আকিদার বিদআতসমূহ প্রথম কিস্তি : মহান আল্লাহ স্বসত্বায় সর্বত্র সবকিছুতে বিরাজ মান

আকিদার বিদআতসমূহ : প্রথম কিস্তি 

মহান আল্লাহ স্বসত্বায় সর্বত্র সবকিছুতে বিরাজ মান

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

ইসলামি শরীয়তের প্রথম ও প্রধান বিষয় হল ইমান। আর খাটি ইমান হল, সঠিক আকিদা প্রষণ করা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয় হল, আমরা সকলে মুসলিম দাবি করলেও শুধু আমাদের আকিদার কারনে আমরা মুসলিম নই। ইসলাম বহির্ভুত এই নতুত আকিদাকে বিদআতি আকিদা হিসাবে চিহিৃত করব। কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যে আকিদা নতুন করে আবিস্কার হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। কাজেই যে কোন ভুল আকিদা যা কুরআন সুন্নাহের বাহিরে গিয়ে নতুত করে তৈরি হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। যার অর্থ হলো আকিদার ভূলভ্রান্তি মানেই বিদআত আকিদা। যৌক্তিক কোন কাজ সহজে যে কেউ মেনে নেন। আর বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত কোন জ্ঞানতো সাথে সাথে মেনে নেয়। কিন্তু ইসলামি আকিদার মুল হল অদৃশ্যে বিশ্বাস এখানে জাগতিক কোন বিষয় থাকলে যুক্তি ও বিজ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা করা যেত কিন্ত অদৃশ্যে বিশ্বাস করতে হলে অদৃশ্য থেকে প্রাপ্ত অহীর উপর নির্ভর করতে হবে। অহী ভিন্ন যে কোন উৎস থেকে আকিদা গ্রহন করলে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ যে কোনটাই হতে পারে। ইসলামি আকিদা বিশ্বাস সব সময় আল্লাহকে কেন্দ্র অদৃশ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। তাই ইসলামি আকিদার মুল উৎস হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্ত্বিক। এই কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যখনি নতুন করে আকিদা রচনা করা হবে তাই বিদআতি আকিদা।

যেমনঃ অদৃশ্যের একটি ব্যাপার হল কবরের আজাব। কবরে আজাব হবে এটাই সত্য। কিন্তু কাউকে যুক্তি দিয়ে কি কবরের আজাব বুঝাতে বা দেখাতে পাবর। কিংবা বিজ্ঞানের আবিস্কার ক্যামেরা দ্বারা কি এই আজাব দেখাতে পারব। অপর পক্ষে আমলের ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এখানে কুরআন হাদিসের বাহিরে ইজমা কিয়াজের দরকার হয়। নতুন কোন সমস্যা আসলে কিয়াস করে মাসায়েল দিতে হয়। যেমনঃ মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট, শেয়ার বাজার ইত্যাদি ইসলামের প্রথমিক যুগে ছিলনা। তাই কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে কিয়াস করে সমাধান দিতে হয়। কজেই একটি কথা মনে রাখতে হবেঃ “আকিদা ও ফিকহের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, ফিকহের ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন নেই”

এক কথায় বলে গেলে কুরআন হাদিসের ষ্পষ্ট কোন রেফারেন্স ছাড়া আকিদা গ্রহণীয় নয়। যদি কেউ যুক্তি দিয়ে আকিদা বুঝাতে আসে তাকে সালাম জানাতে হবে। 

কুনআন সুন্নাহকে উৎস হিসাবে না নিলে আকিদার ভিন্নতা তো থাকবেই। আর এই ভিন্ন আকিদা আসবে সম্পূর্ণ নতুন করে যা বিদআত বলা হয়। কুরআন হাদিসে ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই, এমন ফিকহি মাসলা মাসায়েলের ক্ষেতে ইখতিলাফ বা মতভেদ করা জায়েয হলেও, আকিদার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতভেদ জায়েয নেই। কারন আকিদার ছয়টি বিষয় (আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, কিতার সমুহের প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস, তাক্বদীরের  ভালো মন্দেন প্রতি বিশ্বাস) যার সবগুলিই গায়েবের সাথে সম্পৃক্ত এবং গায়েব জানার জন্য অহীর প্রয়োজন। যতি কেউ তার আকিদাকে অহী ভিত্তিক না করে, যুক্তি ভিত্তিক করে, তাহলে তার বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। অহী ভিত্তিক না হয়ে আকিদা যুক্তি ভিত্তিক হলেই বিদআতি আকিদা হবে।

আকিদার সম্পর্কে আলোচনার আগে একটা কথাকে মনে খোদাই করে লিখে রাখেন, “আকিদা গাইবের প্রতি বিশ্বাস, এই বিশ্বাস হবে অহী নির্ভর, কোন প্রকার যু্‌ক্তিতর্কের অবতারণা করা যাবেনা”। কাজেই আমি যে ভ্রান্ত আকিদাগুলি তুলে ধরব তার বিপক্ষে আন্ততো কুরআনের একটি আয়াত অথবা একটি সহিহ হাদিস উপস্থাপণ করব। এই সহিহ আকিদার বিপরীতে যে সকল বিদআতি আকিদা সবার সামনে তুলে ধরব, সেই সকল আকিদার কুরআন সুন্নাহতে কোন প্রমান পাওয়া যাবে না। কুরআন সুন্নাহ নাই বলেই আকিদার নাম দিলাম বিদআতি আকিদা।

 

বিদআতী আকিদা হলোঃ মহান আল্লাহ স্বসত্বায় সর্বত্র সবকিছুতে বিরাজ মান।

সহিহ আকিদা হলোঃ মহান আল্লাহ আরশে সমুন্নত তিনি তার দেখা, শুনা, জ্ঞান দ্বারা সর্বত্র বিরাজ মান।

সহিহ আকিদার দলীলঃ

বিদআতীদের এ আকিদা একটি বাতিল আকিদা। এ সম্পর্কে জানতে হলে আল্লাহ তাআলার মারেফাত বা পরিচয় জানা খুবই গুরুত্বপূর্ন। তার মারেফাত বা পরিচয়ের  একটা দিক হল তিনি কোথায় আছেন। কেউ যদি নিজেস্ব জ্ঞান বুদ্ধি আর কল্পনা দ্বারা মানব সত্বার অবস্থানের মত আল্লাহর অবস্থান কল্পনা করে তবে শির্ক হবে। কারন বিশ্বজাহান সৃষ্টির আগেও তিনি ছিলেন আর মানুষের কল্পনা বিশ্বজাহানের বাহিরে যেতে পারে না। সে হিসেবে তিনি কোথায়? সে বিষয়ে কুরআন হদিসের আলোকে সম্যক জ্ঞান অর্জন আমাদের জন্য ওয়াজিব, তবে তার থেকে বেশী ঘাটাঘাটি করা নিষেধ কারন আমাদের জ্ঞান সীমিত। আর আল্লাহ’তায়ালা অসীম। এই সীমিত জ্ঞান দ্বারা আল্লাহকে ধারন করা সম্ভব নয়। (২:২৫৫)। তবে কুরআন সুন্নাহর আলোকে তার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জণ করতে হবে যাতে করে আমরা তার সম্পর্কে জেনে তাঁর প্রতি একাগ্র চিত্তে ধাবিত হতে পারি এবং যথার্থরূপে ইবাদত বন্দেগী করতে সক্ষম হই। কারন আল্লাহ তাআলা আমাদের রর ও ইলাহ। একমাত্র তিনিই ইবাদতের উপযোগী। তার সম্পর্কে আকিদা ভ্রান্ত হলে আমাদের ঈমান ও আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তাই আসুন এ বিষয়ে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস এবং সালফে সালেহীন তথা শ্রেষ্ঠ যুগের মহা পণ্ডিতদের বক্তব্য ও আকীদা দলীলসহ জানার চেষ্টা করি। আর সুফিদের ভ্রান্ত আকিদা পরিহার করি।

 

১। আল্লাহ অবস্থান সম্পর্কে  আল কুরআনের নিন্মের আয়াত সমূহ লক্ষ করি।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরশের উপর সমুন্নোত আছেনপ্রমানঃ  আল্লাহ তায়ালা বলেন,

*الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى*

অর্থঃ দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নোত হয়েছেন।” (সূরা ত্বহা – ২০: ৫)

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেনঃ

الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ الرَّحْمَنُ فَاسْأَلْ بِهِ خَبِيرًا

অর্থঃ “(আল্লাহ) যিনি আসমান, জমিন ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমুন্নোত হয়েছেন। তিনি পরম দয়াময়। তাঁর সম্পর্কে যিনি অবগত, তাকে জিজ্ঞেস কর।” (সূরা ফুরকান- ২৫:৫৯)

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেনঃ

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ مَا لَكُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا شَفِيعٍ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ

অর্থঃ “আল্লাহ যিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নোত হয়েছেন। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশ কারী নেই। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?” (সূরা সাজদা – ৩২: ৪)

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেনঃ

هُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

অর্থঃ “তিনি নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে, অতঃপর আরশের উপর সমুন্নোত হয়েছেন। তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা ভূমি থেকে নির্গত হয় এবং যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয় ও যা আকাশে উত্থিত হয়। তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।” (সূরা হাদীদ -৫৭: ৪)

তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। এর তাফসীর বা ব্যাখ্যা এ আয়াতেরই শেষাংশ। আর তা হলোঃ তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেনঃ

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

অর্থঃ “নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি তৈরি করেছেন আসমান ও জমিনকে ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশের উপর সমুন্নোত হয়েছেন। তিনি কার্য পরিচালনা করেন। কেউ সুপারিশ করতে পাবে না তবে তাঁর অনুমতি ছাড়া ইনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তোমরা কি কিছুই চিন্তা কর না?” (সূরা ইউনুস- ১০:৩)

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেনঃ

اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ

অর্থ: “আল্লাহ, যিনি ঊর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশ মণ্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো দেখ। অতঃপর তিনি আরশের উপর সমুন্নোত হয়েছেন। এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন, নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।” (সূরা রাদ- ১৩: ২)

 আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেনঃ

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

অর্থ: “নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর সমুন্নোত হয়েছেন তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্রকে এমন ভাবে যে তা সবই তাঁর আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।” (সূরা আরাফ -৭:৫৪)

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আসমানে আছেনঃ

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেনঃ

*أَمْ أَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ*

অর্থঃ “তোমরা কি নিশ্চিত আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর কঙ্কর বর্ষণ করবেন না। অচিরেই তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্ককারী।” (সূরা মুলক- ৬৭: ১৭)

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেনঃ

*أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْض(الملك*

অর্থঃ তোমরা তার থেকে নির্ভয় হয়ে গেলে যিনি আসমানে আছেন, আর তিনি তোমাদের সহকারে জমিনকে ধ্বসিয়ে দিবেন না?, (সূরা মূলক ৬৭:১৬)।

ইবনে আব্বাস রা. এই আয়াতের তাফসীরে বলেন: তিনি হলেন আল্লাহ। (তাফসীরে ইবনুল জাওযি)।

মারয়াম পুত্র ঈসা মসীহ্‌কে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের নিকট তুলে নিয়েছেনঃ  আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন,

(بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ(النساء

অর্থঃ বরং আল্লাহ তাকে (মারয়াম পুত্র ঈসা মসীহ্‌কে) তাঁর নিকটে উত্তলন করে নিয়েছেন। (সুরা নিসা ৪:১৫৮)

 

২। ফিরিশতাগণ আল্লাহ দিকে উঠেন এবং তাদের উপরস্থ রবকে ভয়

 আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ

অর্থঃ ফিরিশতাগণ এবং রূহ ( জিবরাঈল) তাঁর (আল্লাহ) দিকে উঠেন, এমন দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর।” (সূরা মা’আরিজ – ৭০: ৪)

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আরও বলেনঃ

يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

অর্থ: তাঁরা (ফিরিশতারা) তাদের উপরস্থ রবকে ভয় করে, আর তাঁদেরকে যা আদেশ দেয়া হয় তা পালন করে। [সূরা নাহল- ১৬:৫০]

 

৩। ফেরাউন  ও হামানের ও বিশ্বাস ছিল আল্লাহ তাআলা উপরের দিকেঃ

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেনঃ

وَقَالَ فِرۡعَوۡنُ يَـٰهَـٰمَـٰنُ ٱبۡنِ لِى صَرۡحً۬ا لَّعَلِّىٓ أَبۡلُغُ ٱلۡأَسۡبَـٰبَ (٣٦)

অর্থঃ ফেরাউন বলল, হে হামান, তুমি আমার জন্যে একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ কর, হয়তো আমি পৌঁছে যেতে পারব, (সূরা আল-মু’মিন:৩৬)।

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

 أَسۡبَـٰبَ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ فَأَطَّلِعَ إِلَىٰٓ إِلَـٰهِ مُوسَىٰ وَإِنِّى لَأَظُنُّهُ ۥ ڪَـٰذِبً۬اۚ وَڪَذَٲلِكَ زُيِّنَ لِفِرۡعَوۡنَ سُوٓءُ عَمَلِهِۦ وَصُدَّ عَنِ ٱلسَّبِيلِۚ وَمَا ڪَيۡدُ فِرۡعَوۡنَ إِلَّا فِى تَبَابٍ۬ (٣٧)

অর্থঃ আকাশের পথে, অতঃপর উঁকি মেরে দেখব মূসার আল্লাহকে। বস্তুতঃ আমি তো তাকে মিথ্যাবাদীই মনে করি। এভাবেই ফেরাউনের কাছে সুশোভিত করা হয়েছিল তার মন্দ কর্মকে এবং সোজা পথ থেকে তাকে বিরত রাখা হয়েছিল। ফেরাউনের চক্রান্ত ব্যর্থ হওয়ারই ছিল। (সূরা আল-মু’মিন:৩৭)। 

৪। হাদীছে রাসূলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ রব্বুল আলামিনের অবস্থান সম্পর্কে কি বলছেন এক ঝলক দেখা যাক

১. হাদীছে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না, অথচ যিনি আসমানে আছেন আমি তাঁর আমানতদার। আমার কাছে আসমানের খবর সকাল-সন্ধ্যায় আসে।” (বুখারী ও মুসলিম)।

২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি আমাকে আমিন (বিশ্বাসী) বলে স্বীকার কর না? আমি তো ঐ সত্ত্বার নিকট আমিন বলে পরিগণিত যিনি আসমানের উপর আছেন। (আর তিনি হলেন আল্লাহ)। (বুখারী ও মুসলিম)।

৩. রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেনঃ  যারা জমিনে আছে তাদের প্রতি দয়া কর, তবেই যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (তিরমিযী হাসান সহীহ)।

৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সপ্তম আসমানের উপর উঠানো হয়েছিল, তাঁর রবের সাথে কথোপকথনের জন্য। আর সেখানেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)।

৫. হযরত মুয়াবিয়া বিন হাকাম আস্ সুলামী (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রীতদাসীকে জিজ্ঞেস করলেন, বলতো আল্লাহ কোথায়? সে বলল, আসমানে। তারপর তিনি বললেন, বলতো আমি কে? সে বলল: আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে মুক্ত করে দাও, কারণ সে মুমিনা। (মুসলিম)।

 ৬. অন্যত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আরশ পানির উপর আর আল্লাহ আরশের উপর। তৎসত্তেও, তোমরা কি কর বা না কর তিনি তা জ্ঞাত আছেন। (আবু দাউদ হাসান)।

 ৭. আবু বকর রাদিয়াল্লাহ আনহু সুনানে দারেমী সহীহ সনদে জাহমীয়াদের জবাবে তিনি বলেছিলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আসমানের উপর জীবিত আছেন, কখনোই মৃত্যুমুখে পতিত হবেন না। (সুনানে দারেমী সহীহ সনদ)।

 

৫। এ ক্ষেত্রে সালফে সালেহীনের আকীদা বা কিছু উক্তি:

ক।  ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহঃ 

 আবু মুতি আল হাকাম ইবনে আব্দুল্লাহ আল বালাখি বলেনঃ আমি ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ)কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেউ যদি বলে যে, আমি জানিনা আল্লাহ্‌ কোথায় আসমানে না পৃথিবীতে, তাহলে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন-সে কাফের, কেননা আল্লাহ্‌ বলেছেন, “পরম করুণাময় (রাহমান) আরশের উপর সমাসীন। (সুরা-ত্ব হা-২০:৫)

আবু মুতি বলেছেন, অতঃপর আমি তাঁকে (ইমাম আবু হানিফাকে )জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেউ যদি বলে যে, আল্লাহ্‌ উপরে অধিষ্ঠিত, কিন্তু আমি জানিনা আরশ কোথায় অবস্থিত আকাশে না পৃথিবীতে তাহলে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন- যদি সে ব্যক্তি “আল্লাহ্‌ আকাশের উপরে “এ কথা অস্বীকার করে তা হলে সে কাফের। (শারহুল আকিদাহ আত তাহাওইয়াহ লি ইবনে আবিল ইজ আল হানাফি পৃষ্ঠা নং-২২৮, আল্ ফিকহুল আকবার: বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা পৃষ্ঠা -২৬১; ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ.)

ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেনঃ মহান আল্লাহর বিষয় নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলা কারো জন্য বৈধ নয় বরং তিনি নিজের জন্য যে বিশেষন ব্যবহার করছের তার বিষয় শুধু সেই বিশেষন ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয় নিজের মত, যুক্তি বা ইসতেহাদ দিয়ে কিছু বলা যাবে না। মহা পবিত্র মহা সম্মানিত মহা কল্যাণকর আল্লাহতায়ালা বিশ্বজগতের প্রতিপালক। (আল ফিকহুল আকবারঃ বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা, পৃষ্ঠা-২৬৭; ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ.)

 খ। ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহঃ

তার ছাত্র ইয়াহইয়া ইবন ইয়াহইয়া বলেন, একদা আমরা ইমাম মালিক ইবন আনাস রহ. এর কাছে বসা ছিলাম, এমন সময় তার কাছে এক লোক এসে বললঃ   “হে আবু ‘আব্দুল্লাহ! (মহান আল্লাহ বলেন) ‘‘রহমান (পরম দয়াময় আল্লাহ) ‘আরশের উপর উঠেছেন” (সূরা ত্বাহা: ২০:৫)। এই উপরে উঠা কীভাবে? এর রূপ ও ধরণ কেমন?  প্রশ্নটি শোনামাত্র ইমাম মালিক (র) মাথা নীচু করলেন, এমনকি তিনি ঘর্মাক্ত হলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ইসতিওয়া শব্দটির অর্থ (উপরে উঠা) সকলের জানা, কিন্তু এর ধরণ বা রূপ অজানা, এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এর ধরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা বিদ‘আত। আর আমি তোমাকে বিদ‘আতী ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। অতঃপর তিনি তাকে মজলিস থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। (ইতিকাদ লিল বাইহাকী ১/৬৭, হাশিয়াতুস সিন্ধী ‘আলা ইবনি মাজাহ ১/১৬৭, মিরকাতুল মাফাতীহ ২/১৭, ১৩/৮৯)।

ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ আরও বলেনঃ

“আল্লাহ্‌ তাঁর আরশে অধিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু বর্ণনা দিয়েছেন তার বাইরে কোন প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ্‌ আরশে কিভাবে, কেমন করে সমুন্নোত আছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ্‌তাআলা আমাদেরকে অবহিত করেননি। তাই এ বিষয়টির কাইফিয়াত আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।”

 (আল্লামা ইবনে হাজর রাহিমাহুল্লাহ ফাতহ গ্রন্থে (১৩তম খণ্ড পৃষ্ঠা নং ৪০৬) বলেছেন, উপরক্ত বর্ণনার সনদ বিশুদ্ধ)।

আল্লাহ্‌র আরশে অধিষ্ঠিত হওয়া প্রসঙ্গে ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “আল্লাহ্‌ আরশে অধিষ্ঠিত একথা জানি, কিভাবে অধিষ্ঠিত তা জানিনা। এর উপর দৃঢ় ঈমান পোষণ করা ওয়াজিব এবং এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদআত।” তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ্‌ রয়েছেন আসমানে এবং তাঁর ইলম সর্বাস্থানে পরিব্যপ্ত, তার জ্ঞান থেকে কোন স্থান খালি নেই।

গ। ইমাম শাফি‘ঈ রাহিমাহুল্লাহঃ

ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেন,  সুফিয়ান সাওরী, মালিক ও অন্যান্য যে সকল মুহাদ্দিসকে আমরা দেখেছি ও শিক্ষা গ্রহন করেছি, আমাদের সে সকল সাথী ও আমি যে সুন্নাহ আকিদার উপর রয়েছি তা হল এরূপ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন হক মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌র রাসূল আর আল্লাহ্‌ তিনি আসমানে আরশের উপর রয়েছেন। তিনি তার বান্দার নিকটবর্তী হন যে ভাবে ইচ্ছা করেন এবং যে ভাবে চান ঠিক সেভাবেই দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন …। (আল্ ফিকহুল আকবার: বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা, পৃষ্ঠা -২৭১; ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ.)

ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেনঃ  আর নিশ্চয় আল্লাহ আসমানের উপরে স্বীয় আরশের উপর উঠেছেন। (তাহযীবু সুনানে আবী দাউদ ২/৪০৬)

“আল্লাহ্‌তালার আরশে অধিষ্ঠিত হওয়া এবং আল্লাহ্‌র হাত, পা ইত্যাদি যা তাঁর সিফাত বলে বিবেচ্য আর তা কোরআন ও সহীহ সূত্রে সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত হওয়ার পরও যদি কোন ব্যক্তি বিরোধিতা করে, অস্বীকার করে ,নিষ্ক্রিয় করে তবে সে অবশ্যই কাফের বলে গন্য হবে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা আল্লাহ্‌র গুণাবলী স্বীকার করি ও বিশ্বাস করি তবে সৃষ্টির কোন কিছুর সাথে আল্লাহ্‌র গুনাবলীর কোন আকার সাব্যস্ত করিনা, সাদৃশ্য (তুলনা) করিনা। কেননা আল্লাহ্‌ নিজেই তাঁর সাদৃশ্যের বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছেন এ বলে- “(সৃষ্টি জগতের) কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।” [সূরা-শুরা,আয়াত-১১],(সিয়ারে আলামিন নুবালা-১০ম খণ্ড,পৃষ্ঠা নং,-৮০;আর দেখুন আইনুল মাবুদ-১৩তম খণ্ড পৃষ্ঠা নং-৪১;তাবাকতে হানাবিল ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নং-২৮৩)

ঘ। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহঃ

“আল্লাহ্‌র আসমা ও সিফাতগুলো সম্পর্কে কোরআন ও সহীহ হাদীসগুলোতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে এগুলোকে ঠিক সেভাবে সে পর্যায়েই রাখা উচিৎ। আমরা এগুলো স্বীকার করি ও বিশ্বাস করি এবং আল্লাহ্‌র সিফাতের কোন সাদৃশ্য করি না। আর এটাই হচ্ছে বিচক্ষন ও বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের অনুসৃত নীতি ”। [-ইবনুল জাওযী প্রনীত মুনাক্বীবে ইমাম আহমদ , পৃষ্ঠা নং-১৫৫-১৫৬]

মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আল-কাইসী বলেন, আমি ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বলকে জিজ্ঞেস করলাম,  

“এ মর্মে ইবনুল মুবারাক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল, ‘‘আমাদের রবের পরিচয় কীভাবে জানবো? উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘সাত আসমানের উপর ‘আরশে। (এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?) ইমাম আহমাদ (র) বললেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নিকট এ রকমই। (তাহযীবু সুনানে আবী দাউদ ২/৪০৬)

ঙ। ইমাম আওযায়ী বলেনঃ  

আমরা তাবেয়ীগণের উপস্থিতে বলতাম, নিশ্চয় মহান আল্লাহ্‌ তাঁর আরশের উপর রয়েছেন। তাঁর গুণাগুণ সম্পর্কে যে বর্ণনা এসেছে আমরা সবই তা বিশ্বাস করি। (ইমাম যাহাবী প্রণীত মুখতাছার উলু দ্রষ্টব্য)

চ।  ইমাম ইবনে খুযাইমা বলেনঃ

”যে ব্যক্তি স্বীকার করে না যে আল্লাহ্‌ তা’আলা সপ্তাকাশে স্বীয় আরশে সমুন্নোত, সৃষ্টি জগত হতে সম্পূর্ণ আলাদা সে কাফের। তাকে তওবা করার নির্দেশ দিতে হবে। তওবা না করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। অতঃপর তার লাশ ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করতে হবে যাতে করে কিবলা ওয়ালা মুসলমানগণ এবং কর প্রদানকারী অমুসলিমগণ তার দূর্গন্ধে কষ্ট না পায়। (ইমাম যাহাবী প্রণীত মুখতাছার উলু দ্রষ্টব্য)

৭. হযরত আবদুল কাদের জিলানী রাহিমাহুল্লাহ স্বীয় ‘গুনিয়াতুত্ তালেবীন’ নামক গ্রন্থে বলেনঃ ‘আল্লাহ্‌ পাক আরশে সমুন্নত রয়েছেন। রাজত্ব নিজ আয়ত্তে রেখেছেন। সমস্ত বস্তুকে বেষ্টন করে রেখেছেন। ….. আর এ ভাবে তাঁর পরিচয় দেয়া জায়েজ নয় যে, তিনি প্রত্যেক স্থানে বিরজমান। বরং বলতে হবে তিনি আসমানে আরশের উপর রয়েছেন যেমনটি তিনি (নিজেই) বলেছেন:

“রহমান (আল্লাহ্‌) আরশে সমুন্নত”। (ত্বা-হা/৫) 
একথা স্বাভাবিক ভাবেই বলতে হবে কোন প্রকার অপব্যখ্যা করে নয়। তিনি যে আসমানে আছেন একথা নবী-রাসুলদের প্রতি নাযিলকৃত প্রত্যেক কিতাবেই লিখিত আছে। তবে আরশে তিনি কিভাবে রয়েছেন তার পদ্ধতি কারো জানা নেই।’

ছ। আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহিমাহুল্লাহঃ  

আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহিমাহুল্লাহ কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমরা কিভাবে আমাদের রব সম্বন্ধে জানতে পারব? উত্তরে তিনি বলেছেন: তিনি আসমানে আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি হতে আলাদা হয়ে। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের জাত আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি থেকে আলাদা হয়ে। তার এই উপরে থাকা সৃষ্টির সাথে কোন সামঞ্জস্য নেই।

 চার ইমামগণই এ ব্যাপারে একমত যে, তিনি আরশের উপর আছেন, তিনি তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নন। প্রমানিত সত্য গুলিকে ও অনধাবন করার চেষ্টা করি:

 

৬। মিরাজের ঘটনা থেকে শিক্ষাঃ

আমরা আরও জানি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সাথে অত্যন্ত নিকট থেকে কথোপকথন করার জন্য মি‘রাজ রজনীতে সাত আসমানের উপর আরোহণ করেছিলেন। (সূরা আন-নাজম ৫৩:০১-১৮)

সুপ্রসিদ্ধ মে’রাজের ঘটনা সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিমসহ বহু হাদীস গ্রন্থে রয়েছে। আল্লাহ্‌ যদি সর্বত্র সবকিছুতেই বিরাজিত থাকেন, তবে মে’রাজের কি দরকার ছিল? মে’রাজের রাত্রে সপ্তাকাশের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌র দরবারে গমনই তো প্রমাণ করে যে মহান আল্লাহ্‌ সাত আসমানের উপর অবস্থিত আরশেই রয়েছেন। নতুবা মি’রাজ তো অর্থহীন হয়ে যায়।

 

৭। ওহী নাযিলের জন্য মাধ্যমের দরকার হল কেন?

আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওহী প্রেরণ করতে মাধ্যম হিসেবে জিব্রাঈল আলাইহিস সালামকে ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ স্ব-সত্বায় বিরাজমান হলে তিনি নিজেই অহী বলে দিতেন, জিব্রাঈল আলাইহিস সালামকে ব্যবহার করতেন না।

 আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 ﴿نَزَلَ بِهِ ٱلرُّوحُ ٱلۡأَمِينُ ١٩٣ عَلَىٰ قَلۡبِكَ﴾

অর্থঃ এটাকে (কুরআনকে) রুহুল আমীন (জিবরীল আলাইহিস সালাম) আপনার হৃদয়ে অবতীর্ণ করেছেন।” (সূরা আশ-শু‘আরা: ১৯৩-১৯৪)।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 قُلۡ مَن كَانَ عَدُوًّ۬ا لِّجِبۡرِيلَ فَإِنَّهُ ۥ نَزَّلَهُ ۥ عَلَىٰ قَلۡبِكَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِ

অর্থঃ ওদেরকে বলে দাও, যে ব্যক্তি জিব্রীলের সাথে শত্রুতা করে তার জেনে রাখা উচিত, জিব্রীল আল্লাহরই হুকুমে এই কুরআন তোমার দিলে অবতীর্ণ করেছে। (আল বাকারাহ ২:৯৭)।

 

৮। আল্লাহ্‌ বান্দার ‘সাথে’ রয়েছেন এ কথা অর্থ কি?

কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ্‌ বান্দার ‘সাথে’ রয়েছেন বলা উল্লেখ করা হইয়াছে এ আয়াত গুলি লক্ষ করিঃ

 আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّـٰبِرِينَ (١٥٣)

অর্থঃ ‘‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”। [সূরা আল বাকারাহ্ ২:১৫৩]

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلۡمُتَّقِينَ

অর্থঃ এবং  আল্লাহকে ভয় করতে থাকো এবং একথা জেনে রাখো যে, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছে। (সূরা আল-বাকারাহ্ ২:১৯৪),

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَـٰنَ وَنَعۡلَمُ مَا تُوَسۡوِسُ بِهِۦ نَفۡسُهُ ۥ‌ۖ وَنَحۡنُ أَقۡرَبُ إِلَيۡهِ مِنۡ حَبۡلِ ٱلۡوَرِيدِ (١٦)

অর্থঃ আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি আর তাদের মনে যেসব কুমন্ত্রণা উদিত হয় তা আমি জানি৷ আমি তার ঘাড়ের রগের চেয়েও তার বেশী কাছে আছি৷ [সূরা ক্ব-ফ :১৬],

  আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَمَا فِى ٱلۡأَرۡضِ‌ۖ مَا يَڪُونُ مِن نَّجۡوَىٰ ثَلَـٰثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمۡ وَلَا خَمۡسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُہُمۡ وَلَآ أَدۡنَىٰ مِن ذَٲلِكَ وَلَآ أَڪۡثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمۡ أَيۡنَ مَا كَانُواْ‌ۖ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُواْ يَوۡمَ ٱلۡقِيَـٰمَةِ‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَىۡءٍ عَلِيمٌ (٧) 

অর্থঃ তোমরা কি দেখ না, আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহ্‌ তা জানেন? তিন জনের মধ্যে কখনও কোন গোপন শলা পরামর্শ হতে পারে না, যেখানে তিনি চতুর্থ ব্যক্তিরূপে উপস্থিত নাই এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও হয় না যাতে ষষ্ঠ জন হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকেন না। কিংবা ইহা অপেক্ষা কম বেশী হলেও তারা যেখানেই থাকুক না কেন, অবশ্য তিনি উহাদের সঙ্গেই আছেন। সব শেষে বিচারের দিনে আল্লাহ্‌ তাদের কৃতকর্মের সত্যতা জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত। (মুজাদালাহ ৫৮ :৭)।

ঙ। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

 وَلِلَّهِ ٱلۡمَشۡرِقُ وَٱلۡمَغۡرِبُ‌ۚ فَأَيۡنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجۡهُ ٱللَّهِ‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ وَٲسِعٌ عَلِيمٌ۬ (١١٥)

অর্থ: পূর্ব এবং পশ্চিম আল্লাহ তায়ালারই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফিরাও, সেদিকেই রয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী সর্বজ্ঞাত. (সূরা বাকারা -১১৫)।

মন্তব্যঃ উক্ত আ্য়াতের তাফসীরে বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরবীদ হাফেজ ইমাদুদ্দিন ইবনু কাসীর (রাহ) তার “তাফসীর ইবনু কাসীরে ” বলেনঃ  আল্লাহ তা ‘আলা হতে কোন জায়গা সুন্য নেই, এর ভাবার্থ যদি আল্লাহ তা ‘আলার “ইলম” বা অবগতি হয় তাহলে অর্থ সঠিক হবে, যে কোন স্থানেই আল্লাহ পাকের ইলম হতে শূন্য নেই। আর যদি এর ভাবার্থ হয় ” আল্লাহ তা ‘আল্লাহ সত্তা “তবে এটা সঠিক হবে নাকেন না, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে, তার সৃষ্টি জীবের মধ্য হতে কোন জিনিষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন তা থেকে তার পবিত্র সত্তা বহু ঊর্ধে। (তাফসীর ইবনে কাসীর প্রথম খন্ড ৩৭২- পৃষ্টা)

তাহলে এই আয়াতগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা কী?

 মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতার মাধ্যমে সকল সৃষ্টির সাথে আছেন। অর্থাৎ তিনি সপ্ত আসমানের উপর অবস্থিত ‘আরশের উপর থেকেই সব কিছু দেখছেন, সব কিছু শুনছেন, সকল বিষয়ে জ্ঞাত আছেন। সুতরাং তিনি দূরে থেকেও যেন কাছেই আছেন। সাথে থাকার অর্থ, গায়ে গায়ে লেগে থাকা নয়। মহান আল্লাহ মূসা ও হারূন আলাইহিমাস সালামকে ফির‘আওনের নিকট যেতে বললেন, তারা ফির‘আওনের অত্যাচারের আশংকা ব্যক্ত করলেন। আল্লাহ তাদের সম্বোধন করে বললেন, 

﴿قَالَ لَا تَخَافَآۖ إِنَّنِي مَعَكُمَآ أَسۡمَعُ وَأَرَىٰ ٤٦﴾

অর্থঃ ‘‘তোমরা ভয় পেও না। নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি। (অর্থাৎ) শুনছি এবং দেখছি।” (সূরা ত্ব-হা ২০:৪৬)।

এখানে ‘‘সাথে থাকার অর্থ এটা নয় যে, মূসা আলাইহিস সালাম-এর সাথে মহান আল্লাহ তা‘আলাও ফির‘আওনের দরবারে গিয়েছিলেন। বরং ‘‘সাথে থাকার ব্যাখ্যা তিনি নিজেই করছেন এই বলে যে, ‘‘শুনছি এবং দেখছি।” অতএব আল্লাহর সাথে ও কাছে থাকার অর্থ হলো জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতার মাধ্যমে, আর স্ব-সত্তায় তিনি ‘আরশের উপর রয়েছেন। আল্লাহতায়ালা ধৈর্যশীল, মুত্তাকি ও সতকর্মশীলদের সাথে রয়েছেন বলার অর্থ তাদের সমর্থন, সাহায্য ও হিফাজতের মাধ্যমে সাথে থাকার কথা বলা হয়েছে। সাধারণভাবে আমরা বলে থাকি ‘আপনি উমুক কাজটি করুন আমরা আপনার সাথে আছি’। অর্থাৎ আমরা আপনাকে সমর্থন, সাহায্য ও হিফাজত করব। ধরূন কেউ ইলেকশনে অংশ গ্রহন করে বলে, আমার সাথে কে কে আছে?  জবাবে বলে, আমার আপনার  সাথে আছি। এখানে তাদের সমর্থন ও সাহায্য আছে বুঝান হইয়াছে। আবার টেলিফোনে কথা বলার সময় একজন অপরজনকে বলে থাকে। কে আপনি আমার সাথে? জবাবে বলে আমি উমুক আপনার সাথে। অথচ এখানে দুজন অঙ্গা-অঙ্গী হয়ে থাকে না।

দু’জন দু’দেশ থেকে কথা বলে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে সাথে থাকার অর্থ মিশে থাকা নয় বরং মহান আল্লাহ্‌ সেই আরশে আ’যীমে থেকেই তাঁর সাহায্য-সহযোগিতা, দেখা-শোনা ও জ্ঞানের মাধ্যমে আমাদের সাথে রয়েছেন। তিনি অসীম ক্ষমতাবান এবং যা চান তাই করতে পারেন।

৯। তা হলে প্রশ্ন হল “মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান” কথাটা কি সঠিক?

“মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান” বাক্যটির অর্থ যদি হয় ‘‘মহান আল্লাহ স্ব-সত্তায় সর্বত্র বিরাজমান” তা হলে বাক্যটি সরাসরি বাতিল। তবে শর্ত সাপেক্ষে বলা যাবে যে তিনি সর্বত্র বিরাজমান। যেমনঃ যদি কেউ বলে, মহান আল্লাহ তার জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতা দ্বারা সর্বত্র বিরাজমান তবে সঠিক হবে। শত শত কিলোমিটার দুর থেকে যে লাইভ টেলিকাষ্ট (খেলাধুলা, আগুনলাগা, যুদ্ধ, সভাসমাবেশ, গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান) দেখি আর ভাবি এত আমার চোখের সামনেই ঘটছে। কারন আমার জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ঐ ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত।

৫৮ নম্বর মুজাদালাহর ০৭ নম্বর আয়াতে তো বললেন,

“তিন জনের মধ্যে কখনও কোন গোপন শলা পরামর্শ হতে পারে না, যেখানে তিনি চতুর্থ ব্যক্তিরূপে উপস্থিত নাই এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও হয় না যাতে ষষ্ঠ জন হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকেন না”

আবার কেউ যদি বিশ্বাস করে, আল্লাহ আরশে রয়েছেন, আসমানে রয়েছেন, আরশে বসে রয়েছেন, আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করেছেন, তাহলে এগুলোও ভ্রান্ত আকিদা। এগুলো থেকেও নিজেকে মুক্ত রাখা জরুরি। কারন সুরা ত্বহা আয়াত ৫, সুরা ফুরকার ৫৯, সুরা সাজদা ৪, সুরা হাদিদ আয়াত ৪, সুরা ইউনুস ৩, সুরা রাদ, সুরা ফুরকান ৫৯, সুরা সাজদা ৮ আরাফ ৫৪, হুদ ৭, এই সূরাগুলোতে [{اسْتَوَى] “ইস্তাওয়া” শব্দটি ব্যবহার করা হইয়াছে যার অর্থ প্রখ্যাত তাবিঈ আবুল আলিয়াহ বলেছেনঃ  ইস্তাওয়া অর্থ ইরতাফা’য়া। অর্থাৎ তিনি উঁচু হল। ইস্তাওয়া ইলাস্ সামায়ে এর অর্থঃ তিনি আকাশের উপর আরশ এর উপর সমুন্নোত হলেন। 

প্রখ্যাত তাবিঈ মুজাহিদ বলেছেনঃ  ইস্তাওয়া অর্থ ‘আলা। এর অর্থ সে সমুন্নোত হল। ‘আলা আলাল আরশে এর অর্থঃ তিনি আরশের উপর সমুন্নোত হলেন। দেখুন: সহীহ বুখারী। (বাবু ওয়া কানা আরশুহু ‘আলাল মায়ে অর্থাৎ তাঁর আরশ পানির উপর আছে) 

কুরআনে ব্যবহৃত সকল ইস্তাওয়া ক্রিয়ার অর্থঃ তিনি আরশের উপর উঁচু হলেন বা সমুন্নত হলেন। ইস্তাওয়া ক্রিয়াটি কুরআনে মোট নয়বার ব্যবহৃত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইবনে কাসীর(রহঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ্‌ তা’আলা আরশের উপর সমাসীন, কোন অবস্থা ও সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই তার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। কোন জল্পনা কল্পনা করা চলবে না, যার দ্বারা সাদৃশ্যের চিন্তা মস্তিস্কে এসে যায়। কারন এটা আল্লাহ্‌র গুনাবলী হতে বহুদুরে। মোটকথা, যা কিছু আল্লাহতাআলা বলেছেন ওটাকে কোন খেয়াল ও সন্দেহ ছাড়াই মেনে নিতে হবে কোন চুল চেরা করা চলবে না। কেননা মহান আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য যুক্ত নন। ((সুরা শুরা-৪২:১১, (তাফসীর ইবনে কাসীর)

কাজেই প্রত্যেক খাটি আকিদার মুসলিমের অকাট্যভাবে বিশ্বাস হবে, আসমান-জমিন, লৌহে মাহফুজ, আরশ-কুরসী, গাছ-পালা, তরু-লতা, পাহাড়-পর্বত সবই আল্লাহর সৃষ্টি। এগুলো সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তায়ালা ছিলেন। আল্লাহর অস্তিত্বের জন্য সৃষ্টির অস্তিত্ব জরুরি নয়। কেউ হয়তো চিন্তা করবেন, আমাদের মাথায় স্থান ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব বুঝি আসে না। আমরা বলব, আমাদের সব কিছু পর্যবেক্ষণ, পঞ্চ ইন্দ্রিয়, ও সসীম চিন্তা শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই সসীম উপাদান দিয়ে অসীম রবের অস্তিত্বের হাকীকত উপলব্ধি সম্ভব নয়।

আরশ-কুরসী, আসমান-জমিন ছাড়া যদি আল্লাহর সম্পর্কে কেউ বিশ্বাস করতে না পারে, তাকে আমরা প্রশ্ন করব, এসব সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ ছিলেন, এটা বিশ্বাস করেন কি না? যদি বলে, হ্যা। তাহলে সে স্বীকার করল, স্থান ছাড়াই আল্লাহ তায়ালা বিদ্যমান। আর যদি বলে, আসমান-জমিন সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ ছিলেন না, তাহলে সে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বকেই অস্বীকার করল। যেটা অবশ্যই কুফুরী। 
সুতরাং আমাদের মৌলিক বিশ্বাস হল, আল্লাহ তায়ালা অমুখাপেক্ষী। তার অস্তিত্বের জন্য তিনি আরশের মুখাপেক্ষী নন। তার অস্তিত্বের জন্য তিনি আরশে উপবিষ্ট হ্ওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি আসমান-জমিন কোন কিছুরই মুখাপেক্ষী নন। তিনি এগুলোর স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক।

মন্তব্যঃ আরও বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে যেগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় আল্লাহ তায়ালা সব জায়গায় বিরাজমান নন। বরং তার ক্ষমতা, রাজত্ব, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, জ্ঞান, দৃষ্টি ইত্যাদি সর্বত্র ও সব কিছুতে বিরাজমান। কিন্তু তিনি স্বত্বাগতভাবে, সাত আসমানের উপর আরশে আযীমে সমুন্নোত। এই হল যা সংক্ষেপে উদ্ধৃত করা হল। যার সার সংক্ষেপ হল- মহান আল্লাহ্‌ আরশে সমুন্নোত রয়েছেন তিনি সর্বত্র সবকিছুতে বিরাজিত নয়। আর এটাই হল বিশুদ্ধ আকীদা। আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে হক জানা ও তা মানার তাওফীক দিন। আমীন।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment