বিভিন্ন প্রকারের খতম কেন্দ্রিক বিদআত : দ্বিতিয় কিস্তি

বিভিন্ন প্রকারের খতম কেন্দ্রিক বিদআত : দ্বিতিয় কিস্তি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।

৭। খতমে শিফাঃ

শিফা’ শব্দের আরবী মূল শব্দ شِفاء’ যার অর্থ রোগমুক্ত করা বা রোগ নিরাময়। এভাবে ‘খতমে শিফা’ অর্থ: রোগ নিরাময় করার খতম। কেউ অসুস্থ হলে তার রোগমুক্তির আশায় এই খতম পড়ানো হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি বইয়ে এই খতমটি যেভাবে তুলে ধরা হলোঃ

খতমে শিফাঃ  لا اله الا الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্)। এই পবিত্র কালেমা একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করাকে ‘‘খতমে শিফা’’ বলে। একে খতমে তাহলীলও বলা হয়। এই খতম পাঠ করিয়া এর সোয়াব মৃত লোকের রূহের উদ্দেশ্যে বখশিশ করিয়া দিলে নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা এর উসিলায় তাহাকে মাফ করিয়া দিবেন ও বেহেশত দান করবেন। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয় অথবা কোনো কঠিন রোগে আক্রান্ত হইয়া দীর্ঘদিন ভুগিতে থাকে, তবে উক্ত কালাম তাহার নিকট বসিয়া সশব্দে পাঠ করিতে থাকিবে, যেন সেই রোগী উহা শুনিতে পায়। আল্লাহর ফযলে খতম শেষ হইবার পূর্বেই ইহার আশ্চর্য ফল বুঝিতে পারা যায়। কোনো মুমূর্ষু লোকের নিকট বসে এই খতম পাঠ করলে তাহার রোগ যন্ত্রনা লাঘব হয় এবং পরমায়ূ শেষ হইয়া থাকিলে আছানির সহিত মৃত্যু হয়। এই খতম একজনে পাঠ করাই ভাল, তবে জরুরী প্রয়োজনে ১০/১৫ জন একত্র বসিয়া একদিনেও খতম করা চলে। (মোকছুদুল মো’মিনীন বা বেহেশ্তের পুঞ্জী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোহাম্মদ নাজমুল হক, পঞ্চদশ খণ্ড ১৭৮ পৃষ্ঠা, সাদনান পাবলিকেশন)।

আমাদের সমাজে এমনভাবেও প্রচলিত আছে যে, কোনো মৃতের জন্য সত্তর হাজার বার কালিমা তাইয়্যেবা পড়লে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। কেউ কেউ নিজে জীবদ্দশায় এই উদ্দেশ্যে সত্তর হাজার বার কালেমা পড়ে তবে তাকেও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হবে। তবে মৃতের জন্য পড়ানোর রেওয়াজটা বেশি। লোকমুখে প্রচলিত এই কথার কোনো ভিত্তি নেই। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি সহীহ বা জয়ীফ কোনো সনদেই বর্ণিত নেই।’ (মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৪/৩২৩)

কিন্তু মনে রাখবেন, কালিমা তাইয়্যেবা পড়া উত্তম জিকর। একাধিক হাদীসে এই কালিমা পাঠ করার ফযীলত এসেছে। এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি এখলাসের সাথে কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করবে সে জান্নাতে যাবে। (মুসনাদে আহমদ ৪/৪১১)।

মন্তব্যঃ আগেই উল্লেখ করেছি ইবাদাত হতে হবে অহী নির্ভর। কিন্তু এখানে কি দেখছি। বীনা অহীতে দলীল প্রমান ছাড়া নিজে নিজে মনগড়া ফজিলত বর্ণন করিতেছে। অহী ছাড়া এমন কথা বলার দুঃসাহসিকতা দেখাল কিভাবে। রোগ আল্লাহ দেন এবং তিনিই মানুষকে রোগমুক্ত করেন। কারো রোগ দেখা দিলে রোগীর নিজের কী করণীয় এবং তার বেলায় অন্যদের কী করণীয় সবই বলে গেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার মাঝে ‘খতমে শিফা’ নামের কিছু নেই। কালেমা একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করা নিঃসন্দহে একটি বিদআত। কারন এই ভাবে সংখ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট করতে হলে অবশ্যই কুরআন সুন্নাহর দলীল দরাকার। 

৮। খতমে তাসমিয়াঃ

‘তাসমিয়া’ শব্দের মূল অর্থ নামকরণ করা। মুসলিম ব্যক্তি যে কোনো কাজ আল্লাহর নাম নিয়েই শুরু করেন, তাই আল্লাহর নাম নেওয়া বা বিসমিল্লাহ বলার ক্ষেত্রেও শব্দটি প্রয়োগ হয়। এভাবে ‘খতমে তাসমিয়া’ বিসমিল্লাহ এর খতমকে বুঝানো হয়ে থাকে। একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’’ পাঠের মাধ্যমে এই খতম করতে হয়। এই খতমের বিবরণে লেখা হয়েছেঃ

‘‘এই পাক কালাম (বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম) একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করাকে ‘‘খতমে তাসমিয়া’’ বলে। কোনো কঠিন বিপদ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য অথবা কোনো মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার জন্য এই খতম অত্যন্ত ফলপ্রদ। অনেক লোক একত্রিত হয়ে একই বৈঠকে এই খতম পাঠ করিয়া আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করলে আল্লাহ তাআলা নিশ্চয় তাহাকে সেই বিপদ হইতে রক্ষা করেন বা তাহার বাসনা পূর্ণ করেন।’ (মোকছুদুল মো’মিনীন বা বেহেশ্তের পুঞ্জী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোহাম্মদ নাজমুল হক, পঞ্চদশ খণ্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা। সাদনান পাবলিকেশন।

মন্তব্যঃ আমরা জানি যে কোন ভাল কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ। এছাড়া ‘বিসমিল্লাহ’ বলে রোগের ঝাড় ফুঁকের আমলও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পাওয়া যায়। সাহাবী উসমান ইবন আবিল ‘আস আস-সাক্বাফী একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর শরীরের একটি ব্যথার অভিযোগ করলেন। ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই তিনি তাঁর শরীরে এই ব্যথা অনুভব করছেন বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরয করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,‘‘তোমার শরীরের যে জায়গায় ব্যথা রয়েছে সেখানে হাত রাখ এবং তিনবার ‘بِاسْمِ اللَّه’ বল। আরো সাতবার বলঃ

 ‘‘أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ’

অর্থঃ আমি যে ব্যথা অনুভব করছি এবং যে ভয় পাচ্ছি তা থেকে আল্লাহ ও তার কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। (সহীহ মুসলিম, সালাম অধ্যায়, ব্যথায় আক্রান্ত স্থানে দো‘আর সহিত হাত রাখা মুস্তাহাব পরিচ্ছেদ, নং:৫৮৬৭।

কিন্তু এইভাবে একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করার কোন প্রমান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবিদের জীবনে এই তাসমিয়া খতমের কোনো দৃষ্টান্ত নেই, কল্যাণের সাক্ষ্যপ্রাপ্ত কোনো যুগেই এর কোনো নজীর নেই।

৯। খতমে খাজেগানঃ

ফার্সি শব্দ ‘খাজা’ যার বহুবচন ‘খাজেগাঁ’।খতমের নাম থেকেই তা যে অনারব কোনো সুফি থেকে আবিষ্কৃত তা সহজেই অনুমেয়। এই নামকরণের কারণে বলা হয়, ‘‘পীর-পীরানগণের উপর দো‘আ করা হয় বলিয়া এই খতমের নাম খাজেগান বা পীরান রাখা হইয়াছে। (নেয়ামুল কুরআন, মৌলবী শামছুল হুদা, রহমানিয়া লাইব্রেরী, একাদশ সংস্করণ, পৃষ্ঠা: ২০০)।

নেয়ামুল কুরআনে এই খতম এর নিয়ম সম্পর্কে লেখা হয়েছেঃ

১। বিসমিল্লাহর সাথে সূরায়ে ফাতিহা ৭ বার।

২। দরূদশরীফ ১০০ বার।

৩।   বিসমিল্লাহর   সাথে   সূরায়ে   আলাম   নাশরাহ   ৭৯  বার।

৪। বিসমিল্লাহর সাথে সূরায়ে এখলাস ১০০১ বার।

৫। বিসমিল্লাহর সাথে সূরায়ে ফাতিহা ৭ বার।

৬। দরূদশরীফ ১০০ বার।

৭।    ১০০    বার-    يا   قاضى   الحاجات    (ইয়া     কাদিয়াল হাজাত)

৮।    ১০০    বার-    يا    كافى    المهمات    (ইয়া    কাফিয়াল  মুহিম্মাত)

৯।     ১০০    বার-    يا   رافع   الدراجات    (ইয়া   রাফিআদ  দারাজাত)

১০।    ১০০    বার-   يا    مجيب   الدعوات   (ইয়া   মুজিবাদ দাওয়াত)

১১।   ১০০ বার-  يا   مسبب  الاسباب  (ইয়া মুছাব্বিবাল আছবাব)

১২।   ১০০   বার-    يا   مفتح    الابواب   (ইয়া   মুফাত্তিহাল  আবওয়াব)

১৩।   ১০০   বার-     يا   شافى    الامراض    (ইয়া   শাফিয়াল আমরাদ)

১৪।      ১০০    বার-   يا   دافع   البليات    (ইয়া   দাফিআল বালিয়্যাত)

১৫।১০০    বার-   يا    حلال    المشكلات    (ইয়া   হাল্লালাল মুশকিলাত)

১৬।  ১০০   বার-  يا   ارحم  الراحمين  (ইয়া  আরহামার  রাহীমিন)

১৭। ১০০ বার- ياالله (ইয়া আল্লাহ)

১৮। ইস্তেগফার ১০০ বার, আস্তাগফিরুল্লহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইইউল কাইউম, ও আতুবু ইলাইহ।

১৮। আবার সবশেষে দুরূদ শরীফ ১০০ বার।

****তবে অনেক আবার খতমে খাজেখান কে এই নিয়মে আদায় করেঃ যেমনঃ

১। সূরা ফাতেহা ৭০ বার

২। দুরূদ শরীফ ১০০ বার

৩। সূরা আলাম নাশরাহ ৭০ বার

৪। সূরা এখলাস ১০০০ বার

৫। সূরা ফাতেহা ৭ বার

৬। দুরূদ শরীফ ১০০ বার

৭। নিচের দোয়া ১০০ বার

فسهل يا الهي كل صعب بحرمة سيد الابرار سهل بفضلك يا عزيز،  ১০০ বার

৮।يا قاضي الحاجات  ১০০ বার

৯। يا كافي المهمات  ১০০ বার

১০। يا دافع البليات  ১০০ বার

১১। يا مجيب الدعوات  ১০০ বার

১২। يا رافع الدرجات  ১০০ বার

১৩। يا حلال المشكلات  ১০০ বার

১৪। يا عوث اغثني و امددني  ১০০ বার

১৫। انا لله و انا اليه راجعون  ১০০ বার

১৬।لا اله الا انت سبحانك اني كنت من الظالمين

১৭। সবশেষে দুরূদ শরীফ ১০০ বার।

মন্তব্যঃ এই খতমের আমরা দেখতে পাই কুরআন তিলওয়াতের পাশাপাশি দুরুদও বিভিন্ন প্রকারের দোয়া ও হামদ পড়া হয়েছে। এই সকল সূরা, দোয়া ও দুরুদের আলাদা আলাদ ফজিলত আছে। কিন্তু একত্রে এইভাবে পড়ে খতম উঠানো কুরআন সুন্নাহ সমর্থন করে না। হয়ত কোন বিদআতি আলেম বলবে কাজগুলি ভাল, কোন কোনটির ফজিলত হাদিস দ্বারা প্রমানিত, তাহলে করলে ক্ষতি কি? আসলে যে সকল ভাল কাজ নেকীর জন্য করা হয় অথচ সময় সুযোগ থাকা সত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবি রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগন করে নাই তাইতো বিদআত। আর বিদআতীর কোন নেক বা ভাল কাজ কবুল করা হবে না, তারা জাহান্নামে যাবে। কাজেই এই ধরনের বিদআতী খতম দেকে নিজে বাচি এবং অপরকে বাচাই।

১০। খতমে জালালীঃ

মহান আল্লাহর নাম সমূহের মধ্যে তার মূল নাম ‘الله’। এই নাম ব্যবহার করে যে খতমের প্রচলন করা হয়েছে তাকে খতমে জালালী বলা হয়। এই খতমের প্রধান প্রচলিত ফজিলাত হল নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।  আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি জাল ও মনগড়া কিতাব হল নেয়ামুল কুরআন। এই কিতাবে ইহার ফজিলত ও পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। “‘নদী ভাঙ্গন বা ঐরূপ কঠিন বিপদ হইতে উদ্ধারকল্পে আল্লাহ (‘الله’) নাম সোয়া লক্ষ বার কাগজে লিখিবে ও সোয়া লক্ষ ময়দার আটার গুলী তৈয়ার করিবে, গুলী তৈয়ার করার সময় ‘আল্লাহু’ এই নাম মুখে বলিবে, তৎপর আল্লাহর নাম লিখিয়া কাগজগুলি একটি করিয়া গুলীর মধ্যে ভরিবে, তৎপর গুলীগুলি নদী বা যে পুকুরে মাছ থাকে তাহাতে ফেলিয়া দিবে। সকলেই পাক সাফ অবস্থায় ওযুসহ এই আমল করিবে। নতুবা হিতে বিপরীত হইতে পারে। এই আমল দ্বারা বিপদ হইতে উদ্ধার হইবে ও মতলব পূর্ণ হইবে। ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই। আল্লাহর নামসমূহ ২ ভাগে বিভক্ত- জালালী  (তেজস্বী) ও জামালী (সৌন্দর্যময়)। ‘আল্লাহ’ নাম জালালীর অন্তর্ভুক্ত। এই জন্য ইহার খতমকে খতমে জালালী বলা হয়। (নেয়ামুল কুরআন পৃষ্ঠা-১৯৮)।

মন্তব্যঃ আল্লাহর এই পবিত্র নাম বা ইসমে যাত নিয়ে তামাশার এক পদ্ধতির নাম খতমে জালালী। এই খতমের পদ্ধতিতে আল্লাহর যাতি নাম নিয়ে খেল তামাশা, নির্লজ্জ আচরণের সাথে সাথে এর ফায়েদায় যা কিছু বলা হয় তা সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। মহান আল্লাহ এই সকল বিদআত থেকে মুসলীম উম্মাহে হিফাজত করুক।

১১। খতমে দুরুদে মাহিঃ

‘মাহি’ ফারসি শব্দ। যার অর্থ মাছ। বানানো একটি দুরূদকে ‘দুরুদে মাহি’ হিসেবে নামকরণের কারণ হিসেবে যে কাল্পনিক কাহিনীটি বলা হয়েছে তা নিম্নরূপ:

‘‘হযরত রসূল (সাঃ) এর সময় একজন কামেল ব্যক্তি নদীর তীরে বসিয়া সর্বদা এই দুরূদ শরীফ পড়িতেন। ঐ নদীর একটি রুগ্ন মৎস্য ইহা সর্বদা শুনিতে শুনিতে শিখিয়া ফেলিল ও পড়িতে লাগিল। ক্রমে মৎস্যটির রোগ আরোগ্য হইতে লাগিল ও তাহার শরীরের রং বদলাইয়া সোনার বর্ণ ধারণ করিল। দৈবাৎ একদিন এক ইহুদী জেলের জালে মৎস্যটি ধরা পড়িল। ইহুদীর স্ত্রী অনেক চেষ্টা করিয়া মৎস্যটি কাটিতে পারিল না। অবশেষে উহাকে ফুটন্ত তৈলের মধ্যে ছাড়িয়া দেওয়া হইল। কিন্তু মৎস্যটি নির্বিঘ্নে তৈলের মধ্যে ঘুরিয়া ঘুরিয়া এই দরূদ শরীফ পড়িতে লাগিল। ইহা দেখিয়া ইহুদী অতিশয় আশ্চর্যান্বিত হইয়া পড়িল ও মৎস্যটিকে লইয়া হযরত রসূল (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হইল। হযরত (সাঃ) এর দোয়ায় মৎস্যটি বাকশক্তি লাভ করিল ও সমস্ত বিষয় হযরত (সাঃ) এর নিকট বর্ণনা করিল। ইহা শুনামাত্র সেখানে উপস্থিত ৭০ জন ইহুদী তৎক্ষনাৎ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিলেন ও রসূল (সাঃ) এর নবুয়তের উপর ঈমান আনিলেন। তৎপর মৎস্যটিকে নদীতে ছাড়িয়া দেওয়া হইল। উপরোক্ত কারণে এই দরূদ শরীফ ‘দরূদে মাহি’ তথা মাছের দরূদ বলিয়া খ্যাতি লাভ করিয়াছে। ইহা পড়িলে অতি মধুর শুনা যায়। (নেয়ামুল কুরআন, পৃষ্ঠা:৪৩-৪৪।

দুরূদটি নিমণরুপ:

” اللهم صل على محمد خير الخلائق، أفضل البشر، شفيع الامة يوم الحشر والنشر سيدنا محمد بعدد كل معلوم لك، وصل على جميع الانبياء والمرسلين والملائكة المقربين وعلى عباد الله الصالحين، وارحمنا برحمتك يا ارحم الراحمين “.

১। এই খতমের নিয়মে বলা হয়: ২১ দিনে বা ৪২ দিনে সোয়া লক্ষবার বর্ণিত দুরূদটি পড়া। এই নিয়মে এই খতম পড়লে নাকি হাতে হাতে ফল পাওয়া যায়। অযু সহকারে নদীর তীরে বসে পড়লে আরও বেশি দ্রুত ফল পাওয়া যায় বলে বর্ণনা করা হয়েছ। (নেয়ামুল কুরআন, পৃষ্ঠা:৪৩-৪৪।

২। প্রত্যেক ফজরের নামাযের পর ৭ বার পড়লে স্বাস্থ্য অটুট থাকে, দেহশ্রী লাবণ্যময় থাকে এবং বিপদাপদ থেকে মুক্ত থাকবে।

মন্তব্যঃ বর্ণিত দুরূদটি মাছুর তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। বরং এটি কারো বানানো একটি দো‘আ। তাই একে ওযিফা হিসেবে আমলে আনা যাবে না। তবে এতে কোনো আপত্তিকর শব্দ নেই। তাই কেউ ইচ্ছা করলে দো‘আর উদ্দেশ্যেই তা পড়তে পারে।

কিন্তু এর সংখ্যা পদ্ধতি ও ফযিলত বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মনগড়া বানানো বক্তব্য। এটি একটি বিদআতি আমল। দুরুদে মাহি নামকরণের কারণে যে কাহিনীটি উল্লেখ করা হয়েছে তা জালিয়াতদের বানানো সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও মনগড়া, এ কাহিনীর কোনো সত্যতা নেই।

১২। খতমে ইয়াসিনঃ

আমাদের দেশে অন্যান্য খতমের মত শুধু সুরা ইয়াসিনের খতম করা হয়। মহান কুরআন পড়া অবশ্যই একটি নেকীর কাজ এর প্রতিটি আয়াত তেলাওয়াত করলে প্রতিটি অক্ষরে যে পরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায় এই সূরা তেলাওয়াত করলেও তার প্রতিটি অক্ষরে সেই পরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যাবে। সহিহ হাদিসসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সুরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস, সূরা মূলক, সূরা বাক্বারা, সূরা বাকার এর ২৫৫ (আয়াতুল কুরসী), সূরা বাকারা এর শেষ দুই আয়াত (২৮৫ ও ২৮৬), সূরা কাহফ এবং সূরা ফাতহ তিয়ওয়াত করলে অতিরিক্ত কিছু ফযিলত রয়েছে। সহিহ হাদিসে সূরা ইয়াসিনের অতিরিক্ত কোনো ফযিলত বর্ণিত হয় নি। দু একটি দুর্বল ও বিভিন্ন জাল বানোয়াট হাদীসে এ সূরার বিভিন্ন ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে। দুর্বল হাদীসের মধ্যে প্রসিদ্ধ হাদিসটি হচ্ছে।

১। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেকটা বস্তুর কলব (হৃদয়) আছে। কুরআনের কলব হচ্ছে সূরা ইয়াসীন। যে ব্যক্তি এ সূরা একবার পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা এর পরিবর্তে তার জন্য দশবার কুরআন পাঠের সমান সাওয়াব নিরূপণ করবেন। (হাদিসের মান যঈফ, জাল ও যঈফা -১৬৯, নাসির উদ্দিন আরবানী)

মন্তব্যঃ আবূ ঈসা (ইমাম তিরমিজি) বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র হুমাইদ ইবনু আবদুর রহমানের সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। বসরায় এই সূত্র ব্যতীত কাতাদার রিওয়াত প্রসঙ্গে কিছু জানা নেই। হারূন আবূ মুহাম্মাদ একজন অপরিচিত শাইখ। আবূ মূসা মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না হতে তিনি আহমাদ আবদুর রহমান (রাহঃ) সূত্রে উপরের হাদীসের মতই বর্ণনা করেছেন। এ অনুচ্ছেদে আবূ বাকর সিদীক (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। সনদের দিক হতে তার সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি সহীহ নয়। এর সনদসূত্র দুর্বল।

২। মাকিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃতদের কাছে সূরা ইয়াসিন পড়ো। (হাদিসের মানঃ যঈফ আবূ দাউদ ৩১২১, আহমাদ ১৯৭৮৯, মিশকাত ১৬২২,  সিলসিলা ওয়াস যঈফাহ ৫৮৬১,  তাহকীক আলবানীঃ যঈফ)

অপর একটি  একটি যইফ হাদিসে এসেছে মুমূর্ষ ব্যক্তির নিকট পড়লে তার কষ্ট হাল্কা হয়।

সহিহ হাদিসে তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তিকে ইয়াসিন নয় কলেমার তালক্বিন দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রী (বান্দাকে)কে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর তালক্বিন দাও। সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ১৯৯৫ ও ১৯৯৬)।

মনে রাখতে হবে, মৃত্যুর পথযাত্রী ব্যক্তিকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর তালক্বীন দেয়ার অর্থ হলো, মুমূর্ষ ব্যক্তি সামনে এই কালেমা উচ্চরণ করা, যাতে সে তা শিখে বা স্মরণ করে পড়তে পারে। এতে তার জীবনের শেষ বাক্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে। এর বিপরীত মূমূর্ষ ব্যক্তির পাশে ‘ইয়াসিন’ পড়ার কোনো আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন শিক্ষা সাহাবিদের দেননি। এ সম্পর্কে যা বলা সবই অনির্ভরযোগ্য, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

ইহা ছাড়া সুরা ইয়াসিনের ফজিলত সম্পর্কে অন্যতম একটি জাল হাদিস প্রচলিত আছে। হাদিসটি হলঃ

যে ব্যাক্তি তার পিতা-মাতা উভয়ের কবর প্রত্যেক জুম’আর দিবসে যিয়ারত করবে। অতঃপর তাদের উভয়ের নিকট অথবা পিতার কবরের নিকট সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, প্রত্যেক আয়াত অথবা অক্ষরের সংখ্যার বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। (হাদীসটি জাল, যঈফ ও জাল হাদিস এর ৫০ নম্বর হাদিস)।

অতিরিক্ত মন্তব্যঃ হাদীসটি ইবনু আদী (১/২৮৬), আবূ নু’য়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/৩৪৪-৩৪৫) ও আব্দুল গনী আল-মাকদেসী “সুনান” গ্রন্থে (২/৯১) … আমর ইবনু যিয়াদ সূত্রে …বর্ণনা করেছেন। কোন মুহাদ্দিস (আমার ধারণা তিনি হচ্ছেন ইবনু মুহিব কিংবা যাহাবী) “সুনানুল মাকদেসী” গ্রন্থের হাশিয়াতে (টীকাতে) লিখেছেন, هذا حديث غير ثابت এ হাদীসটি সাব্যস্ত হয়নি। ইবনু আদী বলেনঃ হাদীসটি বাতিল। এ সনদে এটির কোন ভিত্তি নেই। আমর ইবনু যিয়াদ (তিনি হচ্ছেন আবুল হাসান আস-সাওবানী)-এর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে তার অন্যান্য হাদীসের সাথে এ হাদীসটির ব্যাপারে উল্লেখিত মন্তব্যটি করেন। সে সব হাদীসের একটি সম্পর্কে বলেন জাল।

মন্তব্যঃ সুরা ইয়াসিন খতম করার হাদীসগুলির মান জঈফ অথরা জাল কিন্তু এর কোন  মান যাচাই বাছাই ছাড়াই আমাদের সমাজে অত্যন্ত প্রচলিত। যে সকল অজ্ঞ লোক খতম করান তাদের চেয়ে, যারা খতম পড়ান ও খতম করার জন্য ওয়াজ নসিয়ত করেন তারাই বেশী দায়ী। যদি এই খতম সম্পর্কে নিজেরদের সঠিক জ্ঞান থাকতে এবং সাধারণ মুসলিমদের ঠিক একইভাবে সতর্ক করা যেত তবে সমাজ থেকে এই বিদআত বিদায় নিত। বাংলাদেশের অধিকাংশ মসজিদে প্রতিদিন সকালে সুরা ইয়াসিনের খতমের আমল করা হয়। আর কোন কোন সমজিদে প্রতি শুক্রবার সকালে সুরা ইয়াসিনের খতমের আমল করা হয়। এই আমলটি সুন্নাহ সম্মত নয়। প্রতি শুক্রবার সূরা কাহাব তিলওয়াতের ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। যদি কেউ প্রতি শুক্রবার সকালে সুরা ইয়াসিনের খতমের আমল কে জরুরী বা সুন্নাহ মনে করে তবে তার জন্য এই আমলটি বিদআত হবে। তাছাড়া যে কেউ শর্তহীনভাবে এই সুরা পড়লে কুরআত তিলওয়াতের ফজিলত পাবে। মনে রাখতে হবে, আমলকে স্থান ও সময় সাথে একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই খাস করতে পারেন। আমরা করলে দলীল লাগবে, তা না হলে বিদআত হবে।

 

১৩। খতমে তাহলিলঃ

তাহলিল শব্দটি আরবি। তাহলিল শব্দটি হাল্ল বা হিল্ল শব্দ থেকে আগত, অর্থ হলো উদয় হওয়া, প্রকাশ-বিকাশ হওয়া, স্বাগত হওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায় অর্থে সুফিগন ইহাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বা জিকর করাকে বুঝিয়ে থাকেন। (লিসানুল আরব)।

ব্যবহারিক ক্ষেত্রে তাহলিলের সঙ্গে ‘খতম’ শব্দটি যুক্ত হয়ে বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে থাকে। এখানে খতম মানে সমাপ্ত করা, শেষ করা, সম্পন্ন করা বা পূর্ণ করা। ‘খতমে তাহলিল’ বা ‘তাহলিল খতম’ হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির নির্ধারিত সংখ্যায় পড়া। এ সংখ্যা ৪০ হাজার, ৭০ হাজার, ১ লাখ বা সোয়া লাখ। এটি একজন বা একাধিকজনে পড়া যায়। এটি এক বসায় একাধারেও পড়া যায় এবং বিরতি দিয়ে বিভিন্ন সময়েও পড়া যায়।

ফজিলতঃ খতমে তাহলিল যিনি পড়বেন বা যার জন্য পড়া হবে, তার গোনাহ এবং কবরের আজাব মাফ হবে বলে কথিত আছে।  অনেককে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পূর্ণ না বলে শুধু ‘ইল্লাল্লাহ’ বলতে শোনা যায়। এই খতমের সাথে খতমে শিফার মিল আছে বিধায় অনেক খতমে তাহলিলকে খতমে শিফা বলে উল্লেখ করে থাকেন। তা ছাড়া কলেম খতম করার সংখ্যা ও পদ্ধতি প্রায় একই। বানান ফজিলতের মাঝেও মিল আছে। কিন্তু দুটি খতমই কুরআন সুন্নাহ বহির্ভূত বিদআত।

১৪। ইখলাস দ্বারা কুরআন খতমঃ

কুরআনুর কারীমে যতগুলি সূরার নাম উল্লেখ করে তিলওয়াতের ফজিলতের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে সূরা ইখলাস অন্যতম। তাই আলোচনার শুরুতে সহিহ হাদিসের আলোকে সূরা ইখলাসের কিছু ফজিলত তুলে ধরছি।

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ব্যাক্তি অপর এক ব্যাক্তিকে বারবার ইখলাস সূরাটি তিলাওয়াত করতে শুনল। সকাল বেলা সে ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হয়ে তার নিকট এ ব্যাপারটি উল্লেখ করল। সে ব্যাক্তিটি যেন সূরা ইখলাসের (মহত্তকে) কম করে দেখছিল। এই প্রেক্ষিতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে মহান সত্তার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি! এই সূরাটি মর্যাদার দিক দিয়ে অবশ্যই কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ। (সহিহ বুখারী ইফাঃ হাদিস নম্বর ৬৮৭০)

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এতে অক্ষম যে, এক রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়বে? সাহাবাগণ বললেন, কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ কেমন করে পড়তে পারব? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ মুসলীম ইফাঃ ১৭৫৯)

মন্তব্যঃ সহিহ হাদিসের আলোকে সূরা ইখলাসের মর্যাদার অবশ্যই কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ। কিন্তু হাদিসের কোন কিতাবে একথা বলা হয়নি যে সূরা ইখলাস তিনবার পড়লে একবার কুরআন খতম করার সমপরিমান নেকী হবে। হয়ত কোন আবেগী মুসলিম হাদিসের মর্ম বুঝাতের গিয়ে তিন এক-তৃতীয়াংশ যোগ করে একবার কুরআন খতমের নেকীর কথা বলেছেন। তাই আমরা দেখতে পাই আমাদর সমাজে নির্দিষ্ট সংখ্যার মাধ্যমে সূরা ইখলাসের খতম প্রচলিত না থাকলেও সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার মাধ্যমে কুরআন খতমের প্রচলন রয়েছে। তিনবার সূরা ইখলাস পাঠ করলে পূর্ণ এক খতম কুরআন তেলাওয়াতের ছওয়াব পাওয়া যায় বলে অনেকের ধারণা। তাই অনেক সময় কুরআন খতম করতে অপারগ হলে তিনবার এই সূরা পাঠ করা হয়। হাদিসের রেফারেন্সে বলা হয়,  তিনবার সূরা ইখলাস পাঠ করলে এক খতম কুরআনের ছওয়াব পাওয়া যায়। অথচ এমন কোনো কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয় নি। রাসূলের হাদীসের সাথে যুক্তির মিশ্রণ ঘটিয়ে এমন কথা বলা হয়। আর অনেক ক্ষেত্রে এভাবেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথার মর্ম পরিবর্তন হয়ে শরীয়তের বিকৃতি ঘটেছে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment