চুল ছোট বা সম্পুর্ণ মাথা মুন্ডন সম্পর্কিত বিধান

চুল ছোট বা সম্পুর্ণ মাথা মুন্ডন সম্পর্কিত বিধান

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

চুল ছোট করার চেয়ে সম্পুর্ণ মাথা মুন্ডন করা উত্তমঃ

ইয়াহইয়া ইবনু হুসায়ন (রহঃ) থেকে তার দাদীর সুত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদী) বিদায় হাজ্জকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাথা মুন্ডনকারীদের জন্য তিনবার এবং চুল ছোটকারীদের জন্য একবার দু’আ করতে শুনেছেন। ওয়াকীর “বিদায় হাজ্জ” কথাটুকু উল্লেখ করেননি। (সহিহ মুসলীম ৩০২০ ইফাঃ)

ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জকালে নিজের মাথার চুল মুন্ডন করেছেন। (সহিহ মুসলীম ৩০২১ ইফাঃ, সুনানে আবু দাউদ ১৯৭৭)

যেহেতু সহিহ হাদিস প্রমান করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জকালে নিজের মাথার চুল মুন্ডন করেছেন। তাই চুল ছোট করার চেয়ে সম্পুর্ণ মাথা মুন্ডন করা উত্তম। অনেক হাজি উত্তম আমলটি না জানার করানে চুল ছোট করে থাকে, যদিও ইহা সুন্নাহ সম্মত আমল।

আরেকটি ভুল হলো কুরবানী করার আগেই মাথার চুল মুন্ডন করা। মিনায় কঙ্কর মারার পর ঐ দিন (১০ জিলহজ্জ) হাদি কুরবানী করার পরই মাথা চুল মুন্ডন যাবে যদি এই দিন হাদি কুরবানী না হয় তবে চুল মুন্ডন যাবে না। সে ক্ষেত্রে পরের দুই দিনের যে কোন দিন হাদি কুরবানী করার পরই মাথা চুল মুন্ডন যাবে। কাজেই হাদি কুরবানী না অন্যের দেখা দেখি ১০ ই জিলহজ্জ মাথা চুল মুন্ডন একটি ভুল আমল। কারন মাথা মুন্ডনের অর্থই হল ইহরাম ত্যাগ করে নিজেকে হালাল করে নেয়া। হাদি কুরবানী করার নিজেকে হালাল করে নেয়া যায় না।

মহিলাদের চুলের সীমাঃ

হজ্জ বা উমরার সময় মাথা মুণ্ডন কিংবা চুল ছোট করা একটি ওয়াজিব কাজ। পুষের জন্য মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট দুটিই জায়েয তবে মাথা মুন্ডান উত্তম কারন তার মাথা মুন্ডন করেছিলেন। নারীদের জন্য মাথা মুণ্ডন করার অনুমতি নেই। তাদের জন্য অনুমোদিত হল চুল ছোট করা। তবে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী মাথার সবগুলো চুল ছোট করা আবশ্যক। এটি মালেকি ও হাম্বলি মাযহাবের অভিমত। যদি কারো মাথার চুলগুলো বেণী করা থাকে তাহলে সবগুলো বেণীর মাথা থেকে কাটবে। যদি বেণী করা না থাকে তাহলে সবগুলো চুল একত্রিত করে সবগুলো চুল থেকে কাটবে। মুস্তাহাব হচ্ছে আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ কাটা। এর চেয়ে কমও কাটতে পারেন। যেহেতু চুল কাটার পরিমাণ নির্ধারণমূলক কোন শরয়ি দলিলঃ বর্ণিত হয়নি।

আল-বাযি (রহঃ) ‘আল-মুনতাকা’ গ্রন্থে (৩/২৯) বলেন: পক্ষান্তরে, কোন নারী যখন ইহরাম করার মনস্থ করবেন তখন তিনি তার চুল বেণী করে নিবেন যেন তিনি হালাল হওয়ার জন্য চুল কাটতে পারেন। কী পরিমাণ চুল কাটবেন? ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ। ইবনে হাবিব ইমাম মালেক থেকে বর্ণনা করেন যে, আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ কিংবা এর চেয়ে একটু বেশি কিংবা এর থেকে একটু কম। ইমাম মালেক বলেন: আমাদের মাযহাবে এর সুনির্দিষ্ট কোন পরিমাণ নেই। যতটুকু কাটে সেটা জায়েয হবে। তবে, মাথার সবগুলো চুল কাটতে; সেটা লম্বা চুল হোক কিংবা খাটো চুল হোক।

ইবন জুরায়জ (রহঃ) বলেছেন, আমি সাফিয়্যা বিনত শায়বা ইবন উসমান হতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমাকে উম্মে উসমান খবর দিয়েছেন যে, ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন স্ত্রীলোকদের জন্য মাথা মুন্ডনের প্রয়োজন নেই, বরং (এক আঙ্গুল পরিমাণ চুল) কর্তন করবে। (সুনানে আবু দাউদ ১৯৮০)

ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, স্ত্রীলোকদের জন্য মাথা মুন্ডনের দরকার নেই, বরং তারা (এক আঙ্গুল পরিমান চুল) কর্তন করবে। (সুনানে আবু দাউদ ১৯৮১)

খাল্লাস (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। কিন্তু এই সূত্রে আলী (রাঃ) এর উল্লেখ নাই। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদিসটিকে ইয্তিরাব রয়েছে। হাম্মাদ ইবনু সালাম- কাতাদা -আয়িশা (রাঃ) এ হাদিসটি বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের মাথা মুন্ডনের অনুমতি দেন না। তবে তাদের (ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য) কিছূ চুল ছাটার অভিমত পোষণ করেছেন।  (তিরমিজী হাদিস নম্বর ৯১৭, হাদিসে মান  নির্নিত নয়)

ইমাম আহমাদ বলতেনঃ “চুলের প্রত্যেক বেণী থেকে এক কর পরিমাণ কর্তন করবে।” এটি ইবনে উমর (রাঃ), শাফেয়ি, ইসহাক, আবু সাওর প্রমুখের অভিমত। আবু দাউদ বলেন, “আমি ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। নারীরা কি সম্পূর্ণ মাথার চুল ছোট করবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। মাথার সবগুলো চুলকে সামনের দিকে এনে চুলের আগা থেকে আঙ্গুলের কর পরিমাণ কর্তন করবে। (ফতোয়াতে উসায়মিন রাহিঃ)

কাজেই নারীদের মাথার যে কোন স্থান থেকে সামান্য চুল ছোট করলেই হবে না। সম্পুর্ণ মাতা থেকে সমান করে আঙ্গুলের এক করের কিছু কম বেশী চুল ছোট করতে হবে।

মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করার ভুল-ত্রুটিঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! মাথা মুন্ডুনকারীদের ক্ষমা করুন। সাহাবীগন বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! মাথা মুন্ডুনকারীদেরকে ক্ষমা করুন। সাহাবীগন বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেন, এরপর বললেনঃ যারা চুল ছোট করেছে তাদেরকেও। (সহিহ বুখারী ১৬২০ ইফাঃ)

মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করার উমরা বা হজ্জের একটি ওয়াজিব কাজ। এই কাজ না করলে উমরা বা হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। উমরা বা হজ্জ আদায়ে পর, হালাল হওয়ার পূর্বে সম্পুর্ণ মাথার চুল মুন্ডুন করতে হবে। আর যদি কেউ চুল ছোট করতে চায় তবে তাকে সম্পূর্ণ মাথা পরিব্যাপ্ত করে ছোট করতে হবে। কিছু কিছু লোক মাথার কিয়দাংশ খুর দিয়ে ভালভাবে মুণ্ডন করে; বাকীটুকু রেখে দেয়। এই সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে তারা মনে করে থাকে যে,  যেহেতু তারা উমরা ও হজ্জ একত্র করবে তাই উমরা সময় অর্ধেক মুণ্ডন করব আর হজ্জ করার পর বাকী অর্ধেক মুন্ডন করব। এটি অজ্ঞতা ও গোমরাহি। আবার অনেক আছে যারা অজ্ঞতার কারনে সম্পূর্ণ মাথা পরিব্যাপ্ত না করেই ছোট করে থাকে। মাথার কোন একটি অংশ থেকে কিছু চুলের আগা কেটে বলে থাকে চুল ছোট করছে। তাদের এই আমল কুরআনের এই আয়াতের বাহ্যিক অর্থের বিপরীত। আল্লাহ তাআলা বলেন,

 لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ إِن شَاء اللَّهُ آمِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُؤُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ

অর্থঃ আল্লাহ চাহেন তো তোমরা অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তকমুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। (সুরা ফাতাহ ৪৮:২৭)

অতএব, চুল ছোট করার প্রভাবটা মাথার উপর স্পষ্টভাবে দেখা যেতে হবে। সবাই জানে যে, সামন্য কিছু চুল কাটলে সেটা কোন প্রভাব ফেলে না বিধান সামান্য চুল কাটা এই আয়াতের বাহ্যিক বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই যদি মুণ্ডন করতে চায় তাহলে গোটা মাথার চুল মুণ্ডন করবে। আর যদি চুল ছোট করতে চায় তাহলে সম্পূর্ণ মাথার চুল ছোট করবে।

মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট না করেই হালাল হয়ে যাওয়াঃ

উমরা বা হজ্জের সময় তাওয়ার ও সাঈ আদায়ে পর মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করার ওয়াজিব কাজ। কিন্তু অনেকে এই কাজটি না করেই বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক কাপড় চোপড় পরে। তার পর সুবিধা জনক সময় মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করে থাকে। অথচ সঠিক সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি হলো ইহরামের কাপড় গায়ে থাকা অবস্থায় মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করা। মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করার পরই ইহরামের কাপড় খুলে হালাল হতে হবে। যেমনঃ

জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ হজ্জের ইহরাম বাঁধেন। কিন্তু তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তালহা (রাঃ) ব্যতীত আর কারো সাথে কুরবানীর পশু ছিল না। আর এ সময় আলী (রাঃ) ইয়ামান হতে আগমন করেন এবং তার সাথেও কুরবানীর পশু ছিল। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ ইহরাম বেঁধেছেন আমিও সেরূপ ইহরাম বাঁধলাম।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথীদের নির্দেশ দেন যে, তারা যেন এটাকে উমরায় পরিণত করে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে এবং মস্তক মুন্ডনের (বা চুল ছোট করে কর্তনের) পর হালাল হয়। অবশ্য যাদের সাথে কুরবানীর পশু আছে তারা ব্যতীত। তারা বলেন, আমরা মিনার দিকে এমন অবস্থায় যাই যে আমরা স্ত্রী সহবাস করেছি। এই কথা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, আমি যা পরে অবহিত হয়েছি যদি তা পূর্বে অবগত হতে পারতাম তবে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না। আর আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমি অবশ্যই ইহরাম খুলে ফেলতাম।

এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, চুল ছোট করা ছাড়া হালাল হওয়া যাবে না। কিন্তু অজ্ঞতাবশতঃ মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করার আগে এই মনে করে হালাল হয়ে গেছে যে, এটি জায়েয তাহলে তার অজ্ঞতার কারণে কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু, জানার সাথে সাথে তাকে স্বাভাবিক কাপড়-চোপড় খুলে ইহরামের কাপড় পরতে হবে। কেননা, সে হালাল হয়নি এ কথা জানার পর আর গড়িমসি করা জায়েয হবে না। অতঃপর সে মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করার পর হালাল হবে। (সুনানে আবু দাউদ ১৭৮৯)

আইয়ামুত-তাশরীকে মিনায় রাত্রীজাপন না করাঃ

আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয় কুরবানির পরবর্তী তিন দিনকে। অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয়। তাশরীক শব্দের অর্থ শুকানো। মানুষ এ দিনগুলোতে গোশত শুকাতে দিয়ে থাকে বলে এ দিনগুলোর নাম ‘আইয়ামুত-তাশরীক’ বা ‘গোশত শুকানোর দিন’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। এই দিনগুলো ইবাদত-বন্দেগি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকির ও তার শুকরিয়া আদায়ের দিন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَاذْكُرُواْ اللّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ

অর্থঃ আর স্মরণ কর আল্লাহকে নির্দিষ্ট সংখ্যক কয়েকটি দিনে। অতঃপর যে লোক তাড়াহুড়া করে চলে যাবে শুধু দুদিনের মধ্যে, তার জন্যে কোন পাপ নেই। আর যে লোক থেকে যাবে তাঁর উপর কোন পাপ নেই, অবশ্য যারা ভয় করে। (সুরা বাকারা ২:২০৩)

আইয়ামুততাশরীক হল ১১, ১২ ও ১৩ ই যিলহজ্জ। এই সময় মিনায় অবস্থান করা ওয়াজিব। এটা বাদ গেলে দম দিতে হবে। কিন্তু হানাফি ওলামাগন মিনায় অবস্থান কে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলে থাকেন। উপরের আয়াতের আলোকে অনেকে আলেম মনে করে থাকেন আইয়ামুত-তাশরীকে মিনা থেকে মক্কার দিকে ১২ই বা ১৩ যিলহজ্জ যেদিনেই ফিরে আসা হোক না কেন তাতে কোন ক্ষতি নেই। এই দিনগুলোতে আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকতে হবে। কোন প্রকারে উৎসব অনুষ্ঠান বা মেলায় ঘুরে ফূর্তি সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।

মন্তব্যঃ আইয়ামুত-তাশরীকের প্রথাধ ভুল হল বীনা ওজরে মিনায় রাত্রীজাপন না করে মক্কায় অবস্থান করা।

কুরবানীর ভুল ত্রুটিঃ

হারাম সীমানার বাইরে হাদী জবেহ করা যাবে না। কাজেই মক্কা ও মিনার হামার সীমানা জেনে হাদি জবেহ করা উচিত। এ ক্ষেত্র হজ্জের সময় যে মুয়াল্লিম থাকবে তার সাহায্য নিতে হবে। তা হলে আর ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। হাদি কুরবানির জন্য উপযুক্ত কিনা তা যাচাই না করে জবেহ করা। কারন হাদিসে বর্ণিত চারটি খুত থাকল হাদি কুরবানি হবে না।

হজ্জের সফরের অধিকাংশ মুয়াল্লামি থাকে ব্যবসায়ী। এই সফরে একটু চোখ কান খোলা রাখলেই বুঝতে পারবেন আপনার সাথী মুয়াল্লিম ব্যক্তি কেমন। যদি মনে করে তার উপর আস্থা রাখা যায় তবে নিজে না গিয়ে তার মাধ্যমে হাদি জবেহ করাতে পারেন। আর যদি মনে করেন তিনি অথটা আস্থা ভাজন ব্যক্তি নয় তবে নিজে গিয়ে হাদির জবেহের ব্যবস্থা করবেন। কারন অনেক মুয়াল্লিম অসত হয়, তারা হাদি জবেহ না করেই, জবেহ হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়। দশ জনের টাকা নিয়ে পাঁচটি হাদি জবেহ করই বলে দেয় সবার হাদি জবেহ হয়েছে। পাঁচ শত রিয়েলের চুক্তি করে দুই/তিন শত বিয়েলের হাদি জবেহ করে। তবে হ্যা, সে যদি বলে আমি হাদি কুরবানী বাবত এক/দুই শত রিয়েল নিব আর হাদি বাবদ যা আসে আপনার তবে ঠিক আছে। কিন্তু যদি বলে সচ্ছতার অভাব থাকে তবে মুয়াল্লীম গুনাগার হবে। এই জন্যই বলেছি, মুয়াল্লিম আস্থা ভাজন ব্যক্তি হলে আর চিন্তা করার দরকার নাই। যদি মনে করেন তাও সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্র সৌদি হজ্জ কমিটির অধিনে নির্ধিষ্ট টাকা জনা দিলে, তারা আপনার হাদি যবেহের ব্যবস্থা করবেন। এ ক্ষেত্র একটা ভুল হয়ে থাকে। অনেক হাদি যবেহ হওয়ার আগেই মাথার মুন্ডন করে ফেলে। এই জন্য আপনাকে মেসেস বা অন্য কোন মাধ্যমে আপনাকে জানান হবে যে, আপনার হাদি জবেহ করা হয়েছে। এরপরই আপনি মাথার মুন্ডন করতে পারবেন।

বর্তমানে যারা প্রবাসী হিসাবে হজ্জ করে থাকেন তাদের গোশত পাক করে খাওয়া বা সংরক্ষন করে রাখার কোন ব্যবস্থা নাই তাই তারা হাদির গোসত নিয়ে বিপাকে পরে যায়। মক্কায় বর্তমানে ফকির মিসকিন পাওয়াও খুব কষ্টের ব্যপার। তাই এই অনেক হাদির গোশত ফেলে দেন যা একটি ভুল আমল। তাই যদি কেউ নিজে না খেতে পারে বা ফকির মিসকিনকে দিতে না পারে, সে কেত্রে কয়েক রিয়েল খরচ করে সরকারি কসাই খানায় জবেহ করে, সম্পূর্ণ গোশত তাদের হাওলায় ছেড়ে দিতে পারেন। আশা করি তারা একটি উপযুক্ত ব্যবস্থা করবেন।

অনেক হাজি সাহেব মুজদালিফায় রাত্রি জাপন করে, মিনায় গিয়ে কঙ্কর নিক্ষেপ না করে, নিজেদের তাবুতে যায়। তারা ভাবেন এই সময় ভিড় থাকবে, তাই একটু পরে আসানের সাথে গিয়ে কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। এটা কোন ভুল আমল নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হাদি জবের আগেকটি ভুল আমল হলো, তারা কঙ্কর নিক্ষেপ করার আগেই সুযোগ বুঝে হাদি জবেন করেন। সহিহ সুন্নাহ হলো কঙ্কর নিক্ষেপের পরই হাদি জবেহ করতে হবে।

স্ত্রীদের পক্ষ হতে তাদের আদেশ ছাড়াই স্বামী কর্তৃক গরু কুরবানী করা।

‘আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, যিল-কা’দাহ মাসের পাঁচ দিন বাকী থাকতে আমরা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হজ্জ আদায় করা ব্যতীত আমাদের অন্য কোন ইচ্ছা ছিল না। যখন আমরা মক্কার কাছাকাছি পৌঁছলাম, তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করলেনঃ যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই সে যেন বাইতুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সা’ঈ করে হালাল হয়ে যায়। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, কুরবানীর দিন আমাদের কাছে গরুর গোশ্‌ত আনা হলে আমি বললাম, এ কী? তারা বলল, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হতে কুরবানী করেছেন। ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, উক্ত হাদীসখানা কাসিমের নিকট আলোচনা করলে তিনি বললেন, সঠিকভাবেই তিনি হাদীসটি তোমার কাছে বর্ণনা করেছেন। (সহিহ বুখারি ১৭০৯)

কুরবানীর গোশ্‌ত সঞ্চয় করে রাখা যাবেঃ

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা আমাদের কুরবানীর গোশ্‌ত মিনা’র তিন দিনের বেশি খেতাম না। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের অনুমতি দিলেন এবং বললেনঃ খাও এবং সঞ্চয় করে রাখ। তাই আমরা খেলাম এবং সঞ্চয়ও করলাম। রাবী বলেন, আমি ‘আত্বা (রহঃ)-কে বললাম, জাবির (রাঃ) কি বলেছেন আমরা মদীনায় আসা পর্যন্ত? তিনি বললেন, না। (সহিহ বুখারি ১৭১৯

মাথা মুণ্ডানোর পূর্বে কুরবানী করা।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সে ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল, যে মাথা কামানোর আগে কুরবানী অথবা অনুরূপ কোন কাজ করেছে। তিনি বললেনঃ এতে কোন দোষ নেই, এতে কোন দোষ নেই। (সহিহ বুখারি ১৭২১)

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হল, সন্ধ্যার পর আমি কঙ্কর মেরেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। সে আবার বলল, কুরবানী করার আগেই আমি মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ এতো কোন দোষ নেই। (সহিহ বুখারি ১৭২৩)

নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলতেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জের সময় তাঁর মাথা কামিয়েছিলেন। (সহিহ বুখারি ১৭২৬)

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যারা মাথার চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। এবার আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। লায়স (রহঃ) বলেন, আমাকে নাফি’ (রফ.) বলেছেন, আল্লাহ মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, এ কথাটি তিনি একবার অথবা দু’বার বলেছেন। রাবী বলেন, ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, চতুর্থবার বলেছেনঃ চুল যারা ছোট করেছে তাদের প্রতিও। (সহিহ বুখারি ১৭২৭)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদিন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের ক্ষমা করুন। সাহাবীগণ বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদেরকে ক্ষমা প্রদর্শন করুন। সাহাবীগণ বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথাটি তিনবার বলেন, এরপর বললেনঃ যারা চুল ছোট করেছে তাদের উপরও। (সহিহ বুখারি  ১৭২৮)

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) ও মু’আবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি একটি কাঁচি দিয়ে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল ছোট ছোট করে দিয়েছিলাম। (সহিহ বুখারি ১৭৩০)

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করলেন : হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি রহমাত বর্ষণ করুন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! চুল খাটোকারীদের? তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি রহমাত বর্ষণ করুন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! চুল খাটোকারীদের? এবার তিনি বললেনঃ এবং চুল খাটোকারীদের প্রতিও। আবু দাউদ ১৯৭৯

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “চুল ছোট বা সম্পুর্ণ মাথা মুন্ডন সম্পর্কিত বিধান

Leave a comment