রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারতের ত্রুটিসমূহ তৃতীয় কিস্তি

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারতের ত্রুটিসমূহ তৃতীয় কিস্তি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১৯। উহুদের শহীদদের কবরের গিয়ে কিছু চাওয়াঃ

ইসলাম প্রচার শুরু করার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজ কুরাইশ বংশীয়দের কাছ থেকে প্রতিবাদের সম্মুখীন হন। নির্যাতনের ফলে একপর্যায়ে মুসলিমরা মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করে। এরপর ৬২৪ সালে মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে মুসলিমদের কাছে কুরাইশরা পরাজিত হয়। বদরের যুদ্ধে মক্কার কয়েকজন প্রধান গোত্রপ্রধান নিহত হন। ক্ষয়ক্ষতির কারণে নেতৃস্থানীয়রা প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং আরেকটি যুদ্ধের জন্য পুনরায় প্রস্তুতি শুরু করে। ইকরিমা ইবনে আবি জাহল, সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া, আবু সুফিয়ান ইবনে হারব ও আবদুল্লাহ ইবনে রাবিয়াহ যুদ্ধ করার জন্য অগ্রগামী ছিলেন। এরই ফলোশ্রুতিতে তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসের ৩ তারিখ (২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দ) শনিবার উহুদ পর্বতের সংলগ্ন স্থানে মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এই মুসলিমদের নেতৃত্বে ছিলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কুরাইশদের নেতৃত্বে ছিলেন আবু সুফিয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। তিনি তখন কাফির ছিলেন। দ্বন্দ্বযুদ্ধের পর দুই বাহিনীর মধ্যে মূল লড়াই শুরু হয়। মুসলিমরা মক্কার সৈনিকদের সারি ভেঙে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় মক্কার বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে।

খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে মক্কার অশ্বারোহীরা তিনবার মুসলিম বাহিনীর বাম পার্শ্বে আক্রমণ চালাতে চেষ্টা করে কিন্তু জাবালে রুমাতের উপর মোতায়েন করা তীরন্দাজদের আক্রমণের কারণে তারা বেশি অগ্রসর হতে পারেনি। যুদ্ধের কৌশল হিসাবে এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাবালে রুমাতে একদল সাহাবীদের অবস্থান করতে বলেন। এর ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলিমরা সুবিধাজনক অবস্থান লাভ করে এবং বিজয়ের নিকটে পৌছে যায়। এসময় মুসলিম তীরন্দাজদের একটি বড় অংশ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ ভুল বুঝে জাবালে রুমাত ত্যাগ করে। তারা মনে করেছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ ছিল শুধু যুদ্ধ চলা কালিন সময় পর্যান্ত। তাই তারা যুদ্ধ শেষ মনে করে এক পর্যায় স্থানটি ত্যাগ করে মুল বাহিনীর সাথে যোগ দান করে। ফলে বাম পার্শ্বের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে খালিদের নেতৃত্বাধীন মক্কার অশ্বারোহীরা সুযোগ কাজে লাগায়। নির্দেশ মেনে অবস্থান ত্যাগ না করা অবশিষ্ট তীরন্দাজদের উপর তারা আক্রমণ চালালেও সংখ্যাস্বল্পতার কারণে খালিদের অশ্বারোহিদের প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে মক্কার বাহিনী মুসলিম বাহিনীর পার্শ্বভাগ ও পেছনের ভাগে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়। কটি ক্ষুদ্র অংশ দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং মদিনার দিকে অগ্রসর হয়।

অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতিতে মুসলমানরা দিগ্বিদিক ছুটতে লাগলেন। এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় অনেক মুসলিম মারা যায়। মক্কার বাহিনীর আক্রমণে মুসআব ইবনে উমায়ের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও নবীজির চাচা হজরত হামজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হন। মুসআব ইবনে ওমায়ের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু -এর দেহ অবয়ব নবীজির সঙ্গে সাদৃশ্য ছিল। তাই গুজব ছড়ায় যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিহত। কিন্তু পরে দেখা যায়, এটা নিছকই গুজব। মক্কার বাহিনীর আক্রমণের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহত হন এবং তার একটি দাঁত ভেঙে যায়।

তীব্র সম্মুখযুদ্ধের পর অধিকাংশ মুসলিম উহুদ পর্বতের ঢালে জমায়েত হতে সক্ষম হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্বতের উপরের দিকে আশ্রয় নেন। মক্কার সেনারা পর্বতের দিকে অগ্রসর হয় কিন্তু উমর ইবনুল খাত্তাব ও মুসলিমদের একটি দলের প্রতিরোধের কারণে বেশি এগোতে সক্ষম হয়নি। ফলে লড়াই থেমে যায়।

হিন্দ ও তার সঙ্গীরা এসময় মুসলিমদের লাশ টুকরো করে, লাশের কান, নাক কেটে পায়ের গয়নার মত পরিধান করে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হিন্দার ইথিওপীয় দাস ওয়াহশি ইবনে হারবে রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু (তিনি তখন মুসলিম হন নাই) বর্শার আঘাতে নিহত হয়েছিলেন। হামজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে হত্যা করতে পারলে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি পাওয়ার কারণে ওয়াহশি হামজাকে হত্যা করেছিলেন। হিন্দ নিহত হামজার কলিজা বের করে চিবিয়েছিলেন।

শুধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ ভুল বুঝার কারণে নিশ্চিত জয়ী হওয়া যুদ্ধে অনেক মুসলিম শহীদ হন। মুসলিমরা পর্বতে আশ্রয় নেয়ার পর আবু সুফিয়ানের সাথে উমরের কিছু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। কথোপকথনের সময় আবু সুফিয়ান এই দিনকে বদরের প্রতিশোধ বলে উল্লেখ করেন। প্রতি উত্তরে উমর বলেন যে মুসলিমদের নিহতরা জান্নাতে এবং কাফির নিহতরা জাহান্নামে আছে। এরপর মক্কার বাহিনী মক্কাভিমুখী যাত্রা করে। এই যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবি শাহাদত বরণ করেন। তাঁদের সবাইকে উহুদ প্রান্তরে দাফন করা হয়।

