ত তরিকা এমন আছে যাদের আকিদা বিশ্বসা ইবলীস শয়তানকে হার মানায়। এমনই কিছু সুফীদের বিশ্বসাস ইবলীস ও ফেরাউনকে পরিপূর্ণ ঈমানদার ও আল্লাহর শ্রেষ্ট বান্দা। তাদের দর্শনের মতে ইবলীস সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত এবং সে পরিপূর্ণ ঈমানদার। আর মিশরের ফেরাউন সম্পর্কে সুফীদের কতিপয়ের কথা হচ্ছে, ঈমানের পরিপূর্ণ হাকীকত অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল বলেই সে একজন সৎ লোক ছিল। ফিরআউনের কথাঃأنا ربكم الأعلى   ‘‘আমি তোমাদের মহান প্রভু’’ এর তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে সুফীরা বলেঃ ফিরআউন নিজের ভিতরে উলুহীয়াতের অস্থিত্ব খুঁজে পেয়েছিল বলেই এ রকম কথা বলেছে। কেননা তাদের মতে পৃথিবীর প্রতিটি বস্ত্তই আল্লাহ। সুতরাং প্রতিটি সৃষ্টিই এবাদত পাওয়ার অধিকার রাখে। সুতরাং যে ব্যক্তি ইবলীসের এবাদত করল, সে আল্লাহরই এবাদত করল এবং যে ফিরআউনের এবাদত করল সে আল্লাহরই এবাদত করল। (নাউযুবিল্লাহ)।

মানসুর হাল্লাজ এবং ইবনে আরাবী মনে করে, শয়তানকে আল্লাহর রহমত থেকে বিতারিত করা হয়নি এবং সে জাহান্নামীও নয়।

সে তাওবা করে পরিশুদ্ধ হয়ে জান্নাতী হয়ে গেছে। হাল্লাজ সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছে যে, শয়তান ও ফিরআউন হচ্ছে তার আদর্শ ও ইমাম। এই জাতীয় কথা যে, বাতিল ও মিথ্যা তা ইসলাম সম্পর্কে সামান্য ধারণার অধিকারীও অতি সহজেই বুঝতে পারেন।  আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوّاً وَعَشِيّاً وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ)

অর্থঃ সকালে ও সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয় এবং যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফেরাঊন গোত্রকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর। (সূরা মুমিন ৪০:৪৬)।

ইবলীস আল্লাহর আদেশ অমান্য করে তাঁর রহমত থেকে বিতারিত হয়ে কাফেরে পরিণত হয়েছে। কিয়ামতের দিন সে তার অনুসারীসহ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এটি কুরআন ও সহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآَدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
অর্থঃ এবং যখন আমি আদমকে সেজদাহ করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলিস ব্যতীত সবাই সিজদাহ করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করলো। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাকারাঃ ৩৪)

 আল্লাহ্ তাআলা ইবলীসের জাহান্নামী হওয়া সম্পর্কে বলেনঃ
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ (12) قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِينَ (13) قَالَ أَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ (14) قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ (15) قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ (16) ثُمَّ لَآَتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ (17) قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَدْحُورًا لَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكُمْ أَجْمَعِينَ

অর্থঃ ‘‘আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদাহ করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। বললেন তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব, তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত। সে বললঃ আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ্ বললেনঃ তোকে সময় দেয়া হল। সে বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদ্ভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো। এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বামদিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না। আল্লাহ্ বললেনঃ বের হয়ে যা এখান থেকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে। তাদের যে কেউ তোর পথে চলবে, নিশ্চয় আমি তোদের সবার দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করে দিব। (সূরা আরাফঃ ১২-১৮)।

মন্তব্যঃ কতিপয় সূফী ছাড়া অধিকাংশ সুফিদের ও বিশ্বাস ফেরাউন এবং ইবলীসের জাহান্নামি। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সকলের আকিদা ফেরাউন এবং ইবলীসের জাহান্নামি।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment