আকিদার বিদআতসমূহ অস্টম কিস্তি : দুনিয়াতে বসেই আল্লাহকে দেখা সম্ভব।

আকিদার বিদআতসমূহ : অস্টম কিস্তি

দুনিয়াতে বসেই আল্লাহকে দেখা সম্ভব।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

ইসলামি শরীয়তের প্রথম ও প্রধান বিষয় হল ইমান। আর খাটি ইমান হল, সঠিক আকিদা প্রষণ করা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয় হল, আমরা সকলে মুসলিম দাবি করলেও শুধু আমাদের আকিদার কারনে আমরা মুসলিম নই। ইসলাম বহির্ভুত এই নতুত আকিদাকে বিদআতি আকিদা হিসাবে চিহিৃত করব। কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যে আকিদা নতুন করে আবিস্কার হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। কাজেই যে কোন ভুল আকিদা যা কুরআন সুন্নাহের বাহিরে গিয়ে নতুত করে তৈরি হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। যার অর্থ হলো আকিদার ভূলভ্রান্তি মানেই বিদআত আকিদা। যৌক্তিক কোন কাজ সহজে যে কেউ মেনে নেন। আর বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত কোন জ্ঞানতো সাথে সাথে মেনে নেয়। কিন্তু ইসলামি আকিদার মুল হল অদৃশ্যে বিশ্বাস এখানে জাগতিক কোন বিষয় থাকলে যুক্তি ও বিজ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা করা যেত কিন্ত অদৃশ্যে বিশ্বাস করতে হলে অদৃশ্য থেকে প্রাপ্ত অহীর উপর নির্ভর করতে হবে। অহী ভিন্ন যে কোন উৎস থেকে আকিদা গ্রহন করলে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ যে কোনটাই হতে পারে। ইসলামি আকিদা বিশ্বাস সব সময় আল্লাহকে কেন্দ্র অদৃশ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। তাই ইসলামি আকিদার মুল উৎস হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্ত্বিক। এই কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যখনি নতুন করে আকিদা রচনা করা হবে তাই বিদআতি আকিদা।

যেমনঃ অদৃশ্যের একটি ব্যাপার হল কবরের আজাব। কবরে আজাব হবে এটাই সত্য। কিন্তু কাউকে যুক্তি দিয়ে কি কবরের আজাব বুঝাতে বা দেখাতে পাবর। কিংবা বিজ্ঞানের আবিস্কার ক্যামেরা দ্বারা কি এই আজাব দেখাতে পারব। অপর পক্ষে আমলের ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এখানে কুরআন হাদিসের বাহিরে ইজমা কিয়াজের দরকার হয়। নতুন কোন সমস্যা আসলে কিয়াস করে মাসায়েল দিতে হয়। যেমনঃ মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট, শেয়ার বাজার ইত্যাদি ইসলামের প্রথমিক যুগে ছিলনা। তাই কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে কিয়াস করে সমাধান দিতে হয়। কজেই একটি কথা মনে রাখতে হবেঃ “আকিদা ও ফিকহের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, ফিকহের ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন নেই”

এক কথায় বলে গেলে কুরআন হাদিসের ষ্পষ্ট কোন রেফারেন্স ছাড়া আকিদা গ্রহণীয় নয়। যদি কেউ যুক্তি দিয়ে আকিদা বুঝাতে আসে তাকে সালাম জানাতে হবে। 

কুনআন সুন্নাহকে উৎস হিসাবে না নিলে আকিদার ভিন্নতা তো থাকবেই। আর এই ভিন্ন আকিদা আসবে সম্পূর্ণ নতুন করে যা বিদআত বলা হয়। কুরআন হাদিসে ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই, এমন ফিকহি মাসলা মাসায়েলের ক্ষেতে ইখতিলাফ বা মতভেদ করা জায়েয হলেও, আকিদার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতভেদ জায়েয নেই। কারন আকিদার ছয়টি বিষয় (আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, কিতার সমুহের প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস, তাক্বদীরের  ভালো মন্দেন প্রতি বিশ্বাস) যার সবগুলিই গায়েবের সাথে সম্পৃক্ত এবং গায়েব জানার জন্য অহীর প্রয়োজন। যতি কেউ তার আকিদাকে অহী ভিত্তিক না করে, যুক্তি ভিত্তিক করে, তাহলে তার বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। অহী ভিত্তিক না হয়ে আকিদা যুক্তি ভিত্তিক হলেই বিদআতি আকিদা হবে।

আকিদার সম্পর্কে আলোচনার আগে একটা কথাকে মনে খোদাই করে লিখে রাখেন, “আকিদা গাইবের প্রতি বিশ্বাস, এই বিশ্বাস হবে অহী নির্ভর, কোন প্রকার যু্‌ক্তিতর্কের অবতারণা করা যাবেনা”। কাজেই আমি যে ভ্রান্ত আকিদাগুলি তুলে ধরব তার বিপক্ষে আন্ততো কুরআনের একটি আয়াত অথবা একটি সহিহ হাদিস উপস্থাপণ করব। এই সহিহ আকিদার বিপরীতে যে সকল বিদআতি আকিদা সবার সামনে তুলে ধরব, সেই সকল আকিদার কুরআন সুন্নাহতে কোন প্রমান পাওয়া যাবে না। কুরআন সুন্নাহ নাই বলেই আকিদার নাম দিলাম বিদআতি আকিদা।

সঠিক আকিদা হলোঃ নবী, রাসূল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্য়ান্ত কারো পক্ষে মহার আল্লাহ দেখা সম্ভব নয়।

সঠিক আকিদা দলীলঃ

বিদআতীদের বিশ্বাস একটা পর্যায় দুনিয়াতে বসেই মহান আল্লাহকে দেখা সম্ভব। অলী, আওলীয়া, পীর, বুজুর্গ, আধ্যাতিক গুরু যে কেউই দাবি করতে পারে যে, সে দুনিয়াতে স্বচক্ষে আল্লাহ কে দেখেছেন। দাবি করা আর বাস্তবতা ভিন্ন কথা। আল্লাহ তায়ালাকে দেখা তিনটি সময়ের সাথে সম্পৃক্ত, দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় দেখা, আখেরাতে দেখা ও সপ্নের মাধ্যমে দেখা। অধিকাংশ বিদ্ধানের মতে, দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহকে দেখা অসম্ভব। এমনকি নবী রাসূলগণও দেখেন নি। আখেরাতে  দেখার ব্যাপারে সকলে একমত এমনকি যারা নিরাকার আল্লাহতে বিশ্বাসি তারাও। দুনিয়ায় বসে স্বপ্নযোগে আল্লাহকে দেখা সম্ভব কি না? সহিহ হাদিস মতে আমাদের নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে দেখেছেন। কিন্তু সাধরন মুসলিমগন স্বপ্নযোগে আল্লাহকে দেখবেন কি না সে ব্যাপারে মতভেদ আছে। কোন কোন আলেমের মত হলো, মানুষ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখতে পারে, তবে সে যে আকৃতিতে আল্লাহকে দেখেছে তা আল্লাহর আসল রূপ নয়। কারন, বিশ্বজাহানের কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয় তিনি সব কিছু শোনেন ও দেখেন৷ আশ-শুয়ারা- ৪২:১১)।  

১। কুরআনের আলোকে স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়ঃ  

কুরআনের আলোকে বুঝা যায়, দুনিয়াতে  জাগ্রত অবস্থায় স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়।  দলীল নিম্মের আয়াতগুলোঃ

ক. কুরআনুল কারিমে বিভিন্ন আয়াত দ্বারা বুঝা যায় দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহ তায়ালাকে দেখা সম্ভব নয়। দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহকে দেখা অসম্ভব। আল্লাহকে কোন দৃষ্টিশক্তি আয়ত্ব করতে পারবেনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿لَّا تُدۡرِكُهُ ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَهُوَ يُدۡرِكُ ٱلۡأَبۡصَٰرَۖ وَهُوَ ٱللَّطِيفُ ٱلۡخَبِيرُ ١٠٣﴾ [الانعام: ١٠٣]

অর্থঃ দৃষ্টিশক্তি তাঁকে দেখতে অক্ষম কিন্তু তিনি দৃষ্টিকে আয়ত্ব করে নেন৷ তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী ও সর্বজ্ঞ৷   (সূরা আন‘আম ৬:১০৩)।

আল্লাহ তায়ালাকে মুসা আলাইহিস সালাম দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় দেখতে চেয়ে ছিলেন কিন্তু পারেন নাই। এ সম্পর্কে তাদের কথোপকথোন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এ ভাবে তুল ধরেনঃ

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ

  وَلَمَّا جَآءَ مُوسَىٰ لِمِيقَـٰتِنَا وَكَلَّمَهُ ۥ رَبُّهُ ۥ قَالَ رَبِّ أَرِنِىٓ أَنظُرۡ إِلَيۡكَ‌ۚ قَالَ لَن تَرَٮٰنِى وَلَـٰكِنِ ٱنظُرۡ إِلَى ٱلۡجَبَلِ فَإِنِ ٱسۡتَقَرَّ مَڪَانَهُ ۥ فَسَوۡفَ تَرَٮٰنِى‌ۚ فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُ ۥ لِلۡجَبَلِ جَعَلَهُ ۥ دَڪًّ۬ا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقً۬ا‌ۚ فَلَمَّآ أَفَاقَ قَالَ سُبۡحَـٰنَكَ تُبۡتُ إِلَيۡكَ وَأَنَا۟ أَوَّلُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ

অর্থঃ অতপর মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন তখন সে আকূল আবেদন জানালো, হে প্রভু! আমাকে দর্শনের শক্তি দাও, আমি তোমাকে দেখবো৷তিনি বললেনঃ তুমি আমাকে দেখতেপারো না৷ হাঁ সামনের পাহাড়ের দিকে তাকাও ৷ সেটি যদি নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তাহলে অবশ্যি তুমি আমাকে দেখতে পাবে৷ কাজেই তার রব যখন পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলো৷ সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে মূসা বললোঃ পাক-পবিত্র তোমার সত্তা৷ আমি তোমার কাছে তাওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম মুমিন৷ (সূরা: আল-‘আরাফ ৭:১৪৩)

মানুষের এমন কোন ক্ষমতা নাই যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন। আল্লাহ সাথে ওহী অথবা দূত এর মাধ্যমে পর্দার অন্তরালার থেকে কথা বলতে হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحۡيًا أَوۡ مِن وَرَآيِٕ حِجَابٍ أَوۡ يُرۡسِلَ رَسُولٗا فَيُوحِيَ بِإِذۡنِهِۦ مَا يَشَآءُۚ إِنَّهُۥ عَلِيٌّ حَكِيمٞ ٥١ ﴾ [الشورى: ٥١]

অর্থঃ “মানুষের এমন মর্যাদা নাই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সর্বোচ্চ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আশ-শূরা ২৬:৫১)।

মন্তব্যঃ কুরআনের এ সকল সুস্পষ্ট আয়াতের নির্দেশনার আলোকে মুসলিম উম্মাহ একমত যে, পৃথিবীতে কেউ আল্লাহকে দেখতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি সহীহ হাদীসও বর্ণিত হয়নি, যাতে তিনি বলেছেন,  আমি জাগ্রত অবস্থায় পৃথিবীতে বা মি’রাজে চর্ম চক্ষে বা অন্তরের চক্ষে আল্লাহকে দেখেছি।

২। হাদিসের আলোকে স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়ঃ

হাদিসের আলোকে বুঝা যায় দুনিয়াতে  জাগ্রত অবস্থায় স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়। সহিহ হাদিসের বিভিন্ন বর্নণা দ্বারাও বুঝা যায় দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহ তায়ালাকে দেখা সম্ভব নয়।

** সালিম (রহঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেছেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তৃতা দিলেন। তাতে  আল্লাহ তা‘আলার যথাযোগ্য প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনার পর দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেন, আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক করছি। যেমন প্রত্যেক নবী তাঁর সম্প্রদায়কে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এমনকি নূহ আলাইহিস সালাম ও তাঁর কাওমকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে একটি বিষয় পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছি যা কোনো নবী তার সম্প্রদায়কে বলেন নি।

তা হল এই যে, তোমরা জেনে রাখ, দাজ্জাল কানা হবে। আল্লাহ তা‘আলা কানা নন। ইবন শিহাব রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈক সাহাবী যে দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন সে দিন তিনি বলেছেন, চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে কাফির লেখা থাকবে। যে ব্যক্তি তার কার্যক্রম অপছন্দ করবে সে তা পাঠ করতে পারবে অথবা প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তিই তা পাঠ করতে সক্ষম হবে। তিনি এ কথাও বলেছেন যে, তোমরা জেনে রাখ যে, তোমাদের কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তার রবকে দেখতে সক্ষম হবে না। (সহিহ মুসলিম, ইঃফাঃ হাদীস নং ৭০৯০ এর শেষ অংশ)।

** যারা দাবী করেন যে, মি‘রাজের রজনীতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে সরাসরি দেখেছেন, তাদের এ দাবীর খণ্ডন করে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা  থেকে হাদিস এসেছে।

“মাসরুক রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে হেলান দিয়ে বসেছিলাম। তখন তিনি বললেন, হে আবু আয়েশা! তিনটি কথা এমন, যে এর কোন একটি বলল, সে আল্লাহ সম্পর্কে ভীষণ অপবাদ দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেগুলো কী? তিনি বললেন, যে এ কথা বলে যে,  মুহাম্মাদ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবকে দেখেছেন, সে আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়।  আমি তো হেলান অবস্থায় ছিলাম, এবার সোজা হয়ে বসলাম। বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! থামুন। আমাকে সময় দিন, ব্যস্ত হবেন না। মহান আল্লাহ কুরআনে কি বলেন নি?  “তিনি (রাসূল) তো তাঁকে (আল্লাহকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছেন।” (৮১:২৩) অন্যত্রে নিশ্চয়ই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন। (৫৩:১৩)।

 আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আমিই ও উম্মতের প্রথম ব্যক্তি,  যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম।

তিনি বলেছিলেন, তিনি তো ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। কেবল এ দু’বার-ই আমি তাকে তার আসল আকৃতিতে দেখেছি। আমি তাকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখেছি। তাঁর বিরাট দেহ ঢেকে ফেলেছিল আসমান ও জমিনের মধ্যবতী সবটুকু স্থান। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আরও বলেন, তুমি কি শোন নি? আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,“তিনি (আল্লাহ) দৃষ্টির অধিগম্য  নন, তবে দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত।” (৬:১০৩)। এরূপ তুমি কি শোননি?  আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সর্বোচ্চ ও প্রজ্ঞাময়।  (৪২:৫)।

 আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আর ঐ ব্যক্তিও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়, যে এমন কথা বলে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের কোনো কথা গোপন রেখেছেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে রাসূল! আপনার রবের কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করুন, যদি তা না করেন তবে আপনি তাঁর বার্তা প্রচারই করলেন না।” (সূরা আল-মায়েদা ৫:৬৭)। তিনি (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) আরো বলেন,  যে ব্যক্তি এ কথা বলে যে,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ওহী ব্যতীত কাল কী  হবে তা অবহিত করতে পারেন, সেও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “বল, আসমান ও জমিনে আল্লাহ ব্যতীত গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না,” (২৭:৬৫) (সহিহ মুসলিম, ইঃ ফাঃ হাদীস নং ৩৩৬)।

** রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি‘রাজ রজনীতেও আল্লাহর দর্শন পাননি মাসরুক (রহ) বলেন। “আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি‘রাজ রজনীতে যদি আল্লাহর দর্শন না পেয়ে থাকেন,তাহলে আল্লাহর এ বলার অর্থ কি দাঁড়াবে? “এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার নিকটবর্তী হলেন এবং আরো নিকটবর্তী, ফলে তাদের মধ্যে ধনুকের ব্যবধান রইল বা তারও কম। তখন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি যা ওহী করবার তা ওহী করলেন।” (৫৩:৮-১০)।

 আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, তিনি তো ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুরুষের আকৃতিতে আসতেন। কিন্তু তিনি এবার (আয়াতে উল্লিখিত সময়) নিজস্ব আকৃতিতেই এসেছিলেন। তাঁর দেহ আকাশের সীমা ঢেকে ফেলেছিল।”( সহিহ বুখারি ইঃফাঃ হাদিস নং -৩০০৬; সহিহ মুসলিম, ইফাঃ হাদীস নং ৩৩৯)।

** মাসরূক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ  “আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞেস করলাম আমা! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর রবকে দেখেছিলেন? তিনি বললেন, তোমার কথায় আমার গায়ের পশম কাঁটা দিয়ে খাড়া হয়ে গেছে। তিনটি কথা সম্পর্কে তুমি কি অবগত নও? যে তোমাকে এ তিনটি কথা বলবে সে মিথ্যা বলবে।

যদি কেউ তোমাকে বলে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবকে দেখেছেন, সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি পাঠ করলেন, “তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নহেন; কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত। (৬:১০৩)। “মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন, ওহীর মাধ্যম ছাড়া অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে।” (৪২:৫১) আর যে ব্যক্তি তোমাকে বলবে যে, আগামীকাল কী হবে সে তা জানে, তাহলে সে মিথ্যাবাদী।

তারপর তিনি তিলওয়াত করলেন, “কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে।” (৩১:৩৪) আর তোমাকে যে বলবে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কথা গোপন রেখেছেন, তাহলেও সে মিথ্যাবাদী। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “হে রাসূল! তোমার রবের কাছ থেকে তোমারপ্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার কর।” (৫: ৬৭]  হ্যাঁ, তবে রাসূল জিবরীল আলাইহিস সালামকে তাঁর নিজস্ব আকৃতিতে দু’বার দেখেছেন।” (সহিহ বুখারী ইঃ ফাঃ হাদীস নং ৪৪৯১)।

মন্তব্যঃ এভাবে অনেক হাদিসের আলোকে বহু আলেমমত ব্যক্ত করেছেন যে, সরাসরি স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় কোনো মানুষই আল্লাহকে দেখেন নাই। এমনকি নবী রাসূলগন ও দেখেন নাই।  

 

৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে অন্তরের চোখে দেখেছেনঃ

 সহিহ হাদিসের আলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে অন্তরের চোখে  দেখেছেন।

** ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে (আল্লাহকে) অন্তদৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন  (সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, ইঃ ফাঃ হাদিস নং-৩৩৪)।

তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত অবস্থায় অন্তরের দৃষ্টিতে আল্লাহকে দেখেছেন কিনা সে বিষয়ে সাহাবীগণ মতভেদ করেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি বলে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতিপালককে দেখেছেন, সে ব্যক্তি আল্লাহর নামে জঘন্য মিথ্যা কথা বলে।’ ( বুখারী, আসহিহ/৩-১১৮১, ৪/১৮৪০, ৬/২৬৮৭; মুসলিম আসসহিহ/১-১১৫৯)।

** ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অন্যান্য কিছু সাহাবি রাদিয়াল্লাহু আনহুম মনে করতেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি’রাজের রাত্রিতে অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে আল্লাহকে দেখেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা মূসা আলাইহিস সালাম এর কথা বলার’ মু’জিযা প্রদান করেন, তেমনি তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অন্তরের দৃষ্টিতে দর্শনের মু’জিযা দান করেন। (ইবনু খুযাইমা, কিতাবুত তাওহীদ ২/৪৭৭-৫৬৩ এবং  হাদীসের নামে জালিয়াতি; ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর)।

** আবু-যার রাদিয়াল্লাহু আনহু কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মি‘রাজের রাতে আল্লাহকে সরাসরি দেখার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেছেন, তিনি আল্লাহর নূর অবলোকন করেছেন। যেমন নিম্নোক্ত হাদীস তার প্রমাণঃ

আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কি আপনার রবকে দেখেছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তিনি (আল্লাহ) নূর, আমি কি করে তা দৃষ্টির অধিগম্য করব? (কীভাবে তাকে দেখব?) (সহিহ মুসলিম ইসলামি ফাউন্ডেশন হাদিস নম্বর ৩৪০)।

**আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললাম, যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ পেতাম, তবে অবশ্যই তাঁকে একটি কথা জিজ্ঞাস করতাম। আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, কী জিজ্ঞেস করতেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম যে, আপনি কি আপনাররবকে দেখেছেন? আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, “এ কথা তো আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছেন, আমি নূর দেখেছি।” (সহিহ মুসলিম ইসলামি ফাউন্ডেশন হাদিস নম্বর ৩৪১)। 

        

৪। দুনিয়াতে সামনা সামনি আল্লাহকে দেখাতে চাওয়া অন্যায়।

আহলে কিতাবরা দুনিয়াতে সামনা সামনি আল্লাহকে দেখাতে চাইলে, আল্লাহর গজব তাদের উপর পতিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন।

﴿يَسۡ‍َٔلُكَ أَهۡلُ ٱلۡكِتَٰبِ أَن تُنَزِّلَ عَلَيۡهِمۡ كِتَٰبٗا مِّنَ ٱلسَّمَآءِۚ فَقَدۡ سَأَلُواْ مُوسَىٰٓ أَكۡبَرَ مِن ذَٰلِكَ فَقَالُوٓاْ أَرِنَا ٱللَّهَ جَهۡرَةٗ فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلصَّٰعِقَةُ بِظُلۡمِهِمۡۚ ثُمَّ ٱتَّخَذُواْ ٱلۡعِجۡلَ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُ فَعَفَوۡنَا عَن ذَٰلِكَۚ وَءَاتَيۡنَا مُوسَىٰ سُلۡطَٰنٗا مُّبِينٗا ١٥٣﴾ [النساء : ١٥٣] 

অর্থঃ “কিতাবীগণ তোমার নিকট চায় যে, আসমান থেকে তুমি তাদের উপর একটি কিতাব নাযিল কর। অথচ তারা মূসার কাছে এর চেয়ে বড় কিছু চেয়েছিল, যখন তারা বলেছিল, ‘আমাদেরকে সামনা সামনি আল্লাহকে দেখাও’। ফলে তাদেরকে তাদের অন্যায়ের কারণে বজ্র পাকড়াও করেছিল। অতঃপর তারা বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করল, তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণসমূহ আসার পরও। তারপর আমি তা ক্ষমা করে দিয়েছিলাম এবং মূসাকে দিয়েছিলাম সুস্পষ্ট প্রমাণ।” (সূরা নিসা ৪:১৫৩]

৫। আখেরাতে মুমিনগণ আল্লাহর দর্শন লাভ করবেঃ

 মু’মিনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো আখেরাতে আল্লাহর দর্শন। বিভিন্ন আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রমানিত দুনিয়াতে আল্লাহর দীদার সম্ভব নয়। আল্লাহর দীদার মু’মিন বান্দার জন্য এটা বিশেষ নি‘আমত যা তিনি আখেরাতে বান্দার জন্য গচ্ছিত করে রেখেছেন। আখেরাতে যে আল্লাহকে দেখবে এব্যাপাবে তেমন কোন মতভেদ নেই বললেই চলে। কু্‌রআনের স্পষ্ট ঘোষনা আখেরাতে মুমিনগন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ

وَٱتَّقُواْ يَوۡمً۬ا تُرۡجَعُونَ فِيهِ إِلَى ٱللَّهِ‌ۖ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفۡسٍ۬ مَّا ڪَسَبَتۡ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ (٢٨١)

অর্থঃ যেদিন তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে (সাক্ষাত করবে) আসবে সেদিনের অপমান ও বিপদ থেকে বাঁচো৷ সেখানে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার উপার্জিত সৎকর্মের ও অপকর্মের পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া হবে এবং কারো ওপর কোন জুলুম করা হবে না ৷ (বাক্বারাহ ২:২৮১)।

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেনঃ

 هُمۡ وَأَزۡوَٲجُهُمۡ فِى ظِلَـٰلٍ عَلَى ٱلۡأَرَآٮِٕكِ مُتَّكِـُٔونَ (٥٦) لَهُمۡ فِيہَا فَـٰكِهَةٌ۬ وَلَهُم مَّا يَدَّعُونَ (٥٧) سَلَـٰمٌ۬ قَوۡلاً۬ مِّن رَّبٍّ۬ رَّحِيمٍ۬ (٥٨)

অর্থঃ তারা ও তাদের স্ত্রীরা ঘন ছায়ায় রাজকীয় আসনে হেলান দিয়ে বসে আছে৷ সব রকমের সুস্বাদু পানাহারের জিনিস তাদের জন্য সেখানে রয়েছে, যা কিছু তারা চাইবে তা তাদের জন্য হাজির রয়েছে৷  দয়াময় রবের পক্ষ থেকে তাদেরকে “সালাম” বলা হয়েছে। (ইয়াসিন ৩৬:৫৬-৫৮)।

 আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلۡإِنسَـٰنُ إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَىٰ رَبِّكَ كَدۡحً۬ا فَمُلَـٰقِيهِ (٦)

অর্থঃ হে মানুষ! তুমি কঠোর পরিশ্রম করতে করতে তোমার রবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছো, পরে তাঁর সাথে সাক্ষাত করবে৷ (ইনশিকাক ৮৪:৬)।

  আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেনঃ

 مَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ ٱللَّهِ فَإِنَّ أَجَلَ ٱللَّهِ لَأَتٍ۬‌ۚ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ (٥) 

অর্থঃ যে কেউ আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করার আশা করে (তার জানা উচিত) , আল্লাহর নির্ধারিত সময় আসবেই৷ আর আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন৷ (আনকাবুত ২৯:৫)।

  আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ

يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَ يُفَصِّلُ ٱلۡأَيَـٰتِ لَعَلَّكُم بِلِقَآءِ رَبِّكُمۡ تُوقِنُونَ (٢)

অর্থঃ তিনি নিদর্শনাবলী খুলে খুলে বর্ণনা করেন, সম্ভবত তোমরা নিজের রবের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারটি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করবে৷ (সুরা রাদ ১৩:২)।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

 وَإِذَا تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِمۡ ءَايَاتُنَا بَيِّنَـٰتٍ۬‌ۙ قَالَ ٱلَّذِينَ لَا يَرۡجُونَ لِقَآءَنَا ٱئۡتِ بِقُرۡءَانٍ غَيۡرِ هَـٰذَآ أَوۡ بَدِّلۡهُ‌

অর্থঃ যখন তাদেরকে আমার সুষ্পষ্ট ও পরিষ্কার কথা শুনানো হয় তখন যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তারা বলে, এটার পরিবর্তে অন্য কোন কুরআন আনো অথবা এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন করো৷ (ইউনুস ১০:১৫)।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وُجُوهٌ۬ يَوۡمَٮِٕذٍ۬ نَّاضِرَةٌ (٢٢) إِلَىٰ رَبِّہَا نَاظِرَةٌ۬ (٢٣) 

অর্থঃ  সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জল হবে। তারা তাদের পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।” (সূরা কিয়ামাহ ৭৫:২২-২৩)।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় “ফাতাওয়া আকানুল ইসলামে” শাইখ মুহম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আয়াতের মধ্যে সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যায় যে, কিয়ামত দিবসে জান্নাতের মধ্যে আল্লাহকে চর্মচক্ষু দিয়ে দেখা যাবে। এর অর্থ এ নয় যে, আল্লাহর সমগ্র সত্বাকে দর্শন করা সম্ভব হবে। “তারা তাঁকে জ্ঞান দ্বারা আয়ত্ব করতে পারে না।” (সূরা ত্বোহা ২০:১১০)।

জ্ঞানের মাধ্যমে কোন জিনিষকে আয়ত্ব করার বিষয়টি চোখের মাধ্যমে দেখে আত্ত্ব করার চেয়ে অধিকতর ব্যাপক। যখন জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে জানা সম্ভব নয় তাহলে প্রমাণিত হচ্ছে যে চর্মচক্ষু দ্বারা পরিপূর্ণভাবে দর্শন করা সম্ভব নয়। যারা ধারণা করে যে, আল্লাহকে চর্মচক্ষু দ্বারা দেখা সম্ভব নয়; বরং আল্লাহকে দেখার অর্থ পরিপূর্ণভাবে অন্তর দিয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করার নামান্তর, তাদের কথা বাতিল এবং দলীল বিরোধী। প্রকৃত অবস্থা এই ধারণাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। কারণ অন্তরের পরিপূর্ণ বিশ্বাস দুনিয়াতেই বর্তমান রয়েছে। ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহসানের ব্যাখ্যা বলেন, “ইহসান হল তুমি এমনভাবে আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ।

তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।” তুমি এমন ঈমান নিয়ে আল্লাহর এবাদত করবে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। এটিই পরিপূর্ণ ঈমানের পরিচয়। যে সমস্ত আয়াত ও হাদীছে আল্লাহকে দেখার কথা আছে, সেগুলোকে অন্তরের বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্পূর্ণ ভুল এবং কুরআনের আয়াতকে তার আসল অর্থ হতে পরিবর্তন করার শামিল। যে ব্যক্তি এ ধরণের ব্যাখ্যা করবে তার প্রতিবাদ করা ওয়াজিব।

ইহা ছাড়া  ফুরকান (২৫:২১); ইউনুস (১০:১১); হামীম আস সেজদা (৪১:৫৪) আয়াতগুলিতেও আখেরাতে মুমিনগন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করবে বলে উল্লেখ আছে। আখেরাতে মুমিনগন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করবে কিন্তু শর্ত হল মুমিনকে সে সব কাজ করতে হবর যা আল্লাহ পছন্দ করেন যে কাজ তিনি পছন্দ করেন না, মুমিন তা কখনোই করে না। যদিও শয়তান তাকে সে কাজ করার জন্য বারবার প্রলুব্ধ করে।

** আব্দুল্লাহ ইবন কায়স রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

“দুটি জান্নাত এমন যে, এগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী রুপার তৈরি। অন্য দুটি জান্নাত এমন, যেগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী স্বর্ণের তৈরি।“আদন” নামক জান্নাতে জান্নাতিগণ আল্লাহর দীদার লাভ করবেন। এ সময় তাঁদের ও আল্লাহর মাঝে তাঁর মহিমার চাদর ব্যতীত আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।” (সহিহ মুসলিম ইসলামি ফাউন্ডেশন হাদিস নং-৩৪৫)

** উবায়দুল্লাহ ইবন উমর ইবন মায়সারা (র)……সুহায়ব (র) থেকে বর্ণনা করেন । নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ জান্নাতিগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন-তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বলবেনঃ তোমরা কি চাও আমি আরো অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেই ? তারা বলবেঃ আপনি কি আমাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল করে দেননি, আমাদের জান্নাতে দাখিল করেননি এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দেননি ? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ এরপর আল্লাহ তা’আলা আবরণ তুলে নিবেন । আল্লাহর দীদার অপেক্ষা অতি প্রিয় কোন বস্তু তাদের দেওয়া হয়নি । (সহিহ মুসলিম ইসলামি ফাউন্ডেশন হাদিস নং-৩৪৬)

** আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে অবহিত করেছেন যে, “কিছু সংখ্যক লোক রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো, হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পূর্ণীমার রাতের চাঁদ দেখতে তোমাদের কি কোনোরূপ অসুবিধা হয়? তারা বললো, না হে আল্লাহর রাসূল। তিনি আবার বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের কোনোরূপ অসুবিধা হয়? সবাই বললো, না। রাসূলুল্লাহ‌্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ঐরূপ স্পষ্টভাবেই আল্লাহকে দেখতে পাবে।” । (সহিহ মুসলিম ইসলামি ফাউন্ডেশন হাদিস নং-৩৪৮)

** আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তিনি আরো বললেন, ঠিক দুপুরে মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা কিংবা কষ্ট হয়? তারা বললো, না, হে আল্লার রাসূল! তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে তোমাদের ততটুকু কষ্ট হবে, যতটুকু ঐ দু’টির যে কোনো একটি দেখতে কষ্ট হয়।” মুসলিম ইসলামি ফাউন্ডেশন হাদিস নং-৩৫১)

** উক্ত হাদীসসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আখেরাতে মু’মিনরা আল্লাহকে দেখতে পাবে। জাহমিয়্যাহ, মু‘তাযিলা, ইবাদ্বিয়্যাহ (খারেজী সম্প্রদায়ের একটি দল) ইত্যাদি বাতিল সম্প্রদায়রা পরকালেও আল্লাহকে দেখাকে অস্বীকার করেন। তাদের মতে আল্লাহর কোনো রূপ বা আকৃতি নেই, তার কোনো দিক নেই, আকার নেই, তিনি দুনিয়াতেও নেই আবার দুনিয়ার বাইরেও নেই, উপর নিচ, ডান বাম ইত্যাদি কোনো দিকই নেই। তাই তারা আল্লাহর দর্শন অস্বীকার করেন।

অপরপক্ষে আল্লাহকে দেখতে পাওয়ার নি‘আমত থেকে কাফিরদের বঞ্চিত করা হবে।  আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ

﴿كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن رَّبِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ ١٥﴾ [المطففين: ١٥] 

অর্থঃ কখনোই না। তারা (কাফিরগন) সেদিন তাদের প্রতিপালকের দর্শন হতে বঞ্চিত থাকবে।’ ‘অতঃপর তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩:১৫-১৬)।

৬। দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহর দীদার সম্ভব কি?

দুনিয়ায় বসে স্বপ্নযোগে আল্লাহকে দেখার সম্পর্কে কিছু মতভেদ থাকলেও অধিকংশ বিদ্ধানের মতে সম্ভব। তাদের মত হলো, মানুষ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখতে পারে, তবে সে যে আকৃতিতে আল্লাহকে দেখেছে তা আল্লাহর আসল আকৃতি নয়। কিছু বিদ‘আতী ও রাফেযিরা (শিয়ারা) মনে করেন যে, দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহর দীদার সম্ভব নয়। এ সম্পর্কে কুআনের কোন স্পষ্ট নির্দেশনা না তাকলেও বহু  হাদিস দ্বারা আল্লাহকে স্বপ্নে দেখার কথা উল্লেখ আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। কোন সাহাবি (রাদি) স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন বলে উল্লেখ নাই।

কেউ কেউ বলে থাকেন, ইমাম আহমদ (রহ), ইমাম আবু হানিফা (রহ) স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। কথাটি সত্যতা আল্লাহই ভাল জানেন। ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রহ) তার লিখিত মাজমু‘উল ফাতাওয়ায় লিখেনঃ

 “আল্লাহকে দেখা না দেখার ব্যাপারে মানুষ তিনভাগে বিভক্ত। সাহাবী, তাবেয়ী ও মুসলিম ইমামগণ মনে করেন যে, মু’মিনরা আখেরাতে আল্লাহকে সরাসরি স্বচক্ষে দেখতে পাবে, দুনিয়াতে সরাসরি দেখতে পাবে না। তবে স্বপ্নে মানুষের অবস্থাভেদে এ রকম কিছু ঘটে থাকে কোনো কোনো মানুষের অন্তরের শক্তি বেশি, ফলে সে ধারণা করে, সে স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছেন। প্রকৃতপক্ষে এটা ভুল ধারণা। বান্দাহর ঈমান ও অনুরূপ জিনিস অবলোকন করার জ্ঞানের স্তর হিসেবে অন্তরের মুশাহাদারও পার্থক্য হয়। দ্বিতীয় মত হলো, জাহমিয়্যাহরা মনে করেন, আল্লাহকে দুনিয়া বা আখেরাতে কোনো ভাবেই দেখা যাবে না। তৃতীয় দল মনে করেন যে, আল্লাহকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই দেখা যায়। এরা হলো জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায়ের হুলুলবিশ্বাসে বিশ্বাসীগণ। এদের উভয় দলই বাড়াবাড়িতে রয়েছে। একদল মনে করেন, আল্লাহকে দুনিয়া ও আখেরাতে কখনও দেখা যাবে নাআবার আরেকদল মনে করেন, আল্লাহকে উভয় জগতেই দেখা যাবে ( মাজমু‘উল ফাতাওয়া, ২/৩৩৬-৩৩৭)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন যা নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমানিত।

** মুআয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ভোরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে আসতে দেরী করলেন। এমনকি আমরা প্রায় সূর্য উঠে যাচ্ছে বলে প্রত্যক্ষ করছিলাম। এমন সময় তিনি দ্রুত বেরিয়ে আসলেন। সালাতের ইকামত দেওয়া হল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংক্ষিপ্তভাবে সালাত আদায় করলেন। সালাম শেষে তিনি উচ্চস্বরে ডাকলেন।

আমাদের বললেন: যেভাবে তোমরা আছ সেভাবেই তোমাদের কাতারে বসে থাক। এরপর তিনি আমাদের দিকে ফিরলেন। বললেন: আজ ভোরে তোমাদের কাছে (যথাসময়ে বের হয়ে) আসতে আমাকে কিসে বিরত রেখেছিল সে বিষয়ে আমি তোমাদের বলছি। আমি রাতেই উঠেছিলাম। উযূ করে যা আমার তাকদীরে ছিল সে পরিমাণ (তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলাম। আমি সালাতে তন্দ্রাভিভূত হয়ে পড়লাম। ঘুম ভারী হয়ে এল। হঠাৎ দেখি, মহান আল্লাহ্ তা’আলা সুন্দরতম রূপে আবির্ভূত হয়েছেন।

তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ !

 আমি বললামঃ প্রভূ আমার, বান্দা হাযির।

 তিনি বললেনঃ মালা-এ-আলায় কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে?

 আমি বললামঃ হে আমার রব, আমি তো জানি না।  আল্লাহ্ তা’আলা তিন বার উল্লেখিত উক্তি করলেন।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি দেখলাম তিনি আমার কাঁধের দুই হাড্ডির মাঝে তাঁর হাত রাখলেন। আমার বুকে তাঁর অঙ্গুলীসমূহের শীতল ছোয়া আমি অনুভব করলাম। এতে প্রতিটি বস্ত্ত আমার সামনে প্রতিবাত হয়ে উঠল। সব আমি চিনে নিলাম।

তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ!

আমি বললামঃ প্রভূ আমার, বান্দা হাযির।

তিনি বললেনঃ  মালা-এ-আলায় কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে?

আমি বললামঃ গুনাহের কাফ্ফারা নিয়ে।

 তিনি বললেনঃ সেগুলো কি?

আমি বললামঃ জামাআতের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে যাওয়া, সালাতের পরও মসজিদে অবস্থান করা, কষ্টের  সময়ও পরিপূর্ণভাবে উযূ করা।

 তিনি বললেনঃ এরপর কি বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে?

আমি বললামঃ খাদ্য দান, নরম কথা, মানুষ যখন নিদ্রামগ্ন তখন রাতে সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করা।

তিনি বললেনঃ আমার কাছে চাও।

 আমি বললামঃ হে আল্লাহ্! আমি আশা করি কল্যাণকর কাজের। মন্দ কাজ পরিত্যাগ করার। মিসকীনদের প্রতি ভালবাসা; মাফ করে দিন আমাকে, রহম করুন আমার উপর। কোন সম্প্রদায়ের উপর যখন ফিতনা-মুসীবতের ইরাদা করেন তখন আমাকে আপনি ফিতনামুক্ত মৃত্যু দিন। আমি চাই আপনার প্রতি ভালবাসা। আপনাকে যারা ভালবাসেন তাদের ভালবাসা এবং যে সব আমল আমাকে আপনার নিকট করবে সেসব আমলের ভালবাসা। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ এ বিষয়টি সত্য তোমরা এটি পড় এবং তা শিখে নাও।

(ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (র) বলেনঃ এই হাদীসটি  হাসান-সাহীহ), আলবানী রাহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (সুনানে তিরমিযী ইসলামি ফাউন্ডেশের প্রকাশনায় হাদিস নম্বর ৩২৩৫)।

**  ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “একবার রাতে সুমহান ও বরকতময় আমার রব আমার কাছে সুন্দরতম রূপে এসেছিলেন। (রাবী বলেনঃ যতদূর মনে পড়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘স্বপ্নে’ কথাটি বলেছিলেন)।  তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন, কী নিয়ে মালা’-এ-‘আলা (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ)-এ বিতর্ক হচ্ছে? আমি বললাম: না। নবীজী বলেনঃ তখন তিনি আমার কাঁধের মাঝে তাঁর হাত রাখলেন। এমনকি এর স্নিগ্ধতা আমি আমার বুকেও অনুভব করলাম। এতে আসমান ও জমিনের যা কিছু আছে সব আমি জানতে পারলাম। তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন, কী নিয়ে মালা’-এ ‘আলায় (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ) আলোচনা হচ্ছে?

 আমি বললাম: হ্যাঁ, গুনাহের কাফফারা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করাও কাফফারা, জামায়াদে পায়ে হেঁটে যাওয়া, কষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে অযু করাও কাফফারা। যে ব্যক্তি এই কাজ করবে তার জীবন হবে কল্যাণময়, আর মৃত্যুও হবে কল্যাণময়। যেই দিন তাঁর মা তাকে ভূমিষ্ঠ করলেন গুনাহর ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থা হবে সেই দিনের মত। আমার রব বললেন: হে মুহাম্মাদ! সালাত শেষে বলবেনঃ  হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি প্রত্যাশা করি ভালো কাজ করা এবং মন্দ কাজ পরিত্যাগের, দরিদ্রদের প্রতি ভালোবাসা পোষণের তওফীক।

আপনি যখন বান্দাদের বিষয়ে ফিতনা মুসীবতের ইরাদা করবেন তখন আমাকে যেন ফেতনা মুক্ত অবস্থায় উঠিয়ে নেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদে আরো আলোচনা হচ্ছে) উচ্চ মর্যদা লাভের বিষয়ে। তা হল, সালামের প্রসার সাধন, আহার প্রদান এবং লোকেরা যখন নিদ্রাভিভূত, তখন রাতের নফল সালাতে (তাহাজ্জুদে) নিমগ্ন হওয়া।

(সুনানে তিরমিযী ইসলামি ফাউন্ডেশের প্রকাশনায় হাদিস নম্বর ৩২৩৩; তিনি বলেছেন, রাবীগণ এই হাদীসটির সনদে আবু কিলাবা ও ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মাঝে আরেক ব্যক্তির উল্লেখ করেছেন। কাতাদা (র) এটিকে আবূ কিলাবা-খালিদ ইবন লাজলাজ-ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সনদে রিওয়ায়ত করেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

**  ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “একবার  রাতে সুমহান ও বরকতময় আমার রব আমার কাছে সুন্দরতম রূপে এসেছিলেন।

রাবী বলেন: যতদূর মনে পড়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘স্বপ্নে’ কথাটি বলেছিলেন)। তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন, কী নিয়ে মালা-এ-আলা (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ)-এ বিতর্ক হচ্ছে? আমি বললাম: না।  নবীজী বলেন: তখন তিনি আমার কাঁধের মাঝে তাঁর  হাত রাখলেন। এমনকি এর স্নিগ্ধতা আমি আমার বুকেও অনুভব করলাম। এতে আসমান ও জমিনের যা কিছু আছে সব আমি জানতে পারলাম। তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন, কী নিয়ে মালা-এ ‘আলায় আলোচনা হচ্ছে? আমি বললাম: হ্যাঁ, গুনাহের কাফফারা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করা ও কাফফারা, জামা‘আতে পায়ে হেঁটে যাওয়া, কষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে উযু করাও কাফফারা। যে ব্যক্তি এই কাজ করবে তার জীবন হবে কল্যাণময়, আর মৃত্যুও হবে কল্যাণময়। যেই দিন তার মা তাকে ভূমিষ্ঠ করলেন গুনাহর ক্ষেত্রে তার অবস্থা হবে সেই দিনের মত।” (সুনানে তিরমিযী ইসলামি ফাউন্ডেশের প্রকাশনায় হাদিস নম্বর ৩২৩৪, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)।

উবাই ইবন কা‘ব এর স্ত্রী উম্মে তুফাইল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “তিনি স্বপ্নে তার রবকে পরিপূর্ণ একজন যুবকের আকৃতিতে ঘন কেশ বিশিষ্ট অবস্থায় দেখেছেন। তাঁর পদপযুগল সবুজ কাপড়ে আবৃত ছিল। তিনি সোনার জুতা পরিহিত ছিলেন তাঁর চেহারায় সোনার চাদর ছিল

( রু’ইয়াতুল্লাহি, দারাকুতনী, হাদীস নং ২৮৬, ইমাম আবু যুর‘আহ রহ. বলেন, হাদিসের সনদের সব রাবী সুপরিচিত, মদীনায় তাদের প্রসিদ্ধ বংশ। মারওয়ান ইবন উসমান হলেন, মারওয়ান ইবন উসমান ইবন আবু সাঈদ মু‘আল্লা আল-আনসারী।  আর ‘উমারাহ হলেন, ‘উমারাহ ইবন ‘আমের ইবন ‘উমার ইবন হাযম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী। ‘আমর ইবন হারিস ও সাঈদ ইবন আবু হিলাল সম্পর্কে কেউ কোনো ধরণের দ্বিধা-সন্দেহ করে নি)।

অনুরূপভাবে আরো বর্ণিত হয়েছে, উবাই ইবন কা‘ব এর স্ত্রী উম্মে তুফাইল থেকে। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “তিনি স্বপ্নে তার রবকে পরিপূর্ণ উত্তম একজন যুবকের আকৃতিতে চুল বিশিষ্ট দেখেছেন। তার পদপযুগল সবুজ কাপড়ে আবৃত ছিল। এতে সোনার জুতা পরিহিত ছিল। তার চেহারায় সোনার চাদর ছিল। (রু’ইয়াতুল্লাহি, দারাকুতনী, হাদীস নং ২৮৭, ইমাম হাইসামী রহ. হাদীসটিকে মাজমাউজ জাওয়ায়েদে ৭/১৭৯। তিনি হাদিসটি মুনকার বলেছেন)।

 

**ইমাম বুখারী রহ. ও সহীহ বুখারীতে এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস বর্ণনা করে প্রমাণ করেছেন যে, দুনিয়াতে সরাসরি আল্লাহর দীদার অসম্ভব।

যারা ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দর্শন দাবি করেছেন, তাঁরা একমত যে, এ দর্শন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য একটি বিশেষ মুজিযা, যা আর কারো জন্য নয় এবং এ দর্শন হৃদয়ের অনুভব, যেখানে কোনো আকৃতির উল্লেখ নেই। রাসূলুল্লাহ  আল্লাহকে কোনো ‘আকৃতিতে দেখেছেন, অথবা তিনি ছাড়া কোনো সাহাবী আল্লাহকে দেখেছেন বলে যা কিছু বর্ণিত সবই জাল ও মিথ্যা।

মি’রাজের রত্রিতে বা আরাফার দিনে, বা মিনার দিনে বা অন্য কোনো সময়ে বা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ আল্লাহকে বিশেষ কোনো আকৃতিতে দেখেছেন অর্থে সকল হাদীস জাল। যেমনঃ তাকে যুবক দেখেছেন, তাজ পরিহিত দেখেছেন, উট বা খচ্চরের পিঠে দেখেছেন ইত্যাদি সবই মিথ্যা।

এজাতীয় ভিত্তিহীন একটি বাক্য আমি আমার প্রভুকে একজন দাড়ি গোফ ওঠেনি এমন যুবক রুপে দেখেছি। মুহাদ্দিসগণ বাক্যটিকে জাল বলে ঘোষণা করেছেন। ((ইবনু আর্রাক, তানযীহুশ শারীয়াহ; ইবনুল জাওযী, আল মাওযুয়াত, মোল্লা আলী কারী, আল আসরার, হাদীসের নামে জালিয়াতি; ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর)।

উপরের আলোচনা থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহকে দুনিয়াতে দেখেছেন। এসব আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, নবীগণ আল্লাহকে স্বপ্নে দুনিয়াতে দেখেছেন। কিন্তু আল্লাহ সদৃশ্য না থাকায় তার আসল রুপে কেউ দেখতে পারার কথা নয়। কাজেই কেউ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখলে হয়ত ভবতে পারে সে আল্লাহকে দেখেছে, প্রকৃতপক্ষে সে দেখে নি। কারন আল্লাহ আকার অজানা। কোন মানুষের আকরে দেখলে, সে যদি শরিয়ত মত হুকুম দান করে তবে ভাল মনে করে পালন করা যায় কিন্তু যদি শরিয়াত  পরিপন্থী কোনো আদেশ নিষেধ দিয়ে থাকলে বলল, দূর হও হে আল্লাহর দুশমন, তুমি আমার রব হতে পার না।” কেননা সে এমন সব আদেশ দিচ্ছে যা আল্লাহর শানে অনুপযোগী। এ ধরণের শরিয়াত  পরিপন্থী কোনো আদেশ নিষেধ পারেন না।

৭। দুনিয়াতে আল্লাহর দীদার সম্পর্কে কয়েক জন বিশিষ্ট মুহাদ্দিসের মতামতঃ

ইমাম ইবন জাওযী রহ. বলেছেনঃ

 কেউ যদি বলে আল্লাহকে দেখা সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তাদেরকে বলব, আল্লাহকে তার হুবহু আকৃতিতে দেখা যায় না। বরং কোনো একটা উদাহরণস্বরূপ আকৃতিতে দেখা যায়। যাতে মানুষ বুঝতে পারে। যেমন, আল্লাহ কুরআনের উদাহরণ দিয়েছেন আসমান থেকে পানি বর্ষণের সাথে। এ পানি দ্বারা যেমন সবাই উপকৃত হয় তেমনি কুরআন দ্বারাও সবাই উপকৃত হয়। অতএব এর দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, দুনিয়াতে আল্লাহকে তার নিজস্ব আকৃতিতে দেখা যাবে না। আল্লাহ এসব আকৃতি থেকে পাক-পবিত্র। মানুষ তার আসল আকৃতি কল্পনা করতে পারে না। ( সাইদুল খাতির, ইবনুল জাওযী, পৃ. ৪৪২)। 

 শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন

“সকল মুসলিম ‘আলেম এ কথায় একমত যে, দুনিয়াতে স্বচক্ষে কোনো মু’মিনই আল্লাহকে দেখতে পাবে না। । কিছু আলেম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন, তিনি কি আল্লাহকে দেখেছেন না দেখেন নি? তবে জমহুর আলেমের মতে, তিনি আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখেন নি। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম, সাহাবী ও তাবেয়ী থেকে অনেক সহীহ হাদীস ও আসার বর্ণিত আছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. থেকে একথা সাব্যস্ত নেই যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছেন; বরং তাদের থেকে সাধারণ দেখা বা অন্তরে দেখার কথা উল্লেখ আছে। মি‘রাজের হাদীসসমূহে একথা সাব্যস্ত নেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম সরাসরি স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছেন। ইমাম তিরমিযী বর্ণিত হাদিস, “গতরাতে আমার রব সুন্দরতম আকৃতিতে আমার কাছে এসেছেন”। (তিরমিযী, হাদীস নং ৩২৩৪, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)।

  ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন

স্বপ্নবিশারদগণ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা জায়েয বলেছেন। তবে সে যে রূপেই দেখুক তা আল্লাহর আসল রূপ নয়, কেননা আল্লাহর আকার আকুতি মানুষের ধারণার বাইরে। স্বপ্নে আল্লাহর জাত কখনই দেখা সম্ভব নয়। ( ফাতহুল বারী, সংক্ষেপিত, ১২/৩৮৮)।

শাইখ মুহাম্মদ সালিহ আল-উসাইমীন মন্তব্যঃ

তাকে এক অনুষ্ঠানে জিজ্ঞেস করা হলো, কোনো মু’মিন আল্লাহকে দেখেছে বললে একথা কি সত্য? তিনি উত্তরে বলেছেন, দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা যায় আর আখেরাতে যেহেতু ঘুম নেই, তাই সেখানে জাগ্রত অবস্থাতেই সরাসরি স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখবে।

আসমানে ফিরিশতাদের আলোচনা সভার হাদীস থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। নবী ছাড়া অন্যদের দেখা সম্পর্কে আমার জানা নেই। তাদের ক্ষেত্রে বাস্তবে সংঘটিত হয়েছে কি হয় নি তা আমার জানা নেই। তবে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ.-এর ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে যে, তিনি স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, মানুষ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখতে পারে, তাদের দীনদারীতা অনুসারে উদাহরণস্বরূপ কোনো একটা আকৃতিতে দেখে। অর্থাৎ সে একটা ভালো স্বপ্নে আল্লাহকে দেখে। ( আল-লিকাউল মাফতুহ, ৩০/১৭)।

(দুনিয়াতে আল্লাহর দীদার সম্পর্কে কয়েক জন বিশিষ্ট মুহাদ্দিসের মতামত” অংশ টুকু আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারীর লেথা “আল্লাহর দর্শন” নামক লেখা থেকে নেওয়া হয়েছে, ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব-এর মাধ্যমে প্রচারিত)

মন্তব্যঃ সুতারং আমরা বলতে পারি কুরআন সহিহ হাদিস ও সলফে সালেহিনদের মত অনুসারে আল্লাহকে সরাসরি স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় কোনো মানুষের পক্ষে দেখা অসম্ভব এমনকি নবী রাসূলরাও দেখেন নি। তবে দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা সম্ভব হলেও কোন সাহাবি দেখছেন বলে প্রমান পাওয়া যায় না। আখিরাতে আল্লাহকে দেখা যাবে এ ব্যাপারে শীয়া রাফেজি ছাড়া কেউ অস্বীকার করে না

 সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment