জিকির কেন্দ্রিক বিদআত পঞ্চম কিস্তি

জিকির কেন্দ্রিক বিদআত পঞ্চম কিস্তি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

৩৪। জিকিরের সময় শায়েখ বা পীরের ধ্যান করাঃ

আমাদের সমাজে ভন্ড বা হক্কানী দুই প্রকারের পীরই জিকিরের সময় শায়েখ বা পীরের ধ্যান করার জন্য আদেশ প্রদান করে। তাদের দাবি মহান আল্লাহকে দেখা যায় না, তাই তাই ইবাদতে মন বসেনা। যেহেতু তাদের শায়েখ বা পীরের তাদের সমনে থেকে আদেশ নিষধ দান করেন। তাকে দেখে বা তার কল্পনা করে তার আদেশ নিষেধ মান্য করা সহজ। তাই তারা নির্জনে জিকির করার সময় মহান আল্লাহর স্মরণ না করে তাদের শায়েখ বা পীরের ধ্যান করা করে। এভাবে ধ্যান করতে করতে তারা যে দরজা পান তার নাম রেখেছেন, ফানাফিস-শায়েখ। সুফি দর্শণ অনুসারে আল্লাহ-প্রাপ্তির প্রথম সকব হল শায়েখ বা পীলের ধ্যান। সুফি দর্শন অনুযায়ী এই সাধনাকে ‘ তরিকত ’ বা আল্লাহ প্রাপ্তির পথ বলা হয়। তরিকত সাধনায় মুর্শিদ বা পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন হয়। সেই পথ হলো পীরের ধ্যান করে ফানাফিস-শায়েখ হওয়। এই দরজান পৌছানে মুরিদ তার নিজের কোন ভাল মন্দ বেছে আমল করার ক্ষমতা থাকে না। এই হালতে পীরের অন্যায় হুকুমও মুরিদ বিনা দিধায় অনুসরণ করে। এর পরই আসে মুরিদ তার যোগ্যতা দ্বার ফানা ফিররাসুল ও ফানাফিল্লাহ দরজান পৌছায়। এই ধরার সর্বোশেষ ধাপ হল বাকাবিল্লাহ। এই বাকাবিল্লাহ অর্জিত হলে সুফি দর্শন অনুযায়ী সুফি আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ শক্তিতে শক্তিমান হন। তখন সে মানুষের ভাল মন্দ করা ক্ষমাতা প্রাপ্ত হয়। নাউজুবিল্লাহ

উপমহাদেশের অন্যতম আলেম মাওলানা  আশরাফ আলী থানভী তার “মাওয়ায়েযে আশরাফিয়া” এর চতুর্থ খন্ড, ১৯ পৃষ্ঠায়, পীরের ধ্যান করা বিষয়ে বিশাল যুক্তি তুলে ধরেছেন। তবে তিনি বলেছেন, ধ্যানের সময় পীরের আকৃতিতে আল্লাহকে কল্পনা করা একটি শির্কি কাজ। তিনি উল্লেখ করেন এই জন্যই মাওলানা শহীদ রাহিমাহুল্লাহ পীরের ধ্যানকে হারাম বলেতন। যারা মাযারপন্থী পীর তাদের ধ্যান করার মাঝে যে কতটা শির্ক কাজ তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

যা হোক একটু ভাবুন তো, আপনি জিকির করবে আল্লাহ তা’য়ালার আর মনে মনে ধ্যার করবের পীরের। এ কেমন বিচার? ইসলমের নামে এটা কোন নতুন ধর্মের বিধান। তা না হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শির্ক কাজ দুনিয়া থেকে বিদায়ের জন্য পৃথিবীতে সংগ্রাম চালালেন, সেই শির্কি কাজ আজ বিদাআতীগণ তার নামে চালিয়ে দিচ্ছে।  

৩৫। নারী পুরুষ এক সাথে জিকির করাঃ

পৃথিবীতে যত ধর্মই বর্তামান তাদের মধ্য এক মাত্র ইসলামী ধর্মই নারীদের যথাযত সম্মান ও মর্জাদা প্রদান করেছে। কিন্তু সমাজ তাকে অসম্মান করে ভোগে পরিনত করার জন্য হাত ছানি দিয়ে আহবান করে। তাই নারী যাতে সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা ফ্যাসাদ থেকে নিজেকে রক্ষা করে সমাজে সম্মান ও মর্জাদার সাথে বাস করতে পারে আর কেউ যেন তার জীবনে চলার পথে বাধা হতে না পারে তারই লক্ষে ইসলাম ধর্ম তাকে দিক নির্দেশনা দিয়েছে। ইসলাম ধর্ম পর্দার মাধ্যমে নারীদের ইজ্জত, সম্মান, পবিত্রতা এবং সম্ভ্রম রক্ষার গ্যারান্টি দিয়েছে। এই লক্ষে ইসলাম তাদের লেবাস-পোশাক, সৌন্দর্য প্রদর্শন ও চলা ফেরা ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। যাকে আমরা পর্দা হিসাবে বিবেচনা করে থাকি। এখানে পর্দা বিষয়ে আলোচনা করব না। শুধু দুটি আয়াত দিলাম। কারন আমাদের সমাজে কোন মুমিনই পর্দা করারা অস্বীকার করে না। সকলে যানে পর্দা করা একটি ফরজ কাজ। মহান আল্লাহ বলেন,

*قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

বলেন, মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। (সুরা নুর ২৪:৩০)

মহান আল্লাহ আরও

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা নুর ২৪:৩১)

মন্তব্যঃ পর্দা করা ফরজ এই কথা যে অস্বীকার করবে সে ইসলম ধর্ম থেকে বাহির হয়ে যাবে। কিন্তু মজার বিষয় হল, উপমহাদেশের কিছু পীর (দেওবন্দী অনুসারী) বাদে সকলেই নারীর পর্দার বিষয়টি উপেক্ষা করে চলে। তাদের জিকিরের মজলীসে নারীদের উপস্থীতি ছাড়া চলে না। আপনি যদি ইউটিউবে সার্স দেন দেখবেন পর্দাহীর নারীর জিকির। পুরুষ ও নারী একত্র গা ঘেসে নাচানাচি করছে। বিশেষ করে আমরা যাদের ভন্ড পীর হিসাবে চিনি তাদের প্রত্যেকেই নারী নিজে জিকির করে। ভন্ড পীর চেনার একটি উপায় হলঃ তারা পর্দার ধার ধারে না। নারী পুরুষ একত্র জিকির করে। যেমনঃ মাইজভান্ডারীর দরাবার। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ জ্ঞান সল্পতার কারনে বাউল শ্রেণীর সাধকদের মুসলিম মনে করে, আসলে এদের ধর্ম ইসলাম নয়। এদের ধর্ম বাউল ধর্ম। এরা কখনও নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে না। তারা দেখবেন পর্দহীন ভাবে সাধক সাধীকা চলাফেরা করে।

ইসলামের নামে, জিকিরের নাম, উরশের নাম, বার্ষিক মাহফিলের নামে নারী পুরুষের একত্র অবাধ বিচরণ কে কখনও বিদআত বলা যাবে না, এগুলো সম্পূর্ন হারাম কাজ। যদি কেউ জায়েয মনে করে করে তবে তাকে মুসলিম ভাবা যাবে না। যদি কেউ এর পক্ষে যুক্তিদেন, তাকে কাফির মনে না করলে নিজেই কাফির হওয়া সম্ভাবনা থাকে। কাজেই এদের পরিহার করে চলুন। সময় সুযোগ হলে বুঝাতে চেষ্টা করুন। যারা এখনও এদের খপ্পরে পড়ে নাই, তাদের বাচাঁতে ইসলামি জ্ঞান প্রদান করুন। বিশেষ করে পর্দা সম্পর্কে শর্তক করুন।

৩৬। জিকির গননার মাধ্যমঃ

অনেকেই ‘তসবীহ এর ছড়া বা দানা’ দ্বারা জিকির করে থাকেন। বর্তমানে আধুনিক ডিজিটাল গণনার মেশিন দ্বারাও জিকির গননা করে থাকেন। জিকির গননার মাধ্যমে হিসাবে আঙ্গুলের কর ব্যবহার করা সম্পর্কে হাদিস এসেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহিবীগন যে আঙ্গুলের করের মাধ্যমে গননা করে জিকির করছেন যা হাদিস দ্বারা প্রমানিত। তাই তাসবীহ বা ডিজিটার মেশিনে গননা করে জিকির করাকে অনেক বিদআত বলেছেন আবার কেউ জায়েয বলেছেন। তবে এটা সত্য যে হাতের আঙ্গুলে ছাড়া অন্য পদ্ধতিকে কেউই সুন্নত বলেন নাই। আঙ্গুল বা আঙ্গুলের কর ব্যবহার করে জিকির করা সম্পর্কে হাদিসে এসছেঃ

হুমায়সাহ বিনতে য়াসির (রহঃ) য়ুসায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁকে এই মর্মে খবর দিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইয়ে ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে (মহিলা) তাকবীর (আল্লাহু আকবর), তাকদীস (সুবহানাল্লাহ) ও তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এর শব্দগুলিকে হিফাজত ও গণনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি এসব আঙ্গুলের গিরার দ্বারা গণনা করতে বলেছেন। কেননা কিয়ামতের দিন আঙ্গুলসমূহকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তারা এর স্বীকৃতি প্রদান করবে (সাক্ষ্য দিবে)। ((আবু দাউদ ১৫০১ ইসলামি ফাউন্ডেশন, হাসিদের মান হাসান)

আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুলে গুনে গুনে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেছি। ইবন কুদামাহ (রহঃ) বলেন, ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা। (আবু দাউদ ১৫০২; তিরমিযি ৩৪১১, ৩৪৮৬ (আলবানি সহীহ বলেছেন)

পবিত্র গ্রন্থ কুরআনে আল্লাহর ঘোষান আছে যে, কিয়ামতের দিন বান্দার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তার কার্যকলাপ সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে। মহান আল্লাহ বলেন,

*يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ*

অর্থঃ যেদিন প্রকাশ করে দেবে তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা, যা কিছু তারা করত। (সুরা নুর ২৪:২৪)

তসবীহ দ্বারা গননা করেলে কেন বিদআত?

শাইখ আলবানি (রহঃ) বলেনঃ ‘’তসবীহ দানা দ্বারা তাসবীহ পাঠ করা (অর্থাৎ আল্লাহর যিকর করা) বিদ’আত। কারন তা নবী (সাঃ)-এর যুগে ছিল না। এটি পরবর্তীতে আবিস্কার করা হয়েছে। (যইফা ৮৩)

তিনি ছাড়াও, যারা বিদআত বলেন তাদের যুক্তি হলো, সময় সুযোগ থাকা সত্বেও এসেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহিবীগন তসবীহ এর ছড়া বা দানা দ্বারা গননা করে নাই। তাই তসবীহ এর ছড়া বা দানা দ্বারা গননা করে জিকির করা বিদআত।

কেন তসবীর দ্বারা গননা করা জায়েয?

পক্ষান্তরে পরবর্তী যুগে এমন কিছু বর্ণনা পাওয়া যায় যেগুলোতে দেখা যায় কোনো কোনো সাহাবী কাঁকর দানা, গিরা দেয়া সুতা ইত্যাদির মাধ্যমে যিকর পাঠ করেছেন। যেমন আবু হুরায়রাহ (রাঃ)-এর কাছে একটি সুতা ছিল, যাতে এক হাজার অথবা দুই হাজার গিঁট ছিল। তিনি যতক্ষন ঐ গিরাগুলো দ্বারা তাসবীহ না পড়তেন ততক্ষন শুতেন না। এছাড়া তিনি কাঁকর জমা করে রাখতেন ও তা দিয়ে যিকর করতেন বলে বর্ণিত আছে। সুনানে আবু দাউদে “কঙ্কর দ্বারা তাসবীহ পাঠের হিসাব রাখা” নামে একটা অধ্যায় আছে, সেখান নিম্মর হাদিসটি পাওয়া যায়ঃ

আয়েশা বিনতে সা’দ, তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ একদা তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের সাথে জনৈক মহিলার নিকট গমন করে তার সম্মুখে কিছু দানা অথবা পাথরের টুকরা দেখতে পান, যা দ্বারা তিনি তাসবীহ পাঠে রত ছিলেন। এতদ্দর্শনে তিনি বলেনঃ আমি তোমাকে এর চেয়ে সহজ পন্থা শিক্ষা দিব। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সুবহানাল্লাহ শব্দটি আসমানের যাবতীয় সৃষ্টিবস্তুর সম-সংখ্যক এবং সুবহানাল্লাহ যমীনে সৃষ্টি যাবতীয় সৃষ্টির সম-সংখ্যক এবং সুবহানাল্লাহ শব্দটি এতদুভয়ের মধ্যে সৃষ্টি সমস্ত বস্তুর সম-সংখ্যক। সুবহানাল্লাহ শব্দটি ভবিষ্যতে যা কিছু সৃষ্টি হবে, তার সমসংখ্যক এবং “আল্লাহু আকবর” ও “আল-হামদুলিল্লাহ’ও তার (সুবাহানাল্লাহর) অনুরূপ। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”ও তার অনুরূপ এবং লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ও তার অনুরূপ। (সুনানে আবু দাউদ হাদিস নম্বর ১৫০০ ইসলামি ফাউন্ডেশন, তিরমিযী, নাসাঈ)।

শাইখ সালিহ আল- উসাইমিন (রহঃ) তাসবীহ দানা ব্যবহার করে যিকর পাঠ করা যায়েজ বলেছেন। তবে আঙ্গুল ব্যবহার করাকে উত্তম ও সুন্নত বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘তসবীহ ছড়া’ হাতে থাকলে রিয়া বা লোক দেখানো ভাবের উদ্রেক হতে পারে। আর যারা ‘তসবীহ ছড়া’ ব্যবহার করে সাধারনত তাদের অন্তর উপস্থিত থাকে না, এদিক ওদিক তাকায়। (ফাতাওয়া আরাকানুল ইসলামের সালাত অধ্যায়ের প্রশ্ন নম্বর – ২৬০)।

মন্তব্যঃ বিদআতের সঙ্গাতে আমরা দেখেছি, নতুন ইবাদতে পদ্ধতি আবিস্কার করা যা নেকী লাভের আশায় করা হয় তাই বিদআত। কিন্তু যা প্রতিষ্ঠিত কোন ইবাদের উপকরন হিসাবে ব্যবহার হয়, তা কোন নেকী কম বেশী করার দাবীও করে না, তা বিদআত নয়। যেমনঃ হজ্জে গমন করা ফরজ। উপরকরন হিসাবে আগে ছিল উট ও গাধা। আর এখনা উপরকন হল আধুনিক বিমান, বাস, গাড়ি ইত্যাদি। এই উপকরনে জন্য কেউ বেশী নেকীর আশা করে না এবং মুল ইবাদতের কোন অংশ মনে করে না। এমনভাবে মসজিদ নির্মান নেকীর কাজ। কিন্তু উপকরন কাঁচা পাকার জন্য নেকীর বেশী নেকীর আশা কর হয়া। কাঁচা বা পাকা মসজিদে সালাতে নেকীর পরিমানও সমান থাকে। এগুলোর হল উপকরন উপকরনে বিদআত হয় না। এরার আসুন তাসবীহ ব্যবহার তাসবীর ব্যবাহারে কেউ অতিরিক্ত নেকির আশা করে না। শুধু সংখ্যা মনে রাখার জন্যই তাসবীহ ব্যবহার করে। তাই বিদআত হবে না। তবে এ কথাটি খুব জোর দিয়া বলা যায় হাতের আঙ্গুলের সাহায্য তাসবীহ গননা করলে মন সংযোগ বেশী হয়। আর এটা সাথে সুন্নাহর সম্পর্ক আছে। ফজিলতও বর্ণিত আছে। কাজেই আমরা তাসবীহ দ্বারা গননা করাকে জায়েয বলল, বিদআত বলব না।     

