সালাতের পূর্বে ও অভ্যান্তরের দোয়াসমূহ

সালাতের পূর্বে ও অভ্যান্তরের দোয়াসমূহ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

সালাত শুরুর আগের জিকিরসমূহঃ

১। অজুর শুরু জিকিরঃ

অজুর শুরুতে পড়তে হবে,  «بِسْمِ اللَّهِ» আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি।  

১. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ ব্যক্তির সালাত হয় না যে (সঠিকভাবে) অযু করে না এবং ঐ ব্যক্তির অযু হয় না যে তাতে আল্লাহর নাম নেয় না।(আবু দাউদ ১০১)

২. আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি উযূর সময় আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করেনি তার অজু হয়নি। (ইবনে মাজাহ ৩৯৭)

২। অজু শেষ করার পর জিকিরঃ

অজু শেষে এই কালিমাটি পড়তে হবে।

 «أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ»

উচ্চারণঃ আশ্‌হাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহূ।

অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।

দলিলঃ

১. উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের উট চরানোর দায়িত্ব নিজেদের উপরে ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তাঁর এ কথা শুনতে পেলাম, “যে মুসলমান সুন্দর রুপে অজু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি তার প্রতি নিবদ্ধ রেখে দুই রাকআত সালাত আদায় করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।”

উক্‌বা বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলাম ওহ, কথাটি কত উত্তম! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি উমর (রাঃ)। তিনি আমাকে বললেন তোমাকে দেখেছি, এইমাত্র এসেছা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের যে ব্যাক্তি কামিল বা পূর্ণরূপে উযূ করে এই দু’আ পাঠ করবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল” তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতের প্রবেশ করতে পারবে। (সহিহ মুসলিম ৪৪৬ ইসলামি ফাইন্ডেশন)

*** অতপর, এই দোয়াটিও পড়তে হবেঃ

«اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ».

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাজ‘আলনী মিনাত্ তাওয়াবীনা ওয়াজ‘আলনী মিনাল মুতাতাহ্‌হিরীন।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন।

দলিলঃ

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করার পর বলেঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ তা’আলা ব্যতিত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোন শরীক নেই; আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দাহ ও তারই রাসূল; হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর”, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে নিজ ইচ্ছামত যে কোন দরজা দিয়েই তাতে যেতে পারবে। (সুনানে তিরমিজ ৫৫, ইবনে মাজাহ ৪৭০)

আজানের জবাবঃ

আজানেরজবাব প্রদানের দলিল হিসাবে কয়েকটি সহিহ হাদিস তুলে ধরছি। আশা করি হাদিসগুলো পড়লেই আজানের জবাব সম্পর্কে সঠিক ধারনা হয়ে যাবে।

১. আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুয়ায্‌যিন যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বলবে। (সহিহ বুখারী ৫৮৪ ইফাঃ, সহিহ মুসলিম ৭৩৪ ইফাঃ, আবু দাউদ ৫১২ ইফাঃ)

২. উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন মুয়াযযিন আযানের সময় আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলবে, তখন তোমরাও আল্লাহু আকবার বলবে। অতঃপর মুয়াযযিন যখন আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে তখন তোমরাও আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে অতঃপর মুয়াযযিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলবে– তখন তোমরাও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলবে অতঃপর মুয়াযযিন যখন হাইয়া আলাস্ সালাহ্ বলবে তখন তোমরা বলবে, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ অতঃপর মুয়াযযিন যখন হাইয়া আলাল ফালাহ্ বলবে তখন তোমরা বলবে লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ অতঃপর মুয়াযযিন যখন আল্লাহু আকবার বলবে তখন তোমরা আল্লাহু আকবার বলবে অতঃপর মুআযযিন যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে, তখন তোমরাও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে তোমরা যদি আন্তরিকভাবে এরূপ বল তবে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ মুসলিম ৭৩৬ ইফাঃ, সুনানে আবু দাউদ ৫২৭ ইফাঃ)

একটি মাসায়েলঃ আযানের জওয়াব দেবে প্রত্যেক সেই ব্যক্তি যার জন্য আল্লাহর যিক্‌র করা বৈধ। অতএব পবিত্র অবস্থায়, অপবিত্র বা মাসিক অবস্থায় নারী-পুরুষ সকলের জন্যই আযানের জওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব। অবশ্য নামায পড়া অবস্থায়, প্রস্রাব-পায়খানা করা অথবা বাথরুমে থাকা অবস্থায় এবং স্ত্রী-মিলন রত অবস্থায় আযানের উত্তর দেওয়া বৈধ নয়। এসব কাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর বাকী আযানের উত্তর দেওয়া বিধেয়। (সলাতে মুবাশশির, আব্দুল হামিদ ফাইজি)

 আজানে জবাব দানে আমাদের সমাজে দুটিভুল আমল প্রচলিত আছে। আমল দুটি হলোঃ

প্রথম ভূল আমলঃ মুয়াজ্জিন যখন “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্” বলেন তখন আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক এর জমাবে বলেন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাদের এই কাজটি সুন্নাহ সম্মত নয়। কারন আজানের জবাবে আমরা দেখেছি, মুয়াযযিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলবে, তখন তোমরাও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলবে। দুরূদ পড়ার স্থান এখানে নয়। দুরূদ পড়ার স্থান হল আজানের শেষে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্য অসিলার দোয়া করার পূর্বে।

দ্বিতীয় ভূল আমলঃ আমাদের সমাজে অনেক বলে থাকেন, মুআযযিন যখন ‘আসস্বলাতু খাইরুম মিনান নাউম” বলবেন তখন উত্তরে বলতে হবে,‘স্বাদাকতা অবারিরতা বা বারারতা”। তাদের এই কথার কোন ভিত্তি ইসলামি শরীয়তে নেই। তবে দলীল না থাকলেও যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু যুক্তি দিয়েতো আর ইসলাম হয় না। কাজেই, মুআযযিন ‘আসস্বলাতু খাইরুম মিনান নাউম’ বললে অনুরুপ বলে জওয়াব দিতে হবে।

আজানের সমাপ্তের পর দোয়াঃ

১. আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুল কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মু’আযযীনকে আযান দিতে শুনবে, তখন সে যা বলে তাই বলবে। তারপর আমার ওপর দুরূদ পাঠ করবে। কারণ যে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন। পরে আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে। ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোন এক বান্দাকে দেয়া হবে। আমি আশা করি যে, আমিই হব সেই বান্দা। যে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে, তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম ৭৩৫ ইফাঃ,  আবু দাউদ ৫২৩ ইফাঃ)

২. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আযান শুনে দু’আ করেঃ

* اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏*‏

অর্থঃ হে আল্লাহ-এ পরিপূর্ণ আহবান ও সালাতের প্রতিষ্ঠিত মালিক, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওয়াসীলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকেমে মাহমূদে পৌছিয়ে দিন যার অঙ্গিকার আপনি করেছেন’- কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে।

(সহিহ বুখারী ৫৮৬ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ আজান শ্রতার তিনটি কাজ। আজানের জবাব দিবে, দুরূদ পাঠ করবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য দোয়া করবে। আজান সমাপ্তার পর আমরা এই তিনটি সুন্নাহ সম্মত কাজ না করে বিদআত করতে থাকে। যেমনঃ আজানের শেষে তারা হাত তুলে বিদআতি পদ্ধতিতে দোয়া করতে থাকে। আজানের পর হাত তুলে দুআ করা প্রমাণিত নয়। তাই হাত তুলে দুআ না করাই উচিত।

৫। মসজিদে প্রবেশের দোয়াঃ

মসজিদে ডান পা দিয়ে ঢুকবে এবং বলবে,

«أَعُوذُ بِاللَّهِ العَظِيمِ، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ، وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ» [بِسْمِ اللَّهِ، وَالصَّلَاةُ] [وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ] «اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ».

উচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিল্লা-হিল ‘আযীম, ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম, ওয়াসুলতা-নিহিল ক্বদীম, মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম। (বিসমিল্লা-হি ওয়াসসালাতু) (ওয়াসসালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হি), আল্লা-হুম্মাফ্‌তাহ লী আবওয়া-বা রাহ্‌মাতিক।

অর্থঃ আমি মহান আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর সম্মানিত চেহারা ও প্রাচীন ক্ষমতার ওসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ্‌র নামে (প্রবেশ করছি), সালাত ও সালাম আল্লাহ্‌র রাসূলের উপর। “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।

দলিলঃ

১. আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু গোসলের পবিত্রতা অর্জন করতে, চুল আঁচড়ানোর সময় এবং জুতা পরার সময় ডান দিক থেকে শুরু করতে ভালবাসতেন। (সহিহ মুসলিম ৫০৪ হাদিস ফাউন্ডেশন)

২. হাইওয়াহ ইবনু শুরায়িহ (রহঃ) বলেন, আমি ‘উক্ববাহ্ ইবনু মুসলিমের সাথে সাক্ষাত করে বলি, আমি জানতে পারলাম যে, আপনার নিকট ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ হাদীস বর্ণনা করা হয়েছেঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় বলতেনঃ ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি, অতীব মর্যাদা ও চিরন্তন পরাক্রমশালীর অধিকারী মহান আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান হতে। ‘উক্ববাহ্ (রাঃ) বললেন, এতটুকুই? আমি বললাম, হ্যাঁ। ‘উক্ববাহ্ (রাঃ) বললেন, কেউ এ দু‘আ পাঠ করলে শয়তান বলে, এ লোকটি আমার (অনিষ্ট ও কুমন্ত্রণা) থেকে সারা দিনের জন্য বেঁচে গেল। (আবু দাউদ ৪৬৬)

৩. আবদুল মালিক ইবনু সাঈদ ইবনু সুওয়াইদ বলেন, আমি আবূ হুমাইদ (রাঃ) বা আবূ উসাইদ আনসারী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন সর্বপ্রথম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সালাম পাঠ করে, অতঃপর যেন বলেঃ ‘হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন।’ আর বের হওয়ার সময় যেন বলেঃ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করি।’ (আবু দাউদ ৪৬৫)

৬। মসজিদ থেকে বের হওয়ার জিকিরঃ

বাম পা দিয়ে শুরু করবে এবং বলবে,

«بِسْمِ اللَّهِ وَالصّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِك، اللَّهُمَّ اعْصِمْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ».

উচ্চারণঃ বিস্‌মিল্লা-হি ওয়াস্‌সালা-তু ওয়াস্‌সালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকা, আল্লা-হুম্মা আ‘সিমনি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম।

অর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে (বের হচ্ছি)। আল্লাহ্‌র রাসুলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাসমূহ মাফ করে দিন এবং আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাগুলো খুলে দিন। হে আল্লাহ, আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে হেফাযত করুন।

দলিলঃ

১. আবূ হুমাইদ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি সালাম পেশ করে, তারপর যেন বলেঃ হে আল্লাহ্! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন এবং বের হওয়ার সময় যেন বলেঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। (ইবনে মাজাহ ৭৭২)

৭। সালাতের শুরুতে দোয়াঃ

সালাতের শুরুতে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তহরীমার আগে কোন প্রকারের দুআ পড়া হাদিস সম্মত নয়। তবে তাকবীরে তহরীমার পর সানা বা নামায শুরুর দোয়া হিসাবে একাধিক দোয়া হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। সেগুলো থেকে যে কোন দু্আ পড়া যেতে পারে। যেমনঃ

১. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, তাকবীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কী পাঠ করে থাকেন? তিনি বললেনঃ এ সময় আমি বলিঃ

 *اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاىَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ ‏”‏‏.‏*

(আল্লাহুম্মা বা-ইদ-বাইনি ওয়াবায়না খাতা ইয়া ইয়া-কামা বা আদতা বাইনাল মাশরিকি ওয়ালমাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কিনি মিনাল খাতাইয়া কামা ইউ নাক্কাস সাউবুল আবইয়াযু মিনাদদানাস্‌ , আল্লাহুম্মাগসিল খাতা ইয়া ইয়া বিল্‌মায়ি ওয়াস্‌সালজি ওয়ালবারাদ)।

হে আল্লাহ্! আপনি মাশরিক ও মাগরিবের মধ্যে যেরূপ দুরত্ব সৃষ্টি করেছেন, আমার ও আমার ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যে ঠিক তদ্রুপ দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন। হে আল্লাহ! শুভ্র বস্ত্রকে যেরূপ নির্মল করা হয় আমাকেও সেরূপ পাক-সাফ করুন। আমার অপরাধসমূহ পানি, বরফ ও হিমশিলা দ্বারা বিধৌত করে দিন। (সহিহ বুখারী ৭০৮ ইফাঃ, ৭৪৪ তাওহীদ)।

২. আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামায আরম্ভ করতেন তখন এই দু’আ পাঠ করতেনঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা।” (সুনানে আবুদাউদ ৭৭৬ ইফাঃ)

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামায শুরু করতেন তখন বলতেনঃ সুবহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা (তিরমিজি ২৪৩)

৩. আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে সলাতের জন্য দন্ডায়মান হলে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এ দু‘আ পড়তেনঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা। অতঃপর তিনবার “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” ও তিনবার “আল্লাহু আকবার কাবীরান” বলার পর “আ‘উযু বিল্লাহিস সামি‘ইল-‘আলীমি মিনাশ-শাইত্বানির রজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি” বলতেন। তারপর ক্বিরাআত পাঠ করতেন। (আবু দাউদ ৭৫৫ ইসলামি ফাউন্ডেশন)

৪. আব্দুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে নামায আদায় করাকালে কোন দু’আটি পড়তেন? তিনি বলেন, যখন তিনি রাতে তাহাজ্জুদ নামায আদায়ের জন্য উঠতেন, তখন এই দু’আ পাঠ করতেনঃ আল্লাহুম্মা রব্বা জিবরীল ওয়া মীকাঈল ওয়া ইসরাফীল ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা, আলিমুল গায়বি ওয়াশ শাহাদাতে, আনতা তাহকুমু বাইনা ইবাদিকা ফীমা কানূ ফীহে ইয়াখতালিফুন। ইহ্‌দিনী লিমাখতুলিফা ফীহে মিনাল হাক্‌কি বিইয্‌নিকা, ইন্নাকা আনতা তাহদী মান তাশাউ ইলা সিরাতিম মুসতাকীম। (আবু দাউদ ৭৬৭ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

মন্তব্যঃ হাদীসে এমন বেশ কয়েকটি দুআ বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর যে কোন একটি পড়লেই ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট হবে। তাই আমাদের এই সকল সুন্নাহ বিরোধী কাজ পরিত্যাগ করতে হবে। যদি কেউ জানার পরও ভাল মনে করে সওয়াবের আশায় সালাতের পূর্বে এই দোয়া পড়ে তবে বিদআত হবে তাকে কোন প্রকার সন্দেহ নাই। দ্বীনের মাঝে এই রকম মন গড়া আমল আবিস্কারই হল বিদআত।

সালাতের ভিতরের জিকিরঃ

ক। রুকু ও সিজদার জিকির

রুকতে বলতেনঃ

 «سُبْحانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ»

 উচ্চারণঃ সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম।

অর্থঃ আমার মহান রব্বের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি” (তিনবার)

  রুকু ও সিজদায় বলতেনঃ

 «سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي».

উচ্চারণঃ সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুম্মাগফির লী।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের রব্ব! আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি আপনার প্রশংসাসহ। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করে দিন।

  • ·        রুকু ও সিজদায় বলতেনঃ

 «سُبُّوُحٌ، قُدُّوسٌ، رَبُّ المَلاَئِكَةِ وَالرُّوحِ».

উচ্চারণঃ সুব্বূহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালা-’ইকাতি ওয়াররূহ।

অর্থঃ (আপনি) সম্পূর্ণরূপে দোষ-ত্রুটিমুক্ত, অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত; ফেরেশতাগণ ও রূহ এর রব্ব।

        রুকু ও সিজদায় বলতেনঃ

 «سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوتِ، وَالْمَلَكُوتِ، وَالْكِبْرِيَاءِ، وَالْعَظَمَةِ».

উচ্চারণঃ সুবহা-নাযিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়া’ই ওয়াল ‘আযামাতি।

অর্থঃ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি সেই সত্তার, যিনি প্রবল প্রতাপ, বিশাল সাম্রাজ্য, বিরাট গৌরব-গরিমা এবং অতুলনীয় মহত্ত্বের অধিকারী।

খ। রুকু থেকে উঠার জিকিরঃ

 «سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ».

উচ্চারণঃ সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ।

অর্থঃ যে আল্লাহর হামদ-প্রশংসা করে, আল্লাহ তার প্রশংসা শুনুন (কবুল করুন)।”

আরও বলবে,

 «رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْداً كَثيراً طَيِّباً مُبارَكاً فِيهِ».

উচ্চারণঃ রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু, হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহি।

অর্থঃ হে আমাদের রব্ব! আর আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা; অঢেল, পবিত্র ও বরকত-রয়েছে-এমন প্রশংসা।

গ। সিজদার দোয়াঃ

 «سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى».

উচ্চারণঃ সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা।

অর্থঃ আমার রব্বের পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি, যিনি সবার উপরে।” (তিনবার)

দলিলঃ

১.  হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামায আদায় করছেন। তিনি রুকূতে সুবহানা রব্বিয়াল আযীম’ এবং সিজদায় “সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা বলতেন। যখনই কোন রহমত সম্পর্কিত আয়াতে আসতেন, তখনই তিনি সামনে অগ্রসর হওয়া বন্ধ রেখে রহমত চাইতেন। যখনই তিনি কোন শাস্তি সম্পর্কিত আয়াতে আসতেন, তখন সামনে অগ্রসর হওয়া বন্ধ রেখে শাস্তি হতে আশ্রয় চাইতেন। (সুনানে তিরমিজ ২৬২)

২. আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘ ও সাজদাহ্য় এ দু‘আ পড়তেন (سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي) ‘‘হে আমাদের রব আল্লাহ্! আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন’’। (সহিহ বুখারি ৭৯৪ তাওহীদ,  ৭৫০ আধুনিক, ৭৫৮ ইফাঃ)

৩. আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা্ এবং রুকূ‘তে ‘সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার্ রূহ্’’ বলতেন। (আবু দাউদ ৮৭২)

৪. ‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায়ে দাঁড়ালাম। তিনি সূরাহ বাক্বারাহ্ তিলাওয়াতের সময় কোন রহমতের আয়াতে পৌঁছলে তথায় থেমে রহমত চাইতেন এবং যখন কোন আযাবের আয়াতে পৌঁছতেন, তখন সেখানে থেমে আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। অতঃপর তিনি ক্বিয়ামের সমপরিমাণ সময় রুকূ‘তে অবস্থান করেন এবং তাতে ‘‘সুবহানা যিল্ জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল ‘আযমাতি’’ পাঠ করেন। অতঃপর তিনি ক্বিয়ামের সমপরিমাণ সময় সিজদাতে অবস্থান করেন এবং তাতেও উক্ত দু‘আ পাঠ করেন। অতঃপর তিনি (দ্বিতীয় রাক‘আতে) দাঁড়িয়ে সূরাহ্ আলে-‘ইমরান তিলাওয়াত করেন। অতঃপর (প্রত্যেক রাক‘আতে) একটি করে সূরাহ তিলাওয়াত করেন। (আবু দাউদ ৮৭৩)

৫. আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলেন, তখন তোমরা اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ  বলবে। কেননা, যার এ উক্তি মালাইকাহর উক্তির সঙ্গে একই সময়ে উচ্চারিত হয়, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (সহিহ বুখারি ৭৯৬)

৬. আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলে (রুকূ‘ হতে উঠতেন) তখন اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ  বলতেন, আর তিনি যখন রুকূ‘তে যেতেন এবং রুকূ‘ হতে মাথা উঠাতেন, তখন তাকবীর বলতেন এবং উভয় সিজদা্ হতে যখন দাঁড়াতেন, তখন اللهُ أَكْبَرُ বলতেন। (সহিহ বুখারি ৭৯৫)

৭. আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (একরাতে) আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর বিছানায় না পেয়ে তাঁকে হাতড়িয়ে তালাশ করতে লাগলাম। আমি মনে করেছিলাম তিনি তার অন্য কোন স্ত্রীর নিকট গিয়ে থাকবেন। এমতাবস্থায় আমার হাত তাঁর উপর পতিত হলো, তখন তিনি সিজদায় থেকে বলছিলেনঃ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ 

(সুনানে নাসাঈ ১১২৭)

৮. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ এবং সিজদায বলতেন,

« رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ »  

এর দ্বারা তিনি কুরআনের মর্ম বর্ণনা করতেন। (সুনানে নাসাঈ ১০৪৭)

ঘ। দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দোয়াঃ

দুই সিজদার মাঝে পড়তে হবেঃ

 «رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي».

উচ্চারণঃ রব্বিগফির লী, রব্বিগফির লী।

অর্থঃ হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।

দুই সিজদার মাঝে আরও পড়তেন,

 «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِي».

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফির লী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়া‘আফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন।

দলিলঃ

১. হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু সিজদার মাঝখানে বসে বলতেনঃ রব্বিগফির লী রব্বিগফির লী (প্রভু! আমায় ক্ষমা করুন, প্রভু আমায় ক্ষমা করুন। (ইবনে মাজাহ ৮৯৭)

২. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’সাজদার মাঝখানে (বসে) বলতেনঃ

«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي»

(আল্লাহুম্মাগ ফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়া আফিনী, ওয়ারযুকনী)।

অর্থঃ হে প্রভু! আমায় ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে পথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুখী করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন।) হাকিম একে সহীহ বলেছেন। (আবূ দাউদ ৮৫০, তিরমিযী ২৮৪, ইবনু মাজাহ ৮৯৮)

ঙ। সালাতের বৈঠকে তাশাহুদ ছিল নিম্মরুপঃ 

– «التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَواتُ، وَالطَّيِّباتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ. أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسولُهُ».

উচ্চারণঃ আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্‌সালাওয়া-তু ওয়াত্তায়্যিবা-তু আস্‌সালা-মু ‘আলাইকা আইয়্যূহান নাবিয়্যূ ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আস্‌সালা-মু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লা-হিস সা-লেহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু।

অর্থঃ “যাবতীয় অভিবাদন আল্লাহ্‌র জন্য, অনুরূপভাবে সকল সালাত ও পবিত্র কাজও। হে নবী! আপনার উপর বর্ষিত হোক সালাম, আল্লাহর রহমত ও বরকতসমূহ। আমাদের উপর এবং আল্লাহ্‌র সৎ বান্দাদের উপরও বর্ষিত হোক সালাম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,  আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই এবং আমি আরও  সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ্‌র বান্দা ও রাসূল”।

দলিলঃ

১. ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাশাহ্হুদ শিক্ষা দিতেন, যেমন তিনি আমাদেরকে কুরআনের সূরাহ শিখাতেন। তিনি বলতেনঃ

*التَّحِيَّاتُ الْمُبَارَكَاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ لِلَّهِ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ*

অর্থঃ সব তাযীম ভক্তি-শ্রদ্ধা, নামায, সব পবিত্র ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহর জন্য, আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নাবী, আপনার উপর সালাম এবং আপনার উপর আল্লাহ তা’আলার অসীম রহমত ও বরকত। আমাদের জন্য এবং আল্লাহর অন্যান্য নেক বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে শান্তি অবতীর্ন হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এক আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। (ইবনে মাজহ ৯০০, তিরমিযী ২৯০, নাসায়ী ১১৭৪)

চ। তাশাহুদের পরের দোয়া ও কালামঃ

তাশাহুদের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত (দরুদ) পাঠ করবে। এই দুরুটিকে দুরুদে ইব্রাহীম বলা হয়। দুরুদটি হলোঃ  

«اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ».

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ আপনি ইবরাহীম (আঃ) এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের উপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহীম (আঃ) এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী।

দলীলঃ

১. ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কা‘ব ইবনু উজরা (রাঃ) আমার সঙ্গে দেখা করে বললেন, আমি কি আপনাকে এমন একটি হাদিয়া দেব না যা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি? আমি বললাম, হাঁ, আপনি আমাকে সে হাদিয়া দিন। তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর কিভাবে দরূদ পাঠ করতে হবে? কেননা, আল্লাহ তো (কেবল) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাম করব। তিনি বললেন, তোমরা এভাবে বল, ‘‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ আপনি ইবরাহীম (আঃ) এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের উপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহীম (আঃ) এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী। সহিহ বুখারি ৩৩৭০, তিরমিযী ৪৮৩, নাসায়ী ১২৮৭-৮৯, আবূ দাঊদ ৯৭৬,)

ছ। দুরুদের পর ও সালাম ফিরানোর পূর্বে দোয়া পড়তে হয়ঃ

এখানে সরাসরি হাদিস উল্লেক করা হল। যাতে দেখানো হয়েছে কি ভাষায় সালাতের মাঝে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  দোয়া করতেন ।

১. আবূ বাকর সিদ্দীক (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরয করলেন, আমাকে সালাতে পাঠ করার জন্য একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু‘আটি বলবে-

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّك أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ (সহিহ বুখারী ৮৩৪ এবং ৭৯৫ ইফাঃ)

২. ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিচের দু‘আটি এমনভাবে শিখাতেন, যেমনভাবে তাদেরকে কুরআনের সূরাহ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলেনঃ

«اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ»

র্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আযাব হতে আশ্রয় চাই, কবরের আযাব হতে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই মাসীহ দাজ্জালের ফিতনাহ হতে এবং আশ্রয় চাই জীবন ও মরণের বিপদাপদ হতে। (আবু দাউদ ১৫৪২, তিরমিজি ৩৪৯৪)

৩. ‘উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রহ.) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) তাঁকে বলেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে এ বলে দু‘আ করতেনঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

‘‘কবরের আযাব হতে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে ইয়া আল্লাহ্! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ্! গুনাহ্ ও ঋণগ্রস্ততা হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।’’

তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেনঃ যখন কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। (সহিহ বুখারি ৮৩২)

৪. মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এ দু‘আটি কখনো পরিহার করবে নাঃ

 «اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبادَتِكَ».

‘‘আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা’’ (অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন)। অতঃপর মু‘আয (রাঃ) আস-সুনাবিহী (রহঃ)-কে এবং আস-সুনাবিহী ‘আবদুর রহমানকে এরূপ দু‘আ করার ওয়াসিয়াত করেন।  (আবু দাউদ ১৫২২)

৫. সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেভাবে লেখা শিখানো হতো ঠিক তেমনিভাবে আমাদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু‘আ শিখাতেনঃ

 «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ، وَأَعوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الْقَبْرِ».

হে আল্লাহ! আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। আর আমি ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। আর আপনার আশ্রয় চাচ্ছি আমাদেরকে বার্ধক্যের আতিশয্যের দিকে ফিরিয়ে দেয়া থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি দুনিয়ার ফিতনা এবং কবরের শাস্তি হতে। (বুখারি ৬৩৯০)

৬. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি সালাতে কী পড়ো? সে বললো, আমি তাশাহ্হুদ পড়ার পর আল্লাহ্‌র নিকটে, (প্রর্থনা করি)

«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ».

জান্নাত প্রার্থনা করি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। তবে আল্লাহ্‌র শপথ! আপনার ও মুআযের নীরব দুআ কতই না উত্তম। তিনি বলেনঃ আমরা নীরবে জান্নাতের পরিবেশ লাভের দুআ করি। ইবনে মাজাহ ৯১০)

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “সালাতের পূর্বে ও অভ্যান্তরের দোয়াসমূহ

Leave a comment