মন্তব্যঃ উপরে উহুদ যুদ্ধ সম্পর্কে একটু আলোকপাত করা হলো। যাতে বিষয়টি সম্পর্কে একটু ইলম থাকে। সঠিক ইলমের অভাবে অনেক শির্ক ও বিদআত কাজে লিপ্ত হয়। উপরের ঘটানাটি ইসলাম ও মুসলিদে জন্য বিরাট তাতপর্যপূর্ণ কেননা এই যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিমদের শক্তি মত্তা পরীক্ষিত হয়ছে। আবার ভুলে জন্যও বিশাল মাসুল গুনতে হয়েছে। এই স্থানটির সাথে তাই ইসলামের ইতিহাসের সম্পর্ক। এখান থেকে শিক্ষা নেয়া যায়। কিন্তু উহুদ স্থানে সাথে আমলের কোন সম্পর্ক নাই। অনেক বরকত লাভের আশায় বা নেকী হাসিলের আশায় উদুদের প্রান্তে শহীদের কবর যিয়ারতের জন্য আসেন। তারা উহুদের  শহীদদের কবরের কাছে গিয়ে তাদের নিকট মঙ্গল কামনা করে দোয়া করে। দোয়া করার সময় তাদের কবরের দিকে ফিরে থাকে। এখানে কোন প্রকার সওয়াব লাভের আশায় সফর করা যাবে না। তবে হ্যা, জানার জন্য বা জ্ঞান অর্জনে জন্য সফর করা যাবে। কেননা, এই স্থানটি মুসলিমদের একটি ঐহিহাসিক স্থান যার সাথে আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিদের সৃস্মি জড়িত আছে। উহুদ যুদ্ধে যেসব শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সুরা আল-ইমরানের ১২১ নম্বর আয়াত থেকে শুরু করে ১৬০ নম্বর আয়াতের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে মুসলমানদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা নির্দেশ ভুল বুঝে অমান্য করা, মতভেদ করা এবং ছত্রভঙ্গ হওয়ার মন্দ পরিণাম সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া, যাতে তারা ভবিষ্যতে সতর্ক হয়ে যায় এবং যেসব বিষয় তাদের পরাজয়ের কারণ হতে পারে, তা থেকে বিরত থাকে।

আমরা এই শিক্ষা গ্রহন না করে তাদের কবর যিয়ারত কেন্দ্রিক বিদআতে লিক্ষ হচ্ছি। কাজেই উহুদের শহীদের কবর স্থানে যাওয়ার আগে আমাদের নিয়ত পরিশুদ্ধ করি। এবং কবর যিয়ারত সম্পর্কিত সকল বিদআতি কাজ পরিহার করে চলি।  

২০। কবরের কাছে বসে কুরআন পাঠ বা যিকর করাঃ

কুরআন প্রতিটি মুসলিমের জীবন বিধান। এই কুরআন তাকে নিয়মি তিলওয়াত করতে হবে এবং এর মর্ম বুঝে তদনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। কুরআন শিক্ষা ও তেলাওয়াতের ফযিলত কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। যেমনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন,

 إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَـٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَـٰهُمۡ سِرًّ۬ا وَعَلَانِيَةً۬ يَرۡجُونَ تِجَـٰرَةً۬ لَّن تَبُورَ * لِيُوَفِّيَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۚۦۤ إِنَّهُ ۥ غَفُورٌ۬ شَڪُورٌ۬ *

অর্থঃ যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান। সুরা ফাতির ৩৫:২৯-৩০)।

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) কর্তক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন, পবিত্র কুরআন পাঠক, হাফেয ও তার উপর আমলকারীকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, ‘তুমি কুরআন কারীম পড়তে থাকো ও চড়তে থাকো। আর ঠিক সেইভাবে স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে পড়তে থাকো, যেভাবে দুনিয়াতে পড়তে। কেননা, (জান্নাতের ভিতর) তোমার স্থান ঠিক সেখানে হবে, যেখানে তোমার শেষ আয়াতটি খতম হবে।” ( আবূ দাউদ ১৮৬৮, তিরমীযি ২৯১৪ হাসান)

মন্তব্যঃ এমনিভাবে বহু আয়াত ও সহিহ হাদিসে কুরআন তিলয়াতে ফজিলত বর্ণিত আছে। কুরআন তিলয়াতে স্থান ও সময় সাথে দলিলের আলোকে সংশ্লিষ্ট করে আমল করলে বিদআত হবে না। কিন্তু দলিল বিহীনভাবে স্থান ও সময় সাথে সংশ্লিষ্ট করে কুরআন তিলয়াতে করলে বিদআত হবে। আপনি মসজিদে নব্বীর যে কোন স্থান বসে কুরআন তিলয়াতে কোন সমস্যা নাই কিন্তু যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের কাছে বসে কুরআন তিলয়াত করেন আর ভাবেন তিনি দেখছেন বা এখানে বসে পড়লে সওয়াব বেশী হবে। তবে মারাত্বক ভুল করলেন। সঠিক আমলটি বিদআতের বেড়াজালে আটকালেন।

২১।  দূর থেকে কবরকে উদ্দেশ্য করে বিনীতভাবে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করাঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি ভালবাসা সকল মুসলিমের জন্য একটা ফরজ কাজ। আপনি মুসলিম হবেন তো তার প্রতি ভালাবাসা থাকতে ই হবে। তাকে ভালোবাসা ছাড়া কেউ প্রকৃত মুসলিম হবে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

অর্থঃ বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। (সুরা ইমরান ৩:৩১)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সেই আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষন না আমি তার নিকট তার পিতা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালবাসার পাত্র হই। (সহিহ বুখারি ১৪)

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষন না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের অপেক্ষা অধিক প্রিয়পাত্র হই। (সহিহ বুখারি ১৫)

মন্তব্যঃ কিন্তু এই ভালবাসা থাকবে অন্তরে আর ভালবাসা প্রকাশ পারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণের মাধ্যমে। যদি তার অনুসরণ, তার দেখান পদ্ধতিতে না হয়, তবে প্রকৃত ভালবাসা না হয়ে বিদআতে পরিনত হবে। কাজেই দূর থেকে কবরকে উদ্দেশ্য করে বিনীতভাবে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করা যাবে না। যদি তার প্রতি এমনিই আবেগ আসে তবে বিদআত হবে না। কিন্তু ইচ্ছা করে তার কবর কে উদ্দেশ্য করে কান্নাকাটি বিদআতি কাজ। 

২২। সালাতের পর পর আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ বলা।

মদিনা অবস্থান কালে প্রতি ওয়াক্ত সালাতের পর পর আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ বলা একটি বিদআত কাজ। প্রথমে আসি ইয়া রাসূলাল্লাহ বলা যায় কি না?

ইয়া রাসূলাল্লাহ বা ইয়া মুহাম্মদ বলা যাবে তবে শর্ত সাপেক্ষে। সাধারন সরাসরি সাক্ষাতের সময় ইয়া বা  হে বা ওহে বলে সম্ভোধন করে থাকি। কিন্তু অনুপস্থিত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ইয়া বা ওহে শব্দটি ব্যবহার করা যাবে তবে শর্ত হলো, যাকে সম্বোধন করা হচ্ছে তার কাছে কোন কিছু তলব না করে শুধু তার চিত্র মানসপটে আনা। যেমন- ইয়া মুহাম্মদ বলে চুপ করে যাওয়া কিংবা ‘ইয়া মুহাম্মদ, সাল্লাল্লাহু আলাইকা’ বলা এটি শির্ক নয়। কেননা এর মধ্যে গাইরুল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা নেই।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, “‘ইয়া মুহাম্মদ’, ‘ইয়া নবী’ বা ইয়া রাসূলাল্লাহ এগুলো এবং এ জাতীয় অন্য কথাগুলো ‌সম্বোধনসূচক। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- সম্বোধিত ব্যক্তিকে অন্তরে স্মরণ করা এবং অন্তরে উপস্থিত ব্যক্তিকে সম্বোধন করা। যেমনটি নামাযী ব্যক্তি বলে থাকেন, “আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ” (হে নবী, আপনার প্রতি শান্তি, আল্লাহ্‌র রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ এ ধরণের সম্বোধন করে থাকে। নিজের মনে যাকে কল্পনা করছে তাকে সম্বোধন করে থাকে যদিও বহির্জগতে সে তার সম্বোধন শুনে না।” (ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম লি মুখালাফাতি আসহাবিল জাহিম ২/৩১৯)।

কিন্তু যদি সম্বোধনটির মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রার্থনা অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন এভাবে বলা, হে মুহাম্মদ, আমার জন্য অমুক অমুক কাজ করে দিন। কিংবা এর মধ্যে পরোক্ষ প্রার্থনা অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন- যে ব্যক্তি বড় কোন পাথর কিংবা ভারী কোন কিছু বহনকালে বলে, ‘ইয়া মুহাম্মদ’ তবে ধরে নেয়া হয় সে কষ্ট লাঘবের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করছে। এই কাজটি আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক। কেননা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মৃতব্যক্তি বা অনুপস্থিত ব্যক্তিকে ডাকা কুরআন-সুন্নাহ্‌ এর দলিল ও ইজমার প্রমাণের ভিত্তিতে শির্ক। অর্থাৎ অনুপস্থিত মৃত ব্যাক্তিকে সাহায্য সহিযোগীতার জন্য আহবান করা সর্বাস্থায় শির্ক কাজ। আবার সে সকল কাজ সরাসরি আল্লাহ নিয়ন্ত্রন করেন সে সকল বিষয় মানুষকে আহবান করাও শির্ক কাজ। যেনমঃ ভাগ্য পরিবর্তনে জন্য, ছেলে  সন্তানের জন্য মানুষে মানুষের কাছে প্রার্থনা করা। কাজেই আমাদের সকল প্রকারের সাহায্য সহিযোগীতার জন্য একমাত্র আল্লাহ কে আহবান করতে হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَأَنَّ ٱلۡمَسَـٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدً۬ا (١٨) 

অর্থঃ আর মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য৷ তাই তোমরা আল্লাহর সাথে আর কাউকে আহ্বান করিও না। (সূরা জিন ৭২:১৮)

আল্লাহ তা’আলা বলেন:

 لَهُ ۥ دَعۡوَةُ ٱلۡحَقِّ‌ۖ وَٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ لَا يَسۡتَجِيبُونَ لَهُم بِشَىۡءٍ إِلَّا كَبَـٰسِطِ كَفَّيۡهِ إِلَى ٱلۡمَآءِ لِيَبۡلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَـٰلِغِهِۦ‌ۚ وَمَا دُعَآءُ ٱلۡكَـٰفِرِينَ إِلَّا فِى ضَلَـٰلٍ۬ (١٤)

অর্থঃ একমাত্র তাঁকেই আহ্বান করা সঠিক৷  আর অন্যান্য সত্তাসমূহ, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে লোকেরা ডাকে, তারা তাদের প্রার্থনায় কোন সাড়া দিতে পারে না৷ তাদেরকে ডাকা তো ঠিক এমনি ধরনের যেমন কোন ব্যক্তি পানির দিকে হাত বাড়িয়ে তার কাছে আবেদন জানায়, তুমি আমার মুখে পৌঁছে যাও, অথচ পানি তার মুখে পৌঁছতে সক্ষম নয়৷ ঠিক এমনিভাবে কাফেরদের দোয়াও একটি লক্ষভ্রষ্ট তীর ছাড়া আর কিছু নয়৷ (সুরা রাদ১৩:১৪)

কাজেই বিপদে ডাকতে হবে একমাত্র আল্লাহকে কেননা তিনি ছাড়া কেউ বিপদ দুর করতে পারবে না। আর যাদের বিপদ উদ্ধারকারী মনে করছে ডাকছে, তারা নিজেরাই নিজেদের রবের নৈকট্যলাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِهِۦ فَلَا يَمۡلِكُونَ كَشۡفَ ٱلضُّرِّ عَنكُمۡ وَلَا تَحۡوِيلاً (٥٦)

অর্থঃ এদেরকে বলো, ডাক দিয়ে দেখো তোমাদের সেই মাবুদদেরকে, যাদেরকে তোমরা আল্লাহ ছাড়া (নিজেদের কার্যোদ্ধারকারী মনে করে) তারা তোমাদের কোনো কষ্ট দূর করতে পারবে না এবং তা পরিবর্তন করতেও পারবে না৷ (সুরা বনী ঈসরাইল ১৭:৫৬)

আল্লাহ তা’আলা বলেন:

أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّہُمۡ أَقۡرَبُ وَيَرۡجُونَ رَحۡمَتَهُ ۥ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ ۥۤ‌ۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحۡذُورً۬ا (٥٧)

অর্থঃ এরা যাদেরকে ডাকে তারা তো নিজেরাই নিজেদের রবের নৈকট্যলাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে যে, কে তাঁর নিকটতর হয়ে যাবে এবং এরা তাঁর রহমতের প্রত্যাশী এবং তাঁর শাস্তির ভয়ে ভীত। আসলে তোমার রবের শাস্তি ভয় করার মতো৷ (সুরা বনী ইসরাঈল ১৭:৫৭)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, “যে ব্যক্তি ফেরেশতাদেরকে কিংবা নবীদেরকে মাধ্যম বানিয়ে তাদেরকে ডাকে, তাদের উপর নির্ভর করে, কল্যাণ আনয়ন ও অকল্যাণ দূর করার জন্য তাদের কাছে প্রার্থনা করে। যেমন- গুনাহ মাফ, অন্তরের হেদায়েত প্রাপ্তি, বিপদাপদ দূর হওয়া, অভাব দূর হওয়ার জন্য তাদের কাছে প্রার্থনা করে মুসলিম উম্মাহ্‌র ইজমা অনুযায়ী সে কাফের। (মাজমুউল ফাতাওয়া ১/১২৪)

*“‘ইয়া মুহাম্মদ’, ‘ইয়া নবী’ বা ইয়া রাসূলাল্লাহ বলা যাবে, যতক্ষন না সরাসরি বা পরোক্ষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করা হয় অথবা তাকে সাহায্যের জন্য আহবান করা না হয়। কেননা কোন বিষয় গাইরুল্লাহ নিকট সাহায্য বা আহবান করা শির্কের অন্তর্ভুক্ত। ইহা ছাড়া মনে মনে হাজির করার জন্য,  ভালোবেসে দুরুদ, সালাম ও দোয়া করা জন্য “‘ইয়া মুহাম্মদ’, ‘ইয়া নবী’ বা ইয়া রাসূলাল্লাহ বলা যাবে। তবে এ ধরণের ডাক দেয়া কিংবা বেশি বেশি এটি বলা থেকে বিরত থাকা বেশী যুক্তি যুক্ত। কারণ এই কথা বলার কারণে অনেক মানুষ আপনার প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা হতে পারে যে, আপনি গায়রুল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছেন। আবার এমনও হতে পারে যে, আপনি এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন এবং কোন কাজ করাকালে ও সহযোগীর দরকার হলে আপনি এই ডাক দিয়ে বসবেন। বরং আপনার উচিত ‘ইয়া আল্লাহ্‌’, ‘ইয়া হাইয়্যু’, ‘ইয়া কায়্যুম’, ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ বলায় নিজের জিহ্বাকে অভ্যস্ত করে তোলা। কোন বান্দা বা দাসের জন্য তার মনিবের কাছে প্রার্থনা করা, তার কাছে মিনতি করা ও সর্বাবস্থায় তাকে ডাকার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আর কিছু নেই।

মন্তব্যঃ তা হলে বুঝতে পারলাম শর্ত সাপেক্ষে ইয়া রাসূলাল্লাহ যাবে। কিন্ত আমি কেন, মদিনা অবস্থান কালে প্রতি ওয়াক্ত সালাতের পর পর আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ বলা একটি বিদআত কাজ বলেছিলাম। কেননা, এই ধরনের আমল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী বা আমাদের পূর্বরতী মুজতাহীদ আলেমদেন নিকট থেকে প্রমানিত হয়। তবে আপনি এই আমলের পরিবর্তে বার বার দুরুদ ও সালাম পেশ করতে পারেন। যে সকল সম্পর্ক কোন প্রকারের  সন্দেহ বা সংশয় নাই।

২৩। ফরজ সালাত প্রথম কাতার বাদ দিয়ে রওযাতে সালাত পড়া উত্তম মনে করাঃ

রওযাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাত স্থানটি সহিহ হাদিসে জান্নাতের অংশ বলা হয়েছে।

১. আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝখানের অংশটুকু রওযাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাত (জান্নাতের উদ্যানসমুহের একটি উদ্যান)। (সহিহ বুখারী ১৮৮৮, ৬৫৮৮)

২. আবদুল্লাহ ইবন্‌ যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার ঘর এবং আমার মিম্বরের মধ্যস্থিত স্থান বেহেশতের বাগানসমূহের একটি বাগান। (সুনানে নাসাঈ ৬৯৫)

ফরজ সালাত প্রথম কাতার আদায় করা সম্পর্কে বহু সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এই সকল হাদিসের উপর ইলম থাকলে কেউই সুযোগ থাকা সত্বেও সালাতে প্রথম কাতার বাদ দিয়ে অন্য স্থানে সালাত আদায় করতে চাইবে না।

১. বারা’ বিন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ প্রথম কাতারের (নামাযীদের) উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশতাগণ তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। মুআয্‌যিনকে তার আযানের আওয়াযের উচ্চতা অনুযায়ী ক্ষমা করা হয়। তার আযান শ্রবণকারী প্রত্যেক সরস বা নীরস বস্তু তার কথার সত্যায়ন করে থাকে। তার সাথে যারা নামায পড়ে তাদের সকলের নেকীর সমপরিমাণ তার নেকী লাভ হয়।” (সুনানে নাসাঈ ৬৪৬)

২.  আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ প্রথম কাতারের লোকদের উপর রহমত নাযিল করেন। (ইবনে মাজাহ ৯৯৯)

মন্তব্যঃ উপরের সহিহ হাদিস দ্বারা ফরজ সালাতের প্রথম কাতারগুলোতে সালাত আদায় করার ফজিলত প্রমানিত। অপর পক্ষে রওযাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাত বা রওযার স্থানটি সহিহ হাদিসে জান্নাতের অংশ বলা হয়েছে। এখানে সালাত আদায়ের কোন বিষেশ ফজিলত বর্ণিত হয় নাই। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মসজিদের এ অংশকে অন্যান্য অংশ থেকে পৃথক গুণে গুণান্বিত করা দ্বারা এ অংশের আলাদা ফযীলত ও বিশেষ শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করছে। কিন্তু তাই বলে, এই স্থান কে ফরজ সালাত প্রথম কাতারের চেয়ে উত্তম মনে করা যাবে না। যদি সময় সুযোগ হয় এবং কাউকে কষ্ট না দিয়ে সেখানে নফল নামায আদায় করা, আল্লাহর জিকির করা, কুরআন পাঠ করার ভালো।

২৪। মসজিদে নব্বী ও কুবা’ ছাড়া অন্য মসজিদে সওয়াবের উদ্দেশ্যে গমন করাঃ

মদিনা যাওয়ার সুযোগ সবার হয় না। তাই যারাই মদিনা যায় তারা ইহার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ দেখতে চায়। ঐতিহাসিক স্থানসমূহ ঘুরে ঘুরে দেখা, আর সওয়াবের উদ্দেশ্যে সফর করা এক নয়। মসজিদে নব্বী ও মসজিদে কুবার সালাত আদায়ে ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত তাই সালাত আদায় তথা সওয়াবের উদ্দেশ্যে এই দুটি মসজিদে সফর করা শরীয়ত সম্মত কাজ। কিন্তু ইহার বাহিরে মদিনার  ঐতিহাসিক স্থানসমূহ যেমনঃ উহুদের ময়দায়, উহুদের সাহাবিদের কবরস্থান, জীনের পাথার, বদর প্রান্ত, খন্দকের প্রান্ত, খন্দকের সমজিদ, কিবলাতাইন মসজিদ ইত্যাদি। এই সকল স্থানে যাওয়া কোন প্রকারের অসুবিধা নাই। তবে যাওয়া উদ্দেশ্যে হবে জ্ঞান অর্জন ও শিক্ষা গ্রহণ। তাই সকল স্থানে সওয়াবের উদ্দেশ্যে গমন করা যাবে না্

দলিলঃ

১. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন গন্তব্যে সফর করা যাবে না। মসজিদে হারাম, আমার এই মসজিদ ও মসজিদে আকসা।”(সহিহ বুখারী ১১৮৯ ও সহিহ মুসলিম ১৩৯৭, আবু দাইদ ২০৩৩)

২.  সাহল বিন হুনাইফ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি (স্বগৃহ হতে ওযূ করে) বের হয়ে এই মসজিদে (কুবায়) উপস্থিত হয়ে নামায আদায় করে, সে ব্যক্তির একটি উমরাহ আদায় করা সমান সওয়াব লাভ হয়। (হাদিস সম্ভার ১১৯৭, ইবনে মাজাহ ১৪১২)

৩. ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোহণ করে কিংবা পায়ে হেঁটে কুবা মসজিদে আসতেন। ইবনু নুমায়র (রহ.) নাফি‘ (রহ.) হতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। (সহিহ বুখারি ১১৯৪, সহিহ মুসলিম ৩২৬০ ইফাঃ)

২৫। প্রতিদিন বাকী কবরস্থান যিয়ারত করাঃ

বাকী কবরস্থানকে আমাদের উপমহাদেশের মুসলীমগন জান্নাতুল বাকি বলে থাকে। এই কবর স্থানকে আরবীতে বলা হয়, বাকিউল গারকাদ, মাকবারাতুল বাকি। এটি মসজিদে নব্বীল দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত। পূর্বে এখানে কবরের উপর স্থাপনা ছিল। ওসমানী খেলাফত ও তার পূর্বে এসব কবরকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের কুসংস্কার প্রথা চালু হওয়ায় সৌদি আরব সরকার কবরগুলোতে ছোট চিহ্ন রেখে স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেয়। ইমাম মালিক (রহ.)-এর কথামতে জান্নাতুল বাকিতে অন্তত দশ হাজার সাহাবার কবর রয়েছে।

বর্তামান বাকী কবরস্থান

এই কবরস্থানটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক আত্মীয় ও সাহাবিকে দাফন করা হয়েছে। তিনি এই কবরস্থানে বেশ কয়েকবার এসেছেন। বাকী কবরস্থান পেছনে একসময় একটি ইহুদি কবরস্থান ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদিনা আসার সময় বাকী কবরস্থান সবুজ বৃক্ষ আচ্ছাদিত ছিল।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়িতে তাঁর পালাতে রাতের শেষভাগে বাকী‘ (নামক মদীনার কবরস্থান) যেতেন এবং বলতেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম দা-রা ক্বাওমিম মু’মিনীন অআতাকুম মা তূ‘আদূন, গাদাম মুআজ্জালূন। অইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লাহিক্বুন। আল্লাহুম্মাগফির লিআহলি বাকী‘ইল গারক্বাদ।’

অর্থাৎ হে মুসলমান কবরবাসীগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের নিকট তা চলে এসেছে যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হচ্ছিল, আগামী কাল (কিয়ামত) পর্যন্ত (বিস্তারিত পুরস্কার ও শাস্তি) বিলম্বিত করা হয়েছে। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ! তুমি বাক্বী‘উল গারক্বাদবাসীদেরকে ক্ষমা কর। (মুসলিম ৯৭৪, নাসায়ী ২০৩৭, ২০৩৯, ইবনু মাজাহ ১৫৪৬, আহমাদ ২৩৯০৪)

মসজিদে নববী নির্মাণের সময় তিনি মসজিদের স্থানটি দুজন এতিম শিশুর কাছ থেকে কিনে নেন। তার এক সাহাবি আসাদ বিন জারারার মৃত্যুর পর মুহাম্মদ কবরস্থানের জায়গা নির্ধারণ করেন। আসাদ বিন জারার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন এখানে দাফন হওয়া প্রথম আনসার ব্যক্তি। উসমান বিন মাজুন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এখানে দাফন হওয়া প্রথম মুহাজির ব্যক্তি। তৃতীয় খলিফা উসমান ইবনে আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর মৃত্যুর পর তাকে এখানে দাফন করা হয়। তখন তার কবরটি পার্শ্ববর্তী ইহুদি কবরস্থানের মধ্যে পড়ে। খলিফা প্রথম মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সম্মানে এই স্থানকে জান্নাতুল বাকির অংশ করে নেন। উমাইয়া খিলাফতের সময় তার কবরের উপর প্রথম গম্বুজ নির্মিত হয়। অন্যান্য সময়েও এখানকার বিভিন্ন কবরের উপর গম্বুজ ও স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। এই করবগুলি কেন্দ্র করে নানান প্রকারের বিদআত প্রচলিত ছিল তাই ১৯২৬ সালে আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের শাসনামলে বাকী কবরস্থানের মাজারগুলো ধ্বংস করা হয়। একই বছর মক্কার মুয়াল্লা কবরস্থানের মাজারগুলোও ধ্বংস করা হয়। মুয়াল্লায় কবরস্থানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রথম স্ত্রী খাদিজাসহ আরো অন্যান্য আত্মীয়ের কবর রয়েছে। এসময় বহির্বিশ্বের কিছু বিদআতি মাজার পুজারী সম্প্রদায় প্রতিবাদ জানালেও তার প্রতি কোন কর্ণপাত করেন নাই।

প্রতিবছর হজ্জের সময় মদিনায় অবস্থানরত কোনো হজ্জ পালনকারীর মৃত্যু হলে বাকী কবরস্থানে দাফন করা হয়। এছাড়াও মদীনার বাসিন্দারাও মারা গেলে এখানে দাফনের সুযোগ পায়। তবে সাহাবাদের ইতিহাস সংরক্ষণের অংশ হিসেবে এ কবরস্থানের শুরুর অংশে যাদের সমাহিত করা হয়েছে তাদের স্থানে এখন আর নতুন করে কাউকে কবরস্থ করা হয় না। সৌদি সরকারের তত্ত্ববধানে বাকী কবরস্থানে যিয়ারতের জন্য ফজর ও আসরের নামাজের পর খুলে দেয়া হয়। এসময় মুসলিম পুরুষরা জিয়ারতের জন্য ভেতরে যেতে পারে। এই সুযোগে কিছু হাজ্জি প্রতিদিন বাকী কবরস্থান যিয়ারত করার জন্য যায়। এটা ঠিক নয়। বাকী কবরস্থানে গিয়ে কবর যিয়ারত সুন্নাহ সম্মত আমল হলেও প্রতিদিন যাওয়া ঠিক হবে না।

২৬।  বরকত হাসিলের জন্য মদীনার মাটি বয়ে নিয়ে বেড়ানোঃ

কোন ব্যক্তি বা বস্তুর মাধ্যমে তাবার্রুক বা বরকত হাসিল করা কখন জায়েয আবার কখন নাজায়েয। ইসলামি শরিয়তে যে সকল কোন ব্যক্তি বা বস্তুর মাধ্যমে তাবার্রুক বা বরকত  হাসিল করার কথা বলা হয়েছে শুধু সে গুল থেকেই বরকত হাসিল করা যাবে। ইসলামি শরিয়তে নেই এমন ব্যক্তি বা বস্তুর মাধ্যমে তাবার্রুক বা বরকত  হাসিল করা অনেক সময় হরাম আবার অনেক সময় শির্ক। বিষয়টি সম্পর্কে পরিস্কার ধারনার জন্য উভয়টি সম্পর্কে জানা দরকার।

ক। জায়েয তাবার্রুক বা বরকতঃ  

হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় মক্কার মুশরিকদের প্রতিনিধি ছিলেন উরউয়া ইবনে মাসউদ। তিনি মক্কায় ফিরে গিয়ে রাসূল স. এর সাহাবীদের সম্পর্কে মক্কার মুশরিকদেরকে বলেন,  হে কুরাইশ সম্প্রদায়, আল্লাহর শপথ, আমি বহু রাজা-বাদশার নিকট প্রতিনিধি হয়ে গমন করেছি। আমি কায়সার, কিসরা, ও নাজ্জাশীর নিকট প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছি। আল্লাহর শপথ, মুহাম্মাদ স. এর সাহাবীরা তাকে যে পরিমাণ সম্মান করে, কোন রাজা-বাদশাকে এধরনের সম্মান করতে দেখিনি। আল্লাহর শপথ, তিনি যদি কফ ফেলেন, তাহলে সেটা তার কোন সাহাবীর হাতে পড়ে। আর সেই সাহাবী সেটি তার মুখে ও শরীরে মেখে নেয়। তিনি কোন আদেশ করলে সেটি পালনে তারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। তিনি ওজু করলে তার ওজু পানি নেয়ার জন্য এত বেশি প্রতিযোগিতা করে যেন তারা যুদ্ধ করছে। রাসূল স. এর সামনে তারা অত্যন্ত নিচু স্বরে কথা বলে। তাঁর সম্মানে তারা চোখ তুলে তার দিকে তাকায় না। (সহিহ বুখারী শরীফ : ২৭৩৪)।

  হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর মাথার চুল হলক করতে দেখেছি। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল স. এর চার পাশে চক্কর দিতেন। রাসূল স. এর মাথা থেকে কোন চুল পড়লে যেন কোন সাহাবীর হাতে পড়ে। ( সহিহ মুসলিম : ২৩২৫)।

 এছাড়া হাসিসের মাধ্যমে জানা যায় সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিহিত পোশাক ও ঘাম থেকে বরকত হাসিল করতেন।

আল্লাহর জিকির কারি বা নেককারদের সাথে বসলে বরকত হাসিল হয়। (সহিহ বুখারি ৬৪০৮, সহিহ মুসলীম ২৬৮৯)

অনেক সহিহ হাদিস প্রমান করে, মসজিদে হারাম, মসজিদে নবী, মসজিদে আকসা, এই তিনটি মসজিদের বরকতময়। ইহা ছাড়া পৃথিবীর সকল মসজিদসমুহ অন্য সকল স্থান থেকে উত্তম।

খাদ্য হিসাবে যাইতুনের তৈল, (সুরা নুর-৩৫, তিরমিজি-১৮৫১২) দুধ, (ইবনে মাজাহ-৩৩৮৫) মধু (সুরা নাহল৬৯, বুখারি-৫৬৮৪ মুসলিম-২২১৭) ও যমযমের পানি, (মুসলিম-২৪৭৩) বরকতময়।

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন দসায় সাহারাগন (রা:) সময় এবং দুযোগ থাকা স্বত্বেও যে সকল স্থান, সময় এবং ব্যক্তি থেকে বরকত নেনন নাই সে সকল স্থান, সময় এবং ব্যক্তি থেকে বরকত নেয়া যাবে না।

যেমনঃ

ব্যক্তি হিসাবেঃ হাদিসসমুহ দ্বারা প্রমানিত যে, সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল করতেন। এখন যদি কেউ ভাবেন তাহলে তো আমাদের পীর, বুজুর্গ, আকাবিরদের থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে কারণ তারা নবীদের ওয়ারিস। তা হলে মহা ভুল করবেন কারণ এটা শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য খাস ছিল। তা না হলে আমাদের পীরের পীর, বুজুর্গদের বুজুর্গ, অলীদির অলী, হযরত আবু বক্কর (রা:) ,হযরত ওমর (রা:), হযরত আলী (রা:), হযরত ওসমানসহ (রা:) কোন সাহাবির থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক থেকে কেউ বরকত লাভ করছেন বলে জানা যায় না। তাছাড়া আমরা যাকে তার বাহিজ্জিক আমল আখলাক দেখে আল্লাহর অলী মনে করছি। মহান আল্লাহর কাছে সে অলী না ও হতে পারে। 

অপর পক্ষে সকলের জন্য খাদ্য হিসাবে যাইতুনের তৈল, দুধ, মধু ও যমযমের পানি, আজও বরকতময়। মসজিদে হারাম, মসজিদে নবী, মসজিদে আকসা, এমনকি পৃথিবীর সকল মসজিদসমুহ আজও বরকত হাসিলের কেন্দ্রবিন্দু। আল্লাহর জিকির কারি বা নেককারদের সোহবত বরকতময় তা আর বরার অপেক্ষা রাখে না।

স্থান হিসাবঃ হেরাগুহা, জাবারে শুর, জাবালে রহমত, মোহদায়ো ওহুদের কবর জিয়ারত করে বরকত হাসিল করা যা কোন সাহাবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন দসায় বা ওফাতের পর করেনি। বরকত হাসিলের জন্য ক্বাবা ঘরের গিলাফ, যে কোন মসজিদ বা মাজারের দেয়াল, মাটি, জানালা, দরজা ইত্যাদি চুমু খাওয়া হারাম ও শির্ক।  যেহেতু বরকত গ্রহন ইবাদাত (নেকির কাজ) তাই এই সকল কাজ শির্কের মধ্যে গন্য হবে। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল কে মুর্তি পুজার সাথে তুলানা করছেন।

আবু ওয়াকিদ আল লাইছী (রা:) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, “আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে হুনাইনের উদ্দেশ্যে রওযানা হলকম। আমরা সবে মাত্র ইসলাম গ্রহন করছি। একস্থানে পৌত্তুলিকদের একটি কুলগাছ ছিল যার চারপাশে তারা বসতো এবং তাদের সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখতো। গাছটিকে তারা যাত আনওয়াত বলতো। আমরা একদিন একটি কুলগাছের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল মুশরিকদের যেমন ‘যাতু আনওয়াত’ আছে আমাদের জন্যও অনুরূপ ‘যাতু আনওয়াত’ (অর্থাৎ একটি গাছ) নির্ধারণ করে দিন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আল্লাহু আকবার, তোমাদের এ দাবীটি পূর্ববর্তী লোকদের রীতি নীতি ছাড়া আর কিছু্‌ই নয় যার হাতে আমার জীবন তার কসম করে বলছি, তোমরা এমন কথাই বলেছো যা বনী ইসরাইল মূসা আলাইহিস সালাম কে বলেছিল, হে মূসা, মুশরিকদের যেমন মা’বুদ আছে আমাদের জন্য তেমন মা’বুদ বানিয়ে দাও। মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, তোমরা মূর্খের মতো কথা বার্তা বলছ। আরাফ ৭:১৩৮)। তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতি নীতিই অবলম্বন করছো। (তিরমিজি হাদিসটি সহিহ বলেছেন)। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

َّقَدۡ رَضِىَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِى قُلُوبِہِمۡ فَأَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ عَلَيۡہِمۡ وَأَثَـٰبَهُمۡ فَتۡحً۬ا قَرِيبً۬ا (١٨) 

অর্থঃ আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নিচে তোমরা কাছে বাইয়াত করছিলো৷  তিনি তাদের মনের অবস্থা জানতেন৷ তাই তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করেছেন, পুরস্কার স্বরূপ তাদেরকে আশু বিজয় দান করেছেন৷  (সুরা ফাতহা ৪৮:১৮)

যে গাছর নীচে এ বাইয়াত অনুষ্ঠিত হয়েছিলো সে গাছির কোন আলাদা মর্জাদা সহাবাগন দেন নাই।  বুখারী, মুসলিমে এসেছে, ইবনে সা’দে হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েবের। তিনি বলেন, আমার পিতা বাইয়াতে রিদওয়ান শরীক ছিলেন। তিনি আমাকে বলেছেন পরের বছর আমরা যখন উমরাতুল কাযার জন্য গিয়েছিলাম তখন গাছটি হারিয়ে ফেলেছিলাম। অনুসন্ধান করেও তার কোন হদিস করতে পারিনি। হযরত উমর (রা) তাঁর খিলাফত কালে যখন হুদাইবিয়া অতিক্রম করেন তখন জিজ্ঞেস করেন, যে গাছটি নিজে বাইয়াত হয়েছিলো তা কোথায়৷ কেউ বলে, অমুক গাছটি এবং কেউ বলেন অমুকটি। তখন হযরত উমর (রা:) বলেন, এ কষ্ট বাদ দাও, এর কোন প্রয়োজন নেই।

সময় হিসাবঃ সাহাবিগন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর কখন তার জম্ম বা মৃতু বার্ষিকি পালন করেনি। ঈদে মিলাদন্নবী নাম করন করেনি। তেমনি ভাবে মিরাজের রাত্রি, অহুদ দিবস, বদর দিবস, হিজরত দিবস পালন করে নি। সময় এবং সুযোগ তাদের ছিল। তারা আমাদের চেয়ে দিন ভাল বুঝতেন। সুতারং সাহাবিগন যা করেনি তাতে কোন বরকত হতে পারে না বরং তা বিদাআতি কাজ হবে।

মন্তব্যঃ মদিনা নগরীর ফজিলত, মদিনার মসজিদে নব্বীর আলাদা ফিজিলত থাকলেও উপরের আলোচনা এ কথা ষ্পষ্ট যে মদিনার মাটির বিষেশ কোন বরকত নাই। কোন সাহাবি (রাঃ) বা আমাদের সালাফগন মদিনার মাটিতে আলাদা মর্জাদা প্রদান করেছেন বলে কোন প্রমান নাই। তাই বরকত হাসিলের জন্য মদিনার মদীনার মাটি বয়ে নিয়ে বেড়ানো বিদআত কাজ হবে।

২৭। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের মাটি মর্জদা নিয়ে বাড়াবাড়িঃ

অনেক বিদআতি আলেম বিশ্বাস করে থাকেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের মাটি কাবা, আরশ কুরছি ও লওহে মাহফুজ থেকে শ্রেষ্টতাদের এই ধরনে বিশ্বাসের কোন দলিল কুরআন ও সহিহ সুন্নায় পাওয়া যায় না।

আলমুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদএ বর্ণিত, মক্কামদিনার আলমগনের প্রথম প্রশ্নের উত্তরের শেষ দিকে বলা হয়েছে, “রাওদ্বা পাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বশরীরে অবস্থায় করছেন। মুবারক দেহ স্পর্শী এ রওদ্বাখানি কেন বস্তত, কাবা শরীফ এমনকি আল্লাহর আরশ ও কুরশী থেকে ও উত্তমএ সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরাম এর বিশদ আলোচনা করেছেন। 

শইখুল হাদিস হযরত জাকারিয়া শাহারানপুরী (রহ), ফাজায়েল হজ্জ্বে লিখেন “” যেই জায়গা হুজুরে পাক () এর শরীর মোবারকের সহিত মিলিত আছে, উহা আল্লাহরপাকের আরশ হইতেও শ্রেষ্ট, কাবা হইতেও শ্রেষ্ট, কুরছি হইতেও শ্রেষ্ট, এমনকি আশমান জমিনের মধ্যে অরস্থিত যে কোন স্থান হইতেও শ্রেষ্ট,।। (ফাজায়েল হজ্জ্ব, পৃষ্ঠা নম্বর ১১৯, একমাত্র পরিবেশক তাবলীগী কুতুর খানা, প্রকাশ কাল অক্টোবর ২০০৫)

মন্তব্যঃ আকিদার ক্ষেত্র কোন অনুমান বা কল্পনার দ্বারা প্রমানিত হবে না। আকিদা বা বিশ্বাসের বিষয়টি সরাসরি কুরআন অথরা সহহি হাদিসে উল্লেখ থাকবে হবে। আর যদি আমাদের বুঝে না আছে তবে চুপ থাকতে হবে।

২৮। ছোট ছিদ্র পথে বরকত লাভের আশায় হাত ঢুকানোঃ

মসজিদে নব্বীতে প্রবেশের অনেকগুলো গেট বা দরজা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারতে জন্য পশ্চিম পাশে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। এই গেট বা দরজাকে ‘বাবুস সালাম’ বলা হয়। বাবুস সালাম দিয়ে প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারতের পর পূর্ব দিকের গেট দিয়ে বাহির হতে হয়। এই পূর্ব পাশের গেটকে ‘বাবুল বাকি’ বলা হয়। বাবুস সালাম বা পশ্চিম পাশের গেট দিয়ে ঢুকে সামান্য অগ্রসর হলে হাতের ডানে ইমাম সাহেবের মিম্বার। এখানে দাড়িয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের ইমামি করতেন। এই মিম্বার থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর স্থান কে রিয়াযুল জান্নাহ বা বেহেস্তের বাগান বলা হয়। এর পর কিছু দুর অর্থাৎ রিয়াযুল জান্নাহ অতিক্রম করলেই হাতে বামে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর। এই স্থানটি একটি ওয়াল দ্বারা আটকানো কোন অস্থায়ই কবর সরাসরি দেখতে পাওয়া যাবে না। তবে কবরকে বুঝাতে ওয়ালে পাশে ছোট ছোট তিনটি ছিদ্র আছে।

প্রথম যে ছিদ্রটি চোখে পড়বে ইহা অন্য দুটি ছিদ্র অপেক্ষা একটু বড়। এই ছিদ্র বরাবর আছে আমাদের সাবার প্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর। এর পরের ছোট দুটি ছিদ্র প্রথমটি বরাবর আছে আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবর ও দ্বিতীয়টি বরাবর আছে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কবর।  অনেক অজ্ঞ লোক বরকত লাভের আশায় এই সকল ছোট ছিদ্র পথে হাত ঢুকিয় দেয়। বরকত লাভে আশায় এমন কাজ করা শির্ক। কেননা, মহান আল্লাহ ছাড়া কেউই বরকত প্রদানের মালিক নয়। তবে কোন কারন ছাড়া না বুঝে এমনতে হাত ঢুকালে কোন গুনাহ হবে না। তবে এমন কাজ না করাই ভাল। পৃথিবীর শ্রেষ্ট মানবের কবরের সামনে আজোবাজে কাজ না করে, বিনীতভাবে মহান আল্লাহ কাছে দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে সময় কাটান উত্তম। আল্লাহু আলাম।।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারতের ত্রুটিসমূহ তৃতীয় কিস্তি

Leave a comment