জিকির কেন্দ্রিক বিদআত তৃতীয় কিস্তি 

জিকির কেন্দ্রিক বিদআত তৃতীয় কিস্তি 

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।

২৮। জিরিরের বিদআতসমূহঃ

আমরা জানি প্রতিটি ইবাদতের সুন্নাহ সম্মত কিছু নিয়ম কানুন আছে। সালাত, সিয়াম, হজ্জ, জাকাত, কুরবানী ইত্যাতি প্রতিটি ইবাদতে আলাদা আলাদা আল্লাহ প্রদত্ত সুন্নাহ সম্মত নিয়ম আছে। এর নিয়ম নীতির বাহিরে এই সকল ইবাদাত আদায় করলে সওয়াতের আশা করা যাবে না। বরং মহান আল্লাহর ক্রোদ্ধের কারন হতে হবে। কারন আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম নীতি নিয়ে কার খেল-তামার করা অধিকার নাই। যেমনঃ হজ্জ করার জন্য বাইতুল্লাহ গমন করতে হবে এখন যদি কেউ দেশে বাইতুল্লাহ আদতে মসজিদ তৈরি করে হজ্জের সকল নিয়ম নীতি অনুসরণ করে তবে তার হজ্জ কি হবে? ইহাকে আল্লাদ্রোহী বলা হবে। সামন্য একটি নিয়ম ভঙ্গের কারনে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। ঠিক তেমনি ভাবে সালাত এক রাকাতে দুইয়ের অধিক সিজদা দিলে বা একাধীক রুকু দিলে সালাত হবে তো! একজন অজ্ঞ মুসলীমও জানে সালাত হবে না। সালাত আদায়ের সুনির্দষ্ট নিয়ম কানুনের জন্য যে কেউ বলতে পারে তার সালাত শুদ্ধ কিনা কিন্তু জিকিরের এমন কোন সুনির্দষ্ট নিয়ম কানুন না থাকার কারনে অনেক বিদআতি পীর ফকির তাদের বানান পদ্ধতির জিকিরকে অজ্ঞ লোকদের নিকট ইবাদাত বলে চালিয়ে দেয়। তাদের আবিস্কৃত জিকির ও জিকিরের পদ্ধতি কে ইবাদাত মনে করা হয়। জিকির সম্পর্কে জ্ঞানের সল্পতার করারে আমাদের এই দশা। তাদের এই জিকির আর এর প্রদত্ত সুন্নাহ সম্মত জিকিরের পার্থক্য না জানার কারনে জিকিরের বিদআতকে ইবাদাত মনে করে আদায করছি। সুফিদের আবিস্কৃত জিকির কেন বিদআত তা আমরা বিদআতের মানদন্ড দ্বারা পরীক্ষা করব। আপনিও খুর সহজেই বুঝতে পারবেন সুন্নাহ বাহিরে তাদের প্রদত্ত সমাজে প্রচলিত এই জিকিরসমূহ কেন বিদআত।

২৯। উচ্চ শব্দে বা জোরে জোরে জিকির করাঃ

আমাদের উপমহাদেশে দেখা যায় অধিকাংশ পীর তাদের মুরিদদের কে উচ্চ শব্দে বা জোরে জোরে জিকির করার নির্দশ প্রদান করে থাকেন। মাগারির পর কোন কোন মসজিদ থেকে উচ্চ শব্দের জিকিরের শব্দ ভেষে আসে।  আবার কোন কোর পীরের মুরিদ গভীর রাতে তাহাজ্জুদ সালাতে সময় উচ্চ শব্দে জিকির করে, মনে হবে মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত করার জন্যই তার এই চেষ্টা। আবার কখনো কখনো দেখা যার শুধু উচ্চ শব্দে বা জোর জোরে জিকির করার জন্যই মাহফিল করা হয়। হালকায় জিকিররে জন্য পোষ্টারিক করে প্রচার করা হয়। উচ্চ শব্দে জিকির শুনে নাই এমন লোক অন্তত আমাদের দেশে পাওয়া যাবে না। উচ্চ শব্দে জিকির করা বিদআত কেন?

উচ্চ শব্দে বা জোরে জোরে জিকির করাকে শুধু বিদআত বললে মনে হয় কম হয়ে যাবে। এই কাজকে বিদআত না বলে হারাম বলা অধিক যুক্তিযুক্ত, কারন বিদআতে সঙ্গা থেকে জানতে পারি, কোন ভাল বা নেক কাজ নেকীর আশার করা হয় যা ইসলামে কোন কালে ছিল না। আর হারাম কাজ হল সরাসরি কুনআন সুন্নাহ বিরোধী কাজ। উচ্চ শব্দে বা জোরে জোরে জিকির করারে মহান আল্লাহ সরাসরি নিষেধ করেছেন। যদি কেউ তার নিষেধ অমান্য করে তবে বিদআত হবে না, হারাম হবে। মহান আল্লাহ বলেন, 

وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعاً وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ وَلاَ تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ

অর্থঃ আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে সকাল সন্ধ্যায় অনুনয়, বিনয়, ভীতি সহাকারে এবং অনুচ্চস্বরে। আর গাফেলদের অন্তরভূক্ত হয়ো না। (সুরা আরাফ ৭:২০৫)।

আমাদের সমাজের এক শ্রেনীল আমলে আছে তারা জোরে জোরে জিকির করার পক্ষে মতামত দেন। তারা বলে থাকেন কুরআনে অসংখ্যা আয়াতে জিকিরের কথা থাকলেও জিকির কি পরিমান উচ্চ শব্দে করতে হবে তার কোন মানদন্ড নাই। এর দ্বারা তাদের ইলমি সল্পতাই প্রমান করে। কারন উপরের আয়াতের ষ্পষ্ট ঘোষনা করার পরও পীর, আলীদের দোহাই দিয়া জোরে জোরে জিকির করার কোন যৌক্তিকতা নাই। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

*وَلَا تَجۡہَرۡ بِصَلَاتِکَ وَلَا تُخَافِتۡ بِہَا وَابۡتَغِ بَیۡنَ ذٰلِکَ سَبِیۡلًا*

অর্থঃ আপনি আপনার সালাতে (ক্বিরাআত) খুব উচ্চ স্বরে পড়বেন না এবং নিঃশব্দেও পড়বেন না। এতদুভয়ের মধ্যম পন্থা অবলম্বন করুন। (সূরা বনী ইসরাঈল ইসরা ১৭:১১০)

এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন “এ আয়াত সেসময় নাযিল হয়েছে যখন রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় সংগোপনে রয়েছেন। (অর্থাৎ এ আয়াত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কী জীবনে ইসলামের প্রাথমিক যুগে নাযিল হয়েছে)। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাহাবীগণকে নিয়ে নামায পড়তেন, কুরআন পাঠে আওয়াজকে উচ্চ করতেন। তখন সেই আওয়াজ মুশরিকরা শুনে তারা কুরআনকে এবং কুরআন যিনি নাযিল করেছেন (মহান আল্লাহ) এবং যিনি কুরআন নিয়ে এসেছেন (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে গালমন্দ করলো। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াত নাযিল করেন। এতে তিনি স্বীয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেন, আপনি কুরআন মাজীদ এত উচ্চস্বরে পাঠ করবেন না যে, আওয়াজ বাহিরে গিয়ে কাফির-মুশরিকরা শুনে গালমন্দ করার প্রয়াস পায়। আবার এত নিম্নস্বরে পড়বেন না যে, পাশের সাহাবীগণ শুনতে না পান। বরং মধ্যম পন্থা অবলম্বন করুন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪৩৬৩ ইসলামি ফাউন্ডেশন)

আবূ মূসা আল আশআরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গিরিপথ দিয়ে অথবা বর্ণনাকারী বলেনঃ একটি চুড়া হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এক ব্যাক্তি এর উগরে উঠে জোরে বললঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার। আবূ মূসা বলেনঃ তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার খচ্চরে আরোহী ছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তো কোন বধির কিংবা কোন অনুপস্থিত কাউকে ডাকছো না। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আবূ মূসা অথবা বললেনঃ হে আবদুল্লাহ আমি কি তোমাকে জান্নাতের ধনাগারের একটি বাক্য বাতলে দেব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, বাতলে দিন। তিনি বললেনঃ তা হল “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ। (সহিহ বুখারী ৫৯৬৭ ইফাঃ, সহিহ মুসলিম ৬৬১৮ ইফাঃ)

আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কোন এক সফরে ছিলাম। তখন লোকেরা জোরে জোরে তাকবীর পাঠ করছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রাণের প্রতি সদয় হও। কেননা, তোমরা তো কোন বধির কিংবা কোন অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না। নিশ্চয়ই তোমরা ডাকছ এমন এক সত্তাকে যিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী এবং তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।

আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমি তার পিছনে ছিলাম। তখন আমি বললাম, لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ (আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কারো ভাল কাজের দিকে উদ্যোগী হওয়ার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সাধ্য নেই)

তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের কোন একটি ভাণ্ডারের সন্ধান দেব না? তখন আমি বললাম, নিশ্চয়ই ইয়া রাসুলাল্লাহ! তখন তিনি বললেন, তুমি বল, لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ (আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কারো ভাল কাজের দিকে উদ্যোগী হওয়ার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সাধ্য নেই)। (সহিহ মুসলিম ৬৬১৬ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ উপরের হাদিস থেকেও এ কথা ষ্পষ্ট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরে জোর  জিকির কথা পছন্দ করতেন না। আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখান নিষেধ করলেন সেখানে সুফি বা পীরের অজিফা পালনেন মানে কিভাবে জোরে জোরে জিকির সুন্নাহ সম্মত হয়।

আমর ইবনু ইয়াহইয়া তার পিতা ইয়াহইয়াকে তার দাদা আমর ইবনু সালামাহ হতে বর্ণনা করতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমরা (হাদীস ও ইলম শিক্ষার জন্য তালেবে ইলমগণ) ফজর নামাযের পূর্বেই আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বাড়ির দরজায় গিয়ে বসে থাকতাম। যখন তিনি মসজিদে যাওয়ার জন্য বাহির হতেন, তখন আমরা তাঁর সাথে সাথে যেতাম। একদিন আবূ মূসা আল আশ’আরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এসে আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আবু আব্দুর রহমান (আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ) কি বের হয়েছেন? আমরা বললাম, না, এখনো বের হননি। তখন তিনিও আমাদের সাথে বসে পড়লেন। যখন তিনি বের হলেন তখন আমরা সবাই উঠে তাঁর কাছে গেলাম। আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বললেন, হে আবু আব্দুর রহমান (আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ) আমি একটু আগে মসজিদের মধ্যে একটি বিষয় দেখেছি এবং দেখে খারাপ মনে করেছি, যদিও যা দেখেছি তা ভালো ছাড়া খারাপ নয়, আলহামদুলিল্লাহ।

ইবনু মাসউদ বললেন, বিষয়টি কী? আবু মূসা বললেন: আপনি, ইনশা’আল্লাহ, একটু পরেই দেখবেন। আমি দেখলাম কিছু মানুষ কয়েকটি হালাকায় (বৃত্তাকারে) বসে নামাযের অপেক্ষা করছে। প্রত্যেক হালাকায় (গ্রুপে) একজন (নেতা গোছের) ব্যক্তি রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের হাতে (তাসবীহের মতো) কাঁকর রয়েছে। নেতা গোছের ব্যক্তি বলছে, সবাই একশতবার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ুন, তখন সবাই ১০০ বার ‘আল্লাহ আকবার’ বলছে। তখন সে বলছে, সবাই ১০০ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ুন। এতে সবাই ১০০ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলছেন। তখন সে বলছে: সবাই ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলুন। সবাই তখন ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলছে। ইবনু মাসউদ বললেন, আপনি তাদেরকে কী বলেছেন? তিনি বললেন: আমি আপনার মতামতের ও নির্দেশের অপেক্ষায় তাদেরকে কিছু বলিনি।

ইবনু মাসউদ বললেন, আপনি তাদেরকে বললেন না কেন যে, তোমরা তোমাদের পাপগুলি গুণে গুণে রাখ, আর আপনি দায়িত্ব নিতেন যে, তাদের কোনো নেককর্ম নষ্ট হবে না? এরপর আমরা সবাই তাঁর সাথে মসজিদে গেলাম। তিনি ঐ হালকাগুলি (গ্রুপগুলির) একটি হালাকার নিকট গিয়ে তাদেরকে বললেন: এ তোমরা কী করছ? তারা বলল: হে আবু আব্দুর রহমান (আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ)! আমরা কাঁকর দিয়ে তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর গণনা করছি। তিনি বললেন: তোমরা তোমাদের পাপগুলি গণনা কর, আমি দায়িত্ব নিচ্ছি যে, তোমাদের নেক কর্ম বিনষ্ট হবে না। হতভাগা উম্মতে মুহাম্মাদী! কত দ্রুত তোমরা ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছ! এখনো তোমাদের মাঝে তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ বিপুল সংখ্যায় জীবিত রয়েছেন। দেখ! তাঁর পোশাকগুলি এখনো পুরাতন হয়নি, তাঁর আসবাবপত্র এখনো ভেঙ্গে নষ্ট হয়নি। (অথচ তার আগেই তোমরা ধ্বংসের পথে চলে গেলে) আল্লাহর কসম করে বলছি: তোমরা কি মুহাম্মাদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধর্মের চেয়েও ভালো কোনো ধর্মের ওপরে আছো? নাকি তোমরা বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর দরজা খুলে নিলে?

সমবেত জিকিরকারীরা বলল: হে আবু আব্দুর রহমান (আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ)! আমরা তো একান্তই ভাল নিয়্যাতে এ কাজ করেছি। তিনি জবাবে বললেন: অনেক মানুষেরই উদ্দেশ্য ভালো হয়, তবে সে ভালো পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। (কারণ, উদ্দেশ্য ভাল হয়, কিন্তু উদ্দেশ্য অর্জনের পন্থা ভালো হয় না)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন যে, কিছু মানুষ কুরআন তিলাওয়াত করবে, কিন্তু তাদের তিলাওয়াত কণ্ঠনালীর নিচে নামবে না। (বিদ’আতে লিপ্ত থাকার ফলে তাদের আমল কবুল হবে না)। আল্লাহর কসম! আমি জানি না, হয়ত তোমাদের অনেকেই এই শ্রেণির অন্তর্গত। এরপর তিনি তাদের কাছ থেকে চলে গেলেন।

আমর ইবনু সালামাহ (বর্ণনাকারী) বলেন, এ সকল হলাকায় যারা উপস্থিত ছিল তাদের অধিকাংশকেই দেখেছি নাহরাওয়ানের যুদ্ধে খারেজীদের পক্ষে আমাদের (আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বিপক্ষে) যুদ্ধ করছে। (সুনান আদ দারেমী হাদিস নম্বর ২১০, বাংলা হাদিস এ্যাপেও ২১০ নম্বর সিরিয়ালেই আছে, হাদিসের মান হাসান,  ইবনু আবী শাইবা, আল মুছান্নাফ ১৫/৩০৬ নং ১৯৭৩৬, তাবারানী, আল কাবীর নং ৮৬৩৬ (সনদ যয়ীফ), আহমদ (অতি সংক্ষিপ্ত আকারে) ১/৪৪৪, তিরমিযী ২১৮৯, ইবনু মাজাহ, মুকাদ্দামাহ ১৬৮)

মন্তব্যঃ এইভাবে জিকির করা যদিও আমলকারীদের ভাল লেগেছিল কিন্তু সুন্নাহ সম্মত নয় বিধান ইবন মাসউদ (রাঃ) এ পদ্ধতির জিকির অপছন্দ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই তাসবীহ সমূহের সংখ্যা ১০০ নির্ধারণ করে, উচ্চ স্বরে, হালকা কায়েম করে কখনও আদায় করেনি বা সাহাবীদেরআও (রাঃ) আমল করতে বলেন নাই। জিকিরের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল, প্রত্যেক ব্যক্তি হাদিসে বর্ণিত জিকিরগুলো একা একা পাঠ করবে। সালাত শেষে বা সালাতের আগে দলবদ্ধভাবে জিকির করা বিদ’আত যা ইসলাম সমর্থন করে না। তাই এ সব কাজ আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে।

মন্তব্যঃ আমাদের আকাবিরদের ভুলকে ব্যাখ্যা বিশ্লষনের মাধ্যমে সঠিক প্রমান করা নিতান্তই মুর্খতা।   কাজেই হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করে সুন্নাহ সম্মত ইবাদাত থেকে দুরে রাখা বা থাকা কতটুকু যৌক্তিক? প্রশ্ন রাখলাম আপনাদের নিকট। কাজেই বহুল প্রচলিত দলবদ্ধভাবে উচ্চস্বরে জিকির করা থেকে বিরত থাকি এবং অন্যদের ও বিরত রাখার চেষ্টা করি।

উচ্চস্বরে জিকিরের দলীল খন্ডনঃ

যারা উচ্চস্বরে জিকিরের পক্ষ কথা বলেন, তাদের দাবি সহিহ বুখারীতেই উচ্চস্বরে জিকিরের হাদিস আছে। এই বলে তারা নিম্মর সহহি হাদিসটি উল্লেখ কবেন।

১। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন যে, নাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় মুসল্লিগণ ফরয সালাত শেষ হলে উচ্চস্বরে যিকর করতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি এরূপ শুনে বুঝলাম, মুসল্লিগণ সালাত শেষ করে ফিরছেন।

মন্তব্যঃ শুধু এই হাদিসটি উল্লেখ করলে উচ্চস্বরে জিকির করা নিষেধ করা জাবে না। কারন এখানে পরিস্কার করে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সময় মুসল্লিগণ ফরয সালাত শেষ হলে উচ্চস্বরে যিকর করতেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পরে হাদিসটি যার নম্বর ৮০২ ইফাঃ।  দেখুন একই সাহাবি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাকবীর শুনে আমি বুঝতে পারতাম সালাত শেষ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় মাইক ছিল না বিধায় সালাম ফিরানোর পর একবর মাত্র একবার উচ্চস্বরে তাকবির বলে সকলকে বুঝান হত সালাত শেষ। এই একবার উচ্চস্বরে তাকবির দ্বারা উচ্চস্বরে জিকির প্রমান করা অপব্যাখ্যা। এই আমলটি সুন্নাহ হিসাবে আজও অনেক মসজিদে চালু আছ। 

উচ্চস্বরে জিকিরে পক্ষে সবচেয় বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় একটি যঈফ হাদিস দলিল হিসাবে প্রচার করে। হাদিসটি হলঃ আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা অধিক পরিমাণ আল্লাহর জিকির কর যেন লোকেরা তোমাদের পাগল বলে। (মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-৯২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান-৮১৭, মুসনাদে আহমাদ-১১৬৫৩, শুয়াবুল ঈমান-৫২৩)

মন্তব্যঃ এই হাদিসটি কে শায়েখ নাসিরউদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ যঈফ বলেছেন। এর জন্য দেখুন তার লিখিত “যঈফ ও জাল হাদীসের সিরিজ” দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৭, বাংলা হাদিসের এ্যাপ এর “যঈফ ও জাল” হাদিসের সিরিয়াল নম্বর ৫১৭। হাদিস ব্যাখ্যার করার সময় নাসিরউদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ অনেকের মতামত তুলে ধরেছেন। এই হাদিসটি ইমাম হাকেম সহিহ বলেছেন। তার দাবী খন্ডন করে অনেক মুহাদ্দিসের কথা উল্লেখ করেছেন এবং সামগ্রিক বিবেচনায় হাদিসটি যঈফ বলেছেন।  

যদিও হাদিসটি সহিহ বলে ধরা হয় তবুএ এই হাদিসটি দ্বারা উচ্চস্বরে জিকির করা জায়েয বলা যাবে না। অধিক জিকির আর উচ্চস্বরে জিকির এক নয়। অধিক জিকির দ্বারা এও বুঝান হতে পারে যে, তিনি সর্বদা জিকির করবেন তার খাবার খাওয়া, গোছল করার ও সময় পাবে না। দেখলে মনে হবে পাগল।

যারা উচ্চস্বরে জিকির করার কথা বলে এই হাদিসের আলোকে তাদের দাবি হলোঃ “কোন জাকেরীনকে তখনই পাগল বলবে, যখন সে জোরে জোরে পাগলের মত সর্বদা জিকির করতে থাকবে”। তাদের এই দাবি কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কারন উপরে দেখেছি সুরা আরাফের ২০৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অনুনয়, বিনয়, ভীতি সহাকারে এবং অনুচ্চস্বরে জিকিরের কথা বলেছেন। কাজেই কুরআনের বিরোধী কোন ব্যাখ্যা বিশ্লষন করা যাবে না। এ সম্পর্কিত হাদিসও আগে উল্লেখ করেছি। কাজেই এ হেন সুন্নাহ বিরোধী কাজ থেকে দুরে থাকি। 

 

৩০। শুধু “আল্লাহ, আল্লাহ” জিকির করা একটি বিদআতঃ

শুধু “আল্লাহু, আল্লাহু” বলে জিকির করা সুন্নাহ বিরোধী কাজ। উপরে জিকিরের উপর অনেকগুলি সহহি হাদিস বর্নণা করা হয়েছে। ইহা ছাড়াও জিকিরের উপর হাদিসের গ্রন্থ আলাদা অধ্যায় রচনা করে বর্নণা করা হয়েছে। অনেক সহিহ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে জিকিরের শব্দাবলী শিক্ষা প্রদান করেছেন। তার দেখান পদ্ধতিতে আমাদের প্রিয় সাহাবীগনও (রাঃ) জিকির আদায় করছেন কিন্তু আল্লাহ তা’আলার একটি মাত্র নাম নিয়ে একক শব্দে কোন জিকিরের অস্ত্বিত্ব পাওয়া যায় না। একক শব্দে জিকির করা যদি শরীয়ত সম্মত হত তবে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য তা উল্লেখ করতেন। সাহাবীগণও (রাঃ) তা পালন করতে দ্বিধাবোধ করতেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত সহিহ হাদিসগুলো পুঙ্খানু পুঙ্খানুভাবে গবেষনা করে দেখা যায়, তিনি যত দুয়া ও জিকির বর্নিত হয়েছে তার সবগুলিই পূর্ণাঙ্গ বাক্য। যেমনঃ সুবাহান আল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবাহানাল্লাহি ওয়া বিহামদীহ, সুবাহানআল্লাহিল আযীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া-লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির ইত্যাদি।

এই বাক্যগুলীর মধ্যে রয়েছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বড়ত্বের কথা, তার প্রশংসা কথা, তার পবিত্রতার কথা, মহত্যের কথা। শুধু “আল্লাহ, আল্লাহ” বলে জিকির দ্বারা মহান আল্লাহ কোন বড়ত্ব, প্রশংসা বা পবিত্রতা কোনটাই প্রকাশ পায় না। তাছাড়া এ ধরনের জিকিরগুলোকে অর্থবোধক বাক্য বা কথা বলা হয় না। আর এতে উপকারী কোন অর্থও প্রকাশ পায় না। এটা একক শব্দ যাতে কোন উপকার পাওয়া যায় না। কেননা এই নামগুলো উল্লেখ করে ডেকে যদি কোন আবেদন বা প্রার্থনা পেশ না করা হয়, তবে এই ডাকটাই অনর্থক হয়ে যায়। বরং আল্লাহ তা’আলাকে ডাকার পর নিজের চাহিদা তাঁর নিকট তুলে ধরতে হবে। এই ধরনের কোন জিকির রাসুল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তার সাহাবী (রাঃ) থেকে প্রমানিত নয়। এমনটি তাদের পরবর্তী তাবেঈ বা তাবে-তাবেঈদের আমল দ্বারাও প্রমানিত নয়। তাই এই ধরনের আমল দ্বীনের মধ্যে ইবাদত হিসেবে পালন করার কোনো সুযোগ ইসলামের মধ্যে নেই। যেহেতু কোনো কাজকে ইবাদত হতে হলে অবশ্যই রাসুল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তার সাহাবী (রাঃ) থেকে সুষ্পষ্ট দলিল থাকতে হবে। কিন্তু এর জন্য কোন দলীল পাওয়া যায়নি। আমলের ক্ষেত্রে কোন প্রকার নতুন পদ্ধতি আবিস্কারই বিদআত। তাই এই ধরনের জিকিরকে অনেক আলেম বিদআত বলেছেন। যদিও আমাদের উপমহাদেশের অনেক পীরপন্থী আলেম ইহার পক্ষে কথা বলেন। তারা তাদের অজিফা আদায়ের জন্য এই একক বাক্যের জিকিরের সবকক দিয়ে থাকেন।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ “শুধু (আল্লাহর) নাম তা গোপনে হোক কিংবা প্রকাশ্যে তা একটি পূর্ণ কথা নয় আর না একটি পূর্ণ বাক্য। আর না এর সম্পর্ক কুফর বা ঈমানের সাথে আছে, না আদেশ কিংবা নিষেধের সাথে সম্পর্কিত। আর না সালাফ (পূর্বসুরী) থেকে প্রমাণিত আর না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৈধ করেছেন”। (মাজমাউল ফাতাওয়া, ১০/৫৫৬)

দলীল খন্ডনঃ

যারা “আল্লাহ, আল্লাহ” জিকির করেন তারা প্রথমেই কুরআন দ্বারা দলীল প্রদান করে। কওমী ঘরানার ও পীরপন্থী অনেক আলেম কে দেখিছি “আল্লাহ, আল্লাহ”  জিকির জায়েয করার জন্য  আলাদা ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের প্রায় সকলে কুরআন সুন্নাহ থেকে দলীল উল্লেখ করে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তাদের উল্লেখিত দলীলের কিছু উদাহরণ পেশ করা হলঃ

আল্লাহ এরশাদ করেনঃ

*قُلِ ادْعُواْ اللّهَ أَوِ ادْعُواْ الرَّحْمَـنَ أَيًّا مَّا تَدْعُواْ فَلَهُ الأَسْمَاء الْحُسْنَى *

অর্থঃ বলুন! আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই। (সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:১১০)

মহন আল্লাহ আরও এরশাদ করেনঃ

*وَلِلّهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُواْ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَآئِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ*

অর্থঃ আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে। (সুরা আরাফ ৭:১৮০)

মহন আল্লাহ আরও এরশাদ করেনঃ

*وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلًا*

 অর্থঃ আপনি আপনার পালনকর্তার নাম স্মরণ করুন এবং একাগ্রচিত্তে তাতে মগ্ন হোন। (সুরা মুযযাম্মিল ৭৩:৮)

মহন আল্লাহ আরও এরশাদ করেনঃ

*وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ بُكْرَةً وَأَصِيلًا*

অর্থঃ এবং সকাল-সন্ধ্য ায় আপন পালনকর্তার নাম স্মরণ করুন। (সুরা দা’হর ৭৬:২৫)

মহন আল্লাহ আরও এরশাদ করেনঃ

*وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى*

অর্থঃ এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে। (সুরা আ’লা ৮৭:১৫)

মহন আল্লাহ আরও এরশাদ করেনঃ

*بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى*

অর্থঃ আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন। (সুরা আ’লা ৮৭:১)

এমনিভাবে সূরা বাকারা ২:১১৪, সুরা নূর ২৪:৩৬, সুরা ওয়াকিয়াহ ৫৬:৭৪, সুরা হজ্জ ২২:৪০ উল্লেখ করে। যে সকল আয়াতে পালনকর্তার নাম স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে।

মন্তব্যঃ তাদের দাবী, এই সকল আয়াতে মহান আল্লাহ তার নামে জিকির করা সরাসরি নির্দেশ প্রাদান করছেন। এমন কি সুরা বনী-ঈসরাইতো সরাসরি বলে দিয়েছেন যে, “আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই”। কাজেই আল্লাহ আল্লাহ নামের জিকির করা যাবে। মহান আল্লাহ যতগুলো নাম আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ও প্রচলিত নাম হলো, আল্লাহ। কাজেই মহান আল্লাহর এই নামে (আল্লাহ) জিকির কথা যাবে। যারা বলে আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা যাবে না, এটি তাদের অজ্ঞতার পরিচয়।

বরং তাদের এই দাবি ও ব্যাখ্যাই অজ্ঞতার পরিচায়ক। কুরআনে সালাত কায়েমের কথা বলা হয়েছে। জাকাত আদায়ে কথা বলা হয়েছে। কিন্ত সালাত আদায়ে পদ্ধতি কি? কিভাবে সালাত শুরু করব, রুকু বা সিজদাহ কিভাবে আদায় করব, কখন বৈঠক করব, কোথায় কোন দুয়া বা কালাম পড়তে হবে সবই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেখান পথে করতে হবে। আবরা ধরুন যাকাতের কথা কুরআনে আসলেও কি পরিমান মাল অর্জিত হলে জাকাত দিতে হবে? জাকাতের নিসাব পরিমানই বা কত? জাকাতে কাদের হক আছে এই সকল প্রশ্নের সমাধান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হাদিসে পাওয়া যাবে।

এবার আসুন আমদের বিষয়টিতে। এই আয়াতগুলো কার উপর নাজিল হয়েছিল। তিনি কি এই আয়াতে মর্ম বুঝে এর হুকুম হকসহ আদায় করে নাই? তার সাথিদের ও এই আয়াতের মর্ম বুঝতে দেন নাই। এই সকল প্রশ্ন করলে আর যা হোক ঈমান থাকবে না।

এই সকল আয়াত আমদের প্রানের চেয়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর নাজিল হয়েছিল। মহান আল্লাহ পক্ষ থেকে তাকে সালাত, সিয়াম, জাকাত প্রভৃতি ইবাদতের মতই সকল হুকুম বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি তা আদায় করতে সামান্যতাম কার্পন্য করে নাই। কাজেই আল্লাহ যখন বলেছেন আমার নামে জিকির কর, তখন তিনি তার নামে জিকির করছেন। কিন্তু কোন বাক্যে? হাদিসে বর্নিত বাক্যের মাধ্যমে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন হাদিসে উল্লেখ নাই যে তিনি আল্লাহ আল্লাহ জিকির করছেন।  যদি বলেন এই আয়াতে আল্লাহ আল্লাহ জিকির করার কথা বলা হয়েছে কিন্ত আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝেন নাই। (নাউজুবিল্লাহ)। তা হলে আপনি এই আল্লাহ আল্লাহ নামের জিকির করুন। আমাদের বলার কিছু নাই।

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে আদেশ করছেন, আমরা যেন তার নামের উসীলায় তাঁর নিকট দুয়া করি। কোন কিছু চাইতে হলে তার নাম ধরে যেন চাই। তাঁকে যেন তাঁর সুন্দর সুন্দর নাম ধরে ডাকি এবং তাঁর নিকট প্রার্থনা করি। আমরা যদি শুধুমাত্র ইয়া আল্লাহ, ইয়া রহমান, ইয়া হাইউ, ইয়া কাইয়ুম এভাবে আল্লাহকে ডাকি কিন্তু তাঁর নিকট কিছু না চাই তাহলে সেগুলো অপূর্ণ বাক্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তা’আলাকে এভাবে ডাকার পর নিজের চাহিদা তুলে ধরতে হবে। যেমনঃ “ইয়া গাফুর ইগফির লী” অর্থাৎ “হে ক্ষমাশীল আমাকে ক্ষমা করুন” অথবা “ইয়া রাযযাক উরযুক নী” অর্থাৎ “হে রিজিক দাতা আমাকে রিজিক দিন”। কিন্তু আল্লাহকে ডাকার পর যদি কোন কিছু না চাওয়া হয় তবে এই ডাকার কোন অর্থই থাকল না। তাই আপত্তি হল, শুধু “আল্লাহু আল্লাহু” বলে অপূর্ণ বাক্য দ্বারা জিকির করার ব্যাপারে যেখানে আল্লাহকে ডাকার পর কিছুই চাওয়া হয় না। সুতরাং মুসলিমদের কর্তব্য হচ্ছে ইবাদত-বন্দেগী ইখলাসের সাথে এমনভাবে করা যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। তাঁর দেখানো পন্থাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। জিকির কিংবা অন্য ইবাদতের ক্ষেত্রে নিজেদের তৈরি করা পন্থা অবলম্বন করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই।

তারা এ সমর্থনে যে হাদিস উল্লেখ কর তা হলঃ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে, পৃথিবীতে ’আল্লাহ আল্লাহ’ বলার মতও কেউ নাই। (সুনানে তিরমিজি ২২১০ ইফাঃ, সহিহাহ ৩০১৬, সহিহ মুসলিম)।

মন্তব্যঃ এ হাদীসগুলোর অর্থ অত্যন্ত স্পষ্ট যে, কিয়ামত এমন এক সময় সংঘটিত হবে যখন পৃথিবীর বুকে এমন একজন মানুষও বিদ্যমান থাকবে না যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বা “আল্লাহ” শব্দটি মুখে উচ্চারণ করে। সব মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে শিরক, কুফরী, নোংরামি ও নানা পাপাচারে ডুবে যাবে তখন এ সকল নিকৃষ্ট মানুষদের উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে। উক্ত হাদীস থেকে আল্লাহু আল্লাহু জিকির করার বৈধতা আদৌ প্রমাণিত হয় না।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment