সিয়ামরত অবস্থায় আমলসমূহ (ষষ্ঠ পর্ব)

গ. যে আমলগুলি দ্বারা কুরআনের হক আদায় হবে।

রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। এই মাসের অন্যান্য সকল মাসের উপর মর্জাদাসম্পন্ন হওয়ার এক মাত্র কারন হলো, এ মাসেই কুরআন নাজিল হয়। মহান এ মাসের সঙ্গে কুরআনুল কারিমের গভীর সর্ম্পক রয়েছে। এই মাসেই পবিত্র কুরআন লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়। এই জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে কুরআনকে আলাদাভাবে মর্জাদা প্রদাণ করেছেন। তিনি এই মাসে জিব্রাঈল আলাহিস সালামকে তিনি কুরআন শুনাতেন আবার জিব্রাঈল আলাহিস সালামও তাকে কুরআন শুনাতেন। বছরে তারা দুজনে এক অপরকে সম্পূর্ণ শুনাতেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়া সাল্লামের নিকট প্রতিবছর একবার কুরআন পাঠ পেশ করতেন। আর যে বছর তিনি মারা যান সে বছর দুইবার পেশ করেন। (সহিহ বুখারি ৪৬১৪)।

এমনকি রমজান মাসের প্রত্যেক রাতেই নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে কুরআন মাজিদ শুনাতেন এবং তিনিও নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুনাতেন। হাদিস শরিফে আছে, জিবরাইল আমিন রমজানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করতেন এবং  তাকে কুরআন শরিফ পড়ে শুনাতেন। ( সহিহ বুখারি ১৯০২)।

ইবনে কাছির (রহঃ) বলেনঃ জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়া সাল্লামকে যতটুকু কুরআন নাযিল হয়েছে ততটুকু পাঠ করে শুনাতেন। (আল-জামে ফি গারিবিল হাদিস’ গ্রন্থে (৪/৬৪)

যে কারণে রমজান মাস অন্যান্য মাসের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,

*شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ

অর্থঃ রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। (সুরা বাকারা ২:১৮৫)।

উপরের আয়াতে মহান আল্লাহ ষ্পষ্ট করে রমজান মাসের তিনটি মহান বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।

* কুরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়েত জন্য

* কুরআন ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য

* সম্পূর্ণ রমজান ব্যাপিয়া সিয়াম পালন করা।

ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি হল আল কুরআন। আল আল কুরআনের মূল বিষয় বস্তু হল, আদম সন্তারকে এমন জ্ঞান দান করা যা সে জানত না। তাইতো অহীর সুচনায় মহান আল্লাহ তাআলা নাজিল করলেন,

ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ (١) خَلَقَ ٱلۡإِنسَـٰنَ مِنۡ عَلَقٍ (٢) ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ (٣) ٱلَّذِى عَلَّمَ بِٱلۡقَلَمِ (٤) عَلَّمَ ٱلۡإِنسَـٰنَ مَا لَمۡ يَعۡلَمۡ (٥)

অর্থ: পড়ো (হে নবী), তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন৷ জমাট বাঁধা রক্তের দলা থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন৷ পড়ো, এবং তোমার রব বড় মেহেরবান, যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিখিয়েছেন৷ মানুষকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন, যা সে জানতো না৷ 

আল্লাহ তা‘আলার নিজ করুনায় মানুষ জাতীর হেদায়েতের জন্য মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার বড়ই মেহেরবানী যে, তিনি আমাদের এমন একটি কিতাব দিলেন, যার মধ্যে আছে ইহাকাল ও পরকালের মুক্তির পাথেয়। তাই রমজানে কুরআন কেন্দ্রিক আমল করে এর যথাযথ হক আদায় করতে হবে। বিদ্বানগন মনে করেন আল কুরআনের মাধ্যমে সঠিকভাবে দিক নির্দেশনা পেতে হলে, আল্লাহর বান্দাকে কুরআন মাফিক আমলকে বিভিন্ন পর্যায় ভাগ করে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। কুরআনের যথাযথ হক আদায় করতে হলে আমাদের নিম্মের আমলগুলি করতে হবে।

১। কুরআনের উপর ঈমান আনাঃ

২। বিশুদ্ধভাবে কুরআনের শিক্ষা করাঃ

৩। অপরকে কুরআন পড়া শিক্ষা দেয়াঃ

৪। কুরআন শিক্ষার পর নিয়মিত তিলাওয়াত করাঃ

৫। সহিহ হাদিসে বর্ণিত সুরা বা আয়াত মুখস্থ করে নিয়মিত তেলওয়াত করা

৬। কুরআন তেলওয়াত শ্রবন করা

৭। কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা

৮। অর্থ বুঝে বুঝে কুরআন পড়া,সম্ভব হলে বিশুদ্ধ তাফসিরের আলোকে পড়া

৯। কুরআন অনুসারে জীবন যাপর করা

১০। কুরআন অন্যেনর নিকট পৌছান

১০। কুরআন অন্যেনর নিকট পৌছানঃ

কোরআনের আদেশ নিষেধ মান্য করার পর প্রধান কাজ হল, এই কুরআনের বাণী অন্যের নিকট পৌছা্ন। কুরআন বুঝে বুঝে আমল করার পরই আপনার উপর দায়িত্ব এসে যায় এই মহান বাণী অন্যের নিকট পৌছান। কারন সালাত, সাওম, জাকাত, হজ্জের পাশাপাশি সৎকাজের নির্দেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ মুমিনের অন্যতম কাজ বলে কুরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া  সৎকাজের নির্দেশ ও অসৎকাজের নিষেধকারি মুমিনকেই সর্বোত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে পবিত্র কুরআনে। মহান আল্লাহ বলেন,

 وَمَنۡ أَحۡسَنُ قَوۡلاً۬ مِّمَّن دَعَآ إِلَى ٱللَّهِ وَعَمِلَ صَـٰلِحً۬ا وَقَالَ إِنَّنِى مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ (٣٣)

অর্থঃ ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি তো মুসলিমদের একজন। ( সূরা ফুসসিলাত ৪১:৩৩)।

দ্বীন প্রচারের দায়িত্ব কাদের উপর?

দ্বীন প্রচারের প্রধান কারন হল আল্লাহ দ্বীর দুনিয়ার বুকে টিকিয়ে রাখা বা হিফাজত করা। এই হিফাজতের দায়িত্ব  মহান স্বয়ং নিজেই নিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

 إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُ ۥ لَحَـٰفِظُونَ (٩)

অর্থ: আর এ বাণী, একে তো আমিই অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক৷ (সুরা হিজর ১৫:৯)।

দ্বীন প্রচারের দায়িত্ব রাসূলগণেরঃ

কাজেই দ্বীন প্রচারের একক দায়িত্বে মহান আল্লাহ তায়ালার। এবং এ কারনেই তিনি যুগে যুগে মানব ও জ্বিন জাতীর হিদায়াতের জন্য নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনীধি হিসাবে দ্বীন প্রাচারের দায়িত্ব নবী রাসূলদের। কোরআনুল কারিমে বারবার বলা হয়েছে যে, প্রচার বা পোঁছানোই রাসূলগণের একমাত্র দায়িত্ব। নিচের আয়াতে বলা হয়েছে,

فَهَلۡ عَلَى ٱلرُّسُلِ إِلَّا ٱلۡبَلَـٰغُ ٱلۡمُبِينُ (٣٥) 

অর্থ: রাসূলগণের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টভাবে প্রচার করা। (সূরা নাহল: ৩৫)

নূহ আলাইহিস সালামের জবানিতে বলা হয়েছে:

 أُبَلِّغُكُمۡ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى وَأَنصَحُ لَكُمۡ وَأَعۡلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ (٦٢) 

অর্থঃ আমি আমার প্রতিপলকের রিসালাতের দায়িত্ব তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি এবং আমি তোমাদের নসিহত করছি। (সূরা আরাফ ৭:৬২)।

সালেহ আলাইহিস সালামের জবানিতে বলা হয়েছে:

 فَتَوَلَّىٰ عَنۡہُمۡ وَقَالَ يَـٰقَوۡمِ لَقَدۡ أَبۡلَغۡتُڪُمۡ رِسَالَةَ رَبِّى وَنَصَحۡتُ لَكُمۡ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ ٱلنَّـٰصِحِينَ (٧٩)

আর সালেহ একথা বলতে বলতে তাদের জনপদ থেকে বের হয়ে গেলে, “হে আমার সম্প্রদায়! আমার রবের বাণী আমি তোমাদের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছি এবং আমি তোমাদের জন্য যথেষ্ট কল্যাণ কামনা করেছি৷ কিন্তু আমি কি করবো, তোমরা তো নিজেদের হিতাকাংখীকে পসন্দই কর না৷”(সূরা আরাফ ৭:৭৯)।

শোয়াইত আলাইহিস সালামের জবানিতে বলা হয়েছে:

 فَتَوَلَّىٰ عَنۡهُمۡ وَقَالَ يَـٰقَوۡمِ لَقَدۡ أَبۡلَغۡتُڪُمۡ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى وَنَصَحۡتُ لَكُمۡ‌ۖ فَكَيۡفَ ءَاسَىٰ عَلَىٰ قَوۡمٍ۬ كَـٰفِرِينَ (٩٣)

আর শোয়াইব একথা বলতে বলতে তাদের জনপদ থেকে বের হয়ে গেল, “হে আমাদর জাতির লোকেরা! আমি আমার রবের বাণী তোমাদের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছে এবং তোমাদের কল্যাণ কামনার হক আদায় করেছি৷ এখন আমি এমন জাতির জন্য দুঃখ করবো কেন,যারা সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করে? (সূরা আরাফ ৭:৯৩)।

দ্বীন প্রচারের দায়িত্ব মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরঃ

সর্বশেষ আল্লাহর রাসূল মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও এই দ্বীর প্রচারের মহান দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছে। কাজেই তিনি দ্বীন প্রচারের জন্য আল্লাহর প্রতিননিধী।

মহান আল্লাহ বলেন:

 ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِىَّ ٱلۡأُمِّىَّ ٱلَّذِى يَجِدُونَهُ ۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِى ٱلتَّوۡرَٮٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡہَٮٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنڪَرِ

অর্থঃ যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মি নবীর, যাঁর উল্লেখ তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইনজীলে লিপিবদ্ধ পায়, যিনি তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেন এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন। (সূরা আরাফ ৭: ১৫৭)

এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্মকে আদেশ ও নিষেধ নামে অভিহিত করা হয়েছে। অন্যত্র এ কর্মকে দাওয়াত বা আহবান নামে অভিহিত করা হয়েছে।মহান আল্লাহ বলেন,

 وَمَا لَكُمۡ لَا تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ‌ۙ وَٱلرَّسُولُ يَدۡعُوكُمۡ لِتُؤۡمِنُواْ بِرَبِّكُمۡ وَقَدۡ أَخَذَ مِيثَـٰقَكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ (٨)

অর্থঃ তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনছো না৷ অথচ তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আনার জন্য রসূল তোমাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন  অথচ তিনি তোমাদের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন৷ যদি তোমরা সত্যিই স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত হও৷ (সূরা হাদীদ ৫৭:৮)।

দ্বীন প্রচারের দায়িত্ব সকল মুসলিমেরঃ

মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দ্বীন প্রচারের জন্য আল্লাহ কুরআনর আদেশ প্রদান করেছে। এবং পাশাপাশি তার অণুসরদেরও দ্বীন প্রচারের নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে। কাজেই যে কেই মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অণুসরন করবে সেই দ্বীন প্রচারে অংশ গ্রহন করবে। যেমন, মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:

 قُلۡ هَـٰذِهِۦ سَبِيلِىٓ أَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ‌ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا۟ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِى‌ۖ وَسُبۡحَـٰنَ ٱللَّهِ وَمَآ أَنَا۟ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ (١٠٨)

অর্থ: তুমি বল, এটাই আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে স্পষ্ট প্রমাণসহ (সজ্ঞানে) আহ্বান করি। আমি এবং যারা আমাকে অনুসরণ করে (তারাও) আল্লাহ্‌ মহিমান্বিত, এবং শিরককারীদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই৷  (ইউসুফ- ১২:১০৮)।

উক্ত আয়াতের স্পষ্ট দাবি প্রত্যেক মুসলিমকে দ্বীর প্রচারে অংশ গ্রহন করতে হবে। কিন্তু কতটুকু দ্বীন সে প্রচার করবে? হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দীন হলো নসিহত। সাহাবিগণ বললেন, কার জন্য? বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য, মুসলিমগণের নেতৃবর্গের জন্য এবং সাধারণ মুসলিমদের জন্য। (মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নসিহতের জন্য সাহাবিগণের বাইআত তথা প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতেন। বিভিন্ন হাদিসে জারির ইবনু আব্দুল্লাহ রা. মুগিরা ইবনু শুবা রা. প্রমুখ সাহাবি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বাইয়াত বা প্রতিজ্ঞা করেছি, সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান ও প্রত্যেক মুসলিমের নসিহত করার উপর। (বোখারি)।

অর্থাৎ নসিয়ত বা ভালো কাজের নির্দেশ দান করা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব সকল মুসলিমের। কিন্তু সামগ্রিক দ্বীর প্রচার কারি মুবাল্লিক বা দায়ীকে অবশ্যই আলেম হতে হবে।

একটি দলের উপর দ্বীর প্রচারের দায়িত্বঃ

আল্লাহ তাআলা ভালো কাজের নির্দেশ দান করা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব সকল মুসলিমকে দিলেও একটি দল থাকার কথা কুরআনে উল্লেখ করে বলেছেন,

 وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٌ۬ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ‌ۚ وَأُوْلَـٰٓٮِٕكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ (١٠٤) و

অর্থ: আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। (সুরা ইমরান ৩:১০৪)।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম গাজ্জালী লিখিত “সৌভাগ্যের পরশমণি” এর দ্বিতীয় কন্ডের ২২৯ পৃষ্ঠায় বলেন, এই কাজ (সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ) ফরজ। কিন্তু ফরজে কিফায়া। কিছু লোক সুচারুরূপে করিতে পারিলে সকলের জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু কেউ না করিলে সকলে পাপি হইবে। কাজেই আমাদের মধ্যে কিছু লোককে সব সময় এই কাজের জন্য নিয়োজিত রাখতে হবে। এব্যাপারে মহান আল্লাহ আরও বলেন,

 كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنڪَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ‌ۗ وَلَوۡ ءَامَنَ أَهۡلُ ٱلۡڪِتَـٰبِ لَكَانَ خَيۡرً۬ا لَّهُم‌ۚ مِّنۡهُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَأَڪۡثَرُهُمُ ٱلۡفَـٰسِقُونَ (١١٠)

অর্থ: তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির (কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা ন্যায়কার্যে আদেশ এবং অন্যায় কার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহতে বিশ্বাস কর। (সূরা আল ইমরান ৩:১১০)

প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন,

 يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأَخِرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُسَـٰرِعُونَ فِى ٱلۡخَيۡرَٲتِ وَأُوْلَـٰٓٮِٕكَ مِنَ ٱلصَّـٰلِحِينَ (١١٤)

অর্থ: তারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে। আর তারা কল্যাণকর কাজে দ্রুত ধাবিত হয় এবং তারা নেককারদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আলে ইমরান ৩:১১৪)।

আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা আরও বলেন,

 وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَـٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٍ۬‌ۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥۤ‌ۚ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُ‌ۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ۬ (٧١) 

অর্থ: আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা ৯:৭১)।

আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা আরও বলেন,

 ٱلتَّـٰٓٮِٕبُونَ ٱلۡعَـٰبِدُونَ ٱلۡحَـٰمِدُونَ ٱلسَّـٰٓٮِٕحُونَ ٱلرَّٲڪِعُونَ ٱلسَّـٰجِدُونَ ٱلۡأَمِرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَٱلنَّاهُونَ عَنِ ٱلۡمُنڪَرِ وَٱلۡحَـٰفِظُونَ لِحُدُودِ ٱللَّهِ‌ۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ (١١٢)

অর্থ: আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাগমনকারী  তার ইবাদতকারী, তার প্রশংসা বানী উচ্চারণকারী, তার জন্য যমীনে বিচরণকারী  তার সামনে রুকূ ও সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশকারী , অসৎকাজ থেকে বিরতকারী, এবং আল্লাহর সীমারেখা সংরক্ষণকারী  আর হে নবী! এ মুমিনদেরকে সুখবর দাও! ( সূরা তাওবা ৯:১১২)।

আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা আরও বলেন,

ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّـٰهُمۡ فِى ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّڪَوٰةَ وَأَمَرُواْ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَنَهَوۡاْ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ‌ۗ وَلِلَّهِ عَـٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ (٤١) و

অর্থঃ তারা এমন সব লোক যাদেরকে আমি যদি পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করি তাহলে এরা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ কাজ নিষেধ করবে৷  আর সমস্ত বিষয়ের পরিণাম আল্লাহর হাতে৷

(সূরা হজ্জে২২:৪১)।

সাধারন বিবেক ও জ্ঞান দ্বারা সকল মানুষ বুঝতে পারে কোনটি ন্যায়, কোনটি অন্যায়, কোনটি ভাল কোনটি মন্দ। তাই একজন সাধানর আল্লাহ বান্দা হয়েও সে ভাল কাজের আদেশ দিতে পারে এবং অন্যায় কাজের নিষেধ করতে পারে। যেমন: অন্যের সম্পদ জোর করে দখল করা। কাউকে বিনা কারনে খুন করা। চুরি করা, ডাকাতি করা, মারামারি করা, নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করা, মাদকা দ্রব্য গ্রহন করা অন্যায় কে না জানে। এরুপ অগণিত অন্যায় কাজকে অন্যায় বলে জানতে বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। অনুরূপভাবে মানুষকে বিপদে সাহায্য করা, সান্ত্বনা দেওয়া, অন্যের অধিকারে হস্থক্ষেপ না করা, সৃষ্টির সেবা করা, দরিদ্রকে দান করা, রাস্তা-ঘাট, স্কুল কলেজ নির্মান করা ইত্যাদি ভাল কাজ বলে সবাই বুঝি। কিন্তু ইসলামি ধর্মে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যে সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান না থাকলে মানুষ কে সত্যিকার মুসলিম হিসাবে তৈরি করতে পারবনা। যেমন: তাওহীদের জ্ঞান, শির্কের জ্ঞান, আকিদার জ্ঞার, ফিকহের জ্ঞান ইত্যাদি। এ স্পষ্ট জ্ঞান হলো ওহী নির্ভর জ্ঞান বা কোরআন ও হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন: 

 قُلۡ إِنَّمَآ أُنذِرُڪُم بِٱلۡوَحۡىِ‌ۚ وَلَا يَسۡمَعُ ٱلصُّمُّ ٱلدُّعَآءَ إِذَا مَا يُنذَرُونَ (٤٥) 

অর্থ: তাদেরকে বলে দাও, আমি তো অহীর ভিত্তিতে তোমাদেরকে জানাচ্ছি” কিন্তু বধিররা ডাক শুনতে পায় না, যখন তাদেরকে সতর্ক করা হয়৷ (সূরা আম্বিয়া ২১:৪৫)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّ وَمَآ أَنَا۟ إِلَّا نَذِيرٌ۬ مُّبِينٌ۬ (٩)

অর্থ: আমি তো কেবল সেই অহীর অনুসরণ করি যা আমার কাছে পাঠানো হয় এবং আমি সুস্পষ্ট সাবধানকারী ছাড়া আর কিছুই নই৷ (সুরা আহকাফ-৪৬:৯)।

 

মুবাল্লিক বা ইসলাম প্রচারক দায়ীর কিছু গুনঃ

যদিও আমভাবে প্রকৃত মুমিন বান্দাদের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজের নিষেধ করা। কিন্তু খাসভাবে শুধু প্রজ্ঞবান আলেম, সর্বোত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ককারি বুদ্ধিমান লোক, নিজে আমলকারি, মৌখিক জড়তা মুক্ত ও দ্বীনের কারনে আগত বিপদে সবর কারি ব্যক্তিই দ্বীনের দায়ী হওয়ার উপযুক্ত গুন। কাজই কুরআনে বর্ণিত মুবাল্লিকের কিছু গুন উল্লেখ করলেই বুঝা যাবে কে দ্বীন প্রচার করবে আর কে প্রচার করতে পারবে না। কাজেই মুবাল্লিক বা ইসলাম প্রচারক দায়ীর কিছু গুন উল্লেখ করা হল।

১।  আল্লাহ দ্বীন প্রচারক প্রজ্ঞবান আলেম হবে।

২।  দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করতে হবে।

৩। দায়ীর কথা ও কাজের মিল থাকতে হবে।

৪।  নরম ও ভদ্রভাবে কথা বলতে হবে।

৫। মন্দ ব্যবহারের পরিবর্তে উৎকৃষ্ট ব্যবহার করতে হবে।

৬।  হিকমত বা প্রজ্ঞা থাকতে হবে।

৭।  দা‘য়ীকে উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হতে হবে।

৮। দা‘য়ীর অন্তর বিরোধীদের প্রতি উদার হতে হবেঃ

১।  আল্লাহ দ্বীন প্রচারক প্রজ্ঞবান আলেম হবেঃ

আল্লাহ পথের দা‘য়ীরা যে দিকে মানুষকে ডাকবে সে সম্পর্কে ইলম তথা জ্ঞান থাকা। দ্বীন প্রচারকারি আল্লাহ পথের দায়ীদের প্রথম গুন হল দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। সকলেই জানে তথ্য, থাকলে আদান প্রদান করা যায়। প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে উত্তর দেওয়া যায়। আর অজানা তথ্য কিভাবে দিবে? এই কারনে আলোচনার শুরু ছিল কুরআন সহিহ শুদ্ধভাবে শেখা, তারপর বুঝে বুঝে পড়া, অতপর আমল করা। অর্থাৎ নিজেকে প্রথমে কুরআনের প্রতিচ্ছবি বানাতে হবে, তারপর কুরআনই প্রচার চালাবে। পীরের কিরামতি, বুজুর্গের আমল, সুফিদের সংসার বিরাগ প্রচার করার জন্য বলা হয় নি। মহান আল্লাহ তার প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দ্বীর প্রচারের সিলেভাস দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:

۞ يَـٰٓأَيُّہَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَ‌ۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُ ۥ‌ۚ 

অর্থ: হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর, যদি না কর তাহলে তুমি তাঁর বার্তা পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করলে না। (সূরা মায়িদা ৫:৬৭)।

কুরআনের স্পষ্ট আদেশ “তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর”, কাজেই পৌছাতে হবে, ‘ওহী’ যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে। আর এ দাওয়াতের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রথম শর্ত হলো কুরআন হাদিসের সহিহ জ্ঞান থাকা। ওহী বা কুরআনের জ্ঞান অর্জন ছা্ড়া কি করে কুরআন প্রচার করবে? আমি যে কাজ করার বা বর্জন করার দাওয়াত দিচ্ছি তা সত্যিই ইসলামের নির্দেশ কিনা তা জানতে হবে। মহান আল্লাহ দায়ীদের এ গুন কুরআনে উল্লেখ করে বলেছে, 

 قُلۡ هَـٰذِهِۦ سَبِيلِىٓ أَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ‌ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا۟ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِى‌ۖ وَسُبۡحَـٰنَ ٱللَّهِ وَمَآ أَنَا۟ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ (١٠٨) 

অর্থ: বল, এটিই আমার পথ। স্পষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহর দিকে আহবান করি আমি এবং আমার যারা অনুসারী। (সূরা ইউসুফ ১২:১০৮ আয়াত)।

এ স্পষ্ট জ্ঞান হলো ওহীনির্ভর জ্ঞান বা কোরআন ও হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 قُلۡ إِنَّمَآ أُنذِرُڪُم بِٱلۡوَحۡىِ‌ۚ وَلَا يَسۡمَعُ ٱلصُّمُّ ٱلدُّعَآءَ إِذَا مَا يُنذَرُونَ (٤٥) 

অর্থ: তাদেরকে বলে দাও, “আমি তো অহীর ভিত্তিতে তোমাদেরকে জানাচ্ছি”-কিন্তু বধিররা ডাক শুনতে পায় না, যখন তাদেরকে সতর্ক করা হয়৷  ।(সূরা আম্বিয়া: ৪৫)।

এজন্য দাওয়াতের দায়িত্ব পালনকারীকে কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্পষ্টরূপে জানতে হবে, যে কাজ করতে বা বর্জন করতে তিনি দাওয়াত দিচ্ছেন তার শরয়ি বিধান কি এবং তা পালন-বর্জনের দাওয়াতের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো পদ্ধতি কি? কাজটি সৎকর্ম হলে তা ফরজ, ওয়াজিব, মুস্তাহাব ইত্যাদি কোন পর্যায়ের ইত্যাদি স্পষ্ট কোরআন ও হাদিসের আলোকে জানতে হবে। ওহীর স্পষ্ট নির্দেশনা ব্যতীত সাধারণ ধারণা, আবেগ আন্দাজ ইত্যাদির ভিত্তিতে কোনো কিছুকে হালাল বা হারাম বলতে কোরআনুল কারিমে নিষেধ করা হয়েছে। পরিস্কার জানিয়ে দিচ্ছে, হালাল ও হারাম করার অধিকার আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই ।

 এরশাদ করা হয়েছে:

وَلَا تَقُولُواْ لِمَا تَصِفُ أَلۡسِنَتُڪُمُ ٱلۡكَذِبَ هَـٰذَا حَلَـٰلٌ۬ وَهَـٰذَا حَرَامٌ۬ لِّتَفۡتَرُواْ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَ‌ۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَفۡتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَ لَا يُفۡلِحُونَ (١١٦)

অর্থ: আর এই যে, তোমাদের কণ্ঠ ভুয়া হুকুম জারী করে বলতে থাকে এটি হালাল এবং ওটি হারাম, এভাবে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না৷  যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তারা কখনোই সফলকাম হবে না৷ (সূরা নাহল: ১১৬)।

দায়ী ও মুবাল্লিগকে অবশ্যই সর্বদা বেশি বেশি কোরআন ও হাদিস, তাফসির, ফিকাহ, ও অন্যান্য ইসলামি গ্রন্থ অধ্যায়ন করতে হবে। কোরআন-হাদিস বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আলেমদের রচিত গ্রন্থদি পড়ে দীনকে জানার চেষ্টা করা কঠিন অন্যায় এবং কোরআন হাদিসের প্রতি  অবহেলা ও অবজ্ঞা প্রদর্শন। মহান আল্লাহ কোরআনকে  সকল মানুষের হেদায়েতরূপে প্রেরণ করেছেন। তিনি তা বুঝা সহজ করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জন্য তাঁর মহান সুন্নাত ও হাদিস রেখে গিয়েছেন। এগুলির সার্বক্ষণিক অধ্যায়ন মুমিনের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত, শ্রেষ্ঠতম জিকর ও দাওয়াতের প্রধান হাতিয়ার।

অজ্ঞ লোক কর্তৃক প্রচারিত দ্বীনে অধিকাংশেই মিথ্যার ছড়াছড়ি থাকে। বর্তমান বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য করলে আমরা সহজেই দেখতে পাই, আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে যারা ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছে তারা নিজেরাই ইসলাম সম্পর্কে ভীষন অজ্ঞ। অজ্ঞ লোকদের ইসলামের সঠিক জ্ঞান নেই, তাই মন গড়া কথা বলে, যার অধিকাংশেই মিথ্যার ছড়াছড়ি। হয়ত কেউ বলবেন মিথ্যা কথা দ্বারা মানুষকে আহবান জানালে ক্ষতির কি আছে? তার উদ্দেশ্যতো ভালই আছে। উদ্দেশ্য ভাল থাকলেও অজ্ঞলোকের প্রচারিত দ্বীনে কুরআন ভিত্তিক না হয়ে কিচ্চা কাহিনি ভিত্তিক হওয়ায় শির্কের ছড়াছড়ি থাকে। সে শির্কের দাওয়াত দিচ্ছে অথচ মনে করছে দ্বীন প্রচার করছে। এবং তারাই দ্বীনের বারটা বাজাচ্ছে। বিশেষ করে আক্বীদার ক্ষেত্রে একেবারেই অজ্ঞ বা ভুল আকীদায় বিশ্বাসী মানুষের প্রচারিত দ্বীনে শির্কের মহা উত্সব থাকা স্বাভাবিক। তাই সাধারন মুসলিম বা আলেম কে কত টুকু দ্বীন প্রচার কবরে তার ধারনাটা কুরআন থেকে নিতে হবে। কারন মিথ্যা মন গড়া কল্প কাহিনী ইসলমী দ্বীন বলে প্রচান না করে শুধু আবেদ থাকা অনেক ভাল। কারন আল্লাহ বা তার প্রেরিক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে মিথ্যা বলা জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ নামে মিথ্যা কথা বানিয়ে আল্লাহর কথা হিসেবে প্রচার করার আজার অত্যান্ত ভয়াবহ।আল্লাহ তাআলা বলেন, 

 فَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ كَذَّبَ بِـَٔايَـٰتِهِۦۤ‌ۚ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ يَنَالُهُمۡ نَصِيبُہُم مِّنَ ٱلۡكِتَـٰبِ‌ۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَتۡہُمۡ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوۡنَہُمۡ قَالُوٓاْ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ‌ۖ قَالُواْ ضَلُّواْ عَنَّا وَشَہِدُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِہِمۡ أَنَّہُمۡ كَانُواْ كَـٰفِرِينَ (٣٧)

অর্থ: একথা সুস্পষ্ট,যে ব্যক্তি ডাহা মিথ্যা কথা বানিয়ে আল্লাহর কথা হিসেবে প্রচার করে অথবা আল্লাহর সত্য আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে? এ ধরনের লোকেরা নিজেদের তকদীরের লিখন অনুযায়ী তাদের অংশ পেতে থাকবে অবশেষে সেই সময় উপস্থিত হবে যখন আমার পাঠানো ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করার জন্যে তাদের কাছে এসে যাবে৷ সে সময় তারা (ফেরেশতারা) তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে, বলো এখন তোমাদের সেই মাবুদরা কোথায়, যাদেরকে তোমরা ডাকতে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে? তারা বলবে, সবাই আমাদের কাছ থেকে অন্তর্হিত হয়ে গেছে এবং তারা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, বাস্তবিক পক্ষেই তারা সত্য অস্বীকারকারী ছিল। (সুরা আরাফ ৭:৩৭)।

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

فَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ ڪَذِبًا أَوۡ كَذَّبَ بِـَٔايَـٰتِهِۦۤ‌ۚ إِنَّهُ ۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلۡمُجۡرِمُونَ (١٧)

অর্থ: তারপর যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বানিয়ে তাকে আল্লাহর কথা বলে প্রচার করে অথবা আল্লাহর যথার্থ আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে? নিসন্দেহে অপরাধী কোনদিন সফলকাম হতে পারে না৷  (সুরা ইউনুস ১০:১৭)।

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

 وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ ڪَذِبًا أَوۡ كَذَّبَ بِٱلۡحَقِّ لَمَّا جَآءَهُ ۥۤ‌ۚ أَلَيۡسَ فِى جَهَنَّمَ مَثۡوً۬ى لِّلۡڪَـٰفِرِينَ (٦٨)

অর্থ: তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা সত্যকে মিথ্যা বলে,যখন তা তার সামনে এসে গেছে?জাহান্নামই কি এ ধরনের কাফেরদের আবাস নয়? (সুরা আনকাবুত ২৯:৬৮)।

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَ وَهُوَ يُدۡعَىٰٓ إِلَى ٱلۡإِسۡلَـٰمِ‌ۚ وَٱللَّهُ لَا يَہۡدِى ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّـٰلِمِينَ (٧)

অর্থ: সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে যে আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা বানিয়ে বলে৷  অথচ তাকে শুধু ইসলামের দিকে আহ্বান করা হচ্ছে৷ আল্লাহ এ রকম জালেমদের হিদায়াত দেন না। সুরা সাফ ৬১:৭)।

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

 وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ كَذَّبَ بِـَٔايَـٰتِهِۦۤ‌ۗ إِنَّهُ ۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلظَّـٰلِمُونَ (٢١)

অর্থ: আর তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করে অথবা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে?  অবশ্যি এ ধরনের জালেমরা কখনই সফলকাম হতে পারে না৷ (সুরা আনআম ৬:২১)।

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

 وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ ڪَذِبًا‌ۚ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ يُعۡرَضُونَ عَلَىٰ رَبِّهِمۡ وَيَقُولُ ٱلۡأَشۡهَـٰدُ هَـٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ كَذَبُواْ عَلَىٰ رَبِّهِمۡ‌ۚ أَلَا لَعۡنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّـٰلِمِينَ (١٨) 

অর্থ: আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা করে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে? এ ধরনের লোকদের তাদের রবের সামনে উপস্থিত করা হবে এবং সাক্ষীরা সাক্ষ দেবে, এরাই নিজেদের রবের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা করেছিল৷ শোনো, জালেমদের ওপর আল্লাহর লানত। (সুরা হূদ ১১:১৮)।

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

 أَفَعَيِينَا بِٱلۡخَلۡقِ ٱلۡأَوَّلِ‌ۚ بَلۡ هُمۡ فِى لَبۡسٍ۬ مِّنۡ خَلۡقٍ۬ جَدِيدٍ۬ (١٥)

অর্থ: তারপর তারা পরস্পরকে বললোঃ) “এ আমাদের জাতি, এরা বিশ্বজাহানের রবকে বাদ দিয়ে অন্য ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে৷ এরা তাদের মাবুদ হবার সপক্ষে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ আনছে না কেন ? যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে?  (সুরা কাহফ ১৮:১৫)।

কোরআন কারীমে একাধিক স্থানে না জেনে, আন্দাজে বা অনুমান নির্ভর করে আল্লাহ, আল্লাহর দীন, বিধান ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ ٱلۡفَوَٲحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡہَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡىَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَـٰنً۬ا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ (٣٣)

অর্থ: বল, আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ এবং অসংগত বিরোধিতা এবং কোনো কিছুকে আল্লাহর শরিক করা যার কোন সনদ তিনি প্রেরণ করেননি, এবং আল্লাহর সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে সম্বন্ধে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই। (সূরা আরাফের ৭:৩৩)।  

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

 إِنَّمَا يَأۡمُرُكُم بِٱلسُّوٓءِ وَٱلۡفَحۡشَآءِ وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ (١٦٩)

অর্থ: সে (শয়তান) তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ৷ সে তোমাদের অসৎকাজ ও অনাচারের নির্দেশ দেয় আর একথাও শেখায় যে, তোমরা আল্লাহর নামে এমন সব কথা বলো যেগুলো আল্লাহ বলেছেন বলে তোমাদের জানা নেই। ( সূরা বাকারার ২:১৬৯)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

একজন মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই বর্ণনা করবে। (সহিহ মুসলিম)।

অন্য হাদিসে তিনি বলেন,

যে ব্যক্তি আমার নামে কোনো হাদিস বলবে এবং তার মনে সন্দেহ হবে যে, হাদিসটি মিথ্যা হতে পারে, সেও একজন মিথ্যাবাদী। (সহিহ মুসলিম)।

আল্লাহর নামে বা আল্লাহর সম্পর্কে যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে তার চেয়ে বড় জালিম আর কে?

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার নামে মিথ্যা বলবে না। কারণ যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তাকে জাহান্নামে যেতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম)।

সালামাহ ইবনুল আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

আমি যা বলিনি তা যে আমার নামে বলবে তার আবাসস্থল হবে জাহান্নাম। ( সহিহ বুখারি)

আশারায়ে মুবাশশারাহ-সহ প্রায় ১০০ জন সাহাবি এ অর্থে বিভিন্ন হাদিস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, সকল হাদিসের অর্থ একই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি তার নামে ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় বা আন্দাজ অনুমান করে বলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এর শাস্তি জাহান্নাম।

যুগ যুগ ধরে ইসলাম প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হল ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন। প্রতি বছর বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি, ক্লাব, মসজিদ কমিটি, মদ্রাসা কমিটি এবং ব্যক্তি উদ্দ্যগেও বিভিন্ন সময় ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দেশের নামি দামি সুরেলা কন্ঠের অধিকারি বক্তাগন, সে সব মাহফিল মুল্যবান ওয়াজ করে থাকেন। তাদের ওয়াজের বিষয় বস্তু খুজে পাওয়া ভার। মাঠ গরম করার জন্য অনেক সময় কল্পিত গল্পের অবতারনা করে। তবে বিষয় বস্তু সম্বলিত আলোচনা আজ আর দুর্লভ নয়, যা আগের দিনে ভাবাও যেত না। এখনও প্রতিযোগিতা আছে কার কন্ঠ কত সুরেলা, কত মিষ্ট কন্ঠে শ্রতাদের মন জয় করতে পারে। শ্রতাদের দোষ কম নয়, তারাও চায় তাদের কে কত কাদাতে বা হাসাতে  পারে। শ্রতাদের মন জয় করতে গিয়ে অনেক সময় অনুমান ভিত্তিক মিথ্যা কথার প্রচার করে। আলেম হওয়া সত্বেও আল্লাহর বানী ভুলে যান। মহান আল্লাহ বলেন, 

﴿ وَٱجۡتَنِبُواْ قَوۡلَ ٱلزُّورِ ٣٠ ﴾ [الحج : ٣٠] 

অর্থাৎ তোমরা মিথ্যা কথন থেকে দূরে থাক। (সূরা হজ্জ ৩০ আয়াত)

মহান আল্লাহ বলেন,

 ﴿ وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ  ٣٦ ﴾ [الاسراء: ٣٦] 

অর্থ:  যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইয়ো না। (সূরা ইসরা ৩৬ আয়াত)

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

﴿ مَّا يَلۡفِظُ مِن قَوۡلٍ إِلَّا لَدَيۡهِ رَقِيبٌ عَتِيدٞ ١٨ ﴾ [ق: ١٨] 

অর্থ: মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করুক না কেন তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। (ক্বাফ ১৮ আয়াত)
আল্লাহ তাআলা বলেন, 

 إِنَّمَا يَفۡتَرِى ٱلۡكَذِبَ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ‌ۖ وَأُوْلَـٰٓٮِٕكَ هُمُ ٱلۡڪَـٰذِبُونَ (١٠٥) 

অর্থ: মিথ্যা তো তারাই বানায় যারা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের ওপর ঈমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যুক।’ (সূরা নাহাল ১৬:১০৫)

 

২।  দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করতে হবেঃ

প্রত্যেক নবী রাসূলদের জীবনি পর্যালোচনা করলে এ কথা স্পষ্ট হবে যে, যখনই তারা আল্লাহর দ্বীন প্রচারের জন্য তাদের নিজ কওমের নিকট দাওয়াত পেশ করছেন, তখনই তারা তাদের উপর অমানুষিক অত্যচার চালিয়েছেন। এমন কি তাদের দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হইয়াছে।

 লোকমান হাকিম তার পুত্রকে ‘সৎকাজের আদেশ ও খারাপ কাজের নিষেধ করতে বলেছেন আর এ জন্য বিপদ আসলে সবর করতে বলেছেন,

 يَـٰبُنَىَّ أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَٱنۡهَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَٱصۡبِرۡ عَلَىٰ مَآ أَصَابَكَ‌ۖ إِنَّ ذَٲلِكَ مِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ (١٧) 

অর্থঃ হে পুত্র! নামায কায়েম করো, সৎকাজের হুকুম দাও, খারাপ কাজে নিষেধ করো এবং যা কিছু বিপদই আসুক সে জন্য সবর করো৷ একথাগুলোর জন্য বড়ই তাকিদ করা হয়েছে৷  (সূরা লুকমান ৩১:১৭)।

৩। দায়ীর কথা ও কাজের মিল থাকতে হবেঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفۡعَلُونَ (٢) ڪَبُرَ مَقۡتًا عِندَ ٱللَّهِ أَن تَقُولُواْ مَا لَا تَفۡعَلُونَ (٣) 

অর্থঃ হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা করো না? আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো না৷  (সূরা সফ ৬১:২-৩)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

۞ أَتَأۡمُرُونَ ٱلنَّاسَ بِٱلۡبِرِّ وَتَنسَوۡنَ أَنفُسَكُمۡ وَأَنتُمۡ تَتۡلُونَ ٱلۡكِتَـٰبَ‌ۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ (٤٤)

অর্থঃ তোমরা কি মানুষদেরকে সৎকার্যে নির্দেশ দাও আর নিজেদের কথা ভুলে যাও! অথচ তোমরা কিতাব অধ্যায়ন কর! তবে কি তোমরা বুঝ না। (সূরা বাকারা ২:৪৪)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يُعۡجِبُكَ قَوۡلُهُ ۥ فِى ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَيُشۡهِدُ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا فِى قَلۡبِهِۦ وَهُوَ أَلَدُّ ٱلۡخِصَامِ (٢٠٤)

অর্থঃ মানুষের মধ্যে এমন লোক আছে পার্থিব জীবনে যার কথা তোমার কাছে বড়ই চমৎকার মনে হয় এবং নিজের সদিচ্ছার ব্যাপারে সে বারবার আল্লাহকে সাক্ষী মানে ৷  কিন্তু আসলে সে সত্যের নিকৃষ্টতম শত্রু। (সূরা বাকারা  ২:২০৪)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনায়ন করে জাহান্নামের অগ্নির মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। আগুনে তার নাড়িভুড়ি বেরিয়ে পড়বে এবং গাধা যেমন যাতা (ঘানি) নিয়ে ঘুরে তেমনি সে ঘুরতে থাকবে। তখন জাহান্নামবাসীরা তার নিকট সমবেত হয়ে বলবে, হে অমুক, তোমার কি হল? তুমি না আমাদেরকে সৎকার্যে আদেশ দিতে এবং অসৎকার্য থেকে নিষেধ করতে? সে বলবে আমি তোমাদেরকে সৎকার্যে আদেশ দিতাম কিন্তু নিজে করতাম না। আর অসৎকার্য থেকে নিষেধ করতাম, কিন্তু নিজেই তা করতাম। (বুখারি)

৪।  নরম ও ভদ্রভাবে কথা বলতে হবেঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

ٱذۡهَبَآ إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ إِنَّهُ ۥ طَغَىٰ (٤٣) فَقُولَا لَهُ ۥ قَوۡلاً۬ لَّيِّنً۬ا لَّعَلَّهُ ۥ يَتَذَكَّرُ أَوۡ يَخۡشَىٰ (٤٤)

তোমরা উভয়ে ফিরাউনের নিকট গমন কর, সে অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করেছে। তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে, হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করবে বা ভয় করবে। (সূরা ত্বহা : ৪৩-৪৪)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَلَا تَسُبُّواْ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَيَسُبُّواْ ٱللَّهَ عَدۡوَۢا بِغَيۡرِ عِلۡمٍ۬‌ (١٠٨)

অর্থঃ তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিবে না কারণ ফলে তারা সীমালংঘন করে অজ্ঞতা বশত আল্লাহকে গালি দিবে। (সূরা আনআম ৬:১০৮)

 বিনম্র-কোমল হৃদয় হতে হবে অপর পক্ষে রূঢ় ও কঠোর হৃদয় হওয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

 فَبِمَا رَحۡمَةٍ۬ مِّنَ ٱللَّهِ لِنتَ لَهُمۡ‌ۖ وَلَوۡ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلۡقَلۡبِ لَٱنفَضُّواْ مِنۡ حَوۡلِكَ‌ۖ (١٥٩)

অর্থঃ আল্লাহর দয়ার অন্যতম প্রকাশ যে আপনি তাদের প্রতি বিনম্র-কোমল হৃদয় ছিলেন। যদি আপনি রূঢ় ও কঠোর চিত্ত হতেন তাহলে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৫৯)

একটি হাদিসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

কতিপয় ইহুদি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, আস-সামু আলাইকুম (আপনার উপর মরণ অভিশাপ)। আয়েশা রা. রাগন্বিত হয়ে বলেন, তোমাদের উপর মরণ, তোমাদেরকে আল্লাহ অভিশপ্ত করুন এবং তোমাদের উপর তার ক্রোধ অবতীর্ণ হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আয়েশা শান্ত হও। তুমি অবশ্যই সর্বদা বিনম্রতা ও বন্ধুভাবাপন্নতা অবলম্বন করবে। আল্লাহ সকল বিষয়ে বিনম্রতা ও বন্ধুভাবাপন্নতা ভালবাসেন। আর খবরদার! কখনই তুমি উগ্রতা ও অভদ্রতার নিকটবর্তী হবে না। আয়েশা রা. বলেন, তারা কী বলেছে আপনি কি তা শুনেননি? তিনি বলেন, আমি কি বলেছি তা কি তুমি শোন নি? আমি বলেছি, ওয়ালাইকুম অর্থাৎ তোমাদের উপরে। (বুখারি মুসলিম)

৫। মন্দ ব্যবহারের পরিবর্তে উৎকৃষ্ট ব্যবহার করতে হবেঃ

মহান আল্লাহ বলেছেন,

ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِى هِىَ أَحۡسَنُ ٱلسَّيِّئَةَ‌ۚ نَحۡنُ أَعۡلَمُ بِمَا يَصِفُونَ (٩٦)

অর্থঃ মন্দের মুকাবিলা কর যা উৎকৃষ্টতর তা দিয়ে, তারা যা বলে আমি সে সম্পর্কে বিশেষ অবহিত। (সূরা মুমিনুন : ৯৬)।

মহান আল্লাহ বলেছেন,

 يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ عَلَيۡكُمۡ أَنفُسَكُمۡ‌ۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا ٱهۡتَدَيۡتُمۡ‌ۚ إِلَى ٱللَّهِ مَرۡجِعُكُمۡ جَمِيعً۬ا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ (١٠٥)

অর্থঃ হে মুমিনগণ, তোমাদের উপরে শুধু তোমাদের নিজেদেরই দায়িত্ব। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তা হলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করবে না। (সূরা মায়েদা: ১০৫)

মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَلَا تَسۡتَوِى ٱلۡحَسَنَةُ وَلَا ٱلسَّيِّئَةُ‌ۚ ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِى هِىَ أَحۡسَنُ فَإِذَا ٱلَّذِى بَيۡنَكَ وَبَيۡنَهُ ۥ عَدَٲوَةٌ۬ كَأَنَّهُ ۥ وَلِىٌّ حَمِيمٌ۬ (٣٤) 

অর্থঃ হে নবী, সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান নয়৷ তুমি অসৎ কাজকে সেই নেকী দ্বারা নিবৃত্ত করো যা সবচেয়ে ভাল৷ তাহলে দেখবে যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গিয়েছে। (সুরা হা মিম সিজদা ৪১:৩৪)। 

৬।  হিকমত বা প্রজ্ঞা থাকতে হবেঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

 ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِ‌ۖ وَجَـٰدِلۡهُم بِٱلَّتِى هِىَ أَحۡسَنُ‌ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ‌ۖ وَهُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُهۡتَدِينَ (١٢٥)

অর্থঃ হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে৷ তোমার রবই বেশী ভালো জানেন কে তাঁর পথচ্যুত হয়ে আছে এবং সে আছে সঠিক পথে৷ (সুরা নাহল ১৬:১২৫)। 

তাদের ক্রটি ক্ষমা করে দাও৷ তাদের জন্য মাগফিরাতে দোয়া করোঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

فَٱعۡفُ عَنۡہُمۡ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ وَشَاوِرۡهُمۡ فِى ٱلۡأَمۡرِ‌ۖ فَإِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَوَكِّلِينَ (١٥٩)

 অর্থঃ  (হে নবী!) তাদের ক্রটি ক্ষমা করে দাও৷ তাদের জন্য মাগফিরাতে দোয়া করো এবং দীনের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে তাদেরকে অন্তরভুক্ত করো৷ তারপর যখন কোন মতের ভিত্তিতে তোমরা স্থির সংকল্প হবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো৷ আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ করে৷ 

৭। দা‘য়ীকে উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হতে হবেঃ

ইসলাম প্রচারে উত্তম চরিত্রে চরিত্রের কোন বিকল্প নাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীন প্রচারের প্রধান ও প্রথম হাতিয়ার ছিল উত্তম চরিত্র। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম যখন দাওয়াত দিলেন সকলে তাহার দাওয়াত প্রত্যাখান করে কিন্তু তারা উত্তর চরিত্র দিকে তাকিয়ে তাকে মিথ্যাবাদী বলে তার দাওয়াত প্রত্যখান করাও কঠিন ছিল। তাই দায়ীকে উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হতে হবে। দায়ীর চরিত্রে ইলমের প্রভাব, তার ঈমান, ইবাদাত, স্বভাব ও সব ধরনের আচরণে পরিলক্ষিত হতে হবে উত্তম। অতঃএব, ইবাদাত, লেনদেন, স্বভাব চরিত্র ও চলাফেরা ইত্যাদি যেসব দিকে দা‘য়ী দাওয়াত দিবে সে সব ব্যাপারে তাকে উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হতে হবে যাতে সে গ্রহণযোগ্য দায়ী হয়। সাধারন দায়ীকে ধর্মের মডেল মনে করা হয় তার মাঝে চরিত্রগত কোন ত্রুটি দেখা দিলে তার প্রচারিত সব কিছুতেই ত্রুটি মনে হবে। তাই দায়ীকে সর্বপ্রথম উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হতে হবে। সে যদি তার আমলের বিপরীত হয় তবে শীঘ্রই তার দাওয়াত ব্যর্থ হবে, যদিও সাময়িক কিছু দিনের জন্য সফল হতে পারে।   

৮। দায়ীর অন্তর বিরোধীদের প্রতি উদার হতে হবেঃ

দায়ীর অন্তরের একমাত্র চাহিদা হল আল্লাহ দ্বীনের প্রচার ও প্রশার। তাই শুধু বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা করা যাবে না। যখন জানা যাবে যে, আমি যার বিরোধীতার করছি সেও আমার মত হক দ্বীন প্রচার করছে এবং তার উদ্দেশ্য ভালো। সে আমার মত দলিল প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই বিরোধীতা করে, তবে এসব ক্ষেত্রে দ্বীনের শার্থে নমনীয় হতে হবে।

বিরোধীদের ফিকহী মাসয়ালা মাসায়েলে খুব উদারত ও প্রস্ততা দেখাতে হবে কিন্তু আকিদা বা মানহাযে কোন প্রকার ছাড় নেই। যদি দেখা যায় বিরোধীগণ শুধু তাদের ভ্রান্ত ও বাতিল আকিদার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিরোধিতা ও অস্বীকার করার উদ্দেশ্যে বিতর্ক করছে, তবে তার আচরণ অনুযায়ী তাদেন সাথে ব্যবহার করতে হবে। যাতে আম জনতা তার থেকে ভেগে যায় এবং সতর্ক হতে পারে। কেননা তার শত্রুতা প্রকাশ পক্ষান্তরে সত্যকেই প্রকাশ। পক্ষান্তরে ফিকহী মাসয়ালা মাসায়েলে একাধীক মতামত থাকা স্বাভাবিক। কখনও দেখা যায় একাধীক মতের সবগুলিই সঠিক। আবার সঠিক না ও হতে পারে। এই ভূলের জন্য বিরোধীদের কাফির বলা যাবে না, এটা আল্লাহ তা‘আলা বান্দাহদের উপর প্রশস্ত করেছেন। তাহলে আমি কেন সংকির্ণতা প্রদর্শণ করব। এখানে ভুলকে আল্লাহ অনেক প্রশস্ত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا حَكَمَ الحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ، وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ»

অর্থঃ কোন বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তার জন্য রয়েছে দু’টি পুরস্কার। আর যদি কোন বিচারক ইজতিহাদে ভুল করেন তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার। (বুখারী, হাদীস নং ৭৩৫২, মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৬)।

বিরোধীর প্রতি উদার হতে হবে শুধু ফিকহী মাসায়েলে। কারন মুজতাহীদ ইজতিহাদ করতে ভুল করলেও পুরস্কার পাবের। কিন্তু কুরআন সুন্নাহের ষ্পষ্ট বিষয় কোন ছাড় চলবেনা। কেননা, কুরআন সুন্নাহ প্রমানিত কোন ব্যাপারে ইজতিহাদ করার ক্ষমতা কাউকে প্রদান করা হয় নাই। এই সকল বিষয় মহান আল্লাহ ফয়সালাই চুড়ান্ত। আল্লাহ বলেছেন,

وَمَا ٱخۡتَلَفۡتُمۡ فِيهِ مِن شَيۡءٖ فَحُكۡمُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبِّي عَلَيۡهِ تَوَكَّلۡتُ وَإِلَيۡهِ أُنِيبُ

অর্থঃ আর যে কোন বিষয়েই তোমরা মতবিরোধ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে; তিনিই আল্লাহ, আমার রব; তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই”। (সূরা আশ্-শূরা ৪২:১০)।

মহান আল্লাহ আরও বলেছেন,

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا

অর্থঃ হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। (সূরা নিসা ৪:৫৯)।

দায়ীর অন্তর বিরোধীদের প্রতি কতটুকু উদার হবে তা এই আয়াত দ্বারা নির্ধারন করে দিয়েছেন। অর্থাৎ দায়ী যতক্ষন কুরআন সুন্নাহর উপর কায়েম থাকবে ততক্ষন তার অনুসরন করতে হবে। প্রতিটি মানুষই ভুল করতে পারে। কেউ ভুলের উর্ধে নয়। তাই তাকে কুরআন সুন্নাহর মানদন্ডে পরীক্ষা করা হবে। কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কথা গ্রহন করা হবে না, যদি মনে হবে বিরোধী ব্যক্তিরা দ্বীন ও জ্ঞানে অনেক বড়। কেননা মহান আল্লাহ ও তার রাসূলের কথায় ভুলের কোন সম্ভাবনাই নাই।

আমাদের কাজ হলো, যে সকল লোক আকিদা মানহাযে সত্যপন্থি তাদের আমল আখলাক ত্রুটি বিচ্যুতির প্রতি সহনশীল আচরন করা। তবে যারা এই সুবাধে বিভিন্ন নামে উপনামে বিভক্ত হয়ে দ্বীন প্রচার করছে, তাদের জন্য আপসোস আর দুয়া করা ছাড়া কোন পথ নেই। কেননা তারা দলের স্বার্থে অন্য মুসলিমভাই কে কাফির, ফাসেক বলে উল্লেখ করছে। নিজ দলের বাইরে আর কাউকে হক মনে করে না।  নিজ দলের বিরোধী কোন কথা বললে তাকে আর সয্য হয় না। তাদের দিকে তাকালে বলে হবে ইসলাম ছাড়া যত সহজ তাদের দল ছাড়া তত কঠিক। অথচ মহান আল্লাহ দলে দলে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাঁর নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,

إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍۚ إِنَّمَآ أَمۡرُهُمۡ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ

অর্থঃ নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন ব্যাপারে তোমার দায়িত্ব নেই। তাদের বিষয়টি তো আল্লাহর নিকট। অতঃপর তারা যা করত, তিনি তাদেরকে সে বিষয়ে অবগত করবেন”। (সূরা আন‘আম ৬:১৫৯]

মন্তব্যঃ এক কথায় বলে গেলে বলতে হবে, যে সকল দায়ীর আকিদা ও মানহায ঠিক আছে। কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে দাওয়াত দেন, দ্বীন ও ঐক্যের স্বার্থ সেই সকল দায়ীদের প্রতি সহনশীল উদারতা প্রদর্শণ কতে হবে।

Leave a comment