জাকাত সংশ্লিষ্ট ভুলভ্রান্তি প্রথম কিস্তি

জাকাত সংশ্লিষ্ট ভুলভ্রান্তি প্রথম কিস্তি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। লোক দেখান যাকাত প্রদান গুনাহের কাজঃ  

লোক দেখান যাকাত প্রদান করা রিয়া বা ছোট শির্কি কাজের আন্তভুক্ত। আল্লাহর ছাড়া অন্যের সন্তষ্টির জন্য যাকাত প্রদার করা অর্থ হলো, সৃষ্টিকেই সে স্রষ্টা মনে করে এবং তার কাছ থেকেই নিজের দানের প্রতিদান চাওয়া। আল্লাহর কাছ থেকে সে প্রতিদানের আশা না করে, যাকাত গ্রহীতা বা সাধারণ জনগন থেকে প্রতিদান হিসাবে বাহবা পাওয়ার আশায় যাকাত প্রদান করে। এই তার মনে আসে না যে, একদিন সমস্ত কাজের হিসেব-নিকেশ করা হবে এবং প্রতিদান দেয়া হবে, একথাও সে বিশ্বাস করে না। প্রবল বর্ষণে যেমন পাথরের উপরের মাটি ধুয়ে পরিস্কার করে দেয়, আল্লাহর ছাড়া অন্যের সন্তষ্টির জন্য যাকাতও নেকিহীন পরিছন্ন দান হিসাবে পরিগনিত হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে তাঁর পথে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ব্যয় করার পরিবর্তে মানুষের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ব্যয় করে, সে আসলে অকৃতজ্ঞ। মহান আল্লাহ বলেন,

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُبۡطِلُواْ صَدَقَـٰتِكُم بِٱلۡمَنِّ وَٱلۡأَذَىٰ كَٱلَّذِى يُنفِقُ مَالَهُ ۥ رِئَآءَ ٱلنَّاسِ وَلَا يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأَخِرِ‌ۖ فَمَثَلُهُ ۥ كَمَثَلِ صَفۡوَانٍ عَلَيۡهِ تُرَابٌ۬ فَأَصَابَهُ ۥ وَابِلٌ۬ فَتَرَڪَهُ ۥ صَلۡدً۬ا‌ۖ لَّا يَقۡدِرُونَ عَلَىٰ شَىۡءٍ۬ مِّمَّا ڪَسَبُواْ‌ۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِى ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡكَـٰفِرِينَ (٢٦٤)

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা বলে বেড়িয়ে কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাতকে সেই ব্যক্তির মতো নষ্ট করে দিয়ো না যে নিছক লোক দেখাবার জন্য নিজের ধনসম্পদ ব্যয় করে, অথচ সে আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে না এবং পরকালেও বিশ্বাস করে না  তার ব্যয়ের দৃষ্টান্ত হচ্ছেঃ একটি মসৃণ পাথরখন্ডের ওপর মাটির আস্তর জমেছিল৷ প্রবল বর্ষণের ফলে সমস্ত মাটি ধুয়ে গেলো৷ এখন সেখানে রয়ে গেলো শুধু পরিষ্কার পাথর খন্ডটি  এই ধরনের লোকেরা দান  খয়রাত করে যে নেকী অর্জন করে বলে মনে করে তার কিছুই তাদের হাতে আসে না আর কাফেরদের সোজা পথ দেখানো আল্লাহর নিয়ম নয়। (বাকারা ২:২৬৪) 

কাউকে খুশী করা, কারো প্রশংসা বা বাহ বাহ কুড়ানোর জন্য অনেকেই যাকাত প্রদান করে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে ছাওয়াবের নিয়তে যে কোনো ভাল কাজ করা ইবাদতেরই অংশ। আর ইবাদত পাওয়ার একমাত্র যোগ্য সত্তাই হচ্ছেন, মহান  রাব্বুল আলামীন। যে জন্য যে সকল ভাল কাজের সামান্য হলেও লোক দেখান বা প্রশংসা কুড়ানোর আশা বিদ্যমান থাকে, তা মূলত বাতিল। লোক দেখানো  অর্থ ব্যয় না করে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্যই অর্থ ব্যয় করলে আল্লাহ তাকে পুরাপুরি প্রতিদান দিবেন। মহান আল্লাহ তায়ালান বলেনঃ

۞ لَّيۡسَ عَلَيۡكَ هُدَٮٰهُمۡ وَلَـٰڪِنَّ ٱللَّهَ يَهۡدِى مَن يَشَآءُ‌ۗ وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٍ۬ فَلِأَنفُسِڪُمۡ‌ۚ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ٱبۡتِغَآءَ وَجۡهِ ٱللَّهِ‌ۚ وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٍ۬ يُوَفَّ إِلَيۡڪُمۡ وَأَنتُمۡ لَا تُظۡلَمُونَ (٢٧٢)

অর্থঃ মানুষকে হিদায়াত দান করার দায়িত্ব তোমাদের ওপর অর্পিত হয়নি ৷ আল্লাহ যাকে চান তাকে হিদায়াত দান করেন ৷ তোমরা যে ধন-সম্পদ দান –খয়রাত করো, তা তোমাদের নিজেদের জন্য ভালো ৷ তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্যই তো অর্থ ব্যয় করে থাকো ৷ কাজেই দান-খয়রাত করে তোমরা যা কিছু অর্থ ব্যয় করবে , তার পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া হবে এবং এ ক্ষেত্রে কোন ক্রমেই তোমাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হবে না। (সুরা বাকারা ২:২৭২)।

লোক দেখান অনিচ্ছাকৃত দান মুনাফিকের লক্ষন। মুনাফিকেরা আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য দান করত না। মনে গহিনে দানের প্রতিরোধ স্পস্ট তারপরও দান কারণ লোক দেখান (রিয়া)। আল্লাহ কাছে তাদের দেয়া সম্পদ গৃহীত হবে না। মহান আল্লাহ তায়ালান বলেন,

 وَمَا مَنَعَهُمۡ أَن تُقۡبَلَ مِنۡہُمۡ نَفَقَـٰتُهُمۡ إِلَّآ أَنَّهُمۡ ڪَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَبِرَسُولِهِۦ وَلَا يَأۡتُونَ ٱلصَّلَوٰةَ إِلَّا وَهُمۡ ڪُسَالَىٰ وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمۡ كَـٰرِهُونَ (٥٤)

অর্থঃ তাদের দেয়া সম্পদ গৃহীত না হবার এ ছাড়া আর কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে, নামাযের জন্য যখন আসে আড়মোড় ভাংতে ভাংতে আসে এবং আল্লাহর পথে খরচ করলে তা করে অনিচ্ছাকৃতভাবে। ( সুরা তাওবা ৯:৫৪)।  মহান আল্লাহ তায়ালান আরও বলেন:

 وَٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٲلَهُمۡ رِئَآءَ ٱلنَّاسِ وَلَا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَلَا بِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأَخِرِ‌ۗ وَمَن يَكُنِ ٱلشَّيۡطَـٰنُ لَهُ ۥ قَرِينً۬ا فَسَآءَ قَرِينً۬ا (٣٨)

অর্থঃ আর আল্লাহ তাদেরকেও অপছন্দ করেন, যারা নিজেদের ধনসম্পদ কেবল মাত্র লোকদেরকে দেখাবার জন্য ব্যয় করে এবং আসলে না আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে আর না আখেরাতের দিনের প্রতি৷ সত্য বলতে কি, শয়তান যার সাথী হয়েছে তার ভাগ্যে বড় খারাপ সাথীই জুটেছে৷ (সুরা নিসা ৪:৩৮)

লোক দেখান অনিচ্ছাকৃত আল্লাহর ছাড়া অন্যের সন্তষ্টির জন্য যাকাত বা দান ছদগা করা যে ছোট শির্ক এতে কারো কোন দ্বিমত আছে বলে বলে যানা যায় না। এ ব্যপারে উম্মতের বঈজমা হয়েছে।

 

২। ভুল খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় একটি বিদআতি কাজঃ

অনেকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারনে। যাকাতের অর্থ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, বাস্তাঘাট নির্মানসহ অনেক জন কল্যান মুলক কাজে ব্যয় করে থাকের। এমন কি কেউ কেউ যাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদ ও গোরস্থান তৈরী করে যা সম্পূর্ণ অবৈধ নয়। তাদের এই সকল দানের দ্বারা কোন প্রকার যাকাত আদায় হবে না। যে সকল খাতে যাকাত আদায় হবে না, এমনই কয়েকটি খাত হলোঃ

১। অমুসলিমদের যাকাত দেয়া যাবে না। তবে ইসলাম ধর্মে আকৃষ্ট করার জন্য দেয়া যাবে।

২। কোন প্রতিষ্ঠানে যাকাত দেয়া যাবে না। তবে যদি ঐ প্রতিষ্ঠান যাকাত নিয়ে, যাকাতের আট খাতের কোন খাতে ব্যয় করে তবে তাদের যাকাত দেয়া যাবে।

৩। মসজিদ বা মসজিদের দান বাক্সে বা নির্মাণ কাজে যাকাত প্রদান করা যাবে না।

৪। মাদ্রাসার নির্মাণ কাজ, মাদ্রাসার উস্তাযদের বেতন-ভাতা এসব খাতেও যাকাত প্রদান করা যাবে না। তবে মাদ্রাসার সাথে যদি ইয়াতিম খানা থাকে, তবে সেই ইয়াতিম খানায় দান করা যাবে। অনেক মাদ্রাস ইয়াতিমের নামে চাঁদা নিয়ে, মাদ্রাসার কোন ইয়ামিত দ্বারা আবার মাদ্রাসায় দান করে। এই কাজ প্রতারণার সামিল। অর্থাৎ ইয়াতিমের নামে মদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রতারণা করে টাকা আদায় করে। বিশেষ করে কুরবানীর চামড়া টাকা। এই টাকা শুধুই ইয়াতিমদরে হক। কোন প্রাকার প্রতারণার মাধ্যমে মাদ্রাসার কাজে ব্যয় করা যাবে না।

৫। যাকাতের অর্থ দ্বারা রমাজানের মাসে হাফিদদের হাদিয়া প্রদান করা যাবে না।

৬। কাজের বুয়াকে তার বেতন ও বোনাস বাদে যাকাত প্রদান করা যাবে। তবে যদি কেউ ঈদের সময় যাকাতের টাকা থেকে তাদের বেতন বাড়িয়ে দেয়। তারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলেও তা বৈধ নয়। কারণ পারিশ্রমিক বাবদ যাকাত আদায় করা যায় না।

৭। যাকতের টারা দ্বারা পুল, ব্রিজ, রাস্তাঘাট ইত্যাদি নির্মান করা যাবে না।

৮। যাকাতের টাকা দ্বারা গোরেস্থান তৈরি করা যাবে না।

৯। অফিসের কোন কর্মচারী অসুস্থ হলে চিকিৎসা খরচ বাবদ বেতন বোনাস বাবত বা কর্মচারিকে খুসি করা জন্য জাকাত দেয়া যাবে না। তবে কর্মচারি যদি যাকাতের উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দানে অসুবিধা নাই।

ইসলামি শরীয়তে যাকাতের সুনির্দিষ্ট খাত আছে ঐ খাতের বাহিরে যাকাত দিলে আদায় হবে না। আল্লাহ তা’আলা কুরআন পাকে যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাতসমূহ উল্লেখ করে দিয়েছেন। কুরআনে যাকাতের অর্থ ব্যয়ের জন্য ৮টি খাত উল্লিখিত হয়েছে। 

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, 

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

অর্থঃ যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা তাওবা ৯:৬০)

১। ফকিরঃ ফকির যারা নিজেদের সাধারণ জীবন যাপন করতে পারে না। অনেক দু:খে কষ্টে কালাতিপাত করে।

২। মিসকিনঃ সহায়-সম্বলহীন হৃতসর্বস্ব ব্যক্তি যার নিকট নগদ অর্থ বলতে কিছুই নেই- এমন লোকদের যাকাত দেয়া হবে। 

৩। কর্মকর্তা-কর্মচারীঃ যাকাতের পয়সা বা সম্পদ উসুল করার কাজে নিয়োজিত কর্মচারী কর্মকর্তাদের বেতন ভাতার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা হবে। চাই এরা ধনী হোক অথবা গরিব।

৪। কৃতদাসকে মুক্তকরার জন্যঃ  কৃতদাস বা কৃতদাসীকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।

৫। মুআল্লাফাতে কুলুবঃ  অমুসলিম বা কাফের সম্প্রদায়ের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। যাতে তারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাদের অন্তরে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। একমাত্র এ ধরনের কোন উদ্দেশ্য ছাড়া অমুসলিমদের মধ্যে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।

সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়ন যুদ্ধের সময় আমাকে দান করেন। তিনি (মুহাম্মদ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আমার নিকট সৃষ্টির মধ্যে সবচে ঘৃণ্য ব্যক্তি। কিন্তু তিনি আমাকে দান করতে থাকলেন, এমনকি আমার কাছে হয়ে গেলেন সৃষ্টির মধ্যে সবচে প্রিয় ব্যক্তি। (তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৬৬৩)

৬। ঋণগ্রস্তঃ ঋণগ্রস্ত কোন ব্যক্তির ওপর তার ঋণের বোঝা কমানো বা ঋণ মুক্ত করার উদ্দেশ্যে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। 

৭। ফি সাবিলিল্লাহ খাতঃ ফি সাবিলিল্লাহ বলতে যারা আল্লাহর পথে বিভিন্নভাবে জিহাদরত তাদের সার্বিক সাহায্যার্থে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে। 

৮। মুসাফিরদের জন্যঃ কোন মুসাফির ব্যক্তি পথিমধ্যে অর্থাভাবে বিপদগ্রস্থ বা অসহায় হয়ে পড়েছে। বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছার মত কোন সম্বল তার সঙ্গে নেই।

মন্তব্যঃ এই আট প্রকার ছাড়া অন্য কোন খাতে যাকাতের টাকা প্রদান করলে যাকাত আদয় হবে না। তাই এই সম্পর্ক যথাযথ ইলম অর্জন করে যাকাত প্রদান করতে হবে।

৩। শাড়ি লুঙ্গি দ্বারা যাকাত প্রদানঃ

আমাদের বাংলাদেশে একটি প্রথা চালু আছে যে, শাড়ি লুঙ্গি দ্বারা যাকাত প্রদান। সাধারণত যাদের উপর যাকাত ফরজ ঐ শ্রেণীর শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীগণ রমজানের শেষ দিকে বা কুরবাণীর ঈদের কিছু আগে ভাগে মাইকে ঘোষনা করে থাকেন যে, আগামি এত তারিখ অমুক ব্যক্তি যাকাতের শাড়ি লূঙ্গি বিতরণ করবেন। যাকাত নেয়ার তারিখ এলাকার সকল দরিদ্র মানুষ শাড়ি লূঙ্গির আশায় সকাল থেকে দাতার বাড়ির সামনে দীর্ঘ লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকে। যে পরিমান শাড়ি লূঙ্গি যাকাত দিবেন তার থেকে কয়েকগুন বেশী যাকাত প্রার্থী বেশী থাকে।  তাই যাকাত পাওয়ার আশায় সবাই তাড়াহুড়া করে ভিরের সৃষ্ট করে নিকট অতীতে বহু যাকাত প্রার্থী দরীদ্র মানুষ পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। এর থেকে আর জুলুম কি হতে পারে। যাকাতের অর্থ দরীদ্রদের প্রাপ্য হক, তাদের নিকট পৌছে দেয়াই হক। কিন্তু এ কেনম তামাসা। যা হোক ব্যাপারটি আগের থেকে আস্তে আস্তে করছে। আরেটি বিষয় না বললেই নয়। অনেকের ধারন যাকাতের শাড়ি লুঙ্গি মানেই কম দামি। তাই রমজান মাসে দেখা যায় বিভিন্ন মার্কেট বা শপিংমলে সামনে লেখা থাকে, ‘এখানে যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি পাওয়া যায়’। তাদের ধারণা, যাকাতের শাড়ি লুঙ্গির অর্থ হলো সাধারণ মানের চেয়েও একটু নিম্নমানের কাপড়। এভাবে যাকাত প্রদানের আগে বিপুল প্রচারণা ও নিম্নমানের কাপড় দিয়ে তা আদায় করা একটি কঠিক অন্যায় কাজ। জাকতের নামে শুধু বিদআত বললেও ভুল হবে।

