ঈদ ও ঈদের সালাতের বিস্তারিত বিধান

ঈদ আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে এমন সাধারণ সম্মেলন যা বারবার ফিরে আসে। চাই তা সপ্তাহ ঘুরে ফিরে আসুক, মাস ঘুরে আসুক কিংবা বৎসর ঘুরে আসুক। অর্থাৎ যে দিনটি বার বার ফিরে আসে তাকে ঈদের দিন বলে। আমরা ঈদ বলতে বুঝি খুসি আর আনন্দেভরা দিন। প্রতি বছর রমযান মাসে দীর্ঘ এক মাস সিয়াম পালনের পর আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন লাভের আনন্দ লাভ করা সত্যিকার অর্থেই ঈদ (যে আনন্দ বার বার ফিরে আসে)। ঈদুল ফিতরের দিনটি আল্লাহ তাআলা অনেক বড় অনুগ্রহ কারন মাস ব্যাপি সিয়াম পালনের পর পানাহারের অনুমতি প্রদান। এমনি ভাবে ত্যাগের মহিমা নিয়ে বার বার ফিরে আসে ঈদুল আজহা বা কুরবানীর ঈদ। আল্লাহ তা’আলা প্রতি বছর তার বান্দাকে নিয়ামাত, ইহসান ও অনুগ্রহ দ্বারা বার বার ধন্য করে থাকেন। এতে মানুষের প্রাণে আনন্দের সঞ্চার হয়। এসব কারণে এ দিবসের নামকরণ হয়েছে ঈদ। মহান আল্লাহ বলেন,

 وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ (٥٦)

অর্থঃ জ্বীন ও মানুষকে আমি শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার দাসত্ব করবে৷

কাজেই মুসলিমদের ঈদও ইবাদাত। অর্থাৎ আল্লাহর মর্জিমত আনন্দ করলেও ইবাদত হবে। এই জন্যই মুসলিমদের ঈদের আনন্দ অত্যন্ত নির্মল, পবিত্র এবং মধুময়। এই আনন্দ প্রকাশের সীমা ও ইসলাম নির্ধারণ করেছে। ঈদের আনন্দ শুরু হয় ঈদের সালাতের সমাবেশের মাধ্যমে যেখানে দেখা হয় নতুন পুরাতন হাজার বন্ধু বান্ধবদের সাথে, শুভেচ্ছা বিনিময় চলতে থাকে পাড়া প্রতিবেশীসহ সকল স্থরের মানুষের সাথে। মহান মিলন মেলার কথা লিখে প্রকাশ করা যাবে না। এ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব একে অপরকে দাওয়াত দেয়। সমাজের সবার জন্য সবার দার উম্মুক্ত থাকে। তবে থাকে না ধনি গরিবের ভেদাভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ ও ক্রোধ।  

ঈদের সুচনাঃ

ঈদের সুচনা হয় প্রথম হিজরীতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আগের নাবীদের সময় ঈদের প্রচলন ছিল না। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মাক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আগমন করে দেখলেন, মদীনাবাসী খেলাধূলার মধ্য দিয়ে দুটি দিবস উদযাপন করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ও দুটি দিবস কি? তারা বলল, এ দুটি দিবস জাহেলী যুগে আমরা খেলাধূলার মধ্য দিয়ে উদযাপন করতাম তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, একটি হল, ঈদুল আযহা এবং অপরটি হল, ঈদুল ফিতর।” (সুনান আবূদাঊদ, হাদীস নং ৯৫৯ সনদ সহিহ নাসির উদ্দিন আলবানী রহঃ) ।

এই হাদিস থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইসলামী শরীয়তে মুসলিমদের পালনীয় ঈদ হল দুটি যথাঃ ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। এই দুটি ঈদ ব্যতিরেকে মুসলিমদের তৃতীয় কোন ঈদ নেই বা ঈদের নাম দিয়ে কোন উৎসব পালন করার সুযোগ নেই। অথচ আমাদের মুসলিম সমাজে বর্তমানে ঈদে মিলাদুন নবী বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম উৎসব নামে তৃতীয় একটি ঈদের প্রচল হয়েছে, যাকে সকল ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ বলে জোরেশোরে প্রচার চালান হচ্ছে। যা এক দিকে যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসের সুস্পষ্ট বিরোধী অপর পক্ষে সলফে সালেহিদের যামানায় ইহার অস্থিত্ব খুজে পাওয়া যায় না।

অনুরূপভাবে আমাদের সমাজে ঘটা করে ঈদের মত সমান গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয় তথাকথিত পহেলা বৈশাখ, ইংরেজি নববর্ষ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস, এপ্রিল ফুল, বড় দিনসহ অগণিত উৎসব। মুসলিমদের সকল কাজই ইবাদাত কিন্তু কেউ কি একবারও চিন্তা করে দেখেছেন, এই উৎসব দ্বারা কি পরিমান আল্লাহ ইবাদত অর্জিত হবে। এমনও শ্লোগান শুনা যায় যে, ধর্ম যার যার আর উৎসব সকলেন। এই শ্লোগানকে পুজি করে অনেক মুসলিমকে দূর্গা পুজাসহ হিন্দুদের বড় বড় পুজায় অংশ গ্রহন করতে দেখা যায়। যা এক জন মুসলীমকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। তাই এই হিন্দু ও খৃষ্টানদের মত বিধর্মীদের থেকে আমদানিকৃত সংষ্কৃতিতে ইসলাম ও মুসলমানের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (আবূদাউদ হাদীস নং ৩৫১২, সনদ-সহীহ, আলবানী।

ইসলাম স্বীকৃত দুটি ঈদ ছাড়া অন্য কোন ঈদ বা উৎসব পালন করা, তাতে অংশগ্রহণ করা বা সে উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ইসলামের সরল-সোজা, সুন্দর ও আলোকময় পথ ধরে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!

অপর পক্ষে আমরা যারা এই দুটি কে ঈদ হিসাবে স্বীকার করি ও পালন করি তারাও এই উৎসব পালন করতে গিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামের সীমা লংঘন করছি। এমন অনেক আছেন সাওম বা সালাতের ধারেও নেই কিন্তু ইফতারিতে হরেক রকম সুস্বাদু খাবার খান আর ঈদে দামি দামি পোশাক পরেন। ঈদের দিন ব্যয় করে নাটক, সিনেমা, বিদেশী সিরিয়াল দেখে। আবার অনেকে ঈদের দিন প্রতিবেশীদের সাথে সৌহদ্যপূর্ণ ব্যবহারের পরিবর্তে পরিবারসহ পার্কে বা বিনোদন কেন্দ্রে সমায় কাটানোর নতুন ফ্যাসন বাহির করছেন। এভাবে ইসলামের সৌন্দর্যময় ঈদের উদ্দেশ্য থেকে তারা যোজর বিয়োজন দুরে থাকছেন। সূরা বাকারার যে আয়াতে (১৮৫) সম্পূর্ণ মাসটিতে রোযা রাখা অপরিহার্য  সে আয়াতের শেষের দিকে ঈদের উদ্দেশ্য কি তা আল্লাহ তা’আলা নিন্মোক্ত ভাবে প্রকাশ করেছেনঃ

﴿وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾

”আর যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার জন্যে তোমরা আল্লাহর মমত্ব প্রকাশ কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা হও ।” (সূরা বাকারা ২:১৮৫)। 

এই আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ঈদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, এক মাস অবধি সিয়ামের মাধ্যমে তিনি আমাদের যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার প্রদত্ত এই মহৎ নেয়ামতের প্রতি শুকরিয়া আদায় করা। এবং আল্লাহর বড়ত্ব মমত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা।

ঈদের দিনর কিছু বিধানঃ

১। ঈদের দিন গোসল করা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও ভাল পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাবঃ 

সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব বাঃ বলেন, ঈদুল ফিতরের দিন তিনটি কাজ করা সুন্নত। ইদগাহের দিকে পায়ে হেঁটে যাওয়া। বের হওয়ার পূর্বে কিছু আহার করা ও গোসল করা। (ফারায়াবী, আলবানী একে সহিহ বলেছেন)।

আল্লামা ইবনু কাইয়িম (রহ.) তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ যাদুল মা’আদে লিখেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন উত্তম পোষাক পরিধান করতেন। তাঁর এক জোড়া পোশাক ছিল যা দু’ঈদ ও জুমু’আর দিন পরিধান করতেন। অন্য এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দার উপর তার প্রদত্ত নি’আমাতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন। (সহীহ আল জামে)

২। ঈদের দিনে বৈধ আনন্দ করা যায়।

উবাইদ ইবন ইসমায়ীল (র:) …… আয়িশা (রা:) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, (একদিন আমার ঘরে) আবু বকর (রা:) এলেন তখন আমার নিকট আনসার দু’টি মেয়ে বু’আস যুদ্ধের দিন আনসারীগণ পরস্পর যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বলেন, তারা কোন পেশাগত গায়িকা ছিল না। আবু বকর (রা:) বললেন, রাসূলুল্লাহ সা:- এর ঘরে শয়তানী বাদ্যযন্ত্র। আর এটি ছিল ঈদের দিন। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন: হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতির জন্যই আনন্দ উৎসব রয়েছে আর এ হলো আমাদের আনন্দ। (সহিহ বুখারী দু ঈদ অধ্যায়, হাদিস নম্বর ৯০৪ প্রকাশনিঃ ইসলামি ফাউন্ডেশন, মিসকাত ১৪৩২, মুসলিম ৮৯২, নাসায়ী ১৫৯৩, ইবনু হিব্বান ৫৮৭৬।

আহমদ ইবনে ঈসা (রা:)…… আয়িশা (রা:) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী নবী করীম সা: আমার কাছে এলেন তখন আমার নিকট দু’টি মেয়ে বৃ’আস যুদ্ধ সংক্রান্ত কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবু বকর (রা:) এলেন, তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র1 (দফ্) বাজান হচ্ছে নবী করীম সা:  -এর কাছে। তখন রাসূলুল্লাহ সা: তার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। তারপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম এবং তারা বের হয়ে গেল। আর ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢালের দ্বারা খেলা করত। আমি নিজে (একবার) রাসূলাল্লাহ সা: -এর কছে আরয করেছিলাম অথবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তুমি কি তাদের খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ, তারপর তিনি আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তার গালের সাথে লাগান। তিনি তাদের বললেন, তোমরা যা করতে ছিলে তা করতে থাক, হে বণু আরফিদা। পরিশেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তথন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি দেখা শেষ হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তা হলে চলে যাও। (সহিহ বুখারী সাওম  অধ্যায়, হাদিস নম্বর ৯০২ প্রকাশনিঃ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

 

৩। দু’ ঈদের দিন রোজা রাখা হারামঃ 

‘আব্দুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র) ….বনূ আযহারের আযাদকৃত গোলাম আবূ ‘উবায়দ (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ,আমি একবার ঈদে ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) -এর সঙ্গে ছিলাম , তখন তিনি বললেন , রাসূলুল্লাহ (সা) এই দুই দিনে সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন । ( ঈদুল ফিতরের দিন ) যে দিন তোমরা তোমাদের সাওম ছেড়ে দাও । আরেক দিন , যেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানীর গোশত খাও । (সহিহ বুখারী সাওম  অধ্যায়, হাদিস নম্বর ১৮৬৬ প্রকাশনিঃ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।,

হাজ্জাজ ইবন মিনহাল (র)…..আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, যিনি নবী করীম (সা) এর সঙ্গে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন , তিনি বলেন , আমি নবী করীম (সা) থেকে চারটি কথা শুনেছি, যা আমার খুব ভাল লেগেছে ।তিনি বলেছেন , স্বামী অথবা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ ) পুরুষ ছাড়া  কোন নারী যেন দুই দিনের দূরত্বের সফর না করে । ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিনে সাওম নেই ।ফজরের সারতের পরে সূর্যোদয় এবং ‘আসরের সালাতের পরে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন সালাত নেই । মসজিদে হারাম , মসজিদে আকসা ও আমার এই মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে কেউ যেন সফর না করে ।  (সহিহ বুখারী সিয়াম অধ্যায়, হাদিস নম্বর ১৮৭১ প্রকাশনিঃ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

আবু হুরায়রারা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদুল আজহার দিন। (মুসলিম)

বিঃ দ্রঃ ইহা ছাড়াও সহিহ বুখারী সাওম  অধ্যায়, হাদিস নম্বর ১৮৬৭, ১৮৬৮, ১৮৬৯, ১৮৭০ -এ ঈদের দিন সাওম রাখতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।


৪। ঈদের সময় তাকবির বলার বিধানঃ

দু’ ঈদের রাত আরম্ভ হওয়ার পর থেকে ঈদের নামাজ পর্যন্ত উচ্চ স্বরে তাকবির বলা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে পৌঁছে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকবীর বলতেন। যখন নামাজ আদায় করতেন, তার পর আর তাকবীর বলতেন না। (আবী শাইরাহ, আলবানী একে সহিহ বলেছেন)।

ঈদের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাকবীর পড়তে পড়তে যেতেন সেটি তাকবীরটি হলঃ

**اَللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَللهِ الْحَمْدُ*** اَللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ**

উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ অতিমহান, তিনি ছাড়া সত্যিকার আর কোন মা’বুদ নেই। আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান আর সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁরই জন্য।

মাসায়েলঃ  তাকবীর প্রকাশ্যে ও উচ্চস্বরে পড়া সুন্নাত।  ঈদগাহের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে তাকবীর পাঠ শুরু করবে এবং ইমাম সাহেব সালাত শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতে থাকবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ঈদুল ফিত্‌রের তাকবীর শুরু করবে ঈদের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকেই। ঈদের সলাত শেষ হওয়া পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর পাঠ করতেন।

ঈদের দিন ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া এবং বের হওয়ার আগে কিছু খেয়ে নেওয়াঃ

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম (র:) …… আনাস ইবনে মালিক (রা:) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক রিওয়াতে আনাস (রা:) নবী করীম সা: থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যক খেতেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৯০৫ অনুবাদ প্রকাশনি ইসলামি ফাউন্ডেশন, ইবনে খুযায়মাহ ১৪২৯৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬১৫২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১০৫, মুসনাদে বাযযার ৭৪৫৭)।

ইসমাঈল ইবনু মূসা আল-ফাযারী (রহঃ) ….. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সুন্নাত হ’ল ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং ঈদুল ফিতরে বের হওয়ার আগে কিছু খেয়ে নেওয়া। (ইবনু মাজাহ ১২৯৪১২৯৭, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৫৩০)

ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান। অধিকাংশ আলিম এই হাদীস অনুসারে আমল করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া এবং উযর ছাড়া কোন বাহনে আরোহণ না করা পছন্দনীয় বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।


৬। ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিবঃ 

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ (٢) 

অর্থঃ আপনি আপনার প্রভুর জন্য নামাজ পড়েন এবং কুরবানি করুন। (সূরা কাউসার)

মাসায়েলঃ ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন ঈদের সলাত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ একই মত পোষণ করেন।

হাজ্জাজ ইবন মিনহাল (র:)……বারাআ (রা:) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী করীম সা: কে খুতবা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন: আমাদের আজকের এ দিনে আমরা যে কাজ প্রথম শুরু করব, তা হল সালাত আদায় করা। এরপর ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। তাই যে এরুপ করে সে আমাদের রীতিনীতি সঠিকভাবে পালন করল। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৯০৩, অনুবাদ ও প্রকাশনিঃ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

ক। ঈদের সালাত দু রাকআতঃ

সুলাইমান ইবন হারব (র:)  ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) ঈদুল ফিতরে দু রাকাআত সালাত আদায় করেন। এর আগে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি। তারপর বিলাল(রা:) কে সঙ্গে নিয়ে মহিলাগনের কাছে এলেন এবং সাদাকা প্রদানের জন্য তাদের নির্দেশ দিলেন। তখন তারা দিতে লাগলেন। কেউ দিলেন আংটি, আবার কেউ দিলেন গলার হার। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৯১৩, অনুবাদ ও প্রকাশনিঃ ইসলামি ফাউন্ডেশন)

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) ঈদুল ফিতরে দু রাকাআত সালাত আদায় করেছেন। এর পূর্বে ও পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন সালাত পড়েননি। (মিসকাত ১৪৩০ হাদিসের মান  সহীহ, সহিহ বুখারী ৯৬৪, সহিহ মুসলীম ৮৮৪, আবূ দাঊদ ১১৫৯, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৬১৭, ইরওয়া ৬৩১।

উমার রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, জুমু’আর সলাত দু’ রাক’আত, ঈদুল ফিতরের সলাত দু’ রাক’আত, ঈদুল আজহার সলাত দু’ রাক’আত এবং সফর অবস্থায় (চার রাক’আত বিশিষ্ট ফরয) সলাত দুই রাক’আত। (নাসাঈ)

খ। ঈদের সালাত আদায় করার পরে খুতবা দিতেনঃ

ইবরাহীম ইবন মুনযির (র:) আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা): ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন সালাত আদায় করতেন। আর সালাত শেষে খুতবা দিতেন।  (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৯০৯, অনুবাদ ও প্রকাশনিঃ ইসলামি ফাউন্ডেশন এবং আরোও দেখুন সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৯১০, ৯১১ ও ৯১২)

আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ) দু ঈদের সলাত  খুতরার পূর্বে্‌ই আদায় করতেন। (মিসকাত ১৪২৮ হাদিসের মান সহীহ : বুখারী ৯৬৩, মুসলিম ৮৮৮, নাসায়ী ১৫৬৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫৬৭৩, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১১১০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬২০১, ইরওয়া ৬৪৫।

মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ)ইবন উমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা খুৎবার পূর্বে ঈদের সালাত আদায় করতেন, পরে খুতবা দিতেন।  (ইবনু মাজাহ ১২৭৬, বুখারি ও মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৫৩১)

আবু সায়ীদ খুদরী রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সা: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করে সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল সালাত। আর সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তারা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাদের নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন তবে তা জারি করতেন। তারপর তিনি ফিরে যেতেন। আবু সায়ীদ রা: বলেন, লোকেরা বরাবর এই নিয়ম অনুসরন করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদীনার আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যে আমি তার সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদগাহে পৌছলাম তখন সেখানে  একটি মিম্বর দেখতে পেলাম, সেটি কাসীর ইবন সালত (রা:) তৈরী করেছিলেন। মারওয়ান সালাত আদায়ের আগেই এর উপর আরোহণ করতে উদ্যত হলেন। আমি তার কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু কাপড় ছাড়িয়ে খুতবা দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহর কসম! তোমরা (রাসুলের সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ। সে বলল, হে আবু সায়ীদ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গিয়েছে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানি না। সে তখন বলল, লোকজন সালাতের পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই আমি খুতবা সালাতের আগেই দিয়েছি। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৯০৮, অনুবাদ ও প্রকাশনিঃ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

উসমান (র:) …… বারাআ ইবনে আযিব (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সা: ঈদুল আযহার দিন সালাতের পর আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করেন। খুতবায় বলেন: যে আমাদের মত সালাত আদায় করল এবং আমাদের মত কুরবানী করল, সে কুরবানীর রীতিনীতি যথাযথ পালন করল। আর যে সালাতের আগে কুরবানী করল তা সালাতের আগে হয়ে গেল, কিন্তু এতে তার কুরবানী হবে না। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৯০৩ (আংশিক), অনুবাদ ও প্রকাশনিঃ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

মাসায়েলঃ হানাফী, মালেকী, শাফে‘ঈ ও হাম্বলী চার মাযহাবের ঐকমত্যে ঈদের নামাযের পর দুটি খুৎবা পাঠ করা সুন্নত। ইমাম হাযম রহঃ এ ব্যাপারে ইজমা বর্ণনা করেছেন।

গ। ঈদের সালাত আযান ও ইকামত নেইঃ

জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে দু’ঈদের সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) একবার নয়, দু’বার নয়, আযান ও ইক্বামাত ছাড়া (বহুবার) আদায় করেছি। (মিসকাত ১৪২৭, সহিহ মুসলিম ৮৮৭, আবূ দাঊদ ১১৪৮, আত্ তিরমিযী ৫৩২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫৬৫৬, আহমাদ ২০৮৪৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬১৬৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১০০, ইবনু হিব্বান ২৮১৯।

ঘ। সালাতুল ঈদের কিরআতঃ

কুতায়বা রহঃ নুমান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদ ও জুম্মার সালাতে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى এবং هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ তিলাওয়াত করতেন। অনেক সময় ঈদ ও জুমুআহ একই দিনে ঘটত, তখনও তিনি ঐ দুই সূরাই তিলাওয়াত করতেন। ( ইবনু মাজাহ ১১১৯, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৫৩৩)।

ইসহাক ইবনু মূসা আল-আনসারী (রহঃ) …… উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু উতবা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু আবূ ওয়াকীদ আল-লায়সী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে জিজ্ঞাসা করেছিলামঃ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তিলাওয়াত করতেন? তিনি বললেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ق والقرن المجيد এবং واقتربت الساعة وانشق القمر তিলাওয়াত করতেন। (ইবনু মাজাহ ১২৮২, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৫৩৪)। ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান-সহীহ।

ঙ। দুই ঈদের সালাতের মাঝের তাকবীরসমূহের বিধানঃ

ঈদের সলাতে তাকবীরে তাহরীমা বাধার পর “আল্লাহু আকবার বলে অতিরিক্ত কিছু তাকবীর দেয়া হয়, সে তাকবীরের সংখ্যা সম্পর্কে বেশ কিছু মতভেদ আছে। তাদের মধ্যে দুটি মত প্রসিদ্ধ।

প্রতম মত হলঃ হানাফী মাযহাবের ইমাম আবূ হানিফার (রহ.) মত হল ঈদের সলাতে তাকবীরে তাহরীমা বাধার পর “আল্লাহু আকবার বলে ১ম রাক’আতে অতিরিক্ত ০৩ তাকবীর ও ২য় রাক’আতে অতিরিক্ত ০৩ তাকবীর, মোট অতিরিক্ত ০৬ তাকবীর দিতে হবে।

তাদের দলীলঃ

 ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতে ৪ তাকবীরে ঈদের নামাযের স্বপক্ষে একটি হাদীস পাওয়া যায়। একদল ফকীহ এ ৪ তাকবীরকে প্রথম রাকাতে তাকবীরে উলার সাথে ৩ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর সহ ৩ তাকবীর-এভাবে অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এটাকে দুর্বল হাদীস বলেছেন।

দ্বিতীয় মত হলঃ তাকবীরে তাহরীমা বাধার পর “আল্লাহু আকবার বলে প্রথম রাক’আতে অতিরিক্ত ০৭ তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক’আতে অতিরিক্ত ০৫ তাকবীর, মোট অতিরিক্ত ১২ তাকবীর দিতে হবে।

তাদের দলীলঃ

মুসলিম ইবনু আমর ও আবূ আমর আল-হায্য আল-মাদীনী (রহঃ).. আমর ইবনু আওফ আল-মুযানী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতুল ঈদে তাকবীর পাঠ করতেন প্রথমে রাকআত কিরআতের পূর্বে সাত তাকবীর; দ্বিতীয় রাকআতে কিরআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর। (ইবনু মাজাহ ১২৭৯, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৫৩৬।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে ১ম রাকআতে (অতিরিক্ত) ৭ টি তাকবীর ও ২য় রাকআতে (অতিরিক্ত) ৫টি তাকবীর পাঠ করতেন। (আবূ দাউদ, হা: ১০১৮)

হাদীসে আরো এসেছে  (প্রখ্যাত সাহাবী) ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু ঈদের সালাতে অতিরিক্ত) ১২ তাকবীর বলেছেন। প্রথম রাকআতে ৭টি এবং দ্বিতীয় রাকআতে ৫টি। (বায়হাকী ৩য় খণ্ড)।

তাই অধিকাংশ আলেম ১২ তাকবীরের মাসআলাকে বেশী শক্তিশালী বলেছেন। তাছাড়া এ মাসআলার উপর আমল করেছেন। হানাফি মাযহাবের ইমাম আবূ হানীফার অনুসারী তার দুই ছাত্র ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.), মালিকী, শাফিঈ’, হাম্বলী মাযহাব ও আহলে হাদীসের লোকেরা এবং মাক্কা ও মাদীনার ইমামগণ এভাবে অতিরিক্ত ১২ তাকবীরে ঈদের সলাত আদায় করে থাকেন। (রাদ্দুল মুহতার ৬৬৪ পৃঃ)

তৃতীয় মতটি হলঃ ইমাম মালিক ইবনু আনাস, শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক (রহঃ) এর বক্তব্যও এই। ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ সালাতুল ঈদে তাকবীরের সংখ্যা হল নয়। প্রথম রাকআতে কিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর, দ্বিতীয় রাকআতে প্রথমে কিরআত পরে রুকূ-এর তাকবীরসহ চার তাকবীর। একাধিক সাহাবী থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত বিদ্যামান। এ হ’ল কূফাবাসী আলিম ও ফকীহ-এর অভিমত। সুফইয়ান সাওরী (রহঃ)-ও এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। (তিরমিজির টিকা থেকে)

মাসায়েলঃ হানাফী ও মালেকী মাযহাবে বাড়তি তাকবীর বলা ওয়াজিব। এটা ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে। পক্ষান্তরে অন্যান্য মাযহাবে বাড়তি তাকবীর বলা সুন্নাত। এবং এই বাড়তি তাকবীর বলার সময় প্রত্যেক তাকবীরেই কি হাত উঠাতে হবে। কারন দ্বিতীয় খলীফা উমার রাদিআল্লাহু আনহু জানাযা ও ঈদের সলাতে প্রত্যেক তাকবীরে দু’হাত তুলতেন। (বায়হাকী)।

চ। ঈদের সলাত আদায়ের পদ্ধতিঃ


প্রথম পদ্ধতিঃ 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে ঈদগাহে যাওয়ার সময় একটি লাঠি বা বল্লম বয়ে নিয়ে যাওয়া হত এবং সলাত শুরুর আগেই সেটা তার সমনে ‘সুতরা’ হিসেবে মাটিতে গেড়ে দেয়া হত। (বুখারী

পৃঃ ১৩৩)

অতঃপর তিনি (নিয়ত করে) ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাঁধতেন। এরপর তিনি ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা………” পড়তেন। (ইবনে খুযাইমা)

তারপর সূরা ফাতিহা পড়ার পূর্বেই তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একের পর এক মোট ৭ বার তাকবীর দিতেন (অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলতেন)। প্রতি দু’ তাকবীরের মাঝখানে তিনি একটুখানি চুপ থাকতেন। ইবনে উমার রাদিআল্লাহু আনহু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সুন্নাত অনুসরণের অধিক পাবন্দি হওয়ার কারণে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে দু’ হাত তুলতেন এবং প্রত্যেক তাকবীরের পর আবার হাত বেঁধে ফেলতেন। (বায়হাকী)

এভাবে ৭টি তাকবীর বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা ফাতিহা পড়তেন। এরপর তিনি আরেকটি সুরা মিলিয়ে পড়তেন। এরপর তিনি রুকুও সিজদা করতেন।
এভাবে প্রথম রাক’আত শেষ করার পর সাজদাহ থেকে উঠে (সূরা ফাতিহা শুরুর পূর্বেই) তিনি (২য় রাকাতে) পরপর ৫টি তাকবীর দিতেন। তারপর সূরা ফাতিহা পড়ে আরেকটি সূরা পড়তেন। এরপর তিনি রুকু ও সাজদাহ করে দু’ রাক’আত ঈদের সলাত শেষ করতেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি একটি তীরের উপর ভর দিয়ে যমীনে দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। তখন ঈদগাহে কোন মিম্বর নেয়া হত না। তারপর দু’আ করে শেষ করে দিতেন। (যাদুল মা’আত ১ম খণ্ড)।

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ দ্বিতীয় নিয়মটি প্রথমটির মতই। শুধু পার্থক্য হল ১ম রাক’আতে তাকবীরে তাহরীমার পর অতিরিক্ত ৩ তাকবীর বলবে এবং এর প্রথম দু’ তাকবীরে হাত ছেড়ে দেবে এবং শেষ তাকবীরে হাত বেঁধে ফেলবে।
আর দ্বিতীয় রাক’আতে সূরা শেষে রুকুর পূর্বে অতিরিক্ত ৩ তাকবীর দেবে এবং প্রত্যেক তাকবীরেই হাত ছেড়ে দেয়। (ঈদের সালাতে পদ্দতি দুটি, ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব থেকে প্রচবরিত অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলামরের লেখা প্রশ্নোত্তরে সিয়াম থেকে সংগৃহিত)।

মাসায়েলঃ  ঈদের নামাযের কোন ক্বাযা নেই। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। ইবনে তাইমিয়া ও ইবনে উসাইমিন (রহঃ) ।এ মতটি গ্রহন করছেন। তবে মালেকী, শাফে‘ঈ ও হাম্বলী মাযহাবের হুবহু দুই রাকাত উল্লেখিত তাকবীরসমূহ সহ ক্বাযা  করা যাবে।

 মাসায়েলঃ কোনো মুসল্লী বিলম্বে এসে অতিরিক্ত তাকবীরসমূহ ছাড়া ঈদের নামাযে শরীক হয়, তবে ছুটে যাওয়া ঐ তাকবীরসমূহের কাযা করবে না। এটাই শাফে‘ঈ এবং হাম্বলীদের মাযহাব মত এবং ইবনে বায এবং ইবনে উসাইমিন রহঃ এ মতটি পছন্দ করেছেন।

ছ। ঈদের পূর্বে বা পরে কোন সালাত নেইঃ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) ঈদুল ফিতরে দু রাকাআত সালাত আদায় করেছেন। এর আগে পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন সালাত পড়েননি। (মিসকাত ১৪৩০ হাদিসের মান  সহীহ, সহিহ বুখারী ৯৬৪, সহিহ মুসলীম ৮৮৪, আবূ দাঊদ ১১৫৯, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৬১৭, ইরওয়া ৬৩১।

মাহমূদ ইবনু গায়লান (রহঃ) …… ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ঈদুল ফিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হলেন এবং দু’রাকআত সালাতুল ঈদ আদায় করলেন। এর আগে বা পরে কোন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন না। (ইবনু মাজাহ ১২৯১, বুখারি ও মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৫৩৭)

জ। ঈদের সলাতের স্থানঃ

ইবরাহীম ইবন মুনযিন (র:)……. ইবন ওমর(রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) যখন সকাল বেলায় ঈদগাহে যেতেন, তথন তার সামনে বর্শা বহন করা হতো এবং তার সামনে ঈদগাহে তা স্থাপন করা হতো এবং একে সামনে রেখে তিনি সালাত আদায় করতেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৯২২ অনুবাদ ও প্রকাশনায় ইসলামী ফাউন্ডেশন)।

যাদুল মা’আদ কিতাবে ইবনুল কায়্যিম (রহ.) লিখেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজীবন ঈদের সলাত ঈদগাহে আদায় করেছেন। হাদীসে আছে যে, আবূ সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সলাত আদায়ের জন্য ঈদগাহে যেতেন। (বুখারী)

আবূ হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, একবার বৃষ্টি হওয়ায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে নিয়ে মাসজিদে ঈদের সলাত আদায় করেছিলেন। (আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ মিশকাত, অবশ্য নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) এটাকে দুর্বল হাদীস বলেছেন)

ঝ। ঈদের সালাতে মহিলাদের অংশ গ্রহন সম্পর্কেঃ

মুহাম্মদ (র:)..  উম্মে আতিয়্যা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈদের দিন আমাদের বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হত। এমন কি আমরা কুমারী মেয়েদেরকেও অন্দর মহর থেকে বের করতাম এবং মাসিক মাসিক চলাকালীন মেয়েদেরকেও। তারা পুরুষদের পিছনে থাকতো এবং তাদের তাকবীরের সাথে তাকবীর বলতো এবং তাদের দু’আর সাথে দু’আ করত-তারা আশা করত সে দিনের বরকত এবং পবিত্রতা। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৯২০ অনুবাদ ও প্রকাশনায় ইসলামী ফাউন্ডেশন)।

মুসাদ্দাস (র.) ……. ইবন আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) এর সংগে কখনো ঈদে উপস্থিত হয়েছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। যদি তার কাছে আমার মর্যাদা না থাকত তা হলে কম বয়সী হওয়ার কারণে আমি ঈদে উপস্থিত হতে পারতাম না। তিনি বের হয়ে কাসীর ইবন সালতের গৃহের কাছে স্থাপিত নিশানার কাছে এলেন এবং সালাত আদায় করলেন। এরপর খুতবা দিলেন। তারপর তিনি মহিলাগনের নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তার সংঙ্গে বিলাল রা. ছিলেন। তিনি তখন মহিলাগনের উপদেশ দিলেন, নসীহত করলেন এবং দান সাদাকা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমি তখন মহিলাগণের নিজ নিজ হাত বাড়িয়ে বিলাল রা. এর কাপড়ে দান সামগ্রী ফেলতে দেখলাম। এরপর তিনি এবং বিলাল রা. নিজ বাড়ীর দিকে চলে গেলেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৯২৬ অনুবাদ ও প্রকাশনায় ইসলামী ফাউন্ডেশন)।

আহামদ ইবনু মানী রহঃ …..উম্মে আতিয়্যা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালিকা, তরুনী, গৃহিণী, যুবতী সকল মহিলাকেই সালাতুল ঈদে বের হওয়ার জন্য বলতেন। তবে ঋতুবতী মহিলারা সালাতের স্থান থেকে দুরে থাকতের এবং মুসলিমের সাথে দু’আয় শরীক হতেন। জনৈক মহিলা একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, যদি কারো চাঁদর না থাকে তবে সে কিভাবে বের হবে। তিনি বললেনঃ তার কোন ভগ্নি তাকে একটি চাঁদর ধার দিয়ে দিবে। (ইবনু মাজাহ ১৩০৭, ১৩০৮, বুখারি ও মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৫৩৯)।

ঞ।  ঈদের দিন প্রথমে সালাত আদায় করতে হবে এরপর কুরবানী করবেঃ

বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কুরবানীর ঈদের দিন আমাদের সামনে এক ভাষণ প্রদান করেন। তিনি বলেন, এ ঈদের দিন প্রথমে আমাদেরকে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে হবে। এরপর আমরা বাড়ী গিয়ে কুরবানী করব। যে ব্যক্তি এভাবে কাজ করল সে আমাদের পথে চলল। আর যে ব্যক্তি আমাদের সলাত আদায় করার পূর্বে কুরবানী করল সে তার পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি যাবাহ করে নিশ্চয়ই তা গোশত ভক্ষণের ব্যবস্থা করল তা কুরবানীর কিছুই নয়। (মিসকাত ১৪৩৫ মান  সহীহ : বুখারী ৯৬৮, মুসলিম ১৯৬১, আহমাদ ১৮৬৯৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯০৫৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১১৪, সহীহ আল জামি‘ ২০১৯।

বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের আগে যবেহ করল সে নিজের জন্যই যবেহ করল। আর যে সালাত আদায়ের পর যবেহ করর তার  কুরবানী পরিপূর্ণ হলো। সে মুসলিমদের নিয়ম অনুসরণ করল। (মিসকাত ১৪৩৭ মান সহীহ : বুখারী ৫৫৫৬, মুসলিম ১৯৬১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১১৩, সহীহ আল জামি‘ ৬২৪২)।

ট। ঈদের সলাত শুরু ও শেষ সময়ঃ

হাদীসে আছে, জুনদুব রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ঈদুল ফিতরের সলাত আদায় করতেন সূর্য যখন দু’ বর্শা পরিমাণ উপরে উঠত এবং ঈদুল আয্‌হা আদায় করতেন সূর্য যখন এক বর্শা পরিমাণ উপরে উঠত। (ফিকহুস সুন্নাহ)।

মাসায়েলঃ  ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেছেন, নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের সলাত একটু দেরী করে আদায় করতেন। আর ঈদুল আযহার সলাত প্রথম ওয়াক্তে তাড়াতাড়ি আদায় করতেন। (যাদুল মা’আদ)

৭। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ঃ সাহাবায়ে কিরাম ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময়ে একে অপরকে বলতেনঃ

تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ

“আল্লহ তা’আলা আমাদের ও আপনার ভাল কাজ কবূল করুন।” (ফতহুল বারী)।

৮।  ঈদের রাতে কিছু বিদআতঃ

উভয় ঈদের রাতে বিশেষ নামায (যইফ জামে ৫৩৫৮, ৫৩৬১)।

এই রাত্রি জেগে ইবাদত বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ৩৩২পৃ:) 

ঈদুল ফিতরের রাতের ১০০ রাকআত এবং ঈদুল আযহার রাতের ২ রাকআত নামাযও বিদআত। ((মু’জামুল বিদা ৩৪৪পৃ:)

যে হাদীসে বলা হয়েছে যে, “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও আযহার রাত্রি জাগরণ (ইবাদত) করবে, তার হৃদয় সেদিন মারা যাবে না, যেদিন সমস্ত হৃদয় মারা যাবে।” (ত্বাবারানী, মু’জাম)  সে হাদীসটি জাল ও মনগড়া হাদীস। (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৫২০, যইফ জামে ৫৩৬১নং দ্র:)। (স্বলাতে মুবাশ্শির, আবদুল হামিদ ফাইজি থেকে সংকলিত)

Leave a comment