বাইতুল্লাহ বা কাবাঘরের নির্মাণ ও সংস্কারের ইতিহাস

বাইতুল্লাহ বা কাবাঘরের নির্মাণ ও সংস্কারের ইতিহাস

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

বাইতুল্লাহ হলো পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তায়ালার অপূর্ব নিদর্শন। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আল্লাহ তায়ালা বাইতুল্লাহকে তাঁর মনোনীত বান্দাদের মিলনমেলা হিসেবে কবুল করেছেন। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। বাইতুল্লাহকে কেন্দ্র করে ইসলামের রাজধানী হিসেবে মক্কা জগত বিখ্যাত এবং সুপরিচিত। পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের জন্য সর্ব প্রথম এই বাইতুল্লাহ নির্মাণ করা হয়। এই বাইতুল্লাহ কে উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেনঃ

*إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَ*

অর্থঃ নিঃসন্দেহে সর্ব প্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে স্থাপন করা হয়েছে, যা মক্কায় অবস্থিত। যা বিশ্বাবাসির জন্য বরকতময় হেদায়েত। ( সুরা ইমরান ৩:৯৬)

বাইতুল্লাহ প্রথম নির্মান নিয়ে সমাজে অনেক কথা প্রচলিত আছে। এই সকল কথার উত্তর খুজে পাওয়া যায় তাফসিরে ইবনে কাসিরে। তাফসিরে ইবনে কাসিরে সুরা বাকারার ১২৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় এক পর্যায় লিখেনঃ “বাইতুল্লাহ সর্বপ্রথম নির্মাতা কেউ কেউ বলেন যে, কাবা শরীফ ফেরেশতাগণ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু এ কথাটি নির্ভরযোগ্য নয়। কেউ কেউ বলেন যে, হযরত আদম (আঃ) সর্বপ্রথম পাঁচটি পর্বত দ্বারা কাবা শরীফ নির্মাণ করেন। পর্বত পাঁচটি হচ্ছেঃ (১) হেরা, (২) তুরে সাইনা, (৩) ভূরে যীতা, (৪) জাবাল-ই-লেবানন এবং (৫) জুদী। কিন্তু একথাটিও সঠিক নয়। কেউ বলেন যে, হযরত শীষ (আঃ) সর্বপ্রথম নির্মাণ করেন। কিন্তু এটাও আহলে কিতাবের কথা।

হাদিসের নামে জালিয়াতি কিতাবে ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীল রাহিমাহুল্লাহ লিখেনঃ আদম আলাইহিস সালাম বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেছিলেন বলে প্রচলিত আছে। মূলত বিভিন্ন ঐতিহাসিক, মুফাস্সির বা আলিমের কথা এগুলো। এ বিষয়ক হাদীসগুলো দুর্বল সনদে বর্ণিত। কোনো কোনো মুহাদ্দিস এ বিষয়ক সকল বর্ণনাই অত্যন্ত যয়ীফ ও বাতিল বলে গণ্য করেছেন। আল্লামা ইবনু কাসীর বাইতুল্লাহ বিষয়ক আয়াতগুলো উল্লেখ করে বলেন, এ সকল আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্ট জানিয়েছেন যে, একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের জন্য বিশ্বের সকল মানুষের জন্য নির্মিত সর্বপ্রথম বরকতময় ঘর বাইতুল্লাহকে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নির্মাণ করেন। এ স্থানটি সৃষ্টির শুরু থেকেই মহা সম্মানিত ছিল। আল্লাহ সে স্থান ওহীর মাধ্যমে তাঁর খলীলকে দেখিয়ে দেন। তিনি আরো বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটিও সহিহ হাদীস বর্ণিত হয়নি যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর পূর্বে কাবা ঘর নির্মিত হয়েছিল…। এ বিষয়ক সকল বর্ণনা ইসরাঈলীয় রেওয়ায়াত। আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, এগুলোকে সত্যও মনে করা যাবে না, মিথ্যাও বলা যাবে না। (আল-বিদায়া ১/১৬৩, তাফসীর ইবন কাসীর ১/১৭৩-১৭৪, ৩/২১৬, হাদিসের নামে জালিয়াতি)

১। সমাজে প্রচলিত মিথ্যা বা ঈজরাইলী বর্ণানাগুল নিম্মরুপঃ

প্রথম বর্ণনাঃ ফিরিস্তাগন কর্তৃক বাইতুল্লাহ নির্মাণ

সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম বর্ণিত হাদিস থেকে ‘বাইতুল মামুর’ সম্পর্কে জানা যায়। মিরাজ সম্পর্কে দীর্ঘ বর্ণনার এক পর্যায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতঃপর বায়তুল মামূরকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটি বাইতুল মামূর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফেরেশতা সালাত আদায় করেন। এরা এখান হতে একবার বাহির হলে দ্বিতীয় বার ফিরে আসেন না। (সহিহ বুখারী ৩২০৭, সহিহ মুসলিম ৩০০ ও ৩০০৫)।

এই হাদিসের আদতে জালিয়াতগন ফিরিস্থাদের নামেও মিথ্যা রচনা করছেন। তাদের দাবী, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে ফেরেশতারা বাইতুল মামূর আদতে কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবা ঘরের ঠিক ওপরে ঊর্ধ্ব আকাশে ‘বাইতুল মামুরে’ ফেরেশতারা অনেক আগে থেকে তওয়াফ করে আসছিলেন। তাই আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের দ্বারা এই বাইতুল্লাহ নির্মাণ করো। যখন তাঁরা কাবা ঘর নির্মাণ করেন, তখন থেকেই আল্লাহ তায়ালা তাঁদের কাবাঘর তাওয়াফ করার নির্দেশ দেন।

দ্বিতীয় বর্ণনাঃ আদম আলাইহিস সালাম কর্তৃক নির্মাণ

সমাজে প্রচলিত আছেঃ আল্লাহ তায়ালা হজ্জরত আদম ও হাওয়াকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে বলেন, ‘আমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করো। অতঃপর হজ্জরত আদম আলাইহিস সালাম জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এর অঙ্কিত স্থানে খননকাজ শুরু করে দেন। আর হজ্জরত হাওয়া আলাইহিস সালাম সেই মাটি বহন করে নিয়ে যেতেন। একপর্যায়ে সেখানে পানির দেখা মিলল। হঠাৎ কে যেন ডাক দিয়ে বলল, ‘হে আদম! যথেষ্ট হয়েছে। ‘যখন তাঁরা এ ঘর নির্মাণ করেন তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁদের এ ঘর তওয়াফ করার নির্দেশ দিলেন। এ সম্পর্কে আরও বর্ণিত আছে, হজ্জরত আদম আলাইহিস সালাম পাঁচটি পাহাড়ের পাথর দিয়ে কাবাগৃহ নির্মাণ করেছেন। ফিরিস্তগন এই পাথরগুলো সঞ্চয় করে দিতেন। আর পাহাড়গুল হলো, জাবালে হেরা, জুদি, লুবনান, সিনাই ও জাইতুন।

আদম আলাইহিস সালাম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম এর পৃথিবীতে মিলন হলে তারা উভয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং বাইতুল মামুরের আকৃতিতে পবিত্র কাবাঘর স্থাপন করেন। এখানে হজ্জরত আদম আলাইহিস সালাম সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকেন। 

তাদের মতে, মানব সৃষ্টির বহু আগে মহান আল্লাহ তায়ালা কাবাঘর সৃষ্টি করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাইতুল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভূপৃষ্ট থেকে দু’হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন এবং আদম আলাইহিস সালাম কাবাঘর আল্লাহর আদেশে পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হলো। শত শত বছর অতিবাহিত হলো। আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতো, আল্লাহর কাছে হাজিরা দিতো এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে। কাবাঘরে এসে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিত। এভাবে চলতে চলতে দিন গত হতে থাকলো। এরপর হজ্জরত শীষ আলাইহিস সালাম কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করলেন। দিন দিন একত্ববাদীর সংখ্যা বাড়তে থাকলো।

তৃতীয় বর্ণনাঃ বাইতুল্লাহ বা কাবা কে কন্দ্রকরে পৃথিবী সৃষ্ট হয়ঃ

কথিত আছে, পৃথিবীতে ভূমির সৃষ্টি হয় বিশাল সাগরের মাঝে, এর মাঝে মক্কায় অবস্থিত কাবা ঘরের স্থলকে কেন্দ্র করেই। তাই, কাবার নিচের অংশটুকু অর্থাৎ কাবাঘরের জমিনটুকু হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম মাটি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হয়ে সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। পরে এক মহাদেশ থেকেই সৃষ্টি হয় সাত মহাদেশের। মাটিতে রূপান্তর হওয়ার আগে কাবা সাদা ফেনা আকারে ছিল। সে সময় পৃথিবীতে পানি ছাড়া কিছু ছিল না।

আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর। মাটি বিছানোর পর জমিন নড়তে থাকে। হেলতে থাকে। এর জন্য মহান আল্লাহ পাহাড় সৃষ্টি করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয় (হেলে না যায়)।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১৫)। এভাবেই পবিত্র কাবার বরকতে পৃথিবী স্থির হয়ে যায়। ধীরে ধীরে এখানে মানবসভ্যতার গোড়াপত্তন হয়।

সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আল্লাহ পবিত্র কাবা শরিফকে তার মনোনীত বান্দাদের মিলনমেলাস্থল হিসেবে কবুল করেছেন। দুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের কিবলা এই কাবা শরিফ।

মন্তব্যঃ আমরা আগেই জেনেছি বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেন ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালাম। আদম আলাইহিস সালামের প্রশ্ন আসে না। কিন্তু জালকারীগণ তাদের বর্ণনা সাথে কুরআন ও সহিহ হাদিসকে এমন ভাবে জুড়ে দেয় যে, সঠিক জ্ঞান না থাকলে ধরা কষ্টকর। আগের বর্ণায় সহিহ হাদিসের বর্ণিত বাইতুল মামুরকে সম্পৃক্ত করেছে। যাতে সাধারণ লোক ধোঁকা খায়।

চতুর্থ বর্ণনাঃ সনদবিহীন বর্ণনা সত্য মিথ্যা জানা যায় নাঃ

অনেক ঐতিহাসিকের মতে কা‘বাঘর ১২ (বারো) বার নির্মাণ পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। নিচে নির্মাতা, পুনঃনির্মাতা ও সংস্কারকের নাম উল্লেখ করা হলঃ

১. ফেরেশতা। ২. আদম। ৩. শীছ ইবন আদম। ৪. ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ.। ৫. আমালেকা সম্প্রদায়। ৬. জুরহুম গোত্র। ৭. কুসাই ইবন কিলাব। ৮. কুরাইশ। ৯. আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের রা. (৬৫ হি.)। ১০. হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ (৭৪ হি.)। ১১. সুলতান মারদান আল-উসমানী (১০৪০ হি.) এবং বাদশাহ ফাহদ ইবন আবদুল আজীজ (১৪১৭ হি.)। (ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস আব্দুল গনী, তারীখু মাক্কাতিল মুকাররামা, মাতাবিউর রাশীদ, মদীনা মুনাওয়ারা।

মন্তব্যঃ প্রথম বর্ণানাগুলোর সনদ নাই কিন্তু সাত নম্বরের পরেরগুলোর ঐতিহাদিক সদন আছে। 

বাইতুল্লাহ ছবি

২। ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালাম কর্তৃক নির্মাণঃ

সবচেয়ে নিভর্রযোগ্য বর্ণনা মতে মহান আল্লাহর আদেশে ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালাম কাবাগৃহ নির্মাণ করেন। ইসমাইল আলাইহিস সালাম পাথর নিয়ে আসতেন এবং ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম নির্মাণ কাজ করতেন। ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালাম কর্তৃক নির্মাণ করার সুষ্পষ্ট প্রমান কুরআনুর কারিমে পাওয়া যায়। তাদের দুজনকে কাবাঘর নির্মানের জন্য নির্দেষ প্রদান করা হয়। সাথে সাথে এই ঘর নির্মানের কারন ব্যাখ্যা করে আল্লাহ বলেন,

وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْناً وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ

অর্থঃ যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মেলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। ( সুরা বাকারা ২:১২৫ )

মন্তব্যঃ এই আয়াত আলোকে বলা যায়, বাইতুল্লাহ বা কাবাঘর নির্মানের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো, সালাত আদায় ও হজ্জ করা তথা সকল মানুষের জন্যে সম্মেলন ও শান্তির স্থল হিসাবে তৈরি করা।

*** কাবা ঘর নির্মাণকালে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ দরবানে দোয়া করেছিলেন, সেই কথাও পবিত্র কুরআন আল্লাহ উল্লেখ করছেন। তিনি এরশাদ করেন,

وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٲهِـۧمُ رَبِّ ٱجۡعَلۡ هَـٰذَا بَلَدًا ءَامِنً۬ا وَٱرۡزُقۡ أَهۡلَهُ ۥ مِنَ ٱلثَّمَرَٲتِ مَنۡ ءَامَنَ مِنۡہُم بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأَخِرِ‌ۖ قَالَ وَمَن كَفَرَ فَأُمَتِّعُهُ ۥ قَلِيلاً۬ ثُمَّ أَضۡطَرُّهُ ۥۤ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلنَّارِ‌ۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ (١٢٦) وَإِذۡ يَرۡفَعُ إِبۡرَٲهِـۧمُ ٱلۡقَوَاعِدَ مِنَ ٱلۡبَيۡتِ وَإِسۡمَـٰعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّآ‌ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ (١٢٧) رَبَّنَا وَٱجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَيۡنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةً۬ مُّسۡلِمَةً۬ لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبۡ عَلَيۡنَآ‌ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ (١٢٨) رَبَّنَا وَٱبۡعَثۡ فِيهِمۡ رَسُولاً۬ مِّنۡہُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡہِمۡ ءَايَـٰتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَيُزَكِّيہِمۡ‌ۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ (١٢٩)

অর্থঃ স্মরণ করুন যখন ইব্রাহীম বলেছিলেনঃ

*হে আমার প্রতিপালক! একে নিরাপদ শহর করুন আর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদেরকে ফলমূল হতে জীবিকা প্রদান করুন।

তিনি (আল্লাহ) বললেন, যে কেউ কুফরী করবে তাকেও কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দিব। অতপর তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব এবং তা কত নিকৃষ্ট পরিণাম! স্মরন করুন, যখন ইব্রাহীম ও ইসমা’ঈল কা’বা ঘরের প্রাচীর তুলছিলেন তখন তারা বলেছিলেন,

*হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ কাজ কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।

*হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আপনার একান্ত অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর হতে আপনার এক অনুগত উম্মাত করুন। আমাদেরকে ‘ইবাদাতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হন, আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুণ যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয় তুমিই পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা। (আল-বাকারা ২:১২৬-১২৯)

**ইবাদতের পাশাপাশি বাইতুল্লাহ নির্মাণের উদ্দেশ্য হল, শির্কমু্ক্ত নির্ভেজাল একত্ববাদের প্রতিষ্ঠার করা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَن لَّا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ

অর্থঃ যখন আমি ইব্রাহীমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্যে, নামাযে দন্ডায়মানদের জন্যে এবং রকু সেজদাকারীদের জন্যে। (সুরা হাজ্জ্ব ২২:২৬) 

৩। কাবা ধ্বংশের ব্যর্থ চেষ্টাঃ

আবরাহা সাবাহ হাবশী (তিনি নাজ্জাশী সম্রাট হাবশের পক্ষ হতে ইয়ামানের গভর্ণর ছিলেন) যখন দেখলেন যে, আরববাসীগণ ক্বাবা’হ গৃহে হজ্জব্রত পালন করছেন এবং একই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন সেখানে আগমন করছেন তখন সানআয় তিনি একটি বিরাট গীর্জা নির্মাণ করলেন এবং আরববাসীগণের হজ্জব্রতকে সেদিকে ফিরিয়ে আনার জন্য আহবান জানালেন। কিন্তু বনু কিনানাহ গোত্রের লোকজন যখন এ সংবাদ অবগত হলেন তখন তাঁরা এক রাত্রে গোপনে গীর্জায় প্রবেশ করে তার সামনের দিকে মলের প্রলেপন দিয়ে একদম নোংরা করে ফেললেন। এ ঘটনায় আবরাহা ভয়ানক ক্রোধান্বিত হন এবং প্রতিশোধ গ্রহণ কল্পে ক্বাবা’হ গৃহ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ষাট হাজার অস্ত্র সজ্জিত সৈন্যের এক বিশাল বাহিনীসহ মক্কা অভিমুখে অগ্রসর হন। তিনি নিজে একটি শক্তিশালী হস্তীপৃষ্ঠে আরোহণ করেন। সৈন্যদের নিকট মোট নয়টি অথবা তেরটি হস্তী ছিল। (আর-রাহীকুল মাখতূম, আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী)

সুরা ফিলের সানে নুযুল থেকে পাই, বাদশা আবরাহা যখন কাবা ধ্বংস করার জন্য আসে তখন তার অগ্রবাহিনী তিহামার অধিবাসী ও কুরাইশদের উট, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি বহু পালিত পশু লুট করে নিয়ে যায়। এর মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাদা আবদুল মুত্তালিবেরও দু’শো উট ছিল। এরপর সে মক্কাবাসীদের কাছে নিজের একজন দূতকে পাঠায়। তার মাধ্যমে মক্কাবাসীদের কাছে এই মর্মে বাণী পাঠায়, আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমি এসেছি শুধুমাত্র এই ঘরটি (কাবা) ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে। যদি তোমরা যুদ্ধ না করো তাহলে তোমাদের প্রাণ ও ধন সম্পত্তির কোন ক্ষতি আমি করবো না। তাছাড়া তার এক দুতকেও মক্কাবাসীদের কাছে পাঠায়। মক্কাবাসীরা যদি তার সাথে কথা বলতে চায় তাহলে তাদের সরদারকে তার কাছে নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়। আবদুল মুত্তালিব তখন ছিলেন মক্কার সবচেয়ে বড় সরদার। দূত তাঁর সাথে সাক্ষাত করে আবরাহার পয়গাম তাঁর কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। তিনি বলে, আবরাহার সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। এটা আল্লাহর ঘর তিনি চাইলে তাঁর ঘর রক্ষা করবেন। দূত বলে , আপনি আমার সাথে আবরাহার কাছে চলুন। তিনি সম্মত হন এবং দূতের সাথে আবরাহার কাছে যান। তিনি এতই সুশ্রী ও আকর্ষণীয় প্রতাপশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন যে আবরাহ তাকে দেখে অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে পড়ে এবং সিংহাসন থেকে নেমে এসে নিজে তাঁর কাছে বসে পড়ে। সে তাঁকে জিজ্ঞেস করে , আপনি কি চান? তিনি বলেন , আমার যে উটগুলো ধরে নেয়া হয়েছে সেগুলো আমাকে ফেরত দেয়া হোক। আবরাহা বলল, আপনাকে দেখে তো আমি বড়ই প্রভাবিত হয়েছিলাম। কিন্তু আপনি নিজের উটের দাবী জানাচ্ছেন, অথচ এই যে ঘরটা আপনার ও আপনার পূর্বপুরুষদের ধর্মের কেন্দ্র সে সম্পর্কে কিছুই বলছেন না, আপনার এ বক্তব্য আপনাকে আমার দৃষ্টিতে মর্যাদাহীন করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি তো কেবল আমার উটের মালিক এবং সেগুলোর জন্য আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি। আর এই ঘর! এর একজন রব, মালিক ও প্রভু আছেন । তিনি নিজেই এর হেফাজত করবেন। আবরাহা জবাব দেয়, তিনি একে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আবদুল মুত্তালিব বলেন, এ ব্যাপারে আপনি জানেন ও তিনি জানেন। একথা বলে তিনি সেখান থেকে উঠে পড়েন। আবরাহা তাঁকে তাঁর উটগুলো ফিরিয়ে দেয়।  আবরাহার সেনাদলের কাছ থেকে ফিরে এসে আবদুল মুত্তালিব কুরাইশদেরকে বলেন, নিজেদের পরিবার পরিজনদের নিয়ে পাহাড়ের ওপর চলে যাও , এভাবে তারা ব্যাপক গণহত্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে। তারপর তিনি ও কুরাইশদের কয়েকজন সরদার হারম শরীফে হাযির হয়ে যান। তারা কাবার দরজার কড়া ধরে আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করতে থাকেন যে, তিনি যেন তাঁর ঘর ও তাঁর কাদেমদের হেফাজত করেন। সে সময় কাবা ঘরে ৩৬০ টি মূর্তি ছিল। কিন্তু এই সংকটকালে তারা সবাই এই মূর্তিগুলোর কথা ভুলে যায়। তারা একমাত্র আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য হাত ওঠায়। ইতিহাসের বইগুলোতে তাদের প্রার্থনা বাণী উদ্ধৃত হয়েছে তার মধ্যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নাম পর্যন্ত পাওয়া যায় না। ইবনে হিশাম তাঁর সীরাত গ্রন্থে আবদুল মুত্তালিবের নিম্নোক্ত কবিতাসমূহ উদ্ধৃত করেছেন  

 “হে আল্লাহ! বান্দা নিজের ঘর রক্ষা করে তুমিও তোমার ঘর রক্ষা করো। আগামীকাল তাদের ক্রুশ ও তাদের কৌশল যেন তোমার কৌশলের ওপর বিজয় লাভ না করে। যদি তুমি ছেড়ে দিতে চাও তাদেরকে ও আমাদের কিবলাহকে তাহলে তাই করো যা তুমি চাও। সুহাইলী ‘রওযুল উনুফ’ গ্রন্থে এ প্রসংগে নিম্নোক্ত কবিতাও উদ্ধৃত করেছেন, ক্রুশের পরিজন ও তার পূজারীদের মোকাবিলায় আজ নিজের পরিজনদেরকে সাহায্য করো। আবদুল মুত্তালিব দোয়া করতে করতে যে , কবিতাটি পড়েছিলেন ইবনে জারীর সেটিও উদ্ধৃত করেছেন। সেটি হচ্ছেঃ

“হে আমার রব! তাদের মোকাবিলায়

তুমি ছাড়া কারো প্রতি আমার আশা নেই,

হে আমার রব! তাদের হাত থেকে

তোমার হারমের হেফাজত করো।

এই ঘরের শত্রু তোমার শত্রু,

তোমার জনপদ ধবংস করা থেকে

তাদের বিরত রাখো।”

এ দোয়া করার পর আবদুল মুত্তালিব ও তার সাথীরাও পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে দিন আবরাহা মক্কায় প্রবশে করার জন্য এগিয়ে যায়। এ সময় ঝাঁকে ঝাকে পাখিরা ঠোঁটে ও পাঞ্জার পাথর কণা নিয়ে উড়ে আসে । তারা এ সেনাদলের ওপর পাথর বর্ষণ করতে থাকে। যার ওপর পাথর কণা পড়তো তার দেহ সংগে সংগে গলে যেতে থাকতো। (তাফসীরে ইবনে কাসির, মারেফুল কুরআন, তাফহীমুল কুরআন এর সুরা ফিলের তাফসির)

আর রাহীকুল মাখতূম এর বর্ণানায় এসেছেঃ আবরাহা ইয়ামান হতে অগ্রসর হয়ে মুগাম্মাস নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং সেখানে তাঁর সৈন্যবাহিনীকে প্রস্তুত করে নিয়ে মক্কায় প্রবেশের জন্য অগ্রসর হলেন। তারপর যখন মুজদালেফা এবং মিনার মধ্যবর্তী স্থান ওয়াদিয়ে মুহাস্সারে পৌঁছলেন তখন তার হাতী মাটিতে বসে পড়ল। ক্বাবা’হ অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার জন্য কোন ক্রমেই তাকে উঠানো সম্ভব হল না। অথচ উত্তর, দক্ষিণ কিংবা পূর্ব মুখে যাওয়ার জন্য উঠানোর চেষ্টা করলে তা তৎক্ষণাৎ উঠে দৌঁড়াতে শুরু করত। এমন সময়ে আল্লাহ তা‘আলা এক ঝাঁক ছোট ছোট পাখী প্রেরণ করলেন। সেই পাখীগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে পাথরের ছোট ছোট টুকরো সৈন্যদের উপর নিক্ষেপ করতে লাগল। প্রত্যেকটি পাখি তিনটি করে পাথরের টুকরো বা কংকর নিয়ে আসত একটি ঠোঁটে এবং দুইটি দু’পায়ে। কংকরগুলোর আকার আয়তন ছিল ছোলার মতো। কিন্তু কংকরগুলো যার যে অঙ্গে লাগত সেই অঙ্গ ফেটে গিয়ে সেখান দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে হতে সে মরে যেত।

এ কাঁকর দ্বারা সকলেই যে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিল তা নয়। কিন্তু এ অলৌকিক ঘটনায় সকলেই ভীষণভাবে আতংকিত হয়ে পড়ল এবং প্রাণভয়ে পলায়নের উদ্দেশ্যে যখন বেপরোয়াভাবে ছুটাছুটি শুরু করল তখন পদতলে পিষ্ট হয়ে অনেকেই প্রাণত্যাগ করল। কংকরাঘাতে ছিন্নভিন্ন এবং পদতলে পিষ্ট হয়ে পলকে বীরপুরুষগণ মৃত্যুর কবলে ঢলে পড়তে লাগল। এদিকে আবরাহার উপর আল্লাহ তা‘আলা এমন এক মুসিবত প্রেরণ করলেন যে তাঁর আঙ্গুল সমূহের জোড় খুলে গেল এবং সানা নামক স্থানে যেতে না যেতেই তিনি পাখির বাচ্চার মতো হয়ে পড়লেন। তারপর তাঁর বক্ষ-বিদীর্ণ হয়ে হৃদপিন্ড বেরিয়ে এল এবং তিনি মৃত্যু মুখে পতিত হলেন।

মক্কা অভিমুখে আবরাহার অগ্রাভিযানের সংবাদ অবগত হয়ে মক্কাবাসীগণ প্রাণভয়ে নানা দিকে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পলায়ন করে পাহাড়ের আড়ালে কিংবা পর্বত চূড়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। তারপর যখন তাঁরা অবগত হলেন যে, আবরাহা এবং তাঁর বাহিনী সমূলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে তখন তাঁরা স্বস্তির নিংশ্বাস ত্যাগ করে আপন আপন গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। অধিক সংখ্যক চরিতবেত্তাগণের অভিমত হচ্ছে এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্মলাভের মাত্র ৫০ কিংবা ৫৫ দিন পূর্বে মুহাররম মাস। অত্র প্রেক্ষিতে এটা ধরে নেয়া যায় যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল ৫৭১ খ্রীষ্টাব্দে ফ্রেব্রুয়ারী মাসের শেষ ভাগে কিংবা মার্চ মাসের প্রথম ভাগে। হস্তী বাহিনীর এ ঘটনা ছিল আগামী দিনের নাবী (সাঃ) এবং ক্বাবা’হ শরীফের জন্য আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও সাহায্যের এক সুস্পষ্ট নিদর্শন। [আর-রাহীকুল মাখতূম, আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ)]

৪। কুরাইশদের কাবাগৃহ নির্মাণঃ

খোজায়া গোত্রের পতনের পর মক্কার শাসনভার গ্রহণ করেন কুরাইশ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কুসাই বিন কিলাব। কুরাইশরা ৫০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৩১ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয় পর্যন্ত মক্কার শাসন ও কাবার রক্ষণাবেক্ষণ করে। তিনি তাওয়াফের জন্য কাবার আঙিনা চিত্রিত করেন, যা আজও বিদ্যমান। তিনিই কাবার ছায়ায় ‘দারুন নদওয়া’ বা পরামর্শ সভা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শাসনামলে কাবায় চূড়ান্তরূপে মূর্তি পূজা শুরু হয়।

ক্বাবা’হ গৃহ পুনঃ নির্মাণ এবং হজ্জরে আসওয়াদ সম্পর্কিত বর্ণনা আর রাহিকুল মাখতুমে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন পঁয়ত্রিশ বছরে পদার্পণ করেন তখন কুরাইশগণ ক্বাবা’হ গৃহের পুনঃনির্মাণ কাজ আরম্ভ করেন। কারণ, ক্বাবা’হ গৃহের স্থানটি চতুর্দিকে দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় ছিল মাত্র। দেয়ালের উপর কোন ছাদ ছিল না। এ অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে কিছু সংখ্যক চোর এর মধ্যে প্রবেশ করে রক্ষিত বহু মূল্যবান সম্পদ এবং অলঙ্কারাদি চুরি করে নিয়ে যায়। ইসমাঈল (আঃ)-এর আমল হতেই এ ঘরের উচ্চতা ছিল ৯ হাত।

গৃহটি বহু পূর্বে নির্মিত হওয়ার কারণে দেয়ালগুলোতে ফাটল সৃষ্টি হয়ে যে কোন মুহূর্তে তা ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তাছাড়া সেই বছরেই মক্কা প্লাবিত হয়ে যাওয়ার কারণে ক্বাবা’হমুখী জলধারা সৃষ্টি হয়েছিল। তাছাড়া প্রবাহিত হওয়ায় ক্বাবা’হগৃহের দেওয়ালের চরম অবনতি ঘটে এবং যে কোন মুহূর্তে তা ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা ঘণীভূত হয়ে ওঠে। এমন এক নাজুক অবস্থার প্রেক্ষাপটে কুরাইশগণ সংকল্পবদ্ধ হলেন ক্বাবা’হ গৃহের স্থান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার উদ্দেশ্যে তা পুনঃনির্মাণের জন্য।

ক্বাবা’হ গৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্যে সকল গোত্রের কুরাইশগণ একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কতিপয় নীতি নির্ধারণ করে নিলেন। সেগুলো হচ্ছে যথাক্রমেঃ ক্বাবা’হ গৃহ নির্মাণ করতে গিয়ে শুধুমাত্র বৈধ অর্থ-সম্পদ (হালাল) ব্যবহার করা হবে। এতে বেশ্যাবৃত্তির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ, সুদের অর্থ এবং হক নষ্ট করে সংগৃহীত হয়েছে এমন কোন অর্থ নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা চলবে না। এ সকল নীতির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন করে নির্মাণ কাজ আরম্ভ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হল।

নতুন ইমারত তৈরির জন্য পুরাতন ইমারত ভেঙ্গে ফেলা প্রয়োজন। কিন্তু আল্লাহর ঘর ভেঙ্গে ফেলার কাজে হাত দিতে কারো সাহস হচ্ছে না, অবশেষে ওয়ালীদ বিন মুগীরাহ মাখযুমী সর্বপ্রথম ভাঙ্গার কাজে হাত দিলেন এবং অন্যেরা ভীত-সম্ভ্রন্ত চিত্তে তা প্রত্যক্ষ করতে থাকলেন। কিন্তু কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলার পরও যখন তাঁরা দেখলেন যে তাঁর উপর কোন বিপদ আপদ আসছে না তখন সকলেই ভাঙ্গার কাজে অংশ গ্রহণ করলেন। যখন ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তি পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলা হল তখন নির্মাণ কাজ শুরু হল। প্রত্যেক গোত্র যাতে নির্মাণ কাজে অংশ গ্রহণের সুযোগ লাভ করে তজ্জন্য কোন্ গোত্র কোন্ অংশ নির্মাণ করবেন পূর্বাহ্নেই তা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ প্রেক্ষিতে প্রত্যেক গোত্রই ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রস্তর সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। বাকূম নামক একজন রুমীয় মিস্ত্রির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছিল। নির্মাণ কাজ যখন কৃষ্ণ প্রস্তরের স্থান পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল তখন নতুনভাবে এক সমস্যার সৃষ্টি হল। সমস্যাটি হল ‘হাজারে আসওয়াদ’ তথা ‘কৃষ্ণ প্রস্তর’টি স্থাপন করার মহা গৌরব অর্জন করবেন তা নিয়ে। এ ব্যাপারে ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি চার বা পাঁচ দিন চললো।

সকলেই নিজে বা তাঁর গোত্র কৃষ্ণ প্রস্তরটি যথাস্থানে স্থাপন করার দাবীতে অনড়। সকলেরই এক কথা, এ কাজটি তাঁরাই করবেন। কেউই সামান্য ছাড় দিতেও তৈরি নন। সকলেরই একই কথা, একই জেদ। জেদ ক্রমান্বয়ে রূপান্তরিত হল রেষারেষিতে। রেষারেষির পরবর্তী পর্যায় হচ্ছে রক্তারক্তি। এ ব্যাপারে রক্তারক্তি করতেও তাঁরা পিছপা হবেন না। সকল গোত্রের মধ্যেই চলছে সাজ সাজ রব। শুরু হয়েছে অস্ত্রের মহড়া। একটু নরমপন্থীগণ সকলেই আতঙ্কিত কখন যে যুদ্ধ বেধে যায় কে তা জানে।

এমন বিভীষিকাময় এক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বর্ষীয়ান নেতা আবু্ উমাইয়া মাখযূমী এ সমস্যা সমাধানের একটি সূত্র খুঁজে পেলেন। তিনি সকলকে লক্ষ্য করে প্রস্তাব করলেন যে, আগামী কাল সকালে যে ব্যক্তি সর্ব প্রথম মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবেন তাঁর উপরেই এ বিবাদ মীমাংসার দায়িত্ব অর্পণ করা হোক। সকলেই এ প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করলেন। আল্লাহর কী অপার মহিমা! দেখা গেল সকল আরববাসীর প্রিয়পাত্র ও শ্রদ্ধেয় আল-আমিনই সর্ব প্রথম মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেছেন। নাবী কারীম (সাঃ)-এর এভাবে আসতে দেখে সকলেই চিৎকার করে বলে উঠলঃ

*هٰذَا الْأَمِيْنُ، رَضَيْنَاهُ، هٰذَا مُحَمَّدٌ،*

আমাদের বিশ্বাসী, আমরা সকলেই এর উপর সন্তুষ্ট, তিনিই মুহাম্মাদ (সাঃ)।

তারপর নাবী কারীম (সাঃ) যখন তাঁদের নিকটবর্তী হলেন তখন ব্যাপারটি সবিস্তারে তাঁর নিকট পেশ করা হল। তখন তিনি এক খানা চাদর চাইলেন। তাঁকে চাদর দেয়া হলে তিনি মেঝের উপর তা বিছিয়ে দিয়ে নিজের হাতে কৃষ্ণ প্রস্তরটি তার উপর স্থাপন করলেন এবং বিবাদমান গোত্রপতিগণকে আহবান জানিয়ে বললেন, ‘আপনারা সকলে চাদরের পার্শ্ব ধরে উত্তোলন করুন। তাঁরা তাই করলেন। চাদর যখন কৃষ্ণ প্রস্তর রাখার স্থানে পৌছল তখন তিনি স্বীয় মুবারক হস্তে কৃষ্ণ প্রস্তরটি উঠিয়ে যথাস্থানে রেখে দিলেন। এ মীমাংসা সকলেই হৃষ্টচিত্তে মেনে নিলেন। অত্যন্ত সহজ্জ, সুশৃঙ্খল এবং সঙ্গত পন্থায় জ্বলন্ত একটি সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।

এ দিকে কুরাইশগণের নিকট বৈধ অর্থের ঘাটতি দেখা দিল। এ জন্যই উত্তর দিক হতে ক্বাবা’হ গৃহের দৈর্ঘ আনুমানিক ছয় হাত পর্যন্ত কমিয়ে দেয়া হল। এ অংশটুকুই ‘হিজর’ ‘হাতীম’ নামে প্রসিদ্ধ। এবার কুরাইশগণ ক্বাবা’হর দরজা ভূমি হতে বিশেষভাবে উঁচু করে দিলেন যেন এর মধ্য দিয়ে সেই ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারে যাকে তাঁরা অনুমতি দেবেন। যখন দেয়ালগুলো পনের হাত উঁচু হল তখন গৃহের অভ্যন্তর ভাগে ছয়টি পিলার বা স্তম্ভ নির্মাণ করা হল এবং তার উপর ছাদ দেয়া হল। ক্বাবা’হ গৃহের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে একটি চতুর্ভূজের রূপ ধারণ করল। বর্তমানে ক্বাবা’হ গৃহের উচ্চতা হচ্ছে পনের মিটার। কৃষ্ণ প্রস্তর বিশিষ্ট দেয়াল এবং তার সামনের দেয়াল অর্থাৎঃ দক্ষিণ ও উত্তর দিকের দেয়াল হচ্ছে দশ দশ মিটার। কৃষ্ণ প্রস্তর মাতাফের জায়গা হতে দেড় মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। দরজা বিশিষ্ট দেয়াল এবং এর সাথে সামনের দেয়াল অর্থাৎ পূর্ব এবং পশ্চিম দিকের দেয়াল বার মিটার করে। দরজা রয়েছে মেঝে থেকে দু’মিটার উঁচুতে। দেয়ালের পাশেই চতুর্দিকে নীচু জায়গা এক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত চেয়ার সমতুল্য অংশ দ্বারা পরিবেষ্টিত আছে যার উচ্চতা পঁচিশ সেন্টিমিটার এবং গড় প্রস্থ ত্রিশ সেন্টিমিটার। একে শাজে বওয়া (চলন্ত দুর্লভ) বলা হয়। এটাও হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে বায়তুল্লাহর অংশ। কিন্তু কুরাইশগণ এটাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। [আর-রাহীকুল মাখতূম, আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ)]

৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কার শাসক হলেন আবদুল মুত্তালিব। তিনিই প্রথম কাবায় স্বর্ণখচিত লৌহদরজা নির্মাণ করেন। তাঁর শাসনামলে ইয়েমেনের বাদশাহ আবরাহা ‘সানা’য় প্রতিষ্ঠিত ‘কুলাইস গির্জাকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণের জন্য কাবা থেকে হজ্জ স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে কাবা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে বিরাট হস্তীবাহিনী পাঠায়। আল্লাহ তায়ালা তার সমুচিত জবাব দিয়ে দেন। যা পবিত্র কোরআনে সুরা ফিলে বিবৃত হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর বয়স যখন ৩৫ বছর, তখন এক মহিলা কাবাগৃহে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর বন্যার কারণে কাবার গিলাফ ও দেয়াল ধ্বংস হয়ে যায়। তখন সবার সম্মতিক্রমে কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।

৫। আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) এর নির্মাণঃ

ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া এর শাসনামলে হুসাইন নামক এক ব্যক্তির মিনজানিক (আগুনের গোলা)  ব্যবহারের দরুন মতান্তরে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মিনজানিক হামলার কারণে কাবা শরিফ পুড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ফলে তা পুনর্নির্মাণের তীব্র প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রাঃ) কাবা পুনর্নির্মাণ শুরু করেন। তিনি হাতিমে কাবাকে কাবার সাথে যুক্ত করে তার আদিরূপ ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছুক ছিলেন। মুহাম্মদ সাঃ নিজেও তার জীবদ্দশায় এমন ইচ্ছা করেছিলেন তবে তা নতুন ইসলাম গ্রহণকারীরা সঠিকভাবে বুঝতে পারবে না ভেবে বাস্তবায়ন করেননি। হাদিসে এসেছেঃ

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ তুমি কি জান না! তোমার কওম যখন কা’বা ঘরের পুনর্নির্মান করেছিল তখন ইব্রাহীম (আ:) কর্তৃক কা’বা ঘরের মূল ভিত্তি হতে তা সঙ্কুচিত করেছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি একে ইবরাহীমী ভিত্তির উপর পুন:স্থাপন করবেন না? তিনি বললেনঃ যদি তোমার সম্প্রদায়ের যুগ কুফরীর নিকটবর্তী না হত তা হলে অবশ্য আমি তা করতাম। ‘আবদুল্লাহ (ইব্‌নু ‘উমর) (রা: ) বলেন, যদি ‘আয়েশা (রাঃ) নিশ্চিতরূপে তা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনে থাকেন, তাহলে আমার মনে হয় যে, বায়তুল্লাহ হাতীমের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ইবরাহিমী ভিত্তির উপর নির্মিত না হবার কারণেই আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাওয়াফের সময়) হাতীম সংলগ্ন দু’টি কোণ স্পর্শ করতেন না। (সহিহ বুখারি ১৫৮৩)

‘আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেনঃ হে ‘আয়েশা! যদি তোমার কওমের যুগ জাহিলিয়াতের নিকটবর্তী না হত তাহলে আমি কা’বা ঘর সম্পর্কে নির্দেশ দিতাম এবং তা ভেঙ্গে ফেলা হত। অত:পর বাদ দেয়া অংশটুকু আমি ঘরের অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম এবং তা ভূমি বরাবর করে দিতাম ও পূর্ব-পশ্চিমে এর দু’টি দরজা করে দিতাম। এভাবে কা’বাকে ইব্রাহীম (আঃ) নির্মিত ভিত্তিতে সম্পন্ন করতাম। (বর্ণনাকারী বলেন), আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ উক্ত কা’বা ঘর ভাঙতে (‘আবদুল্লাহ) ইব্‌নু যুবাইর (রহঃ)-কে অনুপ্রাণিত করেছে। (রাবী) ইয়াযীদ বলেন, আমি আমি ইব্‌নু যুবাইর (রাঃ)-কে দেখেছি তিনি যখন কাবা ঘর ভেঙে তা পুনর্নির্মাণ করেন এবং বাদ দেয়া অংশটুকু (হাতীম) তার সাথে সংযোজিত করেন এবং ইব্রাহীম (আঃ)-এর নির্মিত ভিত্তির পাথরগুলো উটের কুঁজোর ন্যায় আমি দেখতে পেয়েছি। (রাবী) জারীর (রহঃ) বলেন, আমি তাকে (ইয়াযীদকে) বললাম, কোথায় সেই ভিত্তি মূলের স্থান? তিনি বললেন, এখনই আমি তোমাকে দেখিয়ে দিব। আমি তাঁর সাথে বাদ দেয়া দেয়াল বেষ্টনীতে (হাতীমে) প্রবেশ করলাম। তখন তিনি একটি স্থানের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এখানে। জরীর (রহঃ) বলেন, দেয়াল বেষ্টিত স্থানটুকু পরিমাপ করে দেখলাম ছয় হাত বা তার কাছাকাছি। (সহিহ বুখারি ১৫৮৪)

আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, ইবনু যুবাইর (রাঃ) তাকে বললেন, তোমাকে উম্মুল মু’মিনীন আইশা (রাঃ) যে হাদীস বলেছেন, তা আমার নিকটে বর্ণনা কর। আসওয়াদ বলেন, তিনি আমাকে বলেছেন যে, তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ যদি তোমার সম্প্রদায় জাহিলী যুগের এত নিকটে এবং ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে নবদীক্ষিত না হত তাহলে আমি কা’বা ঘরকে ভেঙ্গে (পুনঃনির্মাণ করে) এর দুটো দরজা বানাতাম। (সুনানে তিরমিজ ৮৭৫)

আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রাঃ) কর্তৃক সম্পূর্ণ পাথর দিয়ে নতুনভাবে কাবা নির্মাণ করা হয় এবং এতে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি দরজা স্থাপন করা হয়। তাছাড়া অর্ধবৃত্তাআরা হাতিম কাবার সাথে যুক্ত করা হয়। হজ্জরে আসওয়াদকে রূপার ফ্রেমে বাধিয়ে কাবায় সংযুক্ত করা হয়। এই পবিত্র পাথরের দৈর্ঘ্য ৮ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৭ ইঞ্চি। বর্তমানে এটি আট টুকরো। আগে হাজরে আসওয়াদ ছিল আস্ত একটি পাথর। হজ্জরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়েরের শাসনামলে কাবা শরিফে আগুন লাগলে হাজরে আসওয়াদ কয়েক টুকরা হয়ে যায়। তাই তিনি ভাঙা টুকরাগুলো রুপার ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেন। ফ্রেম সংস্করণের সময় চুনার ভেতর কয়েকটি টুকরা ঢুকে যায়। বর্তমানে হাজরে আসওয়াদের আটটি টুকরা দেখা যায়। বড় টুকরাটি খেজুরের সমান

তিনি কাবাকে তিনি পুরো ইব্রাহিমি কাঠামোতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। গমন বহির্গমনের সুবিধার্থে তিনি ‘মাতাফে’র সঙ্গে মিশিয়ে দুটি দরজা নির্মাণ করে সর্বসাধারণের জন্য অবমুক্ত করে দেন। ছাদের ভারসাম্য রক্ষার্থে তিনি কাবার অভ্যন্তরে তিনটি কাঠের স্তম্ভ স্থাপন করেন এবং কাবার উচ্চতা আরো ১০ হাত বৃদ্ধি করে দেন। ইবনে আসিরের বর্ণনা মতে, এ ঘটনা ছিল ৬৫ হিজরিতে।

পুরাতন বাইতুল্লাহ কয়েকটি ছবি দিলামঃ

পুরাতন ভিউ-০১  পুরাতন ভিউ-০২
পুরাতন ভিউ-০৩পুরাতন ভিউ-০৪
পুরাতন ভিউ-০৫বর্তমানের একটি ভিউ

৬। হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাবা নির্মাণঃ

৭৪ হিজরিতে (৬৯৪ খৃষ্টাব্দে)  আবদুল মালিক বিন মারওয়ানের শাসনামলে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আবদুল্লাহ বিন জুবাইর (রা.) কে শহীদ করেন। ইবনে জুবাইরের কাবা নির্মাণকে হাজ্জাজ আত্মচিন্তা প্রসূত জ্ঞান করে কাবাকে কুরাইশি কাঠামোতে ফিরিয়ে নিতে উৎসাহী হন। ইবনে মারওয়ানের সম্মতিক্রমে তিনি ইবনে জুবাইরের স্মৃতিচিহ্নকে ধুলায় ধূসরিত করে দেন। তিনি ইব্রাহিমি কাঠামো পরিবর্তন করে কাবাকে কুরাইশি ফ্রেমে বন্দি করেন। পরবর্তী সময়ে হজ্জরত আয়েশা (রা.)-এর হাদিস শুনে ইবনে মারওয়ান খুবই অনুতপ্ত হয়েছেন বলে জানা যায়। এরপর বাদশাহ হারুনুর রশিদ কাবাকে ইবনে জুবাইরের আদলে নির্মাণ করতে চাইলে ফেতনার আশঙ্কায় তৎকালীন আলেম সমাজ বিশেষত ইমাম মালেক (রহ.) তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

এর পর থেকে নির্মাণের পরিবর্তে কাবা শরিফের সংস্কারকাজ অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে। ৯১ (৭১০ খৃষ্টাব্দে) হিজরিতে উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক কাবাগৃহে ব্যাপক সংস্কার করেন।

৭। উসমানি খেলাফতকালে সংস্কারঃ

১০১৯ হিজরিতে (১৬১০ খৃষ্টাব্দে) কাবার দেয়াল বিদীর্ণ হয়ে গেলে বাদশাহ আহমদ খান তা সংস্কার করেন। ১০৩৯/১০৪০ হিজরি (১৬৩০ খ্রিস্টাব্দ) এক ভয়াবহ বন্যায় কাবার পশ্চিম দিকের দরজাটি ভেঙে পড়ে। এ ছাড়া কাবার দেয়ালে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বাদশাহ মুরাদ খান পাশার অর্থায়নে কাবাগৃহে ব্যাপক সংস্কার আনা হয়। ১২৭৬ হিজরিতে (১৮৫৯ খৃষ্টাব্দে) বাদশাহ আবদুল মজিদ একটি ‘মিজাব’ (নালা) হাদিয়া দেন, যাতে ২৩ কেজি (প্রায়) স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছিল।

৮। সৌদি রাজবংশের সংস্কারকাজঃ

১৩৬৩ হিজরিতে (১৯৪৪ খৃষ্টাব্দে) বাদশাহ আবদুল আজিজ কাবার দরজা পরিবর্তন করেন। ১৩৭৭ হিজরিতে (১৯৫৭ খৃষ্টাব্দে) বাদশাহ সৌদ কাবার ওপরের ছাদ ভেঙে পুনর্নির্মাণ ও নিচের ছাদ নবায়ন করেন। এমনকি দেয়ালগুলো নতুন করে মেরামত করেন। ১৩৯১ হিজরিতে (১৯৭১ খৃষ্টাব্দে) বাদশাহ ফয়সাল কাবার দরজায় সংস্কার আনেন। ১৩৯৯ হিজরিতে (১৯৭৯ খৃষ্টাব্দে) বাদশাহ খালেদ প্রায় ২৮০ কিলোগ্রাম স্বর্ণ ব্যবহার করে নতুন দরজা প্রতিস্থাপন করেন।

১৪১৬ হিজরিতে (১৯৯৫ খৃষ্টাব্দে) বাদশাহ ফাহদ কাবার বাইরের দেয়াল সংস্কার করেন। ১৪১৭ হিজরিতে (১৯৯৬খৃষ্টাব্দে) তিনি কাবাগৃহের ছাদ, খুঁটি, দেয়ালসহ সব কিছু সংস্কার করে নতুন ধাঁচে ঢেলে সাজান। তাঁর এ নির্মাণকাজকে কাবার সর্বশেষ নির্মাণ বা সর্বশেষ সংস্কার হিসেবে অভিহিত করা হয়। 

বর্তমান বাইতুল্লাহ এর ছবি

৯। বাইতুল্লাহর তাওয়াফ কি কখনও বন্ধছিল?

হ্যা, বিভিন্ন কারনে বাইতুল্লাহ বহুবার বন্ধ ছিল। ইসলামী ধর্ম আবির্ভাবের আগে এবং আবির্ভাবের পরে যুদ্ধ-বিগ্রহ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মহামারির প্রাদুর্ভাব, বৈরী আবহাওয়াসহ নানা কারণে  বেশ কয়েক বার বাইতুল্লাহ বন্ধছিল। ইসলামের ইতিহাসে দেখাযায় নবম হিজরিতে হজ্জ ফরজ হওয়ার পর হজ্জ উমরা বন্ধ ছিল। যে যে সময় কাবা বন্ধছিল তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো।

আবরাহার আক্রমণঃ

হস্তিবর্ষে আবরাহার আক্রমণের ফলে পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে হজ্জ ও তাওয়াফ বন্ধ থাকে। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ভেতর ঘটনাটি ঘটেছে। এ বছরই রাসুল (সা.) জম্মগ্রহণ করেছিলেন। কাবা ধ্বংস করে মানুষকে ইয়েমেনে নিতে চেয়েছিল আবরাহা। কিন্তু আল্লাহ তাআলা কাবা রক্ষা করেছিলেন। এ সময়ও কাবায় তাওয়াফ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে।

কাবা পুনর্নির্মাণঃ

এ ছাড়া নবুয়তের পাঁচ বছর আগে বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কাবা ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে কোরাইশরা কাবা পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। আর তখনো কাবায় তাওয়াফ বন্ধ থাকতে পারে। যেহেতু তাতে দীর্ঘ সময় লেগে ছিল। রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে হাজরে আসওয়াত স্থাপনের ঘটনা এ সময় ঘটেছিল।

হাজ্জাজ বিন ইউসুফের আক্রমণঃ

৭৩ হিজরি (৬৯৩ খ্রিস্টাব্দে) খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ানের নির্দেশনায় হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কাবা অবরোধ করে। সেখানে আবদুল্লাহ বিন জুবাইর (রা.) আত্মগোপন করেছিলেন। খলিফার পক্ষে বাইআত না করে তিনি নিজেকে খলিফা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এভাবে ৯ বছর অতিবাহিত হয়। এই সময়ে আক্রমণের কারণে কাবার বিভিন্ন দিক ধ্বংস হয় এবং নামাজ ও ওমরাহ বন্ধ থাকে। এমনকি আবদুল মালিক বিন মারওয়ান বিজয়ী হলে আবদুল্লাহ বিন জুবায়েরের নির্মিত অংশটুকুও ভেঙে ফেলা হয়। ফলে কাবা পুনর্নির্মাণের সময় নামাজ ও তাওয়াফ বন্ধ থাকে।

কারামিয়াদের আক্রমণঃ

শিয়াদের একটি দল হলো কারামিয়া। ইরাকের আব্বাসি শাসক ও মিসরে উবায়াদি শাসকদের দুর্বলতার সুযোগে আরব উপদ্বীপের পূর্ব প্রান্তে বাহরাইনে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। তাদের বিশ্বাস ছিল, ‘হজ্জ জাহেলি যুগের একটি নিদর্শন। হজ্জ মূর্তির উপাসনার মতো।’ তাই ইসলামের ফরজ বিধান হজ্জ বন্ধ করতে কারামিয়া শাসকরা তৎপর হয়ে ওঠে। মূলত ইসলামের ইতিহাসে হজ্জ ফরজ হওয়ার পর কারামিয়ারা সর্বপ্রথম কাবায় আক্রমণ করে হাজিদের হত্যা করে।

৩১৭ হিজরি (৯৩০ খ্রিস্টাব্দ) ছিল মুসলিমদের বেদনাদায়ক ইতিহাস। বাতিল ফেরকায় বিশ্বাসী বাহরাইনের শাসক আবু তাহের কারামিয়া নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সর্ববৃহৎ হাজিদের কাফেলায় আক্রমণ করে। অনেক নারী-পুরুষকে হত্যা করে এবং তাদের সম্পদ ছিনতাই করে। ইরাক ও সিরিয়া থেকে মক্কা আসার পথে তারা আতঙ্ক তৈরি করে। ফলে ৩১৭ হিজরি থেকে ৩২৭ হিজরি পর্যন্ত হজের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। (তারিখুল ইসলাম, আজ জাহাবি, ২৩/৩৭৪)।

ক। মাশিরি নামক মহামারিঃ

৩৫৭ হিজরিতে (৯৬৮ খৃষ্টাব্দে) মক্কায় মাশিরি নামের একটি রোগ মহামারি আকারে দেখা দেয়। এ সময় হাজিদের বেশির ভাগ লোকই মৃত্যুবরণ করে। কেউ কেউ মক্কায় আসার পথে পিপাসায় কাতর হয়ে মারা যায়। আর অনেকে হজ্জ সম্পন্ন করে মারা যায়। (ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১১/১৪৫)।

মুসলিক সংঘাতের কারনেঃ

৩৭২ হিজরিতে (৯৮২ খৃষ্টাব্দে) আব্বাসি খলিফা ও মিসরের উবাইদি শাসনের মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়। ফলে ৩৭২ থেকে ৩৮০ হিজরি (৯৮২-৯৯০ খৃষ্টাব্দে) পর্যন্ত ইরাকের কেউ হজ্জ করতে পারেনি। (ইবনে তাগরি বারদ, আন নুজুম জাহেরা : ৪/২৪৬)

খ। প্রাকৃতি কারনে বিভিন্ন জাতী হজ্জ করতে পারে নাইঃ

৪১৭ হিজরিতে মিসর ও প্রাচ্যের কারো পক্ষে হজ্জ করা সম্ভব হয়নি। ৪২১ হিজরিতে ইরাক ছাড়া অন্যরা হজ্জ করতে পারেনি। ৪৩০ হিজরিতে ইরাক, খোরাসান, শাম ও মিসরের কেউ হজ্জ করতে পারেনি। কারণ এ সময় দোজলা নদীসহ অন্যান্য বড় নদীর পানি বরফ আবৃত হয়। ফলে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। (ইবনুল জাওজি, আল মুনতাজাম, ৯/১৬৬)।

নিরাপত্তাহীনতাঃ

৪৯২ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের শাসকদের মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে ব্যাপক সংঘাত দেখা দেয়। এতে মক্কায় গমনের পথ অনিরাপদ হয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনের বাইতুল মুকাদ্দাস খ্রিস্টানদের দখলে যাওয়ার পাঁচ বছর আগে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

গ।মক্কায় ব্যাপক বন্যা কারনেঃ

১০৩৮ হিজরি ১৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় ব্যাপক বন্যা হয়। ফলে কাবার দেয়াল ভেঙে পড়ে। সুলতান চতুর্থ মুরাদের নির্দেশে কাবা পুনর্নির্মাণের সময় হজ্জ ও ওমরাহর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ঐতিহাসিকদের মতে, এটি ছিল কাবার সর্বশেষ নির্মাণ।

ফরাসিদের আক্রমণের কারনেঃ

১২১৩ হিজরিতে ফরাসিদের আক্রমণের ফলে নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ফলে হজ্জও বন্ধ থাকে।

ঘ। কলেরা মহামারীর করানেঃ

১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে প্রকাশ পাওয়া কলেরায় আক্রান্ত হয়ে তিন-চতুর্থাংশ হাজি মারা যায়। এ ছাড়া আরো কিছু মহামারির প্রকাশ ঘটে। ফলে ১৮৩৭ থেকে ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘদিন মক্কায় হাজিদের আগমন বন্ধ ছিল।

(তথ্যসূত্র : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দারাতুল মালিক আবদুল আজিজ, আনাদোলু নিউজ এজেন্সি, আল খালিজ অনলাইন ডটনেট)

ঙ। করোনা মহামারীর কারনেঃ

করোনা মহামারীর কারনে ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ সাল উমরা যাওয়া বন্ধ করে সৌদি হজ্জ কর্তৃপক্ষ। এই বছর আর্থাৎ ২০২০ সালে খুবই সিমিত পর্যায় হজ্জ পালন করা হয়ে। এই হজ্জে সৌদির সিলেক্টেড হাজ্জি ব্যাতিত বিশ্বের কোন দেশের হাজ্জি হজ্জে অংশ গ্রহন করতে পারে নাই। দীর্ঘ সাত মাস উমরা ও তাওয়াফ বন্ধ থাকার পর অক্টোবর ২০২০ সালে আবার বাইতুল্লাহ তাওয়াফের অনুমতি প্রদান করা হয়। 

১০। বাইতুল্লার অবকাঠামোঃ

সৌদি গেজেট মতে, কাবাগৃহের উচ্চতা পূর্ব দিক থেকে ১৪ মিটার। (অন্য একটি সূত্র মতে ১২.৮৪ মিটার)। পশ্চিম দিক থেকে ১২.১১ মিটার। উত্তর দিক থেকে ১১.২৮ মিটার। দক্ষিণ দিক থেকেও ১২.১১ মিটার। (সূত্র : সৌদি গেজেট, ৩ জানুয়ারি, ২০১০ ইং)

ভূমি থেকে কাবার দরজার উচ্চতা ২.৫ মিটার। দরজার দৈর্ঘ্য ৩.০৬ ও প্রস্থ ১.৬৮ মিটার। বর্তমান দরজা বাদশা খালেদের উপহার, যা নির্মাণে প্রায় ২৮০ কিলোগ্রাম স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। এর সিলিংকে তিনটি কাঠের পিলার ধরে রেখেছে। প্রতিটি পিলারের ব্যাস ৪৪ সে.মি.। কাবা শরিফের ভেতরের দেয়ালগুলো সবুজ ভেলভেটের পর্দা দিয়ে আবৃত। এই পর্দাগুলো প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর পরিবর্তন করা হয়। এর ছাদে ১২৭ সে.মি. লম্বা ও ১০৪ সে.মি. প্রস্থের একটি ভেন্টিলেটর রয়েছে, যা দিয়ে ভেতরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে। এটি একটি কাচ দিয়ে ঢাকা থাকে। প্রতিবছর দুবার কাবা শরিফের ভেতরটা ধৌত করার সময় এ কাচ খোলা হয়।

এক নজরে কাবাঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতাঃ

উচ্চতামুলতাযামের দিকে দৈর্ঘ্যহাতীমের দিকে দৈর্ঘ্যরুকনে ইয়ামানী ও হাতীমের মাঝখানের দৈর্ঘ্যহাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানের দৈর্ঘ্য
১৪ মিটার১২.৮৪ মিটার১১.২৮ মিটার১২.১১ মিটার১১.৫২ মিটার

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “বাইতুল্লাহ বা কাবাঘরের নির্মাণ ও সংস্কারের ইতিহাস

Leave a comment