ইহ্‌রাম অবস্থায় ১১ টি নিষিদ্ধ কাজ

ইহ্‌রাম অবস্থায় ১১ টি নিষিদ্ধ কাজ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। মাথার চুল মুন্ডন করা বা ছোট করা যাবে  না

২। স্ত্রী সম্ভোগ বা যৌন আকর্ষণে স্পর্শ যাবে নাঃ

৩। স্ত্রীর সাথে সহবাস করা যাবে নাঃ

৪। ইহরাম অবস্থায শিকার করা যাবে নাঃ

৫। অশোভন কাজ বা ঝাগড়া বিবাদ করা যাবে নাঃ

৬। সেলাই যুক্ত জামা, পায়জামা, টুপি এবং মোজা পরবে নাঃ

৭। নখ কাটা যাবে নাঃ

৮। ইহরাম অবস্থায় মাথা ও মুখমন্ডল ঢাকা যাবে নাঃ

৮। ইহরাম অবস্থায় মাথা মুন্ডল করা যাবে নাঃ

৯। ইহরাম অবস্থায় মহিলারা হাত মুজা ও নেকাপ পরবে নাঃ

১০। সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে নাঃ

১১। বিবাহ করা বা করানো বা বিবাহের পয়গাম পাঠানো যাবে নাঃ

এবং

ইহরামের ফিদয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতওয়াঃ

ইহ্‌রাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজগুলির বিস্তরিত বিবরণঃ

১। মাথার চুল মুন্ডন করা বা ছোট করা যাবে  নাঃ

মুহরিম অবস্থায় মাথার চুল মুন্ডন বা ছোট করা যাবে না। এই কথার দলিল মহান আল্লহ কালাম।

মহান আল্লাহ বলেন,

وَلاَ تَحْلِقُواْ رُؤُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ

অর্থঃ আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করবে না, যতক্ষণ না কোরবাণী যথাস্থানে পৌছে যাবে। ( সুরা বাকারা ২:১৯৬ )

মন্তব্যঃ এই আয়াতে মাথা মুণ্ডনকে ইহরাম ভঙ্গ করার নিদর্শন বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় যে, ইহরাম অবস্থায় চুল ছাটা বা কাটা অথবা মাথা মুণ্ডন করা নিষিদ্ধ।

ক। কোন কারনে মাথা মুন্ডন করলে ফিদয়া দিতে হবেঃ

তবে অসুস্থতা কিংবা ওযরের কারণে ইহরাম অবস্থায় মাথার চুল ফেলতে বাধ্য হলে কোন পাপ হবে না, তবে তার ওপর ফিদয়া ওয়াজিব হবে।

দলিলঃ মহান আল্লাহ বলেন,

 فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضاً أَوْ بِهِ أَذًى مِّن رَّأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِّن صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ فَإِذَا أَمِنتُمْ فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ذَلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَاتَّقُواْ اللّهَ وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

অর্থঃ যারা তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে রোজা করবে কিংবা খয়রাত দেবে অথবা কুরবানী করবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ্ব ওমরাহ একত্রে একই সাথে পালন করতে চাও, তবে যাকিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কুরবানী করাই তার উপর কর্তব্য। বস্তুতঃ যারা কোরবানীর পশু পাবে না, তারা হজ্জ্বের দিনগুলোর মধ্যে রোজা রাখবে তিনটি আর সাতটি রোযা রাখবে ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি তাদের জন্য, যাদের পরিবার পরিজন মসজিদুল হারামের আশে-পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক। সন্দেহাতীতভাবে জেনো যে, আল্লাহর আযাব বড়ই কঠিন। (সুরা বাকারা ২:১৯৬)

১. কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বোধ হয় তোমার এই পোকাগুলো (উকুন) তোমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বললেন, হাঁ, ইয়া আল্লাহর রাসূল! এরপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মাথা মুন্ডন করে ফেল এবং তিন দিন সিয়াম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে আহার করাও কিংবা একটা বকরী কুরবানী কর। (সহিহ বুখারি ১৮১৪-১৮১৮)

২. আবদুল্লাহ ইবনু মা‘কিল (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কা‘ব ইবনু উজরা-এর নিকট এই কূফার মসজিদে বসে থাকাকালে সওমের ফিদ্য়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমার চেহারায় উকুন ছড়িয়ে পড়া অবস্থায় আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আনা হয়। তিনি তখন বললেন, আমি মনে করি যে, এতে তোমার কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি একটি বকরী সংগ্রহ করতে পার? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি তিনদিন সওম পালন কর অথবা ছয়জন দরিদ্রকে খাদ্য দান কর। প্রতিটি দরিদ্রকে অর্ধ সা‘ খাদ্য দান করতে হবে এবং তোমার মাথার চুল কামিয়ে ফেল। তখন আমার ব্যাপারে বিশেষভাবে আয়াত অবতীর্ণ হয়। তবে তোমাদের সকলের জন্য এই হুকুম। (সহিহ বুখারি ৪৫১৭)

মন্তব্যঃ  মাথা মুণ্ডনের ফিদয়া তিনভাবে দেয়া যায়, (১) ছাগল যবেহ করা (২) তিনটি রোজা রাখা (৩) ছয়জন মিসকীনকে পেট পুরে খাওয়ানো। প্রত্যেক মিসকীনের জন্য অর্ধ সা‘ (এক কেজি ২০ গ্রাম) খাবার। মোট সদকার পরিমাণ হবে ছয় জন মিসকীনের জন্য তিন সা‘ (সাত কেজি ৩০ গ্রাম)। আর পশু যবেহের ইচ্ছা করলে ছাগল বা তার চেয়ে বড় যেকোনো পশু যবেহ করতে হবে। শরীয়ত বিশেষজ্ঞগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তবে পশু যবেহ করার মাধ্যমে ফিদয়ার ক্ষেত্রে এমন ছাগল হওয়া বাঞ্ছনীয়, যা কুরবানীর উপযুক্ত; যার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাবতীয় ত্রুটি থেকে মুক্ত। 

খ। মাথার কিছু অংশ মুন্ডন করলে ফিদয়া ওয়াজিব নয়ঃ

বিশুদ্ধ মতানুসারে পরিপূর্ণরূপে মাথা মুণ্ডন করা ছাড়া উল্লেখিত ফিদয়া ওয়াজিব হবে না। কেননা পরিপূর্ণ মাথা মুণ্ডন ছাড়া হলক বলা হয় না। তাই মাথার কিছু অংশ মুন্ডন করলে ফিদয়া ওয়াজিব হবে না।

দলিলঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরামের অবস্থায় আধ কপালির কারণে তাঁর মাথায় শিঙ্গা লাগান। (সহিহ বুখারি ৫৭০১)

ইবনু ‘আব্বাস হতে বর্ণিত যে, মাথার ব্যথায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় ‘লাহয়ী জামাল’ নামের একটি কুয়োর ধারে মাথায় শিঙ্গা লাগান।  (সহিহ বুখারি ৫৭০০)

মন্তব্যঃ মাথায় শিঙ্গা লাগানোর স্থান থেকে অবশ্যই চুল ফেলে দিতে হয়েছে। কিন্তু একারণে তিনি ফিদয়া দিয়েছেন এরকম কোন প্রমাণ নেই।

গ। দেহের অন্য কোন স্থানের লোম বিধানঃ

মাথা ছাড়া দেহের অন্য কোন স্থানের লোম মুণ্ডন করলে অধিকাংশ আলিম তা মাথার চুলের ওপর কিয়াস করে উভয়টিকে একই হুকুমের আওতাভুক্ত করেছেন। কারণ মাথা মুণ্ডন করার ফলে যেমন পরিচ্ছন্নতা ও স্বাচ্ছন্দ্য অনুভূত হয়, তেমনি দেহের লোম ফেললেও এক প্রকার স্বস্তি অনুভূত হয়। তবে তারা কিছু ক্ষেত্রে ফিদয়ার কথা বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে দমের কথা বলেছেন। বস্তুত এ ক্ষেত্রে দম বা ফিদয়া দেয়া আবশ্যক হওয়ার সপক্ষে কোন শক্তিশালী প্রমাণ নেই। কিন্তু হাজীদের উচিত ইহরাম অবস্থায় শরীরের কোন অংশের চুল বা লোম যেন ছেড়া বা কাটা না হয়। তারপরও যদি কোন চুল পড়ে যায়, তবে তাতে দোষের কিছু নেই। (হজ উমরা ও জিয়ারত ইসলাম হাউজ.কম)

২। স্ত্রী সম্ভোগ বা যৌন আকর্ষণে স্পর্শ যাবে নাঃ

ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সম্ভোগ করা, নির্লজ্জ কথাবার্তা বলা, যৌন আকর্ষণে স্পর্শ করা বা শরীরের সঙ্গে শরীর লাগানো যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ

অর্থঃ হাজ্জ হয় কয়েকটি নির্দিষ্ট মাসে, অতঃপর এ মাসগুলোতে যে কেউ হাজ্জ করার মনস্থঃ করবে, তার জন্য হাজ্জের মধ্যে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়। ( সুরা বাকারা ২:১৯৭ )

সুতরাং কোন ইহরাম অবস্থায় থাকা ব্যক্তির জন্য নিজ স্ত্রীকে চুম্বন দেয়া, কামভাব নিয়ে স্পর্শ করা বা খোঁচা দেয়া বা রসিকতা করা জায়েয নয়। আর মহিলা যদি ইহরাম অবস্থায় থাকে তাহলে তার জন্য স্বামীকে এ ধরণের সুযোগ দেয়াও জায়েয নয়। এমন কি কামভাব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের দিকে তাকানোও হালাল নয়। কারণ, ইহাও স্পর্শের মতই সম্ভোগের অন্তর্ভুক্ত।

৩। স্ত্রীর সাথে সহবাস করা যাবে নাঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ

অর্থঃ হাজ্জ হয় কয়েকটি নির্দিষ্ট মাসে, অতঃপর এ মাসগুলোতে যে কেউ হাজ্জ করার মনস্থঃ করবে, তার জন্য হাজ্জের মধ্যে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়। ( সুরা বাকারা ২:১৯৭ )

আর স্বামী-স্ত্রী মিলন হচ্ছে হাজ্জ ও উমরাহ অবস্থায় সর্বাধিক বড় নিষিদ্ধ কাজ। যার তিনটি অবস্থা হতে পারেঃ

ক। প্রথম অবস্থাঃ আরাফায় অবস্থানের পূর্বে সহবাসঃ

উকুফে আরাফা বা আরাফায় অবস্থানের পূর্বে মুহরিম ব্যক্তির স্ত্রী-সম্ভোগে লিপ্ত হওয়া। এমতাবস্থায় সমস্ত আলিমের মতেই তার হজ বাতিল হয়ে যাবে। তবে তার কর্তব্য হচ্ছে, হজের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীকালে তা কাজা করা। তাছাড়া তাকে দম (পশু কুরবানী) দিতে হবে। পশুটি কেমন হবে এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা রহ. বলেন, তিনি একটি ছাগল যবেহ করবেন। (খালেছুল জুমান ১১৪)। তবে, অন্য ইমামগণের মতে, একটি উট যবেহ করবেন।

ইমাম মালেক রহ. বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি যে, উমর, আলী ও আবূ হুরায়রা রা.-কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে মুহরিম থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছে। তাঁরা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন, সে আপন গতিতে হজ শেষ করবে। তারপর পরবর্তী বছর হজ আদায় করবে এবং হাদী যবেহ করবে। ( মুআত্তা মালেক : ১৩০৭/১)

তিনি বলেন, আলী রা. বলেছেন, পরবর্তী বছর যখন তারা হজের ইহরাম বাঁধবে, তখন হজ শেষ করা অবধি স্বামী-স্ত্রী একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে। (প্রাগুক্ত।)

মোটকথা, সর্বসম্মত মত হল, আরাফায় অবস্থানের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করলে হজ বাতিল হয়ে যায়।

খ। দ্বিতীয় অবস্থাঃ আরাফায় অবস্থান ও বড় জামরায় পাথর মারার পর সহবাস করলেঃ

আরাফায় অবস্থানের পরে, বড় জামরায় পাথর মারা এবং হজের ফরয তাওয়াফের পূর্বে যদি সহবাস সংঘটিত হয়, তবে ইমাম আবূ হানীফা রহ. বলেন, তার হজ আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু তার ওপর একটি উট যবেহ করা কর্তব্য। এ ব্যাপারে তিনি হাদীসের বাহ্যিক ভাষ্য থেকেই তিনি দলীল গ্রহণ করেছেন। হাদীসে এসেছে الحَجُّ عَرَفَةُ (আল-হাজ্জু আরাফাতু) অর্থাৎ হজ হচ্ছে আরাফা। (আবূ দাউদ ১৯৪৯

পক্ষান্তরে ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমদসহ অধিকাংশ ফকীহর মতে তার হজ ফাসেদ। এ অবস্থায় তাকে দু’টি কাজ করতে হবে।

১. তার ওপর ফিদয়া ওয়াজিব হবে। আর সে ফিদয়া আদায় করতে হবে একটি উট বা গাভি দ্বারা, যা কুরবানী করার উপযুক্ত এবং তার সব গোশত মিসকীনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে; নিজে কিছুই গ্রহণ করতে পারবে না।

২. সহবাসের ফলে হজটি ফাসিদ বলে গণ্য হবে। তবে এ হজটির অবশিষ্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করা তার কর্তব্য এবং বিলম্ব না করে পরবর্তী বছরেই ফাসিদ হজটির কাযা করতে হবে।

গ। তৃতীয় অবস্থাঃ বড় জামরায় পাথর মারা ও মাথা মুণ্ডনের পরঃ

বড় জামরায় পাথর মারা ও মাথা মুণ্ডনের পর এবং হজের ফরয তাওয়াফের পূর্বে সহবাস সংঘটিত হলে, হজটি সহীহ হিসেবে গণ্য হবে। তবে প্রসিদ্ধ মতানুসারে তার ওপর দু’টি বিষয় ওয়াজিব হবে।

১. একটি ছাগল ফিদয়া দেবেন, যার সব গোশত গরীব-মিসকীনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে। ফিদয়া দানকারী কিছুই গ্রহণ করবে না।

২. হারাম এলাকার বাইরে গিয়ে নতুন করে ইহরাম বাঁধবেন এবং মুহরিম অবস্থায় হজের ফরয তাওয়াফের জন্য লুঙ্গি ও চাদর পরে নেবেন

মন্তব্যঃ এই মাসায়েলটি “কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত”  শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) কিতার থেকে নকল করা হইয়াছে।

৪। ইহরাম অবস্থায শিকার করা যাবে নাঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُ مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِلسَّيَّارَةِ وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِيَ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ

তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সুমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে এবং তোমাদের ইহরামকারীদের জন্যে হারাম করা হয়েছে স্থল শিকার যতক্ষণ ইহরাম অবস্থায় থাক। আল্লাহকে ভয় কর, যার কাছে তোমরা একত্রিত হবে। (সুরা মায়েদা ৫:৯৬)

সুতরাং কোন মুহরিম ব্যক্তির জন্য আয়াতে বর্ণিত শিকারী পশু শিকার করা জায়েয নয়, তা সরাসরি হত্যা করা হোক, অথবা তার হত্যার কারণ হওয়া কিংবা ইশারা-ইংগীতের মাধ্যমে হত্যার জন্য সহায্য-সহযোগিতা করা হোক বা তা হত্যার জন্য নিজ অস্ত্র অপর ব্যক্তিকে প্রদান করাই হোক। তবে ইহরাম মুক্ত ব্যক্তি যদি নিজে খাওয়ার জন্য শিকার করে তবে সেই গোশ্ত ইহরাম অবস্থায় খাওয়া যাবে।

১. আবূ কাতাদাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম, এমনকি ‘ক্বাহাহ্’ নামক স্থানে গিয়ে পৌছলাম। আমাদের কতক ইহরাম অবস্থায় এবং কতক ইহরামবিহীন অবস্থায় ছিল। আমি লক্ষ্য করলাম, আমার সঙ্গীরা একটা কিছুর দিকে তাকাচ্ছে। আমি তাকিয়ে দেখলাম, তা একটি বন্য গাধা। অতএব আমি আমার ঘোড়ার জীন বাঁধলাম এবং বল্লম তুলে নিলাম। এরপর ঘোড়ার পিঠে চেপে বসলাম। এ অবস্থায় আমার চাবুক নিচে পড়ে গেল। আমি আমার সঙ্গীদের তা তুলে দিতে বললাম, তারা ইহরাম অবস্থায় ছিল। তাই তারা আল্লাহর শপথ করে বলল, আমরা তোমাকে এ ব্যাপারে কিছুমাত্র সাহায্য করতে পারব না। অতঃপর আমি নিচে নেমে এসে তা তুললাম। অতঃপর ঘোড়ায় চড়ে গাধার পশ্চাদ্ধাবন করলাম। তা ছিল একটি টিলার আড়ালে। আমি বল্লমের আঘাতে এটাকে হত্যা করলাম। অতঃপর আমার সঙ্গীদের কাছে নিয়ে এলাম। তাদের কতক বলল, তা খাও, আর কতক বলল, খেও না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সম্মুখভাগে ছিলেন। আমি ঘোড়া হাকিয়ে তার নিকট উপস্থিত হলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তা হালাল, অতএব তোমরা তা খাও। (সহিহ মুসলিম ২৭৪১)

২. আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তার পিতা তাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হুদায়বিয়ার অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি ছাড়া আর সকলেই উমরাহ করার জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। আমি একটি বন্য গাধা শিকার করলাম এবং আমার মুহরিম সঙ্গীদের এর গোশত খাওয়ালাম। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাকে অবহিত করলাম যে, শিকারের অবশিষ্ট গোশত আমাদের সাথে আছে। তিনি বললেন, “তোমরা তা খাও”; তখন তারা ছিলেন মুহরিম।আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তার পিতা তাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হুদায়বিয়ার অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি ছাড়া আর সকলেই উমরাহ করার জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। আমি একটি বন্য গাধা শিকার করলাম এবং আমার মুহরিম সঙ্গীদের এর গোশত খাওয়ালাম। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাকে অবহিত করলাম যে, শিকারের অবশিষ্ট গোশত আমাদের সাথে আছে। তিনি বললেন, “তোমরা তা খাও”; তখন তারা ছিলেন মুহরিম। (সহিহ মুসলিম ২৭৪৭)

৩. আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কতাদাহ্ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত যে, তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (সফরে) রওনা হলেন। তারা সবাই ইহরাম অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু আবূ কতাদাহ (রাযিঃ) হালাল অবস্থায় ছিলেন। হাদীসের অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্ববৎ। তবে এ বর্ণনায় আরও আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এর কিছু গোশত তোমাদের সাথে আছে কি? তারা বললেন, এর পায়ের গোশত আমাদের সাথে আছে। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিয়ে আহার করলেন। (সহিহ মুসলিম ২৭৪৮)

৪. সা’ব ইবনু জাসসামাহ আল লায়সী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বন্য গাধা (গোশত) হাদিয়্যাহ (হাদিয়া/উপহার) স্বরূপ দিলেন। আর তিনি তখন আবওয়া অথবা ওয়াদান নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তিনি তার কাছে তা ফেরত পাঠালেন। সা‘ব (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার চেহারা মলিন দেখে বললেন, আমি তোমাকে তা ফেরত দিতাম না, শুধু ইহরামের কারণেই তা ফেরত দিয়েছি। (সহিহ মুসলিম ২৭৩৫)

৫. জাবির ইবন অবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, স্থলভাগের শিকার করা জন্তুর গোশত তোমাদের জন্য ভক্ষণ করা হালাল, যদি তা তোমরা নিজেরা শিকার না করে থাক অথবা তোমাদের জন্য শিকার না করা হয়। (আবু দাউদ ১৮৫১ ও সুনানে নাসাঈ ২৮২৭, হাদিসের মান যঈফ)

হাদিসটি যঈফ হলেও সুনানে তিরমিজির ৮৪৬ নম্বর সহিহ হাদিসটির সার কথা সাথে এই হাদিসটির মিল আছে। কাজেই হুকুমের দিক থেকে হাদিসটি গ্রহনীয়।

আর যদি কোন মুহরিম ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত কোন শিকারী পশুকে হত্যা করে তাহলে তাকে তার বিনিময় দিতে হবে। এর দলিল হলো কুরআনের আয়াত। মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَقْتُلُواْ الصَّيْدَ وَأَنتُمْ حُرُمٌ وَمَن قَتَلَهُ مِنكُم مُّتَعَمِّدًا فَجَزَاء مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِّنكُمْ هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ أَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ أَو عَدْلُ ذَلِكَ صِيَامًا لِّيَذُوقَ وَبَالَ أَمْرِهِ عَفَا اللّهُ عَمَّا سَلَف وَمَنْ عَادَ فَيَنتَقِمُ اللّهُ مِنْهُ وَاللّهُ عَزِيزٌ ذُو انْتِقَامٍ

অর্থঃ মুমিনগণ, তোমরা ইহরাম অবস্থায় শিকার বধ করো না। তোমাদের মধ্যে যে জেনেশুনে শিকার বধ করবে, তার উপর বিনিময় ওয়াজেব হবে, যা সমান হবে ঐ জন্তুর, যাকে সে বধ করেছে। দু’জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এর ফয়সালা করবে-বিনিময়ের জন্তুটি উৎসর্গ হিসেবে কাবায় পৌছাতে হবে। অথবা তার উপর কাফফারা ওয়াজেব-কয়েকজন দরিদ্রকে খাওয়ানো অথবা তার সমপরিমাণ রোযা রাখতে যাতে সে স্বীয় কৃতকর্মের প্রতিফল আস্বাদন করে। যা হয়ে গেছে, তা আল্লাহ মাফ করেছেন। যে পুনরায় এ কান্ড করবে, আল্লাহ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নিবেন। আল্লাহ পরাক্রান্ত, প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম। ( সুরা মায়েদা ৫:৯৫ )

 *** এ সম্পর্কে শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) বলেনঃ

কেউ যদি কোন পায়রাকে হত্যা করে তাহলে তার অনুরূপ হচ্ছে ছাগল। সুতরাং সে ব্যক্তি নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি আদায় করতে পারবে।

(১) একটি ছাগল যবহ করে পায়রার ফিদয়া স্বরূপ গরীব-দরিদ্রদের মাঝে তা বিতরণ করে দিবে,

(২) ছাগলের মূল্য ধরে টাকা দিয়ে খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করে প্রত্যেক মিসকীনকে অর্ধ সা’ করে প্রদান করবে। অথবা

(৩) প্রত্যেক মিসকীনের অন্নদানের বিনিময়ে একটি করে সিয়াম রাখবে।

আর গাছ কাটার বিষয়টি ইহরামের কারণে কোন মুহরিম ব্যক্তির প্রতি হারাম হয় না। কেননা ইহা ইহরাম সংক্রান্ত বিধান নয়। তবে যে ব্যক্তি হারামের সীমানার ভিতরে অবস্থান করবে তার প্রতি গাছ কাটা হারাম, সে ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় থাক বা নাই থাক। অতএব আরাফায় মুহরিম ও যে মুহরিম নয় উভয় ব্যক্তির জন্য গাছ কাটা জায়েয। কিন্তু মুজদালিফা এবং মিনায় উভয় শ্রেণীর মানুষের জন্য গাছ কাটা হারাম। (** কিতাবঃ কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত) 

তার এই ফতওয়ার দলিল হলোঃ

কারণ, আরাফা হচ্ছে হারাম সীমানার বাইরে পক্ষান্তরে মুয্দালিফা এবং মিনা হচ্ছে হারাম সীমানার ভিতরে।

ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ (মক্কা) শহরকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন, এর একটি কাঁটাও কর্তন করা যাবে না, এতে বিচরণকারী শিকারকে তাড়া করা যাবে না, এখানে প্রচারের উদ্দেশ্য ব্যতীত পড়ে থাকা কোন বস্তু কেউ তুলে নিবে না। (সহিহ বুখারি ১৫৮৭ তাওহীদ)

ব্যতিক্রমঃ

১. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ এমন চার প্রকার দুষ্ট জন্তু হারাম এবং হারামের বাইরে নিধন করা যায়ঃ চিল (এবং শকুন), কাক, ইঁদুর এবং হিংস্র কুকুর। তিনি (উবায়দুল্লাহ) বলেন, আমি কাসিমকে জিজ্ঞেস করলাম, সাপের বিষয়ে আপনার মত কী? তিনি বললেন, তা হীনভাবে হত্যা করতে হবে। (সহিহ মুসলিম ২৭৫১)

২. আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি অনিষ্টকর প্রাণীকে হারামের ভিতর হত্যা করা যায় বিচ্ছু, ইঁদুর, কাক, চিল ও হিংস্ৰ কুকুর। (সহিহ মুসলিম ২৭৫৩)

৩. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাঁচটি অনিষ্টকর প্রাণী আছে যা হারামের বাইরে ও ভেতরে হত্যা করা বৈধ, সাপ, বুকে বা পিঠে সাদা চিহ্নযুক্ত কাক, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর ও চিল। (সুনানে আবু দাউদ ৩০৮৭, তিরমিজি ৮৩৭, নাসাঈ ২৮২৯ হাদিসের মান সহিহ)

যায়দ ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু উমর (রাযিঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করল, মুহরিম ব্যক্তি কোন কোন জন্তু হত্যা করতে পারে? তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈকা সহধর্মিণী বলেছেন যে, তিনি হিংস্র কুকুর, ইঁদুর, বিচ্ছু, চিল, কাক ও সাপ হত্যা করার নির্দেশ দিতেন।এমনকি সালাতরত অবস্থায়ও তা হত্যা করা যায়। (সহিহ মুসলিম ২৭৬১)

৫। অশোভন কাজ বা ঝাগড়া বিবাদ করা যাবে নাঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ

অর্থঃ অর্থঃ হাজ্জ হয় কয়েকটি নির্দিষ্ট মাসে, অতঃপর এ মাসগুলোতে যে কেউ হাজ্জ করার মনস্থঃ করবে, তার জন্য হাজ্জের মধ্যে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়।  (সুরা বাকারা ২:১৯৭ )

১. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হাজ্জ করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হতে বিরত রইল, সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে হাজ্জ হতে ফিরে আসবে যেদিন তাকে তার মা জন্ম দিয়েছিল। সহিহ বুখারি ১৫২১, ১৮১৯)

২. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এ ঘরের (বাইতুল্লাহর) হাজ্জ আদায় করল, অশ্লীলতায় জড়িত হল না এবং আল্লাহর অবাধ্যতা করল না, সে মায়ের পেট হতে সদ্য প্রসূত শিশুর ন্যায় (হাজ্জ হতে) প্রত্যাবর্তন করল। (সহিহ বুখারি ১৮২০)

৬। সেলাই যুক্ত জামা, পায়জামা, টুপি এবং মোজা পরবে নাঃ

সেলাই যুক্ত জামা, পায়জামা, টুপি এবং মোজা পরবে না, এই সম্পর্কি বিস্তারিত পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার শেষে একটি সারসংক্ষেপও তুলে ধরেছিলাম। এখান আর আলোচনা না করে, সেই সারসক্ষেপ কথাগুলোই তুলে ধরলাম।

ইহরাম বাধার পর যে নিয়মে পোশাক পরিধান হবে তা নিম্মরূপঃ

১। মুহরিম ব্যক্তি জামা এবং পায়জামা পরিধান করতে পারবে না।

২। মুহরিম ব্যক্তি মাথায় পাগড়ী বা টুপি পরিধান করতে পারবে না।

৩। হাতে ও পায়ে মুজা ব্যবহার করতে পাবরে না তবে চপ্পল ব্যবহার করতে পারবে।

৪।  মুহরিম নারী মুখ ঢাকবে না এবং হাত মোজাও পরবে না।

৫।  মুহরিম নারীদের বুরনুস (টুপির মত এক প্রকার কাপড় যা মহিলারা পরিধান করে) পরিধান করতে পারবে না।

৬। জাফরান বা ওয়ারস রঙ্গে রঞ্জিত কাপড় পরিধান করা যাবে না

৭। মুহরিম চুল আঁচড়াবে না, শরীর চুলকাবে না।

মন্তব্যঃ এই সকল বিষয় বিবেচনা করে হজ্জযাত্রীগন সেলাই বিহীন দুটি সাদা চাদরের মত কাপড় ব্যবহার করে। আর মহিলাগন সুবিধামত সাবলিল পোশাক পরিধান করে থাকে।

৭। নখ কাটা যাবে নাঃ

ইহরাম নখ কাটা যাবে না বিষয়টি সরাসরি কুর্‌আন সুন্নাহে উল্লেখ নাই। ইহরামের অবস্থায় নখ কাটা বা নখ উঠিয়ে ফেলার বিষয়টি মুজতাহীদ আলেমগণের প্রসিদ্ধ মতে মাথা মুণ্ডনের উপর ক্বিয়াস করা হয়েছে। (যা সূরাহ্ বাক্বারার আয়াত নং ১৯৬ তে উল্লেখিত হয়েছে)। হাতের নখ এবং পায়ের নখের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে যদি কোন একটি নখ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে কষ্ট অনুভব হয় তাহলে কষ্টদায়ক অংশটুকু কেটে ফেলে দিলে কোন অসুবিধা নেই এবং তাতে কোন ফিদয়াও লাগবে না।

তবে শুধু হাজ্জি নয় যারা সাধারণ কুরাবানীর নিয়ত করবে তারাও নখ কাটবে। এই মর্ম বহু সহিহ হাদিস আছে। যেমনঃ

১. উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন (যিলহাজ্জ মাসের) প্রথম দশদিন উপস্থিত হয় আর কারো নিকট কুরবানীর পশু উপস্থিত থাকে, যা সে যাবাহ করার নিয়্যাত রাখে, তবে সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে। (সহিহ মুসলিম ৫০১২, আবু দাউদ ২৭৯১)

২. নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোকের কাছে কুরবানীর পশু আছে সে যেন যিলহাজ্জের নতুন চাঁদ দেখার পর ঈদের দিন থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে। (সহিহ মুসলিম ৫০১৫)

৮। ইহরাম অবস্থায় মাথা ও মুখমন্ডল ঢাকা যাবে নাঃ

১. ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক (মুহরিম) ব্যক্তি মারা গেল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সাহাবাদেরকে) বললেনঃ তাকে কুল পাতার পানি দ্বারা গোসল করাও এবং তার কাপড়েই তাকে কাফন দাও। তার মাথা ও মুখমন্ডল ঢাকবে না। কেননা তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে। (সুননে নাসাঈ ২৭১৪ হাদিসের মান সহিহ)

২. ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মুহরিম ব্যক্তি উট থেকে পড়ে যাওয়ায় তার ঘাড় ভেঙ্গে গেল এবং সে মারা গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেনঃ তাকে কুল পাতার পানি দ্বারা গোসল দাও এবং ( ইহরামের) দু’কাপড় দিয়েই তাকে দাফন দাও। এরপর তিনি বলেনঃ তার মাথা কাফনের বাইরে থাকবে। আর তার গায়ে খুশবু লাগাবে না। কেননা সে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পড়তে পড়তে উঠবে। শুবা (রাঃ) বলেনঃ আমি দশ বছর পর তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ঐ হাদীস বর্ণানা করলেন, যেমন পূর্বে তিনি বর্ণনা করতেন। কিন্তু তাতে তিনি বললেন; তার চেহারা এবং মাথা ঢাকবে না। (সুননে নাসাঈ ২৮৫৪ হাদিসের মান সহিহ)

.৯। ইহরাম অবস্থায় মহিলারা হাত মুজা ও নেকাপ পরবে নাঃ

মহিলারা তাদের মাথা আবৃত রাখবে। তাছাড়া তারা ইহরাম অবস্থায় যেকোনো ধরনের পোশাকই পরতে পারবে। তবে অত্যধিক সাজ-সজ্জা করবে না। ইহরাম অবস্থায় তাদের জন্য যা নিষিদ্ধ তা হচ্ছে হাত মুজা ও নেকাপ।

দলিলঃ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইহরাম অবস্থায় আপনি আমাদেরকে কী ধরনের কাপড় পরতে আদেশ করেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জামা, পায়জামা, পাগড়ী ও টুপী পরিধান করবে না। তবে কারো যদি জুতা না থাকে তাহলে সে যেন মোজা পরিধান করে তার গিরার নীচ হতে এর উপরের অংশটুকু কেটে নিয়ে তোমরা যাফরান এবং ওয়ারস্ লাগানো কোন কাপড় পরিধান করবে না। মুহরিম মহিলাগণ মুখে নেকাব এবং হাতে হাত মোজা পরবে না। মূসা ইবনু ‘উকবাহ, ইসমা‘ঈল ইবনু ইবরাহীম ইবনু ‘উকবাহ, জুওয়ায়রিয়া এবং ইবনু ইসহাক (রহ.) নিকাব এবং হাত মোজার বর্ণনায় লায়স (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। ‘উবাইদুল্লাহ (রহ.) وَلاَ الْوَرْسُ এর স্থলে وَلاَ وَرْسُ বলেছেন এবং তিনি বলতেন, ইহরাম বাঁধা মেয়েরা নিকাব ও হাত মোজা ব্যবহার করবে না। মালিক (রহ.) নাফি‘ (রহ.)-এর মাধ্যমে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, ইহরাম বাঁধা মেয়েরা নিকাব ব্যবহার করবে না। লায়স ইবনু আবূ সুলায়ম (রহ.) এ ক্ষেত্রে মালিক (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। (সহিহ বুখারি ১৮৩৮)

মন্তব্যঃ এমনভাবে মুখ ঢাকবে যাতে সহজেই সে আবরণ উঠানো যায় এবং নামানো যায়। পর পুরুষের সামনে মুখ ঢেকে রাখবে। কারণ, মাহরাম ছাড়া পর-পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল উন্মুক্ত করা মহিলাদের জন্য বৈধ নয়।

১০। সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে নাঃ

ইহরামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকালে গোসল করা, সুগন্ধি মাখার নিয়মগুলি পালন করতে হবে। ইহরামের কাপড় পরিধানের পর সুগন্ধি মাখা চলবে না। ইহরামের নিয়ত করার পূর্বে মাখা সুগন্ধি মুহরিমের চেহারায় দৃশ্যমান হতে পারে বা তা থেকে সুগন্ধ আসতে পারে। ইহ্‌রাম থেকে মুক্ত হওয়ার পর সুগন্ধি ব্যবহার করা চলবে। পূর্বে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই দলিল হিসাবে মাত্র তিনটি হাদিস উল্লেখ করেছি।

১। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইহরাম বাধার সময় এবং (হজ্জ সমাপনান্তে) ইহরামমুক্ত হওয়ার পর বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পুর্বেও আমি তাঁকে সুগন্ধি মেখে দিয়েছি। (সহিহ মুসলিম ২৬৯৫ ইফাঃ)

২। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ইহ্‌রাম বাঁধা অবস্থায় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সিঁথিতে যে সুগন্ধি তেল চকচক করছিল তা যেন আজও আমি দেখতে পাচ্ছি। (সহিহ বুখারি ১৫৩৮ তাওহীদ)

৩। নবী সহধর্মিণী ‘আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইহ্‌রাম বাঁধার সময় আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গায়ে সুগন্ধি মেখে দিতাম এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পূর্বে ইহ্‌রাম খুলে ফেলার সময়ও। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ইহ্‌রাম বাঁধা অবস্থায় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সিঁথিতে যে সুগন্ধি তেল চকচক করছিল তা যেন আজও আমি দেখতে পাচ্ছি। (সহিহ বুখারি ১৫৩৯ তাওহীদ)

১১। বিবাহ করা বা করানো বা বিবাহের পয়গাম পাঠানো যাবে নাঃ

১. উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইহরাম অবস্থায় কোন ব্যক্তি নিজে বিবাহ করবে না, অন্যকেও বিবাহ করাবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও দিবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৯৬৬)

২. নুবাইহ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ইবনু মামার তার (ইহরামধারী) ছেলেকে বিয়ে করাতে মনস্থ করলেন। তাই তিনি আমাকে আমীরুল হজ্জ আবান ইবনু উসমানের নিকট পাঠালেন। তাঁর নিকট এসে আমি বললাম, আপনার ভাই তাঁর ছেলেকে বিয়ে করাতে চান। এই বিষয়ে তিনি আপনাকে সাক্ষী রাখতে চান। তিনি বললেন, আমি দেখছি সে তো এক মূৰ্খ বেদুঈন! ইহরামধারী ব্যক্তি না নিজে বিয়ে করতে পারে আর না অন্যকে বিয়ে করাতে পারে, অথবা এরকমই বলেছেন। নুবাইহ বলেন, এরপর তিনি হাদীসটিকে উসমান (রাঃ)-এর মারফতে মারফূভাবে বর্ণনা করেছেন।(তিরমিজ ৮৪০, আবু দাউদ ১৮৪১)

৩. ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত একটি শায হাদিসে আছে তিনি বলেন, মায়মূনা বিনতুল হারিস কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহরাম অবস্থায় বিবাহ কলেন। এটি একটি শায হাদিস এর বিপরীতে একাধিক নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনায় দেখা যায় তিনি ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করেন নাই।

মাইমূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাকে বিয়ে করেন তিনি তখন ইহরামমুক্ত অবস্থায় ছিলেন এবং একই অবস্থায় তিনি তার সাথে বাসর যাপন করেন। পরবর্তী কালে মাইমূনা (রাঃ) সারিফেই মারা যান এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে যে ঝুপড়িতে (কুঁড়ে ঘরে) বাসর যাপন করেন আমরা তাকে সেই স্থানেই দাফন করি। তিরমিজি ৮৪৫, সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৯৬৪)

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করেন। (ইবনু মাজাহ ১৯৬৪)

মায়মূনা বিনতুল হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হালাল (ইহরামমুক্ত) অবস্থায় বিবাহ করেন। রাবী ইয়াযীদ ইবনু আসম্ম বলেন, মায়মূনা (রাঃ) ছিলেন আমার ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর খালা। (ইবনে মাজাহ ২৯৬৪, আবূ দাউদ ১৮৪৩)

মন্তব্যঃ কাজেই ইহরামে থাকা কালে মুহরিম কোন অবস্থায়‌ই বিবাহ করতে পারবে না।

১২। ইহরামের ফিদয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতওয়াঃ


ক। ভুলে বা বাধ্য হয়ে কিংবা নিদ্রিত অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজে গুনাহ হবে নাঃ

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজে যদি ভুলে বা বাধ্য হয়ে কিংবা নিদ্রিত অবস্থায় করে তবে কোন গুনাহ হবে না। তার ওপর কোন কিছু ওয়াজিবও হবে না।

দলিলঃ

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٞ فِيمَآ أَخۡطَأۡتُم بِهِۦ وَلَٰكِن مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوبُكُمۡۚ﴾

‘আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন পাপ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)।(সুরা আহযাব ৩৩:৫)

অন্য এক আয়াতে এসেছে,

﴿رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ﴾

‘হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।’(সুরা বাকারা ২:২৮৬)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

﴿ مَن كَفَرَ بِٱللَّهِ مِنۢ بَعۡدِ إِيمَٰنِهِۦٓ إِلَّا مَنۡ أُكۡرِهَ وَقَلۡبُهُۥ مُطۡمَئِنُّۢ بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَٰكِن مَّن شَرَحَ بِٱلۡكُفۡرِ صَدۡرٗا فَعَلَيۡهِمۡ غَضَبٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٦ ﴾

অর্থঃ যে ঈমান আনার পর আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে এবং যারা তাদের অন্তর কুফরী দ্বারা উন্মুক্ত করেছে, তাদের ওপরই আল্লাহর ক্রোধ এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব। ওই ব্যক্তি ছাড়া যাকে বাধ্য করা হয় (কুফরী করতে) অথচ তার অন্তর থাকে ঈমানে পরিতৃপ্ত। (সুরা নাহল ১৬:১০৬)

১. আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন ধরণের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, (২) অসুস্থ (পাগল) ব্যক্তি, যতক্ষণ না আরোগ্য লাভ করে এবং (৩) অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, যতক্ষণ না বালেগ হয়।(সুনানে আবু দাউদ ৪৩৯৮)

২. ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা যেনার অপরাধে জনৈকা উম্মাদিনীকে ধরে এনে উমার (রাঃ)-এর নিকট হাযির করা হয়। তিনি এ ব্যাপারে লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে পাথর মেরে হত্যা করার নির্দেশ দেন। এ সময় আলী (রাঃ) তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন এর কি হয়েছে? উপস্থিত লোকেরা বললো, সে অমুক গোত্রের উম্মাদিনী (পাগল মহিলা), সে যেনা করেছে। উমার (রাঃ) তাকে পাথর মেরে হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেন, তোমরা তাকে নিয়ে ফিরে যাও। অতঃপর তিনি উমারের নিকট এসে বললে, হে আমীরুল মু‘মিনীন! আপনি কি জানেন না, তিন ধরণের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) পাগল, যতক্ষণ না সুস্থ হয়, (২) নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয় এবং (৩) নাবালেগ শিশু, যতক্ষণ না বালেগ হবে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। আলী (রাঃ) বলেন, তাহলে তাকে পাথর মারা হবে কেন? তিনি বলেন, কোনো কারণ নেই। আলী (রাঃ) বলেন, তবে তাকে ছেড়ে দিন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন এবং ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি উচ্চারণ করলেন। (সুনানে আবু দাউদ ৪৩৯৯)

মন্তব্যঃ উপরের আয়াত ও হাদীস থেকে সুস্পষ্ট প্রতীয়মাণ হয় যে, উপর্যুক্ত অবস্থায় যদি কারো ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয় সংঘটিত হয়ে যায়, তবে তা হুকুম ও শাস্তির আওতাভুক্ত হবে না। বরং তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে যখন উযর দূর হবে এবং অজ্ঞাত ব্যক্তি জ্ঞাত হবে, বিস্মৃত ব্যক্তি স্মরণ করতে সক্ষম হবে, নিদ্রিত ব্যক্তি জাগ্রত হবে, তৎক্ষণাৎ তাকে নিষিদ্ধ বিষয় থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিতে হবে এবং দূরে রাখতে হবে। উযর দূর হওয়ার পরও যদি সে ওই কাজে জড়িত থাকে, তবে সে পাপী হবে এবং যথারীতি তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে।

খ। নিষিদ্ধ বিষয় উযর সাপেক্ষে ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত করলে ফিদয়া দিতে হবেঃ

 নিষিদ্ধ বিষয় উযর সাপেক্ষে ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত করা, কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে পাপী হবে না, তবে তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَلَا تَحۡلِقُواْ رُءُوسَكُمۡ حَتَّىٰ يَبۡلُغَ ٱلۡهَدۡيُ مَحِلَّهُۥۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ بِهِۦٓ أَذٗى مِّن رَّأۡسِهِۦ فَفِدۡيَةٞ مِّن صِيَامٍ أَوۡ صَدَقَةٍ أَوۡ نُسُكٖۚ ﴾

‘আর তোমরা তোমাদের মাথা মুণ্ডন করো না, যতক্ষণ না পশু তার যথাস্থানে পৌঁছে। আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ কিংবা তার মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে তবে সিয়াম কিংবা সদাকা অথবা পশু জবাইয়ের মাধ্যমে ফিদয়া দেবে।(সুরা বাকারা ২:১৯৬।

গ। নিষিদ্ধ বিষয় বৈধ কোন উযর ছাড়া সংঘটিত করলে হজ্জ বাতিল বা ফিদয়া ওয়াজিব হবেঃ

নিষিদ্ধ বিষয় ইচ্ছাকৃতভাবে বৈধ কোন উযর ছাড়া সংঘটিত করা। এ ক্ষেত্রে তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে এবং সে পাপীও হবে। কোন অপরাধের দরুণ কী ফিদয়া দিতে হবে, এ সম্পর্কিত শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতওয়া উল্লেখ করছি।  তিনি লিখেন, ফিদয়ার ক্ষেত্রে ইহরামের নিষিদ্ধ কাজসমূহ চার ভাগে বিভক্তঃ

ক। এমন নিষিদ্ধ কাজ যা করে ফেললে তাতে কোন ফিদয়া ওয়াজিব হবে না। আর তা হল নিজে বিবাহ করা কিংবা অপরের বিবাহের ওলী (অভিভাবক) বা উকীল হয়ে বিবাহ করানো।

খ। এমন নিষিদ্ধ কাজ যার ফিদয়া হচ্ছে উঁটের কুরবানী করা। আর তা হাজ্জের অবস্থায় প্রাথমিক হালাল হওয়ার পূর্বে সহবাসের কারণে ওয়াজিব হয়।

গ। এমন নিষিদ্ধ কাজ যার ফিদয়া হচ্ছে তার বিনিময় বা বিনিময়ের মূল্য। আর তা হলো, ইহরাম অবস্থায় শিকার করা।

গ। এমন নিষিদ্ধ কাজ যার ফিদয়া হচ্ছে সিয়াম পালন করা বা মিসকীনকে সাদকাহ করা কিংবা কুরবানী করা। যেমন উপরে মাথামুণ্ডনের ফিদয়ার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। আর আলিমগণ উপরোক্ত তিনটি নিষিদ্ধ কাজ ছাড়া অন্যান্য নিষিদ্ধ কাজগুলিকে মাথামুণ্ডনের ফিদয়ার উপর কিয়াস করেছেন।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “ইহ্‌রাম অবস্থায় ১১ টি নিষিদ্ধ কাজ

Leave a comment