মৃত্যু কেন্দ্রিক বিদআতঃ দ্বিতীয় কিস্তি

মৃত্যু কেন্দ্রিক বিদআতঃ দ্বিতীয় কিস্তি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১৪। জানাযা বহনের সময় তিন বার বিশ্রাম নিতে হবেঃ

মাইয়াতের মাথা সামনে দিকে রেখে কাধে বহন করা সুন্নাত। পরিবার ও নিকট অত্মীয় পুরুষ লাশ বহন করা ভাল তবে অন্য কেউ বহন করলে নাজায়েয নয়। জানাযার পিছে পিছে মেয়েদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ নয়। এই সময় সরবে কান্নাকাটি করা যাবে না। আগেই উল্লেখ করেছি সরবে যিকর, তাকবীর ও তেলাওয়াত বা অনর্থক কথাবার্তা বলা যাবে না। বরং মৃত্যুর চিন্তা করতে করতে চুপচাপ ভাবগম্ভীরভাবে মধ্যম গতিতে মাইয়েতের পিছে পিছে কবরের দিকে এগিয়ে যাবে। চলা অবস্থায় রাস্তায় (বিনা প্রয়োজনে) বসা যাবে না। অনেক স্থানে দেখা যায় জানাযা বহন কালে তিন বার মাইয়াতকে মাটিতে রাখা। কবর স্থানে নিকটে হওয়া সত্বেও তিন বার বিশ্রাম কে সুন্নাহ মনে করে বসা হয়। এইভাবে জরুরী মনে করে বসাই  হল বিদআত। তবে হ্যা, কোন কারনে যদি জানাযার জন্য বা কবরে রাখান জন্য বেশ দুরে লাশ বহন করে নিতে হয় এবং বহনকারীদের বিশ্রামের জন্য লাশ বহনকারী খাট মাটিতে রেখে বিশ্রাম নিলে কোন অসুবিধা নেই।

আমাদের সমাজে প্রতলিত, লাশ বহন কালে তিন বার বিশ্রাম নিতেই হবে। যদি কেউ এই কাজ জরুরী বা সুন্নাহ ভেবে করে থাকে তবে বিদআত হবে।

১৫। মৃত লাশকে সামনে রেখে প্রশ্ন করা লোকটি কেমন ছিলঃ

আমাদের দেশে অনেক সময় সালাতুল জানাযা আদায়ের পূর্বে  বা পরে মৃতদেহ সামনে রেখে উপস্থিত মুসল্লীগণকে প্রশ্ন করা হয়, লোকটি কেমন ছিল? সকলেই বলেন, ভাল ছিল। এ কর্মটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। হাদীস শরীফে এরূপ কোনো কর্মের উল্লেখ নেই। হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোনো মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে যদি মানুষেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রশংসা করেন তবে তা সেই ব্যক্তির জন্য কল্যাণকর বলে গণ্য হবে। যেমনঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক সাহাবী একটি জানাযার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁরা তার প্রশংসা করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওয়াজিব হয়ে গেল। একটু পরে তাঁরা অপর একটি জানাযা অতিক্রম করলেন। তখন তাঁরা তার নিন্দাসূচক মন্তব্য করলেন। (এবারও) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওয়াজিব হয়ে গেল। তখন উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কি ওয়াজিব হয়ে গেল? তিনি বললেন, এ (প্রথম) ব্যাক্তি সম্পর্কে তোমরা উত্তম মন্তব্য করলে, তাই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। আর এ (দ্বিতীয়) ব্যাক্তি সম্পর্কে তোমরা নিন্দাসূচক মন্তব্য করায় তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেল। তোমরা তো পৃথিবীর বুকে আল্লাহর সাক্ষী। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১২৮৩ ইফাঃ)

আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদিনায় আসলাম, তখন সেখানে একটি রোগ (মহামারী আকারে) ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এর কাছে বসা ছিলাম। এ সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি জানাযা অতিক্রম করল। তখন জানাযার লোকটি সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। উমর (রাঃ) বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। এরপর অপর একটি (জানাযা) অতিক্রম করল, তখন সে লোকটি সম্পর্কেও প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। (এবারও) তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। এরপর তৃতীয় একটি (জানাযা) অতিক্রম করল, লোকটি সম্বন্ধে নিন্দাসূচক মন্তব্য করা হল। তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। আবূল আসওযাদ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আমীরূল মুমিনীন! কি ওয়াজিব হয়ে গেল? তিনি বললেন, আমি তেমনই বলেছি, যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, যে কোন মুসলমান সম্পর্কে চার ব্যাক্তি ভাল হওয়ার সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। [উমর (রাঃ)] বলেন, তখন আমরা বলেছিলাম, তিন জন হলে? তিনি বললেন, তিনজন হলেও। আমরা বললাম, দুজন হলে? তিনি বললেন, দুজন হলেও। তারপর আমরা একজন সম্পর্কে আর তাঁকে জিজ্ঞাসা করি নি। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১২৮৩ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ মৃত ব্যক্তির লাশ সামনে রেখে মুসল্লীদের প্রশ্ন করে তার ভালোর স্বীকারোক্তি আদায় করা একটি বিদআত এতে মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হবে না হাদিসের ভাষ্য অনুসারে বুঝা যায় কোন মানুষের ব্যবহারে কেউ খুসি থাকলে তার মৃত্যুতে মনে অজান্তে বলে ফেলে লোকটি ভাল ছিল আবার কোন মানুষের চরিত্র খুবই ভাল ছিল তার ব্যবহারে সবাই সন্ত্বষ্ট ছিল মৃত্যুর সাথে সাথে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ভালর পক্ষে সাক্ষ্য দিল ইত্যাদি। কিন্তু কারো স্বীকারোক্তি আদায়ে কোন ফায়দা নেই। এই ধরনের কাজ বিদআত।

১৬। জানাযা ও দাফনে দেরী করা বিদআতঃ

ইবনু আবূ তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেন, হে আলী তিনটি বিষয়ে বিলম্ব করবে না। সালাতের যখন ওয়াক্ত হয়ে যায়, জানাযা যখনই উপস্থিত হয়। অবিবাহীত মেয়ের বিয়ের সমমানের ছেলে পাওয়া যায়। (মিশকাত ১৪৮৬, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১০৭৫০)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা মৃত ব্যাক্তিকে তাড়াতাড়ি দাফন করবে। যদি সে সৎকর্মশীল হয়, তবে তাকে তোমরা কল্যানের নিকটবর্তী করে দিলে। আর যদি অন্য কিছু হয় তবে মন্দকে তোমাদের কাঁধ থেকে সরিয়ে দিলে। (সহিহ বুখারী ১২৩৬ ইফাঃ, সহিহ মুসলীম ২০৫৭, ২০৫৯ ইফাঃ, মিসকাত ১৬৪৬)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন কালো অথবা একজন যুবক মসজিদ ঝাড়ু দিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কয়েক দিন না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা তাকে জানালেন, সে মারা গিয়াছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? রাবী বলেন, তারা যেন তাঁর ব্যাপারটি তুচ্ছ মনে করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। তারা (কবরটি) দেখিয়ে দিলেন। তিনি ঐ কবর সামনে রেখে জানাযার সালাত আদায় করলেন। তারপর বললেন, এ কবরগুলো তাদের জন্য অত্যন্ত-অন্ধকার। আল্লাহ তাআলা আমার সালাতের কারণে তাদের জন্য কবরকে আলোকোজ্জ্বল করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম ২০৮৬ ইফাঃ)।

মন্তব্যঃ মৃত ব্যক্তি ভালো হোক আর মন্দ হোক জানাযা দ্রুত আদায় করা জরুরী। আমাদের দেশে দেখা যায় মৃত ব্যক্তির কোন নিকট আত্মীয়ের জন্য জানাযা ও দাফন কাজ এক দু দিন রেখে দেয়। শুধু আবেগের বশিভুত হয়ে বিদেশ থেকেও মৃত ব্যক্তির দেহ আনার জন্য কয়েক সপ্তাহ পরে দাফন করা হয়। কারণ অনেক সময় মৃত ব্যক্তির দেহ বিদেশে থেকে দেশে আনতে দুই তিন সপ্তাহ লেগে যায়। এ সব কাজ ইসলামি শরীয়া সমর্থ করে না।

১৭। কফিনে ফুল দেয়া বা পুষ্পস্তবক অর্পণ করাঃ

বর্তমানে আমাদের ঢাকা শহরে কোন কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষক, এমপি, মিনিষ্টার বা বিখ্যাত নামকরা কেউ মারাগেলে তার প্রতি শ্রদ্ধা অর্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশে শহীদ মিনার বা তার কর্মস্থলে রাখা হয়। তার নিকট জন/প্রিয়জন বা শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিগন তার কফিনে ফুল দেন। এতে কোন সন্দেহ নেই তবে তারা ফুল দিয়ে মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসর অর্ঘ্য অর্পণ করেন থাকেন, তবে তারা সকলে মৃত ব্যক্তির কল্যাণের উদ্দেশ্যে বা সওয়াব পাঠানোর নিয়তে করেন কিনা তা ষ্পষ্ট নয়। কারন ইসলামি শরীয়তে মৃত্যুর জন্য কিছু করতে হল তা অবশ্যই আল্লাহর হুকুম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখান পথে করতে হবে। যদি কাজটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা না হয় বা লোক দেখানোর জন্য হয় অথবা আল্লাহর রাসূল কর্তৃক কাজটি অনুমোদিত না হয়, তাহলে এ কাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, যে কেউ এমন আমল করবে যা করতে আমরা (ধর্মীয়ভাবে) নির্দেশ দেইনি তা প্রত্যাখ্যাত। (মুসলিম)

তবে এ আমল যে মুসলামানদের নয় সে ব্যাপারটি সুষ্পষ্ট। মৃত্যুর পর ফুল দিয়ে, বাতি জ্বালীয়ে শ্রদ্ধা অর্ঘ্য অর্পণ করার রেওয়াজ অধিকাংশ পাশ্চাত্যের মানুষ করে থাকে, যারা কঠোর ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী। আর আমরা আমদের সঠিক ও সহিহ আমলকে বাদ দিয়ে ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী শক্তির অনুকরণে মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অর্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশে এমনটি করে থাকি যা হারাম। এধরনের কাজ যে ব্যক্তি করবে সে কাফির হবে কিনা তাতে দ্বিমত থাকলেও এ  কাজটি যে ইসলাম বর্হিরভুত আমল তাতে কোন সন্দেহ নেই।

১৮। এক মিনিট নীরবতা পালন করাঃ

সাহাবী জাবের রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার খুতবায় বলতেন, আর শুনে রেখ! সর্বোত্তম কথা হল আল্লাহর কিতাব ও সর্বোত্তম পথ-নির্দেশ হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ-নির্দেশ। ধর্মে নতুন বিষয় প্রচলন করা সর্ব নিকৃষ্ট বিষয়। এবং সব ধরনের বিদআতই পথভ্রষ্টতা।(মুসলিম)

এই জন্য বলা হয়, যা আছে কুরআন সুন্নায় তাই আছে ইসলামে। ইসলাম বিরোধী যতগুলি আমাদের সমাজে চালি আছে তার মাঝে অন্যতম হল। নীরবতা পালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা করা। এখনও মনে আছে, সেই স্কূল জীবনে শোক পালনের জন্য দাড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে ছিলাম। ভেবে ছিলাম এটাই হয়ত মৃত্যুর জন্য কিছু করার উত্তম পন্থা। যখন দেখিছিলাম সংসদেও মৃত্যুর জন্য শ্রদ্ধা অর্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়, তখন বিশ্বাসটা আর একটু দৃঢ় হয়েছিল। একটু একটু করে যখন ইসলামি জ্ঞান অর্জণের সুযোগ হল তখন বুঝতে পারলাম এই কাজ ইসলামি শরীয়ত সিদ্ধ কাজ নয়। হয়ত এটা আমাদের কোন সংস্কৃতির একটা অংশ। কিন্তু না এটা আমাদের সংস্কৃতিরও কোন অংশ নয়। এটা শুধুই ইংরেজ আমলে প্রচরিত তাদের একটি সংস্কৃতি। তারাও জানেনা এটা কেন করছে। তাই এখন দেখবের যারা একটু অভিজাত ও শিক্ষিত তারাই মৃত ব্যক্তির জন্য এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করে থাকে। বড় ধরনের কোন অনুষ্ঠানে, যেখানে সমাজের প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন, সেখানে যদি কোন মৃত ব্যক্তির সম্মান প্রদর্শনের জন্য কিছু করা হয়, তবে তাহল দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন। যারা এমন করেন তারা জানেন যে, এক মিনিট নীরবতা পালনে মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হয়নি। তাই তারা ইদানিং নীরবতা পালনের পর আবার একটু মুনাজাত করতে শুরু করছে। আসলে সব কিছুই মানুষের মনগড়া। ইসলাম কোন মনগড়া ধর্ম নয়। ইহার আমল করার ধরন পদ্দতি আল্লাহ প্রদত্ত। তাই আমাদের উচিৎ হবে পশ্চিমা ইহুদি-খ্রিস্টানদের মত মৃতদের সম্মানে নীরবতা পালন না করে। ইসলাম সম্মত আমল করা।

১৯।  জানাযায় পবিত্র জুতাকে খোলা জরুরী মনে করাঃ

যদি কারও জুতা পাক থাকে, তবে সে জুতা পড়েই জানাযায় অংশ গ্রহন করতে পারবে। কিন্তু যদি মনে করে জুতা না খুললে সালাত হবে। তবে এই ধারনা ইসলামি শরীয়তের বিরোধী হয়। কারন পাক পবিত্র জুতা পড়ে সালাত আদায় করে শরীয়ত সম্মত।

২০। জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা না ছানা পড়ত হবে।

জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারটি যদিও মতবিরোধ পূর্ণ।

জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারটি যদিও মতবিরোধ পূর্ণ। তবে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত হল, জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। কারণ প্রখ্যাত সাহাবী উবাদা বিন সামেত রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না তার নামায হবে না। (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)

আর জানাযার সালাত একটি সালাত। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

*وَلاَ تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِّنْهُم مَّاتَ أَبَدًا وَلاَ تَقُمْ عَلَىَ قَبْرِهِ*

অর্থঃ আর তাদের মধ্য থেকে কারো মৃত্যু হলে তার উপর কখনও নামায পড়বেন না এবং তার কবরে দাঁড়াবেন না। ( সুরা তাওবা ৯:৮৪)

আল্লাহ তায়ালা এখানে জানাযার সালাতকেও সালাত বলে উল্লেখ করেছেন। তাই ইমাম হোক আর মুসল্লী হোক। আস্ত হোক আর জোরে হোক ফাতিহা তো পড়তেই হবে। ইমাম বুখারী রহ. জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার বৈধতার ব্যাপারে একটি অনুচ্ছেদ আলাদাভাবে উল্লেখ করে তার নিচে একাধিক হাদীস উল্লেখ করেছেন। যেমন,

তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ বিন আউফ বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা. এর পেছনে জানাযার সালাত পড়লাম। তিনি ফাতিহাতুল কিতাব তথা সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন। অতঃপর বললেন, “এটাই আল্লাহর নবীর আদর্শ। (সহিহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা)।

যারা বলেন ফাতিহা পড়তে হবে না তাদের দলীলঃ

হাদিসঃ-১ আলী রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন কোনো মায়্যেতের জানাযার নামায পড়তেন তখন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করতেন তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পড়তেন অতপর দুআ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১১৪৯৪)।

হদিসঃ-২ নাফে রাহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. জানাযার নামাযে (কুরআন) পড়তেন না। (মুয়াত্তা মালিক – ৫২৩, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৫২২, এই আছরটি বিশুদ্ধতম সনদে বর্ণিত)।

হাদিসঃ-৩ আবু সাঈদ মাকবুরী থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কিভাবে জানাযার নামায পড়েন?  আবু হুরাইরা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম অবশ্যই আমি তোমাকে বলব। আমি মাইয়াতের (ঘর থেকে) পরিবারের সাথে আসি। অতপর যখন মাইয়তকে রাখা হয় আমি তাকবীর দেই এবং আল্লাহর প্রশংসা করি। তারপর নবীর উপর দরূদ পড়ি। অতপর দুআ করি। (মুয়াত্তা মালেক ৫২১; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৬৪২৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৪৯৫, এই আছরেরও সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।

মন্তব্যঃ এই সকল হাদিসের আলোক তারা দাবী করেন জানাযার সালাতে সুরা ফাতিহা পড়া জরুরী নয়। তাদের অনেক বিশ্লেষন ধর্মী লেখা পড়েছি, তারা কোথাও কোন হাদিসের রেফারেন্স দিতে পাবেনী যে, জানাযার সালাতে ছানা পড়তে হবে। কিন্তু তাদের প্রতিটি হাদিস জানাযা সালাতে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করার কথা উল্লেখ আছে। অর্থাৎ জানাযার সালাতে ছানা দিয়া শুরু করতে হবে। ফিকহী ক্ষেত্র সাহাবীদের যুগ থেকেই মতভেদ চলে আসছে। কিন্তু তারা এই নিয়ে মতবিরোধ করে নাই বা ঝগড়া বিবাদও করে নাই। আমাদের অরস্থান তাদের বিপরীত, আমরা আজ ফিকহী মাসায়েল নিয়ে মতবিরোধ করেছি বা ঝগড়া বিবাদ করছি। নিরপেক্ষ ভাবে বলতে গেলে সুরা ফাতিহায় মহান আল্লাহর প্রশংসা আছে। যদি জানাযার সালাতে সুরা ফাতিহা পড়া হয় তবে মহান আল্লাহর প্রশংসা হবে আবার বুখারীতে বর্ণিত সহিহ হাদিসের উপরও আমল হবে। তাই জানাযার সালাতের শুরুতে সুরা ফাতিহা পড়া উত্তম। তবে একটি কথা প্রতিধান যোগ্য, যারা ফাতিহা না পড়ে ছানা পড়ের, তাদের আমলকে অযোগ্য বলে, বিদআত বলে প্রচার করা ঠিক হবে না। কেননা মতভেদপূর্ণ মাসায়েল নিয়ে বিরোধে জড়ান বা ঝগড়া বিবাদ করা অবশ্যই বিদআতি কাজ।

২১। মুনাফিক ও ফাসিক ব্যক্তির জাযায় আলেমদের অংশ গ্রহণঃ

ইসলামি শরীয়তের অন্যতম একটি বিধান হল, মুনাফিক, সমাজে স্বীকৃত করিরা গুনাহারী, অশ্লীল কাজে লিপ্ত, প্রকাশ্যে সুদ ঘুসের কারবারী, নৈতিকতা বিরোধী কাজকর্মের লিপ্ত ব্যক্তি ও ফাসিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতের জানাযার সালাত মুসলমানদের ইমাম ও নেতৃস্থানীয় লোকদের পড়ানো উচিত নয়। তাতে শরীক হওয়াও উচিত নয়।  যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

*وَلاَ تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِّنْهُم مَّاتَ أَبَدًا وَلاَ تَقُمْ عَلَىَ قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُواْ وَهُمْ فَاسِقُونَ*

অর্থঃ আর তাদের মধ্য থেকে কারো মৃত্যু হলে তার উপর কখনও নামায পড়বেন না এবং তার কবরে দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহর প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে এবং রসূলের প্রতিও। বস্তুতঃ তারা না ফরমান অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে। ( সুরা তাওবা ৯:৮৪)

তাবুক থেকে ফিরে আসার পর বেশী দিন যেতে না যেতেই মুনাফীক নেতা আবুদুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেলো। তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ছিলেন নিষ্ঠাবান মুসলমান। তিনি নবী(সা) এর খেদমতে হাযির হয়ে কাফনে ব্যবহারের জন্য তাঁর কোর্তা চাইলেন । তিনি অত্যন্ত উদার হৃদয়ের পরিচয় দিয়ে কোর্তা দিয়ে দিলেন। তারপর আবদুল্লাহ তাঁকেই জানাযার নামায পড়াবার জন্য অনুরোধ করলেন। তিনি এ জন্যও তৈরী হয়ে গেলেন। হযরত উমর (রা) বারবার এ মর্মে আবেদন জানাতে লাগলেন -হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি এমন ব্যক্তির জানাযার নামায পড়াবেন যে অমুক অমুক কাজ করেছে৷ কিন্তু তিনি তার এ সমস্ত কথা শুনে মুচকি হাসতে লাগলেন। তার অন্তরে শত্রু মিত্র সবার প্রতি যে করূনার ধারা প্রবাহিত ছিল তারি কারণে তিনি ইসলামের এ নিকৃষ্টতম শত্রুর মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেও ইতস্তত করলেন না। শেষে যখন, তিনি জানাযার নামায পড়াবার হুকুমে তাকে নামায পড়াবার জন্য দাঁড়িয়েই গেলেন, তখন এ আয়াতটি নাযিল হলো। এবং সরাসরি আল্লাহর হুকুমে তাঁকে জানাযা পড়ানো থেকে বিরত রাখা হলো।

এ আয়াতগুলো নাযিল হবার পর নবী (সা) নিয়ম করে নিয়েছিলেন যে কোন জানাযার শরীক হবার জন্য তাকে ডাকা হলে তিনি প্রথমে মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। জিজ্ঞেস করতেন, সে কেমন ছিল। যদি জানতে পারতেন সে অসৎ চরিত্রের অধিকারী ছিল, তাহলে তার পরিবারের লোকদের বলে দিতেন, তোমরা যেভাবে চাও একে দাফন করে দিতে পারো।

মন্তব্যঃ কাজেই ফাসিক ব্যক্তির জানাযায় মুসলমানদের ইমাম ও নেতৃস্থানীয় লোকদের পড়ানো উচিত নয়। তাতে শরীক হওয়াও উচিত নয়। অথচ আমাদের সমাজে স্বীকৃত নাস্তিক, সারা জীবন ইসালের বিরুদ্ধে করা হলেছেন। ইসলাম ও মুসলানের ভাল কোন কাজ দেখলে তাদের গাঁ জ্বলত। তারা মারা গেলে খুবই ঘটা করে জানানা পড়ান হয়। যদি মুসলমানদের ইমাম ও নেতৃস্থানীয় লোক তাদের জানাযা না পড়ানত তবে তাদের সংখ্যা দিন দিন কমে আসত। তাই সুন্নাহ বিরোধূ এই কাজ পরিহার করা মুসলমানদের ইমাম ও নেতৃস্থানীয় লোকদের কাজ।

২২। মহিলাদের কবর স্থানে যাওয়া ও দাফন কাজে অংশ করা বিদআতঃ

মাইয়াতের দাফফ কাজে মহিলাদের অংশ গ্রহনের প্রমান পাওয়া যায়। মহিলাদের কবস্থা যেতে নিষেধ করা সম্পর্মে সহিহ হাদিস আছে। মহিলাদের জন্য জানাযার সাথে গোরস্থান পর্যন্ত যাওয়া বা মৃতের দাফন ক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করা একটি বিদআতি কাজ।  যাম মূলত হারাম। প্রখ্যাত মহিলা সাহাবী উম্মে আত্বিয়া রা. হতে বর্ণিত।

উম্মে আত্বিয়া তিনি বলেন, “আমাদেরকে জানাযার সাথে কবর স্থানে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কঠোরতা আরোপ করা হয় নি। (সহিহ মুসলীম হাদিস নম্বর ২০৩৭ ও ২০৩৮ ইফাঃ, সহিহ বুখারী ১২৭৮)।

মন্তব্যঃ দাফন কাজে অংশ গ্রহন না কলেও অনেক মুহাদ্দিস শর্থ সাপেক্ষে মহিলাদের জন্য জানাযায় শরিক হওয়া কে জায়েয বলেছেন। যদিও জায়েজ তবুও ঘর ছেড়ে বাইরে পুরুষদের সাথে জানাযার সালাতে না যাওয়াই তার জন্য উত্তম। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত মসজিদের চেয়ে নিজ ঘরে পড়াকেই অধিক উত্তম বলেছেন সেহেতু জানাযার সালাত (যা ফরজে আইন নয় বরং ফরজে কেফায়া) পড়ার জন্য ঘর থেকে বের না হওয়াই তার জন্য অধিক উত্তম ও পর্দাশীলতার জন্য উপযোগী। তবে যথার্থ পর্দার সাথে মহিলাদের জন্য জানাযার সালাত আদায়ের ব্যবস্থা করা হলে তাতে তাদের অংশ গ্রহণে কোন অসুবিধা নেই। আল্লাহই সব চেয়ে ভালো জানেন। এ সম্পর্কিত সহিহ  মুসলিমে বর্ণিত হাদিসটি হলঃ

আয়েশা রা. সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রা. এর মরদেহ মসজিদে নব্বীতে আনার আদেশ দিলেন যেন তিনিও তার জানাযার সালাতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু লোকজন মসজিদের ভেতর মরদেহ আনতে অস্বীকৃতি জানালে আয়েশা রা. বললেন, “মানুষ কত তাড়াতাড়ি ভুলে যায়! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো সুহাইল ইবনে বায়যা এর জানাযার মসজিদের ভেতরেই পড়েছিলেন। (সহিহ মুসলিম ২১২৬ ইফাঃ)

২৩। বীনা কারণে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় লাশ নিয়ে দাফন করাঃ

ইসলামী শরীয়তে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি লাশ দাফন করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বা এক দেশ থেকে অন্য দেশে লাশ স্থানান্তর করা ঠিক নয়। তাড়াতাড়ি লাশ দাফন করা সম্পর্ক বলা হয়।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা মৃত ব্যাক্তিকে তাড়াতাড়ি দাফন করবে। যদি সে সৎকর্মশীল হয়, তবে তাকে তোমরা কল্যানের নিকটবর্তী করে দিলে। আর যদি অন্য কিছু হয় তবে মন্দকে তোমাদের কাঁধ থেকে সরিয়ে দিলে। (সহিহ বুখারী ১২৩৬ ইফাঃ, সহিহ মুসলীম ২০৫৭, ২০৫৯ ইফাঃ, মিসকাত ১৬৪৬)

জাবের রা. বর্ণনা করেন,উহুদ যুদ্ধের দিন আমার ফুফু আমার পিতাকে দাফন করার জন্য নিজেদের কবরস্থানে নিয়ে আসেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করলেন, তোমরা শহীদদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত নিয়ে আস। (জামে তিরমিযী ১৭১৭)।

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. হুবশী নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন, তাঁকে ঐ স্থান হতে মক্কায় এনে দাফন করা হয়। আয়েশা রা. হজ্জ বা উমরা করতে মক্কায় গমন করলে তিনি তাঁর কবরের নিকট আসেন অত:পর বলেন, আমি তোমার মৃত্যুর সময় উপস্থিত থাকলে তোমাকে সে স্থানেই দাফন করতাম যেখানে তোমার মৃত্যু হয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১১৯৩৩)

উপরোক্ত হাদিসের আলোকে আলেমগণ বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যে এলাকায় মারা যাবে তাকে সে এলাকার কবরস্থানে বা নিকটবর্তী কোনো কবরস্থানে দাফন করা উত্তম। তাই শহর বা গ্রামের মৃতকে নিজ নিজ এলাকার কবরস্থানে দাফন করে দেওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রবাসে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তাকে সেখানেই মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করে দেওয়া কর্তব্য। কেননা, প্রবাস থেকে লাশ দেশে আনার ক্ষেত্রে অকারণেই তার দাফনে বিলম্বিত হয়। সাধারণ অবস্থায় শহরের মৃতকে গ্রামে নিয়ে বা গ্রামের মৃতকে শহরে এনে দাফন করা ঠিক নয়। বরং এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে।

ওজরের কারনে লাশ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করা জায়েজ আছে। তবে ওজরবশত লাশ স্থানান্তর করার ক্ষেত্রেও নিম্নোক্ত বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা কর্তব্য।

১। যদি এমন হয় যে, যে দেশে মৃত্যু বরণ করেছে সেখানকার অধিবাসীরা মুসলিম নয়।

২। সে স্থানে মুসলিমদের জন্য আলাদা গোরস্থান নাই।

৩। নিকটের কোথাও কবরস্থান বা দাফনের সুব্যবস্থা নেই।

৪।বন্যা-জলচ্ছাস ইত্যাদি কারণে কবর নদী বা সাগর গর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইত্যাদি। 

৫। লাশ বহন করতে যেন এত বিলম্ব না হয় যে, তা পঁচে-ফেটে বিকৃত হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়।

মন্তব্যঃ কাজেই ওজর ছাড়া এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় লাশ নিয়ে দাফন করা একটি বিদআতী কাজ।

২৪। লাশ কবরে রাখার সময়ের দোয়া প্রসংঙ্গেঃ

একট যঈফ হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মেয়ে উম্মে কুলসুম (রাঃ) কে কবরে রাখার সময় একটি দোয়া পড়েছিলেন। হাদিসটি হলোঃ আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেয়ে উম্মে কুলসুম (রাঃ) কে কবরে রাখা হয়,  তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়েন (مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى ::  মিনহা খালকনাকুম ওয়াফীহা নুয়ীদুকুম ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা) অর্থঃ এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব। । (মুসনাদে আহমাদসহ (২২১৮৭)

মন্তব্য অনেকগুলি হাদিসের গ্রন্থে এই হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। সকল মুহাদ্দিসীগণ উক্ত হাদীসকে যঈফ বলে মন্তব্য করছে। তাই এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুনিশ্চিত প্রমাণিত সুন্নত মনে করে আমল করা যাবে না। কিছু আলেম এই আমলটি জায়েয বলেছেন আবার অনেক আলেম আমলটি বিদআত বলেছেন। আমলের ক্ষেত্র শর্তকতা অবলম্ভন করি এবং বিদআত পরিহার করে চলি।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment