জাকাত সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা

জাকাত সম্পর্কে প্রথমিক ধারনা

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

যাকাতের ভুলভ্রান্তি এবং বিদআদ সম্পর্কে আলোচনার আগে যাকাত সম্পর্কে খুবই সংখিপ্ত আকালে একটু আলোকপাত করব।  যাতে যাকাতের গুরুত্ব বুঝা সহজ হয়।

১। যাকাতের সংজ্ঞাঃ

যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা, শুদ্ধি ও বৃদ্ধি। পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়ত নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ কুরআনে বর্ণিত আট প্রকারের কোন এক প্রকার লোক অথবা প্রত্যেককে দান করে মালিক বানিয়ে দেয়াকে যাকাত বলে। 

২। কুরআনের আলোকে যাকাতের বিধানঃ 

মহার আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দষ্ট কিছু মুসলমানদের উপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে। কুরআনে মহান আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,

*وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ*

অর্থঃ আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়। ( সুরা বাকারা ২:৪৩ , ৮৩ , ১১০)

কুরআনে মহান আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,

*وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ*

অর্থঃ তাদের এ মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা নিবিষ্ট মনে একান্তভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর এবাদত করবে, যথাযথভাবে সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে, আর এটাই হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন। ( সুরা বাইয়্যিনাহ ৯৮:৫)

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেনঃ

*وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ رِباً لِيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلا يَرْبُو عِنْدَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ*

অর্থঃ তোমরা মানুষের সম্পদ বৃদ্ধির নিমিত্তে যে সুদ ভিত্তিক লেনদেন করে থাক, প্রকৃত পক্ষে তা আল্লাহর নিকট কোন লাভজনক নয়। পক্ষান্তরে তোমরা যে যাকাত প্রদান কর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, (তা বৃদ্ধি পায়) ফলত যাকাত প্রদানকারীগণ মুনাফাকে দ্বিগুণ করে নেয়। (সুরা রূম ৩০:৩৯)

মন্তব্যঃ এমনিভাবে সুরা নিসা ৭৭, ১৬২, সুরা মায়েদা ১২ ও ৫৫, সুরা আরাফ ১৫৬, সুরা তাওয়া ৫, ১১, ১৮ ও ৭১, সুরা হজ্জ ৪১ ও ৭৮, সুরা নুর ৫৬, সুরা নমল ৩, সুরা লুকমান ৪, সুরা আহজাব ৩৩, সুরা ফুসসিলাত ৭, সুরা মুজাদিলা ১৩, সুরা মুজাম্মিল ২০ নম্বর আয়াতসহ অনেকস্থানে যাকাতের কথা বলা হয়েছে।

৩। হাদিসের আলোকে যাকাতের বিধানঃ

ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ আল্লাহ্‌র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ্জ করা এবং রামাদান এর সিয়াম পালন করা। (সহিহ বুখারী ৭ ইফাঃ)

জরীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া ও সকল মুসলমানের কল্যাণ কামনা করার উপর বায়‘আত করি।(সহিহ বুখারী ১৩১৯ ইফাঃ)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক মরুবাসী সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমাকে এমন আমলের পথনির্দেশ করুন যা আমল করলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবেনা, (পাঁছ ওয়াক্ত) ফরয সালাত আদায় করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে ও রমযানের সিয়াম পালন করবে। সাহাবী বললেন, আমার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর কসম, আমি এর উপর বৃদ্ধি করব না। তিনি যখন ফিরে গেলেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কেউ যদি জান্নাতী লোক দেখতে আগ্রহী হয় সে যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখে। (সহিহ বুখারী ১৩১৫ ইফাঃ)

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উট এবং গরু-ছাগলের কোন মালিক যদি এগুলোর যাকাত না দেয় তবে কিয়ামতের দিন তাকে এক প্রশস্ত সমতল ভূমিতে বসান হবে। এরপর খূর বিশিষ্ট প্রানী তাকে স্বীয় খুর দ্বারা দলিত করবে এবং শিংবিশিষ্ট পশু তাকে স্বীয় শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। সেদিন এদের মধ্যে শিংবিহীন এবং শিং ভাঙ্গা কোন পশু থাকবে না। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এদের হক কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উটকে উটনীর পাল নিতে দেয়া, এদের পাত্রসহ পানি উঠাবার জন্য কাউকে ধার দেয়া। দুগ্ধবর্তী উষ্ট্রী অন্যকে ধার দেয়া, পানি পান করবার স্থানে এদের দুগ্ধদোহন করা এবং আল্লাহর পথে এদের উপর লোকদেরকে আরোহণ করতে দেয়া।

যে বিত্তশালী ব্যাক্তি তার তার মালের যাকাত দেয় না, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য মাথার চুলপড়া বিষধর সাপে রূপান্তরিত করা হবে। অতঃপর সে সাপ যাকাত অস্বীকারকারী ব্যাক্তি যেখানে যাবে সেখানেই তাকে ধাওয়া করবে। তখন সে সাপ থেকে পলায়ন করতে থাকবে। কিন্তু তাকে বলা হবে, এই তোমার সম্পদ যার ব্যাপারে তুমি কার্পণ্য করতে। অতঃপর যখন সে দেখবে এর থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই, তখন সে তার হাত এর মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিবে। সে সাপ তার হাত চিবাতে থাকবে, ষাড়ের চিবানোর মত। সহিহ মুসলিম ২১৬৯ ইফাঃ)

৪। ইজমাঃ

যাকাত ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে একটি। সর্বকালের সকল মুসলিম এই বিষয়ে একমত যে, যাকাত একটি ফরজ বিধান। সুতরাং যদি কেউ যাকাত ফরজ জেনেও তা অস্বীকার করে, তাহলে সে ইসলামি শরীয়তে বিধান মোতাবেগ কাফির হয়ে যাবে এবং যে ব্যক্তি যাকাত অস্বীকার করে তাকে হত্যা করা হবে। আর যে যাকাত প্রদানে কৃপণতা করবে সে লাঞ্চনা ও কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে। এই যাকাত ফরয করা হয় ২য় হিজরীতে।

৫। যাদের ওপর যাকাত ওয়াজিবঃ

যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্ত হলে পাঁচটি যথাঃ

১. মুসলিম হওয়া

২. স্বাধীন হওয়া

৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক।

৪. সম্পদের ওপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হয়েছে।

. সম্পদে পূর্ণ মালিক হওয়া

১। মুসলিম হওয়াঃ

কোন অমুসলিম বা কাফির যারা এখনও ইসলামের মধ্য প্রবেশ করে নাই তাদের উপর ইসলামের কোন হুকুম আহকাম পালন করা ফরজ নয়। কারন কাফির অবস্থায় তাদের দান সাদকাহ কবুল হয় না। একথার দলীল হল আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

قُلۡ أَنفِقُواْ طَوۡعًا أَوۡ كَرۡهً۬ا لَّن يُتَقَبَّلَ مِنكُمۡ‌ۖ إِنَّكُمۡ ڪُنتُمۡ قَوۡمً۬ا فَـٰسِقِينَ (٥٣) وَمَا مَنَعَهُمۡ أَن تُقۡبَلَ مِنۡہُمۡ نَفَقَـٰتُهُمۡ إِلَّآ أَنَّهُمۡ ڪَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَبِرَسُولِهِۦ وَلَا يَأۡتُونَ ٱلصَّلَوٰةَ إِلَّا وَهُمۡ ڪُسَالَىٰ وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمۡ كَـٰرِهُونَ (٥٤) 

অর্থঃ তাদের বলে দাও, “তোমরা নিজেদের ধন-সম্পদ স্বেচ্ছায় ও সানন্দে ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যয় কর, তা গৃহীত হবে না৷ কারণ তোমরা ফাসেক গোষ্ঠী”৷ তাদের দেয়া সম্পদ গৃহীত না হবার এ ছাড়া আর কোন কারন নেই যে, তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে, নামাযের জন্য যখন আসে আড়মোড় ভাংতে ভাংতে আসে এবং আল্লাহর পথে খরচ করলে তা করে অনিচ্ছাকৃতভাবে। (সুরা তাওবা ৯:৫৩-৫৪)।

এই আয়াতের দ্বারা বুঝা যায় তাদের আমল করা আর না করা সমাজ। কেননা, কুফরির কারনে তাদের দান-সাদকাহ কবুল হয় না। তাছাড়া কাফির ব্যক্তির কোন আমল মহান আল্লাহ দরবারে কবুল হবেনা। মহান আল্লাহ কাফির মুসরিকদের সলক আমল ধ্বংশ করে দিবেন। তাদের আমলের কোন লাভ ক্ষতি নেই। তাদের আমল করা আর না করা সমান কথা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ 

অর্থঃ আপনার ও আপনার  পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর সাথে শির্ক (কাফির হয়) করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন বলে গণ্য হবেন। (সুরা যুমার ৩৯৬৫)

মহান আল্লাহ’তায়ালা কাফির মুসরিকদের সম্পর্কে আরও বলেন,

 وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٍ۬ فَجَعَلۡنَـٰهُ هَبَآءً۬ مَّنثُورًا (٢٣)

অর্থঃ এবং তাদের সমস্ত কৃতকর্ম নিয়ে আমি ধূলোর মতো উড়িয়ে দেবো৷ (ফুরকান : ২৩)

অপর পক্ষে যদি কোন কাফির ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। তার  ব্যক্তিগত আমল (সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত) পালন করা আর না করা সমান ছিল। কাজেই তার পূর্বের আমল সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন করা হবে না। ইসলাম গ্রহনের সাথে সাথে সব ক্ষমা হয়ে যাবে। এ কথার দলীল হল মহান আল্লাহর বানী। তিনি এরশাদ করেন,

 قُل لِّلَّذِينَ ڪَفَرُوٓاْ إِن يَنتَهُواْ يُغۡفَرۡ لَهُم مَّا قَدۡ سَلَفَ وَإِن يَعُودُواْ فَقَدۡ مَضَتۡ سُنَّتُ ٱلۡأَوَّلِينَ (٣٨) 

অর্থঃ তুমি বলে দাও, কাফেরদেরকে যে, তারা যদি বিরত হয়ে যায়, তবে যা কিছু ঘটে গেছে ক্ষমা হবে যাবে। পক্ষান্তরে আবারও যদি তাই করে, তবে পুর্ববর্তীদের পথ নির্ধারিত হয়ে গেছে। (আল-আনফাল ৮:৩৮)।

মুলকথা হল এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। রাসূল থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তিনি তাকে ছুটে যাওয়া আর আদায় করতে হবে না। কাজেই কোন কাফিরের উপর যাকত ফরজ নয়।

২। স্বাধীন হওয়াঃ 

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঘোড়া ও ক্রীসদাসের ক্ষেত্রে যাকাত মাফ করে দিলাম। তোমরা প্রতি চল্লিশ দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রায়) এক দিরহাম হিসাবে রৌপ্যের যাকাত দিবে। একশ নব্বই দিরহামেও আমার (বায়তুল মালের) কিছু পাওনা নাই। কিন্তু দুশ দিরহাম পরিমাণ হলে এতে পাঁচ দিরহাম (২.৫০%) যাকাত ধার্য হবে। (সুনানে তিরমিজি ৬১৮ ইফাঃ, ইবনু মাজাহ ১৭৯০)

 

৩। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকঃ

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ যাওদ (পাঁচটি) উটের কম সংখ্যকের উপর যাকাত নেই, পাঁচ উকিয়া এর কম পরিমাণ রূপার উপর যাকাত নেই এবং পাঁচ ওয়াসক এর কম পরিমাণ উৎপন্ন দ্রব্যের ঊপর সা’দকা নেই। (সহিহ বুখারী ১৩৬২ ইফাঃ, সহিহ মুসলিম ২১৩৫)

৪. সম্পদের ওপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হয়েছেঃ

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেনঃ যদি বছরের মাঝে কারো সম্পদ লাভ হয়, তবে উক্ত মালিকের নিকট বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে যাকাত নেই। ((সুনানে তিরমিজি ৬২৮ ইফাঃ,  ইবনু মাজাহ ১৭৯২)

৫। সম্পদের পূর্ণ মালিক হওয়াঃ

যদি সম্পদের পূর্ণ মালিক না হয় তবে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবেনা। কেউ যদি সম্পদ গচ্চিত রাখে তবে গচ্ছিত দাতার উপর জাকাত ওয়াজিব। যার কাছে সম্পদ জমা রাখা হবে আপাত দৃষ্টিতে সে মালিক হলেও সত্যিকার  মালিক গচ্ছিতকারী। কারো কাছে ঋন পাওনা আছে কিন্তু কোন অবস্থায় ঋন গহীতা ঋন পরিশোধের ক্ষমতা রাখে না। এই সকল অনাদয়ী ঋনের উপর যাকাত দিতে হবে না। কারন সে সম্পদের পূর্ণ মালিক নয়। সম্পদ তার কিন্তু সম্পদের পূর্ণ মালিক না হওয়াতে যাকাত দিতে হল না।

৬। চার প্রকার সম্পদের যাকাত হবেঃ

১. মুল্যবান বস্তুর যাকাত

২. ব্যবসায়িক পণ্যে যাকাত

৩. জমিন থেকে প্রাপ্য সম্পদের যাকাত এবং

৪. চতুস্পদ জন্তু উপর যাকাত

৭। মুল্যবান বস্তু যাকাতঃ

আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ উকিয়া (এক উকিয়া চল্লিশ দিরহাম পরিমাণ, ৫ উকিয়া x ৪০= ২০০ দিরহাম সমান) পরিমাণের কম সম্পদের উপর যাকাত নেই এবং পাঁচটি উটের কমের উপর যাকাত নেই। পাঁচ ওসাক (এক ওসাক ৬০ সা-এর সমান, ৫ ওসাক x ৬০ = ৩০০ সা। ১ সা প্রায় ৩ সের ১১ ছটাকের সমান) এর কম উৎপন্ন দ্রব্যের উপর যাকাত। (সহিহ বুখারী ১৩২৩ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ স্বর্ণ ও রৌপ্য যে কোন ধরনের হোক না কেন এর উপর যাকাত ওয়াজিব। তবে স্বর্ণের পরিমাণ কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা এবং রৌপ্যের পরিমাণ সাড়ে বায়ান্ন তোলা হতে হবে। সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের পরিমান বিশ দিরহাম স্বর্ণ, যা ওজন করলে ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ হয়। কারও মালিকানাধীন যদি ৮৫ গ্রাম বা ততোধিক স্বর্ণ থাকে, ক্যারেট যাই হোক, তার ওপর হিজরী এক বছর পূর্ণ হলে যাকাত ওয়াজিব হবে। যাকাতের পরিমাণ স্বর্ণের ২.৫%।

এক উকিয়া চল্লিশ দিরহাম পরিমাণ, ৫ উকিয়া x ৪০= ২০০ দিরহাম। ২০০ দিরহাম রূপা যা ওজন করলে ৫৯৫ গ্রাম হয়। কারও মালিকানায় যদি ৫৯৫ গ্রামের চেয়ে বেশি রূপা থাকে এবং তার ওপর হিজরী এক বছর পূর্ণ হয়, তবেই তাতে যাকাত ফরয হবে।

বর্তমান বাজার অনুসারে স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্যের ব্যবধান অনেক বেশি। স্বর্ণের মুল্যের তুলনয়া রুপার মুল্য খুবই কম। তাই দরিদ্র, অসহায় ও মিসকিনদের সুবিধা বিবেচনায় রুপার মূল্যই যাকাত ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা উচিৎ। বর্তমানে রুপার দামেরও ভিন্নতা আছে। রুপার প্রতি ভরি মুল্য ৬০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা হয়ে তাকে। এই হিসাবে মাঝামাঝি পরিমান ধরলে (৮০০X৫২=) ৪১৬০০ টাকার মত আছে। তাই যদি কারো নিকট ৪০,০০০ টাকার চেয়ে অধিক টাকা পুর্ণ একবছর  অতিরিক্ত হিসাবে বিদ্যমান থাকে, তবে তার উপর যাকাত ওয়াজিব।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বোবা জন্তুর আঘাতের কোন দায়-দায়িত্ব নেই, খনির উপরও কোন দায়-দায়িত্ব নেই, কূপেরও কোন দায়-দায়িত্ব নেই। আর কোন গুপ্ত সম্পদের উপর এক পঞ্চমাংশ। (সুনানে তিরমিজি ৬৩৯ ইফাঃ, ইবনু মাজাহ ২৬৭৩)

৮। ব্যবসায়িক পণ্যে যাকাতঃ

সংসারিক কাজে ব্যবহৃত মালামালের উপর যাকাত ওয়াজিব হয় না। ঠিক তেমনি ভাবে ব্যবসায় ব্যবহৃত আসবাব পত্র, যন্ত্রপাতী, জায়গা-জমি, পশু-পাখী, গাড়ি-ঘোড়া কিছুর উপরই যাকাত ওয়াজিব হবে না। কিন্তু এই সকল বস্তু যদি ব্যবসার উদ্দেশ্য কেনা বেচা করে বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে জমা করে রাখে তবে ব্যবসার পন্য হিসাবে এই সকল মালের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। ঠিক তেমনিভাবে কেউ যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে জমি, গবাদি পশু, খাদ্য-পানীয় ইত্যাদি কেনা বেচা করে বা জমা রাখে তবে এই সবকিছুতেই যাকাত ওয়াজিব হবে। যদি কার দুই তিনটি বাড়ি বা ফ্লাট থাকে তবে এর উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। এর আয়ের উপর যাকাত হবে। কিন্তু যদি কেউ বাড়ি বা ফ্লাট ব্যবসার জন্য করার জন্য কিনে রাখে তবে ব্যবসার পন্য হিসাবে সমুদয় বাড়ি বা ফ্লাটের মুল্যের উপর যাকাত দিতে হবে। অনুরুপভাবে কেউ কোন যৌথ কোম্পানী খুললে মুলধনের উপর যাকাত দিতে হবে না কিন্তু শেয়ার বাজারে বিনীয়োগ করলে যাকাত দিতে হবে। এই সকল ক্ষেত্রে ব্যবসার মালিককে বছর শেষে হিসাব করে যাকাত পরিশোধ করতে হবে।  যাকাতের পরিমান হবে তার সমুদয় (ব্যবসার উপকরণ বাদে) ব্যবসার সম্পদের ২.৫০% হারে। য

৯। জমিন থেকে প্রাপ্য সম্পদের যাকাতঃ

 জমিনে উৎপাদিত ফসল, ফল ও বীজের ওপর যাকাত ওয়াজিব। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

*كُلُوا مِنْ ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَآَتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ *

অর্থঃ তোমরা জমিনের ফসল খাও যখন ফসল ফলে, আর ফসল কাটার সময় ফসলের হক্ব আদায় কর। তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ সূরা আনাম ১৪১)

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, যে ভূমি নদ-নদী ও বৃষ্টির পানি দ্বারা সঞ্চিত হয়, তাতে উশর (এক দশমাংশ) ওয়াজিব হবে। আর যে ভূমিতে উটের দ্বারা পানি সেচ করা হয় তাতে অর্ধ ওশর ওয়াজিব হবে। (সহিহ মুসলিম ২১৪৪ ইফাঃ)

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতি দশ মোশক মধুর মধ্যে এক মোশক (যাকাত)। (সুনানে তিরমিজি ৬২৭ ইফাঃ, ইবনু মাজাহ ১৮২৪)

আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত যে, রাসলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ বৃষ্টি ও ঝর্ণার পানি দিয়ে যা উৎপাদিত হয় তাতে হল উশর (দশ ভাগের এক ভাগ) এবং সেচের মাধ্যমে যা উৎপাদিত হয় তাতে হল নিসফ উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ)। (তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৬৩৬)

হাদিসের ভাষায় ফসলের পরিমাণ পাঁচ ওছাক হতে হবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ খেজুরে যাকাত নেই এবং ঐ পরিমাণ শস্যের কমেও যাকাত নেই। (সহিহ মুসলিম ২১৩৯ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ এক ওসাক পরিমান হলো ৬০ “সা” এর সমান। সুতারং ৫ ওসাকX৬০ = ৩০০ সা। ১ সা প্রায় ২ কেজি ৪০ গ্রাম থেকে ৩ কেজির মত। সেই হিসাবে ৩০০X২.০৪ কেজি= ৬১২.০০  বা ৯০০ কেজি ফসল উত্পাদিত হলেই ফসলের যাকাত দিতে হবে।

 

১০। চতুস্পদ জন্তু উপর যাকাতঃ

গবাদি পশু উট, গরু, ছাগল ইত্যাদির ওপর যাকাত ওয়াজিব।  আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

وَٱلۡأَنۡعَـٰمَ خَلَقَهَا‌ۗ لَڪُمۡ فِيهَا دِفۡءٌ۬ وَمَنَـٰفِعُ وَمِنۡهَا تَأۡڪُلُونَ (٥) وَلَكُمۡ فِيهَا جَمَالٌ حِينَ تُرِيحُونَ وَحِينَ تَسۡرَحُونَ (٦) 

অর্থঃ এবং গৃহপালিত পশু যা তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এর মধ্যে রয়েছে শীত বস্ত্রের উপকরণ এবং মানুষের জন্য উপকার।(সূরা নাহাল ১৬:৫-৬)

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন তা আবূ বকর (রাঃ) তাঁর নিকট লিখে পাঠান, যাকাত-এর (পরিমাণ কম-বেশী হওয়ার) আশংকায় পৃথক (প্রাণী)-গুলোকে একত্রিত করা যাবেনা এবং একত্রিতগুলো পৃথক করা যাবে না। (সহিহ বুখারি ১৩৬৬ ইফাঃ)

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে বাহরাইন পাঠানোর সময় এই বিধানটি তাঁর জন্য লিখে দেনঃ বিসমিল্লাহীর রাহমানির রাহীম। এটাই যাকাতের নিসাব যা নির্ধারণ করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের প্রতি এবং যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিমদের মধ্যে যার কাছ থেকে নিয়মানুযায়ী চাওয়া হয়, সে যেন তা আদায় করে দেয় আর তার চেয়ে বেশী চাওয়া হলে তা যেন আদায় না করে। চব্বিশ ও তার চাইতে কম সংখ্যক উটের যাকাত বকরী দ্বারা আদায় করা হবে। প্রতি পাঁচটি উটে একটি বকরী এবং উটের সংখ্যা পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত হলে একটি মাদী বিনতে মাখায (যে উটের বয়স এক বছর পূর্ণ হয়েছে)। ছত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত একটি মাদী বিনতে লাবূন (যে উটের বয়স দু’বছর পূর্ণ হয়েছে)। ছয়চল্লিশ থেকে ষাট পর্যন্ত ষাঁড়ের পেলযোগ্য একটি হিককা (যে উটের বয়স তিন বছর পূর্ণ হয়েছে) একষট্টি থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত একটি জাযা‘আ (যে উটের বয়স চার বছর পূর্ণ হয়েছে) ছিয়াত্তর থেকে নব্বই পর্যন্ত দু’টি বিনতে লাবূন, একানব্বইটি থেকে একশ’ বিশ পর্যন্ত ষাঁড়ের পেলযোগ্য দু’টি হিককা। সংখ্যায় একশ’ বিশের অধিক হলে (অতিরিক্ত) প্রতি চল্লিশটিতে একটি করে বিনতে লাবূন এবং (অতিরিক্ত) প্রতি পঞ্চাশটিতে একটি করে হিককা। যার চারটির বেশী উট নেই, সেগুলোর উপর কোন যাকাত নেই, তবে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিতে চাইলে দিতে পারবে। কিন্তু যখন পাঁচে পৌঁছে তখন একটি বকরী ওয়াজিব। আর বকরীর যাকাত সম্পর্কেঃ সায়েমা বকরী চল্লিশটি থেকে একশ’ বিশটি পর্যন্ত একটি বকরী। এর বেশী হলে দু’শটি পর্যন্ত দু’টি বকরী। দু’শর অধিক হলে তিনশ’ পর্যন্ত তিনটি বকরী। তিনশ’র অধিক হলে প্রতি একশ’ তে একটি করে বকরী। কারো সায়েমা বকরীর সংখ্যা চল্লিশ থেকে একটিও কম হলে তার উপর যাকাত নেই। তবে স্বেচ্ছায় দান করলে তা করতে পারে। রূপার যকাত চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। একশ নব্বই দিরহাম হলে তার যাকাত নেই, তবে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দান করলে করতে পারে। (সহিহ বুখারি ১৩৭০ ইফাঃ)

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ত্রিশটি গরুতে একটি পূর্ণ এক বছর বয়স্ক গরু বা গাভী, প্রতি চল্লিশটিতে পূর্ণ দুই বছর বয়স্ক গাভী (যাকাত হিসাবে দিতে হয়)। (ইবনে মাজাহ ১৮০৪, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৬২০)

১১। উটের ক্ষেত্রে যাকাতের হিসাবঃ

সংখ্যা জাকাতে পরিমান মন্তব্য
০১-০৪ যাকাত নাই ১২০ এর বেশী উট হলে প্রতি ৫০ টির জন্য একটি হিক্কাহ যাকাত দিতে হবে।

প্রতি ৪০ টির  জন্য একটি বিনতে লাবুন।

এক বছর বয়সের উটকে মাখায,

দুই বছর বয়সের উটকে বিনতে লাবুন। 

তিন বছর বয়সের উটকে হিক্কাহ

চার বছর বয়সের উটকে জাযাআ।

 

০৫-০৯ একটি ছাগল
১০-১৪ দুটি ছাগল
১৫-১৯ তিনটি ছাগল
২০-২৪ চারটি ছাগল
২৫-৩৫ একটি বিনতে মাখায
৩৬-৪৫ একটি বিনতে লাবুন
৪৬-৬০ একটি হিক্কাহ
৬১-৭৫ একটি জাযাআ
৭৬-৯০ দুটি বিনতে লাবুন
৯১-১২০ দুটি হিক্কাহ

১২। গরুর ক্ষেত্রে যাকাতের হিসাবঃ

সংখ্যা জাকাতে পরিমান মন্তব্য
১-২৯ যাকাত নাই ৬০ এর অধিক গরু হলে প্রতি ৩০ টি জন্য একটি তাবীআ এবং ৪০ টি জন্য একটি মুসীন্না। তাবী হলো ১ বছরের বাছুর, তাবীআ হলো ১ বছরের গাভী, মুসীন্ন হলো ২ বছরের বাছুর, মুসীন্না হলো ২ বছরের গাভী।
৩০-৩৯ তাবী বা তাবীআ
৪০-৫০ মুসীন্ন বা মুসীন্না

 

১৩। ছাগলের ক্ষেত্রে যাকাতের হিসাবঃ

সংখ্যা জাকাতে পরিমান মন্তব্য
১-৩৯ যাকাত নাই ৪০০ এর অধিক ছাগল হলে প্রতি ১০০ টি জন্য একটি ছাগল। পাঁঠা, বৃদ্ধ, কানা, বাচ্চাকে দুধ দেয় এমন বকরী, গর্ভবতী এবং পালের মাঝে সবচেয়ে মুল্যবান ছাগল যাকাত দেয়া যাবে না। ছাগল যদি ভেড়া হয় তবে বয়স ৬ মাস আর যদি সাধারন ছাগল হয় তবে ১ বছর বয়স হবে 
৪০-১২০ একটি ছাগল
১২১-২০০  দুটি ছাগল
২০১-৩৯৯ তিনটি ছাগল

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment