পূর্ববর্তী নবী রাসূল কিভাবে সবর অর্জণ করেছেনঃ প্রথম পর্ব

পূর্ববর্তী নবী রাসূল কিভাবে সবর অর্জণ করেছেনঃ প্রথম পর্ব

আমাদের পূর্ববর্তী নবী রাসূল ও সালাফদের জীবন সবরে ভরপুর ঘটনাবহুল। তাদের সবরে ভরা ঘটনাবলীর থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরও সবরের মত মহৎ গুনাবলী অর্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ কুরআনে ২৫ জন নবী রাসূলের নাম উল্লেখ করেছেন। তাদের প্রত্যেকের মিশন ছিল দুনিয়ার আল্লাহর দ্বীনের প্রচার, প্রশার ও প্রতিষ্ঠা। এমন কোন নবী রাসূলের নাম বলতে পারবেনা যাদের সাথে তাদের কওম খারাপ ব্যবহার করেনি। তাদের অধিকাংশকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এসকল ঘটনায় দেখা যার, মহান আল্লাহ সাহায্য আসা পর্যান্ত তারা সবর করেছেন। তাদের এ সকল কাহিনী বার বার পড়ে তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে সবর অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

**وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّن قَبْلِكَ مِنْهُم مَّن قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُم مَّن لَّمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ **

অর্থঃ আমি আপনার পূর্বে অনেক রসূল প্রেরণ করেছি, তাদের কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারও কারও ঘটনা ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করিনি। [ সুরা মু’মিন ৪০:৭৮ ]

মহান আল্লাহ নিজেই বলেন এ ঘটনা তোমাদের কাছে বিবৃত করেছি উপদেম প্রদানের জন্য। মহান আল্লাহ বলেন,

لِنَجْعَلَهَا لَكُمْ تَذْكِرَةً وَتَعِيَهَا أُذُنٌ وَاعِيَةٌ

অর্থঃ যাতে এ ঘটনা তোমাদের জন্যে স্মৃতির বিষয় এবং কান এটাকে উপদেশ গ্রহণের উপযোগী রূপে গ্রহণ করে। [ সুরা হাক্বকাহ ৬৯:১২ ]

হযরত হূদ আলাইহিস সালাম কে তার কওম মিথ্যাবাদী বললে, আল্লাহ তাদের ধ্বংশ করে দিলেন। আর ঘটনা কুরআনে বলার কারন আমাদের শিক্ষাদার করা। মহান আল্লাহ বলেন,

فَكَذَّبُوهُ فَأَهْلَكْنَاهُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّؤْمِنِينَ

অতএব, তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলতে লাগল এবং আমি তাদেরকে নিপাত করে দিলাম। এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়। [ সুরা শু’য়ারা ২৬:১৩৯ ]

মহান আল্লাহ কুরআনে যে সকল নবীদের কথা বলা হয়েছে তারা সকল অত্যাচারিত চিলেন তাদের কওম দ্বারা। তাদের এই কাহিনী পড়ে পড়ে তাদের মত সবর অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। তাদের কয়েক জনে এ রকম কিছু ঘটনা তুলে ধরছি।

 

১। নুহ আলাইহিস সালামঃ

আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আঃ)-কে সাড়ে নয়শত বছরের সুদীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন। সে (নূহ আঃ) বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি দাওয়াত দিয়েছি।(৭১:৫)। কিন্ত তার কওমকে তিনি দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, এই সুদীর্ঘ দাওয়াতী যিন্দেগীতে তিনি যেমন কখনো চেষ্টায় ক্ষান্ত হননি, তেমনি কখনো নিরাশও হননি। সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নানা বিধ নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েও তিনি ছবর করেন। কওমের নেতারা বলল,

قَالُوا لَئِن لَّمْ تَنتَهِ يَا نُوحُ لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمَرْجُومِينَ

অর্থঃ তারা বলল, হে নূহ যদি তুমি বিরত না হও, তবে তুমি নিশ্চিতই প্রস্তরাঘাতে নিহত হবে। (সুরা শুয়ারা ২৬:১১৬)

তবুও বারবার আশাবাদী হয়ে তিনি সবাইকে দাওয়াত দিতে থাকেন। আর তাদের জন্য দো‘আ করে বলতে থাকেন, ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমার কওমকে ক্ষমা কর। কেননা তারা জানে না। (তাফসিরে কুরতিবী, সুরা নূহ)

ওদিকে তাঁর সম্প্রদায়ের অনীহা, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য এবং ঔদ্ধত্য ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব বলেন, নিহত কোন নবী ব্যতীত অন্য কোন নবী তার কওমের নিকট থেকে নূহের মত নির্যাতন ভোগ করেননি। (ইবনু কাছীর, সূরা আ‘রাফ ৫৯-৬২)।

২। হযরত ছালেহ আলাইহিস সালামঃ

‘আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পরে হযরত ছালেহ আলাইহিস সালাম কওমে ছামূদ-এর প্রতি নবী হিসাবে প্রেরিত হন।  তিনি তার কওম কে তাওহীদের  দাওয়া দিলে তারা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।  এ সম্পর্ক মহান আল্লাহ বলে,

 وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَآ إِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمۡ صَـٰلِحًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ فَإِذَا هُمۡ فَرِيقَانِ يَخۡتَصِمُونَ (٤٥) قَالَ يَـٰقَوۡمِ لِمَ تَسۡتَعۡجِلُونَ بِٱلسَّيِّئَةِ قَبۡلَ ٱلۡحَسَنَةِ‌ۖ لَوۡلَا تَسۡتَغۡفِرُونَ ٱللَّهَ لَعَلَّڪُمۡ تُرۡحَمُونَ (٤٦) قَالُواْ ٱطَّيَّرۡنَا بِكَ وَبِمَن مَّعَكَ‌ۚ قَالَ طَـٰٓٮِٕرُكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ‌ۖ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمٌ۬ تُفۡتَنُونَ (٤٧) وَكَانَ فِى ٱلۡمَدِينَةِ تِسۡعَةُ رَهۡطٍ۬ يُفۡسِدُونَ فِى ٱلۡأَرۡضِ وَلَا يُصۡلِحُونَ (٤٨) قَالُواْ تَقَاسَمُواْ بِٱللَّهِ لَنُبَيِّتَنَّهُ ۥ وَأَهۡلَهُ ۥ ثُمَّ لَنَقُولَنَّ لِوَلِيِّهِۦ مَا شَہِدۡنَا مَهۡلِكَ أَهۡلِهِۦ وَإِنَّا لَصَـٰدِقُونَ (٤٩) وَمَكَرُواْ مَڪۡرً۬ا وَمَكَرۡنَا مَڪۡرً۬ا وَهُمۡ لَا يَشۡعُرُونَ (٥٠) فَٱنظُرۡ كَيۡفَ ڪَانَ عَـٰقِبَةُ مَكۡرِهِمۡ أَنَّا دَمَّرۡنَـٰهُمۡ وَقَوۡمَهُمۡ أَجۡمَعِينَ (٥١)

অর্থঃ আমি সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে তাদের ভাই সালেহকে এই মর্মে প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। অতঃপর তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বিতর্কে প্রবৃত্ত হল। সালেহ বললেন, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা কল্যাণের পূর্বে দ্রুত অকল্যাণ কামনা করছ কেন? তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না কেন? সম্ভবতঃ তোমরা দয়াপ্রাপ্ত হবে।তারা বলল, তোমাকে এবং তোমার সাথে যারা আছে, তাদেরকে আমরা অকল্যাণের প্রতীক মনে করি। সালেহ বললেন, তোমাদের মঙ্গলামঙ্গল আল্লাহর কাছে; বরং তোমরা এমন সম্প্রদায়, যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।আর সেই শহরে ছিল এমন একজন ব্যক্তি, যারা দেশময় অনর্থ সৃষ্টি করে বেড়াত এবং সংশোধন করত না। তারা বলল, তোমরা পরস্পরে আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণ কর যে, আমরা রাত্রিকালে তাকে ও তার পরিবারবর্গকে হত্যা করব। অতঃপর তার দাবীদারকে বলে দেব যে, তার পরিবারবর্গের হত্যাকান্ড আমরা প্রত্যক্ষ করিনি। আমরা নিশ্চয়ই সত্যবাদী। তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক চক্রান্ত করেছিলাম। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি। অতএব, দেখ তাদের চক্রান্তের পরিনাম, আমি অবশ্রই তাদেরকে এবং তাদের সম্প্রদায়কে নাস্তনাবুদ করে দিয়েছি। (সুরা নামল ২৭:৪৫-৫১)

হযরত ছালেহ আলাইহিস সালাম নিকট তার কওম দাবি করল যদি তুমি সত্যিকারের নবী হও তবে আমাদেরকে নিকটবর্তী ‘কাতেবা’ পাহাড়ের ভিতর থেকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী সবল ও স্বাস্থ্যবতী উষ্ট্রী বের করে এনে দেখান। এ দাবী শুনে হযরত ছালেহ (আঃ) তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলেন যে, যদি তোমাদের দাবী পুরণ করা হয়, তবে তোমরা আমার নবুাতের প্রতি ও আমার দাওয়াতের প্রতি ঈমান আনবে।  তারা ইমান আনার কথা স্বীকার করল। ছালেহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করলেন।  আল্লাহ পাক তার দো‘আ কবুল করলেন এবং বললেন,

 إِنَّا مُرْسِلُو النَّاقَةِ فِتْنَةً لَّهُمْ فَارْتَقِبْهُمْ وَاصْطَبِرْ 

অর্থঃ ‘আমরা তাদের পরীক্ষার জন্য একটি উষ্ট্রী প্রেরণ করব। তুমি তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখ এবং ধৈর্য ধারণ কর’ (ক্বামার ৫৪/২৭)।

কিছুক্ষণের মধ্যেই পাহাড়ের গায়ে কম্পন দেখা দিল এবং একটি বিরাট প্রস্তর খন্ড বিস্ফোরিত হয়ে তার ভিতর থেকে কওমের নেতাদের দাবীর অনুরূপ একটি গর্ভবতী ও লাবণ্যবতী তরতাযা উষ্ট্রী বেরিয়ে এল। এটা ছিল হযরত ছালেহ আলাইহিস সালাম এর একটি বিস্ময়কর মু‘জেযা। কিন্তু মহান আল্লাহ শর্ত দিলেন এই উটের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

 কুরআনের ভাষায়,

وَيَا قَوْمِ هَـذِهِ نَاقَةُ اللّهِ لَكُمْ آيَةً فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللّهِ وَلاَ تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ قَرِيبٌ

অর্থঃ আর হে আমার জাতি! আল্লাহর এ উষ্ট্রীটি তোমাদের জন্য নিদর্শন, অতএব তাকে আল্লাহর যমীনে বিচরণ করে খেতে দাও, এবং তাকে মন্দভাবে স্পর্শও করবে না। নতুবা অতি সত্বর তোমাদেরকে আযাব পাকড়াও করবে। [সুরা হুদ ১১:৬৪ ]

কিন্তু তার কওম মহান আল্লাহ প্রদত্ত শর্ত ভঙ্গ করলেন এবং আল্লাহর গজবে আক্রান্ত হলেন, কুরআনের ভাষায়, মহান আল্লাহ বলেন,

*فَعَقَرُواْ النَّاقَةَ وَعَتَوْاْ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ وَقَالُواْ يَا صَالِحُ ائْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِن كُنتَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ*

অর্থঃ অতঃপর তারা উষ্ট্রীকে হত্যা করল এবং স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তারা বললঃ হে ছালেহ, নিয়ে এস যদ্দ্বারা আমাদেরকে ভয় দেখাতে, যদি তুমি রসূল হয়ে থাক। অতঃপর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে সকাল বেলায় নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। [ সুরা আরাফ ৭:৭৭-৭৮

মন্তব্যঃ আল্লাহ নবীকে হ্ত্যার ষড়যন্ত্র এবং আল্লাহ প্রদত্ত মুজিজাকে সরাসরি দেখার পরও কিছু লোক তাকে অস্বীকার করে। এ হেন কঠিন মূহূর্তে তিনি সবল ধারন করে তার রেসালতের দায়িত্ব সমাধা করে গেছেন।

 

ইব্রাহীম আলাইহিস সালামঃ

ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম কওমের নেতারাই তার তাওহীদের দাওয়াতের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে আগুনে পোড়াতে চাইল। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

قَالُوا حَرِّقُوهُ وَانصُرُوا آلِهَتَكُمْ إِن كُنتُمْ فَاعِلِينَ

অর্থঃ তারা বললঃ একে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও। [ সুরা আম্বিয়া ২১:৬৮ ]

কিন্তু মহান আল্লাহ ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম কে সাহায্য করলেন তিনি আগুনকে লক্ষ করে বললেন,

قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَى إِبْرَاهِيمَ

অর্থঃ আমি বললামঃ হে অগ্নি, তুমি ইব্রাহীমের উপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। [ সুরা আম্বিয়া ২১:৬৯ ]

ইব্রাহীম (আঃ) সত্তরোর্ধ্ব বয়সে অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হন। এই দীর্ঘ দিন দাওয়াত দেওয়ার পরেও নিজের স্ত্রী সারাহ ও ভাতিজা লূত ব্যতীত কেউ প্রকাশ্যে ঈমান আনেনি। এর পর তিনি দ্বীনের জন্য হিজরত করলেন। ত করলেন।(৩৭:৯৯)।

এর পরও মহান আল্লাহ তার প্রিয় নবী ইব্রাহীম (আঃ) কে পাঁচ পাঁচটি অগ্নীসম পরীক্ষা করলেন। তিনি আল্লাহর রহমতে প্রতিটি পরীক্ষায় পাশ করলেন।

১।  দুর্ভিক্ষে পতিত হয়ে মিসর গমনঃ তিনি দুর্ভিক্ষে কারনে মিশর  গমন করেছিলেন যা ছির তার জীবনের একটা কঠির ও প্রথম পরীক্ষা।

২। সারাকে অপহরণঃ মিসরে গিয়ে সেখানকার লম্পট সম্রাট ফেরাঊনের কুদৃষ্টিতে পড়ে স্ত্রী সারাকে অপহরণের মর্মান্তিক পরীক্ষা।

৩। হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈল মক্কায় নির্বাসনঃ  আল্লাহর পক্ষ থেকে শিশু পুত্র ইসমাঈল ও তার মাকে মক্কায় নির্বাসনে রেখে আসার নির্দেশ পান।  

৪। খাৎনা করণঃ ইবরাহীমের প্রতি আদেশ হ’ল খাৎনা করার জন্য। এসময় তাঁর বয়স ছিল অন্যূন ৮০ বছর। হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে দেরী না করে নিজেই নিজের খাৎনার কাজ সম্পন্ন করলেন। (বুখারী, আবু হুরায়রা হ’তে হা/৩৩৫৬, ৬২৯৭)। 

৫। পুত্র কুরবানীঃ একমাত্র শিশু পুত্র ইসমাঈলকে মক্কায় নির্বাসনের পর তিনি মাঝে-মধ্যে সেখানে যেতেন ও দেখা-শুনা করতেন। এবং ইসমাঈল ১৩/১৪ বছর বয়সে উপনীত হ’লেন এবং পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার উপযুক্ত হ’লেন।  আর ইসমাঈলের প্রতি তার মহব্বত পাত্র হল তখন হুকুম হল তোমার প্রিয় বস্তু (ইসমাঈল) কে আল্লাহর জন্য কুরবানী দাও।

 

হযরত লূত আলাইহিস সালামঃ

হযরত লূত আলাইহিস সালাম এর কওম তিনটি পাপাচারে লিপ্ত ছিল। যেমন আল্লাহ বলেন,

 ** أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُونَ السَّبِيلَ وَتَأْتُونَ فِي نَادِيكُمُ الْمُنكَرَ فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلَّا أَن قَالُوا ائْتِنَا بِعَذَابِ اللَّهِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ*

অর্থঃ তোমরা কি পুংমৈথুনে লিপ্ত আছ, রাহাজানি করছ এবং নিজেদের মজলিসে গর্হিত কর্ম করছ? জওয়াবে তাঁর সম্প্রদায় কেবল একথা বলল, আমাদের উপর আল্লাহর আযাব আন যদি তুমি সত্যবাদী হও। [ সুরা আনকাবুত ২৯:২৯ ]

তারা আরও হুমকি দিল, মহান আল্লাহ বলেন,

** قَالُوا لَئِن لَّمْ تَنتَهِ يَا لُوطُ لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمُخْرَجِينَ*

অর্থঃ তারা বলল, হে লূত, তুমি যদি বিরত না হও, তবে অবশ্যই তোমাকে বহিস্কৃত করা হবে। [ সুরা শু’য়ারা ২৬:১৬৭]

মহান আল্লাহ আরও বলেন, স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ!তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়।উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। [ সুরা নাম’ল ২৭:৫৪-৫৬]

আজাব দানকারি  ফিরিস্তাগণ যখন ইব্রাহীম (আঃ)-এর নিকট থেকে বিদায় নিয়ে সাদূম নগরীতে ‘লূত (আঃ)-এর গৃহে উপস্থিত হ’লেন’ (হিজর ১৫/৬১)। এ সময় তাঁরা অনিন্দ্য সুন্দর নওজোয়ান রূপে আবির্ভূত হন।  তারা যখন জানতে পারল যে, লূত-এর বাড়ীতে অতীব সুদর্শন কয়েকজন নওজোয়ান এসেছে, ‘তখন তারা খুশীতে  আত্মহারা হয়ে সেদিকে ছুটে এল’ (হূদ ১১/৭৮)। এ দৃশ্য দেখে লূত (আঃ) তাদেরকে অনুরোধ করে বললেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। অতিথিদের ব্যাপারে তোমরা আমাকে লজ্জিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি একজনও ভাল মানুষ নেই’? (হূদ ১১/৭৮)। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনলো না। তারা দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢোকার উপক্রম করল। লূত (আঃ) বললেন, হায়!

‘আজকে আমার জন্য বড়ই সংকটময় দিন’ (হূদ ১১/৭৭)। তিনি বললেন,’হায়! যদি তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন শক্তি থাকত, অথবা আমি কোন সুদৃঢ় আশ্রয় পেতাম’ (হূদ ১১/৮০)। এবার ফেরেশতাগণ আত্মপরিচয় দিলেন এবং লূতকে অভয় দিয়ে বললেন, হে লূত! আমরা আপনার প্রভুর প্রেরিত ফেরেশতা। ওরা কখনোই আপনার নিকটে পৌঁছতে পারবে না’ (হূদ ১১/৮১)।

মন্তব্যঃ হযরত লূত আলাইহিস সালাম তার কওম দ্বারা অত্যাচারিত ছিল। তার সামনে অপকর্ম করলেও বাধা দানের শক্তি তার ছিলনা। এভার তিনি সবর করে করে তার কওম কে আল্লাহ দিকে আহবান করে যাচ্ছিলেন।

 

৫। হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

 فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ ٱلسَّعۡىَ قَالَ يَـٰبُنَىَّ إِنِّىٓ أَرَىٰ فِى ٱلۡمَنَامِ أَنِّىٓ أَذۡبَحُكَ فَٱنظُرۡ مَاذَا تَرَىٰ‌ۚ قَالَ يَـٰٓأَبَتِ ٱفۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُ‌ۖ سَتَجِدُنِىٓ إِن شَآءَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلصَّـٰبِرِينَ (١٠٢) فَلَمَّآ أَسۡلَمَا وَتَلَّهُ ۥ لِلۡجَبِينِ (١٠٣) وَنَـٰدَيۡنَـٰهُ أَن يَـٰٓإِبۡرَٲهِيمُ (١٠٤) قَدۡ صَدَّقۡتَ ٱلرُّءۡيَآ‌ۚ إِنَّا كَذَٲلِكَ نَجۡزِى ٱلۡمُحۡسِنِينَ (١٠٥) إِنَّ هَـٰذَا لَهُوَ ٱلۡبَلَـٰٓؤُاْ ٱلۡمُبِينُ (١٠٦) وَفَدَيۡنَـٰهُ بِذِبۡحٍ عَظِيمٍ۬ (١٠٧) وَتَرَكۡنَا عَلَيۡهِ فِى ٱلۡأَخِرِينَ (١٠٨) سَلَـٰمٌ عَلَىٰٓ إِبۡرَٲهِيمَ (١٠٩) كَذَٲلِكَ نَجۡزِى ٱلۡمُحۡسِنِينَ (١١٠) 

অর্থঃ অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন।যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল।তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম,তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু।আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। [ সুরা সাফফাত ৩৭:১০২-১১০ ]

 

মন্তব্যঃ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এর পরীক্ষা ও সবরের কথা বার বার বুঝে বুঝে তেওয়াত করি।  আর এ থেকে শিক্ষা নেই মহান আল্লাহ আদেশের সামনে কিভাবে মাথানত করতে হয়  এবং কিভাবে সবর করতে হয়।

 

হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালামঃ

শৈশবে ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর মায়ের মৃত্যুর কারনে তার পিতা হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালাম তাকে তার অন্য ভাইদের চেয়ে একটু বেশী ভালবাসতেন। একারনে তার সৎ ভাইয়েরা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। এক দিন পিতার অনুমতি নিয়ে তাকে বাহিরে বেড়াতে যায় এবং পূর্বের পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যার জন্য তাকে কুপে ফেলে দেয়। পিতার কাছে হাযির হয়ে ইউসুফকে বাঘে নিয়ে গেছে বলে কৈফিয়ত পেশ করল।  প্রমাণ স্বরূপ তারা ইউসুফের রক্ত মাখা জামা পেশ করল।  এ সম্পর্কে কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

 

তারা রাতের বেলায় কাঁদতে কাঁদতে পিতার কাছে এল। তারা বললঃ পিতাঃ আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করতে গিয়েছিলাম এবং ইউসুফকে আসবাব-পত্রে র কাছে রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর তাকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে। আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী।এবং তারা তার জামায় কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে আনল। বললেনঃ এটা কখনই নয়।বরং তোমাদের মন তোমাদেরকে একটা কথা সাজিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এখন ছবর করাই শ্রেয়। তোমরা যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্য স্থল। [ সুরা ইউসুফ ১২:১৬-১৮ ]

মন্তব্যঃ এখান মহান আল্লাহ তার একজন নবীর সবর পরীক্ষা নিচ্ছেন। বিপদে কি করে মহান আল্লাহ অনুগত থাকতে হয় এ ঘটনা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

 ৭। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম

সবর অর্জনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর বুকে  এক অন্যান্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। কুরআনে বর্ণিত তার কাহিনীতে রয়েছে কিভাবে প্রতিকুল পরিবেশে দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা যায়। কুরআনে একাধারে শুধু তার কাহিনী বর্ণনা হয়েছে। তার কাহিনী আমাদের সবর, আল্লাহর উপর ভরাসা ও তাঁর নিকটে আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেয়। ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর জীবনের তিনটি ঘটনা ছিল তার সবরের পরীক্ষা।

১। শৈশবে ভাইদের হত্যা চেষ্টা।

২। যৌবনে জুলেখার সলনা।।

৩। জেলে অবস্থান।

শৈশবে ভাইদের হত্যা চেষ্টাঃ ইউসুফ আলাইহিস সালাম সাথো তার সৎভাইয়েরা খুবই হিংসাত্বক মনভাব প্রশমন করত। তাদের এহেন মনভাবের কারন তার পিতা তাকে বেশী স্নেহ করতেন কারন তার জম্মের পর মাতা মারা যান। তিনি ছিলেন অতুলনীয় সুন্দর এবং অনন্য সাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর অধিকারি তাই সকলে তাকে পছন্দ করত।  সবচেয়ে বড় কারন তার স্বপ্ন। কুরআনের ভাষায়,

 إِذۡ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَـٰٓأَبَتِ إِنِّى رَأَيۡتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوۡكَبً۬ا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ رَأَيۡتُہُمۡ لِى سَـٰجِدِينَ (٤) قَالَ يَـٰبُنَىَّ لَا تَقۡصُصۡ رُءۡيَاكَ عَلَىٰٓ إِخۡوَتِكَ فَيَكِيدُواْ لَكَ كَيۡدًا‌ۖ إِنَّ ٱلشَّيۡطَـٰنَ لِلۡإِنسَـٰنِ عَدُوٌّ۬ مُّبِينٌ۬ (٥) 

যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি।তিনি বললেনঃ বৎস, তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা করো না। তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য। [ সুরা ইউসুফ ১২:৪-৫

যাহোক যে কোনভাবে তার ভাইয়েরা তার স্বপ্নবৃত্তান্তের কথা যেনে যায়। এবং চুড়ান্তভাবে তাকে মেরে ফেলার কৌশল করে ফেলে এবং পরিকল্পনা মত পিতার অনুমতি স্বাপেক্ষে খেলতে নিয়ে কুপে নিক্ষেপ করে।  মহান আল্লাহ বলেন,

 قَالَ إِنِّى لَيَحۡزُنُنِىٓ أَن تَذۡهَبُواْ بِهِۦ وَأَخَافُ أَن يَأۡڪُلَهُ ٱلذِّئۡبُ وَأَنتُمۡ عَنۡهُ غَـٰفِلُونَ (١٣) قَالُواْ لَٮِٕنۡ أَڪَلَهُ ٱلذِّئۡبُ وَنَحۡنُ عُصۡبَةٌ إِنَّآ إِذً۬ا لَّخَـٰسِرُونَ (١٤) فَلَمَّا ذَهَبُواْ بِهِۦ وَأَجۡمَعُوٓاْ أَن يَجۡعَلُوهُ فِى غَيَـٰبَتِ ٱلۡجُبِّ‌ۚ وَأَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡهِ لَتُنَبِّئَنَّهُم بِأَمۡرِهِمۡ هَـٰذَا وَهُمۡ لَا يَشۡعُرُونَ (١٥) وَجَآءُوٓ أَبَاهُمۡ عِشَآءً۬ يَبۡكُونَ (١٦) قَالُواْ يَـٰٓأَبَانَآ إِنَّا ذَهَبۡنَا نَسۡتَبِقُ وَتَرَڪۡنَا يُوسُفَ عِندَ مَتَـٰعِنَا فَأَڪَلَهُ ٱلذِّئۡبُ‌ۖ وَمَآ أَنتَ بِمُؤۡمِنٍ۬ لَّنَا وَلَوۡ ڪُنَّا صَـٰدِقِينَ (١٧)وَجَآءُو عَلَىٰ قَمِيصِهِۦ بِدَمٍ۬ كَذِبٍ۬‌ۚ قَالَ بَلۡ سَوَّلَتۡ لَكُمۡ أَنفُسُكُمۡ أَمۡرً۬ا‌ۖ فَصَبۡرٌ۬ جَمِيلٌ۬‌ۖ وَٱللَّهُ ٱلۡمُسۡتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ (١٨)

তিনি বললেনঃ আমার দুশ্চিন্তা হয় যে, তোমরা তাকে নিয়ে যাবে এবং আমি আশঙ্কা করি যে, ব্যাঘ্র তাঁকে খেয়ে ফেলবে এবং তোমরা তার দিক থেকে গাফেল থাকবে। তারা বললঃ আমরা একটি ভারী দল থাকা সত্ত্বেও যদি ব্যাঘ্র তাকে খেয়ে ফেলে, তবে আমরা সবই হারালাম।অতঃপর তারা যখন তাকে নিয়ে চলল এবং অন্ধকূপে নিক্ষেপ করতে একমত হল এবং আমি তাকে ইঙ্গিত করলাম যে, তুমি তাদেরকে তাদের এ কাজের কথা বলবে এমতাবস্থায় যে, তারা তোমাকে চিনবে না। তারা রাতের বেলায় কাঁদতে কাঁদতে পিতার কাছে এল।তারা বললঃ পিতাঃ আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করতে গিয়েছিলাম এবং ইউসুফকে আসবাব-পত্রে র কাছে রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর তাকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে। আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী।এবং তারা তার জামায় কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে আনল। বললেনঃ এটা কখনই নয়; বরং তোমাদের মন তোমাদেরকে একটা কথা সাজিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এখন ছবর করাই শ্রেয়। তোমরা যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্য স্থল। [ সুরা ইউসুফ ১২:১৩-১৮ ]

২। যৌবনে জুলেখার ছলনাঃ যৌবনে পদার্পণকারী অনিন্দ্য সুন্দর ইউসুফের প্রতি মন্ত্রীর নিঃসন্তান স্ত্রী যুলায়খার আসক্তি জন্মে। ফলে শুরু হয় ইউসুফের জীবনে আরেক পরীক্ষা। একদিন যুলায়খা ইউসুফকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে কুপ্রস্তাব দেয়। মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ ۥۤ ءَاتَيۡنَـٰهُ حُكۡمً۬ا وَعِلۡمً۬ا‌ۚ وَكَذَٲلِكَ نَجۡزِى ٱلۡمُحۡسِنِينَ (٢٢) وَرَٲوَدَتۡهُ ٱلَّتِى هُوَ فِى بَيۡتِهَا عَن نَّفۡسِهِۦ وَغَلَّقَتِ ٱلۡأَبۡوَٲبَ وَقَالَتۡ هَيۡتَ لَكَ‌ۚ قَالَ مَعَاذَ ٱللَّهِ‌ۖ إِنَّهُ ۥ رَبِّىٓ أَحۡسَنَ مَثۡوَاىَ‌ۖ إِنَّهُ ۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلظَّـٰلِمُونَ (٢٣) وَلَقَدۡ هَمَّتۡ بِهِۦ‌ۖ وَهَمَّ بِہَا لَوۡلَآ أَن رَّءَا بُرۡهَـٰنَ رَبِّهِۦ‌ۚ ڪَذَٲلِكَ لِنَصۡرِفَ عَنۡهُ ٱلسُّوٓءَ وَٱلۡفَحۡشَآءَ‌ۚ إِنَّهُ ۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُخۡلَصِينَ (٢٤) وَٱسۡتَبَقَا ٱلۡبَابَ وَقَدَّتۡ قَمِيصَهُ ۥ مِن دُبُرٍ۬ وَأَلۡفَيَا سَيِّدَهَا لَدَا ٱلۡبَابِ‌ۚ قَالَتۡ مَا جَزَآءُ مَنۡ أَرَادَ بِأَهۡلِكَ سُوٓءًا إِلَّآ أَن يُسۡجَنَ أَوۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ۬ (٢٥) قَالَ هِىَ رَٲوَدَتۡنِى عَن نَّفۡسِى‌ۚ وَشَهِدَ شَاهِدٌ۬ مِّنۡ أَهۡلِهَآ إِن كَانَ قَمِيصُهُ ۥ قُدَّ مِن قُبُلٍ۬ فَصَدَقَتۡ وَهُوَ مِنَ ٱلۡكَـٰذِبِينَ (٢٦) وَإِن كَانَ قَمِيصُهُ ۥ قُدَّ مِن دُبُرٍ۬ فَكَذَبَتۡ وَهُوَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ (٢٧) فَلَمَّا رَءَا قَمِيصَهُ ۥ قُدَّ مِن دُبُرٍ۬ قَالَ إِنَّهُ ۥ مِن ڪَيۡدِكُنَّ‌ۖ إِنَّ كَيۡدَكُنَّ عَظِيمٌ۬ (٢٨) يُوسُفُ أَعۡرِضۡ عَنۡ هَـٰذَا‌ۚ وَٱسۡتَغۡفِرِى لِذَنۢبِكِ‌ۖ إِنَّكِ ڪُنتِ مِنَ ٱلۡخَاطِـِٔينَ (٢٩) ۞

যখন সে পূর্ণ যৌবনে পৌছে গেল, তখন তাকে প্রজ্ঞা ও ব্যুৎপত্তি দান করলাম।এমননিভাবে আমি সৎকর্ম পরায়ণ- দেরকে প্রতিদান দেই। আর সে যে মহিলার ঘরে ছিল, ঐ মহিলা তাকে ফুসলাতে লাগল এবং দরজাসমূহ বন্ধ করে দিল। সে মহিলা বললঃ শুন! তোমাকে বলছি, এদিকে আস, সে বললঃ আল্লাহ রক্ষা করুন; তোমার স্বামী আমার মালিক। তিনি আমাকে সযত্নে থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয় সীমা লংঘনকারীগণ সফল হয় না। নিশ্চয় মহিলা তার বিষয়ে চিন্তা করেছিল এবং সেও মহিলার বিষয়ে চিন্তা করত। যদি না সে স্বীয় পালনকর্তার মহিমা অবলোকন করত। এমনিভাবে হয়েছে, যাতে আমি তার কাছ থেকে মন্দ বিষয় ও নিলজ্জ বিষয় সরিয়ে দেই। নিশ্চয় সে আমার মনোনীত বান্দাদের একজন। তারা উভয়ে ছুটে দরজার দিকে গেল এবং মহিলা ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে ফেলল। উভয়ে মহিলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল। মহিলা বললঃ যে ব্যক্তি তোমার পরিজনের সাথে কুকর্মের ইচ্ছা করে, তাকে কারাগারে পাঠানো অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া ছাড়া তার আর কি শাস্তি হতে পারে? ইউসুফ (আঃ) বললেন, সেই আমাকে আত্মসংবরণ না করতে ফুসলিয়েছে। মহিলার পরিবারে জনৈক সাক্ষী দিল যে, যদি তার জামা সামনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা সত্যবাদিনী এবং সে মিথ্যাবাদি। এবং যদি তার জামা পেছনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা মিথ্যাবাদিনী এবং সে সত্যবাদী।অতঃপর গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পেছন দিক থেকে ছিন্ন, তখন সে বলল, নিশ্চয় এটা তোমাদের ছলনা। নিঃসন্দেহে তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্নক। ইউসুফ এ প্রসঙ্গ ছাড়! আর হে নারী, এ পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর নিঃসন্দেহে তুমি-ই পাপাচারিনী। [ সুরা ইউসুফ ১২:২২-২৯ ]

এ ঘটনা থেকে মুমিনদের শিক্ষাদেয় সফসের খায়েষাত কে কিভার প্রত্যাখান করতে হয়। এটা ছিল হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর জন্য এক চরম সবরের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় তিনি দুয়ার মাধ্যমে সাহায্য চেয়ে ছিলন আর আল্লাহ রহমতে তিনি শতভাগ পাশ করে ছিলেন। কুরআনের ভাষায়,

قَالَ رَبِّ ٱلسِّجۡنُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِمَّا يَدۡعُونَنِىٓ إِلَيۡهِ‌ۖ وَإِلَّا تَصۡرِفۡ عَنِّى كَيۡدَهُنَّ أَصۡبُ إِلَيۡہِنَّ وَأَكُن مِّنَ ٱلۡجَـٰهِلِينَ (٣٣) فَٱسۡتَجَابَ لَهُ ۥ رَبُّهُ ۥ فَصَرَفَ عَنۡهُ كَيۡدَهُنَّ‌ۚ إِنَّهُ ۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ (٣٤)

অর্থঃ ইউসুফ বললঃ হে পালনকর্তা তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহবান করে, তার চাইতে আমি কারাগারই পছন্দ করি। যদি আপনি তাদের চক্রান্ত আমার উপর থেকে প্রতিহত না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব। অতঃপর তার পালনকর্তা তার দোয়া কবুল করে নিলেন। অতঃপর তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করলেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। [ সুরা ইউসুফ ১২:৩৩-৩৪ ]

 

৩। জেলে অবস্থানঃ

যা হোক জুলেখার মিথ্যা ছলনায় ইউসুফ আলাইহিস সালাম জেল গেলেন। বাদশার একটি স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলার মাধ্যমে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। কুরআনের ভাষা,

 وَقَالَ ٱلۡمَلِكُ إِنِّىٓ أَرَىٰ سَبۡعَ بَقَرَٲتٍ۬ سِمَانٍ۬ يَأۡڪُلُهُنَّ سَبۡعٌ عِجَافٌ۬ وَسَبۡعَ سُنۢبُلَـٰتٍ خُضۡرٍ۬ وَأُخَرَ يَابِسَـٰتٍ۬‌ۖ يَـٰٓأَيُّہَا ٱلۡمَلَأُ أَفۡتُونِى فِى رُءۡيَـٰىَ إِن كُنتُمۡ لِلرُّءۡيَا تَعۡبُرُونَ (٤٣) قَالُوٓاْ أَضۡغَـٰثُ أَحۡلَـٰمٍ۬‌ۖ وَمَا نَحۡنُ بِتَأۡوِيلِ ٱلۡأَحۡلَـٰمِ بِعَـٰلِمِينَ (٤٤) وَقَالَ ٱلَّذِى نَجَا مِنۡہُمَا وَٱدَّكَرَ بَعۡدَ أُمَّةٍ أَنَا۟ أُنَبِّئُڪُم بِتَأۡوِيلِهِۦ فَأَرۡسِلُونِ (٤٥) يُوسُفُ أَيُّہَا ٱلصِّدِّيقُ أَفۡتِنَا فِى سَبۡعِ بَقَرَٲتٍ۬ سِمَانٍ۬ يَأۡڪُلُهُنَّ سَبۡعٌ عِجَافٌ۬ وَسَبۡعِ سُنۢبُلَـٰتٍ خُضۡرٍ۬ وَأُخَرَ يَابِسَـٰتٍ۬ لَّعَلِّىٓ أَرۡجِعُ إِلَى ٱلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَعۡلَمُونَ (٤٦) قَالَ تَزۡرَعُونَ سَبۡعَ سِنِينَ دَأَبً۬ا فَمَا حَصَدتُّمۡ فَذَرُوهُ فِى سُنۢبُلِهِۦۤ إِلَّا قَلِيلاً۬ مِّمَّا تَأۡكُلُونَ (٤٧) ثُمَّ يَأۡتِى مِنۢ بَعۡدِ ذَٲلِكَ سَبۡعٌ۬ شِدَادٌ۬ يَأۡكُلۡنَ مَا قَدَّمۡتُمۡ لَهُنَّ إِلَّا قَلِيلاً۬ مِّمَّا تُحۡصِنُونَ (٤٨) ثُمَّ يَأۡتِى مِنۢ بَعۡدِ ذَٲلِكَ عَامٌ۬ فِيهِ يُغَاثُ ٱلنَّاسُ وَفِيهِ يَعۡصِرُونَ (٤٩)

বাদশাহ বললঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম, সাতটি মোটাতাজা গাভী-এদেরকে সাতটি শীর্ণ গাভী খেয়ে যাচ্ছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অন্যগুলো শুষ্ক। হে পরিষদবর্গ! তোমরা আমাকে আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বল, যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যায় পারদর্শী হয়ে থাক। তারা বললঃ এটা কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন। এরূপ স্বপ্নের ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই। দু’জন কারারুদ্ধের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি মুক্তি পেয়েছিল এবং দীর্ঘকাল পর স্মরণ হলে, সে বলল, আমি তোমাদেরকে এর ব্যাখ্যা বলছি। তোমরা আমাকে প্রেরণ কর। সে তথায় পৌঁছে বললঃ হে ইউসুফ !হে সত্যবাদী! সাতটি মোটাতাজা গাভী-তাদেরকে খাচ্ছে সাতটি শীর্ণ গাভী এবং সাতটি সবুজ শীর্ষ ও অন্যগুলো শুষ্ক; আপনি আমাদেরকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে পথনির্দেশ প্রদান করুনঃ যাতে আমি তাদের কাছে ফিরে গিয়ে তাদের অবগত করাতে পারি। বললঃ তোমরা সাত বছর উত্তম রূপে চাষাবাদ করবে। অতঃপর যা কাটবে, তার মধ্যে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা খাবে তা ছাড়া অবশিষ্ট শস্য শীষ সমেত রেখে দেবে। এবং এরপরে আসবে দূর্ভিক্ষের সাত বছর; তোমরা এ দিনের জন্যে যা রেখেছিলে, তা খেয়ে যাবে, কিন্তু অল্প পরিমাণ ব্যতীত, যা তোমরা তুলে রাখবে। এর পরেই আসবে একবছর-এতে মানুষের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং এতে তারা রস নিঙড়াবে। [ সুরা ইউসুফ ১২:৪৩-৪৯ ]

অন্যূন সাত বছর জেল খাটার পর বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাখ্যা দানের পুরস্কার স্বরূপ তাঁর মুক্তি হয়। সর্বশেষ তার সবরের কারনে মহান আল্লাহ তাকে মুক্তি দের এবং মিশরের বাদশাহর অর্থ ও রাজস্ব মন্ত্রী নিযুক্ত হন।

সম্পূর্ণ ঘটনাটি আমাদের সত্যবাদীতা, ন্যায় পরায়নাতা, আমানতদারী, সবর ইত্যাদি শিক্ষাদেয়। এ সকল ঘটনা শুনে শুনে ইউসুফ আলাইহিস সালাম মত আল্লাহভীরু পরহেজগার মুমিন হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমার বিষয় সবর অর্জন করাও সহজ হবে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

 

Leave a comment