তালবিয়াহ পাঠের সুন্নাহ সম্মত বিধান ও ভুলসমূহ

তালবিয়াহ পাঠের সুন্নাহ সম্মত বিধান ও ভুলসমূহ  

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। ইহরাম বাধার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ ওয়াজিবঃ

২। উচ্চস্বরে পাঠ করবে।

৩। মহিলাগন নীচু স্বরে পাঠ করবে

৪। কিবলামুখী হয়ে তালবিয়াহ পড়া

৫। তালবিয়া বেশী বেশী পাঠ করা

৬। তালবিয়ার সাথে অন্যান্য জিকির করা

৭। নীচে নামা ও উঁচু স্থানে উঠার সময় তালবিয়া পাঠ করা

৮। ইহরাম বাধা থেকে জামারায় পাথর মারা পর্যান্ত পাঠ করা

৯। ঋতুবতী অবস্থায় মহিলাদের ইহরাম বাধার নিয়ম

তালবিয়ার ভুলসমূহঃ

১।  ইহরাম বাঁধার সাথে সাথে তালবিয়াহ পাঠ না করাঃ

২। দলবদ্ধভাবে তালবিয়া পাঠ করা

ইহরাম বাধার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ ওয়াজিবঃ

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে তাঁর সওয়ারী সোজা দাঁড়িয়ে গেলে তিনি তালবিয়া পাঠ করেন। (সহিহ বুখারি ১৫৫২তাওহীদ)

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা উচ্চস্বরে হাজ্জের তালবিয়া পাঠ করতে করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা মক্কায় পৌছলে তিনি আমাদের তা উমরায় পরিণত করার নির্দেশ দিলেন। তালবিয়ার দিন এলে আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে মিনার দিকে রওনা হলাম। (সহিহ মুসলিম ২৮৯৩ ইফাঃ)

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা উচ্চস্বরে হাজ্জের তালবিয়া পাঠ করতে করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা মক্কায় পৌছলে তিনি আমাদের তা উমরায় পরিণত করার নির্দেশ দিলেন। তালবিয়ার দিন এলে আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে মিনার দিকে রওনা হলাম। (সহিহ মুসলিম ২৮৯৩ ইফাঃ)

২। উচ্চস্বরে পাঠ করবে।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যোহরের সালাত মদীনায় চার রাক’আত আদায় করলেন এবং ‘আসরের সালাত যুল-হুলাইফায় দু’রাক’আত আদায় করেন। আমি শুনতে পেলাম তাঁরা সকলে উচ্চৈঃস্বরে হজ্জ ও ‘উমরাহ’র তালবিয়া পাঠ করছেন। (সহিহ বুখারি ১৫৪৮ তাওহীদ)

খাল্লাদ ইবনুস সাইব (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার নিকট জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন আমার সাহাবীগণকে উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠের আদেশ দেই। (ইবনে মাজাহ ২৯২২, তিরমিযী ৮২৯, নাসায়ী ২৭৫৩, আবূ দাউদ ১৮১৪)

৩। মহিলাগন নীচু স্বরে পাঠ করবেঃ

তবে মহিলারা তালবিয়া মহিলাগন নীচু স্বরে পাঠ করবে। মহিলাদের কন্ঠ পর্দার অন্তরভুক্ত। তাই তারা অন্যান্য যিকির, দোয়া ও কুরআন তিলওয়াত উচ্চস্বরে আদায় করে না। সুতারং তালবিয়াও তারা আস্তে আস্তে পাঠ করবে, এই ক্ষেত্রে পর্দাই হচ্ছে শারঈ বিধান।

মালিক (র) থেকে বর্ণিতঃ, বিজ্ঞ আলিমগণের নিকট শুনেছি, তাঁরা বলতেন, উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করা মহিলাদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। মহিলাগণ আস্তে পড়িবেন যেন কেবল নিজেরাই আওয়ায শুনতে পান।

মালিক (র) বলেন, মসজিদের ভিতরে তালবিয়ার আওয়ায খুব বেশি উঁচু করবে না। বরং এতটুকু শব্দে পড়িবে যেন নিজে এবং পাশের লোকটি কেবল শুনতে পায়। তবে মিনা মসজিদ এবং মসজিদুল হারামে উচ্চৈঃস্বরে ‘লাব্বায়কা’ পাঠ করবে। মালিক (র) বলেন, কতিপয় আলিমের নিকট শুনেছি, প্রত্যেক নামাযের পর এবং চড়াই উতরাই-এর সময় লাব্বায়কা পাঠ করা মুস্তাহাব। (মুয়াত্তা মালিক ৭৩৯)

৪। কিবলামুখী হয়ে তালবিয়াহ পড়াঃ

নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) যুল-হুলাইফায় ফজরের সালাত শেষ করে সওয়ারী প্রস্তুত করার নির্দেশ দিতেন, প্রস্তুত হলে আরোহণ করতেন। সওয়ারী তাঁকে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে তিনি সোজা কিবলামুখী হয়ে হারাম শরীফের সীমারেখায় পৌঁছা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে থাকতেন। এরপর বিরতি দিয়ে যূতুওয়া নামক স্থানে পৌঁছে ভোর পর্যন্ত রাত যাপন করতেন এবং অতঃপর ফজরের সালাত আদায় করে গোসল করতেন এবং বলতেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপই করে ছিলেন। (সহিহ বুখারি ১৫৫৩তাওহীদ)

৫। তালবিয়া বেশী বেশী পাঠ করাঃ

আর মুহরিম ব্যক্তির বেশী বেশী তালবিয়া পাঠ করা উচিত; কারণ, তালবিয়াই হচ্ছে হাজ্জ ও উমরার বাচনিক নিদর্শন। বিশেষ করে অবস্থা ও কালের পরিবর্তনের সময় অধিক মাত্রায় তালবিয়া পাঠ করবে। যেমন, উঁচু স্থানে উঠা বা নীচু স্থানে অবতরণের সময়, কিংবা রাত বা দিনের আগমনের সময়, অথবা কখনো ইহরামের নিষিদ্ধ কাজের মনস্থঃ হওয়ার সময় বা কোন অবৈধ কাজের খেয়াল আসার সময় ইত্যাদি।

৬। তালবিয়ার সাথে অন্যান্য জিকির করাঃ

মুহাম্মদ ইব্‌নু আবূ বাকার সাকাফী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তাঁরা উভয়ে সকাল বেলায় মিনা হতে ‘আরাফার দিকে যাচ্ছিলেন, আপনারা এ দিনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে থেকে কিরূপ করতেন? তিনি বললেন, আমাদের মধ্যে যারা তালবিয়া পড়তে চাইত তারা পড়ত, তাতে বাধা দেয়া হতো না এবং যারা তাকবীর পড়তে চাইত তারা তাকবীর পড়ত, এতেও বাধা দেওয়া হতো না। (সহিহ বুখারি ১৬৫৯ তাওহীদ)

৭। নীচে নামা ও উঁচু স্থানে উঠার সময় তালবিয়া পাঠ করাঃ

১. মুজাহিদ (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকটে ছিলাম, লোকেরা দাজ্জালের আলোচনা করে বলল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাঁর দু’ চোখের মাঝে (কপালে) কা-ফি-র লেখা থাকবে। রাবী বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এ সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কিছু শুনিনি। অবশ্য তিনি বলেছেনঃ আমি যেন দেখছি মূসা (‘আ.) নীচু ভূমিতে অবতরণকালে তালবিয়া পাঠ করছিলেন। (সহিহ বুখারি ১৫৫৫, ৩৩৫৫, ৫৯১৩)

২. মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমরা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। উপস্থিত সবাই দাজ্জালের আলোচনা উঠালেন। তখন কোন একজন বললেন, তার (দাজ্জালের) দু’ চোখের মাঝামাঝিতে “কাফির” শব্দ খচিত আছে। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন কিছু বলেছেন বলে আমি শুনিনি। তবে এতটুকু বলতে শুনেছি যে, ইবরাহীম (‘আঃ) এর আকৃতি জানতে হলে তোমাদের এ সাথীরই (নিজের দিকে ইঙ্গিত) দিকে তাকাও। (তিনি অনুরুপই ছিলেন) আর মূসা (‘আঃ) ছিলেন গন্দুমী বর্ণের সুঠামদেহী। তাকে লাল বর্ণের একটি ঊটের পিঠে আরোহিত দেখেছি। আমি যেন তাকে এখনো তালবিয়াহ পাঠ করা অবস্থায় উপত্যকার ঢালু দিয়ে নামতে দেখেছি। (সহিহ মুসলিম ৩১১)

৩. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাদীনাহয়) যুহরের সলাত আদায় করে সওয়ারীতে চড়েন। অতঃপর তিনি আল-বায়দার উচ্চভূমিতে আরোহণের সময় ‘তালবিয়া’ পাঠ করেন। (আবু দাউদ ১৭৭৪)

৮। ইহরাম বাধা থেকে জামারায় পাথর মারা পর্যান্ত পাঠ করাঃ

ইহরামের কাপড় পরার পর যখনই নিয়ত করা শেষ করবেন তখন থেকে তালবিয়াহ পাঠ শুরু করবেন, আর শেষ করবেন হারাম শরীফে পৌঁছে তাওয়াফ শুরুর পূর্বক্ষণে। আর হজ্জের বেলায় ১০ই যিলহজ্জে বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়াহ পাঠ করতে থাকবেন।

১. ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় ফযলকে বাহনে তার পিছনে বসালেন। রাবী বলেন, এরপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে অবহিত করলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত অনবরত তালবিযা পাঠ করতে থাকেন। (সহিহ মুসলিম ২৯৫৮ ইফাঃ)

২. আরাফা হতে মুযদালিফা আসার পথে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সওয়ারীর পেছনে উসামাহ (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর মুযদালিফা হতে মিনার পথে তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাযলকে সওয়ারীর পেছনে বসালেন। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তারা উভয়েই বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামারায়ে ‘আকাবাতে কঙ্কর না মারা পর্যন্ত অনবরত তালবিয়া পাঠ করছিলেন। (সহিহ বুখারি ১৬৮৭)

৩. ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আরাফাহ হতে মুয্‌দালিফা পর্যন্ত একই বাহনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে উসামা ইব্‌নু যায়দ (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর মুযদালিফা হতে মিনা পর্যন্ত ফযল [ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)]-কে তাঁর পিছনে আরোহণ করান। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তাঁরা উভয়ই বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরা আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করছিলেন। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল-হুলাইফার মাসজিদের নিকট হতে ইহ্‌রাম বেঁধেছেন।  (সহিহ বুখারি ১৫৪৩ তাওহীদ)

৪. ‘ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আরাফাহ হতে মুয্‌দালিফা পর্যন্ত একই বাহনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে উসামা ইব্‌নু যায়দ (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর মুযদালিফা হতে মিনা পর্যন্ত ফযল [ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)]-কে তাঁর পিছনে আরোহণ করান। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তাঁরা উভয়ই বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামরা আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করছিলেন। (সহিহ বুখারি ১৫৪৪ তাওহীদ)

৫. কুরাইব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) ফযল (রাঃ) হতে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরায় পৌঁছা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতেন।(সহিহ বুখারি ১৬৭০ তাওহীদ)

মন্তব্যঃ হজ্জে ইহরাম বাঁধার সময় থেকে শুরু করে ঈদের দিন জামরা আক্বাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া অব্যাহত রাখবে হলেও উমরায় তালবিয়া পাঠ করা ইহরাম বাঁধার সময় থেকে শুরু করে তাওয়াফ আরম্ভ করার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত।

৯। ঋতুবতী অবস্থায় মহিলাদের ইহরাম বাধার নিয়ম

উমরার ইহরাম বাঁধার পর যদি কেউ ঋতুবতী হয়ে পড়লে তাকে গোসল করতে হবে এবং উমরার ইহ্‌রাম ছেড়ে দিয়ে হজ্জের ইহ্‌রাম বাঁধাতে হবে। হজ্জের পর পাক-সাফ অবস্থায় আর একটি উমরা করতে হবে। যেমনটি আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট ঋতুর কারণে বাতিল হয়ে যাওয়া উমরার পরিবর্তে নতুনভাবে ‘উমরাহ করার অনুমতি প্রার্থনা করেন।

১. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা বিদায় হজ্জের সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বের হয়ে ‘উমরাহ’র নিয়্যাতে ইহ্‌রাম বাঁধি। নবী বললেনঃ যার সঙ্গে কুরবানীর পশু আছে সে যেন ‘উমরাহ’র সাথে হজ্জের ইহ্‌রামও বেঁধে নেয়। অতঃপর সে ‘উমরাহ ও হজ্জ উভয়টি সম্পন্ন না করা পর্যন্ত হালাল হতে পারবে না। [‘আয়েশা (রাঃ) বলেন] এরপর আমি মক্কায় ঋতুবতী অবস্থায় পৌঁছলাম। কাজেই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সা’য়ী কোনটিই আদায় করতে সমর্থ হলাম না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমার অসুবিধার কথা জানালে তিনি বললেনঃ মাথার চুল খুলে নাও এবং তা আঁচড়িয়ে নাও এবং হজ্জের ইহ্‌রাম বহাল রাখ এবং ‘উমরাহ ছেড়ে দাও। আমি তাই করলাম, হজ্জ সম্পন্ন করার পর আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু আবূ বকর (রাঃ)-এর সঙ্গে তান’ঈম-এ প্রেরণ করেন। সেখান হতে আমি ‘উমরাহ’র ইহ্‌রাম বাঁধি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এ তোমার (ছেড়ে দেয়া) ‘উমরাহ’র স্থলবর্তী। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, যাঁরা ‘উমরাহ’র ইহ্‌রাম বেঁধেছিলেন, তাঁরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা’য়ী সমাপ্ত করে হালাল হয়ে যান এবং মিনা হতে ফিরে আসার পর দ্বিতীয়বার তাওয়াফ করেন আর যাঁরা হজ্জ ও ‘উমরাহ উভয়ের ইহ্‌রাম বেঁধেছিলেন তাঁরা একটি মাত্র তাওয়াফ করেন। (সহিহ বুখারি ১৫৫৬)

২. জা’ফর ইব্ন মুহাম্মদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমাকে আমার পিতা বলেছেন, আমরা জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট গমন করে তাকে রাসূলুল্লাহ (স)-এর বিদায় হজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাদের নিকট বর্ণনা করেন যে, রাসূলূল্লাহ (স) যুলক্বা’দা মাসের পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলেন। আমরাও তাঁর সাথে বের হলাম। যখন তিনি যুল-হুলায়ফা পৌঁছলেন, তখন আসমা বিন্তে উমায়স (রাঃ) মুহাম্মদ ইব্ন আবূ বকরকে প্রসব করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করে পাঠালেনঃ আমি এখন কি করব? তিনি বললেনঃ তুমি গোসল কর তারপর পট্টি পরে নাও এবং ইহরাম বাঁধ। (সুনান নাসাঈ ২৯১)

৩. আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তখন তাঁর সাথে তার সহধর্মিণী আসমা বিনীত উমায়স খাছ’আমীয়্যাও ছিলেন। যখন তাঁরা যুলহুলায়ফায় ছিলেন, তখন আসমা মুহাম্মদ ইবন আবু বকরকে প্রসব করেন। আবু বকর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ সংবাদ দিলে রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরকে বলেন, তাকে গোসল করে হজের ইহরাম বাঁধতে আদেশ করুন। এরপর অন্যান্য লোক যা করে সেও তা করবে। কিন্তু সে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না। সুনানে নাসঈ ২৬৬৬, ইবনে মাজাহ ২৯১২)

তালবিয়ার ভুলসমূহঃ

১।  ইহরাম বাঁধার সাথে সাথে তালবিয়াহ পাঠ না করাঃ

ইহরাম বাধার সাথে সাথে তালবিয়াহ পাঠ করা সুন্নাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‌এবং তার সাথীগনও ইহরামের প্রাককালে তালবিয়া পাঠ করছেন। সালফে  সালেহীদের আমলও অনুরূপ। কিন্তু অনেক অজ্ঞতার কারনে ইহরাম বাঁধার সাথে সাথে তালবিয়া পড়ে না। অনেক হাজী সাহেব মক্কায় প্রবেশের পূর্বে তালবিয়া পাঠ করতে ভুলে যান। অথচ ইহরাম বাঁধার পরই বেশি বেশি করে তালবিয়া পাঠ করা উচিত। আবার অনেকে মনে করে তালবিয়া মক্কা গিয়ে পড়তে হয়। তাদের এই ধারনা ভুল। আমাদের সকল মুজতাহীদ আলেমগন যারা হজ্জ পালন করেছেন তারাও তালবীয়া পাঠ করেছেন। তারা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্নভাবে উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়তেন।

দলবদ্ধভাবে তালবিয়া পাঠ করাঃ

অনেকে দলবদ্ধভাবে একই স্বরে তালবিয়া পাঠ করে থাকেন। বিশেষ করে ইন্দোনেশীয়ার হাজীগন দলবদ্ধভাবে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করে থাকে। তাদের প্রতি দলে একজন করে লীডার গোছের লোক থাকে। যিনি বলার পর সবাই এক থাকে সমস্বরে তারবিয়া বলেন। এরূপ করা ভুল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সাহাবাগণ এভাবে তালবিয়া পাঠ করেননি। তবে যদি কারও তালবিয়া মুখস্ত না থাকে সে শুধু শিক্ষার জন্য অন্যের সহযোগিতা নিয়ে তালবিয়া পাঠ করতে পারে। তবে সবার উচিত হজ্জ যাত্রার আগেই গুরুত্ব দিয়ে তালবিয়া মুখস্থ করতে হবে ও বিশুদ্ধভাবে পাঠ করা।

*لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ*

উচ্চারণঃ (লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল্‌মুলক, লা শারীকা লাকা)

অর্থঃ তোমার নিকট আমি হাজির হয়েছি, হে আল্লাহ! আমি হাজির হয়েছি, আমি হাজির হয়েছি, তোমার কোন অংশীদার নেই। আমি হাজির হয়েছি, নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নিয়ামাত এবং রাজত্ব তোমারই। তোমার কোন অংশীদার নেই।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “তালবিয়াহ পাঠের সুন্নাহ সম্মত বিধান ও ভুলসমূহ

Leave a comment