আকিদার বিদআতসমূহ একাদশ  কিন্তি :  পীরের হাতে বইয়াত করা ওয়াজিব প্রথম পর্ব

আকিদার বিদআতসমূহ : একাদশ  কিন্তি 

পীরের হাতে বইয়াত করা ওয়াজিব প্রথম পর্ব

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

ইসলামি শরীয়তের প্রথম ও প্রধান বিষয় হল ইমান। আর খাটি ইমান হল, সঠিক আকিদা প্রষণ করা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয় হল, আমরা সকলে মুসলিম দাবি করলেও শুধু আমাদের আকিদার কারনে আমরা মুসলিম নই। ইসলাম বহির্ভুত এই নতুত আকিদাকে বিদআতি আকিদা হিসাবে চিহিৃত করব। কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যে আকিদা নতুন করে আবিস্কার হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। কাজেই যে কোন ভুল আকিদা যা কুরআন সুন্নাহের বাহিরে গিয়ে নতুত করে তৈরি হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। যার অর্থ হলো আকিদার ভূলভ্রান্তি মানেই বিদআত আকিদা। যৌক্তিক কোন কাজ সহজে যে কেউ মেনে নেন। আর বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত কোন জ্ঞানতো সাথে সাথে মেনে নেয়। কিন্তু ইসলামি আকিদার মুল হল অদৃশ্যে বিশ্বাস এখানে জাগতিক কোন বিষয় থাকলে যুক্তি ও বিজ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা করা যেত কিন্ত অদৃশ্যে বিশ্বাস করতে হলে অদৃশ্য থেকে প্রাপ্ত অহীর উপর নির্ভর করতে হবে। অহী ভিন্ন যে কোন উৎস থেকে আকিদা গ্রহন করলে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ যে কোনটাই হতে পারে। ইসলামি আকিদা বিশ্বাস সব সময় আল্লাহকে কেন্দ্র অদৃশ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। তাই ইসলামি আকিদার মুল উৎস হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্ত্বিক। এই কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যখনি নতুন করে আকিদা রচনা করা হবে তাই বিদআতি আকিদা।

যেমনঃ অদৃশ্যের একটি ব্যাপার হল কবরের আজাব। কবরে আজাব হবে এটাই সত্য। কিন্তু কাউকে যুক্তি দিয়ে কি কবরের আজাব বুঝাতে বা দেখাতে পাবর। কিংবা বিজ্ঞানের আবিস্কার ক্যামেরা দ্বারা কি এই আজাব দেখাতে পারব। অপর পক্ষে আমলের ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এখানে কুরআন হাদিসের বাহিরে ইজমা কিয়াজের দরকার হয়। নতুন কোন সমস্যা আসলে কিয়াস করে মাসায়েল দিতে হয়। যেমনঃ মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট, শেয়ার বাজার ইত্যাদি ইসলামের প্রথমিক যুগে ছিলনা। তাই কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে কিয়াস করে সমাধান দিতে হয়। কজেই একটি কথা মনে রাখতে হবেঃ “আকিদা ও ফিকহের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, ফিকহের ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন নেই”।

এক কথায় বলে গেলে কুরআন হাদিসের ষ্পষ্ট কোন রেফারেন্স ছাড়া আকিদা গ্রহণীয় নয়। যদি কেউ যুক্তি দিয়ে আকিদা বুঝাতে আসে তাকে সালাম জানাতে হবে। 

কুনআন সুন্নাহকে উৎস হিসাবে না নিলে আকিদার ভিন্নতা তো থাকবেই। আর এই ভিন্ন আকিদা আসবে সম্পূর্ণ নতুন করে যা বিদআত বলা হয়। কুরআন হাদিসে ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই, এমন ফিকহি মাসলা মাসায়েলের ক্ষেতে ইখতিলাফ বা মতভেদ করা জায়েয হলেও, আকিদার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতভেদ জায়েয নেই। কারন আকিদার ছয়টি বিষয় (আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, কিতার সমুহের প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস, তাক্বদীরের  ভালো মন্দেন প্রতি বিশ্বাস) যার সবগুলিই গায়েবের সাথে সম্পৃক্ত এবং গায়েব জানার জন্য অহীর প্রয়োজন। যতি কেউ তার আকিদাকে অহী ভিত্তিক না করে, যুক্তি ভিত্তিক করে, তাহলে তার বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। অহী ভিত্তিক না হয়ে আকিদা যুক্তি ভিত্তিক হলেই বিদআতি আকিদা হবে।

আকিদার সম্পর্কে আলোচনার আগে একটা কথাকে মনে খোদাই করে লিখে রাখেন, “আকিদা গাইবের প্রতি বিশ্বাস, এই বিশ্বাস হবে অহী নির্ভর, কোন প্রকার যু্‌ক্তিতর্কের অবতারণা করা যাবেনা”। কাজেই আমি যে ভ্রান্ত আকিদাগুলি তুলে ধরব তার বিপক্ষে আন্ততো কুরআনের একটি আয়াত অথবা একটি সহিহ হাদিস উপস্থাপণ করব। এই সহিহ আকিদার বিপরীতে যে সকল বিদআতি আকিদা সবার সামনে তুলে ধরব, সেই সকল আকিদার কুরআন সুন্নাহতে কোন প্রমান পাওয়া যাবে না। কুরআন সুন্নাহ নাই বলেই আকিদার নাম দিলাম বিদআতি আকিদা।

সঠিক আকিদা হলোঃ ইসলামি শরীয়তে বাইয়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তবে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন তরীকার বাইয়াত বিদআত।

সঠিক আকিদার দলীলঃ

সুফিদের আকিদা পীরের হাতে বইয়াত করা ওয়াজিব। প্রত্যেক সুফি মনে করে থাকের আত্মশুদ্ধির জন্য কোন না কোন পীরের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সমাজে প্রচলিত হক্কানি পীর বা ভন্ড পীর প্রত্যেকের দাবি হল, আত্মশুদ্ধির জন্য কোন এক পীরের হাতে বাইয়াত হয়ে তার দেখান পথে বা তরিকায় সাধনা করে আল্লাহ স্বন্ত্বষ্টি অর্জণ করতে হয়। বাইয়াত ইসলামের একটি অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ পরিভাষা। সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সাঃ) এর নিকট বাইয়াত হয়েছেন। রাসুল (সাঃ) এর ইন্তিকালের পর যখন খেলাফতের দায়িত্ব নিয়ে সাহাবিদের মাঝে মতভেদ দেখা দেয় তখন সকল সাহাবায়ে কেরাম হযরত আবুবকর (রাঃ) এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে মতভেদ দুর করেন। এভাবে ইসলামি খেলাফত পরিচালনার দায়িত্ব যার উপর ন্যস্ত হয়েছিল তাঁর নিকট বাইয়াত হওয়া ইসলামের ইতিহাসে ব্যাপক ভাবে স্বীকৃত। কিন্তু আমাদের দেশ ও উপমহাদেশে পীর- মুরীদদের বেলায় পরিভাষাটি বিশেষ ভাবে পরিচিত।

যেহেতু পীর মাসায়েক দ্বারা উপমহাদেশে ইসলাম বিস্তৃতি লাভকরে তাই তাদের হাতে অনেকই ইসলাম গ্রহন করে তাদের হাতে বাইয়াত হত। পরর্তীতে তাদের ইসলাম গ্রহনের বাইয়াত ডাল পালা গজিয়ে আর পীর মুরিদের ব্যবসা চলছে। ব্যবসা চালিয়ে রাখতে বা অধিক সংখ্যক মুরিদ বানাতে, অনেক পীর বলে থাকেন, “ যার পীর নাই, তার পীর শয়তান, আবার অনেকে বলে থাকেন, পীর না ধরলে বেহেস্তে যাওয়া যাবেনা।  আমাদের অনেকেই ইসলামের বাইয়াত পরিভাষাটির সঠিক তাৎপর্য না জানার কারনে ভুল করে থাকি। পীরদের এহেন দাবির সত্যতা যাচাই বাচাইয়ের আগে বাইয়াত সম্পর্কে একটু আলোকপাত করতে চাই। 

 

১। বাইয়াত কি?

বাইয়াত একটি আরবি শব্দ যা আরবি “বাইয়ানুন” শব্দ থেকে উত্পত্তি হয়েছে যার অর্থ হলঃ বেচা-কেনা, লেন-দেন, বিক্রি করা-খরিদ করা। এ শব্দটি বিক্রয় ও খরিদ উভয় অর্থেই ব্যবহার করা হয়। তবে এর আসল অর্থ বিক্রয়। আরবি শব্দের মূল অর্থ বিক্রয় হলেও বাইয়াত শব্দটি চুক্তি, শপথ, অংগীকার অর্থেও ব্যপক হাবে ব্যবহৃত হয়। যদি বলি সে আমার কাছে বাইয়াত হয়েছে তার অর্থ হবে সে আমার নিকট অংগীকার করেছে। আবার বিক্রিত মালের উপর যেমন কারো অধিকার খাটে না, তেমনি কার নিকট বাইয়াত গ্রহন করার পর তার আর নিজেস্ব কোন মতামত থাকে না।

এক জন বিধর্মী যদি ইসলাম গ্রহণ করে তবে তাকে ইসলামি শরীয়তের নিকট আত্মসমর্পণ করতে হবে, তার নিজেস্ব কোন মতামত চলবেনা। সে ইসলামি শরীয়ত মত চলতে বাধ্য থাকিবে। কাজেই বাইয়াতের পরিভাষা হল, কারো নিকট বাইয়াত গ্রহণ মানে তার কথা মত কাজ করতে বাধ্য থাকার অঙ্গীকার করা। যদি কেউ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে তবে তার অর্থ হবে, তার নিকট বিক্রি হওয়া  বা আত্বসম্মর্পণ করা। অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বিধান গুলো নিয়ে এসেছেন সেগুলো একজন বাধ্য গোলামের মত  বা বিক্রিত মানুষের মত মেনে নেওয়া, কোন বাড়াবাড়ি না করা। ইসলাম ধর্মে প্রবেশ কারী নতুন মুসলীমকে কালেমা শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম গ্রহন করতে হয়। সেই সাথে ইসলামি বিধাণ মেনে চলার জন্য অঙ্গীকার করাকেও বাইয়াত বলে যেতে পারে। ইসলাম মেনে চলার ক্ষেত্রে বাইয়াত গ্রহনের নিয়ম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জামানায় ছিল। তার জীবন দসায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারনে সাহাবাগন বাইয়াত গ্রহণ করেছেন। এমনকি তার খোলাফায়ে রাসেদাদের সময়েও খিলাফাতের জন্য সাহাবিগণ ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানের আনুগত্বের বাইয়াত গ্রহণ করেছেন। বাইয়াত ইসলামের একটা বিধাণও বলা যায়। যেমনঃ ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানের আনুগত্বের জন্য বাইয়াত করা সকল মুসলীমের জন্য ওয়াজিব।

 কুরআন ও হাদিসে বাইয়াত শব্দটি ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণ সরূপ বলা যায়, কুরআনুল করিমের সুরা জুমা ও সুরা নুর-এ ‘বাইয়’ শব্দটি ক্রয় বিক্রয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।  যেমনঃ মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ*

অর্থঃ মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। [ সুরা জুম’য়া ৬২:৯ ]

মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,

رِجَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاء الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ

অর্থঃ এমন লোকেরা, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যে দিন অন্তর ও দৃষ্টি সমূহ উল্টে যাবে। [সুরা নুর ২৪:৩৭ ]

 

 ২। বাইয়াত করা সম্পর্কে কুরআনের ভাষ্যঃ

বাইয়াত ইসলামের একট চির সত্য বিধান। কাজেই বাইয়াত করা কখনও ওয়াজিব আবার কখন হারাম। কুরাআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বাইয়াতের  হুকুম প্রদান করছেন। যেমন তিনি বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

অর্থঃ হে নবী, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের বাইয়াত (আনুগত্য) গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু। [ সুরা মুমতাহিনা ৬০:১২ ]

সহিহ মুসলীমের একটি হাদিস লক্ষ করি। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ ও ‘আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এবং আবূ বাকর, উমার ও উসমান (রাযিঃ)-এর সাথে ঈদুল ফিতরের সলাতে উপস্থিত ছিলাম। তারা সবাই খুতবার আগে সলাত আদায় করেছেন এবং পরে খুতবাহ পাঠ করেছেন। তিনি বলেন, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মিম্বার থেকে) অবতরণ করলেন। যখন তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে লোকদের বসিয়ে দিচ্ছিলেন, তা যেন আমি দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর তিনি লোকদের মধ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হয়ে মহিলাদের নিকট আসলেন। এ সময় তার সাথে বিলাল (রাযিঃ) ছিলেন। এরপর তিনি এ আয়াতটুকু পাঠ করলেন,

 يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَنْ لاَ يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا

অর্থঃ “হে নবী! ঈমানদার মহিলারা আপনার নিকট আসে, তখন তারা একথার ওপর বাইয়াত করবে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করবে না”।  (সূরাহ আল মুমতাহিনাহ ৬০:১২)।

এ আয়াত পাঠ সমাপ্ত করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তোমরা কি এ কথার ওপর অটল আছ? তখন মাত্র একজন মহিলাই উত্তর করল, হ্যাঁ। হে আল্লাহর নাবী! সে ব্যতীত তাদের মধ্যে থেকে আর কেউ প্রতি উত্তর করেননি। অবশ্যই মহিলাটি কে তখন তা জানা যায়নি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তারা সদাকাহ করতে লাগল আর বিলাল (রাযিঃ) তার কাপড় বিছিয়ে দিলেন অতঃপর বললেন, তোমাদের প্রতি আমার মা-বাপ কুরবান হোক! এগিয়ে আসো। তখন মহিলারা তাদের ছোট বড় আংটিসমূহ বিলালের কাপড়ের উপর ফেলতে লাগল। ( সহিহ মুসলিম  হাদিস একাডেমি ১৯২৯)।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফহিমুল কুরআনের ১৮ টিকায় বলা হয়েছে, যদিও এই আয়াতটি মক্কা বিজয়ের আগে নাজিল হয়েছে। তার পরও মক্কা বির্জিত হলে কুরইশরা বাইয়াতের জন্য দলে দলে রসূলুল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে হাজির হতে থাকল। তিনি নিজে সাফা পাহাড়ের ওপর পুরুষদের থেকে বাইয়াত গ্রহণ করলেন এবং তাঁর নিজের পক্ষ থেকে মহিলাদের ‘বাইয়াত’ গ্রহণ এবং এ আয়াতে যে বিষয়গুলো বর্ণিত হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি নিতে হযরত উমরকে (রা) নির্দেশ দিলেন । (ইবনে আব্বাসের বর্ণনা সূত্রে ইবনে জারীর কাতাদার বর্ণনা সূত্রে ইবনে হাতেম)।

এরপর তিনি মদীনায় ফিরে গিয়ে আনসারী মহিলাদের এক জায়গায় জামায়েত করার নির্দেশ দিলেন এবং তাদের বাইয়াত গ্রহণের জন্য হযরত উমরকে (রা) পাঠালেন। (ইবনে জারীর, ইবনে মারদইয়া, বাযযার , ইবনে হিব্বান উম্মে আতিয়া আনসারিয়ার বর্ণনা সুত্রে)।তিনি ঈদের দিনেও পুরুষদের সমাবেশে বক্তৃতা করার পর মহিলাদের সমাবেশে গিয়েছিল এবং সেখানেও বক্তৃতার মধ্যে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন । এর মধ্যে যেসব বিষয়ের উল্লেখ আছে সেসব বিষয়ে তিনি মহিলাদের নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। (বুখারী ইবনে আব্বাসের বর্ণনা সুত্রে) এসব ক্ষেত্র ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মহিলারা ব্যক্তিগতভাবেও এবং সমষ্টিগতভাবেও তাঁর কাছে হাজির হয়ে বাইয়াত গ্রহণ করত যা বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

মক্কায় যে সময় মহিলাদের নিকট থেকে বাইয়াত নেয়া হচ্ছিল সেই সময় হযরত আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উতবা এই নির্দেশটির ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরজ করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল, আবু সুফিয়ান কিছুটা কৃপণ প্রকৃতির লোক। আমি যদি তাকে না জানিয়ে আমার এবং আমার সন্তানদের প্রয়োজন পূরণের জন্য তার সম্পদ থেকে কিছু নেই তাতে কি আমার কোন গোনাহ হবে৷ তিনি বললেনঃ না, তবে ন্যায়সংগত সীমার মধ্যে থেকে। অর্থাৎ ঠিক এতটা অর্থ নাও যা প্রকৃত অর্থে বৈধ প্রয়েজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট । (আহকামূল কুরআন, ইবনে আরাবী)।

বাইয়াত সম্পর্কে সুরা ফাতাহ এর ১০ ও ১৮ নম্বর আয়াত দুটি লক্ষ করি। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ

অর্থঃ যারা আপনার কাছে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) করে, তারা তো আল্লাহর কাছে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। [ সুরা ফাতাহ ৪৮:১০ ]

মহান আল্লাহ বলেন,

لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا

অর্থঃ আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে বাইয়াত (শপথ) করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন। [ সুরা ফাতাহ ৪৮:১৮ ]

উক্ত আয়াত দুটির শানে নূযুলে বলা হয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমরার জন্য মক্কা উদ্দশ্যে যাত্রা করে মক্কা থেকে ২০/২২ কিলোমিটার হুদায়বিয়া নামক স্থানে মুসলিমদের নিয়ে অবস্থান করছিলেন। কারন তারা রাসূল সাঃ কে মক্কা প্রবেশে বাধা প্রদান করেছিল। তিনি তখন মক্কার মোশরেকদের সাথে আলোচনার জন্য হযরত ওসমান (রাঃ) কে মক্কায় প্রেরণ করা হয়। তাঁকে মক্কায় মুশরিকরা আটক করে রাখলে গুজব রটে যে,  তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এ বার্তা শুনে মুসলমানগণ রাসুলুল্লাহ সাঃ এর আহ্বানে জিহাদের বাইয়াত গ্রহণ করেন। এই বাইয়াত ইতিহাসে বায়আতে রিদওয়ান নামে খ্যাত।

এই আয়াতে উক্ত বায়াতের উল্লেখ করা হয়েছে। এই বাইয়াত কারিদের উপর আল্লাহ রহমত ও সন্ত্বষ্টি ছিল। এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা সুসংবাদ দান করেছেন যে, যারা এ ভয়ংকর পরিস্থিতিতে জীবন বাজি রাখতে সমান্য দ্বিধাও করেনি এবং রসূলের হাতে হাত দিয়ে জীবনপাত করার বাইয়াত করে ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী হওয়ার স্পষ্ট  প্রমাণ পেশ করেছে তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। সময়টি ছিল এমন যে,  মুসলমানগণ শুধুমাত্র একখানা করে তরবারি নিয়ে এসেছিলেন এবং সংখ্যায় ছিলেন মাত্র চৌদ্দশ’ । তাদের পরিধানেও সামরিক পোশাক ছিল না বরং ইহরামের চাদর বাধা ছিল।

নিজেদের সামরিক কেন্দ্র ( মদীনা) থেকে আড়াই শ’ মাইল (৪৫০ কিমিঃ) দূরে  ছিল। এই কঠিন মুহুর্তে যু্দ্ধ করার অর্থই হল নিশ্চিত মুত্যু। তার পরও সহাবিগন রাঃ প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য জীবন দান করবের বলে যে বাইয়াতহ গ্রহন করে তাতে তাদের আন্তরিকতার সামান্য ঘাটতি ছিল না। তারা এ চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিত্যাগ করে চলে যেতো এবং ইসলাম বাতিলের সাথে লড়াইয়ে চিরদিনের জন্য হেরে যেতো । আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠতা ছাড়া বাইরের এমন কোন চাপ তাদের ওপর ছিল না যা তাদেরকে এ বাইয়াত গ্রহণে বাধ্য করতে পারতো। এ কারণে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে সন্তুষ্টির এ সনদ দান করেছেন

  

৩। সহিহ হাদিসের আলোকে বাইয়াতঃ

বাইয়াত সম্পর্কে বহু সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সাহাবিগন যে বাইয়াত করেছেন, তাদের বাইয়াতে ধরন ও বিষয় বস্তু সম্পর্কে একটু ধারণা পেতে সহিহ হাদিস থেকে কয়েকটি হাদিস উল্লেক করছি।

০১। জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সালাত আদায়, যাকাত প্রদান এবং প্রত্যেক মুসলমানকে নসীহত করার বায়আত গ্রহন করেছি। (সহিহ বুখারি হাদিস ৪৯৯ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

০২। মারওয়ান ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ থেকে বর্ণনা করেন, সেদিন (সুলহে হুদায়বিয়র দিন) সুহাইল ইবনু আমর যখন সন্ধিপত্র লিখলেন তখন সুহাইল ইবনু আমার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি এরূপ শর্ত আরোপ করল যে, আমাদের কেউ আপনার কাছে আসলে সে আপনার দ্বীন গ্রহন করা সত্ত্বেও আপনি তাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিবেন। আর আমাদের ও তার মাঝে হস্তক্ষেপ করবেন না। মুমিনরা এটা অপছন্দ করলেন এবং এতে ক্রুদ্ধ হলেন। সুহাইল এটা ছাড়া সন্ধি করতে অস্বীকার করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে শর্ত মেনেই সন্ধিপত্র লেখালেন। সেদিন তিনি আবূ জানদাল (রাঃ) কে তার পিতা সুহাইল ইবনু আমরের কাছে ফেরত দিলেন এবং সে চুক্তি মেয়াদের কালে পুরুষদের মধ্যে যেই এসেছিল মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাকে ফেরত দিলেন।

মুমিন মহিলাগণও হিজরত করে আসলেন। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা ইবনু আবূ মুয়ায়ত (রাঃ) ছিলেন। তিনি ছিলেন যুবতী। তাঁর পরিজন তাদের নিকট একা তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে দাবী জানালো। কিন্তু তাকে তিনি তাদের কাছে ফেরত দিলেন না। কেননা, সেই মহিলাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করেছিলেনঃ মুমিন মহিলাগণ হিজরত করে তোমাদের কাছে আসলে তাদের তোমরা পরীক্ষা কর। আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন হবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠাবে না (৬০: ১০)।

উরওয়া (রাঃ) বলেন, আয়িশা (রাঃ) আমাদের কাছে বর্ণণা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ‏إِذَا جَاءَكُمْ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ) এই আয়াতের ভিত্তিতেই তাদের পরীক্ষা করে দেখতেন। উরওয়া (রাঃ) বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, তাদের মধ্যে যারা এই শর্তে সম্মত হতো তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু এ কথা বলতেন, ‘আমি তোমাকে বায়আত করলাম। আল্লাহর কসম! বায়আত গ্রহণে তারা কখনো কোন মহিলার হাত স্পর্শ করেনি। তিনি তাদের শুধু (মুখের) কথার মাধ্যমে বায়আত করেছেন। (সহিহ বুখারি হাদিস ২৫৩০ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

০৩। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের দিকে বের হলেন, হীম শীতল সকালে আনসার ও মুহাজিররা পরীখা খনন করছেন, আর তাদের এ কাজ করার জন্য তাদের কোন গোলাম ছিল না। যখন তিনি তাদের দেখতে পেলেন যে, তারা কষ্ট ও ক্ষুধায় আক্রান্ত, তখন বললেন, হে আল্লাহ! সুখের জীবন আখিরাতের জীবন। তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও। প্রত্যুত্তরে তারা বলে উঠেনঃ আমরা সেই লোক যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে জিহাদের বায়আত গ্রহন করেছি, যতদিন আমরা বেঁচে থাকি। (সহিহ বুখারি হাদিস ২৬৩৮ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

০৪।  ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) … মুজাশি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভাতিজাকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্থিত হলাম। তারপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল আমাদেরকে হিজরতের উপর বায়আত নিন’। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘হিজরত তো হিজরতকারীগণের জন্য অতীত হয়ে গেছে’। আমি বললাম, ‘তাহলে আপনি আমাদের কিসের উপর বায়আত নিবেন?’ তদুত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘ইসলাম ও জিহাদের উপর’। (সহিহ বুখারি হাদিস ২৭৫৬ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

০৫। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … মুজাশি ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুজাশি‘ তাঁর ভাই মুজালিদ ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাচে এসে বললেন, ‘এ মুজালিদ আপনার কাছে হিজরত করার জন্য বাইয়াত করতে চায়। ‘তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরতের প্রয়োজন নেই। কাজেই আমি তার কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে বায়য়াত নিচ্ছি।’ (সহিহ বুখারি হাদিস ২৮৬১ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

৬। আবূ অলীদ উবাদাহ ইবনু সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এই মর্মে বাইয়াত করলাম যে, দুঃখে-সুখে, আরামে ও কষ্টে এবং আমাদের উপর (অন্যদেরকে) প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায় আমরা তাঁর পূর্ণ আনুগত্য করব। রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে তার নিকট থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার লড়াই করব না; যতক্ষণ না তোমরা (তার মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখ, যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল রয়েছে। আর আমরা সর্বদা সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করব না।’ (রিয়াদুস সালেহীন ৩/১৯১, সহীহুল বুখারী ৭০৫৬, সহিহ মুসলিম ১৭০৯, তিরমিযী ১৪৩৯, নাসায়ী ৪১৪৯)

৮। উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (বাইআত করার উদ্দেশ্যে) ১০ জন লোক উপস্থিত হল। তিনি ন’জনের নিকট থেকে বাইয়াত নিলেন। আর মাত্র একজন লোকের নিকট হতে বাইআত নিলেন না। সকলে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি ন’জনের বাইআত গ্রহণ করলেন, কিন্তু এর করলেন না কেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘ওর দেহে কবচ রয়েছে তাই।’’ অতঃপর সে নিজ হাতে তা ছিঁড়ে ফেলল। সুতরাং তার নিকট থেকেও বাইআত নিলেন এবং বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি কবচ লটকায়, সে ব্যক্তি শিরক করে।’’ (আহমাদ ১৭৪২২, হাকেম, সিলসিলাহ সহীহাহ ৪৯;  গ্রন্থঃ হাদীস সম্ভার-৩৭৯৩, পাবলিশারঃ ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী)।

০৯। হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেছি শ্রবণ ও আনুগত্যের ব্যাপারে এবং এটা স্বাভাবিক অবস্থা, কঠিন অবস্থা, আগ্রহ ও অনাগ্রহ সর্বাবস্থার জন্য প্রযোজ্য। আমরা আরো বাইয়াত গ্রহণ করেছি যে, যে কোন ব্যাপারে আমীরের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবো না এবং সর্বাবস্থায় সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবো এ ব্যাপারে কোন তিরস্কার কারীর তিরস্কারকে পরোয়া করবো না। (নাসায়ী )

 

৪। আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু এর খেলাফতের বাইয়াতঃ

আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু এর খেলাফতের বাইয়াতের ঘটনায় উমর রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু এর বর্ণনায়।

উবাইদুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ বিন উতবা বিন মাসউদ থেকে বর্ণিত আছে যে, ইবনুল আব্বাস তাকে জানিয়েছেন, আবদুর রহমান ইবনে আওফ তার মালপত্রের কাছে ফিরে এলেন। ইবনুল আব্বাস বলেন, আমি তখন আবদুর রহমান বিন আউফকে আল কুরআন পড়াতাম। তিনি আমাকে উপস্থিত পেলেন। আমি তার জন্য অপেক্ষমান ছিলাম। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর শেষ হজ্জে মীনায় এ ঘটনা ঘটে।

আবদুর রহমান বিন আওফ বলেন, এক ব্যক্তি উমার ইবনুল খাত্তাবের কাছে এল। সে বললোঃ অমুক ব্যক্তি বলে, উমার যদি মারা যেত, তাহলে আমি অমুকের নিকট বাইয়াত করতাম। (অর্থাৎ তাকে পরবর্তী খালীফা মেনে নিতাম) এ কথা শুনে উমার বললেন, আজ সন্ধ্যায় আমি জনগণের সামনে ভাষণ দিয়ে তাদেরকে সেই সব লোক থেকে সতর্ক করবো, যারা জনগণের শাসন ক্ষমতা জোরপূর্বক কেড়ে নেয়ার ফন্দি আঁটছে।

আবদুর রহমান বলেন, আমি বললামঃ হে আমীরুল মুমিনীন, এ কাজটি করবেন না। কেননা হজ্জের মৌসুমে নানা রকমের বখাটে ও নির্বোধ লোক সমবেত হয়ে থাকে। আপনি যখন জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন, তখন তারাই আপনার সমাবেশে পরাক্রমশালী থাকবে। আমার আশঙ্কা হয়, আপনি এমন কোন কথা বলে ফেলবেন, যা নিয়ে তারা প্রচারণায় নেমে পড়বে, তার সঠিক অর্থ উপলব্ধি করবে না এবং যথাস্থানে তা উপস্থাপন করবে না। তবে আপনি মদীনায় যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কারণ মদীনা হচ্ছে হিজরাত ও সুন্নাতের নগরী। সেখানে আপনি এককভাবে জ্ঞানীগুণী ও ভদ্র শ্রেণীর লোকদের সাথে মিলিত হতে পারবেন। তখন আপনি শক্তিশালী অবস্থান থেকে কথা বলতে পারবেন। লোকেরা সে কথা উপলব্ধি করবে ও যথাস্থানে উপস্থাপন করবে। উমার (রাঃ) বললেন, আমি যদি নিরাপদে ও সুস্থভাবে মদীনায় পৌছি, তাহলে সর্বপ্রথম যে স্থানে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার সুযোগ পাবো, সে স্থানেই ভাষণ দেবো। এরপর যখন জিলহজ্জ মাসের শেষের দিকে আমরা মদীনায় উপস্থিত হলাম, সেদিন ছিল শুক্রবার। তখন আমি অন্ধ লোকের যাত্রার মত ত্বরিত গতিতে যাত্রা করলাম। (আমি এই হাদীসের মধ্যবর্তী অন্যতম বর্ণনাকারী মালিককে জিজ্ঞেস করলাম, অন্ধ লোকের যাত্রার মত অর্থ কী? তিনি বললেন, এর অর্থ হলোঃ (যে ব্যক্তি) কোন সময়ে যাত্রা শুরু করলো এবং ঠাণ্ডা, গরম বা অনুরূপ কোন কিছুর তোয়াক্কা করে না।) আমি মসজিদে নববীর পার্শ্বে সাঈদ বিন যায়িদকে পেলাম। সে আমার আগেই পৌছে গেছে। আমি তার পার্শ্বেই তার হাটুর সাথে হাটু লাগিয়ে বসলাম।

কিছুক্ষণ পরেই উমার (রাঃ) আবির্ভূত হলেন। আমি তাকে দেখেই বললাম, আজ সন্ধ্যায় উনি এমন এক ভাষণ দেবেন, যা তার আগে আর কেউ দেয়নি। এরপর উমার (রাঃ) মিম্বারে বসলেন। মুয়াযযিনের আযান দেয়া শেষ হলে উমার দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। তারপর বললেনঃ হে জনতা, আমি আজ এমন একটা কথা বলতে যাচ্ছি, যা নেহাৎ ভাগ্যক্রমেই আমি বলার সুযোগ পাচ্ছি। জানিনা, হয়তো আমার আয়ুষ্কালের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েই এটা বলতে পারছি। যারা আমার এ বক্তব্যকে মনে রাখবে ও বুঝবে, তারা যেন তাদের যাত্রার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত গিয়েও তা প্রচার করে। আর যে মনে রাখতে পারবে না ও বুঝবে না সে আমার নামে মিথ্যা প্রচার করুক -এটা আমি অনুমোদন করি না।

নিশ্চয় আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন এবং তার ওপর কিতাব নাযিল করেছেন। তার ওপর যা কিছু নাযিল করেছেন, রজম সংক্রান্ত আয়াতও তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা তা পড়েছি ও বুঝেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও রজম করেছেন, তার পরে আমরাও করেছি। আমার আশঙ্কা হয় যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হবার পর এক সময় লোকেরা বলতে পারে, আল্লাহর কিতাবে আমরা রজম সংক্রান্ত আয়াত পাইনা। এভাবে আল্লাহর নাযিল করা একটা ফারয বর্জন করে তারা বিপথগামী হয়ে যাবে।

বস্তুতঃ বিবাহিত নারী ও পুরুষ ব্যভিচার করলে তার ওপর রজম চালু করা আল্লাহর কিতাবের আওতাভুক্ত একটা অকাট্য সত্য বিধি, যখন তার ওপর সাক্ষ্য, স্বীকারোক্তি বা গর্ভধারণ পাওয়া যাবে। জেনে রাখ, আমরা পড়তামঃ তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষদের প্রতি বিমুখ হয়ো না। কেননা পিতৃপুরুষদের প্রতি বিমুখ হওয়া তোমাদের জন্য কুফরী। জেনে রাখ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈসা ইবনে মারইয়ামকে নিয়ে যেমন লোকেরা বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করেছে, তেমনি আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করো না। আমি তো আল্লাহর বান্দা।

কাজেই তোমরা আমাকে বলবেঃ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আমি জানতে পেরেছি যে, তোমাদের কোন একজন বলেছে, উমার যদি মারা যেতেন, তবে আমি অমুকের হাতে বাইআত হতাম, তোমাদের কেউ যেন এতদূর ধৃষ্টতা না দেখায় যে, আবু বাকরের খিলাফাতকে অপ্রত্যাশিত ব্যাপার বলবে। ওটা অপ্রত্যাশিত ছিল বটে। তবে আল্লাহ তাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেছেন। (অর্থাৎ তাকে সফল করেছেন) আজ আমাদের মধ্যে আবু বকরের মত কেউ নেই। তার সমকক্ষ কেউ হতে পারে না।

শোন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের সময় আমাদের নিকট সংবাদ এসেছিল যে, আলী, যুবাইর ও তাঁদের উভয়ের সহযোগীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা ফাতিমা (রাঃ) এর বাড়িতে বসে ছিলেন। আর সমগ্র আনসার গোষ্ঠী আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাকীফায়ে বানু সায়েদায় এবং মুহাজিরগণ আবু আমরা আমাদের আনসার ভাইদের কাছে যাই। অতঃপর তাদের নেতৃত্ব দিতে আমরা রওনা হয়ে গেলাম। পথে দু’জন সৎ লোকের সাথে আমাদের সাক্ষাত হলো। তারা উভয়ে আমাদের কাছে জনতার আচরণ কেমন ছিল, তার বিবরণ দিল। তারা বললেনঃ হে মুহাজিরগণ, আপনারা কোথায় যাত্রা করেছেন? আমি বললামঃ আমাদের আনসার ভাইদের কাছে যাচ্ছি। তারা উভয়ে বললেনঃ আপনাদের কোন উদ্বেগের কারণ নেই। ওদের কাছে যাবেন না। হে মুহাজিরগণ, আপনাদের যা করণীয়, তা আপনরারা করে ফেলুন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমরা ওদের নিকট যাবোই। অতঃপর আমরা রওনা হলাম এবং বনু সায়েদা গোত্রের সাকীফায় (চত্বরে) তাদের নিকট গেলাম। দেখলাম, তারা সবাই সেখানে সমবেত। তাদের মাঝে এক ব্যক্তি কম্বল আচ্ছাদিত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ ব্যক্তি কে? লোকেরা বললো, সা’দ বিন উবাদা। আমি বললামঃ ওর কী হয়েছে? লোকেরা বললোঃ ব্যথা। আমরা যখন বসলাম, তখন তাদের (আনসারদের) জনৈক বক্তা দাড়ালো। প্রথমে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলো। তারপর বললোঃ আমরা হচ্ছি আল্লাহর আনসার (সাহায্যকারী) ও ইসলামের সৈনিক।  আর হে মুহাজিরগণ, আপনারা আমাদেরই একটি গোষ্ঠী। অথচ আপনাদের পক্ষ থেকে তোড়জোড় শুরু হয়েছে আমাদেরকে আমাদের মূল থেকে বিচ্ছিন্ন করার ও সামষ্টিক তৎপরতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য। এরপর এই বক্তা যখন ক্ষ্যান্ত হলো, তখন আমি কথা বলতে ইচ্ছা করলাম। আমি একটা চমকপ্রদ ভাষণ তৈরি করেছিলাম, যা আবু বাকরের সামনে দিতে চেয়েছিলাম। ইতিপূর্বে আবু বাকরের সাথে আমি কিছুটা হৃদ্যতা বজায় রাখতাম। তিনি আমার চেয়ে সহিষ্ণু ও সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন। আবু বাকর আমাকে বললেন, একটু ধৈর্য ধারণ কর। তখন তাকে রাগান্বিত করা আমার ভালো লাগলো না। কারণ তিনি আমার চেয়ে জ্ঞানী ও সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন।

আল্লাহর কসম, আমার তৈরি করা চমকপ্রদ ভাষণে যা যা ছিল, তার একটি কথাও তিনি বলতে বাদ রাখলেন না বরঞ্চ আরো উত্তম কথা তাৎক্ষণিকভাবে ও কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই বললেন, অতঃপর নীরব হলেন। তিনি বললেন, তোমরা যেসব উত্তম কথা বলেছ, তোমরা যথার্থই তার উপযুক্ত। আরবরা তাদের নেতৃত্বদানের কাজটা কুরাইশদের এই গোষ্ঠীটার জন্য নির্দিষ্ট বলেই জানে। বংশ মর্যাদার ও পারিবারিক আভিজাত্যেরদিক দিয়ে এ গোষ্ঠীটা মধ্যম ধরনের সন্ত্রান্ত। আমি তোমাদের জন্য এই দুই ব্যক্তির মধ্যে যে কোন একজনের প্রতি সন্তুষ্ট। তোমরা এদের মধ্য থেকে যাকে চাও গ্রহণ কর। এই বলে তিনি আমার [উমার (রাঃ)] ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহর হাত ধরলেন। এ ছাড়া আর, যা কিছু তিনি বললেন, তা আমি অপছন্দ করিনি। আল্লাহর কসম, পরিস্থিতি এমন ছিল যে, আমাকে প্রথমে এগিয়ে দেয়া হলে আমাকে হত্যা করা হতো, যে জনগোষ্ঠীতে আবু বাকর আছে, সেই জনগোষ্ঠীর ওপর আমি নেতৃত্ব করবো, এটা আমার কাছে গুনাহর কাজ মনে হয়। অবশ্য মৃত্যুর সময় আমার ভেতরে কোন পরিবর্তন এলে সেটা ভিন্ন কথা। এই সময় জনৈক আনসার বলে উঠলো, “আমি একজন প্রাজ্ঞ ও বিচক্ষণ বক্তি। হে কুরাইশ, আমাদের মধ্য হতে একজন নেতা হবেন, আর তোমাদের মধ্য হতে একজন আমীর হবেন।

অতঃপর কথাবার্তা বাড়লো এবং আওয়ায উচ্চতর হলো। আমার আশঙ্কা হলো যে, মতভেদ সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমি বললাম, হে আবু বাকর, আপনার হাত বাড়িয়ে দিন। তিনি হাত বাড়ালেন। অমনি আমি তার নিকট বাইয়াত করলাম। সকল মুহাজির তার নিকট বাইয়াত করলো। তারপর আনসারগণও তার নিকট বাইয়াত করলো। এরপর আমরা সা’দ বিন উবাদার নিকট গেলাম। তাদের একজন বললো, তোমরা সা’দকে হত্যা করলে! আমি বললাম, আল্লাহ সা’দকে হত্যা করেছেন।

উমার (রাঃ) বললেনঃ আমাদের এই সমাবেশে আবু বকরের হাতে বাইয়াত করার চেয়ে যুক্তিযুক্ত আর কোন কাজ আমরা পাইনি। আমরা কোন বাইয়াত না করে যদি চলে যেতাম, তবে আশঙ্কা ছিল যে, লোকেরা আমাদের পরে নতুন কোন বাইয়াত উদ্ভাবন করে নিত। তখন সেটা আমাদের অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও হয়তো আমাদের মেনে নিতে হতো, নচেত তার বিরোধিতা করতে হতো এবং তার ফলে গোলযোগ ছড়িয়ে পড়তো। মুসলিমদের সাথে পরামর্শ না করে যে ব্যক্তি কোন নেতার হাতে বাইয়াত করবে, তার বাইয়াত হবে না, যে ব্যক্তি বাইয়াত নেবে, তারও বাইয়াত হবে না। এমনকি এতে উভয়ের নিহত হবারও ঝুঁকি রয়েছে। অন্যতম বর্ণনাকার মালিক বলেন, যে দুজন আবু বকর ও উমারের সাথে দেখা করেছিলো, তারা হলেন উমাইর বিন সায়েদা ও মা’ন বিন আদী।

ইবনে শিহাব বলেন, সাঈদ বিন মুসাইয়াব আমাকে জানিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি বলেছিল, আমি সুচতুর, সে ছিল হুবাব ইবনুল মুনযির। [বুখারী, মুসলিম, ইবনু হিব্বান, মুসনাদে আহমাদ-১৫৪, ১৫৬, ২৪৯। ভাষ্য মুসনদে আহম্মদের]

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

 

Leave a comment