হজ্জ ও উমরার বিধান

 হজ্জ ও উমরার বিধান

উম্মতে মুহাম্মাদির প্রত্যেক বিবেক সম্পন্ন ও সাবালক নর-নারী যাদের পথ খরচের পরিমান অর্থ আছে তাদের উপর হজ্জ ফরজ। নবম হিজরিতে হজ্জ ফরজ করা হয়। হজ্জ সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ তায়ালা যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নির্দেশনা তুলে ধরা হলো।

১. মহান আল্লহ কুরআনে হজ্জের বিধান বর্ণনা করে বলেন,

وَأَتِمُّواْ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ وَلاَ تَحْلِقُواْ رُؤُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضاً أَوْ بِهِ أَذًى مِّن رَّأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِّن صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ فَإِذَا أَمِنتُمْ فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ذَلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَاتَّقُواْ اللّهَ وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

অর্থঃ আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ওমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন কর। যদি তোমরা বাধা প্রাপ্ত হও, তাহলে কোরবানীর জন্য যাকিছু সহজ্জলভ্য, তাই তোমাদের উপর ধার্য। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করবে না, যতক্ষণ না কোরবাণী যথাস্থানে পৌছে যাবে। যারা তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে রোজা করবে কিংবা খয়রাত দেবে অথবা কুরবানী করবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ্ব ওমরাহ একত্রে একই সাথে পালন করতে চাও, তবে যাকিছু সহজ্জলভ্য, তা দিয়ে কুরবানী করাই তার উপর কর্তব্য। বস্তুতঃ যারা কোরবানীর পশু পাবে না, তারা হজ্জ্বের দিনগুলোর মধ্যে রোজা রাখবে তিনটি আর সাতটি রোযা রাখবে ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি তাদের জন্য, যাদের পরিবার পরিজন মসজিদুল হারামের আশে-পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক। সন্দেহাতীতভাবে জেনো যে, আল্লাহর আযাব বড়ই কঠিন। [ সুরা বাকারা ২:১৯৬ ]

২. মহান আরও আল্লাহ বলেন,

فِيهِ آيَاتٌ بَيِّـنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ

অর্থঃ এতে রয়েছে মকামে ইব্রাহীমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য। যে লোকের সামর্থ? রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না। ( সুরা ইমরান ৩:৯৭)

৩. মহান আল্লাহ বলেন,

وَأَذِّن فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ

অর্থঃ এবং মানুষের মধ্যে হজ্বের জন্যে ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে। (সুরা হাজ্জ্ব ২২:২৭)

৪. মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

(٤)ٱلْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَٰتٌۚ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ ٱلْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِى ٱلْحَجِّۗ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ ٱللَّهُۗ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقْوَىٰۚ وَٱتَّقُونِ يَٰٓأُولِى ٱلْأَلْبَٰبِ .

অর্থঃ  হজ্জ্বে কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজ্জ্বের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীও সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। না অশোভন কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ করা হজ্জ্বের সেই সময় জায়েজ নয়। আর তোমরা যাকিছু সৎকাজ কর, আল্লাহ তো জানেন। আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহর ভয়। আর আমাকে ভয় করতে থাক, হে বুদ্ধিমানগন! তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় কোন পাপ নেই। (সূরা বাকার ২:১৯৭)

মন্তব্যঃ এই সকল আয়াতে মহান আল্লাহ তার উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ওমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন করার নির্দেশ দেয়। হজ্জের করার কিছু নিয়ম নীতি বর্ণন করেছেন। কুরআনে এই সকল নির্দশ প্রমান করে হজ্জ মহান আল্লাহ তরফ থেকে রাজিকৃত ফরজ ইবাদাত। আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উমরা ও হজ্জ আদায় করেছেন, সাহাবীদেরও আদায় করার নির্দেশ প্রদান করছেন। উমরা ও হজ্জ আদায়  করার বিস্তারিত বিবরন প্রদান করেছেন। এই পর্যায় হজ্জ ফরজ সম্পর্কি কিছু হাদিস উল্লেখ করছি।

হাদিসঃ

১. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার লোকদের সামনে খুৎবা দিলেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন, তখন এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তা কি প্রতি বছরের জন্য? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তর দেওয়া থেকে চুপ রইলেন। লোকটি তিনবার এর পুনরাবৃত্তি করলো। পরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি আমি বলতাম, হ্যাঁ, তা হলে অবশ্যই তা প্রতি বছরের জন্য ফরয হয়ে যেত। আর যদি ফরয হয়েই যেত, তাহলে তোমরা তা আদায় করতে পারতে না। আমি যা বলি তা বলতে দাও, প্রশ্ন করে সহজ্জ কাজকে জটিল করো না। কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা সঠিক প্রশ্ন করা এবং তাদের নবীদের সাথে মতবিরোধোর কারণে ধ্বংস হয়েছে। আমি যখন তোমাদেরতে কোন কাজের নির্দেশ দেই তখন তা তোমরা সাধ্যানুযায়ী পালন করো।আর যখন কোন কাজ করতে নিষেধ করি, তখন তা পরিত্যাগ করো। (সুনানে নাসাঈ ২৬২১ ইফাঃ)

২. ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেন, আল্লাহ তা’আলা তােমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন। তখন আকরা ইবন হাবিস তামীমী (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা কি প্রতি বছরের জন্য? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ রইলেন। তারপর বললেন আমি যদি বলতাম, হ্যাঁ, তবে তা ফরয হয়ে যেত। তখন তোমরা তা শুনতেও না এবং মানতেও না। কিন্তু তোমরা জেনে রাখ, হজ্জ একবারই ফরয। (সুনানে নাসাঈ ২৬২২ ইফাঃ)

৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর রাখা হয়েছে, এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। সালাত কায়েম করা। জাকাত প্রদান করা। রমজানের রোজা রাখা। এবং যে তার সামর্থ রাখে তার জন্য বাইতুল্লাহর হজ্জ করা।  (হাদিসের মান সহিহঃ বুখারি – ৮; মুসলিম – ১৬)।

৪. ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, প্রত্যেকের জন্য হাজ্জ ও ‘উমরাহ অবশ্য পালনীয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, কুরআনুল কারীমে হাজ্জের সাথেই ‘উমরাহ’র উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর বাণী, ‘‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হাজ্জ ও ‘উমরাহ পূর্ণভাবে আদায় কর’’। (আল-বাকারাঃ ১৯৬)। (সহিহ বুখারি হজ্জ অধ্যায়)

হজ্জ কাদের উপর ফরজঃ

সকল মুসলমান এ বিষয়ে একমত যে, বায়তুল্লাহ পর্যান্ত পৌছার সামর্থবান প্রত্যেক মুসলিম নারী পুরুষের  উপর হজ্জ ফরজ। যে অস্বীকার করবে সে কাফের ও মুরতাদ বলে গণ্য হবে। তাকে তাওবা করতে বলা হবে। মহান আল্লাহ তার বান্দার উপর কখনও অন্যায় আদেশ চাপিয়ে দেন না। তিনি তার বান্দার সামর্থের বাইরে কোন আদেশ দেন না। তিনি এরশাদ করেন,

*لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ *

অর্থঃ আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। ( সুরা বাকারা ২:২৮৬) ]

কাজেনই হজ্জ তিনি ফরজ করার সাথে সাথে বলে দিয়েছেন কার উপর হজ্জ ফরজ। তিনি সামর্থবান যাদের পাথেয় খরচ ও শারীরিকভাবে শুস্থ তাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন। যারা অসুস্থ তাদের জন্য হজ্জের বিধান সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে, অসুস্থ থেকে সুস্থ হলে আদায় করে নিতে হবে। এই জন্য বলা হয় মহান আল্লাহই উত্তম ফয়সালাকারী। তিনি তার বান্দার প্রতি সবচেয়ে বেশী দয়াশীল। তাই তো তিনি নিজেই এরশাদ করেন,

*أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ*

অর্থঃ তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে? ( সুরা মায়েদা ৫:৫০)

তার ফয়সালা হলো যাদের পাথেয় নাই তাদের উপর হজ্জ ফরজ নয়। যখন তিনি সমর্থবান হবেন তখনই তাহার উপর হজ্জ ফরজ হবে। মহান আল্লাহ আরও বলেন,

فِيهِ آيَاتٌ بَيِّـنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ

অর্থঃ এতে রয়েছে মকামে ইব্রাহীমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য, যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না। ( সুরা ইমরান ৩:৯৭)

কাদের উপর হজ্জ ফরজঃ

সালাত সবার উপর সমানভাবে ফরজ হলে, হজ্জ জাকাতের মত আর্থিক সংগতির উপর নির্ভর করে। হজ্জ ফরজ হওয়া জন্য বিশেষ কয়েকটি শর্ত আছে। এই সকল শর্ত পূর্ণ করা সাপেক্ষে হজ্জ ফরজ হয়ে থাকে। শর্তসমূহ হলোঃ

১। মুসলিম হতে হবে (অমুসলিম, কাফির, মুশরিক উপর হজ্জ ফরজ নয়)

২। বিবেক সম্পন্ন হতে হবে (পাগলের উপর হজ্জ ফরজ নয়)

৩। সফরের খরচ থাকতে হবে (আর্থিক সংগতি নাই এমন লোকের উপর হজ্জ ফরজ নয়)

৪। প্রাপ্ত বয়স্ক লোক হতে হবে

৫। সফর করার মত শক্তি সামর্থ থাকতে হবে

৬। স্বাধীন হতে হবে

৭। মহিলাদের সঙ্গে মাহরাম থাকতে হবে।

৮। বার্ধক্যে উপনিত ব্যক্তি যার ভাল মন্দের জ্ঞান নেই।

৯। দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা যা হতে ভালো হওয়ার আশা করা যায় না

১। মুসলিম হতে হবেঃ

কোন অমুসলিম বা কাফির যারা এখনও ইসলামের মধ্য প্রবেশ করে নাই তাদের উপর ইসলামের কোন হুকুম আহকাম পালন করা ফরজ নয়। তাছাড়া কাফির ব্যক্তির কোন আমল মহান আল্লাহ দরবারে কবুল হবেনা। মহান আল্লাহ কাফির মুসরীকদের সকল আমল ধ্বংশ করে দিবেন। তাদের আমলের কোন লাভ ক্ষতি নেই। তাদের আমল করা আর না করা সমান কথা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

* وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ * 

অর্থঃ ‘‘আপনার ও আপনার  পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর সাথে শিরক করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন বলে গণ্য হবেন। (সুরা যুমার ৩৯৬৫)

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:

ذَٲلِكَ هُدَى ٱللَّهِ يَہۡدِى بِهِۦ مَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦ‌ۚ وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ (٨٨)

অর্থঃ এটি হচ্ছে আল্লাহর হেদায়াত, নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে তিনি যাকে চান তাকে এর সাহায্যে হেদায়াত দান করেন৷ কিন্তু যদি তারা কোন শির্ক করে থাকতো তাহলে তাদের সমস্ত কৃতকর্ম ধ্বংস হয়ে যেতো৷ (আনআম:৮৮)

কাফিদের সমস্ত কৃতকর্ম ধূলোর মতো উড়িয়ে যাবেঃ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٍ۬ فَجَعَلۡنَـٰهُ هَبَآءً۬ مَّنثُورًا (٢٣)

অর্থঃ এবং তাদের সমস্ত কৃতকর্ম নিয়ে আমি ধূলোর মতো উড়িয়ে দেবো৷ (ফুরকান : ২৩)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা বলে, শরীকদের মধ্যে অংশীদারির অংশ (শির্ক) থেকে আমিই অধিক অমুখাপেক্ষী, যে কেউ এমন আমল করল যাতে আমার সাথে অপরকে শরিক করেছে, আমি তাকে ও তার শির্ককে প্রত্যাখ্যান করি”।(মুসলিম)।

কাফির ব্যক্তির নিকট হজ্জ আদায় করা আর না করা সমান কথা। যদি কোন সমর্থবান কাফির ব্যক্তি ইসলাম কবুল করে মুসলিম হয়, তবে সমর্থ থাকা সাপেক্ষে তার উপর হজ্জ ফরজ হবে।  

যারা কাফির তাদের দান সদগা ও কবুল করা হয় না। একথার দলিল হল আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

قُلۡ أَنفِقُواْ طَوۡعًا أَوۡ كَرۡهً۬ا لَّن يُتَقَبَّلَ مِنكُمۡ‌ۖ إِنَّكُمۡ ڪُنتُمۡ قَوۡمً۬ا فَـٰسِقِينَ (٥٣) وَمَا مَنَعَهُمۡ أَن تُقۡبَلَ مِنۡہُمۡ نَفَقَـٰتُهُمۡ إِلَّآ أَنَّهُمۡ ڪَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَبِرَسُولِهِۦ وَلَا يَأۡتُونَ ٱلصَّلَوٰةَ إِلَّا وَهُمۡ ڪُسَالَىٰ وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمۡ كَـٰرِهُونَ (٥٤) 

অর্থঃ তাদের বলে দাও, “তোমরা নিজেদের ধন-সম্পদ স্বেচ্ছায় ও সানন্দে ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যয় কর, তা গৃহীত হবে না৷ কারণ তোমরা ফাসেক গোষ্ঠী”৷তাদের দেয়া সম্পদ গৃহীত না হবার এ ছাড়া আর কোন কারন নেই যে, তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে, নামাযের জন্য যখন আসে আড়মোড় ভাংতে ভাংতে আসে এবং আল্লাহর পথে খরচ করলে তা করে অনিচ্ছাকৃতভাবে। (সুরা তাওবা ৯:৫৩-৫৪)।

যদি কুফরির কারনে তাদের দান-সাদকাহ কবুল হয় না, তাহলে বিশেষ ‘ইবাদাতসমূহ (যেমনঃ সালাত, সিয়াম, হজ্জ যার উপকার ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ) সেগুলো আরও বেশি কবুল না হওয়ার যোগ্য। যদি কাফির ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ না করে, তবে তাকে সমস্ত ফরজ বা ওয়াজিবসমূহ ত্যাগ করার জন্যও শাস্তি পেতে হবে। এমন কি তাকে সিয়াম পালন না করাও শান্তি পেতে হবে। কারণ, আল্লাহর প্রতি অনুগত শারীয়াতের বিধান পালনকারী, একজন মুসলিম যদি শাস্তিপ্রাপ্ত হয়, তবে একজন অহংকারী (কাফির) শাস্তি পাওয়ার আরও বেশি যোগ্য। একজন মুসলিক কে যদি আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ যেমন-খাবার, পানীয় ও পোশাক ইত্যাদি উপভোগ করার জন্য হিসাব দিতে হয় তবে একজন কাফিরকে কেন হারাম কাজ করা ও ওয়াজিবসমূহ ত্যাগ করার জন্য শাস্তি পেতে হবে না? বরং সে শান্তি পাওয়ার আরও বেশি উপযুক্ত। একথার দলিল হল, মহান আল্লাহ তা‘আলা সুরা মুদাস্সিরে ডানপাশে অবস্থানকারীদের সম্পর্কে বলেছেন যে তারা অপরাধীদেরকে (কাফিরদের) বলবেনঃ

مَا سَلَكَكُمۡ فِي سَقَرَ ٤٢ قَالُواْ لَمۡ نَكُ مِنَ ٱلۡمُصَلِّينَ ٤٣ وَلَمۡ نَكُ نُطۡعِمُ ٱلۡمِسۡكِينَ ٤٤ وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ ٱلۡخَآئِضِينَ ٤٥ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤٦ 

অর্থঃ কিসে তোমাদেরকে সাক্বারে (একটি জাহান্নামের নাম) প্রবেশ করিয়েছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারী ছিলাম না, আর আমরা মিসকীনদের খাবার খাওয়াতাম না, আর আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম, আর আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।”  (সুরা মাদাস্সির ৭৪:৪২- ৪৬)।

সুতরাং সালাম, যাকাত, সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করা এবং প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করার কারনে তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। ইহাই মহান আল্লাহ ঘোষনা।

অপর পক্ষে যদি কোন কাফির ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। তার  ব্যক্তিগত আমল (সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত) পালন করা আর না করা সমান ছিল। ইসলাম গ্রহনের সাথে সাথে সব ক্ষমা হয়ে যাবে। এ কথার দলিল হল মহান আল্লাহর বানী। তিনি এরশাদ করেন,

 قُل لِّلَّذِينَ ڪَفَرُوٓاْ إِن يَنتَهُواْ يُغۡفَرۡ لَهُم مَّا قَدۡ سَلَفَ وَإِن يَعُودُواْ فَقَدۡ مَضَتۡ سُنَّتُ ٱلۡأَوَّلِينَ (٣٨) 

অর্থঃ তুমি বলে দাও, কাফেরদেরকে যে, তারা যদি বিরত হয়ে যায়, তবে যা কিছু ঘটে গেছে ক্ষমা হবে যাবে। পক্ষান্তরে আবারও যদি তাই করে, তবে পুর্ববর্তীদের পথ নির্ধারিত হয়ে গেছে। (আল-আনফাল ৮:৩৮)।

মুলকথা হল, এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। রাসূল থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তিনি তাকে ছুটে যাওয়া ওয়াজিবসমূহের কাযা করতে আদেশ করতেন না। কাজেই কোন কাফিরের উপর হজ্জ ফরজ নয়।

২। বিবেগ সম্পন্ন হতে হবেঃ

ইসলামি শরীয়তের আর একটি নীতিমালা হল, পাগল ব্যক্তির উপর ইসলামের কোন ফরজ হুকম কার্যকর হবে না। ইবাদত বাস্তবায়ন করা যদি তার মধ্যে সে যোগ্যতা ও ক্ষমতা থাকে তবে মহান আল্লাহ্‌ তা‘আলা মানুষের উপর তা ফরজ করেন না। যদি কেই বিবেক সম্পন্ন না হয় বা সবকিছু বুঝতে না পারে তার উপর ইসলামি শরীয়ত কোন ইবাদাত চাপিয়ে দেন নাই। মহান আল্লাহ বলেন,

*فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ *

অর্থঃ তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় করে চলো। (তাগাবুন ৬৪:১৬)

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

*لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ    *

অর্থঃ সাধ্যের বাইরে কোনকিছু আল্লাহ কারোর উপর চাপিয়ে দেন না। (বাকারাহ ২:২৮৬)

হাদিসের আলোকেও দেখতে পাওয়া যায় পাগলের উপর ইমলামের কোন বীধিবিধাণ প্রযোয্য হয় না। যেমনঃ একটি সহিহ হাদিসে এসেছেঃ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা যেনার অপরাধে জনৈকা উম্মাদিনীকে ধরে এনে উমার (রাঃ)-এর নিকট হাযির করা হয়। তিনি এ ব্যাপারে লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে পাথর মেরে হত্যা করার নির্দেশ দেন। এ সময় আলী (রাঃ) তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন এর কি হয়েছে? উপস্থিত লোকেরা বললো, সে অমুক গোত্রের উম্মাদিনী (পাগল মহিলা), সে যেনা করেছে। উমার (রাঃ) তাকে পাথর মেরে হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেন, তোমরা তাকে নিয়ে ফিরে যাও। অতঃপর তিনি উমারের নিকট এসে বললে, হে আমীরুল মু‘মিনীন! আপনি কি জানেন না, তিন ধরণের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) পাগল, যতক্ষণ না সুস্থ হয়, (২) নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয় এবং (৩) নাবালেগ শিশু, যতক্ষণ না বালেগ হবে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। আলী (রাঃ) বলেন, তাহলে তাকে পাথর মারা হবে কেন? তিনি বলেন, কোনো কারণ নেই। আলী (রাঃ) বলেন, তবে তাকে ছেড়ে দিন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন এবং ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি উচ্চারণ করলেন। (হাদিসের মান সহীহসুনান আবূ দাউদ ৪৩৯৯ (তাহকিককৃত) আরও দেখুন, ইবনু হিববান, ইবনু খুযাইমাহ, হাকিম, দারাকুতনী)।

হাদিসে ষ্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে পগলের উপর থেকে মহান আল্লাহ কলম উঠিয়ে নিয়েছন। আর্থাৎ তার কর্মের কোন হিসাব দিতে হবে না। কাজেই আমরা বলতে পারি পাগলের উপর ফরজ সিয়াম আদায়ের হুকুর জারি হবে না।

৩। সফরের খরচ থাকতে হবেঃ

হজ্জ ফরজ হওয়ার প্রধান ও প্রথম শর্থ হলো, হজ্জের দীর্ঘ সফরের খরচ থাকতে হবে। আর্থিক সংগতি নাই এমন লোকের উপর হজ্জ ফরজ হয় না। মহান আল্লাহ বলেন,

فِيهِ آيَاتٌ بَيِّـنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ

অর্থঃ এতে রয়েছে মকামে ইব্রাহীমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য, যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না। ( সুরা ইমরান ৩:৯৭)

৪। প্রাপ্ত বয়স্ক লোক হতে হবেঃ

ইসলামি শরীয়তের একটি নীতিমালা হল, ইসলামের কোন ফরজ কাজ আয়াদ করতে হলে তাকে অবশ্য প্রাপ্ত বয়স্ক লোক হতে হবে।  তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক লোক হলে এবং সামার্থ তাকলে আবার হজ্জ করা ফরজ হয়ে পূর্বে যে হাদিসে পাগলের উপর শরীয়তের বিধীবিধান রহিত করা হয়েছে, সেখানে ষ্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে নাবালেগ শিশু, যতক্ষণ না বালেগ হবে তার উপর থেকে মহান আল্লাহ কলম উঠিয়ে নিয়েছন। আর্থাৎ তার কর্মের কোন হিসাব দিতে হবে না। কাজেই আমরা বলতে পারি অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা নাবালেগ শিশু যতক্ষন পর্যান্ত প্রাপ্ত বয়স্ক না হবে তার উপর ফরজ হজ্জ আদায়ের হুকুর জারি হবে না। কাজেই নাবালেগ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু কিশোরদের উপর হজ্জ ফরজ নয়। যদি সে তার পিতা মাতা বা অন্য কোন আত্মীয়ের সাহায্য নাবালেগ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় হজ্জ করে তবে তা সুন্নাহ হিসাবে ধর্তব্য। এই হজ্জের সওয়ার তার অবিভাবক পাবেন।

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ করে ফেরার পথে যখন রাওহা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন একদল লোকের সাথে তার দেখা হলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কারা? তারা বললোঃ আমরা মুসলমান। তারা জিজ্ঞাসা করলোঃ আপনারা কারা? সাহাবায়ে কিরাম বললেনঃ ইনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। রাবী বললেনঃ এমন সময় একজন মহিলা হাওদা থেকে একটি শিশুকে বের করে জিজ্ঞাসা করলোঃ এর জন্য কি হজ্জ আছে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, কিন্তু সওয়াব তোমার।(সুনানে নাসাঈ ২৬৫০ ইফাঃ)

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক মহিলা তার শিশু সন্তানকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে তুলে ধরে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এর জন্যও কি হজ্জ রয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কিন্তু সওয়াব তোমারই। (সুনানে নাসাঈ ২৬৪৭ ইফাঃ)

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজ্জের সময় এক মহিলা তার শিশু সন্তানকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে উঁচিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! এই শিশুর জন্যও কি হজ্জ? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, তবে সওয়াব হবে তোমার। (ইবনে মাজাহ ২৯১০)

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা হাওদা থেকে একটি শিশু সন্তানকে বের করে বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এর জন্যও কি হজ্জ রয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কিন্তু সওয়াব তোমার জন্য।(সুনানে নাসাঈ ২৬৪৮ এবং ২৬৪৯ ইফাঃ, )

মন্তব্যঃ যেহতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ সনদে শিশুদের হজ্জ সাব্যস্ত হয়েছে। তাই বড়দের মত তারাও অবিভাবকদের সাথে ইহরাম বাঁধবে। শিশুর হজ্জ ও উমরা হুকুম বড়দের মত থাকবে এবং তার অবিভাবক তাকে ইহরামের অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখবে। তবে বড়দের সাথে শিশুদের পার্থক্য হলো যে, শিশুরা ইহরামের অবস্থায় কোন নিষিদ্ধ কাজ ইচ্ছাকৃত ভাবে করে ফেললেও তা ভূলবশতঃ বলে গণ্য হবে। ফলে তারা যদি ইহরামের কোন নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলে তাহলে তাদের উপর বা তাদের অভিভাবকদের উপর কোন ফিদয়া (মুক্তিপণ) দেয়া ফরয হবে না।

প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কয়েকটি লক্ষনঃ

১। বির্যপাত বা স্বপ্নদোষ হওয়া।

২। নাভীর নিচের চুল গজানো।

৩। পনের বছর বয়স পূর্ণ হওয়া।

৪। মেয়েদের সাবালিকা হওয়ার লক্ষণ হলো, মাসিক বা ঋতুস্রাব।

৫। সফর করার মত শক্তি সামর্থ থাকতে হবেঃ

অতি বৃদ্ধ, অচল ও চিররোগী যাদের উপর হজ্জ ফরজ হয়েছে কিন্তু হজ্জের সফর করার তাদের জন্য খুবই কষ্টকর। তাদের উপর হজ্জ আদায় করা ফরজ নয়। তবে এ ব্যক্তি অন্য কাউকে দিয়ে বদলী হজ্জ করাতে পারে। এমন অনেক লোক আছে যারা বার্ধক্যে উপনিত হয়েছে তাদের কোন ভাল মন্দের জ্ঞান নেই। তাদের উপরও হজ্জ ফরজ নয়। দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা যা হতে  ভালো হওয়ার আশা করা যায় না এবং হজ্জের সফর করা একে বারেই অসম্ভব। এমন অসুস্থ ব্যক্তিদের উপর হজ্জ ফরজ নয়। যদি হজ্জ পালন করতে তার জীবনে অশংকা থাকে তবে হজ্জ আদায় করবে না। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا 

অর্থঃ তোমরা নিজেদের হত্যা করনা। আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের প্রতি দয়াশীল। (সূরা নিসা ৪:২৯)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেনঃ

وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ

অর্থঃ তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা। (সূরা বাকারা ২:১৯৫)

মন্তব্যঃ অতি বৃদ্ধ ব্যক্তির স্বাস্থ্যে ঝুকির জন্য হজ্জ না করে বদলী হজ্জ করারেন। যদি আর্থিকভাবে সচ্ছল হয় কিন্তু শারীরিক দিক থেকে অপারগ, তাহলে দেখতে হবে যে, তার এই অক্ষমতা বিদূরিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না? যদি তার এই বাধা দূর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যেমন এমন ব্যধি যার আরোগ্যের আশা রয়েছে তবে রোগের আরোগ্যতা লাভ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, অতঃপর নিজের হাজ্জ নিজেই সম্পাদন করবে। আর যদি অপারগতা এমন হয় যে তা বিদূরিত হওয়ার আশা করা যায় না; যেমন বার্ধক্য বা দূরারোগ্য ব্যধি, তাহলে যে কোন আল্লাহভীরু মুসলিম ব্যক্তিকে (পুরুষ হোক বা নারী) দিয়ে বদল হাজ্জ করিয়ে নিবে।

দলিলঃ ইব্‌নু ‘‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ফযল ইব্‌নু ‘‘আব্বাস (রাঃ) একই বাহনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে আরোহণ করেছিলেন। এরপর খাশ’আম গোত্রের জনৈকা মহিলা উপস্থিত হল। তখন ফযল (রাঃ) সেই মহিলার দিকে তাকাতে থাকে এবং মহিলাটিও তার দিকে তাকাতে থাকে। আর আল্লহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফযলের চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে থাকে। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর বান্দার উপর ফরযকৃত হজ্জ আমার বয়োঃবৃদ্ধ পিতার উপর ফরয হয়েছে। কিন্তু তিনি বাহনের উপর স্থির থাকতে পারেন না, আমি কি তাঁর পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ (আদায় কর)। ঘটনাটি বিদায় হাজ্জের সময়ের। (সহিহ বুখারি ১৮৫৪, ১৮৫৫, ৪৩৯৯,সুনানে তিরমিযী ৯৩৮, নাসায়ী ২৬৩৫, ২৬৪১, আবূ দাঊদ ১৮০৯, ইবনু মাজাহ ২৯০৭)

এতেই সে সিয়ামের দায় থেকে মুক্ত হবে। আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।

৬। স্বাধীন হতে হবেঃ

হজ্জ ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, ব্যক্তিকে স্বাধীন হতে হবে। কৃতদাস বা কৃতদাসীর নিজের মালিকানায় নোক সম্পদ থাকে না। কার উপার্জিত অর্থে মালিকও সে নয়। সে যা উপার্জন করে তা মালিকের। তাদের কোন ব্যক্তি মালিকানা নেই। তাদের ভরন পোষনের দায়িত্বও তার মালিক মনিবের।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, কৃতদাসের জন্যে খানা-পিনা ও পোশাক-পরিচ্ছেদ ক্রীতদাসের অধিকার। (তার ব্যবস্থা করা মনিবের কর্তব্য) তার সাধ্যাতীত কোন কাজের জন্য তাকে কষ্ট দেয়া যাবে না। (সহিহ মুসলিম ৪১৭০ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ হজ্জের অন্যতম শর্ত হলে সফরের আর্থিক সংগতি কিন্তু কৃতদাস বা কৃতদাসির এই সংগতি থাকে না বিধায় তাদর উপর দাসত্ব অবস্থায় থাকাকালীন হজ্জ ফরয হবে না।

৭। মহিলাদের সঙ্গে মাহরাম থাকতে হবেঃ

মহিলাদের অর্থিক সংগতি থাকার পাশাপাশি তার সফর সঙ্গি মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে। মাহরান বলতে ঐ সকল প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ বুঝায় যাদের সাথে ঐ মহিলার বিবাহ বন্ধন স্থায়ীভাবে হারাম। তাই যদি কোন মহিলার সফরের খরচ থাকে কিন্তু তার সফর সঙ্গি হওয়ার মত কোন মাহরাফ পুরুষ না থাকে তবে তার উরর হজ্জ ফরজ নয়। কারণ, মহিলাদের জন্য মাহরাম ছাড়া সফর করা ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোন মহিলার জন্য মাহরাম ছাড়া হজ্জ বা অন্য কোন সফর করা জায়েয নয়। তাই তার সফর কম হোক আর বেশী হোক, দুরে হোক আর কাছে হোক, মহিল যুবতী হোক আর বৃদ্ধ হোক, সুন্দরী হোক আর কালো হোক, তার সফর হেটে হোক আর বিমান হোক কোন অবস্থায়ই মাহরাম ছাড়া সফর কর যাবে না।   

দলিলঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে তাঁর খুৎবাহতে বলতে শুনেছিঃ কোন পুরুষ কোন স্ত্রীলোকের একাকী সঙ্গী হবে না, তবে তার সঙ্গে যদি তার মাহরাম (স্বামী ও যাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ এমন লোক) থাকে। আর কোন মহিলা যেন তার মাহরাম ব্যতীত একাকী সফরে না যায়। এটি শুনে একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সহধর্মিনী হাজ্বের সফরে বেরিয়ে গেছে আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য লিপিবদ্ধ (নির্বাচিত) হয়েছি। তিন বললেন- যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হাজ্ব পালন কর। (সহিহ বুখারী ১৮৬২ তাওহীদ,  ইবনু মাজাহ ২৯০০)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মহিলা আল্লাহ্ এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে কোন মাহরাম পুরুষকে সাথে না নিয়ে একদিন ও এক রাত্রির পথ সফর করা জায়িয নয়। ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবূ কাসীর সুহায়ল ও মালিক (রহ.)….হাদীস বর্ণনায় ইবনু আবূ যিব (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। (সহিহ বুখারী ১০৮৮, মুসলিম ১৩৩৯, তিরমিযী ১০৭০, দাঊদ ১৭২৩, ইবনু মাজাহ ২৮৯৯)

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মহিলা যেন তিন দিন বা তার অধিক দূরত্বের পথ সাথে তার পিতা, ভাই, ছেলে, স্বামী অথবা কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত তিন দিন বা তার অধিক দূরত্বের পথ সফর না করে। (ইবনে মাযাহ ২৮৯৮,তিরমিযী ১১৬৯, আবু দাউদ ১৫১৮)

মন্তব্যঃ প্রথম হাদিসটির আলোকে বলা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবী (রাঃ) কে বিস্তারিত কিছু জিজ্ঞেস করেননি যে, তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কোন মহিলা আছে কি না? বা তার স্ত্রী যুবতী, সুন্দরী কি না? মাহরাম ছাড়া মহিলা সফরে বাহির হলে নানান প্রকারের অনিষ্ট ও ফিতনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা পুরুষ একাকী সফরে বাহির হলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই খারাপ চরিত্র ও পাপিষ্টদের থেকে রক্ষা করান জন্য মহান আল্লাহ এই সুরক্ষা কবজ মাহরাম। এর অন্যতম একটি কারন হলো, মহিলারা সাধারণত জ্ঞানে বুদ্ধির দিক থেকে পুরুষদের তুলনায় দুর্বল হয়ে থাকে এবং নিজের সুরক্ষা দিতে অপারগ থাকে।  তাই যুক্তিসঙ্গত কাজ হলো, মহিলা যেন মাহরামের সঙ্গে সফর করে যাতে করে সে তার সুরক্ষা ও হেফাযত করতে পারে। এজন্যই মাহরামের জন্য সাবালক এবং বিবেকসম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। সুতরাং মাহরাম নাবালক বা পাগল হলে তা যথেষ্ট নয়। আর মাহরাম বলা হয়, স্বামী বা এমন সাবালক পুরুষ ব্যক্তিকে যার সাথে সফরে ইচ্ছুক মহিলার স্থায়ীভাবে বংশীয় সম্পর্কের কারণে, স্তন্যদানের সম্পর্কের কারণে কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বিবাহ হারাম। মা

মাহরাম পুরুষ ও মহিলাদের তালিকা নিম্মে দেয়া হলোঃ

*** পুরুষদের মাহরাম ১৫ জনঃ

আপন মা, খালা, ফুফু, শাশুড়ি, দুধ-মা আপন বোন, দাদি, নানি, নাতনি, দুধ-বোন, নিজের মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, ছেলের বউ, দুধ মেয়ে।


*** মহিলাদের মাহরাম ১৫ জনঃ

আপন বাবা,  চাচা, মামা, শশুর, দুধ- বাপ, আপন ভাই, দাদা, নানা, নাতি, দুধ-ভাই, নিজের ছেলে, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, মেয়ের জামাই, দুধ ছেলে

মনে রাখতে হবে যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম. তাদের থাকে পর্দা করার সিথিলতা আছে। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত, প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা নুর ২৪:৩১)

সার কথা হলোঃ হজ্জ করার জন্য স্বশরীরে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে উপস্থিত হতে হয়। এই জন্য মহান আল্লাহ হজ্জ করার জন্য প্রথম শর্ত দিয়েছেন, যার মক্কা বায়তুল্লাহ পৌছানের সমর্থ হরেছে। কাজেই বলা যায় সবার উপর হজ্জ ফরজ নয়। কুরাআন ও সহিহ সুন্নাহর আলোকে বলা যায় যে, সকল প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন ও সমর্থবান নারী পূরুষের উপরই হজ্জ আদায় করা ফরজ। নাবালেগ-অপ্রাপ্ত বয়স্কদের উপর ওয়াজিব নয়। আর কিশোর বাচ্চা যে ভালো মন্দের বিচার করতে পারে না, তার জন্যও হজ্জ ওয়াজিব নয়। তবে নাবালেগ বা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কেউ যদি সামর্থবান পিতা মাতা ও অন্যকারো সাথে হজ্জ আদায় করে তার নফল হবে। তবে এতে তার ফরজ আদায় হবে না। বালেগ হওয়া পর সমর্থ থাকলে, তাকে আবার ফরজ হজ্জ আদায় করতে হবে।  

উমরাহঃ

উমরা করার হুকুমঃ হানাফী ও মালেকী মাযহাবে উমরা করা সুন্নাত। আর শাফী ও হাম্বলী মাযহাবে উমরা করা ফরয।  অর্থাৎ যার উপর হজ্জ ফরয তার উপর উমরাও ফরয।

১.৩। হজ্জ ও উমরার আহকামঃ

উমরার ফরজঃ– উমরার ফরজ কাজ দুটি

১. মিকাতের আগেই ইহরামের কাপড় পরে উমরার নিয়ত করা

২. তাওয়াফ করা

উমরার ওয়াজিবঃ উমরার ওয়াজিব দুটিঃ

১. সাফা ও মারওয়া’ মধ্যবর্তী স্থানে সাঈ করা। (অনেক আলেম সাফা ও মারওয়ার সাঈ করাকে ফরয বলেছেন।
২. চুল কাটা (মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা)।

উমরার এই চারটি কাজ বিস্তারিতভাবে আলাদা আলাদাভাবে হজ্জের কার্যক্রমে উল্লেখ করা হয়েছে। হজ্জের কার্যক্রমে এই চারটি কাজ অন্তরভূক্ত। আমলের ক্ষেত্রে হজ্জের সময় এই চারটি কাজে যেভাবে আদায় করা হয়, উমরার সময়ও ঠিক তেমনিভাবে আদায় করা হয়। মাসায়েতগত কোন পার্থাক্য নাই। তাই এখানে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় না। হজ্জের আলোচনা থেকে বিস্তারিত জেনে আমল করতে হবে।

হজ্জের ফরজঃ

 হজ্জের ফরজ তিনটি যথাঃ

১. ইহরাম বাঁধা (ইহরামের কাপড় পরে হজ্জের নিয়ত করা)।

২. ৯ই যিলহজ্জে আরাফাতে অবস্থান করা।

৩. তাওয়াফ করা।

উল্লেখ্যঃ হজ্জের এই ফরজ থেকে যে কোন একটি ছুটে গেলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।

হজ্জের ওয়াজিবঃ– হজ্জের ওয়াজিব নয়টি যথাঃ

১. সাফা ও মারওয়ার সাঈ করা (অনেকের মতে এটা হজ্জের ফরজ)

২. ইহরাম বাঁধার কাজটি মীকাত পার হওয়ার পূর্বেই সম্পন্ন করা।

৩. আরাফাতে অবস্থান সূর্যাস্ত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা।

৪. মুযদালিফায় রাত্রি যাপন।

৫. মুযদালিফার পর কমপক্ষে দুই রাত্রি মিনায় যাপন করা।

৬. কঙ্কর নিক্ষেপ করা।

৭. হাদী (পশু) জবাই করা (তামাত্তু ও কেরান হাজীদের জন্য)

৮. চুল কাটা।

৯. বিদায়ী তাওয়াফ।

উল্লেখ্যঃ যে কোন কারণেই হোক উপরে বর্ণিত কোন একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে দম (পশু জবাই) দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়। দম দিতে সমর্থ না হলে বিধী মোতাবেক সিয়াম পালন করতে হবে।

হজ্জের সুন্নতঃ

হজ্জের সুন্নত অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ

১. ইহরামের পূর্বে গোসল করা

২. পুরুষদের সাদা রঙের ইহরামের কাপড় পরিধান করা।

৩. তালবিয়াহ পাঠ করা

৪. ৮ই যিলহজ্জ দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা

৫. ছোট ও মধ্যম জামারায় কংকর নিক্ষেপের পর দু‘আ করা

৬. কেরান ও ইফরাদ হাজীদের তাওয়াফে কুদূম করা।

উল্লেখঃ তবে কোন কারণে সুন্নত ছুটে গেলে দম দিতে হয় না।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজঃ

যে সব কাজ হাজ্জ বা উমরাহ অবস্থায় নিষেধ করা হয়েছে তা হলঃ

. মাথার চুল মুণ্ডন করা বা ছোট করা কিংবা উঠিয়ে ফেলা 

২. ইহরামের অবস্থায় নখ কাটা বা নখ উঠিয়ে ফেলা।

৩. ইহরাম করার পর ইহরামের কাপড়ে কিংবা শরীরে অথবা এমন কিছুতে যা শরীরের সাথে লেগে তাকে তাতে সুগন্ধি ব্যবহার করা।

৪. নিজের অথবা অপরের বিবাহ বন্ধন করা।

৫. যৌন কামনার সাথে স্ত্রীকে চুম্বন দেয়া, স্পর্শ করা কিংবা জড়িয়ে ধরা ইত্যাদি।

৬. সহবাস করা।

৭. ইহরামের নিষিদ্ধ কাজ হল, শিকার করা।

এ সাতটি নিষিদ্ধ কাজ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য ইহরাম অবস্থায় হারাম। দু’টি বিষয় এমন রয়েছে যা ইহরাম অবস্থায় শুধু মাত্র পুরুষদের জন্য হারাম। আর তা হলো:

১. মাথা ঢাকা।

২. ইহরাম অবস্থায় সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা।

One thought on “হজ্জ ও উমরার বিধান

Leave a comment