সালাম ফিরানোর পর জিকরসমূহ
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন
ক। ফরজ সালাতের পর দোয়াঃ
সালাতে পরে দোয়া করাও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানি। অনেক বলে থাকেন সালাতের পর দোয়া করা বিদআত তাদের এই কথা সহিহ হাদিস বিরোধী। তার দলীল সুনানে তিরমিজতে বর্ণিত এই সহিহ হাদিসটি।
আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন দু’আ বেশী কবুল হয়? তিনি বললেন, শেষ রাতের মাঝে আর ফরয সালাতের পরে। (সুনানে তিরমিযী ৩৪৯৯ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ (সময়ের) দু‘আ (আল্লাহর কাছে) বেশী শ্রুতি হয়। তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যের (দু‘আ) এবং ফরয সলাতের শেষের দু‘আ। (মিসকাতুল মাসাবীহ ৯৬৮, আত তারগীব ১৬৪৮)
আলোকে দেখা যায় রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফরয সালাতের পর দোয়া কবুল হয়। তার অর্থ হল, নিশ্চয় ফরজ সালাতের পর দোয়া আছে। হ্যা, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ সালাতের পর দোয়া করেছেন কিন্তু তিনি এককভাবে দোয়া করছেন। ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত দোয়া করেন নাই। এই জন্য দেখা যায় সালাতে পর বর্ণিত প্রায় প্রতিটি দোয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন। তবে তিনি সকলকে সঙ্গে নিয়ে দুআটি করলে বহু বচন ব্যবাহার করতেন। সহিহ হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরনোর পর তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলেছেন। তিনি যদি এটা সকলকে নিয়ে করতেন তাহলে নাস্তাগফিরুল্লাহ (আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলতেন।
খ। ফরজ সালাত পর কি দোয়া করতেন?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ সালাতের পর সাহাবীদের দিকে ফিরে বসাতেন। এই সময় তিনি বিভিন্ন তাসবিহ তাহলিল আদায় করতেন। তার আমল সম্পর্কে প্রায় সকল হাদিসের গ্রন্থে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে রেফারেন্সসহ কিছু সহিহ হাদিস তুলে ধরলাম। যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল সম্পর্কে একটা সঠিক ধারনা চলে আসে।
সালাতের পরে জিকির সম্পর্কে মহান আল্লাহর ঘোষনাঃ
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلاَةَ فَاذْكُرُواْ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا**
অতঃপর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। (সুরা নিসা ৪:১০৩)
মহান আল্লাহ আরও বলেন,
*وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَأَدْبَارَ السُّجُودِ*
রাত্রির কিছু অংশে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং নামাযের পরেও। (সুরা ক্বাফ ৫০:৪০)
১. উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর নিজ জায়গায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বসে থাকার কারণ আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত। তবে আমার মনে হয় সালাতের পর মহিলাগণ যাতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পান। (সহিহ বুখারী ৮৪৯ তাওহীদ, ৮০৮ ইফাঃ)
২. ইয়াযীদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি (একদা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করেছিলেন। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করলেন তখন তিনি মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসলেন। (সুনানে নাসাঈ ১৩৩৭)
৩. উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতের সালাম ফিরাবার পর শুধু এ দু‘আটি শেষ করার পরিমাণ সময় অপেক্ষা করতেন, ‘‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ (অর্থা- হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিসকাতুল মাসাবি ৯৬০, সহিহ মুসলিম )
৪. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের সমাপ্তি তাঁর তাকবীর দ্বারা বুঝতে পারতাম। (সহিহ মুসলিম ১১৯৪ ইফাঃ, সুনানে নাসাঈ ১৩৩৮)
৫. ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাকবীর শুনে আমি বুঝতে পারতাম সালাত শেষ হয়েছে। (সহহি বুখারী ৮০২ ইফাঃ)
৬. সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার সালাত শেষ করতেন, তখন তিনবার ইস্তিগফার- করতেন এবং বলতেনঃ
*اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ*
(আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া যাল-জালালে ওয়াল ইকরাম)।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময় এবং আপনার থেকেই শান্তি। আপনি বরকতময় হে মহিমান্বিত ও সম্মানিত। ওয়ালীদ বলেন, আমি আওযাঈকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইস্তিগফার কেমন করে? তিনি বললেন, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ বলবে। (সহিহ মুসলিম ১২১২ ইফাঃ, সহিহ বুখারি ৮০৪ ইফাঃ, সুনানে আবু দাউদ ১৫১৩ ইফাঃ)
৭. মুগীর ইবনু শু’বার আযাদকৃত গোলাম ওয়াররাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনু শুবা (রহঃ) মুআবিয়া (রাঃ) কে লিখে পাঠালেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে সালাম ফিরিয়ে বলতেন,
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল-মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানেআ লিমা আতায়তা, ওলা মুতিয়া লিমা মানা’তা, ওলা লা য়ানফাঊ যাল-জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।)
অর্থঃ আল্লাহ ভিন্ন কোন মাবুদ নেই। তিনি একক। তার কোন অংশীদার নেই। রাজঁত্ব তাঁরই এবং প্রশংসাও তাঁরই প্রাপ্য। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও, তা কেউই রোধ করতে পারে না। এবং তুমি যা রোধ কর, তা কেউ করতে পারে না। আর কোন সম্পদশালীর সস্পদ তোমার আযাব থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবে না”। (সহিহ বুখারী ৫৮৯১ ইফাঃ, সহিহ মুসলিম ১২১৬, ১২১৭ ইফাঃ, আবু দাউদ ১৫০৫ ইফাঃ, সুনানে নাসাঈ ১৩৪২)
৮. কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক ফরয সালাতের পর এমন কিছু যিকর আছে, যা পাঠকারী কিংবা আমলকারী কখনও বঞ্চিত হবে না। তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আলহামদুলিল্লাহ ও চৌত্রিশবার আল্লাহু আকবর। (সহিহ মুসলিম ১২২৭ ইফাঃ, সুনানে নাসাঈ ১৩৪৯)
৯. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি প্রত্যেক সালাতের পর সুবহানাল্লাহ তেত্রিশবার, আলহামদুলিল্লাহ তেত্রিশবার ও আল্লাহু আকবার তেত্রিশবার বলবে এই হল নিরানব্বই-আর একশত পূর্ণ করার জন্য বলবেঃ
*لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ*
তার পাপ সমুহ মাফ হয়ে যাবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মত হয়। (সহিহ মুসলিম ১২৩০ ইফাঃ)
১০। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালের সালাতর পর একশত বার সুবহানাল্লাহ এবং একশত বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনাসম হয়। (সুনানে নাসাঈ ১৩৫৪)
১১. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। গরীব সাহাবীগণ বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! ধনশীল লোকেরা তো উচ্চমর্যাদা ও চিরস্থায়ী নিয়ামত নিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তা কেমন করে? তারা বললেনঃ আমরা যে রকম সালাত আদায় করি, তারাও সে রকম সালাত আদায় করেন। আমরা সে রূপ জিহাদ করি, তারাও সেরূপ জিহাদ করেন এবং তারা তাদের অতিরিক্ত মাল দিয়ে সাদাকা-খায়রাত করেন; কিন্তু আমাদের কাছে সম্পদ নেই। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের একটি আমল বাতলে দেবনা, যে আমল দ্বারা তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের মর্যাদা অর্জন করতে পারবে, আর তোমাদের পরবর্তীদের চাইতে এগিয়ে যেতে পারবে, আর তোমাদের অনুরূপ আমল কেউ করতে পরেবে না, কেবলমাত্র যারা তোমাদের ন্যায় আমল করবে তারা ব্যতীত। সে আমল হলো তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ১০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার আলহামদুলিল্লাহ্ এবং ১০ বার আল্লাহ আকবর পাঠ করবে। (সহিহ বুখারি ৫৮৯০ ইফাঃ)
১২. ইব্ন উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কে মসজিদে অবস্থানকালে একই বৈঠকে নিম্নোক্ত দু’আটি একশত বার পাঠ করতে-গণনা করেছিঃ
* الرَّحِيمُ ابُ أَنْتَ التَّوَّإِنَّكَ عَلَىَّ وَتُبْ لِي اغْفِرْ رَبِّ*
(রাব্বিগফিরলি ওয়াতুব ‘আলাইয়া ইন্নাকা আনতাত্ তাওয়াবুর রহীম)।
অর্থঃ প্রভূ হে! আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার তাওবাহ কবুল করে নাও, তুমিই তাওবাহ কবুলকারী ও দয়ালু। (আবু দাউদ ১৫১৬ ইফাঃ)
১৩. মুআয ইব্ন জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ধরে বলেন, হে মুআয! আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ভালবাসি। অতঃপর তিনি বলেনঃ আমি তোমাকে কিছু ওসয়িত করতে চাই। তুমি নামায পাঠের পর এটা কোন সময় ত্যাগ করবে না। তা হলঃ
( اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ )
“আল্লাহুম্মা আইন্নী আলা যিক্রিকা ওয়া শুক্রিকা ওয়া হুস্নি ইবাদাতিক।”
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন।
অতঃপর মুআয (রাঃ) আল-সানাবিহী কে এরূপ ওসীয়ত করেন এবং আল-সানাবিহী আবু আব্দুর রহমান কে এরূপ ওসীয়ত করেন। (আবু দাউদ ১৫২২ ইফাঃ)
১৪. উক্বা ইব্ন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক নামাযের পর সূরা ফালাক ও সূরা নাস্ পাঠের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। (সুনানে আবু দাউদ ১৫২৩ ইফাঃ, সুনানে তিরমিযী ২৯০৩, সুনান নাসাঈ ১৩৩৯)।
১৫. আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফজরের সালাত শেষে কোনরূপ কথা বলার আগে পা ফিরানোর পূর্বে যদি কেউ দশবার
*( ءٍ قَدِيرٌلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْ)*
এই দু’আটি পাঠ করে তবে তার জন্য দশটি নেকী লেখা হবে, তার দশটি গুনাহ মাফ করা হবে, তার দশটি দরজা বুলন্দ করা হবে, পুরো দিনটিতে সে সব ধরনের অপছন্দনীয় বিষয় থেকে হেফাযতে থাকবে, শয়তান থেকে প্রহরা দিয়ে রাখা হবে, আর শিরক ব্যতীত অন্য কোন গুনাহ তাকে ঐ দিন কাবু করতে পারবে না। (সুনানে তিরমিজি ৩৪৭৪ ইফাঃ)
১৬. মুসলিম ইব্ন আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমার পিতা প্রত্যেক সালাতের পর বলতেন,
«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ»،
তারপর আমিও তা বলতে থাকলে আমার পিতা আমাকে বললেন, হে বৎস! তুমি এ দোয়াগুলো কার কাছ থেকে শিখেছ? আমি বললাম, আপনার কাছ থেকে। তারপর তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রত্যেক) সালাতের পর এই দোয়াগুলো বলতেন। (সুনানে নাসাঈ ১৩৪৭ মান সহিহ)
১৭. আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে, সে ব্যক্তির জন্য তার মৃত্যু ছাড়া আর অন্য কিছু জান্নাত প্রবেশের পথে বাধা হবে না। (হাদিস সম্ভার ১৪৬৩, নাসাঈ কুবরা ৯৯২৮, ত্বাবারানী ৭৫৩২, সহীহুল জামে ৬৪৬৪)
১৮. উবাই ইবন কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আবুল মুনযির! তোমার নিকট কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বাপেক্ষা সম্মানিত? আমি বলি, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল এ বিষয়ে অধিক অবগত। তিনি তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, যে আবুল মনযির! তোমার নিকট কুরআনের কোন আয়তটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ? রাবী বলেন, তখন আমি বলি, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল্ হায়উল কায়্যূম…….। এতদশ্রবণে তিনি আমার বক্ষে হাত চাপড়িয়ে (মহব্বতের সাথে) বলেনঃ হে আবুল মুনযির! তোমার জন্য কুরআনের ইল্ম বরকতময় হোক। (আবু দাউদ ১৪৬০, ও সহিহ মুসলিম)।
১৯. জাবির ইব্ন সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাতের পর তাঁর সালাতের স্থানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন। (সুনানে নাসাঈ ১৩৪৭ মান সহিহ)
১৪.৭.১০। বিত্রের নামায থেকে সালাম ফিরানোর পরের জিকিরঃ
«سُبْحَانَ المَلِكِ القُدُّوسِ»
অর্থঃ কতই না পবিত্র-মহান সেই মহাপবিত্র বাদশা!”
তিনবার বলতেন; তৃতীয়বারে উচ্চস্বরে টেনে টেনে পড়ে বলতেন,
« [رَبِّ الْمَلاَئِكَةِ وَالرُّوحِ]».
অর্থঃ যিনি ফেরেশতা ও রূহ -এর রব।
দলিলঃ আমর ইবনু ইয়ায়ীদ (রহঃ) … আব্দুর রহমান ইবনু আবযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল আলা” “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা বিতবের সালাত আদায় করতেন। আর যখন সালাম ফিরাতেন, তখন তিনবার سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ পড়তেন এবং তৃতীয়বার উচ্চস্বরে পড়তেন। (সুনানে নাসাঈ ১৭৩৫)
মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ’লা (রহঃ) … আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা” “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” তিলাওয়াত করতেন। তারপর যখন সালাম ফিরাতেন তখন তখন سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ এবং তৃতীয়বারে سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ উচ্চস্বরে পড়তেন। (সুনানে নাসাঈ ১৭৩৬)
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
One thought on “সালাম ফিরানোর পর জিকরসমূহ”