৩৭। অঙ্গ ভঙ্গি করে জিকির করাঃ

মহান আল্লাহ যত বড় তার সম্মান তত বড়। তাকে কিভাবে স্মরন করতে হবে? কিভাবে তাকে ডাকলে তিনি সাড়া দিবেন? তার কাছে কিভাবে অনুনয় বিনয় করে আবেদন করতে হবে? এ সকল প্রশ্নের অসংখ্য বিস্তারিত উত্তরের সমাহার কুরআন সুন্নাহ মজুদ আছে। ইবাদের মুল প্রতিপাদ্যই হল মহান আল্লার নিকট ক্ষমা চাওয়া, বিপদে তাকে ডাকা, প্রতিটি কাজে তাকে স্মরন করা, তার দেয়া বিধান মত চলা। জিকির যেহেতু অন্যতম একটি ইবাদাত, তাই এরও একটি নির্দষ্ট নিয়ম কারন কুরআন সুন্নাহতে বিদ্যমান। যেমনঃ মহান আল্লাহ বলেন,

وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعاً وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ وَلاَ تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ

অর্থঃ আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে সকাল সন্ধ্যায় অনুনয়, বিনয়, ভীতি সহাকারে এবং অনুচ্চস্বরে। আর গাফেলদের অন্তরভূক্ত হয়ো না। (সুরা আরাফ ৭:২০৫)।

এখান জিকির করা তিনটি মান দন্ড দিয়ছেনঃ

১। অনুনয় বিনয় সহকারে জিকির করতে হবে

২। ভীতি সহাকারে জিকির করতে হবে

৩। অনুচ্চস্বরে জিকির করতে হবে

আবূ মূসা আল আশআরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গিরিপথ দিয়ে অথবা বর্ণনাকারী বলেনঃ একটি চুড়া হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এক ব্যাক্তি এর উগরে উঠে জোরে বললঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার। আবূ মূসা বলেনঃ তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার খচ্চরে আরোহী ছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তো কোন বধির কিংবা কোন অনুপস্থিত কাউকে ডাকছো না। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আবূ মূসা অথবা বললেনঃ হে আবদুল্লাহ আমি কি তোমাকে জান্নাতের ধনাগারের একটি বাক্য বাতলে দেব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, বাতলে দিন। তিনি বললেনঃ তা হল “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ। (সহিহ বুখারী ৫৯৬৭ ইফাঃ, সহিহ মুসলিম ৬৬১৮ ইফাঃ)

দেখুন, বিধান দাতার বিধান কি? আর আমরা করছি কি? যদি আপনি কোন পীরের মুদিদের জিকিরের দিকে তাকান তবে দেখবেন, জিকির নয় সার্কা খেলা চলছে। অনেক সময় জিকিরের দিকে তাকালে মনে হয় শারীরিক কসরত করছে। এর প্রমানের জন্য বেশী দুর যাওয়া দরকান নেই হাতের কাছেন স্মার্ট মোবাইল ফোনটিতে শুধু জিকির লিখে ইউটিউবে সার্স দিন। কেউ গানের তালে জিকির করছে। কেউ ঢোলের তালে জিকির করছে। কেউ জিকির করার সময় হাত দিয়ে বুক ও মাথায় আঘাত করছে। কেউ জিকিরের সময় মাতাল মানুষের মত লাফ দিচ্ছে, লাফ দিয়ে স্টেজে উঠছে। অনেক সময়তো এমনও দেখা যায় জিকির করার সময় অনেক লাফ দিয়ে সামিয়ানার উপর উঠে যায়। ইহা ছাড়াও বসে বসে মাথাকে জোরে জোরে আগে-পিছে নিয়ে বা ডানে-বামে নিয়ে জিকির করতে দেখা যায়। অনেক আবার বসে বসে জিকির করছেন ঠিকই কিন্তু পীরের নির্দেশ মত মাথাকে বাম পাশের নিচের দিকে স্বজোরে ধাক্কা দেন। এই সকল প্রকার অঙ্গ ভঙ্গির জিকির করা বিদআত। ইহা পরিহার করা একান্ত কর্তব্য। উপরের বর্ণিত ও আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম অনুসার জিকির করুন। দুনিয়ার একজন সাধারন এমপি, মিনিষ্টার, চেয়ারম্যান, ডিসি, এসপি এর সামনে যদি লাফালাফি করলে শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ হয়। তবে এদের সবার মালিক, সবার সৃষ্টি কর্তা, যার সাথে এদের তুলনা করাও হারাম, তার সামনে তাকে কিভাবে স্মরণ করছেন। একটু ভেবে দেখবেন কি?

৩৭। সুফিদের লতিফার জিকির একটি বিদআতী আমলঃ

সূফিবাদের পরিভাষায় লতিফা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। তাদের মতে লতিফার সাথে মানুষের জড় জগতের কোন সম্পর্ক নেই। লতিফা বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আধ্যাত্মিক। সূফিবাদের পরিভাষায়, লতিফা মানুষের অন্তরের ভিতর অবস্থিত এমন কিছু নির্দিষ্ট স্থান, যার উপর আল্লাহ পাকের যিকিররত অবস্থায় আল্লাহ পাকের নূর অবতীর্ণ হয়। তারা বলে থাকে, লতিফা হল চিকন, পাতলা, সুক্ষ্মস্তর বিশিষ্ট একটি বস্তু যা মানুষের অন্তরের ভিতর বিশেষ স্থানে অবস্থিত। লতিফা এমন এক বিষয় যা কখনও চোখে দেখা যায় না, কানে শোনা যায় না এবং মস্তিষ্কে কল্পনা করা যায় না। সুফিগন লতিফার সবক দিয়ে থাকেন। এই লতিফা কোন ইসলামি শরিয়তের পরিভাষা নয়। তারা যে লতিফার কথা তাদের সংখ্যা নিয়াও বিভ্রান্ত আছে। চরমোনাই পীরের বই ভেদে মারেফতে ৩৬ কোটি লতিফার কথা আছে। কিন্তু তারা মোট ০৬ লতিফার জিকির করেন। যথাঃ কলব, রুহ, নাফস, শিররুন, খফি ও আকফা। কিন্তু মজার বিষয় হল বইয়ের ঐ অধ্যায়ই স্বীকার করেন যে, লতিফার কথা কুনআন ও হাদিসে নাই।

তবে অন্য সুফিদের থেকে জানা যায় লতিফা মোট এগারটি। সেগুলো হলঃ কলব, রুহ, নাফস, শিররুন, খফি, আকফা, নাফস, আব, আতস, খাক, বাদ

 

ক। কলব লতিফাঃ 

সুফিদের মতে, আল্লাহ পাকের জ্যোতি ধারনের ঐ আধার যার অবস্থান মানুষের বাম স্তনের দুই আঙ্গুল নীচে অবস্থিত। যা দেখতে অনেকটা অর্ধাকার ডিম্বাকৃতির পুষ্পকলার ন্যায়। কলব লতিফা আল্লাহ পাকের লাল বর্ণের ন্যায় আধার ধারন করে উহার নূর লাল। ইহা তওবার মাকাম। আদম (আঃ)-এর ওসীলায় ফায়েয প্রাপ্ত হয়ে থাকে।

তাদের ভ্রান্ত ধারনা মতে, একজন মুমিনের কলব আল্লাহের আরশে পরিণত হতে পারে। ভাল কাজের দ্বারা এ লতিফাটি উজ্জলতা বৃদ্বি পায় আর এক সময় তা সম্পূর্ণরুপে শ্বেতবিন্দুতে পরিণত হয়। আর মানুষ যখন পাপ কাজ করে তখন তা কৃষ্ণ বর্ণে পরিণত হয় এবং সেখান থেকে আল্লাহ পাকের নূরের তাজাল্লী উঠে যায়। তাই কলবকে কলুষমুক্ত রাখার জন্য আল্লাহ পাকের যিকির বেশি করতে হবে আর তার দ্বারা আল্লাহ পাকের আরশ লাভ করা যায়।

রুহ লতিফাঃ 

রুহ লতিফাটি মানুষের ডান স্তনের দুই আঙ্গুল নিচে অবস্থিত। এই লতিফাটি আল্লাহ পাকের সাদা জ্যোতি ধারন করতে সক্ষম। সুফিদের মতে,  নুহ্ (আঃ) ও ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ (আঃ) এর উসীলায় ফায়েয প্রাপ্ত হয়ে থাকে। রূহে নূরের রং লাল। এই লতিফাকে মানুষের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। ভালকাজের দ্বারা একজন মানুষের রুহের শুভ্রতা বৃদ্বি পায় এবং এর দ্বারা সে অতি সহজে সে আল্লাহ পাকের তত্ত্বজ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হয়। এবং পাপাচারের দ্বারা মানুষ বাহ্যিকভাবে জীবিত থাকলেও আত্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করে।

শিররুনঃ 

এ কথাটির অর্থ হল গোপনীয়তা কিংবা গোপন হৃদ্বয়। এ লতিফাটি মানুষের বুকের একেবারে মাঝ বরাবর একটু নীচে অবস্থিত। এ লতিফাটি আল্লাহ পাকের সবুজ জ্যোতিকে আকর্ষণ করে। বলা হয়ে থাকে এ লতিফাটি হযরত মুসা কালীমুল্লাহ (আঃ) এর উসীলায় ফায়েয প্রাপ্ত হয়ে থাকে। সিরের নূরের রং সাদা। যে ব্যক্তি এই শির লতিফার বেলায়েতপ্রাপ্ত হয় তাকে মূসলে মাশরাফ বলা হয়। আল্লাহ পাকের সিফত এবং আহকামের গুঢ় রহস্য উদঘাটনের মধ্য দিয়ে এর বেলায়েত অর্জন করা যায়।

খফি লতিফাঃ এ লতিফাটিও অত্যন্ত গোপনীয়। এটি আল্লাহ পাকের কৃষ্ণ রঙ ধারন করতে সক্ষম। এটি মানুষের বুকের মাঝখানে রুহের নীচে অবস্থিত। এই লতিফাটি ইসা (আঃ) এর পায়ের নীচে অবস্থিত। যে ব্যক্তি এর বেলায়েতপ্রাপ্ত হবে সে হবে ইসা মাশরাফ।এ লতিফাটি মানুষের কর্ম ও চিন্তা অনুযায়ী মানুষের অন্তরে আনন্দ এবং বেদনা দেয়।আল্লাহ পাকের সিফাতের মধ্যে নিজেকে ফানা করার মধ্য দিয়ে এ লতিফার বেলায়েত লাভ করা যায়।

আকফা লতিফাঃ এই লতিফাটি অতি গোপনীয়। ইহা মানুষের বুকের মাঝে নীচে অবস্থিত। এই লতীফাটি আল্লাহ পাকের সবুজ বর্ণ ধারন করতে সক্ষম। এ লতিফার ব্যাপারে আরও বলা হয় যে, এই লতিফাটি মুহাম্মদ (সাঃ) এর পায়ের নীচে অবস্থিত। যে ব্যক্তি এ লতিফার বেলায়েত প্রাপ্ত হবে সে হবে মুহাম্মদী মাশরাফ। মানুষের অন্তরে প্রাপ্ত চিন্তা মস্তিষ্কের অনুমোদন প্রাপ্ত কাজ বাস্তবে পরিণত করে। বাকাবিল্লাহের দিকে ধাবিত হয়ে এর বেলায়েত অর্জন করা

নাফসঃ এই লতীফাটি মানুষের কোন অঙ্গে থাকে তা সঠিকভাবে বলা যায় না। ধারনা করা হয় যে, এইলতিফাটি মানুষের দুই চোখ অথবা দুই কপালের মাঝখানে অথবা নাভির নীচে অবস্থিত। ইহা মরীচীকার ন্যায় রুপ ধারন করে। ইহা কখনও সাদা, কখনও কালো আবার নীল বর্ণ ধারন করে। তবে বেশির ভাগ সময় এটি বিজলী বর্ণের ন্যায় সাদা সাদা হয়। এ লতিফার মাধ্যমে শয়তান মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রনা দেয় এবং মানুষকে ধোকায় ফেলে। আর যাদের পীর-আউলিয়াদের সহুবতে থাকবে তারা নফসের কু-প্রবৃত্তি হয়ে বত্য রাখতে পারবে।

আব লতিফাঃ আব অর্থ পানি। মানুষের সকল মৌলিক উপাদান আব নিয়ে গঠিত। ওলামা-মাশায়েখগণ এর মোরাকাবা করে থাকেন। যিকিরের মাধ্যমে এর মোকারাবা করা হয়। এই যিকিরের দ্বারা মাকামে কানায়েত(অল্পতুষ্টি) ফায়েযপ্রাপ্ত হয়। এই যিকিরের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বাহিরের পানি আর ভিতরের পানি একত্রিত হয়ে যিকির করছে।

আতস লতিফাঃ আতসের অর্থ হল আগুন। এই লতিফাটি মানুষের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যংগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তাসলীম এর মাধ্যমে এর মোকারাবা করা হয়।লতিফার যিকিরের দ্বারা আল্লহ এর ইশক এবং মহব্বত পয়দা হয় এবংদুনিয়া ভষ্মীভূত হয়।এই লতিফার দ্বারা হাকীকতে মাকাম পয়দা হয়। 

খাক লতিফাঃ এটি ফার্সী শব্দ। এর অর্থ হল মাটি। সমস্ত শরীরের হাড়, গোশত, চামড়া, চুল এ লতিফার অন্তর্ভূক্ত। এ লতিফার দ্বারা রিজা মোকারাবা করা হয়।যিকিরের সময় তকদীরের উপর সন্তুষ্টির ব্যাপারে এ লতিফা কাজে আসে। এ লতিফার যিকিরের দ্বারা সহনশীল হওয়ার অভ্যাস পয়দা করা যায়।এ লতিফার যিকিরের দ্বারা আল্লাহ পাকের প্রতিটি বিধানের প্রতি রাজি থাকার ব্যাপারে উদ্বুদ্ব করে।

বাদ লতিফাঃ এর অর্থ হল বায়ু। শরীরের ভিতর ফাঁকা জায়গাকে বাদ লতিফা বলা হয়। এটি সবদিকে বিরাজমান।এই লতিফার যিকিরের দ্বারা ছবরের ফায়েজ হয়।সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ হতে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এই লতিফার যিকির করতে হবে। ধংসবের স্বভাব পরিহার করার জন্য এ লতিফার যিকির করতে হবে।

মন্তব্যঃ সুফিগণ মনে করে পাপাচার্য থেকে মুক্ত রাখার জন্য লতিফার গুরুত্ব অপরিসীম। লতিফার যিকির ছাড়া কখনও আত্মশুদ্বি অর্জন সম্ভব নয়। তাই তারা এই লতিফাগুলির মাধ্যমে তাদের জিকির, মোরাকাবা, ধ্যাস ইত্যাদি আমলগুলো করে থাকে। ফুরফুরা পীর আবুল আনছান সিদ্দিকীর জামাতা বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ বহু গ্রন্থ প্রনেতা ডক্টর খন্দকর মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর কে লতিফা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, লতিফা সম্পর্কে কুরআন হাদিসে কিছু নেই। ইহা পর্বরতীকালে কোন পীর তার মুরিদের ইসলাহ জন্য দিয়েছেন। কাজেই এসব বাদ দিয়ে সুন্নাহ সম্মত ইবাদত করতে হবে। তাই কুরআন সুন্নাহ আলোকে বলতে গেলে বলতে হবে ইহা পরিস্কার বিদআত। ইহাকে কোন অবস্থায় ইবাদাত বলা যাবে না। ইহা দ্বীনের মধ্যে এক নতুন সুষ্টি। বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ নতুন আবিষ্কার। সুতারং লতিফা সুফিদের আবিস্কৃত একটি বিদআত যাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment