হজ্জের ভুলভ্রান্তি ও বিদআত চতুর্থ কিস্তি : মিনা ও কুরবানী

হজ্জের ভুলভ্রান্তি ও বিদআত চতুর্থ কিস্তি : মিনা ও কুরবানী

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। মিনার সালাত জমা করাঃ

ইহরাম বাঁধার পর হাজিগণ মিনার দিকে রওয়ানা হয়ে যাওয়াই হলো সুন্নাত তরিকা। সূর্য ঢলার পূর্বে হোক আর পরে হোক ৮ জিলহজ মিনায় পৌছাইতে চেষ্টা করা। মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা অর্থাৎ ৮ জিলহজ ‘জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা এবং ৯ জিলহজ সকালের ফজর নামাজসহ এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় যুহর ও ফজরের নামায (অর্থাৎ যুহর হতে পরবর্তী ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্তের নামায) আদায় করলেন। তারপর ভোরেই আরাফাতের দিকে যাত্রা শুরু করেন। (সুনানে তিরমিজি ৮৮০, হাদিসের মান সহিহ)

মিনায় থাকাকালীন সময়ে মক্কার অবস্থানকারী বা বহিরাগত সকলকে প্রত্যেক নামাজ সুন্নাত মোতাবেক পড়ার নিয়ম হলো- প্রত্যেক ওয়াক্ত (জোহর, আসর ও ইশা) নামাজ উহার নির্দিষ্ট সময়ে কসর পড়া। মাগরিব ও ফজর নামাজ ব্যতিত- কেননা এ দুই নামাজে কসর নেই।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কাবাসী ও অন্যান্য স্থানের অধিবাসীদের নিয়ে মিনা, আরাফা ও মুযদালিফায় কসর নামাজ পড়েছিলেন। মক্কাবাসীদের সম্পূর্ণ নামাজ পড়তে নির্দেশ দেন নাই।

‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (মিনায়) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করেছি। আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে দু’ রাক’আত এবং ‘উমর (রাঃ)-এর সাথেও দু’ রাক’আত আদায় করেছি। এরপর তোমাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে [অর্থাৎ ‘উসমান (রাঃ)-এর সময় থেকে চার রাক’আত সালাত আদায় করা শুরু হয়েছে] হায়! যদি চার রাক’আতের পরিবর্তে মকবূল দু’ রাক’আতেই আমর ভাগ্যে জুটত! (সহিহ বুখারী ১৫৫৪ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ পরিপূর্ণ সহিহি সুন্নাহ হলো মিয়ায় সালাতের কসর আদায় করা। তবে যদি কেউ মুকিম হিসাবে সম্পর্ণ সালাত আদায় করার যুক্তি দেখায় তাকে তার মতের উপর ছেড়ে দেয়া উচিত। করান সহিহ হাদিসে ‘উসমান (রাঃ) এর সময় থেকে চার রাক’আত সালাত আদায় করা কথা উল্লেক আছে।

 

২। আইয়ামুত-তাশরীকে মিনায় রাত্রীজাপন না করাঃ

আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয় কুরবানির পরবর্তী তিন দিনকে। অর্থাৎ যিলহজ মাসের এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয়। তাশরীক শব্দের অর্থ শুকানো। মানুষ এ দিনগুলোতে গোশত শুকাতে দিয়ে থাকে বলে এ দিনগুলোর নাম ‘আইয়ামুত-তাশরীক’ বা ‘গোশত শুকানোর দিন’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। এই দিনগুলো ইবাদত-বন্দেগি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকির ও তার শুকরিয়া আদায়ের দিন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَاذْكُرُواْ اللّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ

অর্থঃ আর স্মরণ কর আল্লাহকে নির্দিষ্ট সংখ্যক কয়েকটি দিনে। অতঃপর যে লোক তাড়াহুড়া করে চলে যাবে শুধু দুদিনের মধ্যে, তার জন্যে কোন পাপ নেই। আর যে লোক থেকে যাবে তাঁর উপর কোন পাপ নেই, অবশ্য যারা ভয় করে। (সুরা বাকারা ২:২০৩)

আইয়ামুততাশরীক হল ১১, ১২ ও ১৩ ই যিলহজ। এই সময় মিনায় অবস্থান করা ওয়াজিব। এটা বাদ গেলে দম দিতে হবে। কিন্তু হানাফি ওলামাগন মিনায় অবস্থান কে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলে থাকেন। উপরের আয়াতের আলোকে অনেকে আলেম মনে করে থাকেন আইয়ামুত-তাশরীকে মিনা থেকে মক্কার দিকে ১২ই বা ১৩ যিলহজ্জ যেদিনেই ফিরে আসা হোক না কেন তাতে কোন ক্ষতি নেই। এই দিনগুলোতে আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকতে হবে। কোন প্রকারে উৎসব অনুষ্ঠান বা মেলায় ঘুরে ফূর্তি সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।

মন্তব্যঃ আইয়ামুত-তাশরীকের প্রথাধ ভুল হল বীনা অজরে মিনায় রাত্রীজাপন না করে মক্কায় অবস্থান করা।

৩। কঙ্কর নিক্ষেপের ভুল-ত্রুটিঃ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জমরাতুল আকাবাতে কঙ্কর নিক্ষেপের দিন ভোরে তাঁর সওয়ারীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় আমাকে বললেন: আমার জন্য (কঙ্কর) কুড়িয়ে আন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন: আমি তাঁর জন্য কঙ্কর কুড়িয়ে আনলাম। সেগুলো আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে ছুড়ে মারা যায় এমন। তিনি সেগুলো নিজের হাতে রেখে বললেন: আপনারা এগুলোর মত কঙ্কর নিক্ষেপ করুন…। দ্বীনের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে সাবধান থাকুন। কেননা আপনাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণ দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে ধ্বংস হয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৩০২৯)

 

৪। মুজদালিফায় কঙ্কর সংগ্রহ করাঃ

অনেক ধারনা করে থাকে মুজদালিফা থেকে কঙ্কর সংগ্রহ করত হবে। তারা মনে করে মুজদালিফা থেকে কঙ্কর সংগ্রহ করা সুন্নাহ। আসলে আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এমন কোন বর্ণনা আসেনি যে, তিনি মুযদালিফা থেকে কঙ্কর সংগ্রহ করেছেন বা তার উম্মতকে সংগ্রহ করতে বলেছেন। তাই এই কাজটি সুন্নাহ নয় ওয়াজিবতো অনেক দুরের কথা। সুন্নাহ হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা, কাজ বা অনুমোদন। এর কোনটি মুযদালিফা থেকে কঙ্কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়নি। কাজেই আমরা কঙ্কর যে কোন স্থান থেকে সংগ্রহ করা যাবে, মুযদালিফা থেকে, মীনা থেকে, কিংবা অন্য যে কোন স্থান থেকে। উদ্দেশ্য হচ্ছে কঙ্কর হওয়া।

৫। কঙ্কর ধৌত করাঃ

মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপ একটি ইবাদাত। আর এই ইবাদের মাধ্যম হলে ছোট নুড়ি পাথর। এই কঙ্কর সাধারণত খোলা ময়দান থেকে সংগ্রহ করা হয়। তাই অনেকের ধারনা কঙ্করগুলো অপবিত্র। তারা কঙ্কর সংগ্রহ  করার পর সেগুলোকে ধৌত করেন। তাদের ধারনা কঙ্করগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া উত্তম। কারণ যেটাই হোক না কেন কঙ্কর ধৌত করা বিদাত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা করেননি। যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেননি ইবাদতের উদ্দেশ্যে সে কাজ করা বিদাত। আর ইবাদতের উদ্দেশ্যে না হলে এমন কাজ করা বোকামি ও সময় নষ্ট।

৬। জমরাতগুলো শয়তান মনে করাঃ

আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) এর সাথে হজ্জ করেন। রাবী বলেন, তিনি (আবদুল্লাহ) জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন- বায়তুল্লাহকে বামদিকে এবং মিনাকে ডানদিকে রেখে এবং তিনি বলেন, এই সে স্থান যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সূরা আল বাকারাহ নাযিল করা হয়েছিল। (সহিহ মুসলীম ৩০০১ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

এই হাদিসের আলোকে যানা যায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেত হবে।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি প্রথম জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত তুলে দু‘আ করতেন। অতঃপর মধ্যবর্তী জামরায় কঙ্কর মারতেন এবং একটু বাঁ দিকে চলে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দু‘আ করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। এরপর বাতন ওয়াদী হতে জামরায়ে ‘আকাবায় কঙ্কর মারতেন। এর কাছে তিনি বিলম্ব না করে ফিরে আসতেন এবং বলতেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরূপ করতে দেখেছি। সহিহ বুখারি ১৭৫১ তাওহীদ প্রকাশনী)

উপরের হাদিসটি লক্ষ করুন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঙ্কর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন (জিকির করতেন) এবং এর পর কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত তুলে দু‘আ করতেন। কিন্তু অনেকে ধারণা করে, এই জামারাতগুলো শয়তান এবং তারা শয়তানকেই কঙ্কর নিক্ষেপ করছে। যার ফলে কেউ কেউ তীব্র রাগ, ক্ষোভ কারনে কঙ্করের পাশাপাশি ছাতা, জুতা, বড় পাথর ইত্যাদি নিক্ষেপ করে তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে থাকে। যেন শয়তান তার সামনে।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা হলো, জমরাতগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে  আল্লাহ্‌র যিকিরকে বুলন্দ করব। আর আমরা কঙ্কর নিক্ষেপ করছি ক্ষোপ প্রকাশের জন্য। যদি আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করে কঙ্কর নিক্ষপ করি তবে তা ইবাদত হবে। আর যদি শয়তায় মনে করে তীব্র প্রতিক্রিয়া বা ক্রোধের সাথে কঙ্কর নিক্ষপ করি তাহলে ইবাদাত হবে? যখন কেউ কঙ্কর নিক্ষেপের সময় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় তখনজামারার সামনে অবস্থানরত হাজিদের শুধু  কষ্টই হয়।

জামারাকে শয়তার মনে করা একটি ভ্রান্ত আকিদার। যার ফলে সে একটি সুন্নাহ সম্মত ইবাদাত কে বড় বড় পাথর, ছাতা, কাষ্ঠখণ্ড, জুতা ইত্যাদি নিক্ষেপ করে শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার দাবি করে থাকে। জামারাগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস রাখব যে, আমরা আল্লাহ্‌র মহত্ব প্রকাশ ও আল্লাহ্‌র ইবাদত পালন করছি। যেহেতু আমলটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণ হিসেবে করছি তাই মহান আল্লাহ পুরস্কারের আশা করছি।

৭। কঙ্কর নিক্ষেপের কয়েকটি ভুল পদ্ধতিঃ

১। অনেকে জামারার সামনে এতো জোরে কঙ্কর নিক্ষেপ করে যে, কঙ্কর জামারায় লেগে আবার স্বজোরে ফিরে আসে। যার ফলে অন্য হাজিদের গায় লাগে এবং তারা কষ্ট পায়। কাজেই জামারা লক্ষ করে আস্তে নিক্ষেপ করেত হবে। 

২। নিক্ষিপ্ত কঙ্করটি নির্ধারিত স্থানে ফেলার চেষ্টা করেত হবে, তা না হলে নিক্ষেপ করা সহিহ হবে না। কিন্তু অনেক হাজি আছে তারা কঙ্কর নিক্ষেপ করার বিষয়টি ততটা গুরুত্ব দেন না। নির্ধারিত স্থানে পড়ল, নাকি পড়ল না, তারা তার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করেন না। যাহোক চেষ্টা থাকবে কঙ্করগুলো যেন জামারার হাউজের ভিতরে পড়ে এতেই ব্যক্তির দায়িত্ব মুক্ত হবে। আবার অনেকে মনে করে যে, কঙ্কর নিক্ষেপ সহিহ হওয়ার জন্য কঙ্করটি পিলারের গায়ে লাগাতে হবে। এটা ভুল ধারনা, কেননা এই পিলার নির্মাণ করা হয়েছে নিক্ষেপের জায়গাটি নির্দিষ্ট বা চিহ্নিত করার আলামত হিসেবে। কঙ্করটি যদি নিক্ষেপের জায়গায় গিয়ে পড়ে তাহলে সেটাই যথেষ্ট।

৩।  প্রতি জামারায় সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করেত হবে। একটি একটি করে আলাদা আলাদা করে নিক্ষেপ করতে হবে। এক সাথে সাতটি কঙ্কর একবার মুষ্টিবদ্ধ করে নিক্ষেপ করা একটি ভুল আমল।
৪। শারীরিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বে অন্যকে দিয়ে কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে না। কারণ কঙ্কর নিক্ষেপ হজ্জের অন্যতম একটি আমল। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তোমরা হজ্জ ও উমরা আল্লাহ্‌র জন্য পরিপূর্ণ কর”। (সুরা বাকারা ২:১৯৬) এ আয়াতটির বিধান যাবতীয় কর্মসহ হজ্জ সম্পন্ন করাকে অন্তর্ভুক্ত করে। তাই মানুষের উপর ওয়াজিব হচ্ছে হজ্জের কার্যাবলী নিজেই পালন করা এবং অন্য কাউকে দায়িত্ব না দেয়া।

৫। কঙ্কর নিক্ষেপ একটি কষ্টকর ইবাদাত। তীব্র ভিড়ে এটি আদায় করা আরও কঠিন কাজ। কিন্তু কেউ অক্ষম হয় এবং তার পক্ষে নিজে নিজে কঙ্কর মারা কোনভাবেই সম্ভবপর নয়। তবে তার ক্ষেত্রে অন্যকে দায়িত্ব দিয়ে এই আমল করা জায়েয, বিশেষ করে যারা দুর্বল ও বৃদ্ধ। এমনকি কোন নারী যদি মানুষের ভিড়ে কঙ্কর মারা নিজের জন্য বিপদজনক মনে করেন তাহলে তিনি পরে রাতের বেলায় কঙ্কর মারতে পারেন। স্বপক্ষে দলীল নিম্মের হাদিস।

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সওদা (রাঃ) ছিলেন ভারী ও স্থুলদেহী। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মুযদালিফা থেকে রাত থাকতেই প্রস্থান করার অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, হায়! যদি সওদা (রাঃ) এর মত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমিও অনুমতি প্রার্থনা করতাম! আয়িশা (রাঃ) ইমামের সাথে মুযদালিফা হতে রওনা হতেন। (সহিহ মুসলীম ২৯৮৯ ইফাঃ)

মোদ্দাকথা হচ্ছেঃ যে অক্ষমতার কারণে কেউ নিজে কঙ্কর মারতে পারে না সে অক্ষমতা ব্যতীত হাজীসাহেব কর্তৃক অন্যকে কঙ্কর মারার দায়িত্ব দেয়া বড় ধরণের ভুল। কেননা এটি ইবাদত পালনে অবহেলা এবং ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় কাজ পালনে অলসতা।

 

৮। মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করার ভুল-ত্রুটিঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! মাথা মুন্ডুনকারীদের ক্ষমা করুন। সাহাবীগন বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! মাথা মুন্ডুনকারীদেরকে ক্ষমা করুন। সাহাবীগন বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেন, এরপর বললেনঃ যারা চুল ছোট করেছে তাদেরকেও। (সহিহ বুখারী ১৬২০ ইফাঃ)

মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করার উমরা বা হজ্জের একটি ওয়াজিব কাজ। এই কাজ না করলে উমরা বা হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। উমরা বা হজ্জ আদায়ে পর, হালাল হওয়ার পূর্বে সম্পুর্ণ মাথার চুল মুন্ডুন করতে হবে। আর যদি কেউ চুল ছোট করতে চায় তবে তাকে সম্পূর্ণ মাথা পরিব্যাপ্ত করে ছোট করতে হবে। কিছু কিছু লোক মাথার কিয়দাংশ খুর দিয়ে ভালভাবে মুণ্ডন করে; বাকীটুকু রেখে দেয়। এই সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে তারা মনে করে থাকে যে,  যেহেতু তারা উমরা ও হজ্জ একত্র করবে তাই উমরা সময় অর্ধেক মুণ্ডন করব আর হজ্জ করার পর বাকী অর্ধেক মুন্ডন করব। এটি অজ্ঞতা ও গোমরাহি। আবার অনেক আছে যারা অজ্ঞতার কারনে সম্পূর্ণ মাথা পরিব্যাপ্ত না করেই ছোট করে থাকে। মাথার কোন একটি অংশ থেকে কিছু চুলের আগা কেটে বলে থাকে চুল ছোট করছে। তাদের এই আমল কুরআনের এই আয়াতের বাহ্যিক অর্থের বিপরীত। আল্লাহ তাআলা বলেন,

 لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ إِن شَاء اللَّهُ آمِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُؤُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ

অর্থঃ আল্লাহ চাহেন তো তোমরা অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তকমুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। (সুরা ফাতাহ ৪৮:২৭)

অতএব, চুল ছোট করার প্রভাবটা মাথার উপর স্পষ্টভাবে দেখা যেতে হবে। সবাই জানে যে, সামন্য কিছু চুল কাটলে সেটা কোন প্রভাব ফেলে না বিধান সামান্য চুল কাটা এই আয়াতের বাহ্যিক বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই যদি মুণ্ডন করতে চায় তাহলে গোটা মাথার চুল মুণ্ডন করবে। আর যদি চুল ছোট করতে চায় তাহলে সম্পূর্ণ মাথার চুল ছোট করবে।

 

৯। মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট না করেই হালাল হয়ে যাওয়াঃ

উমরা বা হজ্জের সময় তাওয়ার ও সাঈ আদায়ে পর মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করার ওয়াজিব কাজ। কিন্তু অনেকে এই কাজটি না করেই বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক কাপড় চোপড় পরে। তার পর সুবিধা জনক সময় মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করে থাকে। অথচ সঠিক সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি হলো ইহরামের কাপড় গায়ে থাকা অবস্থায় মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করা। মাথা মুন্ডুন বা চুল ছোট করার পরই ইহরামের কাপড় খুলে হালাল হতে হবে। যেমনঃ

জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ হজ্জের ইহরাম বাঁধেন। কিন্তু তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তালহা (রাঃ) ব্যতীত আর কারো সাথে কুরবানীর পশু ছিল না। আর এ সময় আলী (রাঃ) ইয়ামান হতে আগমন করেন এবং তার সাথেও কুরবানীর পশু ছিল। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ ইহরাম বেঁধেছেন আমিও সেরূপ ইহরাম বাঁধলাম।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথীদের নির্দেশ দেন যে, তারা যেন এটাকে উমরায় পরিণত করে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে এবং মস্তক মুন্ডনের (বা চুল ছোট করে কর্তনের) পর হালাল হয়। অবশ্য যাদের সাথে কুরবানীর পশু আছে তারা ব্যতীত। তারা বলেন, আমরা মিনার দিকে এমন অবস্থায় যাই যে আমরা স্ত্রী সহবাস করেছি। এই কথা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, আমি যা পরে অবহিত হয়েছি যদি তা পূর্বে অবগত হতে পারতাম তবে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না। আর আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমি অবশ্যই ইহরাম খুলে ফেলতাম।

এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, চুল ছোট করা ছাড়া হালাল হওয়া যাবে না। কিন্তু অজ্ঞতাবশতঃ মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করার আগে এই মনে করে হালাল হয়ে গেছে যে, এটি জায়েয তাহলে তার অজ্ঞতার কারণে কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু, জানার সাথে সাথে তাকে স্বাভাবিক কাপড়-চোপড় খুলে ইহরামের কাপড় পরতে হবে। কেননা, সে হালাল হয়নি এ কথা জানার পর আর গড়িমসি করা জায়েয হবে না। অতঃপর সে মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করার পর হালাল হবে। (সুনানে আবু দাউদ ১৭৮৯)

 

১০।চুল ছোট করার চেয়ে সম্পুর্ণ মাথা মুন্ডন করা উত্তমঃ

ইয়াহইয়া ইবনু হুসায়ন (রহঃ) থেকে তার দাদীর সুত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদী) বিদায় হাজ্জকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাথা মুন্ডনকারীদের জন্য তিনবার এবং চুল ছোটকারীদের জন্য একবার দু’আ করতে শুনেছেন। ওয়াকীর “বিদায় হাজ্জ” কথাটুকু উল্লেখ করেননি। (সহিহ মুসলীম ৩০২০ ইফাঃ)

ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জকালে নিজের মাথার চুল মুন্ডন করেছেন। (সহিহ মুসলীম ৩০২১ ইফাঃ, সুনানে আবু দাউদ ১৯৭৭)

যেহেতু সহিহ হাদিস প্রমান করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জকালে নিজের মাথার চুল মুন্ডন করেছেন। তাই চুল ছোট করার চেয়ে সম্পুর্ণ মাথা মুন্ডন করা উত্তম। অনেক হাজি উত্তম আমলটি না জানার করানে চুল ছোট করে থাকে, যদিও ইহা সুন্নাহ সম্মত আমল।

আরেকটি ভুল হলো কুরবানী করার আগেই মাথার চুল মুন্ডন করা। মিনায় পাথর মারার পর ঐ দিন (১০ জিলহজ্জ) হাদি কুরবানী করার পরই মাথা চুল মুন্ডন যাবে যদি এই দিন হাদি কুরবানী না হয় তবে চুল মুন্ডন যাবে না। সে ক্ষেত্রে পরের দুই দিনের যে কোন দিন হাদি কুরবানী করার পরই মাথা চুল মুন্ডন যাবে। কাজেই হাদি কুরবানী না অন্যের দেখা দেখি ১০ ই জিলহজ্জ মাথা চুল মুন্ডন একটি ভুল আমল। কারন মাথা মুন্ডনের অর্থই হল ইহরাম ত্যাগ করে নিজেকে হালাল করে নেয়া। হাদি কুরবানী করার নিজেকে হালাল করে নেয়া যায় না।

১১। মহিলাদের চুলের সীমাঃ

হজ্জ বা উমরার সময় মাথা মুণ্ডন কিংবা চুল ছোট করা একটি ওয়াজিব কাজ। পুষের জন্য মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট দুটিই জায়েয তবে মাথা মুন্ডান উত্তম কারন তার মাথা মুন্ডন করেছিলেন। নারীদের জন্য মাথা মুণ্ডন করার অনুমতি নেই। তাদের জন্য অনুমোদিত হল চুল ছোট করা। তবে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী মাথার সবগুলো চুল ছোট করা আবশ্যক। এটি মালেকি ও হাম্বলি মাযহাবের অভিমত। যদি কারো মাথার চুলগুলো বেণী করা থাকে তাহলে সবগুলো বেণীর মাথা থেকে কাটবে। যদি বেণী করা না থাকে তাহলে সবগুলো চুল একত্রিত করে সবগুলো চুল থেকে কাটবে। মুস্তাহাব হচ্ছে আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ কাটা। এর চেয়ে কমও কাটতে পারেন। যেহেতু চুল কাটার পরিমাণ নির্ধারণমূলক কোন শরয়ি দলিল বর্ণিত হয়নি।

আল-বাযি (রহঃ) ‘আল-মুনতাকা’ গ্রন্থে (৩/২৯) বলেন: পক্ষান্তরে, কোন নারী যখন ইহরাম করার মনস্থ করবেন তখন তিনি তার চুল বেণী করে নিবেন যেন তিনি হালাল হওয়ার জন্য চুল কাটতে পারেন। কী পরিমাণ চুল কাটবেন? ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ। ইবনে হাবিব ইমাম মালেক থেকে বর্ণনা করেন যে, আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ কিংবা এর চেয়ে একটু বেশি কিংবা এর থেকে একটু কম। ইমাম মালেক বলেন: আমাদের মাযহাবে এর সুনির্দিষ্ট কোন পরিমাণ নেই। যতটুকু কাটে সেটা জায়েয হবে। তবে, মাথার সবগুলো চুল কাটতে; সেটা লম্বা চুল হোক কিংবা খাটো চুল হোক।

ইবন জুরায়জ (রহঃ) বলেছেন, আমি সাফিয়্যা বিনত শায়বা ইবন উসমান হতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমাকে উম্মে উসমান খবর দিয়েছেন যে, ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন স্ত্রীলোকদের জন্য মাথা মুন্ডনের প্রয়োজন নেই, বরং (এক আঙ্গুল পরিমাণ চুল) কর্তন করবে। (সুনানে আবু দাউদ ১৯৮০)

ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, স্ত্রীলোকদের জন্য মাথা মুন্ডনের দরকার নেই, বরং তারা (এক আঙ্গুল পরিমান চুল) কর্তন করবে। (সুনানে আবু দাউদ ১৯৮১)

খাল্লাস (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। কিন্তু এই সূত্রে আলী (রাঃ) এর উল্লেখ নাই। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদিসটিকে ইয্তিরাব রয়েছে। হাম্মাদ ইবনু সালাম- কাতাদা -আয়িশা (রাঃ) এ হাদিসটি বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের মাথা মুন্ডনের অনুমতি দেন না। তবে তাদের (ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য) কিছূ চুল ছাটার অভিমত পোষণ করেছেন।  (তিরমিজী হাদিস নম্বর ৯১৭, হাদিসে মান  নির্নিত নয়)

ইমাম আহমাদ বলতেনঃ “চুলের প্রত্যেক বেণী থেকে এক কর পরিমাণ কর্তন করবে।” এটি ইবনে উমর (রাঃ), শাফেয়ি, ইসহাক, আবু সাওর প্রমুখের অভিমত। আবু দাউদ বলেন, “আমি ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। নারীরা কি সম্পূর্ণ মাথার চুল ছোট করবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। মাথার সবগুলো চুলকে সামনের দিকে এনে চুলের আগা থেকে আঙ্গুলের কর পরিমাণ কর্তন করবে। (ফতোয়াতে উসায়মিন রাহিঃ)

কাজেই নারীদের মাথার যে কোন স্থান থেকে সামান্য চুল ছোট করলেই হবে না। সম্পুর্ণ মাতা থেকে সমান করে আঙ্গুলের এক করের কিছু কম বেশী চুল ছোট করতে হবে।

 

১২।কুরবানীর ভুল ত্রুটিঃ

হারাম সীমানার বাইরে হাদী জবেহ করা যাবে না। কাজেই মক্কা ও মিনার হামার সীমানা জেনে হাদি জবেহ করা উচিত। এ ক্ষেত্র হজ্জের সময় যে মুয়াল্লিম থাকবে তার সাহায্য নিতে হবে। তা হলে আর ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। হাদি কুরবানির জন্য উপযুক্ত কিনা তা যাচাই না করে জবেহ করা। কারন হাদিসে বর্ণিত চারটি খুত থাকল হাদি কুরবানি হবে না।

হজ্জের সফরের অধিকাংশ মুয়াল্লামি থাকে ব্যবসায়ী। এই সফরে একটু চোখ কান খোলা রাখলেই বুঝতে পারবেন আপনার সাথী মুয়াল্লিম ব্যক্তি কেমন। যদি মনে করে তার উপর আস্থা রাখা যায় তবে নিজে না গিয়ে তার মাধ্যমে হাদি জবেহ করাতে পারেন। আর যদি মনে করেন তিনি অথটা আস্থা ভাজন ব্যক্তি নয় তবে নিজে গিয়ে হাদির জবেহের ব্যবস্থা করবেন। কারন অনেক মুয়াল্লিম অসত হয়, তারা হাদি জবেহ না করেই, জবেহ হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়। দশ জনের টাকা নিয়ে পাঁচটি হাদি জবেহ করই বলে দেয় সবার হাদি জবেহ হয়েছে। পাঁচ শত রিয়েলের চুক্তি করে দুই/তিন শত বিয়েলের হাদি জবেহ করে। তবে হ্যা, সে যদি বলে আমি হাদি কুরবানী বাবত এক/দুই শত রিয়েল নিব আর হাদি বাবদ যা আসে আপনার তবে ঠিক আছে। কিন্তু যদি বলে সচ্ছতার অভাব থাকে তবে মুয়াল্লীম গুনাগার হবে। এই জন্যই বলেছি, মুয়াল্লিম আস্থা ভাজন ব্যক্তি হলে আর চিন্তা করার দরকার নাই। যদি মনে করেন তাও সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্র সৌদি হজ্জ কমিটির অধিনে নির্ধিষ্ট টাকা জনা দিলে, তারা আপনার হাদি যবেহের ব্যবস্থা করবেন। এ ক্ষেত্র একটা ভুল হয়ে থাকে। অনেক হাদি যবেহ হওয়ার আগেই মাথার মুন্ডন করে ফেলে। এই জন্য আপনাকে মেসেস বা অন্য কোন মাধ্যমে আপনাকে জানান হবে যে, আপনার হাদি জবেহ করা হয়েছে। এরপরই আপনি মাথার মুন্ডন করতে পারবেন।

বর্তমানে যারা প্রবাসী হিসাবে হজ্জ করে থাকেন তাদের গোশত পাক করে খাওয়া বা সংরক্ষন করে রাখার কোন ব্যবস্থা নাই তাই তারা হাদির গোসত নিয়ে বিপাকে পরে যায়। মক্কায় বর্তমানে ফকির মিসকিন পাওয়াও খুব কষ্টের ব্যপার। তাই এই অনেক হাদির গোশত ফেলে দেন যা একটি ভুল আমল। তাই যদি কেউ নিজে না খেতে পারে বা ফকির মিসকিনকে দিতে না পারে, সে কেত্রে কয়েক রিয়েল খরচ করে সরকারি কসাই খানায় জবেহ করে, সম্পূর্ণ গোশত তাদের হাওলায় ছেড়ে দিতে পারেন। আশা করি তারা একটি উপযুক্ত ব্যবস্থা করবেন।

অনেক হাজি সাহেব মুজদালিফায় রাত্রি জাপন করে, মিনায় গিয়ে কঙ্কর নিক্ষেপ না করে, নিজেদের তাবুতে যায়। তারা ভাবেন এই সময় ভিড় থাকবে, তাই একটু পরে আসানের সাথে গিয়ে কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। এটা কোন ভুল আমল নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হাদি জবের আগেকটি ভুল আমল হলো, তারা কঙ্কর নিক্ষেপ করার আগেই সুযোগ বুঝে হাদি জবেন করেন। সহিহ সুন্নাহ হলো কঙ্কর নিক্ষেপের পরই হাদি জবেহ করতে হবে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment