বিভিন্ন দিবস কেন্দ্রিক বিদআতঃ পঞ্চম কিস্তি

আমাদের ভাষা ও দেশ সম্পর্কিত দিবস

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।

আমাদের ভাষা ও দেশ সম্পর্কিত দিবসঃ

আমাদের ভাষা রক্ষার জন্য জীবন দানের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছি আন্তর্জাতীক মাতৃভাষা দিবস এবং দেশের জন্য জীবন দানের বিনীময় পেয়ছি স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবস। এই তিনটি দিবস সম্পর্কেই ইসলামি শরীয়ততের বিধান আলোচনা করব। এই তিনটি দিবস সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। তাই বিষয়টির কলরব বৃদ্ধি না করে খুবই সংক্ষেপে একটু ভুমিকা দিয়ে ইসলামি দৃষ্ট কোন থেকে আলোকপাত করব। 

 

১। আন্তর্জাতীক মাতৃভাষা দিবসঃ

একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত সহ অনেকেই। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সাল থেকে ভাষা শহীদদের স্বরণে প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।

পরবর্তিতে কানাডায় বসবাসরত দুই জন বাঙ্গালী রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম  ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের তৎকালিন মহাসচিব কফি আনানের কাছে এই দিনটি আন্তর্জাতীক  মাতৃভাষা হিসাবে ঘোষণার জন্য আবেদন জানান হয়। সে সময় সেক্রেটারী জেনারেলের প্রধান তথ্য কর্মচারী হিসেবে কর্মরত হাসান ফেরদৌসের নজরে এ চিঠিটি আসে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী রফিককে অনুরোধ করেন তিনি যেন জাতিসংঘের অন্য কোন সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন। পরে রফিক, আব্দুস সালামকে সাথে নিয়ে “মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওর্য়াল্ড” নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। এতে একজন ইংরেজিভাষী, একজন জার্মানভাষী, একজন ক্যান্টোনিজভাষী, একজন কাচ্চিভাষী সদস্য ছিলেন। তারা আবারো কফি আনানকে “এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওর্য়াল্ড”-এর পক্ষ থেকে একটি চিঠি লেখেন, এবং চিঠির একটি কপি ইউএনওর কানাডীয় দূত ডেভিড ফাওলারের কাছেও প্রেরণ করা হয়।

১৯৯৯ সালে তারা জোশেফের সাথে ও পরে ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করেন, আনা মারিয়া পরামর্শ দেন তাদের প্রস্তাব ৫ টি সদস্য দেশ – ক্যানাডা, ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দ্বারা আনীত হতে হবে। তারপর বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্মকর্তা প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দানে ২৯টি দেশ অনুরোধ জানাতে কাজ করেন।

১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ও এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ। – এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করে বাংলাদেশ। মে মাসে ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের তথ্যবিষয়ক কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।

 

২। কিভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়ঃ

শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে সরকারি কর্মসূচি

১. বাংলাদের সরকার প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে সরকার। সরাকার প্রধান রাত বারটা এক মিনিটে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদের সম্মানে ফুলের শুভেচ্ছা প্রদান করেন। তার পর পরই সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তাগন ফুলের শুভেচ্ছা প্রদান করে। এরপর বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা কর্মীগন ফুলের শুভেচ্ছা প্রদান করে। এই ভাবে একটানা দুপুর পর্যান্ত দেশ প্রেমিক জনগন শহীদ মিনারে ফুলের শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়।

২. দিনের শুরুতে বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়, স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী নগ্ন পায়ে প্রভাত ফেরীতে অংশ গ্রহন করেন। বর্তমানে শুধু ছাত্র ছাত্রী নয়, বিভিন্ন পেশার লোকজন নগ্ন পায়ে প্রভাত ফেরীতে অংশ গ্রহন করেন। প্রভাত ফেরীল পর শহীদ মিনারে ভাষা শহীদের সম্মানে ফুলের শুভেচ্ছা প্রদান করেন।

৩। বর্তমানে এই দিন উপলক্ষে আজিমপুর কবরস্থানের মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদে শহিদদের রুহের মাগফিরাতের জন্য ফাতেহা পাঠ ও কোরান খতমের আয়োজন করা হয়। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের জন্য বিশেষ প্রর্থনা করা হয়।

৪. এই দিনে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনসমূহে সঠিক নিয়মে ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তারা নিজ নিজ উদ্ধগে প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি শহীদ মিনারে ফুল দেন।

৫. দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, আর্কাইভস্ ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্রন্থমেলা, আলোচনাসভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আবৃত্তি ও রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

৭. দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপসমূহ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাজনক স্থানসমূহে বাংলা বর্ণমালা সংবলিত ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়। সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ একুশের অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে।

৭. বিদেশে অবস্থানরত বাংলা ভাষাভাসি এই দিন উপলক্ষে আমাদের মতই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে থাকে।

৩। স্বাধীনতা দিবসঃ

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালায়। অপারেশন সার্চলাইট নামে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়, অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড চালানো হয়। এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী শাষকদের আদেশে পরিচালিত, যা ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত অপারেশন ব্লিটজ এর পরবর্তি অনুষঙ্গ। অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ এর মধ্যে সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর (২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তত্কালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়। ঘোষণাটি নিম্নরুপঃ

“এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক’।

২৬শে মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েক’জন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান প্রথম শেখ মুজিব এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। পরে ২৭শে মার্চ  তৎকালীন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার[] মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ঘোষণাপত্রটির ভাষ্য নিম্নরুপঃ

“আমি,মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি”।

আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।

শেখ মুজিবর রহমানের সরকার একটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এৰং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার।

এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধের পর আমাদের প্রিয় মাতৃভূলি স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

৪। এই মহান দিনের কর্মসুচি কি?

১. বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস বেশ বর্ণাঢ্য ভাবে উদযাপন করা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে উদযাপন শুরু হয়। ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়।

২. সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন রঙের পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়।

৩. জাতীয় স্টেডিয়ামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ, কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও শরীরচর্চা প্রদর্শন করা হয়।

৪. এই দিনটিতে পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করে। বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে।

৫.  বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে এই পদক প্রদান করা হয়। এই পুরস্কার জাতীয় জীবনে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের নাগরিক এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে প্রদান করা হয়ে থাকে।

৫। বিজয় দিবস

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর। এই দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানী বাহিনী এই দিনে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না। আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ।

পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।

এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।

লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ৯ মাস ব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত প্রায় সকল দেশ স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। তাই ১৯৭২ সাল থেকে ১৬ ডিসেম্বর তাখিখ থেকে বাংলাদেশে বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। 

৬। কিভাবে এই দিনটি উদযাপন করা হয়ঃ

১. বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস বেশ বর্ণাঢ্য ভাবে উদযাপন করা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে উদযাপন শুরু হয়।

২. সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন রঙের পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়।

৩. এই দিন উপলক্ষে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকে,।

৪. এই দিনটিতে পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করে। বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে।

৫. এছাড়া দেশের প্রতিটি উপজেলায় বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ, বিভিন্ন খেলা ধুলার আয়োজন করা হয়, বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।

৭। এইভাবে দিবস পালনের যৌক্তিকতাঃ

উপরের তিনটি দিবস সম্পর্কে আলোচনা না করলেও চলত কারন এই বিষয় আমরা সকলেই কম বেশী অবগত আছি। এই দিবসগুলি কি ভাবে উদযাপিত হইয়তে তার সাক্ষি আমরা নিজেরাই। এই দিবসগুলি যেভাবে পালিত হয়, তা আমাদের সংবিধান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। যে কেউ এই সংবিধান অনুসরন করে এই দিবসগুলি উদযাপন করতে পাবরে। কেউ বাধা প্রদান করলে সে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে গন্য হবে। কিন্তু যদি আপনি ইসলামি দৃষ্টি কোন থেকে দেখেন, তা হলে যে পদ্ধতি দিন পালন করা হয় তা জায়েয নয়। এই পদ্ধতি দিবস পালন করা ইসলামি শরীয়তে কোন বিধান নাই। প্রথমত আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতিত কেউ কোন দিবস পালনের বিধান দিতে পারে না। তবে লেখার শুরুতে দেয়া পাঁচটি শর্ত অনুসরণ করে দিবস পালন করা জায়েয আছে। পাঠকদের স্বরণ করা জন্য শর্তগুলি আবার উল্লেখ করছি।

১। কুনআন সুন্নাহে নাই, এমন দিবস উদযাপন করাকে ইবাদাত মনে করা যাবে না।

২। দিবস উদযাপন করার ক্ষেত্রে কুফরি আকিদা প্রষোণ করা করা যাবে না।

৩। দিবস উদযাপন করার সময় ইসলাম বহির্ভূত হারাম কাজ লিপ্ত হওয়া যাবে না।

৪। দিবস উদযাপন করার ক্ষেত্রে অর্থের অপচয় করা যাবে না।

৫। বিধর্মীদের অনুসকরণে কোন দিবস উদযাপন করা যাবে না।

আমাদের এই শর্তগুলির মাঝে প্রথম শর্তটি এই তিন দিবস উদযাপনের মাঝ নেই। আমাদের কেউ এই দিবস উদযাপন করাকে ইবাদাত মনে করে না। দিবস পালন সম্পর্কে আমাদের সমাজে কোন কুফরি আকিদাও প্রচলিত নাই। কিন্তু দিবস উদযাপনের এক পর্যায় শির্কি কাজে লিপ্ত হতে হয়।  যেমনঃ শহীদ মিনারে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা এবং অর্পণের সময় সম্মান দেয়ার জন্য সোজা দাড়িয়ে থাক। পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের সম্মান প্রদর্ষিত হয়েছে মনে করা যাবে না। এই সময় বিষয় ইসলামি শরীয়ত বিরোধী। তৃতীয় শর্তটি আমাদের মাঝে ব্যপক হারে লঙ্গিত হয়। এই সকল দিবসগুলি উদযাপন করার সময় নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ সাথে সর্বত্র  যা পর্দার মত ফরজ হুকুমকে উপেক্ষা করে থাকে। দিবস পালনের জন্য ইসলাম বহির্ভূত হারাম কাজ লিপ্ত হওয়া যাবে না। চতুর্থ শর্তও উপেক্ষা করা হয় চরমভানে। আমদের দেশে দিবস উদযাপন করার ক্ষেত্রে প্রচুর অর্থের অপচয় করা হয়। যা একটি হারাম কাজ। পঞ্চম শর্ততে বলা হয়েছে, “বিধর্মীদের অনুসকরণে কোন দিবস উদযাপন করা যাবে না”। কিন্তু খোজ নিয়ে দেখা যাবে দিবস পালনের সকল নিয়ম কানুনের প্রথম ও প্রধান উদ্ধাক্তা হল বিধর্মী সমাজ।

ইসলাম ধর্মে অনেক স্বরনীয় দিবস আছে। যেমনঃ হিজরের দিন, মক্কা বিজয়ের দিন, বরদের যুদ্ধের দিন, ওহুদ যুদ্ধের দিন, হুদাইবিয়ার সন্ধির দিন, বাইয়াতে রিদওয়ানের দিন ইত্যাদি। এই মহান দিনগুলোর কোনটিই মুসলিমগন কোন দিবসই উদযাপন করে না। কারন তাদের নিকট আল্লাহ প্রদত্ত সকল দিনই সমান, যদি না কুনআন সুন্নহ কোন দিনকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান না করে। যেমন দু্ই ঈদের দিন, আরাফার দিন, হজ্জের সময় মিনার দিনগুলী ইত্যাদি সম্পর্ক কুরআন সু্ন্নাহ বর্ণিত আছে বিধায় এই দিনগুলির বিশেষ মর্জাদা আছে।

৮। দেশ ও ভাষার জন্য জীবন দানকারী শহিদদের মর্যাদাঃ

আলোচনায় এ পর্যায় দেখব, যারা আমাদের দেশের জন্য বা ভাষার জন্য জীবন দিলেন ইসলামে তাদের মর্জাদা কত টুকু। তার পর নির্ধারণ করব তাদের জন্য আমাদের কি করণীয়। তাদের মর্যাদা সম্পর্কে কুরআন সুন্নাহ কি বলে একটু দেখে আসি। মহান আল্লাহ বলেন,

*يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اصْبِرُواْ وَصَابِرُواْ وَرَابِطُواْ وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ*

অর্থঃ হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। [ সুরা ইমরান ৩:২০০ ]

সাহল ইবনু সা’দ সায়ি’দী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও এর উপর যা কিছু আছে তাঁর চাইতে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চিবুক পরিমাণ জায়গা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত কিছুর চাইতে উত্তম।’ (সহিহ বুখারী ২৬৯৩ ইফাঃ)

সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রাহে একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চাইতেও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সাওয়াব জারী থাকবে। এবং তার (শহীদসুলভ) রিযক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফিতনাসমূহ থেকে নিরাপদে থাকবে। (সহিহ মুসলিম ৪৭৮৫ ইফাঃ)

মূসা ইবন আনাস তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যুদ্ধে আসার সময়ে কিছুলোক, মদীনায় ফেলে এসেছে (যারা অপারগতার কারণে তোমাদের সঙ্গে বের হতে পারিনি)। তোমরা যতদূর সফর করেছ, যা কিছু যুদ্ধে ব্যয় করেছ এবং যে পথ অতিক্রম করেছ, তারা এসব কাজে তোমাদের সঙ্গে রয়েছে। একথা শুনে অনেকে প্রশ্ন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তারা তো মদীনায় অবস্থান করছে এমতাবস্থায় কী করে আমাদের সঙ্গে থাকবে? তিনি উত্তর করলেন, তাদেরকে তো অপারগতা (যুক্তিসঙ্গত কারণ) আটকে রেখেছে। (আবু দাউদ ২৫০০)

১৬৭৩। হাসান ইবনু আলী খাললাল (রহঃ) … উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর আযাদকৃত দাস আবূ সালিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে মিম্বরে আরোহন করে বলতে শুনেছি, তোমরা আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশংকায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রুত একটি হাদীস আমি তোমাদের থেকে গোপন রেখেছিলাম। পরে আমার খেয়াল হলো যে তা তোমাদের কাছে বর্ণনা করি যাতে প্রত্যেকেই নিজ নিজ বিবেচনা মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, অন্য কোন স্থানে এক হাজার দিন অতিবাহিত করা অপেক্ষা আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা প্রদান উত্তম। (সুনানে তিরমিজী ১৬৭৩)

আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছিঃ “চারটি আমলের ছোয়াব মৃত্যুর পরেও জারি থাকেঃ (১) যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে সীমান্ত পাহারারত থেকে মৃত্যু বরণ করে। (২) যে ব্যক্তি (মানুষকে) এলেম শিক্ষা দেয়। তদানুযায়ী যা আমল করা হয় তার ছোয়াব তার জন্যে জারি থাকে। (৩) যে ব্যক্তি সাদকায়ে জারিয়া করে। যতদিন ঐ সাদকার উপকার জারি থাকে। ততদিন ছোয়াবও তার জন্যে জারি থাকবে। (৪) যে ব্যক্তি নেক সন্তান রেখে যায়, যে তার জন্যে দু’আ করে।” (সহিহ তারগির ওয়াত তাহরিক হাদিস নম্বর ১১৪)

মন্তব্যঃ উপরের হাদিস থেকে বুঝা যায় সিমান্ত পাহারাদার কারির মর্যাদা অনেক বেশী। আর যে সীমান্ত পাহারা দিতে গিয়ে মৃত বরণ করেন তার মর্যাদা আরও বেশী। কাজেই যারা আমাদের দেশ রক্ষার জন্য বা ভাষা রক্ষার জন্য জীবন দান করেছেন তারা শহীদের মর্যাদা পাবেন। যদিও শহীদ হওয়া বিষয়টি  তাদের নিয়তের উপর নির্ভর করে। আমরা তাদের নিয়ত সম্পর্কে প্রশ্ন তুলবা। আমাদের সাধারণ কথা হবে যারা দেশের জন্য জীবন দিবেন তারা শহীদ। এ সম্পর্কে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। এই ভাবে যারা অপরের কল্যানে জীবন দিল, তারা পরকালে তাদের পূর্ণ প্রতিফল পাবেন বলে আশা করছি। কিন্তু পরকালে বিশ্বাসি হয়ে হারাম কাজের মাধ্যমে কিভাবে তাদের মঙ্গল কামনা করতে পারি। তাই এই বিষয়টির উপর সঠিক জ্ঞান অর্জণ করে তাদের করণীন নির্ধারণ করা উচিত। এ পর্যায় শহীদদের জন্য করণীয় নির্ধারণ করব।

৯। আমাদের করণীয়ঃ

আমাদের দিবস পালনের প্রধান লক্ষ হল শহীদের স্বরণ করা। তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা। অথচ আমরা যারা শরীয়ত বিরোধী কাজের মধ্যমে তাদের স্বরণ করছি। এতে করে শহীদদের কোন উপকার হবে না বরং তাদের ও আমাদের উভয়ের ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের সকলের উপকারের জন্য আমাদের দুটি করণীয় কাজ আছে।

১। সঠিক ইবাদতে মাধ্যমে মঙ্গল কামনা করা

২। প্রচলিত হারাম কাজ ত্যাগ করে মঙ্গল কামনা করা

 

১০। সঠিক ইবাদতে মাধ্যমে মঙ্গল কামনা করাঃ

যারা আমাদের দেশের জন্য বা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শরীয়ত সম্মত ইবাদাত করা। মৃত্যু বরণকারী ব্যক্তির জন্য যেখাবে সওয়াব পৌছান যায়, ঠিক সেভাবেই আমাদের দেশ রক্ষার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নিকট সওয়াব পৌছাতে হবে। এ সম্পর্কে সপ্তম পরিচ্ছেদ :  বিদ’আত উৎপত্তির কারণ শীরনামের শেষে দিকে আলোচনা করা হয়েছে স্বরণ করার জন্য শুধু শীরনামগুলো উল্লেখ করছি। মাইয়াতের জন্য সওয়াব পৌছারন সুন্নাহ সম্মত আমলগুলো হলোঃ

১। বেশী বেশী দু‘আ করা

 ২। দান-ছাদকাহ করা, বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করা

 ৩। মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম  পালন

 ৪। হজ্জ বা উমরাহ করা

 ৫. মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করা

 ৬। মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করা

 ৭। মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা

৮। মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা

৯। ঋণ পরিশোধ করা

১০। ক্ষমা প্রার্থনা করা

১১। মান্নত পূরণ করা

১২। মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা

১৩। কবর যিয়ারত করা

১৪। ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা

১৫। কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা

১৬। মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া

১১প্রচলিত হারাম কাজ ত্যাগ করে মঙ্গল কামনা করাঃ

শহীদদের মঙ্গল কামনার্থে আমরা যারা হারাম কাজের মাধ্যমে তাদের স্বরণ করছি, তাদের উচিত হারাম পরিত্যাগ করা। এখনে দুটি দিক আছে, একটি দিক হল আমাদের সংবিধানিক বাধ্য বাধকতা আর অপরটি হল ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টি ভঙ্গি। বাংলাদের একটি মুসলিম দেশ। এখানের অধিকাংশ লোকই মুসলিম। মুসলিম দেশ হলেও আমাদের দেশে কুরআন সুন্নাহ আইন অনুসারে পরিচালিত হয় না। আমাদের দেশের নিজেস্ব সংবিধান আছে। কুরআন সুন্নাহর আইনের সাথে আমাদের সংবিধানের অনেক বিষয় বিরোধ আছে। তাই আমারা যারা এই দিবসগুলি পালন করি তারা দুটিভাগে বিভক্ত।

১। যারা সরকারে থেকে আইন তৈরি করে

২। সাধারণ জনগন যারা আইন মান্য করে  

১২। যারা সরকারে থেকে আইন তৈরি করেঃ

যারা সরকারে থেকে দেশ পরিচারণা করেন ও আইন তৈরি করে তারা সংবিধানিক বাধ্য বাধকতার জন্য এই সব দিবসে নানান ইসলাম বিরোধী কাজে অংশ গ্রহন করতে বাধ্য হয়। তাদের অনেকেরই ইসলামি শরীয়ত সম্পর্কে তেমন জ্ঞান নাই। অজ্ঞতার কারনেই এই কাজ করে থাকে। প্রথমত তাদের দায়ীত্ব ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জণ করা। তার পর তার হাতে তাথা ক্ষমতা প্রয়োগ করে সঠিক শরীয়ত সম্মত আইন পাশ করা। এই কাজটি যদি কাজটি যদি সরকারে থাকে আইন প্রনেতাগণ করে থাকের তা হলে আর কোন সমস্যাই থাকবে না।

১৩।  সাধারণ জনগন যারা আইন মান্য করেঃ

আমাদের সাধারণ জনগনও ইসলামি শরীয়ত সম্পর্কে বেখবর। তাদের শির্ক বিদআত সম্পর্কে তেমন জ্ঞন নেই। প্রথমে তাদের এই সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে হবে। যখন তারা সঠিক জ্ঞান পাবে, তখন আর এই শির্কি বিদআতী কাজ করবে না। যদিও ক্ষমতার অভাবে সে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে এই সকল অনইসলামিক আজ দুর করতে পাবরেনা। কিন্তু সে অন্তত নিজেকে এ থেকে দুরা রাখতে পারবে আশা করা যায়। সাধারণ জনগন সবার ক্ষমতা সমান নয়। কাজেই যার যার ক্ষমতা অনুসারে জনগনকে এই খারাপ কাজ থেকে দুরে রাখবে। সাধ্য অনুসারে ভাল কাজ করা ও খারাপ থেকে নিজে বাঁচা ও জনগনকে বাঁচান হল জিহাদ। মুসলিম সমাজে সংঘটিত অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুসারে ফরজ হয়ে থাকে। ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুসারে মন্দ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানের পদক্ষেপ নিতে হবে। নিজের হাদিসটি লক্ষ করুনঃ

তারিক ইবনু শিহাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ঈদের সালাত এর পুর্বে মারওয়ান ইবনু হাকাম সর্বপ্রথম খুতবা প্রদান আরম্ভ করেন। তখন এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, খুতবার আগে হবে সালাত। মারওয়ান বললেন, এ নিয়ম রহিত করা হয়েছে। এতে আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, ‘এ ব্যাক্তি তো কর্তব্য পালন করেছে’। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ যদি অন্যায় কাজ দেখে, তাহলে সে যেন হাত দ্বারা এর সংশোধন করে দেয়। যদি এর ক্ষমতা না থাকে, তাহলে মুখের দ্বারা, যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তর দ্বারা (উক্ত কাজকে ঘূণা করবে), আর এটাই ঈমানের নিম্নতম স্তর। (সহিহ মুসলিম ইঃ ফাঃ হাদিস নম্বর ৮৩)।

এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, সহজ পন্থা ও পদ্ধতিতে কাজ সম্ভব হলে কঠোর পদ্ধতি অবলম্বনের প্রয়োজন নেই। কোন মন্দ কাজ আদেশ নিষেধের মাধ্যমে সমাধান করা গেলে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন নেই। আবার প্রতিবাদের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব হলে শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিহত করার দরকার নেই। আদেশ, নিষেধ এবং প্রতিবাদের জন্য স্বভাবতই ক্ষমতা ও যোগ্যতার প্রয়োজন। সমাজে ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা সম্পন্ন লোক জনই আদেশ, নিষেধ এবং প্রতিবাদের জন্য দায় বদ্ধ থাকে। সবার ক্ষমতা ও যোগ্যতার সমান নয়। তাই সবাইকে আমভাবে মহান আল্লাহ নিকট জবাব দীহি করতে হবে না। একটি উদাহরণ দিলে আশা করি ব্যাপরটি পরিস্কার হবে। প্রতিটি সমাজে কিছু কর্তৃত্বশীল লোক থাকে যাদের আমরা সমাজপতি বা সমাজের নেতা বা সমাজের মুরুব্বী হিসাবে জানি।  উক্ত সমাজের অধিকাংশ লোক তাদের আদেশ নিষেধ মেনে চলে। কোন অন্যায় দেখা দিলে, তারা সবাই মুখের দ্বারা নিষেধ করতে পারেন। আশা করা যায় সমাজে সকলে তাদের নিষেধ মেনে চলবে, মেনে না চললেও সমাজ তাকে যে ক্ষমতা প্রদান করেছে, তার জন্য ঐ আইন অমান্য কারিও তার কোন ক্ষতি করতে পাবরেনা। সমাজপতিগণ যদি কোন অন্যায় কাজ করে তবে সমাজের একজন সাধারন লোক মুখের দ্বারা এর প্রতিবাদ করলে তার প্রতি জুলুম চলে আসতে পারে। তাই সে সমাজপতিদের ঐ অন্যায় কাজের প্রতিবাদ মুখে না করে অন্তরে ঘৃনা করবে।

        অপর পক্ষে রাষ্ট্রের নিকট এমন ক্ষমায় আছে যার বলে সে সমাজপতি ও সাধারণ দুজনেরই বিচার করতে পাবরেন। এ জন্য যারা সমাজে ও রাষ্ট্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকরী তাদের সকলের উপর ফরজ হল, বল প্রয়োগে ঐ অন্যায় কারের প্রতিকার করা। কারন তাদের জন্য এ দায়িত্ব পালন করা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফরজে আইন। দায়িত্ব ও ক্ষমতা যত বেশি, আদেশ ও নিষেধের দায়িত্বও তত বেশি। আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয়ও তাদের তত বেশি। কারন আল্লাহ বলেন,

الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ

অর্থঃ যাদেরকে আমি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে বা ক্ষমতাবান করলে তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয়, সৎকার্যে নির্দেশ দেয় এবং অসৎকার্যে নিষেধ করে। আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারে।  (সূরা হজ্জ ২২:৪১)।

এ জন্য এ বিষয়ে শাসকগোষ্ঠী, প্রশাসনের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ, আঞ্চলিক প্রশাসকবর্গ, বিচারকবর্গ, আলিমগণ, বুদ্ধিজীবিবর্গ ও সমাজের অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের দায়িত্ব অন্যদের চেয়ে বেশি, তাদের জন্য আশংকাও বেশি। তাদের মধ্যে কেউ যদি দায়িত্ব পালন না করে নিশ্চুপ থাকেন তবে তার পরিণতি হবে কঠিন ও ভয়াবহ। অনুরূপভাবে নিজের পরিবার, নিজের অধীনস্থ মানুষগণ ও নিজের প্রভাবাধীন মানুষদের আদেশ-নিষেধ করা গৃহকর্তা বা কর্মকর্তার জন্য ফরজে আইন। কারণ আল্লাহ তাকে এদের উপর ক্ষমতাবান ও দায়িত্বশীল করেছেন এবং তিনি তাকে এদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “সাবধান! তোমরা সকলেই অভিভাবকত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। মানুষদের উপর দায়িত্বপ্রাপ্ত শাসক বা প্রশাসক, অভিভাবক এবং তাকে তার অধীনস্ত জনগণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। বাড়ির কর্তাব্যক্তি তার পরিবারের সদস্যদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিভাবক এবং তাকে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ি ও তার সন্তান-সন্ততির দায়িত্বপ্রাপ্তা এবং তাকে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)।

কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, অন্যায় ও অসৎকর্মের প্রতিবাদ করা শুধুমাত্র এদেরই দায়িত্ব। বরং তা সকল মুসলমানের দায়িত্ব। যিনি অন্যায় বা গর্হিত কর্ম দেখবেন তার উপরেই দায়িত্ব হয়ে যাবে সাধ্য ও সুযোগমত তার সংশোধন বা প্রতিকার করা। সমাজের কোন দায়িত্ব সম্পন্ন লোক না হলেও যদি অন্যায় কাজের বাধা প্রদান করার ক্ষমাতা থাকে তবে ঐ টুকু ক্ষমাতাই প্রয়োগ করতে হবে। যদি সমাজে কোন মুমিনের অবন্থা এমন হয় যে, অন্যায় ও অসৎকর্মের প্রতিবাদ করলে তার উপর জুলুম হতে পারে, হবে সে ঐ অন্যায় ও অসৎকর্মের করবে না। কিন্ত মনে রাখতে হবে ঐ অন্যায় ও অসৎ কর্ম সে ঘৃনার চোখে দেখবে। মুমিনের এ সাধ্যাতীত কাজের জন্য মহান আল্লাহর নিকট জবাব দিহী করতে হবে না। কারন তিনি কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না। মহান আল্লাহ বলেন,

لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ

অর্থঃ আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। (সুরা বাকারা ২:২৮৬)।

সার কথা হলঃ প্রত্যেক মুমিনেরই দায়িত্ব হলো, অন্যায় দেখতে পেলে সাধ্য ও সুযোগ মত তার প্রদিবাদ করা। যদি হাত বা মুখের দ্বারা প্রতিবাদ, পরিবর্তন বা সংশোধন করতে না পারে তবে সে এই অন্যায়কে অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। অন্তরের ঘৃনার মাধ্যমে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রত্যেক মুমিনের উপরেই ফরজ। অন্যায়ের প্রতি হৃদয়ের বিরক্তি ও ঘৃণা না থাকা ঈমান হারানোর লক্ষণ। আমরা অগণিত পাপ, কুফর, হারাম ও নিষিদ্ধ কর্মের সয়লাবের মধ্যে বাস করি। বারংবার দেখতে দেখতে আমাদের মনের বিরক্তি ও আপত্তি কমে যায়। তখন মনে হতে থাকে, এ তো স্বাভাবিক বা এ তো হতেই পারে। পাপকে অন্তর থেকে মেনে নেওয়ার এ অবস্থাই হলো ঈমান হারানোর অবস্থা। তবে অন্তরে ঘৃনা প্রকাশের একটি লক্ষন হলঃ যে অন্যায় কাজটি হতে দেখল তা হাত বা মুখ দিয়ে বাধা না দিতে পেরে এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই আমারা যদি কোন অন্যায় কাজ হাত বা মুখ দিয়ে বাধা না দিতে পারি তবে এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাব চাই তা গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে হোক। মুখতাসার যাদুল মাআদে ইমাম ইবনে কাইউম এই জিহাদের তিনটি স্থর উল্লেখ করেছেন।

১. সক্ষম হলে (ক্ষমতাবান) শক্তি প্রয়োগ করে তা রুখে দেয়া।

২. শক্তি প্রয়োগে অক্ষম হলে মুখের কথা দিয়ে তা রুখবে।

৩. তাতেও সক্ষম না হলে অন্তর দিয়ে তাকে (কাজকে) ঘৃণা করবে এবং তা প্রতিহত করার চিন্তায় ব্যাপৃত থাকবে।  (মুখতাসার যাদুল মাআদ, প্রকাশনায় ওয়াহিদা লাইব্রারী ঢাকা, পৃষ্ঠ নম্বর-১৯৩)।

১৪। যারা সরকারে থেকে আইন তৈরি করে, তাদের প্রতি আইন মন্যকারী জনগনের দায়িত্ব কি?

মুসলিম কোন শ্বাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করা যাবে না। কুরআন সুন্নাহ দ্বারা পরিচালিত কোন ইসলামি রাষ্ট্রের শ্বাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করা যাবে না, তাই সে যতবড় জুলুমবাজ হোকনা কেন। কিন্ত সে যদি ইসলামি কোন ফরজ হুকুর পালন না করতে আদেশ প্রদান করে অথবা বাধা প্রদান করে।

উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অচিরেই তোমাদের এমন সব নেতা নিযুক্ত করা হবে, যারা ভাল মন্দ উভয় প্রকারের কাজ করবে। সুতরাং যে লোক তার মন্দ কাজের প্রতিবাদ করবে, সে ব্যক্তি তার দায়িত্ব হতে মুক্ত হয়ে গেল। আর যে ব্যক্তি কাজটিকে খারাপ জানল সে ব্যক্তিও নিরাপদে থাকল। কিন্তু যে ব্যক্তি উক্ত কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করল এবং সে কাজে আনুগত্য করল সে তার দ্বারা পাপে নিমজ্জিত হল। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এমতাবস্থায় আমরা কি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? তিনি বললেন, না। যতক্ষণ যাবৎ তারা সালাত পড়ে। না, যতক্ষণ যাবৎ তারা সালাত পড়ে। (সহিহ মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৭১)।

আলোচ্য হাদীছগুলো দ্বারা বুঝা যায় যে, আমীর বা নেতার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে যদি তিনি ন্যায়ের আদেশ দেন তাহলে। আর যদি তিনি অন্যায়ের বা পাপের কাজে নির্দেশ দেন তাহলে তার কথা মান্য করা যাবে না। যদি তিনি প্রকাশ্য কুফুরী বা শিরকী কাজে জড়িয়ে পড়েন তাহলে তার আনুগত্য করা বৈধ হবে না। তখন তার আনুগত্য থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হবে। যদিও আমরা বর্তমান সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাপের কাজেও স্বীয় দল বা নেতার আদেশ মান্য করি। মনে রাখতে হবে। ফরজ হুকুমের বিরোধীতার কারনে সে আর মুসলীম থাকেনা, তখন দ্বীনদার আলেমেদের ফতোয়া মোতাবেক শ্বাসকদের সাথে জিহাদ করা ফরজ হয়ে যায়। অর্থাৎ যুদ্ধ ছাড়া ইসলামি শরীয়ত পালনের আর বিকল্প পথ থাকেনা তখনই বাধ্য হয়ে দেশের শীর্ষ স্থানীয় দ্বীনদার আলিমেদের ফতোয়া মোতাবেক জিহাদের চুড়ান্ত স্তর সশস্ত্র যুদ্ধের মত কঠিন সিদ্ধান্ত  নেয়ার অনুমতি দিবেন।

জিহাদ আহবানের একমাত্র অধিকার রাখে মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। যখন রাষ্ট্রপ্রধান কোন সম্প্রদায়কে রাষ্ট্র বা ধর্ম রক্ষার জন্য জিহাদের নির্দেশ প্রদান করবেন, তখন সকলের জন্য জিহাদে অংশ গ্রহন ফরজ হয়ে যাবে। তাহলে আলেম সমাজ কেন ও কিভাবে জিহাদের ডাক দিবন?

কথা হলো রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রপ্রধান জুলুমবাজ হলেও জিহাদ করা যাবে না কিন্তু রাষ্ট্র যখন ইসলামি ফরজ হুকুম মানতে বাধা প্রধান করে তখন আলেমগণ জিহাদ বাধ্যতামূলক হবার ব্যাপারে ফতোয়া দিতে পারেন যেমনঃ

) তাতারদের বিরুদ্ধে শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহর রাহিমাহুল্লাহ ফতোয়া যেখানে তিনি তাতারদের বিরুদ্ধে কতালকে ওয়াজিব বলেছেনমুসলিমদের নিকট থেকে তাতারগণ ক্ষমাতা নিয়ে মুসলিমদের উপর শুধু জুলুম করে তাদের ইসলম ধর্মের হুকুম মানতেও বাধা দিয়েছিল। ঠিক তখই শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহসহ (রাহিমাহুল্লাহ) বহু আলেম তাদের সাথে জিহাদ করাকে ওয়াজিব বলে মত দেন।

) ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভির রাহিমাহুল্লাহ ফতোয়া, যেখানে তিনি হিন্দুস্তানকে দারুল হারব ঘোষণা করেছেন

গ) রাশিয়ান হানাদার এবং কমিউনিসমের দ্বারা প্রভাবিত ও কমিউনিসম অনুযায়ী জীবনযাপন করা আফগান মুরতাদদের বিরুদ্ধে আফগান মুসলিম জনতার প্রতিরোধ ও যুদ্ধকে শরীয়ত সম্মত জিহাদ বলে ঘোষনা। রাবেতা আল-আলাম ইসলামি এর (ফিক্বহ কাউন্সিল ১৪০৮ হিজরির ২৪-২৮শে সফর) দশম অধিবেশনে আফগান যুদ্ধকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং এই কাউন্সিলের সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে মুসলিম বিশ্বের সাধারন জনতা ও সরকারগুলোর প্রতি নৈতিক, আর্থিক, রাজনৈতিক ও বস্তুগত সম্ভাব্য সব উপায়ে আফগান জিহাদকে সমর্থন করার আহবান জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ঘ) সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধ ফিলিস্তিনী মুসলিম ভাইদের প্রতিরোধ জিহাদ হিসাবে সকল মুসলিম আলেমদের নিকট স্বীকৃত। তাদের দেশ দখল করার পর সরকার না থাকা সত্বেও জিহাদ চালিয়েছিল।

মন্তব্যঃ নিজ দেশে মুসলিম শ্বাসকের বিরুদ্ধে ধর্ম রক্ষার জন্য যুদ্ধের করা একটি স্পর্স কাতর বিষয় তাই এ ব্যাপার মুহাক্কিক আলেম বা যারা দেশের শীর্ষ স্থানীয় আলেম তাদরে সকলের পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। একা একা ফতোয়া জানি করে মুসলিমদের জাল মাল হালাল করার ফতোয়া জারি করা হারাম। এই ক্ষেত্র মনে রাখতে হবে রাসূল (সাঃ) একটি হাদিস তিনি বলেন, “কালিমা সাক্ষ্য দান কারিকে হত্যা করা যাবে না”।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment