জায়নামাযে দাড়িয়ে প্রচলিত দোয়াটি পাঠ করা কি শরিয়ত সম্মত?

আমাদের সমাজে অনেক সালাত শুরুর আগেই জায়নামাজের দোয়া নামে একটি দোয়া পড়ে থাকে। দোয়াটি হলঃ

  • **ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ ও হানিফা অমাআনা মিনাল মুশরিকীন**

অর্থঃ আমি একনিষ্ঠ হয়ে আমার মুখ সে মহান সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিলাম যিনি আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।

সালাতের আগে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে এই দোয়া পড়ান কোন প্রমান কুরআন সুন্নাহে পাওয়া যায় না। তবে তাকবীরে তাহলীমার পরে কিছু দোয়া পাঠের কথা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। কিন্তু সালাত শুরুর আগে কোন দোয়া পাঠ শরীয়তের কোন দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয় বিধায় বলা যায়, জায়নামাযের দোয়া বলতে শরীয়তে কিছু নেই। অবশ্য উপরোক্ত দোয়াটি রাসুলুল্লাহ ﷺ কখনো তাহাজ্জুদের নামাযে তাকবীরে তাহরীমার পর সানার স্থানে পড়তেন বলে প্রমাণিত আছে। তিনি যে দোয়াটি পড়তেন তার প্রাথমিক কিছু অংশ হল দোয়াটি। এসম্পর্কে আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত সহিহ মুসলিমে একটি দীর্ঘ হাদিস আছে। পাঠকের সুবিধার জন্য অংশ বিশেষ তুলে ধরলাম।

আলী ইবনু আবূ তুলিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সলাত আদায় করতে দাঁড়াতেন তখন এ বলে শুরু করতেনঃ

  • “ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওঁ ওয়ামা- আনা মিনাল মুশরিকীনা ইন্না সলা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীনা……. .। (সহিহ মুসলিম ১৬৮৫ ইসলামী ফাউন্ডেশন, হাদিস একাডেমী ১৬৯৭, ইসলামীক সেন্টার ১৬৮৯)

কাজেই, সালাতের শুরুতে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তহরীমার আগে কোন প্রকারের দুআ পড়া হাদিস সম্মত নয়। তবে তাকবীরে তহরীমার পর সানা বা নামায শুরুর দোয়া হিসাবে একাধিক দোয়া হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। সেগুলো থেকে যে কোন দু্আ পড়া যেতে পারে। যেমনঃ

১। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, তাকবীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কী পাঠ করে থাকেন? তিনি বললেনঃ এ সময় আমি বলিঃ

  • *اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاىَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ ‏”‏‏.‏*
  • (আল্লাহুম্মা বা-ইদ-বাইনি ওয়াবায়না খাতা ইয়া ইয়া-কামা বা আদতা বাইনাল মাশরিকি ওয়ালমাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কিনি মিনাল খাতাইয়া কামা ইউ নাক্কাস সাউবুল আবইয়াযু মিনাদদানাস্‌ , আল্লাহুম্মাগসিল খাতা ইয়া ইয়া বিল্‌মায়ি ওয়াস্‌সালজি ওয়ালবারাদ)।

হে আল্লাহ্! আপনি মাশরিক ও মাগরিবের মধ্যে যেরূপ দুরত্ব সৃষ্টি করেছেন, আমার ও আমার ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যে ঠিক তদ্রুপ দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন। হে আল্লাহ! শুভ্র বস্ত্রকে যেরূপ নির্মল করা হয় আমাকেও সেরূপ পাক-সাফ করুন। আমার অপরাধসমূহ পানি, বরফ ও হিমশিলা দ্বারা বিধৌত করে দিন। (সহিহ বুখারী ৭০৮ ইফাঃ, ৭৪৪ তাওহীদ)।

  •  আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামায শুরু করতেন তখন বলতেনঃ “সুবহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা”। (তিরমিজি ২৪৩)
  • আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে সলাতের জন্য দন্ডায়মান হলে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এ দু‘আ পড়তেনঃ “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা।” অতঃপর তিনবার “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” ও তিনবার “আল্লাহু আকবার কাবীরান” বলার পর “আ‘উযু বিল্লাহিস সামি‘ইল-‘আলীমি মিনাশ-শাইত্বানির রজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি” বলতেন। তারপর ক্বিরাআত পাঠ করতেন। (আবু দাউদ ৭৫৫ ইসলামি ফাউন্ডেশন)

মন্তব্যঃ হাদীসে এমন বেশ কয়েকটি দুআ বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর যে কোন একটি পড়লেই ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট হবে। তাই আমাদের এই সকল সুন্নাহ বিরোধী কাজ পরিত্যাগ করতে হবে। যদি কেউ জানার পরও ভাল মনে করে সওয়াবের আশায় সালাতের পূর্বে এই দোয়া পড়ে তবে বিদআত হবে তাতে কোন প্রকার সন্দেহ নাই। দ্বীনের মাঝে এই রকম মন গড়া আমল আবিস্কারই হল বিদআত।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।

 

Leave a comment