বিদআতের মানদন্ড প্রয়োগ

বিদআতের মানদন্ড প্রয়োগ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

কাজটি নতুন অথচ বিদআত নয়ঃ

উপরে বিদআতে এর মানদন্ড আলোচনা করেছি। কোন কাজটি বিদআত তা উপরের মানদন্ড দ্বারা পরীক্ষা করলে সহজে বিদআতি কাজটি চিনতে পারব। যদি কেউ মন যোগ দিয়ে বিদআতে এর মানদন্ড পড়ে এবং সমাজে প্রজলিত কোন ইবাদতের উপর প্রয়োজ করে তবে সহজেই ধরতে পারবে যে, আমলটি সুন্নাহ সম্মত, না বিদআত। ইসলামি শরীয়তে প্রতিটি আমলই বিশুদ্ধ দলীলের আলোকে করা হয়। এই জন্য অধিকাংশ আমল সম্পর্কে কারো কোন সন্দেহ বা সংশয় নাই। কিন্ত পরবর্তিতে ইসলামের নামে কিছু নতুন আমল সংযোজিত হয়েছে। আবার বিজ্ঞানের আবিস্কারের ফলে ইবাদত সুন্দরভাবে আদায় করা জন্য কিছু ইবাদতের উপকরণ ও যোগ হয়েছে। তাই কোনটি বিদআত আর কোনটা বিদআত নয় তা নিয়ে ব্যাপক মতভেদ দেখা যায়। এর প্রধান কারন বিদআত সম্পর্কে অজ্ঞতা। যদি বিদআত সম্পর্কে জ্ঞান থাকত হবে এই মতভেদ দেখা যেত না। তাই উদাহরণ সরূপ কিছু আমল যা সম্পর্কে সমাজ দ্বৈত নীতি প্রচলীত আছে। এমনই কিছু কাজ আমরা বিদআতে এর মানদন্ড প্রোয়গ করে দেখাব যে, আমলটি কি ইবাদাত, না বিদআত। এই পরিচ্ছেদে শুধু ঐ সকল ইবাদাত আলোচনা করব যা প্রকৃত পক্ষে বিদআত নয়। এরপর তৃতীয় অধ্যায় ধারা বাহিকভাবে যে আমলগুল বিদআত সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। ইনশাল্লাহ।

১। গ্রন্থাকারে কুরআন সংকলনঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবন দসায় গ্রন্থাকারে কুরআন সংকলিত করেন নাই। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেন নাই, সাহাবিগন (রাজিঃ) করছেন তাই এই কাজটি ইসলামে নব আবিস্কার এবং তা বিদআত।

এই কাজটি বিদআত নয় কারণঃ

১। গ্রন্থাকারে কুরআন সংকলনের পক্ষে দলীল রয়েছে। নবী (সাঃ) কুরআনের আয়াতসমূহ লিখার আদেশ দিয়েছেন। তবে এই লিখাগুলো একস্থানে একত্রিত অবস্থায় ছিলনা। তা ছিল বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। সাহাবাগণ তা এক গ্রন্থে একত্রিত করেছেন। যাতে কুরআনের যথাযথ হেফাযত করা সম্ভব হয়।

২। এই আমর খোলাফায়ে রাশেদীন দ্বারা প্রচলিত সুন্নাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের অসিয়ত করছি; তোমরা সর্বদা আল্লাহকে ভয় করবে। খলিফার আনুগত্য করবে। যদিও হাবশি গোলাম (খলিফা) হোক। আমার পরে তোমাদের যারা জীবিত থাকবে, তারা (দ্বীনের ব্যাপারে) অনেক ইখতিলাফ দেখবে। এ অবস্থায় তোমাদের করণীয় হলো, আমার সুন্নাহ ও হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা আর দ্বীনের ব্যাপারে নব আবিষ্কৃত সব বিষয় থেকে দূরে থাকা। কারণ এসব বেদাত। আর সব বেদাত গোমরাহি। (মুসনাদে আহমদ : ১৭১৪৫)।

৩। এর দ্বারা নতুন কোন ইবাদতে পদ্ধতি আবিস্কার হয় নাই।

৪। ইবাদাতের পদ্ধতি নয় কিন্তু খুব ভাল কাজ যা সম্পর্কে সাহাবীদের ইজমা আছে।

৫। সম্পূর্ন কুরআন বহু সাহাবীর অন্তরে মুখস্ত হয়ে ছিল।

। কুরআনে হরকত (জের জবর ও পেশ) সন্নিবেশ করাঃ

মহান আল্লাহ নাজিলকৃত কুরআন আরবী ভাষায় নাজিল হয়। আরবী ভাষার লোকেরা কোনরূপ হরকত (জের জবর ও পেশ)  ছাড়াই আরবী ভাষায় যে কোন বই-কিতাব পড়তে পারে। কাজেই যে পর্যন্ত ইসলাম আরবের বাইরে সম্প্রসারিত হয়নি ততদিন কোরআন হরকত ছাড়াই লেখা হত। কোননা আরবদের জন্য হরকতের (জের জবর ও পেশ) সাহায্য ছাড়া কুরআন পাঠ সম্ভব ছিল। কিন্তু ইসলাম যখন আরবের সীমানা অতিক্রম করে আযমেও সম্প্রসারিত হল, তখন অনারব মুসলিমদের পক্ষে হরকত বিহীন কোরআন পাঠ মুসকিল হয়ে দাঁড়াল। ফলে উপরোক্ত সমস্যার সমাধানকল্পে ৮৬ হিজরীতে (৭৫০ খৃস্টাব্দে) বনু উমাইয়া যুগ ইরাকের শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কোরআনে হরকত অর্থাৎ জের, জবর, পেশ সংযুক্ত করার নির্দেশ দেন।

এই কাজটি বিদআত নয় কারণঃ

২। এর দ্বারা নতুন কোন ইবাদতে পদ্ধতি আবিস্কার হয় নাই।

৩। আবরি ভাষায় কুরআন লেখার প্রচলন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবর দসায় হতে চলছিল। এখানে অনারব মুসলিমদের জন্য পড়া ও লেখা সহজ করা হয়েছে মাত্র, কোন প্রকার নতুন কুরআন আবিস্কার করা হয় নাই।

৪। ইবাদাতের পদ্ধতি নয় কিন্তু খুব ভাল কাজ যা সম্পর্কে সালাফে সালেহীনদের সমর্থন আছে।

৫। ইহাতে কুরআনে আবরী উচ্ছারণ ও অর্থে কোন পরিবর্তন হয়নি।

৬। কুরআনে হরকত (জের জবর ও পেশ) সন্নিবেশ করার ফলে হরকত বিহীন কুরআন পড়লে নেকী কম বেশী হবে বলে কেউ বিশ্বাস করে না।

৩। হাদিসের গ্রন্থ সংকলন করাঃ

ইসলমের প্রাথমিক যুগে হাদিস লিখতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। তাছাড়া হাদিস গ্রন্থকারেও সংকলন করা হয় নাই। কাজেই বর্তমানে যে সকল হাদিসের গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে তা ইসলামে নব আবিস্কার বা বিদআত।

হাদিস সংকলনের পটভূমিঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবদ্দশায় হাদিস লেখা হয়েছে। ইসলমের প্রাথমিক যুগে হাদিস লিখতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন কথাটি ঠিক। কিন্তু পরবর্তিতে তিনি আবার লিখতে অনুমতি প্রদান করেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা আমার হাদীস লিখবে না। আর যে ব্যক্তি আমার পক্ষ থেকে কুরআন ছাড়া অন্য কিছু লিখে থাকে সে যেন তা মুছে ফেলে। আমার হাদিস বর্ণনা কর এতে কোন অসুবিধা নেই। যে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে হাম্মাম রহঃ বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে তবে সে যেন জাহান্নামর তান ঠিকানা বানিয়ে নেয়। (সহীহ মুসলিম ৪২৩৮ ইসলামি ফাউন্ডেশন)৪)

হাদীস লিখনে এ নিষেধাজ্ঞা ছিল মদীনায় হিজরতের পূর্বে মক্কায়। এ সময় কোনো কোনো সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ থেকে যা শুনতেন তা একই জায়গায় লিখে রাখতেন।

সাহাবীদের কুরআনের ভাব-গাম্ভীর্য তথা ভাষা-শৈলী আত্মস্থ করতে সক্ষম হননি। ইহার ফলে কুরআন ও হাদিস সংমিশ্রনের আশংকা থেকে যায়। এমতাবস্থায় কুরআনের পাশাপাশি হাদীস লিপিবদ্ধ করা ছিল যুগপৎ কষ্ট কর ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সময় হাদীস লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করেন। তারপর যাদেরকে তিনি লিখন কার্যে পারদর্শী দেখেছেন কিংবা যারা কুরআন ও হাদীসকে যথার্থ উপায়ে লেখার যোগ্যতা অর্জন করেছেন বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন তাঁদেরকে লেখার অনুমতি দিয়ে দেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় সাহাবীর জন্য তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাদীছ লিখে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণ দেয়ার পর আবু শাহ নামক জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ভাষণটি লিখে দেয়ার আবেদন করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, اكتبوا لأبى شاه)) অর্থাৎ আবু শাহের জন্য আমার আজকের ভাষণটি লিখে দাও।

সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন, আমি প্রিয় নবীর সব হাদীসই লিখে রাখতাম। একবার আমাকে লোকেরা নিষেধ করে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক কথা মানবীয় ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি নিয়েও বলে থাকেন অথচ তুমি কিনা তার সব হাদীসই লিখে ফেলছ? কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানানো হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমর! তুমি নির্দ্বিধায় সব কিছু লিখতে পার। কারণ আল্লাহর শপথ! আমার এমুখ থেকে প্রকৃত সত্য ছাড়া অন্য কিছুই বের হয় না। (আবু দাউদ) মক্কা থেকে মদীনায় পৌঁছার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাদীস সমূহ লিখিতভাবে সংরক্ষণের সরাসরি নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘তোমরা ইল্মকে লিখনীর মাধ্যমে সংরক্ষণ কর।’’ (মুস্তাদরাক, খ: ১, পৃ: ১০৬)

তাছাড়া মদীনার সনদ, সাদাকাতের নেসাব, বিভিন্ন গোত্রের উদ্দেশ্যে প্রেরিত ফরমান ইত্যাদির সবই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি উদ্যোগে লিখিত বিষয় ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস লিপিবদ্ধ করার অনুমতি প্রদান করার পর অনেক সাহাবী নিজস্ব নিয়মে ও নিজেদের পছন্দমতে হাদীস লিপিবদ্ধ করে গ্রন্থাকারে সাজিয়ে রাখেন। যদিও এগুলিতে গ্রন্থের রূপ-বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণ বিদ্যমান ছিল না। সাহাবাদের লিখিত সে সব প্রাচীনকালীন লিখিত সম্পদ আজো বিশ্বের বিভিন্ন মিউজিয়ামে বিদ্যমান। 

*** সাহাবায়ে কেরাম সংকলিত কতিপয় হাদীস গ্রন্থঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইন্তেকাল করলেন কুরআর সংকলন হলে কুরআনের সাথে হাদীছ মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূরিভুত হলো। তখন মুসলমানগণ হাদীছ সংরক্ষণ করে রাখার জন্য তা লিখার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। বিশিষ্ট সাহাবায়ে কেরাম ব্যক্তি পর্যায় কিছু হাদিস সংকলন করেছিল।  নিম্ম সাহাবায়ে কেরাম সংকলিত কতিপয় হাদীস গ্রন্থের উল্লেখ করছি।

১। আস সহীফাতুস সাদিকাঃ সাহাবী যুগে সংকলিত সর্বাধিক সংখ্যক হাদীসের গ্রন্থ। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) এ সংকলন তৈরি করেন। 

২। সহীফাতু আলীঃ এর রচনাকারী ছিলেন স্বয়ং হযরত আলী (রা.)। এটিকে ভাঁজ করে তিনি নিজ তলোয়ারের খাপের মধ্যে সযত্নে রেখে দেন।

৩। কিতাবুস সাদাকাহঃ এ গ্রন্থটি স্বয়ং রাসূল (সা.) নিজের তত্ত্বাবধানে ওফাতের মাত্র কয়েকদিন পূর্বে লিখিয়ে ছিলেন। এগ্রন্থে যাকাত, সাদাকাত, উশর ইত্যাদি সম্পর্কীয় নির্দেশ ছিল।

৪। সহীফাতু আমর ইবন হাযমঃ: গ্রন্থটি নবী করীম (সা.) এর জীবদ্দশায় তাঁরই আদেশক্রমে হযরত উবাই ইবন কা’ব (রা.) লিপিবদ্ধ করেুন। রাসূল (সা.) দশম হিজরীতে হযরত আমর ইবনে হাযমকে (রা.) নাজরানের শাসনকর্তা হিসেবে প্রেরণ করার সময় এ হাদীস গ্রন্থ তার নিকট প্রদান করেন। এতে পবিত্রতা, নামায, যাকাত, হজ্ব, উমরা, জিহাদ ও গণীমত ইত্যাদি বিষয়ে অনেক হাদীস সন্নিবেশিত ছিল।

৫। সহীফাতু ইবন আব্বাস

৬। সহীফাতু জাবির ইবন আব্দুল্লাহ

৭। সহীফাতু আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ

৮। সুহুফু (অনেক গ্রন্থ) আনস ইবনে মালিক।

৯। মুসনাদু আবী হুরাইরা

১০। সহীফাতু সাদ ইবন ইবাদা উল্লেখযোগ্য। 

১১। আবু বকর (রাঃ) নিজে পাঁচ শত হাদীসের একটি সংকলন প্রস্তুত করেছিলেন, তবে শেষ জীবনে তিনি নিজেই তা নষ্ট করে ফেলেন। এর কারণ তিনি বিশেষভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েন যে, তাঁর সংকলিত হাদীসে একটি শব্দও যদি রাসূলের (সা.) মূল বাণীর বিন্দু মাত্র বিপরীত হয়ে পড়ে তবে রাসূলের (সা.) সতর্কবাণী অনুযায়ী তাঁকে জাহান্নামের ইন্ধন হতে হবে। তাঁর মনে এ ভয়ও জাগ্রত হয় যে, তাঁর সংকলিত হাদীস গ্রন্থকে মুসলিম জনগণ যদি কুরআনের সমতুল্য মর্যাদা দিয়ে বসে।

*** তাবেয়ীগণের হাদিস সংকলণঃ

সাহাবায়ে কেরামের এ সংগ্রহ ও সংকলন ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পর্যায়ে। তবে সামগ্রিকভাবে হাদীস সংকলন হয়েছিল পঞ্চম খলিফা খ্যাত প্রখ্যাত তাবেয়ী ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (জন্ম ৬১ হি:, মৃত্যু ১০১ হি:) শাসলামলে। তিনি ৯৯ হিজরী সনে খলিফা নির্বাচিত হন। তাঁর খিলাফতের মেয়াদ ছিল দুই বছর পাঁচ মাস।  তার শাসনামলে ইসলামী রাজ্যেও বিভিন্ন কেন্দ্রে নিম্নোক্ত ফরমান লিখে পাঠানঃ ‘রাসূলের (সা.) হাদীসের প্রতি দৃষ্টি দাও। তা সংগ্রহ- সংকলন কর।’’ উমর বিন আব্দুল আযীয শুধুমাত্র সকলকে হাদীস সংগ্রহএর জন্য তাগিদ দেন নাই বরং তিনি নিজেও হাদীস সংকলন করতেন। তিনি ইমাম যুহরীকে হাদিস সংকলনের দায়িত্ব প্রদান করেন। ইমাম যুহরীর পর ইসলামী রষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে যারা হাদীস সংকলনের কাজ নিয়োজিত ছিলেন তারা হলেন, মক্কার ইবন জুরাইজ, মদীনার ইবন ইসহাক ও ইমাম মালিক, বসরার রুবাই বিন সুবাহ ও হাম্মাদ বিন সালমা, কূফায় সুফিয়ান সাওরী, সিরিয়ায় ইমাম আওযায়ী, ইয়ামানে মামার ও খুরসানে আব্দুল্লাহ বিন মুবারক। (রাহিমাহুল্লাহগন)। এভাবে করে অনেকে হাদীস সংকলনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। যারা অধ্যায় ভিত্তিক হাদীস সংকলনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন তারা হলেন রুবাই বিন সুবাহ এবং সাদ বিন আবূ আরুবা। আবার কেউ কেউ বলে থাকেন যে, ইমাম মকহুল ছিলেন সর্বপ্রথম অধ্যয়ভিত্তিক হাদীস গ্রন্থের প্রণেতা। আবার কূফা নগরীতে ইমাম শাবী (রহঃ) এ বিষয়ে হাদীসগ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন যিনি কূফাতে প্রধান বিচারপতি ছিলেন।

এই কাজটি বিদআত নয় কারণঃ

১। হাদিস সংকলনের কাজটি বিশিষ্ট খোলাফায়ে রাশেদা আলী (রাঃ) কর্তৃক প্রমানিত।

১। এই মহৎ কাজটি সাহাবীগণ (রাঃ) কর্তৃক শুরু হয় হয়, যার ১০/১২ উদাহরণ পটভুমিতে আছে।

২। সামগ্রিকভাবে হাদীস সংকলন হয়েছিল পঞ্চম খলিফা খ্যাত প্রখ্যাত তাবেয়ী ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (জন্ম ৬১ হি:, মৃত্যু ১০১ হি:) শাসলামলে। কাজেই এই কাজটি তাবেয়ী থেকে প্রমানীত। পরবর্তীতে বহু তাবে-তাবেয়ী এই মহা কাজ এগিয় নিয়ে যান।

৩। এই ইলামের যে তিনটি যুগকে হাদিসে উত্তম বলে বর্ণনা করা হয়েছে তার প্রতিটি যুগেই হাদিস সংকলনের কাজ হয়েছে।

৪। হাদিস সংকলন কোন ইবাদাতের পদ্ধতি আবিস্কার করে না। হাদিস মুখস্থ করে সংরক্ষন ও প্রচার করা যতটুকু নেকীর কাজ,  হাদিস সংকলন করে সংরক্ষন ও প্রচার করা ঠিক ততটুকু নেকীর কাজ। অতিরিক্ত নেকীর আশা করা হয় না।

৫। সংকলন করা কোন সংখ্যা বা সময় সাথে নির্দিষ্ট করা হয় নাই।

৪। জামাতে তারাবির সালাতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবিতাবস্থায় ও মৃত্যুর পর   সাহাবাগণের প্রত্যেকেই একাকী এ নামায আদায় করেছেন। সাহাবীগণ মসজিদে বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে আলদা আলদা এবং বিক্ষিপ্তভাবে তারাবিহ পড়তেন। উমর (রাঃ) এই বিক্ষিপ্ত সালাতরত সকল কে একত্রিত করে জামাতে সালাত আদায় করা হুকুম প্রদান করে। এইভাবে জামাতে সালাত আদায় করা ছিল সম্পূর্ন নতুন। তাই তারাবিহর সালাত জামাতে আদায় করা বিদআত।

তারারিহ সালাতের সম্পর্কিত সহিহ বুখারীর দুটি হাদিস লক্ষ করিঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গভীর রাতে বের হয়ে মসজিদে সালাত আদায় করেন, কিছু সংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সালাত আদায় করেন। সকালে লোকেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেন, ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হন। তিনি সালাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। সকালে তাঁরা এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। তৃতীয় রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে সালাত আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হল না। কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফজরের সালাতে বেরিয়ে আসলেন এবং সালাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়ার পর বললেনঃ শোন! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিল না, কিন্তু আমি এই সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবার আশংকা করছি (বিধায় বের হই নাই)। কেননা তোমরা তা আদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হল আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়। (সহিহ বুখারি হাদসি নম্বর ১৮৮৫ ইসলামী ফাউন্ডেশন)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় তারাবীহর সালাতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। হাদীসের রাবী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন এবং তারাবীহর ব্যাপারটি এ ভাবেই চালু ছিল। এমনকি আবূ বাকর (রাঃ) এর খিলাফতকালে ও ‘উমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম ভাগে এরূপই ছিল।

ইবনু শিহাব (রহঃ) ‘উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) সূত্রে ‘আবদুর রাহমান ইবনু ‘আবদ আল ক্বারী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রমযানের এক রাতে ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে, লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামায়াতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোন ব্যাক্তি সালাত আদায় করছে এবং তার ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দেই, তবে তা উত্তম হবে।

এরপর তিনি উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) এর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাঁর [‘উমর (রাঃ)] সঙ্গে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। ‘উমর (রাঃ) বললেন, কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন, কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত। (সহিহ বুখারি হাদসি নম্বর ১৮৮৩ ইসলামী ফাউন্ডেশন)

তারাবির সালাত বিদআত নয়ঃ

১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবাদেরকে নিয়ে জামাতবদ্বভাবে কয়েকরাত পর্যন্ত তারাবীর নামায আদায় করেছেন। ফরজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে পরবর্তীতে ছেড়ে দিয়েছেন। আর সাহাবাগণের প্রত্যেকেই রাসূল (সাঃ) এর জীবিতাবস্থায় ও মৃত্যুর পর একাকী এ নামায আদায় করেছেন। পরবর্তীতে উমার (রাঃ) সবাইকে এক ইমামের পিছনে একত্রিত করেছেন, যেমনিভাবে তাঁরা রাসূল (সাঃ) এর পিছনে তাঁর ইমামতিতে এ নামায আদায় করতেন। তারাবির সালাত রাসুল (সাঃ) তিন রাত্রি সাহাবীদের নিয়ে এক সাথে জামায়াত করেই আদায় করেছেন। বাকি রাত্রগুলো রাসুল (সাঃ) একাকী পড়েছেন। কিন্তু সাহাবীরা মসজিদে বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে আলদা আলদা ভাবে তারাবিহ পড়তেন। অর্থাত বিক্ষিপ্ত ভাবে একাধিক জামায়াত হত। উমর (রাঃ) শুধুমাত্র সকল বিক্ষিপ্ত জামায়াতকে একত্রিত করে দিয়েছেন একজন ইমামের পিছনে। এই জাময়াত বদ্ধ হওয়া কিন্তু নতুন ছিল না। তাই ইহা বিদআত নয়। 

২। এই আমলটি খোলাফায়ে রাশেদীন দ্বারা প্রচলিত সুন্নাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের অসিয়ত করছি; তোমরা সর্বদা আল্লাহকে ভয় করবে। খলিফার আনুগত্য করবে। যদিও হাবশি গোলাম (খলিফা) হোক। আমার পরে তোমাদের যারা জীবিত থাকবে, তারা (দ্বীনের ব্যাপারে) অনেক ইখতিলাফ দেখবে। এ অবস্থায় তোমাদের করণীয় হলো, আমার সুন্নাহ ও হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা আর দ্বীনের ব্যাপারে নব আবিষ্কৃত সব বিষয় থেকে দূরে থাকা। কারণ এসব বেদাত। আর সব বেদাত গোমরাহি। (মুসনাদে আহমদ : ১৭১৪৫)।

৩। এর দ্বারা নতুন কোন ইবাদতে পদ্ধতি আবিস্কার হয় নাই। যে সালাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবাদেরকে নিয়ে জামাতবদ্বভাবে কয়েকরাত করেছেন।

৪। ইবাদাতের পদ্ধতি নয় আবিস্কার করে নাই। এই ইবাদাতটি থেকে প্রমানিত। (সহিহ বিখাবি ১৮৮৫)

৫। এই জামাত সম্পর্কে সাহাবীদের ইজমা আছে। কারন কোন সাহাবী এই জামাতের প্রতিবাদ না করে উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) এর পিছনে সকলকে একত্রিত হয়ে তারাহির সালাত আদায় করে।

৬। এই সালাতের জামাতের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ সনদে প্রমানিত।

৫। মাদ্রাসা নির্মান করাঃ

বর্তমান ইলম অর্জনের জন্য মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই ধরনের কোন মাদ্রাসা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জামানায় ছিল না। দ্বীন শিক্ষার জন্য এই ধরেন মাদ্রাসা নির্মান করা নিঃসন্দেহে বিদআত। বর্তমান

মাদ্রাসা নির্মান করা বিদআত নয়ঃ

১। ইবাদাতের পদ্ধতি আবিস্কার করা বিদআত কিন্তু ইবাদতের উপকরণ আবিস্কার করা বিদআত নয়। কারন উপকরণের জন্য কেউ আলাদা নেকীর আশা করে না। যা ব্যবহারে নেকী কম বেশী হওয়ার আশা নাই, তাই হল ইবাদতের উপরণ। যেহেতু উপকরণে নেকী কম বেশী হয় না তাই এটা স্বতন্ত্র কোন ইবাদতের পদ্ধতি নয়। কাজেই উপরনে বিদআত হবে না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলামের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। (ইবনে মাজাহ ২২৪)।

 ইলমে দ্বীন অর্জন করা ফরজে কিফায়া। যদি কিছু ব্যক্তি ইলমে দ্বীন অর্জনে মনোনিবেশ করে যাদের দ্বারা প্রয়োজন পূরণ হওয়া সম্ভব তাহলে অন্যদের ক্ষেত্রে ইলমে দ্বীন অর্জন করা সুন্নত। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের উপরে ইলমে দ্বীন অর্জন করা ফরজে আইন। এক্ষেত্রে নীতি হচ্ছে- ব্যক্তি যে ইবাদত বা যে লেনদেন করতে চাচ্ছে সে ইবাদত পালন ও সে লেনদেন বাস্তবায়ন করার জন্য যতটুকু ইলম প্রয়োজন ততটুকু ইলম অর্জন করা তার উপর ফরজে আইন। এর বাইরে যে ইলম সে ইলম অর্জন করা ফরজে কিফায়া। আলাদা ধর্মিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মানের মাধ্যমে মূলত ছাত্রদের পার্থিব জীবনে দ্বীন শিক্ষাকে সহজ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের কোন বিধান বা রাসুল (সাঃ) এর কোন নির্দেশের বিপরীত করা হয়নি। এটা ইবাদতে উপরণ মাত্র। আগেই বলেছি উপকরণে বিআদত হয় না। তাই এটা দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত নয়।  মাদ্রাসা নির্মান পার্থিব জীবনে দুনিয়ার ক্ষেত্রে মানুষের দ্বীন শিক্ষা সহজ করা হয়েছে, পুর্বে মসজিদেই দ্বীন শিক্ষা দেওয়া হত। এমনকি বর্তমানেও আরবে বিভিন্ন মসজিদে বসেই দ্বীন শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন শায়খগণ। মাদ্রাসায় কুরআন হাদিস শিক্ষা করা আর গাছ তলায় কুরআন হাদিস শিক্ষা করা একই কথা। এখানে মুল উদ্দেশ্য কুরআন হাদিস শিক্ষা তা পাকা দালানে বসে হোক আর গাছের ছায়ায় হোক।  কোন আলেম কখনও বলেনি মাদ্রাস বা মসজিদে দ্বীন শিক্ষা করলে বেশী নেকী হবে আর গাছ তালায় শিক্ষা করলে কম হবে। যেহেতু মাদ্রাসা নির্মাণ করে দ্বীন শিক্ষা করলে নেকী কম বেশী হওয়ার কথা কেউ বলেনা বা ভাবে না, কাজেই ইহা ইবাদতের পদ্ধতি নয় উপকরণ। তাই মাদ্রাসা নির্মাণ করে দ্বীন শিক্ষা করা বা দেয়া কখনও বিদআত হবে না।

৬। মসজিদে মাইক ব্যবহার করাঃ

মসজিদে মাইক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবহার করেন নাই। কারন সে সময় মাইক আবিস্কার হয় নাই। তাই মাইকে সালাত আদায় করা ও আজাদ দেয়া ইসলামের নতুন সংযোগ। এই নতুন সংযোজ মাইক ব্যবহার করা বিদআত।

মসজিদে মাইক ব্যবহার করা বিদআত নয়ঃ

১। আদান দেয়া ইবাদাত ইহার শব্দ ও পদ্ধদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত। উচ্চ স্বরে আজান দেয়া নেকীর কাজ, যে কোন উপকরণের সাহায্যে উচ্চ স্বরে আজান দেয়া যাবে। যেমনঃ আমরা মাইকের সাহয্যে আজান প্রদান করি। মুখে আজান দিলে কম নেকী আর মাইকে আজান দিলে বেশী নেকী পাওয়া যাবে এমন কথা কেউ বলে না।  কেউ যদি বলে মাইকে আজান দিলে, মাইকে সুরা কেরাত পড়লে, মাইকে সালাত আদায় করলে বেশি নেকি পাওয়ক যাবে, তাহলে তখন সেই বিশ্বাসের কারনে তা দ্বীনের মধ্যে বিদআত হয়ে যাবে। মাইক যেহতু একটা যন্ত্র যা আওয়াজকে বৃদ্ধি করে দূরে পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, যা ইবাদতে উপকরণ মাত্র।

২। ইহা কোন ইবাদতে পদ্ধতি নয়। মাইক দিয়ে আযান দিলে সওয়াব বাড়েও না কমেও না। মাইক ব্যবহার ইসলামে অপরিহার্যও নয়। দেখুন ফজরের সালাতে যে সকল মসজিদে মাত্র এক দুই কাতার হয় সেখানে কিন্তু মাইক ব্যবহার করা হয় না কারন মুখের আওয়াজই যথেষ্ঠ। 

৩। বর্তমান বিদআতের যুগের সকল আলেমদের ঐক্যমত (ইজমা) হল মাইকে আজান দেয়া যাবে। এর বিপরীত কোন ফতওয়া কেউ দেন নাই।

৪। বিদআতের প্রকারভেদে দেখেছি, দুনিয়ার কোন নতুন আবিস্কার কখনও বিদআত হয় না। দুনিয়ার নব

আবিস্কার হয় হালাল না হয় হারাম। মাইকের বিষয়টি দুনিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট কাজেই মাইক ব্যবহার হয় হালাল না হয় হারাম। যেমনঃ মাইকে সালাত আদায় করা, ওয়াজ মাহফিলে, সভা সমাবেশে, আজানে ব্যবহার বৈধ। কিন্তু কেউ যদি মাইকে অশ্লীল গান বাজায় বা বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্রের শব্দ বাজায় তা হলে তা হারাম হবে। এমনকি কেউ যদি মাইকে কুরআন খতম প্রচার করে যার দ্বারা মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত হয় বা অসুস্থ রোগীর কষ্ট হয় হবে তাও হারাম হবে। এই জন্য অধিকাংশ আলেম মাইকে কুরআন খতম প্রচারকে হারাম বলে ফতওয়া দিয়েছেন।

 

৭। ইন্টারনেট ব্যবহারঃ

ইন্টারনেট আবিস্কার হয়েছে এই একবিংশ শতকের শেষের দিকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামানায় ইন্টরনেটের কল্পনাও কেউ করনি ব্যবহারতো অনেক দুরের কথা। তাই এই নব আবিস্কার ব্যবহার নিঃসন্দেহে বিদআত।

ইন্টারনেট ব্যবহার বিদআত নয়ঃ

১। দুনিয়ার কোন নতুন আবিস্কার কখনও বিদআত হয় না। দুনিয়ার নব আবিস্কার হয় হালাল না হয় হারাম। যদি কেউ ইন্টারনেটে দ্বীন প্রচার করে তবে তা জায়েয হবে। দ্বীন প্রচারে যতটুকু নেকীর আশা করা যায় তার থেকে কোন অবস্থায়ই কম দেয়া হবে না। আবার যদি কেউ ইন্টারনেটে অশ্লীল খারাপ নোংড়া ছবি দেখে, আসামজিক ভিডিও দেখে তবে তা হামার হবে। ইন্টারনেটে গুজব ছড়ানও একটি হারাম কাজ। যে কাজগুলি কবরে গুনাহ বা মহান আল্লাহ অসন্তষ্টি থাকবে তাই হারাম। কিন্তু ইন্টার নেট ব্যবহার করে খবর পড়া, খবর দেখা, কুরআন পড়া, কুরআন শুনা, ওয়াজ দেখা, ওয়াজ শুনা, ম্যাসেজ পাঠান বা গ্রহন করা ইত্যাদি ইত্যাদি কাজ করা জায়েয। আবিস্কার

২। ইন্টারনেট সাহায্যে আজ কাল অনেক দায়ীই দাওয়াতের কাজ করছেন যদিও এই উপকরণটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় ছিলনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে দ্বীনের মধ্যে এমন কাজ যা তাঁর নির্দেশিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত। ইন্টারনেট এ দাওয়াত দেওয়াটা দ্বীনের অংশ নয়। এটা দুনিয়ার একটা ব্যবস্থা মাত্র। এর মধ্যে দাওয়াত সহজে পৌছানো যাচ্ছে।

যেমনঃ ইসলামি কোন আলোচনা কাউকে পাঠান হল কিংবা ফেসবুকে, ইউটিউবে, টুইটারে শেয়ার করে হাজার হাজার মানুষের নিকট পৌছান হল। কাউকে ইমেইল পাঠিয়ে শির্ক বিদআত সম্পর্কে সতর্ক করা হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই যুগে চিঠি পাঠিয়ে রাজা বাদশাহদের ইসলামের দাওয়াত দিতেন। আজকে চিঠির উন্নত ভার্সন হচ্ছে মেইল বা এ জাতীয় যা কিছু আছে।

৩। ইহা দ্বীনের কোন অংশ মনে করে কেউ ব্যবহার করে না।

৪। ইহা আমলের কোন পদ্ধতিও আবিস্কার করে না।

৫। ইহ কেউ নেকীর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে না।

৮। পার্থির নতুন আবিষ্কারের ফলে বিদআতঃ

বিজ্ঞানের আবিস্কারের ফলে আমরা আজ এমন এমন বস্তু ব্যবহার করি যে সকল বস্তু ব্যবহার এক সময় কল্পনাও করা যেত না। বিভিন্ন ইবাদতের সময় আমরা বিজ্ঞানের এই আবিস্কার ব্যবহার করে থাক।

যেমনঃ বিমান, হেলিকপ্টার, ট্রেন, বাস ব্যবহার করে হজ্জ আদায় করি। মসজিদ পাকা করেছি, মসজিদে কার্পেট বিছিয়েছি, লাইট ফ্যান লাগিয়েছে, মাইক ব্যবহার করে আজাদ দিচ্ছি, সালাত আদায় করছি। দ্বীন প্রচারের জন্য কম্পিউটার, ল্যাপ্টপ, ক্যাসেট, টিভি, মাইক, স্পিকার, ইন্টরনেট, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ব্যবহার করছি। রমজানের সময় ইফতারি ও সেহেরির জন্য ক্যালেন্ডার তৈরি করছি, বিভিন্ন প্রকারের এলার্ন ঘড়ি ব্যবহার করছি। আবার আমাদের উপকারের জন্য ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, প্রিটিং প্রেস, টাইপ রাইটার, তাঁত যন্ত্র, বেলুন, রকেট, ব্যাটারি, চশমা, সিমেন্ট, রবার, ড্রাইসেল, পেট্রোল, টেলিফোন, মোবাইল, বৈদ্যুতিক বাতি, ক্যামেরা, কলম, রেডিও, এক্স-রে, এয়ার কন্ডিশনাররাডার, বিভিন্ন  প্রকারের ঔষধ, বিদ্যুৎ, লেজার, অণুবিক্ষণযন্ত্র, স্টেথোস্কোপ, ব্যারোমিটার, অণুবীক্ষণ যন্ত্র, থার্মোমিটার টেলিস্কোপ, বাষ্পীয় ইঞ্জিন, অক্সিজেন, রেল ইঞ্জিন, ডায়নামো, টেলিগ্রাফ, সাবমেরিন, বিভিন্ন প্রকারের অস্ত্র, ডিনামাইট, ইত্যাদি।

এখন প্রশ্ন হলঃ উপকারের জন্য যদি এই সকল বস্তু ব্যবহার করি এবং দ্বীনে সাথে এর কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকে তবে বো বিদআত হবে না কিন্তু যদি এই সকল বস্তু ব্যবহার করে দ্বীনে হুকুম আহকার তথা ইবাদত পালন করি তবে কি বিদআত হবে?

এই নব আবিস্কার বিদআত নয়ঃ

১। ইবাদতের পদ্ধতি আবিস্কার না করলে ইবাদতে জন্য শুধু উপকরণের ব্যবহার বিদআত হবে না।

২। পার্থির নতুন আবিষ্কারের বস্তু ব্যবহার করে অতিরিক্ত নেকীর আশা কেউ কর না। তাই বিদআত হবে না।

যেমনঃ পায়ে হেঁটে, উটে চড়ে হজ্জ আদায় করলে নেকী কম হবে আর বিমানে চড়ে হজ্জ আদায় করলে বেশী পাওয়া পাওয়া যাবে। কাচা মসজিদে সালাত আদায় করলে নেকী কম হবে আর পাকা মসজিদে আদায় করলে বেশী পাওয়া পাওয়া যাবে। মাইকে আজান দিলে বা সালাত আদায় করলে নেকী কম হবে আর মাইক বিহীন আজান দিলে বা সালাত আদায় করলে বেশী পাওয়া পাওয়া যাবে।এমন কথা কেউ বলে না।

৩। পার্থির নতুন আবিষ্কারের সম্পর্ক হালাল এবং হারামের সাথে। বিদআতে সাথে পার্থির নতুন আবিষ্কারের কোন সম্পর্ক নেই। আর বিদআতের সম্পর্ক হলো দ্বীনের পদ্ধতি আবিস্কারের সাথে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment