কঙ্কর নিক্ষেপের ১০ টি শর্ত

কঙ্কর নিক্ষেপের ১০ টি শর্ত

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। ঈদের দিন (১০ জিলহজ্জ) বড় জামারায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে

২। জামারার খুঁটিকে লক্ষ্য করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে      

৩। কঙ্কর নিক্ষেপ করাতে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা

৪। মাটি বা ইটের নিক্ষেপ করলে হবে না

৫। কঙ্করগুলো হাত দিয়ে নিক্ষেপ করতে হবে

৬। প্রতিটি কঙ্কর আলাদা আলাদা নিক্ষেপ করতে হবে

৭। ব্যবহৃত কঙ্কর পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না

৮। সঠিক সময় কঙ্কর নিক্ষেপ করা

৯। কঙ্কর নিক্ষেপের সিরিয়াল ঠিক রাখতে হবে

১০। সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করা

১। ঈদের দিন (১০ জিলহজ্জ) বড় জামারায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবেঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি কোরবানির দিন সকাল বেলা জমরাতুল আকাবাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন; যেটি সর্বশেষ জমরাত ও মক্কার নিকটবর্তী। প্রত্যেকটি কঙ্কর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলেছেন। কঙ্করগুলো ছিল আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নিক্ষেপ করার মত কঙ্কর অর্থাৎ ছোলার চেয়ে কিছুটা বড়।

১. আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি জামরাতুল কুবরা বা বড় জামরার কাছে গিয়ে বায়তুল্লাহকে বামে ও মিনাকে ডানে রেখে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। আর বলেন, যাঁর প্রতি সূরা আল-বাকারাহ নাযিল হয়েছে তিনিও এরূপ কঙ্কর মেরেছেন।  (সহিহ বুখারি ১৭৪৮)

২. আবদুর রাহমান ইবনু ইয়াযীদ হতে বর্ণিত, তিনি ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর সঙ্গে হাজ্জ আদায় করলেন। তখন তিনি বাইতুল্লাহকে নিজের বামে রেখে এবং মিনাকে ডানে রেখে বড় জামরাকে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে দেখেছেন। এরপর তিনি বললেন, এ তাঁর দাঁড়াবার স্থান যাঁর প্রতি সূরা বাকরা নাযিল হয়েছে। (সহিহ বুখারি ১৭৪৮)

২। জামারার খুঁটিকে লক্ষ্য করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবেঃ     

জামারার খুঁটিকে লক্ষ্য করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে হবে। অন্যদিকে টার্গেট করে মারলে খুঁটিতে লাগলেও শুদ্ধ হবে না। প্রতিটি কঙ্করই জামারার হাউজের মধ্যে ফেলতে হবে সন্দেহ হলে, সেই কটা আবার মারতে হবে। কঙ্কর হাউজের বাইরে পড়লে ঐ কঙ্কর পুনরায় মারতে হবে। নিক্ষিপ্ত কঙ্করটি নির্ধারিত স্থানে না পড়লে সে নিক্ষেপ করা সহিহ হবে না। তবে, যদি প্রবল ধারণা হয় যে, কঙ্করটি নির্ধারিত স্থানে পড়েছে তাহলে সেটা যথেষ্ট। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া শর্ত নয়। কারণ এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া সম্ভবপর নয়। যদি কোন ক্ষেত্রে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া সম্ভবপর না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে আমল করা হয়। কারণ শরিয়তপ্রণেতা নামাযে সন্দেহ হলে, কয় রাকাত পড়া হয়েছে, তিন রাকাত; নাকি চার রাকাত; সেক্ষেত্রে প্রবল ধারণার উপর আমল করার কথা বলেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সে ব্যক্তি যেন কোনটা সঠিক সেটা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে; এরপর এর ভিত্তিতে বাকী নামায শেষ করে। (নানে আবু দাউদ (১০২০)

এ হাদিস থেকে জানা যায় যে, ইবাদতের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে প্রবল ধারণা যথেষ্ট। এটি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে সহজ্জতা। কেননা কখনও কখনও ইয়াকীন বা নিশ্চিত জ্ঞান অসম্ভব হতে পারে। যদি কঙ্করগুলো হাউজের ভিতরে পড়ে এতেই ব্যক্তির দায়িত্ব মুক্ত হবে। চাই সেটা হাউজের ভেতরে থেকে যাক; কিংবা গড়িয়ে গড়িয়ে নীচে পড়ে যাক। তবে যদি ধারনা হয় বাহিরে পড়ছে তবে পুনরায় মারতে হবে। যদি এক বা একাধিক কঙ্কর কম নিক্ষেপ করে থাকে তবে প্রতিটি কংকরের জন্য অর্ধেক সাআ (অর্থাৎ এক কেজি বিশ গ্রাম) পরিমাণ গম, খেজুর বা ভুট্টা দান করতে হবে। আর ঘাটতি কংকরের সংখ্যা ৩ এর অধিক হলে দম দিতে হবে। জামারার খুঁটিকে লক্ষ্য করে কঙ্কর নিক্ষেপ না করলে আপনার কঙ্কর নিক্ষেপের ওয়াজিব আদয় হবে না। কেননা এর ফলে প্রমানিত হবে আপনি জামায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেন নাই। আর যদি ৪  বা তার অধিক নিক্ষেপ নিশ্চিত হয়ে তবে দম দিতে হবে না।

৩। কঙ্কর নিক্ষেপ করাতে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করাঃ

কঙ্করগুলো খুব জোরে নিক্ষেপ করার যাবে না আবার জামারার নিকটি গিয়ে ফেলে দিলে হবে না। এমন কি কঙ্করগুলো জামারার নিকটি গিয়ে ষ্পর্শ করালেও হবে না। সরাসরি মধ্যম গতিতে নিক্ষপর করতে হবে। এমন জোরেও নিক্ষেপ করা যাবে না যে, কঙ্করটি জামারায় আঘাত করে আবার ফিরে এসে কোন হাজিকে আহত করে। অনেকে জামাকে শয়তায় মনে করে এত জোরে জোরে কঙ্কর নিক্ষেপ করে যে দেখতে খুবই দৃষ্টিকটু এবং অন্য হাজ্জিদের জন্য কষ্টের কারন। তাই কঙ্কর নিক্ষেপ করাতে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করি।

৪। মাটি বা ইটের নিক্ষেপ করলে হবে নাঃ

কঙ্কর বলতে আমরা পাথরের ছোট ছোট টুকরা বুঝে থাকি। যাকে অনেকে নুড়ি পাথরও বলে থাকে। যার সাইজ হবে গুলালের গুলির কাছাকাছি বা চানা বুটের দানার চেয়ে একটু বড়। তাই মাটি বা ইটের টুকরা কে কঙ্কর হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। 

দলিলঃ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরাতুল ‘আকাবার ভোরে তাঁর উষ্ট্রীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় বলেনঃ আমার জন্য কংকর সংগ্রহ করে লও। আমি তাঁর জন্য সাতটি কংকর সংগ্রহ করলাম। তা ছিল আকারে ক্ষুদ্র। তিনি তা নিজের হাতের তালুতে নাড়াচাড়া করতে করতে বলেনঃ এই আকারের ক্ষুদ্র কংকর নিক্ষেপ করবে। তিনি পুনরায় বলেনঃ দীনের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে তোমরা সাবধান থাকো। কেননা তোমাদের পূর্বেকার লোকেদেরকে দীনের ব্যাপারে তাদের বাড়াবাড়ি ধ্বংস করেছে। (ইবনে মাজাহ ৩০২৯, নাসাঈ ৩০৫৯)

৫। কঙ্করগুলো হাত দিয়ে নিক্ষেপ করতে হবেঃ

সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি হলো, কঙ্করগুলো হাত দিয়ে নিক্ষেপ করতে হবে। কোন প্রকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে না। যেমন, ছেলে-মেয়েদের খেলনা, গুলাল, তীর বা পা দিয়ে লাথি মেরে নিক্ষেপ করলে হবে না। হাতে নিক্ষেপ করতে হবে। সুতরাং তীরের সাহায্যে নিক্ষেপ করলে কিংবা পা দিয়ে ঠেলে দিলে জায়েয হবে না। কঙ্কর সত্যিকার অর্থে নিক্ষেপ করতে হবে। জামরার জায়গায় রেখে দেওয়া নয়। কেউ যদি কঙ্কর তুলে জামরার জায়গায় রেখে দেয়, তবে এটা জায়েয হবে না। কেননা, একে নিক্ষেপ করা বলা হয় না। তিন হাত কিংবা আরও বেশি দূর থেকে কঙ্কর নিজ হাতের দ্বারা ছুঁড়ে মারতে হবে। ওজর ব্যতিত অন্যের দ্বারা নিক্ষেপ করা যাবেনা। কঙ্কর নিজে নিক্ষেপ করতে হবে। সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও বিনা ওজরে অন্যের দ্বারা কঙ্কর নিক্ষেপ করানো জায়েয নয়। ওজর থাকলে জায়েয। সুতরাং কোনো রোগীর পক্ষ থেকে তার আদেশে অন্য ব্যক্তি কঙ্কর নিক্ষেপ করলে জায়েয হবে। যদি কঙ্কর নিক্ষেপের পর সময়ের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে যায়। তবে তাকে পুনরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। যদি রোগী কঙ্কর নিক্ষেপ না করে এবং তার পক্ষ থেকেও কেউ কঙ্কর নিক্ষেপ না করে, তবে ফিদিয়া দেওয়া ওয়াজিব হবে।

৬। প্রতিটি কঙ্কর আলাদা আলাদা নিক্ষেপ করতে হবেঃ

সাতটি কঙ্কর হাতের মুঠোয় ভরে একেবারে নিক্ষেপ করা যাবে না। প্রতিবারে একটি একটি করে কঙ্কর হাতে নিয়ে নিক্ষেপ করতে হবে। কঙ্কর সাতটি, সাত বারে মারা ওয়াজিব। যদি কেউ একবারই সাতটি মারে তবে একরারই নিক্ষেপ হবে। যদিও সাতটা একবারে মারা ঠিক নয়। তাই ওয়াজিব আদায়ের জন্য আপনাকে একটি একটি করে আলাদা আলাদাভাবে সাতবারে সাতটি নিক্ষপ করেত হবে। মুঠোয়ভরে হাত মুঠো নিক্ষেপ করলে সাতবার হবে কিন্তু সাতটি হবে না। আবার একটি মুঠোয় সাতটি নিক্ষেপ করলে সাতবার নিক্ষেপ হবে না, একবার নিক্ষেপ করে। তাই প্রতিটি কঙ্কর আলাদা আলাদা নিক্ষেপ করতে হবে। এর কোন প্রকার ব্যতিক্রম হলে নিক্ষেপ সঠিক হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা হজ্জ ও উমরা আল্লাহ্‌র জন্য পরিপূর্ণ কর”, (২:১৯৬)। তাই সুন্নাহ সম্মত নিক্ষেপের কোন প্রকার ব্যতিক্রম গ্রহণীয় নয়।  

৭। ব্যবহৃত কঙ্কর পুনরায় ব্যবহার করা যাবে নাঃ

বর্তমানে ব্যবহৃত কঙ্কর পুনরায় ব্যবহার করা কোনই সুযোগ নাই। কেননা বর্তমানে জামারাহগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যে কঙ্কর নিক্ষেপের পর নিচে চলে যায়। কোথায় যায় কিভাবে যায় তা সাধারণ হাজ্জিদের জানার কথা নয়। কাজেই ব্যবহৃত কঙ্কর পুনরায় ব্যবহার করা কোন সুযোগ নাই। যদি ব্যবহৃত কঙ্কর পুনরায় ব্যবহার করার সুযোগ থাকতে তবে তা জায়েয হতো না।

৮। সঠিক সময় কঙ্কর নিক্ষেপ করাঃ

কঙ্কর নিক্ষেপের সঠিক সময় আছে। সঠিক সময় কঙ্কর নিক্ষেপ না করতে পারলে ওয়াজিব ছুটে পাবে এবং দম দিতে হবে। কাজেই এই সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবাশ্যিক। কুরবানির দিন বা ১০ জিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর নিক্ষেপ করা নিক্ষেপ করা হলেও আইয়্যামে তাশরীকের দুপুরের পরে নিক্ষেপ হয় থাকে। অর্থাৎ কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য চার দিনে দুটি পৃথম সময় হয়ে থাকে। যথঃ

ক। ১০ জিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর নিক্ষেপ করাঃ

ক। ১০ জিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর নিক্ষেপ করাঃ

সঠিক সময় কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। জিলহজ্জের ১০ তারিখ কুরবানির দিন। এই মুজদালিফা থেকে এসে সূর্যোদয়ের পর থেকে নিয়ে দুপুর বারটা পর্যান্ত মারা সুন্নাহ। তবে ওজরের কারনে সূর্যোদয়ের পুর্বে বা দুপুরের পরও নিক্ষেপ করা জায়েয।

দলিলঃ

খ। আইয়্যামে তাশরীকের দুপুরের পরে নিক্ষেপঃ

দলিলঃ

ওয়াবারা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কখন কঙ্কর নিক্ষেপ করব? তিনি বললেন, তোমার ইমাম যখন কঙ্কর নিক্ষেপ করবে, তখন তুমিও নিক্ষেপ করবে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, আমরা সময়ের অপেক্ষা করতাম, যখন সূর্য ঢলে যেত তখনই আমরা কঙ্কর নিক্ষেপ করতাম। (সহিহ বুখারি ১৭৪৬)

গ। ওজরের কারনে ফরজের পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করাঃ

আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি মুযদালিফার রাতে মুযদালিফার কাছাকাছি স্থানে পৌঁছে সালাতে দাঁড়ালেন এবং কিছুক্ষণ সালাত আদায় করলেন। অত:পর বললেন, হে বৎস! চাঁদ কি অস্তমিত হয়েছে? আমি বললাম, না। তিনি আরো কিছুক্ষণ সালাত আদায় করলেন। অত:পর বললেন, হে বৎস! চাঁদ কি ডুবেছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, চল। আমরা রওয়ানা হলাম এবং চললাম। পরিশেষে তিনি জামরায় কঙ্কর মারলেন এবং ফিরে এসে নিজের অবস্থানের জায়গায় ফজরের সালাত আদায় করলেন। অত:পর আমি তাঁকে বললাম, হে মহিলা! আমার মনে হয়, আমরা বেশি অন্ধকার থাকতেই আদায় করে ফেলেছি। তিনি বললেন, বৎস! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের জন্য এর অনুমতি দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি ১৬৭৯)

‘আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, সাওদা (রাঃ) মুযদালিফার রাতে (মিনা যাওয়ার জন্য) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি চাইলেন, তিনি তাঁকে অনুমতি দেন। সাওদা (রাঃ) ছিলেন ভারী ও ধীরগতিসম্পন্না নারী। (সহিহ বুখারি ১৬৮০)

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ  তিনি বলেন, আমরা মুযদালিফায় অবতরণ করলাম। মানুষের ভিড়ের আগেই রওয়ানা হওয়ার জন্য সাওদা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট অনুমতি চাইলেন। আর তিনি ছিলেন ধীর গতি মহিলা। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অনুমতি দিলেন। তাই তিনি লোকের ভিড়ের আগেই রওয়ানা হলেন। আর আমরা সকাল পর্যন্ত সেখানেই রয়ে গেলাম। এরপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রওয়ানা হলেন, আমরা তাঁর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। সওদার মত আমিও যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট অনুমতি চেয়ে নিতাম তাহলে তা আমার জন্য অধিক সন্তুষ্টির ব্যাপার হতো। (সহিহ বুখারি  ১৬৮১)

ঘ। আইয়্যামে তাশরীকের দুপুরের পরে নিক্ষেপঃ

আইয়্যামে তাশরীকের দিনগুলোর হল, ১১, ১২ ও ১৩ ই যিলহজ্জ। এই তিন দিনে তিনটি জামারায়ই কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজি। প্রতিবারে সাতটি করে তিনটি জামারায় মোট (৭×৩)= ২১ টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। এটা বাদ গেলে দম দিতে হবে। এই সময় কঙ্কর নিক্ষেপর সময় হলো, দুপুরের পর থেকে কঙ্কর নিক্ষেপে শুরু হয়ে সূর্য ডুবার পূর্ব পর্যন্ত নিক্ষেপ করা সুন্নাহ। তবে রাতেও মারা যাবে অর্থাৎ ফজরের পূর্ব পর্যন্ত জায়েয আছে।

দলিলঃ

ওয়াবারা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইব্‌নু উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কখন কঙ্কর নিক্ষেপ করব? তিনি বললেন, তোমার ইমাম যখন কঙ্কর নিক্ষেপ করবে, তখন তুমিও নিক্ষেপ করবে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, আমরা সময়ের অপেক্ষা করতাম, যখন সূর্য ঢলে যেত তখনই আমরা কঙ্কর নিক্ষেপ করতাম। (সহিহ বুখারি ১৭৪৬)

ঙ। আইয়্যামে তাশরীকের কঙ্কর নিক্ষেপের সুন্নাতসমূহ হলোঃ

(১) দুপুর হলে পরে কঙ্কর নিক্ষেপ আগে, এরপর যুহরের সালাত আদায় এভাবে সিরিয়াল করা মুস্তাহাব। (বুখারী) প্রচন্ড ভীড় থাকে বিধায় এ সিরিয়াল ঠিক রাখার চেষ্টা না করাই ভাল।

(২) মিনার মসজিদে ‘খায়েফ’ থেকে কাবার দিকে অগ্রসর হলে প্রথমে ছোট এরপর মধ্যম এবং শেষে বড় জামরা দেখতে পাবেন। আগে ছোট ‘জামারায়’ কঙ্কর নিক্ষেপ করে এটাকে বামে রেখে এখান থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে কিবলামুখী হয় দাঁড়িয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়বেন এবং দু’হাত উঠিয়ে দোয়া করবেন।

(৩) এরপর যাবেন মধ্যম ‘জামারায়’। এখানেও পূর্বের মত ‘আল্লাহু আকবার’ বলে প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন এবং পরে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, পড়বেন এবং কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত উঠিয়ে আরবীতে বাংলায় যত পারেন লম্বা মুনাজাত করবেন। একাকি মুনাজাত করাই সুন্নাত।

(৪) সবশেষে বড় জামরায় এসে ৭টি কঙ্কর মেরে আর থামবেন না সেখানে। জামারা ত্যাগ করবেন। একই নিয়মে শেষ ৩ দিন প্রতিদিন ৭+৭+৭= ২১টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।

৯। কঙ্কর নিক্ষেপের সিরিয়াল ঠিক রাখতে হবেঃ

প্রথমে ছোট, এরপর মধ্যম এবং সর্বশেষে বড় জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপে তারতীব অর্থাৎ সিরিয়াল ঠিক রাখার ওয়াজিব। কাজেই সিরিয়াল ঠিক রাখি।

দলিলঃ

আবু উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জামরাতুল উলাতে এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন জিহাদ অধিক উত্তম? তিনি তাকে কিছু না বলে নীরব থাকলেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপকালে সে পুনরায় একই প্রশ্ন করলো। তিনি এবারও নিশ্চুপ থাকলেন। তিনি জামরাতুল আকাবাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করার পর বাহনে আরোহণের জন্য পাদানিতে পা রেখে জিজ্ঞাসা করলেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? সে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! এই যে আমি। তিনি বলেনঃ যালেম শাসকের সামনে সত্য কথা বলা (উত্তম জিহাদ)। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০১২)

১০। সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করাঃ

১. আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) এর সাথে হজ্জ করেন। রাবী বলেন, তিনি (আবদুল্লাহ) জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন- বায়তুল্লাহকে বামদিকে এবং মিনাকে ডানদিকে রেখে এবং তিনি বলেন, এই সে স্থান যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সূরা আল বাকারাহ নাযিল করা হয়েছিল। (সহিহ মুসলীম ৩০০১ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

২. আবদুল্লাহ্ বিন মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বাইতুল্লাহকে নিজের বামে রেখে এবং মিনাকে ডানে রেখে বড় জামরাকে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। এরপর তিনি বললেন, এ তাঁর দাঁড়াবার স্থান যাঁর প্রতি সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে।(সহিহ বুখারি ১৭৪৭,১৭৪৮)

এই হাদিসের আলোকে যানা যায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেত হবে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “কঙ্কর নিক্ষেপের ১০ টি শর্ত

Leave a comment