আকিদার বিদআতসমূহ : দ্বিতীয় কিস্তি
মহান আল্লাহ নিরাকার
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন
ইসলামি শরীয়তের প্রথম ও প্রধান বিষয় হল ইমান। আর খাটি ইমান হল, সঠিক আকিদা প্রষণ করা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয় হল, আমরা সকলে মুসলিম দাবি করলেও শুধু আমাদের আকিদার কারনে আমরা মুসলিম নই। ইসলাম বহির্ভুত এই নতুত আকিদাকে বিদআতি আকিদা হিসাবে চিহিৃত করব। কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যে আকিদা নতুন করে আবিস্কার হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। কাজেই যে কোন ভুল আকিদা যা কুরআন সুন্নাহের বাহিরে গিয়ে নতুত করে তৈরি হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। যার অর্থ হলো আকিদার ভূলভ্রান্তি মানেই বিদআত আকিদা। যৌক্তিক কোন কাজ সহজে যে কেউ মেনে নেন। আর বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত কোন জ্ঞানতো সাথে সাথে মেনে নেয়। কিন্তু ইসলামি আকিদার মুল হল অদৃশ্যে বিশ্বাস এখানে জাগতিক কোন বিষয় থাকলে যুক্তি ও বিজ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা করা যেত কিন্ত অদৃশ্যে বিশ্বাস করতে হলে অদৃশ্য থেকে প্রাপ্ত অহীর উপর নির্ভর করতে হবে। অহী ভিন্ন যে কোন উৎস থেকে আকিদা গ্রহন করলে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ যে কোনটাই হতে পারে। ইসলামি আকিদা বিশ্বাস সব সময় আল্লাহকে কেন্দ্র অদৃশ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। তাই ইসলামি আকিদার মুল উৎস হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্ত্বিক। এই কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যখনি নতুন করে আকিদা রচনা করা হবে তাই বিদআতি আকিদা।
যেমনঃ অদৃশ্যের একটি ব্যাপার হল কবরের আজাব। কবরে আজাব হবে এটাই সত্য। কিন্তু কাউকে যুক্তি দিয়ে কি কবরের আজাব বুঝাতে বা দেখাতে পাবর। কিংবা বিজ্ঞানের আবিস্কার ক্যামেরা দ্বারা কি এই আজাব দেখাতে পারব। অপর পক্ষে আমলের ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এখানে কুরআন হাদিসের বাহিরে ইজমা কিয়াজের দরকার হয়। নতুন কোন সমস্যা আসলে কিয়াস করে মাসায়েল দিতে হয়। যেমনঃ মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট, শেয়ার বাজার ইত্যাদি ইসলামের প্রথমিক যুগে ছিলনা। তাই কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে কিয়াস করে সমাধান দিতে হয়। কজেই একটি কথা মনে রাখতে হবেঃ “আকিদা ও ফিকহের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, ফিকহের ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন নেই”।
এক কথায় বলে গেলে কুরআন হাদিসের ষ্পষ্ট কোন রেফারেন্স ছাড়া আকিদা গ্রহণীয় নয়। যদি কেউ যুক্তি দিয়ে আকিদা বুঝাতে আসে তাকে সালাম জানাতে হবে।
কুনআন সুন্নাহকে উৎস হিসাবে না নিলে আকিদার ভিন্নতা তো থাকবেই। আর এই ভিন্ন আকিদা আসবে সম্পূর্ণ নতুন করে যা বিদআত বলা হয়। কুরআন হাদিসে ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই, এমন ফিকহি মাসলা মাসায়েলের ক্ষেতে ইখতিলাফ বা মতভেদ করা জায়েয হলেও, আকিদার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতভেদ জায়েয নেই। কারন আকিদার ছয়টি বিষয় (আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, কিতার সমুহের প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস, তাক্বদীরের ভালো মন্দেন প্রতি বিশ্বাস) যার সবগুলিই গায়েবের সাথে সম্পৃক্ত এবং গায়েব জানার জন্য অহীর প্রয়োজন। যতি কেউ তার আকিদাকে অহী ভিত্তিক না করে, যুক্তি ভিত্তিক করে, তাহলে তার বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। অহী ভিত্তিক না হয়ে আকিদা যুক্তি ভিত্তিক হলেই বিদআতি আকিদা হবে।
আকিদার সম্পর্কে আলোচনার আগে একটা কথাকে মনে খোদাই করে লিখে রাখেন, “আকিদা গাইবের প্রতি বিশ্বাস, এই বিশ্বাস হবে অহী নির্ভর, কোন প্রকার যু্ক্তিতর্কের অবতারণা করা যাবেনা”। কাজেই আমি যে ভ্রান্ত আকিদাগুলি তুলে ধরব তার বিপক্ষে আন্ততো কুরআনের একটি আয়াত অথবা একটি সহিহ হাদিস উপস্থাপণ করব। এই সহিহ আকিদার বিপরীতে যে সকল বিদআতি আকিদা সবার সামনে তুলে ধরব, সেই সকল আকিদার কুরআন সুন্নাহতে কোন প্রমান পাওয়া যাবে না। কুরআন সুন্নাহ নাই বলেই আকিদার নাম দিলাম বিদআতি আকিদা।
সঠিক আকিদা হলোঃ মহান আল্লাহ আকার আছে কিন্তু তার ধরন যানা নাই।
সঠিক আকিদার দলীলঃ
আকিদার ক্ষেত্র বিদআতীদের দ্বিতীয় ভুল হল, আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন নিরাকার। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাহ হলো, আল্লাহর সিফাতকে তাঁর কোন মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য না করে তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রায়ই অধিকাংশ মুসলিমের এ সম্পর্কে সঠিক আক্বীদাহ রাখে না। যদিও আমদের উপমহাদেশে প্রায়ই অধিকাংশ লোকই হানাফি মাযহাবের অনুসারি কিন্তু এই আকিদার ব্যপারে আবু হানিফার রাহিমাহুল্লাহুর আকিদা অনুসরন করি না।
আল্লাহ সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ্র ইয়াদ (হাত) আছে, ওয়াজহ (মুখমন্ডল) আছে, নফস (সত্তা) আছে কারন কুরআনে আল্লাহ এগুলো উল্লেখ করছেন। কুরআনে আল্লাহ যা কিছু উল্লেখ করছেন যেমন হাত, মুখমন্ডল, নফস ইত্যাদি সবই তার বিশেষন কোন স্বরূপ বা প্রকৃতি নির্নয় ব্যতিরিকে। (আবু হানিফা রচিত আল ফিকহুল আকবারের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর পৃষ্ঠা-২২৫)।
ফিকহের ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন নেই। আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের প্রতি ভ্রান্ত আক্বীদাহ পোষন করলে কঠিন ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে। সঠিকভাবে আল্লাহ্ সম্পর্কে কে আকিদা পোষন না করার প্রধান কারন দ্বীনি ইলমের অভাব ও হিন্দু ধর্মের সহবস্থান। মুসলিমগণ যে আল্লাহ্র ইবাদত করে তাঁর কোন মূর্তি নেই। তাই যেসব মুসলিম সঠিক আক্বীদার খবর রাখে না, তারা হিন্দুদের সাকার বা মূর্তিমান দেবতার বিপরীতে নিরাকার আল্লাহ্র ধারনা গ্রহন করেছে।
কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস ও সালফে সালেহীনগন বিশ্বাস থেকে ও বুঝা যায় যে, আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার চেহারা, হাত, পা, চক্ষু, যাত বা সত্তা, সুরাত বা আকার আছে, কিন্তু তার ধরন জানা নেই। তারই প্রমান হিসাবে কিছু আয়াত উল্লেখ করা হল।
১। আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার হাত সম্পর্কে কিছু কুরআনের আয়াত তুলে ধরা হলঃ
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার আকার আছে তার অন্যতম প্রমান হল তার হাত আছে। মহান আল্লাহ বলেন,
قَالَ يَـٰٓإِبۡلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسۡجُدَ لِمَا خَلَقۡتُ بِيَدَىَّۖ أَسۡتَكۡبَرۡتَ أَمۡ كُنتَ مِنَ ٱلۡعَالِينَ (٧٥) قَالَ أَنَا۟ خَيۡرٌ۬ مِّنۡهُۖ خَلَقۡتَنِى مِن نَّارٍ۬ وَخَلَقۡتَهُ ۥ مِن طِينٍ۬ (٧٦)
অর্থঃ রব বললেন, “হে ইবলিস! আমি আমার দু’হাত দিয়ে যাকে তৈরি করেছি তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? তুমি কি বড়াই করছো, না তুমি কিছু উচ্চ মর্যাদার অধিকারী?” সে জবাব দিল, “আমি তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আগুন থেকে এবং তাকে মাটি থেকে৷” (সূরা-সাদ- ৩৮:৭৫,৭৬)।
২. আল্লাহতাআলা আরও বলেনঃ
وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعً۬ا قَبۡضَتُهُ ۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَـٰمَةِ وَٱلسَّمَـٰوَٲتُ مَطۡوِيَّـٰتُۢ بِيَمِينِهِۦۚ سُبۡحَـٰنَهُ ۥ وَتَعَـٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ (٦٧)
অর্থঃ আল্লাহকে যে মর্যাদা ও মূল্য দেয়া দরকার এসব লোক তা দেয়নি৷ (তাঁর অসীম ক্ষমমার অবস্থা এই যে,) কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী তাঁর মুঠির মধ্যে থাকবে আর আসমান তাঁর ডান হাতে পেঁচানো থাকবে৷ এবং লোক যে শিরক করছে তিনি তা থেকে পবিত্র ও অনেক উর্ধে। (সূরা-যুমার ৩৯:৬৭)।
মন্তব্যঃ এই দুটি আয়াতে সরাসরি আল্লাহতাআলা তার হাত থাকার কথা বলেছেন। কাজেই হাত আছে বিশ্বাস করব কিন্তু তার ধরণ জানিনা (৪২:১১)।
৩. আল্লাহতাআলা বলেনঃ
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ ٱللَّهَ يَدُ ٱللَّهِ فَوۡقَ أَيۡدِيہِمۡۚ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَىٰ نَفۡسِهِۦۖ وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِمَا عَـٰهَدَ عَلَيۡهُ ٱللَّهَ فَسَيُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمً۬ا (١٠)
অর্থঃ হে নবী যারা তোমার হাতে বাইয়াত করছিলো প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছেই বাইয়াত করছিলো৷ তাদের হাতের ওপর ছিল আল্লাহর হাত৷ যে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবে তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার অশুভ পরিণাম তার নিজের ওপরেই বর্তাবে৷ আর যে আল্লাহর সাথে কৃত এ প্রতিশ্রুতি পালন করবে, আল্লাহ অচিরেই তাকে বড় পুরস্কার দান করবেন৷(ফাতহা-১০)।
৪. আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালা আরও বলেনঃ
قُلۡ إِنَّ ٱلۡفَضۡلَ بِيَدِ ٱللَّهِ يُؤۡتِيهِ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ وَٲسِعٌ عَلِيمٌ۬ (٧٣)
অর্থঃ বল, অনুগ্রহ আল্লাহ্রই হাতে, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন৷ তিনি ব্যাপক দৃষ্টির অধিকারী। (সুরা আল ইমরান ৩:৭৩)।
৫. আল্লাহতাআলা বলেনঃ
قُلِ ٱللَّهُمَّ مَـٰلِكَ ٱلۡمُلۡكِ تُؤۡتِى ٱلۡمُلۡكَ مَن تَشَآءُ وَتَنزِعُ ٱلۡمُلۡكَ مِمَّن تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَآءُۖ بِيَدِكَ ٱلۡخَيۡرُۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَىۡءٍ۬ قَدِيرٌ۬ (٢٦)
অর্থঃ বল, হে আল্লাহ! বিশ্বজাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও৷ যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো এবং যাকে চাও লাঞ্জিত ও হেয় করো৷ কল্যাণ তোমরা হাতেই নিহিত৷ নিসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী। (সূরা-আল ইমরান ৩:২৬)।
৬. আল্লাহতাআলা আরও বলেনঃ
وَقَالَتِ ٱلۡيَہُودُ يَدُ ٱللَّهِ مَغۡلُولَةٌۚ غُلَّتۡ أَيۡدِيہِمۡ وَلُعِنُواْ بِمَا قَالُواْۘ بَلۡ يَدَاهُ مَبۡسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيۡفَ يَشَآءُ
অর্থঃ ইহুদীরা বলে, আল্লাহর হাত বাঁধা, আসলে তো বাঁধা হয়েছে ওদেরই হাত এবং তারা যে বাজে কথা বলছে সে জন্য তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে৷ আল্লাহর হাত তো দরাজ, যেভাবে চান তিনি খরচ করে যান। (মায়েদা-৬৪)
৭. আল্লাহতাআলা বলেনঃ
*تَبَـٰرَكَ ٱلَّذِى بِيَدِهِ ٱلۡمُلۡكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَىۡءٍ۬ قَدِيرٌ*
অর্থঃ অতি মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি যাঁর হাতে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের কর্তৃত্ব৷ তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতা রাখেন। (মুলক৬৭:১)।
মন্তব্যঃ এই আয়াতগূল আল্লাহতাআলা সাহায্য, দয়া, দান, অনুগ্রহ, করুনা, আল্লাহ ক্ষমতা ইত্যাদি বুঝিয়েছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে উপমা সে সকল বস্তু দ্বারা হয়, যা বাস্তবে থাকে। আল্লাহ হাত আছে বিধায় তিনি হাতের উদাহরণ দিয়েছেন।
২। আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার হাত সম্পর্কে কিছু সহিহ হাদিস তুলে ধরা হলঃ
১. উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহপাক সমস্ত আকাশ মণ্ডলীকে ভাঁজ করবেন অতঃপর সেগুলোকে ডান হাতে নিয়ে বলবেন, আমি হচ্ছি শাহানশাহ (মহারাজা) অত্যাচারী আর যালিমরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়? (সহিহ মুসলিম)।
২. আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদী আলিমদের থেকে এক আলিম রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে দেখতে) পাই যে, আল্লাহ্ তা‘আলা আকাশসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। যমীনকে এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এক আঙ্গুলের উপর, মাটি এক আঙ্গুলের উপর এবং অন্যান্য সৃষ্টি জগত এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। তারপর বলবেন, আমিই বাদশাহ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সমর্থনে হেসে ফেললেন। এমনকি তাঁর সামনের দাঁত প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন, তারা আল্লাহকে যথোচিত মর্যাদা দান করে না। (বুখারী তাওতিদ প্রকাশনী-৪৮১১, আধুনিক প্রকাশনী-৪৪৪৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন-৪৪৪৮)।
৩. উবাইদুল্লাহ ইবনু মিকসাম থেকে বর্ণিত, সে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহুকে লক্ষ্য করেছে কিভাবে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বর্ণনা দেন, তিনি (নবী সা.) বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন তার দু’হাতে পাকড়াও করবেন, অতঃপর বলবেন: আমি আল্লাহ, (তিনি হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ ও প্রসারিত করছিলেন), আমিই বাদশাহ”। আমি মিম্বারের দিকে দেখলাম একেবারে নিচ থেকে নড়ছে, এমনকি মনে হচ্ছিল মিম্বার কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে পড়ে যাবে”। (মুসলিম, ইবনু মাজাহ ও নাসায়ি হাদিসটি সহিহ)।
৪. অপর এক বর্ণনায় রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলে রাখবেন,পানি এবং ভু-তলে যা কিছু তা এক আঙ্গুলে রাখবেন। (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম।
মন্তব্যঃ উক্ত সহিহ হাদিসগুলিতে আল্লাহ তা‘আলার ডান হাত, আঙ্গুলের কথা ও মুঠের কথাও বলা হয়েছে। কাজেই তার হাত আছে কিন্তু ধরণ জানিনা।
৩। আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার চেয়ারাঃ
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার আকারের অন্যতম আর একটি প্রমান হল তার চেয়ারা আছে। আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন বলেন,
كُلُّ مَنۡ عَلَيۡہَا فَانٍ۬ (٢٦) وَيَبۡقَىٰ وَجۡهُ رَبِّكَ ذُو ٱلۡجَلَـٰلِ وَٱلۡإِكۡرَامِ (٢٧)
অর্থঃ (কিয়ামতের দিন) ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। হে রাসুল) আপনার মহিমাময় ও মহানুভব রবের চেহারা অর্থাৎ সত্ত্বাই একমাত্র বাকি থাকবে। [আর-রাহমান ৫৫:২৬-২৭]
২. আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে বলেনঃ
وُجُوهٌ۬ يَوۡمَٮِٕذٍ۬ نَّاضِرَةٌ (٢٢) إِلَىٰ رَبِّہَا نَاظِرَةٌ۬ (٢٣)
অর্থঃ সেদিন কোন কোন মুখ খুব উজ্জল হবে । তারাই হবে তাদের প্রতিপালকের দর্শনকারী”। (সুরা কিয়ামাহ ৭৫-২২-২৩)।
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতাআলা আরও বলেনঃ
