ফাতিহা–ই-ইয়াজদাহাম উদযাপন একটি বিদআত

ফাতিহা–ই-ইয়াজদাহাম উদযাপন একটি বিদআত

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

***  ফাতিহা–ই-ইয়াজদাহাম পালন করাঃ

রড় পীর খ্যাত আব্দুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ হিজরী ৫৬১ সালের ১১ রবিউস সানী ৯১ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। তার কিছু অনুসারি প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তার ওফাতের দিন পালন করে থাকেন। তার মৃত্যু বার্ষিকী ফাতিহা–ই-ইয়াজদাহাম হিসেবে পরিচিত। ফাতিহা ও ইয়াজদাহম দুটি ফার্সি শব্দ। ফাতিহা অর্থ দোয়া, আর ইয়াজদাহম অর্থ এগারো। ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম’ বলতে এগারো-এর ফাতিহা বা দোয়াকে বুঝায়। এক কথায় রবিউস সানি মাসের ১১ তারিখের ইছালে সওয়াবের মাহফিলকে ‘ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম’ বলে। ফার্সি ভাষার প্রভাবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, বৃহৎ রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল, ইরাক প্রভৃতি স্থানে ‘ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম’ অর্থাৎ এগারো-এর ফাতিহা নামে উদ্যাপিত হয়। এই দিনটি উৎযাপন করা যে বিদআতে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারন ইসলামে কোন জন্ম মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হারাম কাজ। 

আব্দুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ হলেন ইসলাম ধর্মে অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ত্ব। তিনি ইসলামের অন্যতম প্রচারক হিসাবে সুবিদিত। আব্দুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ কে ‘বড়পীর’ হিসাবে মুসলিম বিশ্বে সমধিক পরিচিত। তিনি ০১ রমজান ৪৭১ হিজরিতে ইরাকের বাগদাদ নগরের অন্তর্গত জিলান শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। জিলানের অধিবাসি হিসাবে তিনি জিলানী নামে নামে পরিচিতি লাভ করে। তাকে সম্মান প্রদানের জন্য আবু মোহাম্মাদ মুহিউদ্দিন নামে উপাধি প্রদান করা হয়। তার পিতার নাম আবু সালেহ মুছা জঙ্গী এবং মাতার নাম উম্মুল খায়ের ফাতেমা। জীবনি লেখকদের মতে তার মাতা হাসান ইবনে আলী রাঃ এর বংশধর।

শিক্ষাঃ

 হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রাহিমাহুল্লাহ এর বাল্য শিক্ষার হাতে খড়ি হয়েছিল জ্ঞানবান পিতা ও গুনবতী মাতার মাধ্যমে। তিনি স্বীয় পিতা মাতার মাধ্যমেই প্রথমিক স্তরের শিক্ষনীয় বিষয়গুলি গৃহে বসেই সমাপ্ত করেছিলেন। সর্বপ্রথমেই তিনি পবিত্র কোরান পাঠ করা শিক্ষা করেন। গৃহশিক্ষার বাইরেও তিনি জিলান নগরের স্হানীয় মক্তবেও বিদ্যা শিক্ষা করেছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ৪৮৮ হিজরীতে যখন প্রথম তিনি বাগদাদ গমন করেন তখন তার বয়স হয়েছিল আঠার বৎসর। বাগদাত এসে তিনি শায়েখ আবু সাইদ ইবনে মোবারক মাখযুমী হাম্বলী, আবুল ওয়াফা আলী ইবনে আকীল (রহ:) এবং আবু মোহাম্ম ইবনে হোসাইন ইবনে মুহাম্মদ রাহিমাহুল্লাহ এর নিকট ইলমে ফিকাহ, শায়েখ আবু গালিব মুহাম্মদ ইবনে হাসান বাকিল্লানী রাহিমাহুল্লাহ, শায়েখ আবু সাইদ ইবনে আব্দুল করীম ও শায়েখ আবুল গানায়েম মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহম্মদ রাহিমাহুল্লাহ প্রমুখের নিকট এলমে হাদীস এবং শায়েখ আবু যাকারিয়া তাবরেয়ী রাহিমাহুল্লাহ নিকট সাহিত্যের উচ্চতর পাঠ লাভ করেন। শায়খ জীলানীর বাহ্যিক ও আধ্যাত্নিক জ্ঞান চর্চার গূরু শায়খ আবু সাঈদ মাখযুমীর মনে তরুন এ শিষ্যের যোগ্যতা ও প্রতিভা সম্পর্কে এতই সুধারনা ও আস্হাশীলতার সৃষ্টি করল যে, নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা তত্তাবধান ও পরিচালনার দায়িত্ব শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী রাহিমাহুল্লাহ এর নিকট অর্পন করে তিনি নিজে অবসর গ্রহন করেন।

কর্মজীবনঃ

শিক্ষা-দীক্ষায় পূর্ণতা অর্জনের পর তিনি নিজেকে পবিত্র ইসলাম ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত করেন। বিভিন্ন মাহফিলে তিনি ইসলামের সুমহান আদর্শ যুক্তিপূর্ণ ভাষায় বর্ণনা করতেন। তার মহফিলে শুধু মুসলমান নয়, অনেক অমুসলিমও অংশগ্রহণ করতো। তার বক্তব্য শুনে অনেক অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কাব্য, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের পণ্ডিত ছিলেন। তার রচিত বহু গ্রন্থ রয়েছে। এসব গ্রন্থের মধ্যে ‘ফতহুল গায়ের’, ‘গুনিয়াতুত তালেবীন’, ফতহুর রবযানী, ‘কালীদায়ে গাওসিয়া’ উল্লেখযোগ্য।

 

উপাধিঃ

অনেক বিদআতি সুফি তাকে বলেন, পীরানে পীর দস্তগীর, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বালি, গাউসে ছামদানী, নুরে ইয়াজদানী, গাউসুল আযম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ। এ উপাধিগুল কখন আব্দুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ এর নিজের দেয়া হতে পারেনা। যারা তার অনুসরণ করেন, অতিমাত্রায় শ্রদ্ধা করেন তারা এ উপধিগুল দিয়ে থাকতে পারেন। তার লিখিত ‘গুনিয়াতুত তালেবীন’ কিতাব খানা পড়লে আপনার ভুল ভেঙ্গে যাবে এই কিতাবটি সহিহ সুন্নাহর ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। অবশ্য তিনি কখনও লিখেন নাই এমন কিতাবও তার নাম দিয়া প্রকাশ করা হয়েছে। তার নামে ব্যবহৃত এই উপাদিগুল ব্যবহার করা কত টুকু যৌক্তিক একটু ভেবে দেখি।


পীরানে পীরঃ পীর একটি ফার্সি শব্দ যার অর্থ শায়খ, শিক্ষক। তাহলে পীরদের পীর এর অর্থ হল শায়েদ এর শায়েখ, বা পীরের পীর বা বড় বা শ্রেষ্ঠ পীর। সুফিরাদিরা যেহেতু পীরতন্ত্রে বিশ্বাসি কাজের তাদের নিকট তিনি বড় পীর। কাজেই তাকে বলা অন্যায় হবে না।

 

দস্তগীরঃ দস্তগীল এর অর্থ “হাত ধরা”। “দস্ত” মানে হচ্ছে “হাত” এবং “গীর” মানে হচ্ছে “ধরা”। এই সম্পর্কে যে কাহিনী প্রচলিত আছে যে উনি এবং আল্লাহ এক সাথে হাটছিলেন। হঠাৎ করে আল্লাহ পড়ে যাচ্ছিলেন এবং আব্দুল কাদের জিলানী আল্লাহর হাত ধরে ফেলেন এবং আল্লাহকে পতন থেকে রক্ষা করেন। (নাউজুবিল্লাহ মহান আল্লাহ এ থেকে অনেক পবিত্র) এই জন্য উনার টাইটেল বা উপাধি দস্তগীর।

এই ধরনের কথা কোন মুসরিকও বলতে পারবে না। কারন তারা জানে তাদের বানান মাবুদগুলিও এ ধারনা থেকে বড়। আর মহান আল্লাহ অনেক এ সকল শির্কি কথা থেকে পবিত্র ও অমুখাপেক্ষি।

 

গাউসুল আযমঃ “গাউস” শব্দের অর্থ ত্রাণকর্তা, রক্ষাকর্তা, পরিত্রাণদানকারী, উদ্ধার কারী ইত্যাদি। এবং “আজম” শব্দের অর্থ মহান, বড় বা সর্বশ্রেষ্ঠ। গাউসুল আজম শব্দের অর্থ হল সর্ব শ্রেষ্ঠ ত্রাণকর্তা। আল্লাহ সম্পর্কে যাদের নুন্যতম ধারণা আছে তারা বুঝবেন এই উপাধি কার জন্যঃ আল্লাহ নাকি আব্দুল কাদের জিলানী।

মহান আল্লাহ বলেন,

 قُلۡ مَنۢ بِيَدِهِۦ مَلَكُوتُ ڪُلِّ شَىۡءٍ۬ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيۡهِ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ (٨٨) سَيَقُولُونَ لِلَّهِ‌ۚ قُلۡ فَأَنَّىٰ تُسۡحَرُونَ (٨٩) 

অর্থ তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, বলো যদি তোমরা জেনে থাকো, কার কর্তৃত্ব চলছে প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর? আর কে তিনি যিনি আশ্রয় দেন এবং তাঁর মোকাবিলায় কেউ আশ্রয় দিতে পারে না?   তারা নিশ্চয়ই বলবে, এ বিষয়টি তো আল্লাহরই জন্য নির্ধারিত ৷ বলো,তাহলে তোমরা বিভ্রান্ত হচ্ছো কোথায় থেকে?  (সুরা মুমিনুন ৮৮-৮৯)।

৪। কুতুবে রব্বানীঃ আবরি কিতাব শব্দ থেকে কুতুব শব্দটি উত্পত্তি হয়নি। কুতুব শব্দটি পরিচালনা কাজে সহায়তাকারী হিসাবে সুফিগন ব্যবহার করে থাকে। সুফিদের কিছু পরিভাষা আছে, যা তাদের কথিত অলীদের উপাদি হিসাবে ব্যবহার করে যেমনঃ গাওছ, আবদাল, ইমামাইন, নুকাবা, আবরার ইত্যাদি। কুতুব এমনই একটি পরিভাষা। যে সকল অলী আল্লাহকে পরিচালনাগত ভাবে সাহায্য করে তাদের কুতুব বলে। (নাউজুবিল্লাহ)।

তাদের কেউ কেই কুতুবুল আকবর, কুতুবুল আলম, কুতুবুল এরশাদ, কুতুবুল আক্তারও বলে। ইমলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ বই, যা আমাদের কওমী মাদ্রাস নেছাবভুক্ত এর ১৭৫ পৃষ্ঠায় লিখেন, কুতুবদের দুইজন উজিল থাকেন। তাদের আলাদা আলাদা নামও থাকে। ইহা ছাড়াও আরও অনেক কুতুব থাকেন। প্রত্যেক শহরে শহরে বা গ্রামে গ্রামে ও কুতুব থাকেন। কিতাবের শেষে লেখা আছে। এ সম্পর্কে কুরআন হাদিসে কিছুই বলা হয়নি। এ সবই সুফিদের কাশফ বা স্বপ্নের মাধ্যমে প্রাপ্ত, বেশী ঘাটাঘাটি না করাই ভাল। ঘাটাঘাটি করি আর না করি আল্লাহ পরিচালনা কাজে সাহায্য করা এমন আকিদা রাখলে মুসলিম থাকবে তো। না কি তার ইমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।

*** তার নামে প্ররচলিত শির্ক কথাঃ

আমাদের সমাজে বিভিন্ন বিদাআতি মাহফিলে বিদআতি আলেম তাদের নামে অনেক শির্ক মিশ্রিত কথা প্রচার করে। হয়ত তারা এ সম্পর্কে কথনও চিন্তা করেনি যে আমার এ কথা শির্ক কথা অথবা ঐ আলেম নামধারি লোকটি আসলে আলেম নয়, শির্ক সম্পর্কে তার জ্ঞানের সল্পতার জন্য শির্ক কথা বুঝতেই পারছেনা।

যেমনঃ বিদাআতি মাহফিলে বিদআতি আলেম তার নামে সনদবিহিনভাবে প্রচার করে, তিনি মানুষকে কবর থেকে জীবিত করেন, মুর্দা সাথে কথা বলেন জিব্রাইল আলাইহিস সালামের নিকট থেকে জোর করে রুহ ছিনিয়ে নেয়া। অনেক বছর আগে ডুবে যাওয়া কয়েকশ বরযাত্রীকে পুনঃ জীবিত করেন, আকাশে উড়ে বেড়ানো, বাঘ কে বশ করা, আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলা, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আল্লাহর সাথে তর্ক করা, ইসলাম কে পুনর্জীবন দান করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

সমাজের অধিকাংশ লোক অজ্ঞ তাদের শির্ক সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় সহজে এসব বিশ্বাস করে। এভাবে সমাজে প্রচলিত আছে, অযু ছাড়া তার নাম মুখে নিলে আগে মানুষের মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে যেত, এখন শরীর থেকে একটা পশম পড়ে যায়। সুফিদের নিকট এমন কাহিনী ও প্রচলিত আছে অল্প বয়সে বাবার সাথে সমজিদে গিয়ে জান্নাতি এবং জাহান্নামীদের জুতা আলাদা করে সাজিয়ে রাখেন। উনার দোয়ার কারনে বাগদাদে বাপের আগে ছেলে মারা যায়না। একজন মহিলার পাঁচ পাঁচটি কন্যা সন্তান ছেলেতে রুপান্ত হয়বাগদাদে একজন সদ্য বিবাহ লোকের বাসর রাতে জান কবচ করার কথা থাকলেও তার জন্য জান কবচ করতে পারে নাই ইত্যাদি ইত্যাদি।

তার নামে কিছু শির্ক ও বিদাআত মিশ্রিত কাহিনী বর্ণিত আছে যার কোন সনদ নাই। কোন কোন কাহিনী লোক মুখে প্রচারিত আবার তার নামে যে সকল বই বাজারে আছে সেখানেও উল্লেখ আছে। এমনই একটি বই হল “সিররুল আসরার বা মারেফতের নিগূঢ় রহস্য”  এই বইয়ে এমন কিছু কাহিনী আছে যা বললে এবং শুনলে ঈমান হারা হওয়ার আশংকা শতভাগ। এই “সিররুল আসরার বা মারেফতের নিগূঢ় রহস্য” বইটি কাদের জিলানী (রাহিঃ) এর নামে রশীদ বুক হাউস, ৬ প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা -১১০০ থেকে ২০১০ সালে প্রকাশ করে। বইটির তৃতীয় অধ্যায় আব্দুল কাদের জিলানী (রাহিঃ) এর ২৮ টি কেরামত উল্লেখক করা হয়েছে যার প্রতিটির মাঝে শির্কের গন্ধ পাওয়া যায়। বইটিতে দাবি করা হয়েছে যে, বইটি আব্দুল কাদের জিলানী (রাহিঃ) লেখা। আসলে এই বইটি তার লেখা নয়। বইটির কাভার পেজে লেখা হয়েছে। “সিররুল আসরার বা মারেফতের নিগূঢ় রহস্য”মূলঃ হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)। বঙ্গানুবাদঃ সুফী মুহাম্মাদ ইকবাল হোসেন কাদেরী।

বইটির মুল লেখক হিসাবে আব্দুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ এর নাম লেখা আছে। কিন্তু কোন যুক্তির ভিত্তিতে বলা হল, এই বইটি তার লেখা নয়। বইটির ৬৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ আধ্যাতিক জগতের সম্রাট মাওলানা জালাউদ্দিন রুমি তাহার অমর কাব্য গ্রস্থ মসনবীতে বলিয়াছেন,

“কাফ পর্বতে অবস্থিত সী মোরগের নিকট পৌছাইবার শক্তি আমার মধ্যে রহিয়াছে। আমি আমার জ্ঞানের দরিয়ায় নিশ্চিত হইয়া গিয়াছি যদি জিন এবং মানব প্রকাশ্যে আমাকে দেখিতে পায়”

বইটির ৬৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ

হযরত শামস তাবরীয রাহমাতুল্লাহি আলাই বলিয়াছেন, “তাওহীদ বৃক্ষের উচ্চ শাখার ফলে আমি পরিপূর্ণ পরিতৃপ্ত। আমার ফল দেখে পথিকগণ আমার প্রতি ঢিল নিক্ষেপ করে। তাহাদের এ ঢিল ছুড়াই আমি ভ্রুক্ষপ করিনা, লজ্জিতও হই না।

বইটির ৭৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ

হযরত ফরীদ উদ্দিন আত্তার রাহমাতুল্লাহি আলাই বলিয়াছেন, আল্লাহর নুরের মাঠে প্রেমাস্পদের সিংহাসন স্থাপিত রহিয়াছে, এবং উহার চারিপাশে সেনাবাহিনীর কোলাহল ধ্বনি অনবরত কর্ণকুহরে প্রবেশ করিতেছে।

একটু লক্ষ করুন আব্দুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ যে তিন জন (জালাউদ্দিন রুমি, হযরত শামস তাবরীয ও ফরীদ উদ্দিন আত্তার) সুফির কথা থেকে উদৃতি দিলেন তাদের কার লেখার উদৃতি দেয়া আব্দুল কাদের জিলানীর পক্ষে সম্ভব নয় কারন তাদের সকলের জম্ম আব্দুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ পরে। এমন কি কারও জম্ম হয়েছে তার মৃত্যুর অর্ধশত বছর পরে। আব্দুল কাদের জিলানী জীবন দসায় যাদের জম্মই হয়নি তাদের কথা তিনি কিভাবে শুনবেন বা তাদের লিখবেন।

একটু লক্ষ করুনঃ আব্দুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ ৪৭১ হিজরিতে জম্ম গ্রহন করে ৫৬১ হিজরীতে মারা যান।

অপর পক্ষে শামস তাবরীয এর জম্ম সঠিকভারে জানা জায়নি, তবে ঐতিহাসিকগন লিখেন তিনি ৫৬০ হিজরীতে জম্ম গ্রহণ করেন এবং ৬৪৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। যখন আব্দুল কাদির জিলানীর ইন্তিকাল করনে তখন শামস তাবরিযের বয়স মাত্র এক বছর। অথচ “সিররুল আসরার বা মারেফতের নিগূঢ় রহস্য” নামের কিতাবটিতে আব্দুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ শামস তাবরীয এর কথা উদৃত করছেন, কি সুন্দর গোজামিল অনেক বলে চুরি করলেও চোর নিজেই তার সাক্ষ্য রেখে যান।

আবার লক্ষ করুনঃ মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির  ৬০৪ হিজরীতে জম্ম গ্রহণ করেন এবং ৬৭৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আব্দুল কাদির জিলানীর ইন্তিকালের পরে প্রায় অর্ধশত বৎসর পরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার কাব্য গ্রস্থ মসনবী শরীফ নিশ্চয়ই তারা জম্মের পরে লিখিয়াছেন। তা হলে প্রশ্ন হল আব্দুল কাদির জিলানী কিভাবে রুমির মসনবী শরীফের সন্ধান পেলেন।

ফরিদ উদ্দিন আত্তারের বর্তমান ইরানের খোরাসান প্রদেশস্থ’ নিশাপুর শহরে ৫৪০ হিজরি মুতাবিক ১১৪৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ এবং ৬১৮ হিজরি মুতাবিক ১২২১ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর আসল নাম আবু হামিদ মুহাম্মদ বিন আবি বকর ইবরাহীম। আত্তার ও ফরিদ উদ্দিন তাঁর কলমী নাম। আব্দুল কাদির জিলানীর যখন ৯১ বছরে মারা যান (৫৬১ হিজরী) তখন তারা বয়স মাত্র ২১ বছর। ২১ বছর বয়সে তিনি এত প্রসিদ্ধ লাভ করেনি যে, আব্দুল কাদির জিলানী মত মহান সাধক তার লেখা উল্লেখ করবেন।

তাই কোন সন্দেহ না করে, অকপটে স্বীকার করা যায় যে, “সিররুল আসরার বা মারেফতের নিগূঢ় রহস্য” নামের কিতাবটি  আব্দুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ এর লেখা নয়। তারার মৃত্যুর পর কেউ হয়তো তার নাম দিয়ে লিখেনছেন।

তার নামে বর্ণিত কিছু সনদ ছাড়া কিছু উপদেশ ধর্মি কাহিনিও আছে তার মধ্যে অন্যতাম হলোঃ

একদিন তার মাতা তাকে জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে বাগদাদে পাঠানোর প্রাককালে চল্লিশটি দিরহাম তার কাপড়ে সেলাই করে দিলেন। এবং মিথ্যা কথা না বলার জন্য নছিয়ত করেন। পথিমধ্যে একদল দস্যু কর্তৃক তার কাফেলা আক্রানত হল। সবার কাছ থেকে সবকিছুই লুট পাট করে নিল। আব্দুল কাদের জিলানী একপাশে দাড়ানো ছিলেন। দস্যুরা তার কাছে কিচু আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন,তার কাছে চল্লিশ দিরহাম আছে। অতঃপর তারা আব্দুল কাদের জিলানীকে তাদের সর্দারের কাছে নিয়ে গেলেন। সর্দার পুনরায় তার কাছে জানতে চাইলো একথা সত্য কিনা? গাউছুল আযম নির্দ্বিধায় বললেন,তা সত্য। দস্যু সর্দার জানতে চাইলো,এ রকম অকপটে সত্য কথা বলার কারণ কি? গাউছুল আযম বললেন, মায়ের নির্দেশ সর্বাবস্থায় সত্য কথা বলার। একথা শুনে দস্যু সর্দারের ভাবানতর সৃষ্টি হল, এবং মনে হতে লাগলো এ বালক তার মায়ের আদেশ পালন করার নিমিত্তে নিজের শেষ সম্বলটুকু হাতছাড়া হবে জেনেও অকপটে সত্য কথা বললো আর আমরা আল্লাহ ও রাসুলের (দঃ) নির্দেশ ভুলে গিয়ে আজীবন মানুষের উপর কতইনা অত্যাচার জুলুম করে চলেছি।  তার সততার গুনে অনেকগুল মানুষ হিদায়াত পেল। কাহিনী সত্য মিথ্যা যা হোম মর্মার্থ খুবি ভাল।

হিজরী ৫৬১ সালের ১১ রবিউসসানী আব্দুল কাদের জিলানী (র.) পরলোক গমন করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। বড়পীর সাহেবের এই ওফাতের দিন সারা বিশ্বের মুসলমানরা প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকেন এবং তার মৃত্যুবার্ষিকী ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহাম হিসেবে পরিচিত।

এই দিনে কি করা হয়?

১। অনেক মাজারে উরশ করা হয়।

২। মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

৩। খানা পিনা বা কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করা হয়।

৪। আব্দুল কাদের জিলানী (র.) স্মরণ করে গান গাওয়া হয়, কবিতা পাঠ করা হয়।

৫। তার জীবনী স্মরনে আলোচনা করা হয়, যা মিথ্যা ও শির্কে ভরপুর।

মন্তব্যঃ ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে এই দিনের প্রতিটি কাজই বিদআতে পরিপূর্ণ। যদিও আমাদের দেশে দিবসটি সরকারী ছুটির দিন, তথাপিও কোন হক পন্থী মুসলিমের তাকে অংশ গ্রহন করা হারাম কাজ। তাই এধরনের কাজ থেকে আমরা দুরে থাকি।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment