হজ্জের মীকাত

হজ্জের মীকাত

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। মীকাতঃ

হজ্জ বা উমরার নিয়তে মক্কার কাবা ঘরের উদ্যশ্যে গমনকারীদেরকে কাবা হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয় যা হাদিস দ্বারা প্রমানিত। এই স্থানগুলোকে মীকাত বলা হয়। হারাম শরীফের চর্তুদিকেই মীকাত রয়েছে। হজ্জের সময় নির্দষ্ট দিন ক্ষন থাকলেও উমরা জন্য কোন নির্দিষ্ট দিন ক্ষন নাই। তাই সময়ের হিসাবে ও হজ্জের সময়ের মীকার আছে। এই হিসাবে মীকাত দুই প্রকার। যথাঃ 

১। সময়ের মীকাত

২। স্থানের মীকাত

১। সময়ের মীকাতঃ

হজ্জের জন্য সময় নির্দিষ্ট করা আছে। মহান আল্লাহই হজ্জের তারিখ নির্দষ্ট করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

 الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ وَمَا تَفْعَلُواْ مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللّهُ وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُونِ يَا أُوْلِي الأَلْبَابِ

অর্থঃ হজ্জ্বে কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজ্জ্বের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীও সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। না অশোভন কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ করা হজ্জ্বের সেই সময় জায়েজ নয়। ( সুরা বাকারা ২:১৯৭)

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الأهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ

“নতুন চাঁদ সম্পর্কে লোকেরা আপনাকে প্রশ্ন করে, বলুন, তা মানুষ এবং হজ্জের জন্য সময় নির্দেশক।

(সুরা বাকারাঃ ২:১৮৯)।

১. ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, হজ্জ-এর মাসগুলো হলঃ শাওয়াল, যিলক্বাদ এবং যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ সুন্নাত হল, হজ্জের মাসগুলোতেই যেন হজ্জের ইহ্‌রাম বাঁধা হয়। কিরমান ও খুরাসান হতে ইহ্‌রাম বেঁধে বের হওয়া ‘উসমান (রাঃ) অপছন্দ করেন।

২. ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারবিয়ার দিন (৮ যিলহজ্জ) মিনায় যুহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামায পড়েন, অতঃপর ভোরবেলা আরাফাতে রওয়ানা হন। (ইবনে মাজাহ ৩০০৪, তিরমিজি ৮৮০ ইফাঃ)

হজ্জের সময়ের মীকাত দুই মাস দশ দিন। সময়ের মীকাত হল শাওয়াল মাস থেকে যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিন পর্যন্ত এ সময়গুলোকে হজ্জের মাস বলা হয়। অপরদিকে উমরা জন্য কোন সময় নির্দিষ্ট নেই। বছরের যে কোন সময় উমরার নিয়ত করা যাবে, শুধু জিলহজ্জের ৮ থেকে ১৩ পর্যান্ত যে কয় দিন হজ্জের কার্যক্রম চলে এই কয় দিন বাদ দিতে হবে।

১. ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, হজ্জ-এর মাসগুলো হলঃ শাওয়াল, যিলক্বাদ এবং যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ সুন্নাত হল, হজ্জের মাসগুলোতেই যেন হজ্জের ইহ্‌রাম বাঁধা হয়।

২. আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) বলেনঃ যদি কেউ হজ্জের মাসে অর্থাৎ শাওয়াল, যিলকা’দা, যিলহজ্জ মাসে হজ্জের পূর্বে উমরা আদায় করিয়া মক্কায় এতদিন অবস্থান করে, যতদিনে সে হজ্জই আদায় করিতে পারে, তাহার এই হজ্জ তামাত্তু বলিয়া গণ্য হইবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তাহার উপর কুরবানী করা জরুরী হইবে। যদি কুরবানী করার সামর্থ্য তাহার না থাকে তবে মক্কায় অবস্থানকালে তিনদিন এবং বাড়ি ফিরিয়া আর সাতদিন তাহাকে রোযা রাখিতে হইবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ উক্ত হুকুম তখনই প্রযোজ্য হইবে যখন উমরা সমাপন করিয়া হজ্জ পর্যন্ত মক্কায় অবস্থানরত থাকিবে এবং হজ্জও করিবে।

৩. মালিক (রহঃ) বলেনঃ মক্কার বাসিন্দা কোন ব্যক্তি অন্য কোথাও গিয়া বসতি স্থাপন করিল। হজ্জের মাসে সে উমরা করিতে আসিয়া মক্কায় অবস্থান করিয়া হজ্জ সমাধা করিল। তাহার এই হজ্জ হজ্জে তামাত্তু বলিয়া গণ্য হইবে। এই ব্যক্তির উপর কুরবানী করা জরুরী হইবে। কুরবানী করিতে না পারিলে তাহাকে রোযা রাখিতে হইবে। মক্কার অপরাপর স্থায়ী বাসিন্দার মত তাহার হুকুম হইবে না। (মুয়াত্তা মালিক ৭৬০, হজ্জ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ ১৯, রেওয়াত ৬৫ ইফাঃ)

৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজের মাসসমূহ ছাড়া অন্য মাসে উমরা পালনের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি রমাজান মাসে হজ্জ করার ফজিলত বর্ণনা করেছেন।

৫. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী মহিলাকে বললেনঃ আমাদের সঙ্গে হাজ্জ করতে তোমার বাধা কিসের? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মহিলার নাম বলেছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি। মহিলা বলল, আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল। কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আচ্ছা, রমাযান এলে তখন ‘উমরাহ করে নিও। কেননা, রমযানের একটি ‘উমরাহ একটি হাজ্জের সমতুল্য। অথবা এরূপ কোন কথা তিনি বলেছিলেন। (সহিহ বুখারী ১৭৮২ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ হজ্জের মাস শুরু হওয়ার আগে হজ্জের ইহরাম সহীহ নয়। আল্লাহ তা‘আলা হজের মাসসমূহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাই হজ্জের মাস শুরু হওয়ার আগে (শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের আগে) হজ্জের ইহরাম বাঁধা বিশুদ্ধ মতানুযায়ী সঠিক নয়। অর্থাৎ শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের আগে ইহরাম বাধলে তান উমরার ইহরাম হিসেবে গণ্য হবে। ঠিক তেমনিভাবে হজ্জের কোন আমল উযর ছাড়া যিলহজ্জ মাসের পরে পালন করা জায়েয নয়। তবে নিফাসবতী মহিলা যিলহজ্জ মাসে পবিত্র না হলে তিনি ফরয তাওয়াফ যিলহজ্জ মাসের পরে আদায় করতে পারবেন।

২। স্থানের মীকাতঃ

পূর্বেই বলেছি, হজ্জের উদ্দেশ্য মক্কা (বাইতুল্লহ) গমনকারীদেরকে বাইতুল্লাহ হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়, যে স্থানগুলো নবীজির হাদীস দ্বারা নির্ধারিত তাকে স্থানের মীকাত বলে।

মিকাত সম্পর্কিত নিম্মের হাদিসগুলো লক্ষ করি।

১. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ্‌রাম বাঁধার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, মদিনাবাসীদের জন্য যুল-হুলাইফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা, নজদবাসীদের জন্য কারনুল-মানাযিল, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম। উল্লেখিত স্থানসমূহ হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার নিয়্যাতকারী সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান এবং মীকাতের ভিতরে স্থানের লোকেরা নিজ বাড়ি থেকে ইহ্‌রাম বাঁধবে। এমনকি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকেই ইহ্‌রাম বাঁধবে। (সহিহ বুখারী ১৪৩৬ ইফাঃ, ১৫৩০ তাওহীদ সুনানে নাসাঈ ২৬৬০))

২. আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদীনাবাসীরা ইহরাম বাঁধবে যুলহুলাইফ থেকে, আর সিরিয়াবাসীগণ জুহফা নামক স্থান থেকে, নজদবাসীগণ কারন’ নামক স্থান হতে। আমর নিকট বর্ণনা পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আর ইয়ামানবাসীগণ তালবিয়া পাঠ করবে ইয়ালামালাম থেকে। (সুনানে নাসাঈ ২৬৫৩)

২. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাবাসীদের জন্য ‘যুল হুলায়াফা’ কে মীকাত নির্ধারণ করেছেন এবং সিরিয়া ও মিশরবাসীদের জন্য ‘জুহফা’, ইরাকীদের জন্য ‘যাতি ইরক’-কে আর ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামালাম’ কে। (সুনানে নাসাঈ ২৬৫৫)

৪. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ শহর দু’টি (কূফা ও বসরা) বিজিত হল, তখন সে স্থানের লোকগন ‘উমর (রাঃ) এর নিকট এসে নিবেদন করল, হে আমীরুল মু’মিনীন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদবাসীগণের জন্য (মীকাত হিসাবে) সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন কারন, কিন্তু তা আমাদের পথ থেকে দূরে। কাজেই আমরা কারন-সীমায় অতিক্রম করতে চাইলে তা হবে আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। ‘উমর (রাঃ) বললেন, তা’ হলে তোমরা লক্ষ্য কর তোমাদের পথে কারন-এর সম দূরত্ব-রেখা কোন স্থানটি? তারপর তিনি যাতু’ইরক মীকাতরূপে নির্ধারণ করেছেন। (সহিহ বুখারী ১৪৪০ ইফাঃ)

৫. আবদুল্লাহ ‘ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, যখন এ শহর দু’টি (কূফা ও বস্‌রা) বিজিত হলো, তখন সে স্থানের লোকগণ ‘উমর (রাঃ) এর নিকট এসে নিবেদন করলো, হে আমীরুল মু’মিনীন ! আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজদবাসীগণের জন্য (মীকাত হিসেবে) সীমা নির্ধারন করে দিয়েছেন ক্বারণ, কিন্তু তা আমাদের পথ হতে দূরে। কাজেই আমরা ক্বারণ-সীমা অতিক্রম করতে চাইলে তা হবে আমদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। ‘উমর (রাঃ) বললেন, তা হলে তোমরা লক্ষ্য কর তোমাদের পথে ক্বারণ-এর সম-দূরত্বরেখা কোন স্থানটি? অতঃপর “যাতু ইরক্ব” মীকাতরূপে নির্ধারন করেছেন। (সহিহ বুখারী ১৫৩১ তাওহীদ প্রকাশনী)

৬. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরাকবাসীদের জন্য ‘যাতু ইরক’ কে মীকাত নির্ধারণ করেছেন। (আবু দাউদ ১৭৩৯ ইফাঃ)

উপরের হাদিসগুলো ষ্পষ্টভাবে মীকাতের স্থানগুলোর নাম উল্লেখ করছেন। হাদিসসমূহে উল্লেখ থাকার কারনে হজ্জের মীকাত নিয়ে মুসলিমদের মাঝে কোন প্রকার মতভেদ নাই। হাদিসগুলির আলোকে যে কেউ তার মীকাত সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরাও হাদিসেগুলোর আলোকে বলেত পারি সব মিলিয়ে মীকাতের স্থানগুলো নিম্মরুপঃ

১। মদ্বীনাবাসীদের জন্য যুল হুলাইফা

২। সিরিয়াবাসীদের জন্য আল-জুহফা

৩। নজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল

৪। ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম

৫। ইরাকবাসীদের জন্য যাতুইরক

৬। মীকাতে অবস্থানকারীগণ নিজ বাড়ি

৭। মক্কাবাসীদের মীকাত মক্কা

মন্তব্যঃ মক্কাবাসি বাদে পৃথিবীর সকল মুসলিদের জন্য মীকত পাঁচটি। এই জন্য অনেকে মীকাতের স্থান পাঁচ হিসাবে উল্লেখ করে থাকে। আমি এখানে বুঝার জন্য সাতটি উল্লেখ করছি।

ক। যুল-হুলাইফাঃ

যুলহুলাইফা স্থানটি এখন ‘আবইয়ারে আলী’ নামে পরিচিত। এটি মসজিদে নববী থেকে ১৩ কিলোমিটার এবং মক্কা শহর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মদ্বীনাবাসী এবং এ পথ দিয়ে যারা আসে তারা এখান থেকে ইহরাম বাধবে। মক্কা শহর থেকে এটাই সবচেয়ে দূরতম মীকাত।

খ। আলজুহফাঃ

আলজুহফা স্থানটি লোহিত সাগর থেকে ১০ কিলোমিটার ভিতরে ‘রাবেগ’ শহরের কাছে। জুহফাতে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘রাবেগ’ নামক স্থান থেকে এখন লোকেরা ইহরাম পরে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এখন এটি একটি বড় শহর। জম্মুম উপত্যকার পথ ধরে মক্কা শহর থেকে এ স্থানটি ১৮৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম পরিধান করে তা হলঃ

(ক) সিরিয়া, (খ) লেবানন, (গ) জর্দান, (ঘ) ফিলিস্তীন, (ঙ) মিশর, (চ) সূদান, (ছ) মরক্কো, (জ) আফ্রীকার দেশসমূহ (ঝ) সৌদী আরবের উত্তরাঞ্চলীয় কিছু এলাকা এবং (ঞ) মদ্বীনার পথ ধরে যারা আসে না তারাও এখান থেকে ইহরাম বাঁধে।

গ। কারনুল মানাযিলঃ

কারনুল মানাযিল স্থানটি এখন “সাইলুল কাবীর” নামে প্রসিদ্ধ। সরকারী বেসরকারী অফিস আদালতসহ এটি এখন একটা বড় গ্রাম। মক্কা থেকে এর দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার। যেসব এলাকা ও দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধে সেগুলো হলঃ (ক) রিয়াদ, দাম্মাম ও তায়েফ (খ) কাতার (গ) কুয়েত (ঘ) আরব আমীরাত (ঙ) বাহরাইন (চ) ওমান (ছ) ইরাক, (জ) ইরানসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ এবং এ পথ দিয়ে যারা আসে।

ঘ। ওয়াদী মুহরিমঃ

এই স্থানটি তায়েফ-মক্কা রোডে ‘হাদা’ এলাকা হয়ে মক্কা শরীফ গমনের পথে মক্কা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটা নতুন কোন মীকাত নয়, এটি কারনুল মানাযিলেরই অংশ বিশেষ। অর্থাৎ কারনুল মানাযিলের অনর্ভুক্ত “ওয়াদী মুহরিম” আরেকটি স্থান থেকে লোকেরা ইহরাম বাঁধে।

ঙ। ইয়ালামলামঃ

এটি কোন স্থান নয়। ইহা একটি একটি পাহাড়ের নাম বলে জানা যায়। এ জায়গাটি মক্কা শরীফ থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এলাকাটি ‘সাদীয়া’ নামেও পরিচিত। যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধে সেগুলো হলঃ (ক) ইয়ামেন, (খ) বাংলাদেশ, (গ) ভারতবর্ষ, (ঘ) চীন, (ঙ) ইন্দোনেশিয়া, (চ) মালয়েশিয়া, (ছ) দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্বের দেশসমূহ।

চ। যাতুইরকঃ

যাতুইরক স্থানটি মক্কা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট না থাকায় এটি এখন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। এটা ছিল ইরাকবাসীদের মীকাত ছিল। তারা এখন তৃতীয় মীকাত ‘সাইলুল কাবীর’ ব্যবহার করে।

এই মীকাতগুলো হারাম শরীফের চর্তুদিকেই রয়েছে। যিনি হজ্জ ও উমরার উদ্দেশ্য মক্কায় আসবেন তাকে অবশ্যই মীকাত অতিক্রম করার আগে ইহরাম বাধতে হবে। মক্কাবাসিদের হজ্জের ইহরাম হলে নিজ নিজ ঘর থেকে, আর উমরার ইহরাম হলে মসজিদে তানয়ীমে যাবে অথবা হারামের সীমানার বাইরে যে কোন স্থানে গিয়ে বাঁধবে। মক্কায় চাকরীরত বিদেশীরাও তাই করবে।

যদি মীকাত অতিক্রমের আগে ইহরাম বাধতে ব্যর্থ হয় তবে তাকে অবশ্যই আবার মীকাতে ফিরে গিয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে, নতুবা একটি দম দিতে হবে অর্থাৎ একটি ছাগল, বকরী বা দুম্বা জবাই করে মক্কায় গরীবদের মধ্যে এর গোশত বিলি করে দিতে হবে। নিজে খেতে পারবে না।

মীকাত সম্পর্কিত একটি ত্রুটিঃ

আমাদের দেশে যারা হজ্জে গমন করে তাদের অধিকাংশই বয়স্ক ও ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ। মীকতের পূর্বে ইহরাম বাধা ওয়াজিব বিষটি সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নাই। যারা শহরে সাথের বা শিক্ষতি তারা বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে বা বই পড়ে যেনে নেন। ফলে তার ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু গ্রামের বয়স্ক, ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ চাচা যিনি হজ্জে যাচ্ছেন কিন্তু কোন সেমিনারের অংশ গ্রহন করেন নাই বা বই পড়েও শিখেন নাই। তিনি সব কাজের গাইডের উপর নির্ভরশীল তার জন্য বিষয়টি খুবই কষ্টকর। তাই তাকে বার বার বুঝিয়ে দিতে হবে মীকাত কি? কোথায় গিয়ে কখন ইহরাম বাধতে হবে। এ ব্যাপার গাইডের একটি বড় ভুমিকা আছে। গাইডকে একটু সচেতান হতে হবে। তার অধীনে যত জন হজ্জযাত্রী আছেন, তাদের মধ্য যারা বিষয়টি সম্পর্কে বলার পরও আদায় করেত পারবেন বলে মনে হবে, তাদের প্রতি একটু আলাদা খেয়াল রাখতে হবে। তাছাড়া হজ্জযাত্রী তার নিজের বাড়ি থেকে কিংবা এয়ারপোর্ট থেকে গোসল করে আসবেন এবং বিমানে বসে ইহরামের প্রস্তুতি নিবেন। বিমানে উঠার আগেও ইহরামের কাপড় পরে নিতে পারেন। এরপর যখন বিমান মীকাত বরাবর আসবে ঠিক তখন নিয়দ করে ইহরাম বাঁধবেন এবং সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ করবেন। তার জন্য মীকাত থেকে ইহরাম না বেঁধে জেদ্দা থেকে বাঁধা জায়েয হবে না। বিমানে অনেক হজ্জযাত্রী ঘুমিয়ে থাকের তারা বিমানে ঘোষনা শুনতে পান না। যার হলে মীকাত অতিক্রম করার সময় ইহরান বাধতে পারেনা। এই জন্য দেখা যায় আমাদের দেশে অনেক হজ্জযাত্রী এয়ারপোর্টেই ইহরাম বেধে ফেলেন। বিষয়টি সুন্নাহ সম্মত না হলেও অনেক আলেম জায়েয বলেছেন। 

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “হজ্জের মীকাত

Leave a comment