وَلَا تَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَـٰهًا ءَاخَرَۘ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَۚ كُلُّ شَىۡءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجۡهَهُ ۥۚ لَهُ ٱلۡحُكۡمُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ (٨٨)
অর্থঃ এবং আল্লাহর সাথে অন্য মাবুদদেরকে ডেকো না৷ তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই৷ সব জিনিসই ধ্বংস হবে কেবলমাত্র তাঁর সত্ত্বা (মুখমণ্ডল) ব্যতীত৷ শাসন কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই এবং তাঁরই দিকে তোমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে৷” (সূরা-আল কাসাস ২৮:৮৮)।
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার চোখঃ আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার আকারের অন্যতম আর একটি প্রমান হল তার চোখ আছে। আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতাআলা নবী মূসা আলাইহিস সালাম কে লক্ষ্য করে বলছেনঃ
أَنِ ٱقۡذِفِيهِ فِى ٱلتَّابُوتِ فَٱقۡذِفِيهِ فِى ٱلۡيَمِّ فَلۡيُلۡقِهِ ٱلۡيَمُّ بِٱلسَّاحِلِ يَأۡخُذۡهُ عَدُوٌّ۬ لِّى وَعَدُوٌّ۬ لَّهُ ۥۚ وَأَلۡقَيۡتُ عَلَيۡكَ مَحَبَّةً۬ مِّنِّى وَلِتُصۡنَعَ عَلَىٰ عَيۡنِىٓ (٣٩)
অর্থঃ আমি নিজের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালোবাসা সঞ্চার করেছিলাম এবং এমন ব্যবস্থা করেছিলাম যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও।” [সূরা-ত্বহা ২০:৩৯]
এমনিভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে স্বান্তনা দিতে গিয়ে বলেনঃ
وَٱصۡبِرۡ لِحُكۡمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعۡيُنِنَاۖ وَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ حِينَ تَقُومُ (٤٨)
অর্থঃ হে নবী! তোমার রবের ফায়সালা আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করো৷ তুমি আমার চোখের সামনেই আছ৷ তুমি যখন উঠবে তখন তোমার রবের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করো। (সূরা আত-তূর ৫২:৪৮)।
মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ
إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعُۢ بَصِيرٌ (١)
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ শুনেন ও দেখেন। (সূরা মুজাদালাহ ৫৮:১)।
যদিও দেখা ও শোনা মানুষের জন্যও প্রযোজ্য। কিন্তু মানুষের দেখার জন্য চোখ, শোনার জন্য কানের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আল্লাহর সত্ত্বার জন্য মানুষের মত এসব চোখ, কান নাক ইত্যাদির প্রয়োজন হয়না। আল্লাহর চোখ, কান নাক ইত্যাদির আল্লাহর মত কোন সাদৃশ্য ব্যতিরিকে। কোন বস্তুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সব শোনেন, সব দেখেন, (৪২:১১)।
৪। আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার ‘পা’ সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত ও হাদিসঃ
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার আকারের অন্যতম আর একটি প্রমান হল তার পা আছে।
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ
يَوۡمَ يُكۡشَفُ عَن سَاقٍ۬ وَيُدۡعَوۡنَ إِلَى ٱلسُّجُودِ فَلَا يَسۡتَطِيعُونَ (٤٢)
অর্থঃ কিয়ামতের দিনে আল্লাহর হাঁটুর নিম্নাংশ উন্মোচিত করা হবে এবং সাজদা করার জন্য সকলকে আহবান করা হবে, কিন্তু তারা তা করতে সমর্থ হবে না। (সুরা-কালাম ৬৮:৪২)।
আবু সাইয়ীদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,যে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আমাদের প্রতিপালক (আল্লাহ্) কিয়ামতের দিনে তাঁর হাঁটুর নিম্নাংশ প্রকাশ করে দেবেন, প্রত্যেক মুমিন, মুমিনা তাতে সাজদা করবেন এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে লোক-দেখান ও সম্মানের জন্য তা করত সে সাজদা করতে গেলে তাঁর পিঠ সমান হয়ে ফিরে আসবে। (সিজদা করতে পারবেনা। সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, মুসনদে আহমদ)।
উবায়দুল্লাহ ইবনু সা’দ ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়টি স্বীয় প্রতিপালকের কাছে অভিযোগ করল। জান্নাত বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার ব্যাপারটি কি হলো যে তাতে শুধু নিঃস্ব ও নিম্ন শ্রেনীর লোকেরাই প্রবেশ করবে। এদিকে জাহান্নামও অভিযোগ করল অর্থাৎ আপনি শুধুমাত্র অহংকারীদেরকেই আমাতে প্রাধান্য দিলেন। আল্লাহ জান্নাতকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তুমি আমার রহমত। জাহান্নামকে বললেনঃ তুমি আমার আযাব। আমি যাকে চাইব, তোমাকে দিয়ে শাস্তি পৌছাব। তোমাদের উভয়কেই পূর্ণ করা হবে। তবে আল্লাহ তা’আলা তার সৃষ্টির কারো উপর যুলম করবেন না। তিনি জাহান্নামের জন্য নিজ ইচ্ছানুযায়ী নতুন সৃষ্টি পয়দা করবেন। তাদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নাম বলবে, আরো অভিরিক্ত আছে কি? জাহান্নামে আরো নিক্ষেপ করা হবে, তখনো বলবে, আরো অতিরিক্ত আছে কি? এভাবে তিনবার বলবে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাঁর কদম (পা) জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দিলে তা পরিপূর্ন হয়ে যাবে। তখন জাহান্নামের একটি অংশ আরেকটি অংশকে এই উত্তর করবে যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে, ষথেষ্ট হয়েছে। (সহীহ বুখারী-৬৯৪১,ইফাঃ)।
আখিরাতে মুমিনগণ রবের দর্শন লাভ করবে।
আবূ সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? তিনি বলেন: “তোমরা কি সূর্য ও চাঁদ দেখায় সন্দেহ কর যখন আসমান পরিষ্কার থাকে?”, আমরা বললাম: না, তিনি বললেন: “নিশ্চয় সেদিন তোমরা তোমাদের রবকে দেখায় সন্দেহ করবে না, যেমন চাঁদ-সূর্য উভয়কে দেখায় সন্দেহ কর না”। অতঃপর বললেন: “একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে: প্রত্যেক সম্প্রদায় যেন তার নিকট যায়, যার তারা ইবাদত করত, ক্রুসের অনুসারীরা তাদের ক্রুসের সাথে যাবে।
মূর্তিপূজকরা তাদের মূর্তির সাথে যাবে। এবং প্রত্যেক মাবুদের ইবাদতকারীরা তাদের মাবুদের সাথে যাবে। অবশেষে আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার অথবা বদকার লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে এবং কতক কিতাবি, অতঃপর জাহান্নাম হাজির করা হবে যেন তা মরীচিকা। অতঃপর ইহুদিদের বলা হবে: তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে: আমরা আল্লাহর ছেলে উযাইর এর ইবাদত করতাম, অতঃপর তাদেরকে বলা হবে: তোমরা মিথ্যা বলেছ, আল্লাহর কোন স্ত্রী ও সন্তান নেই, তোমরা কি চাও? তারা বলবে: আমরা চাই আমাদেরকে পানি পান করান, বলা হবে: তোমরা পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে ছিটকে পড়বে।
অতঃপর খৃস্টানদের বলা হবে: তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে: আমরা আল্লাহর ছেলে ঈসার ইবাদত করতাম, বলা হবে: তোমরা মিথ্যা বলেছ, আল্লাহর কোন স্ত্রী ও সন্তান নেই, তোমরা কি চাও? তারা বলবে: আমরা চাই আমাদের পানি পান করান। বলা হবে: পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে ছিটকে পড়বে, অবশেষে আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার ও বদকার অবশিষ্ট থাকবে, তাদেরকে বলা হবে: কে তোমাদেরকে আটকে রেখেছে অথচ লোকেরা চলে গেছে? তারা বলবে: আমরা তাদেরকে (দুনিয়াতে) ত্যাগ করেছি, আজ আমরা তার (আমাদের রবের) বেশী মুখাপেক্ষী, আমরা এক ঘোষণাকারীকে ঘোষণা করতে শুনেছি: প্রত্যেক কওম যেন তার সাথেই মিলিত হয়, যার তারা ইবাদত করত, তাই আমরা আমাদের রবের অপেক্ষা করছি।
তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ তাদের নিকট আসবেন ভিন্ন সুরুতে, যে সুরুতে প্রথমবার তারা তাকে দেখেনি। তিনি বলবেন: আমি তোমাদের রব। তারা বলবে: আপনি আমাদের রব, নবীগণ ব্যতীত তার সাথে কেউ কথা বলবে না। তিনি বলবেন: তোমাদের ও তার মাঝে কোন নিদর্শন আছে যা তোমরা চিন? তারা বলবে: পায়ের গোছা, ফলে তিনি তার গোছা উন্মুক্ত করবেন, প্রত্যেক মুমিন তাকে সেজদা করবে, তবে যে লোক দেখানো কিংবা লোকদের শোনানোর জন্য সেজদা করত সে অবশিষ্ট থাকবে। সে সেজদা করতে চাইবে কিন্তু তার পিঠ উল্টো সোজা খাড়া হয়ে যাবে। অতঃপর পুল আনা হবে এবং তা জাহান্নামের ওপর রাখা হবে। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল পুল কি? তিনি বললেন: পদস্খলনের স্থান, তার ওপর রয়েছে ছো মারা হুক, পেরেক, বিশাল বড়শি যার রয়েছে বড় কাঁটা যেরূপ নজদ এলাকায় হয়, যা সা‘দান বলা হয়। তার ওপর দিয়ে মুমিনগণ চোখের পলক, বিদ্যুৎ, বাতাস, শক্তিশালী ঘোড়া ও পায়দল চলার ন্যায় পার হবে, কেউ নিরাপদে নাজাত পাবে, কেউ ক্ষতবিক্ষত হয়ে নাজাত পাবে এবং কেউ জাহান্নামে নিক্ষেপ হবে, অবশেষে যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি অতিক্রম করবে তখন তাকে টেনে হিছড়ে পার করা হবে। আর কোন সত্য বিষয়ে তোমরা আমার নিকট এতটা পীড়াপীড়ি কর না, -তোমাদের নিকট যা স্পষ্ট হয়েছে- মুমিনগণ সেদিন আল্লাহর নিকট যতটা পীড়াপীড়ি করবে, যখন দেখবে যে তাদের ভাইদের মধ্যে শুধু তারাই নাজাত পেয়েছে, তারা বলবে: হে আমাদের রব, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করত, আমাদের সাথে সিয়াম পালন করত এবং আমাদের সাথে আমল করত। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: যাও যার অন্তরে তোমরা দিনার পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর। আল্লাহ তাদের আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন। তারা তাদের নিকট আসবে, তাদের কেউ পা পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে গেছে, কেউ গোছার অর্ধেক পর্যন্ত, তারা যাদেরকে চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর ফিরে আসবে, আল্লাহ বলবেন: যাও, যার অন্তরে তোমরা অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর, তারা যাকে চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর ফিরে আসবে, আল্লাহ বলবেন: যাও যার অন্তরে তোমরা অণু পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর, ফলে তারা যাকে চিনবে বের করবে”। আবূ সায়িদ বলেনঃ যদি তোমরা আমাকে সত্য জ্ঞান না কর, তাহলে পড়ঃ
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَظۡلِمُ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖۖ وَإِن تَكُ حَسَنَةٗ يُضَٰعِفۡهَا ٤٠ ﴾ [النساء : ٤٠]
“নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলম করেন না। আর যদি সেটি ভাল কাজ হয়, তিনি তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে মহা প্রতিদান প্রদান করেন”। অতঃপর নবী, ফেরেশতা ও মুমিনগণ সুপারিশ করবেন। আল্লাহ বলবেন: আমার সুপারিশ বাকি রয়েছে, অতঃপর জাহান্নাম থেকে এক মুষ্টি গ্রহণ করবেন, ফলে এমন লোক বের করবেন যারা জ্বলে গিয়েছে, তাদেরকে জান্নাতের দরজার নিকট অবস্থিত নহরে নিক্ষেপ করা হবে, যাকে বলা হয় সঞ্জীবনী পানি, ফলে তার দু’পাশে গজিয়ে উঠবে যেমন প্রবাহিত পানির উর্বর মাটিতে শস্য গজিয়ে উঠে, যা তোমরা দেখেছ পাথর ও গাছের পাশে, তার থেকে যা সূর্যের দিকে তা সবুজ এবং যা ছায়ার আড়ালে তা সাদা, অতঃপর তারা মুক্তোর ন্যায় বের হবে। অতঃপর তাদের গর্দানে সীলমোহর দয়া হবে, অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, জান্নাতিরা বলবে: তারা হচ্ছে রহমানের নাজাতপ্রাপ্ত, তাদেরকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন কোন আমলের বিনিময়ে নয়, যা তারা করেছে, বা কোন কল্যাণের বিনিময়ে নয় যা তারা অগ্রে প্রেরণ করেছে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে: তোমাদের জন্য তোমরা যা দেখেছ তা এবং তার সাথে তার অনুরূপ”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
এ সকল কোরআনের আয়াত ও হাদীস আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন যে নিরাকার নন তার অকাট্য প্রমান বহন করে। আল্লাহ সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে তাঁর সিফাত, যাত এবং গুনাবলী বর্ণনা করেছেন। তাঁর নিজস্ব সত্তার হাত, পা, মুখ, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ শক্তি, তাঁর সন্তুষ্টি ও ক্রোধ-ইত্যাদি উল্লেখ করছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র স্বত্তা গুনাবলী বর্ণনা করেছেন এবং সাহাবিগন (রাজি) এবং সালফে সালেহীনগন যেভাবে বুঝেছেন। তার দ্বারা বুঝা যায় আল্লাহর নির্দিষ্ট আকার আকৃতি আছে। তিনি নিরাকার হলে এসব কিছু থাকার কথা নয়। মু’মিনগণ কিয়ামাতের দিন তাকে দেখতে পাবে। জান্নাতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নি‘মাত হবে আল্লাহর দীদার, (কিয়ামাহ ৭৫:২২-২৩)। দেখা বস্তুর আকার থাকে কাজেই আল্লাহ আকার আছে। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর যেহেতু আকার আছে, তাহলে তার আকার কেমন? এ প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং আল্লাহই দিচ্ছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
فَاطِرُ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ جَعَلَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٲجً۬ا وَمِنَ ٱلۡأَنۡعَـٰمِ أَزۡوَٲجً۬اۖ يَذۡرَؤُكُمۡ فِيهِۚ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَىۡءٌ۬ۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ (١١)
অর্থঃ আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, যিনি তোমাদের আপন প্রজাতি থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন, অনুরূপ অন্যান্য জীবজন্তুর ও (তাদের নিজ প্রজাতি থেকে ) জোড়া বানিয়েছেন এবং এই নিয়মে তিনি তোমাদের প্রজন্মের বিস্তার ঘটান৷ বিশ্বজাহানের কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়৷ তিনি সব কিছু শোনেন ও দেখেন৷ (সূরা-আশ-শুরা, আয়াত ৪২:১১)।
আল্লাহর যেহেতু আকার আছে, মু’মিনগণ কিয়ামাতের দিন তাকে দেখতে পাবে তা হলে আমরা এখন কেন তাকে দেখি না? এ প্রশ্নের উত্তর ও স্বয়ং আল্লাহই দিচ্ছেন।
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতাআলা বলেনঃ
لَّا تُدۡرِڪُهُ ٱلۡأَبۡصَـٰرُ وَهُوَ يُدۡرِكُ ٱلۡأَبۡصَـٰرَۖ وَهُوَ ٱللَّطِيفُ ٱلۡخَبِيرُ (١٠٣)
অর্থঃ দৃষ্টিশক্তি তাঁকে দেখতে অক্ষম কিন্তু তিনি দৃষ্টিকে আয়ত্ব করে নেন৷ তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী ও সর্বজ্ঞ৷।” (সূরা-আনআম ৬:১০৩)।
আল্লাহ তা‘আলা মূসা আলাইহিস সালামকে বলেছেন,
﴿وَلَمَّا جَآءَ مُوسَىٰ لِمِيقَٰتِنَا وَكَلَّمَهُۥ رَبُّهُۥ قَالَ رَبِّ أَرِنِيٓ أَنظُرۡ إِلَيۡكَۚ قَالَ لَن تَرَىٰنِي وَلَٰكِنِ ٱنظُرۡ إِلَى ٱلۡجَبَلِ فَإِنِ ٱسۡتَقَرَّ مَكَانَهُۥ فَسَوۡفَ تَرَىٰنِيۚ فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُۥ لِلۡجَبَلِ جَعَلَهُۥ دَكّٗا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقٗاۚ فَلَمَّآ أَفَاقَ قَالَ سُبۡحَٰنَكَ تُبۡتُ إِلَيۡكَ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١٤٣﴾ [الاعراف: ١٤٢]
অর্থঃ “আর যখন আমার নির্ধারিত সময়ে মূসা এসে গেল এবং তাঁর রব তার সাথে কথা বললেন। সে বলল, ‘হে আমার রব, আপনি আমাকে দেখা দিন, আমি আপনাকে দেখব।’ তিনি বললেন, তুমি আমাকে দেখবে না; বরং তুমি পাহাড়ের দিকে তাকাও। অতঃপর তা যদি নিজ স্থানে স্থির থাকে তবে তুমি অচিরেই আমাকে দেখবে। অতঃপর যখন তাঁর রব পাহাড়ের উপর নূর প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ করে দিল এবং মূসা বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল। অতঃপর যখন তার হুঁশ আসল তখন সে বলল, আপনি পবিত্র মহান, আমি আপনার নিকট তাওবা করলাম এবং আমি মুমিনদের মধ্যে প্রথম।” [সূরা ‘আরাফ ৭:১৪২)।
মাসরূক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞেস করলাম আম্মা! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর রবকে দেখেছিলেন? তিনি বললেন, তোমার কথায় আমার গায়ের পশম কাঁটা দিয়ে খাড়া হয়ে গেছে। তিনটি কথা সম্পর্কে তুমি কি অবগত নও? যে তোমাকে এ তিনটি কথা বলবে সে মিথ্যা বলবে। যদি কেউ তোমাকে বলে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবকে দেখেছেন, সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি পাঠ করলেন, “তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নহেন। কিন্তু দুষ্টি শক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১০৩] “মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন, ওহীর মাধ্যম ছাড়া অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে।” [সূরা আশ-শূরা,আয়াত: ৫১] আর যে ব্যক্তি তোমাকে বলবে যে, আগামীকাল কী হবে সে তা জানে, তাহলে সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি তিলওয়াত করলেন, “কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে।” [সূরা লোকমান, আয়াত: ৩৪] আর তোমাকে যে বলবে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কথা গোপন রেখেছেন, তাহলেও সে মিথ্যাবাদী। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “হে রাসূল! তোমার রবের কাছ থেকে তোমারপ্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার কর। (সুরা মায়েদা ৫:৬৭), হ্যা, রাসুল জিবরীল আলাইহিস সালামকে তাঁর নিজস্ব আকৃতিতে দু’বার দেখেছেন। (বুখারী, হাদীস নং ৪৮৫৫)।
মন্তব্যঃ আল্লাহর সিফাতকে তাঁর কোন মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য না করে তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। তবে হ্যাঁ, কেউ তার আকার আকৃতি কেমন তা জানেন না (সুরা শুরা-১১)। আর যাকে দেখা যাবে সে কি করে নিরাকার হতে পারে না। ব্যপারটা এমন নয় যে, তিনি এখন নিরাকার তবে কিয়ামতের দিন সকার হয়ে যাবেন। কারণ আল্লাহকে পরিবর্তনশীল মনে করাটাও আকীদাহ পরিপন্থি। তার খেলাফ কোন আকিদাহ্ ও বিশ্বাস পোষন করা যাবে না। সর্বপরি নিরাকার কথাটি কোরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয় ।
৫। আকার সম্পর্কে সালাফদের কিছু উক্তিঃ
ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহঃ ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন,“পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্র যে সমস্ত সিফাত (গুন) বর্ণিত হয়েছে যেমন- আল্লাহ্র হাত, পা, চেহারা, নফস ইত্যাদি আমরা তা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি। স্বীকার করি এগুলো হচ্ছে তাঁর সিফাত বা গুণাবলী। আমরা যেমন কখনও আল্লাহ্র সিফাত সম্পর্কে এ প্রশ্ন করিনা বা করবোনা যে, এ সিফাতগুলো (হাত, পা, চেহারা, চোখ ইত্যাদি) কেমন, কিরুপ বা কিভাবে, কেমন অবস্থায় আছে, তেমনি আল্লাহ্র সিফাতের কোন নিজস্ব ব্যাখ্যা বা বর্ণনা দিতে যাইনা। কেননা তিনি তা বর্ণনা করেন নাই।
যেমনঃ আমরা একথা কখনো বলিনা যে, আল্লাহ্র হাত হচ্ছে তাঁর কুদরতি হাত, শক্তিপ্রদ পা বা তাঁর নিয়ামত। এ ধরনের কোন ব্যাখ্যা দেয়ার অর্থ হল আল্লাহ্র প্রকৃত সিফাতকে অকার্যকর করা বা বাতিল করে দেয়া বা অর্থহীন করা । আল্লাহ্র হাতকে আমরা হাতই জানবো এর কোন বিশেষণ ব্যবহার করবো না। কুদরতি হাত রূপে বর্ণনা করবোনা । কোন রকম প্রশ্ন করা ছাড়াই যেরূপ কোরআনে বর্ণিত হয়েছে হুবুহু সে রকমই দ্বিধাহীনে বিশ্বাস করি”। [আল ফিকহুল আকবার]
ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহঃ ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “আল্লাহ্র হাত” বলতে আল্লাহ্র হাতই বুঝতে হবে, এর কোন রুপক (মাজাযী) অর্থ করা যাবেনা, মাজাযী (রুপক) বর্ণনা দেয়া যাবে না। আল্লাহ কেমন, কিসের মত এরকম প্রশ্ন করা বিদআত এমনকি তাঁর হাত বিশেষণে ভূষিত করে, কুদরতি হাত বলাও যাবেনা কেননা কোরআনে ও সহীহ হাদীসে এভাবে বর্ণনা নাই। (আল আসমা ওয়াস সিফাত পৃষ্ঠা নং-৫২৬)
ইমাম শাফীঈ রাহিমাহুল্লাহঃ ইমাম শাফীঈ রাহিমাহুল্লাহ জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেন এ প্রসঙ্গে বলেন, “আল্লাহ্তালার আরশে অধিষ্ঠিত হওয়া এবং আল্লাহ্র হাত,পা ইত্যাদি যা তাঁর সিফাত বলে বিবেচ্য আর তা কোরআন ও সহীহ সূত্রে সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত হওয়ার পরও যদি কোন ব্যক্তি বিরোধিতা করে, অস্বীকার করে, নিষ্ক্রিয় করে তবে সে অবশ্যই কাফের বলে গন্য হবে। তিনি আরও বলেনঃ “আমরা আল্লাহ্র গুণাবলী স্বীকার করি ও বিশ্বাস করি তবে সৃষ্টির কোন কিছুর সাথে আল্লাহ্র গুনাবলীর কোন আকার সাব্যস্ত করিনা,সাদৃশ্য (তুলনা) করিনা। কেননা আল্লাহ্ নিজেই তাঁর সাদৃশ্যের বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছেন এবং বলেছেন, “(সৃষ্টি জগতের) কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।” (সূরা-শুরা,আয়াত-১১” সিয়ারে আলামিন নুবালা-১০ম খণ্ড,পৃষ্ঠা নং,-৮০;আর দেখুন আইনুল মাবুদ-১৩তম খণ্ড পৃষ্ঠা নং- ৪১; দককর তাবাকতে হানাবিল ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নং-২৮৩)।
ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহঃ ইমাম আহমদ (রহঃ) আরও বলেন, “কোরআন ও হাদীসে আল্লাহ্র সিফাতগুলোর বর্ণনা যেমনভাবে এসেছে তার বাহ্যিক ও আসল অর্থ স্বীকার করতে হবে, মেনে নিতে হবে, এর প্রকৃত তথা আসল অর্থকে বাদ দেয়া যাবে না। নিস্ক্রিয় করা যাবে না, খারিজ করা যাবে না। আল্লাহ্র সিফাতগুলো যথা আল্লাহ্র আরশের উপর অধিষ্ঠিত হওয়া আল্লাহ্র হাত, পা দেখা শোনা ইত্যাদি সম্পর্কে যেরুপ বর্ণিত আছে তার বাহ্যিক ও আসল অর্থ ছাড়া রূপক , অতিরঞ্জিত অথবা অন্তর্নিহিত কোন পৃথক অর্থ বা ব্যাখ্যা বা বর্ণনা রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক দেওয়া হয়েছে এমন প্রমান নেই। আমরা যদি এ সত্য উপলব্ধি করি যে, সালফে সালেহীন আল্লাহ্র গুনাবলী সঠিক অর্থ বুঝেছেন । তাহলে আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হলো তারা এগুলোর যে অর্থ বুঝেছেন, আমাদেরকে ঠিক সেই অর্থই বুঝতে হবে। (মাজমুআতুর রাসায়িলিল মুনীরিয়্যাহ পৃষ্ঠা নং-১৭৬-১৮৩)।
অতএব, সার কথা হলঃ
আল্লাহ্র অবয়ব বিশিষ্ট অস্তিত্বকে, সত্ত্বাকে গুনাবলীকে অস্বীকার করে (অর্থাৎ নিরাকার করে) সন্যাসী, সুফী, পীর সাহেবেরা অলীক সাধনা বলে তাদের ক্বলবে বসিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্যই আল্লাহ্কে নিরাকার বানিয়ে ধর্মীয় সমাজে প্রচার করেছেন। এটি ‘তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাত’ এর সুস্পষ্ট খেলাফ। অবয়ব বিশিষ্ট তথা অস্তিত্বময় আল্লাহ্কে নিরাকার না করলে তো তাঁকে (আল্লাহ্কে) তাদের ক্বলবে বসানো যাবে না।
নিরাকার আল্লাহ্কে অলীক সাধনায়, কল্পনায় ক্বলবে বসিয়ে এই মুসলিম রূপধারী পুরোহিতরা নিজেদেরকে দেবতার মর্যাদায় ভূষিত হয়ে সমাজে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে চলেছেন। আসলে এ সবই ভণ্ডামির বেসাতি, স্বার্থোদ্ধারের ধান্দা। কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার আকার রয়েছে তা প্রমানিত। কোন অবস্থা ও সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই তার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওহীদ বুঝার ও মানার তাওফিক দান করুন, সকল প্রকার শির্ক থেকে রক্ষা করুন, আমিন।
সুফিদের এই আকিদা খুবই মারাত্বক যা অধিকাংশ সুফিবাদীকে মুশরিক বানিয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশে যারা পীর মুরীদে কে শরীয়ত সম্মত মনে করে তাদের প্রায় সকলে ওয়াহদাতুল ওজুদ এর আকিদা রাখে। এটি এমন একটি আকিদা যা সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান না থাকলে শতভাগ বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিষয়টি যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু অনেকে হয়ত মনে করবেন এ বিষয়ে হাদিস গ্রন্থে একটি অধ্যায় না হলেও কিছু হাদিসতো অবশ্যই আছে। কুরআন, হাদিস, সাহাবী, তাবেয়ীর, তাবে-তাবেয়ীন, মুস্তাহীত আলেম বা প্রাথমিক যুগের হাদিসের মুহাদ্দিসদের কোন পরিভাষায় “ওয়াহদাতুল ওজুদ” শব্দটি ব্যবহার হয়েছে বলে জানা যায় না। ওয়াহদাতুল ওজুদ শব্দটি আজ কাল এমনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে মনে হয় ইহা ঈমানের একটি অংশ। সুপ্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদ আবী হানীফা, মুআত্তা মালিক, মুসনাদ আহমাদ, মেশকাত শরীফসহ বহু হাদিস গ্রন্থে আজ আল্লাহ রহমতে বাংলায় অনুদিত কিন্তু নেহয়েত দুঃখের সাথে বলছি কোন গ্রন্থেই এ সম্পর্কে কিছুই নেই। চার ইমামসহ অন্যান্য ইমামগন এ সর্ম্পকে কিছুই বলেন নি। বিশেষত আমাদের প্রিয় ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর লিখিত কিতাব “ফিকহুল আকবর” এখন বাংলা অনুদিত, আগাগোড়া বারবার পড়ে দেখবেন এ সম্পর্কে তিনি কিছুই বলেন নি। তাহলে প্রশ্ন হল, কবে? কোথায়? এবং কে এই “ওয়াহদাতুল ওজুদ” সম্পর্কে ধারনা দেন এবং তিনি এই পরিভাষা দ্বারা কি বুঝাতে চান? এ সকল প্রশ্নের উত্তরই খুজব বক্ষ্যমান লেখায়।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)