সবর কত প্রকার হতে পারে?

সবর কত প্রকার হতে পারে?

ইসলামি শরীয়তে প্রতিটি আমলের জন্য আলাদ আলাদা বিধান আছে।  সবর মহান আল্লাহ একটি নির্দেষিত আমল তাই এই বিধানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তাই সবর করা বান্দার জন্য কখনো ওয়াজিব, কখনো মুস্তাহাব, কখনো মাকরুহ আবার কখনো হারাম। মহান আল্লাহু হুকুম পালনার্থে জিহাদে আমিদের হুকুম ছাড়া পলায়ন করা যাবে না। আমিরের হুকুম পাওয়া পর্যান্ত সবর করে যুদ্ধে চালন ওয়াজিব।  আবর পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তির পাপের কাজে সবর করে লিপ্ত থাকা হারাম।

ইসলামি শরীয়তের হুকুমের দিক দিয়ে সবর ৪ প্রকার। যথাঃ

১। ওয়াজিব সবর

২। মুস্তাহাব সবর

৩। মাকরুহ সবর

৪। হারাম সবর

১। ওয়াজিব সবরঃ আল্লাহর হুকুম পালন করা এবং তার নিষেধ থেকে বাচা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। এ ওয়াজিব পালনের জন্য মানুষকে অনেক কষ্টকর কাজ করতে হয়। আর এ কষ্টকর কাজ করতে তার একমাত্র সম্বল হল ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবিচলভাবে সবর করা। দ্বীনের পথে সংগ্রাম করতে গিয়ে আপতিত সকল প্রকার মুছিবতে ধৈর্য ধরা।  হক কথা বলতে গিয়ে বা দ্বীন প্রচার করতে গিয়ে জুলুমের স্বীকার হলে তাকে সবর করতে হয়।  মানব জীবনে চলতে মাঝে মাঝে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কঠিন বিপদে পড়তে হয় এতে নিরাশ না হয়ে সবর বা ধৈর্য্য ধারণ করাও ওয়াজিব।

 ওয়াজিব সবরের শ্রেনী বিভাগঃ

ওয়াজিব সবর ৯ প্রকারঃ

১) আল্লাহর পরীক্ষায় সবর করা ওয়াজিব

২) আল্লাহর ইবাদাত করতে সবর করা ওয়াজিব

৩) আল্লাহর হারাম থেকে বাচার জন্য সবর করা ওয়াজিব

৪) সৎকাজের আদেশ অসৎকাজে নিষেধ করতে গিয়ে সবর ওয়াজিব

৫) জান মালের ক্ষতিতে সবর করা ওয়াজিব

৬। অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় সবর করা ওয়াজিব

৭। কাফিরদের প্রতারণায় সবর করা ওয়াজিব

৮। মিথ্যা অপবাদে আল্লাহর সাহায্য পৌঁছে পর্যন্ত সবর করা ওয়াজিব

৯। বিপদাপদে সবর করা ওয়াজিব

১। আল্লাহর পরীক্ষায় সবর করা ওয়াজিবঃ

মানুষকে পরীক্ষা করার প্রকৃত কারন হল তাকে যাচাই করা যে, কে ঈমানদার, কে মুনাফেক, কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী। মুনাফেক ও দুর্বল ঈমানদারেরা অনেক সময় সুখ–স্বাচ্ছন্দের সময় আল্লাহকে মনে রাখে, তাঁর প্রতি অনুগত ও সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু, যখন কোনো বিপদ-আপদ আসে তখন আল্লাহকে ভুলে যায়, কুফুরী করে বা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। আবার কখন কাফের মুশরেকগন ও বিপদে আল্লাহর কাছে মনে প্রাণে দুয়া করতে দেখা যায়। আর যখন আল্লাহ তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন, তখন আল্লাহকে ভুলে যায়, তাঁর নিয়ামতকে অস্বীকার করে তার সাথে শির্ক করতে থাকে। এই সকল ব্যাপার কে কার চেয়ে অগ্রগামী তা প্রমানের জন্য দুনিয়াতে  মানুষকে পরীক্ষা করা হয়। তাকে এখানে পরিক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে। পরিক্ষায় পাশের প্রধান উপকরণ হল সবর বা ধৈয্য। সবর ছাড়া পাশ করার আশা করা যায় না।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

**أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ*

অর্থঃ মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? (সুরা আনকাবুত ২৯:২)।

মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ

অর্থঃ আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যে পর্যন্ত না ফুটিয়ে তুলি তোমাদের জেহাদকারীদেরকে এবং সবরকারীদেরকে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থান সমূহ যাচাই করি। (সুরা মুহাম্মাদ ৪৭:৩১)।

মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ

**وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ*

অর্থঃ আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। (সুরা আনকাবুত ২৯:৩)।

মন্তব্যঃ  মহান আল্লাহ সত্যবাদী এবং মিথ্যুকদেরকে জানার জন্য পরীক্ষা নিচ্ছেন।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

وَما أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِي الْأَسْوَاقِ وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍ فِتْنَةً أَتَصْبِرُونَ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيرًا

অর্থঃ আপনার পূর্বে যত রসূল প্রেরণ করেছি, তারা সবাই খাদ্য গ্রহণ করত এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করত। আমি তোমাদের এককে অপরের জন্যে পরীক্ষাস্বরূপ করেছি। দেখি, তোমরা সবর কর কিনা। আপনার পালনকর্তা সব কিছু দেখেন।  ( সুরা ফুরকান ২৫:২০)।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

**لَتُبْلَوُنَّ فِي أَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ أَذًى كَثِيراً وَإِن تَصْبِرُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الأُمُورِ*

অর্থঃ অবশ্য ধন-সম্পদে এবং জনসম্পদে তোমাদের পরীক্ষা হবে এবং অবশ্য তোমরা শুনবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরেকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি। আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার। [ সুরা ইমরান ৩:১৮৬ ]

মন্তব্যঃ পরিক্ষায় পাশের প্রধান উপকরণ হল সবর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

**أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُواْ الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللّهُ الَّذِينَ جَاهَدُواْ مِنكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ*

অর্থঃ তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল। [ সুরা ইমরান ৩:১৪২ ]

মন্তব্যঃ কার মাঝে কতটা সবর আছে তাও পরীক্ষা করা হবে।

উক্ত আয়াতগুলিতে মহান আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা পকরেন বলে উল্লেখ করেছে। আল্লাহ রহমত ছাড়া বান্দার কোন শক্তিই নেই পরীক্ষায় পাশ করা। কাজেই আমাদের সবরক করতে হবে, আল্লাহর রহমত আশা অবধী পর্যান্ত। আর সবর করাকে আল্লহ একান্ত সৎ সাহসের ব্যাপার বলেছেন।

মহান আল্লাহ কুরআনুর কারিমের বহু নবী রাসুলদের ঘটনা উল্লেখ করেছেন। সেখানে তাকালে দেখতে পাব আল্লাহ তায়ালা বিভিন্নভাবে তাদের পরীক্ষা করেছেন এবং তারাও অসীম ধৈর্য্যের সাথে মহান আল্লাহর নিকট পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন। সীমাহীন বিপদে আচ্ছন্ন রেখে তাদের ধৈর্যকে আরও মজবুত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

**وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ*

অর্থঃ এবং স্মরণ করুন আইয়্যুবের কথা, যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেনঃ আমি দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ট দয়াবান। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৩)

মহান আল্লাহ বলেনঃ

**فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَكَشَفْنَا مَا بِهِ مِن ضُرٍّ وَآتَيْنَاهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُم مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنْ عِندِنَا وَذِكْرَى لِلْعَابِدِينَ*

অর্থঃ অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁর দুঃখকষ্ট দূর করে দিলাম এবং তাঁর পরিবরাবর্গ ফিরিয়ে দিলাম, আর তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ থেকে কৃপাবশতঃ আর এটা এবাদত কারীদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ। [ সুরা আম্বিয়া ২১:৮৪ ]

এভাবে ইব্রাহীম আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইউনুস আলাইহি ওয়াসাল্লাম, নুহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ অনেক নবী রাসূলদের পরীক্ষা নিয়েছেন। তারাও চরম সবরের মাধ্যমে পরীক্ষায় পাশ করে মানুষ জাতীর জন্য অনুকরণীয় হয়ে আছেন। তাই মানুষ হিসাবে আমাদের ও এ রকম বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখিন হতে হবে। এ সকল পরীক্ষার এক মাত্র সম্বল হল সবর।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

**وَإِسْمَاعِيلَ وَإِدْرِيسَ وَذَا الْكِفْلِ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِينَ*

অর্থঃ এবং ইসমাঈল, ই’দ্রীস ও যুলকিফলের কথা স্মরণ করুন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সবরকারী। (সুরা আম্বিয়া ২১:৮৫)।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

*وَجَآؤُوا عَلَى قَمِيصِهِ بِدَمٍ كَذِبٍ قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْرًا فَصَبْرٌ جَمِيلٌ وَاللّهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَى مَا تَصِفُونَ*

অর্থঃ এবং তারা তার জামায় কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে আনল। বললেনঃ এটা কখনই নয়; বরং তোমাদের মন তোমাদেরকে একটা কথা সাজিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এখন ছবর করাই শ্রেয়। তোমরা যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্য স্থল। [ সুরা ইউসুফ ১২:১৮ ]

মন্তব্যঃ এ সকল আয়াত দ্বারা আমাদের পূর্ববর্তী নবী রাসূলদের কি পরিমান সবরছিল তারই প্রমান বহন করে। আর এ সকল উদাহরন আমাদের শুনান অর্থ হল, বিপদ আসলে এই সকল নবী রাসূলদের পথ অবলম্ভন করে বিপদের মোকাবেলা করা।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’বিপদ যত তীব্র হবে, প্রতিদানও তদনরুপ বিরাট হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ কোনো জাতিকে ভালোবাসলে তাদের পরীক্ষা করেন। যে কেউ তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য রয়েছে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি। আর যে কেউ তাতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহ্‌র অসন্তুষ্টি’’ ইবন মাযাহ ৪০৩১; তিরমিযি ২৩৯৬; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৬৬ (আলবানি হাসান বলেছেন)

নবী-রাসুল ও নেককার বান্দাগনই সবচেয়ে বেশি বিপদের সম্মুখীন হয়েছেনঃ

হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’তোমরা আমার জন্য প্রত্যেক মুসলমানের সংখ্যা গননা করে রাখো। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আমাদের নিয়ে ভয় করছেন? অথচ আমরা ৬০০ থেকে ৭০০ জন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বল্লেনঃ ‘’তোমরা জানো না, সম্ভবত তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে’’। বর্ণনাকারী বললেন, অতঃপর আমাদেরকে পরীক্ষা করা হল এমনকি আমাদের লোকেরা গোপনে গোপনে সলাত আদায় করতো। সহিহাহ ২৪৬; সহবহ মুসলিম ১/৯১, ইবন মাযাহ ২/৩৯২; আতিফা পাবলিকেশন্স ৯২৬)।

 

২। আল্লাহর ইবাদাত করতে সবর করা ওয়াজিবঃ

আল্লাহ তা’আলার আদেশ-নির্দেশ পালন ও ইবাদত-বন্দেগী সম্পাদন করতে গিয়ে ধৈর্য ধারণ করা। মহান আল্লাহ আদেশ পালন করা খুবই কঠিক কাজ। কারন মানুষের নফস ও জ্বীন শয়তান তাকে সকল সময় দুনিয়ার ধোকায় আবদ্ধ রাখতে চেষ্টা চালায়। তাদের প্রচেষ্টার পার করে ভাল কাজ করা খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। একাজে নিরাশ না হয়ে আল্লাহ প্রদত্ত প্রধান ঔষধ সবরেরগুন হাসিল করতে পারলে কৃতার্য হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ নিষ্চিত। মহান আল্লাহ বলেনঃ

**رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا*

অর্থঃ তিনি (আল্লাহ) নভোমন্ডল, ভূমন্ডলে এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবার পালনকর্তা। সুতরাং তাঁরই বন্দেগী করুন এবং তাতে দৃঢ় থাকুন আপনি কি তাঁর সমনাম কাউকে জানেন? (সুরা মারঈয়াম ১৯:৬৫)

মহান আল্লাহ বলেনঃ

*وَالَّذِينَ صَبَرُواْ ابْتِغَاء وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلاَنِيَةً وَيَدْرَؤُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُوْلَئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ*

অর্থঃ এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্যে সবর করে, নামায প্রতিষ্টা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্য ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে, তাদের জন্যে রয়েছে পরকালের গৃহ। (সুরা রা’দ ১৩:২২)।

 

৩। আল্লাহর হারাম থেকে বাচার জন্য সবর করা ওয়াজিবঃ

পৃথিবীতে সুখ লাভের মিথ্যা আশায় মানুষ আল্লার হারাম কৃত পথে পা বাড়ায়। মানুষ কাফির পাপিষ্টদের  আধুনিকতার মডেল মনে তাদের অনুগত্য করেন। এ ব্যাপার মহান আল্লাহ সবরের সাথে অপেক্ষা করতে বলেছেন। তিনি এরশাদ করেন.

**فَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَلَا تُطِعْ مِنْهُمْ آثِمًا أَوْ كَفُورًا*

অর্থঃ অতএব, আপনি আপনার পালনকর্তার আদেশের জন্যে ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করুন এবং ওদের মধ্যকার কোন পাপিষ্ঠ কাফেরের আনুগত্য করবেন না। [ সুরা দা’হর ৭৬:২৪ ]

মহান আল্লাহ বলেন,

**قَالَ رَبِّ السِّجْنُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِي إِلَيْهِ وَإِلاَّ تَصْرِفْ عَنِّي كَيْدَهُنَّ أَصْبُ إِلَيْهِنَّ وَأَكُن مِّنَ الْجَاهِلِينَ*

অর্থঃ ইউসুফ বললঃ হে পালনকর্তা তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহবান করে, তার চাইতে আমি কারাগারই পছন্দ করি। যদি আপনি তাদের চক্রান্ত আমার উপর থেকে প্রতিহত না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব। [ সুরা ইউসুফ ১২:৩৩ ]

এই বধরনের পাপাচার থেকে বাচা ফরজ কাজ। কিন্তু আপনি যদি নফসের চাহিদার নিকট হার মানেন তবে নিজের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ম স্থানে করতে পাবরের। তবে সবর কারির সাথে যেহুতু আল্লা্হ আছে তাই তাদের কোন চিন্তা নেই।

। সৎকাজের আদেশ অসৎকাজে নিষেধ করতে গিয়ে সবর ওয়াজিবঃ

ক্ষমতা অনুসারে সৎকাজের আদেশ আর অসৎকাজে নিষেধ করার দায়িত্ব সকলের উপর। আর এই মহান কাজ যিনিই করবেন তার উপর অনিবার্যভাবে বিপদ আপদ নেমে আসবে। তাকে মুখোমুখি হতে হবে নানান প্রতিকূল পরিবেশের সাথে। এ ধরনের লোকের পেছনে দুনিয়া কোমর বেঁধে লেগে যাবে এবং সব ধরনের কষ্টের সম্মুখীন তাকে হতেই হবে। এ কথার প্রমানে কুরআনুল কারিরে শত শত আয়াত আর নবী রাসূলদের ঘটনা বিদ্ধমান। এমকি লুকমান হাকীম যখন তার পুত্রকে উপদেশ প্রদাণ করে তখন তিনি তার পুত্রকে বিপদ আসার ইঙ্গিত প্রদান করেন। এবং এ বিপদের প্রতিকারের পন্থা হিসাবে সবর উল্লেখ করেন।

যেমন, মহান আল্লাহ বলেনঃ

**يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ*

অর্থঃ হে বৎস, নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ। (সুরা লুকমান ৩১:১৭)।

মহান আল্লাহ আরএ বলেনঃ

ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ وَتَوَاصَوْا بِالْمَرْحَمَةِ

অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও উপদেশ দেয় দয়ার। (সুরা বা’লাদ ৯০:১৭)।

খাব্বাব ইবনু আরাত্ত্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করলাম (এমতাবস্থায়) যে, তিনি কা‘বা ঘরের ছায়ায় একটি চাদরে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম যে, ‘আপনি কি আমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দো‘আ করবেন না?’ তিনি বললেন, ‘‘(তোমাদের জানা উচিত যে,) তোমাদের পূর্বেকার (মু’মিন) লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে (পুঁতে) রাখা হত। অতঃপর তার মাথার উপর করাত চালিয়ে তাকে দু’খণ্ড করে দেওয়া হত এবং দেহের গোশতের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনী চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হত। কিন্তু এই (কঠোর পরীক্ষা) তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম! আল্লাহ নিশ্চয় এই ব্যাপারটিকে (দ্বীন ইসলামকে) এমন সুসম্পন্ন করবেন যে, একজন আরোহী সান‘আ’ থেকে হাযরামাউত একাই সফর করবে; কিন্তু সে (রাস্তায়) আল্লাহ এবং নিজ ছাগলের উপর নেকড়ের আক্রমণ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছ।’’  সহীহুল বুখারী ৩৬১৬, ৫৬৫৬, ৫৬৬২, ৭৪৭০,রিয়াযুস স্বালেহীন ১১/৩৬)।

একটি বর্ণনায় আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদরকে বালিশ বানিয়ে বিশ্রাম করছিলেন এবং আমরা মুশরিকদের দিক থেকে নানা যাতনা পেয়েছিলাম।

৫। জান মালের ক্ষতিতে সবর করা ওয়াজিবঃ

এই দুনিয়ার জীবন ক্ষনস্থায়ী আর পরকালের জীবন স্থায়ী। আমাদের সকলকে একদিন আল্লাহরই কাছে যেতে হবে। কাজেই তাঁর আদেশ মত চলে ভালকাজ করে চলে যাওয়াটাই তো ভালো। কিন্তু এই ভাল কাজ করার সাথে সাথে মহান আল্লাহ আমাদের ভয়ভীতি এবং জানমাল ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করবে। তিনি এমন একজন পরীক্ষক যিনি এই পরিক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর দুটি এক সাথে দিয়ে দিয়েছেন। নিচর আয়াতখানি একটু লক্ষ করুন। মহান আল্লাহ বলেনঃ

**وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ*

অর্থঃ এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। (সুরা বাকারা ২:১৫৫)।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَـٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٌ۬ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٲجِعُونَ (١٥٦)أُوْلَـٰٓٮِٕكَ عَلَيۡہِمۡ صَلَوَٲتٌ۬ مِّن رَّبِّهِمۡ وَرَحۡمَةٌ۬‌ۖ وَأُوْلَـٰٓٮِٕكَ هُمُ ٱلۡمُهۡتَدُونَ (١٥٧) ۞

অর্থঃ যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত। [সুরা বাকারা ২:১৫৬-৫৭ ]

মন্তব্যঃ মহান আল্লাহ আমাদের ভয়ভীতি এবং জানমালের ক্ষতির মাধ্যমে যে পরীক্ষা করবেন তার একমাত্র এবং একমাত্র (উত্তর) কাজ হল সবর করা। এ আয়াতের সার কথা এটাই।

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার মু’মিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি তার দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নেই এবং সে সওয়াবের নিয়তে সবর করে। (সহিহ বুখারী ১২৮৩, ১২৫২, মুসলিম ৯২৬, তিরমিযী ৯৮৮, নাসায়ী ১৮৬৯, আবূ দাউদ ৩১২৪)।

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যখন আমি আমার বান্দাকে তার প্রিয়তম দুটি জিনিস দ্বারা (অর্থাৎ চক্ষু থেকে বঞ্চিত করে) পরীক্ষা করি এবং সে সবর করে আমি তাকে এ দু’টির বিনিময়ে জান্নাত প্রদান করব। (সহিহ বুখারী ৫৬৫৩, তিরমিযী ২৪০০, আহমাদ ১২০৫৯, রিয়াযুস স্বালেহীন ১০/৩৫)।

ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি যেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবীদের মধ্যে কোন এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করতে দেখছি। যে নবী কে তাঁর স্বজাতি প্রহার করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। আর তিনি নিজ চেহারা থেকে রক্ত পরিষ্কার করেছেন আর বলেছেন, “হে আল্লাহ! তুমি আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও। কেননা, তারা জ্ঞানহীন।” (সহিহ বুখারী ৩৪৭৭, ৬৯২৯, সহিহ মুসলিম ১৭৯২, ইবনু মাজাহ ৪০২৫, আহমাদ ৩৬০০)।

 

৬। অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় সবর করা ওয়াজিবঃ

পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যার সামনে অভাব নেই, বালা-মছিবত নেই, রোগ নেই। আমরা কোন না কোনভাবে এই সকল বিপদে আক্রান্ত। এই সকল বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ কি? মহান আল্লাহই ভাল জানেন তিনি এ থেকে মুক্তির জন্য সবর করতে বলছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ

لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَـكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَالْمَلآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّآئِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُواْ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاء والضَّرَّاء وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَـئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَـئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ

অর্থঃ সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণে র উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্ব জন, এতীম-মিসকীন , মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার। (সুরা বাকারা ২:১৭৭)

। কাফিরদের প্রতারণায় সবর করা ওয়াজিবঃ

মানুষের সহজাত স্বভার হল অন্যের অমঙ্গলে আনন্দিত হওয়া কিন্তু ইমানদা মুমিনদের কথা আলাদা। আল্লাহ ভীতিই মুমিনদের এ কাজে বাধা প্রদান করে। কিন্তু মনীনার ইহুদিগন ছিল মুসলীমদের প্রথম সারির সত্রু তারা মুসলীমদের মঙ্গল দেখলে কষ্ট পেত আর অমঙ্গল দেখলে আনন্দিত। এটা মুসলিমদের সাথে এক প্রকার প্রতারনা বলে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। এবং এই প্রতারনয় মুমিনদের সবর করতে বলেছেন।  মহান আল্লাহ বলেনঃ

إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُواْ بِهَا وَإِن تَصْبِرُواْ وَتَتَّقُواْ لاَ يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ

অর্থঃ তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে। [ সুরা ইমরান ৩:১২০]

 

৮। মিথ্যা অপবাদে আল্লাহর সাহায্য পৌঁছে পর্যন্ত সবর করা ওয়াজিব।

কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিলে আল্লাহর সাহায্য পৌঁছে পর্যন্ত সবর করা ওয়াজিব। মিথ্যা চিরকাল মিথ্যাই থাকবে, সবরের পরীক্ষায় পাশ হলে ফল নিজের পক্ষে আসবেই। এমন কোন নবী পাওয় যাবে না যে, দ্বীন প্রচার কালে তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়নি। কুরআন খুলে বুঝে বুঝে পড়ুন আর নবীদের ঘটনা দেখুন তাদের প্রতি কত শত মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। কাউকে পাগল, কাউকে মিথ্যাবাদী, কাউকে যাদুকর, কাউকে বাব দাদার ধর্ম অস্বীকারকারী ইত্যাদি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সামাজে মুমিদের ও মৌলবাদী, গোড়া মুসলিম, মধ্যযুগীয়, আদিম যুগিয়, অসামাজিক, আধুনিকতা বিরোধী ইত্যাদি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। এসব থেকে বাচতে এক মাত্র পথ হল পূর্ববর্তী পয়গম্বরদের পথের অনুসরণ করা। তারা মহান আল্লাহর সাহায্য না আশা পর্যান্ত সবর করেছেন।

মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ

وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ فَصَبَرُواْ عَلَى مَا كُذِّبُواْ وَأُوذُواْ حَتَّى أَتَاهُمْ نَصْرُنَا وَلاَ مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ وَلَقدْ جَاءكَ مِن نَّبَإِ الْمُرْسَلِينَ

অর্থঃ আপনার পূর্ববর্তী অনেক পয়গম্বরকে মিথ্যা বলা হয়েছে। তাঁরা এতে ছবর করেছেন। তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছে পর্যন্ত তারা নির্যাতিত হয়েছেন। আল্লাহর বানী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। আপনার কাছে পয়গম্বরদের কিছু কাহিনী পৌঁছেছে। [ সুরা আন’য়াম ৬:৩৪ ]

। বিপদাপদে সবর করা ওয়াজিবঃ

পৃথিবী এমন একটি স্থান যেখানে  শান্তির অনুসন্ধান করা মানে বিপদের সম্পুখিন হওয়া। আসলে এখান কেউ শান্তি লাভের জন্য আসেনি। তাই এখানে শান্তি খোঁজা আর সমুদ্রের পানি পান করে সমুদ্রের শুকিয়ে ফেলা একই কথা।  তবে কেউ আত্মতৃপ্তি হলে শান্তি না পেলেও শান্তি অনুভব করতে পারে। আর আত্মতৃপ্তির সঙ্গা হল সুখে দুঃখে মহান আল্লাহ শুকরিয়া আয়াদ করা। কঠিন বিপদেও সবর করা এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ

**الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ*

অর্থঃ যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।  (সুরা বাকারা ২:১৫৬)।

মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ

قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْرًا فَصَبْرٌ جَمِيلٌ عَسَى اللّهُ أَن يَأْتِيَنِي بِهِمْ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ

অর্থঃ তিনি (ইসহাক আঃ) বললেনঃ কিছুই না, তোমরা মনগড়া একটি কথা নিয়েই এসেছ। এখন ধৈর্য্যধারণই উত্তম। সম্ভবতঃ আল্লাহ তাদের সবাইকে একসঙ্গে আমার কাছে নিয়ে আসবেন তিনি সুবিজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা ইউসুফ ১২:৮৩)।

আনাস বিন মালিক [রা.] থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যখন তাঁর কোনো বান্দার মঙ্গল করতে চান, তখন দুনিয়াতেই তার [অপরাধের] শাস্তি দিয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে তিনি যখন তাঁর কোনো বান্দার অমঙ্গল করতে চান, তখন দুনিয়াতে তার পাপের শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকেন, যেন কেয়ামতের দিন তাকে পূর্ণরূপে শাস্তি দেন।’ [তিরমিজি]।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া [রহ.] বলেন, মুসিবত [বিপদাপদ] এক ধরনের নেয়ামত। কেননা এগুলো মানুষের গোনাহের কাফফারাস্বরূপ। মুসিবত মানুষকে সবরের শিক্ষা দেয়। বান্দা যদি মুসিবতে পড়ে সবর করে, তাহলে এর বিনিময়ে তাকে সওয়াব প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে বিপদাপদ ও মুসিবতের কারণে বান্দারা আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে আসে, আল্লাহর সামনে নত হয় এবং মাখলুকের [সৃষ্টির] কাছে নিজের প্রয়োজন পেশ করা থেকে বিরত থাকে। মুসিবতে পতিত বান্দার জন্য আরও অনেক দ্বীনি স্বার্থ হাসিল হয়। মূলত মুসিবতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গোনাহ মিটিয়ে দেন। সুতরাং এটি বান্দার জন্য এক বিরাট নেয়ামত। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল [রহ.] বলেন, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় কিতাব কোরআনে ৯০ বার সবরের [ধৈর্যের] উল্লেখ করেছেন।

 

২। মুস্তাহাব সবরঃ

ফরজ ও ওয়াজিব কাজের জন্য সরব করা ওয়াজিব, তা আগে উল্লেখ করছি। মহান আল্লাহকে খুসি করার জন্য তার অনুগত্য প্রকাশের জন্য ফরজ ও ওয়াজিব পাশাপাশি আরও অনেক আমল করতে হয়। এই আমলগুলি না করলে আল্লাহন নিকট জবাব দিহী করতে হবে না। এ আমলকে আমরা নফল বা মুস্তাহাব বলে থাকি।  নফল বা মুস্তাহাব হলেও এর দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়।  যেমনঃ কুরআন তিলওয়াত করা, সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর যিকির করা, বিপদে মানুষের পাশে দাড়িয়ে সাহায্য করা, গভীর রজনীতে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া, জন কল্যান মুলক কাজ করা, মানুষকে ভালকাজে উত্সাহ প্রদান করা ইত্যাদি। এই সকল কাজ করতে কখনও কখনও প্রচুর সবরের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ শরিয়তে যে সকল কাজ ফরজ নয় অথচ বৈধ এবং অত্যন্ত সওয়াবের ঐ সকল কাজ সম্পাদনে ধৈর্য ধরা মুস্তাহাব।

মহান আল্লাহ বলেন,

**وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا*

অর্থঃ আর রাতে তাহাজ্জুদ পড়ো এটি তোমার জন্য নফল৷  অচিরেই তোমার রব তোমাকে “প্রশংসিত স্থানে” প্রতিষ্ঠিত করবেন৷  [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৭৯ ]

মন্তব্যঃ এখানে আল্লাহ তার রাসুল (সাঃ) কে ঘুম ভেংগে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহাজ্জুদ সালাতকে আল্লাহ নফল বা অতিরিক্ত বলেছেন কিন্তু নেকির দিক খেকে অনেক বেশী। এ নামাজ রাতের বেলা একটি অংশে ঘুমুবার পর উঠে আদায় করতে হয় তাই এ কাজটি খুরই কষ্ট কর যারা নিয়মিত পড়ে তারা বাদে। এই নফল সালাত আদায়ের জন্য  যে কষ্ট হয় তার জন্য সবর করা মুস্তাহাব।

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعاً وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ وَلاَ تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ

অর্থঃ (হে নবী) তোমার রবকে স্মারণ করো সকাল-সাঁঝে, মনে মনে, কান্নাজড়িত স্বরে ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং অনুচ্চ কণ্ঠে৷ তুমি তাদের অন্তরভুক্ত হয়ো না যারা গাফলতির মধ্যে ডুবে আছে৷ (সুরা আরাফ ৭:২০৫)।

মন্তব্যঃ এখানে আল্লাহ জিকির করতে বলেছেন। জিকির করার কষ্টতে সবর করা মুস্তাহাব। এমনিভাবে অনেক কষ্ট করে কুরআন তেলওয়াত করে। অন্যেকে উপকারের জন্য কষ্ঠ স্বীকার করে। এমনিভাবে বিপদগ্রস্থ, বন্যা পিড়িত বা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের সাহা্য্যের জন্য হাত বাড়ালে অনেক সময় কষ্ট স্বীকার করতে হয় আর এ কষ্টে সরব করা মু্স্তাহাব।

 

৩। মাকরুহ সবরঃ

যে সকল সবল করতে ইসলামি শরীয়ত নিরুৎসাহিত করেছে। এ সকল সবরে কোন প্রকার নেকি কাজ হবেনা। এ ধরনের সবর কে মাকরুহ সবর বলে। মাকরুহ সবর তিন  প্রকার যথাঃ

১। কল্যান কর কাজে মাকরুহ সবর।

২। বৈধ কাজে মাকরুহ সবর।

৩। ইবাদতে মাকরুহ সবর।

 

১। কল্যান কর কাজে মাকরুহ সবরঃ

 কল্যান কর কাজে বা ভাল কাজে দেরিতে আদায় করার জন্য সবর করা মাকরুহ। কিছু বৈধ কাজ, কল্যানকর কাজ, ভাল কাজ যে গুল আদায় করলে অনেক নেকি, কিন্তু ইচ্ছা করে ছেড়ে দিলেও কোন গুনাহ হবে না। এ ধরনের কল্যান কর কাজের সময় সুযোগ থাকলে সবর করা মাকরুহ। যেমন কাউকে উপকার করার সময় সুযোগ উভয়ই আছে তখন ইচ্ছা করে সরব করা মাকরুহ হবে।

 

২। বৈধ কাজে মাকরুহ সবরঃ

 যে সকল বৈধ কাজ সময় মত সম্পাদন না করলে শারীরিক বা আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। ঐ সকল ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরা মাকরুহ। যেমন সময় মত খাদ্য-পানীয় গ্রহণ না করলে শরীরের ক্ষতি হয়। এ ক্ষেত্রে কোন যুক্তিযুক্ত কারণ ব্যতীত ধৈর্য ধরা মাকরুহ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “তোমরা সব কাজ ধৈর্যের সাথে [আস্তে-ধীরে] করবে। তবে ৫টি কাজ তাড়াতাড়ি করবে প্রথমতঃ মেয়ে সাবালিকা হলে তাড়াতাড়ি বিবাহ দিবে, দ্বিতীয়তঃ কেউ মারা গেলে দ্রুত দাফন-কাফন শেষ করবে, তৃতীয়তঃ মেহমান আসলে কারো অপেক্ষায় বসিয়ে না রেখে তাড়াতাড়ি খাবার দিবে, চতুর্থতঃ ঋণ থাকলে তাড়াতাড়ি পরিশোধ করবে, পঞ্চমতঃ গুনাহ করলে দ্রুত তওবা করবে।”

সুতারং এই পাঁচটি কাজের জন্য ইচ্ছকৃতভাবে দেরি করার নিমিত্তে সবর করা মাকরুহ্।

মৃত্যুর পর পাঁচটি কাজ দ্রুত সম্পাদন করতে হয়। যথা গোসল, কাফন, জানাযা, জানাযা বহন ও দাফন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর। কেননা যদি মৃত ব্যক্তি পুণ্যবান হয়, তবে তোমরা ‘ভাল’-কে দ্রুত কবরে সমর্পণ কর। আর যদি অন্যরূপ হয়, তাহ’লে ‘মন্দ’-কে দ্রুত তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দাও’। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, মিসকাত হাদিস নং-১৬৪৬)। এই সকল কাজে সবর করে দেরি করা মাকরুহ সবর।

 

৩। ইবাদতে মাকরুহ সবরঃ

 ইবাদতে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে সবর করাও অনেক সময় মাকরুহ হয়। যেমনঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর ‘ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ‘ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ্ ক্ষমা ক’রে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সব সময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহ্কে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশিঅনুগত। অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। (মিসকাত – ৫০৬৩, মুসলিম-১৪০১, আহমাদ-১৩৫৩৪, বুখারি আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৩)।

 

মন্তব্যঃ বান্দার সফলতা ও স্বার্থকতা নিহিত আছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের মধ্যেই। তবে তা হতে হবে সহনীয় মাত্রায়। সামর্থ্যরে সাথে সঙ্গতি রেখে। ইবাদতে আগ্রহ থাকা আবশ্যক। তাই চাপ নিয়ে ইবাদত করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরুৎসাহিত করেছেন কঠোরভাবে। তিনি বলেন, ‘তোমরা অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি থেকে সতর্ক থাকো, কেননা বাড়াবাড়ি তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করে দিয়েছে’ (আহমদ, তিরমিযী ও ইবন মাজাহ)।

বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না বরং এটি একটি ধ্বংসাত্মক প্রবণতা। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবারবার উম্মতকে তা থেকে সতর্ক করেছেন। এক হাদীসে এসেছে :

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অযথা কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি কথাটি তিন বার বলেছেন’(মুসলিম)।

মন্তিব্যঃ ইবাদত নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী করা দরকার। ইবাদতের হক আদায় করে নিজের মনের প্রফুল¬তা বজায় রেখে যতটুকু করা যায় ততটুকুই উত্তম। ইবাদতে বাড়াবাড়ি এক সময় বান্দাকে ইবাদতের প্রতি বীতশ্রদ্ধ ও বিরক্ত করে তোলে। আর এই ধরনের বিরক্ততে সবর করা মাকরুহ।

 

৩। হারাম সবরঃ

মুসলিদের জীবন পদ্দতি কেমন হবে তার এরটা সীমা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত করা হয়েছে। অর্থাৎ কোন কাজ হারাম আর কোন কাজ হালাল তার সীমা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আগের আলোচনায় দেখেছি আল্লাহর হুকুম মানেত গিয়ে সবর এখতিয়ার করা ওয়াজিব ছিল। ওয়াজিব সবরের বিপরীত হল হারাম সবর। যে সবর করা ইসলামি শরীয়তে নিসিদ্ধ তাকে হারাম সবর বলে। এ ধরনে সবরের কোন বৈধতা ইসলাম অনুমোধণ করে না।  হারাম সবর দুই প্রকারঃ

১। ইবাদতে হারাম সবর।

২। অসৎ কাজে হারাম সবর।

 

 

১। ইবাদতে হারাম সবরঃ

ফরজ কাজে সবর (বিরত) করা অনেক সময় হারাম হয়। যেমন, সময়মত সালাত আদায় না করে, সবর করে (বিরত থেকে) এক ওয়াক্তের সালাত অন্য ওয়াক্ত আদায় করা। তেমনিভাবে সময়ে সাথে সংশ্লিষ্ট ফরজ ইবাদাত নির্দিষ্ট সময় না করে অন্য সময় আদায় হারাম।  রমজান মাসের সাওম  সময় সুযোগ থাকার সত্বেও সবর করে রমাজান মাস থেকে পিছিয়ে অন্য মাসে আদায় করা। হজ্জ ফরজ হওয়া স্বত্বেও বিনা কারনে হজ্জ আদায় না করে বছরের পর বছর সবর করা হারাম।

 

২। অসৎ কাজে হারাম সবরঃ

ৎ কাজ করা কখনো সহজ আবার কখন অনেক কষ্ট করে, সবর করে করতে হয়। ঠিক তেমনি অৎ কাজ যেমন সহজে করা যায় আবার অনেক কষ্ট করে করতে হয়। এই অৎ কাজ বা আল্লাহর পক্ষ হারাম কৃত কাজ করতে গিয়ে সবর করা হারাম। সকল প্রকার নিষিদ্ধ কাজ সম্পাদনে সবর করা হরাম। সহজ কথায় হারাম কাজ সম্পাদনে সবর করাও হারাম।

যেমনঃ

ক। গান শুনা হারাম। রাত জেগে গানের অনুষ্ঠানে থাকা কষ্টকর তার পরও সবর করে গান শুনতে থাকে। এই কাজে সবর করা হারাম।

খ। অনেকের অভ্যশ রাত জেগে টেলিভিশন দেখা। ঘুমে পড়ে যায় তার পরও  টেলিভিশনের রিমুট ছাড়ে না। সে যে অনুষ্ঠান উপভোগ করছে, তা যদি হারাম হয় তবে এই ধরনেন সবর করাও হারাম।

গ। যাদের ইন্টার নেট ব্রাউজ করার নেসা আছে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নিয়ে সবর করে ইন্টার নেট ব্রাউজ করে। তারা যদি হারাম কোন কাজ নেটের মাধ্যমে করে থাকে তাদের এই ধরনেন সবর হারাম।

ঙ। যেখানে সবর করলে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে পারে। যেমনঃ কোন স্থানে আর অপেক্ষা করলে হিংস্র প্রাণী বা চোর ডাকাত দ্বারা জান-মালের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে ঐ স্থানে ধৈর্য ধারণ করে অপেক্ষা করা সম্পূর্ণ হারাম।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

One thought on “সবর কত প্রকার হতে পারে?

Leave a comment