সিয়ামরত অবস্থায় আমলসমূহ (তৃতীয় পর্ব)

গ. যে আমলগুলি দ্বারা রমজানে কুরআনের হক আদায় হবেঃ

রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। এই মাসের অন্যান্য সকল মাসের উপর মর্জাদাসম্পন্ন হওয়ার এক মাত্র কারন হলো, এ মাসেই কুরআন নাজিল হয়। মহান এ মাসের সঙ্গে কুরআনুল কারিমের গভীর সর্ম্পক রয়েছে। এই মাসেই পবিত্র কুরআন লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়। এই জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে কুরআনকে আলাদাভাবে মর্জাদা প্রদাণ করেছেন। তিনি এই মাসে জিব্রাঈল আলাহিস সালামকে তিনি কুরআন শুনাতেন আবার জিব্রাঈল আলাহিস সালামও তাকে কুরআন শুনাতেন। বছরে তারা দুজনে এক অপরকে সম্পূর্ণ শুনাতেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়া সাল্লামের নিকট প্রতিবছর একবার কুরআন পাঠ পেশ করতেন। আর যে বছর তিনি মারা যান সে বছর দুইবার পেশ করেন। (সহিহ বুখারি ৪৬১৪)।

এমনকি রমজান মাসের প্রত্যেক রাতেই নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে কুরআন মাজিদ শুনাতেন এবং তিনিও নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুনাতেন। হাদিস শরিফে আছে, জিবরাইল আমিন রমজানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করতেন এবং  তাকে কুরআন শরিফ পড়ে শুনাতেন। ( সহিহ বুখারি ১৯০২)।

ইবনে কাছির (রহঃ) বলেনঃ জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়া সাল্লামকে যতটুকু কুরআন নাযিল হয়েছে ততটুকু পাঠ করে শুনাতেন। (আল-জামে ফি গারিবিল হাদিস’ গ্রন্থে (৪/৬৪)

যে কারণে রমজান মাস অন্যান্য মাসের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,

*شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ

অর্থঃ রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। (সুরা বাকারা ২:১৮৫)।

উপরের আয়াতে মহান আল্লাহ ষ্পষ্ট করে রমজান মাসের তিনটি মহান বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।

* কুরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়েত জন্য

* কুরআন ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য

* সম্পূর্ণ রমজান ব্যাপিয়া সিয়াম পালন করা।

ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি হল আল কুরআন। আল আল কুরআনের মূল বিষয় বস্তু হল, আদম সন্তারকে এমন জ্ঞান দান করা যা সে জানত না। তাইতো অহীর সুচনায় মহান আল্লাহ তাআলা নাজিল করলেন,

ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ (١) خَلَقَ ٱلۡإِنسَـٰنَ مِنۡ عَلَقٍ (٢) ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ (٣) ٱلَّذِى عَلَّمَ بِٱلۡقَلَمِ (٤) عَلَّمَ ٱلۡإِنسَـٰنَ مَا لَمۡ يَعۡلَمۡ (٥)

অর্থ: পড়ো (হে নবী), তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন৷ জমাট বাঁধা রক্তের দলা থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন৷ পড়ো, এবং তোমার রব বড় মেহেরবান, যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিখিয়েছেন৷ মানুষকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন, যা সে জানতো না৷ 

আল্লাহ তা‘আলার নিজ করুনায় মানুষ জাতীর হেদায়েতের জন্য মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার বড়ই মেহেরবানী যে, তিনি আমাদের এমন একটি কিতাব দিলেন, যার মধ্যে আছে ইহাকাল ও পরকালের মুক্তির পাথেয়। তাই রমজানে কুরআন কেন্দ্রিক আমল করে এর যথাযথ হক আদায় করতে হবে। বিদ্বানগন মনে করেন আল কুরআনের মাধ্যমে সঠিকভাবে দিক নির্দেশনা পেতে হলে, আল্লাহর বান্দাকে কুরআন মাফিক আমলকে বিভিন্ন পর্যায় ভাগ করে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। কুরআনের যথাযথ হক আদায় করতে হলে আমাদের নিম্মের আমলগুলি করতে হবে।

১। কুরআনের উপর ঈমান আনাঃ

২। বিশুদ্ধভাবে কুরআনের শিক্ষা করাঃ

৩। অপরকে কুরআন পড়া শিক্ষা দেয়াঃ

৪। কুরআন শিক্ষার পর নিয়মিত তিলাওয়াত করাঃ

৫। সহিহ হাদিসে বর্ণিত সুরা বা আয়াত মুখস্থ করে নিয়মিত তেলওয়াত করা

৬। কুরআন তেলওয়াত শ্রবন করা

৭। কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা

৮। অর্থ বুঝে বুঝে কুরআন পড়া,সম্ভব হলে বিশুদ্ধ তাফসিরের আলোকে পড়া

৯। কুরআন অনুসারে জীবন যাপর করা

১০। কুরআন অন্যেনর নিকট পৌছান

১ কুরআনের উপর ঈমান আনাঃ

মহান আল্লাহ কুরআনসহ সকল আসমানি কিতাবের উপর ঈমান আনা ফরজ করে দিয়েছেন। কুরআনের হক সমূহের মধ্যে অন্যতম হক বা অধিকার হলো কুরআনের প্রতি ঈমান আনা। মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ

*آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللّهِ وَمَلآئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ*

অর্থঃ রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। (সুরা বাকারা ২:২৮৫)।

কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে মহান আল্লাহ নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি এরশাদ করেনঃ

فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنزَلْنَا وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

অর্থঃ অতএব তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং অবতীর্ন নূরের (কুরআনের) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সুরা তাগাবুন ৬৪:৮)।

মন্তব্যঃ কুরআন যে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত তার উপর ঈমান আনা মহান আল্লাহ আমাদের উপর ফরজ করে দিয়েছেন। কুরআনের কোন কোন বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হবে পরের আলোচনা কিছু দিক নির্দেশন মুলক আলোচনা করা হবে বিস্তারিত ভাল মানের তাফসির পড়ে বুঝে নিতে হবে। তবে কুরআন সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস কেমন হবে, কি কি বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হবে, সে সম্পর্ককে একটা ধারনা প্রদান করা হলো। কুরআন সম্পর্কে নিচের বিষয়গুলি বিশ্বাস করতেই হবে।

যেমনঃ

১। কুরআন মহান আল্লাহর নাজিলকৃত বাণীঃ

কুরআনে মহান আল্লাহ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে বলেছেন এই মহাগ্রন্থ আল-কুরআন কোন মানুষের তৈরী করা গ্রন্থ নয়। বরং এটি মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী। আল্লাহ বলেনঃ

وَإِنَّهُ لَتَنزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ

অর্থঃ এই কোরআন তো বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তার নিকট থেকে অবতীর্ণ। (সুরা শু’য়ারা ২৬:১৯২)।

মহা গ্রন্থ আল কুরআন কোন গণক বা কবির কথা নয়। তৎকালীন আরবের মুশরিকরা যেমন মনে করতো কুরআন গণক বা কবির কথা। রচনাকারী কোন গণক বা কবির পক্ষেই এ ধরনের কিছু রচনা করা সম্ভব। আল্লাহ তাদের এ অলীক ধারণা খন্ডন করে ঘোষণা করে বলেনঃ

وَلَا بِقَوۡلِ كَاهِنٍ۬‌ۚ قَلِيلاً۬ مَّا تَذَكَّرُونَ (٤٢) تَنزِيلٌ۬ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَـٰلَمِينَ (٤٣) 

অর্থঃ এবং এটা কোন অতীন্দ্রিয়বাদীর কথা নয়, তোমরা কমই অনুধাবন কর। এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ।  (সুরা হাক্বকাহ ৬৯:৪২-৪৩)।

মন্তব্যঃ কেই যদি এ বিশ্বাস করে যে, কুরআন মহান আল্লাহ পক্ষ থেকে নাজিল হয় নাই, সে কাফির হয়ে যাবে। প্রকৃত মুমিনদের বিশ্বাস কুরআন মহান আল্লাহর নাজিলকৃত বাণী।

২।  কুরআন আল্লাহর কালামঃ

কুরআন সম্পর্কে বিশ্বাস করা যে, কুরআন মহান আল্লাহর কালাম বা কথা। কুরআন কোন সৃষ্ট নয় বা কোন সৃষ্টির কালাম নয়।জিব্রাইল আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহর নিকট হতে শ্রবণ করেছেন। আর আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রবণ করেছেন জিব্রাইল থেকে। এ কথাও বিশ্বাস রাখতে হবে কোন প্রকার সংযোজ বা বিয়োজ ব্যতিরিকে তারা দুজন মহান আল্লাহর কালাম বা কথা আমাদের নিকট পৌছে দিয়েছেন। যেমন মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ

وَلَوۡ تَقَوَّلَ عَلَيۡنَا بَعۡضَ ٱلۡأَقَاوِيلِ (٤٤)-لَأَخَذۡنَا مِنۡهُ بِٱلۡيَمِينِ (٤٥) ثُمَّ لَقَطَعۡنَا مِنۡهُ ٱلۡوَتِينَ (٤٦) فَمَا مِنكُم مِّنۡ أَحَدٍ عَنۡهُ حَـٰجِزِينَ (٤٧) 

অর্থঃ যদি এ নবী নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো। তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম। এবং ঘাড়ের রগ কেটে দিতাম৷ তোমাদের কেউ-ই (আমাকে ) এ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারতো না৷ (সুরা হাক্ক ৫৯:৪৪-৪৭)।

তাই সুদৃঢ়ভাবে এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, কুরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। বাস্তবে আল্লাহ তাআলা এই বাণীসমূহ দিয়ে কথা বলেছেন। এ বাণীসমূহের মধ্যে কোনটি ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া পর্দার আড়াল থেকে সরাসরি আল্লাহর নিকট হতে শ্রবণীয়। এর মধ্যে কোনটি ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূলের নিকট পৌঁছেছে। এর মধ্যে কোনটি আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের তরফ থেকে কিছুই বলতে পারেন না, যা কিছু বলেন মহান আল্লাহর তরফ থেকেই বলেন। আর এ জন্য তিনি তিনটি উত্স থেকে ওহী পেতেন।

১) জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে।
২) ইলহাম এর  মাধ্যমে।

৩) পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি কথার মাধ্যমেঃ
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ

وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحۡيًا أَوۡ مِن وَرَآىِٕ حِجَابٍ أَوۡ يُرۡسِلَ رَسُولاً۬ فَيُوحِىَ بِإِذۡنِهِۦ مَا يَشَآءُ‌ۚ إِنَّهُ ۥ عَلِىٌّ حَڪِيمٌ۬ (٥١) 

অর্থঃ কোন মানুষই এ মর্যাদার অধিকারী নয় যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন৷ তিনি কথা বলেন হয় অহীর (ইংগিত) মাধ্যমে,  অথবা পর্দার আড়াল থেকে,  কিংবা তিনি কোন বার্তাবাহক (ফেরেশতা) পাঠান এবং সে তার হুকুমে তিনি যা চান অহী হিসেবে দেয়। তিনি সুমহান ও সুবিজ্ঞ৷ (সুরা শুরা ৪২:৫১)। 

১) জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমেঃ  যে পদ্ধতিতে নবী রাসূলদের নিকট অহীর মাধ্যমে আশমানী কিতাব এসেছে। সরাসরি অহী আসার এ পদ্ধতিটিই সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয়েছে আল্লাহর ওহী বা নির্দেশনা নাযিলের ক্ষেত্রে। আর তা হয়েছে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এর মারফত। তাঁকে আমীনুল ওহী বলা হয়। কুরআনে রূহুল আমীন বলা হয়েছে। তাকে রাসুল এর সম্মানিত দূত বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

نَزَلَ بِهِ ٱلرُّوحُ ٱلۡأَمِينُ (١٩٣)

অর্থঃ বিশ্বস্ত রূহ (জিব্রাঈল আঃ) উহা নিয়ে অবতরণ করেছেন। ”(সূরা শুআরা ২৬:১৯৩) 
আল্লাহ্‌ আরও বলেন:

 إِنَّهُ ۥ لَقَوۡلُ رَسُولٍ۬ كَرِيمٍ۬ (١٩) ذِى قُوَّةٍ عِندَ ذِى ٱلۡعَرۡشِ مَكِينٍ۬ (٢٠) مُّطَاعٍ۬ ثَمَّ أَمِينٍ۬ (٢١)

অর্থঃ “নিশ্চয় উহা সম্মানিত রাসুল জিবরীল (আঃ) এর আনিত বাণী। যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী, ফেরেশতাগণের মান্যবর এবং আল্লাহর বিশ্বাসভাজন।” (সূরা তাকভীর ৮১:১৯-২১)। 
আল্লাহ আরও বলেন,

إِنَّهُ ۥ لَقَوۡلُ رَسُولٍ۬ كَرِيمٍ۬ (٤٠) 

অর্থঃ  “নিশ্চয় এই কুরআন একজন সম্মানিত রাসূলের আনিত বাণী।” (সূরা হাক্কাহ ৬৯:৪০)।

হাদীছ অস্বীকারকারীরা এই আয়াতগুলোতে ‘রাসূল’ বলতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বুঝাতে চায়। অথচ আয়াতের প্রসঙ্গতেই বুঝা যায় এখানে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম কে বুঝানো হয়েছে।

২) ইলহাম এর  মাধ্যমেঃ মনের মধ্যে কোন কথা সৃষ্টি করে দেয়া কিংবা স্বপ্নে কিছু দেখিয়ে দেয়ার নাম ইলহাম।  মহান আল্লাহ অনেক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অন্তরে অনেক কথা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। হাদিসে কুদসি যার প্রকৃষ্ট উদাহরন। অপর পক্ষে তার স্বপ্ন যে ওহী এর স্বপক্ষে শত শত সহিহ হাদিস বিদ্যমান। স্বপ্নে কিছু দেখিয়ে দেয়া, যেমন হযরত ইবরাহীম ও ইউসুফকে দেখানো হয়েছিলো (সুরা ইউসুফ ১২:৪ ও ১০০ এবং সূরা সাফ্ফাত ৩৭:১০২)। অর্থাৎ যে কথা নবীর মনের ভাবনা আল্লাহ কতৃর্ক উদভাসিত হত অথবা স্বপ্ন যোগে নবীকে জানিয়ে দিতেন তাই ইলহাম। এখানে মাধ্যম হিসাবে ফিরিশতা ছিল না। ইলহামের শব্দ ও বাক্য মহনা আল্লাহ পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয় না। কেবল বিষয়বস্তু অন্তরে জাগ্রত হয়, যা পয়গম্বরগণ নিজের ভাষায় ব্যক্ত করেন।

৩) পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি কথা বলার মাধ্যমেঃ

এই পদ্ধতিতে বান্দা শব্দ শুনতে পায় কিন্তু শব্দদাতাকে দেখতে পায় না, যেমন হযরত মূসার ক্ষেত্রে ঘটেছিলো। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে মিরাজে গিয়ে আরশে পাকে হয়েছিল। আল্লাহ দর্শন না দিয়ে পর্দার অন্তরাল থেকে তাঁদের সাথে কথা বলেছেন এবং ওহী করেছেন আর সে সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। আর আল্লাহ তায়ালা মুসা আলাইহিস সালাম এর সাথে তূর পর্বতে পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি কথা বলেছিলেন। তূর পাহাড়ের পাদদেশে একটি বৃক্ষ থেকে হঠাৎ আওয়াজ আসতে শুরু হলো। কিন্তু যিনি কথা বললেন তিনি তার দৃষ্টির আড়ালেই থাকলেন। (সুরা ত্বাহা ২০:১১-৪৮; সুরা নামল ২৭:৮-১২; আল কাসাস ২৮:৩০-৩৫)।

আল্লাহ আরো বলেন,

وَكَلَّمَ اللّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا

অর্থঃ আর আল্লাহ মূসার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। (সূরা নিসা ৪:১৬৪)।

৩। কুরআন রক্ষার দায়িত্বও মহান আল্লাহঃ

আমাদের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পূর্বে বেশ কিছু রাসূলকে আসমানী কিতার দেয়া হয়েছিল।  তাদের কিতাব তাদের মৃত্যুর কিছুকাল পর বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। মহান আল্লাহ পূর্বের কোন আসমাণী কিতাব  সংরক্ষনের দায়িত্ব নেন নাই, তাই পূর্বের সকল কিতাবে পরিবর্তন-বিকৃতি ঘটেছিল। কিন্তু কুরআনুল কারীম যাবতীয় বিকৃতি হতে সুরক্ষিত। কেননা, এর রক্ষার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ আপন দায়িত্বে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

*إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ*

অর্থঃ নিশ্চয় আমি এই কোরআনকে অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষক। (সুরা হিজর ১৫:৯)

মন্তব্যঃ কাজেরই একজন সত্যিকারের মুমিন হিসাবে আমাদের এ বিশ্বসা রাখা ফরজ যে, মহা গ্রন্থ আল কুরআন আমাদের নিকট সম্পূর্ণ অবিকৃতভাবে পৌছেন। ভবিশ্যতেও এর বিকৃত হওয়ার কোন প্রকার সম্ভাবনা নেই কেননা এর সংরক্ষন হলেন স্বয়ং মহান আল্লাহ।

৪। এই কিতাবে কোন সন্দেহ নেইঃ

পুর্বের আলোচনায় দেখেছি কুরআন রক্ষার দায়িত্ব মহান আল্লাহ নিজে নিয়েছেন। তাই আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত কিতাব, যা তিনি তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি নাযিল করেছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ কিতাব যে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এবং এর যাবতীয় বিষয়বস’ সত্য এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এই কিতাবে কোনো সন্দেহ নেই যে, নাযিলের সময় থেকে আজ অবধি এই কিতাব যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামতকাল পর্যান্ত সংরক্ষিত থাকবে। সুতরাং আমরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে, বর্তমানে গ্রন্থাকারে যে কুরআন আমাদের হাতে আছে যা সূরা ফাতিহা দ্বারা শুরু হয়ে সূরা নাসে সমাপ্ত হয়েছে এটাই আল্লাহ তাআলার সেই কিতাব, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি নাযিল হয়েছিল। 

*ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ*

অর্থঃ এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। মুস্তকিদের জন্য হিদায়াত। ( সুরা বাকারা ২:২)।

এই গ্রন্থটি হচ্ছে ক্বুর’আন এবং ‘রইব’ মানে হচ্ছে সন্দেহ, সংশয়। আস-সুদ্দি বলেছেন, আবু মালিক ও আবু সালিহ, ইবনু ‘আব্বাস থেকে এবং মুররাহ আল-হামাদানি, ইবনু মাস’উদ থেকে এবং নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যান্য সহাবীগণ বলেছেন, “এতে কোন রইব নেই”, এর মানে হচ্ছে এর মধ্যে কোন সন্দেহ সংশয় নেই। আবু আদ-দারদা’, ইবনু ‘আব্বাস, মুজাহিদ, সা’ইদ বিন জুবাইর, আবু মালিক, নাফি’ ,’আতা’, আবু আল-‘আলিয়াহ, আর-রবি’ বিন আনাস, মুক্বতিল বিন হাইয়ান, আস-সুদ্দি, ক্বতাদাহ এবং ইস্মা’ইল বিন আবি খলিদও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। সেই সাথে ইবনু আবি হাতিম বলেছেন, “এই ব্যাখ্যার ব্যাপারে আমার জানামতে কোন মতভেদ নেই।” সুতরাং এই আয়াতের অর্থ হচ্ছে, এই গ্রন্থ, আল-ক্বুর’আন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ। সূরা আস-সাজদায় অনুরূপভাবে আল্লাহ বলেছেন,

*تَنزِيلُ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِن رَّبِّ الْعَالَمِينَ *

এ কিতাবের অবতরণ বিশ্বপালনকর্তার নিকট থেকে এতে কোন সন্দেহ নেই। (সুরা সাজদা ৩২:২)।

মন্তব্যঃ আল কুরআন বিকৃতিমুক্ত কারনঃ

ক। স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক কুরআনকে বিকৃতিমুক্ত রাখান দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। (সুরা হিজর ১৫:৯)

খ. মহানবীর যুগে অবস্থার প্রেক্ষিতে যখনই মহানবী (সা.) এর নিকট কুরআনের কোন সূরা বা আয়াত অবতীর্ণ হতো তখনই তিনি এবং তাঁর সাহাবাগণ এটাকে মুখস্থ করে নিতেন, কখনো চামড়া, পাথর বা গাছের ছালের উপর লিখে রাখতেন। (সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিমসহ প্রায় সকল হাদিস গ্রন্থে)

গ। আবু বকরের (রা.) যুগে ভুয়া নবী দাবিদারদের সাথে ইয়ামামার যুদ্ধে প্রায় ৭০ জন হাফেজে কুরআন শাহাদাতবরণ করেন। কুরআন বিলুপ্তির আশংকায় ওমর (রা.) আবু বকরকে (রা.) বিক্ষিপ্ত কপিগুলো একত্রিকরণের পরামর্শ দেন। আবু বকর (রা.) প্রধান ওহী লেখক যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে কুরআন সংকলনের কাজ সমাপ্ত করেন।(সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিমসহ প্রায় সকল হাদিস গ্রন্থে)

ঘ। হাতে লেখা কুরআনের কপি তাজিকিস্তানের তাসখন্দের জাদুঘরে এবং তুরস্কের ইস্তাম্বুলের জাদুঘরে ওসমান (রা.) এর যুগের কুরআনের অনুলিপি বর্তমানেও রক্ষিত রয়েছে। সে কপিদ্বয়ের সাথে বর্তমানের কুরআনের হুবহু মিল রয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, কুরআন অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে।

ঙ। অগণিত হাফেজদের হৃদয়পটে সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্ব থেকে আজ পর্যন্ত নির্ভুলভাবে কুরআন সংরক্ষণ করে আসছে।

৫। কুরআন অন্য সকল আসমানী কিতাবের সত্যায়ন এবং রহিতকারীঃ

এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তাআলা কুরআনকে সকল কিতাবের উপর ফয়সালাকারী ও সসত্যায়নকারী রূপে প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ

অর্থঃ আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী (মুসাদ্দিক) ও তদারককারী রূপে (মুহাইমিন)। (সুরা মায়েদা৫:৪৮)।

তাফসিরকারগণ বলেন, মুহাইমিন অর্থ হচ্ছে- কুরআনের পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের উপর ফয়সালাকারী, সাক্ষী ও সত্যায়নকারী। অর্থাৎ সে কিতাবসমূহে যা কিছু সত্য কুরআন তার সত্যায়ন করবে এবং যা কিছুতে বিকৃতি, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ঘটেছে সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং সে কিতাবসমূহের বিধানাবলীকে রহিত করবে।

পূর্ববর্তী বিধানসমূহ উঠিয়ে দিবে অথবা নতুন বিধিবিধান আরোপ করবে। অতএব, পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের অনুসরণকারী যদি হঠকারী না হয় তাহলে তাকে কুরআনের কাছে নতি স্বীকার করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

 ٱلَّذِينَ ءَاتَيۡنَـٰهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ مِن قَبۡلِهِۦ هُم بِهِۦ يُؤۡمِنُونَ (٥٢) وَإِذَا يُتۡلَىٰ عَلَيۡہِمۡ قَالُوٓاْ ءَامَنَّا بِهِۦۤ إِنَّهُ ٱلۡحَقُّ مِن رَّبِّنَآ إِنَّا كُنَّا مِن قَبۡلِهِۦ مُسۡلِمِينَ (٥٣)

অর্থঃ কুরআনের পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা এতে বিশ্বাস করে। যখন তাদের কাছে এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। এটা আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্য। আমরা এর পূর্বেও আজ্ঞাবহ ছিলাম।  [ সুরা কাসাস ২৮:৫২-৫৩ ]

৬।  এ বিশ্বাস রাখা যে, শুধু কুরআনেরই অনুসরণ করতে হবেঃ

উম্মতে মুহাম্মদিদের উপর কুরআনের অনুসরণ ফরজ করা হয়েছে। তাই উম্মতে মুহাম্মাদির প্রতিটি সদস্যের কর্তব্য হচ্ছে, প্রকাশ্যে ও গোপনে এই কুরআনের অনুসরণ করা, কুরআনকে আঁকড়ে ধরা, কুরআনের হক আদায় করা। ঠিক যেভাবে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেনঃ  মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

*وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ*

অর্থঃ এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়, অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর, যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।  (সুরা আন’য়াম ৬:১৫৫)।

মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء قَلِيلاً مَّا تَذَكَّرُونَ

অর্থঃ তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না। (সুরা আরাফ ৭:৩)।

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللّهُ قَالُواْ بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لاَ يَعْقِلُونَ شَيْئاً وَلاَ يَهْتَدُونَ

অর্থঃ আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও। (সুরা বাকারা ২:১৭০ ]

মন্তব্যঃ আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে বর্তমানে আল কুরআনই হলো এক মাত্র আসমানী কিতাব যার অনুসরনেই মুক্তি। অন্য ধর্মের যারাই তাদের ধর্মীয় গ্রন্থকে আসমানী কিতাব দাবি করে, তাদের দাবি সত্য নয়। তাই তাদের কিতাবের অনুসরণ করা যাবে না। যদি কোন বিধান কোন আনের সাথে মিলে যায় তবে তা মান্য করা বা পালন করায় কোন অসুবিধা নেই। যথাযথ জ্ঞান ছাড়া তাদের কোন কাজ বা আমলকে ঠিক বেঠিক বলল না। তবে অনুসরণ করতে হবে শুধুই কুরআনে।

৭। কুরআনই সর্বশেষ চুড়ান্ত আসমাণী কিতাবঃ

কুরআন হল আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সর্বশেষ চুড়ান্ত আসমাণী কিতাব। যেহেতু তিনি শেষ নবী ও রাসূল তার উপর নাজিলকৃত কিতারও হবে সর্বশেষ কিতাব। মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শেষ নবী এবং তার পরে আর কোন নবী পৃথিবীতে আসবেন না তা পবিত্র কুরআন, সহিহ হাদিস, সাহাবাগণের ইজমা ও যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا

অর্থঃ মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। (সুরা আহযাব ৩৩:৪০)।

বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর কারক আল্লামা ইমাম ইবন্‌ কাসীর (রহঃ) বলেন, “অত্র আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, তাঁর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরে কোন নবী নাই। নবী যখন আসবেন না রাসুল আসার তো কোন প্রশ্নই উঠেনা। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (খন্ড-১৫, পৃষ্টা-৮১০, ইসলামী ফাউন্ডেশন)।

বহু হাদিস থেকে বুঝার জন্য মাত্র তিনটি হাদীস উল্লেখ করা হলঃ

** রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ “আমার উম্মতর মধ্য থেকে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী আসবে প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমি হলাম শেষ নবী; আমার পরে কোন নবী নেই।” ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। (তিরমিযী ৮/১৫৬ হাদীস নং ৩৭১০)

** প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ আমি এবং পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীদের উদাহরণ হল, এক লোক একটি ঘর অত্যন্ত সুন্দর করে তৈরী করল। কিন্তু ঘরের এক কোনে একটা ইট ফাঁকা রেখে দিল। লোকজন চর্তুদিকে ঘুরে ঘরে তার সৌন্দর্য্য দেখে বিমোহিত হচ্ছে কিন্তু বলছে, এ ফাঁকা জায়গায় একটি ইট বসালে কতই না সুন্দর হত!” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি হলাম সেই ইট এবং আমি হলাম সর্বশেষ নবী।” (বুখারী, হাদীস নং ৩২৭১ মুসলিম হাদীস

** রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বলেনঃ “মুসা (আঃ) এর নিকট হারুন (আঃ) যেমন তুমি আমার নিকট ঠিক তদ্রুপ। তবে আমার পরে কোন নবী নেই।” (বুখারী-৪০৬৪, মুসলিম হাদীস নং ৪৪১৮)

মন্তব্যঃ কুরআনে প্রতি এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহুতু সর্বোশেষ নবী ও রাসূল তাই আল কুরআনও সর্বোশেষ আসমানী গ্রন্থ।

৮। বিশ্বাস রাখতে হবে যে, কুরআন মানুষ জাতীর হিদায়াতের জন্য নাজিল হয়েছেঃ

আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে কুরআন নাজিলের এক মাত্র কারন মানুষ জাতীকে হিদায়াত প্রদান করা। আর মানুষের হিদায়াত ও সফলতা নিহিত আছে কুরআনের প্রতি ঈমান আনার মধ্যে। সত্যের পতাকাবাহী কুরআন মানুষকে অসত্য, অন্ধকার ও অন্যায় পথ থেকে মুক্ত করে সত্য, ন্যায় ও আলোর পথে পরিচালিত করে। গোটা আরব যখন জাহিলিয়াতের বিভীষিকাময় অন্ধকারে নিমজ্জিত ঠিক এমনি এক মুহূর্তে আল-কুরআন মানুষকে আলোর পথ নির্দেশনা দিয়েছে।*

طسٓ‌ۚ تِلۡكَ ءَايَـٰتُ ٱلۡقُرۡءَانِ وَڪِتَابٍ۬ مُّبِينٍ (١) هُدً۬ى وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُؤۡمِنِينَ (٢) 

অর্থঃ ত্বা-সীন; এগুলো আল-কোরআনের আয়াত এবং আয়াত সুস্পষ্ট কিতাবের। মুমিনদের জন্যে পথ নির্দেশ ও সুসংবাদ। (সুরা নামল ২৭:১-২)।

মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

*ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ*

অর্থঃ এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। মুস্তকিদের জন্য হিদায়াত। ( সুরা বাকারা ২:২)।

মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

هَـذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِينَ

এই হলো মানুষের জন্য (ষ্পষ্ট) বর্ণনা। আর মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত ও উপদেশবাণী। (সুরা ইমরান ৩: ১৩৮)।

মহান আল্লাহ আরও এরশাদ করেন,

*الَر كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ*

অর্থঃ আলিফ-লাম-রা; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি-যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে। (সুরা ইবরাহীম ১৪:১)।

২. মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:

إِنَّآ أَنزَلۡنَا ٱلتَّوۡرَٮٰةَ فِيہَا هُدً۬ى وَنُورٌ۬‌ۚ يَحۡكُمُ بِہَا ٱلنَّبِيُّونَ ٱلَّذِينَ أَسۡلَمُواْ لِلَّذِينَ هَادُواْ

অর্থঃ  আমি তাওরাত নাযিল করেছি৷ তাতে ছিল পথ নির্দেশ ও আলো৷ সমস্ত নবী, যারা মুসলিম ছিল, সে অনুযায়ী এ ইহুদী হয়ে যাওয়া লোকদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা করতো৷  [মায়েদা ৫:৪৪]

মন্তব্যঃ কুরআন নাজিলের মুল কারন হলো মানুষ জাতীকে হিদায়াত প্রদান। যুগে যুগ মানুষ জাতীতে হিদায়াত প্রদানের জন্য বহু নবী রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল। তাদের সহায়ক হিসাবে কিতাব ও প্রদান করা হয়। মহান আল্লাহ তার প্রিয় হাবিব শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও মহাগ্রন্থ আল কুরআন দেয়া হয়েছে, যার এক মাত্র কারন মানুষকে হিদায়েত প্রদাণ।

৯। কুরআনে নাজিলকৃত সকল বিষয়ের প্রতি ঈমান আনাঃ

কুরআনের প্রতি ঈমান কেবল তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন সম্পূর্ণ কুরআনের প্রতি ঈমান আনা হবে। কুরআন মজীদের কিছু বিধান মানা ও কিছু না মানা এবং কুরআন মজীদকে জীবনের ক্ষেত্রবিশেষে সিদ্ধান্তদাতা বলে স্বীকার করা, ক্ষেত্রবিশেষে স্বীকার না করা সম্পূর্ণ কুফরী আচরণ। গোটা কুরআনকে অস্বীকার করা যে পর্যায়ের কুফর এটাও ঠিক সেরকমেরই কুফর। মহান আল্লাহ বলেনঃ

أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاء مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنكُمْ إِلاَّ خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ

অর্থঃ তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন। (সুরা বাকারা ২:৮৫)।

মন্তব্যঃ কাজেই কুরআনে নাজিলকৃত প্রতিটি বিধানকে সমান গুরুত্ব প্রদান করে পালন করতে হবে। কোন একটা বিধান অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, কুরআনের প্রতি ঈমান কেবল তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন সম্পূর্ণ কুরআনের প্রতি ঈমান আনা হবে।

মন্তব্যঃ উপরের আলোচনার আলোকে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, উপরের আলোচনা করা হয়েছে শুধু বুঝানোর জন্য। উহা ছাড়া আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, কুরআন যা কিছুকে হালাল ঘোষণা করেছে সেগুলোকে হালাল। কুরআনের সকল নির্দেশ কে ন্যায় সংগত ও সঠিক বলে বিশ্বাস করতে হবে।  কুরআনে বর্ণিত নিষিদ্ধ বিষয়াবলী সঠিক বলে বিশ্বাস করতে হবে। মুহকাম আয়াতের জ্ঞান অর্জন করতে হবে, মুতাশাবিহ আয়াতের প্রতি আত্মসমর্পন এর প্রতি বিশ্বাস করতে হবে। কুরআন যে সকল ক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমারেখা দিয়েছের তার প্রতিও বিশ্বাস করতে হবে। এমনিভাবে কুরআনে বর্ণিত প্রতিটি ছোট বড় বিষয়ের প্রতি বিনা প্রমানে এবং বিনা দিধায় সত্য ও হক বলে বিশ্বাস করতে হবে।

২। বিশুদ্ধ উচ্চারনে কুরআনের শিক্ষা করাঃ

পবিত্র কুরআন আমাদের মাতৃভাষা নয়, তাই সঠিক উচ্চারন করা খুবই দুরহ। কুরআনের যথাযথ হক আদায়ের জন্য ভাল মুহাক্কিক আলেম বা ক্বারি যে কু্রআন সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শি তার নিকট শিক্ষা গ্রহর করা। অধিকাংশ মানুষই আজ কুরআন শিক্ষা থেকে উদাসীন। কুরআনের মহত্ব আর বড়ত্ব মানুষের মনে নেই। তাই তো দেখা যায় সমাজে বড় বড় ডিগ্রিধারি শিক্ষিত লোকেরাও বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াতও পড়তে পারে না। সরাদিন দুনিয়ার ধন সম্পদের পিছনে ছুটছে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সারাক্ষন স্কুলের রুটিন, কোসিং আর হোম ওয়ার্ক নিয়ে ব্যান্ত। কুরআন শিক্ষার জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময় আর কোথায়।  অথচ বিশুদ্ধভাবে কুরআন শিক্ষা করা সকল মুসলিমের উপর ফরজ। কুনআন বিশুদ্ধভাবে না শিখলে তার দ্বারা বিশুদ্ধ সালাত আশা করা যায় না। কেননা সালাতে বিশুদ্ধভাবে কুরআন পড়া ফরজ। এই ব্যাপারে অভিবক, স্কুলের সিলেভাজ, শিক্ষক, সমাজ, রাষ্ট্র আমরা সবাই সমানভাবে দোষী। এমনি আজ অধিকাংশ মুসলমানই কুরআনকে ছেড়েই দিয়েছেন। আজ আমরা যারা কুরআনকে ছেড়ে দিয়েছি, হাশরের ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَقَالَ ٱلرَّسُولُ يَـٰرَبِّ إِنَّ قَوۡمِى ٱتَّخَذُواْ هَـٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ مَهۡجُورً۬ا (٣٠)

  অর্থঃ আর রাসূল বলবে, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে। (সূরা আল-ফুরকান ২৫:৩০)।

কাজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভিযোগ থেকে বাচতে কুরআন শিখতে হবে। বিশুদ্ধ উচ্চারনে কুরআন শিক্ষতে পারলে এবং নিয়মিত তিলাওয়াত করলে আল্লাহ অনেক পুরস্কার প্রদান করবেন।  পুরস্কার না দিলেও কুরআন শিক্ষা করা মহান আল্লাহ নির্দেশ এবং ইবাদাত সম্পন্ন করার হাতিয়ার। কুরআন পড়ার নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ

অর্থঃ পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। (সুরা আলাক ৯৬:১)।

৩। অপরকে কুরআন পড়া শিক্ষা দেয়াঃ

বিশুদ্ধ উচ্চারনে কুরআনের তেলওয়াত শিক্ষা করার পর দায়িত্ব আসে অন্যকে কুরআন শিক্ষ দেয়া। কুরআন শিক্ষা ছাড়া কারও পক্ষে বিশুদ্ধ আমল সম্ভব নয়। নিজের পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া লোকদের আমলের উপর উঠাতে কুরআন পড়া শিক্ষা দেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। কেউ যদি কোন ভাল কাজের সুচনা করে, তার দেখান পথে যতদিন ঐ কাজটি সমাজে চালু থাকবে সে ঐ কাজের নেকী পেতে থাকবে।

হাদিসে বর্ণিত আছে, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার আমলের সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়, শুধু তিনটি আমল চালু থাকে। ক. সদকায়ে জারিয়া, খ. ইলম, যার দ্বারা মানুষের উপকার হয় ও  গ. সুসন্তান, যে পিতামাতার জন্য দোয়া করে। ((সহিহ মুসলিম)

যে ইলম দ্বারা মানুষ উপকার পায় তার সওয়ার মৃত্যুর পরও পাওয়া যাবে। কুরআন শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উপকারী কোন ইলম জ্ঞান জগতে নেই। অপরকে কুরআন পড়া শিক্ষা দিয়ে এই উপকারী ইলমের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সেই; যে নিজে কুরআন শেখে ও অপরকে শিক্ষা দেয়। (বুখারী-৪৬৩৯; তিরমিজি-২৯০৭; ইবনে মাজাহ-২১১; সিলসিলাহ সহিহাহ-১১৭৩; আব্দুর রাজ্জাক-৫৯৯৫)।

Leave a comment