বাইতুল্লাহ বিভিন্থ অংশের বর্ণনাঃ দ্বিতীয় কিস্তি

হিজর বা হাতীম

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

হিজর বা হাতীম হচ্ছে, কাবার উত্তরদিকে অবস্থিত অর্ধেক বৃত্তাকার অংশ যার পরিমান প্রায় পাঁচ হাত। মক্কার কুরাইশগন কাবা নির্মাণের সময় অর্থাভাবের কারনে সম্পূর্ণ কাবা  নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয়। এই অংশটুকু তারা ছেড়ে যায়। কাজেই কাবার উত্তর পার্শ্বের অর্ধ-বৃত্তাকার দেয়ালঘেরা স্থান যা পূর্বে কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমান ছাদহীন ফাঁকা পড়ে আছে তাই হাতীম বা হিজর নামে পরিচিত। হাতীম শব্দের অর্থ ভগ্নাংশ আর হিজর’ শব্দের অর্থ ‘পরিত্যক্ত’ তবে হিজরের অর্থ পাথর স্থাপন করা হয়ে থাকে। যাহোক বর্তমান কাবার যে ভিত্তি আমরা দেখছি তা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর নির্মাণ হয় নাই। হাতীম বা হিজর ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তিতে কাবার ভীতরে ছিল। তাই যে এই স্থানে প্রবেশ করবে ও সালাত আদায় করবে তার জন্য কারায় প্রবেশ ও সালাত আদয়ে বলে বিবেচিত হবে।

কুরাইশগন অর্থাভাবের কারনে হাতীমের অংশ বাদ দেয়ঃ

১। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলাম, (হাতীমের) দেয়াল কি বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত, তিনি বললেনঃ হাঁ। আমি বললাম, তাহলে তারা বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করল না কেন? তিনি বললেনঃ তোমার গোত্রের (অর্থাৎ কুরাইশের কাবা নির্মাণের) সময় অর্থ নিঃশেষ হয়ে যায়। আমি বললাম, কাবার দরজা এত উঁচু হওয়ার কারণ কি? তিনি বললেনঃ তোমার কওম তা এ জন্য করেছে যে, তারা যাকে ইচ্ছা তাকে ঢুকতে দিবে এবং যাকে ইচ্ছা নিষেধ করবে। যদি তোমার কওমের যুগ জাহিলিয়্যাতের নিকটবর্তী না হত এবং আশঙ্কা না হত যে, তারা একে ভাল মনে করবে না, তা হলে আমি দেয়ালকে বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম এবং তার দরজা ভূমি বরাবর করে দিতাম। (সহিহ বুখারি ১৪৮৯ ইফাঃ)

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইচ্ছা ছিল হাতীমকে কাবার অন্তর্ভুক্ত করাঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ তুমি কি জানো না! তোমার সম্প্রদায় যখন কাবা ঘরের পুনঃনির্মাণ করেছিল তখন ইব্‌রাহীম (আঃ) কর্তৃক কাবাঘরের মূল ভিত্তি থেকে তা সংকুচিত করেছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি একে ইবরাহীমী ভিত্তির উপর পুনঃস্থাপন করবেন না? তিনি বললেনঃ যদি তোমার সম্প্রদায়ের যুগ কুফরীর নিকটবর্তী না হত তা হলে অবশ্য আমি তা করতাম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলেন, যদি ‘আয়িশা (রাঃ) নিশ্চিতরূপে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে থাকেন, তাহলে আমার মনে হয় যে, বায়তুল্লাহ হাতীমের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ইবরাহিমী ভিত্তির উপর নির্মিত না হওয়ার কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তওয়াফের সময়) হাতীম সংলগ্ন দু‘টি কোণ স্পর্শ করতেন না। (সহিহ বুখারি ১৪৮৮ ইফাঃ)

২। ইবন জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি ‘আয়শা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যদি কুফরের সাথে মানুষের যুগ নিকটবর্তী না হতো, আর আমার কাছে এমন সম্পদও নেই যা আমাকে শক্তি যোগায়, (আর তা যদি থাকতো,) তাহলে আমি হিজরের ২ আরও পাঁচ হাত এতে মিলাতাম এবং এর একটি দরজা রাখতাম, যা দিয়ে লোক প্রবেশ করতো। আর একটি দরজা রাখতাম, যা দিয়ে লোক বের হতো। (সুনানে নাসাঈ ২৯১৩)

হিজর কাবারই অংশঃ

১। আবদুল হামিদ ইবন জুবায়র (রহঃ) তার ফুফু সফিয়া বিনত শায়বা সূত্রে বলেছেন, আমাদের কাছ আয়েশা (রাঃ) বলেছেন যে, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি কি কা’বায় প্রবেশ করবো না? তিনি ইরশাদ করলেন, তুমি হিজারে প্রবেশ কর। কেননা, তা কাবারই অংশ। (সুনানে নাসঈ ২৯১৪)

২। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার ইচ্ছা হতো কাবায় প্রবেশ করে তাতে সালাত আদায় করতে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে আমাকে হিজরে প্রবেশ করিয়ে বললেনঃ যখন তুমি কাবায় প্রবেশ করতে ইচ্ছা করেছ, তখন এখানে সালাত আদায় কর, কেননা এটি কাবারই এক অংশ। কিন্তু তোমার গোত্র যখন একে নির্মাণ করে, তখন তাকে সংক্ষিপ্ত করেন।(সুনানে (সুনানে নাসঈ ২৯১৪৫, সুনানে তিরমিজি ৮৭৬)

৩। অন্য এক বর্ণনায় আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! কাবা ঘরে প্রবেশ করব না কি?’ তিনি বললেন, “তুমি হিজরে প্রবেশ কর। তা কাবা ঘরেরই অংশ।” (নাসাঈ ২৯১৪)

হিজরের বাইরে দিয়ে তওয়াফ করবেঃ

সহিহ হাদিসের আলোকে জানতে পারছি যে, হাতিম বা হিজর কাবারই অংশ। আমাদের জানা আছে, তাওয়াফ করতে হয় কাবার চার পাশে। কাবার ভিতর দিয়ে তাওয়াফ হবে না। কাজেই কাবা ঘরের তাওয়াফকারী অবশ্যই হিজরের বাইরে দিয়ে তওয়াফ করবে। ব্যাপকভাবে প্রচারিত ভুলেরই একটি হচ্ছে এটাকে ‘হিজর ইসমাঈল’ করে নামকরণ করা। এ নামকরণটি সঠিক নয়। কিছু মানুষ মনে করে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম অথবা অন্য অনেক নবীকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এটি আরও জঘন্য ধারণা। (ড. আবদুল্লাহ দুমাইজী, আল-বালাদুল হারাম, ফাযাইল ওয়া আহকাম ৬৬)।


মন্তব্যঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পরিমাণ স্থান বাইরে ছিল বলে নির্ধারণ করেছেন সেটুকুই কাবার অংশ। বর্তমানে উত্তর দিকের দেয়ালের ভেতরে যতটুকু স্থান ঢোকানো হয়েছে, তা সঠিক পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি। যে এখানে সালাত আদায় করতে চায়, তার উচিত হাদীসে বর্ণিত সঠিক স্থানটুকু তালাশ করে বের করা।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “বাইতুল্লাহ বিভিন্থ অংশের বর্ণনাঃ দ্বিতীয় কিস্তি

Leave a comment