ইতিকাফের বিধান

ইতিকাফ (الاِعْتِكَافِ):

ইতিকাফ আরবি শব্দ (عكف) ‘আকফ’ মূলধাতু থেকে নির্গত। এর অর্থ হচ্ছে অবস্থান করা। মুল শব্দ হিসাবে (عكف) কুরআনে মোট ৯ বার ব্যবহৃত হয়েছে। তবে ইতিকাফ (الاِعْتِكَافِ)  অর্থে (ٱلۡعَٰكِفِينَ)  দুই বার ব্যবহৃত হয়েছে। বাকি কয়েক স্থানে পুজারত, লেগেথাকা, আবদ্ধ, নিষ্ঠাবান ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।কাজেই ইতিকাফের (الاِعْتِكَافِ) এর শাব্দিক অর্থ হলো, কোন বিষয়ের আবশ্যকতা এবং নিজকে তার ওপর আটকে রাখা, তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, সাধারণ অবস্থান তা যে কোন স্থানেই হোক।

পারিভাষিক অর্থে ইতিকাফঃ পারিভাষিক অর্থেৎ ইতিকাফ হলো, নির্দিষ্ট কোন বিষয়কে আবশ্যকীয় করে মাসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ (الاِعْتِكَافِ) বলে।  অর্থাৎ যে সকল মসজিদে জামায়াতের সঙ্গে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়, এমন মসজিদে আল্লাহ তাআলার ইবাদতের নিয়তে বা তার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করে ইবাদাতের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করাকে ইতিকাফ (الاِعْتِكَافِ) বলে।

‘আল্লামা কুসতুলানী (রহঃ) বলেন, শাব্দিক অর্থেই ইতিকাফ হলো, অবস্থান করা, আটক রাখা, ভালো কিংবা মন্দ কোন বিষয়কে আবশ্যক করা।  

মসজদে এই ইতিকাফ বা অবস্থানের উদ্দেশ্য হবে মহান আল্লাহর আনুগত্য লাভ করা। এই ইতকাফের মাধ্যমে মহান আল্লাহ প্রদত্ত লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা এবং মহান আল্লাহ প্রদত্ত অসীম সওয়াব অর্জন করা। প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ দশকের মধ্যেই লাইলাতুল কদর বা মহিমান্নীত রজনী থাকে, বিধায় আমদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিতভাবে মসজিদে ইতিকাফ করতেন। আমাদের অনুকরণীয় সাহাবায়ে কিরামও ইতিকাফ করতেন। তাদের দেখান পথে উম্মতে মুহম্মাদও আল্লাহর আনুগত্য লাভের আশায় প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের খোজে ইতিকাফ করে থাকে।

২। ইসলামি শরিয়াতে ই‘তিকাফের বিধানঃ

 আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

*وَعَهِدۡنَآ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ*

অর্থঃ আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব ‎দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার গৃহকে ‎তাওয়াফকারী, ‘ইতিকাফকারী ও রুকূকারী-‎সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর। ( সূরা বাকারা ২:১২৫)‎

ইতিকাফ পূর্বের উম্মতের মাঝে বিদ্যমান ছিল। এই আয়াতে মহান আল্লাহ পূর্বের উম্মতের তিনটি আমল উল্লেখ করেছেন। যার মাঝে তিনি ইতকাফকারীদের কথাও উল্লেখ করেছেন। সহজেই অনুমেয় যে, পূর্বের যুগ থেকে আল্লাহ বান্দাগন ইতিকাফের মাধ্যমে ইবাদাত করতেন। এই আয়াত দ্বারা আমাদের কোন হুকুম সাব্যস্ত হয়না। কিন্তু এটা ষ্পষ্ট যে, এটি মহান আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাখের একটি ইবাদতের পদ্ধতি। আমাদের ইসলামি শরীয়তের সুচনাকারী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত প্রতি বছর ইতকাফ করেছেন। আমাদেরও আদায় করতে উৎসাহ প্রদান করছেন। আল্লাহ তা‘আলার বলেন,

*وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ *

 অর্থঃ আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় ‎‎স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। (সূরা বাকারা ২:১৮৭)।

আল্লামা ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন, বিদ্বানগণ এ মর্মে একমত হয়েছেন যে, ইতিকাফ সুন্নাত, তা মানুষের ওপর ওয়াজিব নয়। তবে যদি কোন ব্যক্তি তার নিজের ওপর মানতের মাধ্যমে ইতিকাফ ওয়াজিব করে নেয়, তবে তা পালন করা ওয়াজিব। তাই এই ইতিকাফের আমল সুন্নাহ সম্মত নেকির কাজ।  যেমনঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশক ইতেকাফ করতেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৮৯৮ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমযানে দশ দিনের ইতিকাফ করতেন। যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর তিনি বিশ দিনের ইতিকাফ করেছিলেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯১৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত ইতিকাফ করছেন। সাহাবায়ে কিরামও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুকরনে ইতিকাফ করতেন। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীগণ ও ইতিকাফ করছেন। তাই এটি একটি সুন্নত সম্মত আমল। মুহাদ্দিসগন ইতিকাফকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলেছেন।

ইমাম যুহরি রহ. বলেছেন, মুসলিমদের দেখে আশ্চর্য লাগে, তারা ইতিকাফ ত্যাগ করেছে, অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে আসার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ইতিকাফ ত্যাগ করেন নি। (শারহুল ইব্‌ন বাত্তাল আলাল বুখারি: (৪/১৮১)

শরীয়ত সম্মত মানতের ইতকাফ আদায় করা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোন প্রকারের মানত করতে নিষেধ করেছেন। যেমনঃ হাদিস শরীফে এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। এই মর্মে তিনি বলেন, মানত কোন জিনিসকে দূর করতে পারে না। এ দ্বারা শুধুমাত্র কৃপণের মাল খরচ হয়। (সহিহ বুখারি হাদিস ৬১৫৫, ৬২৩৬ ইঃ ফাঃ; সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৫))।

অধিকাংশ ইমাম ও ফেকাহবিদ মান্নত করাকে মাকরূহ বলেছেন। এটি কোনো সওয়াবের কাজ নয়। তবে মানত আদায় করা সওয়াবের কাজ। তাই শরীয়ত সম্মতভাবে ইতিকাফ মানত করলে তা অবশ্যই পুরা করতে হবে। এই মানতের ইতিকাফ আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেনঃ

يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا

অর্থঃ এরা হবে সেসব লোক যারা (দুনিয়াতে) মানত পূরণ করে সে দিনকে ভয় করে যার বিপদ সবখানে ছড়িয়ে থাকবে৷  (সুরা দাহর/ইনসান ৭৬:৭)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেনঃ

ثُمَّ لْيَقْضُوا تَفَثَهُمْ وَلْيُوفُوا نُذُورَهُمْ وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ

অর্থঃ এরপর তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে। [ সুরা হাজ্জ্ব ২২:২৯ ]

ইতিকাফ সংক্রান্ত ভুল ধারণাঃ

আমাদের দেশে মনে করা হয় যে সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। আমি এক রমজানের জুমার খুতরায় এক ইমামকে বলতে শুনছি, ইতিকাফ হলো “সুন্নাতে কিফায়া” অর্থাৎ একজন ইতিকাফ করলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবদাত। যে কোন মুসলমান তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সোওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা শরীয়তে নেই। আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন এবং সকল বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন। আমীন

৩। ইতিকাফের স্থানঃ

ইতিকাফের স্থান হল মসজিদ। মসজিদ ছাড়া আর কোথাও ইতিকাফ হবেনা।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করার সময় তাঁর জন্য মাসজিদে বিছানা পাতা হত। সেখানে তাঁর জন্য ‘তাওবার’ খুঁটির পেছনে খাট লাগানো হত। (হাদিসের মান হাসান মিশকাত-২১০৭, ইবনু মাজাহ ১৭৭৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২২৩৬, তারাজু‘আতুল আলবানী ৩২)।

আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, মহিলগন তাদের ঘরে ইতিকাফ করতে পাবরে। হানাফি মাযহাবের অনুসারী অনেক আলেম এমনটি মতামত দিয়ে থাকেন। কিন্তু হাদিসের আলোকে দেখা যায় নবী এর স্ত্রীগণ মসজিদের সাথে তাবি টানিয়ে ইতিকাফ করতেন। তাদের হুজরা মাত্র ৫০/১০০ গজ দুরে থাকা সত্বেও তারা হুজরায় বসে ইতিকাফ করেন নাই। যেমন হাদিসে এসেছে।

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার অভিপ্রায় প্রকাশ করলে ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁর কাছে ইতিকাফ করার অনুমতি প্রার্থনা করায় তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। এরপর হাফসা (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) এর নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। তা দেখে যায়নাব বিনত জাহশ (রাঃ) নিজের জন্য তাঁবু লাগানোর নির্দেশ দিলে তা পালন করা হল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে নিজের তাঁবুতে ফিরে এসে কয়েকটি তাবু দেখতে পেলেন, (হুজরা থাকা সত্বেও তাবু টানালেন)। তখন তিনি বললেনঃ এ কি ব্যাপার? লোকেরা বলল, ‘আয়িশা, হাফসা ও যায়নাব (রাঃ) এর তাঁবু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারা কি নেকী পেতে চায়? আমি আর ইতিকাফ করব না। এরপর তিনি ফিরে আসলেন। পরে সিয়াম করে শাওয়াল মাসের দশ দিন ইতিকাফ করেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯১৭ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

