আরাফার ময়দানের আমল ও ভুল-ত্রুটি

আরাফার ময়দানের আমল ভুল-ত্রুটি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। মিনা হয়ে আরাফা গমন

মিনায় প্রথম দফাঃ

মিনায় হাজ্জিগণ জিলহজ্জের মাসের ৮ তারিখ থেকে ১২/১৩ তারিখ পর্যান্ত অবস্থান করে। মাঝের ৯ জিলহজ্জ তারিখ আরাফার ময়দানে ও ১০ জিলহজ্জ তারিখ রাতে মুজদালিফায় ময়দানে অবস্থান করে। কাজেই, ৮ জিলহজ্জ ইহরাম বাঁধার পর হাজিগণ সরাসরি আরাফার ময়দানে না গিয়ে মিনায় যাওয়াই সুন্নহ। সূর্য ঢলার পূর্বে হোক আর পরে হোক ৮ জিলহজ্জ মিনায় পৌছাইতে চেষ্টা করা। মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা অর্থাৎ ৮ জিলহজ্জ ‘জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা এবং ৯ জিলহজ্জ সকালের ফজর নামাজসহ এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব। মিনায় থাকাকালীন সময়ে মক্কার অবস্থানকারী বা বহিরাগত সকলকে প্রত্যেক নামাজ সুন্নাত মোতাবেক পড়ার নিয়ম হলো, প্রত্যেক ওয়াক্ত (জোহর, আসর ও ইশা) নামাজ উহার নির্দিষ্ট সময়ে কসর পড়া। মাগরিব ও ফজর নামাজ ব্যতিত, কেননা এ দুই নামাজে কসর নেইল।

দলিলঃ

১. আবদুল ‘আযীয ইব্‌নু রুফাই‘ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে আপনি যা উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছেন তার কিছুটা বলুন। বলুন, যিলহাজ্জ মাসের আট তারিখে যুহর ও ‘আসরের সালাত তিনি কোথায় আদায় করতেন? তিনি বললেন, মিনায়। আমি বললাম, মিনা হতে ফিরার দিন ‘আসরের সালাত তিনি কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, মুহাস্‌সাবে। এরপর আনাস (রাঃ) বললেন, তোমাদের আমীরগণ যেরূপ করবে, তোমরাও অনুরূপ কর। (সহিহ বুখারি ১৬৫৩),

২. ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় যুহর ও ফজরের নামায (অর্থাৎ যুহর হতে পরবর্তী ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্তের নামায) আদায় করলেন। তারপর ভোরেই আরাফাতের দিকে যাত্রা শুরু করেন। (সুনানে তিরমিজি ৮৮০, হাদিসের মান সহিহ)

৩. আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (মিনায়) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করেছি। আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে দু’ রাক’আত এবং ‘উমর (রাঃ)-এর সাথেও দু’ রাক’আত আদায় করেছি। এরপর তোমাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে [অর্থাৎ ‘উসমান (রাঃ)-এর সময় থেকে চার রাক’আত সালাত আদায় করা শুরু হয়েছে] হায়! যদি চার রাক’আতের পরিবর্তে মকবূল দু’ রাক’আতেই আমর ভাগ্যে জুটত! (সহিহ বুখারী ১৫৫৪ ইফাঃ)

আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় দু’রাক’আত সালাত আদায় করেছেন এবং আবূ বকর, ‘উমর (রাঃ) -ও। আর ‘উসমান (রাঃ) তাঁর খিলাফতের প্রথম ভাগেও দু’রাক’আত আদায় করেছেন। (সহিহ বুখারি ১৬৫৫)

৪. হারিসা ইব্‌নু ওয়াহব খুযা’য় (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে মিনাতে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করেছেন। এ সময় আমরা আগের তুলনায় সংখ্যায় বেশি ছিলাম এবং অতি নিরাপদে ছিলাম। (সহিহ বুখারি ১৬৫৬)

৬. আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি (মিনায়) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করেছি। আবূ বকর এর সাথে দু’ রাক’আত এবং ‘উমর-এর সাথেও দু’ রাক’আত আদায় করেছি। এরপর তোমাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে (অর্থাৎ ‘উসমান (রাঃ) -এর সময় হতে চার রাক’আত সালাত আদায় করা শুরু হয়েছে) আহা! যদি চার রাক’আতের পরিবর্তে মকবূল দু’ রাক’আতই আমার ভাগ্যে জুটত! (সহিহ বুখারি ১৬৫৭)

*** উসমান (রাঃ) এই চার রাকআত পুরো আদায় করার বিরোধীতা করে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)। সহিহ বুখারীতে এসেছেঃ

ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) কে বলতে শুনেছি, উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) আমাদেরকে নিয়ে মিনায় চার রাকা’আত সালাত আদায় করেছেন। তারপর এ সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে বলা হল, তিনি প্রথমে ‘ইন্না লিল্লাহ্’ পড়লেন। এবপর বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মিনায় দু’ রাকা’আত পড়েছি, আবূ বকর (রাঃ) এর সঙ্গে মিনায় দু’রাকা’আত পড়েছি এবং উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এর সঙ্গে মিনায় দু’রাকা’আত পড়েছি। কতই না ভাল হতো যদি চার রাকা’আতের পরিবর্তে দু’রাকা’আত মাকবূল সালাত হতো। (সহীহ বুখারী ১০২৩ ইসলামি ফাউন্ডেশন)

মন্তব্যঃ উপরের সহিহ হাদিসসমূহের আলোকে বলা যায়, ৮ ই জিলহজ্জ ইহরাম বেঁধে মিনায় রওয়ানা হওয়া এবং সেখানেই রাত্রি যাপন করা। চার রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামাযগুলো দু’রাকআত করে পড়তে হবে। এটাকে কসর করা বলা হয়। সে নামাযগুলো হলো যুহর, আসর ও এশা। হজ্জের সময় মিনা, আরাফা ও মুয্দালিফায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার ভিতরের ও বাইরের সকল লোককে নিয়ে এ সালাতগুলো কসর করে পড়েছিলেন, এটা সুন্নাত। এ ক্ষেত্রে তিনি মুকীম বা মুসাফিরের মধ্যে কোন পার্থক্য করেননি। অর্থাৎ মক্কার লোকদেরকেও চার রাকআত করে পড়তে বলেননি। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ও ফাতাওয়া ইবনে বায)

তবে মনে রাখতে হবে যে, ফজর ও মাগরিবের ফরয নামায অর্থাৎ দুই এবং তিন রাকআত বিশিষ্ট নামায কখনো কসর হয় না। মিনাতে প্রত্যেক সালাত ওয়াক্তমত আদায় করবেন, জমা করবেন না। অর্থাৎ যুহর-আসর একত্রে এবং মাগরিব-এশা একত্রে পড়বেন না। এমনকি মুসাফির হলেও না। বিস্তারিত সফরের বিধান নামক অধ্যায় আলোচনা করা হয়েছ।

কাজেই সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত মিনায় সালাত চার নয় দুই বাকআতই আদায় করা উত্তম। কিন্তু কেউ পূর্ণ সালাত আদায় করলে তাদের গবেষণার উপর ছেড়ে দিতে হবে। তাদের সামনে সহিহ হাদিসগুলি তুলে ধরে বুঝাতে হবে। এ নিয়ে ফতোয়াবাজী করে উম্মতের ঐক্য নষ্ট করা যাবেনা। কারন আমাদের অনুকরনী তৃতীয় খলীফা (রাঃ) শেষের দিকে পূর্ণ সালাত আদায় করেছেন বলে প্রমানিত যদিও আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তার বিরোধীতা করেছেন।

২। মিনার গমনের পূর্বে কিছু আমলঃ

ক। আট জিলহজ্জ সকালে ফজরের সালাত কাবায় আদায় করে বাস্থানে চলে আসতে হবে। কেননা হজ্জের নিজ নিজ ঘর বা বাসস্থান থেকেই ইহরাম বাঁধতে হবে। মক্কায় অবস্থানকারীরাও নিজ নিজ ঘর থেকে ইহরাম বাঁধবেন।  তামাত্তু হাজি যারা ইহরাম ত্যাগ করে হালাল হয়ে মক্কা অবস্থান করে ছিল তারা, মক্কার বাসস্থান থেকেই ইহরাম বাধবেন। ইফরাদ ও কেরান হাজীগণ যারা আগে থেকেই ইহরাম পরা অবস্থায় আছেন, তাঁরা ইহরাম অবস্থায়ই থাকবেন। ইহরামের পোষাক পরার পর হজ্জের নিয়ত করে ফেলবেন। হজ্জের ইহরাম বাধার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া, গোসল করা ও গায়ে সুগন্ধি মাখা সুন্নাহ। তবে কুরবানী দিবেন তারা ১লা যিলহজ্জ থেকে কুরবানীর পূর্ব পর্যন্ত চুল-নখ কাটবেনা।

খ।  হাজিদের কেউ যিলহজ্জের আট তারিখে ইহরাম বেঁধে তাওয়াফ ও সাঈ করে মিনায় রওয়ানা দেয় এবং দশ তারিখে তাওয়াফ করে আর সাঈ করে না। এটা ভুল। শুদ্ধ হলো ইহরাম বাঁধার পর তাওয়াফ ছাড়া মিনায় রওয়ানা দেবেন।

গ। সূর্যোদয়ের পর থেকে যুহরের নামাযের আগেই রওয়ানা দেয়া মুস্তাহাব। অর্থাৎ যুহরের নামাযের আগেই মিনায় চলে যাওয়া উত্তম। মক্কা থেকে মিনায় পায়ে হেটে যাওয়া মুস্তাহার। তবে গাড়িতে গেলে কোন প্রকার অসুবিধা নাই।

আবদুল ‘আযীয ইবনু রুফাইয়‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আপনি যা উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছেন তার কিছুটা বলুন। বলুন, যিলহাজ্জ মাসের আট তারিখে যুহর ও ‘আসরের সালাত তিনি কোথায় আদায় করতেন? তিনি বললেন, মিনায়। আমি বললাম, মিনা হতে ফিরার দিন ‘আসরের সালাত তিনি কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, মুহাস্সাবে। এরপর আনাস (রাঃ) বললেন, তোমাদের আমীরগণ যেরূপ করবে, তোমরাও অনুরূপ কর। (সহিহ বুখারী ১৬৫৩)

ঘ। যারা মাজুর ও মহিলা তারা জিলহজ্জের সাত তাখির রাতের মধ্যেই মিনায় চলে যায়। মুহাক্কিক আলেমদের মনে কোন অসুবিধা নাই। কারন বর্তমানে ভিড়ের কারনে সকালে মহিলা ও মাজুরদের মিনায় হেটে যাওয়া খুবই কষ্টকর। আর সকালে গাড়ির বিশাল যানজট থাকে।

ঙ। মিনায় আজকের রাত্রি যাপন মুস্তাহাব বা সুন্নাত। যেহেতু আগামীকাল আরাফার দিন, সেহেতু আজকের রাতকে বলা হয় ‘‘আরাফার রাত’’। এ রাতে সূর্য উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত মিনাতেই অবস্থান করা সুন্নাত।

চ। কেউ কেউ সূর্যোদয়ের আগে মিনায় রওয়ানা দেয়। এটাও ভুল।

ছ। তালবীয় পাঠ করতে করতে আরাফায় যাওয়াঃ

১. মুহাম্মদ ইব্‌নু আবূ বাক্‌র সাক্বাফী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা সকাল বেলা মিনা হতে যখন ‘আরাফাতের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ)-এর নিকট তালবিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে কিরূপ করতেন? তিনি বললেন, তালবিয়া পাঠকারী তালবিয়া পড়ত, তাকে নিষেধ করা হতো না। তাকবীর পাঠকারী তাকবীর পাঠ করত, তাকেও নিষেধ করা হতো না। (সহিহ বুখারি ৯৭০)

২. মুহাম্মদ ইবন আবু বকর আস-সাকাফী (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-এর সঙ্গে সকাল বেলা মিনার দিকে যাওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা এই দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে তালবিয়ায় কি করতেন? তিনি বললেনঃ যে তালবিয়া পড়তো, সে তালবিয়া পড়তো। তাকে কেউ বাধা দিত না। আর যে তাকবীর বলতো, সে তাকবীর বলতো, তাকেও কেউ বাধা দিত না। (নাসাঈ ৩০০৩)

৩। যিলহাজের আট তারিখের একটি ভুল আমলঃ

আবদুল ‘আযীয ইবনু রুফাইয়‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আপনি যা উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছেন তার কিছুটা বলুন। বলুন, যিলহাজ্জ মাসের আট তারিখে যুহর ও ‘আসরের সালাত তিনি কোথায় আদায় করতেন? তিনি বললেন, মিনায়। আমি বললাম, মিনা হতে ফিরার দিন ‘আসরের সালাত তিনি কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, মুহাস্সাবে। এরপর আনাস (রাঃ) বললেন, তোমাদের আমীরগণ যেরূপ করবে, তোমরাও অনুরূপ কর। (সহিহ বুখারী ১৬৫৩ আধুনিক)

মন্তব্যঃ এই হাদিসে দেখা যায় যিলহজ্জের আট তারিখ মিনায় গিয়েছিলেন এবং নয় তারিখ সকালে আরাফায় গিয়েছেন। কিন্তু অনেকে একটা ভুল করে থাকে যে, তারা আট তারিখে মিনাতে না এসে সরাসরি আরাফায় চলে যাওয়া। আবার অনেক মিনায় যায় ঠিকই কিন্তু মিনায় পর্যাপ্ত স্থান থাকা সত্ত্বেও মিনার বাইরে অবস্থান করে। সুন্নাহ হল সকালে মসজিদে হারামে ফজরের সালাত আদায় করে, বাসায় এসে গোসল করে, পরিস্কার পরিছন্ন হয়ে, ইহবার বেঁধে, তারবিয়া পাঠ করতে করতে মিয়ার চলে যাওয়া। আর কেরান ও ইফরাদ হাজ্জি, যাদের ইহরাম বাধা আছে তারা ফজরের সালাত আদায় করে, বাসায় এসে গোসল করে সকালের নাস্তা খেয়ে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে।

৪। মিনায় সালাত জমা একটি ভুল আমলঃ

সালাত জমা করার অর্থ হল দুই ওয়াক্তের সালাত কে একত্রে আদায় করা। অর্থাৎ যুহর ও আসরের এবং মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করা। সহিহ সুন্নাহ ভিত্তিতে হাজিরা আরাফাতের ময়দানের জোহর ও আসরের একত্রে আদায় করে। আবার মুজদালীফায় মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করে। কিন্তু মিনায় জোহর ও আসর অথবা মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রিত করে আদায় করতেন না। আর যদি তিনি এমনটি করতেন তাহলে বিষয়টি হাদিসের গ্রস্থে উল্লেখ থাকত। কাজেই আমরা নির্দধায় বলতে পারি মিনায় সালাত জমা একটি ভুল আমল।

৫। মিনা থেকে আরাফাতের দিকে যাত্রাঃ

জিলহজ্জের নয় তারিখ হল “ইয়ামুল আরাফ” বা আরাফার দিন। আরাফার দিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করা সর্বসম্মতি ক্রমে ফরজ। যতি কেউ জিলহজ্জের নয় তারিখ আরাফায় অবস্থান না করে হজ্জের সকল কাজ সমাধা করে তবেও তার হজ্জ হবে না। কোন প্রকার দম দিয়াও এর ক্ষতি পূরণ হবে না। কাজেই এই দিন সম্পর্কে শতর্ক থাকি।

জিলহজ্জের নয় তারিখ মিনা থেকে আরাফাতের দিকে যাত্রা শুরু করতে হবে। সকালে মিনায় ফরজের সালাত আদায় করে। সূর্য় উদয়ের পর আস্তে আস্তে আরাফার দিকে রওয়ানা দিতে তবে। এই সময় হেঁটে আরাফায় যাওয়া সুন্নাহ তবে বাহন ব্যবহার করায় কোন ক্ষতি নাই। অনেক সময় দেখা যায় মহিলা ও মাজুর হাজিগণ আট তারিখ দিবাগত রাত্রিতে গাড়িতে করে আরাফার ময়দানে যায়। উজর বসত যাওয়া সঠিক হলেও অনেকেই তাদের সাথে রাত্রিতে আরাফাতের ময়দানে যায় যা সু্ন্নাহ সম্মত নয়।

৬। সর্বনিম্ম কখন আরাফার ময়দানে পৌছাতে হবে?

মিনা থেকে ফজরের সালাত আদায় করে হালকা খাবার খেয়ে আরাফাতের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিতে হবে। হেঁটে আরাফায় যাইতে ৩/৪ ঘন্টা লাগতে পারে। কোন সমস্যা নাই কেননা, দুপুরে সূর্য পশ্চিমে ঢলার পর থেকে আরাফার প্রকৃত সময় শুরু হয়। তবে ইমাম হাম্বলের মতে সেদিনের সকালের ফজর উদয় হওয়া থেকেই এ সময় শুরু হয়। আর এর শেষ সময় হল আরাফার দিবাগত রাত্রির ফজর উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।

দলিলঃ ১. আবদুর রহমান ইবন ইয়ামুর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তাঁর কাছে কয়েকজন লোক এসে তাকে হজ্জ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ হজ্জ হলো আরাফায় (অবস্থান)। অতএব যে ব্যক্তি আরাফার রাত পেয়েছে মুযদালাফার রাতের পূর্বে, তার হজ্জ পূর্ণ হয়েছে। (সুনানে নাসাঈ ৩০১৯)

২. বুকাইর ইবনে আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আমি আবদুর রহমান ইবনে ইয়ামুর আদ-দায়লী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরাফাতে উপস্থিতকালে তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলাম। নাজদ এলাকার কতক লোক তাঁর নিকট হাযির হয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! হজ্জ কিভাবে সম্পন্ন হয়? তিনি বলেনঃ ‘‘আরাফাতে অবস্থান হচ্ছে হজ্জ’’। অতএব যে ব্যক্তি মুজদালিফার রাতে ফজর নামাযের পূর্বেই আরাফাতে এসে পৌঁছলো তার হজ্জ পূর্ণ হলো। মিনায় তিন দিন (১১, ১২ ও ১৩ যুলহিজ্জা) অবস্থান করতে হয়। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি দু’ দিন অবস্থানের পর চলে আসে, তবে তাতে কোন গুনাহ নেই। অতঃপর তিনি কোন ব্যক্তিকে নিজ বাহনের পেছনে উঠিয়ে নিলেন এবং সে উচ্চস্বরে একথা ঘোষণা করতে থাকলো। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৩০১৫)

বুকায়র ইবন আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি আবদুর রহমান ইবন ইয়া’মার দীলী (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ আমি আরাফায় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখেছি, তাঁর কাছে নাজদ হতে কতিপয় লোক এসে তাদের একজনকে তারা প্রতিনিধি নিযুক্ত করে, সে তাঁকে হজ্জ সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে, তিনি বলেনঃ হজ্জ হলো আরাফায় অবস্থান। যে ব্যক্তি মুযদালিফায় রাতে ভোরের সালাতের পূর্বে সেখানে আগমন করলো, সে তার হজ্জ পেল। মিনার দিন হচ্ছে (তিন দিন) যে ব্যক্তি দুই দিনের পর তাড়াতাড়ি চলে যায়, তার কেন পাপ নেই। আর যে ব্যক্তি দেরি করে তারও কোন পাপ নেই। তারপর তিনি একজন লোককে তাঁর পশ্চাতে আরোহণ করান, যিনি এ কথাগুলো লোকের মধ্যে প্রচার করছিলেন। (সুনানে নাসাঈ ৩০৪৪)

মন্তব্যঃ অনিবার্য কারণবশতঃ দিনের বেলায় আরাফায় যেতে পারল না। পৌঁছল ঐ দিন রাতের বেলায়। ফলে শুধু রাতের অংশেই সেখানে অবস্থান করল। এ ক্ষেত্রে আরাফাতে কিছুক্ষণ অবস্থান করলে তার হজ্জ হয়ে যাবে। মুযদালিফায় গিয়ে রাতের বাকী অংশ যাপন করবে।

৭। আরাফার দিনে মর্যাদা ও ফযীলতঃ

১. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এমন কোন দিন নেই, যে দিন আরাফার দিন হতে অধিক বান্দা অথবা বান্দীকে মহান মহিয়ান আল্লাহ্‌ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তিনি সেদিন (বান্দার) নিকটবর্তী হন এবং তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে তাদের (মর্যাদার) ব্যাপারে গর্ব করে বলেন, এরা কী কামনা করে? আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন : এই হাদীসের রাবী (ইউনুস) সম্ভবত, ইউনুস ইব্‌ন ইউসুফ, যার কাছ থেকে ইমাম মালিক (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন। (সুনানে নাসাঈ ৩০০৩)

২. আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মহামহিমান্বিত আল্লাহ আরাফাতের দিন জাহান্নাম থেকে যতো অধিক সংখ্যক বান্দাকে নাজাত দেন, অন্য কোন দিন এতো অধিক বান্দাকে নাজাত দেন না। মহাপ্রতাপশালী আল্লাহ এ দিন (বান্দার) নিকটবর্তী হন, অত:পর তাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের নিকট গৌরব করে বলেন, তারা কী চায়? (ইবনে মাজাহ ৩০১৪, সহিহ মুসলিম ১৩৪৮)

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যিলহজ্জ মাসের দশ দিন থেকে উত্তম আল্লাহর নিকট কোন দিন নেই”। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি বলেঃ হে আল্লাহর রাসূল, এ দিনগুলোই উত্তম, না এ দিনগুলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদসহ উত্তম? তিনি বললেনঃ “জিহাদ ছাড়াই এগুলো উত্তম। আল্লাহর নিকট আরাফার দিন থেকে উত্তম কোন দিন নেই, আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন অতঃপর জমিনে বাসকারীদের নিয়ে আসমানে বাসকারীদের সাথে গর্ব করেন। তিনি বলেনঃ আমার বান্দাদের দেখ, তারা হজ্জের জন্য এলোমেলো চুল ও ধূলিময় অবস্থায় দূর-দিগন্ত থেকে এসেছে। তারা আমার রহমত আশা করে, অথচ তারা আমার আযাব দেখে নি। সুতরাং এমন কোনো দিন দেখা যায় না যাতে আরাফার দিনের তুলনায় জাহান্নাম থেকে অধিক মুক্তি পায়”। (সহিহ হাদিসে কুদসি ১০১ এবং ইবনে হিব্বান)

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আরাফার লোকদের নিয়ে আসমানের ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, তিনি বলেনঃ আমার বান্দাদের দেখ তারা এলোমেলো চুল ও ধূলিময় অবস্থায় আমার কাছে এসেছে”। [(সহিহ হাদিসে কুদসি ১০২ এবং ইবনে হিব্বান)

৩. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল ইয়াউমুল মাওউদ”— (সূরা বুরুজ ২) অর্থ- কিয়ামতের দিন; “আল-ইয়াউমুল মাশহুদ”— (সূরা হুদ ১০৩) অর্থঃ আরাফাতে (উপস্থিতির) দিন এবং “আশ-শাহিদ” (সূরা বুরুজ ৩) অর্থঃ জুমুআর দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ যে সমস্ত দিনে সূর্য উদিত হয় ও অস্ত যায় তার মাঝে জুমুআর দিনের তুলনায় বেশি ভাল কোন দিন নেই। এ দিনের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, ঠিক সে সময় কোন মুমিন বান্দা আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করলে তার প্রার্থনা তিনি কবুল করেন এবং যে বস্তু (অনিষ্ট) হতে সে আশ্রয় প্রার্থনা করে তা হতে তিনি তাকে আশ্রয় দান করেন।(তিরমিজি ৩৩৩৯)

৪. ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ‘আরাফাতের মাঠে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে অবস্থান করছিলেন, আকস্মাৎ তিনি তাঁর সওয়ারী হতে পড়ে গেলে তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সওয়ারীটি তার ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। (ফলে তিনি মারা যান)। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে কাফন দাও। তবে তার শরীরে সুগন্ধি মাখাবে না আর তার মাথা ঢাকবে না এবং হানূতও লাগাবে না। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা তাকে কিয়ামাতের দিনে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন। (সহিহ বুখারি ১৮৫০, সহহি মুসলিম ২৭৮২)

উপরের সহিহ হাদিসের আলোকে আরাফাতের ফজিলত নিম্মরূপঃ

১) মহান আল্লাহ এই দিনে জাহান্নাম থেকে অধিক সংখ্যা বান্দাকে মুক্তি দেন।

২) এই দিনে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার নিকটবর্তী হন।

৩) ফেরেশতাদের কাছে বান্দার (মর্যাদার) ব্যাপারে গর্ব করে এবং প্রশ্ন করেন, তারা কি চায়?

৪) মহান আল্লাহ এই দিনে দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন।

৫) আল্লাহর কাছে ঐ দিনের চেয়ে উত্তম আর কোন দিন নেই।

৬) আরাফার দিনে মৃত ব্যক্তিকে কিয়ামাতের দিনে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন

৭) এই দিনকে পরিত্র কুরআনে “আল-ইয়াউমুল মাশহুদ” (সূরা হুদ ১০৩) বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরাফায় অবস্থান নিম্মের কাজগুলো করা ভালঃ

(১) গোসল করে নেয়া,

(২) পরিপূর্ণ পবিত্র থাকা

আরাফার ময়দানে হাজীদের করণীয়

১। মসজিদে নামিরার নিকটে অবস্থান করাঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনা থেকে যখন রওয়ানা হলেন, তখন কুরাইশরা সন্দেহাতীতভাবে মনে করছিল যে, তিনি মাশ‘আরে হারাম (অর্থাৎ) ‘মুযদালিফাতেই।] অবস্থান করবেন এবং সেখানেই তাঁর অবস্থানস্থল হবে। কেননা, কুরাইশরা জাহেলী যুগে এরকম করত। কিন্তু রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাশ‘আরে হারাম অতিক্রম করে আরাফার নিকট উপনীত হলেন এবং নামিরা নামক স্থানে তাঁর জন্য তাবু তৈরি করা অবস্থায় পেলেন। তিনি সেখানে অবতরণ করলেন।  এই কারনে আরাফায় পৌঁছে মসজিদে ‘নামিরা’র কাছে অবস্থান করা মুস্তাহাব অর্থাৎ উত্তম। সেখানে জায়গা না পেলে আরাফার সীমানার ভিতরে যে কোন স্থানে অবস্থান করতে পারেন। এতে কোন অসুবিধা নেই।

দলিলঃ

১. ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার দিন ভোরে ফাজ্‌রের সলাত আদায় করেই (মিনা হতে) রওয়ানা করে আরাফাহ্তে এসে পৌঁছে ‘নামিরাহ’ নামক স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন। এটা আরাফার সেই স্থান যেখানে ইমাম (আরাফার দিন) অবস্থান গ্রহণ করেন। অতঃপর যুহর সলাতের ওয়াক্ত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাড়াতাড়ি সলাতের জন্য রওয়ানা হলেন এবং যুহর ও ‘আসরের সলাত একত্রে আদায় করে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন, তারপর সেখান থেকে প্রস্থান করে আরাফাহ্‌র ময়দানের অবস্থান স্থলে অবস্থান গ্রহণ করেন। (সুনানে আবু দাইদ ১৯১৩)

২. জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর করে যখন আরাফাতে আসলেন এবং ‘নামিরা’ নামক স্থানে তাঁর জন্য একটি নির্দিষ্ট তাবু খাটানো হয়েছে দেখতে পেলেন, তখন তিনি সেখানে অবতরণ করলেন। যখন সূর্য ঢলে পড়লো তখন তখন তাঁর নির্দেশে ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীর পিঠে হাওদা লাগানো হলো। তারপর যখন ‘বাতনুল ওয়াদী’ তে পৌঁছালেন, সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তারপর বিলাল (রাঃ) আযান ও ইকামত বললেন। তিনি যোহরের সালাত আদায় করলেন, পুনরায় ইকামত বলার পর আসর আদায় করলেন এবং এই দুই সালাতের মধ্যে আর কোন সালাত আদায় করেন নি। (সুনানে নাসাঈ ৬০৪)

৩. উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু আকরাম আল-খুযাঈ (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে থেকে বর্ণিত, তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, আমি আমার পিতার সাথে নামিরার সমতল ভূমিতে অবস্থান করছিলাম। ইতিমধ্যে একদল সাওয়ারী (আমাদের) পার হয়ে গেল। হঠাৎ দেখলাম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন। রাবী বলেন, যখন তিনি সাজদাহ্‌য় যেতেন তখন আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখে নিতাম। (সুনানে তিরমিজি ২৭৪, ইবনু মাজাহ৮৮১ হাদিসের মান সহিহ)।

২।  আরাফার ময়দানের বাহিরে অবস্থান না করাঃ

তবে পাশেই ‘উরানা’ নামের একটি উপত্যকা আছে। সেটি আরাফার চৌহদ্দির বাইরে। কাজেই সেখানে যাবেন না। ঐখানে অবস্থান করবেন না।

দলিলঃ

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ (হজ্জে) কুরায়শরা মুযদালিফায় অবস্থান করতো (আরাফায় যেত না) এবং তাদেরকে বলা হতো ‘হুমছ’। আর আরবের অন্যান্য লোকেরা আরাফায় অবস্থান করতো। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া ত’আলা তাঁর নবীকে আরাফায় অবস্থান করতে এরপর সেখান হতে রওনা হতে আদেশ করলেন। এ প্রসঙ্গে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেনঃ (আরবি) (অর্থ: তোমরা সেখান (আরাফা) থেকে প্রত্যাবর্তন করবে, যেখান থেকে লোকেরা ফিরে যায়। (সুনানে নাসাই ৩০১২)

ইয়াযীদ ইবনু শাইবান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু মিরবা আনসারী (রাঃ) আমাদের নিকটে আসলেন। আরাফাতের এমন এক জায়গায় আমরা অবস্থান করছিলাম যাকে আমর (রাঃ) (ইমামের স্থান হতে) বহু দূর বলে মনে করছিলেন। ইবনু মিরবা আনসারী (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতিনিধি হিসাবে আমি তোমাদের নিকটে এসেছি। তিনি বলেছেনঃ হজ্জের নির্ধারিত স্থানসমূহে তোমরা অবস্থান কর। কারণ, তোমরা ইবরাহীম (আঃ)-এর ওয়ারিসী প্রাপ্ত হয়েছ। (তিরমিজি ৮৮৩ ও ইবনু মাজাহ ৩০১১)।

৩। সালাত জমা করাঃ

যুহরের সময় হলে ইমাম সাহেব খুৎবা দেবেন। খুৎবার পর যুহরের ওয়াক্তেই যুহর ও আসরের সালাত একত্রে জমা করে পড়বেন। দু’ নামাযেরই আযান দেবেন একবার, কিন্তু ইকামাত দেবেন দু’বার। কসর করে পড়বেন। অর্থাৎ যুহর দু’রাকআত এবং আসরও দু’রাকআত পড়বেন। যুহরের ওয়াক্তেই আসর পড়ে ফেলবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাবাসী ও বহিরাগত সব হাজীকে নিয়ে একত্রে এভাবে নামায পড়িয়েছিলেন। এটা সফরের কসর নয়, বরং হজ্জের কসর। কোন নফল-সুন্নাত নামায আরাফায় পড়বেন না। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়েননি।

দলিলঃ

ইব্‌নু উমর (রাঃ) ইমামের সাথে সালাত আদায় করতে না পারলে উভয় সালাত একত্রে আদায় করতেন।

যে বছর হাজ্জাজ ইব্‌নু ইউসুফ ইব্‌নু যুবাইরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, সে বছর তিনি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আরাফার দিনে উকূফের সময় আমরা কিরূপে কাজ করব? সালিম (রহঃ) বললেন, আপনি যদি সুন্নাতের অনুসরণ করতে চান তাহলে ‘আরাফার দিনে দুপুরে সালাত আদায় করবেন। ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, সালিম ঠিক বলেছে। সুন্নাত মুতাবিক সাহাবীগণ যুহর ও ‘আসর এক সাথেই আদায় করতেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি সালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কি এরূপ করেছেন? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে তোমরা কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত ব্যতীত অন্য কারো অনুসরণ করবে? (সহিহ বুখারি ১৬৬২)

আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের সময় মুযদালিফায় মাগরিব এবং ‘ইশা একত্রে আদায় করেছেন।(সহিহ বুখারি ১৬৭৪)

৪। মসজিদে নামিরায় যাওয়া সম্বব না হলে নিজ তাবুতে সালাত আদায়ঃ

মসজিদে নামিরায় যেতে না পারলে নিজ নিজ তাবুতেই উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে জামা‘আতের সাথে যুহর-আসর একত্রে যুহরের আউয়াল ওয়াক্তে দুই দুই রাক‘আত করে কসর ও জমা করে পড়বেন।

দলিলঃ

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাতের ময়দানে ‘নামিরা’ উপত্যকায় অবতরণ করেছিলেন। রাবী বলেন, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, যুবায়ের (রাঃ) কে হত্যা করার পর বিন উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করে পাঠায় যে, আজকের এ দিনের কোন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (খোতবা দিতে মাঠের কেন্দ্রস্থলে) রওয়ানা হতেন? তিনি বলেন, সেই সময় উপস্থিত হলে স্বয়ং আমরাই রওয়ানা হবো। অতএব তিনি কখন রওয়ানা হন তা লক্ষ্য করার জন্য হাজ্জাজ একজন লোক পাঠায়। বিন উমার (রাঃ) যখন রওয়ানা হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন জিজ্ঞেস করলেন, সূর্য কি ঢলে পড়েছে? লোকেরা বললো এখনও ঢলেনি। তিনি বসে রইলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সূর্য কি ঢলে পড়েছে? তারা বললো, এখনও ঢলেনি। কিছুক্ষণ পর তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, সূর্য কি ঢলে পড়েছে? তারা বললো, হাঁ। তারা যখন বললো, সূর্য ঢলেছে তখন তিনি রওয়ানা হলেন। (ইবনে মাজাহ ৩০০৯ সনদ হাসান)

৫। আরাফার ময়দানে বেশী বেশী দোয়া এবং জিকির করাঃ

আরাফার ময়দানে অবস্থান কালে হাজ্জিদের প্রধান কাজই হলো দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ অনুগ্রহ তালাস করা। এই দিনে মহান আল্লাহর ক্ষমা প্রদানে ঘোষনা আছে। তাই, ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য এই দিনে দোয়ার পাশাপাশি আল্লাহ প্রশংসাসহ জিকির এবং কুনআন তিলওয়াত মাধ্যমে অতিবাহিত করা উত্তম। এই জন্য আরাফাতে ময়দানে যাওয়া আগেই দোয়া করার প্রতস্তি নিতে হবে এবং যে দোয়াগুলো করবে তার অর্থ জেনে নিবে। অর্থ না জানলে মনে ভীতরে কোন আবেগের সৃষ্ট হবে না। হাদীসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাক্যে দোয়া করা উত্তম কারন, এই দোয়াগুলো ব্যাপক অর্থবোধক এবং অধিক উপকারী। তবে বান্দা ইচ্ছা মনের আবেগ দিয়ে তার নিজ নিজ মাতৃভাষায় দোয়া করতে পারে। এতে করে তার চাহিদামত দোয়া করা সম্বব হবে। দোয়া করার সময় নিম্মের বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে আশা করি দোয়া কবুলের সহায়ক হবে। বিষয়গুলে হলোঃ

০১. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে দোয়া করা

০২. দোয়ার আগে আল্লাহর প্রতি ‘হামদ’ (প্রশংসা)। (যেমনঃ আয়তুল কুরাসী, সুরা হাসরের শেষ তিন আয়াত তিলওয়াত করা)

০৩. রাসুলের প্রতি ‘সালাত’ (দরুদ) পাঠ করা

০৪. কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা

০৫. হাদিসে বর্ণিত বাক্যে দোয়া করা

০৬ আরাফার ময়দানে দু’হাত উঠিয়ে দোয়া করা

০৭. মনকে বিনম্র ও খুশু-খুযু রেখে মুনাজাত করা

০৮. এখলাস বা নিষ্ঠার সঙ্গে দোয়া করা

০৯. আল্লাহর প্রশংসাসূচক গুণবাচক নামের সঙ্গে দোয়া করা।

১০. কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দোয়া করা

১১. দোয়া কবুলের প্রচণ্ড আশা নিয়ে দোয়া করা

১২. অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করা

১৩. দোয়ার সময় কণ্ঠস্বর নীচু রাখা, উচ্চঃস্বরে দোয়া না করা

১৪. একান্তে দোয়া করা এবং

১৫. দৃঢ়তার সঙ্গে দোয়া করা

১৬. দোয়া কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা

আরাফাতের ময়দানে প্রধাণ আমলই হলো, দোয়া ও জিকির। সহিহ হাদিসে বর্ণিত এমনই কিছু দোয়া জিকির উল্লেখ করব। আপনি চাইলে এর মাধ্যমে আরাফাতের ময়দানে দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে সময় কাটাতে পারেন।

ক। হাদিসে বর্ণিত কিছু দোয়া নিম্মে উল্লেখ করা হলোঃ

আরাফাতের ময়দানে বেশী বেশি ইস্তিগফার বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। বান্দা অন্যায় করে আর মহান আল্লাহ ক্ষমা করেন। ক্ষমা লাভের প্রধান হাতিয়ার হল ইস্তিগফার বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহর  ক্ষমা  লাভের  জন্য  তাঁর  কাছে  ক্ষমা  প্রার্থনা  করতে  হবে।  আল্লাহ  বলেন,

* وَاسْتَغْفِرُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ*

অর্থঃ ‘আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী, করুনাময়। (সুরা বাকারা ২:১৯৯)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا

অর্থঃ যে গোনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়। (সুরা নিসা ৪:১০০)

১. আবূ বুরদাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আগার্‌র (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, ইবনু উমর (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর। কেননা আমি আল্লাহর কাছে দৈনিক একশ’ বার তাওবা করে থাকি। (সহিহ মুসলিম হাদিস ৬৬১৩ ইফাঃ)

২। আবূ মালিক আশজায়ী (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই দুআ শিক্ষা দিতেনঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي

“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে হিদায়াত করুন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন।” (সহিহ মুসলিম ৬৬০৪ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

 ৩. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে দু‘আ করতেন,

(اللَّهُمّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)

‘হে আমাদের প্রভু! এ দুনিয়াতেও আমাদের কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং দোজখের ‘আযাব থেকে আমাদের রক্ষা কর’’ (সূরাহ আল-বাকারাহ ২:২০১)। (সহিহ বুখারি ৪৫২২)

৪. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা (বল)

 *(اللَّهُمّ إنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ، وَمِنْ دَرَكِ الشِّقَاءِ، وَمِنْ سُوْءِ الْقَضَاءِ، وَمِنْ شَمَاتَةِ الْأعْدَاءِ)*

(আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিন জাহদিল বালা-ই ওয়া মিন দারাকিশ শিকা-ই, ওয়া মিন সুইল কাযা-ই। ওয়া মিন শামাতাতিল আ‘দা-ই)

অর্থঃ হে আল্লাহ্ ! আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি বিপদ-আপদের কষ্ট হতে, দুর্ভাগ্য হওয়া থেকে, মন্দ ফায়সালা হতে এবং শত্রুদের খুশী হওয়া থেকে। (সহিহ বুখারি ৬৬১৬)

৫। আবূ মালিক (রহঃ) এর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন যে, তাঁর কাছে জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যখন আমার রবের কাছে প্রার্থনা করব তখন কিভাবে তা ব্যক্ত করব? তিনি বললেন, তুমি বল,

(,اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي))

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে মাফ করে দিন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন। আর (দু’আ করার সময়) বৃদ্ধাঙ্গুলী ব্যতীত সব আংশুল একত্র করবে। (তিনি বললেন) এই শব্দগুলো তোমার দুনিয়া ও আখিরাতকে একত্র করে দেবে। (সহিহ মুসলিম ৬৬০৬ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

মন্তব্যঃ সাধারণত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা দোয়া তিনবার করে করতেন। কিন্তু আরাফার মাঠে পুনরাবৃত্তি করতেন আরো বেশী পরিমাণে। তাই আপনি ইচ্ছা করলে একই দোয়া বার বার করতে পারেন। এই সময় কান্নাকাটি করে মাতা-পিতা, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য বেশী বেশী দোয়া করতে হবে। এমনটি হজ্জে গমন করার জন্য যারা দোয়া চেয়েছে তাদের নাম ধরে ধরে দোয়া করা। সবার নাম নেয়া সম্ভব না হলে বললে, হে আল্লাহ যারা যারা আমার নিকটি তোমার কাজে দোয়া করতে বলেছে, তাদের সকলের মনে নেক আশা তুমি কবুল কর।  

খ। জিকির সম্পর্কিত হাদিসগুলো হলোঃ

১. আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) কর্তৃক পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদার সনদে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরাফাতের দিনের দু’আই উত্তম দুআ। আমি ও আমার আগের নাবীগণ যা বলেছিলেন তার মধ্যে সর্বোত্তম কথা। (তা হলো)

*لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ*

(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু, লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হাম্দু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর)

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, সার্বভৌমত্ব তারই এবং সমস্ত কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান”। (তিরমিযী ৩৫৮৫, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)

২. আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যে কিতাবুল্লাহর একটি অক্ষর পড়ল তার জন্য এর বিনিময়ে একটি নেকি অবধারিত। এবং তাকে একটি নেকির দশ গুণ ছাওয়াব প্রদান করা হবে। আমি বলছি না আলিফ লাম মীম একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, এবং লাম একটি অক্ষর, এবং মীম একটি অক্ষর। (তিরমিজি-২৭৩৫)।

৩. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই আমার এ (বাক্যে) বলা, সুবহান আল্লাহ, আলহামদুল্লিল্লাহ, অ-লাইলাহ ইল্লাহল্লাহ, আল্লাহু আকবার (আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান) পাঠ করা আমার অধিক পছন্দনীয় সে সব জিনিসের চাইতে, যার উপর সূর্য উদিত হয়। (সহিহ মুসলীম ৬৬০২ ইফাঃ)।

৪। মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কি প্রতিদিন এক হাজার নেকী অর্জন করতে সক্ষম? তখন সেখানে উপবিষ্টদের মধ্য থেকে এক প্রশ্নকারী বলল, আমাদের কেউ কিভাবে এক হাজার নেকী অর্জন করতে পারবে? তিনি বললেনঃ যে একশ’বার তাসবীহ (سبحان الله ) পাঠ করলে তার জন্য এক হাজার নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে (অথবা) এবং তার থেকে এক হাজার গুনাহ মিটিয়ে দেওযা হবে। (সহিহ মুসলিম ৬৬০৭ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

৫। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ফাতিমা (রাঃ) একজন খাদিমের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন এবং কাজের অভিযোগ করলেন। তিনি বললেনঃ আমার কাছে তো কোন খাদিম নেই। তিনি বললেনঃ তবে আমি কি তোমাকে এমন কিছুর কথা বলবনা, যা তোমার খাদিম থেকে উত্তম? তা হল রাতে শয্যা গ্রহণের সময় তুমি ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে। (সহিহ মুসলিম ৬৬৭০ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

৬। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

* لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهْوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ  *

(এই বাক্যটি) যে ব্যাক্তি দিনের মধ্যে একশ বার পড়বে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, হামদ তারই, সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান” সে একশ গোলাম আযাদ করার সাওয়াব অর্জন করবে এবং তার জন্য একশটি নেকী লেখা হবে, আর তার একশটি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে। আর সে দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এটা তার জন্য রক্ষা কবচে পরিণত হবে এবং তার চাইতে বেশী ফযীলত ওয়ালা আমল আর কারো হবে না। তবে যে ব্যাক্তি এ আমল তার চাইতেও বেশী করবে। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬১ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

৭। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি প্রত্যহ একশত বার (سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ -আল্লাহ পবিত্র ও সমস্ত প্রশংসা তাঁরই) সুবাহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহি বলবে তার গুনাহগুলি মাফ করে দেওয়া হবে তা সমুদ্রের ফেনা পরিমান হলেও। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬৩ ইসলামি ফাউন্ডেশন, সহিহ মুসলিম ৬৫৯৯ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

৮। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি বাক্য এমন যে, মুখে তার উচ্চারন অতি সহজ্জ কিন্তু পাল্লায় অনেক ভারী, আর আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। তা হলঃ সুবাহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবাহানআল্লাহিল আযীম। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬৪ ইসলামি ফাউন্ডেশন)

৯। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক সকালে ও বিকালে একশত বার বলেঃ সুবাহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহী”, কিয়ামতের দিন তার চাইতে উত্তম (আমালকারী) আর কেউ হবে না। তবে যে লোক তার ন্যায় কিংবা তার চাইতে অধিক পরিমান তা বলে (সে উত্তম ‘আমালকারী বলে গণ্য হবে)। (তিরমিজী ৩৪৭৯ হাদিসেরমান সহিহ)।

১০। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি : “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” অতি উত্তম যিক্‌র এবং “আলাহামদু লিল্লাহ্‌” অধিক উত্তম দু‘আ। (সুনানে তিরমিজি ৩৩৮৩, ইবনে মাজাহ ৩৮০০)

১১। ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে আমি ইবরাহীম (আঃ)-এর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ” আপনার উম্মাতকে আমার সালাম পৌছিয়ে দিন এবং তাদেরকে জানান যে, জান্নাতের যামীন অতীব সুগন্ধি সমৃদ্ধ এবং সেখানকার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। তা একটি সমতল ভূমি এবং তার গাছপালা হল “সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামৃদু লিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”। (তিরমিজি ৩৪৫২ হাদিসের মান হাসান সহিহ)।

১২। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্‌ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে লোক এই নামসমুহ মুখস্ত করবে বা পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি ৩৫০৬, মিশকাত ২২৮৮, সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম।

মন্তব্যঃ কাজেই আরাফাতের ময়দানে কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে কোন বাক্য মহান আল্লাহ তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদি পড়া যায়।

আরাফা দিবসের ভুল-ত্রুটিঃ 

আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজ্জের অন্যতম ফরজ কাজ। আরাফাতে ঠিক মত আস্থান না হলে তার হজ্জ হবে না। কাজেই এই স্থানে ভূলত্রুটিগুলির প্রতি একটু বেশী খেয়াল রাখতে হবে।

১। আরাফাতের বাইরে অবস্থার করাঃ

আবদুর রহমান ইবন ইয়ামুর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তাঁর কাছে কয়েকজন লোক এসে তাকে হজ্জ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ হজ্জ হলো আরাফায়। অতএব যে ব্যক্তি আরাফার রাত পেয়েছে মুযদালাফার রাতের পূর্বে, তার হজ্জ পূর্ণ হয়েছে। (সুনানে নাসাঈ ৩০১৯)

মন্তব্যঃ এই কারনে যদি কেউ আরাফার সীমানায় প্রবেশ না করে তার হজ্জ হবে না। ঠিক তেমনিভাবে কেউ যদি যথাযথ ইহরান বেধে মিনায় না গিয়েও সরাসরি সূর্যাস্তের আগে আরাফায় ময়দানে ঢুকতে পারে এবং বাকি কাজে ঠিক মত আদায় করে তবে তার হজ্জ আদায় হবে বলে ধরা হয়। আলাফার ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে। কিন্তু কেউ যদি সূর্যাস্তের আগে আরাফায় ময়দান ত্যাগ করে তবে তার হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। কোন প্রকার দম দিলেও হজ্জ আদায় হবে না। কারন ফরজ ছুটে গেলে দম দ্বারা পূর্ণ হয় না। আরাফার অবস্থান করা ছিল ফরজ। হজ্জের ফরজ কখনও দম দ্বারা আদায় হয় না। এখান আর একটি কথা মনে রাখতে হবে মাসজিদে নামিরার সম্মুখভাগের অংশটি আরাফার সীমানার বাইরে। কাজেই এখান অবস্থান করলে ফরজ আদায় কবে না। তাই আগে ভাগে আরাফার ম্যাপ দেখে নিজের অবস্থান ঠিক করে নিবেন। না বুঝলে অন্যের দ্বারা হলেও বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

২। হাজ্জিগণ আরাফার দিনের সিয়াম রাখবে নাঃ

আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট আরাফাতের দিনের রোযা সম্পর্কে আশা করি যে, তিনি এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। (সুনানে তিরমিজি ৭৪৯ ও ইবনু মাজাহ ১৭৩০)

আবূ ক্বাতাদাহহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আরাফার দিনের রোযা রাখলে আল্লাহ্‌র নিকট আশা রাখি যে তিনি বিগত এক বছরের ও আগামী এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন।” (সহিহ মুসলিম ১১৬২)

আরাফার দিনের সিয়াম পালন একটি সুন্নাহ সম্মত ও ফজিলত পূর্ণ আমল কিন্তু এই দিনের সিয়ামের অনেক ফজিলত হলেও হাজিগণ যারা এই দিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করবেন তারা রাখতে পারবেন না। বিশেষ করে মাঠে অবস্থানকারী হাজীদের জন্য ঐ দিন রোযা না রাখা মুস্তাহাব। অর্থাৎ রোযা না রাখাই বিধান। কারণ খানাপিনা না খেলে এ কঠিন ইবাদতের জন্য শরীরে শক্তি পাবে না। হজ্জের এ পরিশ্রান্ত ইবাদত যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য শক্তির প্রয়োজন। তাই খাবার গ্রহণ করা জরুরী। নিম্মের হাদিসটি একটু লক্ষ করুন।

মায়মূনাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কিছু সংখ্যক লোক ‘আরাফাতের দিনে আল্লাহ্‌র রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সওম পালন সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করলে তিনি স্বল্প পরিমাণ দুধ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট পাঠিয়ে দিলে তিনি তা পান করলেন ও লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করছিল। তখন তিনি (‘আরাফাতে) অবস্থান স্থলে ওকূফ করছিলেন। (সহিহ বুখারি ১৯৮৯)

উম্মু ফাযল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আরাফার দিনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিয়াম এর ব্যাপারে লোকজন সন্দেহ করতে লাগলেন। তাই আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শরবত পাঠিয়ে দিলাম। তিনি তা পান করলেন। (সহিহ বুখারী ১৬৫৮ তাওহিদ এবং ১৫৫৫ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ আরাফার দিনে হাজিদের সিয়াম পালণ একটি ভুল আমল।

৩। আরাফার ময়দানে নফল সালাতঃ

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যিলহজ্জ মাসের দশ দিন থেকে উত্তম আল্লাহর নিকট কোন দিন নেই”। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি বলেঃ হে আল্লাহর রাসূল, এ দিনগুলোই উত্তম, না এ দিনগুলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদসহ উত্তম? তিনি বললেনঃ “জিহাদ ছাড়াই এগুলো উত্তম। আল্লাহর নিকট আরাফার দিন থেকে উত্তম কোন দিন নেই, আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন অতঃপর জমিনে বাসকারীদের নিয়ে আসমানে বাসকারীদের সাথে গর্ব করেন। তিনি বলেনঃ আমার বান্দাদের দেখ, তারা হজ্জের জন্য এলোমেলো চুল ও ধূলিময় অবস্থায় দূর-দিগন্ত থেকে এসেছে। তারা আমার রহমত আশা করে, অথচ তারা আমার আযাব দেখে নি। সুতরাং এমন কোনো দিন দেখা যায় না যাতে আরাফার দিনের তুলনায় জাহান্নাম থেকে অধিক মুক্তি পায়”। (হাদিসে কুদসি ১০১ ও ইব্‌ন হিব্বান)

উসামা ইবন যায়দ (রাঃ) বলেন, আমি আরাফায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একই বাহনে সাওয়ার ছিলাম। তিনি দু‘আয় উভয় হাত উত্তোলন করলেন এমন সময় তার উট তাঁকে নিয়ে একদিকে হেলে গেল, ফলে তার নাকের রশি পড়ে যেতে লাগলো, তিনি তাঁর এক হাতে তা ধরে ফেললেন, এ সময় তাঁর অন্য হাত উঠানোই ছিল। (সুনানে নাসাঈ ৩০১৪)

আরাফার ময়দানেরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত তুলে দোয়া করেছেন। এই স্থান অনেক কে দেখা যায় দোয়া না করে নফল সালাত আদায় করে যা মুলত একটি ভুল আমন। এখানে জোহর ও আসর সালাত কে জমা করে আদায় করার বিধান দেয়া হয়েছে। তাই নফল সালাত আদায় করা ঠিন নয়। আরাফা হল দোয়া কবুলের স্থান তাই এখানে হাত তুলে একাকী দোয়া করতে হবে। এখানে তাবলীগের বিশ্ব ইজতিমার মত সম্মিলিত দোয়া কোন ব্যবস্থা করা হয় না কারন এখান একাকী দোয়া করাই সুন্নাহ সম্মত আমল। কিন্তু দোয়ার সময় একটি বিষয় খুব লক্ষ করবেন। যেন কোন অবস্থায়ই কিবলাকে পিছনে রেখে জাবালে আরাফার দিকে মুখ করে দুআ করা যাবে না।

৪। জাবালে রহমত থেকে পাথর সংগ্রহঃ

আরাফাতের ময়দানে অনেক পাহাড় আছে। একটি পাহাড়ের পাদদেশে বিদায় হজের খুতবা দিয়েছিলেন। সেই পাহাড়টি যাতে সহজে চিনতে পারেন এজন্য এই চিহ্ন সেখানে স্থাপন করা হয়েছে। এই পাহাড়ের নাম জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়। জাবালে রহমত তাৎপর্যপূর্ণ হলেও এর বিশেষ কোন ফজিলত বর্ণিত হয়নি। তারপরও অনেক হাজি জাবালে রহমত কে তাৎপর্যপূর্ণ ও বরকতময় মনে করে সেখান থেকে বরকতের আশায় পাথর সংগ্রহ করা। যা একটি ভূল ধারন ও কাজ।

৫। জাবালে রহমত সামনে রেখে কাবাকে পিছনে রেখে দোয়া করাঃ

আরাফাতের ময়দানে অনেক পাহাড় আছে। একটি পাহাড়ের পাদদেশে বিদায় হজের খুতবা দিয়েছিলেন।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “আরাফার ময়দানের আমল ও ভুল-ত্রুটি

Leave a comment