আকিদার বিদআতসমূহ চতুর্থ কিস্তি: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল স্থানে হাজির নাযির।

আকিদার বিদআতসমূহ : চতুর্থ কিস্তি

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল স্থানে হাজির নাযির

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

ইসলামি শরীয়তের প্রথম ও প্রধান বিষয় হল ইমান। আর খাটি ইমান হল, সঠিক আকিদা প্রষণ করা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয় হল, আমরা সকলে মুসলিম দাবি করলেও শুধু আমাদের আকিদার কারনে আমরা মুসলিম নই। ইসলাম বহির্ভুত এই নতুত আকিদাকে বিদআতি আকিদা হিসাবে চিহিৃত করব। কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যে আকিদা নতুন করে আবিস্কার হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। কাজেই যে কোন ভুল আকিদা যা কুরআন সুন্নাহের বাহিরে গিয়ে নতুত করে তৈরি হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। যার অর্থ হলো আকিদার ভূলভ্রান্তি মানেই বিদআত আকিদা। যৌক্তিক কোন কাজ সহজে যে কেউ মেনে নেন। আর বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত কোন জ্ঞানতো সাথে সাথে মেনে নেয়। কিন্তু ইসলামি আকিদার মুল হল অদৃশ্যে বিশ্বাস এখানে জাগতিক কোন বিষয় থাকলে যুক্তি ও বিজ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা করা যেত কিন্ত অদৃশ্যে বিশ্বাস করতে হলে অদৃশ্য থেকে প্রাপ্ত অহীর উপর নির্ভর করতে হবে। অহী ভিন্ন যে কোন উৎস থেকে আকিদা গ্রহন করলে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ যে কোনটাই হতে পারে। ইসলামি আকিদা বিশ্বাস সব সময় আল্লাহকে কেন্দ্র অদৃশ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। তাই ইসলামি আকিদার মুল উৎস হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্ত্বিক। এই কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যখনি নতুন করে আকিদা রচনা করা হবে তাই বিদআতি আকিদা।

যেমনঃ অদৃশ্যের একটি ব্যাপার হল কবরের আজাব। কবরে আজাব হবে এটাই সত্য। কিন্তু কাউকে যুক্তি দিয়ে কি কবরের আজাব বুঝাতে বা দেখাতে পাবর। কিংবা বিজ্ঞানের আবিস্কার ক্যামেরা দ্বারা কি এই আজাব দেখাতে পারব। অপর পক্ষে আমলের ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এখানে কুরআন হাদিসের বাহিরে ইজমা কিয়াজের দরকার হয়। নতুন কোন সমস্যা আসলে কিয়াস করে মাসায়েল দিতে হয়। যেমনঃ মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট, শেয়ার বাজার ইত্যাদি ইসলামের প্রথমিক যুগে ছিলনা। তাই কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে কিয়াস করে সমাধান দিতে হয়। কজেই একটি কথা মনে রাখতে হবেঃ “আকিদা ও ফিকহের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, ফিকহের ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন নেই”

এক কথায় বলে গেলে কুরআন হাদিসের ষ্পষ্ট কোন রেফারেন্স ছাড়া আকিদা গ্রহণীয় নয়। যদি কেউ যুক্তি দিয়ে আকিদা বুঝাতে আসে তাকে সালাম জানাতে হবে। 

কুনআন সুন্নাহকে উৎস হিসাবে না নিলে আকিদার ভিন্নতা তো থাকবেই। আর এই ভিন্ন আকিদা আসবে সম্পূর্ণ নতুন করে যা বিদআত বলা হয়। কুরআন হাদিসে ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই, এমন ফিকহি মাসলা মাসায়েলের ক্ষেতে ইখতিলাফ বা মতভেদ করা জায়েয হলেও, আকিদার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতভেদ জায়েয নেই। কারন আকিদার ছয়টি বিষয় (আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, কিতার সমুহের প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস, তাক্বদীরের  ভালো মন্দেন প্রতি বিশ্বাস) যার সবগুলিই গায়েবের সাথে সম্পৃক্ত এবং গায়েব জানার জন্য অহীর প্রয়োজন। যতি কেউ তার আকিদাকে অহী ভিত্তিক না করে, যুক্তি ভিত্তিক করে, তাহলে তার বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। অহী ভিত্তিক না হয়ে আকিদা যুক্তি ভিত্তিক হলেই বিদআতি আকিদা হবে।

আকিদার সম্পর্কে আলোচনার আগে একটা কথাকে মনে খোদাই করে লিখে রাখেন, “আকিদা গাইবের প্রতি বিশ্বাস, এই বিশ্বাস হবে অহী নির্ভর, কোন প্রকার যু্‌ক্তিতর্কের অবতারণা করা যাবেনা”। কাজেই আমি যে ভ্রান্ত আকিদাগুলি তুলে ধরব তার বিপক্ষে আন্ততো কুরআনের একটি আয়াত অথবা একটি সহিহ হাদিস উপস্থাপণ করব। এই সহিহ আকিদার বিপরীতে যে সকল বিদআতি আকিদা সবার সামনে তুলে ধরব, সেই সকল আকিদার কুরআন সুন্নাহতে কোন প্রমান পাওয়া যাবে না। কুরআন সুন্নাহ নাই বলেই আকিদার নাম দিলাম বিদআতি আকিদা।

সঠিক আকিদা হলোঃ একমাত্র মহান আল্লাহ সকল স্থানে হাজির নাযির। এই গুনটি সৃষ্টির সাথে সংশ্লষ্ট করা শির্ক কাজ।

সঠিক আকিদার দলীলঃ 

বিদআতীদের বিশ্বাস তাদের পীর বা অলি-আওলিয়াগন পৃথিবীর যে কোন স্থানে হাজির নাজির থাকেন। অথচ অলীতো অনেক পরের কথা, বিশ্বজাহানের রহমাত আমাদের প্রান প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সকল সময়, সকল স্থানে হাজির নাযির থাকতে পারে না। তাদের আকিদা হওয়া উচিৎ ছিল, “নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কোন অলীর হাজির নাযির নয়, বরং আল্লাহতাআলা তার ক্ষমতা, দর্শন, জ্ঞান ও শুনার দ্বারা সর্বত্র হাজির নাযির”এটা মহান আল্লাহর একক গুন আর এ গুন কোন সৃষ্টির জন্য সাব্যস্ত করা শির্ক।

এ আকিদা বা বিশ্বাস সম্পর্কে কোন কালে কোন বিতর্ক ছিল না, কোন প্রশ্ন ছিল না। কুরআন হাদিসের স্পষ্ট বর্নণাকে ভুল মিথ্যা ও মনগড়া ব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা খুবই গর্হিত কাজ। প্রমানিত সত্য আকিদা সম্পর্কে ভুল তথ্য দেখলে অনেকেরই মনে কষ্ট লাগে। তারপর ও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এতে সাধারন লোক সত্য না জানার ফলে ধোকা খাবে। তাই হাজির ও নাজির সম্পর্কে একটু ব্যাখ্যা করিঃ

হাজির ও নাজির শব্দ দুটির আবিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ সম্পর্কে ও জানতে পারলে ব্যপারটা বুঝা অনেক সহজ হবে।  হাজির ও নাজির শব্দ দুটো আরবী।

হাজির (حاضر) শব্দের শাব্দিক অর্থ হলঃ  মওজুদ, বিদ্যমান বা উপস্থিত।

নাজির (ناظر) শব্দের শাব্দিক অর্থ হলঃ  দ্রষ্টা, দর্শক বা যিনি দেখেন, পর্যবেক্ষক বা সংরক্ষক।

শাব্দিক অর্থে মানুষ, পশু, পাখিসহ যাদের চলাচলের ক্ষমতা আছে এবং আল্লাহ দৃষ্টিশক্তি দান করছেন তারা সকলেই সীমিত পরিসরে হাজির ও নাযির। যেমন চাকুরিজিবী অফিসে, ছাত্র স্কুলে, আসামি আদালতে, শ্রমীক নিজ নিজ কর্মস্থলে হাজিন হন। যেখানে যিনি হাজির হন, তার চারপাশে সীমিত পরিসরে দর্শন করার সুযোগ মহান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই হিসাবে বলা যায়, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সকল নবী ’আলাইহিমুস সালাম, আল্লাহর সকল অলী আওলীয়া, সাধারন মুসলিম, কাফিরসহ সকলে মহান আল্লাহ দেওয়া ক্ষমতা অনুসারে সীমিত পরিসরে হাজির ও নাযির।  হাজির ও নাযির যদি একত্রে বলি তবে এর অর্থ হবে উপস্থিত থেকে দেখা। মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহ যাকে যতটুকু হাজির নাযিরের ক্ষমতা দিয়েছেন ততটুকুই সে উপভোগ করতে পারবে।

মহান আল্লাহ তায়ালার ‘হাজির-নাযির’ এর ক্ষমতা অসীম। কোন কিছু দেখা জন্য মহান আল্লাহকে স্ব-সত্তায় হাজির থাকতে হয় না অথচ “আল্লাহ সদা সর্বত্র বিরাজমান” কিন্তু কিভাবে? এখানে সদা সর্বত্র বিরাজমান কথাটির অর্থ হবে স্ব-সত্তায় নয় বরং আল্লাহ তাআলার ক্ষমতা, দর্শন, জ্ঞান ও শুনার দ্বারা বিরাজমান, (শুনে রাখো, আল্লাহ সব জিনিসকে পরিবেষ্টন করে আছেন। (হা মিম সিজদা-৪১:৫৪)৷ কোন বস্তুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সব শোনেন, সব দেখেন, (সুরা শুরা-৪২:১১)। ‘হাযির-নাযির’ বলতে বুঝব মহান আল্লাহর সদা সর্বত্র উপস্থিত বা বিরাজমান ও সবকিছুর দর্শক, তার ক্ষমতা, দর্শন, জ্ঞান ও শুনার দ্বারা। তা হলে বোঝা গেল, “মহান আল্লাহ সদা সর্বত্র বিরাজমান” বাক্যটির অর্থ যদি হয় ‘‘মহান আল্লাহ স্ব-সত্তায় সর্বত্র বিরাজমান” তা হলে বাক্যটি সরাসরি বাতিল। যিনি সদা সর্বত্র বিরাজমান ও সবকিছুর দর্শক, তিনি অবশ্যই সকল গাইবী জ্ঞানের অধিকারী হবেন, (হুদ-১১:৪৯)। আর তিনি হলেন একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার। একটি উদাহরন দিলে ব্যপারটি পরিস্কার হয়ে যাবে। আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের বদৌলতে আমরা সহজেই বোঝতে পারব যে, কোন কোন ক্ষেত্রে এখন মানুষ কেও দেখার জন্য স্ব-সত্তায় হাজির থাকতে হয় না।

যেমনঃ শত শত কিলোমিটার দুর থেকে আমরা লাইভ টেলিকাষ্টের মাধ্যমে খেলাধূলা, সংবাদ সম্মেলন, টক সো, আগুন লাগা, যুদ্ধ, সভাসমাবেশ, বক্তিতা ইত্যাদি দেখি কিন্তু দর্শনের জন্য আমাদের উপস্থিত থাকতে হয় না। আমরা দেখি আর ভাবি এত আমার চোখের সামনেই ঘটছে। কারন আমার জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ঐ ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত।

 অফিসের কর্তা ব্যক্তি সি.সি. ক্যামেরা দিয়ে সমস্ত অফিসের ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করেন। তাকে প্রতি রুমে রুমে হাজির হতে হয় না। অর্থাৎ যতোটুকু এলাকায় সি.সি. ক্যামেরায় কভার করছে এবং মনিটরিং করছেন ততোটুকু এলাকায় তিনি নাযির বা দর্শক।

দেখতে পেলাম, সিমীত ক্ষমতার মানুষকে বিজ্ঞানের কল্যানে দুরে দেখার জন্য তাকে স্ব-সত্তায় হাজির থাকতে হয় না। অসীম ক্ষমতার অধিকরী মহান আল্লাহর ও স্ব-সত্তায় হাজির থাকতে হবে না। তিনি আকাশে অবস্থান করেও (মূলক-৬৭:১৫) বিশ্বজাহানের সকল বস্তু সম্পর্কে পরিজ্ঞাত (হাদিদ-৫৭:৪)।

 অপর পক্ষে ‘হাযির-নাযির’ বলতে যদি বোঝান হয় মহান আল্লাহর ছাড়া অন্য কোন মাকলুক সদা সর্বত্র উপস্থিত বা বিরাজমান ও সবকিছুর দর্শক। তাহলে ইহা হবে শির্কে আকবর। আল্লাহর সাথে তার সৃষ্টির তুলনার করার জন্য সে মুশরিক হবে।

১। আল্লাহতাআলা তার ক্ষমতা, দর্শন, জ্ঞান ও শুনার দ্বারা সর্বত্র হাজির নাযিরঃ

নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয়, আল্লাহতাআলা তার ক্ষমতা, দর্শন, জ্ঞান ও শুনার দ্বারা সর্বত্র হাজির নাযির”। আল্লাহ সদা সর্বত্র বিরাজমান” তখন বোঝতে হবে মহান আল্লাহ তার জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতা দ্বারা সর্বত্র বিরাজমান। যেমনঃ মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন,

 أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَمَا فِى ٱلۡأَرۡضِ‌ۖ مَا يَڪُونُ مِن نَّجۡوَىٰ ثَلَـٰثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمۡ وَلَا خَمۡسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُہُمۡ وَلَآ أَدۡنَىٰ مِن ذَٲلِكَ وَلَآ أَڪۡثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمۡ أَيۡنَ مَا كَانُواْ‌ۖ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُواْ يَوۡمَ ٱلۡقِيَـٰمَةِ‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَىۡءٍ عَلِيمٌ (٧) 

অর্থঃ তোমরা কি দেখ না, আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহ্‌ তা জানেন?  তিন জনের মধ্যে কখনও কোন গোপন শলা পরামর্শ হতে পারে না, যেখানে তিনি চতুর্থ ব্যক্তিরূপে উপস্থিত নাই এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও হয় না যাতে ষষ্ঠ জন হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকেন না। কিংবা ইহা অপেক্ষা কম বেশী হলেও তারা যেখানেই থাকুক না কেন, অবশ্য তিনি উহাদের সঙ্গেই আছেন। সব শেষে শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ্‌ তাদের কৃতকর্মের সত্যতা জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত। (মুজাদালাহ ৫৮ :৭)।

অধিকাংশ আলেম ঐক্যমত্য প্রকাশ করেছেন যে, অত্র আয়াতের দ্বারা উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তায়ালার সত্তা বিদ্যমান থাকা নয়, তার ইলম বা জ্ঞান সব স্থানে বিদ্যমান আছে । এটাই উদ্দেশ্য, তিন জনের সমাবেশে চতুর্থজন হবে আল্লাহর ইলম বা জ্ঞান, ( তাফসির ইবনে কাসীর ১৭ খন্ড সুরা মোজাদেলাহ এর তাফসীর আয়াত নং ৭ পেজ নং ৩৬২)। 

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 وَلِلَّهِ ٱلۡمَشۡرِقُ وَٱلۡمَغۡرِبُ‌ۚ فَأَيۡنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجۡهُ ٱللَّهِ‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ وَٲسِعٌ عَلِيمٌ۬ (١١٥)

অর্থঃ পূর্ব এবং পশ্চিম আল্লাহ তায়ালারই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফিরাও, সেদিকেই রয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী সর্বজ্ঞাত। (সূরা বাকারা ২:১১৫)।

উক্ত আ্য়াতের তাফসীরে বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরবীদ হাফেজ ইমাদুদ্দিন ইবনু কাসীর (রাহ) তার তাফসীর ইবনু কাসীরে বলেনঃ আল্লাহ তা আলা হতে কোন জায়গা সুন্য নেই, এর ভাবার্থ যদি আল্লাহ তা আলার ইলম বা অবগতি হয় তাহলে অর্থ সঠিক হবে, যে কোন স্থানেই আল্লাহ পাকের ইলম হতে শূন্য নেই। আর যদি এর ভাবার্থ হয় আল্লাহ তা আল্লাহ সত্তা তবে এটা সঠিক হবে না। কেন না, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে, তার সৃষ্টি জীবের মধ্য হতে কোন জিনিষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন তা থেকে তার পবিত্র সত্তা বহু ঊর্ধেতাফসীরে ইবরে কাসির প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা-৩৭২)।

এমনিভাবে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, বান্দা যেখানেই থাক আমি তার সাথে আছি বা নিকটে আছি। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّـٰبِرِينَ (١٥٣)

 অর্থঃ আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। [সূরা আল বাকারাহ্ ২:১৫৩]

০২. আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেন:

وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلۡمُتَّقِينَ

অর্থঃ এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো এবং একথা জেনে রাখো যে, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছে। [সূরা আল-বাকারাহ্ ২:১৯৪),

০৩.  আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেন:

 وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَـٰنَ وَنَعۡلَمُ مَا تُوَسۡوِسُ بِهِۦ نَفۡسُهُ ۥ‌ۖ وَنَحۡنُ أَقۡرَبُ إِلَيۡهِ مِنۡ حَبۡلِ ٱلۡوَرِيدِ (١٦)

অর্থঃ আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি আর তাদের মনে যেসব কুমন্ত্রণা উদিত হয় তা আমি জানি৷ আমি তার ঘাড়ের রগের চেয়েও তার বেশী কাছে আছি৷ (সূরা ক্বাফ ৫০:১৬)।

সব সময় সাথে থাকার গুনটি শুধুমাত্র আল্লাহর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ আল্লাহ অনেক বার বলেছেন যে, তিনি ধৈর্যশীল ও মুত্তাকী  বান্দার সাথে আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্পর্কে কখনোই  কুরআন বা হাদীসে বলা হয় নি যে, তিনি সর্বদা উম্মাতের সাথে আছেন, অথবা সকল মানুষের সাথে আছেন, অথবা কাছে আছেন, অথবা সর্বত্র উপস্থিত আছেন, অথবা সবকিছু দেখছেন। কুরআনের আয়াত তো দূরের কথা একটি যয়ীফ হাদীসও দ্ব্যর্থহীনভাবে এই অর্থে কোথাও বর্ণিত হয় নি। কোনো একটি সহীহ, যয়ীফ বা মাউযূ হাদীসেও বর্ণিত হয় নি যে, তিনি বলেছেন ‘আমি হাযির-নাযির’। অথচ তাঁর নামে এ মিথ্যা কথাটি বলা হচ্ছে। এমনকি কোনো সাহাবী, তাবিয়ী, তাবি-তাবিয়ী বা ইমাম কখনোই বলেন নি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাযির-নাযির। (হাদীসের নামে জালিয়াতি, ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর)

 

২। অতীত কালে নবীদের দ্বীন প্রচার কালে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজির নাযির ছিল না।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছের অতীত কালে যে সকল নবী গত হয়েছে। সেই সকল নবীদের বিভিন্ন ঘটনা ও দাওয়াত দান কালে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজির নাযির ছিল না। যেমনঃ আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেনঃ

 وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ ٱلۡغَرۡبِىِّ إِذۡ قَضَيۡنَآ إِلَىٰ مُوسَى ٱلۡأَمۡرَ وَمَا كُنتَ مِنَ ٱلشَّـٰهِدِينَ (٤٤) وَلَـٰكِنَّآ أَنشَأۡنَا قُرُونً۬ا فَتَطَاوَلَ عَلَيۡہِمُ ٱلۡعُمُرُ‌ۚ وَمَا ڪُنتَ ثَاوِيً۬ا فِىٓ أَهۡلِ مَدۡيَنَ تَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَـٰتِنَا وَلَـٰكِنَّا ڪُنَّا مُرۡسِلِينَ (٤٥) 

অর্থঃ (হে মুহাম্মদ!) তুমি সে সময় পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না৷ যখন মূসাকে এ শরীয়াত দান করেছিলাম। এবং তুমি সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্তও ছিল না৷ বরং এরপর (তোমার যুগ পর্যন্ত) আমি বহু প্রজন্মের উদ্ভব ঘটিয়েছি এবং তাদের ওপর অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়ে গেছে৷ তুমি মাদয়ানবাসীদের মধ্যেও উপস্থিত ছিলে না, যাতে তাদেরকে আমার আয়াত শুনাতে পারতে কিন্তু আমি সে সময়কার এসব তথ্য জানাচ্ছি৷ (সুরা কাসাস ২৮:৪৪-৪৫)।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেন:

ذَٲلِكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلۡغَيۡبِ نُوحِيهِ إِلَيۡكَ‌ۚ وَمَا كُنتَ لَدَيۡهِمۡ إِذۡ يُلۡقُونَ أَقۡلَـٰمَهُمۡ أَيُّهُمۡ يَكۡفُلُ مَرۡيَمَ وَمَا ڪُنتَ لَدَيۡهِمۡ إِذۡ يَخۡتَصِمُونَ (٤٤)

অর্থঃ হে মুহাম্মাদ ! এসব অদৃশ্য বিষয়ের খবর, অহীর মাধ্যমে আমি এগুলো তোমাকে জানাচ্ছি৷ অথচ তুমি সেখানে ছিলে না, যখন হাইকেলের সেবায়েতরা মারয়ামের তত্ত্বাবধায়ক কে হবে একথার ফায়সালা করার জন্য নিজেদের কলম নিক্ষেপ করছিল৷  আর তুমি তখনো সেখানে ছিলো না যখন তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল৷  (আল ইমরান-৩:৪৪)।

০৩. আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 ذَٲلِكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلۡغَيۡبِ نُوحِيهِ إِلَيۡكَ‌ۖ وَمَا كُنتَ لَدَيۡہِمۡ إِذۡ أَجۡمَعُوٓاْ أَمۡرَهُمۡ وَهُمۡ يَمۡكُرُونَ (١٠٢) 

অর্থঃ হে মুহাম্মদ! এ কাহিনী অদৃশ্যলোকের খবরের অন্তরভুক্ত, যা আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানাচ্ছি৷ নয়তো, তুমি তখন উপস্থিত ছিলে না যখন ইউসুফের ভাইয়েরা একজোট হয়ে যড়যন্ত্র করেছিল। (সুরা ইইসুফ ১২:১০২)।

৩। সর্বত্র হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে অহী নাজিল করার প্রয়োজন ছিলনা।  

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে ওহীর জ্ঞানের প্রয়োজন ছিল না। অথচ আল্লাহ রব্বুল আলামিন অহী নাজিল করেছেন। সর্বত্র হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে অহী নাজিল করার প্রয়োজন ছিলনা। 

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ سَبۡعَ سَمَـٰوَٲتٍ۬ وَمِنَ ٱلۡأَرۡضِ مِثۡلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ ٱلۡأَمۡرُ بَيۡنَہُنَّ لِتَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىۡءٍ۬ قَدِيرٌ۬ وَأَنَّ ٱللَّهَ قَدۡ أَحَاطَ بِكُلِّ شَىۡءٍ عِلۡمَۢا (١٢)

অর্থ: আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান এবং একথাও জানতে পার যে, আল্লাহর জ্ঞান সব কিছুতেই পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে।(সুরা ত্বালাক- ১২)

 আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 تِلۡكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلۡغَيۡبِ نُوحِيہَآ إِلَيۡكَ‌ۖ مَا كُنتَ تَعۡلَمُهَآ أَنتَ وَلَا قَوۡمُكَ مِن قَبۡلِ هَـٰذَا‌ۖ فَٱصۡبِرۡ‌ۖ إِنَّ ٱلۡعَـٰقِبَةَ لِلۡمُتَّقِينَ (٤٩) 

অর্থঃ হে মুহাম্মদ! এসব গায়েবের খবর, যা আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানাচ্ছি৷ এর আগে তুমি এসব জানতে না এবং তোমার কওমও জানতো না৷ কাজেই সবর করো৷ মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম৷ (হুদ-১১:৪৯)

৪। হাজির নাযির বিশ্বাস করলে মিরাজ অস্বীকার করা হয়

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাজির নাযির বিশ্বাস করলে মুলত মিরাজ অস্বীকার করা হয়।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

سُبۡحَـٰنَ ٱلَّذِىٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلاً۬ مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِى بَـٰرَكۡنَا حَوۡلَهُ ۥ لِنُرِيَهُ ۥ مِنۡ ءَايَـٰتِنَآ‌ۚ إِنَّهُ ۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ (١) 

অর্থঃ পবিত্র তিনি যিনি নিয়ে গেছেন এক রাতে নিজের বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্সা পর্যন্ত, যার পরিবেশকে তিনি বরকতময় করেছেন, যাতে তাকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখান৷আসলে তিনিই সবকিছুর শ্রোতা ও দ্রষ্টা৷ (বনী ইসরাইল ১৭:১)।

মিরাজ হল মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্‌সা অতপর সপ্ত আকাশ পাড়ি দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরশে আজিমে পৌছান। রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদা সর্বদা হাজির নাযির থাকলেতো আ র আলশে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। তিনি তো সেখানেই হাজিরই ছিলেন। তাহলে মিরাজ আর রইল কোথায়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কে হাজির নাযির বলাটা বাহ্যিকভাবে সম্মানজনক মনে করা হলেও আসলে তা শির্ক, যা একজন মুসলিম কে ইসলাম থেকে বাহির করে দেয়। এর দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজকে অস্বীকার করা হয়।

৫। হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে হিজরতের প্রয়োজন ছিল না

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে হিজরতের প্রয়োজন ছিল না কারন মুহুর্তে মুহুর্তে মক্কা থেকে মদিনা আবার মদিনা থেকে মক্কা যেতে পারতেন।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 إِلَّا تَنصُرُوهُ فَقَدۡ نَصَرَهُ ٱللَّهُ إِذۡ أَخۡرَجَهُ ٱلَّذِينَ ڪَفَرُواْ ثَانِىَ ٱثۡنَيۡنِ إِذۡ هُمَا فِى ٱلۡغَارِ إِذۡ يَقُولُ لِصَـٰحِبِهِۦ لَا تَحۡزَنۡ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَنَا‌ۖ فَأَنزَلَ ٱللَّهُ سَڪِينَتَهُ ۥ عَلَيۡهِ وَأَيَّدَهُ ۥ بِجُنُودٍ۬ لَّمۡ تَرَوۡهَا وَجَعَلَ ڪَلِمَةَ ٱلَّذِينَ ڪَفَرُواْ ٱلسُّفۡلَىٰ‌ۗ وَڪَلِمَةُ ٱللَّهِ هِىَ ٱلۡعُلۡيَا‌ۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ (٤٠)

অর্থ: তোমরা যদি নবীকে সাহায্য না কর, তাহলে কোন পরোয়া নেই৷ আল্লাহ তাকে এমন সময় সাহায্য করেছেন যখন কাফেররা তাকে বের করে দিয়েছিল, যখন সে ছিল মাত্র দু’জনের মধ্যে দ্বিতীয় জন, যখন তারা দু’জন গুহার মধ্যে ছিল, তখন সে তার সাথীকে বলেছিল, চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন৷ সে সময় আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তার ওপর মানসিক প্রশান্তি নাযিল করেন এবং এমন সেনাদল পাঠিয়ে তাকে সাহায্য করেন, যা তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফেরদের বক্তব্যকে নীচু করে দেন৷ আর আল্লাহর কথা তো সমুন্নত আছেই৷ আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়৷(তাওবা ৯:৪০)

হিজরত মানে হল, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যওয়া। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে তিনি তো  হিজরত না করে ও মদিনা অবস্থান করতে পারতেন। এত নাটক করার প্রয়োজন ছিল না (নাউজুবিল্লাহ)। হাজির নাযির হলে তো মক্কা থেকে মদীনায় যাওয়া প্রমাণিত হয় না। তাহলে হিজরত হল কি করে? অথচ হিজরতের ঘটনা কুরআন হদিসে সুদৃঢ়ভাবে প্রমানিত। উক্ত আয়াত তারই একটি অংশ বিশেষ।

 

৬। হাজির নাজির ছিলনা বলেই স্বপ্নের মাধ্যমে অনেক কিছু দেখাতেরঃ

মক্কা বিজয়ের সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে স্বপ্নের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যা তিনি জানতে না :: আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন,

  لَّقَدۡ صَدَقَ ٱللَّهُ رَسُولَهُ ٱلرُّءۡيَا بِٱلۡحَقِّ‌ۖ لَتَدۡخُلُنَّ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمۡ وَمُقَصِّرِينَ لَا تَخَافُونَ‌ۖ فَعَلِمَ مَا لَمۡ تَعۡلَمُواْ فَجَعَلَ مِن دُونِ ذَٲلِكَ فَتۡحً۬ا قَرِيبًا (٢٧)

অর্থঃ আল্লাহ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহ চাহেন তো তোমরা অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তকমুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন যা তোমরা জান না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তোমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়।  (সুরা ফাতহা ৪৮:২৭)

হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অহী আসার সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের আকারে (বুখারী ও মুসলিম)।

৭। হাজির নাযির এর গুন থাকলে তিনি মুনাফিকদের আলোচনা শুনতে পারতেনঃ

মদীনাবাসী মুনাফিকদের মধ্যে হাজির নাযির থেকেও তাদেরকে চিনতে বা জানতে পারেনি বরং আল্লাহ তাদেরকে চিনিয়েছেন বা জানিয়েছেন। বুঝতে হবে তার আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত হাজির নাযিরেন ক্ষমতা ছিল। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 وَمِمَّنۡ حَوۡلَكُم مِّنَ ٱلۡأَعۡرَابِ مُنَـٰفِقُونَ‌ۖ وَمِنۡ أَهۡلِ ٱلۡمَدِينَةِ‌ۖ مَرَدُواْ عَلَى ٱلنِّفَاقِ لَا تَعۡلَمُهُمۡ‌ۖ نَحۡنُ نَعۡلَمُهُمۡ‌ۚ سَنُعَذِّبُہُم مَّرَّتَيۡنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَىٰ عَذَابٍ عَظِيمٍ۬ (١٠١)

অর্থঃ তোমাদের আশেপাশে যেসব বেদুইন থাকে তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক মুনাফিক৷ অনুরূপভাবে মদীনাবাসীদের মধ্যেও রয়েছে এমন কিছু মুনাফিক, যারা মুনাফিকীতে পাকাপোক্ত হয়ে গেছে৷ তোমরা তাদেরকে চিন না, আমি চিনি তাদেরকে৷ শীঘ্রই আমি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেবো৷  তারপর আরো বেশী বড় শাস্তির জন্য তাদেরকে ফিরিয়া আনা হবে৷ আমি তাদেরকে জানি।’ (সূরা তাওবা ৯::১০১)।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

  يَعۡتَذِرُونَ إِلَيۡكُمۡ إِذَا رَجَعۡتُمۡ إِلَيۡہِمۡ‌ۚ قُل لَّا تَعۡتَذِرُواْ لَن نُّؤۡمِنَ لَڪُمۡ قَدۡ نَبَّأَنَا ٱللَّهُ مِنۡ أَخۡبَارِڪُمۡ‌ۚ وَسَيَرَى ٱللَّهُ عَمَلَكُمۡ وَرَسُولُهُ ۥ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَـٰلِمِ ٱلۡغَيۡبِ وَٱلشَّهَـٰدَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ (٩٤) 

অর্থ: তোমরা যখন ফিরে তাদের কাছে পৌছবে তখন তারা নানা ধরনের ওযর পেশ করতে থাকবে৷ কিন্তু তুমি পরিষ্কার বলে দেবে, “বাহানাবাজী করো না, আমরা তোমাদের কোন কথাই বিশ্বাস করবো না৷ তোমাদের অবস্থা আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন৷ এখন আল্লাহ ও তার রসূল তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ করবেন৷ তারপর তোমাদেরকে তারই দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে৷ যিনি প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছুই জানেন এবং তোমরা কি কাজ করছিলে তা তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন”৷( সুরা তওবা  ৯:৯৪)

৮। ফেরেশতা, নবুওয়াত, আল্লাহর কিতাবসমূহ সম্পর্কে তার জ্ঞান ছিল নাঃ 

ফেরেশতা, নবুওয়াত, আল্লাহর কিতাবসমূহ ইত্যাদি সম্পর্ক তার জ্ঞান  ছিল না। অথচ সর্বত্র হাজির নাযির তাকলে এই জ্ঞান তার অবশ্যই থাকত।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদৌ জানতে না, কিতাব কি এবং ঈমান কি? কিতাব ও হিকমত নাযিল করে আল্লাহ তাকে এসব শিখিয়াছেন ।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেনঃ

وَكَذَٲلِكَ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ رُوحً۬ا مِّنۡ أَمۡرِنَا‌ۚ مَا كُنتَ تَدۡرِى مَا ٱلۡكِتَـٰبُ وَلَا ٱلۡإِيمَـٰنُ وَلَـٰكِن جَعَلۡنَـٰهُ نُورً۬ا نَّہۡدِى بِهِۦ مَن نَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِنَا‌ۚ وَإِنَّكَ لَتَہۡدِىٓ إِلَىٰ صِرَٲطٍ۬ مُّسۡتَقِيمٍ۬ (٥٢)

অর্থ: এভাবেই (হে মুহাম্মাদ), আমি আমার নির্দেশে তোমার কাছে এক রূহকে অহী করেছি৷  তুমি আদৌ জানতে না কিতাব কি এবং ঈমানই বা কি৷ কিন্তু সেই রূহকে আমি একটি আলো বানিয়ে দিয়েছি যা দিয়ে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথ দেখিয়ে থাকি৷ নিশ্চিতভাবেই আমি তোমাকে সোজা পথের দিক নির্দেশনা দান করছি৷ (সূরা শুরা: ৫২)।

 রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে নবুওয়াতের মর্যাদায় লাভ করার আগে কখন ও কল্পনা করেনি যে, তিনি নবী হবেন বা কিতাব লাভ করবেন। আল্লাহর প্রতি তাঁর ঈমান অবশ্যই ছিল। কিন্তু তাঁর জানা ছিল না যে, ফেরেশতা, নবুওয়াত, আল্লাহর কিতাবসমূহ এবং আখেরাত সম্পর্কে।  আল্লাহই এই অজানা জ্ঞান বা ইলম তাকে জানিয়েছেন।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেনঃ

ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمۡ تَكُن تَعۡلَمُ‌ۚ وَكَانَ فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكَ عَظِيمً۬ا (١١٣)

অর্থ: আল্লাহ তোমার ওপর কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন, এমন সব বিষয় তোমাকে শিখিয়েছেন যা তোমার জানা ছিল না এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ অনেক বেশী৷ (সূরা নিসা: ১১৩)।

কুরায়শরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার মিরাজের ঘটনা কেন্দ্র করে বায়তুল মুকাদ্দাসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল যা তিনি দেখেন নি। ফলে তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে তিনি চিন্তিত হতেন না।

৯। হাদিসের আলোকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বত্র হাজির নাযির ছিলনা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ  আমি হাজরে আসৃওয়াদের কাছে ছিলাম। এ সময় কুরায়শরা আমাকে আমার মিরাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তারা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল, থী আমি ভালভাবে দেখিনি। ফলে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তারপর আল্লাহ তাআলা আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন এবং আমি তা দেখছিলাম । তারা আমাকে যে প্রশ্ন করছিল, তার জবাব দিতে লাগলাম। এরপর নবীদের এক জামাতেও আমি নিজেকে উদ্ভাসিত দেখলাম। মুসা (আঃ)-কে নামাযে দণ্ডায়মান দেখলাম . তিনি শানূয়া গোত্রের লোকদের মত মধ্যমাকৃতির। তাঁর চুল ছিল কোঁকড়ানো। হযরত ঈসা (আঃ)-কেও নামাযে দাঁড়ানো দেখলাম। উরওয়া ইবন মাসঊদআবু সাকাফী হচ্ছেন তাঁর নিকটতম সদৃশ। ইবরাহীম (আঃ)-কেও নামাযে দাঁড়ান দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীরই সদৃশ।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ  তারপর নামাযের সময় হলো, আমি তাঁদের ইমামত করলাম। নামায শেষে এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ (সাঃ)! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ‘মালিক’, ওকে সালাম করুন। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন (আঃ) কেও নামাযে দাঁড়ান দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীরই সদৃশ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ  তারপর নামাযের সময় হলো, আমি তাঁদের ইমামত করলাম। নামায শেষে এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ (সাঃ)!ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ‘মালিক’, ওকে সালাম করুন। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন ।  (সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান,  হাদিস ৩২৮)

 

১০। এ উম্মাতের  অনেক আমল সম্পর্কে  কিছুই জানবেন না।

সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আমি ‘হাওয’ (কাওসার) এর কাছে তোমাদের জন্য অগ্রগামী। যে সেখানে আসবে, সেই পান করবে। আর যে তা থেকে পান করবে, সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। আর আমার কাছে এমন কতক দল উপনীত হবে, যাদের আমি চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। তারপর আমার ও তাদের মাঝে বাধা সৃষ্টি করা হবে। রাবী আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, আমি যখন তাঁদের কাছে এ হাদীস বর্ণনা করি, তখন নুমান ইবনু আবূ আয়্যাশ শুনে বললেন, তুমি কি সাহল (রাঃ) কে এরূপই বলতে শুনেছো? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। নুমান বললেন, আর আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি অবশ্যই তাকে অধিক রিওয়ায়াত করতে শুনেছি যে, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন, এরা তো আমার উম্মাত! তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না, তারা আপনার পরে কি আমল করেছে। আমি বলবঃ দূর হও, দূর হও, যারা আমার পরে (দ্বীনে) রদ-বদল করেছে। (সহিহ মুসলিম -৫৭৬৮ ই: ফা:)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে ফেরেস্তা জমীনে ঘুরে ঘুর উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছায় প্রয়োজন ছিল না।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ  নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিয়োজিত কতিপয় ফেরেস্তা জমীনে ঘুরে বেড়ায়, তারা আমার কাছে উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছায়। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৯১৪,সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৭৭৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৪৩২০)

যে ব্যাপারে মানুষের কোন জ্ঞান নাই বা যে বস্তু সে কখন ও দেখে নাই, তার সম্পর্কে সে কিছুই বলতে পারবে না। নবী রাসুলদের ব্যাপাটা একটু আলাদা কারন তাদের নিকট আল্লাহ ওহী প্রেরন করতেন, তাই তাহারা আনেক সময় না দেখা, না জানা ব্যপারটি ওহীর মাধ্যমে জেনে বলে দিতে পারতেন। এটা তাদের নিজস্ব ক্ষমতা নয় রবং এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। আল্লাহর এই অনুগ্রহ নবী রাসুলদের নিজস্ব ক্ষমতা মনে করাও শির্ক। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন আনেক ঘটনা আছে যে, তিনি গায়েবের খবর দিচ্ছেন, (হাতেব ইবনে আবু বালতার পত্র, সুরা মুমতাহিনার শানে নুজুল)। আবার সামান্য মামুলি বিষয় ও অনেক সময় বলতে পারেনি (আয়েশার অপবাদ ও হার হারানোর ঘটনা)। তাই একথাটি অন্তর দিয়ে মনে রাখবে যে, “যদি কেউ আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন সহিহ হাদিস দ্বারা বা কুরআন দ্বারা এমন প্রমান করে যে, তিনি অনেক ঘটনা না দেখেই বলছেন বা না শুনেই বলছেন তবে বুঝতে হবে এটা তার নিজস্ব ক্ষমতা নয় বরং এটা হল ওহী বা আল্লাহর অনুগ্রহ”।

যারা বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজির নাযিরের তাদের যুক্তি কি?

 কুরআনের  কিছু আয়াতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে  বলা হইয়াছে “তাদের ওপর তোমাকে (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) সাক্ষী হিসেবে দাঁড় করাবো। ওদের যুক্তি হল, যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানেন না বা দেখেন নি সে সম্পর্কে তো তাঁকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে বলা হবে না। তিনি এগুলো দেখবেন বা দেখেছেন বলেই তাকে সাক্ষী স্বরুপ বলা হয়েছে। তাদের দলিল সুরা নাহল ৮৯ নম্বর আয়াত ও সুরা নাহলের ৮৯ নম্বর আয়াত :: আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 وَيَوۡمَ نَبۡعَثُ فِى كُلِّ أُمَّةٍ۬ شَهِيدًا عَلَيۡهِم مِّنۡ أَنفُسِہِمۡ‌ۖ وَجِئۡنَا بِكَ شَہِيدًا عَلَىٰ هَـٰٓؤُلَآءِ‌ۚ وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَـٰبَ تِبۡيَـٰنً۬ا لِّكُلِّ شَىۡءٍ۬ وَهُدً۬ى وَرَحۡمَةً۬ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ (٨٩)
অর্থঃ (হে মুহাম্মাদ! এদেরকে সেই দিন সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দাও) যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একজন সাক্ষী দাঁড় করিয়ে দেবো, যে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ দেবে এবং এদের বিরুদ্ধে সাক্ষ দেবার জন্য আমি তোমাকে নিয়ে আসবো৷ (আর এ সাক্ষ্যের প্রস্তুতি হিসেবে) আমি এ কিতাব তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যা সব জিনিস পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে এবং যা সঠিক পথনির্দেশনা, রহমত ও সুসংবাদ বহন করে তাদের জন্য যারা আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছে৷ (সুরা নাহল ১৬:৮৯)

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 فَكَيۡفَ إِذَا جِئۡنَا مِن كُلِّ أُمَّةِۭ بِشَهِيدٍ۬ وَجِئۡنَا بِكَ عَلَىٰ هَـٰٓؤُلَآءِ شَہِيدً۬ا (٤١)

অর্থ: তারপর চিন্তা করো, তখন তারা কি করবে যখন আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক উম্মাত থেকে একজন সাক্ষী আনবো এবং তাদের ওপর তোমাকে (রাসুলকে) সাক্ষী হিসেবে দাঁড় করাবো। (সুরা নিসা ৪:৪১)

সুরা নাহলের আয়াতটির শেষ অংশে পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে আমি যে কিতাব নাজিল করেছি তার মাধ্যমে সাক্ষ্য প্রদান করে। আল্লাহ এই কিতবের সাহায্যে সব জিনিস পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন কাজেই সাক্ষ্যদানে কোন সমস্যা হবে না। সুরা বাকারা ১৪৩ আয়াতে উম্মতে মুহাম্মাদীর সকল কে দুনিয়াবাসির উপর সাক্ষ্যদাতা নির্বাচিত করেছেন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 وَكَذَٲلِكَ جَعَلۡنَـٰكُمۡ أُمَّةً۬ وَسَطً۬ا لِّتَڪُونُواْ شُہَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ وَيَكُونَ ٱلرَّسُولُ عَلَيۡكُمۡ شَهِيدً۬ا‌ۗ
অর্থঃ আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মাতে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা দুনিয়া বাসীদের ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী, (সুরা বাকারা ২:১৪৩)

এ আয়াতে বলা হয়েছে, উম্মতে মুহাম্মাদী সমগ্র  দুনিয়াবাসীদের উপর সাক্ষী হতে পারবে। এর অর্থ কি উম্মাতে মুহাম্মাদীর সকলেই ঐ সকল জামানায় হাজির নাযির ছিলেন। ব্যপারটি তা নয়, কুরআনের সংবাদের ভিত্তিতে তাহারা সাক্ষ্য দিবে।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর শ্রেষ্ঠ মাখলুক। আল্লাহর পাঠান সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসুলু। তিনি আল্লাহর সবচেয়ে মাহবুব, তার মত মাহবুব কেউ নেই, হবেও না কোনদিন। কিন্তু তাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সমকক্ষও সাব্যস্ত করা মহা অন্যায়। তেমনি তার যথোপযুক্ত সম্মান ও মর্জাদার অস্বিকার করাও যাবে না। আবার মর্জাদা বাড়াতে বাড়াতে সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যকার পার্থক্য ভুলে গেলে হবে না। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আক্বিদা বা সুন্নী আকিদা। তাই একটি শিরকী আক্বিদা ছেড়ে সহিহ আকিদা ধারন করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকল বাতিল আক্বিদা ছেড়ে সঠিক আকিদা গ্রহনের তৌফিক দান করুন। যাতে আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রিয়ভাজন হতে পারি, আমীন। ছুম্মা আমীন।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment