মসজিদ আল-হারাম

মসজিদ আল-হারাম

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

মসজিদ আলহারাম ইসলামের ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থান যা বাইতুল্লাহ কে ঘিরে অবস্থিত।  এই মসজিদটি বাইতুল্লাহ কে কেন্দ্র করে অবস্থিত বিধায় পৃথিবীর সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ মসজিত। মসজিদটি ভিতরের ও বাইরের সালাতের স্থান মিলে বর্তমান কাঠামো প্রায় ৩,৫৬,৮০০ বর্গমিটার (৮৮.২ একর) জুড়ে অবস্থিত। মসজিদ সার্বক্ষণিক খোলা থাকে। হজ্জের সময় এখানে উপস্থিত হওয়া মানুষের জমায়েত পৃথিবীর বৃহত্তম মানব সমাবেশের অন্যতম।

মসজিদ আল-হারাম

কেন এই মসজিদকে মসজিদে হারাম বলা হয়?

এই মসজিদের নাম কোন মানুষ রাখেন নাই। স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা এই মসজিদের নাম রেখেছেন। কুরআনের বহু আয়াতে এই মসজিদকে মসজিদে হারাম বলে উল্লেখ করছেন। এ সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করছি। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

*فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّواْ وُجُوِهَكُمْ شَطْرَهُ *

অর্থঃ অতএব তুমি সম্মানিত মসজিদের দিকে তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও এবং তোমরা যেখানে আছ তোমাদের মুখ সেদিকেই প্রত্যাবর্তিত কর। (সূরা বাক্বারা ২:১৪৪)

মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,

*وَصَدٌّ عَن سَبِيلِ اللّهِ وَكُفْرٌ بِهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِ مِنْهُ أَكْبَرُ عِندَ اللّهِ *

অর্থঃ আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্দ্বকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা, আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। (সুরা বাকারা ২:২১৭)

মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,

وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّواْ وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ لِئَلاَّ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَيْكُمْ حُجَّةٌ

অর্থঃ আর তোমরা যেখান থেকেই বেরিয়ে আস এবং যেখানেই অবস্থান কর, সেদিকেই মুখ ফেরাও, যাতে করে মানুষের জন্য তোমাদের সাথে ঝগড়া করার অবকাশ না থাকে।

মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,

*وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِنَّهُ لَلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ *

অর্থঃ আর যে স্থান থেকে তুমি বের হও, নিজের মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও-নিঃসন ্দেহে এটাই হলো তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্ধারিত বাস্তব সত্য। ( সুরা বাকারা ২:১৪৯ )

মন্তব্যঃ ইহা ছাড়াও সরাসরি সুরা বাকারার-১৯৬, সুরা মায়েদা-২, আনফালের-৩৪, সুরা তওবার-৯ ও ১৯, সুরা বনী ইসরাইলের-১, সুরা হজ্জের-২৫ এবং সুরা ফাতহা-২৫ আয়াতে সরাসরি এই মসজিদকে মসজিদে হারাম বলে উল্লেখ করছেন।

একটি বিশ্লষনঃ

“মসজিদে হারাম” নামটিতে দুটি আরবি শব্দ আছে। একটি হলো, মসজিদ অপরটি হলো হারাম। মসজিদ শব্দটির উৎপত্তি আরবি (السجود) থেকে, যার আভিধানিক অর্থ শ্রদ্ধাভরে মাথা অবনত করা। অর্থৎ সিজদার করা। এই হিসাবে মসজিদ এর অর্থ হলে সিজদার স্থান। সাধারণভাবে, যে সব ইমারত বা স্থাপনায় মুসলমানেরা একত্র হয়ে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেন, তাকে মসজিদ বলে।

অপর পক্ষে হারাম শব্দের দুটি অর্থ আছে। ‘হারাম’ শব্দের একটি অর্থ হলো ‘নিষিদ্ধ’। আর একটি অর্থ হলো ‘সম্মানিত’। মসজিদে হারাম বলেত এখানে সম্মানিত মসজিদ বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে হারাম শব্দের অর্থ পবিত্র বা সম্মানিত অর্থে ব্যবহার করেছেন।

মহান আল্লাহ বলেন,

 *الشَّهْرُ الْحَرَامُ بِالشَّهْرِ الْحَرَامِ وَالْحُرُمَاتُ قِصَاصٌ فَمَنِ اعْتَدَى عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُواْ عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَى عَلَيْكُمْ*

অর্থঃ সম্মানিত মাসই সম্মানিত মাসের বদলা। আর সম্মান রক্ষা করারও বদলা রয়েছে। বস্তুতঃ যারা তোমাদের উপর জবর দস্তি করেছে, তোমরা তাদের উপর জবরদস্তি কর, যেমন জবরদস্তি তারা করেছে তোমাদের উপর। (সুরা বাকারা ২:১৯৪)

মন্তব্যঃ এখান মহান আল্লাহ হারাম মাস বলতে সম্মাতি মাস বুঝিয়েছন।

‘হারাম’ শব্দের অপর একটি অর্থ হলো ‘নিষিদ্ধ’। আমাদের সমাজে এবং আরবি ভাষায় হারাম শব্দটি নিষিদ্ধ অর্থেই বেশী ব্যবহৃত হয়। পবিত্র কুরআনেও হারাম শব্দটি ‘নিষিদ্ধ’ অর্থে এসেছে। পবিত্র কুরআনে আয়াত বিদ্যমান। মহান আল্লাহ বলেন,

*يَسْأَلُونَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيهِ قُلْ قِتَالٌ فِيهِ كَبِيرٌ*

অর্থঃ তারা তোমাকে নিষিদ্ধ (হারাম) মাস সম্পর্কে  জিজ্ঞেস করে। তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। (সুরা বাকারা ২:২১৭)

এই হিসাবে আবার কেউ কেউ করেন মসজিদটি মক্কার হারাম এলাকায় অবস্থিত বিধায় এর নাম মসজিদে হারাম। মক্কার বাইতুল্লাহর আশপাশের এলাকাকে মহান আল্লাহ হারাম এলাকা ঘোষনা করেছেন। অর্থাৎ এই এলাকার বিশেষ কিছু কাজ করা হারাম কিন্তু পৃথিবীর অন্য এলাকায় তা হালাল। মুলত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের দোয়ার বরকতে মক্কার এই বিশেষ এলাকাকে হারাম করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,

(আর স্মরণ কর) যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! এই শহরকে (মক্কাকে) নিরাপদ করুন এবং আমাকে ও আমার পুত্রগণকে প্রতিমা পূজা হতে দূরে রাখুন। হে আমার প্রতিপালক! এসব প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে আপনিতো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে নিয়ে বসবাস করালাম এই অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র গৃহের নিকট। হে আমাদের প্রতিপালক! এই জন্যে যে, তরা যেন সালাত কায়েম করে। সুতরাং আপনি কিছু লোকের অন্তর ওদের প্রতি অনুরাগী করে দিন এবং ফলাদি দ্বারা তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।” [সূরা ইবরাহীম ১২:৩৫-৩৭]

মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,

*وَلاَ تُقَاتِلُوهُمْ عِندَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتَّى يُقَاتِلُوكُمْ فِيهِ فَإِن قَاتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ كَذَلِكَ جَزَاء الْكَافِرِينَ*

অর্থঃ আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি। (সুরা বাকারা ২:১৯১)]

মহান আল্লাহ ঘোষিত, এই হারাম এলাকাতে বিশেষ কিছু বিধান প্রযোজ্য। মহান আল্লাহ্‌ এই মসজিদকে সম্মানিত করেছেন, পাশাপাশি এর সীমানায় বিশেষ কিছু কাজ হারাম ঘোষিত। নিম্ম লিখিত কাজ মক্কার হারাম এলাকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

১. হারাম এলাকায় রক্তপাত, মারামারি, যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ

১২. শিকারযোগ্য যে কোনো হালাল জানোয়ার হত্যা করা হারাম

৩. শিকারযোগ্য প্রাণী হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ কিংবা ইসারা করে দেখিয়ে দেয়ার দ্বারা সাহায্য করাও হারাম।

৪. গাছপালা, এমনকি ঘাসও কাটা যাবে না

৫. পড়ে যাওয়া জিনিস নেয়া যাবে না (শুধু এই উদ্দেশ্যে জায়েজঃ আসল মালিককে ফিরিয়ে দেয়া)

দলিলঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মক্কা বিজয় দান করলেন, তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মাঝে দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা (প্রশংসা) বর্ণনা করলেন। এরপর বললেন, আল্লাহ তা‘আলা মক্কা্য় (আবরাহার) হস্তি বাহিনীকে প্রবেশ করতে দেননি এবং তিনি তাঁর রাসূল ও মু’মিন বান্দাদেরকে মক্কার উপর আধিপত্য দান করেছেন। আমার আগে অন্য কারোর জন্য মক্কায় যুদ্ধ করা বৈধ ছিল না, তবে আমার পক্ষে দিনের সামান্য সময়ের জন্য বৈধ করা হয়েছিল, আর তা আমার পরেও কারোর জন্য বৈধ হবে না। কাজেই এখানকার শিকার তাড়ানো যাবে না, এখানকার গাছ কাটা ও উপড়ানো যাবে না, ঘোষণাকারী ব্যক্তি ব্যতীত এখানকার পড়ে থাকা জিনিস তুলে নেয়া যাবে না। যার কোন লোক এখানে নিহত হয় তবে দু’টির মধ্যে তার কাছে যা ভাল বলে বিবেচিত হয়, তা গ্রহণ করবে। ফিদ্ইয়া গ্রহণ অথবা কিসাস। ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইযখিরের অনুমতি দিন। কেননা, আমরা এগুলো আমাদের কবরের উপর এবং ঘরের কাজে ব্যবহার করে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইযখির ব্যতীত (অর্থাৎ তা কাটা ও ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হল)। তখন ইয়ামানবাসী আবূ শাহ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে লিখে দিন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আবূ শাহকে লিখে দাও। (ওয়ালিদ ইবনু মুসলিম বলেন) আমি আওযায়ীকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে লিখে দিন তাঁর এ উক্তির অর্থ কী? তিনি বলেন, এ ভাষণ যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছ হতে তিনি শুনেছেন, তা লিখে দিন। (সহিহ বুখারি ২৪৩৪)

হারাম এলাকা সীমানা কতটুকুঃ

ইমাম নববির মতে, এই হারাম এলাকার সিমান হলো, মদিনার দিকে মক্কার হারাম এলাকার সীমানা হচ্ছে মক্কা থেকে ৩ মাইল দূরে তানয়ীমের আগে বনি নিফার গোত্রের বাড়ি ঘরের কাছাকাছি। ইয়েমেনের দিকের সীমানা হচ্ছে- মক্কা থেকে ৭ মাইল দূরে আদাত লাবানের প্রান্তভাগ। তায়েফের দিকের সীমানা হচ্ছে, মক্কা থেকে ৭ মাইল দূরে আরাফা ময়দানের নামিরার নীচুভূমি। ইরাকের দিকের সীমানা হচ্ছে, মক্কা থেকে ৭ মাইল দূরে আল-মুকাত্তা নামক স্থানের পাহাড়ি পথ পর্যন্ত। আল জিয়িরানার দিকের সীমানা হচ্ছে, মক্কা থেকে ৯ মাইল দূরে আব্দুল্লাহ বিন খালেদ বংশের গিরিপথ। জেদ্দার দিকের সীমানা হচ্ছে, মক্কা থেকে ১০ মাইল দূরে ‘মুনকাতিউল আ’শাশ’ নামক স্থান পর্যন্ত। (আল-মাজমু (৭/৪৬৩) থেকে সমাপ্ত)

মসজিদ আল-হারাম এর ফজিলতঃ

১. জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মাসজিদুল হারাম ব্যতীত অপরাপর মসজিদের সালাত অপেক্ষা আমার মসজিদের সালাত হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ (ফাযীলাতপূর্ণ)। অন্যান্য মসজিদের সালাতের তুলনায় মাসজিদুল হারামের সালাত এক লক্ষ গুণ উত্তম (ফাযীলাতপূর্ণ)।(ইবনে মাজাহ ১৪০৬, আলবানী সহিহ বলেছেন)।

২. আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আমার মসজিদে সালাত আদায় করা আন্য মসজিদের এক হাজার সালাত হতে উত্তম, মাসজিদুল হারাম ব্যতীত। আবু আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ মুসা জুহানী (রহঃ) ব্যতীত অন্য কেউ নাফি’ (রহঃ) সূত্রে আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে এই হাদিস রিওয়ায়ত করেছেন বলে আমার জানা নেই। ইবন জুরায়জ (রহঃ) ও অন্যান্য বর্ণনাকারীরা এ রিওয়ায়ত ভিন্ন সনদে বর্ণনা করেছেন। (সুনানে নাসাঈ ২৮৯৭)

৩. সা’দ ইবন ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ সালামা(রাঃ) বলেছেনঃ আমি এই হাদিস সম্পর্কে আমর (রাঃ) -কে জিজ্ঞাস করেছি, তিনি বলেছেন যে, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার এ মসজিদে সালাত আদায় করা কাবা শরীফের মসজিদ ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশী মর্যাদা রাখে। (সুনানে নাসাঈ ২৮৯৯)

৪. আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন স্থানের প্রতি সফর করা হবে না; আমার এই মসজিদ (নববী), মসজিদে হারাম এবং মসজিদে আকসা।” (বুখারী ১১৮৯, মুসলিম ৩৪৫০)

৫. সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বর্ণনাকারী ‘আবদুর রহমান বলেন, সালমান (রাঃ) কে বলা হলো, তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে সবকিছুই শিক্ষা দিয়েছেন, এমন কি পায়খানা করার নিয়মও। সালমান (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেছেন ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করতে, ডান হাতে শৌচ করতে, শৌচকার্যে আমাদের কারো তিনটি ঢিলার কম ব্যবহার করতে এবং গোবর অথবা হাড় দ্বারা শৌচ করতে। (সুনানে আবু দাউদ ০৭) 

৬. আবূ আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা পায়খানায় গিয়ে ক্বিবলাহমুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব করবে না, বরং পূর্ব অথবা পশ্চিমমুখী হয়ে বসবে। আবূ আইউব (রাঃ) বলেন, আমরা সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পেলাম, সেখানকার শৌচাগারগুলো ক্বিবলাহমুখী করে বানানো। সেজন্য উক্ত স্থানে আমরা একটু বেঁকে বসতাম এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতাম।(সুনানে আবু দাউদ ০৯) 

মসজিদুল আকসাই প্রথম নির্মত মসজিদ। কথাটি কতটুকু সত্য?

কথাটি মোটেই সত্যা নয়। কুনআন ও সহিহ হাদিস মতে কাবাই প্রথম ইবাদতের নিমিত্তে নির্মিত ঘর। তবে একথা বলা যায় মসজিদুল আকসাই প্রথম কিবলা। তবে মানব জাতীর ইবাদাতে জন্য নির্মিত প্রথম ঘর বাইতুল্লাহ। মহান আল্লাহ বলেন,

*إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَ*

অর্থঃ নিঃসন্দেহে সর্ব প্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে স্থাপন করা হয়েছে, যা মক্কায় অবস্থিত। যা বিশ্বাবাসির জন্য বরকতময় হেদায়েত। ( সুরা ইমরান ৩:৯৬)

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মাসজিদ তৈরী করা হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা। আমি বললাম, উভয় মসজিদের (তৈরীর) মাঝে কত ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। অতঃপর তোমার যেখানেই সালাতের সময় হবে, সেখানেই সালাত আদায় করে নিবে। কেননা এর মধ্যে ফযীলত নিহিত রয়েছে। (সহিহ বুখারী ৩৩৬৬)

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সর্বপ্রথম কোন্ মাসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা। আমি বললাম, এ দু’য়ের নির্মাণের মাঝখানে কত তফাৎ? তিনি বললেন, চল্লিশ বছরের। (অতঃপর তিনি বললেন,) যেখানেই তোমার সালাতের সময় হবে, সেখানেই তুমি সালাত আদায় করে নিবে। কারণ, পৃথিবীটাই তোমার জন্য মাসজিদ। (সহিহ বুখারী ৩৪২৫)

বাইতুল্লাহ নির্মাণের চল্লিশ বছর মসজিদুল আকসা নির্মত হয়। এই কথার দলিল একটি সহিহ হাদিস। ইবরাহীম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাস্তায় বসে আমার পিতার নিকট কুরআন পাঠ করতাম, যখন আমি সিজদার আয়াত পাঠ করলাম তিনি সিজদা করলেন, তখন আমি বললাম আব্বা! আপনি রাস্তায় সিজদা করছেন! তিনি বললেন, আমি আবূ যর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কোন মসজিদটি প্রথম নির্মিত হয়? তিনি বলেছিলেন, মসজিদুল হারাম। আমি বললাম, তারপর কোনটি ? তিনি বললেন, মসজিদুল আকসা। আমি বললাম, এতদুভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। আর যমীন তোমার জন্য মসজিদ (সিজদার স্থান)। অতএব, যেখানেই সালাতের স্থান হবে, সেখানেই সালাত আদায় করবে। (সুনানে নাসাঈ ৬৯০, হাদিসের মান সহহি)

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “মসজিদ আল-হারাম

Leave a comment