এ বিষয়ে ইসলামী আইনজ্ঞরা বলেন, নগদ টাকা দিয়ে যাকাত আদায় করা উত্তম, যেন যাকাত গ্রহীতা নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যয় করতে পারে। গ্রহীতার প্রয়োজন বিবেচনা না করে ঢালাওভাবে শাড়ি কাপড় ইত্যাদি দ্বারা যাকাত আদায়ের প্রচলনটি ঠিক নয়। সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য যাকাত প্রদান করা ফরজ ইবাদত। ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রচার ও প্রদর্শন নিন্দনীয় ও বর্জনীয়। আর সাধারণ মানের চেয়ে নিম্নমানের কাপড় দেওয়া মানুষের প্রতি অসম্মানের শামিল। অথচ আল্লাহ তাআলা মানুষকে সম্মানিত করেছেন। ধনী-গরিব সবারই মানুষ হিসেবে এই সম্মান প্রাপ্য।

শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন রাহিমাহুল্লহ বলেন,Bottom of Form

 সম্পদের যাকাতের পরিবর্তে কাপড় ইত্যাদি প্রদান করা জায়েয হবে না। (ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, প্রশ্ন নম্বর ৩৬৬) 

৪। আত্মীয় স্বজনদের যাকাত প্রদানঃ

দানের জন্য নিকট আত্মীয় স্বজনের হক বেশী।  তাই যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে রক্তের সম্পর্কেকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। অনেকে মনে করেন, সহোদর ভাই-বোন, ফুফু-ফুফা, খালা-খালু, মামা-মামি দের যাকাত প্রদান করা যাবে না। এই সকর নিকট আত্মীয় স্বজন যেহেতু যাকাতদাতার মূল বা শাখা নয়, তাই তাদের যাকাত দেওয়া যাবে, যদি তারা যাকাত গ্রহণের উপযোগী হয়। সহিহ হাদিসে এসছে,

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদিনার আনসারীগণের মধ্যে আবূ তালহা (রাঃ) সব চাইতে অধিক খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাগানে প্রবেশ করে এর সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনও পূণ্য লাভ করবেনা (৩ঃ ৯২) তখন আবূ তালহা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ বলছেনঃ তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনও পূণ্য লাভ করবেনা। আর বায়রুহা বাগানটি আমার কাছে অধিক প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সাদকা করা হল, আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার কাছে সঞ্চয়রূপে থাকবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন তাকে দান করুন।

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাকে ধন্যবাদ এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ তা শুনলাম। আমি মনে করি তোমার আপনজনদের মধ্যে তা বন্টন করে দাও। আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাই করব। তারপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরের মধ্যে তা বন্টন করে দিলেন। (সহিহ বুখারী ১৩৭৬ ইফাঃ)

নিকট আত্মীয় হলে্‌ও নিম্মের দুটি শাখায় যাকাত দেয়া যাবে না। অনেক না জানার কারনে অনেক সময় যাকাত প্রদান করে থাকে। এদের যাকাত বাদে অন্য সম্পদ উপহার বা দান যে কোন হিসাবে দেয়া যাবে। কিন্তু এই সকর নিকট আত্মীয় অসহায় হলে নিজের উপর ভরোন পোষন ওয়াজিব হয়ে যায়। কাজেই যাকাতের প্রশ্ন আসে না।

যাকাত দাতার রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে, উপরের দিকের শাখার কাউকে যাকাত প্রদান করা যাবে না। যেমনঃ মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি ইত্যাদি।

ঠিক অনুরুপভাবে যাকাত দাতার নিজের মাধ্যমে যারা দুনিয়ায় এসেছে, একই ভাবে তাদের সন্তানদের যাকাত দেওয়া যাবে না। যেমনঃ ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনী ও তাদের সন্তানাদি। স্ত্রী ও স্বামী একে অন্যকে যাকাত দিতে পারবে না।

 

৫। কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগঃ

বর্তমানে কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা একটি ব্যবসার মাধ্যম হিসাবে পরিগনিত হয়। কোম্পানির শেয়ার সাধারণত দু’টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শেয়ার ক্রয় করা হয়। যথাঃ

১। সরাসরি কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে কোম্পানির অংশীদার হওয়া

২। কোম্পানির শেয়ারে ক্রয় বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করা

১। সরাসরি কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে কোম্পানির অংশীদার হওয়াঃ

সাধারণত কোম্পানি ব্যবসায় মূলধন বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে। অর্থাৎ কোম্পানি কল-কারখানা স্থাপন করে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন এবং বাজারজাতের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে। এই কোম্পানির  কল-কারখানা স্থাপন হলো, তার মুলধন এর উপর কোন যাকাত নেই। যদি শেয়ার হোল্ডা নিশ্চিতভাবে জানে যে, কল-কারখানা স্থাপন মুলধনের পরিমান এত ও উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত মুলধন পরিমান এত। তবে তাকে কল-কারখানা স্থাপন মুলধনের উপর আর যাকাত দিতে হবে না। শুধু উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত মুলধন এবং বাজারজাতের মাধ্যমে অর্জিত মুনাফা যদি নিসাব পরিমান হয়, তবে যাকাত দিতে তবে। এ ক্ষেতে শেয়ার হোল্ডার প্রথমে কোম্পানির ব্যালেন্স শিট দেখে কোম্পানির স্থায়ী ( Fixed Assets) সম্পদ ও যাকাতযোগ্য সম্পদের অনুপাত বের করবেন। কোম্পানির স্থায়ী সম্পদ হলো বিল্ডিং, মেশিন, জমি, গাড়ি ইত্যাদি। অর্থাৎ যেগুলো বিক্রি করা হয় না। আর যাকাতযোগ্য সম্পদ হলো নগদ টাকা, ব্যবসায়িক সামগ্রী ও বিভিন্ন পর্যায়ের কাঁচামাল ইত্যাদি। অতঃপর কোম্পানির মোট সম্পদের ( Assets ) যত পার্সেন্ট যাকাতযোগ্য হয় সে তার শেয়ারের বাজার দরের ততপার্সেন্টের যাকাত আদায় করবে।

শেয়ার ক্রেতার অর্থ কল-কারখানা ইত্যাদিতে কি পরিমাণ ব্যবহার হয়েছে তা যদি জানা না যায়, তাহলে সতর্কতামূলক শেয়ারের যা বাজার মূল্য হবে, তার যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, যদি কোনো কোম্পানির প্রসপেক্টাস বা তার বাৎসরিক সভায় একথা উল্লেখ করে যে, কোম্পানি প্রতি বছর নিসাব পরিমাণ মালের মালিক এমন শেয়ার হোল্ডারের যাকাত নিজ উদ্যোগে আদায় করে দিবে। তাহলে কোম্পানি এ দায়িত্ব পালনের কারনে শেয়ার হোল্ডার এই বিনিয়োগের যাকাত থেকে মুক্ত থাকবে। আর যদি কোম্পানি যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা না করে। তাহলে শেয়ার হোল্ডারগণ প্রত্যেকেই নিজ অংশের যাকাত আদায় করে দিবেন।

যেমনঃ একটি কোম্পানি কল-কারখানার মাধ্যমে লোহা, সিমেন্ট বা দ্রব্য-সামগ্রী উৎপাদন করে। এই দ্রব্য বাজারজাতের মাধ্যমে ব্যবসা করে। যে কেউ সরাসরি এই কোম্পানির স্থাপনের জন্য শেয়ার ক্রয় করলে তাকে যাকাত দিতে হবে না। তার যাকাত প্রদনের বিধান হল, যে পরিমাণ অর্থ কল-কারখানা ইত্যাদিতে ব্যবহার হয়েছে, তা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট মূলধন (উত্পাদ কাজে), উৎপাদিত দ্রব্য ও অর্জিত মুনাফার যাকাত দিতে হবে।

২। কোম্পানির শেয়ারে ক্রয় বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করাঃ

আমাদের সমাজে এই শেয়ারের ব্যবসা বেশ প্রচলিত। দেশে প্রতিষ্ঠিত শেয়ার বাজারের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করে থাকে। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ না করে শেয়ার বাজারের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় বিক্রয় মুনাফা অর্জণ করে। অর্থাৎ শেয়ারের দরপতন ও বৃদ্ধি লক্ষ্য করে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে। এই প্রকার শেয়ার যা বেচা-কেনার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা হয়। তথা শেয়ারের দরপতন লক্ষ্য করে শেয়ার ক্রয় করা, আবার যখন উক্ত শেয়ারের দর বৃদ্ধি পায়, তখন তা বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করা। এ প্রকার শেয়ারের যাকাত আদায়ের পদ্ধতি হল, ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা টাকার মত। ব্যাংকে গচ্ছিত টারা উপর যেমন যাকাত ওয়াজিব হবে ঠিক তেমনি শেয়ার বাজরে বিনিয়োগ কৃত টাকার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। শেয়ার হোল্ডারকে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার নির্দিষ্ট দিনে উক্ত শেয়ারের যা বাজার মূল্য হবে, তার যাকাত দিতে হবে। শেয়ারের ব্যবসা করলে তার বাজার মূল্য বা শেয়ার থেকে প্রাপ্ত মুনাফা তার অন্য মালের সাথে মিলিয়ে নিসাব পরিমাণ হতে হবে

৬। ব্যবহৃত স্বর্ণালোঙ্কারে যাকাতঃ

সোনা-রুপার যাকাত দেয়া ফরজ। মহান আল্লাহ এরশাদ হয়েছে:

**وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيم

অর্থঃ এবং যারা সোনা রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও (সূরা তাওবা ৯:৩৪)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: সোনারুপার মালিক যদি সবের হক আদায় না করে, তবে তা দিয়ে কিয়ামতের দিন আগুনের পাত তৈরি করা হবে, অতঃপর তা আগুনে গরম করা হবে এবং তা দিয়ে তার পার্শ্বদেশে, কপালে পিঠে ছেঁকা দেয়া হবে পাত ঠান্ডা হয়ে গেলে আবারও তা গরম করে আনা হবে আর এটা হবে এমন এক দিনে, যা হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের পরিমাণ দীর্ঘ বান্দাদের মাঝে শেষ ফয়সালা হওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকবে ফয়সালা শেষ হলে তাদের একদলকে জান্নাতের অপর দলকে জাহান্নামের পথ দেখিয়ে দেয়া হবে (সহিহ মুসলিম)

মন্তব্যঃ সঞ্চয় ও সংরক্ষণের জন্য তৈরিকৃত অলংকার অথবা এমন অলংকার যা ব্যবসার উদ্দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ধরনের অলংকারে যাকাত দিতে হবে। এ সম্পর্কে কারো কোন দ্বিমত নাই। ব্যবহারের জন্য তৈরিকৃত অলংকার। এ প্রকৃতির অলংকারেও জিম্মাদারি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যাকাত প্রদান করা উত্তম। জনৈক নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলেন। সাথে ছিল তার মেয়ে। মেয়ের হাতে সোনার দুটি পুরো চুড়ি ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন,‘তুমি কি এর যাকাত দাও? সে বলল, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তোমার কি ভালো লাগবে, যদি আল্লাহ তাআলা এ দুটির পরিবর্তে পরকালে তোমাকে দুটি আগুনের চুড়ি পরিয়ে দেন?’ বর্ণনাকারী বলেন ‘অতঃপর মেয়েটি চুড়ি দুটি খুলে ফেলল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সোপর্দ করল ও বলল, ‘এ দুটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য।’ (বর্ণনায় আবু দাউদ)

আলেমদের কেউ কেউ অলংকারে যাকাত নেই বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের যুক্তি অলংকার এমন সম্পদ নয় যা (লাভের আশায়) পরিবর্ধিত করার জন্য সংরক্ষণ করা হয়। বরং তা কেবল ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রাখা হয়, পোশাক, ফার্নিচার ও ঘরের আসবাপত্রের মতোই। উপরন্তু অলংকার হলো সৌন্দর্য অর্জনার্থে নারীর প্রয়োজনীয় বিষয়। আর যাকাতের ক্ষেত্রে মূল বিবেচনার বিষয় হলো সম্পদের বর্ধনশীলতা, যা যাকাত প্রয়োগের জন্য জরুরি।

তবে সতর্কতার দাবি হলো সৌন্দর্যলাভ ও বৈধ ব্যবহারের জন্য তৈরিকৃত অলংকারের যাকাত দেয়া। যাকাতের জিম্মাদারি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এটাই উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘যাতে তোমার সন্দেহ লাগে তা পরিত্যাগ করে যা তোমার কাছে নিঃসন্দেহ মনে হয় তা ধরো।’(বর্ণনায় বুখারী)

সোনা-রুপা ব্যতীত অন্যকোনো অলংকার, যেমনঃ ব্রোঞ্জ, মতি-মুক্তা ইত্যাদির ক্ষেত্রে যাকাত প্রযোজ্য হবে না, এসবের মূল্য যতোই হোক না কেন। তবে যদি ব্যবসায়িক উদ্দেশে ব্যবহৃত হয় তাহলে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে তাতে যাকাত আরোপিত হবে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment