সবর অর্জনের তেইশটি পদ্ধতিঃ দ্বিতয় পর্ব

সবর অর্জনের তেইশটি পদ্ধতিঃ দ্বিতয় পর্ব

 ৪। দুনিয়ার বিপদ থেকে হাশরের দিনের বিপদ খুবই ভয়াবহ ভেবে সবর অর্জন করাঃ

মানুষ যতই বিপদ বিপদ বলে চেচামিচি করুকনা কেন হাশরের দিনের বিপদের ভয়াবহতা সামনে কিছুই না। এ সম্পর্কে আল্লাহ প্রদত্ত বর্ণনাগুল গভীর মনযোগ সহকারে বুঝে বুঝে বার বার পড়ে মনের মাঝে গেথে রাখতে হবে। আর বিপদের সামনে এগুল তুলে ধরলে সবর অর্জন করা সহজ হবে। হাশরের দিনের কিছু চিত্র কুরআন ও হদিস থেকে তুলে ধরছি যাতে বিপদে এগুল অধ্যায়ন করে সবর করা যায়।

 আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّڪُمۡ‌ۚ إِنَّ زَلۡزَلَةَ ٱلسَّاعَةِ شَىۡءٌ عَظِيمٌ۬ (١) يَوۡمَ تَرَوۡنَهَا تَذۡهَلُ ڪُلُّ مُرۡضِعَةٍ عَمَّآ أَرۡضَعَتۡ وَتَضَعُ ڪُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَهَا وَتَرَى ٱلنَّاسَ سُكَـٰرَىٰ وَمَا هُم بِسُكَـٰرَىٰ وَلَـٰكِنَّ عَذَابَ ٱللَّهِ شَدِيدٌ۬ (٢)

হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুধের শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয় বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব সুকঠিন। [ সুরা হাজ্জ্ব ২২:১-২ ]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেনঃ

 فَإِذَا نُفِخَ فِى ٱلصُّورِ نَفۡخَةٌ۬ وَٲحِدَةٌ۬ (١٣) وَحُمِلَتِ ٱلۡأَرۡضُ وَٱلۡجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً۬ وَٲحِدَةً۬ (١٤) فَيَوۡمَٮِٕذٍ۬ وَقَعَتِ ٱلۡوَاقِعَةُ (١٥) وَٱنشَقَّتِ ٱلسَّمَآءُ فَهِىَ يَوۡمَٮِٕذٍ۬ وَاهِيَةٌ۬ (١٦) وَٱلۡمَلَكُ عَلَىٰٓ أَرۡجَآٮِٕهَا‌ۚ وَيَحۡمِلُ عَرۡشَ رَبِّكَ فَوۡقَهُمۡ يَوۡمَٮِٕذٍ۬ ثَمَـٰنِيَةٌ۬ (١٧) يَوۡمَٮِٕذٍ۬ تُعۡرَضُونَ لَا تَخۡفَىٰ مِنكُمۡ خَافِيَةٌ۬ (١٨)

অর্থঃ অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে- একটি মাত্র ফুঁক। আর যমীন ও পর্বতমালাকে সরিয়ে নেয়া হবে এবং মাত্র একটি আঘাতে এগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সে দিন মহাঘটনা সংঘটিত হবে। আর আসমান বিদীর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সেদিন তা হয়ে যাবে দুর্বল বিক্ষিপ্ত। ফেরেশতাগণ আসমানের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে। সেদিন তোমার রবের আরশকে আটজন ফেরেশতা তাদের উর্ধ্বে বহন করবে। সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোন গোপনীয়তাই গোপন থাকবে না। (সূরা আল হাক্কাহ ৬৯:১৩-১৮)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেনঃ

إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنفَطَرَتۡ (١) وَإِذَا ٱلۡكَوَاكِبُ ٱنتَثَرَتۡ (٢) وَإِذَا ٱلۡبِحَارُ فُجِّرَتۡ (٣) وَإِذَا ٱلۡقُبُورُ بُعۡثِرَتۡ (٤) عَلِمَتۡ نَفۡسٌ۬ مَّا قَدَّمَتۡ وَأَخَّرَتۡ (٥)

অর্থঃ যখন আসমান বিদীর্ণ হবে। আর যখন নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে। আর যখন সমুদ্রগুলোকে একাকার করা হবে। আর যখন কবরগুলো উন্মোচিত হবে। তখন প্রত্যেকে জানতে পারবে, সে যা আগে পাঠিয়েছে এবং যা পিছনে রেখে গেছে। (সূরা ইনফিতার ৮২:১-৫)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেনঃ

 إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَوَٲقِعٌ۬ (٧) فَإِذَا ٱلنُّجُومُ طُمِسَتۡ (٨) وَإِذَا ٱلسَّمَآءُ فُرِجَتۡ (٩) وَإِذَا ٱلۡجِبَالُ نُسِفَتۡ (١٠) وَإِذَا ٱلرُّسُلُ أُقِّتَتۡ (١١) لِأَىِّ يَوۡمٍ أُجِّلَتۡ (١٢) لِيَوۡمِ ٱلۡفَصۡلِ (١٣) وَمَآ أَدۡرَٮٰكَ مَا يَوۡمُ ٱلۡفَصۡلِ (١٤) وَيۡلٌ۬ يَوۡمَٮِٕذٍ۬ لِّلۡمُكَذِّبِينَ (١٥)

অর্থঃ তোমাদেরকে যা কিছুর ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। যখন তারকারাজি আলোহীন হবে, আর আকাশ বিদীর্ণ হবে, আর যখন পাহাড়গুলি চূর্ণবিচূর্ণ হবে, আর যখন রাসূলদেরকে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত করা হবে; কান দিনের জন্য এসব স্থগিত করা হয়েছিল? বিচার দিনের জন্য। আর কিসে তোমাকে জানাবে বিচার দিবস কি? মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ! (সূরা আল মুরসালাত ৭৭:১৫)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেনঃ

 وَيَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡجِبَالِ فَقُلۡ يَنسِفُهَا رَبِّى نَسۡفً۬ا (١٠٥) فَيَذَرُهَا قَاعً۬ا صَفۡصَفً۬ا (١٠٦) لَّا تَرَىٰ فِيہَا عِوَجً۬ا وَلَآ أَمۡتً۬ا (١٠٧)يَوۡمَٮِٕذٍ۬ يَتَّبِعُونَ ٱلدَّاعِىَ لَا عِوَجَ لَهُ ۥ‌ۖ وَخَشَعَتِ ٱلۡأَصۡوَاتُ لِلرَّحۡمَـٰنِ فَلَا تَسۡمَعُ إِلَّا هَمۡسً۬ا (١٠٨)

অর্থঃ আর তারা তোমাকে পাহাড় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, আমার রব এগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন, তারপর তিনি তাকে মসৃণ সমতলভূমি করে দিবেন তাতে তুমি কোন বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না। সে দিন তারা আহ্বানকারীর (ফেরেশতার) অনুসরণ করবে। এর কোন এদিক সেদিক হবে না এবং পরম করুণাময়ের সামনে সকল আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না। (সূরা ত্বা-হা ২০:১০৫-১০৮)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেনঃ

 وَيَوۡمَ نُسَيِّرُ ٱلۡجِبَالَ وَتَرَى ٱلۡأَرۡضَ بَارِزَةً۬ وَحَشَرۡنَـٰهُمۡ فَلَمۡ نُغَادِرۡ مِنۡہُمۡ أَحَدً۬ا (٤٧) وَعُرِضُواْ عَلَىٰ رَبِّكَ صَفًّ۬ا لَّقَدۡ جِئۡتُمُونَا كَمَا خَلَقۡنَـٰكُمۡ أَوَّلَ مَرَّةِۭ‌ۚ بَلۡ زَعَمۡتُمۡ أَلَّن نَّجۡعَلَ لَكُم مَّوۡعِدً۬ا (٤٨) وَوُضِعَ ٱلۡكِتَـٰبُ فَتَرَى ٱلۡمُجۡرِمِينَ مُشۡفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَـٰوَيۡلَتَنَا مَالِ هَـٰذَا ٱلۡڪِتَـٰبِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً۬ وَلَا كَبِيرَةً إِلَّآ أَحۡصَٮٰهَا‌ۚ وَوَجَدُواْ مَا عَمِلُواْ حَاضِرً۬ا‌ۗ وَلَا يَظۡلِمُ رَبُّكَ أَحَدً۬ا (٤٩)

অর্থঃ আর যেদিন আমি পাহাড়কে চলমান করব এবং তুমি যমীনকে দেখতে পাবে দৃশ্যমান, আর আমি তাদেরকে একত্র করব। অতঃপর তাদের কাউকেই ছাড়ব না। আর তাদেরকে তোমার রবের সামনে উপস্থিত করা হবে কাতারবদ্ধ করে। (আল্লাহ তাআলা বলবেন) তোমরা আমার কাছে এসেছ তেমনভাবে, যেমন আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম; বরং তোমরা তো ভেবেছিলে আমি তোমাদের জন্য কোন প্রতিশ্রুত মুহূর্ত রাখিনি। আর আমলনামা রাখা হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখতে পাবে ভীত, তাতে যা রয়েছে তার কারণে। আর তারা বলবে, হায় ধ্বংস আমাদের! কী হল এ কিতাবের! তা ছোট-বড় কিছুই ছাড়ে না, শুধু সংরক্ষণ করে এবং তারা যা করেছে, তা হাজির পাবে। আর তোমার রব কারো প্রতি যুলম করেন না। (সূরা আল কাহাফ ১৮:৪৭-৪৯)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

وَنُفِخَ فِى ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِى ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَمَن فِى ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُ‌ۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخۡرَىٰ فَإِذَا هُمۡ قِيَامٌ۬ يَنظُرُونَ (٦٨) وَأَشۡرَقَتِ ٱلۡأَرۡضُ بِنُورِ رَبِّہَا وَوُضِعَ ٱلۡكِتَـٰبُ وَجِاْىٓءَ بِٱلنَّبِيِّـۧنَ وَٱلشُّہَدَآءِ وَقُضِىَ بَيۡنَہُم بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ (٦٩)

অর্থঃ আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। আর যমীন তার রবের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি যুলম করা হবে না। (সূরা যুমার ৩৯:৬৮-৬৯)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

 فَذَرۡهُمۡ يَخُوضُواْ وَيَلۡعَبُواْ حَتَّىٰ يُلَـٰقُواْ يَوۡمَهُمُ ٱلَّذِى يُوعَدُونَ (٤٢) يَوۡمَ يَخۡرُجُونَ مِنَ ٱلۡأَجۡدَاثِ سِرَاعً۬ا كَأَنَّہُمۡ إِلَىٰ نُصُبٍ۬ يُوفِضُونَ (٤٣) خَـٰشِعَةً أَبۡصَـٰرُهُمۡ تَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٌ۬‌ۚ ذَٲلِكَ ٱلۡيَوۡمُ ٱلَّذِى كَانُواْ يُوعَدُونَ (٤٤)

অর্থঃ অতএব তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা (বেহুদা কথায়) মত্ত থাকুক আর খেল-তামাশা করুক যতক্ষণ না তারা দেখা পায় সেদিনের, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হয়েছে। যেদিন দ্রুতবেগে তারা কবর থেকে বের হয়ে আসবে, যেন তারা কোন লক্ষ্যের দিকে ছুটছে অবনত চোখে। লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে! এটিই সেদিন যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা মাআরিজ, আয়াত ৪২-৪৪)

 এ সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিসঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের আভির্ভাব হবে। সে চল্লিশ-আমি জানি না চল্লিশ দিবস, না মাস, না বছর-অবস্থান করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম কে পাঠাবেন। তাকে দেখতে উরওয়া ইবনে মাসউদের মত মনে হবে। তিনি দাজ্জাল-কে খোজ করবেন ও হত্যা করবেন। এরপর মানুষ সাত বছর এমনভাবে কাটাবে যে দুজন মানুষের মধ্যে কোন শত্রুতা থাকবে না। এরপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উত্তর দিক থেকে হিমেল বায়ু প্রেরণ করবেন। যাদের অন্তরে অনু পরিমাণ ঈমান রয়েছে তারা সকলে এতে মৃত্যু বরণ করবে। ঈমানদার ও ভাল মানুষের কেহ বেঁচে থাকবে না। যদি তোমাদের কেহ পাহাড়ের সুরক্ষিত গুহায় প্রবেশ করে তাকেও এ বাতাস পেয়ে বসবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আরো শুনেছি যে, দুরাচারী মানুষগুলো অবশিষ্ট থাকবে পাখির মত দ্রুত আর বাঘের মত হিংস্র। তারা ভালকে ভাল হিসাবে জানবে না আর মন্দ-কে মন্দ মনে করবে না। শয়তান মানুষের আকৃতিতে তাদের কাছে এসে বলবে তোমরা ভাল কাজে সাড়া কেন দাও না? তারা বলবে তুমি আমাদের কী করতে বলো? সে তাদের মুর্তির উপাসনা করতে আদেশ করবে। তারা সুন্দর জীবনোপকরণ নিয়ে জীবন যাপন করবে। অতঃপর একদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। (তখন সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে) এরপর একদিন প্রচন্ড বৃষ্টি বর্ষিত হবে। এ বৃষ্টির কারণে মানুষের দেহগুলো উদ্ভিদের মত উত্থিত হবে। এরপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে তখন মানুষেরা দাড়িয়ে যাবে ও এদিক সেদিক তাকাতে থাকবে। তারপর বলা হবে হে মানব সকল! তোমাদের প্রতিপালকের দিকে আসো। তোমরা দাড়িয়ে যাও, তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, জাহান্নামীদের বের করে আনো। জিজ্ঞাসা করা হবে কত জন থেকে কত জন বের করে আনবো? উত্তর দেয়া হবে, প্রত্যেক হাজার থেকে নয় শত নিরানব্বই জনকে বের করে নাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেটিই এমন দিন যা শিশুদের বৃদ্ধ করে দেবে। আর এ দিনটিতে আল্লাহ তাআলা নিজ পায়ের গোছা উম্মুক্ত করবেন। (বর্ণনায় : মুসলিম হাদীস নং ২২৫৮)

সাহল ইবনে সাআদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিবসে মানুষকে সাদা পোড়ামাটি রংয়ের উদ্ভিদহীন একটি যমীনে একত্র করা হবে। যেখানে কারো জন্য কোন আলামত থাকবে না। (বর্ণনায়: মুসলিম, হাদীস নং ২১৫০)

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলতেন: কেয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ, খালি পায়ে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্র করা হবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুরুষ ও নারী সকলকে একত্র করা হবে আর একজন অপর জনের দিকে তাকাবে?  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে আয়েশা! সেদিন অবস্থা এমন ভয়াবহ হবে যে একজন অপর জনের দিকে তাকানোর ফুরসত পাবে না। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: হাউজে কাউসারে আমার উম্মত সমবেত হবে। আমি অনেক মানুষকে এমনভাবে তাড়িয়ে দেব যেমন একজনের উট অন্য জনের উটের পাল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমাদের তখন চিনবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যা, তোমাদের এমন কিছু আলামত আছে যা অন্যদের নেই। তোমরা আমার কাছে উপস্থিত হবে আর তোমাদের অজুর স্থানগুলো চকমক করতে থাকবে। তোমাদের একটি দলকে আমার থেকে দুরে সরিয়ে দেয়া হবে, তারা হাউজের কাছে পৌছতে পারবে না। সে সময় আমি বলব, হে আমার প্রভূ এরা আমার অনুসারী। তখন এক ফেরেশতা উত্তর দেবে, আপনি কি জানেন আপনার পরে তারা কি প্রচলন করেছে? (বর্ণনায়: মুসলিম)

৫। পরকাল কে পার্থিব জীবনের উপর স্থান দিলে সবর অর্জন সহজ হবেঃ 

পরকাল কে পার্থিব জীবনের উপর স্থান দিলে বিপদে আপদে সবর অর্জন করা সহজ হয়।  সকল কাজের পরিনামকে আখেরাত মুখি করা। কাজ করার আগে ভাবতে হবে আমার কাজ কত টুকু আখেরাত মুখি। যদি দেখি পার্থির লাভ আছে কিন্তু আমার পরকালেন ক্ষতি আছে। তখনস পার্থির স্বার্থকে বাদ দিয়ে পরকালের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। পরকাল কে পার্থিব জীবনের উপর স্থান দিলে আমাদের জন্য  পার্থির ত্যাগ করে সবর অর্জন করা সহজ হবে। মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ

**الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ*

অর্থঃ যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। [ সুরা বাকারা ২:১৫৬ ]

মানুষে সহজাত প্রবৃত্তি হল বৃহত্তম সার্থের জন্য ক্ষুদ্রতাম স্বার্থকে পরিত্যাগ করা। যদি মুমিন মুসলিমের দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে দুনিয়ার জীবন অস্থায়ী ও সামান্য সময়ের জন্য, আখেরাত চিরস্থায়ি তাহলে তার বালা মুসিবতে সবর করা খুবই সহজ হবে। কারন সে ভাবে এ পৃথিবীর কষ্ট অস্থায়ী ও সামান্য সময়ের জন্য এর শেষ আছে কাজেই সবর করি। কিন্তু আখেরাতের জীবন স্থায়ি সবর না করে উদ্ধ্যত বা অহংকার দেখানে স্থায় আজাবে আটকা পড়ব তাই সরব করাই শ্রেয়। কুরআনের যে আয়াতগুলি পার্থিব জীবন কে অস্থায়ি ও পরকালকে স্থায়ি বলে উল্লেক করেছে তা বার বার বুঝে বুঝে তিলওয়াত করে পরকালের জীবন স্থায়ী এ কথাটি প্রতি ঈমান বৃদ্ধি করতে হবে এবং সবর অর্জন করা সহজ হবে । তাই পূর্বের ন্যায় এখানে এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত উল্লখ করছি। মহান আল্লাহ  বলেনঃ

 بَلۡ تُؤۡثِرُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا (١٦) وَٱلۡأَخِرَةُ خَيۡرٌ۬ وَأَبۡقَىٰٓ (١٧)

অর্থঃ বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও। অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। [ সুরা আ’লা ৮৭:১৬-১৭ ]

মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

أَلۡهَٮٰكُمُ ٱلتَّكَاثُرُ (١) حَتَّىٰ زُرۡتُمُ ٱلۡمَقَابِرَ (٢) كَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُونَ (٣)

অর্থঃ প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে, এমনকি, তোমরা কবরস্থানে পৌছে যাও। এটা কখনও উচিত নয়। তোমরা সত্ত্বরই জেনে নেবে। [ সুরা তাকাসুর ১০২:১-৩ ]

মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ

**اللّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاء وَيَقَدِرُ وَفَرِحُواْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِي الآخِرَةِ إِلاَّ مَتَاعٌ*

অর্থঃ আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা রুযী প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। তারা পার্থিব জীবনের প্রতি মুগ্ধ। পার্থিবজীবন পরকালের সামনে অতি সামান্য সম্পদ বৈ নয়। [ সুরা রা’দ ১৩:২৬ ]

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জীবনের উদাহরণে বলেনঃ “পার্থিব জীবন ঐ পথিকের ন্যায়, যে গ্রীষ্মে রৌদ্রজ্জ্বল তাপদগ্ধ দিনে যাত্রা আরম্ভ করল, অতঃপর দিনের ক্লান্তময় কিছু সময় একটি গাছের নীচে বিশ্রাম নিল, ক্ষণিক পরেই তা ত্যাগ করে পুনরায় যাত্রা আরম্ভ করল।” (মুসনাদে ইমাম আহমাদঃ২৭৪৪)।

৬। জান্নাতের লাভের আশা করলে সবর অর্জন সহজ হবে।

মানুষ তার আশার মাধ্যমে বেচে থাকে।  বর্তমান বিপদকে শুধু ভবিষ্যৎ এর আশায় মেনে নেয়।  একজন ছাত্রের কথা ভাবুন কত কষ্ট, কত শ্রম, কত রাত জাগা, কত সবর শুধু মাত্র তার ভবিষ্যৎ এর শাস্তির আশায়। অথচ তার শাস্তি মাত্র ৫০/৬০ বছরের জীবনের জন্য। চির স্থায়ী জান্নাতের আশায় তা হলে কত কষ্ট, কত শ্রম, কত সবর করা উচিৎ। যদি এভাবে আমরা জান্নাতের কথা ভাবতে থাকি তবে জান্নাতে আশায় দুনিয়ার কষ্টকে সহজে মেনে নিতে পারব। কারন সবাই বড় সার্থের জন্য ছোট ছোট কুরবানী করতে পারে। জান্নাত সম্পর্কে আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলি স্বরণ করলে দুনিয়ার সকল নেক কাজে অথবা বিপদে সবর করা সহজ হবে। তাই আল্লাহ কিঝু প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছি।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

**وَمَنْ يَأْتِهِ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَأُولَئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا*

অর্থঃ আর যারা তাঁর নিকট আসবে মুমিন অবস্থায়, সৎকর্ম করে তাদের জন্যই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা। (সূরা ত্বহা ২০:৭৫)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

**يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ *

অর্থঃ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত। (সূরা আল মুজাদালাহ ৫৮:১১)

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 لَـٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّہُمۡ لَهُمۡ غُرَفٌ۬ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٌ۬ مَّبۡنِيَّةٌ۬ تَجۡرِى مِن تَحۡتِہَا ٱلۡأَنۡہَـٰرُ‌ۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ‌ۖ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ (٢٠):

অর্থঃ কিন্তু যারা নিজদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে কক্ষসমূহ যার উপর নির্মিত আছে আরো কক্ষ। তার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত। এটি আল্লাহর ওয়াদা; আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না। (সূরা যুমার ৩৯:২০)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

يَـٰعِبَادِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمُ ٱلۡيَوۡمَ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ (٦٨) ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِـَٔايَـٰتِنَا وَڪَانُواْ مُسۡلِمِينَ (٦٩) ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ أَنتُمۡ وَأَزۡوَٲجُكُمۡ تُحۡبَرُونَ (٧٠) يُطَافُ عَلَيۡہِم بِصِحَافٍ۬ مِّن ذَهَبٍ۬ وَأَكۡوَابٍ۬‌ۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُ‌ۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَـٰلِدُونَ (٧١) وَتِلۡكَ ٱلۡجَنَّةُ ٱلَّتِىٓ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ (٧٢) لَكُمۡ فِيہَا فَـٰكِهَةٌ۬ كَثِيرَةٌ۬ مِّنۡهَا تَأۡكُلُونَ (٧٣)

অর্থঃ হে আমার বান্দাগণ, তোমাদের আজ কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না। তোমরা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং তোমরা আজ্ঞাবহ ছিলে। জান্নাতের প্রবেশ কর তোমরা এবং তোমাদের বিবিগণ সানন্দে। তাদের কাছে পরিবেশন করা হবে স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র এবং তথায় রয়েছে মনে যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়। তোমরা তথায় চিরকাল অবস্থান করবে। এই যে, জান্নাতের উত্তরাধিকারী তোমরা হয়েছ, এটা তোমাদের কর্মের তথায় তোমাদের জন্যে আছে প্রচুর ফল-মূল, তা থেকে তোমরা আহার করবে। [ সুরা যূখরুফ ৪৩:৬৮-৭৩ ]

জান্নাতে খাবার দাবার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

وَٱلسَّـٰبِقُونَ ٱلسَّـٰبِقُونَ (١٠) أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلۡمُقَرَّبُونَ (١١) فِى جَنَّـٰتِ ٱلنَّعِيمِ (١٢) ثُلَّةٌ۬ مِّنَ ٱلۡأَوَّلِينَ (١٣) وَقَلِيلٌ۬ مِّنَ ٱلۡأَخِرِينَ (١٤) عَلَىٰ سُرُرٍ۬ مَّوۡضُونَةٍ۬ (١٥) مُّتَّكِـِٔينَ عَلَيۡہَا مُتَقَـٰبِلِينَ (١٦) يَطُوفُ عَلَيۡہِمۡ وِلۡدَٲنٌ۬ مُّخَلَّدُونَ (١٧) بِأَكۡوَابٍ۬ وَأَبَارِيقَ وَكَأۡسٍ۬ مِّن مَّعِينٍ۬ (١٨) لَّا يُصَدَّعُونَ عَنۡہَا وَلَا يُنزِفُونَ (١٩) وَفَـٰكِهَةٍ۬ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ (٢٠) وَلَحۡمِ طَيۡرٍ۬ مِّمَّا يَشۡتَہُونَ (٢١) وَحُورٌ عِينٌ۬ (٢٢) كَأَمۡثَـٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ (٢٣) جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ (٢٤) لَا يَسۡمَعُونَ فِيہَا لَغۡوً۬ا وَلَا تَأۡثِيمًا (٢٥) إِلَّا قِيلاً۬ سَلَـٰمً۬ا سَلَـٰمً۬ا (٢٦) وَأَصۡحَـٰبُ ٱلۡيَمِينِ مَآ أَصۡحَـٰبُ ٱلۡيَمِينِ (٢٧) فِى سِدۡرٍ۬ مَّخۡضُودٍ۬ (٢٨) وَطَلۡحٍ۬ مَّنضُودٍ۬ (٢٩) وَظِلٍّ۬ مَّمۡدُودٍ۬ (٣٠) وَمَآءٍ۬ مَّسۡكُوبٍ۬ (٣١) وَفَـٰكِهَةٍ۬ كَثِيرَةٍ۬ (٣٢) لَّا مَقۡطُوعَةٍ۬ وَلَا مَمۡنُوعَةٍ۬ (٣٣) وَفُرُشٍ۬ مَّرۡفُوعَةٍ (٣٤) إِنَّآ أَنشَأۡنَـٰهُنَّ إِنشَآءً۬ (٣٥) فَجَعَلۡنَـٰهُنَّ أَبۡكَارًا (٣٦) عُرُبًا أَتۡرَابً۬ا (٣٧) لِّأَصۡحَـٰبِ ٱلۡيَمِينِ (٣٨) ثُلَّةٌ۬ مِّنَ ٱلۡأَوَّلِينَ (٣٩) وَثُلَّةٌ۬ مِّنَ ٱلۡأَخِرِينَ (٤٠)

অর্থঃ আর অগ্রগামীরাই অগ্রগামী। তারাই সান্নিধ্যপ্রাপ্ত। তারা থাকবে নিআমতপূর্ণ জান্নাতসমূহে। বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে, আর অল্পসংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। স্বর্ন© ও দামী পাথর খচিত আসনে! তারা সেখানে হেলান দিয়ে আসীন থাকবে মুখোমুখি অবস্থায়। তাদের আশ-পাশে ঘোরাফেরা  করবে চির কিশোররা, পানপাত্র, জগ ও প্রবাহিত ঝর্ণার শরাবপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে। তা পানে না তাদের মাথা ব্যথা করবে, আর না তারা মাতাল হবে। আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়েঅ। আর পাখির গোশ‌ত নিয়ে, যা তারা কামনা করবে। আর থাকবে ডাগরচোখা হূর। যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা। এগুলো তারা যে আমল করত তার পুরস্কার। তারা সেখানে শুনতে পাবে না কোন বেহুদা কথা, এবং না পাপের কথা; শুধু এই বাণী ছাড়া, সালাম, সালাম। আর ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তারা থাকবে কাঁটাবিহীন কুলগাছের নিচে, আর কাঁদিপূর্ণ কলাগাছের নিচে, আর বিস্তৃত ছায়ায়, আর সদা প্রবাহিত পানির পাশে, আর প্রচুর ফলমূলে, যা শেষ হবে না এবং নিষিদ্ধও হবে না। (তারা থাকবে) সুউচ্চ শয্যাসমূহে; নিশ্চয় আমি হূরদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করব। অতঃপর তাদেরকে বানাব কুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়সী। ডানদিকের লোকদের জন্য। তাদের অনেকে হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে। আর অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। (সূরা আল ওয়াকিয়া ৫৬:১০-৪০)

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجۡرَ مَنۡ أَحۡسَنَ عَمَلاً (٣٠) أُوْلَـٰٓٮِٕكَ لَهُمۡ جَنَّـٰتُ عَدۡنٍ۬ تَجۡرِى مِن تَحۡتِہِمُ ٱلۡأَنۡہَـٰرُ يُحَلَّوۡنَ فِيہَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ۬ وَيَلۡبَسُونَ ثِيَابًا خُضۡرً۬ا مِّن سُندُسٍ۬ وَإِسۡتَبۡرَقٍ۬ مُّتَّكِـِٔينَ فِيہَا عَلَى ٱلۡأَرَآٮِٕكِ‌ۚ نِعۡمَ ٱلثَّوَابُ وَحَسُنَتۡ مُرۡتَفَقً۬ا (٣١)

অর্থঃ যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, নিশ্চয় আমি এমন কারো প্রতিদান নষ্ট করব না, যে সুকর্ম করেছে। এরাই তারা, যাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাতসমূহ, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে চুড়ি দিয়ে এবং তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু সিল্কের সবুজ পোশাক। তারা সেখানে (থাকবে) আসনে হেলান দিয়ে। কী উত্তম প্রতিদান এবং কী সুন্দর বিশ্রামস্থল। (সূরা আল কাহফ ১৮:৩০-৩১)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

 مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِى وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَ‌ۖ فِيہَآ أَنۡہَـٰرٌ۬ مِّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٍ۬ وَأَنۡہَـٰرٌ۬ مِّن لَّبَنٍ۬ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُ ۥ وَأَنۡہَـٰرٌ۬ مِّنۡ خَمۡرٍ۬ لَّذَّةٍ۬ لِّلشَّـٰرِبِينَ وَأَنۡہَـٰرٌ۬ مِّنۡ عَسَلٍ۬ مُّصَفًّ۬ى‌ۖ وَلَهُمۡ فِيہَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٲتِ وَمَغۡفِرَةٌ۬ مِّن رَّبِّہِمۡ‌ۖ كَمَنۡ هُوَ خَـٰلِدٌ۬ فِى ٱلنَّارِ وَسُقُواْ مَآءً حَمِيمً۬ا فَقَطَّعَ أَمۡعَآءَهُمۡ (١٥)

অর্থঃ পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে? [ সুরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৫ ]

জান্নাতের তার সঙ্গী হবে হুর এ সম্পর্ক আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَعِندَهُمۡ قَـٰصِرَٲتُ ٱلطَّرۡفِ عِينٌ۬ (٤٨) كَأَنَّہُنَّ بَيۡضٌ۬ مَّكۡنُونٌ۬ (٤٩)

অর্থঃ তাদের কাছে থাকবে আনতনয়না, ডাগরচোখা। তারা যেন আচ্ছাদিত ডিম। (সূরা সাফফাত ৩৭: ৪৮-৪৯

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

هَـٰذَا ذِكۡرٌ۬‌ۚ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مَـَٔابٍ۬ (٤٩) جَنَّـٰتِ عَدۡنٍ۬ مُّفَتَّحَةً۬ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٲبُ (٥٠) مُتَّكِـِٔينَ فِيہَا يَدۡعُونَ فِيہَا بِفَـٰكِهَةٍ۬ ڪَثِيرَةٍ۬ وَشَرَابٍ۬ (٥١) ۞ وَعِندَهُمۡ قَـٰصِرَٲتُ ٱلطَّرۡفِ أَتۡرَابٌ (٥٢) هَـٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِيَوۡمِ ٱلۡحِسَابِ (٥٣) إِنَّ هَـٰذَا لَرِزۡقُنَا مَا لَهُ ۥ مِن نَّفَادٍ (٥٤)

অর্থঃ এটি এক স্মরণ, আর মুত্তাকীদের জন্য অবশ্যই রয়েছে উত্তম নিবাস- চিরস্থায়ী জান্নাত, যার দরজাসমূহ থাকবে তাদের জন্য উন্মুক্ত। সেখানে তারা হেলান দিয়ে আসীন থাকবে, সেখানে তারা বহু ফলমূল ও পানীয় চাইবে। আর তাদের নিকটে থাকবে আনতনয়না সমবয়সীরা। হিসাব দিবস সম্পর্কে তোমাদেরকে এ ওয়াদাই দেয়া হয়েছিল। নিশ্চয় এটি আমার দেয়া রিয্‌ক, যা নিঃশেষ হবার নয়। (সূরা সাদ ৩৮:৪৯-৫৪)

জান্নাতের সূখ-শান্তি হবে স্থায়ী। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

**وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا لَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّا ظَلِيلًا،**

অর্থঃ আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা হবে স্থায়ী। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র সঙ্গীগণ এবং তাদেরকে আমি প্রবেশ করাব বিস্তৃত ঘন ছায়ায়। (সূরা নিসা ৪:৫৭)

 এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদীসঃ

১। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে আর নামাজ কায়েম করবে ও রোযা পালন করবে আল্লাহর উপর দায়িত্ব হলো, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সে ব্যক্তি তার জন্ম ভূমিতে বসে থাকুক বা আল্লাহর পথে জিহাদ করুক (উভয় অবস্থাতে সে জান্নাতের অধিকারী হবে) সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি এ সুসংবাদটি মানুষকে দেব না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: অবশ্যই জান্নাতে একশ স্তর রয়েছে বিভিন্ন মর্যাদার। যা আল্লাহ সে সকল লোকদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছে। এক একটি মর্যাদার ব্যপ্তি হবে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যকার দুরত্বের সম পরিমাণ। যখন তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করবে তখন তোমরা জান্নাতুল ফেরদাউস চাবে। কারণ এটা জান্নাতের মধ্যবর্তী ও সুউচ্চ মর্যাদার স্থান। এর উপর রয়েছে দয়াময় আল্লাহর আরশ। (বর্ণনায় : বুখারী)

২। আবু সায়ীদ আল খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জান্নাতের কক্ষে অবস্থানরত জান্নাতবাসীরা অন্যান্য জান্নাতবাসীদের দেখবে। যেমন তোমরা পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে অস্তগামী নক্ষত্রসমূহকে দেখতে পাও। তাদের পরস্পরের মর্যাদার ভিন্নতা সত্বেও তোমরা দেখতে পাবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়ার রাসূলাল্লাহ! রাসূলদের এই যে মর্যাদা রয়েছে তাতে অন্য কেহ কি অভিষিক্ত হতে পারবে? তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্বার শপথ ঐ সকল মানুষেরা সেই মর্যাদা পাবে যারা আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও রাসূলদের সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)

৩। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: জান্নাতবাসীরা জান্নাতে খাবে, পান করবে কিন্তু তারা থুথু ফেলাবে না, প্রসাব করবে না, পায়খানা করবে না, বমি করবে না। এ কথা শুনে সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, তাহলে খাবার দাবার কোথায় যাবে? তিনি বললেন: ঢেকুর হয়ে মৃগনাভীর সুগন্ধ নিয়ে বের হয়ে যাবে। যেভাবে শাস-প্রশ্বাস নেয়া হয়, এভাবেই জান্নাতবাসীরা আল্লাহ তাআলার তাসবীহ ও তাহমীদ করতে থাকবে।  (বর্ণনায় : মুসলিম)

৪। আবু সায়ীদ আল খুদরী রা. থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলা জান্নাতবাসীদের বলবেন: হে জান্নাতবাসীগণ! তারা বলবে, উপস্থিত হে প্রভূ, সৌভাগ্য ও কল্যাণতো আপনারই হাতে। তারা বলবে, তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছো? তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা কেন সন্তুষ্ট হবো না? আপনি আমাদের এমন নেয়ামত ও সূখ-শান্তি দিয়েছেন যা কখনো অন্য কাউকে দেননি। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি কি তোমাদের এরচেয়ে উত্তম কোন কিছু দেব? তখন তারা বলবে, হে প্রতিপালক! যা দিয়েছেন তার চেয়ে আবার উত্তম কোন জিনিষ আছে কী? আল্লাহ তাআলা বলবেন, আজ থেকে আমার সন্তুষ্টি তোমাদের উপর স্থায়ী হয়ে গেল। আর কোন দিন তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবো না। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)

 জাহান্নামের চিরস্থায়ী আজাবের তুলনা দুনিয়ার বিপদ খুবই সামন্য মনে করাঃ

জাহান্নামের শাস্তি হবে চিরস্থায়ী।  দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী তার আজাব-গজব, বালা-মুসিরত, বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট সবই ক্ষনস্থায়ী।  অপর পক্ষে আখেরাত চিরস্থায়ী তার দুঃখ বেদনা বালা মুসিরত সবই চিরস্থায়ী।  কাজেই বৃহত্তর স্বার্থের জন্য দুনিয়ার আজাব-গজব, বালা-মুসিরত, বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট সবর করতে হবে চিরস্থায়ী শান্তির আশায়।  দুনিয়ার কষ্টের তুলনা জাহান্না কতটা ভয়াবহ? এর উত্তর প্রদানে যে উদাহরণ টানা হোকনা কেন। বাস্তবতা কেউ তুলে ধরতে পাবরেনা । কাজেই জাহান্নামের স্বরণই দুনিয়ার আজাব-গজব, বালা-মুসিরত, বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট এর সময় সবর অর্জনে সাহায্য করতে পারে।  তাই আসুন এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদিস বুঝে বুঝে পড়ি।  আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 إِنَّ ٱلۡمُجۡرِمِينَ فِى عَذَابِ جَهَنَّمَ خَـٰلِدُونَ (٧٤) لَا يُفَتَّرُ عَنۡهُمۡ وَهُمۡ فِيهِ مُبۡلِسُونَ (٧٥) وَمَا ظَلَمۡنَـٰهُمۡ وَلَـٰكِن كَانُواْ هُمُ ٱلظَّـٰلِمِينَ (٧٦) وَنَادَوۡاْ يَـٰمَـٰلِكُ لِيَقۡضِ عَلَيۡنَا رَبُّكَ‌ۖ قَالَ إِنَّكُم مَّـٰكِثُونَ (٧٧) لَقَدۡ جِئۡنَـٰكُم بِٱلۡحَقِّ وَلَـٰكِنَّ أَكۡثَرَكُمۡ لِلۡحَقِّ كَـٰرِهُونَ (٧٨)

নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে স্থায়ী হবে।  তাদের থেকে আযাব কমানো হবে না এবং তাতে তারা হতাশ হয়ে পড়বে।  আর আমি তাদের উপর যুলম করিনি; কিন্তু তারাই ছিল যালিম। তারা চিৎকার করে বলবে, হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদেরকে শেষ করে দেন। সে বলবে, নিশ্চয় তোমরা অবস্থানকারী। অবশ্যই তোমাদের কাছে আমি সত্য নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই ছিলে সত্য অপছন্দকারী। (সূরা যুখরুফ ৪৩:৭৪-৭৮)

তিনি আরো বলেনঃ

 وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَهُمۡ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقۡضَىٰ عَلَيۡهِمۡ فَيَمُوتُواْ وَلَا يُخَفَّفُ عَنۡهُم مِّنۡ عَذَابِهَاۚ كَذَٲلِكَ نَجۡزِى كُلَّ ڪَفُورٍ۬ (٣٦) وَهُمۡ يَصۡطَرِخُونَ فِيہَا رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا نَعۡمَلۡ صَـٰلِحًا غَيۡرَ ٱلَّذِى ڪُنَّا نَعۡمَلُۚ أَوَلَمۡ نُعَمِّرۡكُم مَّا يَتَذَڪَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ ٱلنَّذِيرُۖ فَذُوقُواْ فَمَا لِلظَّـٰلِمِينَ مِن نَّصِيرٍ (٣٧

আর যারা কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের প্রতি এমন কোন ফয়সালা দেয়া হবে না যে, তারা মারা যাবে, এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আযাবও লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। আর সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করে দিন, আমরা পূর্বে যে আমল করতাম, তার পরিবর্তে আমরা নেক আমল করব। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি যে, তখন কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত? আর তোমাদের কাছে তো সতর্ককারী এসেছিল। কাজেই তোমরা আযাব আস্বাদন কর, আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা আল ফাতির ৩৫:৩৬-৩৭)

জাহান্নামের শিকল ও আলকাতরাঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 وَتَرَى ٱلۡمُجۡرِمِينَ يَوۡمَٮِٕذٍ۬ مُّقَرَّنِينَ فِى ٱلۡأَصۡفَادِ (٤٩) سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٍ۬ وَتَغۡشَىٰ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ (٥٠)

অর্থঃ আর সে দিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে। (সূরা ইবরাহীম ১৪: ৪৯-৫০)

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَإِن تَعۡجَبۡ فَعَجَبٌ۬ قَوۡلُهُمۡ أَءِذَا كُنَّا تُرَٲبًا أَءِنَّا لَفِى خَلۡقٍ۬ جَدِيدٍ‌ۗ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِرَبِّہِمۡ‌ۖ وَأُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلۡأَغۡلَـٰلُ فِىٓ أَعۡنَاقِهِمۡ‌ۖ وَأُوْلَـٰٓٮِٕكَ أَصۡحَـٰبُ ٱلنَّارِ‌ۖ هُمۡ فِيہَا خَـٰلِدُونَ (٥)

অর্থঃ আর যদি তুমি আশ্চর্য বোধ কর, তাহলে আশ্চর্যজনক হল তাদের এ বক্তব্য, আমরা যখন মাটি হয়ে যাব, তখন কি আমরা নতুন সৃষ্টিতে পরিণত হব? এরাই তারা, যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করেছে,আর ওদের গলায় থাকবে শিকল এবং ওরা অগ্নিবাসী, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। (সূরা রাদ১৩:৫)।

জাহান্নামের যাক্কুম বৃক্ষ পাপীদের খাদ্যঃ আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেন,

 إِنَّ شَجَرَتَ ٱلزَّقُّومِ (٤٣) طَعَامُ ٱلۡأَثِيمِ (٤٤) كَٱلۡمُهۡلِ يَغۡلِى فِى ٱلۡبُطُونِ (٤٥) كَغَلۡىِ ٱلۡحَمِيمِ (٤٦) خُذُوهُ فَٱعۡتِلُوهُ إِلَىٰ سَوَآءِ ٱلۡجَحِيمِ (٤٧) ثُمَّ صُبُّواْ فَوۡقَ رَأۡسِهِۦ مِنۡ عَذَابِ ٱلۡحَمِيمِ (٤٨) ذُقۡ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡڪَرِيمُ (٤٩) إِنَّ هَـٰذَا مَا كُنتُم بِهِۦ تَمۡتَرُونَ (٥٠)

অর্থঃ নিশ্চয় যাক্কুম বৃক্ষ পাপীর খাদ্য ; গলিত তামার মত, উদরসমূহে ফুটতে থাকবে। ফুটন্ত পানির মত (বলা হবে) ওকে ধর, অতঃপর তাকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাও। তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে দাও। (বলা হবে) তুমি আস্বাদন কর, নিশ্চয় তুমিই সম্মানিত, অভিজাত। নিশ্চয় এটা তা-ই যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে। (সূরা আদ দুখান ৪৪: ৪৩-৫০)

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

أَذَٲلِكَ خَيۡرٌ۬ نُّزُلاً أَمۡ شَجَرَةُ ٱلزَّقُّومِ (٦٢) إِنَّا جَعَلۡنَـٰهَا فِتۡنَةً۬ لِّلظَّـٰلِمِينَ (٦٣) إِنَّهَا شَجَرَةٌ۬ تَخۡرُجُ فِىٓ أَصۡلِ ٱلۡجَحِيمِ (٦٤) طَلۡعُهَا كَأَنَّهُ ۥ رُءُوسُ ٱلشَّيَـٰطِينِ (٦٥) فَإِنَّہُمۡ لَأَكِلُونَ مِنۡہَا فَمَالِـُٔونَ مِنۡہَا ٱلۡبُطُونَ (٦٦) ثُمَّ إِنَّ لَهُمۡ عَلَيۡہَا لَشَوۡبً۬ا مِّنۡ حَمِيمٍ۬ (٦٧) ثُمَّ إِنَّ مَرۡجِعَهُمۡ لَإِلَى ٱلۡجَحِيمِ (٦٨) إِنَّہُمۡ أَلۡفَوۡاْ ءَابَآءَهُمۡ ضَآلِّينَ (٦٩) فَهُمۡ عَلَىٰٓ ءَاثَـٰرِهِمۡ يُہۡرَعُونَ (٧٠)

অর্থঃ আপ্যায়নের জন্য এগুলো উত্তম না যাক্কুম বৃক্ষ, নিশ্চয় আমি তাকে যালিমদের জন্য করে দিয়েছি পরীক্ষা। নিশ্চয় এ গাছটি জাহান্নামের তলদেশ থেকে বের হয়। এর ফল যেন শয়তানের মাথা, নিশ্চয় তারা তা থেকে খাবে এবং তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে। তদুপরি তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। তারপর তাদের প্রত্যাবর্তন হবে জাহান্নামের আগুনে। নিশ্চয় এরা নিজদের পিতৃপুরুষদেরকে পথভ্রষ্ট পেয়েছিল, ফলে তারাও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে দ্রুত ছুটেছে। (সূরা আস সাফফাত ৩৭:৬২-৭০)

গলিত পুঁজ হবে জাহান্নামীদের খাদ্যঃ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 وَٱسۡتَفۡتَحُواْ وَخَابَ ڪُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ۬ (١٥) مِّن وَرَآٮِٕهِۦ جَهَنَّمُ وَيُسۡقَىٰ مِن مَّآءٍ۬ صَدِيدٍ۬ (١٦) يَتَجَرَّعُهُ ۥ وَلَا يَڪَادُ يُسِيغُهُ ۥ وَيَأۡتِيهِ ٱلۡمَوۡتُ مِن ڪُلِّ مَكَانٍ۬ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ۬‌ۖ وَمِن وَرَآٮِٕهِۦ عَذَابٌ غَلِيظٌ۬ (١٧)

অর্থঃ আর তারা বিজয় কামনা করল, আর ব্যর্থ হল সকল স্বৈরাচারী হঠকারী। এর সামনে রয়েছে জাহান্নাম, আর তাদের পান করানো হবে গলিত পুঁজ থেকে। সে তা গিলতে চাইবে এবং প্রায় সহজে সে তা গিলতে পারবে না। আর তার কাছে সকল স্থান থেকে  মৃত্যু ধেঁয়ে আসবে, অথচ সে মরবে না। আর  এর পরেও রয়েছে কঠিন আযাব । (সূরা ইবরাহীম১৪: ১৫-১৭)

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

هَـٰذَانِ خَصۡمَانِ ٱخۡتَصَمُواْ فِى رَبِّہِمۡ‌ۖ فَٱلَّذِينَ ڪَفَرُواْ قُطِّعَتۡ لَهُمۡ ثِيَابٌ۬ مِّن نَّارٍ۬ يُصَبُّ مِن فَوۡقِ رُءُوسِہِمُ ٱلۡحَمِيمُ (١٩) يُصۡهَرُ بِهِۦ مَا فِى بُطُونِہِمۡ وَٱلۡجُلُودُ (٢٠) وَلَهُم مَّقَـٰمِعُ مِنۡ حَدِيدٍ۬ (٢١) ڪُلَّمَآ أَرَادُوٓاْ أَن يَخۡرُجُواْ مِنۡہَا مِنۡ غَمٍّ أُعِيدُواْ فِيہَا وَذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ (٢٢)إ

অর্থঃ এরা দুটি বিবাদমান পক্ষ, যারা তাদের রব সম্পর্কে বিতর্ক করে। তবে যারা কুফরী করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্য থাকবে লোহার হাতুড়ী। যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে তা থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে, দহন-যন্ত্রণা আস্বাদন কর। (সূরা হজ ২২:১৯-২২)।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَبَرَزُواْ لِلَّهِ جَمِيعً۬ا فَقَالَ ٱلضُّعَفَـٰٓؤُاْ لِلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُوٓاْ إِنَّا ڪُنَّا لَكُمۡ تَبَعً۬ا فَهَلۡ أَنتُم مُّغۡنُونَ عَنَّا مِنۡ عَذَابِ ٱللَّهِ مِن شَىۡءٍ۬‌ۚ قَالُواْ لَوۡ هَدَٮٰنَا ٱللَّهُ لَهَدَيۡنَـٰڪُمۡ‌ۖ سَوَآءٌ عَلَيۡنَآ أَجَزِعۡنَآ أَمۡ صَبَرۡنَا مَا لَنَا مِن مَّحِيصٍ۬ (٢١)و

অর্থঃ আর তারা সবাই আল্লাহর সামনে হাজির হবে, অতঃপর যারা অহঙ্কার করেছে দুর্বলরা তাদেরকে বলবে, নিশ্চয় আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম। সুতরাং তোমরা কি আল্লাহর আযাবের মোকাবেলায় আমাদের কোন উপকারে আসবে? তারা বলবে, যদি আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করতেন, তাহলে আমরাও তোমাদের হেদায়েত করতাম। এখন আমরা অস্থির হই কিংবা ধৈর্য ধারন করি, উভয় অবস্থাই আমাদের জন্য সমান। আমাদের পালানোর কোন জায়গা নেই। (সূরা ইবরাহীম ১৪:২১)

 إِنَّ ٱللَّهَ لَعَنَ ٱلۡكَـٰفِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمۡ سَعِيرًا (٦٤) خَـٰلِدِينَ فِيہَآ أَبَدً۬اۖ لَّا يَجِدُونَ وَلِيًّ۬ا وَلَا نَصِيرً۬ا (٦٥) يَوۡمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمۡ فِى ٱلنَّارِ يَقُولُونَ يَـٰلَيۡتَنَآ أَطَعۡنَا ٱللَّهَ وَأَطَعۡنَا ٱلرَّسُولَا۟ (٦٦) وَقَالُواْ رَبَّنَآ إِنَّآ أَطَعۡنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَأَضَلُّونَا ٱلسَّبِيلَا۟ (٦٧) رَبَّنَآ ءَاتِہِمۡ ضِعۡفَيۡنِ مِنَ ٱلۡعَذَابِ وَٱلۡعَنۡہُمۡ لَعۡنً۬ا كَبِيرً۬ا (٦٨)

অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে লানত করেছেন এবং তাদের জন্য জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত রেখেছেন। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তারা না পাবে কোন অভিভাবক এবং না কোন সাহায্যকারী। যেদিন তাদের চেহারাগুলো আগুনে উপুড় করে দেয়া হবে, তারা বলবে, হায়, আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম, তারা আরো বলবে, হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলাম, তখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব, আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দিন এবং তাদেরকে বেশী করে লানত করুন। (সূরা আল আহযাব ৩৩:৬৪-৬৮)

১।  আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন: তোমরা আল্লাহ-কে যথাযথ ভয় করো আর মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। এরপর তিনি বললেন: যদি যাক্কুম বৃক্ষ থেকে একটি ফোটা পৃথিবীতে পতিত হয়, তাহলে তা পৃথিবীবাসীর সব জীবনোপকরণ নষ্ট করে দেবে। অতএব যে তা খাবে তার অবস্থা কী হবে? (বর্ণনায়: তিরমিজী। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

২। উসামা ইবনে যায়েদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, তার পেটের নাড়িভুরিগুলো ঘুরপাক খেতে থাকবে। ফলে সে গাধার মত ঘুরতে থাকবে। গাধা যেমন চরকার পাশে ঘুরে থাকে। জাহান্নামের অধিবাসীরা তাকে দেখার জন্য জড়ো হবে। তারা তাকে বলবে, এই! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি সৎ কাজের আদেশ করতে না আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করতে না? সে বলবে: হ্যা, আমি সৎ কাজের আদেশ করতাম কিন্তু তা নিজে করতাম না। আর অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকতে বলতাম কিন্তু নিজে তাতে লিপ্ত হতাম। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)

৩। সাহাবী নুমান ইবনে বশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জাহান্নামীদের মধ্যে যার সবচেয়ে হাল্কা শাস্তি হবে তার শাস্তির ধরনটা এমন হবে যে, তার পায়ে আগুনের দুটো জুতা থাকবে ও আগুনের দুটো ফিতা থাকবে। এর আগুনের তাপে তার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে যেমন ডেগের মধ্যে পানি ফুটতে থাকে। লোকেরা তার অবস্থা দেখে মনে করবে এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কিছু নেই। অথচ এ শাস্তিটা হল সবচেয়ে হাল্কা শাস্তি। (বর্ণনায় : মুসলিম)

৪। সামুরা ইবনে জুনদাব রা. থেকে বর্ণিত যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জাহান্নামীদের কারো পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে স্পর্ষ করবে। করো হাটু পর্যন্ত আগুনে স্পর্ষ করবে। কারো কোমর পর্যন্ত আবার কারো কণ্ঠ পর্যন্ত আগুন স্পর্ষ করবে। (বর্ণনায় : মুসলিম)

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

Leave a comment