দ্বিতীয় পর্বঃ বিদআত প্রতিরোধে আমাদের করণীয়

দ্বিতীয় পর্বঃ বিদআত প্রতিরোধে আমাদের করণীয়

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

৪।  অন্ধ অনুকরণ না করাঃ

বিদআত প্রতিরোধে অন্যতম করণীয় কাজ হলো, অন্ধ অনুকরণ না করা। কুরআন ও সহিহ সুন্নাহ ইলম অজর্ণ করে তারই অনুসরণ করতে হবে, অন্ধ অনুকরণ করা যাবে না। সমাজের অধিকাংশ প্রচলন শির্ক ও বিদআতে ভরপুর। প্রচলিত প্রতিটি কাজ তাওহীদের বিপরীত ধর্মী। তাই সমাজ তথা বাপ দাদার অন্ধ আনুকরণ না করে বরং কাজটি সঠিক দলীল অনুসন্ধান করে তার অনুসরণ করা। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ সঠিক দলীল প্রামান অনুসন্ধান না করেই পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করি। আসলে অনুসরণে কোন দোষ নেই, অন্ধ অনুসরনেই সমস্যা। কারন দলীল প্রমানের মাধ্যমে অনুসরণ করা অন্ধ অনুসরন নয়। আমরা দুনিয়ার যে কোন বিষয় চোখ কান খোলা রেখে চলি, দলীল প্রমান অনুসরণ করি। কিন্তু দ্বীনের ব্যাপারে আমরা অন্ধ অনুসরণ করি এর কয়েকটি কারন আছে। যেমনঃ 

ক। আমাদের ধর্মীর জ্ঞান খুবই কম

খ। অনেকে মনে করে ধর্মীয় বিষয়ে আর নিজস্ব চিন্তা ভাবনা করার কোন সুযোগ নেই

গ। আমাদের পূর্ববর্তীদের তুলনায় আমাদের জ্ঞান ও গবেষনা কম

ঘ। আমরা মনে করি এত দিন চলে আসা আমল ভুল হতে পারে না

ঙ। সংখ্যাধিক্যের প্রধান্য প্রদান করি দ্বীনের প্রতিটি বিষয় হল

এই সকল বিষয় বিবেচন করে অধিকাংশ মুসলিম দ্বীনের ব্যপারে কেন জানি তার স্বাভাবিক চিন্তা শক্তি হারিয়ে ফেলে। অনেক মানুষেই ধর্মীয় ব্যপারে তার স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি, যুক্তি বিশ্লেষণ কাজে লাগাতে পারে না। অনেক মানুষ আছে যারা অতুলনীয় চিন্তা শক্তির অধিকারী, কিন্তু ধর্মীয় ব্যপারে একবারে গোঁড়া। এই কারনে মানুষ তার নিজের বিচার বুদ্ধি, স্বাভাবিক বোধ এর উপর আস্থা না রেখে পূর্ববর্তীদের অন্ধ ভাবে অনুসরণ করে থাকে। আমারা জানি দ্বীনের প্রতিটি বিষয় অদৃশ্যের উপর বিশ্বাসের উপর নির্ভশীল। মহান আল্লাহ ও তাই বলেন। তিনি এরশাদ করেন,

*الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ*

 অর্থঃ যারা অদৃশ্যের বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। ( সুরা বাকারা ২:৩ )

এই আয়াতে ঘোষনা মতে, মুত্তাকি ইমানদারের কাজ হলো, যারা অদৃশ্যের বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। অদৃশ্যের উপর বিশ্বাস হলেও তার বিশ্বাসের বিষয়বস্তু কিন্তু কুরআন সুন্নাহর বাহিরে হবে না। যেমনঃ কররের আজাব, আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, কিয়ামত ইত্যাদি অদৃশ্যের বিষয় কিন্তু এই সকল বিষয় কুরআন হাদিসে যা বিবৃত হয়েছে, এর বাহিরে বিশ্বাস করা যাবে না। তার অর্থ হল, ইসলামের অদৃশ্যের উপর বিশ্বাস হলেও প্রতিটি বিষয়ে দলীল বিদ্যমান। একজনে একটি কাল্পনিক বিষয়ে অবতারনা করলো আর আমি অদৃশ্য মনে করে বিশ্বাস করে নিলাম বিষয়টি এমন নয়। আমাদের ধর্মীর জ্ঞান খুবই থাকার কারনে সুধানার ভিত্তিতে দলীল প্রমান ছাড়াই অন্ধ অনুসরণ করে থাকি। যার ফলে বিদআত আজ আমদের ইবাদতের স্থান দখল করে আছে। অন্ধ অনুসরনের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজের সাধারনত মুসলিমগন চারটি শ্রেণীতের বিভক্ত। যাথাঃ

১। কথিত পীরদের অনুসরণ করে

১। সরাসরি বাপ দাদাদের অনুসরণ করে

২। দলের অনুসরণ করে

৪। সংখ্যাধিক্যের অনুসরণ করে

১। কথিত পীরদের অনুসরণ করে

১। সরাসরি বাপ দাদাদের অনুসরণ করে

২। দলের অনুসরণ করে

৪। সংখ্যাধিক্যের অনুসরণ করে

১। কথিত পীরদের অনুসরণ করেঃ

আমাদের সমাজের ইসলামের প্রচার প্রসারের প্রধান ভুমিকায় ছিলেন সমাজের কথিত পীরগন। উপমহাদের তাদের ইসলাম প্রচার প্রসারের ভুমিকাকে অস্বীকার করা কোন উপায় নেই। সাথে সাথে এ কথাও অস্বীকার করা কোন উপায় নেই যে, বিদআত বিস্তারে তাদের ভুমিকাই মুখ্য। আজও সমাজের তাদের মুরিদগন তাদের অন্ধ অনুসরণ করে থাকে। পীরদের অনুসারী মুরিদগনণ নিঃশর্ত ভাবে তাদের পীরের অন্ধ আনুসরণ করে থাকে। নিঃশর্ত ভাবে শুধু আল্লাহর ও তার আনুগত্য করা যায়। আল্লাহর ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করাও ফরজ। এ ছাড়া গাইরুল্লাহ বা উলামা, শাসনকর্তা, ওলী, আউলিয়া, দরবেশ, পীরদের আনুগত্যে করা যাবে কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে। এ শর্ত না জেনে/মেনে তাদের আনুগত্য করতে গিয়ে অনেকে বাড়াবাড়ি করে থাকে এবং এ থেকেই মূলতঃ আনুগত্যের বিদআতি আকিদার উৎপত্তি। আমাদের সমাজের অনেক পীর মাসায়েক এই বিদআতি আকিদার সাথে জড়িত।

যেমনঃ মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ এছহাক সাহেব পীর সাহেব চরমোনাই এর লেখা বই “ভেদে মারেফাত বা ইয়াদে খোদা’  এ আছে ’কামেল পীরের আদেশ পাইলে, নাপাক শারাব (মদ) দ্বারাও জায়নামাজ রঙ্গিন করিয়া তাহাতে নামাজ পড়’’।

মানিক গঞ্জের মো: আজহারু ইসলাম সিদ্দিকির লেখাবই “মারেফতের ভেদতত্ত্ব” এর ৩৭ পৃষ্ঠায় বলেনঃ

“যুক্তি ছাড়া মোর্শেদের বাক্য বিনা দ্বিধায় মানতে হবে। নিজের বিবেক বূদ্ধি, বিদ্যা-যুক্তি, কিতাবি এলম সবই বিসর্জন দিতে হবে। মোর্শেদের কথায় অন্ধভাবে কাজ করে জেতে হবে। তা সামনে একটা মরা মানুষ সাজতে হবে”।

আল্লাহর কিতাবের সনদ ছাড়াই যারা মানব জীবনের জন্য জায়েয ও নাজায়েযের সীমানা নির্ধারণ করে তারা আসলে নিজেদের ধারণা মতে নিজেরাই আল্লাহর বিধান দানের মর্যাদায় সমাসীন হয়। আর যারা শরীয়াতের বিধি রচনার এ অধিকার তাদের জন্য স্বীকার করে নেয়া পরিস্কার শির্ক। “তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের উলামা ও দরবেশদেরকে নিজেদের খোদায় পরিণত করেছে” মনে হচ্ছে এ আয়াতের ই প্রতিধ্বনি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

 ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦۤ أَوۡلِيَآءَ‌ۗ قَلِيلاً۬ مَّا تَذَكَّرُونَ (٣) 

 অর্থঃ হে মানব সমাজ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করো এবং নিজেদের রবকে বাদ দিয়ে আওলিয়াদের অনুসরণ করো না৷  কিন্তু তোমরা খুব কমই উপদেশ মেনে থাকো৷ (সুরা আরাফ-৭:৩)।                                                                               
আল্লাহ তাআলা বলেন:

 وَلَا تَأۡڪُلُواْ مِمَّا لَمۡ يُذۡكَرِ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ وَإِنَّهُ ۥ لَفِسۡقٌ۬‌ۗ وَإِنَّ ٱلشَّيَـٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰٓ أَوۡلِيَآٮِٕهِمۡ لِيُجَـٰدِلُوكُمۡ‌ۖ وَإِنۡ أَطَعۡتُمُوهُمۡ إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ (١٢١

অর্থঃ আর যে পশুকে আল্লাহর নামে যবেই করা হয়নি তার গোশ্‌ত খেয়ো না৷ এটা অবশ্যি মহাপাপ৷ শয়তানরা তাদের ঝগড়া করতে পারে৷ কিন্তু যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো তাহলে অবশ্যি তোমরা মুশরিক হবে৷ (সুরা আনআম-৬:১২১)।

সুফিরা তাদের পীরদে অনুগত্যের জন্য সুরা নিসার ৫৯ আয়াত উল্লখ করে বলে পীরের অনুগত্য করা ফরজ। আয়াতট হলঃ মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা আমির (নির্দেশ দাতা/বিচারক/আলেম) তাদের। যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। ( সুরা নিসা ৪:৫৯ )।

এই আয়াতের উলুল আমর দ্বারা সুফিরা তাদের পীরদের বুঝিয়ে থাকেন। সে যা হোক উলুল আমর এর ব্যাখ্যায় যাব না। যদি ধরে নেই উলুল আমর দ্বরা পীরদের বুঝিয়েছেন। তা হলেও লক্ষ করবেন, আয়াতে বলা হয়েছেঃ তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর। ষ্পষ্ট করে বলা হয়েছে পীরদের মাঝে বিরোধ হলে কুরআন সুন্নাহে দ্বারা ফয়সালা দিকে ফিরে আসতে হবে।

তাই উক্ত আয়াত পীর ধরান দলীল নয়। বরং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলতে পারি আল্লাহর ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা ফরজ। এ ছাড়া গাইরুল্লাহ বা উলামা, শাসনকর্তা, ওলী, আউলিয়া, দরবেশ, পীরদের আনুগত্যে করা যাবে কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে।

শর্ত সাপেক্ষে আনুগত্য করা ফরজ। অন্ধ আনুগত্য হারাম

যেমনঃ আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক হারামকৃত বিষয়কে হালাল বা হালালকৃত বস্তুকে হারাম করার ক্ষেত্রে ঐ সকলদের আনুগত্য করা। সুতরাং যেসব লোক এসব ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করল তারা মুলত আল্লাহ তা’আলার সমকক্ষ শির্কে ডুবে গেল।

 আল্লাহ তাআলা বলেন,

اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ

অর্থঃ তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের উলামা ও দরবেশদেরকে নিজেদের খোদায় পরিণত করেছে৷ এবং এভাবে মারয়াম পুত্র মসীহকেও৷ অথচ তাদের মা’বুদ ছাড়া আর কারোর বন্দেগী কারার হুকুম দেয়া হয়নি, এমন এক মাবুদ যিনি ছাড়া ইবাদত লাভের যোগ্যতা সম্পন্ন আর কেউ নেই৷ তারা যেসব মুশরিকী কথা বলে তা থেকে তিনি পাক পবিত্র৷ (সুরা তওবা- ৯:৩১)।

আনুগত্যের শির্ক হল, বিনা ভাবনায় শরিয়তের গ্রহণযোগ্য কোন প্রমান ছাড়াই হালাল হারাম জায়েজ নাজায়েজের ব্যপারে আলেম বুজুর্গ বা উপরস্থ কারো সিদ্ধান্ত অন্ধভাবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া।

হাদীসে বলা হয়েছে হযরত আদী ইবনে হাতেম নবী (সা) এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন খৃস্টান। ইসলাম গ্রহণ করার সময় তিনি নবী (সা) কে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন হচ্ছে, কুরআনের এ আয়াতটিতে (সুরা তওবা- ৯:৩১) আমাদের বিরুদ্ধে উলামা ও দরবেশদেরকে খোদা বানিয়ে নেবার যে দোষারূপ করা হয়েছে তার প্রকৃত তাৎপর্য কি৷ জবাবে তিনি বলেন, তারা যেগুলোকে হারাম বলতো তোমরা সেগুলোকে হারাম বলে মেনে নিতে এবং তারা যেগুলোকে হালাল বলতো তোমরা সেগুলোকে হালাল বলে মেনে নিতে, একথা কি সত্য নয়৷ জবাবে হযরত আদী বলেন , হাঁ, একথা তো ঠিক, আমরা অবশ্যি এমনটি করতাম। রসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ব্যাস, এটিই তো হচ্ছে তোমাদে প্রভু বানিয়ে নেয়া। (আহম্মদ, তিরমিজ, তাফসিরে ইবনে কাসির)। 

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, “পাপ কাজের আদেশ না আশা পর্যান্ত ইমামের কথা শুনা ও তার আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। তবে পাপ কাজের আদেশ করা হলে তা শুনা ও আনুগত্য করা যাবে না”। (বুখারী হাদিস নং ২৭৫০)। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনঃ স্রষ্টার বিরুদ্ধাচারন করে সৃষ্টুর অনুগত্য করা চলবেনা। (আহম্মদ, মুসলিম)

১। সরাসরি বাপ দাদাদের অনুসরণ করেঃ

আবূ হুরায়রা রাযি আল্লাহু আনহু হাদীস বর্ণনা করতেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি নবজাতকই জন্মলাভ করে ফিতরাতের উপর। এরপর তা মা-বাপ তাকে ইয়াহুদী বা খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজারী রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু নিখুঁত বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাদের মধ্যে কোন কানকাটা দেখতে পাও? (বরং মানুষেরাই তার নাক কান কেটে দিয়ে বা ছিদ্র করে তাকে বিকৃত করে থাকে। অনুরূপ ইসলামের ফিতরাতে ভূমিষ্ট সন্তানকে মা-বাপ তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও জীবন ধারায় প্রবাহিত করে ভ্রান্ত ধর্মী বানিয়ে ফেলে) পরে আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিলাওয়াত করলেন ‏فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا‏ আল্লাহর দেওয়া ফিতরাতের অনুসরণ কর যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, (সূরা রূম)। (মুসলিম -১২৭৫; জানাযা অধ্যায়)।

নবজাতক মুসলিম পরিবারে জন্মলাভের পরও মানুষ বাপ দাদার অন্ধ অনুসরণ করে শির্ক বিদাতে ডুবে থাকে। সংশোধনের কোন চেষ্টা করে না। আবার আমল পরিবর্তেন কথা বললে মেনেও নেয় না। আজকের দিনে সমাজে অধিক প্রচলিত কোন বিদআতি আমল সম্পর্কে যদি বলা হয় আপনার আমলটি কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক হচ্ছে না। কিছু লোক খোড়া যুক্তি দেখিয়ে বলে, অমুক বড় হুজুর, অমুক মুফতি সাহেব, অমুক পির সাহেব যে বলছেন।  কুরআন সুন্নাহ বিরোধী অনেক কে পাবেন যারা ভুয়া আমলের পক্ষে কথা বলছেন। তখন তারা উল্টা জবাব দেয়, আমাদের বাপ দাদারা যা করছে আমরা তাই করব। তারা কি ইসলাম কম বুঝেন? আপনি কি অমুকের চেয়ে, তমুকের চেয়ে ইসলাম বেশী বুঝেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ তাদের এই খোড়া যুক্তির পিছনে কোন দলিল নাই। তারা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল।  মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

سَيَقُولُ ٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْ لَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَآ أَشۡرَڪۡنَا وَلَآ ءَابَآؤُنَا وَلَا حَرَّمۡنَا مِن شَىۡءٍ۬‌ۚ ڪَذَٲلِكَ كَذَّبَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ حَتَّىٰ ذَاقُواْ بَأۡسَنَا‌ۗ قُلۡ هَلۡ عِندَڪُم مِّنۡ عِلۡمٍ۬ فَتُخۡرِجُوهُ لَنَآ‌ۖ إِن تَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَإِنۡ أَنتُمۡ إِلَّا تَخۡرُصُونَ (١٤٨)

অর্থঃ এ মুশরিকরা নিশ্চয়ই বলবে, যদি আল্লাহ চাইতেন তাহলে আমরা শিরকও করতাম না, আমাদের বাপদাদারাও শিরক করতো না৷ আর আমরা কোন জিনিসকে হারামও গণ্য করতাম না৷এ ধরনের উদ্ভট কথা তৈরী করে করে এদের পূর্ববর্তী লোকেরাও সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, এভাবে তারা অবশেষে আমার আযাবের স্বাদ গ্রহণ করেছে৷ এদেরকে বলে দাও, তোমাদের কাছে কোন জ্ঞান আছে কি ? থাকলে আমার কাছে পেশ করো৷ তোমরা তো নিছক অনুমানের ওপর চলছো এবং শুধুমাত্র ধারণা ও এ আন্দাজ করা ছাড়া তোমাদের কাছে আর কিছুই নেই। (সুরা আনাম ৬:১৪৮)

কোন শির্ক কাজ করতে নিষেধ করলে আল্লাহর ইচ্ছার দোষ দেন ও বাপ–দাদা অজুহাত দেখায়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলে,

 وَقَالُواْ لَوۡ شَآءَ ٱلرَّحۡمَـٰنُ مَا عَبَدۡنَـٰهُم‌ۗ مَّا لَهُم بِذَٲلِكَ مِنۡ عِلۡمٍ‌ۖ إِنۡ هُمۡ إِلَّا يَخۡرُصُونَ (٢٠) أَمۡ ءَاتَيۡنَـٰهُمۡ ڪِتَـٰبً۬ا مِّن قَبۡلِهِۦ فَهُم بِهِۦ مُسۡتَمۡسِكُونَ (٢١)بَلۡ قَالُوٓاْ إِنَّا وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٍ۬ وَإِنَّا عَلَىٰٓ ءَاثَـٰرِهِم مُّهۡتَدُونَ (٢٢) وَكَذَٲلِكَ مَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ فِى قَرۡيَةٍ۬ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتۡرَفُوهَآ إِنَّا وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٍ۬ وَإِنَّا عَلَىٰٓ ءَاثَـٰرِهِم مُّقۡتَدُونَ (٢٣) ۞ قَـٰلَ أَوَلَوۡ جِئۡتُكُم بِأَهۡدَىٰ مِمَّا وَجَدتُّمۡ عَلَيۡهِ ءَابَآءَكُمۡ‌ۖ قَالُوٓاْ إِنَّا بِمَآ أُرۡسِلۡتُم بِهِۦ كَـٰفِرُونَ (٢٤)

অর্থঃ তারা বলে, রহমান আল্লাহ ইচছা না করলে আমরা ওদের পূজা করতাম না। এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। তারা কেবল অনুমানে কথা বলে। আমি কি তাদেরকে কোরআনের পূর্বে কোন কিতাব দিয়েছি, অতঃপর তারা তাকে আঁকড়ে রেখেছে? বরং তারা বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে পথপ্রাপ্ত। এমনিভাবে আপনার পূর্বে আমি যখন কোন জনপদে কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখনই তাদের বিত্তশালীরা বলেছে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে চলছি। সে বলত, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছ, আমি যদি তদপেক্ষা উত্তম বিষয় নিয়ে তোমাদের কাছে এসে থাকি, তবুও কি তোমরা তাই বলবে? তারা বলত তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, তা আমরা মানব না(সুরা সুরা জুকরুক ৪৩:২০২৪)

  মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:

قَالُواْ يَـٰصَـٰلِحُ قَدۡ كُنتَ فِينَا مَرۡجُوًّ۬ا قَبۡلَ هَـٰذَآ‌ۖ أَتَنۡهَٮٰنَآ أَن نَّعۡبُدَ مَا يَعۡبُدُ ءَابَآؤُنَا وَإِنَّنَا لَفِى شَكٍّ۬ مِّمَّا تَدۡعُونَآ إِلَيۡهِ مُرِيبٍ۬ (٦٢)

অর্থঃ তারা বললহে সালেহ, ইতিপূর্বে তোমার কাছে আমাদের বড় আশা ছিল। আমাদের বাপদাদা যা পূজা করত তুমি কি আমাদেরকে তার পূজা করতে নিষেধ কর? কিন্তু যার প্রতি তুমি আমাদের আহ্বান জানাচ্ছ আমাদের তাতে এমন সন্দেহ রয়েছে যে, মন মোটেই সায় দিচ্ছে না(সুর্ হুদ ১১:৬২)

কোন মন্দ কাজ করতে নিষধ করলেও বাপ–দাদা অজুহাত দেখায়।  মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:

 وَإِذَا فَعَلُواْ فَـٰحِشَةً۬ قَالُواْ وَجَدۡنَا عَلَيۡہَآ ءَابَآءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِہَا‌ۗ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَآءِ‌ۖ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ (٢٨) 

অর্থঃ তারা যখন কোন মন্দ কাজ করে, তখন বলে আমরা বাপদাদাকে এমনি করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন। আল্লাহ মন্দকাজের আদেশ দেন না। এমন কথা আল্লাহর প্রতি কেন আরোপ কর, যা তোমরা জান না। (সুরা আরাফ ৭:২৮)

এ সম্পর্কে জানতে আরও দেখুব হুদ-১১:৮৭ & ১০৯; ইব্রাহীম- ১৪:১০; মায়েদা-৫:১০৪; বাকারা- ২:১৭০; আম্বিয়া- ২১:৫৩ & ৫৪; ইউসুফ- ১২:৪০;  আরাফ ৭: ৭০ & ১৭৩;  সাবা- ৩৪:৪৩; ইউনুস- ১০:৭৮:।

মন্তব্যঃ বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষরা যা করেছেন তা সবই ভুল এমনটি বলার কোন অবকাশ নাই। বরং আমাদের বলতে হবে, তারা যা করে গেছেন আমরা যেন অন্ধভাবে কোন প্রশ্ন ছাড়াই তার অনুসরণ না করি। আমরা যেন কোন ব্যপারে কাউকে অনুসরণ করার আগে কুরআন সুন্নাহ সাথে মিলিয়ে দেখি এবং যথাযত পেলেই তার অনুসরন করি। এ কথাও বলা যাবে যে, বাপ দাদার কোন আমলেরই অনুসরন করা যাবে না। বলতে হবে, দলীল প্রমানের ভিত্তিতে তাদের অনুসরণ করা যাবে। দলীল প্রমান খোজার মত জ্ঞান না থাকলে সুধারনার ভিত্তিতে তাদের অনুসরণ করা যাবে। যদি কোন আমল সম্পর্কে মতভেদ দেখা যায়, তাহলে আমলের সঠিক দলীল খোজার চেষ্টা করা। এই স্থানে শুধু বাপ দাদার দোহাই দিয়ে অন্ধ অনুসরন করা যাবে না।

২। দলের অনুসরণ করেঃ

মুসলিম সমাজ আজ বিভিন্ন দলে বিভক্ত। প্রতিটি দলই আজে নিজের সঠিক বা হক পন্থী দাবি করে থাকে। যার ফলে কিছু মুসলিম তাদের অন্ধ অনুসরণ করে থাকে। হক পন্থী দলের অনুসরন করতে হবে এ কথা ঠিক। কিন্তু কারা সত্যিকার অর্থে হক পন্থী। একটি সহিহ হাদিসে বলা হয়েছে, হকপন্থী হলো, “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাত”। তাই বর্তমান যুগের সকর দলই নিজেদের “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাত” বলে দাবি করে থাকে। হাদিসটি হলোঃ

মু‘আবিয়া (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা জেনে রাখ! তোমাদের পূর্ববর্তী কিতাবীগণ (ইহূদী ও খৃস্টানগণ) ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর এ উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। এদের মধ্যে ৭২ দল জাহান্নামে এবং একটি দলই জান্নাতে। তারা জামা‘আত।” (আবূ দাউদ ৪/১৯৮; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/২১৮। হাকিম ও যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবনু হাজার হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আলবানী, সাহীহাহ ১/৪০৪-৪১৪)

অন্য হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একমাত্র আমি এবং আমরা সহাবিদের মতের অনুসারী দল (আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাতে) ব্যতীত সকলেই জাহান্নামে যাবে। (তিরমিযি হাসিসের মান হাসান)।

এই হাদিসে যেহেতু এক মাত্র “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাত” নামের দলটিকে হক বলেছেন। তাই সবাই নিজেকে “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাতে” এর অনুসারী দাবি করে থাকে। অথচ হাদিসের ভাষ্য মতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একমাত্র আমি এবং আমার সাহাবিদের মতের অনুসারী দল। অর্থাৎ যে যত বেশী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবিদের (রাঃ) অনুসরণ করবে সে তত বেশী “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাত” অনুসারি হবে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন, যে যত বেশী বিদআত চালু করছে এবং সাহাবিদের (রাঃ) আমলের বিরোধীতা করছে, সে তত বেশী “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাত” এর অনুসারি দাবি করছে। আবার কেউ তো দলের নাম রেখেছেন “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাত”। আসলে “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাত” কোন দলেন নাম নয়, এটা হল এক দল মুসলিমদের উপাদি যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একনিষ্ঠ অনুসীরি এবং তাদের অনুসরনের মানদন্ড হল সাহাবীগণ। যারা সত্যিকার অর্থেই “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাত” তারাও আজ বহু নামে বিভক্ত। বর্তমানে বিশ্বের “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাত” এর বিভক্তির খতিয়ান বেশ লম্বা। শুধু ভারত উপমহাদেশের “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাত” দাবিদার মুসলিমগন বহু ফির্কায় বিভক্ত। উপমাহাদেশের শিয়া ও তাদের শাখাসমুহ ব্যতিত, যারা “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাত” দাবিদার তারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ফির্কায় বিভক্ত। কোন কোন গবেষক এই ফির্কার সংখ্যা লক্ষাধিক বলেছেন। তবে দলগতভাবে উপমাহাদেশে পাঁচটি ফির্কা বেশ বড় এদের অনুসারী সংখ্যাও বহু। উপমহাদেশের এই বড় পাঁচটি বড় ফির্কা হলঃ

 ক. কাদিয়ানি সম্প্রদায়

খ. ব্রেলভী বা রিজভী

গ. দেওবন্দী (তাবলীগ এদেরই একটি শাখা)

ঘ. জামায়াতে ইসলামি

ঙ. আহলে হাদিস

মন্তব্যঃ ইসলামের অনুসরণ না করে দলগুলোর অন্ধ অনুসরণ করলে বিদআতের সৃষ্টি হবেই। বিভিন্ন দলের কর্মকান্ড ভিন্ন। এই দলগুলোর মধ্যে প্রথম দুটির মাঝে এত পরিমান বিদআত প্রচলিত আছে যার অনুসরণ আপনাকে ইসলাম ও মুসলিম থেকে বের করে দিবে। তাদের কোন কোন কর্মকান্ড এতটি শির্কি যে আপনি দাতের অন্ধ অনুসরণ করলে মুসরিক হয়ে যাবে। এই দুই বলেন বিদআতি আমল বাদ দিলে আর ইসলাম খুজে পাওয়া যাবে না। তাই দলের অনুসরনের জন্য কুরআন সুন্নাহে মানদন্ড হিসাবে দাড় করান। আশা করি দলের অন্ধ অনুসরণ না করলে বিদআত প্রতিরোধে কিছুটা সফলাত আসবে। তাই দলের অন্ধ অনুসরণ না করে ইসলামের অনুসরণ করি।  

৪। সংখ্যাধিক্যের অনুসরণ করেঃ

আমার অনেকেরই ধারণা করে থাকি অধিকাংশ লোক সাধারনত যা করে তাই সঠিক। তাইতো দেখা যায় কোন দ্বীনের বিষয়ে কোন  ভূল আমল সংশোধনের কথা বললে, পাল্টা প্রশ্ন করেন, অধিকাংশ মানুষ কি ভূল করছে? আবার অনকেই এও বলে থাকে এতগুলো লোক কি একসাথে ভুল করতে পারে? তাদের বিশ্বাস অধিকাংশ মানুষ অনুসরণই সঠিক। অধিকাংশ মানুষের ভুল কম হয়। তবে হ্যা, অনেক সময় অধিকাংশ লোকের মতামত সঠিক হতেও পারে। যেমনঃ এমন আলেমবৃন্দ যাদের দ্বীনের সঠিক জ্ঞান আছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশের মতামত, যা কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিতে দিয়ে থাকেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্টতা বা অধিকাংশ লোক কখন সত্যের মাপকাঠি হতে পারে না।

এক মাত্র কুরআন সুন্নাহ সত্যের (ইসলামের) মাপকাঠি। কুরআন সুন্নাহ (আল্লাহর আদেশের) বিপরীতে সংখ্যাগরিষ্টতার বা অধিকাংশের মতামতকে সত্যের মাপকাঠি মানা একটি বিদআদি আকিদা। অপর পক্ষে অধিকাংশ লোক সত্যের মাপকাঠি বা অনুসরনীয় নয় তার কারণ হল, সমাজের অধিকাংশ লোক হবে অজ্ঞ, ঈমানহীন, জালিম, অকৃতজ্ঞ, পাপি, পথভ্রষ্ট, মিথ্যুক, সত্য বিমুখ। একথার প্রমান আল্লাহর ঘোষনা। তিনি পবিত্র কুরআনে বলেন,

أَءِلَـٰهٌ۬ مَّعَ ٱللَّهِ‌ۚ بَلۡ أَڪۡثَرُهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ (٦١)

অর্থঃ আল্লাহর সাথে (এসব কাজের শরিক)  অন্য কোন ইলাহ আছে কি? না, বরং এদের অধিকাংশই অজ্ঞ৷ (সুরা নমল ২৭:৬১) আরো দেখুন:  (সুরা ইউসুফ ১২:৫৫);  (সুরা আরাফ ৭:১৩১); (সুরা যুমার ৩৯:২৯); (সুরা কাসাস ২৮:১৩)।  মহান আল্লাহ আরওবলেন,

 وَمَا ظَنُّ ٱلَّذِينَ يَفۡتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡڪَذِبَ يَوۡمَ ٱلۡقِيَـٰمَةِ‌ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَذُو فَضۡلٍ عَلَى ٱلنَّاسِ وَلَـٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَشۡكُرُونَ (٦٠)

অর্থঃ যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করছে, তারা কি মনে করে, কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা হবে? আল্লাহ তো লোকদের প্রতি অনুগ্রহ পরায়ণ কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অকৃতজ্ঞ৷ (সুরা ইউনুস ১০:৬০) আরো দেখুন: (সুরা আনাম ৬:৭৩, সুরা ফুরকান ২৫:৫০, সুরা ইউসুফ ১২:৩৮)।

 মহান আল্লাহ বলেন,

 إِنَّ فِى ذَٲلِكَ لَأَيَةً۬‌ۖ وَمَا كَانَ أَكۡثَرُهُم مُّؤۡمِنِينَ (١٠٣)

অর্থঃ নিশ্চয়ই তার মধ্যে একটি নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়৷  (সুরা শুআরা ২৬:১০৩) আরো দেখুন: (সুরা শুআরা ২৬:৬৭, ১২১, ১৩৯, ১৫৮, ১৭৪ ও ১৯০।

  মহান আল্লাহ বলেন,

بَلۡ أَكۡثَرُهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٱلۡحَقَّ‌ۖ فَهُم مُّعۡرِضُونَ (٢٤)

অর্থঃ কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই প্রকৃত সত্য থেকে বেখবর, কাজেই মুখ ফিরিয়ে আছে৷ (সুরা আম্বিয়া ২১:২৪)

 মহান আল্লাহ বলেন,

بَلۡ جَآءَهُم بِٱلۡحَقِّ وَأَڪۡثَرُهُمۡ لِلۡحَقِّ كَـٰرِهُونَ (٧٠)

অর্থঃ অথবা তারা কি একথা বলে যে, সে উন্মাদ? না, বরং সে সত্য নিয়ে এসেছে এবং সত্যই তাদের অধিকাংশের কাছে অপছন্দনীয়৷  (সুরা মুমিনুন ২৩:৭০)

মন্তব্যঃ দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে অধিকাংশ লোক নির্ভুল জ্ঞানের পরিবর্তে কেবলমাত্র আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে তাদের আকীদা, বিশ্বাস, দর্শন, চিন্তাধারা, জীবন যাপনের মূলনীতি ও কর্মবিধান সবকিছুই ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে গড়ে। কাজেই দুনিয়ার বেশীর ভাগ লোক কোন পথে যাচ্ছে, কি বিশ্বাস করছে, কি আমল করছে, কোন তরিকা অনুসরন করছে, কোন সত্য সন্ধানীর এটা দেখা উচিত নয়। বরং আল্লাহ যে পথটি তৈরী করে দিয়েছেন তার ওপরই তার দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলা উচিত। এ পথে চলতে গিয়ে দুনিয়ায় যদি সে অধিকাংশের মতামত ত্যাগ করে একাকী চলতে হয়, তবে তাই করতে হবে। তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হওয়া যাবে। এর ব্যতিক্রম করলে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে৷

মহান আল্লাহ বলেন,

 وَإِن تُطِعۡ أَڪۡثَرَ مَن فِى ٱلۡأَرۡضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ‌ۚ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَإِنۡ هُمۡ إِلَّا يَخۡرُصُونَ (١١٦) إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ مَن يَضِلُّ عَن سَبِيلِهِۦ‌ۖ وَهُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُهۡتَدِينَ (١١٧)

অর্থঃ আর হে মুহাম্মাদ! যদি তুমি দুনিয়ায় বসবাসকারী অধিকাংশ লোকের কথায় চলো তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে৷ তারা তো চলে নিছক আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে এবং তারা কেবল আন্দাজ-অনুমানই করে থাকে৷ (সুরা আনআম ৬:১১৬-১১৭)

মন্তব্যঃ  সহজ ও সঠিক কথা হলো, সংখ্যাধিক্য দেখেই কারও অন্ধ অনুসরণ করা যাবেনা। তবে হ্যা, দলীল প্রমানের ভিত্তিতে সংখ্যাধিক্য অনুসরণ করা যাবে। কুরআন সুন্নাহের ভিত্তিতে সংখ্যায় কম হোক আর বেশী হোক তাদের অনুসরনে দোষ নেই। শুধু এই যুক্তিতে তাদের অন্ধ অনুসরন করা যাবে না যে, তারা সংখ্যায় বেশী। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ যা করে তাই যে সত্য তার কোন ভিত্তি নাই। অর্থাৎ, শুধুমাত্র অধিকাংশ লোকে কোন কিছু করে বলে তা অন্ধভাবে অনুসরণ না করে নিজের চিন্তা শক্তি, যুক্তি কাজে লাগিয়ে সঠিক পথে অনুসরণ করতে হবে। যা সত্য তা যদি পৃথিবীর কেউ নাও মানে, তবুও তা সত্য। বেশিরভাগ মানুষের কোন কাজ দেখে নিজদেরে উপর আস্থা হারিয়ে সংশয়ে না ভুগি যে আমরা কি তাহলে ভুল পথে আছি। তাই আমাদের সঠিক আমল করার নিমিত্তে এবং বিদআতি প্রতি রোধে আমাদের করণীয় কাজ হলো। মহান আল্লাহ আমাদের যে নিজস্ব চিন্তা, বিচার, বুদ্ধি দিয়েছেন তার সঠিক ব্যবাহার করতে হবে। যে বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয় অনুসরণ করব ন। বাপ দাদার অনুসরন করব কিন্তু অন্ধ অনুসরণ করব না। শুধু বেশিরভাগ মানুষ কোন কাজ করে বলেই তা অনুসরণ করতে হবে এই দাবি সঠিক নয়। এবং আমাদের সমাজে যে সকল পীর, দরবেশ, ইমাম, স্কলার আছে তাদেরও  অন্ধ অনুসরণ করব না। তারা যা বলেছেন তা যদি আল্লাহর কথা হয়, তবে অনুসরণ করব। আর যদি তাদের কথা কুরআন সুন্নাহর বিপরীত হয় তবে পরিত্যাগ করব।

৫। আলমের দলীল খোজাঃ

মানব ও জিন জাতিকে সৃষ্টির মূলে আল্লাহ্‌র এক মহান হিকমাত ও উদ্দেশ্য রয়েছে। আর তা হলো, তারা একমাত্র আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করবে। আল্লাহ  ইরশাদ করেছেন,

*وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ.*

অর্থঃ আমি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমারই ‘ইবাদাত করার জন্যে। (সুরা আজজারিয়া ৫৬)

বান্দার প্রতিটি কাজ যখন মহান আল্লাহ হুকুম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেখান পদ্ধতি মোতাবেগ হবে, তখন তাকে ইবাদাত বলা হয়। আমাদের কর্মময় জীবনের প্রতিটি কাজই ইবাদাত হবে, যখন তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেখান পদ্ধতিতে হবে। তারপরও মহান আল্লাহ আমাদের জন্য কিছু ইবাদাতকে খাস করে বলে দিয়েছেন। যেমনঃ সালাত, সিয়াম, হজ্জ, জিকির-আজগর, দান-সদগা, পর্দা ইত্যাদি। এই সকল ইবাদত বলে দেয়ার পাশিপাশি, এই সকল ইবাদত আদায়ের পদ্ধতিও বিস্তারিত বলে দিয়েছেন। যেমনঃ সালাত মহান আল্লাহ প্রদত্ত একটি খালেস ইবাদাত। সালাত ফরজ করার সাথে সাথে তিনি বলে দিয়েছেন, সালাত আদায়ের পদ্ধতি, সালাত কখন এবং কিভাবে আদায় করতে হবে। সালাতের বিস্তারিত বর্ণনা হাদিসের গ্রন্থগুলিতে ভরপুর। হাদিসে বর্ণিত পদ্ধতির বাহিরে গিয়ে সালাত আদায় করলে সালাত আদায় হবে না। যখনই কোন আমলকে ইবাদাত বলা হবে, তখন অবশ্যই তার দলীল থাকবে। ইবাদাত আছে অথচ কুনআন সুন্নাহ তার দলীল নাই, যার অর্থ হবে ইবাদাতটি বিদআত। অর্থাৎ আমল থাকবে তো দলীল থাকবে, দলীল নাই তো আমলও নাই।

যেমনঃ আমাদের সমাজে যে মিলাদ মাহফিল ইবাদত মনে করে করা হয়, তার কোন দলীল নাই। এই মিলাদ মাহফিল যে বিদআত এ সম্পর্কে এই গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এই ইবাদতের কোন দলীল নাই বলেই ইবাদাতটি বিদআত। অপর পক্ষে, তাজজ্জুদের সালাত সম্পর্কে প্রতিটি হাদিসের গ্রন্থেই বিস্তরিত বলা হয়েছে। তাই তাজজ্জুদ সালাত হলো সুন্নাহ সম্মত একটি ইবাদাত। অপর পক্ষে মিরাজের রাত্রির ইবাদাত সম্পর্কে কোন সহহি, যইফ হাদিসেই বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই এই রাতের বিশেষ ইবাদাতকে আলেম সমাজ বিদআত বলছেন। তবে হ্যা, কারো যদি প্রতি রাত্রে ইবাদতের অভ্যাস থাকে সে এই রাতে ইবাদাত করলে বিদআত হবে না।

সার কথা হলো, ইবাদতের দলীল থাকবেই। করুন একটি সোনার হারান হার পাওয়া গেল। ঘোষনা করা হলো, সোনার হার পাওয়াগেছে। ঘোষনার পর পরই তিন জন দাবী করল যে, এই সোনার হারটি আমার। কাকে দেয়া হবে? এই ক্ষেত্রে তিনজনকে দেয়া যাবে না। কারন হারের প্রকৃত মালিক একজন। এই মুহুর্ত বলা হবে, তোমরা হারের স্বপক্ষে দলীল দাও। যার দেয়া তথ্য বা দলীল হারের সাথে মিলে যাবে প্রকৃত হারটির মালিক সেই হবে। কিন্তু হারের দাবিদার তিন জনকে কোন প্রমান আনতে না বলে যদি পাশে দাড়ান লোকটি কে বলা হয়, তুমি হারের দাবি কর নাই। কাজেই এই হারটি যে তোমার নয়, তার দলীল দেও। লোকটি বললে, পাগল নাকি, আমিতো বললাম আমার কোন হার হারায় নাই, আমি হারটি দাবিও করি না। তা হলে আমাকে কেন দলীল দিতে হবে। বরং যারা হারটি দাবি করছে, তাদের দাবির স্বপক্ষে দলীল দিতে বল।

এমনিভাবে যারা কোন আমলকে সুন্নাহ সম্মত ইবাদাত হিসাবে দাবি করবে, তাদেরই উচিত আমলের স্বপক্ষে দলীল প্রমান উপস্থাপণ করা। আর যে বলবে আমলটি বিদআত তার কোন দায় বদ্ধতা নাই। কেননা, আমলটি কোন দলীল নাই বলেই সে বিদআত বলেছেন।

মন্তব্যঃ প্রতিটি আমলের যেহেতু সুন্নাহ সম্মত দলীল আছে। তাই কোন আমল করার আগেই তার দলীল অনুসন্ধান করি। যদি কেউ আমলের সুন্নাহ সম্মত দলীল পাওয়া না যায় তবে আমলটি নিন্দেহে বিদআত। তাই বলা যায় আমল করার আগে দলীল খুজলে বিদআত থেকে বাচতে পারব। এমনিভাবে, আমল থেকে আস্তে আস্তে বিদআত দুর হয়ে যাবে। কাজেই দলীল খোজার মাধ্যমে বিদআতকে প্রতিরোধ করি।  

৬। আমল সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলে দলীলে গুরুত্ব দেয়াঃ

আমাদের উপমহাদেশ হলো শির্ক বিদআতের আখড়া। প্রতিটি সহিহ আমলের পাশাপাশি অনেক বিদআতি আমলে ভরপুর। এর পিছেনের কারন, আগের দিনে ইলম এত সহজলভ্য ছিলনা। বর্তমানে কোন সাধারণ শিক্ষিত মানুষ ইচ্ছা করলেই কুরআন হাদিস থেকে সরাসরি ইলম অর্জন করতে পারে। কেননা, বর্তমান কুরআন, কুরআনে তাফসির, হাদিসের বহু গ্রন্থ বাংলায় অনুদিত হয়েছে। কিন্তু কয়েক দশক আগেও কেউ ইচ্ছা করলেই এ সবের কল্পনা করেত পারত না। তখন সকল মুসলিমের একমাত্র ভরসা ছিল আলেমদের উপর। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আলেমদের সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। অধিকাংশ গ্রামের সমজিদে ইমাম হতেন মাত্র কয়েকটি সুরা মুখন্ত করা মৌলভী। তাকে কোন মাসয়ালে সম্পর্ক জিজ্ঞাসা করলে, না জানা সত্বেও লজ্জার কারনে মনগড়া ফতোয়া দিত। গ্রামের সাধারণ মানুষ সরল বিশ্বাসে মৌলভীর করা অনুসরন করত। এইভাবে আমাদের সমাজে ইসলাম বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। উপমহাদেশে মুঘোল আমলে শিয়াদের প্রধান্য পাওয়ার কারনে আমাদের অনেক আমল শিয়াদের মত। যেমনঃ আহলে বাইয়াত, করব, মাজার, আশুরা, মিলাদ, ঈদে মিলাদুন্নবী ইত্যাদি শিয়া প্রভাবের কারনে এসেছে। উপমহাদেশে ইসলাম সুফিদের দ্বারাও বিকৃতি লাভ করছে। কিন্তু বর্তমানে কুরআন সুন্নাহ জ্ঞান সরাসরি (হাদিসের গ্রন্থ ও কিছু আলেম) পাওয়ার করানে ইসলাম সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারনা জম্ম নিচ্ছে। তাই আমাদের পূর্বের আমল যা আমরা সমাজ থেকে, অজ্ঞ ইমাম থেকে বা বাতিল ফির্কা থেকে নিয়েছি, তার সাথে একটি প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ হচ্ছে। এই ফলে অনেক মুসলিম প্রশ্ন তুলছেন, ইসলামি কি নতুন করে আসল? এত দিন কি ভুল আমল করলাম?

আমাদের সকল আমলই যে ভুলেভরা এমনটি নয়। আমাদের অধিকাংশ আমলই সঠিক আছে। আবার আমাদের আমলের বিদআতে পরিমানও নেহায়েত কম নয়। তাই যখনই আমার আমল সম্পর্কে প্রশ্ন উঠবে তখন আমার দায়িত্ব হবে দলীলে উপর গুরুত্ব দেয়া। আমরা যে আমলটি করছি, সে সম্পর্কে আমাদের ধারন হবে, আমলটির পদ্ধতি সঠিক আছে। কিন্তু যখন কেউ বলবেন আমার আমলটি সঠিক পদ্ধতির উপর নাই। তখন তার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে আমারা কাজ হলো, আমলের সঠিক পদ্ধতি খুজে বের করা।

সার কথা হলো আমলের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলে দলীল খুজে সঠিক দলীলমত আমল করা। একটি কথা এখান প্রতিধান যোগ্য যে, একটি আমলের একাধিক পদ্ধতি থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতি পদ্ধতিকেই গুরুত্ব দিতে হবে। যেমনঃ বিতের সালাতের একাধিক পদ্ধতি আছে। আপনার যে পদ্ধতি ভাল লাগে, সেই পদ্ধতিতে আমল করুন, আর অপরের পদ্ধতিকে ভুল বলা যাবে না। তাহলে অনেক সহিহ হাদসি অস্বীকার করা হবে।

কিন্তু আমি যে আমলটি করছি তার পক্ষে কোনই দলীল নাই। এই কারনে কেউ হয়ত আমার আমলটিকে বিদআত বলছেন। আমি তার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে, সমাজে চলে আসা রীতি, বড় হুজুর বা সংখ্যাধিখ্যের দোহাই দিচ্ছি। যেমনঃ মিলাদ কিয়াম, এর পক্ষে কোন দলীল নাই। অথচ আমাদের এ সম্পর্কে সতর্ক করলে দলীলকে গুরুত্ব না দিয়ে, নামধারী আলেমদের দোহাই দিয়ে বলছি, তারা কি কম বুঝো।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

 

Leave a comment