বিদআত চিনার উপায় তৃতীয় কিস্তি : কিভাবে বুঝবেন আপনার আমলটি বিদআত

বিদআত চিনার উপায় : তৃতীয় কিস্তি

কিভাবে বুঝবেন আপনার আমলটি বিদআত

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।

মুসলীম সমাজ সবচেয়ে বেশী বিভ্রান্তিতে আছে বিদআদ চিহিৃত করণ নিয়ে। যারা বিদআত করে তারা কখন স্বীকার করে না যে তার আমলটি বিদআত। সে নানা অনুহাতে বিদআতটিক ভাল কাজ বলে চালিয়ে যেতে চায়। যখন কাউকে বললেন ভাই আপনার এ আমলটি বিদআত। সে সাথে সাথে উত্তর দেন, দেখুন বুঝালাম আমলটি কি বিদআত, কিন্তু আমিতো কোন খারাপ কাজ করছিনা। আমলটি ভাল, মহান আল্লাহর খুশির জন্যই করছি। তাছাড়া কারও ক্ষতিতো আর হচ্ছে না। কিন্তু যে কিছুতেই বুঝতে চাবে না যে, আমলটি মহান আল্লাহর খুশির জন্যই করা হয় অথচ তার কোন নিয়ম পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর সুন্নাহে নেই বা সময় সুযোগ থাকতেও সাহাবিগনও (রাঃ) করেন নাই। কাজেই বিদআতি আমল পরিত্যাগের আগে বিদআত চিনা খুবই দরাকার। যেমন ধরুন মিলাদুন্নবী একটি বিদআতি আমল। যখন আপনি কোন বিদআতি বলেবেন আমলটি বিদআত। সে শত শত ভাল ভাল যুক্তি দিয়ে মিলাদুন্নবী পালনের কথা বলবে। তাদের যুক্তি থেকে কোন খারাপ আপনি পাবেন না। কারন পৃথিবীর শ্রষ্ঠ মানুষের পক্ষে তা যা বলবে তা নিতান্তই কম হবে। তাই তাদের যুক্তি মিলাদুন্নবী পালন আপনি রাজি হয়ে যাবেন। কিন্তু আপনার যদি বিদআত চিনার জ্ঞান থাকে, তা হলে তাদের কোন যুক্তি আপানার কাছে যৌক্তিক মনে হবেন। কারন আপনি জেনে গেছেন যে, কোন ভাল কাজ ইসলাম মনে করে করা হয় অথচ সময় সুযোগ থাকতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এই পদ্ধতিতে এমন আমল করে নাই তাই বিদআত। যখন দেখবেন মিলাদুন্নবী সম্পর্কে কুনআন হাদিসে কোন আমল বর্ণনা নাই। তখন আপনি এই আমলকে বিদআত বলে ঘোষনা দিবেন। কাজেই বুঝা গেলে বিদআত থেকে মুক্ত থাকতে গেলে আগে বিদআতকে সঠিকভাবে চিনতে হবে। শত্রুকে চিনতে পারলে যেমন তার থেকে শর্তক থাকা যায়। বিদআতকে চিনতে পারলেও তার থেকে শর্তক থাকা যাবে। তাই আসুন দেখি, কিভাবে বুঝবেন আপনার আমলটি বিদআত। নিম্ম এমনই কথগুলি মানদন্ড বর্ণনা করা হলোঃ

১। কুনআন ও সহিহ হাদিসে আমলটির কোন দলীল নেই

২। ইসলামী শরীয়ত সম্মত আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি

৩। ইসলামি শরিয়ত সম্মত কোন বিষয়ে বৃদ্ধি

ক। ইবাদতে বৃদ্ধি করা

খ। আকিদায় বৃদ্ধি করা

গ। রাসূল সম্পর্কে বৃদ্ধিকরা

ঘ। অলী আওলীয়া সম্পর্কে বৃদ্ধিকরা

৪। ইসলামি শরিয়ত সম্মত কোন ইবাদতে হ্রাস করা

৫। ইবাদতকে স্থানের সাথে নির্দিষ্ট করা

৬। ইবাদতকে সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করা

৭। ইবাদতকে সংখ্যার সাথে নির্দষ্ট করা

৮। অত্যধিক দুর্বল, মিথ্যা ও জাল হাদীসের উপর আমল করা

৯। যে আমলটির করার প্রমান খাইরুন রুকনেও পাওয়া যায় না

১০। শরীয়তের বাহিরে সম্পূর্ণ নতুন কোন পদ্ধতি আবিস্কার করে ইবাদত করা

১১। ইসলাম বিরোধী হারাম কাজকে ইবাদত মনে করে বিদআত করা

১২। বিদআতের সম্পর্ক দ্বীনের সাথে দুনিয়ার সাথে নয়

১৩। ইবাদতের উপকরন বিদআত নয়

১৪। বিদআতে আরও কিছু নীতিমালা

 

২। ইসলামী শরীয়ত সম্মত আমল নিয়ে বাড়াবাড়িঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

*قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لاَ تَغْلُواْ فِي دِينِكُمْ غَيْرَ الْحَقِّ*

অর্থঃ বল, হে আহলি কিতাব! নিজেদের দীনের ব্যাপারে অন্যায় বাড়াবাড়ী করো না। (সুরা মায়েদা ৫:৭৭)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার উপর জয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং (মধ্যপন্থার) নিকটে থাক, আশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (‘ইবাদাত সহযোগে) সাহায্য চাও। (সহিহ বুখারী আধুনিক প্রকাশনী-৩৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন-৩৮)

আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্‌ফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি তাঁর পুত্রকে দু’আ করতে শুনলেনঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি, আমি যখন জান্নাতে প্রবেশ করব তখন জান্নাতের ডান দিকে যেন সাদা অট্টালিকা থাকে। (একথা শুনে) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, হে বৎস! আল্লাহ্‌র নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাও। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ শীঘ্রই এ উম্মাতের মধ্যে এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা পবিত্রতা অর্জন ও দু’আর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবে। (আবু দাউদ – ৯৬)।

ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি একটি মারাত্মক ব্যাধি এবং বিদআত সৃষ্টির অন্যতাম উপদান। ইহা ঈমানদারের আলম, আক্বীদা ও বিশ্বাসকে বিনষ্ট করে ফেলে। এর ফলে মানুষ আল্লাহর নির্দেশকে লংঘন করে এবং তাঁর বিধান পালনে সীমাতিক্রম করে। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে এবং কাউকে সম্মান করার ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করতে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ আরও বলেন,

*يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لاَ تَغْلُواْ فِي دِينِكُمْ وَلاَ تَقُولُواْ عَلَى اللّهِ إِلاَّ الْحَقِّ *

অর্থঃ হে আহলী কিতাব! নিজেদের দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। আর সত্য ছাড়া কোন কথা আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করো না৷ (সুরা সুরা নিসা ৪:১৭১)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ আমাদের জন্য যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যদিও অত্র আয়াতটি ‘আহলে কিতাব’ বলতে ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন এবং উম্মতে মুহাম্মাদীকেও একই নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বলেন,

*فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ *

অর্থঃ অতএব তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ সেভাবে দৃঢ় থাক এবং যারা তোমার সাথে (শিরক ও কুফরী থেকে) তওবা করেছে তারাও। আর তোমরা সীমালংঘন করো না। নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের সকল কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করেন। সুরা হুদ ১১:১১৩২)

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত থেকো। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা দ্বীনের ব্যাপারে সীমালংঘনের কারণেই ধ্বংস হয়েছে। (নাসাঈ– ৩০৫৭; ইবনু মাজাহ -৩০২৯; সহিহাহ -১২৮৩০

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত  হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী নিয়মিত করে থাকে। (সহিহ বুখারী ৪১ ইফাঃ, সহিহ বুখারী ৪৩ তাওহীদ প্রকাঃ, সহিহ মুসলিম ৭৪১, ৭৮২, নাসায়ী ৭৬২, আবূ দাউদ ১৩১৭)।

মন্তব্যঃ ‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’ এ কথার অর্থ এই যে, তিনি সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না। অর্থৎ যে সকল আমল নিয়মিত করা হয় তার সওয়াব ও অনুগ্রহ নিরবচ্ছিন্ন থাকে। মহান আল্লাহ সওয়া প্রতিদান দেওয়া বন্ধ করেন না। কাজেই ইবাদাতে বাড়াবাড়ি করে ক্লান্ত হয়ে পড়া বাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেন নাই। বাড়িবাড়ি করতে করতে হয়ত আমরা নিজেরাই এক সময় ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বসব। এইভাবে সুন্নাহর বাহিরে গিয়ে ইবাদতে বাড়াবাড়ি করলে এক সময় ইবাদতটি বিদআত পরিনত হয়ে যাবে।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ‘ইবাদাতের অবস্থা জানার জন্য তাঁর স্ত্রীগণের নিকট এলে। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ‘ইবাদাতের খবর শুনে তারা যেন তাঁর ইবাদাতকে কম মনে করলেন এবং পরস্পর আলাপ করলেন: নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমাদের তুলনা কোথায়, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর আগের-পরের (গোটা জীবনের) সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদের একজন বললেন, আমি কিন্তু সারা রাত সলাত আদায় করবো। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি দিনে সিয়াম পালন করবো, আর কখনো তা ত্যাগ করব না। তৃতীয়জন বললেন, আমি নারী থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করবো না। তাদের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে পড়লেন এবং বললেন, তোমরা কী ধরনের কথাবর্তা বলছিলে? আল্লাহ্‌র কসম! আমি আল্লাহ্‌কে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি, তোমাদের চেয়ে বেশী পরহেয করি। কিন্তু এরপরও আমি কোন দিন সিয়াম পালন করি আবার কোন দিন সিয়াম পালন করা ছেড়ে দেই। রাতে সলাত আদায় করি আবার ঘুমিয়েও থাকে। আমি বিয়েও করি। সুতরাং এটাই আমার সুন্নাত (পথ), যে ব্যক্তি আমার পথ থেকে বিমূখ হবে সে আমার (উম্মাতের) মধ্যে গণ হবে না। (সহিহ বুখারী ৫০৬৩ তাওহীদ প্রকশনী, সহিহ মুসলিম ১৪০১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১৭, বুলুগুল মারাম ৯৭৫, আহমাদ ১৩৭২৭)।

মন্তব্যঃ যারা ইবাদতে বাড়াবাড়ি করে সুন্নাত বহির্ভূত আমল করে থাকেন তাদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কত বড় হুমকি যে তিনি এরশাদ করে তারা আমার উম্মাতের মধ্যে গণ হবে না।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। হঠাৎ দেখলেন যে, একটি দড়ি দুই স্তম্ভের মাঝে লম্বা করে বাঁধা রয়েছে। তারপর তিনি বললেন, এই দড়িটা কি জন্য’? লোকেরা বলল, ‘এটি যয়নাবের দড়ি। যখন তিনি (নামায পড়তে পড়তে) ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তখন এটার সঙ্গে ঝুলে যান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এটিকে খুলে ফেল। তোমাদের মধ্যে (যে নামায পড়বে) তার উচিত, সে যেন মনে স্ফূর্তি থাকাকালে নামায পড়ে। তারপর সে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বে, তখন সে যেন শুয়ে যায়। (সহিহ বুখারী ১১৫০ তাওহীদ, ১০৮০ ইফাঃ, মুসলিম ৭৮৪, নাসায়ী ১৬৪৩, আবূ দাউদ ১৩১২, ইবনু মাজাহ ১৩৭১, আহমাদ ১১৫৭৫)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমদের কেউ যখন লোকেদের নিয়ে সালাত আদায়করে, তখন যেন সে সংক্ষেপ করে। কেননা, তাদের মধ্যে ছোট, বড়, দুর্বল ও কর্মব্যস্তরা রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সালত আদায় করে, তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে। (সহিহ বুখারী ৭০৩ তাওহীদ প্রকাশণী, ৬৬৮ ইফাঃ, সহিহ মুসলিম ৪৬৭, তিরমিযী ২৩৬, নাসায়ী ৮২৩, আবূ দাঊদ ৭৯৪, আহমাদ ২৭৪৪)

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ মু‘আয (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সালাত আদায়ের পর ফিরে এসে আমাদের সালাত ইমামতি করতেন। বর্ননাকারী পুনরায় বলেন, তিনি ফিরে এসে স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদের সালাত ইমামতি করতেন। এক রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সালাত আদায়ে বিলম্ব করেন। সেদিনও মু‘আয (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ‘ইশার সালাত আদায়ের পর স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট গিয়ে তাদের ইমামতি করেন। এবং উক্ত সালাতে তিনি সূরাহ আল-বাক্বারা্হ পাঠ করলে এক ব্যাক্তি জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী সালাত আদায় করে নেয়। ফলে বলা হলো, হে অমুক! তুমি কি মুনাফিক্ব হয়ে গেলে নাকি? লোকটি বললোঃ আমি মুনাফিক্ব হই নাই। পরে লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! মু‘আয (রাঃ) আপনার সাথে সালাত আদায় শেষে ফিরে গিয়ে আমাদের সালাতের ইমামতি করেন। আমরা মেহনতি মজদুর লোক এবং নিজেরাই ক্ষেতের কাজ-কর্ম করে থাকি। অথচ মু‘আয (রাঃ) আমাদের সালাত ইমামতিকালে সূরাহ বাক্বারাহ পড়েন (অর্থাৎ দীর্ঘ সূরাহ পাঠ করে থাকেন)। হে কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন হে মুয়াজ! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী? তুমি কি লোকদের ফিতনাহয় ফেলতে চাও? তুমি সালাত অমুক অমুক (ছোট) সূরাহ পাঠ করবে। আবূয যুবায়ির বলেন, সূরাহ আল-’আলা, ওয়াল লাইলি, ইযা ইয়াগশা এ ধরনের (ছোট) সুরা্ পাঠ করবে। অতঃপর আমরা তা (বর্ননাকারী) ‘আমরের নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আমার ধারনা, তিনি সেটাও উল্লেখ করেছেন। (আবু দাউদ ৭৯০ হাদিসের মান সহিহ, সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলীমে অন্য শব্দে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে)।

মন্তব্যঃ সহিহ হাদিসগুলির সারমর্ম হল ইবাদতে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখান পদ্ধতিতেই আমল করতে হবে। যদি ইবাদাতে বাড়াবাড়ি করতে থাকি তবে সুন্নাহ সম্মত আমল বিদআতে পরিনত হবে। কাজেই সকল আমলের পদ্ধতিতে সুন্নাহ অনুসরণ করি। অল্প আমলে করে অধিক সওয়াব অর্জণ করি। আসলে আমদের ইবাদতের পরিমান দেখে মহান আল্লাহ খুসি হবেন না, তিনি আমাদের নিয়তের ও তাকওয়ার উপর খুসি হবেন। মহান আল্লাহকে খুসি করার পদ্ধতি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া কেউ ভাল জানতেন না। তাই প্রতিটি আমলে তার দেখান পদ্ধতিতে আমল করি আর কাঙ্খিত লক্ষে পৌছে যাই। হাদিসের আলোকে একথা ষ্পষ্ট যে আমলের আধিক্য বা বাড়াবাড়ি আল্লাহ সন্ত্বষ্টি অর্জনের মাধ্যম নয়।  সুন্নাহ সম্মত আমলই একমাত্র গ্রহন যোগ্য মাধ্যম। সুন্নাহর বিপরীত আমলই হল বিদআত। কাজেই আমলের বাড়াবাড়ি মানেই হল বিদআত। আমলের বাড়াবাড়ি না করে সুন্নাহ সম্মত আমল করি, বিদআত সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করি। উপরের হাদিসের আলোকে বলা যায়, দুয়ার ক্ষেতে, পবিত্রতার ক্ষেত্রে, সালাতের ক্ষেত্রে, সিয়ামের ক্ষেত্র, রাত জেগে ইবাদত করার ক্ষেত্রে সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। বাড়াবাড়ি করে সুন্নাহর বীপরিত আমল করলে বিদআত হবে।

** ইসলামি শরিয়ত সম্মত কোন বিষয়ে বৃদ্ধিঃ

ইসলাম পরিপূর্ণ ও আল্লাহ্‌র নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন। এ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করার ঘোষণাও আল্লাহ্ আল-কুরআনে দিয়েছেন, তিনি বলেন,

*﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ * 

অর্থঃ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা আল মায়িদা ৫:৩)

১। ইবাদতে বৃদ্ধি করাঃ

২। আকিদায় বৃদ্ধি করাঃ

৩। রাসূল সম্পর্কে বৃদ্ধিকরাঃ

৪। অলী আওলীয়া সম্পর্কে বৃদ্ধিকরাঃ

***ইবাদতে বৃদ্ধি করাঃ

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ধর্ম। এই পরিপূর্ণ দ্বীনে মহান আল্লাহকে রাজি খুসি করা করার জন্য তিনি (আল্লাহ) নিজেই কিছু ইবদতের পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। ভাল বা মন্দ বুঝার জন্য মানুষের জ্ঞানই যথেষ্ট কিন্তু ইবাদতের পদ্ধতি কখনও জ্ঞান দ্বারা বুঝা যাবে না। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ মহান আল্লাহ প্রদত্ত ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রদর্শিত পদ্ধতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রদর্শিত পদ্ধতির বাহিরে গেলে আর ইবাদত হবে না, তখন ঐ ইবাদতে নাম হবে বিদআত। ইবাদতের বৃ্দ্ধি তিনভাবে হবে পারে।

ক। মুল ইবাদতে সাথে কিছু সংযোজ করা

খ। পদ্ধতি ঠিক রেখে পরিমান বৃদ্ধি করা

গ। সম্পূর্ণ পদ্ধতি আবিস্কার করা

ক। মুল ইবাদতে সাথে কিছু সংযোজ করাঃ

ইসলাম অনুসরী মুসলিম জাতীর বয়স আজ প্রায় সাড় চৌদ্দশত বছর। এই দীর্ঘ পথ চলার সময় ইসলামের মুল ইবাদের সাথে অনেক সময় কিছু সংযোজ করা হয়েছে। ইবাদতে তার সঠিক পদ্ধতি না রেখে অধিক নেকির আশায় কিছু সংযোজ করা হয়। এই ধরনের সংযোগ করা শুধু বিদআত নয়, হারামও বটে। যেমনঃ কবর জিয়ারত একটি সুন্নাহ সম্মত ইবাদত, কিন্তু এই ইবাতদ করা নিমিত্তে কিছু জাহিল কবর পাকা করছে, কবরে শালু জড়াচ্ছে, যা সুন্নাহ বিরোধী বিদআত।

হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,  তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কবরসমূহ চুনকাম করে বাঁধাই করতে নিষেধ করেছেন। (সহিহ মুসলিম)

এমনিভাবে মুল ইবাদত সালাত, সিয়াম, হজ্জ ও যাকাতের সাথে কিছু সংযোজ করালেও বিদআত হবে। যেমনঃ আমরা প্রতি দিন সালাত আদায় করি। এই সালাত আদায়ের পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রদর্শিত। এখন যদি কেই ভাল নিয়তে প্রতি রাকাতে একটি রুকুর পরিবর্তে দুই/তিনটি রুকু দেন, তা হলেকি তার সালাত হবে? আবার প্রতি রাকাতে দুটি সিজদাহ এর পরিবর্তে তিন/চরটি সিজদাহ দেন, তা হলেকি তার সালাত হবে? অর্থাৎ সালাতের পদ্ধতিতে বৃদ্ধি করা যাবে না।

আমরা জানি জানাজার সালতে কোন আযান দেয়া হয় না। যদি কেউ মনে করে জানাযার সালাতে আযান দিয়ে অধিক সংখ্যক লোক হাজির হবে, তাই তিনি জানাযার সালাতে আগে আযানের প্রচলণ করলেন। ইবাদাতে এই ধরনের বৃদ্ধিও বিদআত হিসাবেগন্য।

খ। পদ্ধতি ঠিক রেখে পরিমান বৃদ্ধি করাঃ

মহান আল্লাহকে রাজি খুসি করার জন্য ইসলামের প্রচলতি ইবাদতকে যথেষ্ট মনে না করে, জান্নাত লাভের আশায় মরন পন ইবাদত করতে থাকে। এই সকল আবেদগণ ইবাদতের পদ্ধতি ঠিক রেখে পরিমান বৃদ্ধি করতে থাকে। অনেক আবেদতো জাহান্নামের ভয়ে দুনিয়া ছেড়ে দিয়ে মনগড়া পন্থায় আল্লাহকে সন্তষ্ট করার চেষ্টা  করে থাকে। মহান আল্লাহ বলেনঃ

*وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاء رِضْوَانِ اللَّهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا *

অর্থঃ আর বৈরাগ্য, সে তো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে; আমি এটা তাদের উপর ফরজ করিনি। কিন্তু তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে এটা অবলম্বন করেছে। অতঃপর তারা যথাযথভাবে তা পালন করেনি। (সুরা হাদীদ ৫৭:২৭)

আয়েশা ও সা’দ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, উসমান বিন মাযঊন (রাঃ) আবেগময় ইবাদত শুরু করেছিলেন। সংসার-বিরাগী হয়ে সব ছেড়ে আল্লাহর ইবাদতে মন দিয়েছিলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন, ‘হে উসমান! আমাকে সন্ন্যাসবাদে আদেশ দেওয়া হয়নি। তুমি কি আমার তরীকা থেকে বিমুখ হয়েছ?’ উসমান বললেন, ‘না হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘আমার তরীকা হল, আমি (রাতে) নামায পড়ি এবং ঘুমাই, (কোনদিন) রোযা রাখি এবং (কোনদিন) রাখি না, বিবাহ করি ও তালাক দিই। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার তরীকা থেকে বিমুখ হবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। হে উসমান! নিশ্চয় তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে, তোমার উপর তোমার নিজের হক আছে, তোমার উপর তোমার মেহমানের হক আছে……।(হাদিসের মান সহিহ, আবূ দাঊদ ১৩৭১, দারেমী ২১৬৯, হাদিস সম্ভার ২২৯৩)

আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। তোমাদের কউ সাওমে বেসাল পালন করতে চাইলে সে যেন সাহরির সময় পর্যন্ত করে। লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যে সাওমে বেসাল পালন করেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই, আমি রাত্রি যাপন করি এরূপ অবস্থায় যে, আমার জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন যিনি আমাকে আহার করান এবং একজন পানীয় পরিবেশনকারী আমাকে পান করান। (সহিহ বুখারী ১৮৩৯ ইসলামি ফাউন্ডেশন)

গ। সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করাঃ

যে সকল ইবাদত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত নয় অথবা তার পরের তিন যুগেরও যার কোন প্রকার অস্ত্বিত্বও ছিল না তা নিসন্দেহে বিদআত। সণদ বা দলীল বিহীণ সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতিতে আমলকৃত ইবাদাতই হল বিদআতের মূল উত্স। সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করা এই সকল বিদআতে তালিকা বেশ বড়। এমনই কয়েকটি বিদআত হলোঃ মিলাদ মাহফিল করা, লাইলাতুল বরাত কিয়াম করা, লাইলাতুল মিরাজ সিয়াম পালন করা, আশুলা উপলক্ষে বিভিন্ন আমল করা, ঈদে  মিলাদুন্নবী পালন করা ইত্যাদি।

 

***  আকিদায় বৃদ্ধি করাঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لاَ تَغْلُواْ فِي دِينِكُمْ وَلاَ تَقُولُواْ عَلَى اللّهِ إِلاَّ الْحَقِّ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ فَآمِنُواْ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ وَلاَ تَقُولُواْ ثَلاَثَةٌ انتَهُواْ خَيْرًا لَّكُمْ إِنَّمَا اللّهُ إِلَـهٌ وَاحِدٌ سُبْحَانَهُ أَن يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَات وَمَا فِي الأَرْضِ وَكَفَى بِاللّهِ وَكِيلاً

অর্থঃ হে আহলী কিতাব! নিজেদের দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না আর সত্য ছাড়া কোন কথা আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করো না৷ মারয়াম পুত্র ঈসা মসীহ আল্লাহর একজন রসূল ও একটি ফরমান ছাড়া আর কিছুই ছিল না, যা আল্লাহ মারয়ামের দিকে পাঠিয়েছিলেন৷ আর সে একটি রূহ ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে (যে মারয়ামের গর্ভে শিশুর রূপ ধারণ করেছিল)৷ কাজেই তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলদের প্রতি ঈমান আনো এবং “তিন” বলো না৷ নিবৃত্ত হও, এটা তোমাদের জন্যই ভালো৷ আল্লাহই তো একমাত্র ইলাহ। কেউ তার পুত্র হবে, তিনি এর অনেক উর্ধে৷ পৃথিবী ও আকাশের সবকিছুই তার মালিকানাধীন এবং সে সবের প্রতিপালক ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিনি নিজেই যথেষ্ট৷ [সুরা নিসা ৪:১৭১ ]

এখানে ইহুদী ও খৃষ্টানদের আকিদা বিশ্বাসের বাড়াবাড়ি করার কথা বলা হয়েছে। খৃষ্টানগণ ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ভ্রান্ত আকিদা পোষণ করত এবং আকিদার ক্ষেত্র সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তারা তাকে মহান আল্লাহ স্বত্বা মনে করত। তিনি পিতা ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেন, তাই খৃস্টানগণ বিশ্বাস করতে থাকে মহান আল্লাহ ঈসা মসীহের রূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এভাবে খৃষ্টানদের মধ্যে ঈসা আলাইহিস সালাম কে আল্লাহ মনে করার মত ভ্রান্ত কুফরী আকীদার উদ্ভব হয়। আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ এবং ঈসা আলাইহিস সালামকে রাসূল হিসাবে বিশ্বাস না করে তারা খালেক আর মাখলুককে এক করে ফেলে। এমন কি তাদের অনেকে মরিয়াম আলাইহিস সালামকেও মহান আল্লাহ স্ত্রী বলে বিশ্বাস করতে থাকে। (নাউজুবিল্লাহ)। এমনিভাবে তারা তিন জন সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস করতে থাকে। বর্তামান যুগের খৃস্টানগণও একই সংগে একত্ববাদ ও ত্রিত্ববাদ উভয় আকিদায় বিশ্বাসি। বর্তমান বাইবেলগুলিতে ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে যে সমস্ত সুস্পষ্ট বানী পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে কোন একজন খৃষ্টানও একথা অস্বীকার করতে পারবে না যে, আল্লাহ এক এবং তিনি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন ইলাহ নেই।  তারপর তারা আকিদা ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে করে, শির্কি আকিদায় বিশ্বাসি হয়েছে। সুতারং খৃস্টানরা যদি হজরত ঈসা (আঃ) কে সৃষ্টিকর্তা বা সৃষ্টিকর্তার পুত্র সাব্যস্ত করে, সেটা বাড়াবাড়ির কারণেই করে থাকে। 

এমনিভাবে পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللَّهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللَّهِ ۖ ذَٰلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَاهِهِمْ ۖ يُضَاهِئُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن قَبْلُ ۚ قَاتَلَهُمُ اللَّهُ ۚ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ

অর্থঃ ইহুদীরা বলে উজাইর আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিষ্টানরা বলে মাসীহ (ঈসা আঃ) আল্লাহর পুত্র এ হচ্ছে তাদের মুখের কথা ওরা তো তাদের মতই কথা বলে যারা তাদের পূর্বে কাফির হয়েছে আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন, এরা কোন উল্টো পথে চলে যাচ্ছে। (সুরা তাওবাহ ৯:৩০)।

ইহুদিরা হজরত উজায়ের (আঃ) কে সৃষ্টিকর্তার পুত্র সাব্যস্ত করে, সেটা বাড়াবাড়ির কারণেই করে থাকে। সেটা বাড়াবাড়ির ফলেই করে থাকে। যদি আরবের মুশরিকদল কিংবা অন্যান্য কাফের, মুশরিকেরা মূর্তি পূজোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে থাকে, সেটা বাড়াবাড়ির ফলেই করেছিল। ভ্রান্ত শীয়াগণ আলী রাদিয়াল্লাহু কে উলুহীয়াতের মর্জাদা দান করে মহান আল্লাহর সমমর্যাদার দিয়ে থাকে এবং অন্য সাহাবায়ে কেরামকে কাফের সাব্যস্ত করে যা তাদের চমর বাড়াবাড়ির ফসল। কাদরিয়্যা, জাবরিয়্যা সম্প্রদায় তাকদির তথা ভাগ্য বিষয়ে বান্দার শক্তি থাকা না থাকার ব্যাপারে দুটো ভিন্ন ভিন্ন পথপন্থা অবলম্বন করে থাকে, যা তারা বাড়াবাড়ির ফলেই করে থাকে। মুজাসসামা, মুয়াত্তিলা সম্প্রদায় আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে শরীর থাকা বা তার বেকার বসে থাকা বিষয়ে দুটো ভিন্ন ভিন্ন পথপন্থা অবলম্বন করে থাকে, যা তারা বাড়াবাড়ির ফলেই করে থাকে। মানুষ আউলিয়ায়ে কেরাম, শহিদানকে প্রয়োজন পূরণকারী ও আপদ থেকে উদ্ধারকারী মনে করে, তাদের কাছে নিজেদের প্রয়োজনের ব্যাপারে তলব করে, বিপদাপদ থেকে মুক্তির দরখাস্ত করে, তাহলে সেটা বাড়াবাড়ি ধরনের এক প্রকার ব্যাধির প্রভাবেই করে থাকে। বর্তমানে অনেক নামধারী সুফী তরীকার লোক মাজারে তওয়াফ কিংবা সেজদা করে যা তাদরে বাড়াবাড়ির ফল। এসকল বিদআতি আকিদা আমাদের মাঝে আগে থেকেই চলে আসছে। বর্তমানে মুসলীমদের মাঝে আকিদার এত বাড়াবাড়ি চলছে যে ভ্রান্ত আকিদা বাদ দিলে আর সহিহ আকিদা খুজে পাওয়া যাবে না। এখানে এমনই কিছু ভ্রান্ত বিদআতি আকিদার উদাহরণ দিচ্ছি।

০১। আল্লাহতায়ালা কে সর্বত্র বিরাজমান মনে করা।

০২। আল্লাহতায়ালা কে নিরাকার মনে করা।

০৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহতায়ালার মতই অদৃশ্যর জ্ঞান রাখেন।

০৪। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহতায়ালার মতই হাজির ও নাজির।     

০৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নুরের তৈরি।

০৬। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মতই কবরে জীবিত আছেন।

০৭। একটা পর্যায় দুনিয়াতে বসেই আল্লাহকে দেখা সম্ভব বলে বিশ্বাস করে।

০৮। গাউস, কুতুব, আবদাল, নকিব ইত্যাদিতে বিশ্বাসি। (এদের ‌নিজেস্ব ক্ষমতা আছে বিশ্বাস করা)।

০৯।  অহেদাতুল অজুদে বা সর্বেঈশ্বরবাদে বিশ্বাসি।

১০। অলি আওলিয়ারা কবরে কাছ ফরিয়াদ করলে শুনতে পান।

১১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহতায়ালার মত মানুষের ভাল মন্দ করার ক্ষমতা রাখেন।

১২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহতায়ালার সাথে তুলনা করে ও কোন কোন ক্ষেত্রে  সমান জ্ঞান করেল।

১৩। বিপদে পীর বা অলি আওলিয়াদের কবরের নিকট গিয়ে উদ্ধার আহবান করে।

১৪। অলি আওলিয়ারা কবরে জীবিত আছেন।

১৫। মিলাদ মাহফিল চলা কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনে করে বলে বিশ্বাস করে।

১৬। মাধ্যম ছাড়া আল্লাহ পর্যান্ত পৌছান যায় না

১৭। অলিদের কাশফ কে তাদের নিজস্ব ক্ষমতা মনে করে

১৮। অলি আওলিয়াদের কারামত ইচ্ছাধীন মনে করা

১৯। তাবিজ কবজে বিশ্বাসি

২০। কবর জিয়ারত ওয়াজিব মনে করা।

২১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপনের মতই জীবিত অবস্থায় দেখা যায়,

২২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না হলে পৃথিবী সৃষ্টি হত না,  

২৩। অলি আওলিয়াদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান থেকে বরকত লাভ করা যায় বলে বিশ্বাস করা। ( অবশ্য হাদিসে বর্ণিত স্থান থেকে বরকত লাভ করা যায়)।  

২৪। তাকলিদে শাকসিতে বিশ্বাসি বা যে কোন এক মাজহাব মানা ওয়াজিব বলে বিশ্বাস করা।

২৫।  পীর বা অলীদের কলবের তাওয়াজ্জু দানে বা নেক নজরে বিশ্বাসি।  

২৬। এলম সিনা থেকে সিনার মধ্যমে চলে আসছে।

২৭। সংশোধনের জন্য পীর ধরা ওয়াজিব মনে করে।

২৮। পীর ও অলি আওলিয়াদের ছাড়া এছলা সংশোধন হয় না

২৯। বিভিন্ন দিবসে মৃত্যু ব্যক্তি ফিরে আসে এই বিশ্বাস রেখে ঐ দিনে হালুয়া রুটি রেখে দেওয়া।

***  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বৃদ্ধিকরাঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মর্জাদা বৃদ্ধি করার অর্থ হচ্ছে তাঁকে নবুওয়াত ও রিসালাতের উর্ধ্বে স্থান দেয়া। পৃথিবীতে রিসালাতের উর্ধ্বে কোন মানুষের মর্জাদা আছে বলে কেউ স্বীকার করবে না। রিসালতের উর্ধের মর্জাদ কল্পনা করা যাবে না। সৃষ্টা ও স্রষ্টার মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য। স্রষ্টা কর্তৃক তার সৃষ্টিকে দেয়া সর্বোচ্চ মর্জাদা হল রিসালাত বা নবুয়ত। যখনই মানুস কাউকে রিসালতের চেয়ে উচ্চ মর্জাদা প্রদান করছে তখন তারা সৃষ্টা ও স্রষ্টার মাঝে পার্থক্য ভুলে গেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মান ও মর্জাদা বাড়াতে গিয়ে তাকে রিসালাতের উর্ধ্বে স্থান দিয়ে, তার সম্পর্কে বিদআতি আকিদা প্রষোণ করতে থাকে। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বলে থাকে, দুনিয়া ও আখিরাত তার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি প্রকৃত গায়েব জানেন। তিনি সর্বত্র সর্বদা হাযির নাজির। তিনি মানুষ ছিলেন না। তিনি মরে নাই। তিনি নুরের তৈরি। তিনি উম্মী নবী ছিলেন না  ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই সবগুলিই তার সম্পর্কে বিদআতী আকিদার। এই সকল কথা সম্পূর্ণ কুরআন বিরোধী ও শির্কি। কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার প্রদত্ত সুস্পষ্ট ভাষার ঘোষণাগুলী পড়লেই যে কেউ সহজে বুঝতে পারবে, এই সকল গুনাবলী আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য প্রযোজ্য। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর জানেন না, এই গুনটি সম্পূর্ণ মহান আল্লহ একক গুন। আল্লাহই সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞাত এবং চিরজ্ঞীব আর মানুষ মাত্রই মরণশীল। এমন কি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও মৃত্যুর উর্দ্ধে নন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটির উপাদান থেকে সৃষ্টি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে সঠিক ও সু-ধারনা পোষন করা প্রত্যেকটি মুসলিমের দায়িত্ব। অতিরঞ্জর বাড়বাড়ি কখনও শির্কি বা বিদআতি আকিদার জম্ম দেয়। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাযি আল্লাহু আনহু বর্ণিত একখানা হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমরা আমার সম্পর্কে অতিরঞ্জন করো না, যেমন নাসারাগণ অতিরঞ্জন করেছে ঈসা ইবনু মারইয়াম সম্পর্কে। আমি তো শুধূ আল্লাহর বান্দা। বরং তোমরা বলো আমি আল্লাহর বান্দা ও রসুল। (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেনঃ ‘বাড়াবাড়ি থেকে সাবধান হও। তোমাদের পূর্বসূরীগণ ধ্বংস হয়েছিল তাদের বাড়াবাড়ির জন্য। (মুসনদে আহম্মদ)।

মহান আল্লাহ্ তাঁর হাবীব রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে সীমাহীন উচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দান করেছেন তা আল কুরআন এবং সহিহ হাদিসের পাতায় পাতায় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। অতি ভক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে তাঁর মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কুরআনুল কারীমের সুস্পষ্ট আয়াত ও ঘোষণাকে অস্বীকার করে, বিকৃত করে, ভ্রান্ত তাফসীর করে, জাল বানোয়াট মনগড়া কাহিনীর অবতারনা করে ইয়াহুদি খৃষ্টানদের মত সীমালঙ্ঘনকারী হওয়া কখনোই ঈমানের পরিচায়ক হতে পারে না। বরং আমাদের উচিত হবে আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীব রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে মর্জাদা দিয়েচেন তার ভিত্তিতে তাকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তা না হলে বিদআদি  আকিদা দ্বারা আমাদের ঈমান নষ্ট হবে।

*** অলী আওলীয়া সম্পর্কে বৃদ্ধিকরাঃ

আমাদের উপমহাদেশের অধিকাংশ বিদআত চালু হয়েছে অলী আওলীয়া সম্পর্কে বাড়াবাড়ির ফলে। উপমহাদেশের প্রায় সকল মুসলিমদের পূর্ব পুরুষ হিন্দু ছিল। তাদের তাদের ধর্ম জাযকদের অতিরিক্ত ভক্তি করত। এই অতিভক্তি মুসলিম হওয়ার পরও অব্যাহত রাখে। তারা পীর, অলী আওলীয়াদের আমল থেকে তাদের কিরামত প্রচারেই বেশী ব্যাস্ত থাকেতেন। যার ফলে তাদের প্রতি ভক্তির পরিমান আরও বেড়ে যায় যায়। এর ফলে তারা পীর, অলী আওলীয়াদের হাদিয়া প্রদান করতে থাকে, তাদের দরবারে মানত করতে থাকে। তারা বিপদে আপদে, রোগে শোকে, বালা মছিবতে, দুঃখ বেদনা থেকে মুক্তি পাওয়ার নিমিত্তে তাদের দরগা বা মাজারে মানত করে। এই সকল পীর, অলী আওলীয়াদের ক্ষমতা সম্পর্কে এমন সব কুফরী বিশ্বাস রাখে যা স্বয়ং আল্লাহ রাখা উচিত।

যেমনঃ বিপদে পীর বা অলি আওলিয়াগণ উদ্ধার করতে পারে। তারা কবরে জীবিত আছেন। কাশফ বা অন্তরদৃষ্টি খুলে যাওয়া তাদের নিজস্ব ক্ষমতা। কারামতও তাদের ইচ্ছাধীন। অলি আওলিয়াদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান থেকে বরকত লাভ করা যায়। তাদের মাধ্যম ছাড়া আল্লাহ পর্যান্ত পৌছান যায় না এমন কি তাদের এছলা সংশোধন হয় না। অনেকে তাদের পীরকে সিজদাও দিয়ে থাকে।

মাদের মৃত্যুর পর তাদের কবরকে মাজার হিসাবে তৈরি করে হাজার হাজার শির্ক কাজে করে তাকে। মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ঊরশ উত্জাপন করে থাকে। মাজারে গিয়ে মুক্তির আশায় সিজদা দিয়ে থাকেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের পাশে কিংবা কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কেননা ছালেহীনের কবরের পাশে ইবাদত করলে তা একপর্যায়ে তাদেরই ইবাদত হয়ে যেতে পারে।

একদা উম্মু হাবীবা ও উম্মু সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাবশায় (আবিসিনিয়া) অবস্থিত গির্জার কথা বলেন, যাতে কিছু ছবি ও মূর্তি ছিল। তিনি শুনে বললেন, ‘ওরা এমন জাতি যে, তাদের মধ্যে কোন নেককার লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করত এবং তাদের (সম্মানার্থে) সেখানে ছবি ও মূর্তি স্থাপন করতো। ওরাই কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি হিসাবে পরিগণিত হবে। সহিহ বুখারী ১৩৪; সহিহ মুসলীম ৫২৮; নাসাঈ ৭০৪।  

*** ইসলামি শরিয়ত সম্মত কোন ইবাদতে হ্রাস করাঃ

ইসলাম পরিপূর্ণ ও আল্লাহ্‌র নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন। মহান আল্লাহ্ বলেন,

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ﴾

অর্থঃ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা আল মায়িদা ৫:৩)

এই আয়াতটি  ইসলামি শরিয়ত সম্মত কোন ইবাদতে বৃদ্ধি করার আলোচয় সময় উল্লেখ করেছি, কারন শরিয়ত সম্মত কোন ইবাদতে যেমন বৃদ্ধি করা যাবে তেমনি হ্রাসও করা যাবেন। একটি পরিপূর্ণ কলসিতে যদি পানি ঢালা হয়, তবে আর পানি ভিতরে প্রবেশ করবে না, যদি পানি প্রবেশ করে তবে সেই টুকু পানি আগে কলসি থেকে অপসারিত হতে হবে। অর্থাৎ পরিপূর্ণ কলসিতে যতটুকু পানি প্রবেশ করবে, ঠিক ততটুকু পানি অপসারিত হতে। ইসলামি শরীয়তের সকল আমল পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়েছে।  ইসলামি শরীয়তে যতটুকু বিদআত বা নব আবিস্কৃত আমল প্রবেশ করবে ঠিক ততটুকু সুন্নাহ অপসারিত হবে। নেকির উদ্দেশ্যে সুন্নাহ অপসারণ করে, তার স্থানে নতুন নতুন আমল চালু করাকে “ইসলামি শরিয়ত সম্মত কোন ইবাদতে হ্রাস করা” বুঝান হয়েছে। উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

*** পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর মাসনুন দুয়াসমূহ হ্রাস করাঃ

আমারা প্রতিদিন প্রতি সালাতের পর হাত তুলে সম্মিলিত দুয়া করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জীবন দসায় কখনও এইভাবে সালাতের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দুয়া করেন নাই। অথচ সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত প্রতি ওয়াক্ত ফরজ সালাত শেষে দুআ কবুল হয়। আসলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দুআ নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হল এর পদ্ধতি নিয়ে  যে পদ্ধতিতে দুআ করা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এভাবে দুআ করেন নাই। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায়ের পর প্রচলিত মুনাজাত যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না করে থাকেন, তবে তিনি কি আমল করেছেন। সহিহ বুখারী এ সহিহ মুসলীমসহ বহু হাদিস গ্রন্থে সালাতের পর যিকির-আযকার অধ্যায়ে বিভিন্ন যিকিরের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম (রাজিঃ) আমল করেছেন।

সামুরা ইবনু জুনদব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করতেন, তখন আমাদের দিকে মুখ ফিরাতেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৮০৫ ইসলামী ফাউন্ডেশন)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় মুসল্লিগণ ফরয সালাত শেষ হলে উচ্চস্বরে যিকর করতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি এরূপ শুনে বুঝলাম, মুসল্লিগণ সালাত শেষ করে ফিরছেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৮০১ ইসলামী ফাউন্ডেশন)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দরিদ্রলোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, সম্পদশালী ও ধনী ব‍্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেন, তারা আমাদের মত সালাত আদায় করছেন আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের দ্বারা হজ্ব, উমরা, জিহাদ ও সাদাকা করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ শুনে তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চাইতে অগ্রগামী হয়ে গিয়েছে, তাদের সমপর্যায়ে পৌছাতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র।

তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে। (এ বিষয়টি নিয়ে) আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হল। কেউ বলল, আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ পড়ব, তেত্রিশ বার তাহমীদ আর চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়ব। এরপর আমি তাঁর কাছে ফিরে গেলাম। তিনি বললেন, سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ বলবে, যাতে সবগুলোই তেত্রিশ বার করে হয়ে যায়। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৮০৩ ইসলামী ফাউন্ডেশন)।

নাসর ইবনু আলী আল-জাহযামী (রহঃ) … কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাতের পর পাঠ করার এমন কিছু যিকর আছে, যা পাঠকারী কিংবা আমলকারী কখনো বঞ্চিত হবে না। প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আলহামদুলিল্লাহ ও চৌত্রিশবার আল্লাহু আকবর। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১২২৭ ও ১২৭৮ ইসলামী ফাউন্ডেশন)।

আবু হুরায়রা বাঃ থেকে বর্ণীত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক সালাতের পর সুবহানাল্লাহ তেত্রিশবার, আলহামদুলিল্লাহ তেত্রিশবার ও আল্লাহু আকবার তেত্রিশবার বলবে এই হল নিরানব্বই-আর একশত পূর্ণ করার জন্য বলবেঃ

*لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ*

তার পাপ সমুহ মাফ হয়ে যাবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মত হয়। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১২৩০ ইসলামী ফাউন্ডেশন)।

মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) এর কাতিব ওয়াররাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) আমাকে দিয়ে মু’আবিয়া (রাঃ) কে (এ মর্মে) একখানা পত্র লেখালেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরয সালাত এর পর বলতেনঃ

* لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهْوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ*

অর্থঃ এক আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, সার্বভোমত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, তিনি সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। ইয়া আল্লাহ! আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার কেউ নেই। আপনার কাছে (সৎকাজ ভিন্ন) কোন সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৮০৪ ইসলামী ফাউন্ডেশন)।

সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন যখন সালাত শেষ করতেন তখন তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন (আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ!) এবং বলতেন, আল্লাহুম্মা আনতাচ্ছালাম, ওয়া মিসকাস সালাত, তাবাকতা ইয়াজাল জালালী ওয়াল ইকরাম, (হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময় এবং তোমার নিকট হতে শান্তির আগমন, তুমি কল্যাণময়ত, হে মর্যাদাবান, মহানুভব!

সহিহ মুসলীমে বর্ণিত হয়েছে, ইমাম আওযায়ীকে জিজ্ঞেস করা হল, (তিনি এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত শেষে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন কিভাবে? তিনি বলতেন, আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি)।

মুগীরা ইবনু শোবা রা. মুয়াবিয়া রা. এর কাছে লিখেছেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত শেষ করে সালাম ফিরাতেন তখন বলতেন, লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, আল্লাহুম্মা লা- মানেআ লিমা আতাইতা ওয়ালা মুতিয়া লিমা মানাতা ওয়ালা ইয়ান ফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ আপনি যা দান করেন তা বাধা দেয়ার কেউ নেই। আর আপনি যা বাধা দেবেন তা দেয়ার মত কেউ নেই। আর আযাবের মুকাবেলায় ধনবানকে তার ধন কোনো উপকার করতে পারে না। (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশবার ছুবহানাল্লাহ বলবে, তেত্রিশ বার আলহামদু লিল্লাহ বলবে ও তেত্রিশবার আল্লাহু আকবার বলবে এর পর লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান) বলে একশ বাক্য পূর্ণ করবে তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (সহিহ মুসলিম)

এ ছাড়াও সালাতের পর আরো অনেক যিকির ও দুআর কথা হাদীসে এসেছে। সেগুলো আদায় করা যেতে পারে। যেমনঃ সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সূরা নাছ পাঠ করার কথা এসেছে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করার বর্ণনা এসেছে। এ সকল দুআ যে সবগুলো একই সঙ্গে আদায় করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সময় ও সুযোগ মত যা সহজ সেগুলো আদায় করা যেতে পারে।

হাদীসে বর্ণিত ফরয সালাতের পর পঠিতব্য দুআ ও যিকিরগুলো এককী পড়তে হবে, দলবদ্ধভাবে নয়। কারণ, হাদীসে এ ক্ষেত্রে পঠিতব্য দুআগুলো প্রায়ই সবই এক বচনের শব্দে এসেছে । দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ভারত বর্ষের প্রায় সকল মুসলিম জনগণ (আলিম ও সাধারণ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সালাতের পর পঠিতব্য দুআর তালিকাটি আংশিক বা পুরোপুরি বাদ দিয়ে নিজেরাই বিভিন্ন দুআ নির্বাচন ও সংযুক্ত করেছে। এর সাথে আরো যোগ করেছে দলবদ্ধ ও সম্মিলিত রুপ। ফলে সালাতের পরে দুআর নামে সম্মিলিত মুনাজাতের মাধ্যমে অনেকগুলো সুন্নাত উৎখাত হয়েছে। প্রথমতঃ যে সুন্নাতটি উঠেছে সেটা হল, ফরয সালাতের পর যে নির্দিষ্ট কিছু দুআ ও যিকির রয়েছে এটার জ্ঞানই অধিকাংশ লোকের নেই। যার জন্য ওগুলো কন্ঠস্থ করার সুযোগ তাদের হয়নি। ঐ সকল দুআ ও যিকির সম্বলিত হাদীসগুলো পড়ার কিম্বা ইমাম সাহেবের মাধ্যমে শোনার অবকাশ হয়নি বা নেই।

 আমাদের প্রায় সকলেই এই সুন্নত সম্মত জিকির ও দুয়া বাদ দিয়ে নিয়মিত সম্মিতিত দুয়া করি, মাথায় হাত দিয়ে কিছু পাঠ করি, আবার কিছু পাঠ করে চোখে ফুঁক দেই, কেউ দুয়া দ্বারা সারা শরীর মাসেহ করি ইত্যাদি। আবার অনেকে আছে সালাম ফিরানোর পর যিকির-আযকার না করেই তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান সুন্নাত নামায আদায়ের জন্য। আমরা এই সুন্নত সম্মত জিকির ও দুয়া বাদ দিয়ে নিয়মিত আদায়ের জন্য যে নতুন নতুন আমল করছি তা নিশ্চয় সুন্নাহ নয়। অর্থাৎ আমরা সালাতের পরবর্তী যিকির-আযকার হ্রাস করে ফেলেছি, এবং বিদআত আবিস্কার করেছি। আমাদের করনীয় আমলগুলি হাদিসে পাওয়া যায় না বিধায় এগুলো বর্জন করা উচিত। একটু চিন্তা করে দেখুন, সুন্নত সম্মত আমলকে হ্রাস করে কিছু নতুন আমল সৃষ্টি করে আমর করছি তা কি করে দ্বীন হয়? সুন্নাত সম্মত আমল ত্যাগ করে নতুন আমল সৃষ্টি করা থেকে সতর্ক হই বিদআত কে ভয় করি।

মন্তব্যঃ অনেকে হয়তো ভাবছেন হাত তুলে দুয়া করাই বিদআত। আসলে ব্যাপরটি তা নয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ হাদিসে প্রমানিত তিনি বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য, বৃষ্টি বন্ধের জন্য, উম্মাতের কল্যানের জন্য, কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার জন্য, মুমিনকে কষ্ট বা গালি দেয়ার প্রতিকারে জন্য, কোন গোত্রের জন্য, চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের সময়, কবর জিয়ারতের সময়, হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময়, সাফা মারওয়া সায়ী করার সময়, কুনুতে নাযেলার সময় এবং যুদ্ধক্ষেত্রে হাত তুলে দুয়া করছেন।

**  মসজিদে প্রবেশ করার পর দু’রাকাত সালাত সম্পর্কেঃ

তাহিয়্যাতুল মাসজিদ বা মসজিদে প্রবেশ করার পর পরই দু’রাকাত সালাত আদায় করা সুন্নাহ সম্মত সহিহ আমল। কিন্তু আমাদের নিকট থেকে এই সুন্নাহ সম্মত আমলটি হ্রাস পেয়ে গেছে। আরবে এই আমলের বহুল প্রচলন থাকলেও উপমহাদেশে নেই বললেই চলে। আমরা জানি ইমাম জুমার খুতরা প্রদানের সময় কোন প্রকারের আমল করা ঠিক নয় কিন্তু তখনও তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করা জরুরী মনে করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাগিত প্রদান করেছেন। তাহিয়্যাতুল মাসজিদের সালাত সম্পর্কিত নিম্মের হাদিসগুলি লক্ষ করি।

আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে গেলাম তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে বসেছিলেন। তিনি বলেন, আমিও বসে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, বসার আগে দু-রাক’আত সালাত আদায় করা থেকে তোমাকে কিসে বিরত রাখল? আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে বসা দেখলাম এবং লোকেরাও বসা ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন দু-রাকআত সালাত আদায়ের আগে বসবে না। (সহিহ মুসলীম ১৫২৮ ইসলামী ফাউন্ডেশন)

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যাক্তি এল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে অমুক! তুমি সালাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না। তিনি বললেন, দাঁড়াও সালাত আদায় করে নাও। (সহিহ মুসলীম ১৮৯১-১৮৯৫ ইসলামী ফাউন্ডেশন)

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সূলায়ক গাতফানী (রাঃ) জুমআর দিনে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। সুলায়ক (রাঃ) বসে পড়লেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সূলায়ক! তুমি দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ জুমু’আর দিন মসজিদে এলে, ইমাম তখন খুৎবারত থাকলে সংক্ষিপ্ত আকারে দু’ রাকআত সালাত আদায় করে নেবে। (সহিহ মুসলীম ১৮৯৬ ও ১৮৯৭ ইসলামী ফাউন্ডেশন)

আমাদের অজ্ঞতার কারনে আমরা অনেক মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে একটু বসি, তারপর সালাত শুরু করি। অনেক আলেম মাজহাবের দোহাই দিয়ে এই সুন্নাহ সম্মত আমলটি করা থেকে বিরত রাখেন যা মোটেই ঠিক নয়। মাগরিবের আজানের পর সময় খুব কম থাকে, তাহিয়্যাতুল মাসজিদের সালাত সম্পর্কে হাদিস জানার পর কেউ কেউ আমলের চেষ্টা করে কিন্তু কোন কোন সমজিদের ইমাম কে দেখা যায় মাগরিবে আগে ৫/৬ মিনিটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। আমার বার বার মনে হয় এই সুন্নাহ সম্মত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ এর সালাত আদায় করতে না দেওয়ার জন্যই এই কাজটি করে থাকেন।

অনেক মসজিদে খুতাবার সময় লাল বাতি জ্বালিয়ে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ এর সালাত আদায় করা থেকে বিরত রাখেন, যা সহিহ মুসলীমের হাদিস বিরোধী আমল। হাদিসটি লক্ষকরে দেখবেন খুতবা চলার সময়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা থামিয়ে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ এর সালাত আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তা হলে আপনি কি করে মসজিদে লালাবাতি জ্বালিয়ে খুতবা প্রদান করে। মনে হবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও আমরা বেশী বুঝেছি। এভাবে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ এর সালাত আদায় না করে আমরা এই সুন্নাহ সম্মত আমলটি হ্রাস করেছি আর লালবাতি জ্বালানোর মত বিদআতি আমল করছি।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment