বিভিন্ন দিবস কেন্দ্রিক বিদআত চতুর্থ কিস্তি

জন্মদিন ও বিশ্ব ভালবাসা দিবস

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।

১। জন্মদিনঃ

মাসের যে তারিখে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, বছর ঘুরে সে তারিখটি আবার ফিরে আসলে সেটাই তার জন্মদিন। সে দিনে আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধক নিয়ে বড় কেক টেকে আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করে। এতে আমন্ত্রিত মেহমানদের সুস্বাধু খাবার দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে। মেহমানরা তাকে জন্মদিনের শুভকামনা জানান এবং তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে দোয়া করেন। সেই সাথে তার জন্য উপহার সামগ্রীও দিয়ে থাকেন।

আজকের সমাজে জন্মদিন পালন করাটা আধুনিকতা হয়ে গেছে। আর জন্মদিন পালন না করাটা হয়ে গেছে ব্যাক ডেটেড। একজন মুসলিম হিসেবে এই সম্পর্কে ভাবা উচিত। জন্মদিন পালন করা ইসলামি চেতনার পরিপন্থি। জন্মদিন পালন করা মুসলিমদের কালচার নয়। এটি এসেছে খ্রিস্টানদের কাছ থেকে যা মুসলিমদের উপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। এই উপলক্ষ্যে আনন্দ-ফুর্তি করা অথবা কোন আমল করার বিষয়ে কুরআন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয়। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবী, তাবেয়ী বা তাবে তাবেয়ীদের যুগে জন্মদিন পালনের কোন অস্তিত্ব ছিল না। যদি জন্মদিন বলতে ইসলামে কোন কিছু থাকত তাহলে হাদীস ও ইতিহাসের কিতাব গুলোতে সাহাবী ও তাবাঈন (রাঃ) এর জন্মদিন পালনের কোন না কোন ঘটনা থাকত। বর্তমানে এই কথা যাচাইয়ের জন্য আর আলেম হতে হয় না। আপনার সামনে সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিজি, সুনানে নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালেক, মুসনাদে আহম্মদসহ বহু হাদিসের গ্রন্থ অনুদিত। সময় থাকলে মিলিয়ে নেন। কোন হাদিস গ্রন্থে এমন প্রমান নাই যে, সাহাবী, তাবেয়ী বা তাবে-তাবেয়ীদের কেউ জম্মদিন পালন করেছেন। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আওয়াল মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন এটা নিশ্চিত ভাবে জানা না থাকায় সীরাত প্রণেতাদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। আমাদের মাঝে অতি প্রাসিদ্ধ বারই রবিউল আউয়া্লও সর্ব সম্মত মত নয়। সিরাতের প্রন্থে কম পক্ষে রাসুল্লাল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ২০ টি জম্ম তারিখ পাওয়া যায়। যদি জম্মদিন পালনে বিশেষ কোন ফজিলত থাকত তাহলে সাহাবিগণ (রাঃ) যে কোন উপায় রাসুল্লাল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জম্ম তারিখ বের করে পালন করেতেন। অথচ জন্মদিন পালন তো দূরের কথা তারা প্রিয় মানুষির জন্ম তারিখই সংরক্ষণ করে নাই। এর মাধ্যমে এ কথা প্রমাণিত হয় জন্মদিন বলতে বর্তমানে যা বুঝায় ইসলামে এর কোন অস্তিত্বই ছিল না।

কিছু দিবস রয়েছে, যেগুলো মানুষকে সচেতন করার জন্য বা সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে মেসেজ দেওয়ার জন্য পালন করা হয়ে থাকে। তবে ইবাদতের কোনো ফরম্যাট এর মধ্যে থাকতে পারবে না, তাহলে এই কাজটি বেদাত হয়ে যাবে। ইমানদার ব্যক্তিগণ বেহুদা কাজ থেকে নিজেদের দূরে রাখবেন। এসব কাজে সময় নষ্ট করার সামান্যতম কোনো সুযোগ তাঁদের নেই। রাসুল (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘একজন মুসলিমের প্রকৃত ‌সৌন্দর্য হচ্ছে সেখানেই, সে এমন কাজ পরিহার করে চলবে, যেটা তার জন্য অপ্রয়োজনীয়।’

জম্মদিনের খারাপ দিকঃ

১। জন্মদিন কেক কেটে পালন করা হচ্ছে যা পশ্চিমাদের সংস্কৃতি। কোন মুসলিম বিধর্মীদের বা বিজাতী লোকের অনুসরণ করতে পারে না।

ইবনে উমার রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে,সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (সুনানে আবূ দাঊদঃ ৪০৩১)

২। অনেক ক্ষেত্র জম্মদিনের পার্টিতে নারী পুরুষ একত্র হয় অনুষ্ঠান উপভোদ করে যেখানে পর্দার কোন বালাই থাকে না। পর্দার ফরজ লংঘন করে এই ধরনের অনুষ্ঠানে যোগদান করা হারাম।

৩। যারা জম্মদিন পালনের জন্য বড় অনুষ্ঠান করে তারা অনেক সময় নাচ গানের আসর বসায়। এই ধনের অনুষ্ঠানে যে কোন গানের অনুষ্ঠান করা হারাম। অনেক সময় মিউজিক্যাল সাউন্ডের সাথে যুবক যুবতীরা নাচতে থাকে। যা মুলত হারাম কাজ।

৪। এই দিন উপলক্ষে অতিতীদের আপ্যায়নের জন্য খাবরের আয়োজন করে যা মুলত অপচয়।

মন্তব্যঃ ইসলামের দৃষ্টিতে জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস পালন করা এবং এ উপলক্ষে যে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয় তা হারাম এবং বিদআত। জন্ম দিবস পালনের কোন প্রমাণ কিংবা চর্চা রাসুল সা. কিংবা তাঁর সাহাবী (রাঃ) দের মাধ্যমে হয়েছিল বলে কোন প্রমাণ নাই। বর্তমানে জন্মদিন পালন করাটা হয়ে গেছে যেন একে অপরের প্রতি মহবত্তের পরিচায়ক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগন ছিলেন সত্যিকারার্থে নবীপ্রেমিক ও সর্বোত্তম অনুসারী। নবী প্রেমের নজীর ও দৃষ্টান্ত তারাই স্থাপন করেছেন। যদি জন্মদিন পালন করাটা ভাল হত ও মহব্বতের পরিচায়ক হত তবে তারা তা অবশ্যই করতেন।

বিশ্ব ভালবাসা দিবস

ভালোবাসা দিবস বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে একটি বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা এবং অনুরাগের মধ্যে উদযাপিত হয়। দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে থাকে, যদিও অধিকাংশ দেশেই দিনটি ছুটির দিন নয়।

১। ইতিহাসঃ

বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস প্রাচীন। এই দিনের সূচনা প্রায় ১৭শ’ বছর আগের পৌত্তলিক রোমকদের মাঝে প্রচলিত ‘আধ্যাত্মিক ভালবাসা’র মধ্য দিয়ে। এই দিন সম্পর্কে নানান কল্পকাহিনী জড়িত আছে। কোনটা সত্য আর কোনটি মিথ্যা তার বলা কঠিত। ভ্যালেনটাইন ডে সম্পর্কে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তার মধ্য থেকে কয়েকটি তুলে ধরা হল।

১. ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্মপ্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন।

২. রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আমলের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেনটাইন সম্রাটের খ্রিস্টধর্ম ত্যাগের আহবান প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।

৩. ১৪ ফেব্রুয়ারি রোমকদের লেসিয়াস দেবীর পবিত্র দিন। এদিন তিনি দু’টি শিশুকে দুধ পান করিয়েছিলেন। যারা পরবর্তীতে রোম নগরীর প্রতিষ্ঠাতা হয়েছিল।

৪. ১৪ ফেব্রুয়ারি রোমানদের বিবাহ দেবী ‘ইউনু’-এর বিবাহের পবিত্র দিন।

৫. রোম সম্রাট ক্লডিয়াস তার বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করতে গিয়ে যখন এতে বিবাহিত পুরুষদের অনাসক্ত দেখেন, তখন তিনি পুরুষদের জন্য বিবাহ নিষিদ্ধ করে ফরমান জারি করেন। কিন্তু জনৈক রোমান বিশপ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এটাকে প্রত্যাখ্যান করেন ও গোপনে বিয়ে করেন। সম্রাটের কানে এ সংবাদ গেলে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। সেদিন থেকে দিনটি ভালবাসা দিবস হিসাবে কিংবা এ ধর্মযাজকের নামানুসারে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশে বিশ্ব ভালবাসা  দিবস কি ভাবে আর্বিভাব হয়?

১৯৯৩ সালের দিকে বাংলাদেশে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের আর্বিভাব ঘঠে। যায় যায় দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান। তিনি পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের ছোঁয়া নিয়ে দেশে এসে লন্ডনী সংস্কৃতির প্র্যাকটিস শুরু করেন। তিনি প্রথম যায় যায় দিন পত্রিকার মাধ্যমে বিশ্ব ভালবাসা দিবস বাংলাদেশীদের কাছে তুলে ধরেন। তেজগাঁওয়ে তার পত্রিকা অফিসে কেউ চাকরী নিতে গেলে না কি সাথে তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যেতে হতো। প্রেমের যুগললবন্দী কপোত-কপোতীকে দেখে ওনি না কি খুব খুশী হতেন। এজন্য শফিক রেহমানকে বাংলাদেশে ভালবাসা দিবসের জনক বলা হয়।

খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সে দেশের আদালত। বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ওশুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করে এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়। (উৎসঃ উইকিপিডিয়া এবং দৈনিক ইনকিলাব)

আগেকার দিনে বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ পালিত হত বিচিত্র অনুষ্ঠানাদির মধ্যে দিয়ে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল। দু’জন শক্তিশালী পেশিবহুল যুবক গায়ে কুকুর ও ভেড়ার রক্ত মাখত। অতঃপর দুধ দিয়ে তা ধুয়ে ফেলার পর এ দু’জনকে সামনে নিয়ে বের করা হ’ত দীর্ঘ পদযাত্রা। এ দু’যুবকের হাতে চাবুক থাকত যা দিয়ে তারা পদযাত্রার সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে আঘাত করত। রোমক রমণীদের মাঝে কুসংস্কার ছিল যে, তারা যদি এ চাবুকের আঘাত গ্রহণ করে তবে তারা বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পাবে। এ উদ্দেশ্যে তারা এ মিছিলের সামনে দিয়ে যাতায়াত করত।

২। বর্তমান অবস্থাঃ

বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোতেই এই দিনটি বেশী উদযাপিত হয়। এই দিনে সেখানে প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, এমনকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও উপহার বিনিময় হয়। উপহার সামগ্রীর মধ্যে আছে পত্র বিনিময়, খাদ্যদ্রব্য, ফুল, বই, ছবি, প্রেমের কবিতা, গান, শ্লোক লেখা কার্ড প্রভৃতি। এ দিন স্কুলের ছাত্ররাও তাদের ক্লাসরুম সাজায় এবং অনুষ্ঠান করে।

পশ্চিমা যুবক যুকতীগন এই দিনে চুম্বনাবদ্ধ হয়ে থাকার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া। কোথাও কোথাও চুম্বনাবদ্ধ হয়ে ৫ মিনিট অতিবাহিত করে ঐ দিনের অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকে। শুধু পশ্চিমা দেশগুলো যুবক যুকতীগন নয়, বরং সবাই এই দিন নানান অনুষ্ঠানে মাধ্যমে উপভোগ করে থাকে।  ‘ভালবাসা দিবস’ কে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন হোটেল, ড্যান্স বার, মদের বার ইত্যাদি সাজান হয় বর্ণাঢ্য সাজে। নানা রঙের বেলুন আর অসংখ্য ফুলে স্বপ্নিল করা হয় বলরুমের অভ্যন্তর। জম্পেশ অনুষ্ঠানের সূচিতে থাকে লাইভ ব্যান্ড কনসার্ট, ডেলিশাস ডিনার এবং উদ্যাম নাচ। আগতদের সবাই সম্মিলিত নাচে অংশ গ্রহন করে।

পশ্চিমাদের থেকে আমাদের দেশও পিছিয় নেই। বর্তমান অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে স্যাটেলাইটের কল্যাণে আমাদের সমাজ পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসরণ করছে। নিজেদের স্বকীয়তা-স্বাতন্ত্র্যকে ভুলে গিয়ে, ধর্মীয় অনুশাসনকে উপেক্ষা করে তারা আজকে প্রগতিশীল হওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে, তাদের সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বা বিশ্ব ভালবাসা দিবস উদযাপন করে থাকে। আমাদের দেশে উঠতি বয়সের যুবক যুকতীরা ভালবাসায় মাতোয়ারা থাকে। ভালবাসা দিবসে যুবগ যুবতীরা রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উদযাপন করে থাকে। এই দিনে বাজধানী ঢাকার পার্ক, রেস্তোরাঁ, ভার্সিটির করিডোর, টিএসসি, ওয়াটার ফ্রন্ট, ঢাবির চারুকলার বকুলতলা, আশুলিয়া- সর্বত্র থাকে প্রেমিক-প্রেমিকাদের তুমুল ভিড়। মনে হবে আর ভালবাসার ঈদের দিন। পশ্চিমাদের মতই আমাদের দেশের নামী-দামী হোটেলের বলরুমে বসে তারুণ্যের মিলন মেলা। মনে হবে কোন অভিজাত পশ্চিমা দেশের হোটেলে বসে ভালবাসা দিবস পালন করছি।  ঢাবির টিএসসি এলাকায় প্রতি বছর এ দিবসে বিকেল বেলা অনুষ্ঠিত হয় ভালবাসা র‌্যালি। এতে বেশ কিছু খ্যাতিমান দম্পতির সাথে প্রচুরসংখ্যক তরুণ-তরুণী, প্রেমিক-প্রেমিকা যোগ দেয়। প্রেমের কবিতা আবৃত্তি, প্রথম প্রেম, দাম্পত্য এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়াদির স্মৃতি চারণে অংশ নেয় তারা।

এই ধরনের ভালাবাসায় কোন নৈতিকরা নাই। আছে শুধু সার্থের টান। ইসলামের ভালবাসা থাকে একক যার মাঝে কোন খাদ থাকে না। এই ভালবাসার একজনই দাবিদার, আর পেয়েও যায় একজন। কিন্তু বর্তমানের ভ্যালেন্টাইন এর ভালবাসা হলঃ জীবনজ্বালা আর জীবন জটিলতার নাম। মা-বাবা, ভাইবোন হারাবার নাম। নৈতিকতার বন্ধন মুক্ত হওয়ার নাম। তাদের ভালবাসার পরিণতি ‘ধর ছাড়’ আর ‘ছাড় ধর’ নতুন নতুন সঙ্গী। তাদের এ ধরা-ছাড়ার বেলেল্লাপনা চলতে থাকে জীবনব্যাপী।

৩। ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে হারাম কেন?

এই দিনে ইতিহাস বলছে ইহা একটি খাটি খৃষ্টানদের অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানর সাথে একাত্ত প্রকাশ মানে খৃষ্টানদের সাথে একাত্ত প্রকাশ।

বর্তমান খৃষ্টান ধর্মে পর্দার কোন বিধান নেই। যৌনতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নারী পুরুষের অবাধ মেলামেসা তাকের নিকট কোন পাপ কাজ নয়। অপর পক্ষে পর্দা করা ইসলামে ফরজ এবং যৌনতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নারী পুরুষের অবাধ মেলামেসা হারাম। কাজেই ভালবাসা দিবসে পশ্চিমা খৃষ্টানগণ যে সকল অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা কাজ করে তাদর কাছে কোন অন্যায় নয়। কিন্তু একজন মুসলিমের  নিকট এই সকল  অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা হারাম কাজ। প্রতিটি কাজের জন্য সে কবিরা গুনাহে পতিত হবে। তাওবা ছাড়া আল্লাহ এই সকল গুনাহ মাপ করবেন না। এখান একবার ভাবুন তো পশ্চিমা অনুকরনে ভালবাসা দিবস উদযাপন করা কতটুকু গুনাহের কাজ?

পশ্চিমা আদতে দেশের ‘ভালবাসা দিবস’ কে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন হোটেল ও ড্যান্স বার সাজান হয় বর্ণাঢ্য সাজে। নামি-দামী হোটেলের বলরুমে বসে তারুণ্যের মিলন মেলা। এখনে চলে ইসলাম বিরোধী অশ্লীলাত মহা উৎসব। অশ্লীলাতার বাহিরে সবচেয় বড় গুনাহের কাজ হল অপচয় করা। এই দিবসের উপলক্ষে যত ব্যয় করা হবে সবই হারাম কাজ হবে।

৪।  মানুষের অন্তর অনুকরণ প্রিয়, এই অনুকরন হবে কুরআন হাদিসের। কিন্তু ইসলামি বিরোধী কাজের অনুসরণ সব সময় নিন্দিত। বিশেষ করে অনুকরণীয় বিষয় যদি হয় আক্বীদা, ইবাদত, ধর্মীয় আলামত বিরোধী, আর অনুকরণীয় ব্যক্তি যদি হয় বিধর্মী, বিজাতি। দুর্ভাগ্য যে, মুসলমানরা ক্রমশ ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে আসছে এবং বিজাতিদের অনুকরণ ক্রমান্বয়ে বেশি বেশি আরম্ভ করছে। যার অন্যতম হল ভালবাসা দিবস। মুসলমানদের জন্য এসব বিদস পালন জঘন্য অপরাধ। দেখুন হাদিসে কিভাবে বিধর্মীদের অনুসকণ করতে নিষেধ করেছন।

আবূ ওয়াকীদ লায়ছী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হুনায়ন অভিযানে বের হন তখন মুশরিকদের একটি বৃক্ষের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। একে ’‘যাত আনওয়াত’’ বলা হত। তারা এতে তাদের অস্ত্র-সস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এদের যেমন ’‘যাত আনওয়াত’’ আছে আমাদের জন্যও একটা ’যাত আনওয়াত’ নির্ধারণ করে দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সুবহানাল্লাহ! এতো মূসা (আঃ)-এর কওমের কথার মত হলো যে, এদের (কাফিরদের) যেমন অনেক ইলাহ আছে আমাদের জন্যও ইলাহ বানিয়ে দাও। যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার কসম, তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতি-নীতি অবলম্বন করবে। (তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৮০ ইসলামি ফাউন্ডেশন, হাদিসের মান সহিহ)

৪। ভালবাসা দিবস পালন সম্পর্কে তিনটি ফতোয়াঃ

ভালবাসা দিবস পালন করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে সৌদি আরবের ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির এবং সাথে আরও দুই জন আলেম ফতোয়া নিম্মে উল্লেখ করা হল। পাঠকের সুবিধার জন্য হুবহু তাদের ফতোয়া তুলে ধরছিঃ

৫। এ বিষয়ে শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রশ্নটি নিম্নরূপ:

-সম্প্রতি ভালবাসা দিবস উদযাপন করার প্রবণতা বিস্তার লাভ করেছে; বিশেষতঃ ছাত্রীদের মাঝে। এটি একটি খ্রিস্টান উৎসব। এ দিনে লাল বেশ ধারণ করা হয়। লাল পোশাক ও লাল জুতা পরিধান করা হয়। লাল ফুল বিনিময় করা হয়। আমরা এ ধরণের উৎসব পালন করার শরয়ি বিধান জানতে চাই এবং এ ধরণের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আপনার পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য দিক নির্দেশনা প্রত্যাশা করছি? আল্লাহ আপনাকে হেফাযত করুন।

তিনি উত্তরে বলেন: ভালবাসা দিবস পালন নিম্নোক্ত কারণে জায়েয নয়

এক. এটি একটি বিদআতি উৎসব; শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই।

দুই. এটি মানুষকে অবৈধ প্রেম ও ভালবাসার দিকে আহ্বান করে।

তিন. এ ধরনের উৎসব মানুষের মনকে সলফে সালেহিনদের আদর্শের পরিপন্থী অনর্থক কাজে ব্যতিব্যস্ত রাখে।

সুতরাং এ দিনের কোন একটি নিদর্শন ফুটিয়ে তোলা জায়েয হবে না। সে নিদর্শন খাবার-পানীয়, পোশাকাদি, উপহার-উপঢৌকন ইত্যাদি যে কোন কিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট হোক না কেন।

মুসলমানের উচিত তার ধর্মকে নিয়ে গর্ববোধ করা। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দেয়া। আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি তিনি যেন মুসলিম উম্মাহকে প্রকাশ্য ও গোপন সকল ফিতনা থেকে হেফাযত করেন এবং তিনি যেন আমাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন, আমাদের তাওফিক দান করেন।[শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (১৬/১৯৯)]

 

৬। ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

 কিছু কিছু মানুষ প্রতি বছর ঈসায়ী সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইনস ডে) পালন করে থাকে। এ দিনে তারা লাল গোলাপ বিনিময় করে, লাল পোশাক পরিধান করে, একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময় করে। কিছু কিছু মিষ্টির দোকান লাল রঙের মিষ্টি তৈরী করে, এর উপরে ‘লাভ চিহ্ন’ অংকন করে। কিছু কিছু দোকান এ দিনের জন্য তৈরী বিশেষ বিশেষ সামগ্রীগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। সুতরাং নিম্নোক্ত বিষয়ে আপনাদের অভিমত কি:

এক: এ দিনটি পালন করার বিধান কি?

দুই: এ দিন উদযাপনকারী দোকান থেকে কেনাকাটা করার বিধান কি?

তিন: এ দিনে যারা উপহার বিনিময় করে থাকে তাদের কাছে এসব উপকরণ বিক্রি করার বিধান কি?

উত্তরে তারা বলেন: কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিল ও সলফে সালেহিনের ইজমার ভিত্তিতে জানা যায় যে, ইসলামে ঈদ শুধু দুইটি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এ ছাড়া যত উৎসব আছে সে উৎসব কোন ব্যক্তিকেন্দ্রিক হোক, দলকেন্দ্রিক হোক, কোন ঘটনাকেন্দ্রিক হোক অথবা বিশেষ কোন ভাবাবেগকেন্দ্রিক হোক সেগুলো বিদআত। মুসলমানদের জন্য সেসব উৎসব পালন করা, তাতে সম্মতি দেয়া, এ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা অথবা এক্ষেত্রে সহযোগিতা করা নাজায়েয। কারণ এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনের শামিল। যে ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া সীমা লঙ্ঘন করে সে নিজ আত্মার উপরই জুলুম করে। এর সাথে এ উৎসব যদি কাফেরদের উৎসব হয়ে থাকে তাহলে এটি এক গুনাহর সাথে আরও একটি গুনাহর সম্মিলন। কারণ এ উৎসব পালনের মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য ও তাদের সাথে মিত্রতা গ্রহণের বাস্তবতা পাওয়া যায়। অথচ আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ ও তাদের মিত্রতা গ্রহণ থেকে নিষেধ করেছেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি কোন কওমের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত”। ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ সম্পর্কে বলা হয়- এটি পৌত্তলিক ও খ্রিস্টান ধর্মের উৎসব। সুতরাং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মুসলমানের জন্য এ দিবস পালন করা, এটাকে সমর্থন করা অথবা এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা জায়েয হবে না। বরং মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবং আল্লাহর গজব ও শাস্তির কারণসমূহ থেকে দূরে থাকার নিমিত্তে এটি বর্জন করা এবং এর থেকে দূরে থাকা। অনুরূপভাবে এ গর্হিত দিবস উদযাপনে কোন ধরনের সহযোগিতা করা থেকে বেঁচে থাকা। যেমন-পানাহার, বেচাবিক্রি, কেনাকাটা, পণ্যপ্রস্তুত, উপহার বিনিময়, পত্র বিনিময়, বিজ্ঞাপন প্রদান ইত্যাদি যে কোন প্রকারের সহযোগিতা হোক না কেন সেসব থেকে বেঁচে থাকা। কারণ এ ধরনের সহযোগিতা গুনাহর কাজ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার নামান্তর। আল্লাহ তাআলা বলেন: “সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ২] একজন মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে- সর্বাবস্থায় কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে থাকা; বিশেষতঃ ফিতনা-ফাসাদের সময়। মুসলমানের উচিত যাদের উপর আল্লাহ লানত পড়েছে, যারা পথভ্রষ্ট, যারা পাপাচারী- আল্লাহকে সম্মান করে না, ইসলামের সম্মান চায় না এ সকল মানুষের বিভ্রান্তির ব্যাপারে সচেতন থাকা। মুসলমানের দায়িত্ব আল্লাহর কাছে ধর্না দিয়ে তাঁর নিকট হেদায়েতের জন্য ও এর উপর অটল থাকার জন্য প্রার্থনা করা। কারণ আল্লাহ ছাড়া কোন হেদায়েতদাতা নেই, তিনি ছাড়া অটল রাখার কেউ নেই। তিনি পবিত্রময়, তিনিই তাওফিকদাতা। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। সমাপ্ত।

 

৭। শাইখ জিবরীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল

আমাদের যুবক-যুবতীর মাঝে ভালবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইন ডে) পালনের রেওয়াজ বিস্তার লাভ করেছে। ভ্যালেন্টাইন হচ্ছে- একজন পাদ্রির নাম। খ্রিস্টানেরা এ পাদ্রিকে সম্মান করে থাকে এবং প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি তারা এ দিবসটি উদযাপন করে, উপহার-উপঢৌকন ও লাল গোলাপ বিনিময় করে থাকে, লাল রঙের পোশাক পরিধান করে থাকে। এ দিবসটি পালন করার শরয়ি বিধান কী? অথবা এ দিনে উপহার বিনিময় ও আনন্দ প্রকাশ করার বিধান কী?

জবাবে তিনি বলেন:

এক. এ ধরণের বিদআতি উৎসব পালন করা নাজায়েয। এটি নবউদ্ভাবিত বিদআত। শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। এটি আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের বিধানের আওতায় পড়বে যে হাদিসে এসেছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীন বা শরিয়তের মধ্যে এমন কিছু চালু করবে যা এতে নেই সেটি প্রত্যাখ্যাত।”

দুই. এ দিবস পালনের মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ, তারা যে বিষয়কে মর্যাদা দেয় সেটাকে মর্যাদা প্রদান, তাদের উৎসবের প্রতি সম্মান দেখানো এবং ধর্মীয় বিষয়ে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করার অর্থ পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে- “যে ব্যক্তি বিজাতিদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভুক্ত।”

তিন. এ দিবস পালনের মধ্যে অনেক ক্ষতিকর ও গর্হিত বিষয় রয়েছে। যেমন- খেলতামশা করা, গান করা, বাঁশী বাজানো, গিটার বাজানো, বেপর্দা হওয়া, বেহায়াপনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, গায়রে মোহরেম পুরুষের সামনে নারীদের প্রদর্শনী ইত্যাদি হারাম কাজ এবং ব্যভিচারের উপকরণ ও সূচনাগুলো এ উৎসবে ঘটে থাকে। এটাকে জায়েয করার যুক্তি হিসেবে চিত্ত বিনোদনের যে কারণ দর্শানো হয় বা রক্ষণশীল থাকার দাবী করা হয় সেটা অমূলক। যে ব্যক্তি নিজের কল্যাণ চায় তার উচিত গুনাহর কাজ ও উপকরণ থেকে দূরে থাকা।

তিনি আরও বলেন: অতএব, যদি বিক্রেতা জানতে পারে যে, ক্রেতা এ উপঢৌকন ও গোলাপ ফুল কিনে এ দিবস উদযাপন করবে, কাউকে উপহার দিবে অথবা এ দিবসগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে তাহলে ক্রেতার কাছে এগুলো বিক্রি করা নাজায়েয; যাতে করে বিক্রেতা এই বিদআত সম্পাদনকারী ব্যক্তির সাহায্যকারী হিসেবে সাব্যস্ত না হয়। আল্লাহই ভাল জানেন। সমাপ্ত।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment