ইহরামের চারটি ত্রুটি

ইহরামের চারটি ত্রুটি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করাঃ

উপরে বর্ণিত পাঁচটি মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা হজ্ব ও উমরার ওয়াজিব। অতএব যে ব্যক্তি হজ্ব বা উমরা করতে চায় সে ব্যক্তি স্থল, জল বা আকাশ যে পথে আগমন করুক না কেন তার জন্য ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নেই। উপরে বর্ণিত সহিহ বুখারী ১৪৪০ নম্বর হাদিস থেকে দেখা যায় যে, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যেহেতু ইরাক বাসিদের সমদূরত্ব যাতু’ইরক মীকাতরূপে নির্ধারণ করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, মীকাতের বরাবর কোন স্থান অতিক্রম করলে সেটা মীকাত অতিক্রম করার পর্যায়ভুক্ত। যে ব্যক্তি বিমানে চড়ে মীকাতের উপর দিয়ে অতিক্রম করে সে যেন মীকাতই অতিক্রম করে। অতএব, তার কর্তব্য হচ্ছে- মীকাতের বরাবরে আসলে ইহরাম বাঁধা। তার জন্য ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করে জেদ্দা থেকে ইহরাম বাঁধা জায়েয হবে না। যদি কেউ বিমানে যাতায়াত কাজে যে কোন কারনে ইহরাম বাঁধতে ভুলে যায় তবে তাকে বিমান থেকে অবতরণ করার পর মীকাতে ফিরে যাওয়া ওয়াজিব। যদি কেউ মীকাতে ফিরে না যান এবং মীকাত অতিক্রম করার পর ইহরাম বেঁধে থাকে তাহলে আলেমদের অগ্রগণ্য মত হলো, একটি ছাগল যবেহ করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া। আল্লাহই ভাল জানেন।

২। জুতা পরার সম্পর্কে ভুল ধারণাঃ  

কিছু কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে, জুতা পরেই ইহরাম বাঁধতে হবে। যদি ইহরামকালে কেউ জুতা না পরে তাহলে পরবর্তীতে তার জন্য জুতা পরা জায়েয হবে না। এটি ভুল। কারণ ইহরামের সময় জুতা পরা ওয়াজিব নয়; শর্তও নয়। জুতা পরা ছাড়াই ইহরাম হয়ে যায়। ইহরামের সময় জুতা না পরলেও পরবর্তীতে জুতা পরতে পারবে। এতে কোন অসুবিধা নেই।

৩। ইহরামের কাপড়ঃ

অনেক অসিয়ত করে থাকে তাকে যেন মরার পর ইহরামের কাপড় দ্বারা কাফন পরান হয়। ইহরামের কাপড় দ্বারা কাফন পরাতে কোন অসুবিধা নাই। অসিয়ত করাও দোষের কিছু নয়। কিন্তু জরুরী মনে করে অসিয়ত করা বিদআত হবে।

কিছু কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন, যে কাপড় দিয়ে ইহরাম ব বাঁধা হবে হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত সেই কাপড় আর পরিবর্তন করা যাবে না। অর্থাৎ ইহরাম বাধার পর তাকে এক কাপড়েই থাকতে হবে। এটি ভুল একটি ভুল ধারন মাত্র। কেননা ইহরামকারীর জন্য বিশেষ কারণে কিংবা কোন কারণ ছাড়াই ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করা জায়েয আছে। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি কোন একটি ইহরামের কাপড় পরে ইহরাম বেঁধেছেন তিনি সে কাপড় পরিবর্তন করতে চাইলে পরিবর্তন করতে পারেন। ইহরামের কাপড়ে কোন নাপাকি লাগলে পরিবর্তন জরুরী হয়ে পড়ে। আবার বেশী ময়লা হলেও কাপড়টি খুলে ধৌত করা যায়। কাজেই এই বিশ্বাস ঠিক নয় যে, কেউ যদি কোন একটি কাপড়ে ইহরাম বাঁধে তাহলে হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত এ কাপড়টি খুলতে পারবে না।

সাধারণত পুরুষগণ সাদা কাপড় দ্বারা ইহরাম বাধে। তাই অনেক মহিলা ধারণা করেন, ইহরামের জন্য কালো, সবুজ বা সাদা এ জাতীয় কালারের পোশাক দরাকার।  ইসলামি শরীয়াতে এর ভিত্তি নেই। মহিলারা যেকোনো কাপড় পরিধান করতে পারবেন। তবে পোশাকটি সৌন্দর্য প্রদর্শনে সহায়ক হবে না। খুব পাতলা হবে না। আটশাট হবে না কিংবা পুরুষ বা অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না।

অনেক মহিলা তার চেহারা ও নেকাবের মধ্যস্থানে কাঠ বা এ জাতীয় কিছু রাখেন। যাতে নেকাব তার চেহারা স্পর্শ না করে। এও এক ভিত্তিহীন লৌকিকতা। ইসলামের সূচনা যুগের কোন মুসলিম মহিলা এমন করেননি; বরং মহিলারা পরপুরুষ সামনে এলে মুখে নেকাব না দিয়ে ওড়না ঝুলিয়ে চেহারা আড়াল করবে। পরপুরুষ না থাকলে মুখ খোলা রাখবেন। ওড়না তার চেহারা স্পর্শ করলেও কোন সমস্যা নেই।

৪। মহিলা হায়েয বা নিফাস অবস্থায় মীকাত থেকে ইহরাম না বাঁধাঃ

হজ্জ বা উমরা যাত্রাকালে অনেক সময় মহিলাদের প্রকৃতিক গতভাবে হায়েয বা নিফাস হয়ে থাকে। এই অবস্থায় মহিলাগন মীকাত অতিক্রম কালে ইহরাম বাঁধেন না। অথচ নিফাস বা হায়েযবতী মহিলার জন্যও মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা ফরয। নিফাস বা হায়েযবিহীন স্বাভাবিক মহিলাগন যেভাবে ইহরাম বাধে তারাও  ঠিক সেইভাবে গোসল ও পবিত্রতা অর্জন করে ইহরাম বাধবে। এই কথার দলিল নিম্মের হাদিসটি।

জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি আসমা বিনতে উমায়স (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে নিফাসগ্রস্ত হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেনঃ তাকে (আসমা বিনতে উমায়স) গোসল করে ইহরাম বাঁধতে বল। (সুনানে নাসাঈ ২১৪)

আর ইহরাম অবস্থায় আয়েশা রা. এর ঋতুস্রাব শুরু হলে তিনি তাওয়াব বাদে সকল কাজ সবার সাথে সমানতালে সমাধা করেছেন। নিম্মের হাদিসটি লক্ষ করেনঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বিদায় হাজ্জের সময় বের হয়েছিলাম। আমাদের কেউ ইররাম বেঁধেছিল উমরার আর কেউ ইহরাম বেঁধেছিল হাজ্জের। আমরা মক্কায় এসে পৌঁছালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছে কিন্তু কুরবানীর পশু সাথে আনেনি, তারা যেন ইহরাম খুলে ফেলে। আর যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছে ও কুরবানীর পশু সাথে এনেছে, তারা যেন কুরবানী করা পর্যন্ত ইহরাম না খোলে। আর যারা হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছে, তারা যেন হাজ্জ (হজ্জ) পূর্ণ করে।

আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমার হায়য শুরু হয় এবং আরাফার দিনেও তা বহাল থাকে। আমি শুধু উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মাথার বেণী খোলার চুল আঁচড়িয়ে নেওয়ার এবং উমরার ইহরাম ছেড়ে হাজ্জের ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন। আমি তাই করলাম। পরে হাজ্জ (হজ্জ) সমাধা করলাম। এরপর ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-কে আমার সাথে পাঠালেন। তিনি আমকে তান’ঈম থেকে আমার আগের পরিত্যক্ত উমরার পরিবর্তে উমরা করতে নির্দেশ দিলেন। (সহহি বুখারী ৩১৩ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ কাজেই মহিলাগণ হায়েয বা নিফাস অবস্থায় মীকাত করলে ইহরাম বাঁধবে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “ইহরামের চারটি ত্রুটি

Leave a comment