হজ্জ সংশ্লিষ্ট দোয়াসমূহ

হজ্জ সংশ্লিষ্ট দোয়াসমূহ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

হজ্জ সংশ্লিষ্ট বেশী দোয়া নেই। তবে যে কতগুলো দোয়া আছে তা মুল আলোচনায় সময় উল্লেখ করেছি। কিন্তু তা এলোমেলভাবে ছড়ান ছিটান আছে। পাঠকদের সুবিধান জন্য তাই সকল দোয়াগুলো এখানে একত্র করে তুল ধরছি।

১। সফর সংশ্লিষ্ট দোয়াগুলো যথাসময় পাঠ করাঃ সফরের শুরু থেকে সফর শেষ করা পর্যান্ত বহু মাসনুন দোয়া সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। সফর শুরুর আগে এই সকল দোয়া মুখন্ত করা চেষ্টা করি এবং সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যান্ত এই সুন্নাহ সম্মত দোয়াগুলো পাঠ করার চেষ্টা করি।  তবে সময় সময় দোয়াগুলো পাঠ করার সময় অর্থের দিকে খেয়াল রাখি। কি করছি আর বলছি তা যদি নিজেই না যানি তাহলে ভারী অন্যায় হবে।

ক। বাড়ি থেকে বের হওয়ার দোয়াঃ

বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিম্মের দোয়া পড়তে হয়ঃ

দোয়াঃ-১

«بِسْمِ اللَّهِ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ، وَلَاَ حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ».

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

অর্থঃ আল্লাহর নামে, আল্লাহর উপর ভরসা করে (বের হচ্ছি)। আল্লাহ ছাড়া কোন উপায় ও শক্তি নাই।

দোয়াঃ-২

 «اللّٰـهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ، أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ، أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ، أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ».

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা আন আদ্বিল্লা, আও উদ্বাল্লা, আও আযিল্লা, আও উযাল্লা, আও আযলিমা, আও উযলামা, আও আজহালা, আও ইয়ুজহালা ‘আলাইয়্যা।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই যেন নিজেকে বা অন্যকে পথভ্রষ্ট না করি, অথবা অন্যের দ্বারা পথভ্রষ্ট না হই; আমার নিজের বা অন্যের পদস্খলন না করি, অথবা আমায় যেন পদস্খলন করানো না হয়; আমি যেন নিজের বা অন্যের উপর যুলম না করি অথবা আমার প্রতি যুলম না করা হয়; আমি যেন নিজে মুর্খতা না করি, অথবা আমার উপর মূর্খতা করা না হয়।

দলীলঃ

১. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলবেঃ

«بِسْمِ اللَّهِ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ، وَلَاَ حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ».

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

অর্থঃ আল্লাহর নামে, আল্লাহর উপর ভরসা করে (বের হচ্ছি)। আল্লাহ ছাড়া কোন উপায় ও শক্তি নাই। তখন তাকে বলা হয়, তুমি হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছো, রক্ষা পেয়েছো ও নিরাপত্তা লাভ করেছো। সুতরাং শয়তানরা তার থেকে দূর হয়ে যায় এবং অন্য এক শয়তান বলে, তুমি ঐ ব্যক্তিকে কি করতে পারবে যাকে পথ দেখানো হয়েছে, নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে এবং রক্ষা করা হয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ ৫০৯৫)।

২. উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর হতে বাইরে রাওয়ানা হতেন তখন বলতেন,

 «اللّٰـهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ، أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ، أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ، أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ».

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা আন আদ্বিল্লা, আও উদ্বাল্লা, আও আযিল্লা, আও উযাল্লা, আও আযলিমা, আও উযলামা, আও আজহালা, আও ইয়ুজহালা ‘আলাইয়্যা।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই যেন নিজেকে বা অন্যকে পথভ্রষ্ট না করি, অথবা অন্যের দ্বারা পথভ্রষ্ট না হই; আমার নিজের বা অন্যের পদস্খলন না করি, অথবা আমায় যেন পদস্খলন করানো না হয়; আমি যেন নিজের বা অন্যের উপর যুলম না করি অথবা আমার প্রতি যুলম না করা হয়; আমি যেন নিজে মুর্খতা না করি, অথবা আমার উপর মূর্খতা করা না হয়। (সুনানে তিরমিজ ৩৪২৭)

খ। সফরে বের হলে যে দোয়া পড়তে হয়ঃ

আবুয যুবাইর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। ‘আলী-আযদী (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন, ইবনু ‘উমার তাকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বের হওয়ার সময় উটের পিঠে সোজা হয়ে বসে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে এ আয়াত পড়তেনঃ

سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا، وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ، وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ

অর্থঃ ‘‘মহান পবিত্র তিনি, যিনি একে আমাদের অনুগত বানিয়েছেন, তা না হলে একে বশ করতে ‘আমরা সক্ষম ছিলাম না। নিশ্চয়ই আমাদেরকে আমাদের রবের নিকট ফিরে যেতে হবে।’’(সূরা –যুখরুফ ১৩-১৪) অতঃপর এ দু‘আ পাঠ করতেনঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى، وَمِنِ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى، اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا، اللَّهُمَّ اطْوِ لَنَا الْبُعْدَ، اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ، وَالْخَلِيفَةُ فِي الْأَهْلِ وَالْمَالِ

তিনি যখন ফিরে আসতেন, এ দু‘আই পাঠ করতেন, শুধু এটুকু বাড়িয়ে বলতেনঃ

* آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ*

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সেনাবাহিনী কোনো উঁচু স্থানে উঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন এবং নীচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ বলতেন। অতঃপর এভাবেই (শুকরিয়া) সালাতে নির্ধারণ হয়। সুনানে আবু দাইদ ২৫৯৯)

** আলী ইবনু রবী‘আহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখলাম, ‘আলী (রাঃ)-এর কাছে আরোহণের একটি পশু আনা হলে তিনি এর পা-দানিতে পা রাখতেই বললেন, ‘বিসমিল্লাহ’ এবং এর পিঠে চড়ে সোজা হয়ে বসে বললেন, আল-হামদুলিল্লাহ।’’ অতঃপর তিনি এ আয়াত পড়লেন,‘‘মহান পবিত্র তিনি, যিনি একে আমাদের অনুগত বানিয়েছেন, তা না হলে একে বশ করতে ‘আমরা সক্ষম ছিলাম না। নিশ্চয়ই আমাদেরকে আমাদের রবের নিকট ফিরে যেতে হবে।’’ (সূরা যুখরুক ১৩-১৪)। পুনরায় তিনি তিনবার ‘আলহামদু লিল্লাহ’ এবং তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন। অতঃপর বললেন, ‘‘(হে আল্লাহ!) আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমিই আমার উপর যুলুম করেছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি ছাড়া কেউই গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।’’ অতঃপর তিনি হেসে দিলেন।

তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আমীরুল মু‘মিনীন! আপনি কেন হাসলেন? তিনি বললেন, আমি যেরূপ করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও এরূপ করতে দেখেছি। তিনি তখন হেসেছিলেন তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি হাসলেন কেন? তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দার উপর সন্তুষ্ট হন যখন সে বলেঃ ‘‘(হে আমার রব!) আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করুন।’’ আর বান্দা তো জানে যে, আমি (আল্লাহ) ছাড়া কেউই গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। (আবু দাউদ ২৬০২)

গ। সফরের সময় উঁচু নিচু অতিক্রমকালে পাঠ করবেঃ

সফরের সময় উঁচু জায়গায় উঠার সময় তাকবীর পাঠ করবে এবং কোন নীচু জায়গায় অবতরণের সময় তাসবীহ পাঠ করবেন।

দলিলঃ

১. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন কোন উঁচু স্থানে আরোহণ করতাম, তখন তাকবীর তাকবীর (اَللهُ أَكْبَرُ – আল্লাহু আকবার) ধ্বনি উচ্চারণ করতাম আর যখন কোন উপত্যকায় অবতরণ করতাম, সে সময় তাসবীহ (سُبْحَانَ اللهِ সুবহানাল্লাহ বলতাম। (সহিহ বুখারি ২৯৯৩)

ঘ। সফরে কোন স্থানে যাত্রা বিরতীতে পাঠ করবেঃ

যাত্রা বিরতিতে পড়বেঃ

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণঃ আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত্ তা-ম্মা-তি মিন শার্‌রি মা খলাক্ব।

অর্থঃ আমি আল্লাহ পাকের কল্যাণকর বাক্যাবলীর উসীলায় তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

দলিলঃ

১. খাওলা বিনতে হাকীম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ কোন গন্তব্যে পৌঁছে যদি এই দোয়া পড়েঃ

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণঃ আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত্ তা-ম্মা-তি মিন শার্‌রি মা খলাক্ব।

অর্থঃ আমি আল্লাহ পাকের কল্যাণকর বাক্যাবলীর উসীলায় তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তাহলে সে স্থান থেকে বিদায় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না। (সহিহ মুসলিম ২৭০৮, সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৫৪৭, তিরমিযী ৩৪৩৭)

ঙ। ঘরে প্রবেশের দোয়াঃ

 ঘরে প্রবেশের সময় পড়বেঃ

«بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا»

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়াবিস্‌মিল্লাহি খারাজনা, ওয়া ‘আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।

অর্থঃ আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করলাম, আল্লাহ্‌র নামেই আমরা বের হলাম এবং আমাদের রব আল্লাহর উপরই আমরা ভরসা করলাম।

১. আবূ মালিক আল-আশ‘আরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কেউ নিজ ঘরে প্রবেশ কররে তখন সে যেন বলে,

«بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا»

(বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়াবিস্‌মিল্লাহি খারাজনা, ওয়া ‘আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা)

অর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে আমরা প্রবেশ করলাম, আল্লাহ্‌র নামেই আমরা বের হলাম এবং আমাদের রব আল্লাহ্‌র উপরই আমরা ভরসা করলাম”। অতঃপর সে যেন তার পরিবারের লোকদের সালাম দেয়। (সুনানে আবু দাউদ ৫০৯৬)

২। হজ্জের নিয়ত করার সাথের জিকিরঃ

ক। তামাত্তু হাজ্জির নিয়তের সাথের জিকিরঃ

যদি তামাত্তুকারী হন, তাহলে বলবেনঃ

**لَبَّيْكَ عُمْرَةً**

উচ্চারণঃ লাব্বাইকা উমরাতান

অর্থঃ (হে আল্লাহ!) আমি হাজির হয়েছি উমরা উদ্দেশ্যে।

মন্তব্যঃ তামাত্তু হজ্জের নিয়তকারী যেহেতু উমরা করা পর হালাল হয়ে যায়। তাই তার মনে মনে এই সংকল্প থাকতে হবে যে, এই সফরে উমরা থেকে হালাল হবার পর আবার ইহরাম বেঁধে হজ্জ আদায় কবর।

খ। কিরান হাজ্জির নিয়তের সাথের জিকিরঃ

যদি কিরান হজ্জযাত্রী হন, তাহলে বলবেনঃ

**لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا**

উচ্চারণঃ লাব্বাইকা উমরাতান ও হাজ্জান

অর্থঃ (হে আল্লাহ!) আমি হাজির হয়েছি উমরা ও হজ্জের উদ্দেশ্যে।

দলীলঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এভাবে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের তালবিয়া  পাঠ করতে শুনেছিঃ (তিনি বলেছেন)

**لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا**

উচ্চারণঃ লাব্বাইকা উমরাতান ও হাজ্জান

অর্থঃ (হে আল্লাহ!) আমি হাজির হয়েছি উমরা ও হজ্জের উদ্দেশ্যে। (সহিহ মুসলিম ২৮৯৮ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ কিরান হজ্জ কারীর সাথে হাদি থাকে তাই সে উমরার পর হালাল হতে পারে। এই কারনে কিরান হজ্জের নিয়তকারী কে একই ইহরামে হজ্জও উমরা আদায় করতে হয় বিধায় তিনি একই সাথে হজ্জ ও উমরার নিয়ত করবেন।

গ। ইফরাদ হাজ্জির নিয়তের সাথের জিকিরঃ

যদি ইফরাদকারী হন, অর্থাৎ যিনি শুধু হজ্জ্জের নিয়ত করবেন তিনি বলবেনঃ

**لَبَّيْكَ َحَجًّا. **

উচ্চারণঃ লাব্বাইকা হাজ্জান

অর্থঃ (হে আল্লাহ!) আমি হাজির হয়েছি হজ্জের উদ্দেশ্যে।

মন্তব্যঃ ইফরাত হজ্জের নিয়তকারী উমরা করার সুযোগ পায় না, তিনি সরাসরি হজ্জ্জ আদায় করে থাকেন। তাই ইফরাতের হজ্জ্জের জন্য গমন কারী হজ্জ্জযাত্রী শুধু হজ্জ্জের নিয়ত কবরে।

ঘ। শুধু উমরার করার নিয়তের সাথের জিকিরঃ

পক্ষান্তরে যদি উমরা পালনকারী হন, অর্থাৎ যিনি শুধু উমরার নিয়ত করবেন তিনি বলবেনঃ

**لَبَّيْكَ عُمْرَةً. **

উচ্চারণঃ লাব্বাইকা উমরাতান

অর্থঃ (হে আল্লাহ!) আমি হাজির হয়েছি উমরার উদ্দেশ্যে।

মন্তব্যঃ ইহরামের নিয়ত মনে মনে করার পর এই চার প্রকারের কালিমা মৌখিকভাবে বলতে হবে। তার পর হাদিসে বর্ণিত তাবলিয়া পড়তে হবে।

ঙ। ওজরের কারণে শর্ত সাপেক্ষে নিয়তঃ

হজ্জ পালনকারী ব্যক্তি যদি অসুখ কিংবা শত্রু অথবা অন্য কোন কারণে হজ্জ সম্পন্ন করার ব্যাপারে শঙ্কা বোধ করেন, তাহলে নিজের ওপর শর্তারোপ করে বলবেন,

**اللَّهُمَّ مَحِلِّي حَيْثُ حَبَسْتَنِي **

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা মাহিল্লী হাইছু হাবাসতানী

অর্থঃ হে আল্লাহ আপনি আমাকে যেখানে রুখে দেবেন, সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাব।

এই কথার দলীলঃ

১. আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবা‘আ বিনতে যুবায়র-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন তোমার হাজ্জে যাবার ইচ্ছে আছে কি? সে উত্তর দিল, আল্লাহর কসম! আমি খুবই অসুস্থবোধ করছি (তবে হাজ্জে যাবার ইচ্ছে আছে)। তার উত্তরে বললেন, তুমি হাজ্জের নিয়্যতে বেরিয়ে যাও এবং আল্লাহর কাছে এই শর্তারোপ করে বল, হে আল্লাহ্! যেখানেই আমি বাধাগ্রস্ত হব, সেখানেই আমি আমার ইহরাম শেষ করে হালাল হয়ে যাব। সে ছিল মিকদাদ ইবনু আসওয়াদের সহধর্মিণী। (সহিহ বুখারী ৫০৮৯ তাওহীদ)

অথবা বলবে,

**لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، وَمَحِلِّي مِنَ الأَرْضِ حَيْثُ تَحْبِسُنِي.**

উচ্চারণঃ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, ওয়া মাহিল্লী মিনাল আরদি হাইছু তাহবিসুনী।

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, যেখানে তুমি আমাকে আটকে দেবে, সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাব।

এই কথার দলীলঃ

১. ইবন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন ও দুবা’আ বিনত যুবায়র ইবন আবদুল মুত্তালিব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি হজ্জের ইচ্ছা করেছি। এখন আমি কি বলবো? তিনি বললেনঃ তুমি বলবেঃ

*لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ وَمَحِلِّي مِنَ الأَرْضِ حَيْثُ تَحْبِسُنِي*

লাব্বায়ক আল্লাহুম্মা লাব্বায়ক, ‘অমাহিল্লি মিনাল আরদী হাইছু তাহবিসুনী” (অর্থঃ আপনি যেখানে আমাকে আটকে রাখেন আমি সেখানে হালাল হয়ে যাব)। কারণ তোমার জন্য তোমার রবের নিকট তাই রয়েছে, যা তুমি শর্ত করেছ। (সুনানে নাসাঈ ২৭৬৮ ইফাঃ)

৩। হজ্জের সমগ্র পথেই তালবিয়া পাঠ করেত থাকবেনঃ

সমগ্র হজ্জের সফরে থাকাকালীন সময় সর্বক্ষন তালবিয়া পাঠ করতে থাকতে হবে। যখন মিনার বড় জামারায় পৌছাবে ঠিক তখন তালবিয়া পড়া বদ্ধ করে দিতে হবে। আমাদের প্রিয় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তালবিয়া নিম্নরূপঃ

*لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ*

উচ্চারণঃ লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্‌ক লা শারি-কা লাকা।

অর্থঃ আমি হাযির হে আল্লাহ, আমি হাযির, আমি হাযির; আপনার কোন অংশীদার নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও সকল নি’আমত আপনার এবং কর্তৃত্ব আপনারই, আপনার কোন অংশীদার নেই।

মন্তব্যঃ ইহাছাড়াও তিনি অন্যবাক্যেও তালবিয়া পাঠ করেছেন।

দলীলঃ

১. আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি জামরাতুল কুবরা বা বড় জামরার কাছে গিয়ে বায়তুল্লাহকে বামে ও মিনাকে ডানে রেখে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। আর বলেন, যাঁর প্রতি সূরা আল-বাকারাহ নাযিল হয়েছে তিনিও এরূপ কঙ্কর মেরেছেন। (সহিহ বুখারি ১৭৪৮)

২. আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তালবিয়া নিম্নরূপঃ

*لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ*

(লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্‌ক লা শারি-কা লাকা)।

অর্থঃ আমি হাযির হে আল্লাহ, আমি হাযির, আমি হাযির; আপনার কোন অংশীদার নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও সকল নি’আমত আপনার এবং কর্তৃত্ব আপনারই, আপনার কোন অংশীদার নেই। (সহিহ বুখারি ১৫৪৯ তাওহীদ)

৩. উপরের বর্ণিত তালবিয়াই হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তালবিয়া। তবে কখনো কখনো কিছু অতিরিক্ত বলতেন। যেমনঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর তালবিয়ায় বলেনঃ

* لَبَّيْكَ إِلَهَ الْحَقِّ لَبَّيْكَ*

(লাব্বাইকা ইলাহাল হাক্কি লাব্বাইক)

আমি হাজির হয়েছি, হে সত্য মাবূদ! আমি হাজির হয়েছি। (ইবনে মাজাহ ২৯২০)

৪. উবায়দুল্লাহ্ ইবন আবদুল্লাহ্ ইবন উমর তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তালবিয়া ছিলঃ

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ

ইবন উমর (রাঃ) তাতে আরও বাড়িয়ে বলেছেনঃ

لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ فِي يَدَيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ

(সুনান নাসাঈ ২৭৫২ হাদিসের মান সহিহ)

৫. আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তালবিয়া ছিলঃ

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ

(সুনান নাসাঈ ২৭৫৩ হাদিসের মান সহিহ)

৪। তাওয়াফের সময়ের জিকিরঃ

ক। মসজিদে হারামে প্রবেশের দোয়াঃ

তাওয়াফ করার জন্য বা অন্য কোন কারনে কাবাগৃহে প্রবেশ কালে মসজিদে হারামের ভিতর দিয়া প্রবেশ করতে হয় বিধায়। মসজিদে হারামে প্রবেশকালে উত্তম হলো ডান পা আগে দিয়ে প্রবেশ করা এবং নীচের দোয়াটি পড়া। এই দোয়া শুধু মসজিদে হারাম নয়। বরং পৃথিবীর সকল মসজিদে এই দোয়া পাঠকরে ডান পা দিয়ে ঢুকতে হয়।  

«أَعُوذُ بِاللَّهِ العَظِيمِ، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ، وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ» [بِسْمِ اللَّهِ، وَالصَّلَاةُ] [وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ] «اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ».

অর্থঃ আমি মহান আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর সম্মানিত চেহারা ও প্রাচীন ক্ষমতার ওসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ্‌র নামে (প্রবেশ করছি), সালাত ও সালাম আল্লাহ্‌র রাসূলের উপর। “হে আল্লাহ আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।

দলিলঃ

১. আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু গোসলের পবিত্রতা অর্জন করতে, চুল আঁচড়ানোর সময় এবং জুতা পরার সময় ডান দিক থেকে শুরু করতে ভালবাসতেন। (সহিহ মুসলিম ৫০৪ হাদিস ফাউন্ডেশন)

২. হাইওয়াহ ইবনু শুরায়িহ (রহঃ) বলেন, আমি ‘উক্ববাহ্ ইবনু মুসলিমের সাথে সাক্ষাত করে বলি, আমি জানতে পারলাম যে, আপনার নিকট ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ হাদীস বর্ণনা করা হয়েছেঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় বলতেনঃ ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি, অতীব মর্যাদা ও চিরন্তন পরাক্রমশালীর অধিকারী মহান আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান হতে। ‘উক্ববাহ্ (রাঃ) বললেন, এতটুকুই? আমি বললাম, হ্যাঁ। ‘উক্ববাহ্ (রাঃ) বললেন, কেউ এ দু‘আ পাঠ করলে শয়তান বলে, এ লোকটি আমার (অনিষ্ট ও কুমন্ত্রণা) থেকে সারা দিনের জন্য বেঁচে গেল। (আবু দাউদ ৪৬৬)

৩. আবদুল মালিক ইবনু সাঈদ ইবনু সুওয়াইদ বলেন, আমি আবূ হুমাইদ (রাঃ) বা আবূ উসাইদ আনসারী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন সর্বপ্রথম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সালাম পাঠ করে, অতঃপর যেন বলেঃ ‘হে আল্লাহ, আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন।’ আর বের হওয়ার সময় যেন বলেঃ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করি।’ (আবু দাউদ ৪৬৫)

খ। মসজিদ হারাম থেকে বের হওয়ার দোয়াঃ

বাম পা দিয়ে শুরু করবে এবং বলবে,

«بِسْمِ اللَّهِ وَالصّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِك، اللَّهُمَّ اعْصِمْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ».

উচ্চারণঃ বিস্‌মিল্লা-হি ওয়াস্‌সালা-তু ওয়াস্‌সালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকা, আল্লা-হুম্মা আ‘সিমনি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম।

অর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে (বের হচ্ছি)। আল্লাহ্‌র রাসুলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাসমূহ মাফ করে দিন এবং আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাগুলো খুলে দিন। হে আল্লাহ, আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে হেফাযত করুন।

দলিলঃ

১. আবূ হুমাইদ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি সালাম পেশ করে, তারপর যেন বলেঃ হে আল্লাহ্! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন এবং বের হওয়ার সময় যেন বলেঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। (ইবনে মাজাহ ৭৭২)

মন্তব্যঃ এই দোয়াটি শুধু মসজিদে হারামের জন্যই খাস নয়। পৃথিবীর যে কোন মসজিদ থেকে বাহির হওয়ার সময় এই দোয়া পড়তে হবে।

গ। তাওয়াফ শুরুর দোয়াঃ

প্রথমে ‘হাজারে আসওয়াদ (কাল পাথরের) কাছে গিয়ে, ‘‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’’  বলতে হবে এবং এই পাথরকে চুমু দিয়ে তাওয়াফ কার্য শুরু করতে হবে। যদি সরাসরি চুমু দেয়া সম্বব না হয় তবে ঈশারায় চুমু দিবে।  তাওয়াফের করার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  নীচের দোয়াটি পড়তেন। তাই তাওয়াফের সময় নিম্মের দোয়াটি পড়লে ভাল। কারন আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন। দোয়াটি হলঃ

**اَللَّهُمَّ إِيْمَانًا بِكَ وَتَصْدِيْقًا بِكِتَابِكَ وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ وَاتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مَحَمَّدٍ -صلى الله عليه وسلم**-

অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার প্রতি ঈমান এনে, তোমার কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণের জন্য তোমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের অনুসরণ করে এ তাওয়াফ কার্যটি করছি।

রেফারেন্স কিতাবঃ প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা, লেখকঃ অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম

গ। মাকমে ইব্রাহীমের সামনে জিকিরঃ

তাওয়াফ শুরু সাথে সাথে নজরে আসবে মাকামে ইবরাহীম। এই স্থানে স্থানে এসে কুরআন এই আয়াতটি তিলওয়াত করা মু্স্তাহাব। আয়াতটি হলো,

(*وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى*

অর্থঃ তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান বানাও। (সুরা বাকারাহ ২:১২৫)

ঘ। রুকনে ইয়ামীনি থেকে হজ্জরে আসওয়াদ পর্যান্ত দোয়াঃ

রুকনে ইয়ামেনী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে নিম্নের এ দোয়াটি পড়া মুস্তাহাবঃ

**رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ**

অর্থঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে তুমি দুনিয়ায় সুখ দাও, আখেরাতেও আমাদেরকে সুখী কর এবং আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে বাঁচাও। (সুরা বাকারা ২:২০১)।

দলিলঃ

১. আবদুল্লাহ্ ইবনুস সায়েব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দু’ রুকনের মাঝখানে বলতে শুনেছিঃ

**رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ**

অর্থঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে তুমি দুনিয়ায় সুখ দাও, আখেরাতেও আমাদেরকে সুখী কর এবং আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে বাঁচাও। (সুরা বাকারা ২:২০১)। (সুনানে আবু দাউদ ১৮৯০ ইফাঃ)

ঙ। তাওয়াফ শেষে দুই রাকাত সালাত আদায় করে জিকিরঃ

তাওয়াফের সাত চক্কর শেষ হলে দু’কাঁধ এবং বাহু ইহরামের কাপড় দিয়ে আবার ঢেকে ফেলবেন এবং ‘‘মাকামে ইব্রাহীমের’’ কাছে গিয়ে পড়বেনঃ

* وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلّىً*

অর্থঃ ইব্রাহীম (পয়গাম্বর)-এর দন্ডায়মানস্থলকে সালাত আদায়ের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো।

অতঃপর তাওয়াফ শেষে এ মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে এসে দু’রাকআত সালাত আদায় করবেন।

দলিলঃ

১. আবদুল্লাহ ইব্‌নু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘উমরাহ করতে গিয়ে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করলেন ও মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন এবং তাঁর সাথে এ সকল সাহাবী ছিলেন যারা তাঁকে লোকদের হতে আড়াল করে ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবার ভিতরে প্রবেশ করেছিলেন কিনা? এক ব্যক্তি আবূ আওফা (রাঃ)-এর নিকট তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, না। (সহিহ বুখারি ১৬০০)

৫। সাঈয়ের সময় জিকিরঃ

ক। সাফা পাহাড়ের দোয়াঃ

১. সাফা পাহাড় দেখার সাথে সাথে তাকবির বলবে। দলিলঃ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফায় আরোহণ করে যখন তিনি বায়তুল্লাহ্‌ দেখতে পান তখন তাকবীর বলেন। (সুনানে নাসাঈ ২৯৭১ হাদিসের মান সহিহ)

২. সাফা পাহাড়ে পৌছে এই আয়াতটি তিলওয়াত করবেন। এখানে এই আয়াতটি শুধু প্রথমবার সাঈয়ের শুরুতে পড়ুন। আয়াতটি হলোঃ

«إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللَّهُ بِهِ»

উচ্চারণঃ‘‘ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা‘আয়িরিল্লাহ, আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি। (২:১৫৮)

অর্থঃ ‘‘অবশ্যই ‘সাফা’ এবং ‘মারওয়া’ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনসমূহের অন্যতম।’’ আল্লাহ যেভাবে শুরু করেছেন আমিও সেভাবে শুরু করছি।

৩. যতটুকু সম্ভব সাফা পাহাড়ে উঠুন। একেবারে চূড়ায় আরোহণ করা জরুরী নয়। তারপর কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে হাত তুলে নীচের দোয়াটি পড়ুনঃ

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَه لاَ شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَه لاَ شَرِيكَ لَـه، أَنْجَزَ وَعْدَه، وَنَصَرَ عَبْدَه، وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَه.

উচ্চারণঃ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওআহদাহু লা শারিকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদ্, ইয়ুহয়ী ওয়া ইয়ুমিতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়য়িন ক্বদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওআহদাহু লা শারিকালাহু, আনজাযা ওয়া‘দাহু ওয়ানাসারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।

অর্থঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি এক ও একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আসমান যমীনের সার্বভৌম আধিপত্য একমাত্র তাঁরই। সকল প্রশংসা শুধু তাঁরই প্রাপ্য। তিনিই প্রাণ দেন এবং তিনিই আবার মৃত্যুবরণ করান। সবকিছুর উপরই তিনি অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরীক নেই। যত ওয়াদা তাঁর আছে তা সবই তিনি পূরণ করেছেন। স্বীয় বান্দাকে তিনি সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রুদলকে পরাস্ত করেছেন। (আবূ দাউদঃ ১৯০৫)

মন্তব্যঃ এখানে দোয়ার সময় দুহাত উঠিয়ে যত পারেন দোয়া করুন, আরবীতে বা নিজের ভাষায় দুনিয়া ও আখেরাতের অসংখ্যকল্যাণ চাইতে থাকুন। একই দোয়া বার বার করে করলেও অসুবিধা নাই।

খ। মারওয়া পাথারে দোয়াঃ

১. জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফায় (পাহাড়ে) আরোহণ করে তিনবার তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলেন। এরপর তিনি বলেন,

«لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»

অর্থঃ আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই, এবং তিনি সব কিছুতে ক্ষমতাবান।

তিনি এইরূপ তিনবার বলেন, পরে দু’আ করেন। মারওয়া পাহাড়েও তিনি এইরূপ করেন। (সুনানে নাসাঈ ২৯৭২ হাদিসের মান সহিহ)

২. জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারওয়ায় এসে তার উপর আরোহণ করেন। তারপর বায়তুল্লাহ্‌ তাঁর দৃষ্টিগোচর হলো। তখন তিনি তিনবার বলেন,

«لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»

(আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই, এবং তিনি সব কিছুতে ক্ষমতাবান।) এরপর তিনি আল্লাহ্‌কে স্মরণ (যিকির) করেন, সুবহানাল্লাহ ও আল-হামদুলিল্লাহ বলেন। তারপর তিনি আল্লাহ্‌র ইচ্ছা অনুযায়ী দু’আ করেন এবং এভাবে তিনি তাওয়াফ সম্পন্ন করেন। (সুনানে নাসাঈ ২৯৮৭ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ সাফা ও মারওয়ার দোয়া একই ধরনের। আল্লাহু আলাম। খুব মনসংযোগ দিয়ে বিনয়ের সাথে বোধগম্য আরবি ভাষায় ও  নিজ ভাষায় নিজের চাহিদা মত, দেশ-জাতি, মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, অফিস সহকর্মী ইত্যাদি সবার জন্য দোয়া করি।

গ। সবুজ চিহ্নিত দুই দাগের মধ্যবর্তী স্থানে দোয়াঃ

সাফা পাহাড় থেকে কিছু দূর এগুলেই উপরে ও ডানে-বামে সবুজ আলোর বাতি আপনার নজরে আসবে।  সা‘ঈ করার সময় যতবারই এ সবুজ আলোর জায়গার মধ্য দিয়ে যাবেন ততবারই জগিং করার মতো দৌড়াবেন। কিন্তু মহিলারা এখানে দৌড়াবেন না, স্বাভাবিকভাবেই হাঁটবেন। এবং নিম্মের দোয়াটি পাঠ করতে থাকবে। দোয়াটি হলোঃ

«رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ، إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ»

উচ্চারণঃ রাবিবগফির ওয়ারহাম ইন্নাকা আনতাল আ‘আযযুল আকরাম

অর্থঃ হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন রহম করুন। নিশ্চয় আপনি সমধিক শক্তিশালী ও সম্মানিত।

৬। আফাতের ময়দানের দোয়াঃ

আরাফাতের মসয়দানে কোন সফর সালাত নাই। তাই তালবিয়ার পাশি পাশি বিভিন্ন জিকির ও দোয়া করার মাধ্যমেই সময় কাটাতে হবে। হাদিসে কিতাবে আরাফাতের ময়দানে নিম্মের জিকিরটি পড়ার করা আছে। জিকিরটি হলোঃ

«لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»

অর্থঃ আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই, এবং তিনি সব কিছুতে ক্ষমতাবান।

দলিলঃ

১. আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) কর্তৃক পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদার সনদে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরাফাতের দিনের দু’আই উত্তম দুআ। আমি ও আমার আগের নাবীগণ যা বলেছিলেন তার মধ্যে সর্বোত্তম কথাঃ

«لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, সার্বভৌমত্ব তারই এবং সমস্ত কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান। (সুনানে তিরমিজ ৩৫৮৫)

৭। মাশআরুল হারাম বা মুজদালিফায় জিকিরঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীতে আরোহণ করলেন, অবশেষে তিনি যখন মাশ‘আরুল হারামে (মুযদালিফার একটি স্থানে) আসেন, তখন তিনি কিবলামুখী হয়ে দোআ করেন এবং তাকবীর বলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু পাঠ করেন এবং তাঁর তাওহীদ বা একত্ব ঘোষণা করেন। তারপর তিনি (আকাশ) পূর্ণ ফর্সা না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। অতঃপর সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বেই তিনি মুযদালিফা ত্যাগ করেন।

দলিলঃ

১. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তামাত্তু আদায়কারী ‘উমরাহ আদায়ের পর যদ্দিন হালাল অবস্থায় থাকবে তদ্দিন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করবে। তারপর হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধবে। এরপর যখন ‘আরাফাতে যাবে তখন উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি যা মুহরিমের জন্য সহজ্জলভ্য হয় তা মীনাতে কুরবানী করবে। আর যে কুরবানীর সঙ্গতি রাখে না সে হাজ্জের দিনসমূহের মধ্যে তিনদিন সওম পালন করবে। আর তা ‘আরাফার দিনের আগে হতে হবে। আর তিনদিনের শেষ দিন যদি ‘আরাফার দিন হয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই। তারপর ‘আরাফাত ময়দানে যাবে এবং সেখানে ‘আসরের সালাত হতে সূর্যাস্তের অন্ধকার পর্যন্ত ‘ওকুফ (অবস্থান) করবে। এরপর ‘আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন করে মুযদালাফায় পৌঁছে সেখানে পুণ্য অর্জনের কাজ করতে থাকবে আর সেখানে আল্লাহ্কে অধিক অথবা (রাবীর সন্দেহ) সবচেয়ে অধিক স্মরণ করবে। সেখানে ফাজর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করবে। এরপর (মীনার দিকে) প্রত্যাবর্তন করবে যেভাবে অন্যান্য লোক প্রত্যাবর্তন করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘এরপর প্রত্যাবর্তন কর সেখান হতে, যেখান হতে লোকজন প্রত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল, দয়াময়।’’ তারপর জামরায় প্রস্তর নিক্ষেপ করবে। (সহিহ বুখারি ৪৫২১)

২. সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার সাথের দুর্বল লোকদেরকে মুযদালিফার নিকটবর্তী স্থান মাশ‘আরুল হারামে রাতে অবস্থানের জন্য আগে ভাগেই পাঠিয়ে দিতেন। অতএব তারা রাতের বেলা যতক্ষণ ইচ্ছা আল্লাহর যিকির করত। ইমামের অবস্থান ও ফিরে আসার পূর্বেই তারা (এখান থেকে) রওনা হতো। অতএব তাদের মধ্যে কেউ ফজরের সলাতের সময় মিনায় পৌঁছত এবং কেউ ফজরের সলাতের পরে। তারা এখানে পৌঁছে জামরায় পাথর নিক্ষেপ করত। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুর্বল ও বৃদ্ধদের এ অনুমতি প্রদান করেছেন। (সহিহ মুসলিম ৩০২১)

৩. বিলাল বিন রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মুযদালিফার দিন ভোরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ হে বিলাল! লোকেদের চুপ করতে বল। আতঃপর তিনি বলেনঃ এই মুযদালিফায় আল্লাহ তাআ’লা তোমাদের প্রতি যথেষ্ট অনুগ্রহ করেছেন, তোমাদের উত্তম লোকেদের ওয়াসীলায় তোমাদের গুনাহগারদের ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের মধ্যে সৎকর্মশীল ব্যক্তি যা প্রার্থনা করেছে তিনি তাকে তা দিয়েছেন। অতএব তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে প্রত্যাবর্তন কর। (ইবনে মাজাহ ৩০২৪)

৮। জামারাতে দোয়াঃ

জামারাতে প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের বলবে।

*اللهُ أَكْبَرُ* আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান)

দলিলঃ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি প্রথম জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত তুলে দু‘আ করতেন। অতঃপর মধ্যবর্তী জামরায় কঙ্কর মারতেন এবং একটু বাঁ দিকে চলে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দু‘আ করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। এরপর বাতন ওয়াদী হতে জামরায়ে ‘আকাবায় কঙ্কর মারতেন। এর কাছে তিনি বিলম্ব না করে ফিরে আসতেন এবং বলতেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরূপ করতে দেখেছি।

 

৯। পশু যবেহ করার জিকির বা দোয়াঃ

পশু জবেহ করার সময় বলবেঃ

«بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ ».

অথবা বলবে,

«بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنِّي».

অথরা বলবে,

«بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ [اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ] اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنِّي».

উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার, [আল্লা-হুম্মা মিনকা ওয়ালাকা], আল্লা-হুম্মা তাকাব্বাল মিন্নী।

অর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে, আর আল্লাহ সবচেয়ে বড়। [হে আল্লাহ! এটা আপনার নিকট থেকে প্রাপ্ত এবং আপনার জন্যই।] হে আল্লাহ! আপনি আমার তরফ থেকে তা কবুল করুন।

১. মহান আল্লাহ বলেন,

فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّهِ عَلَيْهِ إِن كُنتُمْ بِآيَاتِهِ مُؤْمِنِينَ

অতঃপর যে জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়, তা থেকে ভক্ষণ কর যদি তোমরা তাঁর বিধানসমূহে বিশ্বাসী হও। (সুরা আন’য়াম ৬:১১৮)

২. মহান আল্লাহ আরও বলেন,

وَلاَ تَأْكُلُواْ مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ

অর্থঃ যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না। এ ভক্ষণ করা গোনাহ। নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে-যেন তারা তোমাদের সাথে তর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরাও মুশরেক হয়ে যাবে। (সুরা আন’য়াম ৬:১২১)

৩. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ শিং বিশিষ্ট সাদা-কালো ধুসর রংয়ের দু’টি দুম্বা স্বহস্তে যাবাহ করেন। তিনি ‘বিস্‌মিল্লাহ’ ও ‘আল্লহু আকবার’ বলেন এবং (যাবাহ্‌কালে) তাঁর একখানা পা দুম্বা দু’টির ঘাড়ের পাশে রাখেন। (সহিহ মুসলিম ৪৯৮১, আবু দাউদ ২৭৯৪)

৪. আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানী করার জন্য শিংওয়ালা দুম্বাটি আনতে নির্দেশ দেন- যেটি কালোর মধ্যে চলাফেরা করতো (অর্থাৎ- পায়ের গোড়া কালো ছিল), কালোর মধ্যে শুইতো (অর্থাৎ- পেটের নিচের অংশ কালো ছিল) এবং কালো মধ্য দিয়ে দেখতে (অর্থাৎ- চোখের চারদিকে কালো ছিল)। সেটি আনা হলে তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বললেন, ছোরাটি নিয়ে এসো। অতঃপর বলেন, ওটা পাথরে ধার দাও। তিনি তা ধার দিলেন। পরে তিনি সেটি নিলেন এবং দুম্বাটি ধরে শোয়ালেন। তারপর সেটা যাবাহ করলেন এবং বললেন,

** بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ ‏”‏ **

অর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার ও তাঁর উম্মাতের পক্ষ হতে এটা ক্ববূল করে নাও। তারপর এটা কুরবানী করেন। (সহিহ মুসলিম ৪৯৮৫, আবু দাউদ ২৮১০)

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “হজ্জ সংশ্লিষ্ট দোয়াসমূহ

Leave a comment