মন্তব্যঃ মহিলাদেরও মসজিদে ইতকাফ করতে হবে। এই অধিকাংশ আলেমদের মত হলো মহিলাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ আছে শুধু এমন মসজিদেই ইতিকাফ করা উচিত।

৪। ইতিকাফ আদায়ের সঠিক সময়ঃ

সাধারণ রমজান মাসের শেষ দশকে ইতকাফ করা হয়। কিন্তু রমজান মাসের পর কাজা হিসাবে শাওল মাসে ইতিকাফ করা বিষয়টি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। এমনকি রমাজান মাস ছাড়া ও ইতকাফ করা যায়।

ক। রমজান মাসের শেষ দশকে ইতকাফঃ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সবসময়ই মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করেছেন, তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করেছেন। (হাদিসের মান সহিহ, মিশকাত-২০৯৭, বুখারী ২০২৬, মুসলিম ১১৭২, আবূ দাঊদ ২৪৬২, তিরমিযী ৭৯০, আহমাদ ২৪৬১৩, দারাকুত্বনী ২৩৬৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫৭১, ইরওয়া ৯৬৬)।

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করতেন। এক বছর এরূপ ইতিকাফ করেন, যখন একুশের রাত এল, যে রাতের সকালে তিনি তাঁর ইতিকাফ হতে বের হবেন, তিনি বললেনঃ যারা আমার সঙ্গে ইতিকাফ করেছে তারা যেন শেষ দশক ইতিকাফ করে। আমাকে স্বপ্নে এই রাত (লাইলাতুল কদর) দেখানো হয়েছিল। পরে আমাকে তা (সঠিক তারিখ) ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য আমি স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি যে, ঐ রাতের সকালে আমি কাদা-পানির মাঝে সিজদা করছি। তোমরা তা শেষ দশকে তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর। পরে এই রাতে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হল, মসজিদের ছাদ ছিল খেজুর পাতার ছাউনির। ফলে মসজিদে টপটপ করে বৃষ্টি পড়তে লাগল। একুশের রাতের সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কপালে কাদা-পানির চিহ্ন আমার দু’চোখ দেখতে পায়। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০০ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

খ। শাওল মাসে ইতিকাফঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমযানের শেষ দশকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করতেন। আমি তাবু তৈরী করে দিতাম। তিনি ফজরের সালাত আদায় করে তাতে প্রবেশ করতেন। (নবী সহধর্মিণী) হাফসা (রাঃ) তাঁবু খাটাবার জন্য ‘আয়িশা (রাঃ) এর কাছে অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলে হাফসা (রাঃ) তাবুঁ খাটালেন। (নবী সহধর্মীণী) যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ) তা দেখে আরেকটি তাবু তৈরি করলেন। সকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুঁগুলো দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এগুলো কি? তাকে জানানো হলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি মনে কর এগুলো দিয়ে নেকি হাসিল হবে? এ মাসে তিনি ইতকিাফ ত্যাগ করলেন এবং পরে শাওয়াল মাসে ১০ দিন (কাযা স্বরুপ) ইতিকাফ করেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমযানে ইতিকাফ করতেন। ফজরের সালাত শেষে ইতিকাফের নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করতেন। ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁর কাছে ইতিকাফ করার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) মসজিদে (নিজের জন্য) একটি তাবু করে নিলেন। হাফসা (রাঃ) তা শুনে (নিজের জন্য) একটি তাবু তৈরি করে নিলেন এবং যায়নাব (রাঃ)-ও তা শুনে (নিজের জন্য)আর একটি তাঁবু তৈরি করে নিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) শেষে এসে চারটি তাবু দেখতে পেয়ে বললেনঃ একি? তাঁকে তাঁদের ব্যাপারে জানানো হলে, তিনি বললেনঃ নেক আমলের প্রেরণা তাদেরকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেনি। সব খুলে ফেলা হল। তিনি সেই রমযানে আর ইতিকাফ করলেন না। পরে শাওয়াল মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করেন।(সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯১৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

গ। রমজান ছাড়াও ইতিকাফ করা যায়ঃ

ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত যে, ‘উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমি জাহিলিয়্যা যুগে মসজিদুল হারামে এক রাত ইতিকাফ করার মানত করেছিলাম। তিনি (উত্তরে) বললেনঃ তোমার মানত পুরা কর। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০৪ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

আয়িশা (রাঃ) খেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করার ইচ্ছা করলেন। এরপর যে স্থানে ইতিকাফ করার ইচ্ছা করেছিলেন সেখানে এসে কয়েকটি তাঁবু দেখতে পেলেন। (তাঁবুগুলো হল নাবী-সহধর্মিণী) ‘আয়িশা (রাঃ), হাফসা (রাঃ) ও যায়নাব (রাঃ) এর তাঁবু। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কি এগুলো দিয়ে নেকী হাসিলের ধারণা কর? এরপর তিনি চলে গেলেন আর ইতিকাফ করলেন না। পরে শাওয়াল মাসে দশ দিনের ইতিকাফ করলেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

৫। ইতিকাফ আদায়ের সময়সীমঃ

ইতিকাফের সময় সীমা সম্বলিত সরাসরি কুরআন হাদিসের কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। শুদ্ধ ও সঠিক মতানুযায়ী ইতকাফের সবচেয়ে কম সময় হল একদিন বা একরাত। সর্বোচ্চ কতদিনের জন্য ইতিকাফ করা যায় এ ব্যাপারে ওলামাদের মতামত হল, এ ব্যাপারে নির্ধারিত কোন সীমা রেখা নেই।  নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ দিন, দশ দিন করে রমজানে মোটি ত্রিশ দিন ইতিকাফ করছেন। আমাদের সমাজে কিছু মুসলিম কে দেখা যায় নামাজ, তালিম বা অন্য কোন কারনে মসজিদে গমন করলে ইতিকাফের নিয়ত করে নেয়। তাদের এই আমলেন কোন দলীল নেই। কেননা সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু আনহুম নামায অথবা উপদেশ শ্রবণ করার অপেক্ষায় বা জ্ঞান অর্জন ইত্যাদির জন্য মসজিদে বসতেন, তবে তারা এ সবের জন্য ইতিকাফের নিয়্যত করেছেন বলে শোনা যায়নি।

আমার রমজান মাসের শেষ দশকে যে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ করি তার সীমা মূলত নয় দিন অথবা দশ দিন (চাঁদের উপর নির্ভরশীল)। অর্থাৎ একুশ রমজান থেকে শাওল মাসের চাঁদ দেখা পর্যান্ত। রমজান মাসের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ ছাড়া বাকি ইতিকাফের কোন সীমা নির্দারিত নাই। দশ দিনের কম যেকোনো পরিমাণ সময় ইতিকাফ করলে তা নফল ইতিকাফ হিসেবে গণ্য হবে। নফল ইতিকাফও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। তাই সম্পূর্ণ সুন্নত ইতিকাফ পালন করতে না পারলে যত দূর সম্ভব নফল ইতিকাফ করাও গুরুত্বপূর্ণ। সহিহ হাদিসে উমর বাদিয়াল্লাহু আনহুকে এক রাতের জন্য ইতিকাফ করার প্রমান পাওয়া যায়। সাধারনত ইতিকাফ করার জন্য রোজা শর্ত। কিন্তু স্বল্প সময় (এক দিনের কম সময়) ইতিকাফ করলে তার জন্য রোজা রাখা শর্ত নয়।  

ক। এক রাত ইতিকাফ করা যায়ঃ

ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত যে, ‘উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমি জাহিলিয়্যা যুগে মসজিদুল হারামে এক রাত ইতিকাফ করার মানত করেছিলাম। তিনি (উত্তরে) বললেনঃ তোমার মানত পুরা কর। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০৪ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মিশকাত-২১০১, মুসলিম ১৬৫৬, আহমাদ ২৫৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৩৮০)।

খ। দশ দিন ইতিকাফ করা যায়ঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার অভিপ্রায় প্রকাশ করলে ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁর কাছে ইতিকাফ করার অনুমতি প্রার্থনা করায় তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। এরপর হাফসা (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) এর নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। তা দেখে যায়নাব বিনত জাহশ (রাঃ) নিজের জন্য তাঁবু লাগানোর নির্দেশ দিলে তা পালন করা হল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে নিজের তাঁবুতে ফিরে এসে কয়েকটি তাবু দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেনঃ এ কি ব্যাপার? লোকেরা বলল, ‘আয়িশা, হাফসা ও যায়নাব (রাঃ) এর তাঁবু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারা কি নেকী পেতে চায়? আমি আর ইতিকাফ করব না। এরপর তিনি ফিরে আসলেন। পরে সিয়াম করে শাওয়াল মাসের দশ দিন ইতিকাফ করেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯১৭ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

গ। বিশ দিন ইতিকাফ করা যায়ঃ

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। কিন্তু এক বছর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা করতে পারলেন না। এর পরের বছর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিশ দিন ‘ইতিকাফ’ করলেন। [হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-২১০২, সহীহ তিরমিযী ৮০৩, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২২২৭, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৬০১।

ঘ। এক মাস বা ত্রিশ দিন ইতিকাফ করা যায়ঃ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের প্রথম দশকে ইতিকাফ করলেন। এরপর তিনি মাঝের দশকেও একটি তাঁবুর মধ্যে ইতিকাফ করলেন এবং তাবুর দরজায় একটি চাটাই ঝূলান ছিল। রাবী বলেন, তিনি নিজ হাতে চাটাই ধরে তা তাঁবুর কোণে রাখলেন এরপর নিজের মাথা বাইরে এনে লোকদের সাথে কথা বললেন এবং তারাও তাঁর নিকট এগিয়ে এল। তিনি বললেন, এই রাতের অনুসন্ধানকল্পে আমি (রমযানের) প্রথম দশকে ইতিকাফ করলাম। অতঃপর মাঝের দশকে ইতিকাফ করলাম। এরপর আমার নিকট একজন আগন্তুক (ফিরিশতা) এসে আমাকে বলল, লায়লাতুল কদর শেষ দশকে নিহিত আছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন ইতিকাফ করে।

লোকেরা তাঁর সঙ্গে (শেষ দশকে) ইতিকাফ করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, স্বপ্নে আমাকে তা কোন এক বেজোড় রাতে দেখনো হয়েছে এবং আমি যেন সেই রাতে কাদা ও পানির মধ্যে ফজরের সিজদা করছি। (রাবী বলেন) তিনি ২১তম রাতের ভোরে উপনীত হয়ে ফজরের সালাতে দাঁড়ালেন এবং আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হল। ফলে ছাদ থেকে মসজিদে পানি বর্ষিত হল এবং আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। তিনি ফজরের সালাত শেষে যখন বের হয়ে এলেন তখন তাঁর কপাল ও নাকের ডগা সিক্ত ও কর্দমাক্ত ছিল। আর তা ছিল রমযানের শেষ দশকের প্রথম (বা ২১তম) রাত। (সহিহ মুসলীম হাদিস নম্বর ২৬৪২ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

ইতিকাফের উপকারিতাঃ

ই‘তিকাফ একটি মহান ইবাদত, মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছরই ইতিকাফ পালন করেছেন। দাওয়াত, তরবিয়ত, শিক্ষা ও জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতিকাফ ছাড়েননি। এমনকি তার স্ত্রীগণ ও প্রতি তার সাথে ইতকাফ করছেন।

১। সুন্নাহর বাস্তবায়নঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত হিসাবে তার সুন্নত কে জীবিত রেখে অফুরান্ত নেকী অর্জন করা। মুজতাহীদ আলেদের মতে নিয়মিত সালাত হয়, এমন সমজিদে রমজানের শেষ দশকে কেউ ইতিকাফ না করলে সকল এলাকাবাসি গুনাহগান হবে।

২। শবে কদর পাওয়া সুযোগ সৃষ্টি হয়ঃ

ইতিকাফের মাধ্যমে শবে কদর খোঁজ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মূল উদ্দেশ্য ছিল।

আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমযানের) মাঝের দশকে ইতিকাফ করেন। অতঃপর ২০তম দিন অতিবাহিত হওয়ার পর এবং ২১তম দিনের সূচনাতে তিনি নিজ বাসস্থানে ফিরে আসেন এবং তাঁর সঙ্গে যারা ইতিকাফ করেন, তারাও নিজ নিজ আবাসে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর একবার রমযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করলেন। যে রাতে তাঁর ইতিকাফ হতে ফিরে আসার কথা, সে রাতে (পূনরায়) ইতিকাফ আরম্ভ করলেন ও লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বললেন, আমি সাধারণত এই (মধ্যম) দশকে ইতিকাফ করতাম। এরপর শেষ দশকেও ইতিকাফ করা আমার কাছে সমীচীন মনে হল। অতএব যে ব্যাক্তি আমার সাথে ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন নিজ ইতিকাফের স্থানে অবস্থান করে। আমি এই (কদরের) রাত স্বপ্নে দেখেছিলাম কিন্তু আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোত তা অনুসন্ধান কর। আমি স্বপ্নে নিজেকে পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করতে দেখেছি। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ২১তম রাতে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়। তিনি যখন ফজরের সালাত থেকে ফিরলেন, তখন আমি তাঁর মুখমন্ডল কাদা ও পানিতে সিক্ত দেখলাম। (সহিহ মুসলীম হাদিস নম্বর ২৬৪০ ইসঃ ফাঃ)।

মন্তব্যঃ কদরের রাত্রির পেতে শেষ দশকের ইতিকাফ করার কোন বিকল্প নেই। কারন ইতিকাফ করে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ রাখলে কদরের রাত্রি মিস না করার সম্ভাবনা শুন্য পার্সেন্ট। শবে কদর পেলে এর থেকে উত্তম আর কোন রাত্র আছে বলে কোন প্রমান নেই। এটাই ইতকাফের সবচেয়ে বড় ফজিলত।

৩। ফিরিস্তাদের দোয়ার প্রাপ্তিঃ

ইতিকাফকারীকে যেহেতু সারাক্ষন মসজিদে থাকতে হয়। সালাতের জন্য মসজিদে অপেক্ষারত ব্যক্তি ন্যায় ফেরেশতারা দোয়া পেতে থাকে। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মাঝে কোন ব্যক্তি যখন ওযূ অবস্থায় সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে সে যেন সালাতেই রত। তার জন্য ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো, হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি দয়া করো। (সহিহ মুসলীম ৬১৯)।

৪। মসজিদে অবস্থানের সওয়ার প্রাপ্তিঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন নামায শেষ করে তখন ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার নামাযের জায়গায় বসে থাকে: হে আল্লাহ্‌! তাকে ক্ষমা করে দিন। তার প্রতি দয়া করুন। তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত নামাযের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ সে নামাযেই থাকে।”[সহিহ বুখারী (৬৪৮) ও সহিহ মুসলিম (৬৪৯); এখানে হাদিসের ভাষ্যটি সহিহ বুখারীর]

বাইহাকী তাঁর ‘শুআবুল ঈমান’ (২৯৪৩) নামক গ্রন্থে আমর বিন মায়মূন আল-আওদি থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ আমাদেরকে জানিয়েছেন যে: মসজিদগুলো হচ্ছে জমিনে আল্লাহ্‌র ঘর। যে ব্যক্তি এ ঘরে আল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাত করতে আসবে আল্লাহ্‌র কাছে তার প্রাপ্তি হচ্ছে তাকে সম্মানিত করা।”[আলবানী সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহিহা গ্রন্থে (১১৬৯) হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]

মন্তব্যঃ মসজিদে অবস্থানের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত সকল প্রকার সওয়ার বা নেকী ইতিকাফকারীকে প্রদান করা হবে।  

৫। পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের যোগ্যতা অর্জন করাঃ

মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি, (৫১:৫৬)। সালাত, সিয়াম, হজ্জ, জাকাত ইত্যাদিই শুধু ইবাদাত নয়, বান্দার প্রতিটি কাজই ইবাদত, যদি তার কাজটি মহান আল্লাহ হুকুম ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখান পদ্ধতিতে হয়। কিন্তু কোন মানুষের পক্ষেই প্রতিটি কাজ ইবাদতে পরিনত করা সম্বব নয়। কিন্তু বান্দা যখন ইতিকাফে থাকে তখন এর সঠিক বাস্তবায়ন করা সম্বব। কেননা ইতিকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে।

৬। ইতকাফের ফলে ধৈর্য্যের সৃষ্টি হয়ঃ

 আমাদের অনেকেই দায় সারা আমল করে থাকি। কোন মতে মসজিদে হাদিরা দিলেই খালাস। কিন্তু ইতিকাফকারী সালাতের, ইফতারে পর বা যে কোন আমলের পর ধের্য্য নিয়ে মসজিদে অবস্থান করে। যার ফলে তার জন্য সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় নিজেকে ধৈর্য্যের গুণে গুণান্বিত করতে ও নিজের ইচ্ছাশক্তিকে শানিত করতে। এর মাধ্যমে প্রবৃত্তিকে খারাপ অভ্যাস ও কামনা বাসনা থেকে বিরত রাখার অভ্যাস করা সম্বব। যা পরে খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকার জন্য সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করবে।

৭। আখেরাত মুখি হওয়ার সুযোগ সৃষ্ট হয়ঃ

 মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়। সাধারন জীবন যাপনের সে সুযোগ সুবিধা থাকে ইতিকাফ অবস্থায় সে সকল সুযোগ থাকে না বিধায় দুনিয়ার স্বাদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পরকাল নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ আসে, যা পরবর্তী জীবনে কাজে লাগিয়ে আখেরাত মুখি হওয়া সহজ হয়।

৮। আমলের অফুরান্ত সুযোগঃ

 সিয়ামের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অতিরিক্ত পানাহার ও যৌনাচারসহ পশু প্রবৃত্তির বিবিধ প্রয়োগ থেকে। আর ইতিকাফে মসজিদে অবস্থানের কারনে বান্দাকে বাঁচিয়ে রাখেন অহেতুক কথা-বার্তা, মন্দ সংস্পর্শ ও অধিক ঘুম হতে। ফলে তার জন্য নামায, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন অর্থসহ অধ্যয়ন, তাফসীর অধ্যয়ন, জিকির ও দু’আ ইত্যাদির চর্চার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের অফুরন্ত সুযোগের সৃষ্টি হয়।

৯। মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে উঠেঃ

ইতিকাফের জন্য বান্দাকে একাধারে মসজিদে অবস্থান করতে হয়। যার ফলে তার অন্তর মসজিদের সাথে জুড়ে যায়, মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে। হাদীস অনুযায়ী যে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজের ছায়ার নীচে ছায়া দান করবেন তাদের মধ্যে একজন হলেন ওই ব্যক্তি মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল বাঁধা।

৭। মহিলাগণও ইতিকাফ করেত পারেঃ

মহিলদের ইতিকাফ করার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এই ব্যাপারে কোন কালে মতভেদ ছিল না আজও নেই। কিন্তু মহিলাগণ কোথায় ইতিকাফ করবে এ সম্পর্কে মতভেদ দেখা য়ায়। কেউ বলছেন মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে ইতকাফ করতে হবে আবার কেউ বলছে মহিলাদের নিজ নিজ ঘরের কোনায় ইতিকাফ আদায় করতে হবে।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিনীগণও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৮৯৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তাঁর এক মুস্তাহাযা সহধর্মিণী ইতিকাফ করেন। তিনি লাল ও হলুদ রংয়ের স্রাব নির্গত হতে দেখতে পেতেন। অনেক সময় আমরা তাঁর নীচে একটি গামলা রেখে দিতাম আর তিনি উহার উপর সালাত আদায় করতেন।(সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

 

 ৮। ইতিকাফ অবস্থায় জায়েয কাজঃ

ক। ইতিকাফরত অবস্থায় ঋতুবতী স্ত্রীকে স্পর্শ করা করা যায়।

খ। প্রয়োজনে ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীর সাথে দেখা করা ও কথা বলা যায়ঃ

গ। ইতিকার অবস্থায় কারন বসত মসজিদ বাহিরে যাওয়া যায়।

ঘ। রমজান মাসে ইতকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করাঃ

ক। ইতিকাফরত অবস্থায় ঋতুবতী স্ত্রীকে স্পর্শ করা করা যায়ঃ

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে তাঁর মাথা ঝুকিয়ে দিতেন আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় তাঁর চুল আঁচড়িয়ে দিতাম। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০১ ও ১৯১৮ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঋতুবতী অবস্থায় আমার সঙ্গে কাটাতেন এবং তিনি ইতিকাফরত অবস্থায় মসজিদ হতে তাঁর মাথা বের করে দিতেন। আমি ঋতুবতী অবস্থায় তা ধুয়ে দিতাম। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে থাকাবস্থায় আমার দিকে মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর আমি তা আঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি যখন ইতিকাফে থাকতেন তখন (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতেন না। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মিশকাত-২১০০, মুসলিম ২৯৭, আহমাদ ২৪৫২১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫৯২।)।

খ। প্রয়োজনে ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীর সাথে দেখা করা ও কথা বলা যায়ঃ

নবী-সহধর্মিনী সাফিয়্যা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, একবার তিনি রমযানের শেষ দশকে মসজিদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাযির হন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফরত ছিলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন। তারপর ফিরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়ালেন। যখন তিনি (উম্মুল মুমিনীন) উম্মে সালমা (রাঃ) এর গৃহ সংলগ্ন মসজিদের দরজা পর্যন্ত পৌছলেন, তখন দুজন আনসারী সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম করলেন। তাঁদের দুজনকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা দুজন থাম। ইনি তো (আমার স্ত্রী) সাফিয়্যা বিনত হুযায়্যী। এতে তাঁরা দু’জনে সুবহানাল্লাহ ইয়া রাসূলাল্লাহ বলে উঠলেন এবং তাঁরা বিব্রত বোধ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শয়তান মানুষের রক্ত শিরায় চলাচল করে। আমি আশংকা করলাম যে, সে তোমাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করতে পারে। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০৭ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

আলী ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী সাফিয়্যা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইতিকাফ অবস্থায়) মসজিদে অবস্থান করছিলেন, ঐ সময়ে তাঁর নিকট সহধর্মিণীগণ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাফিয়্যা বিনতে হুয়ায়্যীকে বললেনঃ তুমি তাড়াতাড়ি করো না। আমি তোমার সাথে যাব। তাঁর [সাফিয়্যা (রাঃ)] এর ঘর ছিল উসামার বাড়ীতে। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সঙ্গে করে বের হলেন। এমতাবস্থায় দুজন আনসার ব্যাক্তির সাক্ষাত ঘটলে তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেয়ে (দ্রুত) আগে বেড়ে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দুজনকে বললেনঃ তোমরা এদিকে আস। এ তো সাফিয়্যা বিনত হুয়ায়্যী। তাঁরা দুজন বলে উঠলেন, সুবহানাল্লাহ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ শয়তান মানব দেহে রক্তের মত চলাচল করে। আমি আশংকা বোধ করলাম যে, সে তোমাদের মনে কিছু সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯১০ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

গ। ইতিকার অবস্থায় কারন বসত মসজিদ বাহিরে যাওয়া যায়ঃ

সাফিয়্যা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইতিকাফ অবস্থায় একবার তিনি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসেন। তিনি যখন ফিরে যান তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে কিছু দূর হেঁটে আসেন। ঐ সময়ে এক আনসার ব্যাক্তি তাঁকে দেখতে পায়। তিনি যখন তাকে দেখতে পেলেন তখন তাকে ডাক দিলেন ও বললেনঃ এসো, এ তো সাফিয়্যা বিনত হুয়ায়্যী। শয়তান মানব দেহে রক্তের মত চলাচল করে থাকে। রাবী বলেন, আমি সুফিয়ান (রাঃ) কে বললাম, তিনি রাতে এসেছিলেন? তিনি বললেন, রাতে ছাড়া আর কি? (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯১১ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

ঘ। রমজান মাসে ইতকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করাঃ

আবূ সালমা ইবনু ‘আবদুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লাইলাতুল কদর প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, আমরা রমযানের মধ্যম দশকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছিলাম। রাবী বলেন, এরপর আমরা বিশ তারিখের সকালে বের হতে চাইলাম। তিনি বিশ তারিখের সকালে আমাদেরকে সম্বোধন করে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ আমাকে (স্বপ্নযোগে) লাইলাতুল কদর (এর নির্দিষ্ট তারিখ) দেখানো হয়েছিল। পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় তারিখে তা তালাশ কর। আমি দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (বের হওয়া থেকে বিরত থাকে)। লোকেরা মসজিদে ফিরে এল। আমরা তখন আকাশে একখন্ড মেঘও দেখতে পাইনি। একটু পরে এক খন্ড মেঘ দেখা দিল ও বর্ষণ হল এবং সালাত (নামায/নামাজ) শুরু হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাদা-পানির মাঝে সিজদা করলেন। এমনকি আমি তাঁর কপালে ও নাকে কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০৮ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

আবূ সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রমযানের মধ্যক দশকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছিলাম। বিশ তারিখের সকালে (ইতিকাফ শেষ করে চলে আসার উদ্দেশ্যে) আমরা আমাদের আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকটে এসে বললেনঃ যে ব্যাক্তি ইতিকাফ করেছে সে যেন তার ইতিকাফস্থলে ফিরে যায়। কারণ আমি এই রাতে (লাইলাতুল কদর) দেখতে পেয়েছি এবং আমি আরও দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। এরপর যখন তিনি তার ইতিকাফের স্থানে ফিরে গেলেন ও আকাশে মেঘ দেখা দিল, তখন আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হল। সেই সত্তার কসম! যিনি তাঁকে যথাযথ প্রেরণ করেছেন। ঐ দিনের শেষভাগে আকাশে মেঘ দেখা দিল। মসজিদ ছিল খেজুর পাতার ছাউনীর। আমি তাঁর নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাদার চিহ্ন দেখেছিলাম। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯১২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

৯। ইতিকাফ অবস্থায় বর্জনীয়ঃ

ক। ইতিকাফরত অবস্থায় ‎‎স্ত্রীদের সাথে মিলিত হওয়া যাবে না।

খ। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বাহির না হওয়াঃ

গ। ইতিকাফরত অবস্থায় অনেক বৈধ কাজও না করাঃ

ক। ইতিকাফরত অবস্থায় ‎‎স্ত্রীদের সাথে মিলিত হওয়া যাবে নাঃ মহান আল্লাহ বলেন,

*وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ *

 অর্থঃ আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় ‎‎স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। (সূরা বাকারা ২:১৮৭)।

ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীগমন বৈধ নয়, ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীগমনের ফলে ইতিকাফ নষ্ট হবে, তবে তার ওপর কাফফারা বা কাযা ওয়াজিব হবে না। ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু‎ থেকে বর্ণিত, “ইতিকাফকারী সহবাস করলে তার তার ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে, পুনরায় সে ইতিকাফ আরম্ভ করবে। [ইব্‌ন আবি শায়বাহ: (২/৩৩৮), আলবানি ইরওয়াউল গালিলে হাদিসটি সহিহ বলেছেন, তিনি বলেছেন: হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক। ইরওয়াউল গালিল: (৪/১৪৮)]

খ। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বাহির না হওয়াঃ

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে থাকাবস্থায় আমার দিকে মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর আমি তা আঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি যখন ইতিকাফে থাকতেন তখন (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতেন না। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯০২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মিশকাত-২১০০, মুসলিম ২৯৭, আহমাদ ২৪৫২১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫৯২।)।

গ। ইতিকাফরত অবস্থায় অনেক বৈধ কাজও না করাঃ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, ইতিকাফকারীর জন্য এ নিয়ম পালন করা জরুরী- (১) সে যেন কোন রোগী দেখতে না যায়। (২) কোন জানাযায় শারীক না হয়। (৩) স্ত্রী সহবাস না করে। (৪) স্ত্রীর সাথে ঘেঁষাঘেষি না করে। (৫) প্রয়োজন ছাড়া কোন কাজে বের না হয়। (৬) সিয়াম ছাড়া ইতিকাফ না করে এবং (৭) জামি‘ মাসজিদ ছাড়া যেন অন্য কোথাও ইতিকাফে না বসে। (হাদিসের মান হাসন সহিহঃ মিশকাত-২১০৬৯, আবূ দাঊদ ২৪৭৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫৯৪)।

Leave a comment